HSC ভূগোল ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৮

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Geography 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC Geography 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Vugol 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
ভূগোল
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮

HSC Geography
2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. ‘ক’ একটি উন্নয়নশীল দেশ হলেও পণ্য আমদানি ও রপ্তানি দুটোই করে থাকে। তবে রপ্তানি পণ্যের চেয়ে আমদানি পণ্যের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেশটির অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। কাজেই রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিই ‘ক’ দেশটির জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ক. WTO এর পূর্ণরূপ লেখ।
খ. শিল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ‘ক’ দেশটির বাণিজ্যের প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিই ‘ক’ দেশটির জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ’’- তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. WTO এর পূর্ণরূপ হলো World Trade Organization.

খ. শিল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক।
যেকোনো দেশের শিল্প স্থাপিত হলে সেখানে প্রচুর জনবল নিয়োগ একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর শ্রমিক কাজ করে। বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন যোগ্যতার জনবল শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকে। অর্থাৎ যে ‘‘শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেশি সে অঞ্চলে কাজের সুযোগও বেশি থাকে। তাই যায় শিল্প কর্মসংস্থানের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

গ. উদ্দীপকে ‘ক’ দেশটি হলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে বেশিরভাগই সিজদ্রব্য, পাট, চা, চিংড়ি, তামাক প্রভৃতি। তবে বর্তমানে তৈরি পোশাক, কাগজ, রেয়ন প্রভৃতি দ্রব্যের মতো শিল্পজাত পণ্যও রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের ৭৫ ভাগই শিল্প পণ্য, খনিজ তল ঘড়ি, ফ্রিজ, ক্যালকুলেটর প্রভৃতি। এদেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানি পণ্যের আধিক্যই বেশি। তাই বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য সর্বদাই প্রতিকূল অবস্থায় থাকে। এদেশের নিজস্ব বিমান ব্যবস্থা ও জাহাজ কম থাকায় বৈদেশিক বিমান কোম্পানি ও জাহাজের ওপর নিভর্রশীল হতে হয়।
বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে চীন, মায়ানমার, ভারত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি হিসেবে বাংলাদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনশক্তি রপ্তানি, বাণিজ্যের গতি, বাণিজ্য এলাকার বিস্তৃতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ফুটে ওঠে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘ক’ দেশটি হলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা যেমন কম তেমনি উৎপাদনও আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশের অপ্রচলিত পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক আন্তর্জাতিক বাজারে খ্যাতি লাভ করেছে। তৈরি পোশাকের আইটেমের সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের পথেজিন ঘটিয়ে এবং গণগত মান বৃদ্ধি করে এর রপ্তানি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। চিংড়ি বাংলাদেশের আরেকটি রপ্তানি পণ্য। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, হংকং প্রভৃতি দেশে বাংলাদেশের চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিবিড় চাষ পদ্ধতি ও সঠিক ভূমিনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এদেশে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় দেশ, ভারত ও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের কাচা শাকসবজি, ফলমূল, পান, গোল আলু প্রভৃতি দ্রব্য রপ্তানি করা হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে এসব দ্রব্যের রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের হস্তশিল্পজাত পণ্যদ্রব্য ক্রমশ সুনাম অর্জন করে চলছে এবং এগুলোর বাজার প্রসারিত হচ্ছে। বাঁশ, বেত, রশি, পাট, বিভিন্ন প্রকার ধাতব পদার্থ, কাঠ প্রভৃতি দ্বারা তৈরি নানা প্রকার শৌখিন হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা বিশ্বের অনেক দেশে রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, বিগত প্রায় দুই দশক যাবৎ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের গঠন ও বিন্যাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। অপ্রচলিত পণ্যদ্রব্যের প্রাধান্য ও রপ্তানি সম্ভাবনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক বাজার ও দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যমান পরিস্থিতিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগিয়ে এসব রপ্তানি পণ্যদ্রবের উৎপাদন বৃদ্ধি করে রপ্তানি বহুলাংশে বাড়ানো সম্ভব।

২.নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. চট্টগ্রাম বন্দর কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
খ. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে, ত্বরান্বিত করে ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'A' দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'A' ও 'B' 'দেশ দুটোর মধ্যে বাণিজ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত।

খ. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করে।
দেশর একস্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তরের জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা আবশ্যক। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে ব্যবসায় সম্প্রসারণ হয়। শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, জ্বালানি, কৃষিজাত ও শিল্পজাত সব বিনিময় স্থানে আনা-নেওয়ার জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। এককথায় দেশের সার্বিক অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পরিচালনায় পরিবহন ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। তাই বলা যায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করে।

গ. উল্লিখিত দেশুটি হলো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো-
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষিজদ্রব্য, পাট, চা, চিংড়ি, তামাক প্রভৃতি। তবে বর্তমানে তৈরি পোশাক, কাগজ, রেয়ন প্রভৃতি দ্রব্যের মতো শিল্পজাত পণ্যও রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের ৭৫ ভাগই শিল্পপণ্য, খনিজ তেল, ঘড়ি, ফ্রিজ, ক্যালকুলেটর প্রভৃতি। এদেশের রপ্তানির চেয়ে আমদানি পণ্যের আধিক্যই বেশি। তাই বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য সর্বদাই প্রতিকূল অবস্থায় রয়েছে। এদেশের নিজস্ব বিমান ব্যবস্থা ও জাহাজ কম থাকায় বৈদেশিক বিমান কোম্পানি ও জাহাজের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশ বিশেষ করে চীন, মায়ানমার, ভারত প্রভৃতি দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি হিসেবে বাংলাদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জনশক্তি রপ্তানি বাণিজ্যের গতি, বাণিজ্য এলাকার বিস্ততি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ফুটে ওঠে।

ঘ. উদ্দীপকে 'A' ও 'B' চিহ্নিত দেশ দুটি হলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।
দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক তুলনামূলক সম্পর্ক নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
দেশভিত্তিক রপ্তানি কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বহত্তম বাজার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি ও পরে বাংলাদেশি পণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময়কালে ৪৫৯৩.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যা দেশের মোট রপ্তানির শতকরা ১৬.৬৭ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত প্রধান প্রধান পণ্যসমূহ হলো তৈরি। পোশাক, নীটওয়্যার, হিমায়িত চিংড়ি ক্যাপ, হোম টেক্সটাইল ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ১৭৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য (উৎস: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৯)।
তাই বলা যায়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার বহুগুণ পণ্য ঐ দেশে রপ্তানি করে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।

৩. নাঈম ও নাজিম স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। নাঈম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করেন আর নাজিম অন্য দেশে তৈরি পোশাক, পাটজাত দ্রব্য ও কাঁচামাল রপ্তানি করেন।
ক. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কত প্রকার ও কী কী?
খ. বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ব্যাখ্যা দাও।
গ. দেশের তৈরি পোশাকের সিংহভাগ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দুই প্রকার। যথা: আমদানি বাণিজ্য ও রপ্তানি বাণিজ্য।

খ. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলতে একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সংঘটিত বিনিময় ব্যবস্থাকে বোঝায়। বাংলাদেশের ভেতরে যে বাণিজ্যগলো হয় সেগুলোকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। এক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে শহর, নগর এমনকি মহানগরী পর্যন্ত বাণিজ্য হয়ে থাকে। যে অঞ্চলে উদ্বৃত্ত শস্য বা অন্যকোনো ও পণ্যদ্রব্য থাকে সেই অঞ্চল থেকে ঘাটতি অঞ্চলের মধ্যে বিনিময় হয় যা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত।

গ. বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে তন্মধ্যে সর্বাধিক বেশি রপ্তানি করে তৈরি পোশাক। দেশভিত্তিক রপ্তানি কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বৃহত্তম বাজার।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশি পণ্যের প্রধান আমদানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময়কালে ৪৫৯৩.৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যা দেশের মোট রপ্তানির শতকরা ১৬.৬৭ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিতে একক বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করা হয়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয় খুবই কম। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৭৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে। বাংলাদেশের পণ্যের গুণগতমান ভালো এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার কারণে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাক এদেশ থেকে বেশি আমদানি করে থাকে।
সুতরাং বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ় এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। এ কারণে দেশের তৈরি পোশাকের সিংহভাগ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

ঘ. বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা যেমন কম তেমনি উৎপাদনও আশানুরূপ নয়।
বাংলাদেশের অপ্রচলিত পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক আন্তর্জাতিক বাজারে খ্যাতি লাভ করেছে। তৈরি পোশাকের আইটেমের সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন নতুন ডিজাইনের সংযোজন ঘটিয়ে এবং গুণগত মান বৃদ্ধি করে এর রপ্তানি আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। চিংড়ি বাংলাদেশের আরেকটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পণ্য। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান,
মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড, হংকং প্রভৃতি দেশে বাংলাদেশের চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিবিড় চাষ পদ্ধতি ও সঠিক ভূমিনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এদেশে চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি বহুলাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় দেশ, ভারত ও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল, পান, গোল আলু প্রভৃতি দ্রব্য রপ্তানি করা হয়। উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে এসব দ্রব্যের রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের হস্তশিল্পজাত পণ্যদ্রব্য ক্রমশ সুনাম অর্জন করে চলছে এবং এগুলোর বাজার প্রসারিত হচ্ছে। বাঁশ, বেত, রশি, পাট, বিভিন্ন প্রকার ধাতব পদার্থ, কাঠ প্রভৃতি দ্বারা তৈরি নানা প্রকার শৌখিন হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা বিশ্বের অনেক দেশে রয়েছে। এসব অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মান উন্নয়ন ও বিপণন প্রক্রিয়া উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব।
পরিশেষে বলা যায়, বিগত প্রায় দুই দশক যাবৎ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের গঠন ও বিন্যাসের ক্ষেত্রে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। অপ্রচলিত পণ্যদ্রব্যের প্রাধান্য ও রপ্তানি সম্ভাবনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক বাজার ও দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যমান পরিস্থিতিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগিয়ে এসব রপ্তানি পণ্যদ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, রপ্তানি বহুলাংশে বাড়ানো সম্ভব। ফলে এদেশের রপ্তানি আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

৪. রাজু ও শান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। রাজু অন্যদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করেন আর শান্তু অন্য দেশে তৈরি পোশাক, পাটজাত দ্রব্য ও কাঁচামাল রপ্তানি করেন। দীর্ঘদিন ব্যবসায় করে তারা বুঝতে পারল বৈদেশিক বাণিজ্য এদেশের অনুকূলে নয়। এর প্রকৃতি উন্নত দেশের চেয়ে ভিন্ন।
ক. বাণিজ্য কী?
খ. বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ব্যাখ্যা দাও।
গ. রাজু ও শান্তুর বাণিজ্যের পার্থক্য লেখ।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাণিজ্যের প্রকৃতি বাংলাদেশের আলোকে মূল্যায়ন কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদ্বৃত্ত অঞ্চল ও ঘাটতি অঞ্চলের মধ্যে যে পণ্যের বিনিময় ঘটে তাকেই বাণিজ্য বলে।

খ. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলতে একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সংঘটিত বিনিময় ব্যবস্থাকে বোঝায়। বাংলাদেশের ভেতরে যে বাণিজ্যগুলো হয়, সেগুলোকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। এক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে শহর, নগর এমনকি মহানগরী পর্যন্ত বাণিজ্য হয়ে থাকে। যে অঞ্চলে উদ্বৃত্ত শস্য বা অন্যকোনো পণ্যদ্রব্য থাকে সেই অঞ্চল থেকে ঘাটতি অঞ্চলের মধ্যে বিনিময় হয় যা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত।

গ. উদ্দীপকে রাজু ও শান্তুর বাণিজ্য যথাক্রমে আমদানি এবং রপ্তানি বাণিজ্য।
একটি দেশ তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য যখন অন্যদেশ থেকে পণ্যদ্রব্য নিজ দেশে আনে তাকে আমদানি বাণিজ্য বলে। অপরদিকে একটি দেশ তার অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পণ্য যদি অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিদেশে প্রেরণ করে তাকে রপ্তানি বাণিজ্য বলে।
আমদানি বাণিজ্যে বিভিন্ন পণ্য অন্যদেশ থেকে নিজ দেশে আনা হয়। পক্ষান্তরে রপ্তানি বাণিজ্যে নিজ দেশের উদ্বৃত্ত পণ্যদ্রব্য ও সেবাসমূহ বিদেশে প্রেরণ করা হয়। এক্ষেত্রে রপ্তানি বাণিজ্য একটি দেশের পণ্যদ্রব্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা নির্দেশ করে। সাধারণত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো আমদানি এবং উন্নত দেশগুলো রপ্তানি বাণিজ্য করে থাকে। বাংলাদেশের আমদানি পণ্যসমূহ হলো- ভোজ্যতেল, পেট্রোলিয়াম সামগ্রী, সুতা, সার, ক্লিংকার, লৌহজাত দ্রব্য প্রভৃতি। এদেশের রপ্তানি পণ্যসমূহ হলো- তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, পাটজাত দ্রব্য, জনশক্তি প্রভৃতি। সুতরাং বলা যায়, দুই বন্ধু রাজু ও শান্তর বাণিজ্যের ধরনে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাণিজ্য হলো আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিচে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রকৃতি বর্ণনা করা হলো-
বাংলাদেশ বেশির ভাগ কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে। মোট রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৮০ ভাগই কৃষিজাত পণ্য, আর এটি বাংলাদেশি বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ ও সংখ্যা অনেক বেশি। উচ্চ জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর প্রচুর খাদ্যশস্য জাতীয় ফসলের ক্ষতি হয়। তাই প্রতি বছর বাংলাদেশকে প্রচুর খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ শিল্পে উন্নত নয়। তাই এখনও আমদানির প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ শিল্পজাত দ্রব্য। যেমন- যন্ত্রপাতি, কলকজা, ওষুধ, সিমেন্ট, জ্বালানি, লৌহ, ইস্পাত প্রভৃতি। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ সমুদ্রপথের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এ বাণিজ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ সরকার শিল্পোন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হতে দেশকে রক্ষার জন্য বিলাস দ্রব্যসহ কিছু দ্রব্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৫. রুমন খবরের কাগজের একটি পৃষ্ঠায় দেখতে পেল বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পারিবারিক সদস্য দ্বারা স্বল্প মূলধন, ছোট ছোট যন্ত্রপাতি ও কাঠামোতে কিছু শিল্প গড়ে উঠেছে।
ক. ASEAN-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. মুক্তবাজার অর্থনীতির কুফল ব্যাখ্যা কর।
গ. রুমন যে শিল্পগুলো দেখতে পেল তা গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত শিল্পটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ASEAN এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Association of South East Asian Nations।

খ. মুক্তবাজার অর্থনীতির কতিপয় সুফল এবং কুফল বিদ্যমান থাকলেও বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এর কুফলই বেশি পরিলক্ষিত হয়।
মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে অনেক সময় বিভিন্ন প্রকার বিলাসদ্রব্য যেমন- কসমেটিকস সামগ্রী যা একেবারেই প্রয়োজন নয় তা দেশে আমদানি করা হয়ে থাকে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করা হয়। আবার মুক্তবাজার অর্থনীতির আওতায় দেশের ব্যবসায়ীগণ লাভের আশায় দেশের মূল্যবান কাঁচামাল, খনিজ সম্পদ, শক্তি সম্পদ ইত্যাদি অন্য দেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল করে ফেলে।

গ. উদ্দীপকে রুমন খবরের কাগজে যে শিল্পগুলোর কথা জানতে পারে তা হচ্ছে কুটিরশিল্প।
সাধারণত কুটিরশিল্প অল্প মূলধন, ছোট ছোট যন্ত্রপাতি এবং পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই গড়ে তোলা সম্ভব। এ শিল্পগুলো গড়ে ওঠার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে।
সাধারণত যেকোনো শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কুটিরশিল্পের ক্ষেত্রে অল্প মূলধন প্রয়োজন হয় বলে এ শিল্পে মূলধন কোনো বিষয় না। যে কেউ ইচ্ছা করলেই কুটিরশিল্প তৈরি করতে পারে। আবার এ শিল্প গড়ে ওঠার জন্য বড় শিল্পের মতো আধুনিক বৃহৎ যন্ত্রপাতির দরকার নেই। ছোট ছোট কিছু যন্ত্রপাতি ক্রয় করলেই কুটিরশিল্প গড়ে তোলা যায়। আবার, বড় বড় শিল্পের মতো অধিক শ্রমিকও দরকার হয় না। খুব অল্প পরিমাণ মূলধন নিয়ে যে কেউ কুটিরশিল্প গড়ে তুলতে পারে। তাছাড়া কুটিরশিল্পে যেসব পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করা হয় ঐসব পণ্যসামগ্রীর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সহজলভ্যতার কারণে কুটিরশিল্প গড়ে ওঠে।
সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশে কুটিরশিল্প গড়ে ওঠার জন্য যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তা এদেশে পর্যাপ্ত রয়েছে। এছাড়া এদেশের মানুষের উক্ত শিল্প গড়ে তোলার সামর্থ্য থাকায় পর্যাপ্ত কুটিরশিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের কুটিরশিল্পের কথা বলা হয়েছে।
কুটির শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ শিল্পে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয় সেগুলো হচ্ছে- নকশিকাঁথা, পাটের ব্যাগ, চট, ঝুড়ি, কাঠের নকশা করা বিভিন্ন ধরনের ফুলদানি, কাপড়ের বুটিক, নকশা করা ওড়না, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মাটির তৈরি সুন্দর সুন্দর হাঁড়ি, পাতিল, খেলনা গাড়ি প্রভৃতি। উক্ত শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সারাবিশ্বেই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সৌখিন জাতি হিসেবে পরিচিত ইউরোপ, আমেরিকা মহাদেশে ঐসব পণ্যসামগ্রী অধিক পরিমাণে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশে দক্ষ শ্রমিক ও পর্যাপ্ত কাচামালের সুবিধা থাকায় এ অঞ্চলে বেশি কটিরশিল্প তৈরি হয়েছে এবং এ শিল্পগুলোতে অনেক সস্তায় পণ্যগুলো উৎপাদন করা হয়। ফলে বিদেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়। এ শিল্প তৈরিতে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না এবং তেমন অর্থের প্রয়োজন হয় না বলে যে কেউই এই শিল্প গড়ে তুলতে পারে বলে এটি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে বাংলাদেশ প্রচর পরিমাণে অর্থ আয় করতে পারে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের আলোচ্য কুটিরশিল্পটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।

৬. বাংলাদেশ প্রচলিত ও অপ্রচলিত বিভিন্ন পণ্য বিদেশ রপ্তানি করে থাকে। এই দুই ধরনের পণ্যের বাইরে বাংলাদেশ জনশক্তিও রপ্তানি করে। আর এই জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস।
ক. GSP কী?
খ. রেমিটেন্স বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আলোকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অপ্রচলিত পণ্যসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর।
ঘ. ‘জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস’- উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. GSP হলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাধারণ নিয়ম থেকে ছাড় ও দেওয়ায় একটি বিশেষ কৌশল যা যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের ওপর প্রয়োগ করে।

খ. দেশে প্রেরিত প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থই হলো রেমিটেন্স।
বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির এক বড় অংশ রেমিটেন্স থেকে আসে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটা অংশ দেশের বাইরে থেকে অর্থ উপার্জন করছে। যাদের উপার্জিত অর্থ দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

গ. উদ্দীপকে অপ্রচলিত পণ্যের কথা বলা হয়েছে।
অপ্রচলিত পণ্য বলতে সেসব পণ্যদ্রব্যকে বোঝায় সাধারণত যেসব পণ্য পূবে রপ্তানি হতো না কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের সিংহভাগ প্রতিনিধিত্ব করছে। যেমন- হিমায- হালশ, তৈরি পোশাক, নিটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্টস, ওষুদ, মাংস, কাঁচাপাট, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য প্রভৃতি। আমাদের এসব রপ্তানি পণ্যের বৃহত্তম বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৯ অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি অপ্রচলিত পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক (১১,৬৩৩ মিলিয়ন ডলার), কাঁচাপাট (৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), হস্তশিল্পজাত দ্রব্য (১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), নিটওয়্যার (১১,৪৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), জুতা (১৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রভৃতি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে, পাটজাত দ্রব্য (৪৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), চামড়া (১১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), চা (২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), হিমায়িত খাদ্য (৩৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), কৃষিজাত পণ্য (৪৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রভৃতি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অপ্রচলিত পণ্যের ভূমিকা ব্যাপক।

ঘ. বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের জনশক্তি একটি বিরাট সম্পদ। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে জনশক্তির ভূমিকা ব্যাপক।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র আয়তনের একটি বিশাল জনঅধ্যুষিত দারিদ্র্যপীড়িত দেশ। এদেশের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীই অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত। এদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য যে তিনটি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে তার মধ্যে জনশক্তি অন্যতম। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে জনশক্তি রপ্তানি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তা দেশের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। জনশক্তি রপ্তানির ফলে দেশে বেকারত্ব হ্রাস পায়। এতে, দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি সাধিত হয়।
সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দরিদ্র জনবহুল দেশের জন্য জনশক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ জনশক্তি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
তাই বলা যায়, জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস।

HSC ভূগোল ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

৭. নিচের ছকটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বাণিজ্য
X বাণিজ্য: এ বাণিজ্য দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়।
Y বাণিজ্য: এ বাণিজ্য বাহিরের দেশের সাথে আইনগত প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়।
ক. বাণিজ্য কাকে বলে?
খ. WTO এর সদর দপ্তর, প্রতিষ্ঠাকাল এবং তার সদস্য সংখ্যা কত?
গ. X দ্বারা নির্দেশিত বাণিজ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. Y বাণিজ্য সংঘটিত হওয়ার যে কারণ রয়েছে বলে তুমি মনে কর তা বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় এবং আদান-প্রধানকে বাণিজ্য বলে।

খ. WTO হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা বিশ্বের বাণিজ্যসংক্রান্ত নীতি প্রবর্তন করে। WTO এর সদর দপ্তর জেনেভার সুইজারল্যান্ড। এটি ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১৬৪।

গ. X দ্বারা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বোঝানো হয়েছে।
কোনো দেশের অভ্যন্তরে পণ্য বিক্রির জন্য এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে উৎপাদক থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে এবং তাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে অবশেষে ভোক্তার কাছে বিক্রি পর্যন্ত সামগ্রিক ব্যবস্থাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রধানত হাট-বাজারের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। প্রাথমিক বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে হাটগুলোকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সমগ্র কাঠামো গড়ে উঠেছে। এরপর উৎপাদনকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ পণ্যসামগ্রী সারা দেশের প্রাত্যহিক বাজারগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য সংঘটিত হয়।

ঘ. Y দ্বারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বোঝানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জড়িত দেশগুলো নিজেদের পক্ষে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। এ প্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভিন্ন নিয়ামক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যেসব নিয়ামক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
পৃথিবী বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত কোথাও নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্য, কোথাও বর্ষাবিধৌত মৌসুমি আবার কোথাও শুষ্ক অঞ্চলকোথাও উষ্ণ কিংবা নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ, কোথাও হিমশীতল তুষারশুভ্র ভূপ্রকৃতি অর্থাৎ দেশ-দেশান্তরে পরিবেশের বৈষম্য লক্ষ করা যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশের এ বৈষম্যের ওপর ভিত্তি করেই আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্ভব হয়। যেসব দেশে লোকবসতি পাতলা এবং স্থানীয় চাহিদা কম সেখান থেকে উদ্বৃত্ত কাঁচামাল ও শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করা হয়ে থাকে। আবার, জনসংখ্যার চাপ অধিক এবং এর ফলে চাহিদাও বেশি, অথচ কিছু দেশে নিজ উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে এদের পক্ষে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ফলে তারা আমদানি করে। উন্নত জীবনযাত্রার মান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিফলিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথাপিছু আয় অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতা অধিক থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ অধিক। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি স্থানগত এবং কালগত অসুবিধা দূর করে। বর্তমান বিশ্বে পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত।
এছাড়া সরকারি নিয়মন্ডনীতি, রাজনৈতিক আস্থা প্রভৃতির ওপরও নির্ভর করে।

৮. ‘ক’ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। সংস্থাটি বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যসংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদন ও পরিচালনা করে থাকে। উন্নয়নশীল দেশসমূহকে কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাণিজ্যের বিশেষ সাহায্য করে। সংস্থাটির সদস্যভুক্ত X ও Y দেশের মধ্যে বাণিজ্যসংক্রান্ত বিরোধ বাধলে সংস্থাটি তা মীমাংসা করে থাকে।
ক. বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে কোন দেশে?
খ. রপ্তানি বাণিজ্যের দুটি সুবিধা লেখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘ক’ সংস্থাটি কোন সংগঠনের প্রতিচ্ছবি তার পরিচয় দাও।
ঘ. বাংলাদেশের উন্নয়নে উদ্দীপকের সংস্থাটির ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে।

খ. যখন কোনো দেশ তার উৎপাদিত পণ্য অর্থের বিনিময়ে বিদেশে প্রেরণ করে তখন তাকে রপ্তানি বাণিজ্য বলে। যেমন- বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।
রপ্তানি বাণিজ্যের দুটি সুবিধা হলো- মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘ক’ সংস্থাটি বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা WTO (World Trade Organization).
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুষ্ঠু, সুন্দর ও বাধাহীনভাবে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব বিশেষভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে GATT (General Agreement on Tariffs and Trade)-এর উত্তরসূরি হিসেবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি এ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান এর সদস্য সংস্থা ১৫৩। সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায়, এর সদর দপ্তর অবস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) পর ১৯৪৭ সালে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক উন্নয়ন, নতুন নতুন বাজার দখল এবং সর্বোপরি বিশ্ব অর্থনীতির ওপর একটা প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষে GATT-এর কার্যক্রম শুরু হয়। মূলত GATT চুক্তি বাস্তবায়নের আদেশনামা নিয়ে এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

ঘ. বাংলাদেশের উন্নয়নে উদ্দীপকের WTO সংস্থাটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুষ্ঠু, সুন্দর ও বাধাহীনভাবে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। বাংলাদেশ WTO সংস্থাটির সদস্য দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উন্নয়নেও সংস্থাটি সহায়তা করে আসছে।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন ও পরিচালনা করে। ফলে বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি এবং অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আমদানি বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন করে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা। সম্পাদিত চুক্তি পরিচালনার দায়িত্বও পালন করে এই সংস্থাটি। বাণিজ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে অন্যদেশের বাণিজ্য আলোচনার ফোরাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এ সংস্থা। আবার বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয়ে দুটি দেশের মধ্যে অনেক সময় বিরোধের সৃষ্টি হয়, বাণিজ্যিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যা বাধার সৃষ্টি করে, অর্থাৎ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অসমেত্মাষ সৃষ্টি হয়। এসব ক্ষেত্রে সংস্থাটি দুই দেশের মধ্যস্থকারী হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের সাথে অন্যদেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিরোধ সৃষ্টি হলে তা নিষ্পত্তি করে এ সংস্থা। অর্থাৎ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বাণিজ্যসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করণে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া সংস্থাটি বাংলাদেশকে কারিগরি সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসচির। মাধ্যমে বাণিজ্যনীতি-সংক্রান্ত বিষয়াবলিতে সাহায্য করে।
সুতরাং বাংলাদেশের বাণিজ্যিক উন্নয়নে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য।

৯. আবির ও আরিফ দুই বন্ধু। বাংলাদেশ থেকে তারা দুইজন দুই দেশ সফর করেন। আবির যায় আফগানিস্তানে। অন্যদিকে আরিফ যায় জাপানে। দুই বন্ধু দেশে ফিরে এসে সেখানকার বাণিজ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে জানায়। আবিরের সফরকৃত দেশ ভৌগোলিক কারণে বাণিজ্যে উন্নতি করতে পারে নি। অন্যদিকে আরিফের সফরকৃত দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেক উন্নতি লাভ করেছে এবং এর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ক. বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও নীটওয়্যার থেকে শতকরা কতভাগ আয় হচ্ছে?
খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন প্রয়োজন? ব্যাখ্যা কর।
গ. আবিরের সফরকৃত দেশটি বাণিজ্যিকভাবে উন্নতি না করার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আরিফের সফরকৃত দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ আয় হচ্ছে তৈরি পোশাক ও নীটওয়্যার থেকে।

খ. বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ভারসাম্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রয়োজন।
সাধারণত, কোনো দেশই প্রাকৃতিক সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আবার, কোনো দেশই ভৌগোলিকভাবে একরকম নয়। এক এক দেশে এক এক ধরনের পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হয়। যে দেশে উদ্বৃত্ত পণ্য থাকে সেই উদ্বৃত্ত পণ্য ঘাটতি অঞ্চল বা দেশে তা রপ্তানি করা হয়। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে প্রতিটি দেশই পণ্যসামগ্রীতে সাম্যাবস্থায় চলে আসে।

গ. উদ্দীপকে আবির যে দেশে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলেন তা হচ্ছে আফগানিস্তান। এদেশ ভৌগোলিকভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রতিকূলে।
আফগানিস্তানের আশেপাশে নদী না থাকায় নদীবিধৌত পলি সঞ্চতি হতে পারে না। ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাছাড়া উত্তরের সাইবেরিয়া অঞ্চল হতে হিম বাতাস এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এ অঞ্চলে খাদ্যশস্য উৎপাদন অনুকূলে না হওয়ায় এ অঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি দেখা যায়। এই খাদ্য ঘাটতি পূরণ করার জন্য বহির্বিশ্ব থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়। ফলে বাণিজ্যটা হয় আমদানিনির্ভর। কোনো দেশ যদি খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হয়, তাহলে সে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হতে পারে না।
সুতরাং বলা যায়, উপরিউল্লিখিত আবিরের ভ্রমণকৃত দেশ ও আফগানিস্তান, যা ভৌগোলিক কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে। বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করার কারণে এদেশের বাণিজ্য উন্নতি লাভ করতে পারেনি।

ঘ. উদ্দীপকে আরিফ যে এলাকায় ভ্রমণ করে সেটি হচ্ছে জাপান।
এটি ভৌগোলিকভাবে ব্যবসায় বাণিজ্যের অনুকূলে। খনিজ সম্পদ থেকে শুরু করে শিল্পসম্পদ সবই এদেশে বিদ্যমান। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশের সাথে জাপানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমদানিনির্ভর। জাপান শিল্পে উন্নত একটি দেশ। এদেশের শিল্পে উৎপাদিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যা বাংলাদেশ আমদানি করে থাকে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ভারী শিল্পের স্বল্পতাহেতু বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, কলকজা, মেশিন টুলসু প্রভৃতি উক্ত দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশে ব্যবসায় বাণিজ্যের অনুকূল অবস্থা থাকায় জাপান বিশ্বের সব দেশের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে থাকে। এছাড়া জাপান ভৌগোলিকভাবে খনিজ এ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি এলাকা। চারদিকে সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত থাকায় এ অঞ্চলে প্রচুর মৎস্য সম্পদ রয়েছে এবং বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত কাচামালের সহজলভ্যতার কারণে এ অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণ শিল্পদ্রব্য ও মৎস্য সম্পদ রপ্তানি করা যায়। বাংলাদেশ এদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে শিল্পদ্রব্য আমদানি করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, আরিফের সফরকৃত অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইতিবাচক।

১০. নিচের ছকটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

কলাম ১

কলাম ২

কলাম ৩

পণ্যসমূহ

প্রচলিত পণ্য

অপ্রচলিত পণ্য

 তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, হোসিয়ারি দ্রব্য, পাট, পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়াজাত দ্রব্য, নীটওয়্যার, রাসায়নিক দ্রব্য

 

 

ক. বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে কততম জনবহুল দেশ?
খ. বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার কারণ কী?
গ. কলাম ১ থেকে কলাম ২ ও কলাম ৩ এ পণ্যসমূহকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজাও।
ঘ. কলাম ৩ এ উল্লিখিত পণ্যসমূহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে বলে তুমি মনে কর?

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ।

খ. বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প গড়ে ওঠার কারণ হচ্ছে-
মূলধনের প্রাপ্যতা, বৈদেশিক বিনিয়োগ, অনুকূল জলবায়ু, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, সস্তা ও দক্ষ শ্রমিক, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অনুকূল জলবায়ু। এসব উপাদানসমূহ বাংলাদেশে সহজেই পাওয়া যায় বলে এ অঞ্চলে তৈরি পোশাক শিল্প গড়ে উঠেছে।

গ. কলাম ১ এ বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীকে দেখানো হয়েছে। উক্ত পণ্যসামগ্রীকে প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্য এই দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।
প্রচলিত রপ্তানি পণ্য হলো সেগুলো যা দীর্ঘকাল যাবৎ বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য বলতে ঐ ধরনের পণ্যগুলোকে বোঝায় যা সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এবং এগুলোকে রপ্তানি বাণিজ্যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
নিচে উদ্দীপকের কলাম ২ এ প্রচলিত পণ্যসমূহ এবং কলাম ৩ এ অপ্রচলিত পণ্যসমূহের তালিকা উপস্থাপন করা হলো-

(কলাম ২) প্রচলিত পণ্যসমূহ

(কলাম ৩) অপ্রচলিত পণ্যসমূহ

1.       পাট, পাটজাত দ্রব্য,

2.      চা, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য ইত্যাদি।

1.       তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য,

2.      রাসায়নিক দ্রব্য,

3.      নীটওয়্যার প্রভৃতি


ঘ. কলাম ৩ এ অপ্রচলিত পণ্যসমূহের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
এসব পণ্য হচ্ছে, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্যদ্রব্য, নীটওয়্যার প্রভৃতি। বাংলাদেশের অপ্রচলিত পণ্যসমূহের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের দিক হতে বর্তমানে তৈরি পোশাকের অবস্থান প্রথমে। স্বল্পদাম ও গুণগত মানের জন্য বিদেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পশ্চিম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিশাল বাজার রয়েছে। উক্ত পণ্যসমূহ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়। করে।
বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের গুণগত মানের কারণে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তৈরি পোশাকের পর রপ্তানিতে হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী অন্যতম। বাংলাদেশ নানা প্রকার টাটকা ও শুকনো মাছ, হিমায়িত মাছ, চিংড়ি ও ব্যাঙের পা, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, নাটওয়্যার দ্রব্য প্রভৃতি রপ্তানি করে। এ অপ্রচলিত পণ্য থেকে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এছাড়াও অপ্রচলিত পণ্যসমূহের মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্যও রয়েছে।
সুতরাং বলা যায়, উল্লিখিত অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে থাকে। তাই এসব অপ্রচলিত পণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post