HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

 ইতিহাস 
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি

সপ্তম অধ্যায় : মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) কার্যক্রম
মুজিবনগর সরকার গঠন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। দেশী-বিদেশী ১২৭ জন সাংবাদিক ও কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। এ শপথ বাক্য পাঠ করান অধ্যাপক ইউসুফ আলী। এ সরকারের সদর দপ্তর প্রথম স্থাপিত হয় মুজিবনগরে (মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা)। পরবর্তীকালে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রধানত নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানের সুবিধার্থে এ সরকারের প্রধান কার্যালয় কলকাতায় স্থানান্তর হয়। কারণ মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণের মাত্র ২ ঘন্টা পর পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান মুজিবনগরে বোমা বর্ষণ করে এবং মেহেরপুর দখল করে নেয়।

মুজিবনগরের কার্যক্রম
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নামে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকানঙ্কে নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে 'মুজিবনগর সরকার' গঠন করা হয়। ঐ দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয় 'বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা আদেশ'। মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল।

মুজিবনগর স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের কাঠামো নিম্নরূপ:
১। রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
২। উপ-রাষ্ট্রপতি- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
৩। প্রধানমন্ত্রী- তাজউদ্দিন আহমদ
৪। অর্থমন্ত্রী- এম মনসুর আলী
৫। স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী- এ এইচ এম কামরুজ্জামান
৬। পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী- খন্দকার মোশতাক আহমেদ

স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী,ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড মনিসিং, জাতীয় কংগ্রেসের শ্রী মনোরঞ্জন ধর, তাজউদ্দিন আহমেদ ও খন্দকার মোশতাক আহমেদ এই ৬ জন ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য দ্বারা মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা ছিল এ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য।

বাঙালি কর্মকর্তাদের নিয়ে সরকার প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করে। এতে মোট ১২ টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল। এগুলো হচ্ছে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ-শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়, সাধারণ প্রশাসন, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, যুব ও অভ্যর্থনা শিবিরের নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ইত্যাদি। মুজিবনগর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে (কলকাতা,দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক,স্টকহোম) বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন করে। সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চেŠধুরীকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব নেতৃত্ব এবং জনমতের সমর্থন আদায়ের জন্য কাজ করেন। ১০ এপ্রিল সরকার ৪ টি সামরিক জোনে বাংলাদেশকে ভাগ করে ৪ জন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করে। ১১ এপ্রিল তা পুনঃনির্ধারিত করে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।

এ ছাড়া বেশ কিছু সাব-সেক্টর এবং তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠিত হয়। এ সব বাহিনীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা, সেনা সদস্য, পুলিশ, ইপি আর, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যগণ যোগদান করেন। প্রতিটি সেক্টরেই নিয়মিত সেনা, গেরিলা ও সাধারণ যোদ্ধা ছিল। এরা মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিফৌজ নামে পরিচিত ছিল। এ সব বাহিনীতে দেশের ছাত্র, যুবক, নারী, কৃষক, রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাগণ মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে দেশকে পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত করার জন্য রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছেন, অনেকেই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন।

পরীক্ষা উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৭ম অধ্যায় : মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) কার্যক্রম

১. গত বন্যায় কুড়িগ্রামের প্রায় সর্বত্র পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যা পরবর্তী সময়ে এলাকায় লোকজন গ্রামের সবাইকে নিয়ে গ্রামটিকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কতটি সেক্টর ছিল?
খ. মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের তৎপরতা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের গ্রামবাসীর বন্যা পরবর্তী গ্রাম বিভক্ত পরিকল্পনার সাথে মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর ব্যবস্থাপনার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. সঠিক পরিকল্পনাই পারে পূর্ণ সফলতাত উদ্দীপকের আলোকে মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বিশ্লেষণ কর।

🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টর ছিল।

খ. সংখ্যায় কম হলে আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির কিছু লোক পাকিস্তানিদের পক্ষ নেয়। ওরাই স্বাধীনতাবিরোধী। ওদের মধ্যে রয়েছে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যবৃন্দ। ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানি জেনারেল 'পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স' জারি করে একটি রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে এদেশের রাজাকার সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কর্মতৎপরতা চালাতে শুরু করে। এ রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায় পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও হিংস্রতার পরিচয় বহন করে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘শান্তি কমিটি’ সংগঠনের মাধ্যমে এবং পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। তাছাড়া ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও মা-বোনদের সম্ভ্রমহানিতে তাদের সরাসরি ভূমিকা রয়েছে।

গ. আলোচ্য উদ্দীপকে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির ফলে বন্যা পরবর্তী সময়ে এলাকার লোকজন গ্রামের সবাইকে নিয়ে গ্রামটিকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। উদ্দীপকের এ কর্মকান্ডের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ব্যবস্থাপনার যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় তা আলোচনা করা হলো-
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর অতর্কিত হামলা বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর শুরু হলে এর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই বাঙালিরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। দেশকে রক্ষাকল্পে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্রসহ রাজনীতিবিদদের সহায়তায় বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাঙালি অফিসাররা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে পুনর্গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
এমতাবস্থায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য সমন্বয়ে ১০ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। এ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ১৭ এপ্রিল। এ সরকার প্রধান সেনাপতি করেন এমএজি ওসমানীকে। তাছাড়া বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে সীমানা চিহ্নিত করার পাশাপাশি একজন কর্মান্ডারের অধীনে প্রতিটি সেক্টর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সেক্টরে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত এলাকায় এবং ভারত সরকারের সহায়তায় প্রশিক্ষণ লাভ করে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচ্য উদ্দীপকেও আমরা বন্যাদুর্গতদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে গ্রামটিকে বিভিন্ন অংশে ভাগ হতে দেখেছি। যা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর বিভক্তের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে কুড়িগ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ফলে বন্যা পরবর্তী সময়ে এলাকার লোকজন গ্রামের সবাইকে নিয়ে গ্রামটিকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকান্ড পরিচালনা করে। তদ্রূপ মুজিবনগর সরকারও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশের যুদ্ধাঞলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে এবং বহির্বিশ্বে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে তহবিল সংগ্রহণের পদক্ষেপ নেয়।
মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। এরপর মুক্তিযুদ্ধকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সমস্ত যুদ্ধাঞলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। এরপর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সমর্থন ও জনমত আদায়ের লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে নিয়োগ করে। এছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিক এবং সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইডেন, জাপান ও অন্যান্য কতিপয় দেশের সমর্থন লাভের প্রচেষ্টা চলে।
বহির্বিশ্বে মুজিবনগর সরকারের তৎপরতার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন করা। এছাড়া ঐসব স্থানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হলে তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে এপ্রিল মাস থেকে পাকিস্তানের দূতাবাসের অনেক বাঙালি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন। এভাবে মুক্তিযুদ্ধকালে প্রায় ৩৮ জন উচ্চপদস্থ বাঙালি কর্মকর্তা বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশ মিশনে যোগদান করে বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেন। মুজিবনগর সরকারের এরূপ তৎপরতার ফলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশ জানতে পারে। সমর্থন লাভের পর মুজিবনগর সরকারের আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করা। এ উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ৮ মে তারা মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে 'বাংলাদেশ ফান্ড' নামে একটি তহবিল গঠন করে। এ ফান্ড ৩,৭৬,৫৬৮ পাউন্ড পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগ্রহ করে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও শরণার্থিদের পুনর্বাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজের জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে ভারত সরকার বিভিন্ন দেশ হতে বেশ কিছু অর্থ সাহায্য গ্রহণ করেছিল। বহির্বিশ্বে তৎপরতার ফলে এ সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, বাংলাদেশের সমস্যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, বরং এটি ছিল শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম। এভাবেই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এগিয়ে চলে। মুজিবনগর সরকারের এই সঠিক পরিকল্পনার ফলেই বাংলাদেশ পূর্ণ 'সফলতা অর্জন করে। অতএব, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক ও যথার্থ।

২. গাজীপুরের কাউসার সাহেব নিজেকে ধন্য মনে করেন এজন্য যে, এ জেলার একজন মহান ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করার জন্য যে সরকার প্রতিষ্ঠা করা/গঠিত হয়েছিল তার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। গাজীপুরবাসী আজও অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে তাদের প্রিয় নেতাকে স্মরণ করে।
ক. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত কয়টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়?
খ. "বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল" - বুঝিয়ে বল।
গ. উদ্দীপকের সাথে মিল রয়েছে পাঠ্যপুস্তকের এমন একটি সরকারের কার্যক্রম ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "এ ধরনের সরকার গঠনের পরই বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়" বিশ্লেষণ কর।

🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুমানিক রাত ১টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খ. মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম থেকেই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, তাতে নারীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অস্ত্রচালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। অপরদিকে, সহযোদ্ধা হিসেবে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাশুশ্রুষা, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান ও তথ্য সরবরাহ করে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এদেশের অগণিত নারী। পাকসেনা কর্তৃক ধর্ষিত হয় প্রায় তিন লক্ষ নারী। তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযাত্রী এবং তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারিভাবে তাদের 'বীরাঙ্গনা' উপাধি দেওয়া হয়। এছাড়া দু জন নারীকে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ 'বীরপ্রতীক' খেতাবে ভূষিত করা হয়। তাঁরা হলেন তারামন বিবি ও ডাক্তার সিতারা বেগম। তাই বলা হয়, বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল।

গ. উদ্দীপকে এমন একটি সরকারের কার্যক্রমের উল্লেখ আছে যা বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করার জন্য গঠিত হয়েছিল। এ সরকারের সাথে মুজিবনগর সরকারের মিল লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা, সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে 'মুজিবনগর সরকার' গঠন করা হয়। এদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয় 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা আদেশ' বা স্বাধীনতার সাংবিধানিক ঘোষণা। মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মুজিবনগরে অর্থাৎ মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। তখন মুজিবনগর বাংলাদেশ সরকারের রাজধানীতে পরিণত হয়। কিন্তু মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের দু ঘণ্টার মধ্যে পাক বিমানবাহিনী সেখানে বোমা বর্ষণ করে। ফলে মুজিবনগর পাকিস্তানিদের দখলে চলে যায়। এমতাবস্থায় মুজিবনগর সরকরের কার্যালয় স্থানান্তর করা হয় কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যপুস্তকের মুজিবনগর সরকারের মিল রয়েছে।

ঘ. ১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য দ্বারা মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা ছিল এ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর ১৭ এপ্রিল তাঁরা শপথ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সামরিক, বেসামরিক জনগণকে নিয়ে একটি মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মুজিবনগর সরকারের কর্মতৎপরতায় বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। এছাড়া বেশকিছু সাব সেক্টর এবং তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠিত হয়। এসব বাহিনীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা, সেনা সদস্য, পুলিশ, ইপিআর, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যগণ যোগদান করেন। প্রতিটি সেক্টরেই নিয়মিত সেনা, গেরিলা ও সাধারণ যোদ্ধা ছিল। এরা মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিফৌজ নামে পরিচিত ছিল। আর মুক্তি বাহিনীতে দেশের ছাত্র, যুবক, নারী, কৃষক, রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিল অনিয়মিত বাহিনী হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে সরকারের অধীনে বিভিন্ন বাহিনী ছাড়াও বেশ কয়েকটি বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে উঠেছিল। এসব সংগঠন স্থানীয়ভাবে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাগণ মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে দেশকে পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত করার জন্য রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছেন। অনেকেই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। অতএব এটি প্রমাণিত, মুজিবনগর সরকার গঠনের পরই বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

৩. একসময় কাকলীর দেশটি ছিলো পরাধীন। দেশটির স্বাধীনতা লাভের জন্য প্রাণ দিয়েছে লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিক। শুধু তাই নয় দেশটির পক্ষে বিদেশি শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন লাভের জন্য দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং অন্যান্য সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টার দেশটির প্রতি অনেক দেশ ও সরকার সমর্থন প্রদান করে।
ক. স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ১০নং সেক্টরের কমান্ডো কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল?
খ. মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নৌ কমান্ডোদের অবদান ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কোন ধরনের তৎপরতার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে? তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. এ ধরনের তৎপরতার ফলে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সমর্থন ও তহবিল সংগৃহীত হয়েছিল- মূল্যায়ন কর।

🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ১০নং সেক্টরের কমান্ডো কাদের নৌবাহিনী নিয়ে গঠিত হয়ে ছিল?

খ. বাঙালি নৌ কমান্ডোরা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা নদী ও সমুদ্রবন্দরে ব্যাপক অভিযান চালায়। আগস্ট মাসে অপরাদেশ জ্যাকপটের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরে এম.ভি. হরমুজ ও এম.ভি আববাস জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। পরের মাসে নৌ কমান্ডোরা ২০টি পাকিস্তানি জাহাজ ধ্বংস করে। গেরিলাদের আক্রমণে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধে বড় ধরনের ৪৫টি অভিযানে ১২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়া হলে পাকিস্তান বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায়ের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা এক সোনালি অধ্যায়। এটি ছিল আসলে এক বিশাল কূটনৈতিক যুদ্ধ। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মিশন স্থাপন, কূটনৈতিক তৎপরতা, প্রতিনিধি প্রেরণ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন লাভের চেষ্টা, বিদেশে তহবিল সংগ্রহ ইত্যাদি ছিল বহির্বিশ্বে তৎপরতার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মুজিবনগর সরকার ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশ্বে বিশেষ দূত। নিয়োগ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বহির্বিশ্বের সমর্থন ও জনমত আদায়ের চেষ্টা করেন। এছাড়া বাংলাদেশের নাগরিক এবং সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, সুইডেন, জাপান ও অন্যান্য কতিপয় শক্তিশালী দেশের সমর্থন লাভে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালানো হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে যোগদানের জন্য জেনেভায় গমন করেন। দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর দেশে ফিরে আসেননি। মুজিবনগর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তার মূল দায়িত্বই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বহির্বিশ্বে তৎপরতা চালানো।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতার চত্র প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. এ ধরনের তৎপরতার অর্থাৎ কূটনৈতিক তৎপরতার ফলেই। মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সমর্থন ও তহবিল লাভে সমর্থ হয়েছিল- বক্তব্যটি যথার্থ ও সঠিক।
মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসীরী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালিদের প্রতি যে সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা ছিল বহির্বিশ্বে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্নমুখী তৎপরতার ফল। বহির্বিশ্বে মুজিবনগর সরকারের বিশেষ দৃত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ব্রিটেনে কূটনৈতিক তৎপরতা ও সেখানে প্রবাসী বাঙালিদের সংঘবদ্ধ করে আন্দোলন ও জনমত গঠনে বিশেষ সফলতা এসেছিল।
উল্লিখিত দিক ছাড়াও বহির্বিশ্বে তৎপরতার ফলে বিদেশে প্রশিক্ষণরত সিভিল সার্ভেন্টদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৭ জন এবং যুক্তরাজ্যে ২ জন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছিলেন। তাছাড়া ইরাক, ফিলিপাইন ও আর্জেন্টিনার পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতগণ এবং কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, কাঠমান্ডু, হংকং প্রভৃতি স্থানে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনৈতিকগণ মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকারের প্রতি সমর্থন ও আনগুত্য প্রকাশ করেন। ফলে অতি স্বল্পসময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। শুধু তাই নয়, বহির্বিশ্বে তৎপরতার ফলে এ সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, বাংলাদেশের সমস্যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বা শরণার্থী সমস্যা নয় বরং এটা ছিল শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম। পরিশেষে বলা যায়, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও বিদেশি সমর্থন ও অনেক তহবিল সংগৃহিত হয়েছিল।

৪. স্বপন কুমার আফ্রিকার একটি দেশে বসবাস করে। সে ঐ দেশটির মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সেখানে অবস্থান করেছিল। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সেখানে নির্বাচনে জয়লাভকারী কিছু সদস্য দ্বারা র একটি সরকার গঠন করা হয়েছিল। উক্ত সরকারের কাজ ছিল যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং দেশটির পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করা। যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য দেশটিকে তারা এগারটি অংশে বিভক্ত করে।
ক. মুজিব বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
খ. মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ব্যবস্থাপনা কেমন ছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোন সরকারের সাথে স্বপন কুমারের দেখা দেশটির সরকারের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, এই ধরনের একটি সরকার গঠন ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না? মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুজিব বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৬,০০০।

খ. ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার রণাঙ্গনকে মোট ৪টি সেক্টরে ভাগ করে। সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে ১১-১৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সভাপতিত্বে সীমানা চিহ্নিতকরণ, দেশের অভ্যন্তরে গেরিলা ঘাঁটি স্থাপনসহ বিভিন্ন রীতিনীতি প্রণয়ন করে। এ বৈঠকে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে সীমানা নির্ধারণ করে একজন কমান্ডারের অধীনে প্রতিটি সেক্টর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়।

গ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের সাথে স্বপন কুমারের দেখা দেশটির সরকারের মিল রয়েছে।
মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দুটি যথা-
(ক) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে সমর্থন আদায় করা এবং
(খ) মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।
উক্ত সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত হয়। অতঃপর বাংলাদেশের প্রথম এ সরকার দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে শপথ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। এ শপথের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও পাঠের মাধ্যমে ২৬ মার্চ হতে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, স্বপন কুমার যে দেশটিতে বসবাস করে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। ঐ যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সেখানে একটি সরকার গঠন করা হয়েছিল। উক্ত সরকারের কাজ ছিল যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং দেশটির পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন করা যা স্বপনের দেখা দেশটির ‘যুদ্ধকালীন সরকারের সাথে বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকারে মিল রয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, অবশ্যই আমি মনে করি মুজিবনগর সরকার গঠন ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।
মুজিবনগর সরকার গঠন করেই শপত গ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে ২৬ মার্চ হতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর বাংলার স্বাধীনতাকামী জনতা। আশার আলো দেখতে পায়। তারা ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
সংগ্রমী জনগণের মনোবল ঠিক রাখার জন্য মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের মাধ্যমে ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, তা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার অন্যতম উৎস। মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধকে সুসংহতভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে যুদ্ধক্ষেত্রকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে। এছাড়া এ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা হচ্ছে কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক ও স্টকহোমসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন করা। তাছাড়া মুজিবনগর সরকার ওইসব স্থানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা।
তাই বলা যায়, স্বপনের দেখা দেশটির মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অনুরূপ যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকার গঠিত না হতো তাহলে বাংলাদেশও স্বাধীন হতো না।

৫. ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ক্যাপ্টেন পদে কর্মরত ছিলেন অলি আহমেদ। দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে ফরোয়ার্ড পোস্ট পাকিস্তানে থেকে তিনি একদিন পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তার নির্দেশে একদিন গর্জে উঠেছিল মেশিনগান, মর্টার, গ্রেনেড। সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য তাকে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। অলি আহমেদের মতো সাহসী যোদ্ধাদের জন্য আমরা পেয়েছি, সবুজরে বুকে লাল পতাকা।
ক. বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের স্থপতি কে?
খ. কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রচিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন যুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? উক্ত যুদ্ধে সামরিক, বেসামরিক জনগণের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত যুদ্ধে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।

🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের স্থপতি হলেন মোস্তফা আলী কুদ্দুস।

খ. ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ সরকার বাংলাকে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী রাজনীতিবিদ, বর্ণবাদী হিন্দুদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার জন্য। ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্তমানে বাংলাদেশের যে জাতীয় সংগীত তা রচনা করেন।

গ. উদ্দীপকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালেরর ১০ এপ্রিল মুজিনগর সরকার গঠিত এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য একটি মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১১ এপ্রিল বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। এছাড়া বেশকিছু সাব-সেক্টর এবং তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠিত হয়। এসব বাহিনীতে পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মতকর্তা, সেনা সদস্য, পুলিশ, ইপিআর, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যগণ যোগদান করে। প্রতিটি সেক্টরেই নিয়মিত সেনা, গেরিলা ও সাধারণ যোদ্ধা ছিল। এরা মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত ছিল। এসব বাহিনীতে ছাত্র, যুবক, নারী, কৃষক ও রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেয়।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আর এ যুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিজয় লাভ করে।

ঘ. উক্ত যুদ্ধে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারীরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম থেকেই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় তাতে নারীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। যুদ্ধের নয় মাসে কয়েক লক্ষ মা-বোন পাক বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়। এছাড়া নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে, সেবা দিয়ে, নানাভাবে সহায়তা করেছেন। এমনকি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণের দৃষ্টান্তও কম নয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ দুজন নারী বীর প্রতীক খেতাব অর্জন করেন। একজন তারামন বিবি, অন্যজন ডাক্তার সিতারা বেগম। এছাড়াও সারাদেশে আরও অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করেছেন। তাই বলা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পুরুদের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৬. ফিরে দেখা ৭১-এ অমি রহমান পিয়াল তার এক প্রবন্ধে 'বুদ্ধিজীবী হত্যায় রাজাকার আল বদর'- এ লিখেছেন, ‘‘আল বদর ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী। রাজাকারদের সঙ্গে আল বদরদের খানিকটা তফাৎ ছিল। রাজাকাররা সামগ্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা করেছে, সংঘর্ষ হলে খুন করেছে, লুটপাট ও ধর্ষণ করেছে। অনেকে যুদ্ধকালীন দুরবস্থার কারণে বাধ্য হয়েও রাজাকার হয়েছে। কিন্তু আল বদরের লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। তারা ছিল হিংস্র ও নিষ্ঠুর। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছে।’’
ক. মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটিতে সদস্য হিসেবে কারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন?
খ. মুজিবনগর সরকার গঠনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
গ. ‘‘রাজাকারদের সাথে আল বদরদের খানিকটা তফাৎ ছিল।’’ উদ্দীপকের আলোকে এ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর মুষ্টিমেয় কিছু লোক স্বাধীনতাবিরোধী হলেও অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।

🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুক্তিযুদ্ধকালীন সেপ্টেম্বর মাসে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (ন্যাপ-ভাসানী), কমরেড মনি সিং (বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পাটি), মনোরঞ্জন ধর (বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস), অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ (ন্যাপ মোজাফফর) এবং আওয়ামী লীগ থেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহম্মদসহ মোহাম্মদ তোয়াহা (পূর্ব পাকিস্তান, কমিউনিস্ট পার্টি) মতিন আলাউদ্দিনকে (পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি) নিয়ে মোট ৯ জন সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে এ কমিটির আহবায়ক ছিলেন মুজিবনগর সরকারে প্রধানমন্ত্রী। তাজউদ্দিন আহমদ।

খ. গুরুত্ব স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্ভবের পক্ষে মুজিবনগর সরকার গঠনের অপরিসীম। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ সরকার সুনির্দিষ্টভাবে নেতৃত্ব ও নির্দেশনা দেয়। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এ সরকার বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ও সমর্থন লাভ করতে সমর্থ হয়। যার ফলে মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে দ্রুত বিশ্বজনমত গড়ে ওঠে। এ সরকার গঠনের ফলে বাঙালিরা সংগ্রামী চেতনায় ও নব আশায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং এ সরকার বাঙালি জনগণের আশা-আকাঙ্কার প্রতীকে পরিণত হয়। এসব কারণেই মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম।

গ. ১৯৭১ সালে বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় 'আল বদররা' ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে এ আল বদর বাহিনী গঠিত হয়। এ বাহিনী ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও হিংস্র প্রকৃতির। এদের প্রধান দায়িত্ব ছিল বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যা। অপরপক্ষে, রাজাকাররা সামগ্রিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধিতা করেছে, সংঘর্ষ হলে খুন করেছে, লুটপাট ও ধর্ষণ করেছে। আবার অনেকেই যুদ্ধকালীন দুরবস্থার কারণে বাধ্য হয়েও রাজাকার হয়েছে। কিন্তু এ রাজাকাররা আল বদরদের ন্যায় বাঙালি জাতির প্রাণ বুদ্ধিজীবীদেরকে নৃশংস ও নিষ্ঠুর হত্যায় লিপ্ত হয়নি। যদিও উভয়ই বাংলার জনগণের নিকট জঘন্যতম শত্রু হিসেবে আজও পরিচিত।

ঘ. বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ মুক্তিযুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু লোক স্বাধীনতাবিরোধী হলেও অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। এ অধিকাংশ লোকের মধ্যে নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকলেই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দেন এবং ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার যে ঘোষণা প্রদান করেন, সে ঘোষণার মাধ্যমে বাংলার অধিকাংশ মানুষই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে এবং দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার পাশাপাশি যুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। মুক্তিযুদ্ধে অধিকাংশ মানুষেরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যোগায় এবং শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যদিও সেসময় মুষ্টিমেয় লোক স্বাধীনতাবিরোধী ছিল কিন্তু তারা অধিকাংশ বাঙালির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণকে পরাজয় বরণ করাতে পারেনি। যার ফলে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ফলে বিশ্ব মানচিত্রে আসন লাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

৭. স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের ওপর টেলিভিশনে একটি নাটক হচিছল। এ নাটকে নিয়মিত বাহিনীর সাথে অনেক অনিয়মিত বাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। বীরত্বের সাথে উভয়ে যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জন করে।
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন?
খ. মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর পরিচয় দাও।
গ. উদ্দীপকে দেখানো ঘটনার সাথে পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার মিল আছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বিভিন্ন বাহিনী যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে একইভাবে পাঠ্যবইয়ে যৌথ বাহিনীর যুদ্ধ পরিচালনার ঘটনা বিশ্লেষণ কর।


🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সবার্ধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

খ. মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টরের বাইরে আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব বাহিনী গড়ে ওঠে সেগুলোকে এক কথায় মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গেরিলা বাহিনীর মধ্যে টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনী, ময়মনসিংহের আফসার ব্যাটালিয়ন বাহিনী, সুন্দরবনের জিয়া বাহিনী অন্যতম। এছাড়াও ঢাকা শহরের গেরিলা বাহিনীর নাম ছিল। ক্র্যাক পস্নাটুন। এসব গেরিলা বাহিনী সার্বক্ষণিকভাবে চোরাগুপ্তা হামলার মাধ্যমে পাকবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।

গ. উদ্দীপকে দেখানো ঘটনার সাথে পাঠ্যবইয়ের মুক্তিযুদ্ধের নিয়মিত ও অনিয়মিত বাহিনীর প্রতিষ্ঠার ঘটনার সাথে মিল আছে। মুক্তিবাহিনী সরকারি পর্যায়ে দুটি শাখায় বিভক্ত ছিল-১. নিয়মিত বাহিনী ও ২. অনিয়মিত বাহিনী।
১. নিয়মিত বাহিনী : ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইউনিটগুলোর বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। সরকারিভাবে এদের নামকরণ করা হয় এম. এফ. (মুক্তিফৌজ)। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনীও গড়ে তোলে।
২. অনিয়মিত বাহিনী : ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, কৃষক ও সকল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে অনিয়মিত বাহিনী গঠিত হয়। এ বাহিনীর সরকারি নামকরণ ছিল 'গণবাহিনী' বা এফ. এফ. (ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা)। তাদের নিজ নিজ এলাকায় গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হতো। এছাড়া ছাত্রলীগের বাছাইকৃত কর্মীদের নিয়ে গঠিত হয় 'মুজিববাহিনী।' কমিউনিস্ট পার্টি ন্যাপ (মোজাফফর), ন্যাপ (ভাসানী) ও ছাত্র ইউনিয়নের আলাদা গেরিলা দল ছিল।
সেক্টর এলাকার বাইরে আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব বাহিনী গড়ে ওঠে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচেছ- কাদেরিয়া বাহিনী (টাঙ্গাইল), আফসার ব্যাটালিয়ন (ভালুকা, ময়মনসিংহ), বাতেন বাহিনী (টাঙ্গাইল), হেমায়েত বাহিনী (গোপালগঞ্জ, বরিশাল), হালিম বাহিনী (মানিকগঞ্জ), আকবর বাহিনী (মাগুরা), লতিফ মীর্জা বাহিনী (সিরাজগঞ্জ, পাবনা) ও জিয়া বাহিনী (সুন্দরবন)। এছাড়া ছিল ঢাকার গেরিলা দল, যা 'ক্র্যাক পস্নাটুন' নামে পরিচিত। ঢাকা শহরের বড় বড় স্থাপনা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হোটেল শেরাটন (পূর্বের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল), ব্যাংক ও টেলিভিশন ভবনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় ঢাকার গেরিলারা। এভাবে তারা পাকিস্তানি সেনা ও সরকারের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করে।

ঘ. উদ্দীপকে বিভিন্ন বাহিনী যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, একইভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যৌথ বাহিনীও বীর বিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করে।
নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নভাবে প্রবেশ করতে থাকে। ১৩ নভেম্বর ট্যাংকসহ দুই ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সৈন্য যশোরে ঘাঁটি স্থাপন করে। পাকিস্তান বাহিনী ১৯ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে আকাশ অভিযান করলেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। ২১ নভেম্বরও পাকিস্তান বাহিনী ব্যর্থ হয় এবং ৩ ডিসেম্বরের পূর্ব পর্যন্ত তারা আক্রমণের সাহস পায়নি। ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারত সরকার মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ কমান্ড গঠন করে।
সেনাবাহিনী ছাড়াও ভারতীয় বিমান, নৌ ও যুদ্ধজাহাজ এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় যুদ্ধে ক্ষিপ্রতা লাভ করে। যৌথ কমান্ড গঠনের পর ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারি করেন। তিনি বক্তৃতায় বলেন, ‘পাকিস্তান বৈদেশিক আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে এবং দেশে জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপমহাদেশের পরিস্থিতি জানিয়ে জরুরি বার্তা পাঠান। ২৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট যেকোনো সময় বড় ধরনের যুদ্ধের ইঙ্গিত দেন।।
এরূপ অবস্থায় ৩ ডিসেম্বর ভারতীয় বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী অতর্কিতে হামলা চালালে শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। যৌথ কমান্ডের বাংলাদেশ সীমান্টে আক্রমণের পাশাপাশি চালানো হয় বিমান হামলা। ওই দিনই পাকিস্তান বাহিনীর ৩টি মিরেজ, ২টি এফ-১০৪ স্টাফ ফাইটারসহ ৩৩টি বিমান ভূপাতিত হয়। পূর্ব সীমান্টে কামালপুর ঘাঁটির পতন ঘটানোসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের ওপর মিত্রবাহিনীর নৌবহর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। প্রথম থেকেই যৌথ বাহিনীর লক্ষ্য ছিল ঢাকা দখল করে পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের নিয়মিত ও অনিয়মিত বাহিনীর মতো যৌথবাহিনীও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ফলে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় সুনিশ্চিত হয়।

৮. বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য দ্বারা একটি সরকার গঠন করা হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে। উক্ত সরকারের উদ্দেশ্য ছিল দেশের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করা। এ সরকারের মোট ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল।
ক. মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী কে ছিলেন?
খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দাও।
গ. উদ্দীপকে পাঠ্যপুস্তকের যে সরকার ও তার কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. তুমি কি মনে কর এ ধরনের একটি সরকার গঠনের পরই উক্ত দেশে শুরু হয়েছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন এম. মনসুর আলী।

খ. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের অবদান ছিল অপরিসীম। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি ছিল ছাত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছাত্ররা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া কিশোররাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যায়। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী বাংলাদেশ সরকার ছাত্র-যুবকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের সংস্থান করে। কিছুদিনের প্রশিক্ষণ ও হালকা অস্ত্র নিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিসেনার দল।

গ. উদ্দীপকে পাঠ্যপুস্তকের মুজিবনগর সরকার ও তার কার্যক্রমের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে। কেননা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করাই ছিল এ সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য।
১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য দ্বারা ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি; সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন। বাঙালি কর্মকর্তারা সরকারের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করেন। এতে মোট ১২টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ছিল। এগুলো হচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ, তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, কৃষি বিভাগ এবং প্রকৌশল বিভাগ। মুজিবনগর সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন করে। এসব মিশন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। তাছাড়া যুদ্ধের কৌশল হিসেবে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি সেক্টরেই নিয়মিত বেনা, গেরিলা ও সাধারণ যোদ্ধা ছিল। এরা মুক্তিযোদ্ধা নামে পরিচিত। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে যোদ্ধাগণ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি সামরিক আস্তানায় হামলা চালায়। এবং এর মধ্যে অনেকে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিল।

ঘ. 'হ্যাঁ' আমি মনে করি, এ ধরনের একটি সরকার গঠনের পরই উত্ত দেশে অর্থাৎ বাংলাদেশে চূড়ান্ত পর্যায়ে শুরু হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ সরকার ছিল মুজিবনগর সরকার। এর গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বজনমত সৃষ্টি ও যুদ্ধ পরিচালনা। পূর্ব পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। স্বাভাবিক কারণেই মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা মতভেদ দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলোর বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকলেও একটি অংশ বিরুদ্ধে ছিল। অন্যদিকে, পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো কেবল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছে তাই নয়, তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অত্যাচার, নির্যাতন ও গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বকারী রাজনৈতিক দল হলো আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিনকে প্রধানন্ত্রী করে গঠিত প্রথম বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট যোগ্যতা, দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সমমনা বাম রাজনৈতিক দলসমূহ নিয়ে আওয়ামী লীগ একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে। এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মনি সিং, মনোরঞ্জন ধর, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ এবং আওয়ামী লীগ থেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও পররাষ্ট্রন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ। পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা এদেশের জনগণকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ করেছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, নারী, কবি, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ মুক্তির সংগ্রামে শামিল হয়।

৯. মি. 'ক' আজ অনেক খুশি। তার বড় ছেলে মি. 'খ' সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করেছে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজ এলাকার অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। অথচ 'ক' ও এক সময় সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করেছিলেন যখন একমাত্র লক্ষ্য ছিল হানাদার বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করা। আর এ কাজে বিশেষ সহায়তা করতে গঠিত হয়েছিল অনিয়মিত বাহিনী।
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় আকবর বাহিনী কোন অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল?
খ. মুক্তিযুদ্ধের সময় পত্র-পত্রিকার অবদান ব্যাখ্যা কর।
গ. মি. 'ক' যে সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তার কর্মকান্ড কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মি. 'ক'-এর স্মরণীয় অনিয়মিত বাহিনী ছিল প্রকৃত অর্থেই অনিয়মিত-মুক্তিযুদ্ধের আলোকে যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় আকবর বাহিনী মাগুরা জেলায় গঠিত হয়েছিল।

খ. মুক্তিযুদ্ধের সময় পত্র-পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য। বিদেশি সাংবাদিক সাইমন ড্রিং নিজের জীবন বিপন্ন করে পাকিস্তানি বাহিনীর লোমহর্ষক নির্যাতন ও গণহত্যার কথা ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রেরণ করেন। এটি ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয়। ২৯ মার্চ দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড লিখেছিল বেসামরিক মৃতের সংখ্যা দশ হাজার না এক লক্ষ তা আমাদের জানা নেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে সর্বপ্রথম দৈনিক 'জয় বাংলা' নামে পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এটি ছিল মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইত্তেফাক পত্রিকা অফিসসহ বহু পত্রিকা অফিসে হামলা চালায় এবং বন্ধ করে দেয় প্রকাশনা। তখন ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হতে শুরু করে যা জনমত গঠনে বিশেষ অবদান রাখে।

গ. মি. 'ক' যে সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তা হচ্ছে মুজিবনগর সরকার যা গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল এবং শপথ নেন ১৭ এপ্রিল। এ সরকারের কর্মকান্ড ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার স্বাধীনতাকামী জনতা প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহের আশায় ভারতে ভিড় জমালে মুজিবনগর সরকার তাদের যাচাই-বাছাই করে ভারতীয় ও বাংলাদেশি সেনাবাহিনী দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। তাদের অস্ত্র দিয়ে বাংলাদেশের যুদ্ধের ময়দানে পাঠায়। মুক্তিযুদ্ধকে সুসংহভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শক্রমে মুজিবনগর সরকার যুদ্ধক্ষেত্রকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এবং সংগ্রামী জনগণের মনোবল ঠিক রাখার জন্য 'মুজিবনগর সরকার' স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালায়। স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্রের দেশাত্মবোধক গানগুলো এবং 'চরমপত্র' অনুষ্ঠানটি মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। মুজিবনগর সরকার নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একটি বেসরকারি প্রশাসন গড়ে তুলেছিল। মুজিবনগর সরকার কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক ও স্টকহোমসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সরকারের মিশন স্থাপন এবং ঐ সব স্থানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি নিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। মুজিবনগর সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশ্বে বিশেষ দূত নিয়োগ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্বনেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে।
সুতরাং মি. 'ক' যে সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তার কর্মকান্ড বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

ঘ. মি. 'ক'-এর স্মরণীয় অনিয়মিত বাহিনী যা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত হয়েছিল তা প্রকৃত অর্থেই ছিল অনিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুবক, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও সকল পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন সেক্টরের অধীনে এ বাহিনীর সরকারি নামকরণ ছিল গণবাহিনী বা এফ.এফ. (ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা)। এ বাহিনীর সদস্যদের দু সপ্তাহের প্রশিক্ষণের পর একজন কমান্ডারের অধীনে তাদের নিজ নিজ এলাকায় যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হতো। এ বাহিনীর জন্য কোনো সামরিক আইন কার্যকর ছিল না। অনিয়মিত বাহিনীর সদস্যদের কোনো বেতনভাতা দেওয়া হতো না। অনিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার। উল্লিখিত বাহিনীর বাইরে আরও কয়েকটি অনিয়মিত বাহিনী ছিল। মূলত স্থানীয় ভিত্তিতে ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে এসব গেরিলা বাহিনী গঠিত ছিল। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে শেখ ফজলুল হক মনির নিয়ন্ত্রণাধীনে গঠিত হয় মুজিব বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যদের সকলে ছাত্রলীগের সদস্য। তন্মধ্যে আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, আ স ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখেরা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেন। মুজিব বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ৬০০০। এছাড়া ন্যাপ (মোজাফফর) কমিউনিস্ট পার্টির নিজস্ব দলীয় বাহিনী ছিল। এসব বাহিনীর পাশাপাশি কাদেরিয়া বাহিনী (টাঙ্গাইল), আফসার ব্যাটালিয়ন (ভালুকা-ময়মনসিংহ), বাতেন বাহিনী (টাঙ্গাইল), হেমায়েত বাহিনী (গোপালগঞ্জ বরিশাল), হালিম বাহিনী (মানিকগঞ্জ), আকবর বাহিনী (মাগুরা) ও জিয়া বাহিনী (সুন্দরবন)। এসব বাহিনীর কর্মকান্ড ছিল স্বেচ্ছাসেবক, স্বল্প প্রশিÿণপ্রাপ্ত। কাগজে-কলমে তারা সেক্টর কমান্ডার দ্বারা পরিচালিত হলেও বাস্তবে এরা এলাকাভিত্তিতে নিয়ন্ত্রিত হতো। সুতরাং সার্বিকভাবে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত অনিয়মিত বাহিনী ছিল। প্রকৃত অর্থেই অনিয়মিত। অর্থাৎ উক্তিটি যথার্থ ও অর্থবহ।

১০. ইভা রহমান একজন স্বনামধন্য লেখিকা। সম্প্রতি তার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'সংগ্রামী জীবন' বেশ সাড়া জাগিয়েছে পাঠকদের মাঝে। উক্ত উপন্যাসে জোনাল কাউন্সিলের গঠনে সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলো যেন দেশপ্রেমের এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।
ক. কখন বিমান বাহিনী গঠিত হয়?
খ. মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান আত্মসমর্পণকেই একমাত্র পথ। হিসেবে বেছে নেয় কেন?
গ. ইভা রহমানের উপন্যাসে স্থান পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের আলোকে সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি কীভাবে গঠিত হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের 'সংগ্রামী জীবন' উপন্যাসে উল্লিখিত জোনাল কাউন্সিল পাঠকদের গণতান্ত্রিক মানসিকতাকে বিশেষ ভাবে নাড়া দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয়।

খ. যৌথবাহিনীর ঢাকার উপকণ্ঠে আগমন ও ভারতীয় বিমান বাহিনীর ঢাকা আক্রমণের দরুন ১৪ ডিসেম্বর গভর্নর মালিকের নেতৃত্বাধীন সরকার পদত্যাগ করে। এ সময় পাকিস্তানি শাসক ও সৈন্যরা বুঝতে পারে, বাংলাদেশ দখলে রাখা তাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জাতিসংঘে একের পর এক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পেশ করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৪ ও ৫ ডিসেম্বর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ভেটো দেয়। জাতিসংঘে যখন প্রস্তাব, পাল্টা প্রস্তাব, ভেটো চলছিল তখন বাংলাদেশে রণাঙ্গনে চলছিল তুমুল যুদ্ধ এবং পাকিস্তানি বাহিনী চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ঢাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘ কোনো রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তান জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশ সমস্যা সমাধান তাঁর অনুকূলে পাওয়ার আশা ত্যাগ করে এবং আত্মসমর্পণকেই একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেয়।

গ. ইভা রহমানের উপন্যাসে স্থান পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের আলোকে সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়েছিল ৯ জন সদস্যকে নিয়ে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বদলীয় চরিত্র দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) উদ্যোগে ৯ সদস্যবিশিষ্ট সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (ন্যাপ ভাসানী), মণি সিংহ (বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি), মনোরঞ্জন ধর (বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেস), অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (ন্যাপ মোজাফফর) এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ থেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদসহ আরও ৩ জন প্রতিনিধি মোহাম্মদ তোয়াহা (পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি) এবং মতিন- আলাউদ্দিনকে (পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি) নিয়ে সর্বমোট ৯ জন সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ছিলেন এ উপদেষ্টা কমিটির আহবায়ক। এ উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্যকোনো প্রকারে রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণযোগ্য হবে না।

ঘ. উদ্দীপকের 'সংগ্রামী জীবন' উপন্যাসে উল্লিখিত জোনাল কাউন্সিল পাঠকদের গণতান্ত্রিক মানসিকতাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বেসামরিক প্রশাসনকে অধিক গণতান্ত্রিক করার জন্য বাংলাদেশের আঞ্চলিক সুবিধা চিন্তা করে সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ৯টি অঞ্চল এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১১টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। প্রতিটি জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানের জন্য আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ গঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের প্রশাসনিক পরিষদের সদস্য করে তাদের ভোটে নির্বাচিত একজন করে চেয়ারম্যানকে পরিষদের প্রধান করা হয়। সরকার হতে চেয়ারম্যানের অধানে একজন করে সচিব নিযুক্ত করা হয়। একই সাথে প্রতিটি জোনে সরকার হতে ৭ জন করে কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় তাদের বিভাগীয় কাজ সম্পাদন করতে। কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা ছিল-
১. আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,
২. শিক্ষা কর্মকর্তা,
৩. ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা,
৪. প্রকৌশল কর্মকর্তা ও
৫. হিসাব বিভাগীয় কর্মকর্তা।

প্রতিটি আঞ্চলিক জোনে ৫টি উপ-পরিষদ গঠিত হয়-
১. অর্থ উপ-পরিষদ,
২. ত্রাণ উপ-পরিষদ,
৩. স্বাস্থ্য উপ-পরিষদ,
৪. প্রচার উপ পরিষদ ও
৫. শিক্ষা উপ-পরিষদ।

প্রয়োজনে আরও উপ-পরিষদ। গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রতিটি উপ-পরিষদ গঠনের বিধান হয়। আঞ্চলিক পরিষদ হতে ন্যূনতম ৩ জন ও ঊর্ধ্বে ৭ জন সদস্য নিয়ে। সদস্যরা তাদের মধ্য হতে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। জোনাল অফিসার বা কর্মকর্তাদের সচিব করা হয়। প্রতিটি জোনে সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি আঞ্চলিক উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post