এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Geography 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Geography 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Vugol 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
ভূগোল
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬
HSC Geography
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. তৌকির উচ্চ শিক্ষার জন্য মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে বিদেশ গিয়েছে। সেখানে সে এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। তা হলো সারা বছর রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করলেও বৃষ্টিপাত হয় শীতকালে।
ক. আর্দ্রতা কাকে বলে?
খ. নিরক্ষীয় অঞ্চলে গভীর অরণ্য সৃষ্টি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. তৌকিরের গমনকৃত অঞ্চলটির জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তৌকিরের নিজের দেশ ও গমনকৃত দেশটির জলবায়ু আলাদা হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বায়ুতে জলীয়ু বাষ্পের উপস্থিতিকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে।
খ. নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে অধিক তাপ থাকে। এই অধিক তাপই জলীয়বাষ্প তৈরির মাধ্যমে সারাবছরই অধিক বৃষ্টিপাত ঘটায়।
যেকোনো অঞ্চলে বৃক্ষ বেড়ে ওঠার জন্য তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান। সারাবছর এরূপ বৃষ্টিপাত ও তাপের জন্য নিরক্ষীয় অঞ্চলে গভীর অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে তৌকিরের গমনকৃত অঞ্চলটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অন্তর্গত।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে মূলত আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের জন্য। শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় মহাদেশীয় ভূভাগের পশ্চিম প্রাপ্রান্তে ৩০° হতে ৪০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী স্থানে যে জলবায়ু দেখা যায় তাকে পশ্চিম উপকূলবর্তী উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশসমূহে এ শ্রেণির জলবায়ু দেখা যায়। এ কারণে এ জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মৃদুভাবাপন্ন শীত ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া। ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলো নাতিশীতোষ্ণমন্ডলে অবস্থিত হওয়ার কারণে তাপের তেমন প্রখরতা অনুভূত হয় না। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিবহুল শীতকাল এবং বৃষ্টিহীন গ্রীষ্মকাল পরিলক্ষিত হয়। এ অঞ্চলে তৃণভূমির পরিমাণ কম। উদ্দীপকে তৌকিরের গমনকৃত দেশটিতে সারাবছর রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করে এবং শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় তা ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য।
ঘ. তৌকিরের নিজের দেশটি মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত এবং গমনকৃত দেশটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অন্তর্গত। অবস্থানগত কারণে এ দুই দেশের জলবায়ু ভিন্ন প্রকৃতির। নিচে মৌসুমি ও ভূধ্যসাগরীয় জলবায়ুর পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ২১° থেকে ২৭°° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন তাপমাত্রা ৫°-১০° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে জুন-জুলাই মাসে সূর্য কর্কটক্রান্তির নিকটবর্তী হয় তখন চাপবলয়গলো উত্তর দিকে সরে যায়। এ অঞ্চলে শীতকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে শীতকাল আর্দ্র এবং গ্রীষ্মকাল শুষ্ক হয়ে থাকে। অন্যদিকে, মৌসুমি অঞ্চলে সারাবছর তাপমাত্রার পরিমাণ বেশি থাকে। গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ২৭° সেলসিয়াসের বেশি থাকে। শীতকালীন তাপমাত্রা ১° সেলসিয়াস থেকে ২২° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এ অঞ্চলের বায়ুপ্রবাহ ঋতু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এ বায়ুপ্রবাহের গতি ও দিক পরিবর্তন হয় এবং বায়ুর চাপেরও বৈষম্য হয়। এ অঞ্চলের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত সাধারণত ১২৫ থেকে ২০৩ সেমি পর্যন্ত দেখা যায়। এ অঞ্চলে জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে সাধারণত বর্ষাকালে ও গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়।
সুতরাং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু এবং মৌসুমি অঞ্চলের জলবায়ু সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির।
২. পটুয়াখালীর রিকশাচালক মনু মিয়া দু’জন ছাত্রীকে কলেজে পৌছে দেয়। পথিমধ্যে তারা মেরু অঞ্চলের বরফ গলনের ফলে বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করে। এতে মনু মিয়া শঙ্কিত হয়ে পড়ে।
ক. একটি গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখ।
খ. ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মনু মিয়ার শঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি থেকে পরিত্রাণের উপায় বিশ্লেষণ কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রিনহাউস গ্যাসের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হলো কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস (CO₂)।
খ. সময়ের বিবর্তনে মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেমন- শিল্পকারখানা স্থাপন, কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, বনভূমি ধ্বংস ইত্যাদি হতে ক্ষতিকারক গ্যাস (CO₂, CH₄, CFC, N₂O) নির্গত হয়ে বায়ুমন্ডলের সাথে মিশে যাচ্ছে এবং পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে তা ওজোনস্তরকে ধ্বংস করছে। সুতরাং বলা যায়, মানুষের নেতিবাচক কর্মকান্ড ওজোনস্তর ক্ষতি হওয়ার কারণ।
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হলো জলবায়ু পরিবর্তন।
মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন কর্মকান্ডের ফলে বায়ুমন্ডলে মাত্রাতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন- কার্বন-ডাইঅক্সাইড (CO₂), মিথেন (CH₄), - নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) ইত্যাদি নির্গমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিশ্বে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, কলকারখানা, যানবাহন, দৈনন্দিন কাজে ব্যাপক হারে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বদ্ধি বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীব্যাপী উষ্ণ। ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বিচারে বন উজাড়, ভূমি ও জলাভূমি পরিবর্তন এবং কৃষিকাজে অনিয়ন্ত্রিত সার ব্যবহার, জৈবিক পচনের ফলে মিথেনের নির্গমন, শহরাঞ্চলের বর্জ্য, কৃষিকাজের ফলে উৎপন্ন নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজ, বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানায় ব্যবহত সিএফসি, হ্যালোন, ফ্রেয়ন প্রভৃতি গ্যাসের ব্যবহারের কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণেও জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। সুতরাং বলা যায় উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।
ঘ. উদ্দীপকে মনু মিঞা যে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত হলেন তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। কারণ এর প্রভাবে যে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে তার ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
প্রচলিত শক্তির উৎস যথা জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) যথাসম্ভব কম ব্যবহার। অপ্রচলিত এবং নগ্নীভবনযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি। তাপবিদ্যুৎ শক্তির পরিবর্তে জলবিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। সৌরশক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করে ব্যবহার করতে হবে। অরণ্যের ধ্বংস হ্রাস এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নতুন বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে। ফ্রেয়ন গ্যাসের ব্যবহার ও উৎপাদন রোধ, শিল্পকারখানা থেকে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, কার্বনমনোঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন এর মতো গ্যাসগুলোর নির্গমন কমাতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ সীমিত রাখে, শিল্পোন্নতির জন্য এরূপ প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে হবে।
সর্বোপরি, গ্রিনহাউস প্রভাবের মূল কারণ বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধি তাই সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে বনায়ন করে এবং কালো ধোয়াযুক্ত যান ব্যবহার হ্রাস করে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
৩. মি. রফিক সাহেব ফ্রান্সে গিয়ে দেখলেন শীতকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হতে। সেখানে তিনি কয়েকজন মাননুষের সাথে আলোচনা করে জানতে পারলেন জলবায়ুগত কারণে এখানে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। আর এ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। মূলত আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের জন্য।
ক. জলবায়ু কাকে বলে?
খ. নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন ধরনের জলবায়ুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বায়ুপ্রবাহের সাথে বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো স্থানের বায়ুর তাপমাত্রা, চাপ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদির ৩০ থেকে ৪০ বছরের গড় অবস্থাকে সেই স্থানের জলবায়ু বলে।
খ. নিরক্ষরেখার উভয় পার্শ্বে নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল অবস্থিত। নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ৫°- ১০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে এ জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীর অববাহিকা, ব্রাজিলের উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, গায়ানার উপকূলভাগ, ভেনেজুয়েলার অংশবিশেষ ও কলম্বিয়ার দক্ষিণাংশ, পেরূর উত্তরাংশ, ইকুয়েডর, মালয়েশিয়া, আফ্রিকার কগো নদীর অববাহিকা ও গিনি উপকূল প্রভৃতি অঞ্চল নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
গ. উদ্দীপকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় মূলত আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহের জন্য। মহাদেশীয় ভূভাগের পশ্চিম প্রাপ্রান্তে ৩০° হতে ৪০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী স্থানে যে জলবায়ু দেখা যায় তাকে পশ্চিম উপকূলবর্তী উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশসমূহে এ শ্রেণির জলবায়ু দেখা যায়। এ কারণে এ জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মৃদুভাবাপন্ন শীত ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া। এ অঞ্চলের দেশগুলো নাতিশীতোষ্ণমন্ডলে অবস্থিত হওয়ার কারণে তাপের তেমন প্রখরতা অনুভূত হয় না। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিবহুল শীতকাল এবং বৃষ্টিহীন গ্রীষ্মকাল পরিলক্ষিত হয়। এ অঞলে তৃণভূমির পরিমাণ কম হওয়ার কারণে পশুপালন খুব একটা হয় না। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল, মালটা, গ্রিস, বলকান, অস্ট্রেলিয়ার মারে নদী অববাহিকার দক্ষিণাংশ ইত্যাদি।
ঘ. উদ্দীপকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর কথা বলা হয়েছে।
বৃষ্টিবহুল শীতকাল এবং বৃষ্টিহীন গ্রীষ্মকাল ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের সাথে বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বা প্রত্যয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। এ সময় বায়ুতে নিম্নচাপ বিরাজ করে। গ্রীষ্মকালে শুষ্ক অয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। তাই এ সময় বৃষ্টিপাত হয় না। উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়ণ হলে সূর্য কর্কটক্রান্তির নিকটবর্তী হয় তখন পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলো উত্তর দিকে সরে যায়। চাপ বলয়ের সাথে সাথে বায়ু বলয়গুলোও উত্তরে সরে অবস্থান করে। ফলে এ সময় উত্তর গোলার্ধের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের দেশগুলোর উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব অয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে আসে বলে এতে জলীয়বাষ্প থাকে না। ফলে এ অঞলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হয় না। এ সময় দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল থাকায় এবং বায়ুচাপ বলয়গুলো কিছুদূর উত্তরে সরে যাওয়ায় সেখানকার ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু সমুদ্র হতে আসে বলে তাতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে এবং ঐ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
সুতরাং বলা যায় যে, ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুতে বায়ুপ্রবাহের সাথে বৃষ্টিপাতের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
৪. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. মৌসুমি জলবায়ু কাকে বলে?
খ. সমতাপ ও সমবর্ষণ রেখা বলতে কী বোঝায়?
গ. চিত্রে ‘ক’ চিহ্নিত জলবায়ু অঞ্চলটির উপাদানগত বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘খ’ চিহ্নিত জলবায়ু অঞ্চলটি স্থানীয় উদ্ভিদ, জীবজন্তু এবং কৃষিজ দ্রব্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে?- বিশ্লেষণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত ও নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের জলবায়ুকে মৌসুমি জলবায়ু বলে।
খ. কাছাকাছি কয়েকটি এলাকায় সমান তাপবিশিষ্ট অঞ্চলকে মানচিত্রে একটি রেখা দ্বারা যুক্ত করা হলে তাকে সমতাপ রেখা বলে।
আর কাছাকাছি কয়েকটি এলাকায় যখন একই পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তখন তা একটি রেখা দ্বারা যুক্ত করলে একে সমবর্ষণ রেখা বলে।
গ. চিত্রে ‘ক’ চিহ্নিত অলটি নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল।
সাধারণত বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে নিরক্ষীয় জলবায়ু নিরূপণ করা যায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং দিবাভাগের দৈর্ঘ্য সারাবছর প্রায় সমান থাকে বলে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা সারাবছরই অধিক থাকে এবং বিভিন্ন মাসের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য খুবই কম হয়ে থাকে। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সাধারণত ২২°- ৩৪° সে, পর্যন্ত। নিরক্ষীয় অঞ্চলে আনুভূমিকভাবে তাপমাত্রা পরিবর্তনের হার খুব কম বলে বায়ু চাপের পরিবর্তনের হারও কম। ফলে আনুভূমিক বায়ুপ্রবাহের বেগও অতি কম। কেবল প্রান্তভাগে অয় বায়ুর প্রবেশজনিত কারণে আনুভূমিক বায়ুপ্রবাহের বেগ অপেক্ষা অধিক হয় এবং নিরক্ষীয় শান্তবলয়ের দিকে বায়ুর বেগ ক্রমশ কমে যায়। এ অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ সে.মি. মতো।
সুতরাং বলা যায় যে, উপরিউক্ত উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত করেই আমরা নিরক্ষীয় জলবায়ু চিহ্নিত করতে পারি।
ঘ. উদ্দীপকে ‘খ’ চিহ্নিত স্থান ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল নির্দেশ করে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও কৃষিজ দ্রব্য জলবায়ুর প্রভাবে বৈচিত্র্যময়।
গম চাষের জন্য এ অঞ্চল বিশেষ উপযুক্ত। অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অঞ্চলে পানিসেচের সাহায্যে গম, যব, ভুট্টা, তুলা প্রভৃতি ফসলের চাষ হয়। এছাড়া এ অঞ্চলের জলবায়ু ফল উৎপাদনের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী। এজন্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ফলের রাজ্য। এরূপ সুমিষ্ট ও রসালো ফল পৃথিবীর অন্য কোনো অঞ্চলে উৎপন্ন হয় না। জলপাই ও ডুমুর জাতীয় গাছ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুবিশিষ্ট দেশগুলোতে সর্বত্রই জন্মে। কমলালেবু ও লেবু জাতীয় অন্যান্য বৃক্ষও অঞ্চলে জন্মে।
এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। শুষ্ক গ্রীষ্মকাল ও আর্দ্র শীতকাল হওয়ায় এরূপ জলবায়ুর - উদ্ভিজ্জসমূহ শুষ্কতার মোকাবিলা করার ক্ষমতাসম্পন্ন। বৃষ্টিবহুল শীতকালে বৃক্ষাদি জন্মে। ছোট ছোট গাছ ও ঝোপঝায় এ অঞ্চলে বেশি জন্মে। গ্রীষ্মকাল সম্পূর্ণরূপ বৃষ্টিহীন না হলেও শুষ্ক। সেজন্য এ ঋতুতে বৃক্ষলতাদির বৃদ্ধি বিশেষ হয় না। বায়ুমন্ডলের শুষ্কতার ফলে এ অঞ্চলের উদ্ভিদের দেহে সর্বদা প্রস্বেদন (Transpiration) চলে। এ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য বক্ষসমূহ তাদের মূল, শক্ত আবরণ ও পত্রের মধ্যে গ্রীষ্মকালের জন্য আর্দ্রতা সঞ্চয় করে রাখে। ফলে যেসব বৃক্ষের লম্বা মূল, শক্ত আবরণ এবং পাতাগুলো মোমের মতো তৈলাক্ত কেবল সেসব বৃক্ষই এ অঞ্চলে জনেম। জলপাই এ অঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ। এছাড়া কর্ক, ওক, মিষ্টি বাদাম, সিডার, পাইন, তঁতগাছ প্রভৃতি বৃক্ষাদিও এ অঞ্চলে জন্মে।
৫. দৃশ্যকল্প-১: কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। এভাবে প্রায় ৩-৪ দিন থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে।
দৃশ্যকল্প-২: অনেক দিন বৃষ্টিহীন। হঠাৎ একদিন বিকালে ঈষাণ কোণে মেঘের ঘনঘটা। প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বজ্র বিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত হলো এবং এর স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ২ ঘণ্টা। এ বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম হলো না।
ক. জলবায়ু কী?
খ. বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং কেন?
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ নির্দেশিত বৃষ্টিপাতের কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-১ এবং দৃশ্যকল্প-২ এ জলবায়ুগত যে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো অঞ্চলের ৩০-৪০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে।
খ. বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সমুদ্র থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ বায়ু উচ্চভূমি বা পর্বতে ধাক্কা খায় এবং উপরে ওঠতে থাকলে শীতল এবং ঘনীভূত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে পাহাড় থাকায় জলীয়বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এ প্রক্রিয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এ বাংলাদেশের বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত নির্দেশিত হয়েছে। বাংলাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। জুন মাসের প্রথম দিকে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বর্ষাকাল শুরু হয়। এ সময় বাংলাদেশের উপর সূর্যের অবস্থানের কারণে বায়ুচাপের পরিবর্তন ঘটে এবং বায়ু উষ্ণ হতে থাকে। ফলে বাষ্পীভবন বেড়ে যায় এবং বৃষ্টিপাত ঘটে। বর্ষাকালে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু।
ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসে বলে প্রচুর জলীয়বাষ্পসমদ্ধ থাকে। উত্তর-পর্বের পাহাড়সমূহে বাধা পেরে এ জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু শৈলোৎক্ষেপ প্রক্রিয়ায় এদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ঘ. দৃশ্যকল্প ১ এ বাংলাদেশের বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের ধরন এবং দৃশ্যকল্প ২ এ গ্রীষ্মকালীন কালবৈশাখী ঝড়ের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
বর্ষাকাল তুলনামূলকভাবে কম উষ্ণ থাকে। এসময় গড় তাপমাত্রা ২৭° সেলসিয়াস। অন্যদিকে, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। এসময় তাপমাত্রা ২১° সেলসিয়াম থেকে ৩৪° সেলসিয়াস হয় এবং গড় তাপমাত্রা ২৮° সেলসিয়াস।
বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যা মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ ভাগ। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও তা বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ২০ ভাগ। মূলত কালবৈশাখী ঝড়ের কারণেই এসময় বৃষ্টিপাত হয়। এসময়ের গড় বৃষ্টিপাত ৫১ সেন্টিমিটার।
বর্ষাকালে বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুতে পরিণত হয়। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু। প্রবাহ অধিক উত্তাপের প্রভাবে উপরে উঠে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ফলে এসময় বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয়।
সুতরাং বলা যায়, এদেশের জলবায়ুতে বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের কারণে গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালের এ বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
৬. রিমি সংবাদপত্রে একটি খবর পড়ে চিন্তায় পড়ে গেল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবম্বরূপ বাংলাদেশসহ মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড, মিশর ইত্যাদি দেশের নিমণাঞ্চল ব্যাপক প্লাবিত হবে এবং ক্ষয়ক্ষতি হবে।
ক. বিশ্ব উষ্ণায়ন কী?
খ. জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হ্রাসের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. রিমির জানা পরিস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে তার ফলে তোমার নিজ এলাকায় কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে বিশ্লেষণ কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক মানুষের অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।
খ. সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্বি × প্রভৃতি কারণে জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নিম্নভূমি প্লাবিত হচ্ছে বনভূমি, উদ্ভিদকুল লোনা পানি দ্বারা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে এসব উদ্ভিদকুল ও প্রাণিকুলের বসবাসের অনুকূল পরিবেশে সরাসরি আঘাত হানার মধ্য দিয়ে ধ্বংস সাধিত হচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।
গ.উদ্দীপকে উল্লিখিত রিমি সংবাদপত্রের মাধ্যমে যে বিষয়টি জেনেছেন। তা হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নিমণাঞ্চল প্লাবিত হবে এবং ক্ষয়ক্ষতি হবে। এ জলবায়ু পরিবর্তনের যেসব কারণ রয়েছে তা নিম্নরূপ-
বিদ্যুৎ উৎপাদন, কলকারখানা, যানবাহন, দৈনন্দিন কাজে ব্যাপক হারে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায়, বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার বেড়ে গেছে ফলে পৃথিবীব্যাপী উষ্ণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্বিচারে বন উজাড়, ভূমি ও জলাভূমি পরিবর্তন এবং কৃষিকাজে অনিয়ন্ত্রিত সার ব্যবহার, জৈবিক পচনের ফলে মিথেনের নির্গমন, শহরাঞ্চলের বর্জ্য, কৃষিকাজের ফলে উৎপন্ন নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজ, বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত সিএফসি, হ্যালোন, ফ্রেয়ন প্রভৃতি গ্যাসের ব্যবহারের কারণে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন খনিতে বিশেষ করে কয়লা খনি থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাস খনি থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুতরাং বলা যায় উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমার এলাকা অর্থাৎ বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।
আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলশ্রুতিতে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে এবং পর্বতের পাদদেশে বিশাল বরফখ-গুলো গলে গিয়ে সমুদ্রের পানির উচ্চতাকে বৃদ্ধি করছে। ফলে নিম্নভূমিগুলো নিমজ্জিত হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নজেলাগুলোতে লোনা পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে তাই ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীত ও গ্রীষ্মের তাপমাত্রার ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো নামক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের ওপর মারাত্মকভাবে আঘাত হানছে এবং ঘরবাড়ি, উদ্ভিদকুল, প্রাণিকুল ধ্বংস হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে হিমালয় পর্বতেরত রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বর্ষাকালে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে হিমালয় পর্বতের বরফগুলো গলে যাচ্ছে এবং উক্ত পানিগুলো ভারত হয়ে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের নদীগুলো তলিয়ে গিয়ে আশেপাশের শুকনো অঞ্চলগুলো প্লাবিত করছে এবং বন্যার সৃষ্টি করছে। এছাড়া নদীর পানির বেগ বৃদ্ধির কারণে নদীভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এদেশের বস্তু মানুষের ঘরবাড়ি, উদ্ভিদ, প্রাণী প্রভৃতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের জীবন যাপন কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।
সর্বোপরি বলা যায় যে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের। নিম্নভূমি সমুদ্রগর্ভে চলে যেতে পারে এবং ঋতুভিত্তিক তাপমাত্রার ব্যবধান বেশি হওয়ার কারণে কোথাও বন্যা আবার কোথাও খরা, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।
ক. সমবর্ষণ রেখা কী?
খ. নিরক্ষীয় জলবায়ুতে উদ্ভিদের প্রকৃতি কেমন? ব্যাখ্যা কর।
গ. সবজি উৎপাদনে চিত্র 'A' এর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানবজীবনে চিত্র 'A' এর প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কাছাকাছি কয়েকটি এলাকায় যখন একই পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তখন তা একটি রেখা দ্বারা যুক্ত করলে একে সমবর্ষণ রেখা বলে।
খ. নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ফলে এ অঞ্চলে বড় বড় গাছ জন্মাবার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার গাছগুলো খুব লম্বা হয়। ত্রিশ থেকে পাশ মিটার উঁচু গাছের অরণ্যের জন্য এ অঞ্চল প্রসিদ্ধ। এগুলো কঠিন কাঠের গাছ। গাছের পাতাগুলো বড় আকৃতির হয়ে থাকে। এখানে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করার গাছের পাতাগুলো একসাথে ঝরে পড়ে না। এ অঞ্চলের উদ্ভিদকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা- বৃষ্টিবহুল অরণ্য, জঙ্গল ও ঝোপজাতীয় অরণ্য, উপকূলীয় অরণ্য।
গ. চিত্র-A দ্বারা শীতপ্রধান দেশের গ্রিনহাউসকে বোঝানো হয়েছে। গ্রিনহাউস বলতে বোঝায় স্বচ্ছ কাচের ছাউনিযুক্ত ঘর।
শীতপ্রধান দেশে অধিকাংশ সময়ই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। ফলে সেখানে কোনো গাছপালা বা উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। শীতের সময় দিনের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকলেও গ্রিনহাউসের ভিতর বায়ুমন্ডলের মাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। ফলে উদ্ভিদের জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদনে কোনো সমস্যা দেখা যায় না। শীতপ্রধান দেশসমূহে এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে মূলত শাকসবজি উৎপন্ন করা হয়। ক্ষুদ্র তরঙ্গবিশিষ্ট র্সূযরশ্মির পতনের ফলে এটি গ্রিনহাউসে প্রবেশ করে এবং উত্তপ্ত করে ফেলে। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে দীর্ঘতরঙ্গবিশিষ্ট রশ্মি গ্রিণ হাউসের কাচ ভেদ রে আর ফিরে যেতে পারে না। ফলে সেখানে গাছপালা ও পাকিসবজি জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চিত্র-অ তথা হাউস মূলত এভাবেই সবজি উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে।
ঘ. চিত্র-A দ্বারা গ্রিনহাউসকে বোঝানো হয়েছে। এ গ্রিনহাউস এর। প্রভাব মানবজীবনে মারাত্মকভাবে প্রতিফলিত হয়।
মন্ডলে কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, নাইট্রাস আকাইড, ওজোন প্রভৃতি গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীতে জীবজগতের জীবনধারণের জন্য অতি আবশ্যকীয় উপাদান যা পৃথিবীর তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে।
সমগ্র পৃথিবীর পরিমন্ডলকে গ্রিনহাউসরূপে যদি কল্পনা করি এবং এক্ষেত্রে বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস পৃথিবীর কাচ আস্তরক হিসেবে কাজ করে। তবে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিভিন্ন গ্যাসের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে উক্ত কাচ আস্তরকে যদি বাধা পেয়ে পুনরায় ভূপৃষ্ঠ এসে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে তাহলে একে গ্রিনহাউস ইফেক্ট বলে। মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, যেমনত নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, অধিকহারে কলকারাখানা স্থাপন ও যানবাহন চালানো, ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীতে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং মিথেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। বায়মন্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, 'ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সি. এফ. সি), নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন, জলীয়বাষ্প ইত্যাদি। তাপকে ধরে রাখতে পারে। এসব গ্যাসকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। বায়ুমন্ডলে এসব গ্যাসের ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা। বৃদ্ধির এ সামগ্রিক প্রক্রিয়াকে গ্রিনহাউস ইফেক্ট বলা হয়।
পরিশেষে বলা যায় গ্রিনহাউস প্রতিকৃয়ার ফলে পৃথিবীর সব বরফ। গলে যাচ্ছে এবং মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং মানুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে মানব জীবনে ব্যাপক নোতবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই আমাদের সকলের উচিৎ এ বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া।
৮. আনুসা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে একটি দেশে বসবাস করে। এ অঞ্চলে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে - তার নিজের দেশের জলবায়র প্রকৃতি হলো আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল। ঋতু পরিবর্তনের সাথে বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয়।
ক. স্বাভাবিক তাপ হ্রাসহার কী?
খ. পানি বন্টনে বায়ুমন্ডল কীভাবে ভূমিকা রাখে?
গ. আনুসার দেশটি কোন জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জলবায়ু অঞ্চল দুটির ভিন্নতার কারণ বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতি কি.মি উচ্চতায় বায়ুতাপ গড়ে ৬.৪° সে. হ্রাস পায়। তাপ হ্রাসের এ হারকে স্বাভাবিক তাপহ্রাস হার বলে।
খ. সূর্যের তাপে নদী, সাগর, পুকুর প্রভৃতি উৎস হতে পানি বাস্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে যায়। বায়ুমন্ডল হতে পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। ভূপৃষ্ঠ হতে আবার - সমুদ্র, হ্রদ, ভূগর্ভ, নদী প্রভৃতি স্থানে পুনঃবন্টিত হয়। অর্থাৎ পানি সূর্যের তাপে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বাযুমন্ডলে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উৎসে পানি বন্টিত হয়। তাই পানি বন্টনে বায়ুমন্ডলের ভূমিকা অপরিসীম।
গ. উদ্দীপকে আনুসার দেশটি হলো বাংলাদেশ যা মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত।
মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত অঞলের জলবায়ুকে মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল বলে। মৌসুমি জলবায়ুর প্রকৃতি হলো আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে বায়ুর দিক পরিবর্তিত হয়।
মৌসুমি জলবায়ু ১৫° থেকে ৩০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে দেখা যায়। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ার অধিকাংশ স্থান ও দক্ষিণ চীন ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত তাছাড়া মাদাগাস্কার। দ্বীপ, পূর্ব আফ্রিকার উপকূল অঞল ক্যারিবিয়ান সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের উপকূলবর্তী দেশসমূহ, ব্রাজিলের পূর্বাংশ পশ্চিম ও। পশ্চিমন্ডপূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের কিয়দংশ, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ও মারিয়ার অংশবিশেষে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব লক্ষ করা যায়। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এ ধরনের জলবায়ুর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং উদ্দীপকে আনুসার দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশ মৌসুমি জলবায়ু। অঞ্চলের অন্তর্গত।
ঘ. উদ্দীপকে আনুসার দেশে মৌসুমি জলবায়ু এবং তার বসবাসকৃত অঞলের নিরক্ষীয় জলবায়ুর বিরাজ করে। নিচে এ দুই প্রকার জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করা হলো।
মৌসুমি জলবায়ু একটি বৈচিত্র্যময় অনিয়মিত ও অনিশ্চিত বৃষ্টিপাতের জলবায়ু। শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে স্থলভাগ ও জলভাগের উপরে বায়ুর উষ্ণতা ও চাপের পার্থক্য থেকে মূলত এ জলবায়ুর উৎপত্তি। গ্রীষ্মকালে সমুদ্র ভাগ হতে আর্দ্র মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে স্থলভাগ হতে শুষ্ক মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ফলে মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে সাধারণত শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় না এবং অধিক শুষ্ক থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে বায়ুপ্রবাহের গতি ও দিকের পরিবর্তন হয়। তাই বলা যায়, নিরক্ষীয় জলবায়ু ও মৌসুমি জলবায়ুর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান।
অন্যদিকে সাধারণত বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে একটি অঞ্চলের জলবায়ু নিরূপণ করা যায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং দিবাভাগের দৈর্ঘ্য সারাবছর প্রায় সমান থাকে বলে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা সারাবছরই অধিক থাকে এবং বিভিন্ন মাসের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য খুবই কম হয়ে থাকে। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সাধারণত ২২° ৩৪° সে. পর্যন্ত। নিরক্ষীয় অঞ্চলে আনুভূমিকভাবে তাপমাত্রা পরিবর্তনের হার খুব কম বলে বায়ু চাপের পরিবর্তনের হারও কম। ফলে আনুভূমিক বায়ুপ্রবাহের বেগও অতি কম। মালয়েশিয়ায় নিরক্ষরীয় জলবায়ু বিরাজ করে তাই এ অঞ্চলে ও উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান। এ অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ সে.মি. এর মতো।
তাই বলা যায় অনুসারে নিজ দেশ এবং তার ভ্রমণকৃত দেশের জলবায়ু অর্থাৎ মৌসুমি জলবায়ু ও নিরক্ষীয় জলবায়ুর মধ্যে বৈশিস্ট্যগত পার্থক্য রয়েছে।
৯. মিতু, জিতু এবং তার সহপাঠীরা জলবায়ুর ওপর গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তিন মাসের সফরে রাশিয়ার উত্তরালে অবস্থান করছেন। সেখানের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন।
ক. অস্টিন মিলার’ পৃথিবীকে প্রথমে কয়টি জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেন?
খ. গ্রিনহাউস বলতে কী বোঝায়?
গ. মিতু, জিতু এবং তার সহপাঠীদের অবস্থানরত অঞ্চলকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চল বলার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মিতু, জিতু এবং তার সহপাঠীদের অবস্থানরত অঞ্চল উদ্ভিজ, জীবজন্তু এবং অধিবাসীদের জীবনধারণের জন্য উপযোগী নয়-বিশ্লেষণ কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘অস্টিন মিলার’ পৃথিবীকে ৪টি জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন।
খ. গ্রিনহাউস হচ্ছে কাচের তৈরি সবুজ ঘর।
শীতপ্রধান দেশে গাছপালাকে রক্ষা করার জন্য এবং সূর্যের তাপ দেওয়ার জন্য এ ধরনের কাচের ঘর তৈরি করে সবুজ গাছপালা উৎপন্ন করা হয়। কাচের মধ্যে সহজেই সূর্যের কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তাপ শোষিত হয় এবং উত্তপ্ত হয়ে দীর্ঘ তরঙ্গের তাপে পরিণত হয়, যা কাচের মধ্য দিয়ে আর বাইরে বের হয় না, এরকম ঘটনাকে গ্রিনহাউস বলা হয়।
গ. মিতু, জিতু এবং তার সহপাঠীদের অবস্থানরত অঞ্চলটি মেরুদেশীয় জলবায় অঞ্চলের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ এখানে মেরুদেশীয জলবায়ু লক্ষ করা যায়। মেরুদেশীয় অঞ্চলে যে জলবায়ু পরিলক্ষিত হয় তাকে মেরুদেশীয় জলবায়ু বলে এবং এ অঞ্চলে সূর্যরশ্মি দেখা যায় না বললেই চলে। ফলে এ অঞ্চলে হিমশীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। যে কারণে একে মেরুদেশেীয়ু তুন্দ্রা জলবায়ু বলে। মেরুদেশীয় তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চল বলার কারণ নিচে উপস্থাপন করা হলো-
হিমশীতল জলবায়ু তন্দ্রা অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ অঞ্চল সারা বছর বরফাচ্ছন্ন থাকে। এ অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল ক্ষণস্থায়ী এবং শীতকাল দীর্ঘস্থায়ী। গ্রীষ্মকালে সূর্য অস্ত যায় না এবং শীতকালে সূর্য খুব কমই উদিত হয়। শীতকালে দীর্ঘদিন উত্তাপ কম থাকায় বিরাট তুষার স্তুপ সতি হয়। ক্ষণস্থায়ী গ্রীষ্মকালে এ তুষারপাত অল্পই গলে থাকে। উপরিউল্লিখিত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ অঞ্চলের জলবায়ু মানব বসবাসের প্রতিকূল। যার কারণে মেরুদেশীয় তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলকে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চল বলা হয়।
ঘ. মিতু, জিতু এবং তার সহপাঠীদের অবস্থানরত অলটি মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চলের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ এখানে মেরুদেশীয় জলবায়ু লক্ষ করা যায়। মেরুদেশীয় তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলে চরমভাবাপন্ন অবস্থা বিরাজ করায় এখানকার উদ্ভিজ, জীবজন্তু এবং অধিবাসীদের জীবনপ্রণালিতে প্রতিকূলতা বিরাজ করে।
সারাবছর মেরুদেশীয় তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চল বরফে আচ্ছাদিত থাকায় উদ্ভিদ তেমনভাবে জন্মাতে পারে না। শুধু অল্পকাল স্থায়ী গ্রীষ্মের প্রারম্ভে যেই বরফ গলতে শুরু করে অমনি শৈবাল, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তৃণ-গুচ্ছ, নানা জাতীয় গুল্মদি জন্মে এবং তা ফুলে-ফলে ভরে উঠে। আবার সুদীর্ঘ শীতকালে এগুলো বরফের নিচে ঢাকা পড়ে মরে যায়। কোনো প্রকার কৃষিকার্য এখানে অসম্ভব।
শীতকালে বাইরে থাকা অসম্ভব বলে তুন্দ্রাবাসিগণ ঐ সময়ে ঘরের ভিতরে বসবাস করে। শীতকালে এরা গোলাকার বরফের ঘরে বসবাস করে। এ জাতীয় ঘরকে ইগ্লো (Igloo) বলে। কিন্তু গ্রীষ্মকালে বরফ গলে যায় বলে চামড়ার তাবুতে বসবাস করে। বলগা হরিণের চামড়াই তব নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে কাষ্ঠ বা পাথরের নির্মিত ঘরও দেখা যায়।
এছাড়া বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরা হয়। সর্বোপরি বলা যায়, প্রতিকূল জলবায়ু বিরাজ করে বলে এ অঞ্চলে খুব কম জনগোষ্ঠী লোক বাস, করে এবং উদ্ভিদ তেমন জন্মায় না। তাই মেরুদেশীয় তুন্দ্রা জলবায়ু উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীর জন্য প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করে।
১০. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. গ্রিনহাউস কী?
খ. গ্রিনহাউস কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
গ. কাচের এ ঘরটি তাপ বৃদ্ধিতে কী ভূমিকা রাখে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত ঘরের প্রতিক্রিয়ার প্রভাব আলোচনা কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রিনহাউস হচ্ছে এক ধরনের কাঁচের ঘর।
খ. নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশগুলোতে শীতকালে সবুজ শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য যে কাচের ঘর তৈরি করে, তাকেই গ্রিনহাউস বলে।
গ্রিন হাউসে সূর্যালোক অবাধে প্রবেশ করে কিন্তু নির্গত হওয়ার সময় তাপ শক্তির খানিকটা কাঁচের আচ্ছাদনের ভিতর ধরে রাখে। নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপ ধরে রেখে বা সৃষ্টি করে মূলত উদ্ভিজ্জ ও শাকসবজি জন্মাবার জন্য এ ঘর শীতপ্রধান দেশে ব্যবহার করা হয়।
গ. চিত্রের কাচের ঘরটি হলো গ্রিনহাউস।
পৃথিবীতে সমস্ত তাপ ও শক্তির মূল উৎস সূর্যের আলো। সূর্যরশ্মি পৃথিবীতে আসে ক্ষুদ্র তরঙ্গের মাধ্যমে। ইনফ্রারেড রেডিয়েশনের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ থেকে অতিরিক্ত তাপ মহাশূন্যে চলে যায়। বায়ুমন্ডলে কিছু গ্যাস আছে যাদের অনুদৃশ্যমান আলোর জন্য স্বচ্ছ এবং তা ভূপৃষ্ঠে পড়তে কোন বাধা দেয় না। কিন্তু এর ইনফ্রারেড রশ্মি বা অবলোহিত রশ্মি শোষণ করে ফলে বিকিরিত তাপের সবটুকু মহাশূন্যে চলে যাওয়ার বদলে একাংশ আবহাওয়া মন্ডলে থেকে যায়। কতটা তাপ এভাবে থেকে যাবে তা নির্ভর করে কী পরিমাণ এ ধরনের গ্যাস বায়ুমন্ডলে রয়েছে তার ওপর। বায়ুমন্ডলে এ ধরনের গ্যাসের পরিমাণ যত বাড়তে ততই বায়ুমন্ডল তাপ আটকে রাখার মত একটি ঢাকনির সৃষ্টি হবে এবং তা গ্রিনহাউসের কাচের ঢাকনির মতো কাজ করে এবং পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্টি করে গ্রিনহাউস প্রভাব।
সুতরাং বলা যায়, কাচের এ ঘরটি তাপ বৃদ্ধিতে এবং তাপ ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঘ. উক্ত ঘরের তথা গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রভাব মানবজীবনের জন্য শুধু নেতিবাচকই নয়; বরং ভূপৃষ্ঠের প্রাণিকুল এর প্রভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
বিশ্বের আবহাওয়া ও তার ধরন দিন দিন বদলে যাচ্ছে। কোনো ঋতুতেই আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে স্বাভাবিক আচরণ পাচ্ছি না। বৃষ্টির সময়ে অনাবৃষ্টি, খরার সময়ে বৃষ্টি, গরমের সময়ে উত্তরে হাওয়া, শীতের সময়ে তপ্ত হাওয়া কেমন যেন এলোমেলো আবহাওয়া লক্ষ করা যায়।
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, গ্রিনহাউস প্রভাব পৃথিবীর কয়েকটি দেশে যথা- কানাডা, রাশিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন প্রভৃতি দেশগুলোর জন্য সাফল্য বয়ে আনবে। এ কারণে ঐসব অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ একর জমি বরফমুক্ত হয়ে চাষাবাদ ও বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, দুর্ভোগ বাড়বে পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার দরিদ্র অধিবাসীদের। কারণ গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপকূলীয় এলাকার এক বিরাট অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর বেশ কয়েকটি বিখ্যাত শহর হবে ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত। পৃথিবীর উষ্ণায়নের ফলে একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় বিশ্বের মোট জনসমষ্টির প্রায় ২০ শতাংশ অধিবাসীর সরাসরি ভাগ্য বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় নিমণাঞ্চলের মানুষ হবে প্রথম শিকার।
তাই সার্বিকভাবে বলা যায়, মানবজীবনে গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ার যথেষ্ট প্রভাব পড়ছে।
0 Comments:
Post a Comment