HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

 ইতিহাস 
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি

পঞ্চম অধ্যায় : পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত স্বাধীনতা আইনের ভিত্তিতে অবিভক্ত ভারতকে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত করেছিল। এই বিভাজনের মূলে ছিল মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহর ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব’। কিন্তু ১৯৪০ সালে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক কর্তৃক সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্যে একাধিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব লাহোরে গৃহীত হয়েছিল নানা কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রয়োজন হতো না। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে ১৯৪৮ সালের প্রথমদিকে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, যা চূড়ান্তরূপ লাভ করে ১৯৫২ সালে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪‘র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬‘র ছয়দফা আন্দোলন, ৬৯‘র গণ-অভ্যুত্থান,৭০‘র নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বলতম অধ্যায়।

ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষপট
১৯০৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সময় সংগঠনটির দাপ্তরিক ভাষা কি হবে তা নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পরবর্তী পর্যায় দেশ বিভাগের আগে আবার বাংলা বা উর্দু বিতর্ক শুরু হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিরা যেমন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রচারনা চালায় তেমনি বাংলার জনগণও বিশেষ করে লেখক, বুদ্ধিজীবী এটির বিরোধিতা করে এবং বাংলার পক্ষে প্রচারনা চালায়। গণ আজাদী লীগ, তমুদ্দন মজলিশ, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ প্রভৃতি সংগঠন সভা সেমিনারসহ সর্বত্র নানাবিধ প্রচারণা চালাতে থাকে।

পূর্ব বাংলা ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের বৈষম্যমূলক নীতিগ্রহণ করেছিল। অনেকেই পূর্ব বাংলার জনগনের প্রতি পাকিস্তানের এই আচরণকে ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন। অভ্যন্তরীণ ঊপনিবেশবাদে নিম্নোক্ত কতগুলো বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়।
১. অভ্যন্তরীণ ঊপনিবেশবাদে বিদেশী শক্তি জোরপূর্বক একটি ভূখন্ড বা সম্প্রদায়কে নানাদিক থেকে শোষণ ও নির্যাতনের নীতি গ্রহণ করে।
২. অভ্যন্তরীণ ঊপনিবেশবাদে প্রভূত্বকারী শক্তি জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে।
৩. তারা ক্ষমতা ব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবে প্রথম রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দখল করে।
৪. ঊপনিবেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের বদলে তাদের কাঁচামাল, সম্পদ পাচার করে নিজ দেশের বা অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটায়।
৫. উপনিবেশিক শক্তি দেশীয় মূল্যবোধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিসহ স্বকীয়তা ধ্বংস করে নিজেদের শিক্ষা, ভাষা, সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়।

রাজনৈতিক বৈষম্য
১. পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব অনুসারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা থাকলেও ১৯৪৭ সালে উল্লিখিত অঞ্চলসমূহ নিয়ে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়।

২. পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসন ও বাঙালির স্বার্থের প্রতি চরম অবহেলা করতে থাকে। পূর্ব বাংলার ৫৬% লোকের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জনসংখ্যা অনুসারে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে বাঙালিদের বঞ্চিত করা হয়।

৩. সংবিধান নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু ১৯৪৭ সালে নতুন রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা নিজ নিজ রাষ্ট্রে সংবিধান প্রণয়নের কথা থাকলেও পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৫৬ সালে। প্রায় নয় বছর সময় লেগেছিল একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে। এই সংবিধানের মাধ্যমে পূর্ব বাংলাকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামকরণ করা হয়। এই সংবিধানে সমস্ত ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানদের পশ্চিম পাকিস্তানিদের উপর নির্ভরশীল রাখা হয়।

৪. পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহেলা করতে থাকে। ১৯৫৪ সালে নির্বাচিত হয়েও তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।

৫. বাঙালি নেতৃবৃন্দের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র দারুণ অবহেলা ও নির্যাতন করতে থাকে। পাকিস্তান আমলে সিংহভাগ বাঙালি নেতা জেলখানায় বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। মৌলিক গণতন্ত্রের নামে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

প্রশাসনিক বৈষম্য
রাজনৈতিক ক্ষেত্রের মতো প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও বাঙালিদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস ও সামরিক বাহিনীতে পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি ‘এলিট শ্রেণি’ গড়ে তোলা হয়। মন্ত্রীদের পরই ক্ষমতাধর ছিলেন এই এলিট শ্রেণী। ১৯৬৫-৭০ সাল পর্যন্ত এক জরিপে দেখা যায় যে, পাকিস্তানের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৬৯ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৪৫ জনই পাঞ্জাবি, বাঙালি ছিলেন মাত্র তিনজন। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে বাঙালি অফিসারদের নিয়োগ করা হত না। এভাবেই পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত।

প্রতিরক্ষা বৈষম্য
পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। পাকিস্তান আমলের বেশির ভাগ সময়জুড়ে ক্ষমতায় ছিল সামরিক বাহিনী। বাঙালিদের সামরিক বাহিনী থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নীতি বাঙালি জাতি ও সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সামরিক সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করে। সে কারণে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালি সদস্যরা পাকিস্তানি আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রতিরোধযুদ্ধে জনগণের সাথে অংশগ্রহণ করে। নিম্নে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষ্যম্যগুলো তুলে ধরা হল-

১. ১৯৫৫ সালের এক হিসাব থেকে দেখা যায় যে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মোট সংখ্যা ছিল ২২১১ জন। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ছিল ৮২ জন যা শতকরা হিসাবে ৩.৭% মাত্র।

২. পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে পাঞ্জাবি আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্যে প্রাদেশিক কোটা নির্ধারণ করা হয়। এতে ৬০% পাঞ্জাবি, ৩৫% পাঠান এবং অবশিষ্ট ৫% পশ্চিম পাকিস্তানের বাকি এলাকা এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিয়োগ করার বিধান চালু করা হয়।

৩. পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নিয়োগ বৈষম্য দেখলে যে কেউই আঁতকে উঠবেন। সেনা, নৌ, ও বিমান বাহিনীর সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যনীতি পরিলক্ষিত হয়। সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি। অফিসার পদে বাঙালিদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। কেবল অফিসার নয় সাধারণ সৈনিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাঙালি সৈনিকদের সুযোগ ছিল সীমিত। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫,০০,০০০ সদস্যের মধ্যে বাঙালি ছিলেন ২০,০০০ জন মাত্র যা মোট সংখ্যার ৪% মাত্র।

অর্থনৈতিক বৈষম্য
পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়। সে কারণে পূর্ব পাকিস্তান কখনোই অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমুদয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হত বলে পূর্ব পাকিস্তানের সকল আয় চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। স্টেট ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে অর্থ পাচার হতো সহজেই। পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক এরূপ শোষণমূলক নীতি অনুসরণের ফলে ১৯৬০ এর দশকে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য
শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসকচক্র বাঙালিদের অশিক্ষিত রেখে তাদের শাসনকে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিল। তাদের ভয় ছিল বাঙালিরা শিক্ষিত হলে চাকরিসহ প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে এবং দেশ শাসনে অংশীদারিত্ব দাবী করবে। এজন্য পূর্ব পাকিস্তানের নিরক্ষরতা দূরীকরণের লক্ষে তেমন কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। তাছাড়া শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় করা হয়েছে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে এরূপ বৈষম্যমূলক নীতির ফলে পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা প্রসারের গতি ছিল অত্যন্ত শ্লথ। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় হয়েছে ২০% আর পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হয়েছে ৮০%। একইভাবে পাকিস্তানের ১৬টি গবেষণা কেনেদ্রর মধ্যে ১৩টিই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে আর মাত্র তিনটি ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। আর মেধাবৃত্তির ক্ষেত্রে মোট ৩৫ টি বৃত্তির মধ্যে ৩০টি পশ্চিম পাকিস্তানের জন্যে আর ৫টি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্যে।

সাংস্কৃতিক বৈষম্য
সাংস্কৃতিক বৈষম্য ছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রধান কারণ। দু‘অঞ্চলের ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। পূর্ব বাংলার অধিবাসীরা ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ এবং তাদের ভাষা বাংলা। অপরদিকে পাকিস্তানের বাকি ৪৪ শতাংশ লোকের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ছিল বিভিন্ন ধরণের। এই ৪৪ শতাংশ লোকের মধ্যে মাত্র ৭.২ শতাংশ লোকের ভাষা ছিল উর্দু। কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি পর থেকে শাসকগোষ্ঠী ৭.২ শতাংশ লোকের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্টে লিপ্ত হলে বাঙালিরা তা প্রতিহত করতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ডাক দেয়। শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। এই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলোনের অনুপ্রেরণায় এক সময় স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয় এবং বাঙালিরা বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ভূখন্ড লাভ করে।

ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচি
প্রস্তাব - এক : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে;

প্রস্তাব - দুই : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু'টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা- দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট বিষয়গুলো অঙ্গ রাজ্যগুলিতে ন্যস্ত করা উচিত।

প্রস্তাব - তিন : মুদ্রা ও অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত ২ টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারে।
ক. সমগ্র দেশের জন্যে দু'টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা
খ. বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ ও পৃথক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করা উচিত।

প্রস্তাব - চার : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
ফেডারেশনের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

প্রস্তাব - পাঁচ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
◉ ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
◉ বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারাধীন থাকবে।
◉ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোই মিটাবে।
◉ অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।
◉ শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

প্রস্তাব - ছয় : আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা
আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।

পরীক্ষা উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৫ম অধ্যায় : পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন

১. কামাল চৌধুরী একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার নানা বৈষম্য নিয়ে একটি পুস্তক রচনা করেছেন। গত বইমেলায় প্রকাশিত এ পুস্তকের ৩০নং পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেছেন মন্ত্রিপরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের খুব কম সদস্য স্থান পেত। আর ৩১নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের উনণয়নে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হতো তার বেশিরভাগই যোগান দেওয়া হতো পূর্ব পাকিস্তানে অর্জিত সম্পদ থেকে। যা কোনোভাবেই পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন শ্রেণি মেনে নিতে পারেনি।
ক. আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন কবে?
খ. এগার দফা কর্মসূচির প্রথম কর্মসূচিটি আলোচনা কর।
গ. কামাল চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থের ৩০নং পৃষ্ঠায় কী ধরনের বৈষম্যের তথ্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. ৩১নং পৃষ্ঠায় কামাল চৌধুরী পাকিস্তান সরকারের অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরতে চেয়েছেনত উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে।

খ. ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১১-দফার প্রথম দাবি হলো- আর্থিকভাবে সচ্ছল কলেজসমূহকে প্রাদেশিকীকরণের নীতি পরিত্যাগ করতে হবে, শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্য সর্বত্র বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে স্কুল-কলেজ স্থাপন করতে হবে এবং বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্কুল কলেজসমূহকে সত্বর অনুমোদন দিতে হবে। ছাত্র বেতন শতকরা ৫০ ভাগ হ্রাস করতে হবে। হল, হোস্টেলের ডাইনিং হল ও ক্যান্টিন খরচার শতকরা ৫০ ভাগ সরকার কর্তৃক সাবসিডি হিসেবে প্রদান করতে হবে। মাতৃভাষার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। অফিস-আদালতে বাংলা ভাষা চালু করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করতে হবে। নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার করতে হবে। ট্রেনে, স্টিমারে ও লঞ্চে ছাত্রদের আইডেন্টিটি কার্ড দেখিয়ে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কনসেশন টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চাকরির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। অখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।

গ. কামাল চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থের ৩০নং পৃষ্ঠায় পাকিস্তান সরকারের রাজনৈতিক বৈষম্যের তথ্য ফুটে উঠেছে।
পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানকে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করে পশ্চিম পাকিস্তানের মুখাপেক্ষী রাখা হয়। লাহোর প্রস্তাবে পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হলেও পাকিস্তানি শাসকরা প্রথম থেকেই এ বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে। গণতন্ত্রকে উপেক্ষা করে স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের মাধ্যমে তারা দেশ শাসন করতে থাকে। তারা পূর্ব পাকিস্তানের ওপর ঔপনিবেশিক শাসন করে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে শোষণ চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সমৃদ্ধি ঘটায়। বাঙালি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর দমন, নিপীড়ন চালিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ অচল করে রাখে। বারবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলার জাতীয় নেতাদের অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি করে রাখা। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের মন্ত্রিসভায় বাঙালি প্রতিনিধির সংখ্যা ছিল কম। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন দিতে অনীহা প্রকাশ করে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচিত সরকারকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করে। পরবর্তী মন্ত্রিসভাগুলোকে ভেঙে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের শাসনকার্য অচল করে রাখে। অবশেষে পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ৩১নং পৃষ্ঠায় কামাল চৌধুরী পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরতে চেয়েছেন, এ কথাটির সাথে আমি একমত পোষণ করছি। পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক সর্বোচ্চ বৈষম্যের শিকার হয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এ কারণে পূর্ব পাকিস্তান কখনো অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারেনি। প্রাদেশিক সরকারের হাতে মুদ্রাব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে পূর্ব পাকিস্তানের সকল আয় পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যায়। কেন্দ্ৰxয় ব্যাংকসহ সকল ব্যাংক, বিমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে সহজেই সকল অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হয়ে যেত। পূর্ব পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল। পশ্চিম পাকিস্তানে যাবতীয় উদ্বুদ্ধ আর্থিক সঞ্চয় জমা থাকত বিধায় পূর্ব পাকিস্তানে কখনো মূলধন গড়ে ওঠেনি।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সকল পরিকল্পনা প্রণীত হতো কেন্দ্রীয় সরকারের সদর দপ্তর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি না থাকায় পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করত। পাকিস্তানের তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দকৃত ব্যয় ছিল প্রথমটিতে ১১৩ কোটি ও ৫০০ কোটি রুপি, দ্বিতীয়টিতে ৯৫০ কোটি ও ১৩৫০ কোটি ও ৫০০ কোটি রুপি, দ্বিতীয়টিতে ৯৫০ কোটি ও ১৩৫০ কোটি রুপি এবং তৃতীয়টিতে বরাদ্দ ছিল ৩৬% ও ৬৩%। রাজধানী উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ব্যয় বেশিভাগ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য। ১৯৫৬ সালে করাচির উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয় ৫৭০ কোটি টাকা, যা সরকারি মোট ব্যয়ের ৫৬.৪%। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের মোট সরকারি ব্যয়ের হার ছিল ৫.১০%। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসলামাবাদের জন্য ব্যয় করা হয় ৩০০ কোটি টাকা, আর ঢাকার জন্য ব্যয় করা হয় ২৫ কোটি টাকা। এসব বৈষম্যই কামাল চৌধুরী তার বইয়ের ৩১নং পৃষ্ঠায় তুলে ধরতে চেয়েছেন।

২. তোরাব আলী অবাক হয়ে দেখলেন ক্ষমতাসীন সাজ্জাদ চৌধুরীর অনুগত লোকেরা চাকরি পাচ্ছে, কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসায় করছে, অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ তিনি নিজে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পেলেন না। উপায় না দেখে তিনি ব্যবসায় শুরু করলেন। কিন্তু এখানেও তাকে শোষণের শিকার হতে হলো। বাধ্য হয়ে এসব সমস্যার প্রতিকার চেয়ে সভাসমাবেশ করতে যান তোরাব আলী। সেখানেও তাকে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং বিনা অপরাধে দু দিন জেলখানায় বন্দী করে রাখে।
ক. কখন করাচি পাকিস্তানের রাজধানী হয়?
খ. আইয়ুব খানকে স্বৈরাচারী শাসক বলা হয় কেন ব্যাখ্যা কর।
গ. তোরাব আলীর অবস্থা আমাদেরকে পাকিস্তান শাসনামলের কোন বৈষম্যের কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সাজ্জাদ চৌধুরী যেন স্বাধীনতাপূর্ব একটি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক শোষকগোষ্ঠীর প্রতিভূ- যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।

🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৪৭ সালে করাচি পাকিস্তানের রাজধানী হয়।

খ. আইয়ুব খান একজন সামরিক কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও নিজের স্বেচ্ছাচারিতা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের শাসন ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেন। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা হরণ করে তিনি দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। পাকিস্তানের উভয় অঞ্চল থেকে রাজনৈতিক নেতাদের সামরিক আইনে গ্রেফতার করেন। এসময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ মানুষের সকল প্রকার মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশে একনায়কত্বের শাসনব্যবস্থা চালু করেন। আর এজন্য আইয়ুব খানকে স্বৈরাচারী শাসক বলা হয়।

গ. তোরাব আলীর অবস্থা আমাদেরকে পাকিস্তানি শাসনামলের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবহেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। তোরাব আলী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরি না পেয়ে ব্যবসায় শুরু করেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তাকে শোষণের শিকার হতে হয়। পরিশেষে এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে দাবি উত্থাপনের যে রাজনৈতিক অধিকার তা প্রকাশ করতে গিয়েও তোরাব আলী পুলিশের লাঠিচার্জ ও কারাবন্দী হন। পাকিস্তানি শাসনামলেও বাঙালিদের এ অবস্থার মতো জীবনযাপন করতে হয়েছিল। ১৯৬২ সালে যে মন্ত্রণালয় গঠিত হয় তার বেশিরভাগ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাগণ পশ্চিম পাকিস্তানের ছিলেন। মন্ত্রণালয়গুলোতে শীর্ষস্থানীয়দের ৯৫৪ জনের মধ্যে ১১৯ জন বাঙালি ছিলেন মাত্র। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের গেজেটেড কর্মকর্তা ছিল যথাক্রমে ১৩৩৮ জন ও ৩৭০৮ জন এবং নন গেজেটেড কর্মকর্তা ছিল যথাক্রমে ২৬৩১০ জন ও ৮২৯৪৪ জন। এছাড়া বহির্বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ৬৯ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৬০ জনই পশ্চিম পাকিস্তানের ছিলেন। অর্থাৎ প্রশাসনিক অবহেলা ছিল মারাত্মক। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি থাকলেও সেটা বাস্তবায়িত হয় নি। আইয়ুব সরকার পূর্ব পাকিস্তনের রাজনৈতিক উত্থান প- করতে ছলে-বলে-কৌশলে স্বৈরশাসন কায়েম করে। পশ্চিম পাকিস্তান 'পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালায়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনকে বানচাল করে দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার ও বন্দী করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি মন্ত্রিপরিষদে বাঙালি প্রতিনিধির সংখ্যা খুবই কম ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন দিতে অনীহা প্রকাশ করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে অর্জিত সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতো কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যেকোনো সম্পদ শুল্ক প্রক্রিয়ায় আসতেও বিধিনিষেধ মানতে হতো। সুতরাং আমাদেরকে পাকিস্তানি শাসনামলের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা মনে করিয়ে দিতে তোরাব আলীর অবস্থা প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।

ঘ. সাজ্জাদ চৌধুরী স্বাধীনতাপূর্ব পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতিভূ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক শোষণ চালিয়েছে সাজ্জাদ চৌধুরী যেন ক্ষমতা লাভ করে সেভাবেই শোষণ শুরু করেছে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী মুদ্রাব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক দিক নিয়ন্ত্রণ করত। পূর্ব পাকিস্তানের হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে রাজস্ব আদায় হতো তার অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতো; দেশের সব ব্যাংক, বিমা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত ছিল। এমনকি উদ্বৃত্ত অর্থও পশ্চিম পাকিস্তানের তহবিলে জমা হতো। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে কখনও মূলধন গড়ে ওঠে নি। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তান তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ১৩৫০ কোটি আর নেয়। দ্বিতীয় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ৯৫০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়। প্রথম পবার্ষিকী পরিকল্পনায় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য যথাক্রমে ১১৩ কোটি ও ৫০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়। ১৯৫৬ সালে পশ্চিম পাকিস্তান করাচি উন্নয়নের জন্য ৫৭০ কোটি রুপি ব্যয় করে, যা সরকারি আয়ের ৫৬.৪% ছিল। ১৯৬৭ সালে পশ্চিম পাকিস্তান ইসলামাবাদের জন্য যেখানে ৩০০ কোটি রুপি ব্যয় করে সেখানে ঢাকার জন্য ব্যয় করে মাত্র ২৫ কোটি রুপি। ১৯৪৭-১৯৭০ সাল পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয়ে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল ৫৪.৭%। রপ্তানি আয় বেশি করলেও পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমদানি ব্যয় ছিল ৩১.১%। রপ্তানি আয়ের উদ্বৃত্ত অংশ পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ব্যয় করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানে শিল্পের কাঁচামালের দাম কম থাকলেও অধিকাংশ শিল্পকারখানা পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে অবাধে স্বর্ণ ও অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে বিনিময় করা যেত। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অর্থ বা স্বর্ণ পূর্ব পাকিস্তানে আনার সময় সরকারের বিধিনিষেধ ছিল। অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ চরম আকারে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়েছে। সাজ্জাদ চৌধুরীও নিজের অনুগত লোকদের মেধা বা যোগ্যতা না থাকলেও চাকরি দিয়েছেন। কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছেন কিন্তু তোরাব আলীর মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছেন। সুতরাং সাজ্জাদ চৌধুরী যেন স্বাধীনতা-পূর্ব একটি অর্থনৈতিক শোষকগোষ্ঠীর প্রতিভূ উক্তিটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

৩. জামিল একটি ইতিহাসের বই পড়ে বুঝতে পেরেছে বইটি লেখা হয়েছে পাশাপাশি দুটি দেশের মধ্যে সংঘটিত একটি যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। যে যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল একটি অঞ্চলের ওপর দুটি দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। ১৭ দিনের এ যুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছিল অন্য একটি দেশের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি এক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে।
ক. কে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করেছিল? করার জন্য।
খ. আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দাও।
গ. জামিল যে যুদ্ধ সম্পর্কিত বই পড়েছিল সে যুদ্ধের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অনুরূপ একটি যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী চেতনা প্রবলভাবে জাগ্রত হয় বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. জেনারেল আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

খ. জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর পাকিস্তানের শাসন ও রাজনৈতিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেন। তিনি প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিত্যাগ করে নতুন নির্বাচন কাঠামো প্রবর্তন করেন। তাঁর এ নির্বাচনের মূলভিত্তি ছিল। 'মৌলিক গণতন্ত্র'। মৌলিক গণতন্ত্র হচ্ছে এক ধরনের সীমিত গণতন্ত্র যাতে কেবল নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অধিকার ছিল। ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের আদেশ জারি করা হয়।। প্রাথমিক অবস্থায় মৌলিক গণতন্ত্র ছিল একটি চার স্তর বিশিষ্ট ব্যবস্থা। এগুলো হলো- ১. ইউনিয়ন পরিষদ এবং টাউন ও ইউনিয়ন কমিটি, ২. থানা পরিষদ (পূর্ব বাংলায়), তহশিল পরিষদ (পশ্চিম পাকিস্তানে), ৩. জেলা পরিষদ ও ৪. বিভাগীয় পরিষদ। পরিষদগুলোতে মনোনীত ও নির্বাচিত উভয় ধরনের লোক থাকত।

গ. জামিল যে যুদ্ধ সম্পর্কিত বই পড়েছিল সে যুদ্ধটি ছিল ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেই ১৯৬৫ সালে কাশ্মিরকে নিয়ে এ ধরনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। অবশেষে ১৭ দিন পর সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই কোসিগিনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান জন্ম নিলে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে বৈরিতার সূত্রপাত হয়। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মিরকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করত। ১৯৪৭ সালেই তাদের মাঝে কাশ্মিরকে নিয়ে প্রথম যুদ্ধ বাধে। কিন্তু জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে তার অবসান হয়। কাশ্মিরকে নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধে ১৯৬৫ সালে। আইয়ুব খানের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল ভারত আক্রমণ করে কাশ্মির দখল করা। ১৯৬৫ সালে কাশ্মিরী নেতা শেখ আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হলে ভারতের কাশিমরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আইয়ুব এ সুযোগ গ্রহণ করে। প্রথমে সশস্ত্র গেরিলাদের কাশ্মিরে অনুপ্রবেশ করিয়ে গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করেন। অবশেষে ৬ আগস্ট পাকিস্তান বাহিনী ভারত আক্রমণ করলে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের শুরু থেকেই ভারতীয় বাহিনী প্রাধান্য লাভ করে। তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে অপসারণ করে লাহোরের দিকে এগিয়ে যায়। পাকিস্তানের শোচনীয় অবস্থার মুখে পাশ্চাত্য শক্তি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপে ১৭ দিনের মাথায় যুদ্ধ বন্ধ হয়।

ঘ. উদ্দীপকের অনুরূপ একটি যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী চেতনা প্রবলভাবে জাগ্রত হয়। তার কারণ এ যুদ্ধ ছিল ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী চেতনা প্রবলভাবে জাগ্রত হয়। কারণ যুদ্ধে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পূর্ব পাকিস্তানের কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। অরক্ষিত এ অঞ্চল যে কোনো সময় ভারতের আক্রমণের শিকার হতে পারত। এমনকি এসময় প্রশাসনিক দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ একেবারে বন্ধ ছিল। বাঙালি সেনারা জীবন বাজি রেখে লাহোর রক্ষা করলেও আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। এছাড়া এসময় গোটা পৃথিবী। থেকে বিচ্ছিন্ন পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। ফলে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতাসহ পূর্ব পাকিস্তানের দুর্বলতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়, যার প্রতিফলন দেখা যায় ৬ দফা আন্দোলনে।

৪. কুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই সোচ্চার হয়ে ওঠে তরুণ ছাত্র নেতা তিতাসসহ আরও কয়েকজন। তিতাস তার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ৮ দফাবিশিষ্ট একটি দাবি পেশ করেন। চেয়ারম্যান সাহেব আন্দোলনকে দমন করার জন্য তিতাস ও তার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদের জেলে প্রেরণ করেন। তিতাসের উত্তরসূরিরা তার মুক্তির দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে।
ক. ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয় কত সালে?
খ. অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি বাংলাদেশের কোন ঘটনার প্রতিচ্ছিবি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তিতাস কর্তৃক উত্থাপিত ৮ দফার মতো বাংলার ইতিহাসের ঐ ঘটনাটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয় ১৯৫২ সালে।

খ. ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়লাভের পর পাকিস্তানি সরকার আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বিবিধ। প্রথমত, স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক পাকিস্তানি শাসকদের দ্বারা এদেশ চালানো সম্ভব নয়। দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিবর্গের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া অপরিহার্য এবং দ্বিতীয়ত, শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ৬ দফা দাবির বাস্তবায়ন করা ছিল অসহযোগ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।

গ. যুগে উদ্দীপকে কুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এক ছাত্র নেতার সোচ্চার হওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চেয়ারম্যানের কাছে ঐ ছাত্রনেতা তিতাস দাবি দাওয়া সংবলিত ৮ দফা পেশ করেন। এতে চেয়ারম্যান ভীত হয়ে পড়ে এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে জেলে প্রেরণ করেন। এ ঘটনাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬ দফারই প্রতিচ্ছবি। ১৯৫৪ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি প্রশাসক নানাভাবে বাঙালিদের মৌলিক অধিকারকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলের এক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচি উত্থাপন করেন। এ ছয় দফায় মূল কথাগুলো ছিল-
১. সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় পাকিস্তান ফেডারেল গঠন।
২. বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা ছাড়া সকল বিষয় অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকবে।
৩. দু প্রদেশের জন্য সহজে বিনিময়যোগ্য দু ধরনের মুদ্রা চালু থাকবে।
৪. প্রদেশগুলোতে শুল্ক ধার্য করার ক্ষমতা থাকবে।
৫. বৈদেশিক মুদ্রার ওপর অঙ্গরাজ্যগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
৬. নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রদেশসমূহে আধা সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে পারবে। মূলত ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন বা মুক্তির সনদ।

ঘ. উদ্দীপকে কুলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তরুণ ছাত্রনেতা তিতাস ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এটি ১৯৬৬ সালে উপস্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচির প্রতিনিধিত্ব করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত এ ৬ দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয় ৬ দফা কর্মসূচি তার জীবন্ত প্রতিবাদম্বরূপ। বাঙালির জীবন ব্যবস্থা স্বতন্ত্র। তাদের আবাসভূমি সুনির্দিষ্ট। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বতন্ত্র। নিজের পায়ে তারা দাড়াতে চায়। যার ফলশ্রুতিতে ৬ দফা কর্মসূচির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্পষ্ট। ৬ দফার মূল লক্ষ্য ছিল-
১. বৈষম্যহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিনির্মাণের প্রয়াস।
২. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংকল্প।
৩. পূর্ব বাংলার সম্পদের ওপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য।
৪. সামরিক ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার আকাঙ্ক্ষা।
৫. ব্যবসায় বাণিজ্যে এবং বৈদেশিক সাহায্যে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সংকল্প।
এদিক থেকে বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, ৬ দফা দাবি ছিল পূর্ব বাংলার আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি। জনসমষ্টি হিসেবে তাদের স্বাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি। এর মাধ্যমে সূচিত হয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যার পথ ধরে এসেছে বাংলার স্বাধীনতা।

৫. ড. মুনতাসীর মামুন ইতিহাসের ক্লাসে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অমানবিক শোষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণকে দীর্ঘদিন ধরে শাসনের নামে শোষণ করে। ফলে দু পাকিস্তানের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। এ কারণে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় স্বাধিকারের আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৬ দফা কর্মসূচি আন্দোলনে আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এ কর্মসূচিকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়।
ক. কে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন?
খ. ছয়দফা কর্মসূচিকে কেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়?
গ. ড. মুনতাসীর মামুনের বক্তব্যের আলোকে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে ৬ দফা কর্মসূচি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে কীভাবে আলোড়িত করেছিল? তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কর্মসূচির ধারাসমূহ বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

খ. ৬ দফা কর্মসূচিকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়েছিল। আর মুক্তির সনদ বলার যুক্তি ছিল নিম্নরূপ-
১. ছয়দফা ছিল স্বাধীনতার আন্দোলনের উৎসাহদাতা,
২. এটি জাতীয়তাবাদ সৃষ্টিতে প্রেরণা যুগিয়েছিল,
৩. ছয়দফা স্বৈরশাসকের পতন নিশ্চিতকরণের উপায় দেখিয়ে দেয়,
৪. এটিতে বাঙালি জাতি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে,
৫. এটি ছিল ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের উৎসমূল,
৬. এটি ছিল সত্তরের নির্বাচনে জয়লাভের নিয়ামক।

গ. ৬ দফা কর্মসূচি ছিল মূলত বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সনদ। এ দফা ছিল বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি। ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুসংগঠিত হয় এবং এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধে রূপ নিয়েছে এবং শেষপর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। ৬ দফা ছিল বাংলার জনগণের বাঁচার দাবি। এ আন্দোলনে অনেক তাজা রক্ত ঝরেছে। তারপরেও পূর্ব বাংলার জনসাধারণ এ আন্দোলন হতে বিচ্যুত হয়নি। ৬ দফার ঐক্য থেকে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা লাভ করে। ৬ দফা আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি বলা হয়। ৬ দফাকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। তাই ৬ দফার গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ. অনুচ্ছেদে ৬ দফা কর্মসূচির উল্লেখ রয়েছে। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি এ কর্মসূচি পেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির ধারাসমূহ নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
১. ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় ধরনের সংবিধান রচনা করতে হবে। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সকল প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা গঠিত হবে। কেন্দ্রীয় আইনসভায় সংখ্যানুপাতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
২. শুধু দেশ রক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় থাকবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে। অবশিষ্ট সব বিষয়ে প্রদেশগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
৩. পাকিস্তানের উভয় অংশের জন্য দুটি পৃথক ও সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা উভয় অঞ্চলের জন্য একই মুদ্রা চালু থাকবে। এক অঞ্চলের মুদ্রা ও মূলধন অন্য অঞ্চলে পাচার হতে না পারে শাসনতন্ত্রে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৪. সকল প্রকার কর ও শুল্ক ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকার পাবে।
৫. বৈদেশিক মুদ্রার ওপর অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও সাহায্য সম্পর্কে অঙ্গরাজ্যের সরকারগুলো আলাপ-আলোচনা ও চুক্তি করতে পারবে।
৬. আঞ্চলিক সংহতি ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে অঙ্গরাজ্যগুলো নিজস্ব গণবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী রাখতে পারবে।
পরিশেষে বলা যায়, ৬ দফার মূল আবেদন ছিল পূর্ব পাকিস্তান শুধু একটি প্রদেশ নয় বরং একটি স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। সকল প্রকার শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটানোই ছিল এর লক্ষ্য।

৬. তৌফিক হাসান একটি ঐতিহাসিক মামলার ওপর স্বল্পদৈর্ঘ্য ছায়াছবি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। স্ক্রিপ্টের ঘটনা হলো- একটি জাতির কল্যাণে আবির্ভাব ঘটবে এক মহান নেতার এবং তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে উক্ত জাতিকে শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দিতে চাইবেন। ফলশ্রুতিতে তিনি সরকারের রোষানলে পড়বেন এবং ৩৪ জন সহযোগীসহ এক রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় জড়াবেন। পরিশেষে ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে তিনি মুক্তি লাভ করবেন।
ক. ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে?
খ. আগরতলার মামলার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ব্যখ্যা কর।
গ. স্ক্রিপ্টটি কোন ঐতিহাসিক মামলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মহান নেতা দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল পথপ্রদর্শক -পাঠ্য বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।

খ. বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আইয়ুব সরকার আগরতলা মামলায় গ্রেফতার করলে এক ফৌজদারি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় যে মামলার বিচার সাধারণ আদালতের পরিবর্তে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে। উক্ত ফৌজদারি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস. এ. রহমান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম. আর. খান ও পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি মকসুমুল হাকিম এর সদস্য নিযুক্ত হন। প্রধান ফরিয়াদি হিসেবে থাকেন পাকিস্তানের এককালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রখ্যাত পাঞ্জাবি আইনজীবী মঞ্জুর কাদের। অপরদিকে, আসামিদের পক্ষ নেন যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাঙালিদের প্রেরিত ইংল্যান্ডের রানির আইন বিষয়ক উপদেষ্টা প্রখ্যাত আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়াম এমপি। এছাড়া তাঁদের পক্ষে প্রখ্যাত আইনজীবী আব্দুস সালাম খানের নেতৃত্বে ডিফেন্স টিমে ছিলেন ড. আলিম আল রাজী, আতাউর রহমান খান, জুলমত আলী, মোল্লা জালাল উদ্দিন ও মওদুদ আহমদসহ বহুসংখ্যক আইনজীবী।

গ. তৌফিক হাসানের স্ক্রিপ্টটি ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
তৌফিক হাসানের স্ক্রিপ্টে ছিলু একটি জাতির কল্যাণে এক মহান নেতার আবির্ভাব ঘটবে এবং তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে উক্ত জাতিকে শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিতে সচেষ্ট থাকবেন। এর ফলে তিনি সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ৩৪ জন সহযোগীসহ এক রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় জড়াবেন। কিন্তু এক ব্যাপক গণআন্দোলনের দাবিতে তিনি মুক্ত হবেন। আগরতলার মামলার ক্ষেত্রেও দেখা যায় পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতিকে শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক ও সামাজিকসহ নানা ক্ষেত্রে অবহেলা করতে শুরু করলে বাঙালি জাতিকে এসব বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাব ঘটে তিনি ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে পাকিস্তানের জাতীয় কনফারেন্সে দু অঞ্চলের বৈষম্য তুলে ধরে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি সংবলিত ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এর ফলে তিনি আইয়ুব সরকারের প্রধান শত্রুতে পরিণত হন। আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়ে তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়। অবশেষে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃতেব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলাতে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠক হয় এবং ভারতের সহায়তায় সেখানে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য মামলাটি আগরতলা মামলা নামে পরিচিতি পায়। পূর্ব পাকিস্তানে আগরতলা মামলার বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন দেখা -দিলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক বেতার ভাষণে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান করার কথা ঘোষণা দেন এবং ২২ ফেব্রুয়ারি তা বাস্তবায়িত হয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, তৌফিক হাসানের স্ক্রিপ্টটি আগরতলা মামলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. তৌফিক হাসানের স্ক্রিপ্টে যে মহান নেতার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির কল্যাণে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশপ্রেমের উজ্জ্বল পথপরিক্রমা দেখিয়েছেন। উদ্দীপকের মামলাটির সাথে আমার পাঠ্য বইয়ের আগরতলা মামলার মিল রয়েছে। আগরতলা মামলার প্রেক্ষাপটে দেখা যায় বাঙালি জাতির দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন জনসভা ও বিবৃতির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য জনসম্মুখে তুলে ধরে সামরিক শাসক আইয়ুব বিরোধী শক্তিকে আরও বলীয়ান করে তুলতে থাকেন। আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনে ভীত হয়ে বার বার তাঁদের ওপর নির্যাতন চালায়। কিন্তু কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার চিন্তা থেকে বিরত রাখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার চিন্তা করেন। পূর্ব পাকিস্তানের তরুণ সেনাসদস্যসহ নানা স্তরের মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানের বিপ্লবী আনেদালনকে সমর্থন জানান। ১৯৬৩ সালে বঙ্গবন্ধু গোপনে ত্রিপুরায় পাড়ি জমান এবং সেখানে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় তৎকালীন কংগ্রেস নেতা ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহের সাথে বৈঠক করেন। বঙ্গবন্ধু শচীন্দ্রলাল সিংহের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে বার্তা পাঠিয়ে সশস্ত্র আন্দোলনে তাঁর সমর্থন চান। সর্বস্তরের বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সশস্ত্র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে দলে দলে সংগঠিত হতে থাকেন। অনেক বাঙালি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সেনাসদস্য গোপনে বঙ্গবন্ধুর সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেয়। কিন্তু এ তথ্য পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ফাঁস হয়ে গেলে আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। এ মামলা আগরতলা মামলা নামে পরিচিতি পায়। মামলার বিচার সাধারণ আদালতের পরিবর্তে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে আইনের সংশোধন করা হয়। এ মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণআন্দোলন দেখা দেয় এবং প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বাধ্য হন বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে। দেশকে ভালোবেসেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের জন্য বিপদকে তুচ্ছ করে সাহসিকতার পথ বেছে নিয়েছিলেন। উদ্দীপকের মহান নেতা আর বঙ্গবন্ধু একই পথের পথপ্রদর্শক। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকের মহান নেতা দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল পথপ্রদর্শক।

HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. কার্জনপুর এলাকার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এলাকার উন্নয়নের দাবির আন্দোলনে বন্দী হন। তার আটক হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সবাই প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়। পরের দিন উক্ত এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা উক্ত রাজনীতিবিদের মুক্তিসহ জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ, বেকারত্ব ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা প্রভৃতি দাবি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন ক্রমশ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে সরকার আন্দোলন থামাতে উক্ত রাজনীতিবিদকে মুক্তি দেন। কিন্তু তার নেতৃত্বে আন্দোলনের গতি আরও তীব্র হয় এবং এক গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটে।
ক. ১৯৬৯ সালে কয়টি রাজনৈতিক দল মিলে 'গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
গ. কানপুর এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের দাবিভিত্তিক আন্দোলনের সাথে স্বাধীনতাপূর্বক কোন আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের গণঅভ্যুত্থান হলো আন্দোলনের এক চূড়ান্ত রূপ সাদৃশ্যপূর্ণ উক্ত আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৬৯ সালে ৮টি রাজনৈতিক দল মিলে 'গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়।

খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ ১৬৭টি আসন লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আবার পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এ নির্বাচনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে জয়লাভ করে।

গ. কার্জনপুর এলাকার ছাত্রছাত্রীদের দাবিভিত্তিক আন্দোলনের সাথে স্বাধীনতাপূর্ব ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে। কার্জনপুর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা আটক হওয়া মুক্তিকামী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের নিঃশর্ত মুক্তিদানসহ জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ, বেকারত্ব ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা প্রভৃতি দাবি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। একইভাবে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর আগরতলা মামলা চাপিয়ে দিলে পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা বিশেষ করে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ডাকসুর সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা মামলার প্রত্যাহার ও আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তিদানসহ ১১ দফা দাবি নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে যা সরকারের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দাবি ছিল-
১. হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান ও ছাত্র বেতন হ্রাস। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা প্রবর্তন ও বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালুকরণ।
২. সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ইত্তেফাক পত্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
৩. ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান।
৪. বেলুচিস্তান, সিন্ধু ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন দানের পর, পশ্চিম পাকিস্তানে সাব-ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা।
৫. ব্যাংক, বিমা ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ।
৬. কৃষকের করভার লাঘব। বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওকুফ। সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল।
৭. শিল্প শ্রমিকদের অধিক মজুরি প্রদান।
৮. পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জল সম্পদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ।
৯. জরুরি অবস্থার নামে নিরাপত্তা আইন জরুরি আইন ও অন্যান্য দমনমূলক আইন বাতিল।
১০. স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ এবং 'সিয়াটো' ও 'সেন্টো' সামরিক চুক্তি হতে পাকিস্তানের নাম প্রত্যাহার।
১১. সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং আগরতলা মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলার অবসান ঘোষণা। সকল গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া প্রত্যাহার।
ছাত্রদের এ ১১ দফা আন্দোলনের প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষ সমর্থন জানায়। সুতরাং কার্জনপুর এলাকার ছাত্রছাত্রীদের দাবিভিত্তিক আন্দোলনের সাথে স্বাধীনতাপূর্ব ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলন সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের গণঅভ্যুত্থান হলো আন্দোলনের এক চূড়ান্ত রূপ। সাদৃশ্যপূর্ণ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় ১৯৬৯ সালে ছাত্র জনতার ১১ দফা কর্মসূচি সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন পায়। ১৯৬৯ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘট পালন করে। এ ধর্মঘটের সময় ছাত্রদের সঙ্গে। পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র হরতাল পালন করা হয়। হরতাল চলাকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হলে আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে মিছিল বের হয়। আসাদ হত্যার প্রতিবাদে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ব্যাপক কর্মসূচির আহবান করা হয়। ২৪ জানুয়ারি হরতালে সর্বস্তরের মানুষের ঢল। নামে। ওইদিন পুলিশের গুলিতে নবকুমার স্কুলের ছাত্র মতিউর রহমানসহ ছয় জন নিহত হলে বিক্ষুব্ধ জনতা মতিউর রহমানের লাশ নিয়ে ঢাকায় শোভাযাত্রা বের করে এবং সরকারি পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজ অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঢাকা শহর সামরিক সরকার প্রধান আইয়ুব খানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর থেকে ঢাকা শহরে শুরু হয় লাগাতার হরতাল কর্মসূচি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। ১৫ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভের এক পর্যায়ে জনতা একজন মন্ত্রীর বাড়িতে এবং আগরতলা মামলার প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এস. এ. রহমানের বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে আইয়ুব সরকার ঢাকায় ১৬ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। আইয়ুব সরকার সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেও আন্দোলন দমাতে না পেরে ১৮ ফেব্রুয়ারির পর সরকার বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকের আহবান করেন। কিন্তু বিরোধী দলের নেতারা বৈঠক প্রত্যাখ্যান করলে আইয়ুব খান ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য বন্দীদের মুক্তি দেন। মুক্তির পর শেখ মুজিবুর রহমান ১১ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে সবাইকে আহবান করেন। ২৫ মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করলে গণঅভ্যুত্থান সফল হয়। উদ্দীপকের আন্দোলনও সফলতা অর্জন করে। সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকের গণঅভ্যুত্থান হলো আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ- উক্তিটি সঠিক ও তাৎপর্যপূর্ণ।

৮. আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের পথিকৃৎ আব্রাহাম লিঙ্কন গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় নাম। দয়া, সরলতা, উপস্থিত বুদ্ধি, বাগ্মিতা ও মিষ্টি ব্যবহার তাঁকে বিশ্বের আদর্শ চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রাজনীতি ক্ষেত্রে তিনি অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। এভাবে একজন মেহনতী মানুষ নিজের প্রতিভায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদ লাভে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি স্বার্থান্ধ মানুষের পাশবিকতার হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন। পৃথিবীর গণতন্ত্র ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ 'Government of the people, by the people and for the people' আজও তাঁকে অমর করে রেখেছে।
ক. মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী ছিল?
খ. 'অপারেশন সার্চ লাইট' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আব্রাহাম লিঙ্কনের চরিত্র ও কর্মকান্ড- কার প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যায়ু ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত নেতার বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি- মূল্যায়ন কর।

🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাম তাজউদ্দিন আহমদ।

খ. ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত কর্মসূচি এবং আহবানের প্রতি সকল স্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলার সকল অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা বন্ধ করে দেয়। ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা বেগতিক দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার নামে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য, গোলাবারুদ এনে পূর্ব বাংলার সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ১৭ মার্চ টিক্কা খান, রাও ফরমান আলী 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে বাঙালির ওপর নৃশংস হত্যাকান্ড পরিচালনার নীল নকশা তৈরি করে। যার প্রতিফলন ঘটে ঐতিহাসিক ২৫ মার্চ রাতে বর্বরতম গণহত্যার মধ্য দিয়ে। ২৫ মার্চের ঐতিহাসিক কালো রাতের বর্বরতম গণহত্যাকে পাকিস্তানি সেনাদের ভাষায় 'অপারেশন সার্চ লাইট' বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত আব্রাহাম লিঙ্কনের চরিত্র ও কর্মকান্ড- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যায়। নিচে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দীপকে আলোচিত আব্রাহাম লিঙ্কনের চরিত্রের প্রতিচ্ছবি বলার কারণ তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আজীবন বাংলার মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ৪৮ ও ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদান, ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে 'আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা' পেশ ও ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতা অর্জনে একচ্ছত্র ভূমিকা পালন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত আব্রাহাম লিঙ্কনের চরিত্র ও কর্মকান্ড- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত আব্রাহাম লিঙ্কনের চরিত্র ও কর্মকান্ড- আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যায়। এ মহান নেতার বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সব রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু লক্ষ করেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে কোণঠাসা করে রেখেছে। তারা বাংলার মানুষের প্রতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সামরিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পূর্ব বাংলার জনগণকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে 'আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি পেশ ও ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন করেন। উক্ত ৬ দফা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ইশতেহার হওয়ায় আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন বিজয় হয়। বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে পাকিস্তানের ২৪ বছরের মধ্যে ১২ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু এদেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি। তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দমননীতির কাছে কখনও আপস করেননি। উপরিউক্ত আলোচনা শেষে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও আপসহীন নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন স্বাধীনতার মহানায়ক ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি।

৯. একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন যে একটি জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন করে দিতে পারে। এতে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। এ ধরনের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বাঙালিরা একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রায় সবকয়টি আসনেই জয়লাভ করেছিল। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী কথা দিয়ে কথা রাখেনি। উল্টো শুরু করল বাঙালির ওপর অত্যাচার, হত্যা করা হলো নিরীহ মানুষকে। তাই বলে কি নির্বাচনে জেতা বৃথা গেল। না দেরিতে হলেও জাতি এ নির্বাচনের পরোক্ষ ফল ভোগ করেছিল।
ক. মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
থ. মুজিবনগর সরকার ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তার ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, এ ধরনের একটি নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

খ. ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে প্রাথমিকভাবে পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য। ১০ এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। এ সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায়। সরকারের প্রধান ও দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর নাম অনুসারে বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। তাই অস্থায়ী সরকার পরিচিত হয় মুজিবনগর সরকার নামে।

গ. উদ্দীপকে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা হলো ১৯৭০ সালের নির্বাচন। এ নির্বাচনে বাঙালিরা জয়লাভ করেছিল। কিন্তু যে আশায় বাঙালিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে শাসকগোষ্ঠী বাঙালির সে আশা ভেঙে দেয়। বাঙালির ওপর অত্যাচার ও হত্যার মতো নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬০টি আসন লাভ করে। সংরক্ষিত ৭টি মহিলা আসনসহ আওয়ামী লীগ মোট ১৬৭টি আসন লাভ করে জাতীয় পরিষদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আবার পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মোট ২৯৮টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ভোটের ফলাফল মূল্যায়নে দেখা যায় যে, মোট প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ৭৫.১০% ও প্রাদেশিক পরিষদে ৭০.৪৮% ভোট পায়।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে এ ধরনের অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ১৯৪৭ সালের পর থেকে বাঙালি জাতি ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে যে স্বাতন্ত্র দাবি করে আসছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির সে স্বাতন্ত্রবাদের বিজয় ঘটে। এছাড়া পূর্বাঞ্চলের জনগণ স্বায়ত্তশাসনের যে দাবি করে আসছিল তা পশ্চিমাঞ্চলের সরকার অবৈধ বলে ঘোষণা করে। এ নির্বাচনের ফলাফলে ৬ দফাভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবির বৈধতা প্রমাণিত হয়। সর্বোপরি ইয়াহিয়া খানের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচিত হ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় আসলে তিনি তা না করে নিরীহ বাঙালির ওপর সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেন। শুরু হয় বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রাম। যার পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

১০. মিশুর পিতা কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে চান না। তিনি মনে করেন নির্বাচন জনগণের কোনো কাজে আসে না। মিশু তার পিতাকে ঐতিহাসিক একটি নির্বাচনের কিছু তথ্য একটি বই থেকে পড়ে শোনায়। নির্বাচনটি নিয়ে নানা আশঙ্কা ছিল। নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে। একটি দল ৬ দফার পক্ষে নির্বাচনকে গণভোট হিসেবে অভিহিত করেছিল।
ক. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক শহিদ হন তাঁর নাম কী?
খ. 'আগরতলা মামলা' কথাটি বুঝিয়ে বল।
গ. মিশুর তথ্যে পাঠ্যপুস্তকের যে নির্বাচনের প্রতিফলন ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে এ ধরনের একটি নির্বাচনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক শহিদ হন তাঁর নাম ড. শামসুজ্জোহা।

খ. দমননীতির মাধ্যমে ৬ দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে না পেরে পাকিস্তানি সরকার একটি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। সেটিই ছিল আগরতলা মামলা। সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মিথ্যা মামলা দায়ের করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তাঁরা প্রতিবেশী ভারতের সহায়তায় সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ভারতের আগরতলায় ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এ মামলায় বিচারকার্যের জন্য একটি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। আসামিরা নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন। কিন্তু স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্য তাঁদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালানো হয়। ইতিহাসে এটিই আগরতলা মামলা নামে পরিচিত।

গ. মিশুর তথ্যে পাঠ্যপুস্তকের ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রতিফলন ঘটেছে। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেন। ইয়াহিয়া খান উক্ত পদে আসীন হন। তিনি ২৮ মার্চ এক ঘোষণায় পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। তবে পাকিস্তানে ইতোপূর্বে কোনো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ নির্বাচন নিয়েও নানা আশঙ্কা ছিল। কোনো নিয়মকানুনও ছিল না। অবশেষে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম এক ব্যক্তির এক ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মিশুর বর্ণনায়ও আমরা এমন পদ্ধতি দেখতে পাই। আওয়ামী লীগ ৬ দফার পক্ষে নির্বাচনকে গণভোট হিসেবে অভিহিত করে। নির্বাচনে কোটি ৬৪ লাখ ভোটারের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ৩০০টির মধ্যে ২৮৮টি আসন আওয়ামী লীগ পায়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ বিজয় ছিল নজিরবিহীন। অর্থাৎ মিশুর তথ্যে ১৯৭০ সালের নির্বাচনেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে যে নির্বাচনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে তার মধ্যে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ৬ দফা ও ১১ দফার প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে অন্যদিকে, পাকিস্তানের সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলের জন্য এটি ছিল বিরাট পরাজয়। তারা বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র আঁটতে থাকে। পূর্ব বাংলার জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পেছনে এ নির্বাচনের অপরিসীম গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র দানে বিশাল ভূমিকা রাখে। পরিণতিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পূর্ব বাংলার মানুষের স্বার্থরক্ষায় এবং জাতিকে উজ্জীবিত করার জন্য ১৯৭০ সালের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post