এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২
HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. আবু নাসের একজন গরীব কৃষক। তার জমিতে ভালো ফসল হয় না। অন্যদিকে তার পাশের জমির মালিক করিম মিয়ার কাছে তাঁর ভালো ফসল উৎপাদনের কারণ জানতে চাইলেন। তিনি তাঁর অণুজীব সার ব্যবহারের পরামর্শ দেন যা আবু নাসেরকে আশানুরূপ ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।
ক. বায়ো ফানজিসাইড কী?
খ. অণুজীব সার পরিবেশ-বান্ধব কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সারটি কীভাবে ভালো ফসল উৎপাদনে সহায়ক? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বেঁলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে উল্লিখিত সারটি ভূমিকা রাখতে পারে কী? তোমার উত্তরের সপক্ষে মতামত দাও।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সব অণুজীব মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন ছত্রাক জাতীয় জীবাণু ধ্বংস করে তাকে বায়ো ফানজিসাইড বলে।
খ. ফসলের ফলন বৃদ্ধি এবং মাটির ঊর্বরতা বৃদ্ধি করে অণুজীব সার রাসায়নিক সার অপেক্ষা অধিক পরিবেশবান্ধব ভূমিকা পালন করে।
রাসায়নিক উপাদানমুক্ত অণুজীব সারে প্রায় সবটুকু উদ্ভিদ কর্তৃক শোষিত হতে পারে ফলে জমির ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীলতা কমে। অণুজীব সারে ক্ষতিকর কোনো উপাদান থাকে না এবং উৎপাদিত ফসলেও কোনো ক্ষতিকারক উপাদান থাকে না। মূলত ক্ষতিকর উপাদান না থাকা এবং রাসায়নিক সার কম প্রয়োজন হওয়ায় অণুজীব সার পরিবেশ বান্ধব।
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত সারটি হলো অণুজীব সার। অণুজীব সার ভাল ফসল উৎপাদনে, সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
অণুজীব সার নাইট্রোজেন সারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। মাটিতে বাতাস হতে নাইট্রোজেন যোগ করে। অণুজীবের সংখ্যা ও কার্যাবলি কমায়। ধান, ডাল ও শিম জাতীয় ফসলে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে। ফসলের ফলন বাড়ায় যেমন- মসুরে ১৫-৪০%, ছোলাতে ২০-৪৫%, মুগে ১৮-৩৫% এবং সয়াবিনে ২০-২৫%। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং পরিবেশকে সুস্থ রাখে। ফসলের জমিতে এই সার জৈবসার সংযোগ করে। মাটিতে ক্ষতিকর জীবাণু নষ্ট করে এবং অপচয় কম হয় ও পরিমাণে খুব কম লাগে। অণুজীব সারের প্রায় সকল অংশ শোষণযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় ফসলের মান উন্নয়নে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালনে করে।
ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত অণুজীব সার বেলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে বেলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে অণুজীব সারের ভূমিকা আলোচনা করা হলো। অণুজীব সারের হিউমাস মৃত্তিকার কণাসমূহকে দলা সৃষ্টিতে সাহায্য করে। ফলে মৃত্তিকায় সঠিক সংযুক্তি সৃষ্টি হয়। পানি, বায়ু, পুষ্টি উপাদানের চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে বেলে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে পরিণত করা যায়।
অণুজীব সার মৃত্তিকায় ঈধ, গম সমৃদ্ধ জৈব পদার্থ হয়ে যায়। বায়ু, পানি, উদ্ভিদ শিকড়, মৃত্তিকা বায়োটার চলাচল বৃদ্ধি পায়। পলি বা এঁটেল মাটির সঙ্গে অণুজীব সার প্রয়োগ করলে বেলে মাটিকে সহজে দোআঁশ মাটিতে পরিণত করা যায়। বেড়ে
অণুজীব সার একটি উত্তম জৈব সার। সাধারণ মৃত্তিকার তুলনায় এই সারে হিউমাস, নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে এই সার প্রয়োগে মৃত্তিকায় জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়া বেড়ে যায়। হিউমাস, ঈধ, গম এর আধিক্যের ফলে মাটির সংযুক্তির উন্নয়ন ঘটে। অণুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। বৃহৎ মৃত্তিকা কণায় বহিরাবরণে অণুজীবের কলোনি গড়ে ওঠে। এক পর্যায় বৃহৎ কণার ভাঙন শুরু হয় এবং বেলে মাটি দোআঁশ মাটিতে পরিণত হয়।
২. জসীম উদ্দিনের এলাকায় খেজুর, তাল, লেবু, খুব ভাল হয়। মধুপুরের আনারস খাওয়ার পর সেও ঐ জাতের আনারস চাষের চেষ্টা করে। কিন্তু আনারসের মান ও ফলন খুব কম হয়। জসীম উদ্দিন তার এলাকায় কৃষিবিদের পরামর্শক্রমে আনারস চাষে সফল হয়।
ক. মৃত্তিকা বুনট কী?
খ. জৈব পদার্থ কীভাবে মাটির ভৌত গুণাবলি উন্নত করে?
গ. জসীম উদ্দিনের এলাকার মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে কৃষিবিদের পরামর্শের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির একক কণার পারস্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্টস্থূলতাকে বা সূক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে।
খ. পচা আবর্জনা, সবুজ সার, গোবর, খৈল, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ‘ইত্যাদিকে জৈব পদার্থ বলা হয়। মাটির উর্বরতা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জৈব পদার্থের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পদার্থটিকে বলা হয় মাটির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জৈব পদার্থ মাটির অণুজীবগুলোকে ক্রিয়াশীল করে, পানি ধারণক্ষমতা বাড়ায়, মাটিতে হিউমাস সৃষ্টি করে যা মাটির উর্বরতার জন্য খুবই দরকারি। এভাবে জৈব পদার্থ মাটির গঠনকে উন্নত করার মাধ্যমে মাটির ভৌত গুণাবলি উন্নত করে।
গ. উদ্দীপকের জসীম উদ্দিনের এলাকায় যেহেতু খেজুর, তাল, লেবু খুব ভালো হয় সুতরাং জসীম উদ্দিনের এলাকার মাটি ক্ষারীয়। নিচে ক্ষারীয় মাটির বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করা হলো-
১. ক্ষারীয় মৃত্তিকায় pH মান সাধারণত ৭.১ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকে।
২. এই মৃত্তিকায় ESP (Exchangable Sodium Percentage) ১৫% এর বেশি হয়।।
৩. এই মৃত্তিকায় SAR (Sodium Absorption Ratio) ১৩% এর বেশি হয়।
৪. সোডিয়ামের তুলনায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি হলে সেই মৃত্তিকাকে লবণাক্ত মৃত্তিকা বলে। ফলে মাটির উপরিভাগ সাদা বর্ণের দেখায়।
৫. মৃত্তিকায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের তুলনায় সোডিয়ামের শতকরা হার বেশি হলে উক্ত মৃত্তিকাকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা বলে। জৈব পদার্থের দ্রুত বিচ্ছিন্ন করায় মাটির উপরিভাগ কালচে দেখায়।
৬. অণুজীবের কার্যক্রম দুর্বল হওয়ায় জৈব পদার্থের বিয়োজন কম হয়।
৭. সোডিয়ামের প্রাধান্য থাকলে মৃত্তিকার প্রাথমিক কণাসমূহ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
৮. মৃত্তিকায় দস্তা, বোরন ও তামার স্বল্পতা দেখা দেয়।
৯. মৃত্তিকায় বাতান্নয়ন এবং পানি পরিবাহিতার হার কমে যায়।
১০. ক্ষারীয় মৃত্তিকায় কদম বা এঁটেল কণা ও জৈব পদার্থের পরিমাণ কম হয়।
১১. ক্ষারীয় মৃত্তিকায় নারিকেল, সুপারি, তাল খেজুর, সুগারবিট, ক্লোভার, আলফা-আলফা ইত্যাদি শস্য ভালো জন্মে।
ঘ. উদ্দীপকের জসীম উদ্দিনের এলাকার মাটি ক্ষারীয়। উক্ত এলাকায় খেজুর, তাল, লেবু খুব ভালো হলেও আনারস এর ফলন খুব কম হয়। এজন্য কৃষি কর্মকর্তা তাকে মৃত্তিকা সংশোধন করে আনারস চাষের পরামর্শ দেন যাতে জসীম উদ্দিন সফল হন। নিচে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের যথার্থতা বিশ্লেষণ করা হলো-
মাটিতে অম্লতব বা ক্ষারতেবর কারণে ফসলের উৎপাদন কমে গেলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমির ঊর্বরতা বৃদ্ধি ও চাষোপযোগী করে গড়ে তোলাকেই মাটি সংশোধন বলা হয়। ক্ষারীয় মাটি সংশোধন করে অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে এমন ফসল চাষাবাদ করা হয়। মাটি থেকে ক্ষারত্ব দূর করতে কৃষিবিদ নিম্নোক্ত পরামর্শ দেন-
i. ক্ষারীয় মৃত্তিকার জিপসাম সার ব্যবহার করে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
ii. গন্ধক বা সালফার ব্যবহার করে মাটির ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
iii. বিভিন্ন প্রকার জৈব সার যেমন- গোবর, সবুজ সার, খামারজাত সার, কম্পোস্ট সার, কেঁচো সার ব্যবহার করলে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব হ্রাস পায়।
iv. মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণযুক্ত পানি সেচ দিয়ে এর বিকাশের ব্যবস্থা করলে মাটি থেকে ক্ষারদ্রব্য ধুয়ে মাটি ক্ষারমুক্ত হয়।
v. মৃত্তিকায় জীবাণু সার ব্যবহার করে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
vi. ক্ষারীয় মাটির উপরিভাগ ফেলে দিয়ে সেখানে সোডিয়ামযুক্ত মাটি প্রতিস্থাপন করে ক্ষারত্ব হ্রাস করা যায়।
vii. ক্ষার জাতীয় মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি কলের বর্জ্যদ্রব্য প্রয়োগ করে চাষাবাদ করলে মৃত্তিকার ক্ষারত্ব কমে যায়।
সুতরাং উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জসীম উদ্দিনের এলাকার ক্ষারীয় মাটি সংশোধন করে অম্লীয় মাটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে তার জমিতে আনারস চাষ করা সম্ভব। অতএব উদ্দীপকের কৃষিবিদের পরামর্শ যথার্থ ছিল।
৩. কফিলের বাবা দীর্ঘদিন যাবৎ চরাঞ্চলে চীনাবাদাম ও তরমুজ চাষ করে আসছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর সে তার জমিতে মাঠ ফসল চাষের ইচ্ছায় কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ চায়। কৃষি কর্মকর্তা তাকে মাটির বুনট পরিবর্তনের পরামর্শ দিলে কফিল পরামর্শ মোতাবেক কাজ করে মাঠ ফসল চাষে সক্ষম হয়। কর্মকর্তা তাকে আরও বলেন, 'মাটির বুনট বিবেচনায় রেখে ফসল নির্বাচন করা উচিত।'
ক. SRI এর পূর্ণরূপ কী?
খ. ভূমিক্ষয় মৃত্তিকায় কী প্রভাব ফেলে?
গ. কফিলকে কৃষি কর্মকর্তা যে পরামর্শ দিয়েছিলেন উদ্দীপকের আলোকে তা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত বাক্যটি বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. SRI - এর পূর্ণরূপ হলো- System of Rice Intensification.
খ.ভূমিক্ষয়ের কারণে মাটি থেকে কর্দমকণা, হিউমাস, জৈব পদার্থ প্রভৃতি অপসারণের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। যার ফলে উদ্ভিদের খাদ্যোপাদানের অপচয় ঘটে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠ মৃত্তিকায় অণুজৈবিক কর্মকান্ড স্থিমিত হয়ে যায়। অতিরিক্ত ভূমিক্ষয়ের প্রভাবে গাছপালা মরে গিয়ে মাটি মরুভূমিতে রূপ নিতে পারে।
গ. কফিল চরাঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় তার জমির মাটি বেলে প্রকৃতির। সে এই বেলে প্রকৃতির মাটিতে মাঠ ফসল চাষ করবে বলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ চাইল। কৃষি কর্মকর্তা তাকে জমির মাটির বুনট রূপান্তরের পরামর্শ দিলেন। আর কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুসারে বেলে মাটিতে মাঠ ফসল চাষ করতে চাইলে কফিলকে জমির মাটির বুনট রূপান্তর করে দোআঁশ প্রকৃতির করতে হবে। কফিল নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে মাটির বুনট রূপান্তর করে মাঠ ফসল চাষের উপযোগী করবে।
i. মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার যেমন- গোবর সার, সবুজ সার, কম্পোস্ট সার, খামারজাত সার, কেঁচো সার ও অন্যান্য জৈব সার প্রয়োগ করে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
ii. জমির মাটির সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ এঁটেল মাটি মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
iii. জমিতে আইল বেঁধে প্রচুর পরিমাণ সেচ প্রয়োগের পর পানি জমা রেখে মাটির গুণাগুণ উন্নত করেছিলেন।
iv. বৃষ্টিপাতের সময় পানিবাহিত পলিমাটি জমিতে আটকে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।
v. জমিতে উত্তমরূপে গভীর চাষের মাধ্যমে মাটির কণা স্থানান্তর করেছিলেন।
vi. বৈশাখ মাসে জমিতে ধইঞ্চা বীজ বপন করে গাছ ২৫/৩০ ইঞ্চি লম্বা করে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
vii.জমতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছাই প্রয়োগ করে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।
উপরোক্ত কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে কফিল তার জমির মাটি মাঠ ফসল চাষের উপযোগী করে তুলতে পারবে।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত বাক্যটি 'মাটির বুনট বিবেচনায় রেখে ফসল নির্বাচন করা উচিত।' নিচে বাক্যটি বিশ্লেষণ করা হলো সব ধরনের মাটিতে সব ফসল ভালো জনেম না। মাটির বুনটের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ফসল জন্মানোর প্রকৃতিতেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বুনট হলো মাটির বালু, পলি ও কর্দমকণার তুলনামূলক অনুপাত বা শতকরা হার। ফসল উৎপাদনে মাটির বুনটের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাটির বুনট পরিবর্তনের সাথে সাথে ফসলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তারতম্য হয় তা নিচের উদাহরণগুলোর সাহায্যে বোঝা যাবে।
১. বেলে বুনটের মাটি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী নয়, তবে বালুর কণা মিহি হলে এবং মাটিতে প্রচুর গোবর, কম্পোস্ট, সবুজ সার ইত্যাদি প্রয়োগ করলে চিনা, কাউন, ফুটি, তরমুজ, বাদাম, আলু এসব ফসল চাষ করা যায়।
২. মাটির বুনট বেলে দোআঁশ প্রকৃতির হলে সেখানে মুলা, তামাক, মরিচ এসব ফসল ভালো জন্মে।
৩. মাটির বুনট পলি দোআঁশ প্রকৃতির হলে ধান, পাট, গম, আখ, আলু ও শাকসবজি ভালো জন্মে।
৪. এঁটেল দোআঁশ বুনটের মাটিতে ধান, তুলা, গম, ডাল, তেলবীজ ফসল ভালো জন্মে।
৫. এঁটেল বুনটের মাটিতে ধান, পাট, আখ ও শাকসবজি ভালো জন্মে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সামান্য কিছু ফসল ব্যতিক্রম বাদে মাটির বুনট পরিবর্তনের সাথে সাথে ফসলেরও পরিবর্তন হয়েছে। তাই বুনট ও ফসলের প্রকৃতি যাচাই না করে ফসল চাষ করলে উৎপাদন বিঘ্নিত হবে।
৪. চাঁদ মিয়া একজন কৃষক। তিনি প্রতিবছর ধান, মরিচ, আলু চাষ করে লাভবান হয়ে থাকেন। কিন্তু গত বছর যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর পলি মাটির পরিবর্তে বালুতে তার সব জমি ডেকে যায়। তিনি এখন মাথায় হাত দিয়ে চোখের পানি ফেলছেন। এই দেখে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাকে জৈব পদার্থ যোগ করাসহ আরও কিছু বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে জমির গুণাগুণ উন্নত করার পরামর্শ দিলেন। সে অনুযায়ী কাজ করে চাঁদ মিয়া তার জমিতে আবার ফসল চাষ করে লাভবান হলেন। তাকে অনুসরণ করে অন্যান্য কৃষকও উপকৃত হলেন।
ক. সেচ কী?
খ. সবুজ সার বলতে কী বোঝ?
গ. চাঁদ মিয়া কীভাবে তার জমিতে ফসল চাষ করে লাভবান হলেন- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের আলোকে চাঁদ মিয়ার কর্মকান্ডের যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফসলের ফলন বৃদ্ধি ও গাছের জীবনচক্র সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ ও উপযুক্ত সময়ে কৃত্রিমভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করাকে সেচ বলে।
খ. শিম জাতীয় উদ্ভিদকে নির্দিষ্ট বয়সে সবুজ ও সতেজ অবস্থায় চাষের মাধ্যমে মাটির নিচে ফেলে পচানোর ব্যবস্থা করলে যে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বস্তুর সৃষ্টি হয় তাকে সবুজ সার বলে। সবুজ সার হিসেবে ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলো হচ্ছে- ধইঞ্ঝা, শণ, বরবটি, ইপিল-ইপিল, মুগ, কলাই, অড়হর, খেসারি, সয়াবিন, আলফা আলফা ইত্যাদি। সবুজ সার জমিতে জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেনের যোগান বাড়ায়।
গ. চাঁদ মিয়া তার জমিতে প্রতিবছর ধান, মরিচ, আলু চাষ করেন। তাই তার জমির মাটি দোআঁশ প্রকৃতির। কিন্তু গত বছর যমুনা নদীর পানিতে তার জমি ডুবে যাওয়ায় পলি পড়ার পরিবর্তে বালুতে ডেকে জমিকে শস্য উৎপাদনের অনুপযুক্ত করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় চাঁদ মিয়া দিশেহারা হয়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ চাইলে তাকে জমিতে জৈব পদার্থ যোগসহ আরও কিছু বিষয় ব্যবস্থা নিতে বললেন। এতে চাঁদ মিয়া জমিতে জৈব পদার্থ হিসেবে সবুজ সার, কম্পোস্ট সার, খামারজাত সার, কেঁচোর সার ব্যবহার করলেন। এছাড়া তিনি তার জমিতে বেলে মাটির সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে এঁটেল মাটি মিশিয়ে মাটিকে দোআঁশ মাটিতে রূপান্তর করলেন। ফলে জমির উপরিভাগে রোলার যন্ত্র চালানোর দ্বারা বেলে মাটি চেপে নিয়ে নিম্নস্তরের মাটি উপরে উঠে এসে দোআঁশে পরিণত হয়। এছাড়াও তিনি জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের ব্যবস্থা করেন, আইল বেঁধে পানি জমা করে রাখেন, বৃষ্টিপাতের সময় পানিবাহিত পলিমাটি জমিতে আটকিয়ে রাখেন। এভাবে চাঁদ মিয়ার জমি বেলে থেকে দোআঁশ রূপান্তরের ফলে তার জমি আবার পূর্বের মতো উর্বর ও উৎপাদনক্ষম হয়েছে এবং পরবর্তীতে তার জমিতে ফসলের ভালো ফলন হয় এবং তিনি লাভবান হন।
ঘ. কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের আলোকে চাঁদ মিয়ার কর্মকান্ডের যথার্থতা নিচে মূল্যায়ন করা হলো চাঁদ মিয়া একজন কৃষক। তিনি প্রতিবছর ধান, মরিচ, আলু চাষ করে লাভবান হন। কিন্তু গত বছর যমুনা নদীর পানিতে তার জমি ডুবে যায়। ফলে জমিতে পলিমাটি পড়ার পরিবর্তে বেলে মাটিতে তার জমি ঢেকে যায়। কিন্তু বেলে মাটিতে তার চাষকৃত ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তিনি দিশেহারা হয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ চাইলেন। কৃষি কর্মকর্তা তাকে জমির মাটির বুনট পরিবর্তনের পরামর্শ দিলেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চাঁদ মিয়া তার জমিতে জৈব পদার্থ হিসেবে সবুজ যার, কম্পোস্ট সার, খামারজাত সার ও কেঁচো সার প্রয়োগ করলেন। এছাড়াও তিনি তার জমিতে এঁটেল মাটি মিশিয়ে অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করেন। এতে তার জমির মাটির গুণাগুণ পরিবর্তিত হয়ে উন্নত হয়। ফলে তার জমির মাটিতে বেলে কণার প্রাধান্য থাকা পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না, কর্ষণ কাজ সহজ হয়, মাটি ঢেলা হয় না, মাটির সংযুক্তি উন্নত হয়ে পানি ধারণ ও শোষণ ক্ষমতা ভালো হয়। এতে তিনি ফসল চাষ করে অধিক ফলন পান এবং লাভবান হন। চাঁদ মিয়া যদি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে জমির মাটির বুনট পরিবর্তন না করে ফসল চাষ করতেন তাহলে ফসল উৎপাদন ভালো হতো না এবং তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। বাংলাদেশে অনেক কৃষক সঠিক পরামর্শের অভাবে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যা উদ্দীপকে চাঁদ মিয়ার বেলায় ঘটেনি।
উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চাঁদ মিয়ার ফসল উৎপাদনের কর্মকান্ড যথার্থতা ছিল।
৫. গণি মিয়া গতানুগতিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। কিন্তু এ বছর রসুলপুর গ্রামে তিনি দেখতে পান যে কৃষকেরা দশদিন বয়সের চারা বর্গাকার রোপণ করেছেন। তারা প্রতি গোছায় একটি করে চারা রোপণ করেছেন। তিনি জমিতে পানি দেখতে পেলেন না কিন্তু মাটিতে খাড়াভাবে পুঁতে দেওয়া কয়েকটি ছিদ্রযুক্ত পাইপ দেখতে পান। পরবর্তীতে তিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নিকট থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।
ক. মালচিং কী?
খ. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে কীভাবে সাহায্য করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. গণি মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি গ্রহণের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির আর্দ্রতা ও পুষ্টি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মাটির উপরিভাগে ধানের খড়, লতাপাতা, কচুরিপানা ইত্যাদি জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেওয়াই হলো মালচিং।
খ. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে কেঁচোর ভূমিকা ব্যাপক। মাটিকে আলগা, ফাঁপা ও নরম রাখে ফলে মাটির গভীরে আলো বাতাস ও পানি সহজে প্রবেশ করতে পারে। আবার ভার্মিকম্পোস্ট তৈরিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে কেঁচো। এর বিষ্ঠায় বহুবিধ রাসায়নিক পদার্থ, উৎসেচক, নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী নাইট্রিফাইং ও অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক ধরনের জীবাণু ও উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক ইনডোল যৌগ উপস্থিত থাকে। ফলে মাটিতে জৈব পদার্থ যুক্ত হয় পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং মাটি উর্বর হয়।
গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি হলো AWD পদ্ধতি AWD পদ্ধতি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
ধান উৎপাদনে সেচের খরচ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। বোরো ধান উৎপাদনে মাটি ভেদে ১ কেজি ধান উৎপাদনে ৩০০০-৫০০০ লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। AWD পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হলে সনাতন সেচ পদ্ধতির চেয়ে শতকরা ২০-২৫ ভাগ পানি সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ে সহজে ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজনে সাশ্রয়কৃত পানি দিয়ে অধিক জমি চাষের আওতায় আনা যায়। এ পদ্ধতিতে জ্বালানি সাশ্রয় হয় ২৫-৩০% এবং হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ে প্রায় ০.০৫ মে. টন। এই পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব যাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কম হয় ও ধান ক্ষেতে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ঝড়ো মৌসুমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন খরচ কমার সাথে সাথে পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এভাবেই AWD পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।
ঘ. গণি মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি হলো এডব্লিউডি পদ্ধতি। এডব্লিউডি পদ্ধতিতে প্রতিটি ধানগাছের সমান যত্ন নেওয়া হয়। এতে কম বয়সের চারা রোপণ করা হয় এবং প্রতিটি গুছিতে ১টি চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া চারা বর্গাকারে রোপণ করা হয় হয়। বলে বীজ, সার ও সেচ কম লাগে। এডব্লিউডি পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া মানে পানির অপচয় রোধ করা। প্রচলিত পদ্ধতিতে আগাছা দমনে খরচ ও সময় বেশি লাগে বলে এসআরআই পদ্ধতিতে যান্ত্রিকভাবে আগাছা দমন করা হয়। ধান উৎপাদনে কম সময় লাগায় জমি ব্যবস্থাপনার জন্য অধিক সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি এ পদ্ধতি পরিবেশ ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নির্গমনের হারকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, এডব্লিউডি পদ্ধতিটি ধান চাষের জন্য লাভজনক এবং উপযুক্ত পদ্ধতি।
৬. সবুর মিয়া গতানুগতিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন। কিন্তু এ বছর বিনোদপুর গ্রামে তিনি দেখতে পান যে, কৃষকরা দশ দিন বয়সের চারা বর্গাকারে রোপণ করেছেন। তারা প্রতি গোছায় একটি করে চারা রোপণ করেছেন। তিনি জমিতে পানি দেখতে পেলেন না কিন্তু মাটিতে খাড়াভাবে পুঁতে দেওয়া কয়েকটি ছিদ্রযুক্ত পাইপ দেখতে পান। পরবর্তীতে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিকট থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।
ক. মাটির বুনট কী?
খ. মাটির pH জানা প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে কীভাবে সাহায্য করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সবুর মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি গ্রহণের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির একক কণার পারস্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্টস্থূলতাকে বা সূক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে।
খ. মাটির pH হলো মাটিতে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্বের ঋণাত্মক লগারিদম। এটি মাটির একটি রাসায়নিক ধর্ম যা এর উর্বরতাকেও নির্দেশ করে। সব মাটিতে সব ফসল ভালো হয় না। মাটির pH মানের (অম্লতা, ক্ষারকতা ও নিরপেক্ষতা) ওপর কোন ফসল ভালো জনমাবে তা নির্ভর করে। কোন ফসল অম্লীয় মাটিতে ভালো জন্মে, যেমন- চা, কফি, লেবু ইত্যাদি। আবার কোন ফসল ক্ষারীয় মাটিতে ভালো জন্মে, যেমন নারিকেল, সুপারি, আখ ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ ফসলই নিরপেক্ষ মাটিতে ভালো জন্মে। তাই মাটির pH মান জেনে সেই অনুযায়ী ফসল চাষ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ কারণেই মাটির জানা pH জরুরি।
গ. উদ্দীপকের সেচ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিটি হলো AWD পদ্ধতি। AWD পদ্ধতি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
ধান উৎপাদনে সেচের খরচ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। বোরো ধান উৎপাদনে মাটি ভেদে ১ কেজি ধান উৎপাদনে ৩০০০-৫০০০ লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। AWD পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা হলে সনাতন সেচ পদ্ধতির চেয়ে শতকরা ২০-২৫ ভাগ পানি সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ে সহজে ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজনে সাশ্রয়কৃত পানি দিয়ে অধিক জমি চাষের আওতায় আনা যায়। এ পদ্ধতিতে জ্বালানি সাশ্রয় হয় ২৫-৩০% এবং হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ে প্রায় ০.০৫ মে. টন। এই পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব যাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কম হয় ও ধান ক্ষেতে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ঝড়ো মৌসুমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন খরচ কমার সাথে সাথে পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এভাবেই AWD পদ্ধতিটি লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।
ঘ. সবুর মিয়ার দেখা ধান চাষ পদ্ধতিটি হলো SRI পদ্ধতি। SRI পদ্ধতিতে প্রতিটি ধানগাছের সমান যত্ন নেওয়া হয়। এতে কম বয়সের চারা রোপণ করা হয় এবং প্রতিটি গুছিতে ১টি চারা রোপণ করা হয়। এছাড়া চারা বর্গাকারে রোপণ করা হয় হয় বলে বীজ, সার ও সেচ কম লাগে। এডব্লিউডি পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া মানে পানির অপচয় রোধ করা। প্রচলিত পদ্ধতিতে আগাছা দমনে খরচ ও সময় বেশি লাগে বলে এসআরআই পদ্ধতিতে যান্ত্রিকভাবে আগাছা দমন করা হয়। ধান উৎপাদনে কম সময় লাগায় জমি ব্যবস্থাপনার জন্য অধিক সময় পাওয়া যায়। পাশাপাশি এ পদ্ধতি পরিবেশ ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নির্গমনের হারকে কমিয়ে দেয়। সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, এডব্লিউডি পদ্ধতিটি ধান চাষের জন্য লাভজনক এবং উপযুক্ত পদ্ধতি।
৭. সাইফুল ইসলামের বাড়ি করতোয়া নদীর তীরে। গত দুই বছর আগেও তার বসতবাড়ি অনেক বড় ছিল। কিন্তু প্রতিনিয়ত ভূমিক্ষয়ের ফলে তার বসতবাড়ির আয়তন কমে যাচ্ছে।
ক. ভূমিক্ষয় কী?
খ. মাটির বুনট বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিক্ষয়ের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ভূমিক্ষয়রোধ করা কি সম্ভব? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির স্থানচ্যুতিকে ভূমিক্ষয় বলে।
খ. মাটির কণাসমূহ বিভিন্ন আকারের। যেমন- বালিকণা বড়, পলিকণা মাঝারি ও কর্দমকণা ছোট। মাটির কণাসমূহের বিভিন্ন আকারই হচ্ছে বুনট। মাটির একক কণার পারস্পরিক অনুপাত দ্বারা সৃষ্ট স্থূলতা বা সূক্ষ্মতাকে মাটির বুনট বলে। অর্থাৎ মাটির বালি, পলি ও কদম কণার তুলনামূলক আকার বা শতকরা অনুপাতকে মাটির বুনট বলে।
গ. উদ্দীপকে সাইফুল ইসলামের বাড়ি করতোয়া নদীর তীরে। তার বাড়ির আয়তন দিন দিন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো নদী ভাঙনজনিত সমস্যা। নদীর প্রবল স্রোত, ঢেউয়ের কারণে নদীর কূল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাটির কণাসমূহ পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায়। অতঃপর উপরি গড়ানো ও অবলুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত মাটিকণা স্থানান্তরিত হয়। এছাড়াও নদীতে জোয়ার শুরু ও শেষ হওয়ার সময় এরূপ ভাঙনের গতি তীব্রতর হয়। ফলে নদীর তীরে বসবাসকারী সাইফুল ইসলামের বসতবাড়ি আস্তে আস্তে 'নদীগর্ভে বিলীন হয়। আর এই নদী ভাঙনজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণেই উদ্দীপকে উল্লিখিত সাইফুল ইসলামের বাড়ির আয়তন দিন দিন কমে যাচ্ছে।
ঘ. সাইফুল ইসলামের বাড়ি করতোয়া নদীর তীরে। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে তার বাড়ির আয়তন দিন দিন কমে যাচ্ছে। যেহেতু নদী ভাঙনজনিত ভূমিক্ষয়ের কারণে তার বাড়ির আয়তন কমে যাচ্ছে সেহেতু এ ভূমিক্ষয় রোধ করা সম্ভব। এ ধরনের ভূমিক্ষয় রোধে সাইফুল ইসলামকে কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে। তাই তাকে সর্বপ্রথম নদীর ধারে প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এজন্য তাকে নদীর তীরে গাছ রোপণ করতে হবে। কারণ গাছের শিকড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখবে এবং নদীর তীর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করবে। এছাড়াও নদীর তীরে পাথর ফেলে, খঙকুটা, লতাপাতা, কচুরিপানা এবং বৃক্ষের গুড়ি দ্বারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে নদীর তীরস্থ ভূমিক্ষয় অনেকটা রোধ করা সম্ভব। মাটির বুনট শক্ত করে এ ধরনের ভাঙন থেকে রক্ষা করা যায়।
অতএব, সাইফুল ইসলাম যদি উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে তাহলে নদী ভাঙনের হাত থেকে তার বাড়ি রক্ষা করতে পারবে বলে আমি মনে করি
৮. রংপুর জেলার বাসিন্দা আজাহার আলীর অনেক আবাদি জমি আছে। গত খরার কারণে তার জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। তাই তিনি কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে সাশ্রয়ীরূপে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেন।
ক. সেচের পানির উৎস কয়টি?
খ. মৃত্তিকা ও ফসল উৎপাদনে পানির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. আজাহার আলী কেন সেচ পদ্ধতি গ্রহণ করলেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে আজাহার আলীর কার্যক্রমটি সময়োপযোগী বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সেচের পানির উৎস হলো দুটি। যথা- ১. ভূ-গর্ভস্থ পানি ও ২. ভূপৃষ্ঠস্থ পানি।
খ. মৃত্তিকা ও ফসল উৎপাদনে পানির ভূমিকা নিম্নরূপ:
১. মাটির জৈবিক ও অনুজৈবিক কার্যাবলি বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ করে।
২. মাটির তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. উদ্ভিদের কোষের সজীবতা রক্ষা করে।
৪. ফসলের গুণগতমান ও ফলন বাড়ায়।
গ. আজাহার আলী AWD পদ্ধতিতে তার ফসলের জমিতে সেচ দিয়েছিলেন। AWD পদ্ধতি হলো ফসলের ক্ষেতে পর্যায়ক্রমে ভিজানো ও শুকানো পদ্ধতিতে প্রয়োজন মতো সেচ দেওয়া। AWD পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া মানে পানির অপচয় রোধ করা। এটি একটি সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতি।
এ পদ্ধতিতে একটি ছিদ্রযুক্ত পস্নাস্টিক বা বাঁশের পাইপ বসিয়ে মাটির ভেতরের পানির স্তর পর্যবেক্ষণ করে সেচ দেওয়া। এ পাইপের ব্যাস হবে ৭-১০ সে.মি. এবং লম্বা ২৫ সে.মি.। পাইপের উপরের ১০ সে.মি. ছিদ্রহীন এবং নিচের ১৫ সে.মি. ছিদ্রযুক্ত হবে। পাইপটিকে ৫ সে.মি. পরপর ড্রিল বিট দিয়ে ৩ সে.মি. ব্যাসের ছিদ্র করতে হবে। পাইপটি এমনভাবে ফসলের জমিতে বসাতে হবে যেন পাইপটির উপরের ছিদ্রহীন ১০ সে.মি. মাটির উপরে থাকে, যাতে সেচের পানির মাধ্যমে খঙকুটা বা আবর্জনা পাইপের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। নিচের ছিদ্রযুক্ত ১৫ সে.মি. মাটির নিচে থাকবে, যাতে মাটির ভেতরের পানি দিয়ে পাইপে সহজে প্রবেশ করতে বা বেরিয়ে যেতে পারে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস বা পানি থাকলে ফসলে শিকড়ের মাধ্যমে তার প্রয়োজনীয় পানি গ্রহণ করতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ২৫% সেচের পানির এবং ৩০% জ্বালানি সাশ্রয় হয়। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য ফসলের ক্ষেত্রে সব সময় পানি রাখার প্রয়োজন নেই। এজন্য ফসলের জমিতে AWD পদ্ধতি ব্যবহার করে সঠিক সময়ে প্রয়োজন মতো সেচ প্রদান করলে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন খরচ কমবে অন্যদিকে তেমনি মূল্যবান পানি ও জ্বালানি সাশ্রয়। হবে। উক্ত কারণে আজাহার আলী তার ফসলের জমিতে AWD পদ্ধতিতে সেচ দিলেন।
ঘ. উদ্দীপকে আজাহার আলীর কার্যক্রমটি সময়োপযোগী নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
উদ্দীপকে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আজাহার আলী AWD অর্থাৎ সাশ্রয়ীরূপে ফসলের জমিতে সেচ দিলেন। কারণ বর্তমান সময়ে ফসল উৎপাদনের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হলো সেচের পানি। আর এ পানি যথাযথভাবে ব্যবহার না করে সেচের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করলে পানির স্তর নিচে নেমে যাবে। এছাড়া সেচের পানি সঠিক ব্যবহার না করে অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করলে মানুষের ব্যবহারযোগ্য পানির সমস্যা দেখা দিবে। এসব পানিতে ভারী ক্ষতিকারক ধাতব পদার্থের ঘনত্ব বেড়ে যাবে। যা মানুষের তথা প্রাণিজগতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। সেচের পানির যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে পানি বিরোধী ফসলের ক্ষতি করবে। অন্যদিকে ভূ-পৃষ্ঠস্থ নদী, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়, পুকুর, দিঘি ইত্যাদি পানি সেচের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের দরুন এসব জলাশয় শুকিয়ে যাবে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। যার প্রভাবে মানুষও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অপরদিকে AWD পদ্ধতিতে ফসলে সেচ দিলে সেচ কম লাগে। এতে ২৫% সেচের পানি ও ৩০% জ্বালানি সাশ্রয় হয়। এ পদ্ধতি সেচের ফলে ফসলের ফলন ও উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। উক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে কৃষি কর্মকর্তা আজাহার আলীকে AWD পদ্ধতি ফসলের জমিতে সেচ দিতে বললেন। কারণ পরবর্তীতে আজাহার আলীর জমির ফসলে সেচ পদ্ধতি দেখে অন্যান্য কৃষকও এ পদ্ধতিতে সেচে আগ্রহী হবে। আর এভাবেই কৃষকের প্রয়োজনে এই পদ্ধতির বিস্তার ঘটবে। তাই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আজাহার আলীর কার্যক্রমটি সময়োপযোগী ছিল।
৯. জমির মিয়া গত কয়েক বছর ধরে তার জমিতে ভালো ফসল পাওয়ার লক্ষ্যে সেচ, সার প্রয়োগ, রোগ ও পোকামাকড় নিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছেন। কিন্তু আশানুরূপ ফসল তিনি পাচ্ছেন না। তাই তিনি কৃষি কর্মকর্তার নিকট বিষয়টি অবগত করলেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি মাটির পরীক্ষা করালেন। মাটির পরীক্ষায় pH এর মান হলো ৪.৫।
ক. জাবড়া প্রয়োগ কী?
খ. মাটির ক্ষারত্ব বলতে কী বোঝ?
গ. জমির মিয়ার আশানুরূপ ফসল না পাওয়ার কারণ বর্ণনা কর।
ঘ. জমির মিয়ার উক্ত সমস্যা থেকে উত্তরণে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মূল্যায়ন কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির উপরিভাগে ধানের খঙ, লতাপাতা, কচুরিপানা ইত্যাদি জৈব পদার্থ প্রয়োগ করাকে জাবড়া প্রয়োগ বলে।
খ. মাটির দ্রবণে হাইড্রোক্সিল আয়নের (OH) ঘনত্ব বেশি হলে মাটিতে ক্ষারত্বের সৃষ্টি হয় অর্থাৎ কোনো মাটির অম্লমান ৭-এর বেশি হলে ঐ মাটিতে ক্ষারতব দেখা দেয়। ক্ষারত্ব সৃষ্টির জন্য হাইড্রোক্সিল আয়নের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষারজ উপাদান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। হাইড্রোক্সিল আয়নের সঙ্গে ক্ষারজ এসব উপাদান মিশে ক্ষারত্ব বৃদ্ধি করে।
গ. pH এর মান ৭ এর বেশি থাকলে তাকে ক্ষারীয় মাটি বলে। জমির মিয়া তার জমিতে কিছু ফসল চাষ করে আশানুরূপ ফলন পায়নি। মাটির নমুনা পরীক্ষা করলে অম্লমান ৪.৫ হয় অর্থাৎ তার জমির মাটি অম্লীয়। জমিরের জমির মাটিতে সৃষ্ট সমস্যার ফলে তিনি আশানুরূপ ফসল পাননি। যথা-
i. উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সহজলভ্য হয় না।
ii. মাটিতে আয়রন ও অ্যালুমিনিয়ামের আধিক্যজনিত বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
iii. মাটিস্থ অণুজীবসমূহ বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা কমে যায়।
iv. মাটিতে অম্লতেবর মাত্রা বৃদ্ধি হলে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার জাতীয় মুখ্য পুষ্টি উপাদান বেশি মাত্রায় দ্রবণীয় হয়।
v. জমিতে অপুষ্ট গাছের জন্ম হয়।
vi. পাতায় সবুজ কণা বিনষ্ট হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ঘ. জমির মিয়ার জমির মাটির pH এর মান ৪.৫ যা অতিরিক্ত অম্লীয় মাটি নির্দেশ করে। এমন মাটি ফসল চাষের জন্য উপযোগী নয়। এ ধরনের জমিতে ফসল চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। জমির তার জমিতে ফসল চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছিলেন না। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে উক্ত সমস্যা দূরীকরণে জমির মিয়াকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-
i. মাটিতে চুন ব্যবহার করবেন। চুন ব্যবহার করলে ক্যালসিয়াম আয়ন হাইড্রোজেন আয়নকে প্রতিস্থাপন করে। এতে হাইড্রোজেন আয়ন কমে হাইড্রোক্সিল আয়ন বেড়ে যায়। মাটির অম্ল সংশোধন হয়ে নিরপেক্ষ হয়।
ii. মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করবেন। জৈব সার থেকে উৎপন্ন জৈব এসিডসমূহ মাটির বাফার ক্ষমতা বাড়াতে অর্থাৎ মাটির একটি নির্দিষ্ট pH মান স্থির রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও জৈব সারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এ মৌলদ্বয় মৃত্তিকা দ্রবণ থেকে ঐ' কে সরিয়ে অম্লতা কমায়।
iii. বায়োফার্টিলাইজার, ট্রাইকোডার্মা, বায়োপেস্টিসাইড জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে মাটির অম্লতা সংশোধন করবেন।
iv. বশির তার জমির অম্লতা সংশোধনে ডাল ও শিম জাতীয় গাছ পচিয়ে সবুজ সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করবেন। এতে জমি ফসল চাষের উপযোগী হবে।
v. অণুজীব সার (রাইজোবিয়াম) জমিতে ব্যবহার করবেন। অণুজীব সার ঐ' আয়ন কমিয়ে ক্ষারত্ব বাড়ায়। ফলে মাটি নিরপেক্ষ হয়।
vi. এছাড়াও সেচের মান উন্নয়ন, সুষম সার ব্যবহার, অম্লীয় সার ব্যবহার কমিয়ে ও কাঠের ছাই ব্যবহার করে বশির তার জমিকে ফসল চাষের উপযোগী করবেন। উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, জমির মিয়া তার জমির অম্লতব সংশোধন করে ফসল চাষের উপযোগী করার জন্য বেশ কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
১০. রফিকের জমিতে প্রতি বছরই বিভিন্ন ফসলের ফলন কমছে। সে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য জৈব সার প্রয়োগ, সবুজ সার, শস্য চাষ, লিগিউমিনাস শস্য চাষ ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ফলন ভালো পেলেন। অন্যান্য কৃষকরাও রফিকের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভালো ফলন পেলেন।
ক. ভূমি সংরক্ষণ কী?
খ. ভূমি সংরক্ষণ কেন করা হয় ব্যাখ্যা কর।
গ. রফিকের জমিতে কীভাবে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করলেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাটির উর্বরতা স্থায়িত্বের জন্য রফিকের ব্যবস্থা মূল্যায়ন কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো এলাকায় মাটি বা ভূমিক্ষয় রোধ করে এর ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণ বজায় রাখাই হচ্ছে ভূমি বা মৃত্তিকা সংরক্ষণ।
খ. মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার নামই ভূমি সংরক্ষণ। নিম্নলিখিত কারণে ভূমি সংরক্ষণ করা হয়-
i. গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান মাটিতে সংরক্ষণের জন্য।
ii. মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।
iii.ফসলের গোড়া শক্তভাবে মাটিতে আটকে রাখার জন্য।
iv.অতিরিক্ত সারের প্রয়োজনীয়তা কমে।
v. মাটির অণুজীবের কার্যাবলি স্বাভাবিক রাখার জন্য।
গ. রফিক যেভাবে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করেছিলেন নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
উদ্দীপকে রফিকের জমিতে দিন দিন ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ার কারণে এমন হচ্ছে। রফিক কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ভূমি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন করে ভালো ফলন পান।
i. নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। জৈব সারে গাছের প্রয়োজনীয় ১৭টি পুষ্টি উপাদান থাকে। মাটির ক্ষয়রোধ করে মাটিতে পুষ্টি সংরক্ষণ করে।
ii. জমিতে সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেছিল। মুখ্য ও গৌণ ১৪টি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রাসায়নিক সারের মাধ্যমে করা যায়।
iii. লিগিউম জাতীয় শস্যের চাষ করেছিল। লিগিউম জাতীয় শস্য ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে শিকড়ে নাইট্রোজেন সংরক্ষণ করে।
iv. জমির আগাছা দমন করে উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধি করেছিল।
v. মাটির অম্লতব ও ক্ষারতব নিয়ন্ত্রণ করে পর্যায়ক্রমে ফসলের চাষ করেছিল। যাতে মাটির সব অংশ হতে পুষ্টি শোষণ হয়। এতে মাটির উর্বরতা রক্ষা করা সম্ভব।
vi. ভূমিক্ষয় রোধে ব্যবস্থা, উত্তম সেচ ও নিকাশ পদ্ধতি গ্রহণ করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করেছিল।
vii. সবুজ সার জাতীয় গাছ জন্মাবে এবং সবুজ সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করেছিল।
viii. আচ্ছাদন শস্য (শসা, লাউ, বাংগি, তরমুজ) জাতীয় ফসলের চাষ করেছিল।
ix. খড়, কচুরিপানা, শুকনা লতাপাতা জমিতে প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছিল।
v. শস্যের অবশিষ্টাংশ, জীবাণু সার ব্যবহার করে জমির উর্বরতা সংরক্ষণ ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল।
ঘ. উদ্দীপকে রফিক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে মাটির উর্বরতা স্থায়িত্বের জন্য জৈব সার প্রয়োগ, সবুজ সার শস্য চাষ, লিগিউমিনাস শস্য চাষ ইত্যাদি করেছিলেন। নিচে তার ব্যবস্থাগুলো মূল্যায়ন করা হলো-
রফিক জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করেছিলেন। জৈব সারে ফসলের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান উপস্থিত থাকে। তিনি জমিতে সবুজ সার তৈরির জন্য শস্য চাষ করেছিলেন। এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিতে অণুজীবের বৃদ্ধি হয়েছে। তিনি জমিতে লিগিউম জাতীয় শস্য চাষ করেছিলেন। এ ধরনের শস্যের শিকড়ে রাইজোবিয়াম নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া গুঁটি বা নডিউল তৈরি করে যা বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সঞ্চয় করে। পরে এসব নডিউল পচে নাইট্রোজেন ফসলের কাজে লাগে। তিনি জমির উবর্রর্তা যেন নষ্ট না হয় এজন্য পরিমিত পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেছিলেন। উপরিউক্ত কাজগুলোর জন্য তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়ে ফলন বেড়ে গিয়েছিল। সুতরাং মাটির উর্বরতা স্থায়িত্বের জন্য রফিকের ব্যবস্থাগুলো সঠিক ও যথার্থ ছিল।
0 Comments:
Post a Comment