G

HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Agricultural Education
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. কৃষিশিক্ষক হাফিজ স্যার মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতির ওপর ক্লাস নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, মাছ আমিষ জাতীয় খাদ্যের অন্যতম প্রধান উৎস। কিন্তু আহরণের ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই মাছে পচন ক্রিয়া শুরু হয়। ক্লাস শেষে তিনি দ্বাদশ শ্রেণির 'ক' শাখাকে মাছ সংরক্ষণের সনাতন পদ্ধতি এবং 'খ' শাখাকে আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিতে বললেন।
ক. রাইগর মরটিস কাকে বলে?
খ. নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ বলতে কী বোঝ?
গ. 'ক' শাখার শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবেদন লিখেছিল তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মাছ সংরক্ষণে 'ক' শাখা ও 'খ' শাখার তৈরিকৃত প্রতিবেদনের মধ্যে কোন পদ্ধতিটি বেশি ফলপ্রসূ বলে তুমি মনে করো? বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাছ বা চিংড়ির মৃত্যুর পর দেহের জটিল পর্যায়ক্রমিক যে পরিবর্তন হতে থাকে তাকে রাইগর মরটিস বলে।

খ. কোনো পুকুর বা জলাশয় হতে কম সময়ে অধিক মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে যথাযথভাবে পুকুর প্রস্তুতকরণ, প্রজাতিভিত্তিক সঠিক সংখ্যক ও স্বাস্থ্যবান পোনা মজুদ, নিয়মিত সার প্রয়োগ ও পরিমিত সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ এবং পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছ চাষ করাকে নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ বলে।
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের ফলে অল্প জায়গায় ও কম সময়ে অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে লাভবান হওয়া যায়।

গ. 'ক' শাখার শিক্ষার্থীরা সনাতন পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণের উপর প্রতিবেদন লিখেছিল। মাছ সংরক্ষণের দুটি সনাতন পদ্ধতি হলো- শুঁটকিকরণ ও লবণজাতকরণ।
শুঁটকিকরণ পদ্ধতিতে তাজা মাছ তাপে শুকিয়ে শুকনো মাছে পরিণত করা হয়। এ পদ্ধতিতে তাজা মাছ থেকে পানি শুকিয়ে দেহে পানির পরিমাণ ১৫-২০% এ নামিয়ে আনা হয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া ও অধিকাংশ এনজাইমের কার্যক্রম নিষি্ক্রয় হয়ে যায়। লবণজাতকরণ পদ্ধতিতে সাধারণ খাবার লবণ প্রয়োগ করে অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় মাছের দেহ থেকে পানি বের করে আনা হয় এবং সাথে সাথে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় মাছের দেহাভ্যন্তরে লবণ দ্রবণ প্রবেশ করে। ফলে মাছের দেহকলায় লবণের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। যে পরিমাণ লবণ মাছের দেহে প্রবেশ করে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি বাইরে বেরিয়ে আসে। এতে করে মাছের পচন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করতে পারে না এবং এনজাইমের ক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাছ পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মৎস্য খামারিরা অনেক দিন মাছ সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত মাছের চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে ভালো মূল্যও পাওয়া যায়।

ঘ. 'ক' ও 'খ' শাখার শিক্ষার্থীদের প্রতিবেদন তৈরির বিষয় ছিল যথাক্রমে সনাতন ও আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ।
সনাতন পদ্ধতিতে মাছ শুঁটকি করে অথবা লবণজাত করে সংরক্ষণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ করলে দীর্ঘসময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়, কারণ ব্যাকটেরিয়া ও এনজাইম ঘটিত পচন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে দরিদ্র মৎস্যজীবীরা অর্থনৈতিক সুবিধা পায়, কারণ দারিদ্র্যতার কারণে তারা আধুনিক পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মাছ সংরক্ষণ করতে পারে না। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণে কোনো কারিগরি জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া শুঁটকিকৃত ও লবণজাতকৃত মাছ পরিবহন করা সহজ।
আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করে সংরক্ষণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বরফজাতকরণ, হিমায়িতকরণ, টিনজাতকরণ বা ফ্যানিং ধূমায়িতকরণ ইত্যাদি। বরফজাত করে মাছ সংরক্ষণ করলে মাছ টাটকা মাছের অনুরূপ থাকে এবং এর গুণাগুণও থাকে টাটকা মাছের মতো। অন্য যেকোনো পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতি অতিসহজ এবং খরচও কম। হিমায়িতকরণ করে মাছ সংরক্ষণ করলে এক বছর পর্যন্ত মাছের গুণাগুণ বজায় থাকে। এভাবে সংরক্ষণ করে মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বায়ুশূন্য অবস্থায় মাছ টিনজাতকরণ করে সংরক্ষণ করলে ৩-৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। কারণ বায়ুশূন্য অবস্থায় মাছের অভ্যন্তরে জারণ ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
মাছের গুণাগুণ বজায় রেখে অধিক দিন সংরক্ষণ এবং বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণকেই তাই বেশি ফলপ্রসূ বলে আমি মনে করি।

২. মনির তার বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত পুকুরে রাজপুঁটির চাষ করেন। কিছুদিন পর তিনি লক্ষ করলেন, কিছু মাছের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে গেছে ও গায়ে সাদা দাগ দেখা দিয়েছে। তিনি মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করলে মৎস্য কর্মকর্তা তাকে জানালেন তার পুকুরের মাছ আঁইশ খসা ও সাদা দাগ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি মনিরকে এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে পরামর্শ দিলেন।
ক. নিরুদিকরণ কাকে বলে?
খ. মাছের সম্পূরক খাবার বলতে কী বুঝ?
গ. মনিরের পুকুরের মাছ কী কী রোগে আক্রান্ত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মৎস্য কর্মকর্তা মনিরকে যে পরামর্শ দিলেন তা বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃত্রিম উপায়ে বাষ্পীকরণের সাহায্যে মাছের শরীর থেকে পানি অপসারন করাকে নিরুদিকরণ বলে।

খ. অধিক উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে যে খাবার সরবরাহ করা হয় তাকে মাছের সম্পূরক খাদ্য বলে।
জীবনধারণ, শরীর গঠন ও বৃদ্ধির জন্য মাছ জলজ পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক খাদ্যে পরিপূর্ণ পুষ্টি সাধন হয় না। তাই প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে চাউলের কুঁড়া, গমের ভুসি, সরিষার খৈল ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়।

গ. মনিরের পুকুরের মাছের রোগের লক্ষণ শুনে মৎস্য কর্মকর্তা তাকে জানান পুকুরের রাজপুঁটি মাছগুলো আঁইশ খসা ও সাদা দাগ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
আঁইশ খসা রোগে মাছের স্বাভাবিক রং ও উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। আঁইশ বাঁকা হয়ে যায় এবং সামান্য ঘষা বা আঘাতেই উঠে যায়। মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাফেরা করে। লেজ অবশ হয়ে যায়। মাছ নরম হয়ে যায় এবং খাদ্য গ্রহণ করে না। আবার সাদা দাগ রোগে মাছের ত্বক, লেজ ও পাখনায় সাদা সাদা দাগ পড়ে। দাগগুলো আলপিনের মাথাকৃতির মতো হয়। ফুলকায় ও ত্বকে সিস্ট দেখা যায়। ক্ষতস্থান থেকে আঠালো পদার্থ বের হয়। আক্রান্ত মাছের পাখনা দেহের সাথে মিশে থাকে এবং দেহে রক্তশূন্যতা দেখা যায়। কখনো কখনো শ্বাসকার্য বন্ধ হয়ে যায়। মাছের বৃদ্ধি কমে যায়।
রাজপুঁটি মাছের উপরিউক্ত রোগসমূহ দমনের জন্য রোগের লক্ষণ জানা অত্যন্ত জরুরি।

ঘ. মনির তার পুকুরের রাজপুঁটি মাছের রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করলে মৎস্য কর্মকর্তা তাকে পরামর্শ দেন।
মাছের সাদা দাগ রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য শামুক জাতীয় প্রাণী পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। ২.৫% লবণ পানিতে ৫-৭ মিনিট গোসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পোনা মজুদ করতে হবে। পুকুরে প্রতি শতাংশে ১২৫ গ্রাম হারে ডলোচুন প্রয়োগ করে রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। রোগ সম্পূর্ণ না সারলে ১৫ দিন পরপর চুন প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত মাছকে ১ পিপিএম তুঁত অথবা ২.৫% লবণ দ্রবণে সপ্তাহে ১ বার হিসেবে মোট ৩ বার চুবিয়ে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে।
আবার মাছের সাদা দাগ রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য ২ ৩% কিউরিন দ্রবণে মাছকে গোসল করাতে হবে। পুকুরের প্রতি শতাংশে ১২৫ গ্রাম হারে ডলোচুন প্রয়োগ করে রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। রোগ সম্পূর্ণ না সারা পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন পরপর চুন প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত মাছকে ৫০ পিপিএম ফরমালিন অথবা ১ পিপিএম তুঁত অথবা ২.৫% লবণ দ্রবণে সপ্তাহে ১ বার হিসেবে মোট ৩ বার ডুবিয়ে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মাছের রোগ নির্ণয় করে তা প্রতিকার ও প্রতিরোধে মৎস্য কর্মকর্তা সঠিক পদ্ধতিসমূহ অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

৩. বাংলাদেশে ব্যাপকহারে বাগদা চিংড়ির চাষ হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় ঘেরে, লবণক্ষেতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই-এর আক্রমণের ফলে বাগদা চিংড়ির উৎপাদন ব্যাহত হয়। কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে বাগদা চিংড়ির গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকায় এর রোগবালাই প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ক. চিংড়ি পুকুরের কোন স্তরের খাদ্য গ্রহণ করে?
খ. নাইলোটিকা মাছ চাষের অপকারিতা ব্যাখ্যা করো।
গ. উল্লিখিত চিংড়ির রোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লিখিত চিংড়ির অবদান বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চিংড়ি পুকুরের নিচের স্তরের খাদ্য গ্রহণ করে।

খ. নাইলোটিকার পোনা ছাড়ার ৩ মাসের মাথায় এরা প্রজনন ঘটায়। কাজেই নাইলোটিকার অতি প্রজনন একটি মারাত্মক সমস্যা।
পুকুরে স্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে খর্বাকার নাইলোটিকায় পুকুর ভরে যায় এবং মোট উৎপাদন ৫০-৭০ শতাংশে নেমে যায়। বিশেষ করে অব্যাহত চাষ পদ্ধতিতে এরূপ সংখ্যা বৃদ্ধি প্রকট সমস্যা।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত চিংড়িটি হলো বাগদা যার রোগ ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে।
বাগদা চিংড়ি ভাইরাসজনিত সাদা দাগ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়া এদের কালো ফুলকা রোগ, খোলস নরম রোগ, খোলসে সবুজ শেওলা জমা রোগ, ক্যারাপেস ও শরীরের উপর পাথর জমা ইত্যাদি দেখা দেয়। এ সকল রোগ দমনে কিছু ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়, তা হলো-
১. রোগমুক্ত চিংড়ির পোনা ব্যবহার করতে হবে।
২. বিদেশ বা কালোবাজারি থেকে আনা চিংড়ির পোনা রোগমুক্ত কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে পোনা মজুদ করা যাবে না।
৩. রোগাক্রান্ত খামারে ব্যবহৃত জাল বা প্রাসঙ্গিক উপকরণ কড়া রোদে ভালো করে শুকিয়ে অন্য খামারে বা পুকুরে ব্যবহার করতে হবে।
৪. আধা নিবিড় এবং উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চাষ ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
৫. চিংড়িকে শুধুমাত্র পরিমিত পরিমাণ সুষম খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
৬. রোগাক্রান্ত খামারের পানি যেন ভালো খামারে না যায় সেইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. চাষকালীন সময়ে ঘন ঘন পানি পরিবর্তন করতে হবে।
৮. পুকুর প্রস্তুতির সময় তলদেশের কাদামাটি তুলে ভালোমতো শুকিয়ে চুন বা বিস্নচিং পাউডার দিতে হবে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাগদা চিংড়ি চাষের মাধ্যমে কাঙি্ক্ষত ফলন লাভের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে রোগ ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন।

ঘ. উদ্দীপকের চিংড়িটি হলো বাগদা।
বাগদা চিংড়ি একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ। এটি রপ্তানিযোগ্য হওয়ায় বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। বিশ্বব্যাপী বাগদা চিংড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা, স্বাদ ও মূল্যের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর বাগদা চিংড়ির চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। উন্নত চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারিত হওয়ায় চিংড়ির ২ পোনার চাহিদাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে উপকূলের -প্রায় ২,১৬,০০০ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। যার হেক্টর প্রতি উৎপাদন প্রায় ৩০০ কেজি। চিংড়ি চাষ, নার্সারি, হ্যাচারি, চিংড়ি ক্রয়-বিক্রয়, রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণে লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। চিংড়ি রপ্তানির ৫৫% বাগদা থেকে আসে। বাগদা চিংড়ির চাহিদা ও মূল্য বেশি। বর্তমানে সমন্বিত পদ্ধতিতে ঘেরে অন্যান্য সবজিও চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩.২ লক্ষ হেক্টর জলাশয় বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আমিষের চাহিদা পূরণ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাগদা চিংড়ির চাষ অতীব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাই বলা যায়, আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে বাগদা চিংড়ির অবদান গুরুত্বপূর্ণ।

৪. শরীফ রাজাপুর গ্রামের একজন মৎস্য চাষি। তার ২০০ শতক আয়তনের ৪টি পুকুর রয়েছে। তিনি সকাল বেলা পুকুর থেকে মাছ আহরণ করে শহরে নিয়ে বিক্রি করেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাছ পচতে শুরু করে। তিনি মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন। মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মাছ পচনশীল দ্রব্য। এর জন্য কিছু জৈব রাসায়নিক কারণ দায়ী। মৎস্য কর্মকর্তা মাছ সংরক্ষণে মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ক. চিংড়ি কোন পর্বের প্রাণী?
খ. মাছ টিনজাতকরণের ২টি উদ্দেশ্য লেখো।
গ. শরীফের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে কোন কোন কারণ দায়ী বলে মৎস্য কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মৎস্য কর্মকর্তা কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন এবং কেন তা বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চিংড়ি আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী।

খ. টিনজাতকরণের মাধ্যমে সাধারণত মাছ ৩-৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। মাছ টিনজাতকরণের উদ্দেশ্যে হলো-
১. উচ্চতাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সকল ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা এবং তাদের এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়া।
২. মাছ বা খাদ্যের দেহস্থিত এনজাইমকে নষ্ট করার মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত পচন রোধ করা।

গ. মৎস্য কর্মকর্তা শরীফের আহরণকৃত মাছ পচে যাওয়ার জন্য জৈব রাসায়নিক কারণকে দায়ী করেন।
মাছের ভেতরের বিভিন্ন এনজাইম খাদ্য হজম এবং কোষ গঠনের জন্য কাজ করে। কিন্তু মাছ মরে গেলেও এ রাসায়নিক পদার্থগুলো নিঃসরণ হতে থাকে। এতে মাছের বিভিন্ন কোষ ভেঙে যায়, ফলে মাছ পচতে শুরু করে। মৃত মাছের ওপর অণুজীবের বিক্রিয়ার প্রভাবে মাছ পচে। মাছের দেহের বিভিন্ন অংশে, যেমন-আঁইশ, চামড়া, ফুলকা, নাড়িভুড়ি ইত্যাদিতে অসংখ্য জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া থাকে যাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াতে মাছ পচে। এছাড়া মাছ ধরার পর নাড়াচড়া এর মাধ্যমে মানুষের হাত থেকে, পরিবহনে ব্যবহৃত পাত্র থেকে এবং পরিবেশ থেকে অসংখ্য জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া মাছের সংস্পর্শে আসে। জীবন্ত অবস্থায় এরা মাছের ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু মাছ মরে গেলে মাছের শরীরের জীবাণু পানির সংস্পর্শে এসে অতি দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং মাছকে পচতে সাহায্য করে। মাছ মরে যাওয়ার পর মাছের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট বা চর্বি, ভিটামিনসহ বহু রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া বিক্রিয়ার ফলে মাছের জীবকোষসমূহ ভেঙে যায় এবং মাছের পচন ঘটে। অর্থাৎ, শরীফের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে উপরে উল্লিখিত জৈবিক কারণগুলো দায়ী বলে মৎস্য কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

ঘ. মৎস্য কর্মকর্তা মাছ সংরক্ষণে মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ বলতে মাছের গুণগত মান অপরিবর্তিত রেখে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাছকে খাওয়ার উপযোগী করে রাখার জন্য বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ করাকে বোঝায়।
মাছ পচনশীল দ্রব্য। সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২০-২৫% মাছ পচে যায়। তাই মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাছ আহরণ থেকে শুরু করে পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও ভোক্তা বা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার . সময়কালে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। সময়মতো মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ করা না হলে তা দ্রুত পচে যায়, ফলে পরবর্তীতে তা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আহরণের পরপরই মাছ সংরক্ষণ করা দরকার। মাছ সংরক্ষণের মাধ্যমে মাছের পচন রোধ করে তা টাটকা রাখা যায়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাছ খাওয়ার উপযোগী রাখা যায়। মাছের বাজারজাতকরণ ও ভালো দামে বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য মাছের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। মাছ সংরক্ষণের মাধ্যমে মাছের গুণগত মান ঠিক থাকে, ফলে মাছের ভালো মূল্য পাওয়া যায়। অতএব বলা যায়, সারা বছর মাছের চাহিদা পূরণ এবং মাছ চাষি ও মৎস্য শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে মৎস্য কর্মকর্তা মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

৫. আফজাল ২০০ শতক আয়তনের পুকুরে মৎস্য চাষ করেন। এ বছর শীত মৌসুমে তিনি প্রচুর মাছ আহরণ করেন। ভালো দাম পাওয়ার আশায় তিনি সব মাছ একসাথে বিক্রি না করে কিছু মাছ সূর্যালোকের সাহায্যে শুকিয়ে পরবর্তীতে বিক্রির জন্য রেখে দেন। এতে তিনি কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। তাই তিনি এর গুণগত মান অক্ষুণ্ন রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
ক. সংরক্ষণের অভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর কত ভাগ মাছ পচে যায়?
খ. কেন এবং কীভাবে মাছে পচন ধরে তা ব্যাখ্যা করো।
গ. আফজাল যে পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ করেন তার সুবিধা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আফজালের গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২০-২৫ ভাগ মাছ পচে যায়।

খ. পানি থেকে আহরণের ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই পচন ক্রিয়া শুরু হয়।
মাছের দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যাকটেরিয়া থাকে। মাছ মরে গেলে এ ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়া প্রতিরোধ করতে পারে না। ফলে মাছে পচন ধরে, মাছ মারা যাওয়ার পরে নিঃসৃত এনজাইমের প্রভাবে মাছের কোষ ভেঙে যায় এবং মাছ পচতে শুরু করে। মাছ মারা যাওয়ার পর রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোষ ভেঙে যায় এবং মাছ পচতে শুরু করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মাছ দ্রুত পচে। পরিবহনের সময় বরফ গলে বা অন্য কোনো ত্রুটি হলে মাছ পচে যায়।

গ. আফজাল শুঁটকিকরণ পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ করেন।
বাংলাদেশে সূর্যালোকের সাহায্যে মাছ শুঁটকিকরণ খুবই জনপ্রিয় এবং লাভজনক পদ্ধতি। আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে এত বেশি মাছ ধরা পড়ে যে, সব মাছ বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেও সঠিক সময়ে মাছ বাজারজাত করা যায় না। ফলে অনেক মাছ পচে যায়। শুঁটকিকরণ পদ্ধতিতে মাছ দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করে রাখা যায়। বাজারে যখন মাছের সরবরাহ কমে যায় তখন এ সংরক্ষণ করা মাছ সরবরাহ করে মানুষের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা পূরণ করা যায়।
দেশের দরিদ্র মৎস্যজীবীরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মাছ সংরক্ষণ করতে পারেন না। ফলে শুঁটকিকরণ পদ্ধতি তাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এ পদ্ধতিতে কোনো তাপ অপরিবাহী কক্ষের প্রয়োজন হয় না এবং পরিবহন খরচও কম লাগে। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণে অতিরিক্ত ব্যয় হয় না। তাছাড়া বাংলাদেশের ও শীতকালের আর্দ্রতা ও সূর্যালোকের স্থায়িত্ব শুঁটকিকরণের জন্য উপযুক্ত। শুঁটকি মাছে প্রচুর আমিষ ও ভিটামিন ডি থাকে। এ পদ্ধতিতে মাছ সংরক্ষণ করে সারাবছর মাছ ও আমিষের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। এছাড়াও শুঁটকি মাছ বর্তমানে হাঁস-মুরগির অত্যন্ত পুষ্টিকর আমিষ জাতীয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
শুঁটকিকরণ মাছ সংরক্ষণের সহজতম পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতিতে খরচ খুবই কম। তাছাড়া বাজারে শুঁটকি মাছের চাহিদাও প্রচুর। অর্থাৎ, শুঁটকিকরণ পদ্ধতিটি বাংলাদেশের মৎস্যশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. আফজাল শুঁটকির গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সূর্যালোক ও বাতাসের মাধ্যমে কোনো দ্রব্য হতে পানি অথবা জলীয় অংশ হ্রাস করানোকে শুঁটকিকরণ বলা হয়। আফজাল সতর্কতার সাথে মাছের নাড়িভুঁড়ি, আঁইশ, পাখনা ইত্যাদি এমনভাবে ছাড়ায় যেন মাংসের কোনো ক্ষতি না হয়।
প্রত্যেক ক্ষেত্রে মাছকে উত্তমরূপে ধৌত করেন যেন রক্ত, ময়লা, আঁইস ইত্যাদি না লেগে থাকে। এজন্য মাছকে (২-৫%) লবণ পানিতে অল্প সময়ের জন্য ডুবিয়ে নেয়। এতে করে প্রারম্ভিক সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হয়। তিনি বাসি বা পচা মাছ এবং তৈলযুক্ত মাছ বাদ দিয়ে টাটকা মাছ শুঁটকিকরণ করেন। তিনি ব্যবহার্য সব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পূর্বে ও পরে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেন। ভালো ফল পাওয়ার জন্য তিনি ক্লোরিন পানি ব্যবহার করেন। আফজাল শুঁটকি করার জন্য মাছকে মাটি বা বালির উপর না রেখে বাঁশের মাচা ও চাটাইয়ের উপর রেখে তার উপর জাল দিয়ে শুষ্ক করেন। শুকানোর সময় কীটপতঙ্গের দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ রোধ করার জন্য সোলার সল্ট ব্যবহার করেন। উন্মুক্ত স্থানে শুঁটকি মজুদ করা উচিত নয় বিধায় আফজাল বায়ুনিরোধক পাত্র হিসেবে টিনের পাত্রে মজুদ করেন। এক্ষেত্রে পাত্রের ভিতরের জীবাণু রোধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- BHT, BHA, এক্সটোকোফেরল ইত্যাদি ব্যবহার করেন। আফজাল উপরিউক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে শুঁটকির গুণগতমান রক্ষা করতে সফল হন।

৬. আলাল দীর্ঘদিন ধরে তার পুকুরে মাছ চাষ করলেও মাছ চাষ সম্পর্কে কোন প্রশিক্ষণ পাননি। এ বছর তিনি তার যা পুকুরে রুই মাছ চাষ করেন। পোনা মজুদের সপ্তাহখানেক পর তিনি তার পুকুরে কিছু মাছের ফুলকায় রক্তক্ষরণ, ফুলকা পচা ও ফুলে যাওয়া লক্ষণ লক্ষ করেন। এমন সমস্যায় তিনি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নিলে কর্মকর্তা আলালকে এ রোগের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য জৈবিক ও রাসায়নিক ব্যবস্থা বলে দেন। এ ব্যবস্থা নেওয়াতে রোগটি অন্য পুকুরে আর ছড়ায়নি।
ক. মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কী?
খ. চিংড়ি চাষ কেন লাভজনক? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রোগটির কারণ ও লক্ষণগুলো ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাছ আহরণের পর সকল গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ রেখে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদিভাবে সংরক্ষণ করে বাজারজাতকরণকে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ বলে।

খ. দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে চিংড়ির চাহিদা ও বাজারদর বেশি থাকায় চিংড়ি চাষ লাভজনক।
চিংড়ির পোনা সহজলভ্য, অল্প বিনিয়োগেই চিংড়ির খামার গড়ে তোলা যায় এবং সারা বছর চিংড়ি চাষ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে বর্তমানে হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫০ কেজি থেকে ৬০০ কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব। আমাদের দেশে মাছ রপ্তানি আয়ের শতকরা ৫৮ ভাগ আসে চিংড়ি থেকে। চিংড়ির চাষ করে চাষির আয় ও কর্মসংস্থান ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রোগটি হলো মাছের ফুলকা পচা রোগ। Branchiomyces sanguinis নামক ছত্রাকের আক্রমণে মাছের এ রোগ হয়। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো-
i. প্রাথমিক অবস্থায় ফুলকা ফুলে ওঠে ও তাতে রক্ত জমে যায়।
ii. পরবর্তীতে ফুলকায় লাল দাগ পড়ে ও ফুলকার রং ক্রমশ সাদা হয়ে যায়।
iii. ফুলকার গাত্রসমূহ ধীরে ধীরে একটির সাথে অপরটি লেগে যায় এবং খসে পড়ে।
iv.কখনও কখনও ফুলকা থেকে শ্লেষ্মা নির্গত হয়।
v. আক্রান্ত মাছের স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায় এবং খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়।
অর্থাৎ, উল্লিখিত লক্ষণসমূহ দেখে ফুলকা পচা রোগে আক্রান্ত মাছ শনাক্ত করা যাবে।

ঘ. উদ্দীপকে আলালের পুকুরে চাষকৃত রুই মাছ ফুলকা পচা রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
এ রোগে মাছের গায়ে একধরনের সাদা গুটি দেখা যায়। এছাড়াও এ রোগে আক্রান্ত হলে ফুলকা ফুলে গিয়ে স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে যায় এবং মাছ পানির উপর ভেসে থাকে। ইৎধহপযরড়সুপবং ংধহমঁরহরং নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য আলাল মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শনুযায়ী নিম্নোক্ত জৈবিক ও রাসায়নিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন-
i. পুকুরের তলার কাদা সরিয়ে প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করেন।
ii. পানিতে ২.৫% লবণ মিশিয়ে রোগাক্রান্ত মাছগুলোকে গোসল করিয়ে পুনরায় পুকুরে ছাড়েন।
iii. পুকুরের দূষিত পানি পরিবর্তন করে পরিশোধিত পানি দেন।
iv. সাময়িকভাবে জৈবসার প্রয়োগ বন্ধ রাখেন।
v. পুকুরের তলা ও পাড়ের ময়লা আবর্জনা এবং আগাছা পরিষ্কার করে দেন।
vi. মাছকে পরিমিত পরিমাণে সুষম খাদ্য সরবরাহ করেন।
উপরিউক্ত প্রতিরোধ ও প্রতিকার ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করায় রোগটি অন্য পুকুরে ছড়ায়নি। তাই বলা যায়, মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শটি যৌক্তিক ছিল।

HSC কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. ফরাসি বিজ্ঞানী নিকোলাস অ্যাপার্ট (Nicholas Appert) ১৮১০ সালে সর্বপ্রথম খাদ্য সংরক্ষণের টিনজাতকরণ (Canning) পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন। টিনজাত করে ৩-৪ বছর পর্যন্ত মৎস্য সামগ্রী সংরক্ষণ করা গেলেও সব ধরনের মাছের জন্য পদ্ধতিটি উপযোগী নয়।
ক. মাছ প্রক্রিয়াজতকরণ কাকে বলে?
খ. শুঁটকিকরণ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের পদ্ধতিটি সব ধরনের মাছের সংরক্ষণের উপযোগী না হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জলাশয় থেকে মাছ আহরণের পর তাতে তাজা মাছের সকল গুণাগুণ অক্ষুণ্ণ রেখে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী দীর্ঘ বা স্বল্প মেয়াদে সংরক্ষণ করে বাজারজাত করাকে মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ বলে।

খ. সূর্যালোক বা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে (যেমন- সোলার ড্রায়ার) মাছকে শুকিয়ে সংরক্ষণ করাকে শুঁটকিকরণ বলা হয়। শুঁটকিকরণ পদ্ধতিতে তাজা মাছ থেকে ৮০ু৮৫% পানি অপসারণ করা হয়, ফলে জীবাণু সংক্রমণ, বংশবৃদ্ধি এবং মাছের পচন ঘটাতে পারে না। ছোট মাছ শুঁটকিকরণের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করা মাছকে ১০% লবণ পানিতে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে জীবাণুমুক্ত করা হয়। এগুলোকে পরবর্তীতে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। বড় মাছ পরিষ্কার করার পর মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে কাটা হয়। এরপর রোদে শুকানো হয়। মাছ শুঁটকি করতে সর্বোচ্চ ১০ দিন সময় লাগে।

গ. উদ্দীপকের মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতিটি হলো ক্যানিং বা টিনজাতকরণ।
মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বায়ুশূন্য পাত্রে সংরক্ষণ করাই হলো ক্যানিং। এ পদ্ধতিতে ৩-৪ বছর পর্যন্ত মাছ সংরক্ষণ করা যায়। নিচে ক্যানিং পদ্ধতিটি বর্ণনা করা হলো-
প্রথমে টাটকা মাছের মাথা, পাখনা, আঁইশ, নাড়িভুঁড়ি অপসারণ করে ক্লোরিনযুক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর মাছ টুকরো করে প্রথমে লবণ পানিতে এবং পরে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর লবণ দ্রবণে মাছের টুকরোগুলোকে সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। এরপর সিদ্ধ মাছগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত টিনে বা কৌটায় স্তরে স্তরে সাজাতে হবে। প্রতি স্তরে বিভিন্ন রকম মসলা, তেল, সস, লবণ ইত্যাদি দিতে হবে। এভাবে টিনের কৌটা ভর্তি করতে হবে যাতে কোথাও ফাঁকা না থাকে। এরপর মেশিনের সাহায্যে বায়ুশূন্য করে কৌটার মুখ বন্ধ করতে হবে। টিনের বাহিরের অংশের ময়লা সোডিয়াম ফসফেট মিশ্রিত করে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর ১২০° সে. তাপমাত্রার ৫০-৬০ মিনিট উত্তপ্ত করে টিনের ভিতরের মাছকে জীবাণুমুক্ত করতে। হবে। তাপ দেওয়া শেষ হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে কৌটা ঠান্ডা নিতে হবে। এরপর টিনের গায়ে লেবেলিং করতে হবে। লেবেলি কাগজে মাছের জাত, ওজন, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, কোম্পানির নাম ইত্যাদির উল্লেখ থাকতে হবে।
উল্লিখিত প্রক্রিয়া অবলম্বনের মাধ্যমে মাছকে টিনজাত করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকের পদ্ধতিটি হলো টিনজাতকরণের মাধ্যমে মাছ সংরক্ষণ।
টিনজাত করে ৩-৪ বছর পর্যন্ত মাছ সংরক্ষণ করা গেলেও সব ধরনের মাছের জন্য পদ্ধতিটি উপযোগী নয়।
ক্যানিং বা টিনজাতকরণ পদ্ধতিতে উচ্চতাপে বায়ুশূন্য অবস্থায় ২৫০° ফা. বা ১২০° সে. তাপমাত্রায় ৫০-৬০ মিনিট ধরে মাছকে জীবাণুমুক্ত করা হয়। তাই যেসব প্রজাতির মাছের পেশির গঠন উচ্চ তাপমাত্রায় ঠিক থাকে শুধুমাত্র সেসব মাছকেই ক্যানিং করে। সংরক্ষণ করা হয়। সেজন্য বেশি চর্বিযুক্ত বা একেবারে কম চর্বিযুক্ত মাছ ক্যানিং বা টিনজাতকরণ করা হয় না। সাধারণত যেসব মাছের চর্বি মাছের দেহের ওজনের ৭-১৫% এর মধ্যে থাকে সেগুলো টিনজাতকরণের জন্য উত্তম। এখন পর্যন্ত শুধু সামুদ্রিক মাছেরই, যেমন- টুনা, ম্যাকেরেল, পিলটার্ড, সার্ডিন, স্যামন প্রভৃতি প্রজাতির মাছ টিনজাত করতে দেখা যায়। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত টিনের কৌটার অভ্যন্তরে মাখন বা রাসায়নিক পদার্থের প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে সংরক্ষণ ভালো হয়।
সুতরাং, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসম্পনণ মাছ ব্যাতীত সব ধরনের মাছের সংরক্ষণের জন্য ক্যানিং বা টিনজাতকরণ পদ্ধতি উপযোগী নয়।।

৮. বিশ্বব্যাপী চিংড়ির চাষ ১৯৭০ সালে শুরু হলেও বাংলাদেশে এর চাষ ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে ১৯৯০ সালের পরে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লোনা পানিতে এবং অভ্যন্তরীণ স্বাদু পানিতে চিংড়ি চাষ হয়। চিংড়ি আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক বিরাট শিল্পরূপে পরিগণিত হয়েছে।
ক. বাঁওড় কাকে বলে?
খ. উপকূলীয় অঞ্চল কেন চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী? ব্যাখ্যা করো।
গ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনটি শিল্পরূপে পরিগণিত হচ্ছে? উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উক্ত ফসলটি চাষের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নদনদীর গতিপথ পরিবর্তনজনিত কারণে অশ্বক্ষুরাকৃতির যে জলাশয়ের সৃষ্টি হয় তাকে বাঁওড় বলে।

খ. ভূমির অভ্যন্তরে যতদূর পর্যন্ত সমুদ্রের পানি প্রবেশ করে তাকে উপকূলীয় অঞ্চল বলে ধরা হয়। চিংড়ি প্রধানত লোনা বা আংশিক লোনা পানিতে ভালো হয়। বাগদা চিংড়ি স্বাদু পানিতে অল্প সময় বেঁচে থাকতে পারে। অপরদিকে, গলদা চিংড়ির কোনো কোনো প্রজাতি আংশিক লোনা, আবার কোনো কোনো প্রজাতি স্বাদু পানিতে জন্মাতে পারে। তবে সকল গলদারই জীবনচক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে লোনা পানির প্রয়োজন হয়। এজন্য, উপকূলীয় অঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী।

গ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিংড়ি আজ বিরাট শিল্পরূপে পরিগণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টিতে এবং রপ্তানি পণ্যের তালিকায় চিংড়ি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। বিশববাজারে চিংড়ি খাদ্য হিসেবে বেশ লোভনীয় ও আকর্ষণীয়। স্বাদ ও পুষ্টির কারণে বিশ্বে এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশে চিংড়ির উৎপাদন দিন দিন বেড়েই চলেছে। চিংড়ি চাষে উৎসাহ প্রদানে সরকারিভাবে ২ লক্ষ ৭ হাজার চিংড়ির ঘের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে (মৎস্য সংকলন, ২০১৭)। বর্তমানে এদেশে চিংড়ি খামারের আয়তন ২,৭৫,৫৩৯ হেক্টর। চিংড়ির পোনা আহরণে ৮.৩৩ লক্ষ এবং উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত রয়েছে ১.৫-২.০ লক্ষ লোক (কৃষি ডাইরি, ২০১৮)। ফলে চিংড়ি আজ এদেশে বিরাট শিল্পরূপে পরিগণিত হয়েছে। দেশের রপ্তানিজাত মৎস্য পণ্যের প্রায় ৫৮% চিংড়ি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে ০.৬২ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে যার মাধ্যমে ৪.২৮৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে (Export Promotion Bureau, ২০১৬-২০১৭)। চিংড়ি চাষের জমিতে যদি উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগে নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করা হয় তবে ভবিষ্যতে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চিংড়ি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফসলটি হলো চিংড়ি।
চিংড়ি অমেরুদন্ডী প্রাণী, যা আর্থ্রোপোডা পর্বের ডেকাপোডা বর্গের অন্তর্গত। বাংলাদেশে চিংড়ি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, মাটি ও পানি চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
দেশের প্রাকৃতিক উৎস থেকে সহজেই চিংড়ি পোনা পাওয়া যায়। কৃত্রিমভাবে ৪৯টি হ্যাচারিতে বাগদা ও ৩৬টি হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন করা হয়। রেণু সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ৯ কোটি। তাছাড়া স্বল্প বিনিয়োগে সহজেই চিংড়ি খামার গড়ে তোলা যায়। গলদা চিংড়ির সাথে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্র চাষও অধিক লাভজনক। বাংলাদেশের অসংখ্য নদী খাল, ডোবা, পুকুর এবং বঙ্গোপসাগরের ৪৮০ কিলোমিটার তটরেখা বরাবর অর্থনৈতিক এলাকাসমূহে চিংড়ি চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় ৪০% জমিতে অর্থাৎ প্রায় ১.৭২ লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আরও অন্তত ২.৩৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব। (কৃষি ডাইরি, ২০১৮)। এ দেশে চিংড়ির চাষযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়িয়ে সহজেই পতিত জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।
তাই বলা যায়, বাংলাদেশের উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা এবং অভ্যন্তরীণ জলাশয়সমূহ চিংড়ি চাষের বেশ অনুকূলে এবং বিদেশে চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টি চাহিদা পূরণ ইত্যাদি লক্ষ্য অর্জনে এদেশে চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

৯. ফরহাদ মিয়া স্থানীয় মৎস্য চাষিদের কাছ থেকে মাছ কিনে ঢাকায় বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মৎস্য পণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকায় মাছ পচে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক. বরফজাতকরণ কাকে বলে?
খ. টিনজাতকরণ বলতে কী বোঝ?
গ. উক্ত পণ্য পরিবহণকালে বিবেচ্য বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত পণ্য বাজারজাতকরণে বিদ্যমান সমস্যা দূরীকরণের পদক্ষেপসমূহ বিশ্লেষণ করো।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদ্ধতিতে বরফ ব্যবহার করে মাছের দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা তার কাছাকাছি নামিয়ে এনে মাছ সংরক্ষণ করা হয় তাকে বরফজাতকরণ বলে।

খ. কোনো পচনশীল খাদ্যদ্রব্যকে সম্পূর্ণরূপে বায়ুশূন্য নিরাপদ পাত্রে আবদ্ধ অবস্থায় এবং সুনির্দিষ্ট তাপ ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে টিনজাতকরণ বলে।
সাধারণত টিনজাতকরণের মাধ্যমে মাছ ৩-৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে উচ্চতাপ (২৫০° ফা. বা ১২১° সে তাপমাত্রায় ৫০-৬০ মিনিট) প্রয়োগ করে সকল ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস ও তাদের এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেওয়া হয়। ফলে খাদ্যদ্রব্যের রাসায়নিক বিক্রিয়াজনিত পচন রোধ হয়।

গ. উদ্দীপকে ফরহাদ মিয়া স্থানীয় মাছ চাষিদের কাছ থেকে মাছ কিনে ঢাকায় বাজারজাত করে।
বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে উৎপাদনকৃত মাছ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়াকে পরিবহন বলে। মাছ পচনশীল দ্রব্য হওয়ায় পরিবহনের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। মাছ পরিবহনকালীন বিবেচ্য বিষয়গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. মাছ পরিবহনকালে রোদ, বৃষ্টি এবং বিভিন্ন সংক্রমণ হতে মাছকে রক্ষা করার সুবিধাদি থাকতে হবে।
২. পরিবহন যানের ফিস হোল্ডারের সকল দেয়াল পানি নিরোধক ও তাপ অপরিবাহী হতে হবে।
৩. পরিবহনকালে এমনভাবে মাছ সংরক্ষণ করতে হবে যেন থেতলে না যায়।
৪. পরিবহনকালে তাজা মাছ বরফ করে ৫° সে. তাপমাত্রার নিচে শীতল অবস্থায় রাখতে হবে।
৫. রেফ্রিজারেটেড ক্যারিয়ারে তাজা মাছ পরিবহনকালে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এরূপ হতে হবে যাতে মাছের তাপমাত্রা ১৮° সে. হতে ২° সে. এর মধ্যে উঠানামা করে।
৬. মাছ পরিবহনকালে রক্ষিত বাক্স, ব্যারেল বা ডেক-হোল্ড, পেন বোর্ড, শেলফ-বোর্ড পরিষ্কার ও সংক্রমণমুক্ত রাখতে হবে।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গুণগতমান অক্ষুন্ন রেখে মাছ পরিবহন করা সম্ভব।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পণ্যটি হলো মাছ।
মাছ উৎপাদকের কাছ থেকে ক্রেতার নিকট পৌঁছানোই হলো হু বাজারজাতকরণ। ফরহাদ মিয়ার মাছ বাজারজাতকরণ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকায় মাছ পচে যাওয়ায় সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হ সঠিকভাবে বাজারজাতকরণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ নিতে হবে-
১. মাছ সংগ্রহের নৌকাগুলো বরফকৃত বা হিমায়িত মাছ পরিবহনের ক্ষেত্রে রেফ্রিজারেটেড ও ইনসুলেটেড ভ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির কাজে সঠিক মানের প্যাকেজিং দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
৩. মাছ সংরক্ষণকালে সঠিক অনুপাতে বরফ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দেশের জন্য শীতকালে বরফ ও মাছের অনুপাত ১:২ এবং গ্রীষ্মকালে ১:১ হওয়া উচিত।
৪. অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় এলাকার মাছসমূহের সহজ বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে।
৫. প্রত্যন্ত এলাকায় আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং পাইকারি বাজার স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬. মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে আধুনিক অবতরণ সুবিধাদি এবং পাইকারি মৎস্য বাজার তৈরি করতে হবে। এসব স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত সকল সুবিধাদি ও সঠিক পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৭. রপ্তানিকৃত মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের ক্ষেত্রে পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের মৎস্য বাজারজাতকরণের সমস্যাগুলো অনেকাংশে দূর করা সম্ভব হবে।

১০. তামিম ৫০ শতক আয়তনের পুকুরে রাজপুঁটির চাষ করে। মৎস্য আহরণের সময় হয়ে গেলেও মাছগুলো তেমন বড় না হওয়ায় বিষয়টি সে মৎস্য কর্মকর্তাকে জানায়। সবকিছু শুনে মৎস্য কর্মকর্তা তাকে পুকুরের মাটি ও পানির গুণাগুণ এবং পুকুর তৈরিতে ত্রুটি রয়েছে বলে জানালেন। তিনি সার্বিকভাবে পুকুরে পোনা মজুদ, চুন ও সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ পরামর্শ দিলেন।
ক. মাৎস্য ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
খ. মাছ চাষে শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট নয় কেন?
গ. তামিমের পুকুরে প্রয়োজনীয় পোনা, চুন ও সারের পরিমাণ নির্ণয় করো।
ঘ. তামিমের পুকুরের মাছগুলোর সঠিক বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাৎস্য ব্যবস্থাপনা বলতে জলাশয় তৈরি ও পোনা উৎপাদন থেকে শুরু করে এর পরিচর্যা, রোগ বালাই দমন, আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন, সংরক্ষণ প্রভৃতি বিষয়কে বোঝায়।

খ. দেহের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য মাছ পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে ফাইটোপস্নাংকটন (উদ্ভিদকণা) ও জু-পস্নাংকটন (প্রাণীকণা) খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু, মাছ চাষের ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদন পাওয়ার জন্য পুকুরে অধিক ঘনত্বে পোনা ছাড়া হয়। এ অবস্থায় শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে পারে না। এমনকি সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য বৃদ্ধি করলেও তা যথেষ্ট হয় না। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়।
সম্পূরক খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মাত্রা চাহিদা অনুযায়ী থাকে, যা মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনে সহোযোগিতা করে। অর্থাৎ, অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক উৎপাদন পাওয়ার জন্য মাছ চাষে শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট নয়।

গ. উদ্দীপকে তামিম তার ৫০ শতক আয়তনের পুকুরে রাজপুঁটির চাষ করে।
তামিমকে তার পুকুরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে চুন ও সার প্রয়োগ এবং পোনা মজুদ করতে হবে। পুকুরের মাটি ও পানি শোধন এবং উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য শতক প্রতি ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তাই তামিম তার ৫০ শতক আয়তনের পুকুরে ৫০-১০০ কেজি চুন প্রয়োগ করবে। পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য পরিমিত মাত্রায় জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি শতকে জৈব সার হিসেবে ৪-৫ কেজি গোবর অথবা ২-৩ কেজি মুরগির বিষ্ঠা এবং অজৈব সার হিসেবে ১০০-১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৮০-১০০ গ্রাম টিএসপি দিতে হয়। এ হিসেবে তামিম তার ৫০ শতকের পুকুরে ২০০-২৫০ কেজি গোবর অথবা ১০০-১৫০ কেজি মুরগির বিষ্ঠা, ৫-৭.৫ কেজি ইউরিয়া এবং ৪-৫ কেজি টিএসপি প্রয়োগ করবে। সার প্রয়োগের ৭ দিনের মধ্যে পোনা মজুদ করতে হয়। প্রতি শতক পুকুরে ৫-৭ সেমি আকারের ৭০-৭৫ টি রাজপুঁটির পোনা মজুদ করা হয়। তামিম তার ৫০ শতক আয়তনের পুকুরে ৩৫০০ ৩৭৫০টি পোনা মজুদ করবে। তামিম তার পুকুরে রাজপুঁটি চাষের জন্য উপরে উল্লিখিত পরিমাণে চুন ও সার প্রয়োগ এবং পোনা মুজদ করবে।

ঘ. রাজপুঁটি চাষের জন্য তামিমের পুকুর তৈরিতে এবং পুকুরের মাটি ও পানির গুণাগুণে ত্রুটি ছিল।
রাজপুঁটি চাষের উপযোগী পুকুরের মাটি দোআঁশ ও পলি দোআঁশ এবং মাটির পিএইচ ৬.০-৮.০ এর মধ্যে হলে তা মাছ চাষের জন্য উত্তম। পুকুরে প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ৮-১০ মিলিগ্রাম নাইট্রোজেন থাকা প্রয়োজন। রাজপুঁটি চাষের পুকুরের পানির বর্ণ হালকা সবুজ, গভীরতা কমপক্ষে ১.৫ মি. থেকে ২ মি. এবং আয়তন ২৫-১০০ শতক হওয়া ভালো। পুকুর বন্যা বা জোয়ারের পানিতে যেন তলিয়ে না যায় সেজন্য পুকুরের পাড় উঁচু করে দিতে হয়। পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা অপসারণ করতে হয়। জলজ আগাছা মাছের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে এবং পুকুরে সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা দেয়। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, ফলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মে না। তাই পুকুরের জলজ আগাছা, পুকুর পাড়ের ঝোপঝাড় শিকড়সহ উপড়ে ফেলতে হয়। রাক্ষুসে এবং অবাঞ্ছিত মাছ পুকুরের অন্যান্য মাছের সাথে খাবার নিয়ে প্রতিযোগিতা করে এবং অনেক সময় চাষের মাছকে খেয়ে ফেলে। তাই পুকুর থেকে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ অথবা ২০-৩০ গ্রাম রোটেনন বা প্রতি শতকে ৪টি ফসটক্সিন ট্যাবলেট প্রয়োগ করতে হয়।
সুতরাং বলা যায়, উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন ও উল্লিখিত ব্যবস্থাপনাসমূহ সঠিকভাবে সম্পনণ না করার কারণে তামিমের পুকুরের মাছগুলোর সঠিক বৃদ্ধি হয়নি।

No comments:

Post a Comment