এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
ইতিহাস
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮
HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
অষ্টম অধ্যায় : মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। বিশেষ করে দুই পরাশক্তি- যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং রাইজিং পাওয়ার হিসেবে বিবেচিত ভারত ও চীনের ভূমিকা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে থাকে। উল্লেখিত শক্তিসমূহের মধ্যে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল সরাসরি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিবেচনায় বিপক্ষ শক্তি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি মার্কিন কংগ্রেস, মার্কিন সিনেট ও সর্বস্তরের মার্কিন জনগণ এবং চীনা জনগনের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল অপরিসীম।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতার কারণ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত কেন সাহায্য করে সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কোন কোন লেখক বিশেষ করে ভারতীয় জাত্যাভিমান প্রসূত দৃষ্টিভঙ্গীর লেখকগণ মনে করেন যে, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল একাত্তরে পাক-ভারত যুদ্ধের ফসল। আবার কোন কোন লেখক-চিন্তাবিদের মতে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে ভারতের সৃষ্টি। উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত লেখক ও গবেষকগণ মনে করেন যে, পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানবিক কারণেই ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা
ভৌগোলিক দিক দিয়ে চীনের মত সোভিয়েত ইউনিয়নও দক্ষিণ এশিয়ার নিকটবর্তী একটি পরাশক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতেই ইউরোপীয় পরিমন্ডল ছাড়িয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং একটি নতুন পরাশক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। মধ্য ষাটের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেকে একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও এশীয় শক্তি হিসেবে দাবী করে। তবে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম দক্ষিণ এশীয় ভূ-খন্ডে বিশেষ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। সোভিয়েত ইউনিয়নের এই কূটনৈতিক প্রয়াসের পেছনে মৌল ভিত্তিই হলো এই যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাইরের পৃথিবীকে জানাতে চেয়েছিল যে, ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে দক্ষিণ এশিয়া তার প্রভাব-বলয়ের অন্তর্ভুক্ত এলাকা।
এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ষাটের দশকে আমেরিকা যতই ভিয়েতনাম সমস্যায় গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ততই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাবশালী হয়ে উঠছিল। কিন্তু সত্তর দশকের শুরুতে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন- এ দু'পরাশক্তির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের তীব্রতা যেমন হ্রাস পেতে থাকে, তেমনি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে সম্পর্কেরও চরম অবনতি ঘটে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এমনি প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। সুতরাং চীন, ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি আমেরিকাও এ যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল। তবে পরাশক্তিগুলোর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নই প্রথম বাঙালি গণহত্যাকে নিন্দা জানায়। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হয় যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন আগাগোড়াই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিল।
মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের বিবেচনায় খুব হতাশাব্যঞ্জক। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল অখন্ড পাকিস্তান নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের সমর্থন ছিল খুবই শক্তিশালী এমনকি মার্কিন প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর ব্যতীত সরকারের অন্যান্য স্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল ব্যাপক সমর্থন। পত্র-পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যম এবং জনমনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন ছিল প্রশ্নাতীত। আমেরিকার বাঙালি মহলও সর্বতোভাবে মুক্তিযুদ্ধে নানা ধরনের সহায়তা করে। এমনকি পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে কর্মরত বাঙালিরা এক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সর্বত্র আমেরিকানরা বাঙালিদের বন্ধু অথবা সাহায্য সমিতি প্রতিষ্ঠা করে জনমত গঠন করে ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার এবং শরণার্থী কেন্দ্রে বাঙালিদের নানা ধরনের সাহায্য করে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার সহ মার্কিন প্রশাসনের নীতি নির্ধারক মহল ব্যতীত পাকিস্তানের বর্বর হামলা ও অমানবিক কর্মকান্ডের সমর্থন আমেরিকার কোথাও তেমন দেখা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধকালীন পুরো নয় মাস নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানের জন্য নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সমর্থন যুগিয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের যেসব শক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল চীন তাদের অন্যতম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে চীনের সরকারি অবস্থান ছিল পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাতমূলক। বাংলাদেশের সংকট নিয়ে চীনের প্রথম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয় ১১ এপ্রিল ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি চৌ এন লাই-এর চিঠির মাধ্যমে। ঐ চিঠিতে চৌ এন লাই পাকিস্তানের ঘটনাবলীকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে জানান এবং জনগণ বিদেশী হস্তক্ষেপ ছাড়াই তা সমাধান করবে বলে উল্লেখ করেন। এমনকি পাকিস্তানের ‘জাতীয় স্বাধীনতা' ও ‘রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমতব' রক্ষায় চীনের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের কথাও তিনি জানিয়েছিলেন। অবশ্য চিঠিতে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কোন বক্তব্য রাখেন নি। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চীন বাঙালির সংগ্রাম ও নির্যাতনের প্রতিও কোন সহানুভূতি দেখায় নি। বরং পাক সামরিক চক্রের প্রতি জানিয়েছিল অকুন্ঠ সমর্থন। এমনকি চীনপন্থী রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত মাওলানা ভাসানীর আকুল আবেদন সত্ত্বেও চীনা নীতিতে কোন পরিবর্তন আসেনি।
মুক্তিযুদ্ধ ও জাতিসংঘ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। কারণ একটি আঞ্চলিক ও অভ্যন্তরীণ সমস্যা ক্রমশ মুক্তিসংগ্রামে রূপান্তরিত হয় এবং এক পর্যায়ে আঞ্চলিকতা ছাড়িয়ে তা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাক শাসকদের শোষণ, বঞ্চনা, হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার (প্রায় ৫৬ ভাগ) স্বাধীনতার সংগ্রাম। সুতরাং যে সংগ্রামের প্রতি পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার সমর্থন সে সংগ্রামের প্রতি জাতিসংঘের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জাতিসংঘ এমন একটি বিশ্ব সংস্থা যেখানে প্রধানত বৃহৎ শক্তিবর্গের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। অর্থাৎ কোন একটি বিশেষ ইস্যুতে বৃহৎ শক্তিবর্গের দৃষ্টিভঙ্গী কি বা ঐ ইস্যুকে তারা কিভাবে গ্রহণ করেছে মূলত তার ওপর ভিত্তি করেই জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বৃহৎ শক্তিবর্গের ঐকমত্য ব্যতীত জাতিসংঘ কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে না। সুতরাং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিশেষভাবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন।
পরীক্ষা উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৮ম অধ্যায় : মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বহির্বিশ্ব
১. রাহুলের প্রতিবেশী একটি দেশের নিরীহ জনগণের ওপর বিদেশি সামরিক জান্তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে দেশটি থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণের ভয়ে রাহুলের দেশে আশ্রয় নেয়। রাহুলের দেশের সরকার এসব আশ্রয় প্রার্থী মানুষকে আন্তরিকভাবে খাদ্য, বন্তু, বাসস্থান দিয়ে সাহায্য করে।
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ছিলেন?
খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ পন্ডিত রবিশংকরের অবদান সম্পর্কে যা জান লেখ।
গ. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাহুলের দেশের সাথে কোন দেশের তুলনা করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর পর মুক্তিযুদ্ধে উক্ত দেশের অবদান উল্লেখ কর।
🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
খ. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ পন্ডিত রবিশংকর বাংলাদেশের জন্য অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি আমেরিকার লস এঞ্জেলসে 'বাংলাদেশ' কনসার্টের আয়োজন করে এবং এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন শরণার্থীদের, শিশুদের খাদ্য ও চিকিৎসার জন্য দান করেন তার এ দানের কথা আজও বাঙালিরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।
গ. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাহুলের দেশের সাথে ভারতের তুলনা করা যায়। বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন লাখ লাখ বাঙালি ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল তখন তারা খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রদান করে সার্বিক সহযোগিতা করেছিল শরণার্থীদের প্রতি ভারতের আচরণ ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর পাকিস্তানি বর্বরতার হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন গড়ে ২০-৪৫ হাজার মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারীরা সংখ্যা কোটিতে গিয়ে পৌঁছে। এ প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের নির্দেশে এর সীমান্তবর্তী অঞ্চলের প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় শিবির নির্মাণ করে। তারা লঙ্গরখানা স্থাপন করে অনাহারি মানুষদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে। তাছাড়া সরকারের পাশাপাশি ভারতের জনগণও খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা সেবা প্রভৃতির মাধ্যমে শরণার্থীদেরকে সহায়তা করে। উদ্দীপকে রাহুলের দেশও পার্শ্ববর্তী দেশের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে ভারতের ন্যায় উপরিউক্ত ভূমিকা পালন করে। অতএব, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাহুলের দেশের সাথে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনা করা যায়।
ঘ. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে উক্ত দেশ তথা ভারতের অবদান ছিল অন্যান্য মিত্র দেশের তুলনায় সর্বাধিক।
মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় ভারতীয় শাসকশ্রেণি বাংলাদেশের সমস্যার সমাধানে সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্মতি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হয়। নভেম্বরের শেষে ভারতের জন্য সামরিক ও কূটনৈতিক উভয় দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রন্তুত ছিল। ৩০ নভেম্বর ভারতীয় সংসদে ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্য প্রত্যাহার করা না হলে সীমান্ত এলাকা থেকে ভারত সেনা সরিয়ে নেবে না। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, জাতিসংঘ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে ভারতীয় বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় অত্যন্ত দ্রুত বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। পাশাপাশি ৬ ডিসেম্বর ভারত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর ভারতের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মসমর্পন করার জন্য চূড়ান্ত বিবৃতি পাঠালে পাকিস্তানি সেনারা ১৬ ডিসেম্বর এ যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এ যুদ্ধে ভারতের নিয়মিত বাহিনীর প্রায় ৪ হাজার সৈন্য এবং আরও অনেক বেসরকারি লোকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়াও প্রচুর অর্থ ও গোলাবারুদ ব্যয় হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আর্থসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এককথায় বলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভারতের অবদান ছিল অতুলনীয়।
২. ১৯৯০ সালে ইরাক রাতের আঁধারে প্রতিবেশী দেশ কুয়েতে সামরিক অভিযান চালায়। আকস্মিক এ আক্রমণে কুয়েতিরা দিশেহারা হয়ে ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী মিত্র দেশ সৌদি আরবে আশ্রয় নেয়। সৌদি সরকার বান্তুহারা কুয়েতিদের আশ্রয় ও সেবা দিয়ে কুয়েতিদের মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে।
ক. কত সালে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়?
খ. বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
গ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পাঠ্যবইয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দিতে সৌদি আরবের মতো বাংলার মিত্র ও প্রতিবেশী দেশটির মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা ছিল যথার্থ ও মানবিকত পাঠ্যবইয়ের নিরিখে তা বিশ্লেষণ কর।
🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় ১৯৬৯ সালে।
খ. বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিকেল ৩টায় রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার আহবান জানান। তার এ ভাষণ সারাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। ফলে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দেশ রক্ষার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর ফলেই অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
গ. উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবইয়ের সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়টি হলো ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের নির্বিচারে গণহত্যার প্রেক্ষিতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ভারতে আশ্রয় নেওয়া।
১৯৯০ সালে ইরাক রাতের আঁধারে প্রতিবেশী দেশ কুয়েতে সামরিক অভিযান চালায়। আকস্মিক এ আক্রমণে কুয়েতিরা দিশেহারা হয়ে ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী মিত্র দেশ সৌদি আরবে আশ্রয় গ্রহণ করে। সৌদি সরকার ও জনগণ বান্তুহারী কুয়েতিদের আশ্রয় ও সেবা দিয়ে মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে। তেমনিভাবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। দেশের মেধাবী ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। অনেক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় এবং লুণ্ঠন চালায়। তাদের এ নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রাণের ভয়ে অনেক বাঙালি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত সরকার এবং জনগণও বাঙালি শরণার্থীদের প্রতি এমনই মানবিক আচরণ করেছিল। শরণার্থীদেরকে খাবার, তারা চিকিৎসাসেবা আশ্রয় প্রভৃতি দিয়ে সাহায্য করে এবং তাদের বিপদ দূর করে মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ২৫ মার্চের হামলা ও বাঙালির ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করার ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দিতে সৌদি আরবের মতো বাংলার মিত্র ও প্রতিবেশী দেশ অর্থাৎ ভারতের ভূমিকা ছিল যথার্থ ও মানবিক।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কুয়েতের ওপর ইরাকের আকস্মিক আক্রমণে কুয়েতিরা দিশেহারা হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ সৌদি আরবে আশ্রয় নেয়। সৌদি সরকার ও জনগণ বান্তুহারা কুয়েতিদের আশ্রয় ও সেবা দিয়ে মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে।
পাকিস্তানের ভয়াবহ হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং ভারত সরকার এ সকল শরণার্থীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে শিবির গড়ে তোলে। এই শিবিরগুলোতে তখন খাদ্য, পানীয় ঔষধপত্রের অভাব এবং কলেরা, মহামারী ইত্যাদি সৃষ্টি হলে বাঙালি শরণার্থীরা অত্যন্ত মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ভারত সরকার ও জনগণ এদেরকে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দিয়ে এ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এবং সমস্যার কথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরে বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশি সহানুভূতি তৈরি করে। ভারতের শিল্পী, ছাত্র, শিক্ষক, প্রচার মাধ্যম সকলেই একত্রে বাঙালিদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে, এমনকি ভারত সরকার শরণার্থী সমস্যাকে জাতীয় স্বার্থ এবং মানবতার বিপর্যয় মনে করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মানবতার এমন দৃষ্টান্ত ভারতীয়রাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে দেখিয়েছিলেন। পরিশেষে বলা যায়, আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দিতে সৌদি আরব ও ভারত যে ভূমিকা রেখেছে তা ছিল যথার্থ এবং মানবিক।
৩. ১৩ সেপ্টেম্বর কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ১৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে ভাষণ দানকালে প্রাক্তন ব্রিটিশ কমনওয়েলথ সচিব মি. অর্থাবটমালি বলেন যে, পূর্ববঙ্গের জনগণের পক্ষে কথা বলতে পারেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের অনুমতি নিয়ে পূর্ববঙ্গের পরিদর্শন করে দেখেছেন, সেখানে ফসল কাটা উপদ্রুত এলাকাগুলো হয়নি, ফলে সেখানকার জনগণ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন।
ক. মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ভারতকে কী অপবাদ দিয়েছিল?
খ. ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সমাচার সম্পাদক শ্রী অনিল ভট্টাচার্য কীভাবে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন?
গ. মি. অর্থাবটমালির বক্তব্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কীরূপ চিত্র ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পূর্ববঙ্গের জনগণের পক্ষে কথা বলতে পারেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই। কমনওয়েলথ সচিবের এ উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধকে 'ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ' বলে ভারতকে অপবাদ দিয়েছিল।
খ. ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সমাচার সম্পাদক শ্রী অনিল ভট্টাচার্য কলকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার ত্রিপুরা প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি কেবল সমাচারে লিখে কিংবা যুগান্তরে সাংবাদিকতা করেই নয় বরং তিনি ৮ মাস ব্যাপী মুজিবনগর সরকারের পূর্বাঞ্চল জোনের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধা ও বহু রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মীদের সহযোগিতা করেন এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত যুগান্তর পত্রিকার মাধ্যমে পাকবাহিনীর নজিরবিহীন অত্যাচার বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরেন।
গ. মি. অর্থাবটমালির বক্তব্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা হলো তিনি যখন পূর্ববঙ্গের উপদ্রুত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন তখন মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ওপর গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ চালাতে থাকে। তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে চোরাগুপ্তা আক্রমণ চালিয়ে জনসমর্থনহীন পাকিস্তানি বাহিনীকে দিশেহারা করে তোলে। মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এম এ. জি. ওসমানীর নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভের আশায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে সময় দেশে ছিল পাকা ফসল কাটার মৌসুম। কিন্তু দেশের জনগণ ঐ সময় দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিজেদেরকে ফসল কাটার জন্য নিয়োজিত করতে পারেনি। ফলে পরবর্তীতে দেশের জনগণের মধ্যে এক ধরনের খাদ্য সংকট পরিলক্ষিত হয় এবং জনগণ কিছুটা হলেও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়।
ঘ. কমনওয়েলথ সচিবের উক্তি পূর্ববঙ্গের জনগণের পক্ষে কথা বলতে পারেন একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই। তার এ বক্তব্য পুরোপুরি সত্য। কেননা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের নিরীহ জনগণের ওপর হামলা করার পূর্বেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দের সাথে এদেশের নির্যাতিত মানুষের জন্য তাদের পক্ষে কথা বলেন এবং বিভিন্নভাবে এ বিষয়গুলো বিশ্বের দরবারে উপস্থিত করেন। এসকল কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন সময় কারাবরণ করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। কিন্তু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার জনগণকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পেতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। যার ফলে স্বাধীনতাকামী বাঙালিরা সকল নির্যাতন থেকে মুক্তিলাভের আশায় বিজয় অর্জনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসকল কারণেই কমনওয়েলথ সচিবের এ উক্তিটির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
৪. মধ্যপ্রাচ্যে আইএস হুমকি ও হত্যাযজ্ঞের কারণে! মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়াবাসী শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে আশ্রয় নিচ্ছে। তুরস্ক সরকার তাদের জন্য সাধ্যমতো শরণার্থী শিবির স্থাপন করে সহযোগিতা করছে। অধিকন্তু সিরিয়ার বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো সাহায্য ও মানবিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
ক. 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
খ. মুক্তিযুদ্ধে সাত নং সেক্টরের অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মতো মুক্তিযুদ্ধে কোন দেশ বাংলাদেশকে অনুরূপ সহযোগিতা করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত দেশের সহযোগিতামূলক কর্মকান্ডই বাংলাদেশের বিজয়কে নিশ্চিত করে পাঠ্যবইয়ের আলোকে মতামত দাও।
🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে।
খ. মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরের অবস্থান ছিল দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা। পরস্পর দুজন মেজর এ সেক্টরের নেতৃত্ব দেন। প্রথমজন মেজর হচ্ছেন নাজমুল হক আর দ্বিতীয়জন মেজর কাজী নুরুজ্জামান।
গ. উদ্দীপকের মতো মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে অনুরূপ সহযোগিতা করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিবেশী ভারত সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ভারত আমাদের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। তাছাড়া ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেন। প্রবাসী সরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র স্থাপনেও ভারতের ভূমিকা অপরিসীম। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী জাতিসংঘসহ প্রথমবিশ্বের দেশগুলোতে সফর করে বাংলা ও বাঙালি জাতির পক্ষে যে জনমত গড়ে তুলেন তা মহান মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই আমরা অনায়াসে বলতে পারি যে, আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা অর্জনে ভারত অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে।
ঘ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যাপারে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রচেষ্টার পাশাপাশি ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রচার ও কূটনৈতিক মাধ্যমে ভারত বিশ্ববিবেকের নিকট আবেদন জানিয়ে বলে যে, অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের অজুহাতে বাংলাদেশে যে গণহত্যা চলছে তা প্রতিহত করা বাইরের দেশগুলোর নৈতিক দায়িত্ব। ভারত মানবিক প্রেক্ষাপট থেকেই বিষয়টি দেখছে বলে জানিয়ে দেয় বিশ্ববাসীকে।
কিন্তু ভারতের ওপর শরণার্থী সমস্যা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যে, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ব্যতীত এ সমস্যার আর কোনো সমাধান ভারতের হাতে ছিল না। সুতরাং গণহত্যার বিরুদ্ধে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি শরণার্থী সমস্যা ও অন্যান্য আরও কিছু কারণে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে সাহায্য করে। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন- স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র, মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও ভারত ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। তাছাড়া ভারতের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়। অতপর আমরা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করি। অতএব, ভারতের সহযোগিতামূলক কর্মকান্ড-ই বাংলাদেশের বিজয়কে নিশ্চিত করেতউক্তিটি যথার্থ।
৫. আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ফ্রান্স বিপ্লবীদের রসদ ও অস্ত্র সরবরাহ করে সাহায্য করে। তারা স্থল ও নৌপথে আমেরিকার স্বাধীনতাকামীদের সহায়তা করে। অবশেষে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা স্বীকার করে ব্রিটিশরা আমেরিকা ত্যাগ করে।
ক. মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
খ. শহিদ মিনার নির্মাণ প্রক্রিয়া বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকের অনুরূপ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগী দেশটির অবদানের বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘‘শুধু সামরিক সাহায্য নয়, মানবিক সাহায্যের ক্ষেত্রেও দেশটির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য’’ - উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।
🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
খ. প্রথম শহিদ মিনার নির্মিত হয় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি যা উদ্বোধন করেন শহিদ শফিউরের পিতা। ১৯৫৪ সালে এরই স্থানে অস্থায়ী একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় যার উদ্বোধন করেন নাট্যগুরু নুরুল মোমেন। ১৯৬৩ সালে অসমাপ্ত শহিদ মিনারের উদ্বোধন করেন শহিদ আবুল বরকতের মা। তারপর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা শহিদ মিনারটি ভেঙে দিলে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৩ সালে এসে শহিদ মিনারটি আজকের রূপলাভ করে।
গ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক সেনাবাহিনী বাঙালি জাতির ওপর অতর্কিত আগ্রাসী আক্রমণ পরিচালনা করে গণহত্যা শুরু করলে বাংলার আপামর জনতা প্রতিরোধ যুদ্ধের অবতারণা করে। প্রতিবেশী ভারত মুক্তি প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করে। তাছাড়া ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দ্রিরা গান্ধী বাঙালি জাতির পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখে।
আবার ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে জাতিসংঘ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে ভারতীয় বাহিনী মুক্তিবাহিনীকে সরাসরি সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। যৌথ বাহিনীর নিকট টিকে থাকতে না পারায় ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকসেনারা। আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। কিন্তু ভারতের ব্যয় হয় প্রচুর অর্থ ও গোলাবারুদ।
ঘ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকসেনারা অতর্কিত বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে বাংলার আপামর জনতা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়। তাছাড়া ভারত আমাদের মুক্তি প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অন্যান্য দিক দিয়ে আন্তরিক সহযোগিতা প্রদান করে। শুধু তাই নয়, সামরিক সাহায্যের পাশাপাশি ভারত আমাদেরকে সামরিক সাহায্যও করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে গড়ে প্রতিদিন ৬০ হাজার মানুষ শরণার্থী হতে শুরু করে ভারতে। জুন মাস নাগাদ প্রতিদিন এক লাখ করে মানুষ ভারতে শরণার্থী হতে থাকে। এভাবে ভারত প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেন ও ভরণপোষণ করেন। অর্থনৈতিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও শরণার্থীদের প্রতি ভারতের আচরণ ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ। অতএব, শুধু সামরিক সাহায্য নয়, মানবিক সাহায্যের ক্ষেত্রেও ভারতের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য- উক্তিটি যথার্থ।
৬. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে দেশের সরকার ব্যাপক সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তারাই বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রবাসী সরকারের ব্যয়ের বড় অংশ বহন করেছিল। শুধু তাই নয়, এ দেশটির জনগণ ও গণমাধ্যম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে সবার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকা কাদের পক্ষে ছিল?
খ. মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান ব্যাখ্যা কর।
গ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উদ্দীপকের উল্লিখিত দেশটির প্রচার মাধ্যমের বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত দেশের সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল'- মূল্যায়ন কর।
🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানের পক্ষে ছিল।
খ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু হলে এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে প্রবাসী বাঙালিরা তৎপর হয়ে উঠেন। তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট সদস্যদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন এবং ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতায় অর্থ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেন। পাকিস্তান যেন অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ না করে সেজন্য বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সরকারের কাছে প্রবাসী বাঙালিরা আবেদন করেন। তাছাড়া তারা প্রত্যেক প্রবাসী বাঙালির কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে এক পাউন্ড স্টার্লিং করে চাঁদা উঠিয়ে হামরোজ ব্যাংকে 'বাংলাদেশ ফান্ড' নামে অর্থ জমা করে এবং এ অর্থ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাংলাদেশে পাঠান।
গ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছিল উদ্দীপকের উল্লিখিত দেশটির অর্থাৎ ভারতীয় গণমাধ্যম। বিশেষত প্রিন্ট মিডিয়া ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তখন পাশে ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংবাদ, দেশাত্মবোধক গান, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব গাথাসহ রণাঙ্গনের নানা ঘটনা ইত্যাদি দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করে। মুজিবনগর সরকার প্রচার সেলের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে সর্বপ্রথম দৈনিক জয়বাংলা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এটি ছিল মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার পত্রিকাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে মুক্তাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়মিত, অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ও সংবাদ সাময়িকী মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতো। এগুলো মুক্তিকামী মুখপত্র হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলে।
এছাড়া ভারতীয় প্রচার মাধ্যম স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা এবং নিরীহ বাঙালির বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যায় আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালিয়েছিল। শুধু তাই নয়, মুসলিম বিশ্ব এবং পশ্চিমা শক্তিবর্গকে পাকিস্তানের পর্যায়ক্রমিক অপপ্রচারের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং বিশ্ব জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ভারতের সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পাশাপাশি বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শরণার্থীদের দুর্দশা, মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং পাকিস্তানি হানাদার ব্রাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের নিদর্শনমূলক দেখানোর ব্যবস্থাও করেছিল। এভাবে নানাবিধ তৎপরতার মাধ্যমে ভারতীয় প্রচার মাধ্যম আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে প্রচারণা চালিয়েছিল।
ঘ. উক্ত দেশে অর্থাৎ, ভারতীয় সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা, মৃত্যু ও আতঙ্কের সৃষ্টি করলে দেশের জনগণ আশ্রয়স্থল হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শরণার্থী হয়। এ অবস্থায় ভারত সরকারের নির্দেশে ২৭ মার্চ দুপুরে কলকাতা রেডিও তাদের নিয়মমাফিক অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করে বাংলা দেশাত্মবোধক গান প্রচার করে আর বাংলাদেশের সামরিক অভিযানের সংবাদ বারবার পরিবেশন করতে থাকে। ভারত সরকার বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছিল। ওদের সহযোগিতায় কলকাতা রেডিও স্টেশনের একটি তলায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য জায়গা করে দেওয়া হয় এবং ভারতের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে এ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের অনুষ্ঠান প্রচারের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় শাসকশ্রেণি বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্মতি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হয়। এ যুদ্ধে ভারত সামরিক সহায়তাসহ আর্থিক এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করে ব্যাপক সহায়তা দান করে।
বংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের পাশাপাশি ভারতীয় জনগণ তথা শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীগণ বেসরকারি পর্যায়েও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভাপতি করে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি গঠিত হয়। ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ পন্ডিত রবি শংকর আমেরিকার লস এঞ্জেলস-এ বাংলাদেশ কনসার্টের আয়োজন করে দশ লক্ষ ডলার ইউনিসেফকে দিয়েছিলেন শরণার্থী শিবিরের শিশুদের জন্য। মকবুল ফিদা হুসেনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ছবি এঁকে বোম্বের রাস্তায় ঘুরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য। ভারতীয় কবি-সাহিত্যিকগণ বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। বিকাশ ভট্টাচার্য, প্রকাশ কর্মকার, শ্যামল দত্ত রায় ও গণেশ পাইনের মতো খ্যাতিমান শিল্পীরা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মাসের পর মাস বাংলাদেশের ওপর ছবি এঁকে বিক্রি করেছেন এবং ছবি বিক্রির টাকা শরণার্থী শিবিরে পৌঁছে দিয়েছেন। এককথায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও ভারতের শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে তখন বাংলাদেশকে সাহায্য করেছেন। সর্বোপরি ভারতীয় সরকার আশ্রয়দান ও সামরিক সাহায্য দান করে এবং ভারতীয় জনগণ সে সময় 'শরণার্থী কর' প্রদান করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল; যার তুলনা ইতিহাসে বিরল।
৭. সাহেদ বাংলাদেশের নাগরিক। সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য সে একটি বই সংগ্রহ করে। বইটি পড়ে সে জানতে পারে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ২৪তম কংগ্রেসে ব্রেজনেভ ভাষণে 'পূর্ব বাংলার' জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পদগর্ণি ইয়াহিয়াকে এ নির্যাতন বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর আহবান জানান বলে সাহেদ বইটি পড়ে জানতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় সাহেদ বহির্বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গ বাংলাদেশের প্রতি যেরূপ মনোভাব প্রকাশ করে সে সম্পর্কে জানতে পারে।
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তৎকালীন সময় বহির্বিশ্বে কী নামে পরিচিত ছিল?
খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্যাখ্যা কর।
গ. সাহেদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বহির্বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের মনোভাব কেমন ছিল? এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত দেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা সম্পর্কে আর কী জানতে পারে? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মূল্যায়ন কর।
🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. তৎকালীন সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বহির্বিশ্বে পাক-ভারত যুদ্ধ নামে পরিচিত ছিল।
খ. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে গ্রেট ব্রিটেন এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোকে ব্রিটেনের প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে বিবিসি এবং লন্ডন থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন, প্রতিরোধ, বাঙালিদের সংগ্রাম, ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের করুণ অবস্থা, পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি সম্পর্কে বিশ্ব জনমতকে জাগ্রত করে তোলে। ব্রিটিশ সরকারও দান সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে খুবই সহানুভূতিশীল ছিল। মূলত লন্ডন ছিল প্রবাসী বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠনের মূলকেন্দ্র।
গ. সাহেদ বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ব্রিটিশ সরকার মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে মার্কিন ও চীন মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের বিপক্ষে থাকার নীতি ঘোষণা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল খুবই হতাশাব্যঞ্জক ও বিতর্কিত। প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করলেও যুদ্ধকালীন সময়ে মার্কিন সরকার পাকিস্তান নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। তবে মার্কিন সরকার পাকিস্তানপন্থী হলেও মার্কিন কংগ্রেস এবং সিনেটের বিপুল সংখ্যক সদস্য এবং সরকারি কতিপয় আমলা বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। মার্কিন গণমাধ্যম ও জনমতও বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তবে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারসহ মার্কিন প্রশাসনের নীতিনির্ধারক মহল পুরো নামাস পাকিস্তানের জন্য নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সমর্থন যুগিয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত 'সপ্তম নৌবহর' ও 'এন্টারপ্রাইজকে' ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করেন। তবে দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারি পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করলেও বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য ছিল ব্যাপক সহানুভূতি। কংগ্রেস, সুশীল সমাজ ও প্রচার মাধ্যমের সতর্কতা ও প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ চাপে পড়ে আমেরিকা পাকিস্তানকে যতোটা সমর্থন ও সহযোগিতা করতে চেয়েছিল ঠিক ততটা করতে সক্ষম হয়নি।
ঘ. আলোচ্য উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনা ছাড়াও সাহেদ জানতে পারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মস্কো সফরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পেরে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করে ব্যাপকভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ১-১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। এতে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে তিনবার ভেটো দেয়। পরাশক্তি হিসেবে ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। রাশিয়ার পত্রপত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমগুলোও বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতানের কাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি প্রচার করে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থন করার অন্যতম কারণ হচ্ছে রুশ-চীন বিরোধ। সমাজতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্ত্বেও দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল চরম বৈরিতার। অবস্থাটা এমন ছিল যে, কোনো একটি দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র হলে সে দেশটি চীনের শত্রুতে পরিণত হবে। আর এ কারণেই পাকিস্তান চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় তা সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন মনেপ্রাণে চাচ্ছিল পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব অটুট রাখতে। কিন্তু চীন-পাকিস্তান মৈত্রী সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যায় এবং বাধ্য হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করতে।
সুতরাং দেখা যায় যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাঙালির প্রতি মমত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নয়, বরং নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট চিন্তা-ভাবনা ও প্রভাব বলয় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস গণহত্যার বিরুদ্ধে ও বাঙালির ন্যায়সঙ্গত দাবির সপক্ষে রাশিয়া ভূমিকা রাখে।
৮. বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতেও ক’ প্রতিষ্ঠানটি 'ভোটো' ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রের সিদ্ধান্টের বাইরে নিজস্ব কোনো উদ্যোগ বা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা অতি সীমিত।
ক. সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
খ. মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের অবদান ব্যাখ্যা কর।
গ. মুক্তিযুদ্ধে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় 'ক' প্রতিষ্ঠানটি চিহ্নিত কর।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক উদ্যোগ বাংলাদেশের স্বার্থে নয় বরং ভেটো ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রগুলোর স্বীয় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের অবদান অনেক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বিশেষত প্রিন্ট মিডিয়া ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তখন পাশে ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংবাদ, দেশাত্মবোধক গান, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, রণাঙ্গনের নানা ঘটনা ইত্যাদি দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করে। ভারতীয় পত্রপত্রিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা এবং নিরীহ বাঙালির বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যায় আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালিয়েছিল।
গ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্বে থাকা উদ্দীপকের 'ক' প্রতিনিধি হলো জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মানবিক কার্যক্রম সংক্রান্ত ভূমিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীর খাদ্য, পানীয়, ওষুধপত্র, মাথাগোঁজার ঠাঁই ইত্যাদি নানা সমস্যা মোকাবিলায় জাতিসংঘ দুটি মিশন পরিচালনা করে। জাতিসংঘ ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ভারতকে শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ৯৮ মিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদান করে। সর্বসাকুল্যে সাহায্যের পরিমাণ ছিল ২১৫ মিলিয়ন ডলার। ভারতের পাশাপাশি জাতিসংঘের উদ্যোগে পূর্ব পাকিস্তানেও পরিচালিত হয় টঘঊচজঙ কার্যক্রম। পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি জন আর কেলি ২৮ জুলাই ঢাকায় আগমন করেন। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত মহাসচিব স্বয়ং এবং এরপর সহকারী মহাসচিবের মর্যাদা প্রাপ্ত ফরাসি কূটনৈতিক পল মার্ক হেনরি। পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘ ত্রাণ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন। ডেটো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মতবিরোধ থাকায় জাতিসংঘের কার্যক্রম কেবল ত্রাণের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। সুতরাং 'ক' প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘ।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ জাতিসংঘের গৃহীত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রাজনৈতিক উদ্যোগ বাংলাদেশের স্বার্থে নয় বরং ভেটো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো দ্বীয় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছিল। জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মোতায়েনের প্রস্তাব করে যা পারিস্তানের জন্য আনন্দের ব্যাপার হলেও ভারত ও মুজিবনগর সরকারের স্বার্থবিরোধী ছিল। ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই জাতিসংঘের মহাসচিব বাঙালি গণহত্যার বিষয়টি পূর্ববর্তী শত্রুর জের হিসেবে একটি আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করে নিরাপত্তা পরিষদ বরাবর স্মারকপত্র প্রদান করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যখন একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক সে সময় সংকট নিরসনে আরেকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ২০ অক্টোবর ভারত ও পাকিস্তান সরকারের নিকট তিনি এড়ড়ফ ঙভভরপব ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবের অন্তর্নিহিত অর্থ হলো সমগ্র বিষয়টিকে তিনি পাক-ভারত সংঘাত হিসেবে বিবেচনা করেন না। এ প্রস্তাবের ফলে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সুতরাং ভেটো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর স্বীয় জাতীয় স্বার্থরক্ষার দ্বনে্দ্ব জাতিসংঘের গৃহীত উদ্যোগ ত্রাণ কার্যক্রম ছাড়া কোনোটিই বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে ছিল না। সুতরাং উক্তিটি সঠিক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
৯. সাথুলিয়া গ্রামে জববার মিয়াকে এক গোপন সালিশে দোষী প্রমাণিত করে শাস্তি দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে উক্ত গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ব্যাপারটি জানতে পেরে এনজিও প্রতিষ্ঠান 'সোনালী দিন' গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইনের ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়। ফলে গোপন ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়।
ক. ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল কোন দেশের পত্রিকা?
খ. মুক্তিযুদ্ধে বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. জববার মিয়াকে রক্ষা করতে 'সোনালী দিন' এনজিও এর ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে কোন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকার সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়ত যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আমেরিকার পত্রিকা।
খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক ঘটনা হওয়ায় বৃহৎ শক্তিবর্গ তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, চীন ও ফ্রান্স নিজ নিজ ভাবমূর্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘটনার মূল্যায়ন করেছিল।। বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম প্রকাশ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আক্রমণের নিন্দা জানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নেই পাকিস্তানের সপক্ষে তার নীতি ঘোষণা করে। চীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের সহযোগিতা অযৌক্তিক। হিসেবে তুলে ধরে। ব্রিটিশ সরকার মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে খুবই সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করে।
গ. মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে জাতিসংঘের ভূমিকার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। জববার মিয়াকে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গোপনে সালিশ করে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু 'সোনালী দিন' এনজিও প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে আইনের ভয় দেখালে জববার মিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। একইভাবে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে পাকিস্তানি সামরিক সরকার বিচারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ অবস্থায় ১০ আগস্ট জাতিসংঘ মহাসচিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের প্রশ্নে পাকিস্তান সামরিক সরকারের উদ্যোগে হস্তক্ষেপ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'প্রহসনমূলক' বিচার বন্ধে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগ ও আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার মুখে বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা পায়। সুতরাং সাদৃশ্য সুস্পষ্ট।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা অর্থাৎ জাতিসংঘের ব্যর্থতা মহান মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন নয় মাস মুজিবনগর সরকার সবসময়ই হিলি রৌমারীসহ কিছু কিছু এলাকা শাসন করে এবং বড় শহর ও ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া যুদ্ধরত বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ভূমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ সরকারের ছিল একটি নিজস্ব সেনাবাহিনী, ছিল বিদেশে কূটনৈতিক মিশন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নামে একটি প্রচার যন্ত্র এবং একটি রাষ্ট্রীয় কোষাগার যেখান থেকে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হতো। এছাড়াও মুজিবনগর সরকার ছিল একটি সর্বদলীয় সরকার। সুতরাং এ সরকার ছিল একটি কার্যকরী সরকার। কিন্তু তা সত্ত্বেও জাতিসংঘ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারেনি ভেটো ক্ষমতাধারী দেশগুলোর পারস্পরিক দ্বনে্দ্বর কারণে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় জাতিসংঘ ত্রাণকার্য পরিচালনা ব্যতীত অন্যকোনো দায়িত্ব পালনে পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছিল। এমনকি জাতিসংঘের সনদের ৯৯ ধারা অনুযায়ী জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর নিজ ক্ষমতাবলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যা কিছু করতে। পারতেন একমাত্র বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রশ্নে ভূমিকা রাখা ছাড়া অন্যকোনো উদ্যোগই তিনি নিতে পারেননি। সুতরাং জাতিসংঘের ব্যর্থতা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশেষভাবে লক্ষণীয়ত উক্তিটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
১০. হাসিগঞ্জ গ্রামে বিভিন্ন রোগের মহামারি ঠেকাতে দশ বছর আগে নাদিম রেজা গঠন করেছিলেন 'রোগ প্রতিরোধ কমিটি'। আজ ঐ গ্রামে 'দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি' কৃষক-শ্রমিক ঐক্য কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক কমিটি গঠিত হয়েছে। এতে গ্রামের বিভিন্ন সমস্যা অতিদ্রুত এবং সহজে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।
ক. ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
খ. ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা' প্রাপ্ত ভারতীয়দের তালিকা লেখ।
গ. নাদিম রেজার গ্রামে সমস্যা প্রতিরোধে কমিটি গঠন আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে কাদের কমিটি গঠনের কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত কমিটিগুলোর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ কর।
🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
খ. 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা' প্রাপ্ত ভারতীয়দের তালিকা হলো সিদ্ধার্থ সংকর রায়, বিচারপতি সাদাত আবুল মাসুদ, মহারানী বিভা কুমারী দেবী, সমরসেন, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, পন্ডিত রবি শংকর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, ওয়াহিদা রেহমান, সুনীল দত্ত, নার্গিস দত্ত, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, অন্নদাশংকর রায়, জগজীবন রাম, ভূপেন হাজারিকা, ফিল্ড মার্শাল এস.এ.এম. মানেকশ, লে.জে. জগজিৎ সিং অরোরা, লে.জে. জাফর, দশরথ দেব বর্মন, শিল্পী লতা মুঙ্গেশকর, ডি.পি. ধর, জেনারেল উবান, গোলক মজুমদার পিত্রন হাফসার, ড. কিরন সিং, হেমন্ত মুখ্যোপাধ্যায় আংশুমান রায়, শরৎচন্দ্র সিনহা, মিত্রবাহিনী ও ভারতীয় জনগণ প্রমুখ।
গ. নাদিম রেজার গ্রামে কমিটি গঠন আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি ও বিদেশি ব্যক্তিবর্গের কমিটি গঠনের কথা মনে করিয়ে দেয়। নাদিম রেজা হাসিগঞ্জ গ্রামে রোগ প্রতিরোধে 'রোগ প্রতিরোধ কমিটি' গঠন করেছিলেন অনেক বছর পূর্বে। আর আজ ঐ গ্রামে নাদিম রেজার অনুসরণে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে আরও অনেক কমিটি। একইভাবে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে বিশটি শহর কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সর্বপ্রকার কর্মকান্ড মনিটরিং করার জন্য ‘এ্যাকশন কমিটি ফর দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ' এবং ‘স্টিয়ারিং কমিটি অব দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ' নামে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অর্থ সহায়তা দিতে লন্ডনের হামবোদ ব্যাংকে 'বাংলাদেশ ফান্ড' নামে একটি একাউন্ট খোলা হয় ইয়র্কশায়ার অঞ্চলের হাডার্সফিল্ড শহরে প্রায় দুশত বাঙালিকে নিয়ে। ১১ সদস্যবিশিষ্ট 'বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম কমিটি' নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আঞ্চলিক ও শহর কমিটিগুলো সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সভা সমাবেশ করত।
ঘ. উক্ত কমিটিগুলোর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। প্রবাসী বাঙালিদের প্রচেষ্টায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, তাঞ্চলে শহরে ছোট-বড় অনেক কমিটি গঠিত হয়। এসব কমিটির মধ্যে লন্ডনে বিশটি শহর কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি, রাজনৈতিক কমিটি, কূটনৈতিক কমিটি, অর্থনৈতিক কমিটি, এ্যাকশন কমিটি ফর দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, স্টিয়ারিং কমিটি অব দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ বিশেষ উল্লেখযোগ্য ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে গঠিত কমিটিগুলো প্রবাসী প্রত্যেক বাঙালির কাছ থেকে স্টিয়ারিং কমিটির প্রেরিত চাঁদার রসিদের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে এক পাউন্ড স্টার্লিং করে চাঁদা উঠিয়ে লন্ডনের হামবোজ ব্যাংকে ‘বাংলাদেশ ফান্ডে' জমা দিত। এ অর্থ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আর্মস, এ্যামুনেশন, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী লন্ডন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হতো। আঞ্চলিক ও শহর কমিটিগুলো কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ ও ১ পরামর্শে বিশ্বজনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে লন্ডনের হাইড পার্ক কর্নার, ট্রাফালগার স্কয়ার, পিকাডেলি সার্কাসহ লন্ডনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অনেক মিটিং মিছিল ও সমাবেশ করেন। শহর ও আঞ্চলিক কমিটিগুলো তাদের এলাকায়ও এ ধরনের কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত আয়োজন করতেন। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে।
সুতরাং উক্ত কমিটিগুলোর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়ত উক্তিটি সঠিক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
0 Comments:
Post a Comment