এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
ইতিহাস
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪
HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
চতুর্থ অধ্যায় : পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতি প্রকৃতি
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। ভাষা, নৃতত্ত্ব, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভৌগোলিকপরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসসহ সকল ক্ষেত্রে বিস্তর ব্যবধান থাকা সত্বেও কেবল ধর্মের ভিত্তিতে এক হাজারমাইলের ব্যবধানে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তকরে এই অসম রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয়। এই রাষ্ট্রের কর্ণধাররা প্রথমই শোষণ ও বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবেবেছে নেয় বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে। অথচ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় পাকিস্তানেরভাষাগত জনসংখ্যার একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬০% বাংলা,২৮.০৪% পাঞ্জাবি, ৫.৮% সিন্ধি, ৭.১% পশতু, ৭.২% উর্দু এবং বাকি অন্যান্য ভাষাভাষী নাগরিক। এরথেকে দেখা যায় উর্দু ছিল পাকিস্তানি ভাষাভাষির দিক থেকে ৩য় স্থানে।
অন্যদিকে তদানীন্তন পূর্ব বঙ্গের জনসংখ্যা ৪.৪০ কোটির মধ্যে ৪.১৩ কোটি ছিল বাংলা ভাষাভাষী। এখানে ৯৮% বাংলা এবং মাত্র ১.১% ছিল উর্দু ভাষী। অথচ বাংলা ভাষাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু সংগ্রামের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালি জাতিমাতৃভাষার ওপর এ আঘাতের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পাকিস্তান সৃষ্টির ছ’মাস পেরুতে না পেরুতে তারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রাজপথে নামে যা ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় পর্বের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সাফল্য লাভ করে।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের ভূমিকা
ভাষা আন্দোলনে ভাষা শহীদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, এম. এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জববারসহ আরও অনেকে। এছাড়া ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হয়। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিক্সাচালক আউয়াল এবং অলিউল্লাহ নামক এক কিশোর। ২৩ ফেব্রুয়ারি ফুলবাড়িয়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলেও পুলিশ অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়। এ নির্লজ্জ, পাশবিক, পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ সংসদীয় দল থেকে সেদিনই পদত্যাগ করেন। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্রদের দ্বারা গড়ে ওঠে শহীদ মিনার, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন শহীদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন। এভাবেই ভাষা শহীদরা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব
বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূলভিত্তি হচ্ছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। স্বাধীন বংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক আন্দোলন সুসংহত হয় এবং অগ্রগতি লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের চেতনাই জনগণের মধ্যে পরবর্তীকালে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটায় এবং এর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। বাঙালি জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আকাক্সক্ষাকে হাজারগুণে বাড়িয়ে দেয় এ আন্দোলন। তাই ৫২’এর ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির গণচেতনার সর্বপ্রথম বহিঃপ্রকাশ এবং স্বাধিকার আন্দোলনের এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
সুদীর্ঘ প্রায় দুইশ’ বছর ব্রিটিশদের অপশাসন ও কুশাসনের অবসান ঘটার পর ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে ভারত গঠিত হলেও শুধু ধর্মীয় কারণে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের আদর্শগত কোনো যোগসূত্র ছিল না বললেই চলে। মূল কারণ হিসেবে বলা যায়, উভয় অঞ্চলের মধ্যকার ভাষাগত বিরোধ। ভাষাগত বিরোধের কারণে বাংলার জনগণ পাকিস্তানের Fundamental Ideology-র সঙ্গে কখনও একাত্মতা অনুভব করতে সক্ষম হয়নি।
এছাড়া পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি নানাভাবে বৈষম্যমূলক নীতি আরোপ করা হয় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। মূলত এসব কারণেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পরেই ভাষা আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় এবং ১৯৪৭ সালের সেপ্টেন্বরে পূর্ব বাংলায় ‘তমুদ্দুন মজলিস’ নামে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তমুদ্দুন মজলিসের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন তরুণ অধ্যাপক আবুল কাশেম। আর সেই ভাষা আন্দোলনের প্রভাব বাংলার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতিটা পরতে পরতে প্রত্যক্ষ করা যায়। যার সার্থক ফসল আজকের এ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ভাষা আন্দোলনে নারী
আটচল্লিশ ও বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে তকালীন এদেশের নারী সমাজের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। মিছিল, স্লোগান, সভা-সমিতিতে তারাও পুরুষের পাশাপাশি সগ্রাম করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নাদিরা চৌধুরীসহ আরও অনেকে পোস্টার, ফেস্টুন লিখন এবং নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ঢাকার বাইরেও নারী সমাজের ভূমিকা ছিল সক্রিয় এবং প্রতিবাদী। যশোরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন হামিদা রহমান।
বগুড়ার বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন রহিমা খাতুন, সালেহা খাতুনসহ অনেকে। ভাষা আন্দোলনে সিলেটের নারীদেরও ব্যাপক ভূমিকা ছিল। এ আন্দোলনে সংগ্রামী ভূমিকা রাখেন হাজেরা মাহমুদ, যোবেদা খাতুন চৌধুরী, শাহেরা বানু, সৈয়দা লুফুন্নেছা খাতুন, সৈয়দা নাজিরুন্নেছা খাতুন, রাবেয়া খাতুনসহ আরও অনেকে। পোস্টার ও প্রচার পত্রের মাধ্যমে আন্দোলন সচল রাখার তৎপরতা চালানোর সময় ১৯৪৯ সালের ১৩ই আগস্ট গ্রেফতার হন লিলি চক্রবর্তী। এসব সংগ্রামী ভূমিকার পাশাপাশি ঐ সময় বিভিন্ন স্থানে নারীরা ভাষা আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করেন। তাঁদের মধ্যে নিবেদিতা নাগ, সারা তৈফুর মাহমুদ, সাহেরা বানু উল্লেখযোগ্য।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যারা পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের অধিবেশন বর্জন করেন, তাঁদের মধ্যে আনোয়ারা খাতুন ছিলেন অন্যতম। তিনি ব্যবস্থাপক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে ছাত্রীরাও দুঃসাহসী ভূমিকা রাখেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গায় যারা সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, তারা হলেন শামসুন্নাহার, রওশন আরা, সুফিয়া ইব্রাহিম সহ অনেকে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের নেত্রী মমতাজ বেগম গ্রেফতার হলে পুলিশ জনতার মধ্যে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়েছিল।
বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণ
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃত এবং ২০১০ সালে জাতিসঙ্গের সাধারণ পরিষদ ‘এখন’ থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হবে’ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আর এভাবেই বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চলমান।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে UNESCO কর্তৃক বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি বিশ্বদরবারে এনে দিয়েছে এক বিশাল খ্যাতি। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে অমর একুশের উদযাপন নিঃসন্দেহে এক বিশাল জাতীয় গৌরব ও সম্মানের। ২০০০ সাল থেকে UNESCO এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো এ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে।
২০০১ সালের ১৫ মার্চ বিশ্বের সব মাতৃভাষার গবেষণা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কাজ করার উদ্যোগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঢাকার সেগুনবাগিচায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ভাষাসংক্রান্ত গবেষণা,ভাষা সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এটি ভাষার ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে যা বাংলা ভাষাকে বিশ্বমর্যাদায় আসীন করতে ভূমিকা রাখছে।
২০১০ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ৪র্থ কমিটিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ফলে এটি বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন এবং সম্মান প্রদর্শনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিক চর্চা বিশ্বজুড়ে বেড়ে চলেছে। মাতৃভাষার সংখ্যার বিচারে বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি শক্তিশালী ভাষা।
একমাত্র আফ্রিকার সিয়েরালিওনে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংসদ বাংলাকে স্বীকৃতির বিল পাস করে। ফলে বাংলা ভাষা লাভ করে এক অনন্য মর্যাদা।
এই মুহূর্তে বহির্বিশ্বে ৩০টি দেশের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বাংলা বিভাগ, সেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার অবাঙালি পড়ুয়া বাংলাভাষা শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করছে। এছাড়া চীনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলির ৩৩ খন্ডের অনুবাদ এবং লালনের গান ও দর্শন ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।
পরীক্ষা উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৪র্থ অধ্যায় : পাকিস্তানি আমলে বাংলা : ভাষা আন্দোলন ও এর গতি প্রকৃতি
১. বেবী যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় স্বামী আর ছোট মেয়ে। ভাষার আরাধ্যকে নিয়ে বসবাস করছে। প্রতিনিয়ত সে তার মেয়েকে বলে, "মায়ের ভাষা যে আলোর মতো, এ ভাষা যতদূর ছড়ায় ততদূর মানুষের হৃদয় আপনি আপনাকে প্রকাশ করে চলে"। আজ বাংলাদেশের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এ দিনে বাংলাদেশের এক বিশেষ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। বেবী একটি কবিতার বই নিয়ে মেয়েকে পড়াচ্ছে। "কুমড়ো ফুলে ফুলে নুয়ে পড়েছে লতাটা। মাগো ওরা বলে সবার মুখের কথা কেড়ে নেবে"।
ক. ভাষা আন্দোলনের শহিদ অহিউল্লাহ কে ছিলেন?
খ. পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ধারা ছিল কয়টি ও কী কী?
গ. উদ্দীপকে কোন আন্দোলনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? উক্ত আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত আন্দোলনের ফলে বাঙালির মাঝে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপিত হয়- বিশ্লেষণ কর।
🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের তালিকায় একজন আট বছরের নাবালক ছেলে রয়েছে যার নাম হলো অহিউল্লাহ। শহিদ হওয়ার সময় অহিউল্লাহ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। অহিউল্লাহ শহিদ হন ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি।
খ. পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় পূর্ব বাংলার রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত ছিল। তখনকার সর্ববহৎ দল মুসলিম লীগের উদারপন্থি নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চেয়েছিলেন পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা একত্রিত হয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠিত হবে। এ. কে ফজলুল হক এ মতের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। অপরপক্ষে কট্টরপন্থি নেতা মোনায়েম খানের ধারণা মতে কেবল মুসলিম জনগণের সমন্বয়ে আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র গঠিত হবে। নওয়াব পরিবারের সদস্যগণ এ মতের ঘোর সমর্থন করেন।
গ. উদ্দীপকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দেলনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। উক্ত আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রবল আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ স্বীকৃতিস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানিদের মনে স্বাধীনতাবোধ জাগ্রত হয়েছিল এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ব্যাপক প্রেরণা যোগায়।
ঘ. ১৯৫২ সালে বাঙালিদের ভাষা আন্দোলন বিশ্বের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবে খ্যাত। সারা বিশ্বে ভাষার জন্য বাঙালিদের মতো এত রক্ত আর কোনো জাতিকে দিতে হয় নি। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালিদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত হয় এবং জনগণের মধ্যে নতুন জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে। এ চেতনা ক্রমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয় এবং বাঙালিদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত করে। ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালিদের মধ্যে যে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয় সে জাগ্রত আকাঙ্ক্ষা থেকেই পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। আর এরই চূড়ান্ত পরিণতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙালিরা জয়লাভ করে এবং অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। আর এ জন্যই বলা হয় ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে যেমন অগ্রগামী তেমনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
২. ১৯৬০ সালে অসমিয়া ভাষাকে আসামের অফিসিয়াল ভাষা করার জন্য বিল পাসের সময় বাংলা ভাষাভাষীরা আন্দোলন করে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৬১ সালের ১৯ মে হরতাল চলাকালে সাধারণ মানুষের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে এগারো জন প্রাণ হারায়।
ক. কত সালে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মিত হয়?
খ. কোন কোন দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়?
গ. উদ্দীপক পঠিত বিষয়ের যে আন্দোলনকে ইঙ্গিত করে সে আন্দোলনের দুজন শহিদের পরিচয় দাও।
ঘ. "উক্ত আন্দোলন জাতীয়তার গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আজ স্বীকৃত"- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৭০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ তৈরি হয়।
খ. মূল চারটি রাজনৈতিক দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। যেমন- ১. আওয়ামী মুসলিম লীগ, ২. কৃষক-প্রজা পার্টি, ৩. গণতন্ত্রী পার্টি ও ৪. নেজামে ইসলাম।
গ. উদ্দীপকে পঠিত বিষয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে ইঙ্গিত করে। নিচে দুই জন ভাষাশহিদের পরিচয় দেওয়া হলো-
১. ভাষাশহিদ আব্দুল জববার ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুকাল পড়ালেখা করে দারিদ্রে্যর কারণে জীবন-জীবিকার তাগিদে বার্মায় চলে যান তিনি। সেখানে ১০/১২ বছর অবস্থান করেন। বার্মা থেকে দেশে ফিরে বিয়ে করেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসে মেডিকেল ছাত্রদের আবাসস্থলে উঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করলে তিনিও তাতে যোগ দেন এবং পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
২. ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়াতে জন্ম নেন ভাষাশহিদ আব্দুস সালাম। সরকারি পিয়ন হিসেবে চাকরি করতেন এবং নীলক্ষেত ব্যারাকে থাকতেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতার সাথে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন। দেড় মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ এপ্রিল ১৯৫২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঘ. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রজনতা ঢাকার রাজপথে মিছিল করলে তাতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। আর পুলিশের গুলিতে শহিদ হন সালাম, জববার, রফিক, বরকত ও সফিউরসহ আরও অনেকে। এ ঘটনা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। ফলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫২ সালের পর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল। দিবসটিকে বাঙালিরা জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করত। কিন্তু কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালির প্রাথমিক উদ্যোগে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মপ্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর তাই ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। তাছাড়া ২০১০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে বিল পাস হয়।
অতএব, উক্ত আন্দোলন জাতীয়তার গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আজ স্বীকৃত- উক্তিটি যথার্থ।
৩. "আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখ- বস্ত্র মানবিক;
আসাদের সার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা"।
ক. জাতিসংঘের কোন অঙ্গসংগঠন একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা দেয়?
খ. ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ‘ছয় দফার' গুরুত্ব লেখ।
গ. উদ্দীপকের কবিতার লাইনগুলো তোমার পাঠ্যবইয়ের যে আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয় তার পটভূমি সম্পর্কে লেখ।
ঘ. উক্ত আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. জাতিসংঘের অন্যতম একটি অঙ্গসংগঠন হলো UNESCO এ সংগঠনটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে ঘোষণা দেয়।
খ. ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ছয় দফা ছিল বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি। ছয় দফা কর্মসূচি অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালি জাতিকে সংগ্রামের শক্তি যুগিয়েছিল। প্রেরণা যুগিয়েছিল স্বৈরাচারী ও গণবিরোধী শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। আইয়ুব সরকার বাঙালি জাতীয়তাবাদকে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনকে যতই নিষ্ঠুরভাবে দমন করার জন্য অত্যাচার-নিপীড়ন চালাচ্ছিলেন ততই আন্দোলন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই পরিণতি ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন হয়। সত্যিকার অর্থে ছয় দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ ও বাঙালির ম্যাগনাকার্টা।
গ. উদ্দীপকের কবিতার লাইনগুলো আমার পাঠ্যবইয়ের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আলোচ্য উদ্দীপকের কবিতার অন্যতম একটি চরিত্র 'আসাদ'। তার রক্তাক্ত সার্ট আমাদের ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আসাদের মতো অন্য অনেকের রক্তাক্ত দেহের কারণে আমরা আমাদের প্রাণের পতাকা পেয়েছি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালিদের জাতীয় জীবনে কালজয়ী ঘটনাসমূহের মধ্যে অন্যতম। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যখন মিছিলসহ প্রাদেশিক আইন পরিষদের দিকে অসসর হয় তখন পুলিশের গুলিতে সালাম, জববার, রফিক, বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেকে শহিদ হন। পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যার এ সংবাদ বাংলার আনাচে-কানাচে দাবানলের মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনে শুধু যে শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং শ্রমজীবী মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল তা নয়। গ্রামের সাধারণ জনগণ ও এ হত্যার প্রতিবাদে প্রচন্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, এবং দলে দলে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে যোগদান করে। মূলত ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর গঠিত 'তমদ্দুন মজলিস' কর্তৃক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি সর্বপ্রথম উত্থাপন করা হয়। ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে বাঙালিদের প্রথম স্বাধিকার আন্দোলন। ফলে বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাঙালি ভাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে।
ঘ. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে বাঙালিদের প্রথম স্বাধিকার আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে আমার মতামত হলো এ আন্দোলন বাঙালিদের জাতীয় জীবনে কালজয়ী ঘটনাসমূহের মধ্যে অন্যতম।
বায়ান্নের পথ ধরে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তর সালের জাতীয় নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বীয় ঐতিহ্যে চিরভাস্বর। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে কাউকে রফিক, সালাম, বরকত, জববারের মতো বুকের তাজা রক্ত ঝরাতে হয়নি। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে নির্মিত হয় বাংলাদেশের প্রথম শহিদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতি ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় লাভ করে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্তের শপথ নিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর বাঙালি জাতি অর্জন করে নিজ দেশ, নিজ ভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি।
উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, বাঙালি জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে ভাষা আন্দোলনের ত্যাগের ইতিহাস সবসময় ভূমিকা রাখবে।
৪. ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’
ক. কোন গভর্নর জেনারেলের শাসনামলে বঙ্গভঙ্গ হয়?
খ. অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ লেখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কবিতার লাইনটি তোমার পাঠ্যবইয়ের যে ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয় তার পটভূমি বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত ঘটনাটি বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সর্বপ্রথম বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত করে তোলে- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জনের শাসনামলে বঙ্গভঙ্গ হয়।
খ. ১৯২২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ জনতা গোরাখপুরের চৌরিচৌরা নামক স্থানে চৌরিচৌরা থানায় অগ্নিসংযোগ করে ২১ জন সিপাহি ও একজন দারোগাকে জীবন্তু অগ্নিদগ্ধ করে মেরে ফেললে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এদিকে ব্রিটিশ সরকার শীঘ্রই তাঁকে গ্রেফতার করে এবং সেই সাথে আন্দোলনকারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করে। ফলে অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে পড়ে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কবিতার লাইনটি আমার পাঠ্যবইয়ের মহান ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে। সর্বপ্রথম আঘাত হানা হয় মাতৃভাষা বাংলার ওপর। পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জনের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। উর্দু কোনো অঞ্চলেরই মাতৃভাষা ছিল না। অথচ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে পাকিস্তানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে যে আন্দোলন শুরু হয় তাই ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর 'তমদ্দুন মজলিশ' নামক একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এটিই ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগঠন। এ সংগঠনের উদ্যোগে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু' প্রকাশিত হয়। পুস্তিকাটিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলা দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। তমদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপদানের জন্য ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে গঠিত হয় প্রথম 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ', যার আহবায়ক মনোনীত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁঞা। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গৃহীত হলে পূর্ব বাংলার ছাত্র, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীরা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। এ সময় ঢাকায় গঠিত 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' দাবি উত্থাপন করে যথা- ১. বাংলা ভাষাই হবে পূর্ব বাংলার শিক্ষার বাহন এবং অফিস আদালতের ভাষা; ২. পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা দুটি- বাংলা ও উর্দু। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য সামসুল হক আহবায়ক হয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নতুন কমিটি গঠন করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে কার্যক্রম আরও জোরদার করেন। সুতরাং মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ছিল বিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত।
ঘ. উক্ত ঘটনাটি অর্থাৎ মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সর্বপ্রথম বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত করে তোলেত উক্তিটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
ভাষা আন্দোলন পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে এক নতুন জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটায়। চেতনা ক্রমে ক্রমে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয় এবং বাঙালিদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে জাগ্রত করে। তাই এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের প্রথম গণচেতনার সুসংগঠিত বহিঃপ্রকাশ এবং পরবর্তীকালে শাসকচক্রের বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। বন্তুত পাকিস্তানের মাত্র ৭.২% লোকের ভাষা ছিল উর্দু। পক্ষান্তরে ৫৪.৬% জনগণের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা বাঙালিরা স্বভাবতই মেনে নিতে চায়নি। এর সাথে তাদের জীবিকার্জনের প্রশ্নও জড়িত ছিল। শাসকদের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ায় বাঙালিদের চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর সাথে যুক্ত ছিল রাজনীতিসহ সর্বত্র বাঙালিদেরকে বঞ্চিত করার পশ্চিমা মানসিকতা। এজন্য ভাষা আন্দোলন বাঙালিকে মুসলিম লীগের মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও দ্বি-জাতিতত্ত্বভিত্তিক জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে। তাই অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায় হিসেবে বাঙালিরা বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠাকে বেছে নেয়। এ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাই ষাটের দশকে স্বৈরশাসন বিরোধী ও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে আন্দোলনে প্রেরণা জোগায়। মহান ভাষা আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়েই বাঙালি জাতি পাকিস্তান শাসকচক্রের প্রতিটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয় এবং পরিশেষে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, ঘটনাটি অর্থাৎ মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালি জনগোষ্ঠীকে সর্বপ্রথম বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত করে। তোলেত উক্তিটি যথার্থ ও সার্থক।
৫. ডিম্পেল হিরানি বাস করেন দক্ষিণাংশে যেখানে দেশটির উত্তর অংশ থেকে অনেক বেশি সমৃদ্ধি চোখে পড়ে। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতির বসবাস ছিল এ উত্তর অংশে। শাসন ক্ষমতায় পিছিয়ে থাকা এ জাতি তাই এক সময় স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলতে বাধ্য হয়।
ক. জাতিসংঘের কোন সংগঠন একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে?
খ. ড. হালিমা খাতুনকে কেন ভাষাকন্যা বলা হয়?
গ. ডিম্পেল হিরানির দেশের দু অংশের সমৃদ্ধির পার্থক্য পাকিস্তান শাসনামলে বাংলাদেশের কোন অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত অবস্থায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক বিষয়ু পাকিস্তানি শাসনের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. জাতিসংঘের সংগঠন ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
খ. মহান ভাষা আন্দোলনে ড. হালিমা খাতুন অনবদ্য ভূমিকা রাখায় তাঁকে ভাষাকন্যা বলা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর ওপর দায়িত্ব ছিল মুসলিম গার্লস স্কুল এবং বাংলাবাজার গার্লস স্কুল থেকে মেয়েদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় (ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখ চত্বর) আসা। তিনি কাজটি সময়মতো করতে পেরেছিলেন। ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর দল ছিল দল। পুলিশ পথ আটকালে তাঁরা পুলিশের রাইফেল মেয়েদের প্রথম ঠেলে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান। পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস ছুড়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ড. হালিমা খাতুন বিন্দুমাত্র দমে না গিয়ে ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার রাস্তায় নেমে আসেন এবং গণপরিষদ ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করলে মেডিকেল ছাত্র হালিমা খাতুন আহতদের হাসপাতালে নিতে সহযোগিতা করেন।
গ. ডিম্পেল হিরানির দেশের দু অংশের সমৃদ্ধির পার্থক্য পাকিস্তান শাসনামলে বাংলাদেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
১৯৪৮-৫৫ সময়কালে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয় যথাক্রমে ১৫৩০ কোটি টাকা ও ২৪০ কোটি টাকা। ১৯৪৭-৫৫ সময়কালে কেন্দ্রীয় সরকারের মোট ব্যয়ের মাত্র ১০% ব্যয় হয় পূর্ব পাকিস্তানে। ১৯৬০-৬১ থেকে ১৯৬৪-৬৫ সালে পশ্চিম পাকিস্তান লাভ করে ২২,২৩০ মিলিয়ন টাকা আর পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা ছিল ৬,৪৮০ মিলিয়ন টাকা। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানে পর্যায়ক্রমে তিনটি রাজধানী শহর (করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদ) নির্মাণ করা হয়। করাচির জন্য ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ৫,৭০০ মিলিয়ন টাকা ব্যয় হয় যে সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে মোট সরকারি ব্যয়ের হার ছিল মাত্রা ৫.১০%। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইসলামাবাদের উন্নয়নের জন্য ৩,০০০ মিলিয়ন টাকা ব্যয় করা হলেও ঢাকার উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয় মাত্র ২৫০ মিলিয়ন টাকা। পশ্চিম পাকিস্তানে ভবন নির্মাণ, আসবাবপত্র ক্রয়, স্টাফদের বাসাবাড়ি নির্মাণ প্রভৃতিতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় তার একচেটিয়া সুবিধা পায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা। ফলে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ কয়েকগুণ পিছিয়ে পড়ে। সুতরাং উক্ত পার্থক্য পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের যে বৈষম্যমূলক নীতির প্রকাশ ঘটে তা স্বায়ত্তশাসনের দাবিকেই যৌক্তিক করে তোলে।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ৪২,০০০ কর্মকর্তার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের লোক ছিল ২,৯০০ জন। ১৯৬৬ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানি গেজেটেড কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১,৩৩৮ ও ৩,৭০৮ জন এবং নন-গেজেটেড কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২৬,৩১০ ও ৮২, ৯৪৪ জন। ১৯৬২ সালে ফরেন সার্ভিসে পূর্ব পাকিস্তানিদের অবস্থান ছিল ২০.৮%। ১৯৬৮ সালে প্রতিরক্ষা সার্ভিসের অফিসারের ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের মধ্যে অনুপাত ছিল ১০ : ৯০। সর্বোপরি স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, ডাকঘর, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাঙালিদের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানিরা বেশি সুবিধা ভোগ করত। পাকিস্তানি শাসকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষা ও সুসমৃদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার চক্রান্টে লিপ্ত হয়। রবীন্দ্র সঙ্গীত ও রচনাবলি নিষিদ্ধ করার চেষ্টার পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ পালনকে হিন্দু সংস্কৃতি বলে সেখানেও বাধাদানের চেষ্টা করে। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৃষ্ট বৈষম্য, নির্বাচনে প্রাপ্য ফলাফল লাভে ব্যর্থতা, পূর্ব পাকিস্তানের অরক্ষিত ব্যবস্থা ইত্যাদি কারণে কালক্রমে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরদার হয়। সুতরাং উক্ত অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক বিষয় উক্তিটি যথার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ।
৬. অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ইতিহাস ক্লাসে বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনাকালে বললেন, ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুসলিম লীগের মোকাবিলা করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করে। জোট একুশ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসের এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে এবং যুক্তফ্রন্ট বিপুল সংখ্যাধিক্যে জয়লাভ করে। ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এ মন্ত্রিসভা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। তবে মন্ত্রিসভা বেশিদিন টিকে থাকতে পারে নি।
ক. কখন যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়?
খ. ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের ফলাফল কী ছিল?
গ. অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে কর্মসূচির ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করার যেসব বিষয় ব্যক্ত করেছেন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রাদেশিক নির্বাচনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করা হয়।
খ. সর্বজনীন ভোটাধিকার এবং স্বতন্ত্র নির্বাচকমন্ডলীতএ ভিত্তিতে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক আইন পরিষদের মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২৩টি আসন লাভ করে। অন্যান্য আসনগুলোর মধ্যে মুসলিম লীগ ৯টি আসন, নির্দলীয় সদস্যগণ ৪টি এবং খিলাফতে রাববানী ১টি আসন লাভ করে। এ নির্বাচনের ৭২টি আসন অমুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
গ. যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি প্রচারণা ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। একুশ দফার প্রধান দফা ছিল পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দফাগুলো ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদান, বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমীতে রূপান্তর, ভাষা আনেদালনের শহিদের জন্য শহিদ মিনার নির্মাণ, ২১ ফেব্রুয়ারিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি, পাট শিল্প জাতীয়করণ, পাট চাষিদের ন্যায্যমূল্য প্রদান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ, সেচ পরিকল্পনা গ্রহণ, বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন ইত্যাদি।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচনটি হলো ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন। এ নির্বাচনের তাৎপর্য নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
১. মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রভাব : এ নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ নির্বাচনে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
২. জাতীয়তাবাদ : এ নির্বাচন ছিল মূলত পূর্ব বাংলার জনতার বিজয়। তাদের এ জাতীয়তাবাদী চেতনার ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।
৩. জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস : এ নির্বাচন প্রমাণ করেছে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ এ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে প্রত্যাখ্যান করে।
৪. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি : এ নির্বাচনে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকলেই ঐক্যবদ্ধ ছিল।
৫. মুসলিম লীগের শাসনের অবসান : এ নির্বাচন পূর্ব বাংলায় মুসলিম লীগের শাসনের অবসান ঘটায়।
৬. বিরোধী দলের বিকাশ : এ নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের বিকাশ ঘটে।
৭. জনপ্রতিনিধিতব : এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের ফলে পূর্ব বাংলার আইনসভায় জনপ্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হয়।
৮. বাংলার রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি লাভ : এ নির্বাচনের ফলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বুঝতে পারে। ফলে গণপরিষদ উর্দুর সাথে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তফ্রন্টের এ ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল বিজয় কুশাসন ও শোষণে জর্জরিত পূর্ব বাংলার জনগণের বিজয়। এ নির্বাচনের বিজয়কে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে জনগণের ঐক্যবদ্ধ রায় বলা হয়। অধিকন্তু এ বিজয়কে ভাষা আন্দোলনের ফলশ্রুতি বলেও গণ্য করা যায়।
৭. 'ক' ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দুঃশাসনের প্রতিকারকল্পে জিলস্নুর রহমানের নেতৃতেব আরও কয়েকজন একত্রিত হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বনি্দ্বতা করে। এতে জিলস্নুর রহমানের দল বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। কিন্তু প্রশাসনকে হাত করে পূর্বের চেয়ারম্যান পুনরায় তার দুর্নীতির কালোছায়া বিস্তার করে।
ক. কত সালে ৬ দফা প্রণয়ন করা হয়?
খ. ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটির সাথে বাংলাদেশের কোন ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যান যেন পাকিস্তানি শোষকের বাস্তব চিত্র। তুমি কী একমত? মতামত দাও।
🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯৬৬ সালে ৬ দফা প্রণয়ন করা হয়।
খ. মৌলিক গণতন্ত্র, আগরতলা মামলা ও আইয়ুব খানের নির্যাতনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের উভয় অংশে ১৯৬৯ সালে এক দুর্বার গণ আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ প্রভৃতি দাবি নিয়ে এ গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়। এ আন্দোলনকে বেগবান করতে সকল বিরোধীদল ঐক্যবদ্ধ হয়। ফলে সারা দেশব্যাপী শুরু হয় তীব্র গণআন্দোলন। আর এটাই ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান হিসেবে পরিচিত।
গ. উদ্দীপকে 'ক' ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দুঃশাসনের প্রতিকারকল্পে জিলস্নুর রহমান অন্যান্যদের সাথে জোট বেধে নির্বাচনে প্রতিদ্বনি্দ্বতা করে। এতে জিলস্নুর রহমানের দল বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। কিন্তু পূর্বের চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ফন্দি আঁটে। এ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসের ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের প্রতিচিত্র উপস্থাপন করেছে। ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলো নিয়ে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট একটি নির্বাচনি জোট গঠন করে। নির্বাচনের প্রাক্কালে সর্বস্তরের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ২১ দফা বিশিষ্ট একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। যেখানে বাঙালি নাগরিকদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের দিকগুলো তুলে ধরা হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর শেরে বাংলা একে ফজলুল হককে মুখ্যমন্ত্রী করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের এ পরাজয় সহজে মেনে নিতে পারে নি। ফলে মাত্র ৫৬ দিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করা হয় এবং পূর্ব বাংলায় গভর্নরের শাসন কায়েম করা হয়।
ঘ. উদ্দীপকে 'ক' ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বৈরাচারী ছিল। ফলে তার বিরুদ্ধে জিলস্নুর রহমানসহ আরও কয়েকজন মিলে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বনি্দ্বতা করে এবং জিলস্নুর রহমানের নেতৃতেব জোট জয়লাভ করে। কিন্তু চেয়ারম্যান তার পরাজয় মেনে নিতে পারে নি। সে কারণে প্রশাসনের সহায়তায় নানা রকম ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাই উদ্দীপকের এ চেয়ারম্যানের কার্যকলাপ যেন পাকিস্তানি শোষণের এক বাস্তব চিত্র কথাটির সাথে আমি একমত। কারণ উদ্দীপকের এ চেয়ারম্যানের মতোই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে নানারূপ ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। নির্বাচনে জয়লাভের পর একে ফজলুল হককে মুখ্যমন্ত্রী করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করে। কিন্তু পাকিস্তানি প্রশাসন তাদের পরাজয় সহজভাবে মেনে নিতে পারে নি। ফলে মাত্র ৫৬ দিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে তারা বরখাস্ত করে এবং পূর্ব বাংলায় গভর্নরের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধানও প্রণয়ন করা হয়েছিল। যেখানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু এ সংবিধানও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বেশিদিন মেনে নিতে পারে নি। ১৯৫৯ সালে জেনারেল আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ জারি করে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। এভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শোষকে পরিণত হয়।
৮. সবুজনগর অঞ্চলের ছোট দলগুলো স্বাধীনতাপূর্ব ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি কৌশল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। একতাবদ্ধ হয়। তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এক সুদীর্ঘ নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করে। জনগণ উক্ত জোটের ওপর সার্বিক আস্থা রেখে তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে নির্বাচনে জোটের নেতৃবৃন্দ বিপুল ভোটে জয়ী হন এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা চরমভাবে পরাজিত হন।
ক. আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
খ. 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' গড়ে তোলা হয় কেন?
গ. সবুজনগর অঞ্চলের ছোট দলগুলো স্বাধীনতাপূর্ব কোন ? নির্বাচন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে একতাবদ্ধ হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হলেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না'- পাঠ্যপুস্তকের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
খ. তৎকালীন সময়ে মুসলিম লীগের এক অংশ দেশ শাসনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে জনগণ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। অন্যদিকে, মুসলিম লীগের বঞ্চিত নেতাদের প্রতি জনসমর্থন বাড়তে থাকে। ফলে জাতীয় নেতৃবৃন্দদের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মুসলিম লীগের প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকেন এবং নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ফলে তারা ১৯৪৯ সালের জুন মাসে মওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন।
গ. সবুজনগর অঞ্চলের ছোট দলগুলো স্বাধীনতাপূর্ব ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি কৌশল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে একতাবদ্ধ হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুসলিম লীগ ছিল পুরাতন ও বড় দল। এছাড়া পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক সরকার পরিচালনা করত মুসলিম লীগ। ফলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো মুসলিম লীগকে পরাজিত করার কৌশল হিসেবে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ‘যুক্তফ্রন্ট' গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। যুক্তফ্রন্ট মূলত চারটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের কৃষক-শ্রমিক পার্টি, মওলানা আতাহার আলীর নেজাম-ই-ইসলামী পার্টি এবং হাজী দানেশের বাম গণতন্ত্রী দল। আওয়ামী মুসলিম লীগের নির্বাচনি কর্মসূচির ৪২ দফার প্রধান প্রধান দাবি নিয়ে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। জনগণ যুক্তফ্রন্টের ওপর সার্বিক আস্থা রেখে তাদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। ফলে যুক্তফ্রন্ট মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন লাভ করে বিজয়ী হয়। আলোচনা শেষে বলা যায়, সবুজনগর অঞ্চলের নির্বাচনের ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনি ঘটনা পুরোপুরি ফুটে উঠেছে।
ঘ. 'ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হলেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না' এ উক্তিটি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে আলোচিত ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের আলোকে ফুটে উঠেছে।
ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হলেই যে, জনসমর্থন আদায় করা যায় না, তার একটি উত্তম নিদর্শন ১৯৫৪ সালের নির্বাচন। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে জনগণের ওপর দমন ও নিপীড়ন চালাতে থাকে। যাতে মুসলিম লীগের জনসমর্থন হ্রাস পায়। পক্ষান্তরে, অন্যান্য দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া, তাদের জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড এবং নির্বাচনি ইশতেহার ২১ দফার মধ্যে জনগণের স্বার্থ নিহিত ছিল। ফলে যুক্তফ্রন্ট জনগণের পূর্ণ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়। যার প্রমাণ মেলে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মোট ৩০৯টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের ২২৩টি আসন লাভের মধ্য দিয়ে। পক্ষান্তরে, ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী দল মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসন লাভ করে জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়।
উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী হলেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না। বরং নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য দরকার জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডের দ্বারা জনগণের আস্থা অর্জন করা।
৯. ফিনল্যান্ডে পথে পথে ফল বিক্রি করেন প্রবাসী বাংলাদেশি। যুবক কায়সার। হঠাৎ দেখতে পায় অনেক ছেলেমেয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। কাছে গিয়ে জানতে পারে তার দেশের জাতীয় সেই শোক দিবসটি আজ আন্তর্জাতিক দিবসে পরিণত হয়েছে। তাই সুদূর ফিনল্যান্ডেও এতসব আয়োজন।
ক. আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি কে?
খ. ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বিশেষভাবে স্মরণীয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. কায়সারের সামনে পালিত হওয়া শোক দিবসটি কীভাবে আন্তর্জাতিক দিবসে পরিণত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত শোক দিবস আজ সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন- বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি হলেন মওলানা ভাসানী।
খ. ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম ব্যক্তি যিনি ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি সদস্যদের বাংলায় বক্তৃতা প্রদান এবং সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ইংরেজিতে প্রদত্ত বক্তৃতায় বাংলাকে অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে ধীরেনদ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবি তোলেন। এছাড়া সরকারি কাগজে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্টের প্রতিবাদ জানান তিনি। খাজা নাজিমউদ্দিন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতা দেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এ প্রস্তাবটিকে পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। অনেক বিতর্কের পর সংশোধনটি ভোটে বাতিল হয়ে যায়।
গ. কায়সারের সামনে পালিত হওয়া শোক দিবসটি হলো একুশে ফেব্রুয়ারির শহিদ দিবস। দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়াতেই সুদূর ফিনল্যান্ডেও বসেও কায়সার সেখানকার মানুষকে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে দেখছে। দিবসটির আন্তর্জাতিক মর্যাদাদানের জন্য চিঠি লিখে ১৯৯৮। সালের ৯ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম নামের এক কানাডা নিবাসী বাঙালি জাতিসংঘের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি কফি আনানকে পাঠান। রফিক চিঠিতে ১৯৫২ সালে ভাষা শহিদদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি সেক্রেটারি জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হাসান ফেরদৌস রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্যকোনো সদস্যরাষ্ট্রের কারও কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। তখন রফিক তার সহযোদ্ধা আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড (A Group of Mother Language of the World) নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। উক্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে কফি আনানকে চিঠি লিখেন এবং চিঠির একটি কপি ইউএনও (UNO)-এর ক্যানাডিয়ান অ্যাম্বসাডের ডেডিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করেন। ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাসান ফেরদৌস সাহেবের উপদেশে রফিক ও সালাম ইউনেস্কোর ভাষা বিভাগের জোশেফ পড়ের সাথে এবং পরে ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন। আনা মারিয়া প্রস্তাবটি ৫টি সদস্য দেশ কানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হওয়ার কথা বলেন। ১৯৯৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর দপ্তরে পাঠানো হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সভার প্রথমেই প্রস্তাবটি উত্থাপিত হলো এবং ইউনেস্কোর সভায় উপস্থিত ১৮৮টি দেশের প্রতিনিধিরা সাথে সাথেই সমর্থন জানালো। সর্বসম্মতিক্রমে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে গৃহীত হলো ইউনেস্কোর সভায়। এভাবে দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবসে পরিণত হয়েছে।
ঘ. উক্ত শোক দিবস অর্থাৎ একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার্থে এদেশের ছাত্র জনতা প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল করলে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। ফলে ভাষার জন্য শহিদ হয় সালাম, বরকত, রফিক, শফিউরসহ অনেকে। শোকের কালো ছায়া পড়ে বাঙালি সমাজে। কিন্তু না এখানেই থেমে না গিয়ে বীর বাঙালি দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করে প্রতিবছর গর্জে উঠেছে পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে। পাকিস্তান শাসনামলেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। এরপর ১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কোর এক সভায় ১৮৮ দেশের সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়। বর্তমান বিশ্বে জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে যথার্থ গুরুত্বসহকারে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী ও জাতিসত্তার মানুষ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালনের মাধ্যমে মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানায় এবং সমগ্র চেতনায় লালন করে কালজয়ী বাংলা ভাষাকে। এ এক অনন্য অর্জন। সুতরাং শোক দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি আজ সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন উক্তিটি যথার্থ এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
১০. সাংবাদিক আবু নাসের সাহেব ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে কোনো মতেই একাত্ম নয়। তিনি মনে করেন যে, ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, সে ছাত্ররাই বড় রাজনীতিবিদ হয়ে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে। ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তের ইতিহাস জাতি আজও ভুলে যায়। নি। ছাত্রদের অন্যতম কাজ অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করা।
ক. কে ঘোষণা দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু?
খ. ভাষা আন্দোলনে শিক্ষকদের অবদান অবিস্মরণীয় ব্যাখ্যা কর।
গ. আবু নাসের সাহেবের বক্তব্যে যে আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উক্ত আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সকল শ্রেণি পেশার মানুষ জড়িত ছিল বিশ্লেষণ কর।
🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. খাজা নাজিমুদ্দীন ঘোষণা দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এছাড়াও ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহও একই ঘোষণা দেন।
খ. পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়। রাষ্ট্রভাষা উর্দুর বিপক্ষে এবং বাংলার সপক্ষে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও মতামত দেন। তমদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে ভাষা আনেদালনকে রাজনৈতিক রূপদানের জন্য ৪৭-এর অক্টোবর মাসে গঠিত হয় প্রথম 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' যার আহবায়ক মনোনীত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল হক ভুঞা। সুতরাং বলা যায়, ভাষা আন্দোলনে শিক্ষকদের এক অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে।
গ. আবু নাসের সাহেব মায়ের মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে আন্দোলনের কথা বলেছেন তা ছিল ছাত্রদের দ্বারা সংঘটিত। যদিও এই আন্দোলনে অন্য পেশার মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল। পাঠ্যবইয়ে মায়ের মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন পাই তা ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত। তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
'নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হবে?' এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রভাষা সৃষ্টির পূর্বেই। সেসময় মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ও বুদ্ধিজীবীরাও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা-এ মর্মে মতামত দেন। তখনই ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ বাংলার বুদ্ধিজীবী লেখকগণ এর প্রতিবাদ করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়। এটিই ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রথম সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপদানের জন্য ৪৭-এর অক্টোবর মাসে গঠিত হয় প্রথম 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ', যার আহবায়ক মনোনীত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নূরুল হক ভুঞা। ১৯৪৮ সালের প্রথম থেকেই শিক্ষিত বাঙালি সমাজ বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ দেশের ছাত্রসমাজ বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। এর আহবায়ক মনোনীত হন। শামসুল আলম। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নতুন কমিটির আহবানে ১১ মার্চ ধর্মঘট পালিত হয়। তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তিতে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষার মাধ্যম বাংলা, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব আইন পরিষদে উত্থাপন প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর ১৯ মার্চ গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পুনরায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিলে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ তা প্রত্যাখান করে এবং বাংলার দাবীতে আন্দোলন বেগবান হয়। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তের বিনিময়ে বাংলাভাষা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করে।
ঘ. ছাত্ররা ভাষার দাবিতে যে আন্দোলন করেছিল আবু নাসের তার কথা বলেছেন। উক্ত আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি সকল শ্রেণি পেশার মানুষ জড়িত ছিল, নিচে তা পাঠ্যবই অনুসরণে বিশ্লেষণ করা হলো-
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে ‘উর্দু’, পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এ ঘোষণা দিলে বাংলার শিক্ষক সমাজ এর প্রতিবাদে সোচ্চার হন। অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশের ব্যানারে প্রতিবাদের প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে। পরবর্তীতে অধ্যাপক নূরুল হক ভূঞার নেতৃত্বে 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা 'বাংলা' করার দাবীতে রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন এর সাথে এক চুক্তি সাক্ষার হয়। যাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব আইন পরিষদে উত্থাপিত হবে মর্মে শর্তারোপ করা হয়।
এ চুক্তির পরই ১৯৪৮ সালের ২১ ও ২৪ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পুনরায় উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিলে, ছাত্ররা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানায়। একই সালের ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আবারো একই ঘোষণা দিলে ছাত্ররা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীন পল্টনে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারী ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। এর পরপরই সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিলে সরকার ঐ দিন ১৪৪ ধারা জারি করে। এতে ছাত্ররা আরো ক্রদ্ধ হয়ে উঠে এবং ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার লক্ষ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি সকল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্র সভা আহবান করে। ঐ সভায় ছাত্র শিক্ষক, ব্যবসায়ী সহ সকল শ্রেণির মানুষ যোগ দেন এবং সভাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে শহিদ হয় আবদুস সালাম, আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ ও আবদুল জববার। আর তাদের রক্তের উর্বরতায় বাংলা রাষ্ট্রীয় ভাষায় মর্যাদা লাভ করে। ছাত্র-গণমানুষের আন্দোলনের বিজয় সূচিত হয়। যা পরবর্তীতে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেরণা যোগায়।
0 Comments:
Post a Comment