HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

 ইতিহাস 
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
তৃতীয় অধ্যায় : ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন : ব্রিটিশ আমল

ব্রিটিশ রাজ্যের ইতিহাস বলতে ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী ব্রিটিশ শাসনের সময়কালকে বোঝায়। এই শাসনব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ব্রিটিশ রাজ বা রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। যাঁকে ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে 'এমপ্রেস অফ ইন্ডিয়া' বা 'ভারতের সম্রাজ্ঞী' বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এই শাসন ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল যখন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ প্রদেশগুলিকে ভাগ করে দুটি অধিরাজ্য বা ডমিনিয়ন সৃষ্টি করা হয়। এই দুটি ছিল যথাক্রমে ভারত অধিরাজ্য ও পাকিস্তান অধিরাজ্য। দেশীয় রাজ্যগুলিকে এই দুটি দেশের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এই অধিরাজ্য দুটি পরবর্তীকালে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান-এ পরিণত হয়। পাকিস্তানের পূর্ব অংশ বা পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এ পরিণত হয়। ভারত সাম্রাজ্যের পূর্বদিকের বার্মা প্রদেশটিকে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি আলাদা উপনিবেশে পরিণত করা হয়। বার্মা ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা লাভ করে।

ব্রিটিশ আমলের অর্থনৈতিক অবস্থা
উপনিবেশিক শাসনকাঠামো প্রতিষ্ঠিত করে প্রাচীন শাসনকাঠামো ভেঙ্গে উপনিবেশিক শাসকগণ নিজেদের শাসন ও শোষণের অনুকূল এক নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সৃষ্টি করেন। যার মূল লক্ষ্য ছিল সম্পদ লুষ্ঠন ও রাজস্ব সংগহ। ব্রিটিশদের প্রবর্তিত ভূমি বন্দোবস্ত প্রথা, চিরস্থায়ী ব্যবস্থা, ভূমির মালিকানা স্বত্ব প্রদান, কর আদায় ও কর ধার্যের নতুন নতুন রীতি-নীতি বাংলার অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। মোটা অঙ্কের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা পাল্টিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে। এ ব্যবস্থা এক শ্রেণীর নতুন জমিদারের সৃষ্টি করে। রাজস্ব ও কর আদায়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর জন্ম হয়। ব্রিটিশ শাসক, জমিদার আর মধ্যন্বত্বভোগী এই তিন শ্রেণীর শোষণ-নিপীড়ন বাংলার কৃষককে পঙ্গু করে ফেলে। এরপরও ব্রিটিশরা তাদের শিল্প বিপুবের স্বার্থে চালু করে জবরদস্তিমূলক নীল চাষ। নীল চাষ একদিকে জমির উৎপাদন হ্রাস করেছে অন্যদিকে কৃষককে তার দীর্ঘদিনের স্ব-উপার্জিতি অর্থনীতি থেকে উৎখাত করেছে। ব্রিটিশদের প্রবর্তিত কৃষি নীতির ফলে বাংলার সম্পূর্ণ গ্রাম্য অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। কৃষক বাজার ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ প্রবর্তিত অর্থনীতি বাংলায় এক শ্রেণীর পুঁজিপতিরও সৃষ্টি করে। পরবতীতে এই পুঁজিপতি খ্র্ণীই বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ব্রিটিশ আমলের সামাজিক অবস্থা
ব্রিটিশ প্রবর্তিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে বাংলার সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলা তথা ভারতবর্ষের জনগণ প্রভাব প্রতিপত্তি হারিয়ে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে মুসলমানদের অবস্থা ছিলো সবচে করুণ। মুসলমানরা রাতারাতি শাসক থেকে ‘‘ভূৃত্যে’’ পরিণত হয়। ব্রিটিশদের "ভাগকর, শাসন কর নীতির" প্রেক্ষাপটে, ব্রিটিশদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দুদের মধ্যে ধীরে ধীরে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ ঘটে। এর ফলে সমাজ জীবনে প্রচলিত অনেক অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোড়ামি ও সামাজিক রীতি-নীতির বিলুপ্তি ঘটে। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ফলে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন, বিধবা বিবাহ চালু, আলীগড় আন্দোলন ও ফরায়েজী আন্দোলন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মূলতঃ ব্রিটিশ শিক্ষার প্রভাবেই ভারতবর্ষ থেকে বাল্যবিবাহ ও সতীদাহ পুথার বিলুপ্তি ঘটে। পরিবর্তন আসে বর্ণ প্রথার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সামাজিক স্তর বিন্যাসেও। শিক্ষিত ও চাকুরিজীবী শ্রেণীর গুরুত্ব বেড়ে যায়। জাতি, বর্ণ ও বংশ মর্যাদার গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। একথা সত্য, ইংরেজী শিক্ষা, পুঁজিবাদের প্রসার আর নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর কারণে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। অল্প মাত্রায় হলেও এ সময়ই নারী শিক্ষার প্রচলন শুরু হয়। তবে ঠিক, উপনিবেশিক স্থার্থে এ সময়ই বিষবৃক্ষের মতো বেড়ে ওঠে সাম্প্রদায়িকতা। ইংরেজরা যেহেতু মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করে, সঙ্গতঃ কারণেই মুসলমানরা ছিলো তার পয়লা নম্বর দুশমন। উপরন্তর মুসলমানরা ছিলো সংখ্যালঘু। সাম্রাজ্য বিস্তারের শুরদতে ইংরেজরা তাই হিন্দুদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া শুরু করে। এর ফলে হিন্দু জমিদার শ্রেণীর বিকাশ ঘটে, জমিদারি হারিয়ে মুসলমান ধনীক শ্রেণী দরিদ্র কৃষকে পরিণত হয়।

ব্রিটিশ আমলের রাজনৈতিক অবস্থা
ইংরেজ শাসনের ফলে এদেশে সমাজ-সংস্কৃতি, জীবন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক কাঠামো তথা চিন্তা চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে যার ছোঁয়া লাগে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও। ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী অচিরেই ইংরেজদের পক্ষ ত্যাগ করে স্বাধীনতা আন্দালন শুরু করে। ইংরেজী শিক্ষা বিকাশের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয় ৷ এর ফলে প্রথমে দাবি ওঠে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদারিত্র, পরিবর্তিতে তা ব্রিটিশ সরকারকে ‘‘অসহযোগিতায়' রূপ নেয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য বিস্তারের সূচনা বাংলা প্রদেশ থেকে। আবার ইতিহাসের নির্মম পরিণতি, সেই বাংলা থেকে ‘ব্রিটিশ তাড়াও’ আন্দোলনের সূচনা। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্ধোহ তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে ইংরেজ শাসন-শোষণ অবসানের লক্ষই।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষক সমাজ প্রচন্ড আঘাত প্রাপ্ত হয়। এর ফলে সমাজকাঠামোতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা গণতন্ত্রায়ন এবং প্রতিনিধিতৃশীল প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এ ব্যবস্থার ফলে কৃষকরা জমির মালিকানা হারিয়ে উৎপাদক শ্রেণীতে পরিণত হয়। এই সামন্ত প্রথার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যই ১৮ শতক ও ১৯ শতক ব্যাপী সারা বাংলায় কৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। যার মধ্যে রংপুর কৃষক বিদ্রোহ (১৭৮৩), চাকমা বিদ্রোহ (১৭৭০-১৭৮৭), বরিশালে বলাকী শাহ-এর বিদ্বোহ (১৭৯২), ময়মনসিংহে পাগলপন্থী বিদ্রোহ (১৮২৩-১৮৩৩), নীল বিদ্রোহ (১৮৬০) অন্যতম। কেন্দ্রিয় নেতৃত্বের অভাব ও প্রবল দমন পীড়নের মুখে এসব বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তা গ্রামীণ কৃষকের রাজনৈতিক সচেতনতাকে উপস্থাপন করে।

ব্রিটিশ শাসনামলেই প্রথম ভারত উপমহাদেশে রাজনৈতিক দলের জন্মু হয়। এর ফলে রাজনৈতিক আন্দোলন- সংগাম একটি সর্বভারতীয় কাঠামোগত রূপ পায়। ১৮৮৫ সালে "সর্ব ভারতীয় কংখেস' এবং ১৯০৬ সালে ‘‘সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ' নামক দু'টি রাজনৈতিক সংগঠন জন্ম লাভ করে। এ দু'টি দলই ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বাস্তবিক রূপ দেয়।

পরীক্ষা উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৩য় অধ্যায় : ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন : ব্রিটিশ আমল

১. আহসান সাহেব সস্ত্রীক এবারে লন্ডন গিয়েছিলেন। সেখানে রানি এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহণের ষাট বছর পূর্তি উৎসব চলছিল। বিভিন্ন রাজপ্রাসাদ জনগণকে দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে যেসব রাজা রানি শাসন করেছিলেন তাঁদের ছবি, আবক্ষ মূর্তি, তাঁদের কীর্তি জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল। আহসান সাহেবের স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, মহারানি ভিক্টোরিয়া কী জন্য ভারতবাসীর নিকট স্মরণীয়? আহসান সাহেব বললেন, ১৮৫৮ সালে এক রাজকীয় ঘোষণা বলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতবর্ষের শাসনভার ব্রিটিশ রানি স্বহস্তে গ্রহণ করেন।
ক. খিলাফত আন্দোলনের নেতাদের নাম লেখ।
খ. লাহোর প্রস্তাব কী?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ১৮৫৮ সালের মহারানির ঘোষণাটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ১৮৫৮ সালের মহারানির ঘোষণা দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটার ফলে কী কী পরিবর্তন সাধিত হয়? উদ্দীপকের আলোকে বর্ণনা কর।

🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মাওলানা মুহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখগণ খিলাফত আন্দোলনের নেতা ছিলেন।

খ. হিন্দু-মুসলিম জনগণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে ১৯৪০ সালে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে মুসলিম লীগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্ব উত্থাপন করেন। তাঁর মতে, ভারতে হিন্দু-মুসলমান দুটি পৃথক জাতি। জাতির যেকোনো সংজ্ঞা অনুযায়ী মুসলমান একটি জাতি। সুতরাং মুসলমানদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং সুন্দর জীবনযাপনের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র থাকা প্রয়োজন। তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক মুসলিম লীগের এ অধিবেশনে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেন তাই বিখ্যাত ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে নামে খ্যাত।

গ. ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে এক রাজকীয় ঘোষণায় মহারানি ভিক্টোরিয়া ভারতে কোম্পানি শাসনের বিলুপ্তি ঘোষণা করে ভারতের শাসনভার স্বহস্তে গ্রহণ করেন।
এ রাজকীয় ঘোষণায় মহারানি বলেন যে, ইতোপূর্বে কোম্পানি তাদের শাসনামলে ভারতীয় শাসক ও রাজন্যবর্গের সাথে যেসব বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন ও প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন সেগুলো সযত্নে পালিত হবে। ঘোষণায় আরও বলা হয় যে, ব্রিটিশ প্রজাদের মতোই বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল ভারতীয় প্রজাকে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে। ভারতীয় জনসাধারণের স্ব-স্ব ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করা হবে। মহাবিদ্রোহের সময় যারা ব্রিটিশ নরনারীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয় নি এবং যারা এখনও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছেন তাদের সকলের প্রতি রাজকীয় ক্ষমা প্রদর্শন করা হবে। উক্ত ঘোষণায় ভারতীয়দের কল্যাণ ও উন্নয়নের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলা হয় যে ভারতের জনগণের উন্নতিই সরকারের শক্তি বৃদ্ধি। ভারতীয়দের পরিতৃপ্তিই ব্রিটিশ সরকারের নিরাপত্তা। তাদের কৃতজ্ঞতাই ব্রিটিশ সরকারের জন্য শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হবে।

ঘ. ১৮৫৮ সালের মহারানির ঘোষণা দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটার ফলে ভারতের শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়।
১৮৫৮ সালের ২ আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এক আইন পাস করে ভারতের শাসনভার সরাসরি ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার হাতে অর্পণ করেন। কোম্পানির পরিচালক বোর্ড অব কন্ট্রোলের পরিবর্তে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের মধ্য থেকে একজনকে ভারত সচিবের পদে নিযুক্ত করেন এবং তিনি ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি কাউন্সিলের সাহায্যে ভারতের শাসনকার্য পরিচালনা করবেন স্থির হয়। ব্রিটিশ সিংহাসনের প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর জেনারেলকে ভাইসরয় বা রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়।
ব্রিটিশ মহারাণী শাসনভার গ্রহণ করার ফলে ভারতের জনগণ কোম্পানির নির্যাতন নিষ্পেষণ থেকে মুক্তিলাভ করে এবং সর্বক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি হয়। সমাজব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থা পর্যন্ত এবং শিক্ষাব্যবস্থা থেকে রাজনীতি পর্যন্ত সর্বস্থানেই ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়।

২. সুমী দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সে তার ইতিহাসের স্যারকে জিজ্ঞেস করল, খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন কেন সংঘটিত হয়েছিল, কে এসব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? স্যার এ দুটি আন্দোলন সম্পর্কে বুঝিয়ে বললেন। তিনি বললেন যে, এ দুটি আন্দোলনের নেতৃত্ব এক পর্যায়ে মহাত্মা গান্ধীর ওপর অর্পিত হয়েছিল।
ক. বঙ্গভঙ্গ হয় কত সালে?
খ. অসহযোগ আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
গ. খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে প্রকৃতিগত মিল-অমিল উদ্দীপকের আলোকে দেখাও।
ঘ. "এ দুটি আন্দোলনের নেতৃত্ব এক পর্যায়ে মহাত্মা গান্ধীর উপর অর্পিত হয়েছিল।" এ উক্তিটির আলোকে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বের মূল্যায়ন কর।

🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হয়।

খ. স্বদেশী পণ্যের প্রসার, বিলেতি পণ্য বর্জন এবং ইংরেজদেরকে অসহযোগিতার মাধ্যমে গান্ধীজী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ইতিহাসে তা অসহযোগ আন্দোলন নামে পরিচিত। গান্ধীজী হিংসাত্মক পথ বর্জন এবং সত্যাগ্রহকে কেন্দ্র করেই সরকারবিরোধী এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। অসহযোগ আন্দোলন ভারতের জাতীয় আন্দোলনের পরবর্তী পথ সুপ্রশস্ত করে।

গ. খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ভিন্ন ধারায় উৎসারিত হলেও এ দুয়ের মাঝে কিছু সাদৃশ্য বিদ্যমান। নিচে এ দুটি আন্দোলনের মিল অমিল দেখানো হলো-
১. খিলাফত আন্দোলন ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন।
২. অসহযোগ আন্দোলন একটি অহিংস এতে ধর্মের সংশ্লিষ্টতা নেই।
৩. খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন উভয়টিই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়।
৪. মুসলিম জাহানের খিলাফতের মর্যাদা রক্ষায় খিলাফত আন্দোলন সংঘটিত হয়।
৫. ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন সংঘটিত হয়।
দুটি আন্দোলনই গণজাগরণ তৈরি করতে সক্ষম হলেও পূর্ণতালাভের পূর্বেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত এ দুটি আনেদালন অর্থাৎ অসহযোগ ও খিলাফত আনেদালনের নেতৃতব এক পর্যায়ে মহাত্মা গান্ধীর ওপর অর্পিত হয়েছিল।
ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে যে মহান নেতারা অবিরাম সংগ্রাম করে গেছেন তাঁদের অগ্রভাগে ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২০ সালের মার্চ মসে গান্ধীজী অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। নেতৃত্বের গুণাবলি এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে এসময় গান্ধীজী খিলাফত আন্দোলনের মুসলমানদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন, খিলাফত ঘোষিত নীতিমালার প্রেক্ষিতে ১৯২০ সালের জুলাই মাসে সিন্ধু প্রদেশে অনুষ্ঠিত খিলাফত সম্মেলনে গান্ধীজী যোগদান করে কোটি মুসলমানদের সাহায্যে ২০ কোটি হিন্দু জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ স্ব-স্ব আন্দোলনের সমর্থনে পরস্পরের সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন অনুভব করেন। অতঃপর উভয় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অমৃতসরে এক সম্মেলনে মিলিত হয়ে গান্ধীজীর নেতৃত্বে যৌথভাবে আন্দোলন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উভয় আন্দোলনের যৌথ নেতৃত্ব গ্রহণ করে গান্ধীজী ১৯২০ সালের ১ আগস্ট ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের নীতিমালা ও অসহযোগ আন্দোলন যুক্তভাবে পরিচালিত হওয়ায় এটি শীঘ্রই এক দুর্বার আন্দোলনের রূপ ধারণ করে।

৩. 'ক' রাষ্ট্রে বহুদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করে আসছে। একসময় ঐ অঞ্চলে একটি বড় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ফলে শাসকবর্গ পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়কে দায়ী করে। ঐ সময় সেখানে ত্রাণকর্তা হিসেবে একজন মনীষীর আবির্ভাব ঘটে। তিনি তার সম্প্রদায়কে সকল গোঁগামি ত্যাগ করে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শাসকের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন সভা-সমিতি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ফলে তার সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সচেতনতা গড়ে ওঠে।
ক. ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?
খ. মুসলিম লীগ গঠনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মনীষীর সঙ্গে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন মনীষীর কাজের মিল আছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ভারতীয় মুসলমানদের চেতনা বিকাশে তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহ ও আন্দোলনের অবদান সর্বাধিক- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন।

খ. ভারত উপমহাদেশে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠিত হয়। মুসলিম লীগ গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে- ১. মুসলমানদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করা; ২. মুসলিম নেতৃবৃন্দের স্বতন্ত্রবাদী রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার ফল হিসেবে মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে ঐক্যের সৃষ্টি এবং ৩. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে এগিয়ে আসা ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের মনীষীর সঙ্গে আমার পাঠ্যবইয়ের স্যার সৈয়দ আহমদ খানের কাজের মিল আছে। উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রের অনুরূপ ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মের লোকজনের বসবাস ছিল। তারপর ১৮৫৭ সালে এখানে সিপাহি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ইংরেজ সরকার এ বিদ্রোহের জন্য মুসলমানদেরকে দায়ী করেন। এমন সময় ভারতীয় মুসলমানদের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন স্যার সৈয়দ আহমদ খান। মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের মানসিকতা পরিবর্তন করার জন্য তিনি 'সিপাহি বিদ্রোহের কারণ' ও 'ভারতের রাজভক্ত মুসলমান' নামে দুটি বই লিখেন। তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেন যে, সিপাহি বিদ্রোহের জন্য প্রকৃতপক্ষে মুসলমানরা দায়ী ছিলেন না। বরং বিদ্রোহকালে অধিকাংশ মুসলমান ইংরেজদের পক্ষে ছিলেন। ফলে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। তবে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের আন্দোলনের মূলকথা ছিল যে, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষায় মুসলমানদেরকে পারদর্শী হতে হবে। তিনি ইংরেজ সরকারকে সহযোগিতা করারও নির্দেশ দেন।

ঘ. ভারতীয় মুসলমানদের চেতনা বিকাশে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ও তার আন্দোলনের অবদান সর্বাধিকতউক্তিটি যথার্থ। স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও তাদের ভাবধারা প্রসারে উদ্যোগী হন। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উত্তর ভারতের গাজীপুরে একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞান সমিতি নামে একটি সংস্থাও গড়ে তোলেন। তিনি বিলাত ভ্রমণ করে পাশ্চাত্য ভাবধারা ও তাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিজের চোখে দেখে এসে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে 'তাহজিবুল আখলাক' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি 'ভারতীয় মুসলমানদের জন্য ‘শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি' নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আলীগড়ে ‘মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। দুই বছর পর এটি কলেজে উন্নীত হয়। এভাবে স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমানদেরকে শিক্ষিত ও সচেতন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা করেন। তাছাড়া অধঃপতিত মুসলিম জাতির উন্নতির জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ উত্তর ভারতে আলীগড়কেন্দ্রিক যে আন্দোলন সৃষ্টি করেন ইতিহাসে তা-ই ‘আলীগড় আন্দোলন' নামে পরিচিত। অতএব, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ সন্দেহ নেই।

৪. রাজধানী তাইপেতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইন সম্মেলনে এক শান্তি প্রস্তাব ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মা-য়িং-জেওউ। দক্ষিণ চীন সাগরে বিতর্কিত সমুদ্রসীমা নিয়ে উত্তেজনা নিরসনে এ প্রস্তাব কাজ করবে বলে দাবি করেন মা-য়িং।
ক. কে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন?
খ. বক্সারের যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রস্তাবের সাথে তোমার পঠিত কোন প্রস্তাবের মিল পাওয়া যায়? উক্ত প্রস্তাবের মূলনীতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘এ প্রস্তাবের আলোকে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়’’- পঠিত বিষয়ের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. সৈয়দ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন।

খ. বক্সারের যুদ্ধের প্রত্যেক্ষ কারণ ছিল ইংরেজ শক্তিকে পরাজিত করে পলাশী প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। কেননা ইংরেজরা মীরজাফরকে সরিয়ে তার জামাতা মীর কাসিমকে বাংলার মসনদে অধিষ্ঠিত করলেও মীর কাসিম ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক, দূরদর্শী রাজনীতিবিদ এবং স্বাধীনচেতা মানুষ। তিনি চেয়েছিলেন ইংরেজ আধিপত্য ধ্বংস করে দিতে। এ কারণেই বক্সারের যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। কিন্তু মীরকাসিম পরাজিত হন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রস্তাবের সাথে আমার পঠিত ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের লাহোর প্রস্তাবের মিল পাওয়া যায়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জিন্নাহ তার 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' ঘোষণা করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। এ অধিবেশনেই বাংলার নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বিখ্যাত লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। উক্ত প্রস্তাবের প্রারম্ভে বলা হয় যে, কোনো শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনা এদেশে কার্যকর বা মুসলমানদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না যদি নিম্নলিখিত মূলনীতির ওপর এটি প্রতিষ্ঠিত না হয়-
১. ভৌগোলিক দিক থেকে সংলগ্ন এলাকাগুলোকে প্রয়োজনীয় রদবদলের মাধ্যমে পৃথক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
২. ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে এ ধরনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহে স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করতে হবে।
৩. এভাবে গঠিত স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের অঙ্গরাজ্যগুলো থাকবে স্বশাসিত ও সার্বভৌম।
তাছাড়াও বলা হয় যে, সর্বক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন স্বার্থ ও অধিকার রক্ষাকল্পে সংবিধানে প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচ রাখতে হবে। অর্থাৎ আঞ্চলিক স্বাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণেরও অধিকার ও সার্বভৌমত্ব অর্জনই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য।

ঘ. ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে যে স্বাধীন মুসলিম আবাসভূমির দাবি করা হয়েছে অনুরূপ একটা প্রস্তাব ১৯৩০ সালে কবি ইকবাল তার এক ভাষণে উল্লেখ করেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর যেসব প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা গঠন সেখানে কংগ্রেস নেতাদের কার্যকলাপ মুসলমানদেরকে যথেষ্টভাবে আহত করে। ১৯৩৯ সালে জিনণাহ তার দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগে অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। এ অধিবেশনেই বাংলার নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক বিখ্যাত লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনটি শর্তের সমন্বয়ে লাহোর প্রস্তাবের মূলকথা হচ্ছে মুসলমানদেরকে নিয়ে পৃথক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। একটি উত্তর-পশ্চিমে এবং অন্যটি পূর্বে। অবার অন্যভাবে বলতে গেলে লাহোর প্রস্তাবে একটি মাত্র রাষ্ট্রের কথাই বলা হয়েছে যার ইউনিটগুলো হবে স্বশাসিত। তবে ১৯৪৬ সালের এপ্রিল মাসে দিল্লিতে মুসলিম লীগ দলীয় আইনসভার সদস্যদের অধিবেশনে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে এক রাষ্ট্রের দাবি রাখা হয়। ফলে ১৯৪৭ সালে মুসলমানদের নিয়ে একটি মাত্র মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়। আর হিন্দুপ্রধান এলাকা নিয়ে ভারত। অতএব, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

৫. সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি। নিজ দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার বাইরেও দক্ষিণ কোরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশে রয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনীর সরব উপস্থিতি। কোনো দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে মার্কিন সরকার মিত্রতার নিদর্শনস্বরূপ সেদেশে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে থাকে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এহেন মিত্র রাষ্ট্রগুলো মার্কিনীদের ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে তাদের পক্ষে অনেকক্ষেত্রেই স্বাধীনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
ক. তিতুমীর কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. হাজী শরীয়তউল্লাহর সংস্কার আনেদালন কি কৃষক আনেদালনে পরিণত হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতির প্রতিফলন ঘটেছে তার সাথে ব্রিটিশ ভারতের একজন গভর্নর জেনারেলের কোন নীতির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত নীতি ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে কী ভূমিকা রেখেছিল? তোমার মতামত দাও।

🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. তিতুমীর ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে চবিবশ পরগনা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

খ. হাজী শরীয়তউল্লাহর সংস্কার আনেদালন ছিল ফরজভিত্তিক আনেদালন, আর যা পরবর্তীতে কৃষক আনেদালনে পরিণত হয়েছিল। হাজী শরীয়তউল্লাহ পরিচালিত আনেদালনের নামই ফরায়েজি আন্দোলন' নামে পরিচিত। 'ফরায়েজি' শব্দটি 'ফরজ' শব্দ থেকে এসেছে। 'ফরজ' শব্দের অর্থ হলো অবশ্য পালনীয়। তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে ধর্মীয় কুসংস্কার মুক্ত হয়ে অবশ্য করণীয় কর্তব্য পালনে আহবান জানান। আর 'ফরজ' শব্দ থেকে ফরায়েজি শব্দের উৎপত্তি। এ জন্যই তার এ আন্দোলনকে ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত। তাঁর এ আন্দোলন প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল সংস্কারমূলক। অর্থাৎ ধর্মীয় কুসংস্কারমুক্তিকরণ এবং ধর্মের ফরজ ইবাদতের প্রতি গুরুত্বরোপকরণ। কিন্তু শেষের দিকে এ আন্দোলন কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ লাভ করে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি বাংলার অবহেলিত জনগণ, নির্যাতিত কৃষক, তাঁতিসহ খেটে খাওয়া মানুষের মনের কথা তুলে ধরেন।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিটিশ সরকারের লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের 'মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনা' নামে এর সাথে মিল রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একক পরাশক্তি। যেকোনো দেশের শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্র এমন ভূমিকার মতো লর্ড মাউন্টব্যাটেন আগমন করেছিলেন ভারত বর্ষে। ভারতে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা নেমে আসে। এ বিশৃঙ্খল অবস্থার ভিতর থেকেই জন্ম নয় ভারত স্বাধীনতা আইন। ভারত বর্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলে ছিল মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস। মুসলিম লীগ মূলত পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য সংগ্রাম করে এবং তারা কংগ্রেসকে ক্ষমতায় দেখতে নারাজ। এমতাবস্থায় মুসলিম লীগ ১৯৪৬ সালে জুলাই মাসে বোম্বাইয়ে একটি সম্মেলনের ডাক দেয়। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় পাকিস্তান অর্জনের জন্য মুসলিম লীগ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু করবে। এ উদ্দেশ্যে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালন করা হয়। সেদিন হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেধে যায়। দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। এমন পরিস্থিতি লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনকে বড়লাট করে ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাঠান। তিনি ১৯৪৭ সালে ২ জুন নেহেরু, জিন্নাহ ও শিখ নেতা বলদেব সিং-এর সাথে ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে একটি ঘরোয়া বৈঠকে মিলিত হন। যা 'মাউন্ট ব্যাটেন' পরিকল্পনা নামে খ্যাত। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ভারতবর্ষের বিশৃঙ্খল অবস্থার সময় আগমনের করে সমস্যার সমাধান করেন।

ঘ. ভারতে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের 'মাউন্ট ব্যাটেন' পরিকল্পনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে তেমন ভূমিকা রাখেনি।
ভারতে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। ভারতে রাজনৈতিক অস্থিরতার মূলে ছিল মুসলিম লীগের পাকিস্তান সৃষ্টির দাবি আর কংগ্রেসের ক্ষমতা গ্রহণের দাবি। মুসলিম লীগকে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা গ্রহণে ব্রিটিশ সরকার সম্মতি না দেওয়ায় মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এমতা মুসলিম লগি ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের দিনে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়। এ দাঙ্গায় অনেক নিরিহ মানুষ নিহিত হয়। এ সমস্যা সমাধানে লর্ড মাউন ব্যাটেন ভারতে আগমন করেন। তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের নিয়ে একটি ঘরোয়া পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনা নামে খ্যাত। পরিকল্পনার মূলে ছিল ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন। ভারত স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে মূলত ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয় এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। তাই বলা যায়, উল্লিখিত পরিকল্পনা ভারতেবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে তেমন ভূমিকা রাখেনি।

৬. শীলা ও নীলা দুই বান্ধবী একই পাড়ায় থাকেন। শুক্রবার ছুটির দিনে শাড়ি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তারা গ্রামীণ বস্ত্রালয়ে গেলেন। সেখানে তারা অনেক দামি দামি শাড়ি ঝুলানো দেখলেন, দোকানদার জিজ্ঞাসা করল, আপনারা দেশি শাড়ি কিনবেন, না বিদেশি শাড়ি কিনবেন। নীলা বলল আমাদের দেশি শাড়িই দেখান। দোকানদার এক ঝলক হেসে বললত 'দেশি পণ্য কিনে হও ধন্য।'
ক. কত খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. খিলাফত আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে দেশি পণ্য ক্রয়কে ইতিহাসের কোন আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দেয়? আলোচনা কর।
ঘ. 'দেশি পণ্য কিনে হও ধন্য'- উক্তিটির আলোকে উক্ত আন্দোলনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ‘প্যারিস চুক্তির' মাধ্যমে তুর্কি সাম্রাজ্যের ব্যবচ্ছেদ এবং খলিফার মর্যাদা রক্ষার জন্য সর্বভারতে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাপক ও জাতীয়ভিত্তিক গণ আন্দোলন গড়ে উঠে তাই খিলাফত আন্দোলন। মাওলানা আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা শওকত আলী প্রমুখ নেতাদের নেতৃত্বে এ আন্দোলন পরিচালিত হয়।

গ. উদ্দীপকে দেশি পণ্য ক্রয়কে ইতিহাসের স্বদেশী আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহারের দাবিতে বিলেতি পণ্যসামগ্রী বয়কট করা ও স্বদেশী পণ্য পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এ আন্দোলন গড়ে ওঠে। ফলে এ আন্দোলনে স্বদেশী শিল্প ও শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি চেতনাও প্রাধান্য পায়। এ আন্দোলনের ব্যাপকতার রূপ ক্রমে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে সভা সমিতি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশি পণ্য বর্জন ও দেশীয় পণ্য ব্যবহারে প্রতিজ্ঞা করা হয়।
কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত এ আন্দোলনে শহর এবং গ্রামগঞ্জে প্রকাশ্যে বিলাতি পণ্য পুড়িয়ে ফেলা এবং স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়। এ সময় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে সাবান, লবণ, চিনি ও চামড়ার দ্রব্যের উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন কারখানা গড়ে ওঠে। উদ্দীপকের শীলা এবং নীলার দেশি শাড়ি কেনার ইচ্ছা দেশি পণ্যের প্রতি ভালোবাসা ও দেশি শিল্পের প্রসারের ব্যাপারে উৎসাহ যোগায়।

ঘ. 'দেশি পণ্য কিনে হও ধন্য'- উক্তিটি উদ্দীপকে বর্ণিত স্বদেশি আন্দোলনের এবং ইতিহাসে এ আন্দোলনের তাৎপর্য অনেক।
মূলত বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে ১৯০৫ সালের স্বদেশি আন্দোলন ভারতীয় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছিল। এ আন্দোলনের ফলে ভারতীয় জনগণের কাছে এ ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, ইংরেজ ও ভারতবাসীর স্বার্থ কখনোই এক নয়। ইংরেজ সরকার দ্বারা ভারতবাসীর প্রকৃত মঙ্গল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং ভারতবাসীর নিজের উন্নতি নিজ চেষ্টায় করতে হবে। এ বিদেশি তৈরি পোশাক বর্জনের পাশাপাশি স্বদেশি তুলা ও অন্যান্য উপাদানে তৈরি কাপড় ব্যবহারের জন্য প্রচারণা চালানো হয়। ফলে নতুন নতুন কাপড়ের মিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও লোহা ও ইস্পাত ঢালাই, কারখানা, সাবান, সিগারেট প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তৈরির কারখানা স্থাপিত হয়। এ আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ ব্যবসায় বাণিজ্যের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং ভারতীয় অর্থনীতিতে রূপান্তর ঘটে। তাছাড়া এ আন্দোলনের ফলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয় এবং দুই বাংলা আবার একত্রিত হয়। স্বদেশি আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়েই নয়। বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এক নতুন উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। এ স্বদেশি চেতনাবোধ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রজনীকান্ত সেন, ডি. এল. রায় প্রমুখ রচিত দেশাত্মবোধক গানের মাধ্যমে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ সময় মুকুন্দদাসের যাত্রাগান সমস্ত বাংলায় শিহরণ সঞ্চার করেছিল। কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, সৈয়দ আবু মুহম্মদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ সাহিত্যিকও এ সময় অনেক সৃষ্টিশীল কাব্য ও সাহিত্য রচনা করেছিলেন। তাছাড়াও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তাঁর 'ভারতমাতা' চিত্রটি এ সময় নির্মিত হয়েছিল।
তাই বলা যায়, ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলনের তাৎপর্য ছিল ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।

HSC ইতিহাস ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. বিরামপুর একটি প্রাচীন জনপথ। এখানে বিদেশী শক্তি ক্ষমতার বলে শাসন করে। বিরামপুরে দুটি জাতি বসবাস করে। এর একটি হলো ফুলকে জাতি, অপরটি হলো পালকি জাতি। ফুলকি জাতির রাজনৈতিক সংগঠনের নাম 'ফুলি দল'। ফুলি দলের সদস্যরা বিরামপুরে শহরে একটি সম্মেলনে মিলিত হয়। সম্মেলনে হক সাহেব একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি ‘বিরামপুর প্রস্তাব' নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রস্তাবের একটি ধারায় বলা হয় ফুলকি জাতি যেসব এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব এলাকাসমূহে 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ' গঠিত হবে। কিন্তু পরবর্তীতে ফুলকিদের দাবির মুখে একটি রাষ্ট্র গঠিত হয়।
ক. লাহোর প্রস্তাব কত খ্রিষ্টাব্দে উত্থাপিত হয়েছিল?
খ. লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ববিরামপুর প্রস্তাবটি' ভারত উপমহাদেশের কোন প্রস্তাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠিত হলে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো - বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. লাহোর প্রস্তাব ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে উত্থাপিত হয়েছিল।

খ. লাহোর প্রস্তাবের মূল বক্তব্য ছিল একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ভারতের যেসব এলাকায় মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের সমন্বয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হবে। রাষ্ট্রের অঙ্গ রাজ্যগুলো সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত হবে। মূল প্রস্তাবে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। এ প্রস্তাবের ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। ঔপনিবেশিক ভারতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে ভোট দিয়ে নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকারের দাবি মুসলমানদের বহুদিনের। লক্ষে্ণŠচুক্তিতে কংগ্রেস মুসলমান সম্প্রদায় এ অধিকার মেনে নিলেও পরে আবার অস্বীকার করে।

গ. উদ্দীপকে বিরামপুরের 'ফুলকি জাতি' তাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে বিরামপুরে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। ফুলকি দলের রাজনৈতিক সম্মেলনে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় যা বিরামপুর প্রস্তাব নামে পরিচিত। বিরামপুর প্রস্তাবের সাথে ভারত উপমহাদেশের লাহোর প্রস্তাবের সাদৃশ্য রয়েছে। লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোকে একত্রিত করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। লাহোর প্রস্তাবের মধ্য দিয়েই এ দাবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ প্রস্তাবের ফল হয়েছিল। সুদূরপ্রসারী। বহুদিন পর্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম বিরোধের ক্ষেত্রে এটা ছিল একটি জটিল বিষয়। এ কারণে শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের কতকগুলো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারত শাসন আইনের অধীনে প্রস্তাবিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে কার্যকর করা হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক নির্বাচনে অধিকাংশ প্রদেশেই কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বন্তুত ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের লাহোর প্রস্তাবের পূর্বেই অনেক মুসলমান নেতাদের মধ্যে ভারত বিভাগ এবং হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের চিন্তাধারা প্রবল হয়ে ওঠে। অতএব, উদ্দীপকের ‘বিরামপুর প্রস্তাবটি লাহোর প্রস্তাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উক্ত প্রস্তাব তথা লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠিত হলে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবের মূল বক্তব্য ছিল ভারতের উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো একত্রিত করে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠিত হবে। কিন্তু পরে দেখা গেল যে, মুসলমানদের জন্য একটি মাত্র রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রায় দেড় হাজার মাইল পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলো। এত দূর থেকে বাংলা শাসন করার যোগ্যতা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের ছিল না বলে মনে করা হয়। ফলে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ নামে আলাদা একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে যদি পূর্বাঞলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠিত হতো, তাহলে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নির্মম ঘটনা ঘটত না। লাহোর প্রস্তাবের ন্যায় উদ্দীপকের বিরামপুর প্রস্তাবেও ফুলকি জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রসমূহ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বিক্রমপুর নামে একটি রাষ্ট্র গঠিত হলে দূরবর্তী গুলিস্তান রাজ্যটি বিক্রমপুর থেকে কয়েক বছর পরই আলাদা হয়ে যায়। যদি বিরামপুর প্রস্তাব অনুযায়ী গুলিস্তানে প্রথমে স্বাধীন রাজ্য গঠিত হতো তাহলে আলাদা হওয়ার প্রশ্নই আসত না। একমাত্র জাতিসত্তা ব্যতীত বিক্রমপুরের সাথে গুলিস্তানের যেমনটি কোনো মিল ছিল না। তেমনটি একমাত্র ধর্ম ব্যতীত পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে বাংলার জনগণের কোনো মিল ছিল না। এরূপ জাতির দুটি এলাকা স্বাধীন হবে। এটাই ছিল স্বাভাবিক।

৮. গ্রামের কৃষক আজহার আলী একবার চা দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন বৃদ্ধ দোকানদার আড্ডার মাঝে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বেনিয়া শাসনের ইতিহাস প্রসঙ্গ টানেন। এমন সময় কৃষক তার সামান্য জ্ঞান থেকে বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বেনিয়া শাসনের ইতিহাসে লর্ড রিপন (১৮৮০-১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে) ছিলেন এক গৌরবোজ্জ্বল আসনের অধিকারী। তিনি ছিলেন লিবারেল পার্টির অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। শান্তিপ্রিয় রিপন সাম্রাজ্যবাদ ও শান্তি নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
ক. রাজস্ব পরিচালনা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেন কে?
খ. লর্ড রিপনের শাসন সংস্কার সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাও।
গ. কৃষক আজহার আলীর অভিব্যক্তিতে লর্ড রিপনের যেসব বিষয় ফুটে ওঠেছে তা বর্ণনা কর।
ঘ. "উপমহাদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের পথে লর্ড রিপনই পথপ্রদর্শক" -উদ্দীপকের আলোকে উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. রাজস্ব পরিচালনা ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ করেন লর্ড রিপন।

খ. লর্ড রিপনের সংস্কার কার্যাদির ক্ষেত্রে শাসনব্যবস্থা ও রাজস্ব পরিচালনা ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ অন্যতম। উপমহাদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে লর্ড রিপনই পথপ্রদর্শক একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন তার একটি কীর্তি। এ আইন দ্বারা মিউনিসিপ্যালিটির ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জেলা বোর্ড ও লোকাল বোর্ড স্থাপনের ব্যবস্থা হয়। লোকাল বোর্ড গঠন করে তিনি গ্রামীণ এলাকার শাসনভার, জনস্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট নির্মাণ, শিক্ষা, মহামারী ও সংক্রামক ব্যাধি নিরোধ প্রভৃতি বহুবিধি কার্যের দায়িত্ব সে সকল লোকাল বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করেছিলেন।

গ. ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বেনিয়া শাসনের ইতিহাসে লর্ড রিপন ছিলেন এক গৌরবোজ্জ্বল আসনের অধিকারী। তিনি সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরোধী ছিলেন এবং স্বায়ত্তশাসন, স্বাতন্ত্রবাদ ও শান্তি নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। উদ্দীপকের কৃষক আজহার আলীও ইংরেজ লর্ড রিপনের শাসন সংস্কারের প্রশংসা করেছেন। তাঁর গৃহীত ব্যবস্থা রাজ্যে শান্তি বিরাজ করছিল এবং জনগণ সন্তুষ্ট ছিল। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে দেখা যায়, লর্ড রিপন সংস্কার কার্যাদির ক্ষেত্রে শাসনব্যবস্থা ও রাজস্ব পরিচালনা ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ করেন। উপমহাদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে লর্ড রিপনই পথপ্রদর্শক এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে। লর্ড রিপন এ সকল ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রভৃতির মাধ্যমে স্থানীয় শাসন পরিচালনার ব্যবস্থা করে একে ১ গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্থানীয় সংস্থায় সরকার মনোনীত সদস্য রাখার এবং এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি পরিদর্শনের ব্যবস্থাও করেছিলেন। এছাড়া জনসাধারণের উন্নতির জন্য তিনি নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ কার্যকর করেছিলেন। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে তিনি উচ্চশিক্ষার তুলনায় প্রাথমিক শিক্ষা অবহেলিত হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কতকগুলো সুপারিশ করেছিলেন। দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান করে তিনি এগুলোকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে সমালোচনার অধিকার দিয়েছিলেন।

ঘ. ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বেনিয়ার সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। স্বার্থ হাসিলের জন্য হেন কাজ নেই যা তারা করে নি। তারা অধীনতা মিত্র নীতি, স্বত্ববিলোপ নীতি ইত্যাদি আইন প্রণয়ন করে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল। কিন্তু লর্ড রিপন তাদের বিপরীত। তিনি সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরোধী ছিলেন এবং স্বায়ত্তশাসন, স্বাতন্ত্রবাদ ও শান্তি নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
উদ্দীপকে ইংরেজ লর্ড রিপনের শাসন সংস্কারের প্রশংসা করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে আমরা দেখতে পাই, লর্ড রিপনের গৃহীত ব্যবস্থা রাজ্যে শান্তি বিরাজ করছিল এবং জনগণ সন্তুষ্ট ছিল। লর্ড রিপন সংস্কার কার্যাদির ক্ষেত্রে শাসনব্যবস্থা ও রাজস্ব পরিচালনা ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ করেন। এছাড়া জনগণের উন্নতির জন্য তিনি নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ কার্যকর করেছিলেন। লর্ড রিপন দেশীয় সংবাদপত্র আইন পাস করে সরকারি কার্যাদির সমালোচনার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। লর্ড রিপন এ আইন বাতিল করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান করে এগুলোকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে সমালোচনার অধিকার দিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার তুলনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অবহেলিত ছিল। লর্ড রিপন তাই প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য কতকগুলো সুপারিশ করেন। তিনি জনসাধারণের উন্নতির জন্য নানাবিধ সংস্কার পদক্ষেপ কার্যকর করেছিলেন। জমিদারগণ কর্তৃক রায়তদের জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ রোধ করার উদ্দেশ্যে যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা পরবর্তী ভাইসরয় কর্তৃক আইনে পরিণত হয়েছিল। তিনি ফ্যাক্টরি আইন পাস করে সাত হতে বার বছরের শিশুদের মোট ৯ (নয়) ঘণ্টার বেশি কারখানায় খাটানো নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি ভারতবর্ষে প্রথম ১৮৮১ আদমশুমারির নিয়ম প্রবর্তন করেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, সংস্কার কর্মকান্ডের জন্যই লর্ড রিপন ভারতীয়দের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। বিভিন্ন সংস্কারের জন্যই তাঁর শাসনকাল ছিল বিখ্যাত। উপমহাদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের পথে লর্ড রিপনই পথপ্রদর্শক একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে।

৯. আনোয়ারুল হক গ্রামের একজন প্রবীন ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। আশপাশের অনেক গ্রামেই আধুনিক জীবনধারার অনুপ্রবেশ ঘটলেও নিজের প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখতে আনোয়ারুল হক গ্রামের শিল্প-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হতে দেন নি। এমন কি গ্রামের কৃষকদেরকে বাধ্য করেছেন। এরূপ অবস্থার পরিবর্তনে এগিয়ে এসেছেন একই গ্রামের স্কুল শিক্ষক সামাদ চৌধুরী। স্কুলের ছাত্রদেরকে আধুনিক শিল্প সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং আধুনিক হয়ে ওঠা অন্যান্য গ্রামের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পরামর্শ দেন।
ক. ভারত কত তারিখে স্বাধীনতা লাভ করে?
খ. বসু-সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাব' বলতে কী বোঝায়?
গ. আনোয়ারুল হকের কর্মকান্ড ইংরেজ গভর্নর লর্ড কার্জনের কোন কর্মকান্ডের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সামাদ চৌধুরীকে উক্ত গ্রামের ত্রাণকর্তা বলাই সমীচীন আলীগড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে।

খ. ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে রাজনৈতিক মত পার্থক্য যখন তীব্র হচ্ছিল তখন অখ- বাংলার প্রস্তাব করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। প্রাদেশিক কংগ্রেস নেতা শরবসু সক্রিয়ভাবে এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। তাই প্রস্তাবটি 'বসু সোহরাওয়ার্দী প্রস্তাব' নামে পরিচিতি পায়।

গ. আনোয়ারুল হকের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও কৃষির কর্মকান্ডগুলো ইংরেজ গভর্নর লর্ড কার্জনের কর্মকান্ডের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। লর্ড কার্জন ইউনিভার্সিটিজ অ্যাক্ট প্রণয়ন করেন ১৯০৪ সালে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগের সূচনা হয়। তিনি ব্রিটিশ মিউজিয়াম আর অক্সফোর্ডের বোদলেইয়ান লাইব্রেরির আদলে স্থাপন করেন। ইমপেরিয়াল লাইব্রেরি। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য লর্ড কার্জন পরাতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে জেনারেল কার্নিংহামসহ অন্যান্যদের দ্বারা পরিচালিত খননকার্যকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দান করেন। ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে অফিস অফিসারদেরকে তিনি কঠোরভাবে উচ্ছেদ করেন। বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য তিনি একটি কৃষি বিভাগ সৃষ্টি করেছিলেন। বিহারের পুসায় তিনি পরীক্ষামূলক খামার ও গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। তিনি মহাজনদের দাসত্ব থেকে কৃষক সম্প্রদায়কে মুক্ত করার জন্য সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে আনোয়ারুল হক গ্রামের শিক্ষা ও সংস্কৃতির কোনো উন্নয়ন তো করেন = নি উপরন্তু কৃষি ব্যবস্থায় সনাতন চাষ পদ্ধতি বজায় রাখতে বাধ্য করেছেন কৃষকদেরকে। সুতরাং বৈসাদৃশ্য সুস্পষ্ট।

ঘ. সামাদ চৌধুরীকে উক্ত গ্রামের ত্রাণকর্তা বলাই সমীচীন। আলীগড় আন্দোলনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসনকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে না পারায় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি অনীহার কারণে ভারতীয় মুসলমানরা জীবনের সবক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছিল এবং দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হয়েছিল। মুসলামনদের সেই দুর্যোগময় মুহূর্তে তাদের ত্রাণকর্তারূপে উত্তর ভারতে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের আবির্ভাব ঘটে। মুসলমানদের জন্য প্রথমে তিনি পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে সচেষ্ট হন। তিনি ভারতীয় মুসলমানদেরকে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ এবং ইংরেজ শাসকদের সাথে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন। ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর মুসলমানরা ব্রিটিশ সরারের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে। তিনি গ্রন্থ রচনা করে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটান। ১৮৭০ সালে 'তাহজীবুল আখলাক' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে তিনি মুসলমানদের নৈতিকতা ও আচার ব্যবহার উন্নতি এবং তাদের মধ্যকার কূপম-ুকতা ও কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করেন। তিনি মুসলমানদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আলীগড় কলেজ স্থাপন করেন। এই কলেজকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের আধুনিক ভাবধারা, চিন্তা-চেতনা জাগ্রত হয়। উদ্দীপকের সামাদ চৌধুরীও একই রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন গ্রামের পিছিয়ে পরা মানুষের উন্নয়নে। সুতরাং উক্তিটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

১০. জাহাঙ্গীর চৌধুরী যখন সরকারি কর্মজীবন শেষ করে নিজ গ্রামে আসেন তখন দেখতে পান নবগঙ্গা নদীর তীরে বিসত্মীর্ণ এলাকাজুড়ে বসবাসরত কৃষক সম্প্রদায় খুবই অবহেলিত অবস্থায় দিন যাপন করছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা শিক্ষাসহ ভোট প্রদান, নির্বাচনে অংশগ্রহণ, উপজেলা পরিষদে গিয়ে নাগরিক অধিকার দাবি করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিরত থাকায় কেবল ফসল উৎপাদনের ওপরই তাদের ভাগ্য নির্ভর করে আছে। জাহাঙ্গীর সাহেব তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে উক্ত এলাকায় একটি বহুমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কৃষকদের নিয়ে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। উপজেলা পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবকে এসব অধিকার বঞ্চিত কৃষকদের প্রতি সদয় দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করেন। জাহাঙ্গীর চৌধুরীর প্রচেষ্টায় কৃষক সম্প্রদায়ের মাঝে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নবচেতনা গড়ে ওঠে।
ক. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কখন চৌদ্দ দফা প্রস্তাব পেশ করেন?
খ. গোল টেবিল বৈঠক বলতে কী বোঝ ব্যাখ্যা কর।
গ. জাহাঙ্গীর সাহেবের সাথে উনিশ শতকে উত্তর ভারতের কোন মুসলিম নেতার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নবচেতনা জাগাতে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিশেষ দৃষ্টি ছিল শিক্ষার প্রতি উত্তর ভারতের উক্ত নেতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯২৯ সালে চৌদ্দ দফা প্রস্তাব পেশ করেন।

খ. ভারতে ১৯৩০ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে 'আইন অমান্য আন্দোলন' চলাকালীন সময়ে ভারতে বিরাজমান পরিস্থিতি ও সংকটের রূপরেখা প্রণয়ন করাই ছিল গোলটেবিল বৈঠকের উদ্দেশ্য। এ গোলটেবিল বৈঠক তিনটি অধিবেশনে সমাপ্ত হয়। প্রথম অধিবেশন ১৯৩০ সালের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৩১ সালে গান্ধী আরউইন চুক্তির পর লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে। সমস্যা অমীমাংসিত রেখেই ১৯৩১ সালের ১ ডিসেম্বর এ অধিবেশন সমাপ্ত হয়। ১৯৩২ সালের ২৭ নভেম্বর গোলটেবিল বৈঠকের তৃতীয় অধিবেশন বসে এবং ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা স্থায়ী হয়। ভারতে তখনও আইন অমান্য আন্দোলন চলছিল। তাই ভারতীয় জনগণের উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কিছু সমস্যার সমাধান অমীমাংসিত রেখেই গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার ফলাফল একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।

গ. জাহাঙ্গীর সাহেবের সাথে উনিশ শতকে উত্তর ভারতের মুসলিম নেতা স্যার সৈয়দ আহমদ খানের সাদৃশ্য রয়েছে। জাহাঙ্গীর চৌধুরী সরকারি কর্মজীবন শেষে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় অর্থাৎ কৃষক সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে সচেষ্ট হন। নবগঙ্গা নদীর তীরে যে বিসত্মীর্ণ এলাকাজুড়ে যে কৃষক সম্প্রদায় বসবাস করত তারা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ না রাখায় এবং শিক্ষার প্রতি অনীহার কারণে জীবনের সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে। জাহাঙ্গীর সাহেব কৃষক সম্প্রদায়ের এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য উক্ত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমিতি গড়ে তোলেন। উপজেলা পরিষদে গিয়ে কৃষক সম্প্রদায়ের প্রতি সদয় দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টিতে কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হন। তাঁর প্রচেষ্টায় কৃষক সম্প্রদায়ের মাঝে সার্বিক দিক থেকে নবচেতনা গড়ে ওঠে। একইভাবে স্যার সৈয়দ আহমদ খান ব্রিটিশ সরকারের অধীনে একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেও উনিশ শতকে জীবনের সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়া মুসলমান সম্প্রদায়কে দুঃখ-দুর্দশা থেকে পুনরুদ্ধার ও তাদের পুনর্জাগরণের জন্য সচেষ্ট হন। তিনি মুসলমানদেরকে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ এবং ইংরেজ শাসকদের সাথে সহযোগিতা করার উপদেশ দেন। এতে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। এভাবে সৈয়দ আহমদ খান মুসলমানদের পুনর্জাগরণের জন্য উত্তর ভারতে আলীগড়কেন্দ্রিক আন্দোলন সৃষ্টি করলে মুসলিম সমাজে এক নবজাগরণ ঘটে। সুতরাং জাহাঙ্গীর সাহেবের সাথে উত্তর ভারতে উনিশ শতকের মুসলিম নেতা স্যার সৈয়দ আহমদ খানের সাদৃশ্য সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়।

ঘ. নবগঙ্গা নদীর তীরে বিসত্মীর্ণ এলাকাজুড়ে যে কৃষক সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল তাদের মাঝে নবচেতনা জাগাতে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিশেষ দৃষ্টি ছিল শিক্ষার প্রতি। উত্তর ভারতের উক্ত নেতা হলেন বিখ্যাত আলীগড় আন্দোলনের প্রবর্তক স্যার সৈয়দ আহমদ খান। তিনি উপলব্ধি করেন যে, মুসলমানদের ধর্মীয় গোঁড়ামি ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি অনীহা তাদের দুর্দশার অন্যতম কারণ। এজন্য প্রথমে তিনি পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে সক্ষম হন। তিনি উত্তর ভারতের গাজীপুরে একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদেরকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য সৈয়দ আহমদ ১৮৭৫ সালে আলীগড়ে 'মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি ‘মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স' নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। এভাবে শিক্ষার সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিম জাতির মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও নবচেতনা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হন। জাহাঙ্গীর চৌধুরীও বিশ্বাস করেছিলেন একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব দরিদ্র ও অধিকার বঞ্চিত কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন। আর তাই দেখা যায় নবগঙ্গা নদীর তীরে কৃষক সম্প্রদায়কে সচেতন করে তুলতে উক্ত এলাকায় প্রথমেই যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা হলো একটি বহুমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা। এতে বিভিন্ন শ্রেণির বয়সের কৃষকদের পক্ষে সম্ভব হয় নানামুখী শিক্ষা অর্জন করে বিশেষভাবে সচেতন হয়ে ওঠা। তিনি শিক্ষিত কৃষক সম্প্রদায়কে শিক্ষার কার্যক্ষেত্রে নিতে একটি সমিতিও প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে অল্পসময়েই উক্ত কৃষক সম্প্রদায়ের মাঝে নবচেতনার উন্মেষ ঘটে এবং জাহাঙ্গীর সাহেবের প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখে। সুতরাং নিশ্চিতভাবে বলা যায় নবচেতনা জাগাতে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দৃষ্টি ছিল বিশেষভাবে শিক্ষার প্রতি উক্তিটি যথার্থ ও সঠিক।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post