এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪
HSC Agricultural Education
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. মাছ চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে খোরশেদ পুকুরে নাইলোটিকা মাছের চাষ শুরু করে। কিছুদিন পর সে লক্ষ করল কিছু মাছের পেট ফুলে গেছে এবং পেটে চাপ দিলে মলদ্বার দিয়ে পানি বের হয়ে আসে। তার বন্ধু তারেক তাকে বলল জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ছে। খোরশেদ ও তার বন্ধু তারেক গ্রামের অন্যান্য যুবকদের নিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়ন কার্যক্রম শুরু করে।
ক. সামাজিক বনায়ন কাকে বলে?
খ. চিংড়িকে কেন সাদা সোনা বলা হয়?
গ. খোরশেদের পুকুরের মাছগুলোতে যে রোগ দেখা দিয়েছিল তার কারণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. খোরশেদ ও তারেকের গৃহীত কার্যক্রমের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বনজ সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে বসতবাড়ি, রাস্তা, বাঁধ, খাস ও প্রাতিষ্ঠানিক জমিতে সামাজিক বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে বন সৃষ্টি করাকে সামাজিক বনায়ন বলে।
খ. বাংলাদেশে চিংড়িকে সাদা সোনা বা হোয়াইট গোল্ড বলা হয়। চিংড়ি বর্তমানে বাংলাদেশে শিল্পে পরিণত হয়েছে। এ শিল্পের সাথে সরাসরি জড়িত আছে প্রায় ১২ লক্ষ নারী-পুরুষ। দেশের রপ্তানিজাত মৎস্য পণ্যের প্রায় ৬৫% চিংড়ি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি করে দেশ আয় করেছে ৪,৬৬০.৬০ কোটি টাকা। এ কারণে চিংড়িকে সাদা সোনা বলা হয়।
গ. খোরশেদের খামারে নাইলোটিকা মাছের পেট ফোলা এবং পেটে চাপ দিলে মলদ্বার দিয়ে পানি বের হওয়া লক্ষণ দেখা যায় যা শোথ রোগের লক্ষণ।
প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকলেও পরবর্তীতে Aeromona punctata নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়। কাজেই ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া উভয়ই এ রোগের জন্য দায়ী। মাছের এ রোগ হলে পরিমিত পরিমাণ সুষম খাদ্য প্রদান করতে হয়। পুকুরে নিয়মিত শতাংশ প্রতি ডলোচুন ১ কেজি (তিন মাস অন্তর অন্তর) হারে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমে জীবাণুমুক্ত সুচ দিয়ে পেটে জমে থাকা তরল পদার্থ বের করে ফেলতে হবে। অতঃপর প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ২০০ মিলি গ্রাম হারে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে ৭-১০ দিন খাওয়াতে হবে। বড় মাছের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ওজনের জন্য ৫০-৬০ মিলি গ্রাম হারে স্টেপটোমাইসিন পেট গহবরে ইনজেকশন করে দিতে হবে। মাছের খাবারে ফিসমিল ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে পস্নাংকটনের স্বাভাবিক উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া মাছ ছোট হলে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ২০০ মিলি গ্রাম হারে ক্লোরফেনিকল মিশিয়ে ২ সপ্তাহ খাওয়াতে হবে। উপরিউক্ত প্রতিকার ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করলে নাইলোটিকা মাছের ক্ষেত্রে শৌথ রোগের ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতে পারে।
ঘ. উদ্দীপকের খোরশেদ ও তার বন্ধু তারেক গ্রামের অন্যান্য যুবকদের নিয়ে বনায়ন কার্যক্রম শুরু করে।
কোনো এলাকার বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি বনাঞ্চল দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। তাই সকল এলাকায় পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি হিসেবে প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ ১৭% এবং বেসরকারিভাবে প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ ১০% এর কম।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশ্বকে বসবাসের উপযোগী রাখার ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। গাছ প্রস্বেদনের হার বাড়িয়ে পরিবেশ নির্মল রাখে। বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়িয়ে আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতা হ্রাস করে। বায়ুমন্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে জীবকূলের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে। শিকড়ের সাহায্যে ধাতব কণাকে ধারণ করে পানি দূষণ রোধ করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া রোধে ভূমিকা রাখে এবং বনজ উদ্ভিদ ভূমির আচ্ছাদন হিসেবে কাজ করে এবং ভূমিক্ষয় রোধ করে। বনাঞ্চল, বায়ু প্রবাহের গতিরোধ করে পরিবেশের বিপর্যয় কমায়। বনাঞ্চল ঝড়ঝঞ্ঝা ও জলোচ্ছ্বাসজনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করে। বন্য জীবজন্তু, পাখি ও কীটপতঙ্গকে আশ্রয় দেয় এবং খাদ্য যোগায়।
যতবেশি গাছ লাগানো হবে, পরিবেশ ততবেশি সমৃদ্ধ হবে। পরিবেশে বসবাসরত প্রতিটি প্রাণী প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে। তাই বলা যায়, খোরশেদ ও তারেকের গৃহীত কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
২. মধুপুর গ্রামের মানিক একজন বেকার যুবক। বড় ধরনের খামার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জমি বা সামর্থ্য না থাকায় তার কৃষিবিদ বন্ধু আবিদ তাকে মুক্ত পদ্ধতিতে কিছু মুরগি পালন করার পরামর্শ দিল। আবিদ মানিককে আরও জানাল যে, সে গ্রামের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে উপকারভোগী হতে পারে।
ক. হার্ডেনিং কী?
খ. কোনো এলাকায় বনাঞ্চলের বিসত্মৃতি ঘটালে সে এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়ে কেন?
গ. আবিদের পরামর্শকৃত মুরগি পালন পদ্ধতির সুবিধাসমূহ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত কর্মসূচির অংশগ্রণের জন্য মানিকের যেসব গুণাবলি থাকতে হবে তা বিশ্লেষণ করো।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নার্সারিতে চারা মাটি থেকে উত্তোলনের পর ১৫-২০ দিন (চারা মূল জমিতে রোপণ করার আগে) হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে। রেখে অল্প সেচ দিয়ে চারাকে শক্ত সবল করে তোলার প্রক্রিয়াই হলো হার্ডেনিং।
খ. বন হলো প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট উদ্ভিদ প্রজাতির দ্বারা আচ্ছাদিত স্থান।
বনভূমি উদ্ভিদের প্রস্বেদন হার বৃদ্ধির মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়ায়। যা মেঘের সৃষ্টি করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। তাই, কোনো এলাকায় বনাঞ্চলের বিসত্মৃতি ঘটালে সে এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়ে।
গ. আবিদ মানিককে মুক্ত পদ্ধতিতে মুরগি পালনের পরামর্শ দেয়। মুক্ত পদ্ধতিতে মুরগি পালনের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ-
i. বাড়ির আশেপাশে, মাঠে চরে খায় বলে বাইরে থেকে খাদ্য সরবরাহ করার প্রয়োজন হয় না, ফলে খাদ্য খরচ কম হয়।
ii. সারাদিন বাইরে থাকে বলে উন্নত বাসস্থানের প্রয়োজন হয় না।
iii. মুরগি সবুজ শাকসবজি, ঘাসপাতা ইত্যাদি থেকে জ্যান্থফিল পেয়ে থাকে যা তার ডিমের কুসুমকে হলুদ করে। ডিমের কুসুম হলুদ হলে বাজারে চাহিদা বেশি হয়।
iv. মুরগি খোলামেলা পরিবেশ পায় বলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে, দেহের গঠন সুঠাম এবং মাংসপেশি মজবুত ও পুষ্ট হয়।
v. সূর্যকিরণ ও শাকসবজিতে প্রাপ্ত ভিটামিন মুরগির দেহে রোগ। প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
vi. তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
অতএব, বলা যায় আবিদের পরামর্শকৃত মুরগি পালন পদ্ধতির সুবিধা অনেক।
ঘ. মানিকের জন্য আবিদের দেয়া পরামর্শের একটি ছিলো সামাজিক বনায়নে অংশ গ্রহণ করে উপকারভোগী হওয়া। এক্ষেত্রে তার কিছু গুণাবলি থাকতে হবে।
জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় সামাজিক এলাকায় বৃক্ষরোপণ করে সামাজিক বন সৃষ্টি করা হয়। এ প্রকল্পের সফলতা প্রায় সম্পূর্ণরূপে উপকারভোগীদের দায়িত্ববোধ ও কর্মকান্ডের ওপর নির্ভরশীল।
গবাদিপশুর আক্রমণ হতে বাগান রক্ষা করতে সক্ষম এবং বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করতে উৎসাহী হবেন এমন ব্যক্তিকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত উপকারভোগীদের একত্রে কাজ করার মানসিকতা, সম্পদের সংরক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার উপযোগী করার জন্য সাংগঠনিক দৃঢ়তা ও দায়িত্ব পালনের উপযোগী হতে হবে। দল নির্বাচনে সদস্যদের বর্তমান ও অতীত কার্যাবলি মূল্যায়ন করা হয়। এছাড়া দলীয় সদস্যদের সামাজিক ও অবস্থানগত বিষয়াদিও বিবেচনায় আনা হয়। উপকারভোগীদের উপদেশ গ্রহণের আগ্রহ ও সদিচ্ছা থাকতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা ও অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। উপকারভোগীদের মধ্যে পরিবর্তন সহনশীলতা বা গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে।
অর্থাৎ, সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী হিসেবে মানিকের উপরে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহ থাকতে হবে।
৩. বাংলাদেশে পশু সম্পদ উন্নয়নে অন্যতম সমস্যা হলো পশুখাদ্য স্বল্পতা। এ কারণে এ দেশে পশু ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারছেন না। বাংলাদেশে পশু সম্পদ উন্নয়নে সম্ভাবনা বিষয়ক সেমিনারে পশুসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, কৃষি বন সৃষ্টির মাধ্যমে পশুখাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ক. কৃত্রিম বন কাকে বলে?
খ. পারিবারিক চাহিদা পূরণে বসত বনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল তা বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যা সমাধানে পশু সম্পদ কর্মকর্তার উক্তিটি মূল্যায়ন করো।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ও অংশগ্রহণে পরিকল্পিতভাবে নতুন করে গাছ লাগিয়ে যে বন তৈরি করা হয় তাকে কৃত্রিম বন বা মনুষ্য সৃষ্ট বন বলে।
খ. পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে বসতবাড়ির আশপাশে স্বল্প পরিসরে যে গাছ লাগানো হয় তাকে বসত বন বলে।
বসত বনে সাধারণত ফলদ বৃক্ষ ও সবজি রোপণ করা হয়। এতে পরিবারের সদস্যদের ফল ও সবজির চাহিদা পূরণ হয়। জ্বালানি কাঠের ৮৫ ভাগ আসে বসত বন হতে। এই বনের বৃক্ষের পাতা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং বৃক্ষের কাঠ পারিবারিক আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তাই পারিবারিক চাহিদা পূরণে বসত বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে পশুসম্পদ উন্নয়নের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে পশুসম্পদ উন্নয়নে অনেক সমস্যা বিদ্যমান। তার মধ্যে একটি হলো পশুখাদ্যের স্বল্পতা। পশুর প্রধান খাদ্য হলো সবুজ কাঁচাঘাস। কিন্তু বনভূমি ও অন্যান্য পতিত জমি ক্রমাগত চাষের আওতায় আনার ফলে গবাদিপশুর চারণক্ষেত্রের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদনের জন্য ভূমির ব্যবহারের কারণে পশুর জন্য কৃষি জমিতে কাঁচাঘাস উৎপাদনও সম্ভব হয় না। আবার পশুর দানাদার খাদ্যের যোগানও সমেত্মাষজনক নয়। শুকনো খঙ ও মানুষের খাদ্যের অবশিষ্টাংশ পশুকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া পশু পালনের ক্ষেত্রে আরও সমস্যার মধ্যে রয়েছে পশু সম্পদের স্বল্পতা, নিম্নজাতের পশু, রোগব্যাধির ব্যাপকতা, পশুখাদ্যের স্বল্পতা, ভূমির স্বল্পতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, প্রজনন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ইত্যাদি।
তাই বলা যায়, পশু সম্পদের উন্নয়নের অন্তরায় কাটিয়ে উঠার মাধ্যমে পশু সম্পদের উন্নয়ন সম্ভব।
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণিত সমস্যা সমাধানে পশুসম্পদ কর্মকর্তার উক্তিটি ছিলত 'কৃষি বন সৃষ্টির মাধ্যমে পশুখাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা'।
মাঠ ফসলে উৎপাদনকারী জমির আইলে বা অন্তর্বর্তীস্থানে এবং চারপাশে ফসলের কোনোরূপ ক্ষতি হয় না এমন সব প্রজাতির গাছ লাগিয়ে যে বনায়ন করা হয় তাকে কৃষি বন বলে। এ বনের উল্লেখযোগ্য বৃক্ষগুলো হলো বাবলা, কড়ই, তাল, খেজুর, খয়ের, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি।
কৃষি বনায়নের অনেক সুবিধা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো পশুখাদ্য উৎপাদন। কৃষি বনায়নের ফসল বন, তৃণবন, কৃষি তৃণবনের ক্ষেত্রে পশুখাদ্য উৎপাদন করা অন্যতম একটি লক্ষ্য। ফলদ বৃক্ষ ও অন্যান্য ফসল এখানে চাষাবাদ করা হয় পশুখাদ্য হিসেবে। বড় ফলদ বৃক্ষের পাতা সংগ্রহ করে খরা ও বন্যার সময় পশুকে প্রদান করা যায়। এছাড়া অন্যান্য সময় রোপণকৃত ভুট্টা, সরগম পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কৃষি বনায়নের অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা, ফসলি জমির বহুবিধ ব্যবহার, গ্রামীণ জনজীবনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়ন, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, মাটির ক্ষয়রোধ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ। অতএব, বাংলাদেশে পশুপালনের ক্ষেত্রে কৃষি বন পশু খাদ্যের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
উল্লিখিত আলোচনার আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যা সমাধানে পশু সম্পদ কর্মকর্তার উক্তিটি যথার্থ।
৪. 'কৃষি মেলা-২০১৮' নামক ব্যানার দেখে আজাদ মেলায় প্রবেশ করল। পরিদর্শনের সময় একটি স্টলে সে সময়ভিত্তিক বিভিন্ন ফসলের নাম, সেগুলোর রোপণ, জমি প্রস্তুত, আগাছা দমন, সার প্রয়োগ, পানি সেচ ও নিষ্কাশন, রোগ-বালাই ও পোকামাকড় দমন, কর্তন সময় ইত্যাদি কার্যক্রম উল্লেখসহ তালিকা দেখতে পেল। সে মেলায় কৃষিবিষয়ক অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কেও ধারণা লাভ করে।
ক. মিশ্র শস্য চাষ কাকে বলে?
খ. শস্য পর্যায়ের নীতিমালাগুলো কী কী?
গ. আজাদের দেখা তালিকাটির গুরুত্ব বর্ণনা করো।
ঘ. সমাজ ও অর্থনীতিতে আজাদের পরিদর্শনকৃত মেলার উপযোগিতা বিশ্লেষণ করো।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো প্রধান ফসলের সাথে অন্য একটি শস্য বীজ একত্রে বপন করে উৎপাদন করা হলে তাকে মিশ্র ফসল চাষ বলে।
খ. একটি নির্দিষ্ট জমিতে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচিত কিছু শস্য ধারাবাহিকভাবে জন্মানোকে শস্য পর্যায় বলা হয়।
শসা পর্যায় বা শস্যচক্রের নীতিমালাগুলো হলো-
i. স্থানীয় জলবায়ু, ভূমির বন্ধুরতা, মৃত্তিকার প্রকৃতি, পানি সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ইত্যাদি বিবেচনা করে ফসল নির্বাচন করা।
ii. স্থানীয় চাহিদা বিবেচনা করে ফসল নির্বাচন করা এবং অধিক খাদ্যোপাদান শোষণকারী ফসল চাষের পূর্বে সবুজ সার জাতীয় ফসল চাষ করা।
গ. আজাদের দেখা তালিকাটি ছিল একটি শস্য পঞ্জিকা।
শস্য পঞ্জিকা হলো শস্য চাষের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় কাজের কর্মসূচি। কোনো খামারে কী কী ফসল জন্মানো হবে, বারো মাসের মধ্যে কোন মাসে কোন কাজ সম্পাদন করতে হবে এবং তা সম্পাদন করতে হলে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তার সারমর্মধর্মী পরিকল্পনাকে শস্য পঞ্জিকা বলে।
শস্য পঞ্জিকার মাধ্যমে ফসলের জীবনকাল সহজেই জানা যায়। বহুবিধ ফসল চাষের পরিকল্পনা করা যায়। সঠিক সময়ে বীজ, সার, কীটপতঙ্গ দমনের পদ্ধতি ব্যবহারে সহায়তা করে। বিভিন্ন ফসলের সঠিক পরিচর্যার জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে সাহায্য করে। শ্রমের সুষ্ঠু ব্যবহারে সুবিধা হয়। সুবিন্যস্ত খামার ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে। উপকরণের চাহিদা ও ব্যবহার মাত্রা নির্ধারণ করা যায়। ফসলের সম্ভাব্য ফলন, উৎপাদন ব্যয় ও আয়ের ধারণা করা যায়। এছাড়া কোনো কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে স্থানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো বিকল্প ফসল চাষ করা যায় কিনা সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
উপরের আলোচনা হতে অনুধাবন করা যায়, আজাদের দেখা শস্য তালিকাটির গুরুত্ব অপরিসীম।
ঘ. মাসুম তার বাবার সাথে কৃষি ও বৃক্ষ মেলায় গিয়ে কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী সম্পর্কে জানতে পারল।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কৃষিমেলার গুরুত্ব অনেক বেশি। কৃষি ও বনায়ন ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার মাত্র ২৫-৩৫%। মেলার মাধ্যমে নতুন উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিসমূহের সুফল দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছায়। ফলে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ মাধ্যমে জনগণ একদিকে যেমন ফসল সংক্রান্ত তথ্যাদি জানতে পারে, অপরদিকে নিজের বসত বাড়ির আঙিনা, পতিত জমিতে বৃক্ষ রোপণের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়। মেলায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রযুক্তিবিদদের সাথে কৃষক ও সাধারণ মানুষের জনসংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি উৎপাদন ও বনায়নে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। নতুন নার্সারিতে মাদার ট্রি তৈরি করার জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কৃষিমেলার মাধ্যমে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়। কৃষিজ উৎপাদন ও বনায়নে একজনের দেখাদেখি অন্যরাও উৎসাহিত হয়।
অতএব, মাসুমের দেখা কৃষিমেলা গণসচেতনতা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫. আমলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি বন পরিদর্শনে যায়। এই বনে। তারা বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এবং পশুপাখি দেখতে পায়। ফলে। তারা নির্মল আনন্দ লাভ করে। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিশিক্ষকের নিকট। এই বনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শুধুমাত্র এই বন নয়, বাংলাদেশের সব বনই অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে'।
ক. বায়োডাইভারসিটি কাকে বলে?
খ. সামাজিক বনায়নের চারটি উদ্দেশ্য লেখো।
গ. শিক্ষার্থীদের পরিদর্শনকৃত বনের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. শিক্ষকের উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবের প্রাকৃতিক উপস্থিতি, বিসত্মৃতি, আনুপাতিক পারস্পরিক সহাবস্থানকে বায়োডাইভারসিটি বলা হয়।
খ. জনগণের সম্পৃক্ততায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যে বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় তাই সামাজিক বনায়ন।
সামাজিক বনায়নের চারটি উদ্দেশ্যে হলো-
i. উডলট তৈরি
ii. সার্বিক কৃষি উন্নয়ন বৃদ্ধি করা
iii. জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করা
iv. কুটির শিল্পে কাঁচামালের যোগান দেওয়া।
গ. উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা পাহাড়ি বনে শিক্ষা সফরে গিয়েছিল।
পাহাড়ি বনের বিভিন্ন প্রকার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে-
১. পাহাড়ি বনের অধিকাংশ বৃক্ষ চিরহরিৎ, আংশিক চিরহরিৎ ও পত্রমোচী। এই বনের প্রধান প্রধান বৃক্ষ হলো- সেগুন, শীলকড়ই, চাপালিশ, মেহগনি, জারুল, হিজল, গামার, কড়ই, চালতা ইত্যাদি।
২. পাহাড়ি বনের প্রধান কুটির শিল্পজাত বৃক্ষ হলো বিভিন্ন প্রকার বাঁশ ও বেত। বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর অধিকাংশই পাহাড়ি এলাকায়।
৩. পাহাড়ি বনের প্রধান প্রধান প্রাণী হলোত হাতি, বিভিন্ন প্রকার বাঘ, নেকড়ে, শূকর, হরিণ, কাঠবিড়ালি, বানর, সাপ, গিরগিটি, গুইসাপ ইত্যাদি।
৪. এ বনের প্রধান পাখি হলো- বনমুরগি, ময়না, টুনটুনি, কাঠঠোকরা, ধনেশ ইত্যাদি।
৫. বাংলাদেশের পাহাড়ি বনে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়। যেমন-বরাক, মুলি, মরাল, তল্লা, নলী ইত্যাদি।
ঘ. শ্রেণিশিক্ষক শিক্ষার্থীদের সহ পাহাড়ি বন বাংলাদেশের সকল বনের অর্থনীতিতে রাখা গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করলেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে বনজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্যের জন্য আমরা কোনো না কোনোভাবে বৃক্ষের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া খাদ্য মুখরোচক ও সুপাচ্য করার জন্য যেসব ফসল আমরা ব্যবহার করি তার প্রধান উৎস বনজ উদ্ভিদ। সাধারণত বাড়িঘর তৈরিতে মেহগনি, পিতরাজ, গর্জন, সেগুন ইত্যাদি বৃক্ষ ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে যেসব কাঁচা ঘর নির্মিত হয় তার উপাদান বাঁশ, কাঠ, শন, গোলপাতা ইত্যাদি বন থেকে প্রাপ্ত। যানবাহন, বৈদ্যুতিক খুঁটি, কৃষি যন্ত্রপাতি বিভিন্ন প্রকার ঘরবাড়ি কাঠ দ্বারা তৈরি হয়। আমাদের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র যেমন চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি প্রভৃতি তৈরিতে বনভূমির বৃক্ষের কাঠ ব্যবহৃত হয়। শিক্ষার উপকরণ যেমন-কালি, কলম, পেন্সিল, স্কেল ইত্যাদি তৈরি হয় সরাসরি বৃক্ষ থেকে। গৃহ নির্মাণ, আসবাব তৈরি, শিক্ষা উপকরণ, ওষুধ শিল্প প্রভৃতি খাতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বন থাকায়। বাংলাদেশের হেকিমি, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথিক, এ্যালোপ্যাথিক এবং আয়ুবেদিয় ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আসে বনভূমি হতে। তাছাড়া বনভূমি হতে মধু, মোম, কাঠ সরবরাহ করে বহু লোক জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বনজ সম্পদের ওপর নির্ভর অনেক শিল্পদ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
বন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত। তাই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করা আমলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের উক্তিটি যথার্থ।
৬. ব্যবহারিক কাজের অংশ হিসেবে কিশলয় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে কৃষিশিক্ষক মোস্তফা স্যার জাতীয় বৃক্ষমেলা পরিদর্শনে যান। মেলায় "জাতীয় বৃক্ষমেলা" শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বৃক্ষমেলার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন। এছাড়া বক্তরা মেলার সফল বাস্তবায়নের জন্য অনুষ্ঠান পদ্ধতিতে নিম্নোক্ত বিষয় তিনটির ওপর গুরুত্বারোপ করেনত
A- সাংগঠনিক উপাদান
B- ব্যবস্থাপনা উপাদান
C- কারিগরি উপাদান
ক. বনায়ন কাকে বলে?
খ. বনজ সম্পদ বলতে কী বোঝ?
গ. বক্তাদের আলোচিত বিষয়টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখো।
ঘ. মেলাটির সফল বাস্তবায়নে A, B ও C এর সঠিক সমন্বয়ের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বনায়ন হলো বনজ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বৃক্ষ রোপণ, পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি।
খ. বনভূমি হতে উৎপাদিত মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য, ফলমূল, কাঠ, ভেষজ বা ঔষধি দ্রব্য ও কাঁচামালকে বনজ সম্পদ বলে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সাথে সাথে বনজ সম্পদের চাহিদা বেড়েছে। বনায়নের মাধ্যমে বনভূমি হতে সর্বাধিক বনজ সম্পদ/ দ্রব্য উৎপাদনের মাধ্যমে সে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
গ. বক্তাদের আলোচিত বিষয় হলো 'জাতীয় বৃক্ষমেলা'। এই মেলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-
i. বৃক্ষরোপণকে নির্দিষ্ট সীমায় সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছর যাতে মানুষ বৃক্ষ রোপণ করে সে বিষয়ে জনগণকে উৎসাহিত করা।
ii. জনগণের চাহিদা অনুযায়ী ফল, কাঠ, ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধন চারা সরবরাহ করা।
iii. বিভিন্ন ফলদ, বনজ গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধি গাছের রোপণ, পরিচর্যা ও উপকারিতা তুলে ধরা।
iv. বৃক্ষের চারা উৎপাদন ও রোপণে উন্নত প্রযুক্তি প্রদর্শন ও সরবরাহ করা।
v. বৃক্ষরোপণের অর্থনৈতিক দিক তুলে ধরা।
vi.বিরূপ জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বন ও বনায়নের ভূমিকা সম্পর্কে জানানো।
vii. নতুন নতুন বৃক্ষ প্রজাতি ও চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচিত করা।
viii. মেলার মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ স্টল মালিক ও প্রতিষ্ঠানকে পুরুস্কৃত করা।
অর্থাৎ, মানুষকে বৃক্ষরোপণে আগ্রহী করে তোলা এবং দেশের আর্থসামজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন সাধনই বৃক্ষমেলার মূল উদ্দেশ্য।
ঘ. A, B ও C হলো যথাক্রমে বৃক্ষমেলার সাংগঠনিক, ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি উপাদান। মেলা সফল হওয়ার জন্য এ তিনটি বিষয়ের সমন্বয় সাধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মেলার সাংগঠনিক, ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি উপাদান আবার কিছু কর্মকান্ড- বিভক্ত। যেমন- সাংগঠনিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে মেলার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, নির্বাচিত স্থানের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা এবং স্থানটিকে আলাদা করার জন্য চারদিকে বেষ্টনী তৈরি করা। স্থান নির্বাচনের পর মেলার জন্য উপযুক্ত সময় ও তারিখ নির্ধারণ করা। যেমনত ছুটির দিনে লোক সমাগম বেশি হয়ে থাকে। তাই ছুটির দিনে মেলা আয়োজনের চেষ্টা করা। আবার বর্ষকাল বৃক্ষরোপণের উত্তম সময়, তাই বর্ষকালে মেলা অনুষ্ঠিত হলে মেলার উদ্দেশ্য সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে স্টলের যুগোপযোগী নকশা তৈরি করা। রাতের বেলায় আকর্ষণীয় করার জন্য আলোর ব্যবস্থা করা। মেলার উদ্বোধনী ও সমাপ্তি অনুষ্ঠান করা। মেলার ব্যবস্থাপনা উপাদানের মধ্যে রয়েছে স্টল বরাদ্দকরণ, চুক্তি সম্পাদন ও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য প্রতিটি স্টলে ব্যাখ্যাকারী রাখা। যাতে করে তারা যেকোনো তথ্য খুব সহজে পেতে পারে। মেলা সম্পর্কে সবার আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য স্টলের কার্যক্রমের ভিত্তিতে পুরস্কারের আয়োজন করা। এছাড়া দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চা পানের স্টল ও গেটে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। মেলার কারিগরি উপাদানের মধ্যে রয়েছে স্টলে গাছ ও চারার বিন্যাস সঠিকভাবে করা ও তাদের এমনভাবে সাজানো যাতে করে খুব সহজে দর্শনার্থীদের চোখে পড়ে। চারাগুলোকে সতেজ ও সবল রাখার জন্য সেগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যা করা। চারাগুলোকে যেন খুব সহজে শনাক্ত করা যায় এজন্য এগুলোর গায়ে লেবেলিং করা।
আলোচিত উপাদানগুলোর সঠিক সমন্বয় সাধিত হলে বৃক্ষমেলা সফল ও কার্যকর হবে। কেননা উপাদানগুলোর সঠিক সমন্বয়ের ফলে জনসাধারণ মেলা থেকে বিভিন্ন তথ্য সহজে পেয়ে উপকৃত হবে এবং মেলার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তাই এই তিনটি উপাদানের সমন্বয় সাধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৭. মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে মধুপুর এলাকার পার্শ্ববর্তী একটি সামাজিক বন পরিদর্শন করে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জানায়, দেশে বনের পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায়। এলাকার বিশেষ শ্রেণির মানুষের সহযোগিতায় এই ধরনের বনের সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বন থেকে এলাকার মানুষ যেমন উপকৃত হয় তেমনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও এ বন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ক. ভেষজ উদ্ভিদ কাকে বলে?
খ. কৃষি মেলার জন্য নির্বাচিত কোন ধরনের ফসল প্রজাতি নির্বাচন করা হয়?
গ. উদ্দীপকে যে বিশেষ শ্রেণির কথা বলা হয়েছে উক্ত বন সৃষ্টিতে তাদের গুণাবলি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত বনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সকল বনজ উদ্ভিদ বা এদের বাকল, পাতা, শিকড়, ফুল, ফল প্রভৃতি ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাদেরকে ভেষজ উদ্ভিদ বলা হয়।
খ. শস্য উৎপাদনের নতুন কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হলে তা দেশের সম্পৃক্ত বিজ্ঞানী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট উপস্থাপন করার জন্য যে মেলার আয়োজন করা হয় তাই কৃষিমেলা।
কৃষি মেলার জন্য অধিক উৎপাদনশীল, নির্দিষ্ট এলাকা ও মৌসুমের জন্য উপযোগী, সব জায়গায় পাওয়া যায় না এমন ফসল প্রজাতি নির্বাচন করা হয়। এখানে সর্বশেষ আবিষ্কৃত এবং উচ্চ ফলনশীল মাঠ ফসলের বীজ প্রদর্শন ও সরবরাহ করা হয়। যেমন- বিনাধান-৭, বারি গম-২৫ ইত্যাদি।
গ. উদ্দীপকে যে বিশেষ শ্রেণির কথা বলা হয়েছে তারা হলেন সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী।
জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে সরকারের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় সামাজিক এলাকায় বৃক্ষরোপণ করে সামাজিক বন সৃষ্টি করা হয়। প্রকল্পের সফলতা প্রায় সম্পূর্ণরূপে উপকারভোগীদের সামাজিক বনায়নের দায়িত্ববোধ ও কর্মকান্ডের ওপর নির্ভরশীল। বনায়নের ক্ষেত্রে গবাদি পশুর আক্রমণ হতে বাগান রক্ষা করতে সক্ষম এবং বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করতে উৎসাহী হবেন এমন ব্যক্তিকে উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। উপকারভোগীদের একত্রে কাজ করার মানসিকতা, সম্পদের নির্বাচিত সংরক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার উপযোগী করার জন্য সাংগঠনিক দৃঢ়তা ও দায়িত্ব পালনের উপযোগী হতে হয়। দল নির্বাচনে সদস্যদের বর্তমান ও অতীত কার্যাবলি মূল্যায়ন করতে হয়। এছাড়া দলীয় সদস্যদের সামাজিক ও অবস্থানগত বিষয়াদিও বিবেচনায় আনতে হয়। উপকারভোগীদের উপদেশ গ্রহণের আগ্রহ ও সদিচ্ছা থাকতে হয়। পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা ও অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। উপকারভোগীদের পরিবর্তন সহনশীলতা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হয়।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের উপরে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহ থাকতে হবে। তাহলেই সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম সফল হবে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বনটি হলো সামাজিক বন।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সামাজিক বনায়নের অবদান অপরিসীম। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ, মরুবিস্তার ও ভূমিক্ষয় রোধের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বাগান তৈরি, পাহারা দেওয়া, রক্ষণাবেক্ষণ, আসবাবপত্র তৈরি, বিক্রয়, নার্সারি স্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে বনজ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণে। কৃষি কাজের অনুপযোগী পতিত ও অব্যবহৃত ভূমিতে সামাজিক বনায়ন করা হয় বলে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। তাছাড়া ভূমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ভূমিক্ষয় রোধ হয় বা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সামাজিক বন এলাকার পরিবেশকে ঠান্ডা, নির্মল ও দূষণমুক্ত রাখে। এমনকি আশেপাশের অঞ্চলকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। এছাড়া বৃক্ষ মরুময়তা রোধ করে, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ও কমায় ও অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। বন প্রাণী খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষা করে। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, অণুজীব পারস্পরিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য গতিময় রাখে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হয়।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে বলা যায়, সামাজিক বন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
৮. জাহানাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপণ দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় বৃক্ষ রোপণের কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ জন্য তারা বিদ্যালয়ের মাঠের এক প্রান্তে মেহগনি চারা রোপণের উদ্দেশ্যে ১০টি গর্ত তৈরি করে। এসব গর্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার প্রয়োগ করে এবং চারা রোপণের সব ধাপ যথাযথভাবে পালন করে।
ক. বসত বন কী?
খ. ফসল কৃষি বনের বৈশিষ্ট্য লেখো।
গ. উক্ত গর্তে প্রয়োগকৃত সারের পরিমাণ নির্ণয় করো।
ঘ. শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে বসত বাড়ির আশপাশে স্বল্প পরিসরে গাছ লাগিয়ে যে বন তৈরি করা হয় তাই বসত বন।
খ. ফসল কৃষি বনে একই সাথে একই জমিতে পর্যায়ক্রমিকভাবে বৃক্ষ, খাদ্য ও পশুখাদ্যের চাষাবাদ করা হয়। ফসল কৃষি বনের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
i. প্রধান উদ্দেশ্য খাদ্য উৎপাদন করা।
ii. স্বল্প খরচে বন সৃষ্টি করা যায়।
iii. স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন গাছ ও আন্তঃফসলের সমন্বয়ে গঠন করা যায়।
iv. বসত বনে চাষ করা যায়।
গ. শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ১০টি মেহগনি গাছের চারা রোপণের উদ্দেশ্যে গর্ত তৈরি করে।
বৃক্ষের চারা রোপণের কিছু নিয়মকানুন পালন করতে হয়। গাছের চারা সঠিকভাবে রোপণ করলে গাছ দ্রুত স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বেড়ে ওঠে। চারা রোপণের জন্য গর্ত তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রতিটি গর্তের জন্য ১০ কেজি গোবর, ৩ কেজি ছাই, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৭৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। শিক্ষার্থীরা যেহেতু ১০টি গর্ত তৈরি করেছিল। তাই তাদের গর্তে সার প্রয়োগ করতে হবে- গোবর ১০ × ১০ = ১০০ কেজি, ইউরিয়া ১০ × ১৫০ = ১৫০০ গ্রাম বা ১.৫ কেজি, টিএসপি ১০০ × ১০ = ১০০০ গ্রাম বা ১ কেজি, ছাই ৩ × ১০ = ৩০ কেজি, এমওপি ৭৫ × ১০ = ৭৫০ গ্রাম।
চারার বৃদ্ধি অনেকাংশে সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগের ওপর নির্ভর করে। তাই চারা রোপণের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা জরুরি।
ঘ. উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা বৃক্ষরোপণের কার্যক্রম গ্রহণ করে।
কোনো এলাকার বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি বনাঞ্চল দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। তাই সকল এলাকায় পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি হিসেবে প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ ১৭% এবং বেসরকারিভাবে প্রকৃত বনভূমির পরিমাণ ১০% এর কম।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশ্বকে বসবাসের উপযোগী রাখার ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। গাছ প্রস্বেদনের হার বাড়িয়ে পরিবেশ নির্মল রাখে। বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়িয়ে আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতা হ্রাস করে। বায়ুমন্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে জীবকূলের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে। শিকড়ের সাহায্যে ধাতব কণাকে ধারণ করে পানি দূষণ রোধ করে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া রোধে ভূমিকা রাখে এবং বনজ উদ্ভিদ ভূমির আচ্ছাদন হিসেবে কাজ করে এবং ভূমিক্ষয় রোধ করে। বনাঞ্চল, বায়ু প্রবাহের গতিরোধ করে পরিবেশের বিপর্যয় কমায়। বনাঞ্চল ঝড়ঝঞ্ঝা ও জলোচ্ছ্বাসজনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করে। বন্য জীবজন্তু, পাখি ও কীটপতঙ্গকে আশ্রয় দেয় এবং খাদ্য যোগায়।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমটি যথাযথ ও যুক্তিযুক্ত।
৯. হাবিব সাহেব বাড়ির পাশের দুই খন্ড নিচু জমিতে ফলের বাগান করলেন।
ক. পত্রঝরা বন কাকে বলে?
খ. কৃষি মেলার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের কার্যক্রমটির জন্য আদর্শ স্থানের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো।
ঘ. হাবিব সাহেবের জমিতে ফলের বাগান করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত মতামত দাও।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শীতকালে বৃষ্টিপাত ও তাপের অভাবে যে বনের গাছের পাতা ঝরে পড়ে তাকে পত্রঝরা বন (যেমন- শাল বন) বলে।
খ. কৃষি মেলায় কৃষকের উৎপাদিত ও বাছাইকৃত কৃষিপণ্য এবং ফসল উৎপাদন, সংরক্ষণ, মাড়াই, ঝাড়াই ইত্যাদির উন্নত প্রযুক্তি প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হয়।
এ মেলার মাধ্যমে কৃষকেরা পরিবশেসম্মত উপায়ে কৃষি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হয়। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রস্তুতকৃত কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বাজারজাতকরণের সুযোগ পায়। এতে সার্বিকভাবে দেশের কৃষির তথা কৃষি অর্থনীতির উন্নয়ন সাধিত হয়। তাই বলা যায়, কৃষি মেলার গুরুত্ব অপরিসীম।
গ. উদ্দীপকে হাবিব সাহেব তার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে ফলের বাগান করেন। ফলের বাগান করার ক্ষেত্রে আদর্শ স্থানের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে দেয়া হলো-
✓ জমি উঁচু হতে হবে, যাতে বন্যার পানি না উঠে।
✓ মাটির বুনট উর্বর, দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ প্রকৃতির হতে হবে।
✓ মাটির অম্লমান ৬-৭ এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হতে হবে।
✓ চারা রোপণের স্থান ছায়ামুক্ত হতে হবে।
✓ নির্বাচিত স্থানের মাটি সুনিষ্কাশিত হবে এবং অতিরিক্ত পানি জমে থাকবে না।
✓ জায়গাটি খোলামেলা এবং সূর্যালোকযুক্ত (দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা সূর্যালোক) হতে হবে।
✓ বসতবাড়ির দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হলে ভালো হয়।
ঘ. উদ্দীপকে হাবিব সাহেবের বসতবাড়ির পাশের জমিটি মূলত নিচু।
ফলের বাগান করার ক্ষেত্রে জমি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলের বাগান করার জন্য সুষ্ঠু ও কার্যকর পরিকল্পনা করা জরুরি। ফলের বাগানের জমি অবশ্যই বন্যামুক্ত উঁচু ও সামাজিক এলাকা (বসত বাড়ির আশেপাশে) হতে হবে। এছাড়া মাটি উর্বর, সুনিষ্কিাশিত এবং দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ প্রকৃতির হতে হবে। বসত বাড়ির আশেপাশে ফলের বাগান করলে তা দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হলে ভালো হয়।
ফলের বাগানের জন্য জমি উঁচু নির্বাচন করার কারণ চারা গাছ দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকলে এদের গোড়া পচে যায়। যার ফলে ফল গাছের চারা মারা যায়। আবার বন্যা বা বৃষ্টি হলেও পানি জমে ফলদ বৃক্ষের চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অর্থাৎ, হাবিব সাহেবের বসতবাড়ির পাশের দুই খন্ড নিচু জমিতে ফলের বাগান করার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক হয়নি।
১০. রাকিব তার বন্ধু সুমনকে একদিন রাস্তার পাশে একটা গর্তে সার প্রয়োগ করতে দেখল। রাকিব রাস্তার পাশে এ কাজ করার কারণ জানতে চাইলে সুমন বলল সে সামাজিক বনায়নে অংশ নিয়েছে। সুমন রাকিবকে এ ধরনের বনায়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও বলল।
ক. পত্রঝরা বন কাকে বলে?
খ. বাংলাদেশ জীববৈচিত্রের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত কেন?
গ. সুমনের পরবর্তী কাজের ধাপ কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সর্বশেষে সুমন রাকিবকে যা বলল তা বিশ্লেষণ করো।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শীতকালে বৃষ্টিপাত ও তাপের অভাবে যে বনের গাছের পাতা ঝরে পড়ে তাকে পত্রঝরা বন বলে।
খ. আমাদের চারিপার্শ্বস্থ পরিবেশে বর্তমান বিভিন্ন ধরনের জীবের উপস্থিতি ও সহাবস্থানই হচ্ছে জীববৈচিত্র।
বাংলাদেশকে জীববৈচিত্রে্যর ভান্ডার বলা হয় কারণ এ দেশে প্রায় ৫০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং প্রায় ৫,০০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
গ. সুমন সামাজিক বনায়নে অংশ নিয়েছে। দায়িত্বের অংশ হিসেবে সুমন চারা রোপণ গর্তে সার প্রয়োগ করছে। গর্তে সার প্রয়োগের পরবর্তী ধাপটি হলো চারা রোপণ। ১০-১৫ দিন পর সুমন উক্ত গর্তে চারা রোপণ করবে।
নির্ধারিত দিনে বিকেল বেলা সে চারা রোপণের কাজটি করবে। প্রথমে সে তার সার প্রয়োগকৃত জায়গায় চারার গোড়ার আকার অনুসারে একটি গর্ত করবে। নির্ধারিত চারাটি টবে বা পলিথিনে থাকলে তা খুলে নিবে। তারপর চারাটি সে দুই হাতে গর্তে বসিয়ে দিবে। এরপর চারার গোড়া হালকা চেপে দিবে। এসময় পাশের নরম মাটিতে এমনভাবে চাপ দিবে যেন চারাটি সোজা থাকে। চারা পাত্রে থাকলে সে পাত্র ভেঙ্গে চারা রোপণ করবে। সবশেষে চারার চারপাশের খালি জায়গা সে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেবে। চারা গাছের বেঁচে থাকা ও ঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সঠিকভাবে চারা রোপণ করা অত্যন্ত জরুরি। তাই সুমন তার তৈরি গর্তে উপরিল্লিখিত উপায়ে চারা রোপণ করে।
ঘ. সুমন রাকিবকে সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলল।
সামাজিক বনায়ন এমন এক বন ব্যবস্থাপনা যার সাথে পল্লির দরিদ্র জনগোষ্ঠী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ বনায়নকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বৃক্ষ সম্পদ উন্নয়ন কর্মকান্ড নামে অভিহিত করা হয়।
সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য হলো সরকারি বনাঞ্চলের বাহিরের প্রান্তিক ও পতিত জমি বনায়নের মাধ্যমে জনসাধারণের চাহিদা পূরণ করে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে তাদের জীবনের মান ও পরিবেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন করা। কুটির শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের লক্ষ্যে বসত বাড়ি ও খামার পর্যায়ে বিবিধ গাছপালা উৎপাদন করা। পল্লি এলাকায় কৃষি-বন প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়ন সাধন করা। মূল্যবান কাঠ, ফলের গাছ ও দ্রুত বর্ধনশীল জ্বালানি কাঠের গাছ লাগিয়ে জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা। গাছের ফাঁকে ফাঁকে কৃষিজ ফসল, ফল ও সবজির চাষ করে আর্থিক উন্নয়ন সাধন করা। গ্রামীণ দুঃস্থ, দরিদ্র ও কর্মহীনদের বনায়নের সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন। জমিতে জৈব সারের সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে উর্বরতা বৃদ্ধি করা, ভূমিক্ষয়, দুর্যোগ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। গ্রামীণ জনগণকে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করা এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। সবুজ গাছপালার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা।
সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে মূলত পরিবেশগত উন্নয়নের পাশাপাশি, ছিন্নমূল জনসাধারণের চাহিদা পূরণ ও তাদের কর্মসংস্থানের দিকে জোর প্রদান করা হয়। অতএব, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই সামাজিক বনায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য।
0 Comments:
Post a Comment