G

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. বশির মিয়া তার বাড়ির একপাশে ফরিদপুরী, তাহেরপুরী, রুচি আরয়েন্ট ইত্যাদি এবং অন্যপাশে জাপানিজ, বোল্ড জ্যামাইকা, কোচিন এবং আফ্রিকান জাতের মসলা চাষ করেন।
ক. মালচিং কী?
খ. রসুন চাষে কীরূপ মাটির প্রয়োজন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত এক পাশের মসলার চাষ পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে অন্যপাশে চাষকৃত মসলার রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে কী ব্যবস্থা নিবে তা আলোচনা কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির আর্দ্রতা ও পুষ্টি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এর উপরিভাগে ধানের খড়, লতাপাতা, কচুরিপানা ইত্যাদি জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেওয়াকেই মালচিং বলে।

খ. রসুন চাষের জন্য দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী তবে এঁটেল ও এঁটেল-দোআঁশ মাটিতেও রসুন জন্মে, সুনিষ্কাশিত, জৈব পদার্থপূর্ণ উঁচু জমি রসুন চাষের জন্য উত্তম।

গ. উদ্দীপকে এক পাশের মসলাগুলো হলো পিয়াজের জাত, পিঁয়াজের চাষপদ্ধতি নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
জমি তৈরি: জমি ৫-৬টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে। সমতল করে তৈরি করতে হয়। আগাছা, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে পুড়িয়ে দিলে জৈব সারের কাজ করবে।
বীজ শোধন: বীজবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি কেজি বীজ ২ গ্রাম ভিটাভেক্স/প্রোভ্যাক্স-২০০ দ্বারা শোধন করতে হয়। রোদে এক ঘণ্টা বীজ শুকিয়েও শোধন করা যায়।
বীজ হার: বীজ ছিটিয়ে বপন করলে প্রকৃত বীজ প্রতি হেক্টরে ৬-৭ কেজি, কন্দ রোপণ করলে ১২০০-১৫০০ কেজি ও চারা তৈরির জন্য বীজ বপন ৩-৪ কেজি প্রকৃত বীজ প্রয়োজন।
রোপণ পদ্ধতি: পিঁয়াজ বীজের মাধ্যমে, কন্দ রোপণ ও চারার মাধ্যমেও চাষ করা হয়।
সার প্রয়োগ: জমি শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি ও জিপসাম এবং ইউরিয়া ও এমপি সারের অর্ধেক মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ ও নিকাশ: সেচ দিলে পিঁয়াজের ফলন বাড়ে। জলাবদ্ধতায় ক্ষতি হয়। মাটিতে রস না থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। পিঁয়াজ সংগ্রহের ১৫ দিন আগে সেচ বন্ধ করতে হবে।
আগাছা দমন: আগাছা হওয়ার সাথে সাথে দমন করতে হবে। সেই সাথে নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা:
i. পুষ্পদ- কাটা: পুষ্পদ- বা কলি একটু বড় হলেই ভেঙে দিতে হবে। কলি ভেঙে দিলে পিঁয়াজ বড় হয়, পুষ্ট হয়, ঝাঁঝ বেশি হয় ও গুণগত মান বাড়ে। ব্লেড বা ছুরি দিয়ে। পুষ্পদ- কাটা যায়।
ii. গোড়া ভেঙে দেওয়া: পিঁয়াজ সংগ্রহের ১০-১২ দিন আগে কলাগাছ বা মই পিঁয়াজ ক্ষেতের উপর দিয়ে টেনে নিলে গাছের গোড়া ভেঙে যায়। এতে পিঁয়াজের গুণগত মান ভালো হয়।
iii. মালচিং: মাটির স্তর ভেঙে দিয়ে এবং খড় বা মালচিং দ্রব্য দিয়ে মাটি ঢেকে দিলে রস সংরক্ষণ থাকে।
পোকা ও রোগ দমন: পিঁয়াজের রোগবালাই কম হয়। তবে জাবপোকা ও থ্রিপস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এরা পাতার রস শোষণ করে। জাবপোকা কচি ডগা, পুষ্প, কান্ডের রস শোষণ করে। এগুলো দমনের জন্য ছাই ছিটানো ও পানি স্প্রে করা যেতে পারে। অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করেও এগুলো দমন করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকের অন্যপাশের চাষকৃত মসলা হলো আদার জাত। আদার রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে যেসব ব্যবস্থা নিতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো-
পোকামাকড়: আদায় মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ হলে কীটননাশক স্প্রে করতে হবে।
রোগবালাই: কন্দের পচন রোধের জন্য বপনের ছত্রাকনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে নিতে হবে।
১. পাতা মোড়ানো পোকা: পোকা মুড়িয়ে ভেতরে থেকে পাতার রস ও সবুজ অংশ খায়। পাতা আস্তে আস্তে ঝলসে যায়।
দমন: কার্বারিল ২.৩২ গ্রাম/ডাইমেথোয়েট ২ মিলি/লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২. আদার কন্দ পচা রোগ: বর্ষাকালে গাছের উচ্চতা ৪-৬ সে.মি.-এর সময় নিচের পাতার প্রান্তভাগে প্রথমে হালকা হলুদাভ হয়ে পত্রফলকের দিকে বিস্তার লাভ করে। পাতার মধ্যভাগ হতে কিনারার দিকে ক্রমশ হলুদাভ হয় এবং সমস্ত পাতা ঝিমিয়ে পড়ে। কন্দ নরম হয়ে ফুলে উঠে এবং গাছ টান দিলে উঠে আসে।
দমন: পানি নিকাশ। ম্যানকোজের + মেটালক্সিল ২ গ্রাম বা কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে কন্দ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে রোপণ করতে হবে। তবে রোগ দেখা দিলে কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক ১৫-২০ দিন পরপর ২-৩ বার গোড়া ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোগ দেখা মাত্র রিডোমিল গোল্ড ০২% ১২ দিন পরপর জমিতে ড্রেনচিং করে দিলে দমন হয়।

২. জহির একজন দরিদ্র কৃষক। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। বন্যার কারণে প্রতি বছর তার ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। নিচু জমিতে আমন ধানের চাষ করা যায় বলে তিনি তার জমিতে আমন ধান চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন।
ক. ধানের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
খ. আবাদ মৌসুমের উপর ভিত্তি করে ধানের শ্রেণিবিভাগ কর।
গ. জহির যে ফসল চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই ফসলের পোকা দমন পদ্ধতি বর্ণনা কর।
ঘ. বর্তমান প্রেক্ষাপটে কৃষক জহিরের সিদ্ধান্ত কতটুকু সঠিক? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ধানের বৈজ্ঞানিক নাম- Oryza sativa.

খ. আবাদ মৌসুমের উপর ভিত্তি করে ধানের জাতসমূহকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১. বোরো মৌসুমে চাষযোগ্য ধানের জাত।
২. আউশ মৌসুমে চাষযোগ্য ধানের জাত।
৩. আমন মৌসুমে চাষযোগ্য ধানের জাত।

গ. জহির আমন ধান চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমন ধানের পোকা দমন পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো-
যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা:
১. পরিমিত সার ব্যবহার করে অধিকাংশ পোকা
২. হাতজাল দ্বারা - পামরি ও অন্যান্য পোকা
৩. জমিতে চারা রোপনের সঠিক দূরত্ব ব্যবহার করে পোকা নিধন
৪. জমির পানি বের করে দিয়ে চুঙ্গি পোকাসহ অন্যান্য পোকা নিধন
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে:
১. পোকা আক্রমণ প্রতিরোধ জাতের চাষ যেমন- চান্দিনা ও ব্রিশাইল জাতের ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ কম হয়।
২. সুষম মাত্রার সার প্রয়োগ ও জমি আগাছামুক্ত রাখা।
রাসায়নিক পদ্ধতি:
পোকার প্রকার ও আক্রমণের তীব্রতার ভিত্তিতে পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন, ক্লোরোপাইরিফম, ডাইমিথোরের, নিমতেল প্রভৃতি ওষুধ ১-৩ মি.লি./লিটার পানি ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

ঘ. জহির একজন দরিদ্র কৃষক। বন্যার কারণে প্রতিবছর তার ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তিনি তার এই নিচু জমিতে আমন ধান চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। তার এই সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ সঠিক ছিল কারণ আমন ধান বর্ষাকালীন ফসল। নিচু ও বন্যার পানিতে ডুবে গেলেই এই ধান হয়। এছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ধানের চাষ অধিক প্রয়োজন। কেননা ধান পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য। এটি বাংলাদেশের প্রধান দানা ফসল। ধান দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে ৯৫ ভাগ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বর্তমানে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে দিন দিন খাদ্য চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক খাদ্য হিসেবে চালের উপর নির্ভরশীল। আর এই নির্ভরশীলতার জন্য এদেশের মোট আবাদী জমির প্রায় ৮০% জমিতে ধান চাষ করা হয়ে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত বসতবাড়ির জন্য আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই এসব আবাদি জমি থেকে কীভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণ করা যাবে তার জন্য বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্বল্প আবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন জাতের ধানের উদ্ভব করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশি বা স্থানীয় জাত চাষ না করে উচ্চফলনশীল, উৎপাদন ক্ষমতা বেশি, বন্যা সহিষ্ণু ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ধানের জাত চাষ করা প্রয়োজন। যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে। তাই উদ্দীপকে জহির এসকল বিষয় বিবেচনা করে উচ্চফলনশীল, উৎপাদন ক্ষমতা বেশি, রোগ পোকামাকড়ের আক্রমণ কম, বছরের যেকোনো সময়ে চাষ করা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং ফলনও অনেক বেশি এমন জাতের আমন ধান চাষ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অর্থাৎ তার এই সিদ্ধান্তটি যথার্থ যৌক্তিক ছিল।

৩. ডাল আকাশের প্রিয় খাবারের মধ্যে একটি। আকাশের বাবা আকাশকে বললেন যে, তাদের জমিতে এ বছর মসুরের ডাল চাষ করা হবে। আকাশের বাবা আরও বললেন, ডাল স্বল্প মূল্যে আমিষের অভাব পূরণ করে বলে ডালকে গরিবের মাংস বলা হয়।
ক. মসুর ডালের বৈজ্ঞানিক নাম কী?
খ. চিনি উৎপাদনকারী ফসলের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ফসলের অর্থনৈতিক গুরুতব বর্ণনা কর।
ঘ. আকাশের বাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মসুর ডালের বৈজ্ঞানিক নাম-Lens culinaris.

খ. চিনি উৎপাদনকারী ফসলে বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-
i. এরা বহুবর্ষজীবী ও খরা সহ্যকারী উদ্ভিদ।
ii. এরা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গস্নুকোজ তৈরি করে কার্ডে জমা রাখে।
iii. এরা ডালপালাহীন, মূল, গুচ্ছমূল প্রকৃতির এবং কান্ড খুব শক্ত হয়।
iv. অঙ্গজ উপারে বংশবৃদ্ধি করে এবং আখের গোড়া থেকে মুড়ি আখ চাষ করা যায়।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ফসল ডাল। ডাল ফসল সামগ্রিক ও পুষ্টিগতভাবে অত্যন্ত গুরুতব বহন করে। নিচে ডালজাতীয় ফসলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো-
i. ডাল ফসল উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের প্রধান উৎস (প্রজাতিভেদে ডালে ২০-৩০% আমিষ থাকে)।
ii. আমিষের সহজতম ও স্বল্পমূল্য প্রাপ্ত একমাত্র উৎস ডাল, যা দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টিস্বল্পতা দূর করা, সম্ভব।
iii. ডাল লিগিউম জাতীয় ফসল, তাই ডাল নদীর চরসহ অন্যান্য অনুর্বর জমিতে সহজেই অল্প খরচে চাষ করা যায়।
iv. ডাল ফসল বাতাসের নাইট্রোজেনকে সংবন্ধন করে মাটিতে দেয় বলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমিয়ে দেয়।
v. ডাল ফসল অন্য ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবেও আবাদ করা যায় (যেমন- সরিষা, তিসি, আখ, গম ইত্যাদি) ফলে অতিরিক্ত আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আমাদের দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির মান বজায় রাখতে এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ডাল জাতীয় ফসলের গুরুত্ব অপরিসীম।
পরিশেষে বলা যায়, আমিষের চাহিদা পূরণ এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশের উন্নয়নের ডালজাতীয় ফসলের চাষাবাদ বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

ঘ. আকাশের বাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিকতা নিচে মূল্যায়ন করা হলো-
আকাশের বাবা এ বছর তার জমিতে মসুর ডাল চাষের সিদ্ধান্ত নেন। মসুর ডাল জাতীয় ফসল। আর ডালকে গরীবের মাংস বলা হয়। কারণ ডাল আমাদের দেশের জনগণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমিষ সমৃদ্ধ খাবার। আমিষের অভাব পূরণে যারা অর্থের অভাবে মাছ মাংস ক্রয় করতে পারেন না তারা সহজেই স্বল্পমূল্যের ডাল ক্রয় করতে পারেন। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় এই খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ডাল আমদানি করতে হয়। আমাদের দেশে উৎপাদিত মোট ডাল চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পারে। তাই ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এ বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় অনেকাংশে সাশ্রয় করা সম্ভব। এছাড়াও ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ পরিবেশ দূষণরোধ করে ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করে বিধায় পরবর্তী ফসল উৎপাদনে সারের পরিমাণ তুলনামূলক কম প্রয়োজন হয়। দেশীয় খাবার ডাল উৎপাদনের ৯৫% আসে ডাল জাতীয় ফসল থেকে। অল্প জমিতে ও কম বিনিয়োগে এই ফসল আবাদের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। শস্য বহুমুখীকরণ, মিশ্র ফসল, অন্তর্বর্তী ফসল, বাণিজ্যিক এবং টেকসই কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়নে ডালজাতীয় ফসল যথেষ্ট অবদান রাখে। তাই এসকল বিষয় বিবেচনায় আকাশের বাবার মসুর ডাল চাষের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যৌক্তিক ছিল।

৪. মাইনুল সাহেব ফরিদপুর জেলার একজন শিক্ষিত কৃষক। তিনি ঢাকায় বেড়াতে এসে বাণিজ্য মেলায় গেলেন। মেলার একটি স্টলে পাটজাত দ্রব্য দেখে তিনি পাট চাষে আগ্রহী হলেন এবং পরের বছর তার জমিতে পাট চাষের সিদ্ধান্ত নিলেন।
ক. বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল কোনটি?
খ. জিনিং আউট টান বলতে কী বোঝ?
গ. মাইনুল সাহেব যে ফসল চাষের সিদ্ধান্ত নিলেন সেই ফসলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্ণনা কর।
ঘ. 'পাট চাষ উপার্জনের একটি উত্তম পথ'- উদ্দীপকের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট।

খ. বীজতুলার আঁশ ও বীজের অনুপাতকে জিনিং আউট টান বা (Got) বলে। জিনিং ৩৫% বলতে বোঝায় ১০০ কেজি তুলাবীজ জিনিং করলে ৩৫ কেজি আঁশ বা লিন্ট পাওয়া যায়।
Got = (আঁশ x 100) / বীজতুলা
সাধারণত ৩২%-৩৫% তুলা জিনিং করে সংগ্রহ করা হয় এবং এই হারকে জিনিং শতাংশ বলে। যেসব জাতের আঁশের দৈর্ঘ্য বেশি তাদের জিনিং শতাংশ কম এবং দৈর্ঘ্য ছোট হলে জিনিং শতাংশ বেশি হয়।

গ. মাইনুল সাহেব পাট চাষের সিদ্ধান্ত নিলেন। নিচে পাটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো-
পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী বা বাণিজ্যিক ফসল। পাটগাছের ছাল থেকে যে তন্তু তৈরি হয় তাকে স্বর্ণতন্তু নামে অভিহিত করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের আয় করা বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা প্রায় ৩০ ভাগই পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানির মাধ্যমে অর্জিত হয়। আশির দশকে এ হার ছিল ৮৪%। বর্তমানে দেশে ও বিদেশে প্রতিকূল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ও বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসছে পার্ট ও পাটজাত দ্রব¨ থেকে। বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে পাট চাষ অনেক গুরুত্ব বহন করে। পাটখড়ি কৃষকদের দৈনন্দিন কাজে বেড়া ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পাটখড়ি অনেকটা নগদ অর্থকরী ফসলের মতো বিবেচিত হচ্ছে। দেশে এখনও পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনের উপযোগী প্রায় ৮০টির বেশি পাটকল রয়েছে। কৃষির সঙ্গে জড়িত কৃষকদের প্রায় ৭০% কৃষক পরিবার পাট চাষের সঙ্গে এবং মিলগুলোতে প্রায় ৩ লক্ষ শ্রমিক, কর্মচারী ও ব্যবসায়ী জড়িত, যারা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।

ঘ. 'পাট চাষ উপার্জনের একটি উত্তম পথ'- উদ্দীপকের আলোকে নিচে উক্তিটি বিশ্লেষণ করা হলো-
মাইনুল সাহেব ঢাকায় বাণিজ্য মেলায় স্টলে পাটজাত দ্রব্য দেখে তিনি পাট চাষে আগ্রহী হলেন এবং পরের বছর তার জমিতে পাট চাষের সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ পাট বর্তমানে দেশ বিদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও রফতানি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাট কাঁচা হিসেবে এবং পাট থেকে পণ্য তৈরি করে উভয়ভাবে রফতানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। দেশে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনের উপযোগী প্রায় ৮০টির বেশি পাটকল রয়েছে। কৃষকদের প্রায় ৭০% কৃষক পরিবার পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত। পাট গাছের সম্পূর্ণটাই বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। পাট শাক ও শুকনা পাতা রোগ সারায় ও প্রতিরোধ করে। পাট দিয়ে চট, কার্পেট, বস্তা, কুটির শিল্প, দড়ি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। ফলে এ ব্যবস্থার সাথে জড়িত দেশের লক্ষাধিক লোক নিয়োজিত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজে পেয়েছে। এছাড়া পাট বস্ত্র তৈরি প্রধান কাঁচামাল, কাগজশিল্পে, পাট খড়ির চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় এগুলো বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা হয়। দর্শনীয় বস্তু ও কুটির শিল্পের কাজে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলার পর্যায়ে পাট ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। বিভিন্ন পাটজাত পণ্য তৈরিতে বর্তমানে লক্ষ লক্ষ লোকের, কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে এবং অনেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। উপযুক্ত একাধিক কারণে বলা যায়, মাইনুল সাহেবের পাট চাষে উপার্জনের একটি উত্তম পথ সুগম হবে।

৫. ঝালকাঠির খালেদ সাহেব একজন খ্যাতনামা পেয়ারা চাষি। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় তিনি অন্যান্য ফসলের পরিবর্তে তার জমিতে উন্নত জাতের পেয়ারা চাষ করেন। পেয়ারা চাষের জন্য সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা, রোগ পোকা দমনসহ যাবতীয় পরিচর্যা তিনি সময়মতো ও সঠিক পদ্ধতিতে করেন। মৌসুমের সময় তিনি শত শত মণ পেয়ারা ঢাকার বাজারে চালান করে প্রচুর টাকা আয় করেন।
ক. রিবন রেটিং কী?
খ. বাংলাদেশের সব এলাকাতেই কুল চাষ করা সম্ভব কেন?
গ. উল্লিখিত ফসল চাষে খালেদ সাহেব যেভাবে রোগ পোকা ব্যবস্থাপনা করেন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. খালেদ সাহেব যেভাবে লাভবান হলেন তা- মূল্যায়ন কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পাট গাছ কাটার পর কাঁচা থাকা অবস্থায় গাছ থেকে ফিতার তা ছালকে পৃথক করে পরে পচানোর ব্যবস্থাই হলো রিবন রেটিং।

খ. বাংলাদেশের সব এলাকাতেই কুল চাষ সম্ভব কারণ বাংলাদেশের আবহাওয়া সমভাবাপন্ন। আর কুল সাধারণত এ ধরনের আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। ইহা অতি গরম, ঠান্ডা, খরা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। যেকোনো ধরনের মাটিতে ভালো জন্মে। তাই বাংলাদেশের সব এলাকাতেই কুল চাষ সম্ভব।

গ. পেয়ারা চাষে খালেদ সাহেব যেভাবে রোগ পোকা ব্যবস্থাপনা করবেন তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
পোকামাকড়: ফলের মাছি পোকা, মিলিবাগ, কান্ড ছিদ্রকারী, আঁশ পোকা অনুমোদিত সিস্টেমিক বালাইনাশক দ্বারা দমন করা যায়।
রোগবালাই: ঢলে পড়া রোগ, ক্যাংকার রোগ, ডাল শুকানো রোগ, গুটি মোল্ড, এ্যানথ্রাকনোজ, উইন্ট, লিফস্পট ও স্ক্যাব রোগ দমনে পরিচর্যা ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।

i. পেয়ারার মাছি:
দমন পদ্ধতি:
ক. বিষটোপ (১০০ গ্রাম পাকা কলা থেঁতলানো + ৫ গ্রাম কার্বারিল/এমআইপিসি + ১০০ মি.লি. পানি একত্রে মিশানো)/ফেরোমন ফাঁদ/বেইট ট্র্যাগ তৈরি করে ফলযুক্ত শাখার পাশে ঝুলিয়ে দিতে হবে। ৩-৫ দিন পরপর পাল্টিয়ে দিতে হবে।
খ. ডাইমেথোয়েট / ডেল্টাথোয়েট /ডায়ানামিক ২ মিলি. / লি. পানিতে মিশেয়ে স্প্রে করতে হবে।

ii.পেয়ারারা ছাতরা পোকা:
দমন পদ্ধতি:
ক. আক্রান্ত ডাল-পাতা ছেঁটে পুড়িয়ে দিতে হবে। গাছের গোড়া মাটি থেকে ১৫-২০ সেমি. উপরে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। যাতে মিলিবাগ গাছে উঠতে না পারে।
খ. ইমিডোক্লোরোপিড মিলি. / এসিফেট ১ গ্রাম / ডায়মেথোয়েট ২ মিলি. প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

iii. পেয়ারার ঢলে পড়া রোগ:
দমন পদ্ধতি:
বাগানের মাটিতে অম্লতব কমানোর জন্য: মাটিতে চুন প্রয়োগ, ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করা, রোগের প্রাথমিক স্তরে ছত্রাকনাশক স্প্রে করা।
iv. অ্যানথ্রাকনোজ রোগ:
দমন পদ্ধতি:
ফল মটরদানার ন্যায় হলে প্রোপিকোনাজল ০.৫ মিলি/কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে। গাছের নিচের ঝরা পাতা ও সংগ্রহ করে পুড়ে দিতে হবে।

ঘ. উদ্দীপকে খালেদ সাহেব পেয়ারার চাষ করেন। ফল চাষ করে যেভাবে লাভবান হলেন তা মূল্যায়ন করা হলো-
i. খাদ্য হিসেবে ফল: ফল মানবজাতির প্রথম ও প্রাচীনতম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ii. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে: বিভিন্ন ধরনের ফল প্রতি বছর প্রায় ৫-৬ হাজার মে. টন রফতানি করে ৩৫-৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
iii. জাতীয় আয়: মোট আবাদির ১-২ ভাগ জমিতে ফল চাষ হলেও জাতীয় আয়ের শতকরা ১০ ভাগ ফল থেকে আসে।
iv. আর্থিক লাভ: গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বয়স্ক একটি ফল গাছ তার সারা জীবনে আমাদের যে উপকার করে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
v. অর্থ সাশ্রয়: দেশে প্রচুর ফল উৎপাদন হওয়ায় বিদেশী ফল কম আমদানি করতে হয়। এতে অর্থের সাশ্রয় হয়।
vi. পারিবারিক আয় বৃদ্ধি: ফল চাষের মাধ্যমে পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পায় ও বেকারত্ব দূর হয় ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
vii. আর্থিক ঝুঁকি কম: মাঠ ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ বালাই, দাম কম, উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু ফলগাছে এসব ঝুঁকি কম।

৬. বাবলু চাষির বাড়ি বরিশালে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রচার-প্রচারনায় বাবলু উদ্বুদ্ধ হয়ে তেল তৈরির আশায় সয়াবিন চাষ করে ভালো ফলন পায়। কিন্তু তেল তৈরি বা সয়াবিন দানা বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে না পেরে সে আর সয়াবিন চাষ করে না। নোয়াখালীর জমিল মিয়া প্রতি বছরই সয়াবিন চাষ করে সয়াবিন শিল্প এলাকায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
ক. লিগিউমিনাস শস্য কী?
খ. তেল জাতীয় ফসল কেন প্রয়োজন ব্যাখ্যা কর।
গ. জমিল মিয়া সয়াবিন চাষ করে লাভবান হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
ঘ. বাবলু সয়াবিন তেল তৈরি বা দানা বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে নি কেন বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. লেগুমিনোসি পরিবারের লিগিউম জাতীয় নাইট্রোজেন সংবহনকারী ডালজাতীয় দানা ফসলকে লিগউমিনাস শস্য বলে।

খ. তেলজাতীয় ফসলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণে কিংবা রান্নায় তেলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মানুষের পুষ্টিতে তেল ও চর্বির ভূমিকা' রয়েছে; যা তেল বীজ থেকে পাওয়া যায়। প্রতি গ্রাম তেল বা চর্বি থেকে ৯.৩ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। তেল ভিটামিন এ, ডি এবং কে এর বাহক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিডের উৎস তেল ও চর্বি তেল বীজ থেকে তেল আহরণের পর উপজাত হিসেবে খৈল পাওয়া যায়। জৈব সার কিংবা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

গ. বর্তমানে সয়াবিনের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য বাজারে সয়াবিনের ব্যাপক চাহিদা। তাই জমিল মিয়া সয়াবিন চাষ করে আর্থিক লাভবান হন। নিচে জমিল মিয়ার সয়াবিন চাষে লাভবান হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করা হলো-
সয়াবিন দিয়ে প্রায় ৩৬ প্রকারের খাদ্য তৈরি করা যায়। পশুপাখির খাদ্য তৈরিতেও সয়াবিন ব্যবহৃত হচ্ছে। বাজারে সয়াবিনের ব্যাপক চাহিদা, যার ফলে জমির মিয়া সয়াবিন চাষ করে লাভবান হয়েছেন। সয়াবিন মাটির উর্বরতা বাড়ায়। বর্তমানে জীব সার তৈরিতে সয়াবিন ব্যবহৃত হচ্ছে। সয়াবিনের মতো এত খাদ্যমানসম্পন্ন শস্য পৃথিবীতে আর নেই। সয়াবিনকে ডাল ও কাঁচা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। আবার সয়াবিন রুটি বানাতেও ব্যবহৃত হয়। সয়াবিনের হালুয়া, রুটি তাছাড়া সয়া-পিঁয়াজ, সয়া-সেমাই, সয়া-চাপাতি, সয়া-সন্দেশ ও সয়া-দুধ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। বিভিন্ন রকমের সয়া-খাদ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। এসব কারণেই জমিল মিয়া সয়াবিন চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করে আর্থিক লাভবান হয়।

ঘ. বর্তমান বাজারে সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও বাবলু তেল বা দানা বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারেনি। নিচে বাবলুর সয়াবিনের তেল বা দানা বিক্রির ব্যবস্থা করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
বর্তমানে এক্সপেলারে সয়াবিন থেকে তেল নিষ্কাশন সম্ভব নয় বলে বাজারে সয়াবিনের চাহিদা কম। তাই বাবলু সয়াবিনের তেল বা দানা বিক্রি করতে পারেনি। সয়াবিন বীজে ৪৫ ভাগ আমিষ থাকে এবং ১৯ থেকে ২২ ভাগ তেল পাওয়া যায়। অত্যাধুনিক নিষ্কাশন যন্ত্রের মাধ্যমে এর বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়। এর জন্য প্রচুর পরিমাণে বীজ প্রয়োজন। বাংলাদেশে সয়াবিনের উৎপাদন ১.০৫ লাখ টন, যা প্রয়োজনীয় পরিমাণের তুলনায় অনেক কম। পর্যাপ্ত বীজের অভাবে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে সয়াবিনের তেল নিষ্কাশনের কাজ শুরু হয়নি। এর ফলে বাজারে সয়াবিনের চাহিদা না থাকায় বাবলু তার সয়াবিন তেল বা দানা বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারেনি।

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. জুরান মিয়া তার দুইটি জমিতে ডি-১৫৪ ও সিসি ৪৫ জাতের পাট ঘন করে বপন করেন। তিনি সিসি ৪৫ জাতের পাট আষাঢ় মাসে এবং ডি-১৫৪ ভাদ্র মাসে কাটেন। ফলনও ভিন্ন রকম হয়। সে পাটশাক, পাটখড়ি ও পাট বিক্রি করে লাভবান হন।
ক. মাটির উর্বরতা কী?
খ. তুলার জিনিং কেন করা হয় ব্যাখ্যা কর।
গ. জুরান মিয়া ভিন্ন সময়ে পাট কাটার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জুরান মিয়ার পাট চাষ করে লাভবান হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদ্ভিদ বা ফসলকে উপযুক্ত পরিমাণ ও অনুপাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করাকে ও মাটিতে বিদ্যমান থাকাকে মাটির উর্বরতা বলে।

খ. তুলা থেকে বীজ ও আঁশকে আলাদা করার প্রক্রিয়াকে জিনিং বলে। মাঠ থেকে বীজতুলা সংগ্রহ করার পর বয়ন কাজে ব্যবহারের জন্য তুলা জিনিং করার প্রয়োজন পড়ে।

গ. সিসি ৪৫ ও ডি-১৫৪ পাটের দুটি ভিন্ন জাত হওয়ায় এদের বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন রকমের। তাই জুরান মিয়া সিসি ৪৫ ও ডি-১৫৪ ভিন্ন সময়ে কাটেন। নিচে জুরান মিয়ার ভিন্ন সময়ে পাট কাটার কারণ বিশ্লেষণ করা হলো-
সিসি ৪৫ ও ডি-১৫৪ ভিন্ন সময়ে ফুল দেয়। পাট কাটা ফুল আসার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত পাটগাছে যখন ফুল আসা শুরু হয় তখন পাট কাটতে হয়। ভালো ফলনের জন্য ফুল আসার দুই সপ্তাহের মাঝে পাট কেটে পানিতে ভেজাতে হয়। এতে আঁশের মানও ভালো হয়। সিসি ৪৫ ও ডি-১৫৪ জাতের পাটে যথাক্রমে আষাঢ় ও ভাদ্র মাসে ফুল আসে। তাছাড়া সিসি ৪৫ আগাম বপনোযোগী। সাধারণত এটি ফাল্গুন মাসে বপন। করে আগাম কাটতে হয়। অন্যদিকে ডি-১৫৪ জাতটি বৈশাখ মাসে বপন করা হয়, তাই ডি-১৫৪ কে পরে কাটতে হয়। তাই জুরান মিয়া সিসি-৪৫ ও ডি-১৫৪ কে ভিন্ন সময়ে কাটেন।

ঘ. পাটের বহুমুখী ব্যবহারের কারণে পাটের বাজারমূল্য অনেক বেশি। পাটের উৎপাদন খরচ কম এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায়। জুরান মিয়া পাট চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। নিচে পাট চাষে জুরান মিয়ার লাভবান হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করা হলো-
অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয়। জুরান মিয়া পাট চাষ করে লাভবান হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে পাটের স্থান শীর্ষে। চট, কার্পেট, বস্তা, কুটিরশিল্প, দড়ি ইত্যাদি পার্ট দিয়ে তৈরি হয়। বিভিন্ন কাগজশিল্পে পাটের ব্যবহার হয়। পাটখড়িও বেশ ভালো দামে বিক্রি করা যায়। পাট ও তুলার মিশ্রণে বস্ত্র তৈরি করা হয়, যা পরিবেশে স্বাস্থ্যসম্মত। পাটপাতা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাটশাক ও শুকনা পাতা বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণেও পাটের ভূমিকা অপরিসীম। বিদেশে বাংলাদেশের পাটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের চাহিদা মেটাতে পাটকে বিদেশে রফতানি করা হয়। অতীতে বিশ্বের ৭৪-৮০ ভাগ পাটের চাহিদা বাংলাদেশ সরবরাহ করত। বর্তমানে প্রায় ২৪ ভাগ পাটের চাহিদা বাংলাদেশ সরবরাহ করে। তাই জুরান মিয়া পাট চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হন।

৮. সুজন ডালিয়ার ডাবল শ্রেণির জাতের বীজ বপন করে উৎপাদিত গাছে সিঙ্গেল শ্রেণির ফুল দেখে অসন্তুষ্ট হন। ফুল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে সে অঙ্গজ উপায়ে চারা উৎপাদনের কথা বলেন। সুমন অঙ্গজ উপায়ে উৎপাদিত চারা থেকে ফুল চাষ করে সন্তুষ্ট হন।
ক. বীজ কী?
খ. বীজশোধন করার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. ফুল বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সৃজন কীভাবে চারা উৎপাদন করেছিলেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ফুল চাষ করে সুজনের অসন্তুষ্টির ও সন্তুষ্টির কারণ বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদ্ভিদের বংশবিস্তারের প্রধান মাধ্যম বীজ। সাধারণত উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য উদ্ভিদের যে অংশ ব্যবহার করা হয় তাকে বীজ বলে।

খ. বীজ শোধনের জন্য হাত সহনীয় তাপমাত্রার (৫২-৫৫ ডিগ্রি সে.) গরম পানিতে ১৫ মিনিট বীজ ডুবিয়ে রাখলে জীবাণুমুক্ত হয়। অথবা প্রতি কেজি ধান বীজ ৩০ গ্রাম এগ্রোসান জিএন বা ২০ গ্রাম এগ্রোসান এম ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করা যায়। বীজকে রোগজীবাণু যুক্ত করা ও সুস্থ-সবল চারা উৎপাদনের জন্য বীজ শোধন করা হয়।

গ. ফুল বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সুজন মূলজ কন্দ, শাখা কলম এবং জোড়া কলমের সাহায্যে ডালিয়ার বংশবিস্তার করেন। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
মূলজ কন্দ: ফাল্গুন থেকে চৈত্র মাসে গাছ ফুল দেওয়া বন্ধ করে। গাছের পাতা ও ডাঁটা শুকিয়ে যায়। এই সময় কন্দ পরিপক্ব হয় এবং সংগ্রহের উপযোগী হয়। মাটির নিচ থেকে অক্ষত অবস্থায় কন্দ তুলে বাতাসে শুকিয়ে শুষ্ক বালিতে সংরক্ষণ করতে হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক বালি মিশ্রিত বীজতলায় লাগিয়ে পরিমাণমতো পানি দিতে হয়। ফলে কন্দের চোখ থেকে নতুন চারা বের হয়।
শাখা কলম: আশ্বিন ও অগ্রহায়ণ ডালিয়ার শাখা কলমের উপযোগী সময়। মূলজ কন্দে জন্মানো কচি চারা ভেঙে বালিভর্তি টবে কিংবা জমিতে পুঁতে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হয়। ১০-১৫ দিনের মাঝে শাখায় শিকড় গজায় ও চারায় পরিণত হয়।

ঘ. ফুল চাষ করে সৃজনের অসন্তুষ্টির ও সন্তুষ্টির কারণ নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
অসন্তুষ্টি: সুজন ডালিয়া ফুলের বীজ বপন করে। বীজ থেকে উৎপাদিত চারা কেবল সিঙ্গল ফলের জাত হয়। ডালিয়ার সিঙ্গল ধরনের ফুলের তেমন জনপ্রিয়তা নেই। ডাবল ফুলের আশায় সিঙ্গল ফুল দেখতে পায় তাই সে অসন্তুষ্ট।
সন্তুষ্টি: ডালিয়া একটি শীতকালীন মৌসুমি ফুল। বর্ণবৈচিত্রে্যর জন্য এটি অতি জনপ্রিয় ফুল। ডালিয়া ফুল সিঙ্গেল বা ডাবল দুই ধরনের হয়ে থাকে। ডাবলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও সিঙ্গলের তেমন জনপ্রিয়তা নেই। অপরপক্ষে চারা উৎপাদনে কেবল সিঙ্গেল ফুলের জাতের বেলায় বীজ ব্যবহার করা হয়। ডাবল জাতীয় ফুলের বেলায় অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা হয়। অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তারের কন্দমূল, কন্দমূল থেকে বেরোনো চারা ও শাখা কলম রোপণ করা হয়। সুজন বংশবিস্তারের জন্য অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করায় মাতৃগাছের বৈশিষ্ট্য ঠিক থাকে তাই ডাবল শ্রেণির ফুল দেয়। অন্যদিকে বীজের চারা ব্যবহার করলে মাতৃগাছের গুণাগুণ ঠিক থাকে না, ফলে সিঙ্গেল জাতের ফুল দেয়। তাই সুজন ফুল বিশেষজ্ঞের পরামর্শে অঙ্গজ উপায়ে চারা উৎপাদন করে ডাবল শ্রেণির ফুল পাওয়ায় সন্তুষ্ট হয়।

৯. আখ চাষি রফিকুল ইসলাম আখ চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ করায় আখের ফলন বেশি হয়েছে। তার প্রতিবেশী জববার ফলন বেশি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে রফিকুল বলেন- রোপা পদ্ধতি, আন্তঃপরিচর্যাসহ ফলন বৃদ্ধির পদ্ধতিগুলোর কথা বললেন। জববার আর খ- রোপণ করলেও অনেক চারা গজায়নি। মাটি খুঁড়ে দেখে সাদাটে পোকা।
ক. সাকার কী?
খ. আঁশ জাতীয় ফসল কেন চাষ করা হয় ব্যাখ্যা কর।
গ. রফিকুল ইসলামের আখ রোপণের পদ্ধতি বিশ্লেষণ কর।
ঘ. জববারের করণীয় কী ছিল এখন করণীয় কী বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাতৃগাছের গোড়া থেকে বের হওয়া নতুন চারাগাছ, যা বৃদ্ধির প্রথম পর্যায়ে মাতৃগাছ থেকেই খাদ্য গ্রহণ করে তাকে সাকার বলে।

খ. আঁশজাতীয় ফসল চাষ করার কারণ নিচে দেওয়া হলো-
i. আঁশজাতীয় ফসল বস্ত্র শিল্পের প্রধান উপজাত।
ii. তুলার আঁশ দ্বারা লেপ, তোষক ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
iii. পাট দিয়ে বস্তা, ব্যাগ ও অন্যান্য শৌখিন দ্রব্য তৈরি করা যায়।
iv. পাটের বীজ ঔষধি গুণসম্পন্ন ও তুলার বীজ থেকে অপরিশোধিত তেল ও সাবান তৈরি করা যায়।

গ. রফিকুল ইসলাম প্রথমে পলি ব্যাগে কিংবা বীজতলায় চারা তৈরি করে সেই চারা মূল জমিতে রোপণ করেন। নিচে পলিব্যাগে ও বীজতলায় চারা উৎপাদন পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা হলো-
পলিব্যাগে চারা উৎপাদন পদ্ধতি: সমপরিমাণ দোআঁশ মাটি ও গোবর সার মিশিয়ে ১৫ সে.মি. দ্ধ ১০ সে.মি. আকারে পলিব্যাগে ভর্তি করতে হবে। গিঁটের ওপরে ১.৫ সে.মি. এবং গিঁটের নিচে ৩ সে.মি. রেখে একচোখবিশিষ্ট আখের বীজখন্ড তৈরি করতে হবে। বীজখন্ডটির চোখ মাটির ওপর দিকে রেখে পলিব্যাগে বসাতে হবে। ৫০-৬০ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে রোপণ করা যায়।
বীজতলায় চারা উৎপাদন পদ্ধতি: দুই চোখবিশিষ্ট বীজখ- এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়। চোখগুলো মাটির ওপরের দিকে রেখে খ-গুলো ১ সে.মি. গর্ভতে রাখতে হবে। ৫০-৬০ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।

ঘ. জববার মাটি খুঁড়ে উইপোকা দেখতে পান। জববার আখখ- রোপণের আগে বীজ শোধন করার প্রয়োজন ছিল এবং পোকার আক্রমণের ফলে এখন দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিচে বীজ শোধন ও পোকা দমন ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করা হলো-
বীজ শোধন: আখখ- রোপণের পূর্বে জববার মিয়া আখের বীজ এরেটান নামক ছত্রাকনাশক ১০০ কেজি পানিতে ৫০০ গ্রাম হারে দ্রবীভূত করে সেটের দুই মাথা সেই দ্রবণে ডুবিয়ে বীজ আখ শোধন করে নেওয়া উচিত ছিল।
পোকা দমন ব্যবস্থা: মুড়ি আখের চাষ বন্ধ করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ জাত যেমন ঈশ্বরদী-১৬, ঈশ্বরদী-১/৫৫ ইত্যাদি চাষ করতে হবে। সেচ সুবিধা থাকলে আক্রান্ত জমি কয়েকদিন পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। উইপোকার রানী খুঁজে বের করে মেরে ফেলতে হবে। আক্রান্ত ক্ষেতে বিভিন্ন স্থানে মাটির পাতিলে পাটখড়ি ভরে পুঁতে রাখতে হবে। এতে উইপোকা জমা হয়। পনের দিন পরপর এগুলো সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। ভিটাবান ৪৮ ইসি বা ক্লোরোপাইরিফস বা সারাফস (০.১%) স্প্রে করতে হবে।

১০. কুড়িগ্রাম জেলার সওদাগর পাড়ার ধানক্ষেতের ধানগাছের পাতার কিনারায় ও আগায় ছোট ছোট জলছাপের মতো দাগ দেখা যায়। কৃষক মাজেদ এজন্য খুব চিন্তিত হয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানান। সে রোগ প্রতিরোধ ও দমনের ব্যবস্থা বলে দেন। পরের বছর এই গ্রামে উক্ত রোগ দ্বারা ধান আক্রান্ত হয়নি। তবে এর পরের বছর তার ধানক্ষেতে পামরি পোকার আক্রমণে ধানের প্রচুর ক্ষতি হয়। প্রতি বছর ধানের ক্ষতি হওয়ায় মাজেদ ধান চাষ করবে না।
ক. রেটন চাষ কী?
খ. পিয়াজের আন্তঃপরিচর্যা কেন করা হয় ব্যাখ্যা কর।
গ. রোগ যাতে না হয় এজন্য কৃষি কর্মকর্তা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছিলেন বিশ্লেষণ কর।
ঘ. মাজেদের সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা মূল্যায়ন কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আখ কাটার পর গোড়া থেকে নতুন ছড়া বা কুশি বের হওয়ার সুযোগ দিয়ে আখ চাষ করে আখ উৎপাদনকে মুড়ি চাষ বা আখের রেটুন বলা হয়।

খ. পিঁয়াজের আন্তঃপরিচর্যার ফলে পিঁয়াজের ফলন বাড়ে। রোগ বালাই কম হয়। পিঁয়াজের মান ভালো হয়, কৃষক লাভবান হয়। আন্তঃপরিচর্যা না করলে পিঁয়াজ পার্পল বস্নচ ও কান্ড পচা রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। রোগমুক্ত ভালো ফলন পাওয়ার জন্য আন্তঃপরিচর্যা দরকার।

গ. কৃষক মাজেদের ক্ষেতে পাতা পোড়া বা পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দেয়। কৃষি কর্মকর্তা পাতা পোড়া বা পাতা ঝলসানো রোগ দমনে ও প্রতিরোধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
রোগ দমনের জন্য বিআর২ (মালা), বিআরত (বিপ্লব), বিআর৪ (ব্রিশাইল), বিআর১৪, বিআর১৬, বিআর১৯ (মঙ্গল), বিআর২১ (নিয়ামত), বিআর২৬ (শ্রাবণী), ব্রিধান২৭, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩১, ব্রিধান৩২, ব্রিধান৩৭, ব্রিধান৩৮, ব্রিধান৪০, ব্রিধান৪১, ব্রিধান৪২, ব্রিধান৪৪, ব্রিধান ৪৫ ও ব্রিধান৪৬ ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করতে হবে। সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে। ক্রিসেক আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে কুশি এনে লাগাতে হবে। আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমিভেদে ৭-১০ দিন শুকাতে হবে। জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।

ঘ. মাজেদ পরের বছর ধান চাষ না করার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল। কারণ-
মাজেদ ধান চাষ করে পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে পোকা দমন ব্যবস্থা নিয়ে ফলন বেশি পান কিন্তু পরের বছর আবার ধান চাষ করায় পোকার আক্রমণ বেশি হয়। প্রতি বছর একই ফসল এক জমিতে বার বার চাষ করলে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়। পোকামাকড়ের আক্রমণে ফসলের ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে ফসল চাষের ভিন্নতার প্রয়োজন। জমিতে একই ফসল চাষ না করে অন্য জাতের ফসলও চাষ করা প্রয়োজন। এতে করে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, মাজেদ তার জমিতে ধান চাষ না করার সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল।

No comments:

Post a Comment