এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC History 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
ইতিহাস
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১
HSC History 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
উচ্চ মাধ্যমিক | ইতিহাস (প্রথম পত্র) | অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
প্রথম অধ্যায় : ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
যুগযুগ ধরে উপমহাদেশের সাথে স্থল ও জলপথে ইউরোপীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের যোগাযোগ ছিল। কারণ উপমহাদেশের ধন-সম্পদের আকর্ষণ বিদেশিদের এ অঞ্চলে আসতে আগ্রহী করে তোলে। ফলে বিদেশি বণিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিন্তু তখন জলপথের বাণিজ্য শুধু আরব বণিকদের হাতেই ছিল। পনের শতকের শেষের দিকে পাশ্চাত্য থেকে উপমহাদেশে পৌছবার নতুন জলপথ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্দরসমূহ হতে বিভিন্ন দ্রব্যাদি সরাসরি ইউরোপীয় বন্দরে পৌছাতো। এভাবে উপমহাদেশের সাথে ইউরোপের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং উপমহাদেশের ইতিহানে এক নতুন যুগের সূচনা করে; যা পরবর্তীকালে উপমহাদেশের ইতিহাসের ধারাকে পরিবর্তন করে আধুনিক যুগের সূচনা করেছিল।
পর্তুগিজ
বাণিজ্যকে মূলধন করে পর্তুগাল থেকে প্তুগিজরা এ উপমহাদেশে আসলেও ক্রমে তীরা সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখে। পর্তুগিজ নাবিক ভাক্ষো-দ্য-গামার উপমহাদেশে আনার পরপরই পর্তুগিজরা এ দেশে আনতে শুরু করে। এরপর ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে বার্থলমিউ দিয়াজ, আলভারেঞ্জ ক্যাবাল ও ১৫০৯ খ্রিস্টাব্দে আলবৃকার্ক গোয়াতে আগমন করেন। আলবৃকার্ক উপমহাদেশে পর্তুগিজ-শক্তির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কলন্মান এবং ম্যাজিলানও বিখ্যাত পর্তুগিজ নাবিক ছিলেন। উপমহাদেশে আনার অল্পদিনের মধ্যেই তারা এদেশের পশ্চিম উপকূলের কালিকট, চৌল, বোম্ধাই, সালনেটি, বেসিন, কোচিন, গোয়া, দমন, দিউ প্রভৃতি বন্দরে, সিংহলের নানাস্থানে এবং বাংলার হুগলী বন্দরে তাঁদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। তাঁদের নৌ ও সেনাবাহিনী খুব শক্তিশালী ছিল।
পর্তৃগিজরা বাংলাদেশের চট্টগ্রামেও বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে এবং কুঠিগুলোকে দুর্গে পরিণত করে। পর্তৃগিজরাই প্রথম ইউরোপীয় যাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য কাজে এদেশে সুদূরপ্রসারী ও স্থারী প্রভাব রেখে গেছে। সুস্বাদু ফল আনারম, পেপে, পেয়ারা, জলপাই, কামরাঙ্গা প্রভৃতি তারাই এদেশে প্রচলন করে। পর্তুগিজরা চীন, ক্রুনাই, মালাক্কা, হরমুজ, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশ থেকে মূল্যবান কাপড়, বাদাম, মসলা, রং, কড়ি, কর্পূর এনে উপমহাদেশে বিক্রি করতো আর বাংলাদেশ থেকে সৃতি ও রেশমী কাপড়, পাট, তামাক, চামড়া, চাল, ডাল, ঘি, তেল, মধু মোম অন্যান্য দেশে নিয়ে যেত।
ওলন্দাজ বা ডাচ
হল্যান্ডের অধিবাসীদের ওলন্দাজ বা ডাচ বলা হয়। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে গলন্দাজরা জলপথে উপমহাদেশে আসে। প্রাচ্য বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে হল্যান্ডের একদল বণিক ‘‘ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' গঠন করে। তারা কালিকট, নাগাপট্রম, বাংলার চুটুড়া ও বাঁকুড়ায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। এছাড়া বালেশ্বর, কাশিমবাজার এবং বরানগরেও তাদের কুঠি ছিল। প্রথমে ওলন্দাজগণ ইংরেজদের সাথে রেশমী সূতা, সুতি কাপড় চাল, ডাল সোরা ও তামাক এদেশ থেকে রপ্তানি করত এবং অন্যদেশ থেকে এদেশে মসলা আমদানি করত। ইংরেজদের সাথে তাদের যে বাণিজ্য চুক্তি হয় তা দু'বছরের মধ্যে ভেঙ্গে গিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।
অন্যদিকে বাংলার শাসনকর্তাদের সাথেও তাদের প্রবল বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধ বেশি বেড়ে গেলে ইংরেজগণ ওলন্দাজ কুঠিগুলো দখল করে ফেলে। আর এভাবে ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক সুবিধা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং তীরা উপমহাদেশ ছেড়ে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চলে যায়। সেখানে তারা উপনিবেশ স্থাপন করে। ফলে এদেশে ইংরেজদের শক্তি বেড়ে যায়। বর্তমান ইন্দোনেশিয়া ওলন্দাজদের কাছ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে।
দিনেমার
ডেনমার্কের অধিবাসীদের দিনেমার বলা হয়। ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে দিনেমারগণ উপমহাদেশে বাণিজ্য করার জন্য ‘‘দিনেমার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি" গঠন করে এবং দক্ষিণ ভারতের ব্রিবান্থুরে ও কলকাতার শ্রীরামপুরে তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। অবশেষে দিনেমারগণ কোনো প্রকার বাণিজ্যিক সফলতা ছাড়াই এদেশ থেকে চিরতরে বিদায় নেয়।
ইংরেজদের আগমন ও ক্ষমতা বিস্তার
পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ বণিকদের বাণিজ্যিক সাফল্য ও এদেশের বিপুল ধন-সম্পদের বর্ণনা ইংরেজ বণিকদের মনে এদেশে বাণিজ্য করার আগ্রহ সৃষ্টি করে। উপমহাদেশে তখন মোগল-সম্রাট আকবরের রাজত্ব শেষ সময়। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে ১৫ বছর মেয়াদী সনদ নিয়ে এদেশে বাণিজ্য করতে আসে।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে তারা ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইয়ের নিকট সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ রাজদূত স্যার টমাস রো সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে এসে ইংরেজদের বাণিজ্যের জন্য কিছু সুবিধা আদায় করেন।
এরপর মস্তিপট্টমে ইংরেজদের দ্বিতীয় বাণিজ্য কুঠি স্থাপিত হয়। পর্তুগিজরা বাংলা থেকে বিতাড়িত হলে ইংরেজগণ বালেশ্বরে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে এবং করমন্ডল উপকূলে কিছু জমি নিয়ে একটি দূর্গ নির্মাণ করে এবং এ দূর্গই পরে মাদ্রাজ শহরে পরিণত হয়। ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে জলপথে ইংরেজগণ হুগলিতে আসে এবং বাংলার সুবেদার শাহ সুজার অনুমতি নিয়ে ১৬৫১ খিস্টান্দে সেখানে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে তারা কাশিমবাজারে আরও একটি কুঠি স্থাপন করে। এরপর ধীরে ধীরে তারা ঢাকা ও মালদহে কুঠি নির্মাণ করে শক্তি বাড়াতে থাকে।
এদিকে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগালের রাজার বোনকে বিয়ে করে মুম্বাই যৌতুক হিসাবে পান। ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লন বার্ষিক দশ পাউন্ডের বিনিময়ে কোম্পানিকে মুন্ধাই ইজারা দেন। বর্তমান মুন্মাই নগর ও বন্দর এখানেই গড়ে উঠে। ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে জব চার্নক ভাগীরথী নদীর তীরে ১২০০ টাকার বিনিময়ে কলকাতা, সূতানটি ও গোবিন্দপুর এ তিনটি গ্রামের জমিদারী স্বত্ব কিনে নেন। পরবর্তীকালে উপমহাদেশের ভাগ্য নির্ধারণকারী দুর্গ ফোর্ট উইলিয়াম এখানেই নির্মিত হয়। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ফররুখশিয়ারের অনুমতি নিয়ে ইংরেজগণ বাংলা, মাদ্রাজ ও মুন্ধাইয়ে বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করতে থাকে।
ফরাসি
ফ্রান্সের অধিবাসী ফরাসিরা ইউরোপের একটি সুসভ্য জাতি। প্রাচীনকাল থেকেই ফরাসিদের সাথে ইংরেজদের বিরোধ ছিল এবং বর্তমানেও আছে। রাজতন্ত্রের বিরদদ্ধে গণতন্ত্র স্থাপনের জন্য ফরাসি বিপ্লব একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ এরতিহাসিক ঘটনা। উপমহাদেশে ফরানিদের আগমন সবার শেষে। ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে ফরানি মন্ত্রী কোলবার্টের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘‘ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয় এবং ভারতবর্ষে বাণিজ্য শুরু করে। প্রথমে তারা মুম্বাইয়ের সুরাটে ও পরে পন্ডিচেরীতে কুঠি স্থাপন করে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা বাংলার চন্দননগরে আরও একটি কুঠি স্থাপন করে। এছাড়া কারিকল, মসলিপট্টম, কাশিমবাজার এবং বালেশ্বরেও তাদের কুঠি ছিল। ফরাসিরা উপমহাদেশে প্রায় একশ বছর বাণিজ্য করে। ইংরেজগণ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ফরাসিদের চন্দননগর এবং ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরী কুঠি দখল করে নেয়। স্বদেশে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে বিবাদের জের হিসেবে এখানেও বিবাদ চলতে থাকে। কিন্তু ইংরেজগণ উন্নততর সামরিক শক্তি ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে নেয়। পরপর তিনটি কর্ণাটক ও বাণিজ্য বিস্তারের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। ফলে তাদের উপমহাদেশ থেকে বিদায় নিতে হয়।
পলাশীর যুদ্ধের কারণ
১. সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসন আরোহনকে আলীবদী খানের অপর দুই কন্যা সহজে মেনে নিতে না পেরে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করেন। এতে ইন্ধন যোগান ঘষেটি বেগমের দেওয়ান রাজা রাজবলস্নভ। সিরাজউদ্দৌলা কেŠশলে তীর খালা ঘষেটি বেগমকে প্রাসাদে নজরবনিদ করেন ও খালাত ভাই শওকত জঙ্গকে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করে পূর্ণিয়া দখল করেন। সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে পারিবারিক ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলেও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নতুনভাবে শুরু হলো। একদিকে রাজদরবারের প্রভাবশালী দেশীয় রাজন্যবর্গ ও অপরদিকে ইংরেজ বেনিয়ারা। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক জড়িত ছিল। এরা সিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছিল।
২. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও ইংরেজদের অবাধ্যতা: বাংলায় বাণিজ্যরত ইংরেজ বণিক সম্প্রদায় সিরাজের সিংহাসনে আরোহনের পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী উপটৌকন প্রদান কিংবা সৌজন্য সাক্ষাৎ পর্যন্ত করে নি; এতে নবাবের প্রতি ইংরেজের অবাধ্যতাই প্রকাশ পায়। ফলে সিরাজ অপমানবোধ করেন।
৩. নবাবের আদেশ অমান্য: নবাব আলীবদী খানের সময়ে ইংরেজগণ বাণিজ্য করার অনুমতি পেলেও দুর্গ নির্মাণ করার অনুমতি পায় নি। কিন্ত সিরাজের রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজরা কলকাতায় এবং ফরাসিরা চন্দনগরে দুর্গ নির্মণ শুরু করলে সিরাজ তাদের দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করতে আদেশ দেন। ফরাসিরা এ আদেশ মান্য করলেও ইংরেজরা তা অমান্য করে। ফলে নবাব তাদের উপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।
৪. ইংরেজ কর্তৃক শওকত জঙ্গকে সাহায্য: নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে খালা ঘষেটি বেগম ও পূর্ণিয়ার শাসক শওকত জঙ্গ বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ইংরেজরা নবাবের বিরদ্ধে তাদের সমর্থন করেন। এতে নবাব ইংরেজদের উপর অনন্তষ্ট হন।
৫. বাণিজ্যিক সুবিধার অপব্যবহার: ইংরেজরা বাণিজ্য শুন্ক ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসায়ে অবাধে "দস্তক' ব্যবহার শুর করলে এদেশীয় ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাণিজ্য শর্ত মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করলে ইংরেজরা তা অমান্য করে। ফলে নবাব ইংরেজদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেন।
৬. সন্ধির শর্ত ভঙ্গ: নবাব সিরাজউদৌলার সাথে সন্ধির যাবতীয় শর্ত ভঙ্গ করে ইতরাজরা জনসাধারণের উপর অত্যাচার শুরু করে ও নবাবকে কর প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে।
পলাশীর যুদ্ধ
পলাশীর যুদ্ধ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর মধ্যে সংঘটিত। এ যুদ্ধ আট ঘণ্টার মতো স্থায়ী ছিল এবং প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতার দরুণ নওয়াব কোম্পানি কর্তৃক পরাজিত হন। এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ও ধ্বংসাত্মক এবং এ কারণে যদিও এটি ছোট খাট দাঙ্গার মতো একটি ঘটনা ছিল, তবু এটিকে যুদ্ধ বলে বাড়িয়ে দেখানো হয়। এর ফলে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য বাংলা অনেকটা স্প্রিং বোর্ডের মতো কাজ করে, যেখান থেকে ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশ শক্তি আধিপত্য বিস্তার করে করে অবশেষে সাম্রাজ্য স্থাপনে সক্ষম হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষ গ্রাস করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে এশিয়ার অন্যান্য অনেক অংশও এর অধীনস্থ হয়।
পরীক্ষা উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১ম অধ্যায় : ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
১. কিছুদিন আগে মিশরের আদালত ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির ৫২৯ জন সমর্থককে মৃত্যুদ- দিয়েছে। অন্যদিকে দুর্ভিক্ষ আর মহামারিতে হাজার হাজার লোক মৃত্যুবরণ করছে, যার খবর সারা বিশ্বের মানুষ ঠিকমতো জানেও না। বাংলায় কোম্পানি শাসন আমলে এমনই একটি মন্বন্তর সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ও প্রাকৃতিক কারণেই বাংলায় এ মহাদুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল।
ক. তিতুমীর কত সালে হজব্রত পালন করতে যান?
খ. ১৮৫৭ সালে সিপাহিদের মধ্যে বৈষম্যের স্বরূপ বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন মন্বন্তরের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বক্তব্যের আলোকে দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
🍭 ১ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. তিতুমীর ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে হজব্রত পালন করেন।
খ. কোম্পানি আমলে ইংরেজ ও ভারতীয় সিপাহিদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য ছিল। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে সিপাহীরা সংখ্যায় বেশি হলেও তারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল না। ভারতীয় সিপাহী ও ব্রিটিশ সিপাহীদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান ছিল। ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায়, মোট ৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৫০০ জন ভারতীয় সিপাহিদের জন্য ব্যয় করা হতো মাত্র ৯৮ লক্ষ পাউন্ড। অথচ শুরু ৫১ হাজার ৩১৬ জন ইউরোপীয় সিপাহিদের জন্য ব্যয় করা হতো ৫৬ লক্ষ ৬০ হাজার পাউন্ড। এ চরম বৈষম্য সিপাহিদের মনে বিদ্বেষের জন্ম দেয়।
গ. উদ্দীপকে মূলত ১৭৭০ সালে অর্থাৎ ১১৭৬ বাংলা সনে দ্বৈতশাসনের প্রভাবে সৃষ্ট ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কথা বলা হয়েছে।
রবার্ট ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের চুক্তি অনুসারে আদায়কৃত রাজস্ব থেকে শাসনকার্যের ব্যয় মেটানোর পর উদ্বৃত্ত অর্থ কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হতো। এ পরিস্থিতিতে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে দেশে খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দেয়। এতে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করেছিল। ইতিহাসবিদ আর সি মজুমদারের মতে, ‘‘দেশ যখন নানা অত্যাচার, উৎপীড়ন, দুর্নীতি ও হতাশায় জর্জরিত তখন ১৭৭০ সালে (১১৭৬ বাংলা সন) বাংলায় এক মারাত্মক দুর্ভিক্ষ ঘটেছিল।" তাই একে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে ইতিহাসে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ডবিস্নউ হান্টারের মতে, ‘‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছিল।’’
তাই বলা যায়, ক্লাইভের দ্বৈতশাসন ইংরেজ স্বার্থের অনুকূলে হলেও ভারতবর্ষের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বহুগণে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ বক্তব্যের আলোকে বলা যায়, দ্বৈতশাসনের অর্থনৈতিক প্রভাব ছিল অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেমন-
১. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লাভ ও দ্বৈতশাসনের নির্মম বলি হয়েছিল এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক জীবন। রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে নায়েবদের উৎপীড়ন ও অত্যাচার এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল।
২. দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজ বণিকদের একচেটিয়া প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ইংরেজ বণিকরা দস্তকের ব্যাপক অপব্যবহার করলে প্রতিযোগিতায় দেশি বণিকরা পরাজিত হতে বাধ্য হয়েছিল।
৩. দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী রেশমশিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
৪. ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ফলে বাংলায় কুখ্যাত আমিলদারি প্রথার উদ্ভব ঘটে এবং কোম্পানি নায়েবে নাযিম বা আমিলদের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করত। আবার জেলার যে জমিদার সর্বাধিক রাজস্ব দিতে রাজি হতো আমিলরা তাকে দায়িত্ব দিত এবং বিভিন্ন খাতে বাড়তি কর আদায় করত।
৫. কোম্পানির কর্মচারীদের গোমস্তা ও পেয়াদাদের নির্যাতনের ফলে বাংলার তাঁতিরা কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে কম মূল্যে কাপড় বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এভাবে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বাংলার তাঁতশিল্প নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
২. ইমরান হাসান তার দাদার কাছে জানতে পারে যে, 'ক' নামক অঞ্চলের ধনসম্পদে আকৃষ্ট হয়ে ইউরোপ থেকে সর্বপ্রথম একটি জাতি ব্যবসায়-বাণিজ্যের উদ্দেশে উক্ত অঞ্চলে এসে সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করে। তারা 'ক' অঞ্চলের বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায়। কুঠি গড়ে তোলে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অপকর্ম ও লুটতরাজ করত। ফলে 'ক' অঞ্চলের জনৈক জমিদার এ বাণিজ্য সংস্থাকে উক্ত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করেন।
ক. ক্লাইভ কখন দ্বিতীয়বার বাংলায় আসেন?
খ. ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানির দিউয়ানি লাভের গুরুত্ব বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' অঞ্চলের সাথে মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশের কোন অঞ্চলের সাদৃশ্য আছে বলে তুমি মনে কর? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত অঞ্চলটির প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদই বিদেশি আধিপত্যবাদের একমাত্র কারণ। বিশ্লেষণ কর।
🍭 ২ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ক্লাইভ দ্বিতীয়বার বাংলায় আসেন।
খ. ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ কোম্পানি দিউয়ানি লাভের মাধ্যমে সামরিক ক্ষমতা লাভ করে কোম্পানি সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী হয়। ইংরেজ কোম্পানি দিউয়ানি লাভের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় ছাড়াও শুল্ক আদায়ের ক্ষমতা লাভ করে এবং নায়েবে নাজিম নিয়োগ করার অধিকারও লাভ করে। সর্বোপরি ইংরেজ কোম্পানি দিউয়ানি লাভের মাধ্যমে বাংলার প্রকৃত শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' অঞ্চলের সাথে মধ্যযুগে ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের সাদৃশ্য রয়েছে। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশ ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি সমৃদ্ধ দেশ। তখন এদেশের গ্রামগুলো নানা ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছিল। তখন গ্রামের কৃষকদের ছিল খেতভরা ফসল, গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ। কুটির শিল্পেও গ্রামগুলো সমৃদ্ধ ছিল। এ দেশের মসলিন কাপড় ছিল জগদ্বিখ্যাত। এছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক পণ্যের জন্য এ অঞ্চলে অনেক দেশ থেকেই বাণিজ্য করতে এসেছে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন দেশ থেকে যারা বাণিজ্য করতে এসেছে তারা অনেকেই এক পর্যায়ে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
ঘ. উক্ত অঞ্চলটিতে বিদেশি আধিপত্যের একমাত্র প্রধান কারণ ছিল এ অঞ্চলের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। এ প্রাকৃতিক সম্পদের আকর্ষণে অনেকেই এদেশের সাথে বাণিজ্য করতে এসেছে। তখন এদেশের তাঁতিদের হাতে বোনা কাপড় ইউরোপের কাপড়ের চেয়েও উন্নত ছিল। তখন এদেশের মসলিন কাপড় ছিল জগদ্বিখ্যাত। এছাড়াও এ অঞ্চল নানা ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য ও মসলার জন্য বিখ্যাত ছিল। তাছাড়াও প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলের সাথে পাশ্চাত্যের ব্যবসায় বাণিজ্য অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে। এ অঞ্চলের পণ্যদ্রব্য ইউরোপের বাজারে ব্যাপক চাহিদা পেতে থাকে। যার ফলে বিভিন্ন দেশের নিকট এ অঞ্চলটিও এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর এ ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ এ অঞ্চলে বাণিজ্য ঘাঁটি স্থাপন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার লাভ ও প্রাধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে বাণিজ্য করার মাধ্যমে তাদের আগমন ঘটায়। তবে তাদের এ আগমন অনেক সময় তাদের প্রাধান্য বিস্তার করতে সহায়তা করেছে আবার কখনো কখনো তারা যখন এ অঞ্চলের জনগণের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছে তখন সেটা তাদের জন্য বাণিজ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বোপরি এ অঞ্চলে বিদেশি আধিপত্যের একমাত্র অন্যতম কারণ ছিল এ অঞ্চলের প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ।
৩. পিটারসন একজন দুঃসাহসী নাবিক। সমুদ্রপথে দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোই তার নেশা। ঐশ্বর্যশালী একটি দেশের আকর্ষণে তিনি দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দেন। তার আগমনের সূত্র ধরেই দুটি মহাদেশের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। পিটারসনের দেশীয় বণিকরা একসময় পরাজিত হয়ে স্বদেশে ফিরে গেলেও আবিষ্কৃত স্থানে তাদের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
ক. কত খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষে আসার জলপথ আবিষ্কৃত হয়?
খ. আলবুকার্কের ‘নীলজল নীতি’ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের চরিত্র পাঠ্যবইয়ের যে চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে তার সাথে ভারতবর্ষের শাসকের বিরোধের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, পিটারসনের দেশীয় বণিকদের অনৈতিক কর্মকান্ডই তাদের পতনের জন্য দায়ী? পাঠ্যবইয়ের নিরিখে তা বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৩ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষে আসার জলপথ আবিষ্কৃত হয়।
খ. আলবুকার্ক ১৫০৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে পর্তুগিজ শাসনকর্তা নিযুক্ত - হয়ে আসেন এবং প্রাচ্যে পর্তুগিজ সাম্রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্য স্থির করেন। তার এ সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে 'নীলজল নীতি' হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ উদ্দেশ্যে তিনি কালিকটের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং পরাজিত ও আহত হন। ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দে আলবুকার্ক বিজাপুরের সুলতানের কাছ থেকে বলপূর্বক গোয়া দখল করেন। তার প্রচেষ্টায় গোয়া পর্তুগিজ শক্তি ও বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তার অনুপ্রেরণায় পর্তুগিজ সৈন্যরা মালাক্কা আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। আলবুকার্ক ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে গোয়ার কাছে অবস্থিত বেনাস্তরিমের দুর্গটি দখল করেন। ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি হরমুজ দখল করে সেখানে পর্তুগিজ অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
গ. উদ্দীপকের চরিত্র পাঠ্যবইয়ের পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামার প্রতিনিধি করেন। ভাস্কো-দা-গামার সাথে ভারতবর্ষের শাসক কালিকটের হিন্দু রাজা জামোরিনের বিরোধ সংঘটিত হয় ভারতীয়দের ওপর পর্তুগিজদের দমননীতিকে কেন্দ্র করে। ভাস্কো-দা-গামা ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে মালাকারের অন্তর্গত কালিকটের হিন্দু রাজা জামোরিনের দরবারে উপস্থিত হন। ভাস্কো-দা-গামা ছিলেন একজন কট্টর সৈনিক। তিনি কালিকট বন্দর থেকে আরব বণিকদের বিতাড়িত করতে শুরু করেন। তার নেতৃত্বে পর্তুগিজ বণিক ও নাবিকেরা ভারতীয় হিন্দু মুসলিম বালক-বালিকাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিতকরণ অথবা দাস দাসীতে পরিণত করে। তিনি পর্তুগিজ ভারতীয় মিশ্র বিবাহের পদক্ষেপ গ্রহণ কনে। এমন দমননীতির ফলে ভাস্কো-দা-গামা জামোরিনের ওপর কোনো কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন নি বরং জামোরিন অধিক মাত্রায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। ভাস্কো-দা-গামা ভারতীয় বাণিজ্যিক জাহাজ লুট ও তীর্থযাত্রীদের ওপর অত্যাচার শুরু করলে রাজা জামোরিন বিশেষভাবে অসন্তুষ্ট হন এবং কালিকটে ভাস্কো-দা-গামা ও তার সহচরদের বিশেষ কোনো স্বার্থরক্ষা গ্রহণে বিরত থাকেন। এভাবে ভাস্কো-দা-গামার সাথে ভারতবর্ষের কালিকটের শাসক রাজা জামোরিনের বিরোধ চরম আকার ধারণ করলে ভাস্কো-দা-গামা বাধ্য হন উপমহাদেশ ত্যাগ করে স্বদেশে ফিরে যেতে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভারতীয়দের ওপর পর্তুগিজদের দমননীতি পরিচালিত হওয়ায় ভাস্কো-দা-গামার সাথে ভারতীয় শাসক জামোরিনের বিরোধ সংঘটিত হয় এবং এর ফলে ভাস্কো-দা-গামা স্বদেশ ফিরে যেতে বাধ্য হন।
ঘ. আমার মতে পিটারসনের দেশীয় বণিকদের কেবল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডই তাদের পতনের জন্য দায়ী নয়। উদ্দীপকে দেখা যায়, দুঃসাহসী নাবিক পিটারসন ঐশ্বর্যশালী একটি দেশের আকর্ষণে সমুদ্রপথ পাড়ি দিলে দুটি মহাদেশের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। কিন্তু পিটারসনের দেশীয় বণিকরা একসময় পরাজিত হয়ে স্বদেশ ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাঠ্যবই হতে আমরা জানতে পারি, ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হলে ইউরোপ ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে জলপথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ভাস্কো-দা-গামার দেশীয় পর্তুগিজ বণিকগণ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এদেশে এলেও এখানে বসে তারা বাণিজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পর্তুগিজ বণিক ও নাবিকরা আরব বণিকদের ভারত, মালয় প্রভৃতি স্থান থেকে বিতাড়িত করে। ভারতীয়দের প্রতি ক্রমে তাদের দুর্ব্যবহার এবং উৎপীড়ন চরম আকার ধারণ করে। পর্তুগিজ নাবিকদের মিশ্র বিবাহ নীতি, শাসনব্যবস্থার অনিয়ম, অসহায় বালক-বালিকাদের জোর করে খ্রিষ্টান বানানো, ভারতীয়রে ধরে নিয়ে গিয়ে বিদেশের বাজারে দাসদাসীরূপে বিক্রয় করা, সম্রাট বা নবাবের আদেশ অমান্য করে বিনা শুল্কে ব্যবসায় করার চেষ্টা ও এদেশে ইউরোপের অন্য শক্তিগুলোর উত্থানের করণে শেষ পর্যন্ত পর্তুগিজরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ কেবল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নয় বরং সামাজিক, ধর্মীয়, সামরিক ও রাজনৈতিক কারণে পর্তুগিজদের পতন চূড়ান্ত রূপ নেয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, পর্তুগিজদের ন্যায় পিটারসনের দেশীয় বণিকরাও রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক, ধর্মীয়সহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে পতনের সম্মুখীন হয়।
৪. ভিনদেশি বণিকরা যুদ্ধে জয়ী হয়ে ঔপনিবেশিক অঞ্চলে। যে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে তাতে অর্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও দেশরক্ষা ছাড়া তাদের অন্যকোনো দায়দায়িত্ব ছিল না। এ অভিনব শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় শাসকদের ক্ষমতাহীন করা। দায়িত্বহীনতার জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। এবং দেশময় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ক. কোন পর্তুগিজ নাবিক প্রথম ভারতে আগমন করেন?
খ. ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কারণ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ভারতীয় উপমহাদেশের কোন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলার জনজীবনে উক্ত ঘটনা যে বিপর্যয় বয়ে এনেছিল পঠিত বিষয়ের নিরিখে তোমার মতামত দাও।
🍭 ৪ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা প্রথম ভারতে আগমন করেন।
খ. ১১৭৬ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকালে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেয় যা ইতিহাসে এক 'ছিয়াত্তরের মন্বন্তর' নামে পরিচিত। লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের দায়িত্বহীনতার ফলে একদিকে বাংলার জনজীবনে এক অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় এবং অন্যদিকে অবাধ লুণ্ঠন ও যথেচ্ছভাবে রাজস্ব আদায়ের ফলে গ্রাম্যজীবন ধ্বংস হয়ে যায়। তাছাড়া পর পর দুই বছর অনাবৃষ্টি ও খরার ফলে কৃষকদের ফসলহানি ঘটে। অথচ এ দুই বছরের খাজনাও তাদেরকে পরিশোধ করতে হয়। এসব কারণে বাংলার মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখা দেয়।
গ. উদ্দীপকে ভারতীয় উপমহাদেশে লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈত শাসনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইংরেজরা পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের পর এদেশে আধিপত্য বিস্তারের যে প্রচেষ্টা শুরু করে তা তাদের দিউয়ানি ও দ্বৈতশাসন লাভের ভিতর দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে। দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় দিউয়ানি ও দেশরক্ষার দায়িত্ব থাকে কোম্পানির হাতে এবং বিচার ও শাসনভার থাকে নবাবের হাতে।
এ ব্যবস্থায় নবাব পেল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পেল দায়িত্বহীন ক্ষমতা। দ্বৈত শাসনে দিউয়ানি বা রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা কোম্পানির হাতে থাকায় কোম্পানি ইচ্ছেমতো রাজস্ব সংগ্রহ করে সম্রাট ও নবাবের ভাতা এবং শাসন কাজ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রেখে উদ্বৃত্ত অর্থ নিজেরা গ্রহণ করত। অতএব, দ্বৈতশাসনের ফলে কোম্পানি কোনো প্রকার দায়দায়িত্ব ছাড়াই অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় অর্থাৎ দিউয়ানি ও দেশ রক্ষার ক্ষমতা হস্তগত করে নেয়।
ঘ. লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসনের ফলে দিউয়ানি ও দেশরক্ষা কোম্পানির হাতে রেখে বিচার ও শাসনক্ষমতা নবাবের ওপর ন্যস্ত করা হয়। এটি ছিল অভিনব এক শাসনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় নবাব পেল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব আর কোম্পানি পেল দায়িত্বহীন ক্ষমতা। বন্তুত ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার অর্থসম্পদ ও বিত্তবৈভবের দিকে অতিমাত্রায় আকৃষ্ট ছিল। তাই তারা দিউয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা নিজেদের হাতে রেখেছিল। দ্বৈতশাসনের দায়িত্বহীনতার ফলে একদিকে বাংলার জনজীবনে অরাজকতা দেখা দেয় এবং অন্যদিকে অবাধ লুণ্ঠন ও যথেচ্ছভাবে রাজস্ব আদায়ের ফলে গ্রাম্যজীবন ধ্বংস হয়ে যায়।
তাছাড়া রাজস্বের হার বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতাও কোম্পানির হাতে ছিল। কিন্তু তারা রাজস্বের হার কখনো কমায়নি; বরং বাড়িয়েছে বহুবার। অধিকন্তু পর পর দু বছর ফসলহানিতেও কোম্পানি রাজস্ব আদায় বন্ধ রাখেনি। ফলে ১১৭৬ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রীষ্মকালে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ইতিহাসে ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর' নামে পরিচিত। এ দুর্ভিক্ষ প্রকট রূপ ধারণ করলে টাকায় একমণ হতে চালের মূল্য বাড়তে বাড়তে টাকায় তিন সেরে এসে দাঁড়াল। ফলে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আর যারা জীবিত ছিল তারাও রোগে শোকে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করে। জনজীবনের এরূপ বিপর্যয়ের পিছনে দ্বৈতশাসনের দিউয়ানি কোম্পানির হাতে থাকাটাই অনেকাংশে দায়ী বলে আমি বিশ্বাস করি।
৫. তাওসিফ টিভিতে ডিসকোভারি চ্যানেলে একটি ঐতিহাসিক সিনেমা দেখছে। সিনেমায় দেখা যায় দেশি রাজার সাথে বিদেশি সৈন্যদের যুদ্ধ বাঁধে। সম্রাটের প্রধান সেনাপতি এ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। তবু কয়েকজন সাহসী সেনাপতির বীরোচিত ভূমিকায় জয়ের দ্বারপ্রান্ত পৌঁছে। কিন্তু প্রধান সেনাপতির পরামর্শে সম্রাট যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। পরে বিশ্রামরত বাহিনীর উপর বিদেশীরা অতর্কিত হামলা করলে সম্রাটের পরাজয় হয়।
ক. ইংরেজরা সর্বপ্রথম কোথায় বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠা করে?
খ. ডুপেস্ন কে ছিলেন? সংক্ষেপে তার পরিচয় দাও।
গ. উদ্দীপকে তাওসিফের দেখা সিনেমার ঘটনায় তোমার পাঠ্যবইয়ের যে ঐতিহাসিক যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তার পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সম্রাটের অদূরদর্শিতা ও প্রধান সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতাই ছিল উক্ত যুদ্ধে সম্রাটের পরাজয়ের কারণতপঠিত বিষয়ের আলোকে যথার্থতা নিরূপণ কর।
🍭 ৫ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ইংজেরা সর্বপ্রথম সুরাটে বাণিজ্যকুঠি প্রতিষ্ঠা করে।
খ. ডুপেস্ন একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ফরাসি বণিক ও রাজনীতিক ছিলেন। ১৭৩১ খ্রি. চন্দননগরের শাসনকর্তা হয়ে তিনি ভারতবর্ষে আসেন। দীর্ঘ দশবছর কৃতিত্বের সাথে শাসন করে পন্ডিচেরীর গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি সমসাময়িক ইংরেজ লর্ড ক্লাইভের চেয়ে বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকলে সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে ছিলেন। তাই ইংরেজদের সাথে ফরাসিদের দ্বনে্দ্ব ফরাসিরা এদেশ ত্যাগে বাধ্য হয়।
গ. উদ্দীপকে তাওসিফের দেখা সিনেমার ঘটনায় আমার পাঠ্যবইয়ের ঐতিহাসিক পলাশীর যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। পলাশী যুদ্ধের পটভূমিসমূহ হলো-
১. নবাবের প্রতি ইংরেজদের অবজ্ঞা : নবাব হিসেবে অভিষেকের পর প্রচলিত রীতি অনুসারে সব বিদেশি বণিক তাকে উপহার পাঠিয়ে অভিনন্দন জ্ঞাপন করত। কিন্তু সিরাজউদ্দৌলা নবাব হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর ইংরেজরা তা করেনি; যা ইংরেজদের প্রতি সিরাজের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
২. দুর্গের সংস্কার : দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বনি্দ্বতার সূত্রে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকরা সংঘর্ষে লিপ্ত থাকার কারণে ইংরেজ বণিকরা কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম এবং ফরাসিরা চন্দননগরে তাদের নিজ নিজ দুর্গের সংস্কার কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে সিরাজ তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ফরাসিরা নবাবের নির্দেশ মানলেও ইংরেজরা তা না মেনে দুর্গ সংস্কারের কাজ চালিয়ে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে সিরাজউদ্দৌলা তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন।
৩. দস্তকের অপব্যবহার : সম্রাট ফররুখশিয়ার কর্তৃক প্রদত্ত নামমাত্র শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকারই দস্তক। দস্তক বা পারমিটের অপব্যবহার নিয়ে বাংলার নবাবের কর্মচারীদের সাথে ইংরেজ বণিকদের বিবাদ দীর্ঘদিনের। ইংরেজ কোম্পানি দস্তকের অপব্যবহার করায় দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই নবাব ইংরেজদের দস্তকের অপব্যবহার বন্ধ করার বাণিজ্যিক শর্ত মেনে চলার আদেশ দেন। কিন্তু ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের আদেশ অমান্য করে। এতে নবাব ইংরেজদের উপর চরম বিরক্ত হন।
৪. কৃষ্ণদাসকে আশ্রয়দান : রাজবলস্নভের পুত্র কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় আশ্রয় দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইংরেজদের সাথে সিরাজের বিরোধ চরমে ওঠে। সিরাজের খালা ঘসেটি বেগম ও তার সহযোগী রাজবলস্নভ প্রতারণার মাধ্যমে অনেক অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। নবাব ঘসেটি বেগম ও রাজবলস্নভকে একপ্রকার নজরবন্দি করে তাদের নিকট অর্থের হিসাব দাবি করেন। নবাবের তদন্টের বিষয় বুঝতে পেরে ঘসেটি বেগম ও রাজবলস্নভ ৫৫ লক্ষ টাকা কলকাতায় পাচার করে দেন। রাজবলস্নভের পুত্র কৃষ্ণদাস সেই অর্থ নিয়ে কলকাতায় ইংরেজদের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করে। এ খবর পেয়ে ইংরেজদের প্রতি সিরাজের সন্দেহ ও ক্ষোভ বহুগুণ বেড়ে যায়।
ঘ. সম্রাটের অদূরদর্শিতা ও প্রধান সেনাপতির বিশ্বাসঘাতকতাই ছিল পলাশী যুদ্ধে সম্রাটের পরাজয়ের অন্যতম কারণত উক্তিটি যথার্থ।
১৭৫৭ সালে নবাবের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল সেনাপতি মীরজাফর ও তার সহযোগীদের যুদ্ধক্ষেত্রে অসহযোগিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা। সেনাপতি থেকে শুরু করে সভাসদ পর্যন্ত সকলেই দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। তাছাড়া নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বয়সে তরুণ। অভিজ্ঞতার অভাবে নবাব যুদ্ধক্ষেত্রে দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও দৃঢ়তার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সেনাপতি মীরজাফরের ষড়যন্ত্রের কথা জেনেও তিনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তার উপর নির্ভর করেছেন। মাতামহের অত্যধিক আদর-স্নেহে লালিত হওয়ায় সিরাজের চরিত্রে কঠোরতা ও দৃঢ়তার অভাব ছিল। ইংরেজদের সম্পর্কে সতর্কতা, ফরাসি ও ইংরেজদের ষড়যন্ত্র এসব বিষয়ে তাকে আলীবর্দী খান যে উপদেশ দিয়ে গেছেন সে বিষয়ে সিরাজ গুরুত্ব দেননি। অন্যদিকে, ইংরেজরা ছিল ঐক্যবদ্ধ এবং তাদের রণকৌশল ছিল উন্নততর। সিরাজের তুলনায় রবার্ট ক্লাইভ ছিলেন রাজনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন, অত্যন্ত দূরদর্শী, সূক্ষ্ম ও কূটবুদ্ধিসম্পন্ন। তাই বলা যায়, সিরাজের পরাজয় নিয়তি ছিল না, অবধারিত ছিল।
৬. ওয়াটসন একজন দুঃসাহসী নাবিক। সমুদ্রপথে দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোই তার নেশা। ঐশ্বর্যশালী একটি দেশের আকর্ষণে তিনি দীর্ঘদিন পাড়ি দেন। তাঁর আগমনের সূত্র ধরেই দুটি মহাদেশের যোগসূত্র স্থাপন হয়। ওয়াটসনের দেশীয় বণিকরা একসময় পরাজিত হয়ে স্বদেশে ফিরে গেলেও তাদের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
ক. জামেরিক কে ছিলেন?
খ. দ্বৈতশাসন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের ওয়াটসনের মতো তোমার পাঠ্যবইয়ের সামঞ্জস্য চরিত্রটিকে অনুসরণ করে ভারতবর্ষে আগমনকারী প্রথম ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত বণিকদের দুর্নীতিপরায়ণতা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও অমানুষিক উৎপীড়নই তাদের পতনের কারণত এর যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
🍭 ৬ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. জামেরিক ছিলেন ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলের কালিকট বন্দরের স্থানীয় রাজা।
খ. দ্বৈতশাসন বলতে দুপক্ষের শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়। ইংরেজরা পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের পর এদেশে আধিপত্য বিস্তারের যে প্রচেষ্টা শুরু করে তা তাদের দেউয়ানি ও দ্বৈতশাসন লাভের ভিতর দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে। দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় দেউয়ানি ও দেশরক্ষার দায়িত্ব থাকে কোম্পানির হাতে এবং বিচার ও শাসনভার থাকে নবাবের হাতে। এ অভিনব শাসনব্যবস্থার নামই দ্বৈতশাসন যা লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তন করেছিল।
গ. উদ্দীপকের ওয়াটসনের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ে ভাস্কো-দা গামার সামঞ্জস্য রয়েছে। উদ্দীপক অনুসারে দুঃসাহসী নাবিক ওয়াটসন ঐশ্বর্যশালী দেশের আকর্ষণে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দেন এবং এভাবেই দুটো মহাদেশের যোগসূত্র স্থাপিত হয়। তেমনি ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় ১৪৯৮ সালে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হলে ইউরোপ ও ভারতীয় উপমহাদেশের যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ঐতিহাসিক স্ট্রাবেব, হেরোডোটাস এবং মেগাস্থিনিসের বিবরণী থেকে এ অঞ্চলের যে বিত্তবৈভব এবং অতুল ঐশ্বর্যের কথা জানা যায় সেই অতুল ঐশ্বর্যের আকর্ষণেই ভারতবর্ষে ইউরোপীয় বণিকদের আগমন ঘটে।
ঘ. উক্ত বণিক অর্থাৎ ভাস্কো-দা-গামা এবং পর্তুগিজ বণিকগণ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এ উপমহাদেশে এলেও দুর্নীতিপরায়ণতা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও অমানুষিক উৎপীড়নই তাদের পতনের কারণ- উক্তিটি যথার্থ বলে আমি মনে করি। পাঠ্যবই হতে আমরা জানতে পারি, ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হলে ইউরোপ ও ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে জলপথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ভাস্কো-দা-গামার দেশীয় (পর্তুগিজ) বণিকগণ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এদেশে এলেও এখানে বসে তারা বাণিজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পর্তুগীজ বণিক ও নাবিকরা আরব বণিকদের ভারত, মালয় প্রভৃতি স্থান থেকে বিতাড়িত করে। ভারতীয়দের প্রতি ক্রমে তাদের দুর্ব্যবহার এবং উৎপীড়ন চরম আকার ধারণ করে। পর্তুগিজ নাবিকদের মিশ্র বিবাহ নীতি, শাসনব্যবস্থার অনিয়ম, অসহায় বালক-বালিকাদের জোর করে খ্রিষ্টান বানানো, ভারতীয়দের ধরে নিয়ে গিয়ে বিদেশের বাজারে দাসদাসীরূপে বিক্রয় করা, সম্রাট বা নবাবের আদেশ অমান্য করে বিনা শুল্কে ব্যবসায় করার চেষ্টা ও এদেশে ইউরোপের অন্য শক্তিগুলোর উত্থানের কারণে শেষপর্যন্ত পর্তুগিজরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ কেবল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নয় বরং সামাজিক, ধর্মীয়, সামরিক ও রাজনৈতিক কারণে পর্তুগিজদের পতন চূড়ান্ত রূপ নেয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে পর্তুগিজ বণিকদের দুর্নীতিপরায়ণতা, অসহিষ্ণু আচরণ ও অমানুষিক উৎপীড়নই তাদের পতনের জন্য দায়ী।
৭. তালেব আলী ও হাসমত মিয়া যৌথভাবে সার ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসায় শুরু করেছে। শীঘ্রই তাদের দোকান সংখ্যা দু থেকে সাত-এ বৃদ্ধি পেল। কিন্তু হাসমত মিয়া ইচ্ছা করেই ঝামেলা সৃষ্টি করে তালেব আলীর সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি বাতিল করে। ইতোমধ্যে সার ক্রয়-বিক্রয় মালিক সমিতির ঊর্ধ্বতন পদাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গেও তালেব আলীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে হাসমত মিয়া তালেব আলীর দোকানগুলো দখল করে নেয়। সকল দিক দিয়ে অসহায় তালেব আলী অবশেষে ব্যবসায় গুটিয়ে বিদেশে চলে যায় নতুন কিছু করতে।
ক. সম্রাট লুই ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে কত টাকা ঋণ দেন?
খ. ইংরেজ কর্মকর্তা জব চার্নকের দূরদর্শিতা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের তালেব আলীর ন্যায় কোন ইউরোপীয় বণিকেরা ভারতবর্ষে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হাসমত মিয়ার মাঝে একটি বিশেষ ইউরোপীয় বণিকদের কূটকৌশল লক্ষণীয়। সত্যতা যাচাই কর।
🍭 ৭ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. সম্রাট লুই ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করেছিলেন।
খ. জব চার্নক ছিলেন একজন দূরদর্শী ইংরেজ কর্মকর্তা। ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইঙ্গ-মুঘল সংঘর্ষের পর ইংরেজরা বাংলা থেকে বিতাড়িত হলে জব চার্নক আপস করার চেষ্টা করেন এবং ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুতানটিতে ফিরে আসেন। ওই বছরে তিনি ১২০০ টাকার বিনিময়ে ভাগীরথী নদীর তীরে কলকাতা, সুতানটি ও গোবিন্দপুর গ্রাম তিনটির জমিদারি স্বত্ব কিনে নেন। পরবর্তীতে এ তিনটি গ্রামকে কেন্দ্র করেই কলকাতা নগরীর উদভব ঘটে। আর এ কলকাতা নগরীতেই গড়ে ওঠে ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষে ইংরেজদের ভাগ্যনির্ধারণকারী দুর্গ ফোর্ট উইলিয়াম। তাই জব চার্নকের দূরদর্শিতা ভারতবর্ষে ইংরেজদের সাফল্য অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
গ. উদ্দীপকের তালেব আলীর ন্যায় ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে আসা ডাচ বা ওলন্দাজগণ একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। তালেব আলী সার ক্রয়-বক্রয়ের বাণিজ্যে হাসমত মিয়াকে অংশীদার করে। তাদের প্রচেষ্টায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারের দোকান সংখ্যা দু থেকে সাত-এ বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায় যখন বেশ লাভবান হচ্ছে তালেব আলী ঠিক তখন হাসমত মিয়া ঈর্ষান্বিত হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে তালেব আলীর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে এবং বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল করে। একই সময়ে সার ক্রয়-বিক্রয় মালিক সমিতির ঊর্ধ্বতন পদাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে তালেব আলীর বিরোধ দেখা দেয়। এ সুযোগে হাসমত মিয়া জোরপূর্বক তালেব আলীর নিজস্ব দোকানগুলো দখল করে নেয়। অসহায় তালেব আলী ব্যবসায় গুটিয়ে তখন ভাগ্য অন্বেষণে বিদেশে চলে যায়। একইভাবে ডাচ বা ওলন্দাজগণ ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে এসে ইংরেজদের সাথে রেশমি সুতা, সুতি কাপড়, চাল, ডাল ও তামাক এদেশ থেকে রপ্তানি করত এবং অন্যদেশ থেকে এদেশে মসলা আমদানি করত। কিন্তু ইংরেজদের সঙ্গে ওলন্দাজদের সম্পাদিত বাণিজ্য চুক্তি ভেঙে গিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এসময় বাংলার শাসনকর্তাদের সঙ্গে প্রবল বিরোধ দেখা গেলে ইংরেজরা ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক সুবিধা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজগণ ভারতবর্ষ ত্যাগ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় চলে যায় অর্থাৎ ওলন্দাজগণও তালেব আলীর ন্যায় একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।
ঘ. উদ্দীপকের হাসমত মিয়ার মাঝে ইউরোপীয় বণিক ইংরেজদের কূটকৌশল লক্ষণীয়। ভারতবর্ষে পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ বণিকদের বাণিজ্যিক সাফল্য ইংরেজদেরকে আগ্রহী করে তোলে। তারা এদেশে বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করতে ও ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে সমর্থ হয়। এসময় ওলন্দাজগণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজদের সঙ্গে নিয়ে। ব্যবসায় শুরু করে। ইংরেজরা ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক কর্মকান্ডু এদেশে থাক এটা সহজে মেনে নিতে পারে নি। তাই এক আধিপত্য, বিস্তারের স্বপ্নে ইংরেজরা চুক্তি ভেঙে দিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করে। হাসমত সাহেবও তালেব আলীর প্রতি এরূপ আচরণ করে। কেবল বিরোধ তৈরি করেই ইংরেজরা ক্ষান্ত হয় নি বরং যখন তাদের কূটনৈতিক তৎপরতায় এদেশের শাসকদের সঙ্গে ওলন্দাজ বণিকদের প্রবল বিরোধ দেখা দেয় তখন ইংরেজরা সুযোগ কাজে লাগায় এবং শক্তি প্রয়োগ করে ওলন্দাজদের সকল বাণিজ্যিক কুঠি দখল করে নেয়। হাসমত সাহেবও জোরপূর্বক তালেব আলীর দোকানগুলো দখল করে নেয় যখন সে খেয়াল করে যে মালিক সমিতির লোকদের সাথে তালেব আলীর সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। হাসমত বুঝতে পেরেছিল। যে এখন যদি দোকানগুলো দখল করা হয় তবে মালিক পক্ষ থেকে তালেব আলী কোনো সুবিচার পাবে না। তাই সুযোগ কাজে লাগাতে সে বিলম্ব করে নি। ইংরেজরা ওলন্দাজদের এরূপ বিপদে ফেলেছিল যেন তারা বাণিজ্যিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় এবং ভারতবর্ষ ত্যাগ করে। প্রকৃতপক্ষে তাই ঘটেছিল। একই উদ্দেশ্য নিয়ে হাসমত সাহেব তালেব আলীকে বিপদের মুখোমুখি করেছিল এবং তার উদ্দেশ্য সফল হয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে একথা বলাই যৌক্তিক যে, হাসমত সাহেবের মাঝে ইংরেজ বণিকদের কূটকৌশল লক্ষণীয়।
৮. তুলি আক্তার তার পরিবার নিয়ে গুলশানের এক দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি ফ্লাট নতুন ভাড়া নিয়েছেন। একমাস পর ভাড়া বেশি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ির মালিককে দিয়ে পাশের ফ্লাটের ভাড়াটেকে তাড়িয়ে সেখানে তুলি আক্তার নিজের বোনকে ভাড়াটে হিসেবে আনেন। এভাবে কৌশলে পুরো বাড়িই নিজের আত্মীয়দের দিয়ে ভাড়া নেন। তারপর জাল দলিল বানিয়ে বাড়ির মালিক বনে যান তারা। বাড়ির আসল মালিক কেস করলে তুলি আক্তার সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে কেস উঠিয়ে নিতে বাধ্য করেন।
ক. সুরাটে কে প্রথম ফরাসি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন?
খ. দ্বৈতশাসনের কুফলগুলো ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের তুলি আক্তারের সাথে ভাস্কো-দা-গামা নাবিকের স্বজাতির কোন দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণত ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের উক্ত ব্যক্তির পতন অবশ্যম্ভাবী- এর সপক্ষে মতামত দাও।
🍭 ৮ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. ফঁসোয়া ফ্যারোঁ সুরাটে প্রথম ফরাসি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন।
খ. ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনামলে লর্ড ক্লাইভ প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা অনেক কুফল বয়ে আনে। এর কুফলগুলো হলো- ১. আইনশৃঙ্খলায় অবহেলার দরুন ডাকাতরা গ্রামবাংলায় লুটপাট শুরু করে। এতে গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়ে। ২. রাজস্ব বেশি আদায়ের প্রতিযোগিতার ফলে জমিদাররা ইজারাদারে পরিণত হয় এবং বাংলার মানুষ হতদরিদ্র ও অসহায় হয়ে পড়ে। ৩. কোম্পানির নতুন বাণিজ্য নীতি প্রণীত হয় এবং ইংরেজিদের একচেটিয়া প্রাধান্য এদেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে দেশীয় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে মার খান এবং দেশের রপ্তানি আয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। ৪. কোম্পানির কর্মচারিরা রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করলে এবং সম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার হতে থাকলে বাংলার অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙে পড়ে। ৫. ১৭৭০ সালে সংঘটিত দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর সংখ্যা অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পায়।
গ. তুলি আক্তারের সালে ভাস্কো-দা-গামা নাবিকের স্বজাতি অর্থাৎ পর্তুগিজদের আধিপত্য বিস্তারের মনোভাবের দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ। এবং নিজের আধিপত্য উক্ত বিল্ডিং-এ বৃদ্ধি করতে পুরাতন ভাড়াটেদের সুকৌশলে তাড়িয়ে সেসব ফ্লাটে নিজের বোন ও অন্যান্য আত্মীয়দের ভাড়াটে হিসেবে নিয়ে আসেন। এরপর তুলি আক্তার নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে জাল দলিল বানিয়ে বাড়ির মালিকে পরিণত হন।
উপরন্তু বাড়ির আসল মালিককে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন কেস উঠিয়ে নিতে। একই মনোভাব আমরা বিখ্যাত পর্যটক ভাস্কো-দা-গামা নাবিকের স্বজাতি অর্থাৎ পর্তুগিজদের মাঝে দেখা যায়। পর্তুগিজরা বাণিজ্যকে মূলধন করে ভারতবর্ষে আসলেও ক্রমে তারা সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখে। পর্তুগিজরা যে কালিকট বন্দরে প্রথম অবতরণ করেছিল তার সমৃদ্ধি ঘটেছিল আরব বণিকদের হাতে। অথচ পর্তুগিজ বণিক নাবিকদের নৃশংসভাবে হত্যা করে কালিকট বন্দরে প্রাধান্য বিস্তার করে। ১৫১০ সালে আলবুকার্ক ভারতে আসেন এবং তাঁর নেতৃত্বে এশিয়ার চারদিকের নৌপথে পর্তুগিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলভাগে নতুন রাজ্য গ্রাম করার জন্য পর্তুগিজরা অবিরত যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকত। পাশাপাশি স্থল ও নৌপথে দস্যুবৃত্তি চালাতেও পর্তুগিজরা দ্বিধা করত না। অল্প দিনের মধ্যেই ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলের কলিকট, চৌল, বোম্বাই, লালসেটি, বেসিন, কোচিন, গোয়া, দসন, দিউ প্রভৃতি বন্দরে কুঠি স্থাপন করে এবং কুঠিগুলোকে দুর্গে পরিণত করে। হুগলি নামক স্থানে ১৫৭৯ সালে পর্তুগিজরা উপনিবেশ গড়ে তোলে। এরপর তারা উড়িষ্যা ও বাংলার কিছু অঞ্চলে বসতি সম্প্রসারণ করে। অর্থাৎ পর্তুগালের বণিকেরা এদেশের স্থায়ী অধিবাসীতে পরিণত হতে শুরু করে। সুতরাং আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য সুস্পষ্ট।
ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি তুলি আক্তারের পতন অবশ্যম্ভাবী। কারণ উক্ত জাতি অর্থাৎ পর্তুগিজদের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তারা এদেশে ব্যবসায় বাণিজ্য জমিদার-প্রতাপশালী বারো ভূঁইয়াদের সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পাশাপাশি জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার ও লুণ্ঠনও করত। তাদের স্পর্ধা এতোটাই বেড়ে গিয়েছিল যে অনেক সময় সম্রাট বা নবাবের আইন অমান্য করে বিনা শুল্কে স্বাধীনভাবে ব্যবসায় বাণিজ্য চালাত। পর্তুগিজরা জোর করে এদেশের অসহায় বালক-বালিকাদের খ্রিষ্টান বানাত। ধর্ম বিষয়ে তাদের অসহিষ্ণুতা চরম আকারে দেখা যায় অধিকৃত অঞ্চলে। ধর্মীয় ব্যাপারে তারা যে নীতি গ্রহণ করত তা হলো, ‘‘হয় খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ কর অথবা মৃত্যুবরণ কর।’’ এছাড়া পর্তুগিজরা এদেশের মানুষকে ধরে নিয়ে বিদেশের বাজারে দাসদাসীরূপে বিক্রয় করত। আর স্থায়ী বসবাস গড়ে তুলতে পর্তুগিজরা এদেশের মেয়েদের জোরপূর্বক বিয়ে করত। দিন দিন পর্তুগিজদের অপরাধের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাদের অপরাধের মাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পেলে সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে কাসিম খান পর্তুগিজদের হুগলি কুঠি থেকে বিতাড়িত করেন। এরপর বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খান তাদের চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ ঘাঁটি দখল করে বাংলা থেকে বিতাড়ন করেন। অর্থাৎ পর্তুগিজদের অপরাধের মাত্রা যখন অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছিল তখন তাদর পতনও চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়। আর তাই উদ্দীপরে তুলি আক্তারও গুলশানের উক্ত বাড়ির মালিক হওয়ার জন্য সর্বপ্রকার অপরাধে জড়িয়ে পড়েন যা তার পতনকেও আসন্ন করে তোলে। সুতরাং তুলি আক্তারের পতন অবশ্যম্ভাবীত উক্তিটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।
৯. মিশুর মামা ইংল্যান্ড প্রবাসী। তিন মাসের ছুটি শেষে আজ আবার বিমানযোগে ইংল্যান্ড যাবেন। ইংল্যান্ড ইউরোপের একটি দেশ। একসময় ইউরোপ থেকে ভারতে আসতে হতো জলপথে। ইউরোপ থেকে ভারত আসার জলপথ আবিষ্কার করে পর্তুগালের নাবিক ভাস্কো-দা-গামা। পরবর্তীতে এ পথ ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বণিকেরা এ উপমহাদেশে আগমন করে। ইউরোপীয়দের মধ্যে স্বপ্রথম আসে পর্তুগিজরা। বিভিন্ন জাতির মধ্যে ইংরেজরা দীর্ঘ সময় এ উপমহাদেশে প্রভাব বিস্তার করেছিল।
ক. পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম কোথায় কুঠি স্থাপন করে?
খ. ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কারের প্রধান কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. পর্তুগিজদের এদেশে আগমনের সুফল হিসেবে উদ্দীপকের মিশুর মামা কোন কোন দিককে শনাক্ত করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত শেষোক্ত জাতি তাদের আধিপত্য বিস্তার করে দীর্ঘসময় ভারতে বাণিজ্য করার অধিকার স্থাপন করেত তুমি কি বিষয়টির সাথে একমত? মতামত দাও।
🍭 ৯ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. পর্তুগিজদের সর্বপ্রথম স্থাপিত কুঠি কালিকটে অবস্থিত ছিল।
খ. অতি প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। মধ্যযুগে আরবদেশীয় বণিকগণ উপমহাদেশের পণ্যদ্রব্য ইতালির ভেনিস, জেনোয়া প্রভৃতি বন্দরে চালান করত। এ সকল বন্দর থেকে পণ্যদ্রব্য আবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠান হতো। ইতালীয় ও আরব বণিকদের মধ্যে এ বাণিজ্য ছিল প্রায় একচেটিয়া। এতে তাদের প্রচুর মুনাফা হতো। ফলে ইউরোপের অন্যান্য দেশের বণিকগণ উপমহাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। আর এজন্য তারা যাতায়াতের সুবিধার্থে জলপথ আবিষ্কার করার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে।
গ. উদ্দীপকের মিশুর মামা ছিলেন ইংল্যান্ড প্রবাসী। তিনি জানতে পারেন, পর্তুগিজগণ মূলত ব্যবসায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এদেশে আগমন করে। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ শেষাবধি ব্যবসায় বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কারণ অনেক পর্তুগিজ এদেশে বিবাহ করে স্থায়িভাবে বসবাস করে। এতে তারা বাঙালি সমাজে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এসব স্থায়িভাবে বসবাসকারী পর্তুগিজ কৃষিক্ষেত্রে ও বাংলা ভাষা-সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আমাদের দেশের সুম্বাদু ফল আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, জলপাই, কামরাঙ্গা প্রভৃতি চাষ পর্তুগিজরাই শুরু করে। এছাড়া পর্তুগিজগণ এদেশের নানা ফলমূল থেকে চাটনি ও দুধ থেকে মিষ্টি মিঠাই তৈরিতে অনন্য অবদান রাখে। ভাষার উন্নয়নেও পর্তুগিজগণ অবদান রাখে। অনেক পর্তুগিজ শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে যায়। যেমন- বালতি, ছবি, সাবান, তোয়ালে, আলপিন, বারান্দা, জানালা, কেদারা প্রভৃতি। বাংলা গদ্যে প্রথম বই পর্তুগিজদের লেখা। বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ ও অভিধানও তাদেরই রচনা। উল্লেখ্য, খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের সুবিধার জন্যই তারা বাংলা ভাষার চর্চা করেছিল।
ঘ. একসময় ইংরেজরা তাদের আধিপত্য বিস্তার করে ভারতে বাণিজ্য করার অধিকার স্থাপন করে এ বিষয়টির সাথে আমি একমত। কারণ ইংল্যান্ডের ২১৭ জন অংশীদার ১৬০০ সালে একটি বণিকসংঘ গঠন করে। তারা এর নাম দেয় 'ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'। ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথের কাছ থেকে তারা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসায় করার সনদ লাভ করে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে তারা সুরাটে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করার অনুমতি লাভ করে (১৬১২ সাল)। পরে মসলিপট্টমে তাদের দ্বিতীয় বাণিজ্যকুঠি স্থাপিত হয় (১৬১৬ সাল)। একে একে তারা আগ্রা, আহমদাবাদ, ভারুচ প্রভৃতি স্থানেও কুঠি স্থাপন করে। তারা ১৬৩৯ সালে মাদ্রাজে (বর্তমান চেন্নাই) ফোর্ট সেন্ট জর্জ নামে একটি দুর্গ নির্মাণ করে। ইংরেজগণ হরিহরপুর, হুগলি, পাটনা, কাশিমবাজার প্রভৃতি স্থানেও কুঠি স্থাপন করে। বাংলার সুবাদার শাহ সুজা বছরে তিন হাজার টাকা শুল্ক দেওয়ার শর্তে ইংরেজদেরকে বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি দেন।
ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগালের রাজার বোনকে বিয়ে করে যৌতুক হিসেবে বোম্বাই (বর্তমান মুম্বাই) শহরটি লাভ করেন (১৬৬৯ সাল)। তিনি ইংরেজ কোম্পানির নিকট শহরটি ইজারা দেন। পরে কোম্পানি এটি কিনে নেয়।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ইংরেজগণ সুতানুটি গ্রামে একটি নগর প্রতিষ্ঠা করে (১৬৯০ সালে)। পরে কলকাতা ও গোবিন্দপুর গ্রাম দুটি কিনে নগরটিকে আরও বড় করা হয়। এভাবেই গড়ে ওঠে বিখ্যাত কলকাতা শহর। মাদ্রাজ, বোম্বাই (বর্তমান মুম্বাই) ও কলকাতাকে কেন্দ্র করে ভারতে ইংরেজ কোম্পানির ব্যবসায় দারুণ প্রসার লাভ করে। ১৭১৭ সালে সম্রাট ফররুখশিয়ারের কাছ থেকে শুল্ক ছাড়াই ইংরেজগণ সারা ভারতে বাণিজ্য করার অধিকার পায়। তারপর থেকে তারা তাদের আধিপত্য বিস্তার করে সমগ্র ভারতে বাণিজ্য সম্প্রসারিত করে।
১০. মি. রফিক একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি তার শ্রেণিকক্ষে ওলন্দাজ ও দিনেমারদের উপমহাদেশে আগমন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ওলন্দাজ ও দিনেমারদের বাণিজ্যকুঠি স্থাপন ও দেশত্যাগ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। পুনরায় তিনি ছাত্রছাত্রীদেরকে এ বিষয়ে বুঝিয়ে বলেন। এর ফলে সহজেই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নিকট পরিষ্কার হয়।
ক. ওলন্দাজ কারা?
খ. ভারতীয় উপমহাদেশে ওলন্দাজ ও দিনেমারগণ আগমন করে কেন?
গ. উদ্দীপকের মি. রফিক দ্বিতীয়বার শিক্ষার্থীদের নিকট যে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেন সে বিষয়গুলো চিহ্নিত কর।
ঘ. উক্ত ব্যক্তির পাঠদানের মূল বিষয়বন্তু কী ছিল? বিশ্লেষণ কর।
🍭 ১০ নং প্রশ্নের উত্তর 🍭
ক. হল্যান্ডের অধিবাসীদের ওলন্দাজ বলা হতো।
খ. ওলন্দাজ ও দিনেমারগণ বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন করে। এ উদ্দেশ্যে ওলন্দাজগণ ১৬০২ সালে 'ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' নামে একটি বাণিজ্য সংঘ গঠন করে। অন্যদিকে, দিনেমারগণ ১৬১৬ সালে 'ডেনিস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' গঠন করে এদেশে আগমন করে।
গ. উদ্দীপকের মি. রফিক দ্বিতীয়বার শিক্ষার্থীদের নিকট ওলন্দাজ ও দিনেমারদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন ও দেশ ত্যাগ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ওলন্দাজগণ মাদ্রাজের নাগাপট্টম এবং পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়া ও বাকুড়ায় বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। তাছাড়া বালেশ্বর, কাশিমবাজার, বরানগর প্রভৃতি স্থানেও তাদের কুঠি ছিল। তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ে লিপ্ত হয়। ইংরেজগণ ছিল তাদের প্রতিবেশী। ইংরেজদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তারা এদেশ থেকে চলে যায়।
দিনেমারদের বাণিজ্যকুঠি ছিল তাঞ্জোরের ট্রাঙ্কুবার ও পশ্চিম বাংলার শ্রীরামপুরে। কিন্তু তারা বাণিজ্যে তেমন সুবিধা করতে পারে নি। অবশেষে পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজদের নিকট বাণিজ্যকুঠি বিক্রয় করে তারা এদেশ ছেড়ে চলে যায়।
ঘ. উদ্দীপকের মি. রফিকের পেশা ছিল শিক্ষকতা। সে সুবাধে তিনি শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে পাঠদান করছিলেন মূলত ওলন্দাজ ও দিনেমারদের কার্যক্রম প্রসঙ্গে। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
১. ওলন্দাজগণ হল হল্যান্ডের অধিবাসী। অন্যদিকে, দিনেমারগণ হলেন ডেনমার্কের অধিবাসী।
২. ওলন্দাজদের কোম্পানির নাম ছিল 'ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'। কিন্তু দিনেমারদের কোম্পানির নাম ছিল 'ডেনিস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’।
৩. ওলন্দাজগণ ১৬০২ সালে এ উপমহাদেশে আগমন করে। আবার দিনেমারগণ ১৬১৬ সালে এ উপমহাদেশে আগমন করে।
৪. তারা উভয়ে এ মহাদেশে বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে আগমন করে।
৫. ওলন্দাজগণ মাদ্রাজের লাগাপট্টম এবং পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়া ও বাকুড়ায় বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। অন্যদিকে, দিনেমারগণ তাঞ্জোরের ট্রাঙ্কুবার এবং পশ্চিম বাংলার শ্রীরামপুরে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে।
৬. ইংরেজগণ ওলন্দাজদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল যার কারণে তাদেরকে এদেশ থেকে বিতাড়িত হতে হয়। কিন্তু দিনেমারগণ ব্যবসায় বাণিজ্যে তেমন উন্নতি করতে পারে নি। পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজদের নিকট বাণিজ্যকুঠি বিক্রয় করে তারা এদেশ থেকে চলে যায়।
0 Comments:
Post a Comment