এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Geography 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Geography 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Vugol 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
ভূগোল
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭
HSC Geography
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসাগরের তলদেশের প্লেট সীমানা বরাবর একটি বিশেষ আকৃতির ভূমিরূপ রয়েছে। উক্ত ভূমিরূপটি নিরক্ষরেখা বরাবর রোমনসে খাদ দ্বারা বিভক্ত।
ক. ঝিনুক অঞ্চল কাকে বলে?
খ. জীবজগতে পানিচক্রের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বিশেষ আকৃতির ভূমিরূপ গঠনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ইঙ্গিতকৃত ভূমিরূপটির বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. তটদেশীয় অঞ্চলের পর হতে মহীসোপানের প্রান্ত পর্যন্ত অঞ্চলকে ঝিনুক অঞ্চল বলে।
খ. পানি ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্ব সম্ভব নয়, তাই জীবজগতে পানিচক্রের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীবজগতের ওপর পানিচক্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। পানিচক্রের প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় সূর্যের তাপশক্তি দ্বারা। বাষ্পীভবন ও বর্ষণ একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। বাস্পীভবন বেশি হলে বৃষ্টিপাত বেশি হবে। এ বৃষ্টিপাত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও জীজগতের ওপর প্রভাব রাখে। তাই বলা যায়, জীবজগতে পানিচক্রের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
গ. উদ্দীপকে বিশেষ আকৃতির ভূমিরূপটি হলো মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা।
আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশের এ ভূমিরূপটির গঠন বৈচিত্র্যপূর্ণ।
আটলান্টিক মহাসাগরের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ হলো মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা। এ শৈলশিরা ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লেট সীমানা। ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যবর্তী আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশের প্লেট সীমানা বরাবর এ বিশেষ শ্রেণির ভূমিরূপ গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ প্লেট সীমানা বরাবর ইউরোপ ও আফ্রিকা প্লেট দুটি থেকে উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা প্লেট বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এক সময় এ সীমানা বরাবর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝামাঝি দিয়ে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃতি সুদীর্ঘ ফাটল দিক এবং এ ফাটল ছিল ভূঅভ্যন্তরীণ পদার্থসমূহ উপরে উঠে এবং সতি হয়ে মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরার সৃষ্টি করে।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ভূমিরূপটি হলো মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা। নিচে এ শৈলশিরার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-
এ শৈলশিরা নিরক্ষরেখা বরাবর রোমানস খাতে বিভক্ত। এ শৈলশিরা আটলান্টিকের মধ্যভাগে উত্তর দক্ষিণে বিস্তত। নিরক্ষরেখার উত্তমে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত শৈলশিরা হলো ডলফিন শৈলশিরা এবং নিরক্ষরেখার দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত শৈলশিরাকে চ্যালেঞ্জার শৈলশিরা বলে। ডলফিন শৈলশিরার উত্তরাংশে বিস্তৃত মালভূমির সৃষ্টি করেছে। এ মালভূমির নাম টেলিগ্রাফ মালভূমি। চ্যালেঞ্জার শৈলশিরা দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।
এ শৈলশিরার আকৃতি আটলানিটক মহাসাগরের নিজস্ব আকৃতির অনুরূপ। এ উঁচু ভূমির গভীরতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ৩,০৪৮ মিটার।
২. ভারত মহাসাগরের উত্তরে অবস্থিত একটি উপসাগর যার পূর্বদিকে মায়ানমার, উত্তরে বাংলাদেশ, ভারত, পশ্চিমে ভারত এবং দক্ষিণ পশ্চিমে শ্রীলংকা অবস্থিত। উপসাগরটি বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা।
ক. মানুষেয় শরীরে শতকরা কতভাগ পানি?
খ. জোয়ারের বান কেন হয়?
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত উপসাগরটির তলদেশের ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ লাইনটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষেয় শরীরে পানির পরিমাণ শতকরা ৬৫ ভাগ।
খ. জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি মহীসোপানের অগভীর অংশে ও দ্বীপে প্রতিহত হলে জোয়ারের তরঙ্গের চূড়া ভেঙে পড়ে এবং প্রবাহ সৃষ্টি হয়। জোয়ারের পানি খাড়ি ও মোহনা দিয়ে দেশের ভেতরে প্রবেশ করে। নদীর মোহনা দেশের ভেতর ক্রমশই সংকীর্ণ। জোয়ারের পানি যতই অগ্রসর হয় ততই সংকীর্ণ ও অগভীর নদীর মধ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু স্থানের সংকীর্ণতার জন্য ওপরের দিকে ফুলে ওঠে এবং প্রাচীরের মতো উঁচু হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। এরূপ জোয়ারকে বান বলে।
নদীর খরপ্রবাহ, নদীর মুখে বালির বাধ এবং ফানেল আকৃতির নদীর মুখ হলে বানের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত উপসাগর হলো বঙ্গোপসাগর। এ উপসাগরের তলদেশ খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। নিচে বঙ্গোপসাগরের তলদেশের ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা হলো-
(১) সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড নামে একটি গভীর গিরিখাত;
(২) ৯০° ডিগ্রি পূর্ব শৈলশিরা;
(৩) মায়ানমার ও চ্যাগোস পূর্ব উপকূলীয় সমুদ্রখাত এবং
(৪)কতিপয় নিমজ্জিত চরাভূমি। তবে এসবের মধ্যে সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডই গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি অত্যন্ত গভীর ও খাড়া সামুদ্রিক গিরিখাত এবং উপকূল থেকে ২৪ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের এই সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ডের অবস্থানের জন্য পার্শ্ববর্তী উপকূলে বাহিত পলি মাটি সর্বদা গভীর সমুদ্রে জমা হচ্ছে। এ কারণে উক্ত এলাকায় নতুন বদ্বীপের গঠন ক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি হয়।
বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানের গভীরতা সর্বত্র ২০০ মিটারের কম। দক্ষিণ-পূর্বাংশের মহীসোপান খুবই চওড়া। উপকূলীয় মহীসোপানের মধ্যভাগের এক বিশাল অংশের গভীরতা ২০০ থেকে ২০০০ মিটার। তবে দক্ষিণাংশের গভীরতা ২০০ থেকে ৪০০০ মিটারের মতো।
সার্বিক আলোচনায় বলা যায় বঙ্গোপসাগরে রয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ লাইনের উপসাগরটি বঙ্গোপসাগর যা বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা।
বঙ্গোপসাগরে অর্থাৎ বাংলাদেশের দক্ষিণে ফানেলাকারের কারণে এদেশে অধিকসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। ঘূর্ণিঝড় প্রচন্ড শক্তিশালী এবং মারাত্মক ধ্বংসকারী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম। এটি কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বমুখী বায়ুরূপে পরিচিত। এর কেন্দ্রস্থলে নিম্নচাপ ও চারপাশে ঊর্ধ্বচাপ বিরাজ করে। এ ঘূর্ণিঝড় ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক ও চৈত্র-বৈশাখ মাসে সংঘটিত হয়। বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে এদেশে অধিকসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। আর এ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় অর্থাৎ প্রাণ ধ্বংসকারী দুর্যোগটি সংঘটিত হয় বঙ্গোপসাগরের ফানেলাকৃতির কারণে।
এ ঘূর্ণিঝড় সংঘটনের ফলে বিশেষ করে বাংলাদেশের পূর্বাংশে বিপুলসংখ্যক প্রাণঘাতীসহ ব্যাপক আকারে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সম্পদাদির ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, বরিশাল, টেকনাফসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে।
বিশ্বের খুব কমসংখ্যক সমুদ্র এলাকায় বছরে নির্দিষ্ট সময় এমন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত উপসাগরটি অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা।
৩. মি. রেজাউল সাহেব তার একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রিপনকে এশিয়া ও আমেরিকার মধ্যবর্তী স্থানের মহাসাগরটি মানচিত্রে দেখিয়ে বললেন এটি হলো পৃথিবীর গভীরতম মহাসাগর।
ক. মহীসোপান কী?
খ. সমুদ্রে জোয়ারভাটার পানি উঠানামাকারী অঞ্চলটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে রেজাউল সাহেব যে মহাসাগরটি দেখালেন সেটি কোন মহাসাগর? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত মহাসাগরটির তলদেশের ভূপ্রকৃতি বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মহাদেশসমূহের বাইরে সমুদ্রের উপকূল রেখা থেকে তলদেশের দিকে ক্রমনিম্ন নিমজ্জিত অংশই মহীসোপান।
খ. সমুদ্রে জোয়ারভাটার পানি ওঠানামাকারী অঞ্চল হচ্ছে তটদেশীয় অঞ্চল।
জোয়ারে সময় সমুদ্রের পানি সমুদ্রতীরের যতদূর পর্যন্ত উপরে ওঠে সেখান থেকে ভাটার টানে তা যে স্থান পর্যন্ত নেমে যায় সে স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে তটদেশীয় অঞ্চল বলে। তটদেশীয় অঞ্চল স্থলভাগ থেকে সাগর পর্যন্ত প্রায় ৩ কি. মি পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীতে এ অঞ্চলের মোট আয়তন প্রায় ১৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার।
গ. উদ্দীপকে রেজাউল সাহেব যে মহাসাগরটি দেখালেন সেটি হলো প্রশান্ত মহাসাগর।
প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে এশিয়া মহাদেশ এবং পূর্বে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগর হলো পৃথিবীর মধ্যে গভীরতম মহাসাগর। সমগ্র ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৩৫% জুড়ে এর বিস্তৃতি। মোট আয়তন ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ বর্গ কি. মি.। যা ভূপৃষ্ঠের সমগ্র জলভাগের ৪৫% স্থান জুড়ে বিস্তৃত। এর সর্বোচ্চ গভীরতা ১০.৭৯ কি. মি. এবং গড় গভীরতা প্রায় ৪,২৭০ মিটার। আকৃতি অনেকটা ত্রিভুজের মতো। এই ত্রিভুজের শীর্ষ দেশ বেরিং প্রণালি থেকে ক্রমশ দক্ষিণ দিকে অধিক প্রশস্ত হয়ে গেছে।
নিরক্ষরেখার নিকট প্রশান্ত মহাসাগর সর্বাধিক প্রশস্ত। যেখানে পূর্বপশ্চিমের বিস্তৃতি প্রায় ১৬৫,৩০০ কি. মি. এবং উত্তর-দক্ষিণে বিস্তার ১৫,১৬০ কি. মি.। এ মহাসাগরের বিভিন্ন দিকে ছোট-বড় প্রায় বিশ হাজারের মতো দ্বীপ রয়েছে। এ মহাসাগরের পশ্চিম দিকে ওখস্টক সাগর, পীতসাগর, পূর্ব চীন সাগর এবং উত্তর দিকে বেরিং সাগর, প্রশান্ত মহাসাগরের মহীসোপান অন্তর্গত।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের ভূপ্রকৃতির কথা বলা হয়েছে।
অন্যান্য মহাসাগরের তলদেশ অপেক্ষা প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ খুবই বৈচিতএ্যপূর্ণ। এর তলদেশে অসংখ্য গিরিখাত, শৈলশিরা, দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ এবং বিপুল পরিমাণ গভীর সমুদ্রের সমভূমি রয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের গভীরতা অন্যান্য মহাসাগরের চেয়ে অনেক বেশি। এ মহাসাগরের অধিকাংশই গভীর সমুদ্রের সমভূমি তল দিয়ে গঠিত। এ মহাসাগরের মহীসোপানের বিস্তৃতি অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় কম। এখানকার মহীসোপান খুবই অপ্রশস্ত। তবে এখানকার মহীঢলের পরিমাণ অনেক বেশি। এ মহাসাগরের তলদেশে উচ্চভূমির মধ্যে কতিপয় মালভূমি ও শৈলশিরা এবং ছোটবড় অসংখ্য দ্বীপ রয়েছে। এ মহাসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় বিশ হাজার দ্বীপ রয়েছে। গভীর খাতগুলো প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তন্মধ্যে এ মহাসাগরে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গভীরতম খাত মারিয়ানা খাত অবস্থিত।
সুতরাং বলা যায় যে, পৃথিবীর স্থলভাগের মতো সমুদ্রের তলদেশেও ঐরকম বৈচিতএ্যময় ভূপ্রকৃতি বিদ্যমান। স্থলভাগে যেমন বন্ধুর প্রকৃতির ভূপ্রকৃতি রয়েছে তেমনি জলভাগেও ঐরকম ভূপ্রকৃতি অবস্থিত।
৪. নিচের ছকটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
খাতের নাম | অবস্থান |
ক
| পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে পোর্টোরিকো দ্বীপের নিকটে |
খ | হর্ন অন্তরীপের সরাসরি পূর্বে |
ক. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর কোনটি?
খ. 'S' আকৃতির মহাসাগরটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ক চিহ্নিত খাতটির নাম কী বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ক ও খ চিহ্নিত খাতের তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর হলো প্রশান্ত মহাসাগর।
খ. 'S' আকৃতির মহাসাগরটি হলো আটলান্টিক মহাসাগর।
আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। প্রশান্ত মহাসাগরের পরেই এর অবস্থান। এর আয়তন প্রায় ৮ কোটি ২৪ লক্ষ বর্গ কি.মি.। এর গড় গভীরতা প্রায় ৩,৫৭৫ মি.। এ মহাসাগরের পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ, পশ্চিমে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, উত্তরে গ্রিনল্যান্ড এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর অবস্থিত। সমগ্র ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৬ শতাংশ স্থান জুড়ে বিস্তৃত।
গ. উদ্দীপকে ‘ক’ চিহ্নিত খাতের নাম পোর্টোরিকো খাত।
গভীর সমুদ্রের সমভূমি অঞ্চলের মাঝে মাঝে গভীর খাত দেখা যায়। এগুলোকে গভীর সমুদ্র খাত বলে। পোর্টোরিকো আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত।
আটলান্টিকের খাতগুলোর গভীরতা সাধারণভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের - চেয়ে অনেক কম। তবে পোর্টোরিকো খাতের গভীরতা ৮,৮০৬ ৭ মিটার। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরতম খাত, যা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের পূর্বে পোর্টোরিকো দ্বীপের নিকট অবস্থিত।
ঘ. উদ্দীপকে ‘ক’ চিহ্নিত খাতের নাম পোর্টোরিকো খাত। অন্যদিকে ‘খ’ চিহ্নিত খাতের নাম দক্ষিণ স্যান্ডউইচ খাত। উভয় খাতই আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত।
‘ক’ খাত/পোর্টোরিকো খাত আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত সবচেয়ে গভীরতম খাত। এ খাতের গভীরতা ৮,৪৭৪ মিটার। এটি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের পোর্টোরিকো দ্বীপের নিকটে অবস্থিত হলেও বৈশিষ্ট্যগতভাবে এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
‘খ’ খাত/দক্ষিণ স্যান্ডউইচ খাত আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম গভীর খাত। এর গভীরতা ৮,২৩০ মিটার। এটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ অংশে হর্ন অন্তরীপের সোজা দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপের নিকট অবস্থিত দক্ষিণ স্যান্ডউইচ খাত নামে পরিচিত।
সুতরাং উল্লিখিত ‘ক’ খাত ও ‘খ’ খাতগুলোর মধ্যে আলোচনা করলে বোঝা যায় যে, দুটি খাতই আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। তবে ‘ক’ খাতটি আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরে অবস্থিত এবং ‘খ’ খাতটি এ মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত। এছাড়া এদের গভীরতার মধ্যেও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
৫. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. মহীঢাল কী?
খ. জোয়ার-ভাটার পানি ওঠানামার সীমানাকে কী বলে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘ক’ চিহ্নিত মহাসাগরের নাম কী? মহাসাগরটি সম্পর্কে আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘খ’ চিহ্নিত মহাসাগরটির তলদেশের ভূপ্রকৃতি আলোচনা কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মহীসোপানের শেষ সীমা হতে ভূভাগ হঠাৎ খাড়াভাবে নেমে সমুদ্রের গভীর তলদেশের সাথে মিশে যায়, এই ঢালু অংশকে মহীঢাল বলে।
খ. জোয়ার ভাটার পানি ওঠানামার সীমানাকে তটদেশীয় অঞ্চল বলে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি ফুলে উঠে আবার ভাটার টানে তা নেমে যায়। সমুদ্রের পানির এই ওঠানামার একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি সমুদ্র তীরের যতদূর পর্যন্ত উপরে উঠে সেখান থেকে ভাটার টানে তা যে স্থানে নেমে যায় সে স্থানের বিস্তৃত অংশকে তটদেশীয় অঞল বলে। স্থল হতে সাগর পর্যন্ত এ অঞ্চল প্রায় ৩.২ কিলোমিটার প্রশস্ত।
গ. উদ্দীপকে ‘ক’ চিহ্নিত মহাসাগরের নাম প্রশান্ত মহাসাগর।
এ মহাসাগরের পশ্চিমে এশিয়া মহাদেশ এবং পূর্বে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা অবস্থিত। পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ। এর আয়তন ১৬ কোটি ৬২ লক্ষ বর্গ কি.মি.। এর গভীরতা প্রায় ৩,৯৩৯ মিটার এবং সর্বাধিক গভীরতা ১০.৭৯ কিমি। এ মহাসাগর ভূপৃষ্ঠের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ স্থান অধিকার করে আছে।
বিখ্যাত নাবিক ম্যাগেলান এ মহাসাগরে প্রবেশে কোনো প্রকার ঝড়তুফান বা তরঙ্গের আস্ফালন দেখতে পান নি। এ কারণে এ মহাসাগরের নাম রাখেন প্রশান্ত মহাসাগর। এ মহাসাগরে তেমন ঝড়তুফান হয় না। এর উপকূল আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূল অপেক্ষা ভগ্ন। এটি দক্ষিণ দিকে প্রশস্ত, উত্তর দিকে ক্রমেই সংকীর্ণ। বেরিং প্রণালির মাধ্যমে এটি উত্তর মহাসাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে। এর উপকূলে এশিয়া মহাদেশে ছোট-বড় বহু দ্বীপ রয়েছে।
এছাড়া পীত সাগর, পূর্ব চীন সাগর, ও খষ্টক সাগর প্রভৃতি এ মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. উদ্দীপকে ‘খ’ চিহ্নিত মহাসাগরটি হলো আটলান্টিক মহাসাগর। এ মহাসাগরের আয়তন প্রায় ৮ কোটি ৬৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। এটি সমগ্র ভূভাগের প্রায় ১৬% এবং প্রশান্ত মহাসাগরের অর্ধেক।
এ মহাসাগরের ভূপ্রকৃতি বৈচিতএময়। আটলান্টিক মহাসাগরে কতকগুলো শৈলশিরা রয়েছে। প্রশস্ত মহীসোপান থাকার দরুন এ মহাসাগর সবচেয়ে কম গভীর। এ মহাসাগরের গড় গভীরতা ৩,৫৭৫ মিটার। আমাজান ও কঙ্গো আটলান্টিক মহাসাগরে এসে পড়েছে। এ মহাসাগরের উত্তরে সুবিস্তৃত মহীসোপান রয়েছে, কিন্তু দক্ষিণের মহীসোপান একটু সরু। এ মহাসাগরে তুলনামূলক কম সংখ্যক দ্বীপ রয়েছে। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিম উপকূলে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপ প্রকৃতপক্ষে মহীসোপানের উচ্চতম অংশ। আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের ন্যায় ভঙ্গিল পর্বত নেই।
এছাড়া বিভিন্ন প্রকার মালভূমি শৈলশিরা, গভীর গিরিখাতসমূহ। বৈচিতএপূর্ণ ভূমিরূপ এ মহাসাগরে গড়ে উঠেছে।
৬. নয়ন বাবু একটি জার্নালে সমুদ্র তলদেশের বিচিত্র ভূমিরূপ সম্পর্কে পড়ছিল। হঠাৎ একটি সমুদ্রের তলদেশের শৈলশিরার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। শৈলশিরাটি দীর্ঘ এবং 'S' আকৃতির যা সমুদ্রের মধ্যভাগ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। সমুদ্রটি পৃথিবীর বৃহত্তম না হলেও এটি উত্তর ও দক্ষিণ মহাসাগরকে যুক্ত করেছে।
ক. সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড কী?
খ. পানিচক্র বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত শৈলশিরাটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মহাসাগরটির উত্তরাংশে মহীসোপান বেশি; কিন্তু দক্ষিণাংশে মহীঢ়ালের পরিমাণ বেশি-মতামত দাও।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড হলো বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি গভীর গিরিখাত।
খ. পানির রূপান্তরের মাধ্যমে স্থানান্তর এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবার স্বস্থানে ফিরে আসাকে পানিচক্র বলে।
সূর্যরশ্মির তাপে সমুদ্র, হ্রদ, নদী ও অন্যান্য জলাশয় থেকে পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বারিপাতের মাধ্যমে পৃথিবীতে ফিরে আসে। এভাবে পানির সাগর হতে বায়ুমন্ডল, বায়ুমন্ডল হতে স্থলভাগ এবং যেখান থেকে পুনরায় সাগরে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে পানিচক্র বলে।
গ. উদ্দীপকে মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্য স্থান দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে অবস্থিত একটি সুদীর্ঘ ফাটল দিয়ে ভূঅভ্যন্তরীণ পদার্থসমূহ উপরে উথিত ও সঞ্চিত হয়ে এ শৈলশিরার সৃষ্টি করেছে। এটি একটি পানিমগ্ন শৈলশিরা। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। বিষুবরেখার উত্তরে অবস্থিত এর উত্তরাংশকে ডলফিন এবং দক্ষিণাংশকে চ্যালেঞ্জার শৈলশিরা বলা হয়। এ উচ্চভূমির গভীরতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ৩,০৪৮ মিটার। ডলফিন ও শৈলশিরার উত্তরাংশ প্রশস্ত হয়ে সুবিস্তৃত মালভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর নাম টেলিগ্রাফ মালভূমি। চ্যালেঞ্জার শৈলশিরার দক্ষিণ দিকের ত্রিস্তান-দা-কুন্হা দ্বীপের নিকট হতে একটি শৈলশিরা উত্তর-পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত। এর নাম ওয়ালভিস শৈলশিরা।
ঘ. আটলান্টিক মহাসাগরের মহীসোপান পৃথিবীর অন্যান্য মহাসাগর অপেক্ষা অনেক বেশি।
উত্তর আটলান্টিকের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের অগভীর সাগর ও উপসাগরগুলো এ মহীসোপানেরই অংশবিশেষ। উত্তর আটলান্টিকের পূর্ব দিকের উত্তর সাগর, বাল্টিক সাগর প্রভৃতি এবং পশ্চিম দিকের বেফিন ও হাডসন উপসাগর এ মহীসোপানের অন্তর্গত। এসব সাগর ও উপসাগরের পানির গভীরতা ১৮০ মিটার বা তারও কম। এছাড়া পূর্ব উপকূলে ভূমধ্যসাগর এবং পশ্চিম উপকূলের মেক্সিকো উপসাগরেও পানির গভীরতা ৩,৭৫০ মিটারের কম। দক্ষিণ আটলান্টিকের উভয় উপকূলে মহীসোপান খুব কম বিস্ত্তত। এরপর হতে মহাসাগরের মহীঢ়ল ক্রমশ ঢালু হয়ে গভীর সমুদ্রতলে প্রবেশ করেছে।
সুতরাং বলা যায়, আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর দিকে সুবিস্তৃত মহীসোপান অবস্থিত। কিন্তু দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে মহীসোপান খুবই সরু। এ কারণে উত্তর আটলান্টিকে মহীঢালের পরিমাণ কম এবং দক্ষিণ আটলান্টিকে মহীঢাল বেশি। অতএব, আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তরাংশে মহীসোপান বেশি কিন্তু দক্ষিণাংশে মহীঢ়ালের পরিমাণ বেশি।
৭. ওসমান ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে সমুদ্রের তলদেশের বিভিন্ন ভূমিরূপ দেখছিল। সে দেখল আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে সৃষ্ট দীর্ঘপথের মতো একটি চমৎকার ভূমিরূপ। সে আরও লক্ষ করল সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে অনেকগুলো খাত।
ক. জোয়ারভাটার প্রধান কারণ কোনটি?
খ.হ্রদ বলতে কী বোঝায়?
গ. ওসমানের দেখা সমুদ্র তলদেশের দীর্ঘপথের মতো ভূমিরূপটির ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে ওসমান সমুদ্র তলদেশে দীর্ঘপথ ছাড়া আর যা দেখল তার ভূমিরূপ বিশ্লেষণ কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জোয়ারভাটার প্রধান কারণ পৃথিবীর উপর চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ বল।
খ. যে জলভাগের চতুর্দিক স্থলভাগ দিয়ে পরিবেষ্টিত তাকে হ্রদ বলে।
অর্থাৎ মাঝখানে গভীর জলরাশি এবং তার চতুর্দিক স্থল দ্বারা বেষ্টিত সে জলভাগকে হ্রদ বলে। যেমন- বৈকাল হ্রদ, সুপিরিয়র হ্রদ ভিক্টোরিয়া হ্রাস ইত্যাদি।
গ. উদ্দীপকের ওসমানের দেখা আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে সৃষ্ট দীর্ঘপথের মতো ভূমিরূপটি হচ্ছে নিমজ্জিত শৈলশিরা।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ভূতবকের দুর্বল অংশের ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ ধূম্র, গ্যাস, গলিত শিলা, ভস্ম এবং নানা ধরনের তরল ও কঠিন ধাতব পদার্থ নির্গত হয়। দীর্ঘকাল যাবৎ লাভা ও ভস্ম অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সমুদ্রগর্ভে সঞ্চিত হয়ে পাহাড়, পর্বত বা উঁচু টিলা ও শৈলশিরার মতো ভূমিরূপ গঠন করেছে। এগুলোকেই বলা হয় নিমজ্জিত শৈলশিরা।
নিমজ্জিত শৈলশিরাগুলোর মধ্যে মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা হচ্ছে অন্যতম। মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা পানি শৈলশিরা' নামেও পরিচিত। ভূমিবিজ্ঞানীদের ধারণা, অতীতে এ শৈলশিরা বরাবর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যস্থান দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে একটি সুদীর্ঘ ফাটল ছিল এবং ফাটল দিয়ে ভূঅভ্যন্তরীণ পদার্থসমূহ উপরে উথিত ও জমা হয়ে ঐ শৈলশিরার সৃষ্টি করেছে।
ঘ. উদ্দীপকে ওসমান সমুদ্র তলদেশে দীর্ঘপথ ছাড়াও গভীর সমুদ্রখাত ভূমিরূপটি দেখতে পেল।
গভীর সমুদ্রের সমভূমি অঞ্চলে মাঝে মাঝে গর্ত দেখা যায়। এসব গর্তকে গভীর সমুদ্রখাত বলে। প্রশান্ত মহাসাগরের প্রান্তদেশে বহুসংখ্যক সুদীর্ঘ গভীর সুমুদ্রখাত তলদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সুগভীর সমুদ্রখাতগুলো অধিকাংশই ভূপৃষ্ঠের উচ্চ পর্বতের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত। আবার কোনো কোনো স্থানে সমুদ্র খাতগুলো পর্বতসমূহের সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থিত। কারণ পাশাপাশি অবস্থিত মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক পাতের সংঘর্ষের ফলে সমুদ্রখাত সৃষ্টি হয় বিধায় প্রতিটি গভীর সমুদ্রখাত পাত সীমানায় অবস্থিত হয়। এ পাত সীমানায় ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি অধিক হয় বলেই এসব। খাতের সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতগুলো অধিক প্রশস্ত না হলেও খাড়া ঢালবিশিষ্ট। গভীর সমুদ্রখাত মহাসাগরের পশ্চিম প্রাপ্রান্তেই অধিক সংখ্যায় দেখতে পাওয়া যায়। এ সকল গভীর সমুদ্রখাতের মধ্যে গুয়াম দ্বীপের ৩২২ ৭ কিমি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মারিয়ানা খাত সর্বাপেক্ষা গভীর। এর গভীরতা ১০,৮৬ কিলোমিটার এবং এটাই পৃথিবীর গভীরতম খাত।
এছাড়া আটলান্টিকের পোর্টোরিকো, ভারত মহাসাগরের শুল্ডায় বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
৮. নিচের ছকটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ভূমিরূপ | গভীরতা |
A | ১৮০ মিটার |
B | ১৮০-৩৬০০ মিটার |
ক. মহাসাগর কাকে বলে?
খ. বঙ্গোপসাগরের তলদেশের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. 'B' ভূমিরূপটির বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'A' ভূমিরূপটির বিস্তৃতি সর্বত্র সমান নয়- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মহাদেশকে আবৃত করে যেসব বৃহৎ প্রাকৃতিক জলরাশি অবস্থিত সেগুলোকে মহাসাগর বলে।
খ. বঙ্গোপসাগরের তলদেশ নানা ধরনের সম্পদে সমৃদ্ধ। এ সাগরের তলদেশ খনিজ সম্পদ ও প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধশালী। সাগরের অনেক স্থানে আবার মূল্যবান লোহা, সিসা, তামা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। মৎস্য সম্পদেও এ সাগর এলাকা সমৃদ্ধশালী। এখানকার মৎস্য সম্পদের মধ্যে লাক্ষা, রূপচান্দা, চান্দা, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, হাঙ্গর, কোরাল, বোয়াল, ইলিশ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ মাছ নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও প্রচুর পরিমাণে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'B' ভূমিরূপটি হলো মহীঢাল।
মহীসোপানের শেষ সীমা হতে ভূভাগ খাড়াভাবে নেমে সমুদ্রের গভীর দেশের সাথে মিশে যায়। এ ঢালু অংশকে মহীঢাল বলে।
মুদ্রে মহীঢ়ালের গভীরতা ১৮০ মিটার (৬০০ ফুট) থেকে ৩,৬০০ মিটার। মহীঢাল অধিক খাড়া হওয়ার জন্য খুব প্রশস্ত নয়। এটি গড়ে কিলোমিটার থেকে ৩২ কিলোমিটার প্রশস্ত। মহীঢ়ালের উপরিভাগ নয়। অসংখ্য অমত্মঃসাগরীয় গিরিখাত অবস্থান করায় তা খুবই যুর প্রকৃতির। এর ঢাল মৃদু হলে জীবজন্তুর দেহাবশেষ, পলি প্রভৃতির অবক্ষেপণ দেখা যায়।
ঘ. উদ্দীপকে A চিহ্নিত ভূমিরূপটি হলো মহীসোপান। এ ভূমিরূপের সর্বত্র সমান নয়। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
পৃথিবীর মহাদেশগুলোর চতুর্দিকে স্থলভাগের পিছু অংশ অল্প ঢালু হয়ে সমুদ্রের পানির মধ্যে নেমে গেছে। এরূপ যেসব অংশে সমুদ্রের গভীরতা ১৮০ মিটারের অনধিক সেসব ক্রমনিম্ন নিমজ্জিত অংশকে মহীসোপান বলে। এটি ১° কোণে সমুদ্রের তলদেশে বিস্তৃত থাকে। মহাসোপানের বৈশিষ্ট্য সাধারণত পার্শ্ববর্তী স্থলভাগের ভূপ্রকৃতি ও তনের ওপর নির্ভর করে। স্তলভাগের উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে আরম্ভ করে অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল সমতল প্লাবন ভূমি হলে সংলগ্ন মহাসোপান অত্যন্ত প্রশস্ত ও অল্প ঢালযুক্ত হয়। অন্যদিকে, সমুদ্র পকূলভাগের ভূপ্রকৃতি পার্বত্যময় ও খাড়া ঢালযুক্ত হলে মহীসোপান পরু প্রকৃতির হয়। অতত্রব উপরের আলোচনা থেকে এটিই প্রতীয়মান। ২য় যে, মহীসোপানের বিস্তৃতি সর্বত্র সমান নয়।
৯. কয়েকজন ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র পৃথিবীর মানচিত্রে দেখতে পেল এশিয়া তথা পৃথিবীর বৃহত্তম নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ইরাবতি এবং সিন্ধু নদ হিমালয় পর্বত থেকে উৎপত্তি হয়ে একটি মহাসাগরে পতিত হয়েছে।
ক. আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি গিরিখাতের নাম লেখ?
খ. বার্মা ট্রেন্স সম্পর্কে লেখ?
গ. উদ্দীপকে নদীগুলো যে মহাসাগরে পতিত হয়েছে তার আকৃতি ও আয়তন সম্পর্কে লেখ।
ঘ. উক্ত মহাসাগরের তলদেশের ভূমিরূপের গভীর খাত ও দ্বীপপুঞ্জ আলোচনা কর?
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আটলান্টিক মহাসাগরের দুইটি গিরিখাত হলো- পোর্টোরিকো গিরিখাত ও দক্ষিণ স্যান্ডউইচ গিরিখাত।
খ. বঙ্গোপসাগরের তলদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপ বৈশিষ্ট্য হলো বার্মাট্রেন্স। এটি সমুদ্রের তলদেশে লম্বা কিন্তু সরু ও তুলনামূলকভাবে খাড়া ঢালবিশিষ্ট নিম্নভূমি। এটি বঙ্গোপসাগরের পূর্ব প্রাপ্রান্তে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বার্মা উপকূল বরাবর বিস্তৃত।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নদীগুলো ভারত মহাসাগরে পতিত হয়েছে। ভারত মহাসাগরের আকৃতি ও অবস্থানের দিক দিয়ে এটি প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর তিন দিকেই স্থলভাগ। যেমন- উত্তরে এশিয়া, পূর্বে অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিমে আফ্রিকা অবস্থিত। এ মহাসাগরের অতি সামান্য অংশ নিরক্ষরেখার উপর অবস্থিত অর্থাৎ এর উত্তরসীমা প্রায় ২২° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত গেছে। এর বাকি অংশ প্রায় সবই দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত।
ভারত মহাসাগর আয়তনে আটলান্টিক মহাসাগর অপেক্ষা ক্ষুদ্র। এর আয়তন প্রায় ৭ কোটি ৩৪ লক্ষ বর্গ কিমি.। গড় গভীরতা ৩,৮৩৯ মি. এবং সর্বাধিক গভীরতা ৬,৯৯৮ মিটার।
ঘ. উদ্দীপকের মহাসাগরটি হলো ভারত মহাসাগর। এ মহাসাগরের তলদেশের ভূমিরূপের মধ্যে অন্যতম হলো গভীর খাত ও দ্বীপপুঞ্জ।
ভারত মহাসাগরের গভীর সমুদ্রখাত নেই বললেই চলে। কেবল জাভা দ্বীপের দক্ষিণে সুন্ডা খাত নামে একটি গভীর খাত রয়েছে। এর গভীরতা প্রায় ৭,৩১৫ মিটার। এটি জাভা দ্বীপের সাথে সমান্তরালভাবে এবং এর দক্ষিণে অবস্থিত। অপর একটি গভীর খাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড, মধ্য বঙ্গোপসাগরের পটুয়াখালী জেলার দক্ষিণে অবস্থিত।
উত্তরে শ্রীলঙ্কা এবং পশ্চিমে মাদাগাস্কার ভারত মহাসাগরের বৃহত্তম দ্বীপ। উভয় দ্বীপই মহাদেশের বিচ্ছিন্ন অংশ জাঞ্জিবার সকোত্রা এবং কামারো দ্বীপ ওয়ারদাফুই অন্তরীপের অনতিদূরে অবস্থিত। এগুলোও মহাদেশের বিচ্ছিন্ন অংশ। এমনকি এ মহাসাগরের পূর্বদিক বঙ্গোপসাগরের আন্দামান, নিকোবর প্রভৃতিও মহাদেশের বিচ্ছিন্ন অংশ। ভারত মহাসাগরে মধ্য ভগ্ন শৈলশিরাকে' অবলম্বন করে কতিপয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ গড়ে উঠেছে। এ মহাসাগরের তলদেশ গভীর হওয়ায় জাভার দক্ষিণ-পশ্চিমের ককোস ও ক্রিস্টমাস দ্বীপদ্বয় ব্যতীত এর পূর্বাংশ দ্বীপবর্জিত।
১০. আসমা তার মামার সঙ্গে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে গিয়ে দেখতে পাচ্ছে সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আসমা তার মামাকে জিজ্ঞাসা করে বৃষ্টির পানি কোথা হতে আসে? মামা বললেন সাগর/নদীর পানি বাম্প হয়ে মেঘ হয় তারপর বৃষ্টি হয়। আসমা মামাকে আরও জিজ্ঞাসা করে সাগরের পানি শেষ হয় না কেন? মামা তাকে জানায় বৃষ্টির পানি, ঝরনার পানি, নদীর পানি ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে আবার সাগরে চলে যায়। একইভাবে আবার বাম্প হয়ে মেঘ, বৃষ্টি ইত্যাদি হয়। এটি পানিচক্র।
ক. পানিচক্র কী?
খ. বৃষ্টির পানির উৎস কী কী?
গ. ভূগর্ভস্থ পানির উৎস কী?
ঘ. পানিচক্র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কী ভূমিকা রাখে।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমুদ্র, বায়ুমন্ডল ও ভূৃপৃষ্ঠের পানি সবসময় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর ভৌত অবস্থা ও ভৌগোলিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে আবার সাগরে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে পানিচক্র বলে।
খ. বৃষ্টির পানির উৎস হচ্ছে- সমুদ্র, নদী, ভূগর্ভস্থ পানি, ভূপৃষ্ঠসহ পানি, উদ্ভিদ থেকে নিঃসৃত প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় নির্গত পানি প্রভৃতি। উক্ত পানি সূর্যের তাপে জলীয়বাষ্পরূপে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে এবং ঘনীভূত হয়ে মেঘ আকারে জমা হয় যা বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়।
গ. ভূগর্ভস্থ পানির উৎস হচ্ছে বায়ুমন্ডলের অবস্থিত মেঘপুঞ্জ। যা বৃষ্টির মাধ্যমে স্থলভাগে পতিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে চোয়ানো প্রক্রিয়া ভূগর্ভে প্রবেশ করে।
সূর্যের উত্তাপে সমুদ্র থেকে জলীয়বাষ্প অনবরত উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং স্থলভাগের উদ্ভিদকুল প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় জলীয়বাষ্প উপরের দিকে নিঃসৃত করে থাকে। এসব জলীয়বাষ্প বায়ুমন্ডলে ঘনীভূত হয়ে। মেঘ আকারে জমা হয় এবং ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। ভূপৃষ্ঠের পতিত পানির কিছু অংশ সরাসরি সমুদ্রে চলে যায় এবং বাকি অংশ ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে কৈশিক জালিকার মাধ্যমে চোয়ানো প্রক্রিয়ায় ভূগর্ভে প্রবেশ করে যা ভূগর্ভস্থ পানি নামে পরিচিত।
ঘ. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীবজগতের ওপর পানি চক্র। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। পানিচক্রের প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় সূর্যের তাপশক্তি দ্বারা বাষ্পীভবন ও বর্ষণ একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। বাষ্পীভবন বেশি হলে বৃষ্টিপাত বেশি হবে। এ বৃষ্টিপাত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীবজগতের ওপর প্রভাব রাখে। বৃষ্টিপাত না হলে কৃষি কাজ সম্ভব হতো না। তাহলে পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদন কমে যেত। দেখা দিবে খাদ্যাভাব।
অন্যদিকে ভূ-জলচক্র মানুষের হস্তক্ষেপে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। যেমন- বনভূমি ধ্বংস, জলাভূমির পরিবর্তন, নদীখাতের পরিবর্তন, বাঁধ নির্মাণ প্রভৃতি বাস্পীভবন, বর্ষণের হারকে প্রভাবিত করে। ফলে পানিচক্রে ব্যাপকভাবে বিঘ্ন ঘটে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ, অধিক জনসংখ্যা প্রভৃতি পানিচক্রে পরিবর্তন করে। বন ও বনজ সম্পদ নগরায়ণযোগ্য সম্পদ। এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এসবই বনভূমি পানিচক্রের ওপর নির্ভর। বাষ্পীভবন, ঘনীভবন, মেঘ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি পানিচক্রের সাথে সম্পর্কিত। আর এসকল বিষয় পরিবেশের ভারসাম্য ও জীবজগতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেহেতু সূর্যের তাপশক্তির ওপর পানিচক্র নির্ভরশীল। তাই বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ভারসাম্য নষ্ট হলে পানিচক্রে এর প্রভাব পড়ে। যা জীবজগতের নানা প্রকার কর্মকান্ডের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পানিচক্র নদীর পানির প্রবাহ, মাটির আর্দ্রতা, বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা, বায়ুমন্ডলের আদ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির ওপর প্রভাববিস্তার করে।
সুতরাং পানিচক্র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
0 Comments:
Post a Comment