এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২
HSC Agricultural Education
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. সুদীপ একটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর পালন করে। এ জাতের কবুতর লেজের পালক, পাখার মতো মেলে দিতে পারে। কিছুদিন পর পাখিটির সবুজ ডায়রিয়া দেখা দিল। এ অবস্থায় তার চাচা তাকে বললো এটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ।
ক. প্রি-লেয়ার কাকে বলে?
খ. ব্রয়লার মুরগির ব্রুডার ব্যবস্থাপনা ব্যাখ্যা করো।
গ. সুদীপের পালিত কবুতরের জাতের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সুদীপের কবুতরের রোগের প্রতিকার বিশ্লেষণ করো।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাধারণত ১৮-২০ অথবা ১৮-২২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মুরগিকে প্রি-লেয়ার বলে।
খ. যে হাউজে ১-২১ দিন বয়সের বাচ্চাকে তাপ দেওয়া হয় তাকে ব্রুডার বলে।
ব্রুডার টিন/কাঠ/হার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি করা যায়। এক মিটার ব্যাসের ব্রুডারের নিচে ২০০-২৫০টি বাচ্চা রাখা যায়। ব্রুডার ঘর ছনের চালা বা চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে নির্মাণ করা যায়। চিকগার্ড বা বেষ্টনি ব্রুডার থেকে ৭৫ সে মি দূরে ৪৫ সেমি উচু চাটাই বা হার্ডবোর্ড দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করতে হয় যেন বাচ্চা ঘর থেকে দূরে যেতে না পারে। বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে জায়গার পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রতি ২০০টি বাচ্চার জন্য মোট জায়গা লাগবে ১৮ বর্গমিটার, খাবার পাত্র ০-২ সপ্তাহ বয়সে ৪৫৪ বর্গ সেমি ও ২-৬ সপ্তাহ বয়সে ৭০০ বর্গ সেমি। পানির পাত্র প্রথম ১০ দিন বয়সে ২ লিটারের ৮টি ও ১০ দিন থেকে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২ লিটারের ১৬টি লাগবে।
গ. সুদীপের পালিত কবুতরটি ফ্যানটেল জাতের। এদের উৎপত্তি ভারতে।
এ জাতের কবুতরের বৈশিষ্ট্য হলো:
১. লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে। এজন্যই এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয়।
২. রং মূলত সাদা। তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেল সৃষ্টিও সম্ভব হয়েছে।
৩. লেজের পালক বড় হয় ও উপরের দিকে থাকে।
৪. পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে।
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো এ জাতের কবুতরের মধ্যে দেখা যায়। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতেও ব্যবহৃত হয় এবং দেশ বিদেশেও অত্যন্ত জনপ্রিয়।
ঘ. সুদীপের কবুতরের সবুজ ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। এটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ।
রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণগুলো হলো সবুজ ডায়রিয়া বা টুথ পিকের মতো পায়খানা, প্যারালাইসিস ইত্যাদি। স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হলে মাথা কাঁপুনি, পা এবং পাখা ঝুলে পড়া, ঘাড় বাঁকা করে উল্টানোর ফলে কোনো কোনো সময় চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। শতকরা ২-৩ ভাগ কবুতরে প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে।
এ রোগের প্রতিরোধক টিকা প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবুতরের প্রজননকালীন প্যারেন্ট কবুতরগুলোকে রাণীক্ষেত রোগের ইনএকটিভেটেড টিকা প্রয়োগ করা উত্তম। টিকা প্রয়োগের কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পর বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করতে হবে। তবে বাচ্চা কবুতর উড়তে শেখার সাথে সাথেও টিকা প্রয়োগ করা যায়। জীবিত বা ইনএকটিভেটেড উভয় টিকাই প্রয়োগ করা যায়। জীবিত টিকা চোখে এবং মৃত টিকা চামড়ার নিচে বা মাংসপেশিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম টিকা (জীবিত) প্রয়োগের কমপক্ষে ১৪ দিন পর দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ দিতে হবে।
উপরে উল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুদীপ তার কবুতরের রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে।
২. বার্ড ফ্লু সংক্রমণে রহমত মিয়ার মুরগির খামারের অধিকাংশ মুরগি মারা যায়। এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা তাকে বলেন উপযুক্ত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। তিনি রহমত মিয়াকে পুনরায় খামারকরণে উৎসাহিত করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এ প্রকারের খামারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
ক. দ্বৈত জাত কাকে বলে?
খ. ব্রয়লার খামার করার সুবিধাগুলো লেখো।
গ. রহমত মিয়া কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ক্ষতি হতে রক্ষা পেতেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কৃষি কর্মকর্তার শেষোক্ত উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পোল্ট্রির যে সকল জাত মাংস ও ডিম উভয় উৎপাদনের জন্য পালন করা হয় তাকে দ্বৈত জাত বলে।
খ. মাংস উৎপাদনের জন্য যে পোল্ট্রি খামার করা হয় তাকে ব্রয়লার খামার বলে।
ব্রয়লার খামার করার সুবিধাগুলো হলো-
কম পুঁজিতে খামার স্থাপন করা যায়। দেড়-দুই মাসের মধ্যেই লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া যায়। অধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলকভাবে ঝুঁকি কম। কম খরচে এ খামার স্থাপন করে প্রাণিজ আমিষ জাতীয় মাংসের সরবরাহ বৃদ্ধি করা যায়।
গ. রহমত মিয়ার খামারে বার্ড ফ্লু হওয়ায় অধিকাংশ মুরগি মারা যায়। তিনি যদি উপযুক্ত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন তবে তাকে এ ক্ষতির সম্মুখীন হতো না।
একই ফার্মের বা কাছাকাছি এক পাখি হতে অন্য পাখিতে সংস্পর্শের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। মুরগির খামারের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, জিনিসপত্র ও মানুষের সাহায্যে জীবাণুগুলো বাতাসের সাথে স্থানান্তর হয় ও রোগের বিস্তার ঘটে। বার্ড-ফ্লু এর চিকিৎসা হিসেবে প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিরোধ:
১. সময়মতো টিকা প্রদান ও আক্রান্ত এলাকা পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
২. আক্রান্ত এলাকার সমস্ত মুরগি নিধন করতে হবে।
৩. রোগের আক্রমণ, সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে খবর রাখতে হবে।
প্রতিকার:
১. এ রোগের প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
২. রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত মুরগি মেরে মাটির নিচে পুঁতে বা পুড়ে ফেলতে হবে।
৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সময়মতো রোগের প্রাদুর্ভাব বুঝতে পারলে ও আক্রান্ত হবার পর সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বার্ড-ফ্লু রোগে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশ হ্রাস করা সম্ভব।
ঘ. কৃষি কর্মকর্তার শেষোক্ত উক্তিটি হলো বাংলাদেশে পোল্ট্রি খামারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
নানাবিধ প্রতিকূলতা এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমাদের দেশে হাঁস-মুরগির খামার উন্নয়নের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু হাঁস-মুরগি পালনের অত্যন্ত উপযোগী। তাছাড়া সরকার হাঁস-মুরগির বাণিজ্যিক খামার স্থাপনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ খাতের জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা পোল্ট্রি খামার স্থাপনে এগিয়ে আসছেন।
পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে বেকার জনগোষ্ঠী, ভূমিহীন ও অন্যান্য উৎসাহী ব্যক্তিবর্গকে আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে তাদের খামার পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে পশুসম্পদ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকার সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করেছে। পোল্ট্রি খাদ্যের সহজলভ্যতা ও মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। উন্নত জাতের ও স্বাস্থ্যবান বাচ্চা উৎপাদনের জন্য দেশে পর্যাপ্ত হ্যাচারি স্থাপন করা হচ্ছে। তাছাড়া পোল্ট্রি খামারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি, ঔষধ, টিকা ইত্যাদি দেশেই উৎপাদনের এবং শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি সহজতর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোল্ট্রির পরিবহন ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন তথা বেকারত্ন দূরীকরণে হাঁস-মুরগির খামার বা পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তাই বলা যায়, কৃষি কর্মকর্তার উক্তিটি যথার্থ।
৩. সালেহার পালিত মুরগিগুলো বাড়ির উঠানে, বাগানে, মাঠে ও রাস্তার ধারে চরে বেড়ায় এবং রাতে বাড়িতে আশ্রয় নেয়। অপরদিকে তার বান্ধবী রাণী খাঁচায় মুরগি পালন করে।
ক. মুরগির অর্ধ আবদ্ধ পালন পদ্ধতি কাকে বলে?
খ. রাজহাঁস পালন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. রাণীর মুরগি পালনে ঘরের ব্যবস্থাপনা কীরূপ হবে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সালেহা ও রাণীর পালন পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদ্ধতিতে দিনের বেলায় মুরগিগুলো ঘেরা জায়গায় চরে ও রাত্রিবেলা দোচালা ঘরে থাকে তাকে মুরগির অর্ধ আবদ্ধ পালন পদ্ধতি বলে।
খ. রাজহাঁস পালনে কিছু বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়। এরা ঠান্ডা-গরম সব আবহাওয়াতেই খাপ খাওয়াতে পারে। রাজহাঁস সবুজ ঘাস ও শাক-সবজি খায় বলে সম্পূরক খাদ্য কম লাগে। তৃণময় এলাকায় পালন করলে খাদ্য খরচ কম হয়। রাজহাঁস হতে অধিক মাংস পাওয়া যায়। ১০ সপ্তাহে ৫ কেজির বেশি ওজন হয়। এরা বছরে ২০-৩০টি ডিম দেয়। প্রাপ্ত বয়সী হাঁসের ওজন ১০-১৫ কেজি হয়। রাজহাঁস ফসলের জমির আগাছা খেয়ে পা দিয়ে মাটি নিড়ানির কাজ করে। কম মূলধনে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রাজহাঁস পালন করা যায়। বিছানা ও পোশাক তৈরিতে এর নরম পালক ব্যবহৃত হয়। এসকল সুবিধার কারণে রাজহাঁস পালন করা হয়।
গ. রাণী খাঁচায় মুরগি পালন করে।
এ কারণে ঘরগুলোতে প্রচুর আলো বাতাস চলাফেরার জন্য পূর্ব-পশ্চিমে এবং উত্তর ও দক্ষিণে সম্পূর্ণ খোলা থাকবে। খোলাস্থানে তারের জাল দিয়ে ঘেরা থাকবে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে এবং শীতের দিনে ফাঁকা স্থানে চট ঝুলাতে হবে।
খাঁচা ঘরের চালা উঁচু হওয়া উচিত। কমপক্ষে ৩ মিটার (১০ ফুট) উঁচু হলে ভালো হয়। একটি মুরগির জন্য খাঁচার গড় ৩৮৭ বর্গ সে.মি জায়গার প্রয়োজন হয়। ডিমপাড়া মুরগির জন্য তার ১৬ ঘণ্টা আলো প্রয়োজন হয়। দিনের আলো যদি ১০ ঘণ্টা হয় তবে এর সাথে সন্ধ্যা রাতে তিন ঘণ্টা এবং শেষ রাতে ৩ ঘণ্টা মোট ১৬ ঘণ্টার আলোর ব্যবস্থা করা যায়। ঘরে আলোর ব্যবস্থা এমনভাবে করতে হবে যেন খাঁচার নিচের তলার মুরগি সমানভাবে আলো পায়। ঘরে সরু বড় বা মোটা তারের সাহায্যে খাঁচা তৈরি করতে হবে। প্রতি তারের মাঝে ১.২৫ সেমি দ্ধ ২.৫ সেমি ঢালু হবে। খাঁচার তলা, খাঁচার বাইরে ১০.৫ সেমি বাড়তি থাকবে। ডিম আটকানোর জন্য প্রান্তদেশে উপরের দিকে বাঁকা করতে হবে। খাঁচার সামনে ঢালু স্থানে যেখানে ডিম জমা হয় সে স্থানের ৭.৫ সেমি উঁচুতে খাবারের পাত্র থাকবে।
এভাবে রাণীর খামারের জন্য ঘরের ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
ঘ. সালেহা মুরগিগুলোকে মুক্ত পালন পদ্ধতিতে পালন করে। অপরদিকে রাণী মুরগিগুলোকে আবদ্ধভাবে খাঁচায় পালন করে। উভয় পদ্ধতিরই সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।
মুক্ত পালন পদ্ধতির সুবিধা হলো এ পদ্ধতিতে মুরগিকে বাইরে থেকে খাদ্যের সরবরাহ করার প্রয়োজন হয় না। বিস্তীর্ণ জমি বিশেষ করে ফলের বাগান থাকলে মুরগি পালন করা যায়। বৃষ্টির সময় আপনা আপনি গৃহস্থের বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং এ পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন বেশি লাভজনক। আবার অসুবিধাগুলো হলো বিদেশি মুরগি পালন করা যায় না। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি মুরগি পালন করা যায় না। মুরগিগুলো যেখানে সেখানে ডিম পাড়ে ফলে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। মুরগি চুরি এমনকি শেয়াল, কুকুর, বেজী ইত্যাদিতে খেয়ে ফেলার ভয় থাকে।
অপরদিকে খাঁচায় বা আবদ্ধ পদ্ধতিতে অল্পস্থানে অনেক বেশি মুরগি পালন করা যায়। মুরগির পরিচর্যা অনেক সহজ। ডিমপাড়ার সাথে সাথে গড়িয়ে বাইরে চলে আসে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বিষ্ঠা দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায়। অপরদিকে অসুবিধাগুলো হলো- নিয়মিত পায়খানা পরিষ্কার করা ঝামেলাপূর্ণ কাজ। পালিত পাখির ভিটামিন 'বি' ঘাটতি বেশি হয়। খাঁচায় তারের সাথে অনবরত ঘর্ষণের ফলে পায়ের নিচে ফুলে যায় এবং পরে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
অতএব বলা যায়, সালেহা ও রাণী উভয়ের পালন পদ্ধতিতেই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।
৪. আইভি বাবার সাথে একটি ফার্মে গেল। সেখানে চড়ুই জাতীয় একটি পাখি দেখল যা পোল্ট্রির অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে বর্তমানে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। কারণ এর মাংস সুস্বাদু, অল্প জায়গায় পালন করা যায়। এ ধরনের পাখি পালনের জন্য পস্নাস্টিকের খাঁচা উত্তম। পাখিটি আইভির খুব পছন্দ হলো। সে এধরনের পাখি বাড়িতে পালন করতে বাবাকে অনুরোধ করল।
ক. স্কোয়াব কী?
খ. পিজিয়ন মিল্ক বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাখিটির নাম কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আইভির পছন্দের পাখিটি পালন করার সম্ভাবনা উদ্দীপকের আলোকে মূল্যায়ন করো।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কবুতরের বাচ্চাকে স্কোয়াব (squab) বলে।
খ. ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার কমপক্ষে ৪-৫ দিন পর কবুতরের বাচ্চার চোখ ফুটে। এ সময় বাচ্চাগুলো কোনো দানাদার খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না। পুরুষ ও স্ত্রী কবুতরের পাকস্থলিতে ঘন ক্রিম বা দধির মতো দুধ জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়। একেই পিজিওন মিল্ক বলে। এই খাদ্যে ৭০% পানি, ১৭.৫% আমিষ, ১০% চর্বি এবং বাকি ২.৫% থাকে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাখিটির নাম কোয়েল পাখি।
কোয়েল পাখি একটি পোল্ট্রির ক্ষুদ্রতম প্রজাতি। এ পাখির আদি নিবাস জাপান। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের নতুন সংযোজন হিসেবে এ পাখির আমদানি করা হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে ১৮ প্রজাতির কোয়েল রয়েছে। জাত ও উপজাতভেদে এদের গায়ের রং, ওজন, আকার, আকৃতি, ডিম পাড়ার হার, ডিমের ওজন, বেঁচে থাকার হার ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। উৎপাদনের ভিত্তিতে কোয়েলের জাতকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- লেয়ার কোয়েল ও ব্রয়লার কোয়েল। বর্তমানে পৃথিবীতে ৫টি উপজাতের লেয়ার কোয়েল বেশ জনপ্রিয়। যেমন- ফারাও, ব্রিটিশ রেঞ্জ, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচুরিয়াল গোল্ডেন ও টুক্সেডো। ব্রয়লার কোয়েলের মধ্যে বব হোয়াইট কোয়েল (আমেরিকান) ও হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল (ইন্ডিয়ান) বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশের শহর ও উপশহরাঞ্চলে কোয়েল পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোয়েলের মাংস ও ডিম বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। পুষ্টির চাহিদা পূরণে কোয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঘ. উদ্দীপকের আইভির পছন্দের পাখিটি হলো কোয়েল পাখি। পাখিটি পালন করার সম্ভাবনা উদ্দীপকের আলোকে নিচে মূল্যায়ন করা হলো-
এদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য বেশ উপযোগী। বর্তমানে এদেশের শহর ও উপশহরাঞ্চলের অনেকেই কোয়েল পালন করতে শুরু করেছে। কোয়েলের মাংস বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। যার কারণে কোয়েল পালন বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোয়েলের ডিমে পুষ্টিমান বেশি। কারণ অন্যান্য ডিমের তুলনায় কোয়েলের ডিমে প্রোটিন, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন এ, বি-১, বি-২ এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। তাছাড়া কোয়েল দ্রুত বর্ধনশীল। এরা বছরে ২৫০-২৬০টি ডিম দেয়। এদের রোগ বালাই খুবই কম। অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় এদের খাবার খুব কম লাগে। কোয়েল পালনে অল্প পুঁজি বিনিয়োগে অল্প দিনে বেশি লাভ করা যায়। আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে কোয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আবার অর্থনৈতিক দিক থেকে কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভনজক। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমাদের দেশে এর পালন শুরু হয়েছে।
তাই বলা যায়, কোয়েল পাখি পালনের সম্ভাবনা আমাদের দেশে বেশ উজ্জ্বল।
৫. মতিন সাহেব বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় কৃষি কমকর্তার পরামর্শ চাইলে তিনি মতিন সাহেবকে এমনভাবে হাঁস পালন করতে বলেন যাতে হাঁসকে রাতে ঘরে এবং দিনে ঘরসংলগ্ন নির্দিষ্ট জলাধারে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি মতিন সাহেবের এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন- ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্যও হাঁস পালন একটি লাভজনক পেশা।
ক. সংক্রামক রোগ কাকে বলে?
খ. বাড়ন্ত ও পূর্ণবয়স্ক হাঁস একত্রে পালনের পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হাঁস পালন পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কৃষি কর্মকর্তার উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সমস্ত রোগ অসুস্থ দেহ থেকে বিভিন্ন বাহকের (যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবি ইত্যাদি) মাধ্যমে সুস্থ দেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, সেগুলোকে সংক্রামক রোগ (যেমন- মুরগির রানীক্ষেত ও বসন্ত রোগ) বলে।
খ. বাড়ন্ত ও পূর্ণবয়স্ক হাঁস একত্রে পালন করা হয় হার্ডিং পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে হাঁসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ঘর বা আবাসস্থল থাকে না। প্রতিটি দলে সাধারণত ১০০-৫০০টি হাঁস থাকে এবং হাঁসগুলো সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা বেলায় এদেরকে একটি উঁচু জায়গায় খঙ বা বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরি করে আটকে রাখা হয়। সকালে ডিম সংগ্রহের পর এদেরকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। যে সকল এলাকায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে বেশি খাবার পাওয়া যায় (যেমন ফসল কাটা ধান ক্ষেত), সে সকল এলাকায় হাঁসগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয়। ঐ এলাকায় কিছুদিন পালন করার পর খাদ্যাভাব দেখা দিলে আবার নতুন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পদ্ধতিটি হলো অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালন।
এ পদ্ধতিতে হাঁসের ঘরের সাথে ফাঁকা জায়গা বা সাঁতারের জন্য জলাশয় থাকে। হাঁসকে রাতে ঘরে রাখা হয় এবং দিনের বেলায় ঘরসংলগ্ন নির্দিষ্ট জলাধারে বা জায়গায় বিচরণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রায় ০.৯৩ বর্গমিটার (১০ বর্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হয়। ঘরের ভেতরে খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়। এ পদ্ধতির সুবিধা হলোত শ্রমিক ও খাদ্যখাতে খরচ কম লাগে। এখানে হাঁস স্বাধীনভাবে সাঁতার কাটার বা চরে বেড়ানোর সুযোগ পায়। হাঁসের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে। হাঁসের খাদ্য গ্রহণ সমভাবে হয়। এ পদ্ধতির অসুবিধা হলো- বাচ্চা হাঁস পালন করা যায় না, চরে বেড়ানোর সময় বন্য প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, ঘর নির্মাণ খরচ বেশি এবং নিবিড় যত্ন নিতে হয়। অল্প কিছু সমস্যা দেখা গেলেও এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন লাভজনক।
ঘ. মতিন সাহেবের বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনের উদ্যোগের প্রশংসা করে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, 'ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য হাঁস পালন একটি লাভজনক পেশা'।
হাঁস পালন করে অল্প খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। মুরগি অপেক্ষা হাঁস বছরে ৪০ থেকে ৫০টি ডিম বেশি দেয়। তাছাড়া হাঁসের ডিম সহজে ভাঙে না এবং নষ্টও হয় না। ডিম উৎপাদনের সময়কাল মুরগি অপেক্ষা হাঁসের বেশি। অনেক সময় দ্বিতীয় বছরেও হাঁস অধিক পরিমাণে ডিম দিয়ে থাকে। মুরগির ডিম অপেক্ষা হাঁসের ডিমের ওজন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম বেশি হয়। হাঁস শেষ রাতে অথবা সকালে ডিম পাড়ে। সকালে ডিম সংগ্রহের পর হাঁস পালনকারীর কোনো কাজ থাকে না। এই সময় হাঁস পালক অন্যান্য কাজে সময় ব্যয় করতে পারে।
ধান বা মাছের সাথে হাঁসের সমন্বিত চাষে হাঁস ক্ষতিকর শামুক খেয়ে ধান ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। পুকুরে হাঁস বিচরণ করার সময় পানি আলোড়িত হয়, ফলে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। হাঁস ডুব দিয়ে পানির তলা থেকে খাদ্য সংগ্রহের সময় কাঁদার মধ্যে জমে থাকা বিষাক্ত গস্নাস দূর হয়। এর ফলে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে পরিশেষে বলা যায়, হাঁস কম খরচে পালন করা যায়। হাঁসের মলমুত্র মাছের খাদ্য এবং জমির জন্য উৎকৃষ্টমানের জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মুরগির তুলনায় বেশি। তাছাড়া হাঁস পালনে কম যত্ন ও পরিচর্যার প্রয়োজন। অধিকাংশ হাঁস নিজের খাদ্য নিজেই সংগ্রহ করে খায়, ফলে খাদ্য বাবদ খরচ কম হয়। অর্থাৎ, কৃষি কর্মকর্তার উক্তিটি যথার্থ।
৬. সজলের ২টি মুরগি চুনের মতো মলত্যাগ করছে। সে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে জানালে তিনি দ্রুত রাসায়নিক ও জৈব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেন। সজল নিজে এবং তার পরামর্শে আশেপাশের সবাই রাসায়নিক ও জৈব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় আর কোনো মুরগি এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়নি।
ক. লিটার কী?
খ. ভাইরাস সংক্রমিত মুরগির রোগশনাক্তকারী লক্ষণগুলো ব্যাখ্যা করো।
গ. প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছিলেন বিশ্লেষণ করো।
ঘ. অন্য মুরগি এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত না হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করো।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাধারণত ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া, বালি, ছাই, আখের ছোবড়া, ধান বা গমের খড়ের ছোট ছোট টুকরা ইত্যাদি ঘরের মেঝেতে বিছিয়ে মুরগির জন্য যে আরামদায়ক বিছানা তৈরি করা হয়, তাকে লিটার বলে।
খ. মুরগির ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে রয়েছে বার্ড ফ্লু, রাণীক্ষেত, বসন্ত, গামবোরো, ম্যারেকস ইত্যাদি।
রাণীক্ষেত রোগে মুরগি সাদা চুনের মত মলত্যাগ করে, মুরগি হা করে শ্বাস নেয়ার সময় ঘড় ঘড় শব্দ হয়, নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়, চোখ ফুলে ওঠে, কানের লতি ও মাথার ঝুঁটি কালচে বর্ণ ধারণ করে। বার্ড ফ্লু রোগে মুরগি ঝিমায়, চোখের চারদিকে ফুলে গিয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। গামবোরো রোগে মুরগি ঝিমায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও দেহে কাঁপুনি ওঠে। প্রচ- দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয় ও মলের সাথে রক্ত ও পিচ্ছিল পদার্থ পড়ে। বসন্ত রোগে মাথার ঝুঁটি, গলকম্বল, কানের লতি ও পায়ের কাছে ছোট ছোট গুটি হয়। মুখে সাদা পাতলা পর্দার মতো দেখা যায় ও শ্বাসকষ্ট হয়। চোখ ও নাক দিয়ে তরল লালা নিংসৃত হয়।
গ. উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সজলের মুরগির রোগ প্রতিরোধের জন্য রাসায়নিক ও জৈব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেন।
সজলের মুরগি চুনের মত মলত্যাগ করে, যা রাণীক্ষেত রোগের অন্যতম লক্ষণ। সজল রোগ প্রতিরোধের জন্য জৈব ও রাসায়নিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কারণ রাণীক্ষেত রোগের কোনো চিকিৎসা হয় না। রোগ যাতে হতে না পারে তার ব্যবস্থা নেওয়াই এ রোগ প্রতিরোধের উপায়। সে সর্বদা খামারের হাঁস মুরগির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে খামারের অভ্যন্তর ও বাইরের পরিবেশ যথাসম্ভব স্বাস্থ্যসম্মত তথা জীবাণুমুক্ত রাখে। খামারে প্রবেশের ক্ষেত্রে (কর্মচারী, দর্শনার্থী) সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে জীবাণুনাশক দিয়ে পা ধুয়ে খামারে প্রবেশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা (বি. সি. আর. ডি. ভি এবং আর ডি. ভি.) প্রয়োগ করে। রোগাক্রান্ত মুরগিকে আলাদা রাখে এবং পানি ও খাদ্যপাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করে।
সজল প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী উপরিউক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে তার খামারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
ঘ.উদ্দীপকে সজল নিজে রাসায়নিক ও জৈব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয় এবং আশেপাশের সবাইকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেয়। রাণীক্ষেত একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত মুরগির মল ও শ্লেষ্মার সাথে ভাইরাস জীবাণু নির্গত হয় এবং বাতাসের সাহায্যে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
সজল রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধের জন্য রাসায়নিক ও জৈব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সে রোগাক্রান্ত মুরগিকে আলাদা করে এবং মৃত মুরগিকে মাটির নিচে পুতে ফেলে। জীবিত মুরগির জন্য স্বাস্থ্যকর বাসস্থানের ব্যবস্থা করে। সময়মত মুরগিকে প্রতিষেধক টিকা দেয়। ৭ দিন ও ২১ দিন বয়সের বাচ্চা মুরগিতে বি.সি.আর.ডি.ভি. প্রতি চোখে ১ ফোঁটা করে দেয়। দুই মাসের বেশি বয়সের মুরগির রানের মাংসে আর.ডি.ভি. ১ সিসি করে ইনজেকশন দেয়। এছাড়া পটাশ বা কার্বলিক এসিড গোলা পানি দিনে ৩ বার খামারের অসুস্থ মুরগি এবং সুস্থ মুরগিকে খাওয়ায়। সজল উল্লিখিত কার্যক্রম নিজে গ্রহণ করে এবং অন্যদের গ্রহণ করতে উৎসাহী করে। তাই বলা যায়, অন্য মুরগি এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত না হওয়ার কারণ সজলের সময়োচিত ও সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ।
৭. রহমানের পাতিহাঁসের খামার আছে। রহমান পাতিহাঁস পালনে প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাদ্য খাওয়ানোতে হাঁস নিয়মিত এবং বড় ডিম পাড়ে। এতে খাদ্য খরচ কম হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার হাঁসের খামার বড় হয়। তার প্রতিবেশীরাও তাকে (রহমান) অনুসরণ করে হাঁসের খামার করেছেন। এতে এলাকায় হাঁসের ডিমের অভাব দূর হয়েছে। অনেক দুঃস্থ মহিলার দ্ররিদ্রতা দূর হয়েছে।
ক. ব্রুডার হাউজ কী?
খ. হাঁস পালনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
গ. রহমানের হাঁসকে খাওয়ানোর পদ্ধতি বিশ্লেষণ করো।
ঘ. রহমানের ও প্রতিবেশীদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করো।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্রুডার হাউজ হলো ১-২১ দিন বয়সের মুরগির বাচ্চাকে তাপ দেওয়ার ঘর।
খ. হাঁস অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন এক প্রকারের পাখি।
হাঁস মাংস ও ডিম উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাঁসের ডিম আকারে বড় ও অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। বছরে একটি হাঁস ২০০-২৫০টি ডিম দেয়। হাঁসের খাদ্য খরচ কম এবং এদের রোগবালাইও কম হয়। হাঁস পালন করে বেকারত্ব দূর ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। এর ফলে দারিদ্র্যতা দূর হয়।
গ. রহমান পাতিহাসকে প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাদ্য প্রদান করেন।
হাঁস প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাদ্যের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। হাঁসের উৎপাদন ক্ষমতা ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। রহমান পাতিহাঁস পালনে খাদ্যের ওপর খুব বেশি জোর দেন। ফলশ্রুতিতে হাঁস নিয়মিত এবং বড় ডিম পাড়ে। প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে আগাছা, ক্ষুদেপানা, পোকামাকড়, কচি ঘাস পাতা, ঝিনুক, শামুক ও ছোট মাছ ইত্যাদি খাওয়ান। হাঁস ভিজা খাবার পছন্দ করে এজন্য হাঁসের খাদ্যে সব সময় পানি মিশিয়ে দেন। সাধারণত ১-৮ সপ্তাহ বয়সের হাঁসকে দিনে ৪-৫ বার এবং ৮ সপ্তাহ বয়স থেকে দিনে ২-৩ বার এবং বাড়ন্ত হাঁসকে দিনে ২ বার খাওয়ান। সকালে ও বিকালে হাঁসকে খাবার দেন। রাতের জন্য ঘরে খাবার দিয়ে রাখেন। হাঁসের জাত, বয়স, খাদ্যের মান, বাসস্থান, খাদ্যের আকার ও পরিবেশনের ওপর নির্ভর করে হাঁসকে দৈনিক খাদ্য প্রদান করেন। সুষম খাদ্যের মধ্যে ভাঙা গম, চালের কুঁড়া, তিলের খৈল, মাছের গুঁড়া, ঝিনুক চূর্ণ, লবণ অন্যতম।
রহমান এভাবে নিয়মিত পাতিহাঁসকে খাওয়ানোর ফলে খামারের হাঁসগুলো নিয়মিত ও বড় ডিম দিত।
ঘ. রহমান ও তার প্রতিবেশীরা হাঁসের খামার স্থাপন করেন।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিবেশ হাঁস চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এদেশের গ্রামাঞ্চলে পারিবারিক পর্যায়ে হাঁস পালন একটি অত্যন্ত প্রাচীন রীতি।
দেশে প্রচুর পুকুর, খাল, বিল, জলাশয় হাওর-বাঁওড় রয়েছ যেখানে হাঁস চরে বেড়াতে পারে এবং নিজেদের খাদ্যের অর্ধেকের বেশির ভাগই চরে খেতে পারে। তাই অল্প মূলধনে হাঁসের ডিম হতে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব যদি হাঁসের সাথে পুকরে মাছের চাষ করা হয়। তবে কৃষক অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও লাভবান হতে পারেন কারণ হাঁসের বিষ্ঠা একটি উৎকৃষ্ঠ জৈব সার। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে তাল রেখে আমিষের অভাব পূরণ একটি গুরুতর সমস্যা। হাঁসের ডিমে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ ও ভিটামিন যা আমাদের শরীর গঠনে একান্ত আবশ্যক। রহমানের এলাকায় হাঁসের খামার করায় এলাকায় হাঁসের ডিমের অভাব দূর হয়েছে। খামারে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে অনেক দুঃস্থ মহিলা দরিদ্র্যতা দূর করেছেন।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হাঁস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বলা যায়, রহমান ও তার প্রতিবেশীদের কার্যক্রম যথার্থ ছিল।
৮. আসিফ বাজারে কবুতরের বাচ্চা ক্রয় করতে গিয়ে দেখেন একজোড়া বাচ্চার দাম ২৫০ টাকা। দাম শুনে বিস্মিত হন। কিন্তু দাম বেশি হলেও অসুস্থ বাবার জন্য কবুতরের বাচ্চা কিনে আনেন। আসিফ লেখাপড়ার পাশাপাশি ৪ জোড়া কবুতর পালন করেন। প্রতি মাসে তিনি কবুতরের বাচ্চা না খেয়ে বাজারে বিক্রি করে লেখাপড়ার খরচ চালান।
ক. জিনডিং কী?
খ. কবুতর পালনে খরচ কম কেন ব্যাখ্যা করো।
গ. আসিফের কবুতর পালন করে প্রতি মাসে আয়ের হিসাব বিশ্লেষণ করো।
ঘ. আসিফের কার্যক্রম সঠিক ছিল কিনা বিশ্লেষণ করো।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ডিম উৎপাদনে হাঁসের একটি জনপ্রিয় জাত হলো জিনডিং।
খ. কবুতর একটি জনপ্রিয় পোল্ট্রি যার পালন ব্যয় খুব কম।
অল্প সময়ে অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক কবুতর পালন করা যায়। কবুতরের বাসস্থান নির্মাণ খরচ কম। কবুতর সাধারণত মুক্ত আকাশে বিচরণ করে এবং বাইরের শস্যদানা খেয়ে থাকে বিধায় খাদ্য খরচও কম হয়। কাজের অবসরে পালন করা যায়। অতিরিক্ত শ্রমিক লাগে না। রোগবালাই কম হয়। তাই চিকিৎসা খরচও কম লাগে। অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে দ্রুত উৎপাদন পাওয়া যায়।
গ. আসিফ পড়ালেখার পাশাপাশি ৪ জোড়া কবুতর পালন করেন।
কবুতরের বাচ্চার চাহিদা ও দাম বেশি বলে কবুতর পালন খুব লাভজনক। জোড়া কবুতর মাসে ২টি ডিম দেয়। আসিফের ৪ জোড়া কবুতর প্রতিমাসে ২টি করে মোট ৮টি ডিম দিবে। তাহলে প্রতি মাসে আসিফ ১ জোড়া কবুতর থেকে ২টি করে মোট ৮টি বা ৪ জোড়া বাচ্চা পাবেন। আসিফ প্রতি মাসে উৎপাদিত বাচ্চার সবগুলোই অর্থ উপার্জনের জন্য বিক্রি করে দেন। প্রতি জোড়া বাচ্চার বাজার মূল্য ২৫০ টাকা।
তাহলে আসিফের ৪ জোড়া কবুতরের বাজার মূল্য হবে-
৪ × ২৫০ = ১০০০ টাকা।
অর্থাৎ, আসিফ কবুতর পালন করে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা আয় করে থাকেন।
ঘ. আসিফ বাজার থেকে কবুতরের বাচ্চা ক্রয় করে পালন শুরু করেন।
কবুতর একটি জনপ্রিয় পোল্ট্রি। কবুতরের বাচ্চার চাহিদা ও দাম বেশি বলে আসিফ কবুতর পালনে আগ্রহী হন। অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক কবুতর পালন করা যায় বলে বাসস্থান খরচ কম হয়। বাসার ছাদে বা উঁচুতে দেয়ালের পাশে পালনঘর তৈরি করা যায়। কবুতর বাইরের খাবার বেশি খায় না বলে খাদ্য বাবদ খরচও কম লাগে। এক জোড়া কবুতর থেকে বছরে ১২ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। কবুতর পালনের জন্য অতিরিক্ত জমি বা জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়িতেই অতি সহজে পালন করা যায়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। কাজের অবসরে পালন করা যায়। কবুতর সহজেই পোষ মানে বলে সবাই পালন করতে পারে। এসব সুবিধা বিবেচনা করে আসিফ কবুতর পালন শুরু করেন। ৪ সপ্তাহেই কবুতরের বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়। এরা ৫-৬ মাস বয়সে ডিম দেয় এবং মাত্র ১ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। আর্থিক সুবিধার্থে আসিফ কবুতর বাজারে বিক্রি করে দেন। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি তার লেখাপড়ার খরচ মেটান। কিন্তু কবুতরের মাংস অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। আসিফ কবুতরের বাচ্চা নিজে না খাওয়ার ফলে পুষ্টিগুণ হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপরের আলোচনা হতে বলা যায়, আসিফের কবুতর পালনের কার্যক্রম যথার্থ ছিল কিন্তু না খেয়ে সব কবুতর বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল না।
৯. আসলাম মিয়া একজন নিরাপত্তা কর্মী। পাশাপাশি সে বাসায় মুরগি পালন করে। সে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি ডিম বিক্রি করে। মাঝে মধ্যে মুরগিও বিক্রি করে। বর্তমানে সে সচ্ছলতার সাথে জীবনযাপন করছে।
ক. পুলেট কী?
খ. ডিম উৎপাদনকারী দুটি খামারের নাম লেখো।
গ. আসলাম মিয়ার কর্মকান্ডের গুরুত্ব আলোচনা করো।
ঘ. আসলাম মিয়া তার কর্মকান্ডকে আরও সুসংহত করার জন্যে কী করতে পারেন? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পুলেট হলো প্রজনন ক্ষমতাসম্পন্ন ২০/২২ সপ্তাহ বয়সের মুরগি যাকে এখনো মোরগের সংস্পর্শে দেওয়া হয়নি।
খ. ডিম উৎপাদনকারী দুটি খামারের নাম হলো-
১. সরকারি হাঁস-মুরগি খামার, কুমিল্লা।
২. সরকারি হাঁস-মুরগি খামার, কিশোরগঞ্জ।
গ. আসলাম মিয়া মুরগি ও মুরগির ডিম বিক্রি করে তার পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন।
মুরগি বা পোল্ট্রি পালন তার নিজের পাশাপাশি দেশের জন্যেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্য, যেমন- ডিম, মাংস গৃহপালিত পাখি থেকে পাওয়া যায়। মাংস ও ডিম আমাদের শরীরের পুষ্টি, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, উৎপাদন ও কর্মশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ইত্যাদি পাখির মাংস ও ডিম থেকে পাওয়া যায়। পোল্ট্রির মাংস ও ডিম বিক্রি করে আয় করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে পোল্ট্রি খামার করে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে বা অল্প পুঁজি যোগাড় করে বেকার যুবক-যবতী বা গ্রামের মহিলারা পোল্ট্রি পালনের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। আবার পোল্ট্রি থেকে কুটির শিল্পে কাঁচামাল প্রাপ্তি, উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার, জৈবসার প্রস্তুত, পোল্ট্রি পরিবহন, বাজারজাতকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। আসলাম মিয়ার কার্যক্রম দেশের খাদ্য, পুষ্টি, কর্মসংস্থান সর্বোপরি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ঘ. মুরগি তথা পোল্ট্রি পালন একটি লাভজনক অর্থ উপার্জনের পন্থা। অপার সম্ভাবনাময় এ খাত নানাবিধ সমস্যার কারণে অগ্রসর হতে পারছে না। আসলাম মিয়াও পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত। ফলে আসলাম মিয়া তার কর্মকান্ডকে আরও সুসংহত করার জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারেন-
১. উন্নত জাতের মুরগি অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদনে সক্ষম। এজন্য আসলাম মিয়া উন্নত জাতের মুরগির বাচ্চা অথবা প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য উন্নতমানের ডিম সংগ্রহ করতে পারেন।
২. আসলাম মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন সনাতন পদ্ধতিতে সাধারণ জ্ঞান অনুযায়ী মুরগি পালন করে। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মুরগি পালন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার কর্মকান্ডকে আরও সুসংহত করতে পারেন।
৩. আসলাম মিয়ার খামারকে আরও বড় বা গতিশীল করার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এজন্য তিনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রদেয় সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন।
৪. তিনি তার খামারকে বড় করলে মুরগির বাসস্থান তৈরি করা সহ তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানার উৎপাদিত সুষম খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
৫. মুরগির রোগবালাই দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ ও টিকা এবং এগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা গ্রহণ করতে পারেন।
৬. উৎপাদিত অধিক ডিম ও মাংসের জন্য নতুন গ্রাহক বা বাজার সৃষ্টির প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন।
উল্লিখিত পান্থাগুলো অবলম্বন করে আসলাম মিয়া আগের তুলনায় আরও বেশি লাভবান হতে পারেন। এভাবে তিনি দেশের অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতিদের অনুপ্রেরণা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন।
১০. আফজাল সাহেব শহরে থাকেন। তিনি মুরগি পালনে বেশ আগ্রহী, কিন্তু গ্রামের মতো বিসত্মৃত জায়গা না থাকায় তিনি মুরগি পালন করতে পারছেন না। একদিন তিনি তার বন্ধুর বাসায় গিয়ে দেখতে পেলেন তার বন্ধু বাড়িতে অল্প জায়গায় মাচায় (A) ও খাঁচায় (B) মুরগি পালন করছেন। এ দেখে তিনি উৎসাহিত হয়ে বাসায় এসে নিজেও মুরগি পালন শুরু করলেন।
ক. মুরগির ডিম ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে কয় ভাগে ভাগ করা হয়?
খ. অস্বাভাবিক ডিমের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
গ. উদ্দীপকে আফজাল সাহেব 'A' পদ্ধতিতে কীভাবে মুরগি পালন করতে পারেন- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ই পদ্ধতির জন্য আফজাল সাহেব যে ধরনের সতকর্তা অবলম্বন করবেন তা বিশ্লেষণ করো।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মুরগির ডিম ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ২ ভাগে (খাদ্য হিসেবে ও বাচ্চা উৎপাদনে) ভাগ করা হয়।
খ. অস্বাভাবিক ডিমের ২টি বৈশিষ্ট্য হলো-
১. ডিমের খোসা পাতলা ও নরম হওয়া;
২. ডিমের আকৃতি গোলাকার, আঁকাবাঁকা, বেশি লম্বা অর্থাৎ, বিকৃত হওয়া।
গ. উদ্দীপকের 'A' পদ্ধতিটি হলো মাচায় মুরগি পালন।
যেসব স্থান প্রায়ই স্যাঁতসেঁতে থাকে, সেসব স্থানে মাচায় মুরগি পালন করা হয়। আফজাল সাহেব নিম্নলিখিত উপায়ে মুরগি পালন করতে পারেন-
১. তিনি ঘরের এক অংশে মেঝে থেকে ২-৩ ফুট উঁচু করে মাচা তৈরি করবেন।
২. বাঁশ/কাঠ/পিলার দিয়ে খুঁটি বানিয়ে মাচা তৈরি করবেন।
৩. মাচায় বাঁশ/কাঠ/লোহার রড দিয়ে ফাঁকা করে পাটাতন তৈরি করবেন যাতে ফাঁকা স্থান দিয়ে মুরগির বিষ্ঠা নিচে পড়ে যায়।
৪. মাচার উপর মুরগির খাবারের ও পানির পাত্র রাখবেন এবং ডিম পাড়ার জন্য বাসা তৈরি করবেন।
৫. ঘরের উপরের দিকে চারপাশে নেট লাগিয়ে তাতে চটের পর্দা ব্যবহার করবেন। এতে প্রয়োজনে পর্দা সরিয়ে দিলে ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারবে। তাতে মুরগির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
৬. পাটাতনের উপর চাটাই বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বাচ্চা ব্রুডিং (Brooding) করাবেন।
ঘ. উদ্দীপকের B পদ্ধতিটি হলো খাঁচায় মুরগি পালন। আফজাল সাহেবকে খাঁচায় মুরগি পালনের জন্য বিশেষ কিছু সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
এ পদ্ধতিতে মুরগি খাঁচায় আবদ্ধ থাকায় তারা সম্পূর্ণ পরাধীন জীবন যাপন করে। এদের খাদ্য মিশ্রণে কোনো উপাদানের ত্রুটি/ঘাটতি থাকলে তা তাদের স্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন- ডিম উৎপাদন কমে যেতে পারে, মুরগি অসুস্থ হতে পারে, মুরগিতে নানা ধরনের উপসর্গ, যেমন-বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। খাঁচার দেয়ালের ঘষায় মুরগির শরীর থেকে রক্তপাত হতে পারে। তাই রক্তপাত এড়ানোর জন্য ভিটামিন 'কে' (১ গ্রাম ভিটামিন ৫০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) সপ্তাহে ১ দিন খাওয়াতে হবে। এছাড়া মুরগিকে ভিটামিন 'বি' ও ভিটামিন 'বি' গ্রুপের রিবোফ্লাবিন, নায়াসিন ইত্যাদি স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দিতে হবে।
আফজাল সাহেব খাঁচায় মুরগি পালনের জন্য উপরিউক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নিলে তিনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
0 Comments:
Post a Comment