HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩ - Exam Cares

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Agricultural Education
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. দুই বন্ধু শরিফ ও জহির যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে শরিফ ৩টি গরু নিয়ে একটি খামার স্থাপন করেন। অপরদিকে জহির তার বাড়ির পুকুরটিকে খনন করে তাতে মাছ চাষ করেন। উক্ত খামারে সে গ্রামের বেকার যুবকদের নিয়োজিত করেন।
ক. বাংলাদেশে ব্যবহৃত জ্বালানি কাঠের শতকরা কত ভাগ বসত বন থেকে আসে?
খ. গাছের ট্রেনিং এর উপকারিতা ব্যাখ্যা করো।
গ. শরিফ তার পালিত প্রাণীটির আবাসস্থল তৈরিতে কী কী বিষয় বিবেচনা করবেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জহিরের উদ্যোগটি মূল্যায়ন করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে ব্যবহৃত জ্বালানি কাঠের শতকরা ৮৫ ভাগ বসত বন থেকে আসে।

খ. কোনো গাছকে একটি উপযুক্ত আকার, আকৃতি ও কাঠামোদানের জন্য গাছের ডাল, শাখার সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ন্ত্রণই হলো বৃক্ষের ট্রেনিং।
ট্রেনিং করলে গাছের কাঠামো শক্ত হয় ফলে গাছ ঝড়-তুফানে ভেঙে পড়ে না। এছাড়া, ট্রেনিং উন্নতমানের ব্যবহারযোগ্য কাঠের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নির্দিষ্ট স্থানে বেশি সংখ্যক গাছ লাগানো যায়।

গ. শরিফ যুব উন্নয়ন কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৩টি গরু নিয়ে খামার স্থাপন করেন। এই আবাসস্থল তৈরিতে তিনি কিছু বিষয় বিবেচনা করবেন। শরিফ গরুর বাসস্থান উঁচু শুকনো জায়গায় করবেন যাতে সেখানে বৃষ্টির পানি জমতে না পারে। ঘর যেন স্যাঁতসেঁতে না হয় সেদিকে তিনি লক্ষ রাখবেন। ঘরে গোবর, মূত্র ও ঘরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য নালা বা ড্রেনের ব্যবস্থা রাখবেন। গোয়াল ঘর এমনভাবে তৈরি করবেন যাতে ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ঘরের চার পাশে বেড়া বা নিচে ৯০ সেমি দেয়াল দিয়ে উপরে জালের বেড়া দিবেন। প্রতিটি গাভির জন্য ৫ বর্গমিটার করে জায়গা রাখবেন। ঘরের পেছন দিকে একটু ঢালু রাখবেন, যাতে গোবর ও মূত্র সহজেই ড্রেনে যেতে পারে।
এভাবে, শরিফ গরুর আবাসস্থল তৈরি করবেন। এই আবাসস্থল তার গরুকে রোগ আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করবে।

ঘ. জহির যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তার পুকুরটি খনন করে তাতে মাছ চাষ করেন। এতে তিনি গ্রামের বেকার যুবকদেরও নিয়োজিত করেন।
জহির মাছ চাষ করে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে সচ্ছল হবেন, তেমনি এর মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টির সঠিক যোগানও পাবেন।
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ৬০% আমিষের যোগান দেয় মাছ। আবার সে গ্রামের বেকার যুবকদের নিয়োজিত করে কাজের সুযোগ করে দেয়। এটি দেশের বেকার সমস্যা দূর করার একটি উত্তম প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশে বিগত চার বছরে এ সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অতিরিক্ত বার্ষিক ৬ লক্ষাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আবার, বর্তমানে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসমূহে নিয়োজিত শ্রমিকের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই নারী। আর এসবই সম্ভব হয়েছে জহিরের মতো কিছু সাহসী উদ্যোক্তার জন্যে। তার মতো অন্য বেকার যুবকেরাও যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে মৎস চাষ করে, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তা ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থানে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।
অতএব বলা যায়, জহিরের উদ্যোগটি যথার্থ ছিল।

২. অনিকের পোল্ট্রি খামারে বার্ড ফ্লু এর সংক্রমণ হওয়ায় অনেক মুরগি মারা গেল। লোকসানের মুখে পড়ে তার পোল্ট্রি পালনে অনিহা এসে যাওয়ায় সে সংকর জাতের গরুর ডেইরি ফার্ম স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। ফার্মের উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের লক্ষ্যে পরামর্শের জন্য সে প্রাণিসম্পদ কমকর্তার শরণাপন্ন হলো।
ক. টিকাবীজ কাকে বলে?
খ. আয় বৃদ্ধিতে গবাদিপশুর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
গ. অনিকের খামারে সংক্রমিত রোগটির চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করো।
ঘ.প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সম্ভাব্য পরামর্শ বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মুরগি বা গবাদিপশুর রোগের প্রতিষেধককে টিকাবীজ বলে।

খ. গবাদিপশু আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবাদিপশুর মাংস ও মাংসজাত দ্রব্য এবং দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য বিক্রি করে প্রচুর আয় করা যায়। গবাদিপশু বিক্রি করে এককালীন অনেক টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে পশুসম্পদ হতে প্রাপ্ত কাঁচামাল ব্যবহার করা হয় যা, পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করে। এভাবে, গবাদিপশু আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

গ. অনিকের খামারে সংক্রমিত রোগটি হলো বার্ড ফ্লু।
একই ফার্মের বা কাছাকাছি এক পাখি হতে অন্য পাখিতে সংস্পর্শের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। মুরগির খামারের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, জিনিসপত্র ও মানুষের সাহায্যে জীবাণুগুলো বাতাসের সাথে স্থানান্তর হয় ও রোগের বিস্তার ঘটে। বার্ড-ফ্লু এর চিকিৎসা হিসেবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে-
১. সময়মতো টিকা প্রদান ও আক্রান্ত এলাকা পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
২. সুস্থ মুরগি থেকে অসুস্থ মুরগি আলাদা করতে হবে।
৩. আক্রান্ত মুরগি মেরে মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়ে ফেলতে হবে।
৪. রোগের আক্রমণ, সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে নিয়মিত খবর রাখতে এবং জৈব নিরাপত্তামূলক (Biosecutiry) ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো চিকিৎসা বা প্রতিকার নেই। তাই সময়মতো রোগের প্রাদুর্ভাব বুঝতে পারলে ও আক্রান্ত হবার পর সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বার্ড-ফ্লু রোগে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

ঘ. অনিক সংকর জাতের গরুর মাধ্যমে ডেইরি ফার্ম স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল।
ডেইরি ফার্ম দুধ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়। ডেইরি ফার্মের জন্য বসতবাড়ি হতে স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত স্থান নির্বাচন করা উচিত। এতে বাড়ি হতে দেখাশোনা করা সহজ হয় এবং পশুর মলমূত্র বা দুর্গন্ধ হতে পরিবেশও দূষণমুক্ত থাকে। ফার্মে পশুর মল-মূত্র অপসারণের জন্য নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশণ ব্যবস্থা থাকা উচিত। ডেইরি ফার্মের ঘর উত্তর বা দক্ষিণমুখী হওয়া ভালো। ঘরের পেছন দিকে একটু ঢালু রাখতে হবে, যাতে গোবর, মূত্র ও ঘরের আবর্জনা সহজেই ড্রেনে চলে যেতে পারে।
ডেইরি ফার্মের জন্য নির্বাচিত স্থান উঁচু হতে হবে যেখানে বর্ষায় পানি জমে থাকে না। ফার্মের মাটি কাঁকর ও বালি মিশ্রিত হলে পানি সহজেই মাটিতে শুকিয়ে যায়। ডেইরি ফার্মের ঘর যেন স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরের চারদিকে আম, জাম, লিচু, আমলকী, পেয়ারা, কাঁঠাল ইত্যাদির গাছ লাগানোর সুবিধা থাকলে ভালো হয়, কেননা তাতে পরিবেশ ঠান্ডা থাকবে এবং ঝড় হতে নিরাপদ থাকবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এমন স্থানে ফার্ম স্থাপন করতে হবে, কিন্তু কলকারখানা, বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের নর্দমা ইত্যাদি হতে দূরে হতে হবে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি, বাজার ব্যবস্থা ও পশুর খাদ্য প্রাপ্তির সুযোগ সুবিধার বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই, ডেইরি ফার্মের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অনিককে উপরে উল্লিখিত পরামর্শ দিবেন বলে আমি মনে করি।

৩. কৃষি শিক্ষক আজিজ স্যার আজ ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের দুটি দলে ভাগ করে দিলেন। শ্রেণির কাজ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দুটি দলের প্রথম দলকে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহীওয়াল, লাল সিন্ধি, হরিয়ানা এই ৫টি উন্নত জাতের গরুর উৎপত্তিস্থল, দুধ ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা পোস্টার পেপারে লিখতে বললেন। দ্বিতীয় দলকে গরুর খোলা ঘর ও বাঁধা ঘর পদ্ধতির বাসস্থানের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে বললেন।
ক. পশু সম্পদ কাকে বলে?
খ. গ্রেডিং আপ বা ক্রমোন্নতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের প্রথম দুটি উন্নত জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য লেখো।
ঘ. দ্বিতীয় দলটি প্রতিবেদনে কী লিখবে তা বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গৃহে পালিত যে সকল পশু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে তাদের পশু সম্পদ বলে।

খ. উন্নত জাতের পশুর সাথে অনুন্নত জাতের পশুর প্রজননের পর প্রজন্ম ধরে প্রজনন ঘটিয়ে ক্রমাগত পশুর জাতের উন্নয়ন সাধনকে বলে ক্রমোন্নতি বা গ্রেডিং আপ। সাধারণত বিদেশি ভালো গুণসম্পন্ন বিশুদ্ধ জাতের ষাঁড়ের সাথে দেশি গাভির ৭ প্রজন্ম পর্যন্ত প্রজনন করানো হলে প্রায় বিশুদ্ধ ও উন্নত গুণসম্পন্ন পশু তৈরি হয়। ক্রমোন্নতি প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত জাতের পশুর বৈশিষ্ট্য/গুণাগুণ সহজেই নতুন প্রজন্মের পশুর মধ্যে আনা সম্ভব হয়।

গ. উদ্দীপকের প্রথম দুটি উন্নত জাতের গরু হলো হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ও জার্সি। নিচে এদের বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো-
হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু:
i. দুধাল জাতের মধ্যে এরা সবচেয়ে বড় আকারের গরু। এদের গায়ের রং সাধারণত সাদা-কালো ছোপ মেশানো হয়।
ii. মাথা লম্বাটে, সরু ও সোজা হয়। এদের কুঁজ উঁচু হয় না।
iii. দিনে ৩০ লিটারের বেশি দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ ৩.৫-৪%।
iv. বড় আকারের গাভির ওজন ৫০০-৬০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৮০০-১০০০ কেজি হয়।
V. বকনা ১৮ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং ৩০ মাসে বাচ্চা দেয়।

জার্সি জাতের গরু:
i. গায়ের রং লাল, জিহবা ও লেজের রং কালো।
ii. মাথা লম্বা ও কুঁজ নেই, তাই শিরদাঁড় সোজা দেখায়।
iii. প্রতিদিন ২২ লিটার দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ ৬%।
iv. গাভি ও ষাঁড়ের ওজন যথাক্রমে ৪৫০ ও ৭০০ কেজি হয়।
iv. ২৪ মাসে প্রজননের উপযুক্ত হয়।
উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলি দেখে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান ও জার্সি জাতের গরু সহজেই শনাক্ত করা যাবে।

ঘ. শিক্ষক দ্বিতীয় দলকে গরুর খোলা ঘর ও বাঁধা ঘর পদ্ধতির বাসস্থানের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে বললেন। প্রতিবেদনটি নিম্নরূপ-
খোলা ঘর পদ্ধতির সুবিধা:
✓ বয়স্ক বাচ্চুর ও দুধ না দেওয়া গাভির জন্য অধিক উপযোগী।
✓ গাভির ওলান ও পায়ে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
✓ নির্মাণ খরচ কম এবং সহজেই সম্প্রসারণযোগ্য।
✓ বাঁধা ঘর পদ্ধতি অপেক্ষা ৫-১০% বেশি দুধ উৎপান করা যায়।
✓ গরম হওয়া পশুকে সহজেই শনাক্ত করা যায়।

খোলা ঘর পদ্ধতির অসুবিধা:
✓ দুর্বল পশু সবল পশুর সাথে প্রতিযোগিতা করে খেতে না পেরে আরও দুর্বল হয়।
✓ পশুদের পরস্পরকে আক্রমণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

বাঁধা ঘর পদ্ধতির সুবিধা:
✓ প্রতিকূল অবস্থা বা আবহাওয়ায় পশু নিরাপদ থাকে।
✓ কৃত্রিম প্রজননের জন্য সুবিধাজনক।
✓ বাঁধা স্থানে গাভির দুধ দোহন সহজ হয়।
✓ পশুর বিছানার জন্য খরচ কম হয়।

বাঁধা ঘর পদ্ধতির অসুবিধা:
✓ তুলনামূরক নির্মাণ খরচ বেশি।
✓ বর্ষাকালে খামারের ভেতরে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা বিরাজ করে।
অর্থাৎ, শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দলটি প্রতিবেদনে গরুর বাসস্থান সম্পর্কে উপরে উল্লিখিত সুবিধা-অসুবিধাসমূহ লিখবে।

৪. স্থানীয় পশু খামারে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দেখতে পেল খামারীরা একটি পদ্ধতিতে বায়ুনিরোধক অবস্থায় সংরক্ষিত ঘাস পশুকে সরবরাহ করছে। তারা খামারীর নিকট হতে প্রতিকূল আবহাওয়ার এ পদ্ধতির উপযোগিতা সম্পর্কে জানল।
ক. প্রসবান্তিক পক্ষাঘাত কাকে বলে?
খ. ছাগলের রোগ দমনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কী কী?
গ. খামারীরা যে পদ্ধতিতে ঘাস সংরক্ষণ করেছিল তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. খামারীদের গৃহীত পদক্ষেপটির উপযোগিতা মূল্যায়ন করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রসবের সময় কিংবা প্রসবের পর অনেক গাভি পক্ষাঘাতের মতো হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে, তাকে প্রসবান্তিক পক্ষাঘাত বলে।

খ. ছাগলের রোগ দমনে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। রোগ দমনের জন্য ছাগলের ঘর, খাদ্য ও পানির পাত্র জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধুতে হয়। বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী ছাগলকে আলাদা আলাদা ঘরে পালন করতে হয়। কোনো ছাগলের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখামাত্র তাকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। মৃত ছাগলকে খামার হতে দূরে গর্ত করে মাটি চাপা দিতে হয় এবং ছাগলকে নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হয়।

গ. উদ্দীপকের খামারীদের বায়ু নিরোধক অবস্থায় ঘাস সংরক্ষণের পদ্ধতিটি হলো সাইলেজ।
বায়ুনিরোধক স্থানে সংরক্ষিত সবুজ ঘাসকে সাইলেজ বলে। অর্থাৎ, খাদ্যমানের কোনো পরিবর্তন না করে যেসব সবুজ ঘাস বা গাছকে ভবিষ্যতে গবাদিপশুর রসাল খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয় তাকেই সাইলেজ বলে। ভুট্টা, জোয়ার, গিনি, নেপিয়ার ইত্যাদি ঘাস সাইলেজ প্রস্ত্তত করার জন্য উত্তম।
সাইলেজ তৈরি করতে নিম্নলিখিত ধাপসমূহ অণুসরণ করতে হবে-
১. ফডারে ফুল আসার পূর্বে কান্ড যখন খুব নরম ও রসাল থাকে ঠিক তখন সাইলেজ তৈরির জন্য কাটতে হবে।
২. ঘাসগুলো ১৫-২০ সেমি পরিমাণ করে কেটে নিতে হবে।
৩. সবুজ ঘাস কাটার পর সাইলোপিটে বায়ুরোধক অবস্থায় স্তরে স্তরে সাজাতে হবে।
৪. ঘাসে দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম মনে হলে লিগিউম জাতীয় ঘাসের সাথে নন-লিগিউম জাতীয় ঘাস মিশ্রিত করে সাইলেজ প্রস্তুত করার সময় ঝোলাগুড় বা চিটাগুড় স্তরে স্তরে মেশাতে হবে।
৫. প্রতি স্তর সাজানোর সময় সাইলোর ভিতরে নেমে পা দিয়ে ভালোভাবে প্যাকিং করতে হবে যেন ভিতরে বাতাস না থাকে।
৬. চেপে চেপে বসানো ঘাসের ওপর একস্তর খঙ বা নিম্নমানের ঘাস দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৭. তারপর শক্ত পলিথিন দিয়ে ঢেকে এমনভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে ভিতরে পানি ঢুকতে না পারে।
৮. সাইলেজ তৈরি হলে হলদে সবুজ রঙের হবে এবং পচা ঘাসের মতো দেখাবে।
৯. সাইলেজ কাঁচা ঘাস বা শুকনা খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের খামারীরা উপরোক্ত পদ্ধতিতে ঘাস সংরক্ষণ করেছিল।

ঘ. খামারীদের গৃহীত পদক্ষেপটি ছিল কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করে রাখা।
প্রতিটি গরুর জন্য দৈনিক ১০ থেকে ১২ কেজি এবং বিদেশি উন্নতজাতের গরুর জন্য ১৩ থেকে ১৫ কেজি কাঁচা ঘাস প্রয়োজন। বেশি দুধ পেতে হলে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত ঘাসের মধ্যে রয়েছে নেপিয়ার, পারা, জার্মান, ভুট্টা, ওটস ইত্যাদি। তাছাড়া ডালজাতীয় বিভিন্ন শস্য যেমন- মাসকলাই, খেসারি, বরবটি ইত্যাদিও পশুকে প্রদান করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত গবাদিপশুর খাদ্যের বেশির ভাগই কৃষি শস্যের উপজাত। এসব উপজাত শস্য, মাড়াই বা শস্যদানা প্রক্রিয়াজাত করার পর পাওয়া যায়। শীতকালে শিম গোত্রীয় ঘাসের উৎপাদন বেশি হয়। বর্ষা মৌসুমেও অনেক ঘাস উৎপাদিত হওয়ায় তা গবাদিপশুকে খাওয়ানোর পরও অতিরিক্ত থেকে যায়। তাই এই অতিরিক্ত ঘাস সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। যখন ঘাসের অভাব হয়। তখন এই সংরক্ষিত ঘাস গবাদিপশুকে সরবরাহ করা হয়। খাদ্য সংরক্ষণের প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে খাদ্যকে রোগজীবাণু ও পচনের হাত থেকে রক্ষা করা। পশুপাখির দানাদার খাদ্যকে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সংরক্ষণ করে বেশি দিন গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ রেখে সংরক্ষণ করা যায়। খাদ্যের আর্দ্রতা বেশি হলে এতে ছত্রাক জন্মায়। ছত্রাক জন্মানো খাদ্য পশুপাখিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। অনেক সময় পশু অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
পশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ভালো গুণসম্পন্ন ঘাস প্রদানের জন্য এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় পশু খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য খামারীদের গৃহীত ঘাস সংরক্ষণের উদ্যোগটি যথাযথ ছিল।

৫. সাফিদের শ্রেণির কৃষি শিক্ষক তাদের পশু সম্পদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলল। পরে তিনি বললেন এ সম্পদের বিভিন্ন সম্ভাবনাও রয়েছে।
ক. কোরিয়েন্ট কাকে বলে?
খ. হে তৈরির জন্য কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?
গ. কৃষি শিক্ষক উদ্দীপকে উল্লিখিত সম্পদের সমস্যার কথা বললেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কৃষি শিক্ষকের বর্ণিত সম্ভাবনাগুলো মূল্যায়ন করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাবা-মা বিহীন বাছুরকে কোরিয়েন্ট বলা হয়।

খ. সবুজ ঘাসে ফুল আসার সময় একে রোদে শুকিয়ে পশুর জন্য তৈরিকৃত খাদ্যই হলো 'হে'। হে তৈরির সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
হে-এর পাতা ঝরা রোধ করতে হয় কারণ পাতা কান্ডের চেয়ে অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ। বৃষ্টির পানিতে ভেজানো যাবে না। জলীয় অংশের পরিমাণ ১৫-২০% এর বেশি হওয়া যাবে না। 'হে' তৈরির জন্য ফুল আসার সময় কান্ড নরম থাকা অবস্থায় ঘাস কাটতে হয়। ঘাসে শিশির থাকা অবস্থায় কাটা যাবে না। শুকানোর সময় পাতা যেন চূর্ণ-বিচূর্ণ না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হয়।

গ. উদ্দীপকে কৃষি শিক্ষক পশু সম্পদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বললেন।
এ দেশে পশুসম্পদ খাতের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো উন্নত জাতের অভাব। এ দেশের গবাদি পশুগুলো ওজনে যেমন কম, তেমনি আকারেও ছোট। এদের দৈহিক শক্তিও কম হয়। বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিকাজ পরিচালনা, পরিবহন ও যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় পশুর সংখ্যাও অনেক কম। তাছাড়া রোগব্যাধির আক্রমণে প্রতিবছর বহু গবাদিপশু মারা যায়। বন্যা, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দূর্যোগেও বহু পশুর মৃত্যু ঘটে। বাংলাদেশে পশুসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম আরেকটি সমস্যা হলো পশু খাদ্যের স্বল্পতা। সবুজ ঘাসের চারণভূমি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বনভূমি ও অন্যান্য পতিত জমি ক্রমাগত চাষের আওতায় আনায় চারণক্ষেত্রের অভাবে গো খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশর উন্নত বাসস্থানের ব্যাপারে অধিকাংশ খামারিই সচেতন নয়। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পশুর জাতের উন্নয়ন ঘটানোর বিষয়টি এখনো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রসার লাভ করেনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্নমানের পশু দ্বারা প্রজনন করানো হয় বলে মাংস ও দুধের উৎপাদন ভালো হয় না। চাষাবাদ, ফসল মাড়াই ও পরিবহনে পশুর পরিবর্তে যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহারের কারণে মানুষ পশু পালনে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলো নিয়ে কৃষি শিক্ষক শ্রেণিতে আলোচনা করেছিলেন।

ঘ. কৃষি শিক্ষক বাংলাদেশে পশু সম্পদ উন্নয়নের যথেষ্ঠ সম্ভাবনার কথা বলেছেন। নিচে তা আলোচনা করা হলো-
১. বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও পরিবেশ পশুর জন্য উপযোগী।
২. গবাদিপশুর মাংস ও দুধের যথেষ্ঠ চাহিদা আছে। বছরে মাংসের চাহিদা ৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং দুধের চাহিদা প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। এ চাহিদা পূরণের জন্য গবাদি পশু পালনের সুযোগ আছে এবং তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. বর্তমানে দেশে প্রায় ০.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাংস ও প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে পশু সম্পদ উন্নয়নের যথেষ্ঠ সুযোগ আছে।
৪. বাজারে মাংস ও দুধের ঘাটতি থাকায় দাম বেশি। ফলে উৎপাদকরা লাভবান হতে পারে।
৫.দেশে প্রচুর চরাঞ্চল, পতিত জমি ও অনাবাদি জমি আছে যেখানে পশুর চারণভূমি করে পশুপালনের সুযোগ রয়েছে।
৬. পশুর উপজাত দ্রব্য যেমন-গোবর দিয়ে জৈব সার, শিং, খুর, পশম, হাড়, রক্ত ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করা যায়। এতে আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।
অনেক প্রতিকূলতা, স্বল্পতা ও সমস্যা থাকার পরও বাংলাদেশে পশুসম্পদ অনেক সম্ভাবনাময়। এর জন্য দরকার সচেতনা, সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। অতএব, কৃষি শিক্ষকের বর্ণিত সম্ভাবনাগুলো যথার্থ ছিল।

৬. অধিক লাভবান হওয়ার জন্য বিমল তালুকদার তার খামারে ২টি সংকর জাতের গরু কিনে আনেন। এদের মধ্যে একটি অধিক মাংস উৎপাদনে সক্ষম এবং উৎপত্তি আমেরিকার মিসিসিপি। অপরটি দিনে প্রায় ৩০ লিটার দুধ দেয়। তিনি এ উদ্যোগটি গ্রহণ করে অত্যন্ত লাভবান হন।
ক. সংকর জাতের গরু কাকে বলে?
খ. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
গ. বিমল তালুকদারের ক্রয়কৃত গরুগুলোর বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করো।
ঘ. বিমল তালুকদারের গৃহীত উদ্যোগটি মূল্যায়ন করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সকল গরু দেশি ও বিদেশি গরুর ক্রস বা সংকরায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত হয় তাদের সংকর জাতের গরু বলে।

খ. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পশুজাত পণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের দেশ থেকে গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া রপ্তানি করা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য হতে মোট দেশজ উৎপাদনে পশুসম্পদের অবদান ৪.৩১%। পশু-পাখির খাদ্য এবং সার হিসেবে শিং, ক্ষুর ও হাড়ের ব্যবহারের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ডেইরি খামারে এর চাহিদা রয়েছে। পশুর রক্ত শুকিয়ে খাদ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়াও দুধজাত দ্রব্যাদি এবং মাংস হিমাগারে বা টিনজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।

গ. বিমল তালুকদার তার খামারের জন্য সংকর জাতের ২টি গরু ক্রয় করেন যার একটি মাংস উৎপাদনকারী এবং অপরটি প্রায় ৩০ লিটার দুধ উৎপাদনকারী।
উদ্দীপকে বর্ণিত সংকর জাতের মাংস উৎপাদনকারী গরুটি হলো বিফ মাস্টার এবং দুধ উৎপাদনকারী জাত হলো হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান। বিফ মাস্টার জাতের গরুর চামড়া পাতলা, পা খাটো ও শিং ছোট, দেহের গঠন চৌকাকার। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। প্রজনন ক্ষমতা কম ও দুধ কম দেয়। দেশি গরুর চেয়ে মাংস বেশি পাওয়া যায়। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান দুধালো জাতের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের এবং এদের কুঁজ উঁচু হয় না। মাথা লম্বাটে সরু সোজা হয়। এদের গায়ের রং সাদা-কালো ছোপ মেশানো হয়। এরা দিনে ৩০ লিটার এর মত দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ ৩.৫-৪%। বকনা প্রায় ২.৫ বছর বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবছর বাচ্চা দেয়। বাচ্চা দেওয়ার পর থেকে পরবর্তী বাচ্চা প্রদান পর্যন্ত একটানা দুধ দেয়। বড় আকারের গাভির ওজন ৫০০-৬০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৮০০-৯০০ কেজি হয়ে। থাকে।
অতএব, উপরে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বলা যায়, বিমল তালুকদারের খামারের গরু দুটির একটি মাংস উৎপাদন ও অন্যটি দুধ উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।

ঘ. বিমল তালুকদার তার খামারে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দুটি সংকর জাতের গরু কিনেন।
দুধ ও মাংস হলো আমিষ জাতীয় খাদ্য। পশুর টাটকা মাংসে ১৫-২০% আমিষ থাকে। চর্বি শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। মাংসে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে যা দাঁতের গঠনে সহায়তা করে। মাংসে বিদ্যমান লোহা রক্তশূন্যতা দূর করে। এছাড়া ভিটামিনের মধ্যে থায়ামিন, ভিটামিন বি১২ প্রচুর পরিমাণে থাকে বলে মাংসকে ভিটামিন বি-কমপেস্নক্সের উৎস বলা হয়। পশুর নাড়িভুঁড়ি হাঁস মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশে জৈব আমিষের এক-তৃতীয়াংশ সংগৃহীত হয় গাভির দুধ থেকে। দুধে ভিটামিন-এ এবং রোগ প্রতিরোধক এন্টিবডি থাকে। পশুর দুধ থেকে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন- ঘি, ছানা, দই, মাখন, মিষ্টি ও পনির তৈরি করা হয় যা খাদ্য হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। এছাড়া রাসায়নিক পদার্থ, পিচ্ছিলকারক পদার্থ ও সাবান তৈরির কারখানায় পশুর চর্বি ব্যবহৃত হয়।
এভাবে নিজের চেষ্টায় দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে বিমল তালুকদার তাদের অবস্থার আরও উন্নতি করতে সক্ষম হন।
উপরের আলোচনা হতে দেখা যায়, বিমল তালুকদারের গৃহীত উদ্যোগটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ছিল।

HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. আলেয়া বেগম কিছু অতিরিক্ত আয়ের জন্য কয়েকটি ছাগল ক্রয় করেন। তার ছাগলের মধ্যে কয়েকটির আদি বাসস্থান সুইজারল্যান্ড এবং ফ্রান্সে। ছাগলগুলোর থাকার জন্য তিনি মাটি থেকে একটু উপরে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি ও দক্ষিণ দিক খোলা রেখে অর্থাৎ মাচা করে ঘর তৈরি করলেন।
ক. সাইলেজ কাকে বলে?
খ. ছাগলের স্টল ঘর বলতে কী বোঝ?
গ. আলেয়া বেগমের ক্রয়কৃত ছাগলগুলোর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ছাগলগুলোর জন্য যে ধরনের বাসস্থান তৈরি করা হয়েছিল তার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. খাদ্যমানের কোনো পরিবর্তন না করে যেসব সবুজ ঘাসকে রসালো খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় বায়ুনিরোধকভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাকে সাইলেজ বলে।

খ. প্রতিটি ছাগলকে যে ঘরে পৃথক পৃথক খোপে বা কক্ষে রাখা হয় তাকে স্টল ঘর বলে।
সে ঘরে দুগ্ধবতী, গর্ভবতী ও প্রসবকালীন সময়ে ছাগী খুব আরামে থাকতে পারে। প্রতিটি উন্নত দুগ্ধবতী ছাগীর জন্য ২০ ৩০ বর্গফুট এবং দেশি ছাগীর জন্য ১০-১১ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। পাঠার স্টল ঘর ছাগীর স্টল ঘর থেকে দূরে রাখা হয়। প্রতিটি স্টলে আলো-বাতাস থাকা উচিত। স্টল ঘরের পিছনে একটু ঢালু থাকা ভালো যাতে মলমূত্র অপসারণের জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা করা সহজ হয়।

গ. আলেয়া বেগমের ক্রয়কৃত ছাগলের মধ্যে ছিল সুইজারল্যান্ডের সানেন এবং ফ্রান্সের অ্যালপাইন জাতের ছাগল।
সানেন জাতের ছাগলের গায়ের রং সাদা বা বিস্কুট রঙের। এদের নাক, কান ও ওলানে কালো দাগ থাকতে পারে। কান উপরের দিকে খাড়া। গলা লম্বা ও সরু। ছায়া এদের পছন্দ। ওলান বেশ বড় ও গায়ের লোম ছোট ছোট। এরা দৈনিক ২-৩ লিটার দুধ দেয়। পূর্ণবয়স্ক ছাগল ও ছাগীর ওজন যথাক্রমে ৭০-৭৫ কেজি এবং ৬০-৭০ কেজি।
অ্যালপাইন জাতের ছাগলের গায়ের রং সাদা-কালচে এবং ছোপযুক্ত হয়। শিং থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। এরা আকারে বেশ বড় ও কান খাড়া হয়। দৈনিক গড়ে ১ কেজি দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ প্রায় ৩.৫%। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী ছাগলের ওজন যথাক্রমে ৬৫ কেজি ও ৬০ কেজি।
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছাগলগুলো আলেয়া বেগম তার খামারের জন্য ক্রয় করেছিলেন।

ঘ. আলেয়া বেগম তার ছাগলগুলোর জন্য মাটি থেকে উঁচুতে মাচার উপর ঘর তৈরি করেছিলেন।
ছাগলের ঘর স্থাপন করার জন্য আলেয়া বেগম প্রথমে এমন স্থান নির্বাচন করেন যা উঁচু এবং যেখানে পানি জমে থাকে না। তিনি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি করে দক্ষিণ দিকে খোলা রেখে ঘরটি তৈরি করেন। এ জন্য আলেয়া বেগম মাটি থেকে ৩-৪ ফুট সেমি উচ্চতায় খুঁটির উপর ঘর স্থাপন করেছিলেন। ঘরের মেঝে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে মাচার মতো তৈরি করেছিলেন। এই ঘর একচালা, দোচালা বা চৌচালা যেকোনো ধরনের হতে পারে। যেহেতু তিনি অনেকগুলো ছাগল ক্রয় করেছিলেন তাই চৌচালা বড় ঘর তৈরি করেছিলেন। মাটি থেকে মাচার উচ্চতা ১ মিটার এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৬-৮ ফুট রেখেছিলেন। মলমূত্র নিষ্কাশনের জন্য বাঁশের চটার মাঝে ১ সেমি করে ফাঁক রেখেছিলেন। বৃষ্টি যাতে সরাসরি ঘরের ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য ছাগলের ঘরের চালা ১-১.৫ মি ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন।
আলেয়া বেগমের নির্মিত ঘরটি বিজ্ঞানসম্মত। এ ধরনের ঘর স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার করা সহজ। ছাগলের যথাযথ যত্ন ও খাদ্য প্রদান করা সুবিধাজনক। ঘরে পর্যাপ্ত আলোবাতাস ঢুকে। বৃষ্টি, শীত ও ঝড়ো হাওয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে।
সুতরাং, উপরিউক্ত পদ্ধতিতে আলেয়া বেগমের তার ছাগলের জন্য ঘর নির্মাণ যৌক্তিক ছিল।

৮. দুলাল মিয়া তার বাড়িতে কয়েকটি মহিষ পালন করেন। মহিষ পালন করলেও তিনি এগুলোর যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে সচেতন নন। তিনি মহিষ পালনের জন্য পাশের ডোবা পুকুরের পানি ব্যবহার করেন। একদিন তিনি লক্ষ করলেন একটি মহিষের দেহের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে ফুলে গিয়েছে।
ক. মহিষের দুধের রং পরিবর্তন হয়ে হলদে সবুজ হয় কী রোগ হলে?
খ. কিটোসিস রোগ কেন হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উল্লিখিত সমস্যাটি ছাড়াও দুলাল মিয়ার মহিষের আর কী কী সমস্যা হতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দুলাল মিয়ার মহিষগুলোর উক্ত সমস্যা সমাধানে করণীয় কী? বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মহিষের ওলানে যক্ষ্মার সংক্রমণ হলে ওলান ফুলে ওঠে ও দুধের রং হলদে সবুজ হয়।

খ. গবাদিপশুর রক্তে গস্নুকোজের অভাব হলে কিটোসিস রোগ হয়। শর্করা জাতীয় খাদ্য হজমে সমস্যা হলে রক্তে এসিটোন বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য জমা হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই বিষক্রিয়ার ফলে কিটোসিস রোগ হয়। বাচ্চা প্রসবের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ হয়। এ রোগে আক্রান্ত পশুর কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দেয়। এছাড়া ওজন কমে যায়, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় এবং মাংসপেশীর খিঁচুনিসহ আরও অনেক লক্ষণ দেখা দেয়।

গ. দুলাল মিয়ার মহিষের দেহের বিভিন্ন জায়গায় পানি জাম ফুলে গিয়েছে। তিনি মহিষগুলোর সঠিক যত্ন না নেওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও, তার মহিষগুলোর পাকস্থলি ও অন্ত্রে গোলকৃমির সংক্রমণ ঘটতে পারে।
পাকস্থলি বা অস্ত্রে গোলকৃমি সংক্রমণের কারণ হলো Neoascaris vituralum Ascaris viturolum বা সাধারণত কৃমির ডিম, ভ্রূণযুক্ত কৃমির ডিম বা লার্ভা দূষিত খাদ্য ও পানি গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। দুলাল তার মহিষগুলো পালনে ডোবা পুকুরের পানি ব্যবহার করায় মহিষগুলো এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
গোল কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে পশুর রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং আমিষের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেহের বিভিন্ন জায়গায় ফুলে যায়। এছাড়া, ডায়রিয়া ও ক্ষুধামন্দা দেখা যায়। পশুর স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যায় এবং শরীরের ওজন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। কখনো কখনো এদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। বাড়ন্ত পশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। গায়ের লোম রুক্ষ দেখায়। অধিক কৃমিতে অন্ত্রনালীতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে পশু মারাও যেতে পারে।

ঘ. দুলাল মিয়ার মহিষগুলো পাকস্থলি ও অন্ত্রের গোলকৃমিতে আক্রান্ত হয়েছিল। গোলকৃমি সাধারণত দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।
এ রোগের চিকিৎসার জন্য দুলাল মিয়া অতি মাত্রায় কার্যকর কৃমিনাশক টেট্রামিসল, অক্সিক্লোজানাইড, সরানটেল সাইট্রেট অথবা ট্রাইক্লেরেনডাজল যুক্ত ওষুধ যেমন- লেভার্নিড অথবা টেট্রানিড প্রতি ১৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ বোলাস আকারে মহিষকে খাওয়াবে। এনডেক্স অথবা ডেমিস্থ ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ বোলাস হারে খাওয়াবে। ৭ দিন পরপর সে আবার একই হারে বোলাস খাওয়াবে। ১০-১৫ গ্রাম পাপেরাজিন প্রথম মাত্রা এবং ১৫ দিন পর ২ মাত্রায় মহিষ বাছুরকে প্রয়োগ করবে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য মহিষকে পরিমিত সুষম পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে। বাচ্চা ও বয়স্ক মহষিকে আলাদা রাখতে হবে। দলবদ্ধভাবে চিকিৎসা করতে হবে অর্থাৎ, দলের একটি আক্রান্ত হলে অন্যগুলোকেও চিকিৎসা দিতে হবে। প্রতি ৪ মাস পরপর গবাদি মহিষগুলোকে ওষুধ খাওয়াতে হবে।
মূলত পশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশে লালন পালন করতে হবে, গোয়াল ঘর শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, কাদা পানিযুক্ত বা স্যাঁতসেঁতে মাঠের ঘাস পশুকে খাওয়ানো যাবে না। এভাবে বিভিন্ন প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দুলাল মিয়ার মহিষগুলোর উক্ত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

৯. জয়নালের ছাগলের খামারে কিছু সমস্যা হওয়ায় সে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিল। পশু চিকিৎসক দেখলেন একটি ছাগলের মুখে ও কানে ফোস্কা পড়েছে এবং আরেকটির পেট ফুলে গেছে। তিনি এসব রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জয়নালকে জানালেন। জয়নালকে চিন্তিত হতে দেখে পশু চিকিৎসক বললেন, 'বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাগল পালন খুবই লাভজনক'।
ক. রক্তে ক্যালসিয়ামের অভাবে পশুর কী রোগ হয়?
খ. মহিষের খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনার প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করো।
গ. জয়নালের ছাগলের রোগগুলোর কারণ ও প্রতিকার ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পশু চিকিৎসকের উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রক্তে ক্যালসিয়ামের অভাবে দুগ্ধবতী গাভির দুধজ্বর হয়।

খ. মহিষের খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা প্রধানত দেহের ওজন, জাত ও পালন উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে বিবেচিত হয়ে থাকে। সঠিক মাত্রায় উৎপাদন পেতে হলে মহিষের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য জরুরি। এদের খাদ্য পুষ্টি ব্যবস্থাপনার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো আঁশযুক্ত ও দানাদার খাদ্য অন্তর্ভুক্তকরন। সাধারণত প্রতি ১০০ কেজি ওজনের একটি মহিষের জন্য ২.০-২.৫ কেজি শুষ্ক পদার্থের প্রয়োজন। মোট শুষ্ক পদার্থের তিন ভাগের দু'ভাগ আঁশযুক্ত খাদ্য এবং তিন ভাগের এক ভাগ দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। আবার, মোট আঁশযুক্ত খাদ্যের তিন ভাগের এক ভাগ তাজা আঁশযুক্ত খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

গ. জয়নালের খামারে একটি ছাগলের মুখে ও কানে ফোস্কা তৈরি হয়েছিল যা গোট পক্স রোগ এবং আরেকটি ছাগলের পেট ফুলে গিয়েছিল যা ছাগলের পেট ফোলা রোগ।
ছাগলের গোট পক্স রোগ সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে ছাগলকে এন্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। ক্ষত স্থানে ১% ক্লোরামাফেনিকল সলিউশন ও টেট্রাসাইক্লিনের গুঁড়া দিনে একবার করে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাব ছাগলকে এক বছর অন্তর অন্তর গোট পক্স টিকা দিতে হবে। এই রোগে কোনো পশু মারা গেলে তাকে কোনো খোলা জায়গায় ফেলে না রেখে চুন মাখিয়ে গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে। অনেক সময় নতুন জাতের সবুজ ঘাস প্রচুর পরিমাণে খেয়ে ফেললে ছাগলের এই পেট ফুলে যায়। ছাগলের রোগ দেখা দিলে এক কাপ তিসির তেল খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া বেলাটোসিল ২০ মিলি ১২ ঘণ্টা অন্তর খাওয়ালে রোগ সেরে যেতে পারে। তবে অত্যাধিক পেট ফুললে সূঁচ ফুটিয়ে গ্যাস বের করে দিতে হয়। এছাড়া কচি সবুজ ঘাস বেশি করে খাওয়ানো বন্ধ করতে হয়।
এসব ব্যবস্থার মাধ্যমে জয়নাল তার খামারের ছাগলের রোগগুলোর প্রতিকার করতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকে পশু চিকিৎসক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাগল পালনকে লাভজনক হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ছাগল পালনের জন্য বিশেষ উপযোগী। আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে প্রায় ৬০% পরিবার ছাগল পালন করে থাকে। ছাগল অনেক কষ্ট সহ্য করতে পারে। প্রচ- খরার মধ্যেও পানি ছাড়া অনেকক্ষণ থাকতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা খাদ্য ঘাটতির সময় অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে, যা সচরাচর অন্যান্য গৃহপালিত পশু খায় না। এরা জিহবার সাহায্যে অনায়াসে ছোট ছোট ঘাস, বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা, গাছের শাখা প্রশাখা ইত্যাদি টেনে ছিড়ে খেতে পারে। ছাগল অল্প খরচে পালন করা যায় বলে ছাগলকে গবিরের গাভি বলা হয়। ছাগল পালনের জন্য অল্প জায়গা লাগে এবং মূলধন বিনিয়োগও কম লাগে। এরা বছরে দুইবার বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রতিবারে গড়ে ২-৩টি বাচ্চা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত বস্ন্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়া, মাংস ও দুধের দেশে-বিদেশে বিপুল চাহিদা রয়েছে। ছাগলের দুধ যক্ষ্মা ও হাঁপানি রোগ প্রতিরোধক এবং এজন্য এদের যথেষ্ঠ চাহিদা রয়েছে।
ছাগল পালনের জন্য অতিরিক্ত শ্রমিকের দরকার হয় না। এমনকি বাড়ির বাচ্চা ও গৃহিনীরা অনায়াসে ছাগল পালন করতে পারে। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ছাগল পালন করা যায় বিধায় ছাগল ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপরের আলোচনা হতে বলা যায়, পশু চিকিৎসকের উক্তিটি যথাযথ ছিল।

১০. সিরাজ উদ্দিনের পালিত গাভিটি কয়েকদিন হলো বাচ্চা প্রসব করেছে। গাভিটি অসুস্থ হয়ে পড়লে পশু ডাক্তার পর্যবেক্ষণ করে বলেন, শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাকক্রিয়ার সমস্যা হওয়ায় এমন হয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, 'বাচ্চার প্রসব পরবর্তী সময়ে গাভির বিশেষ কিছু যত্ন নিতে হয়'।
ক. দুগ্ধ ব্যবস্থাপনা কী?
খ. পশুরস্নেহ জাতীয় খাদ্যোপাদানের কাজ লেখো।
গ. সিরাজ উদ্দিনের গাভিটির যে রোগটি হয়েছে তার লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পশু ডাক্তার সিরাজ উদ্দিনকে যে পরামর্শটি দিয়েছিলেন তার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট জাতের গাভির স্বাভাবিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য যে সকল বিষয়াদি বিবেচনা করা হয়, সেগুলোকে সুচারুভাবে সম্পাদন করাই হলো দুগ্ধ ব্যবস্থাপনা।

খ. প্রাণীদেহে শক্তি উৎপাদনকারী খাদ্য উপাদান হলো স্নেহ পদার্থ বা চর্বি।
এই পদার্থ পশুর চামড়ার মসৃণতা রক্ষা ও চর্মরোগ প্রতিরোধ করে, শরীরে তাপ উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে। মাংসের স্বাদ ও উপযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পশমের নিচে মোমের মতো আবরণ তৈরি করে। প্রাণিকোষ গঠনে সাহায্য করে এবং ভিটামিন 'এ', 'ডি', 'ই' ও 'কে' ধারণ করে প্রাণীদেহে সরবরাহ করে।

গ. সিরাজ উদ্দিনের গাভিটির কিটোসিস রোগ হয়েছিল। সাধারণত রক্তে শর্করা বা গস্নুকোজের অভাবে কিটোসিস রোগ হয়।
পশুর দেহের শর্করা জাতীয় খাদ্যের বিপাকক্রিয়ায় কোনো প্রকার বিঘ্ন ঘটলে রক্তে এমিটান বা কিটোন নামক বিষাক্ত দ্রব্য অধিক মাত্রায় জমা হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এ বিষক্রিয়ার কারণেই কিটোসিস রোগ হয়। এ রোগে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় এবং গাভির দুধে এসিটোনের গন্ধ পাওয়া যায়। রোগের প্রকোপ বেশি হলে পক্ষাঘাতে পশু মারা যায়। অনেক সময় গাভি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে চারদিকে ঘুরে। এ রোগে পশুর মাংসপেশিতে খিচুঁনি দেখা দেয়। পশু সর্বক্ষণ কোনো কিছু চাটতে থাকে এবং দাঁত কড় কড় করে। কিটোসিস রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো-
১. আক্রান্ত পশুকে নির্দিষ্ট মাত্রায় গস্নুকোজ ও নরমাল স্যালাইন ইনজেকশন দিতে হবে।
২. আক্রান্ত পশুকে সহজপাচ্য খাদ্য খাওয়াতে হবে।
গবাদিপশু কিটোসিস রোগে আক্রান্ত হবার লক্ষণ দেখা গেলে উপরিউক্ত উপায়ে তা উপশম করা সম্ভব।

ঘ. পশু ডাক্তার সিরাজ উদ্দিনকে গাভির প্রসবপরবর্তী যত্ন সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান দিয়েছিলেন।
গর্ভকালীন সময় গাভির যেরূপ যত্ন নিতে হয় তেমনি বাচ্চা প্রসবের সময় এবং পরে গাভির বিশেষ যত্ন নিতে হয়। প্রসব পরবর্তী সময়ে গাভির যত্ন ও পরিচর্যা নিচে দেওয়া হলো-
১. প্রসবের পর গাভির যাতে ঠান্ডা বা গরম না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, শুকনো ও আলো-বাতাস পূর্ণ স্থানে রাখতে হবে।
২. বাচ্চা প্রসবের পরপরই গর্ভফুল দূরে নিয়ে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
৩. প্রসবের ৮-১২ ঘণ্টার মধ্যে যদি গর্ভফুল না ঝরে যায় তাহলে ডাক্তারের সাহায্যে ফুল বের করতে হবে। এছাড়া গাভিকে আরগট মিশ্রণও খাওয়ানো যেতে পারে।
৪. প্রসবের পর অল্প গরম পানিতে ০.০১% পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মিশিয়ে পশ্চাৎ অংশ ও লেজ পরিষ্কার করে দিতে হবে।
৫. প্রসবনালিতে ক্ষতের সৃষ্টি হলে সেখানে যাতে মাছি না বসে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
৬. গাভিকে সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। কাঁচা ঘাস, হালকা গরম পানিতে লবণ, গুড়সহ ভুসি ভিজিয়ে গাভিকে খাওয়ানো ভালো।
৭. প্রসবের পর গাভিকে কোনো পরিশ্রমের কাজ করানো যাবে না। এতে দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
৮. দোহনকারী বা দোহনের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ওলানে যেন ক্ষতের সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৯. এ সময় গাভির কাচলা দুধের সাথে ক্যালসিয়াম অধিক বের হওয়ার ফলে ক্যালসিয়ামের অভাবে দুধজ্বর হয়। তাই গাভিকে সুষম খাদ্য, কাঁচা ঘাস ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।
তাই বলা যায়, পশু ডাক্তারের দেখা পরামর্শটি ছিল সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here