HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

 ইতিহাস 
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬

HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি

ষষ্ঠ অধ্যায় : বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ

১. ১৯৬৪ সাল থেকে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা পৃথক রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। কিন্তু ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে তারা সফল হতে পারেনি। ১৯৮২ সালে তারা তিউনিশিয়ার রাজধানী তিউনিশে সদর দপ্তর স্থাপন করেন। প্রবাস থেকেই তারা তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক. পাক সেনাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রথম কোন বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলে?
খ. বুদ্ধিজীবী হত্যা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দপ্তরের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কোন দপ্তরের মিল আছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন উক্ত দপ্তরের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ছিল? তোমার মতামত দাও।

🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. পাকসেনাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ বাহিনী প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

খ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে স্বনামধন্য শিক্ষকবৃন্দকে হত্যা করে। আবার ১৪ ডিসেম্বর এদেশীয় আলবদর বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক ও আইনজীবীসহ খ্যাতিমান সাংবাদিককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যে হত্যাকান্ড সংঘটিত করে তাই বুদ্ধিজীবী হত্যা। জ্ঞানী-গুণীদের হত্যা করে পাকিস্তানিরা এদেশকে জ্ঞানশূন্য করতে চেয়েছিল। প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর আমরা বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে থাকি।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দপ্তরের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে গড়ে ওঠা প্রবাসী সরকারের দপ্তরের মিল আছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বদ্যনাথতলার ভবেরপাড়া গ্রামকে মুজিবনগর নামকরণ করে সেখানে গড়ে ওঠে মুজিবনগর সরকার। এদিকে ২৫ মার্চের রাত থেকে পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক বাঙালি জাতি আক্রান্ত হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ যুদ্ধও জোরদার হয়। কিন্তু ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করার দু'ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান বিমান বাহিনী মুজিবনগরে বিমান হামলা করে এবং সেনাবাহিনী তা দখল করে নেয়। এমন এক পরিস্থিতিতে মুজিবনগর সরকার ভারতের কলকাতায় চলে যায় এবং ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে সরকারের সচিবালয় গড়ে তোলা হয়। প্রবাসী সরকার সেখানে থেকেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। তাছাড়া বিশ্ব জনমত গঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক মিশন স্থাপন ইত্যাদি কার্যাবলি কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোড থেকেই পরিচালিত হয়। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।

ঘ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জন্য এক অহংকার। কেননা, নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শেষে আমরা অর্জন করি আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ রাতে পাক সেনাবাহিনী অতর্কিতে বাঙালি জাতির ওপর এক নৃশংস আক্রমণ পরিচালনা করে। রাত গভীরে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাছাড়া ২৬ মার্চ থেকেই যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে দেয় বাঙালিরা। আর ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় ভবেরপাড়া গ্রামটিকে মুজিবনগর নামকরণ করে সেখানে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণের দুর্ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানকে তাদের বিমান বাহিনী মুজিবনগরে বোমা হামলা করে এবং সেনারা স্থানটিকে তাদের দখলে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রবাসী সরকার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে সচিবালয় গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন উক্ত দপ্তরের প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিসীম। কেননা, তখনকার বাস্তবতায় এ সরকার দেশের ভেতরে যেখানেই দপ্তর স্থাপন করতেন সেখানেই পাকসেনারা তা গুঁডw়য়ে দিতো। কাজেই এখানে নিরাপত্তার বিষয়টিকে কোনো অবস্থাতেই খাটো করে দেখার মতো নয়। এক্ষেত্রে কলকাতায় স্থাপিত দপ্তরটি ছিল শতকরা একশো ভাগ নিরাপদ। আর দপ্তর নিরাপদ না হলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা এবং আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলা প্রবাসী সরকারের পক্ষে কখনও সম্ভব হতো না। তা সম্ভব না হলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম কি পেতাম না তাও অনিশ্চিত ছিল।
অতএব, উক্ত দপ্তরের প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিসীম।

২. জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি নির্মলেন্দু গুণ এক অনুষ্ঠানে বারোটি মাসের মধ্যে মার্চ মাসকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বহু কারণে মার্চ মাস বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
ক. কত সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়?
খ. পাইক বিদ্রোহের স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মাসটির প্রথম সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘প্রকারান্তরে এ মাসের প্রথম থেকেই মুক্তি সংগ্রামের শুরু’ - উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়।

খ. উড়িষ্যায় ১৮১৭ সালের পাইক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। পাইকরা বিদ্রোহী হয়ে বাহারামপুরের পুলিশ ঘাঁটি ও সরকারি কার্যালয়গুলোর ওপর আক্রমণ চালায় এবং প্রায় ১০০ ইংরেজকে হত্যা করে। বিদ্রোহীরা শহরের সরকারি বাড়িগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং সরকারি খাজাঞিখানা লুট করে। ফলে কিছুদিনের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় উড়িষ্যায় ইংরেজ শাসন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মাসটির প্রথম সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ দিনটি হচেছ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। দিনটির তাৎপর্য ব্যাপক। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তালবাহানার আশ্রয় নিলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু একদিকে পাকিস্তানের শোষণ, অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি কর্মসূচি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ এবং প্রয়োজনে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে তাদের মোকাবিলার নির্দেশ দেন। এমনকি, তিনি শর্তসাপেক্ষে বাংলা ও বাঙালি জাতির মুক্তি তথা স্বাধীনতার কথাও ঘোষণা করে তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে। অতএব উদ্দীপকে উল্লিখিত মাসটির প্রথম সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ দিনটি অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দিনটি তাৎপর্য ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।

ঘ. ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরদিন সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদেশে স্কুল, কলেজ, অফিস আদালত ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাগণ অফিস-আদালত বর্জন করে গণআন্দোলনে যোগ দেন।
সামরিক আইন জারি করেও ১০ মার্চ কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। বরং পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইয়াহিয়া খান অনেকটা তাৎক্ষণিকভাবে টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ করেন। এদিকে এখানে অফিস-আদালত বন্ধের সাথে সাথে খাজনা ও অন্যান্য কর আদায় বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অসহযোগ আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে সামরিক বাহিনী ছাড়া সমগ্র জনতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনকে সমর্থন করে। আর এ অসহযোগ আন্দোলনের ভিতর দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। অতএব, প্রকারান্তরে ৭ মার্চের ভাষণ থেকে মুক্তি সংগ্রামের ডাকত উক্তিটি যথার্থ।

৩. বর্তমান বিশ্ববাসী শান্তি চায়। কোনো পরিস্থিতিতেই তারা যুদ্ধকে মেনে নিতে চায় না। কিন্তু ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমরা দেখেছি ইসরাইল একটি গৌণ বিষয়কে কেন্দ্র করে গাজাতে অমানবিক হামলা চালায়। এতে প্রায় কয়েক হাজার নিরস্ত্র, অসহায় ফিলিস্তিনি নারী, শিশু, পুরুষ নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে। অনেক রক্তক্ষয়ের পর অবশ্য ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের সাথে একটি চুক্তি করতে সম্মত হয়। বন্ধ হয় গণহত্যা।
ক. আগরতলা মামলার প্রধান আসামী কে ছিলেন?
খ. প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কেন গঠিত হয়েছিল?
গ. ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার সাথে ১৯৭১ সালের কোন ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ইসরায়েলি বর্বরতার উত্তরে ফিলিস্তিনিদের কর্মকান্ডের সাথে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের কর্মকান্ডের তুলনামূলক আলোচনা কর।

🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. আগরতলা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর) গঠন করা হয়। মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল এবং শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। মূলত এ সরকার গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য। তাছাড়া আইনগত দিক দিয়ে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতেও এ সরকার গঠনের প্রয়োজন ছিল।

গ. উদ্দীপকের ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার সাথে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে।
পাঠ্যবই হতে আমরা জানতে পারি, জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়কে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র, নিরীহ, স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনগণের ওপর হামলা করে এবং নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। একইভাবে দেশের অন্যান্য জায়গায় গণহত্যা শুরু করে পাকহানাদার বাহিনী। মাস কয়েকের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে প্রবেশ করে ব্যাপকভাবে অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা, লুটতরাজ ও নারী নির্যাতন চালাতে থাকে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এ হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ এবং নারী নির্যাতন মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস ধরে চলতে থাকে। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বমুহূর্তে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৬ মার্চ থেকে বাঙালি সামরিক জওয়ান, অফিসারগণের পাশাপাশি বাংলার সর্বত্র আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও কর্মিগণ তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করে যা আধুনিক বাংলার ইতিহাসে ‘মুক্তিযুদ্ধ' নামে পরিচিত। এ সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গড়ে তোলে, যারা হানাদার বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যায় শরিক হয়। সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দোসর আলশামস ও আলবদর বাহিনী অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার সাথে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. ইসরায়েলি বর্বরতার উত্তরে ফিলিস্তিনিদের কর্মকান্ডের সাথে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের কর্মকান্ডের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইসরাইল একটি গৌণ বিষয়কে কেন্দ্র করে গাজাতে অমানবিক হামলা চালায়। এতে প্রায় কয়েক হাজার নিরস্ত্র, অসহায় ফিলিস্তিনি নারী, শিশু, পুরুষ নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে। ব্যাপক রক্তক্ষয়ের পর ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের সাথে একটি চুক্তি করতে সম্মত হয়। ফলে গণহত্যা বন্ধ হয়। অপরদিকে, মুক্তিযুদ্ধে ২৫ মার্চের রাত থেকে হিংস্রপরায়ণ পাকিস্তান বাহিনী সারাদেশে ধ্বংসলীলা ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে বাংলার সামরিক জওয়ান ও অফিসারগণ প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। সেই সাথে বাংলার নগর, গ্রাম, বন্দর, থানা, জেলা সদর দপ্তর সর্বত্র আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও কর্মিগণ ২৬ মার্চ থেকে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করে যা মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি পায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজের ছাত্র, শ্রমজীবী মানুষ, ব্যবসায়ী সকলেই এ সামরিক প্রশিক্ষণে যোগ দেন। বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসলীলা বন্ধের জন্য এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ এবং একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে যোদ্ধাগণ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি সামরিক আস্তানায় হামলা চালায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাগণ মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে দেশকে পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত করার জন্য রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন এবং সবশেষে ভারতের সার্বিক সহায়তায় স্বাধীনতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্সের ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাঙালি নিধনের সমাপ্তি ঘটে। অর্থাৎ ইসরায়েলি বর্বরতার উত্তরে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধমূলক কর্মকান্ড ও মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের কর্মকান্ড- স্বাধীনতার স্পৃহাই প্রকাশ পেয়েছে এবং দুটো বিষয়ই উভয়পক্ষের চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে।

৪. ঘোষণাটি শোনামাত্র আকরাম সাহেব বেড়িয়ে পড়লেন একটি দা হাতে নিয়ে সোজা রাস্তার দিকে। রাস্তায় গিয়ে দেখতে পেলেন বন্ধু রুস্তম, আইনাল ও জববার হাতে বলস্নম, কাঁচি, সড়কি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তাদেরকে সাথে নিয়ে শহরের দিকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর আক্রমণ শুরু করলেন। কিন্তু বুলেটের সামনে বেশি সময় প্রতিরোধ টিকিয়ে রাখতে পারলেন না আকরাম সাহেব। তাই বাধ্য হয়ে পিছু হটলেন সেদিনকার মতো। তিনি দমবার পাত্র ছিলেন না বলেই কাছে যা অর্থ ছিল তাই দিয়ে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে যান গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে। দেশে ফেরার সময় হালকা একটি রাইফেলও পেতে সক্ষম হলেন। তারপর ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ করেছেন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়?
খ. মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান ব্যাখ্যা কর।
গ. আকরাম সাহেব ও তার বন্ধুদের ওপর মুক্তিযুদ্ধের ভাষণ কতটুকু প্রভাব রেখেছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'ঘোষণাটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ'- মুক্তিযুদ্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।

খ. মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিরা নানাভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন জানিয়েছে। প্রবাসীরা যেসব দেশে বসবাস করেন সেসব দেশের পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে ছুটে গিয়েছেন যেন তারা বাংলাদেশের পক্ষে সরকারের কূটনৈতিক ও অন্যান্য সহযোগিতা সৃষ্টি করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায় করতে প্রবাসী বাঙালিরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নিকট প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেন। পাকিস্তান সরকারকে অস্ত্র-গোলাবারুদ না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে অনুরোধ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটেনের প্রবাসী বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি সাহায্য সহযোগিতা করে।

গ. আকরাম সাহেব ও তার বন্ধুদের ওপর মুক্তিযুদ্ধের ভাষণ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ভাষণ সম্পূর্ণরূপে প্রভাব রেখেছে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণায় বলেছেন, ‘‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’’ এ ঘোষণা অনুযায়ী আকরাম সাহেব ও তার বন্ধু রুস্তম, আইনাল ও জববার বাড়িতে থাকা দা, বলস্নম, কাঁচি, সড়কি নিয়েই ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক যানের গতিরোধ করার চেষ্টা করে। সে চেষ্টায় সফলতা না পাওয়ায় আকরাম সাহেব নিজের পরিবারের প্রতি মায়া-মমতা ত্যাগ করে ঘরে থাকা অর্থ দিয়ে অনেক দূরের যাত্রা অতিক্রম করে ভারতে যান মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে। চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধে অবিচল থাকেন। স্বাধীনতা ঘোষণার প্রতিটি নির্দেশ তিনি জীবন বাজি রেখে মেনে চলেছেন। সুতরাং এটি সুস্পষ্ট যে, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাটি আকরাম সাহেব ও তার বন্ধুদের ওপর শতকরা এক শ ভাগ প্রভাব রেখেছিল।

ঘ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের দিবাগত রাত ১২-২০ মিনিটে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মূল ভাষণটি তিনি ইংরেজিতে দিলেও তার বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ-
"ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাচ্ছি যে, যে যেখানে আছেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রুখে দাড়ান সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করুন। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান।"
এ ঘোষণাটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাই ছিল না; বরং পাকিস্তানি আগ্রাসী বাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করার উদাত্ত আহবানও ছিল। ওই রাত গভীরে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর পাকসেনাদের গণহত্যা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ঘোষণার সাথে সাথে বাংলার আপামর জনতা আগ্রাসী হটানোর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে যা অনতিবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়।
তারপর যুদ্ধ চলে সুদীর্ঘ নয় মাস। মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে সার্বক্ষণিকভাবে অনুরণিত হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা। তিনি হয়ে উঠেন মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র অনুপ্রেরণা। তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়েই বীর মুক্তিযোদ্ধারা সুদীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কাজেই ‘এ ধরনের ঘোষণা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব ছিল না'।

৫. হাসিপুর গ্রামে গত মাসে বড় ধরনের ডাকাতি ঘটে যাওয়ার পর তারা এখন ডাকাত প্রতিরোধে সোচ্চার। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধদের সমন্বয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছে। এ দলটির বিভিন্ন ছোট ছোট গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে গ্রামের বিভিন্ন অংশে পাহারা দেয়। এ কাজে গ্রামের নারীরাও ভূমিকা রাখতে পিছিয়ে নেই। তারা সকালে, দুপুরে এমনকি বিকালেও কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাড়ির আশপাশে নজর রাখছে অপরিচিত লোকদের গতিবিধির ওপর। তবে কাজটির সফলতা অর্জনে গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ছাত্ররা বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ক. কত তারিখে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে?
খ. প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।
গ. হাসিপুর গ্রামের ডাকাত প্রতিরোধের সাথে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জনতার প্রতিরোধের কী সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ছাত্রদের ভূমিকা সর্বদাই গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের অংশগ্রহণের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।

খ. পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় সে সরকার গঠন করা হয়। তাকেই প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বলে। একে অস্থায়ী সরকারও বলা হয়। আবার বিপ্লবী সরকারও বলা হয়। তবে মুজিবনগর সরকার নামে বেশি পরিচিত। মুজিবনগর সরকার গঠন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল। মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। দেশি-বিদেশি ১২৭ জন সাংবাদিক ও কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেহেরপুর দখল করে নিলে মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তর কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে স্থানান্তরিত করা হয়। মূলত ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর) গঠন করা হয়।

গ. হাসিপুর গ্রামের ডাকাত প্রতিরোধের সাথে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জনতার প্রতিরোধের সাদৃশ্য রয়েছে। হাসিপুর গ্রামে ডাকাত প্রতিরোধে গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকল বয়সের নারী পুরুষ নজর রাখার দায়িত্ব পালন করছে। যে যেভাবে পারছে, যখন সময় পাচ্ছে তখনই অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে ডাকাত প্রতিরোধে নজরদারির কাজে মনোযোগ দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র, যুবক, নারী, কৃষক, রাজনৈতিক দলের কর্মী, সমর্থক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জীবন বাজি রেখে যোগদান করেন। প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সহজ ও সাফল্যময় করতে সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। এছাড়া ৬৪টি সাব সেক্টরসহ তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়। বাঙালি সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ, ইপিআর, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যগণ নেতৃস্থানীয় অবস্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সুতরাং সাদৃশ্য সুস্পষ্ট।

ঘ. ছাত্রদের অবদান সর্বদাই গৌরবোজ্জ্বল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ছাত্ররা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ স্কুল পড়yয়া কিশোরও অসীম মনোবল নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাঙালি ছাত্রসেনারা ভারতে যায়। ভারতীয়রা বাংলাদেশের ছাত্রদের অগ্রাধিকার দিয়ে যুদ্ধ করার বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ছাত্রদের প্রবল ইচ্ছা দেখে ভারতীয়রা হালকা অস্ত্র দিয়ে তাদেরকে যুদ্ধে পাঠায়। এসব ছাত্র নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দেশকে বাঁচাতে যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি রচনাকারী ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ ও ১৯৬৪ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের ১১ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্ররা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতা যুদ্ধেও ছাত্রদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। কেননা তারা পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছে। আবার দেশের জন্য আত্মাহুতিও দিয়েছে। সুতরাং উদ্ভিটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

৬. ফাহিম, আব্দুল্লাহ ও তৌফিক শহরে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর ধারালো অস্ত্রসহ হামলা চালায়। ফাহিম গুরুত্বর আহত হয়ে রাস্তায় এক মহিলাকে রিকশায় করে যেতে দেখে তাকে অনুরোধ করে যেন তিনি ফাহিমকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। কিন্তু মহিলাটি তাকে না নিয়েই চলে গেল। বড় অসহায় হয়ে ফাহিম, আব্দুল্লাহ ও তৌফিকের ন্যায় দৌড়ে আশ্রয় নেন প্রেসক্লাবে। সেখানে গণমাধ্যমের কর্মীরা তাদেরকে সব রকম সহযোগিতা প্রদান করেন। পরবর্তীতে শহরের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরাও তাদের সাথে চাঁদাবাজ নির্মূল করতে হাত মেলায়।
ক. ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী কখন জন্মগ্রহণ করেন?
খ. মুক্তিযুদ্ধে কৃষকের অবদান ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের নারীর আচরণের সাথে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারীদের আচরণের বৈসাদৃশ্য কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ফাহিম, আব্দুল্লাহ ও তৌফিকের প্রতি গণমাধ্যম ও পেশাজীবী শ্রেণির সহযোগিতা ছিল খুবই প্রশংসনীয়ত মুক্তিযুদ্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

খ. পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে কৃষকের অংশগ্রহণ ছিল অবিস্মরণীয়। দেশকে স্বাধীন করতে তারা নিজেদের পরিবার-পরিজন এবং নিজের জীবনের প্রতি মায়া-মমতা ত্যাগ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতাকামী কৃষকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসীম সাহস আর মনোবল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে কৃষকেরা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ব্যক্তিগত লাভক্ষতির হিসাব তারা কখনো করেন নি। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাইত মাতৃভূমির জন্য লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করা।

গ. উদ্দীপকের নারীর আচরণের সাথে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি নারীদের আচরণের বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। ফাহিম গুরুতর আহত হয়ে রিকশায় যাওয়া নারীর কাছে যানবাহনের সুবিধা চেয়ে নিরাশ হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নারীরা আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়ে, বিপদে পড়া মানুষকে খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছে। প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছে। এমনকি সম্মুখ যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছে। সুতরাং উদ্দীপকের নারীর সাথে মুক্তিযুদ্ধের নারীদের আচরণে বৈসাদৃশ্য সুস্পষ্ট।

ঘ. ফাহিম, আব্দুল্লাহ ও তৌফিকের প্রতি গণমাধ্যম ও পেশাজীবী শ্রেণির সহযোগিতা ছিল খুবই প্রশংসনীয়। তাদের সহযোগিতায় ফাহিম, আব্দুল্লাহ ও তৌফিক বিপদ থেকে রক্ষা পায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংবাদপত্র ও সংগীতের মাধ্যমে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখানো হতো। দেশাত্মবোধক গান সম্প্রচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যোগানো হতো। বিবিসি ও আকাশবাণী কলকাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর বহির্বিশ্বে সম্প্রচার হতো। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ কৃষক, শ্রমিক, উকিল, ডাক্তার, প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়িক লোক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারা সমাজের লোককে প্রভাবিত করেন মুক্তিযুদ্ধে সবকিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে। এসব পেশাজীবী মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়সহ সাহায্যের আবেদন করেন। তারা আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য দেন যেন বাঙালি জাতি যুদ্ধে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেয়। সুতরাং ফাহিম, আব্দুল্লাহ ও তৌফিকের প্রতি গণমাধ্যম ও পেশাজীবী শ্রেণির অবদান ছিল প্রশংসনীয়ত উক্তিটি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যথার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ।

HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

৭. শফিকের বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং নৌ ও সমুদ্রপথে যুদ্ধ করে শহিদ হয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতীয় খেতাব লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর আত্মত্যাগের ঘটনাটি ইতিহাসে দেশপ্রেমের এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। শফিকের বাবার মতো অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা আজও ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে বিবেচিত।
ক. মুক্তিযুদ্ধের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতীয় খেতাব কী?
খ. সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও কীভাবে সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ব্যাখ্যা কর।
গ. শফিকের বাবার দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে তুমি নিজেকে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে পারবে তা উল্লেখ কর।
ঘ. 'মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান'- এ উক্তিটির যথার্থতা যাচাই কর।

🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুক্তিযুদ্ধের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতীয় খেতাব হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ।

খ. ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে। যারা পেরেছে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, যারা পারে নি তারা বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে, গোপন তথ্য দিয়ে এদেশের আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। যারা দেশের বাইরে ছিলেন তারা বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন আদায় করেন। বাংলাদেশে অবরুদ্ধ পেশাজীবীরাও নানাভাবে গোপনে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবিগণ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে তারা বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এভাবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।

গ. শফিকের বাবা একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ছিলেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করে শহিদ হন। দেশের প্রতি তাঁর এ আত্মত্যাগ আমাকেও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছে। শফিকের বাবার মতো আমি যুদ্ধ করার সুযোগ পাই নি। কিন্তু আজ মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর পরে শফিকের বাবা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের ইতিহাস পড়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেছে। একইসাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেছে। শফিকের বাবার দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায় দেশের জন্য মানুষ কী করতে পারে। দেশের জন্য মানুষ জীবন দিতেও দ্বিধা করে না। শফিকের বাবার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারি। শোষণমুক্ত সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখতে পারি। এভাবে শফিকের বাবার দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আমি নিজেকে একই আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে পারি।

ঘ. মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময়েই বাঙালি জাতি। অর্জন করেছে তাদের কাঙি্ক্ষত স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরাই মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের অবদানের কারণেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। বিশ্বের মানচিত্রে সংযোজিত হয় একটি নতুন স্বাধীন ভূখন্ড। পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যের কারণে বাঙালিরা যখন বিক্ষুব্ধ, তখন নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হায়েনাদের আক্রমণ সমস্ত দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। অবশেষে পাকবাহিনী বাংলাদেশে নাজেহাল হয় এবং অর্জিত হয়। বিজয়। কিন্তু এর জন্য বহু মুক্তিযোদ্ধাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যারা বেঁচে আছেন তাঁদের অনেকে আজও পঙ্গু। দীর্ঘ নয় মাস প্রাণপণ লড়াই করে তাঁরা দেশকে স্বাধীন করেছেন। তাদের অবদানের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন, আজ আমরা মুক্ত। তাদের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ এদেশের মানুষ যুগ যুগ স্মরণ করবে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন না করলে আজও হয়ত আমরা পাকিস্তানিদের অধীনে থাকতাম। আজও হয়ত আমরা প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হতাম। দেশের স্বাধীনতার জন্য মক্তিযোদ্ধারা শৌর্যবীর্যের সর্বোচ্চ প্রমাণ রেখেছিল। স্বাধীনতার জন্য, দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেওয়ার নজিরবিহীন স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁরা। তাঁদের অবদানের জন্যই আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ। তাঁদের অবদানের জন্য বাঙালি আজ আত্মমর্যাদাশীল জাতি। তাই মুক্তিযোদ্ধারাই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান।

৮. তারামন বিবি ও সেতারা বেগম তারা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল। তারা দেশের মানুষের মুক্তির জন্য বিভিন্নভাবে শত্রুর মোকাবিলা করেছিল। নিজেদের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষের লোকজনকে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল। জাতি আজও তাদের এ অবদান ভুলে নি।
ক. মুজিবনগর সরকারের প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?
খ. মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতার ব্যাখ্যা দাও।
গ. তারামন বিবি ও সেতারা বেগম এর কর্মকান্ড মহান মুক্তিযুদ্ধে কাদের অবদান স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, উক্ত নারীরা ছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অবদান কম নয়ত মূল্যায়ন কর।

🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুজিবনগর সরকারের প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল (অব) এম.এ.জি ওসমানী।

খ. ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর অপকর্মে সহযোতা করেছিল এ দেশীয় কিছু দালালচক্র। ১৯৭১ সালের জুন মাসে লে. জেনারেল টিক্কা খান 'পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স' জারি করেন। শুরুতে আনসার, মুজাহিদদের নিয়ে এ বাহিনী গঠিত হয়। জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান দায়িত্ব ছিল আলবদর বাহিনীর ওপর। এ বাহিনী ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও হিংস্র প্রকৃতির। তাছাড়া আল শামস্ নামেও একটি স্বাধীনতা বিরোধী চক্র গড়ে এখানে। ওরা সম্মিলিতভাবে বাংলার মাটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহ সংঘটিত করে।

গ. তারামন বিবি ও সেতারা বেগমের কর্মকান্ড বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম থেকেই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, তাতে নারীদের বিশেষ করে। ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। দেশকে স্বাধীন করতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। যুদ্ধের নয় মাসে কয়েক লক্ষ মা-বোন পাকবাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়। তাঁদের বাঙালি জাতি সম্বোধন করেছেন ‘বীরঙ্গনা' বলে। এর বাইরে বিরাট সংখ্যক নারী; মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে, সেবা দিয়ে, নানাভাবে সহায়তা করেছেন। এমনকি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণের দৃষ্টান্তও কম নয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ দু'জন নারী ‘বীর প্রতীক' খেতাব অর্জন করেন। একজন তারামন বিবি, অন্যজন ডাক্তার সেতারা বেগম। সারা দেশে আরও অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকবাহিনীর মোকাবিলা করেছেন।

ঘ. বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবি ও সেতারা বেগমসহ অসংখ্য নারী ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিল। এ নারী শ্রেণি ছাড়াও বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষের অবদান মহান মুক্তিযুদ্ধে কম নয়। নিচে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অবদান মূল্যায়ন করা হলো-

ছাত্র : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের অবদান চিরস্মরণীয়। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি ছিল ছাত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছাত্ররা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়া কিশোররাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তারা অসীম সাহস ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শত্রুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

কৃষক : মুক্তিযুদ্ধে কৃষকদের অবদান ছিল অত্যন্ত গৌরবময়। স্বাধীনতা লাভের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে তারা প্রন্তুত ছিল। তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল যেকোনো মূল্যে স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।
গণমাধ্যম কর্মী : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের কর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম। সংবাদপত্র ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

প্রবাসী বাঙালি : মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধে তারা নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। বিভিন্ন দেশে তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তারা বিশ্ব জনমত গঠনেও অবদান রাখেন।

শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল খুবই প্রশংসনীয়। তারা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন।

জনসাধারণ : ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণের সাহায্য সহযোগিতা ও স্বাধীনতার প্রতি ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষার ফলেই মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব : বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবদান অপরিসীম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নানা অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করেছেন। রাজনীতিবিদগণ স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত জীবন বাজি রেখে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে গেছেন।

৯. একদিন রাত নয়টায় ঘরে টিভি দেখছিল দশম শ্রেণির ছাত্র মতিউর। সে একটি নাটকের দৃশ্যে দেখতে পেল, একটি দেশের জনগণ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কিন্তু দেশের প্রশ্নে সবাই এক এবং অভিন্ন। সকলে মিলে অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও যুদ্ধ করল এবং দেশকে শত্রুমুক্ত করল।
ক. কত তারিখে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে?
খ. ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন যুদ্ধের ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. তুমি কি মনে কর বিভিন্ন পেশার লোক উক্ত যুদ্ধের জয়কে সহজ করেছিল? মতামত দাও।

🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।

খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-শাসন, বঞ্চনার ইতিহাস, নির্বাচনে জয়ের পর বাঙালির সাথে প্রতারণা ও বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের পটভূমি তুলে ধরেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ ভাষণ এক স্মরণীয় দলিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব ঐতিহাসিক ভাষণের নজির আছে ৭ মার্চের ভাষণ তার অন্যতম।
পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষের নিকট এ ভাষণ অমর হয়ে থাকবে। ৭ মার্চের ভাষণ থেকে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা ও মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা পায়। এ ভাষণের পরেই বাঙালি জাতির সামনে একটি গন্তব্য নির্ধারণ হয়ে যায়, তা হলো স্বাধীনতা। তাই ৭ মার্চের ভাষণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিফলন ঘটেছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ চালালে বাঙালি ছাত্র, জনতা, পুলিশ, ইপিআর, সাহসিকতার সাথে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন রণাঙ্গনে শহিদ হন, আবার অনেকে গুলি খেয়ে পঙ্গু হন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের এ ঋণ কোনোদিন শোধ হবে না। জাতি চিরকাল মুক্তিযোদ্ধাদের সূর্য সন্তান হিসেবে মনে করবে। তারা ছিল দেশপ্রেমিক, অসীম সাহসী এবং আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ যোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের বাঙালিরা অংশগ্রহণ করে। তাই এ যুদ্ধকে ‘গণযুদ্ধ' বা জনযুদ্ধ বলা যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, পেশাজীবী, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকের মতো বিভিন্ন পেশার লোক মুক্তিযুদ্ধের জয়কে সহজ করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ছিল এক সর্বজনীন গণযুদ্ধ। ছাত্র-শিক্ষক, উকিল-চিকিৎসক, কৃষক-শ্রমিক, লেখক-শিল্পী, নারী, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে যারা দেশের বাইরে ছিলেন, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করে বাংলাদেশের জন্য সমর্থন আদায় করেন। বাংলাদেশে অবরুদ্ধ পেশাজীবীরাও গোপনে নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়েছেন। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাই জাতি চিরকাল মুক্তিযোদ্ধাদের সূর্য সন্তান হিসেবে মনে রাখবে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে শত্রুমুক্ত করার লক্ষ্যে মৃত্যুকে তুচ্ছ মনে করে যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তারা ছিল দেশপ্রেমিক, অসীম সাহসী এবং আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ যোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। তাই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, পেশাজীবী, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। উল্লিখিত আলোচনা থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জয়কে সহজ করেছিল।

১০. 'ক' ও 'খ' দুটি ভূখন্ড যেখানে ‘ক’ ভূখন্ডের সেনাবাহিনী ‘খ’ ভূখন্ডের জনগণের ওপর, বিভিন্ন স্থাপনার ওপর, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ধর্মের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। দীর্ঘ নয় মাসে ‘খ’ ভূখন্ডে সংঘটিত হয় এক বর্বর গণহত্যা।
ক. ছয় দফা আন্দোলন কত সালে সংঘটিত হয়েছিল?
খ. সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্পর্কে লেখ।
গ. 'ক' ভূখন্ডের সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হামলার লক্ষ্যবন্তুর সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘খ’ ভূখন্ডে সংঘটিত গণহত্যা হলো এক অপূরণীয় ক্ষতি- মুক্তিযুদ্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালে সংঘটিত হয়েছিল।

খ. সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) যশোদলের দামপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা নুরুন্নেসা খাতুন এবং পিতা সৈয়দ আব্দুল রহিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্সসহ এমএ পাস করার পর এলএলবি ডিগ্রিও লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লাগের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ৬ দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য অন্যতম একজন সংগঠক ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

গ. উদ্দীপকের 'ক' ভূখন্ডের সেনাবাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হামলার লক্ষ্যবন্তুর সাদৃশ্য রয়েছে। 'ক' ভূখন্ডের সেনাবাহিনী 'খ' ভূখন্ডের জনগণ, বিভিন্ন স্থাপনা, সভ্যতা-সংস্কৃতি ও ধর্মের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে। এ ধ্বংস চলে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো, শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে হত্যা করে। ঢাকার কচুক্ষেত, তেজগাঁও, ইন্দিরা রোড, ধানমন্ডি, কলাবাগান, ঢাকা বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় হানাদার বাহিনী। 'ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাদ পড়ে নি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, পত্রিকা অফিস, পেট্রোল পাম্পসহ সবকিছু। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে তারা নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংস লীলায় মেতে ওঠে। দু পাকিস্তানি সৈন্যরা গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের ভিতর দিয়ে বর্বরতা ও কাপুরুষতা প্রকাশ করে। সুতরাং সুস্পষ্টরূপে উভয় ধ্বংসযজ্ঞ সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. 'খ' ভূখন্ডে যে ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয় তা এক অপূরণীয় ক্ষতি। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছিল বি বাংলাদেশ ভূখন্ডে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ড. জ্যোতির্ময় গুহ বা ঠাকুরতাকে গুলি করে হত্যা করে। পুরাতন ঢাকা বিশেষ করে শাঁখারি বাজার, তাঁতি বাজার, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপক হত্যাকান্ড চালায়। চারদিকে চলে গণহত্যা আর হাহাকার। ঢাকার বাইরে গ্রামাঞ্চলেও পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা পরিচালিত করে। ৯ মাস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যায় ৩০ লাখেরও বেশি বাঙালি প্রাণ হারায়। আড়াই লাখেরও বেশি মা-বোন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিল্পী, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণকে হত্যা করে। এতে বাংলাদেশ বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে একটি দুর্বল দেশে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়। কুমিল্লা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সৈয়দপুর, সিলেটসহ দেশের সর্বত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ধ্বংসযঙ্গ চালায়। এত ব্যাপক ধ্বংস প্রকৃতপক্ষেই এক অপূরণীয় ক্ষতি।
সুতরাং উক্তিটি সঠিক ও তাৎপর্যময়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post