এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Geography 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Geography 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Vugol 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.
উচ্চ মাধ্যমিক
ভূগোল
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩
HSC Geography
1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. হারিস সাহেব বিবিসি’র খবরে জানতে পারেন যে, হঠাৎ তীব্র কম্পনে মুহূর্তের মধ্যে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপের হাইতি শহরটি প্রায় ধ্বংসভূপে পরিণত হয়েছে। পরের দিনই তিনি ডিসকভারী চ্যানেলে দেখলেন প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি দ্বীপের ফাটল দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের গলিত পদার্থ বের হচ্ছে।
ক. বিচূর্ণীভবনের সংজ্ঞা দাও।
খ. সুনামি সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বিবিসি প্রচারিত দুর্যোগ সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হারিস সাহেবের পরের দিন দেখা দুর্যোগটির প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের শিলারাশি চুর্ণ-বিচূর্ণ বা বিশিস্নষ্ট হলে তাকে বিচূর্ণীভবন বলে।
খ. সমুদ্রতলদেশের ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, নভোজাগতিক ঘটনা প্রভৃতি কারণে সুনামির সৃষ্টি হয়।
সাধারণত সমুদ্রতলদেশের ভূমিকম্প আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমুদ্রের তলদেশের বিশাল জলরাশি সরে যায় এবং সমুদ্রের পানিতে প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় যা সুনামি নামে পরিচিত। এছাড়া পাত সাঞ্চলনের কারণে সৃষ্ট ভূমিকম্পের কারণেও সমুদ্রের বিশাল জলরাশি সরে যায় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা পানি আরও ফুলে ওঠে লক্ষ লক্ষ টনের বিশাল ঢেউ তৈরি করে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে যা সুনামি নামে পরিচিত।
গ. উদ্দীপকে বিবিসি এর প্রচারিত দুর্যোগটি হলো ভূমিকম্প।
ভূঅভ্যন্তরে দ্রুত বিপুল শক্তি বিমুক্ত হওয়ায় পৃথিবীপৃষ্ঠে যে ঝাঁকুনি বা কম্পনের সৃষ্টি হয়, তাকে ভূমিকল্প বলে। নিচে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হলো-
ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ভূনিম্নস্থ শিলাস্তরে ভারের সামঞ্জস্য রক্ষার্থে ফাটল ও ভঁজের সৃষ্টির ফলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূআলোড়নের ফলে ভূত্বকের কোনো স্থানে শিলা ধসে পড়লে বা শিলা চ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়। আবার সমগ্র পৃথিবী ৭টি প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত এবং এসব প্লেট সঞ্চরণশীল। যার কারণে একটি প্লেটের সাথে অন্য প্লেটের সংঘর্ষ বা ধাক্কা লাগে এবং শিলাস্তরের মধ্যে কম্পন অনুভূত হয়। জাপানের পূর্ব পার্শ্বে একটি প্লেট থাকায় এখানে ভূমিকম্প বেশি অনুভূত হয়। তবে মূলত প্লেটগুলোর সঞ্চরণশীলতার কারণেই শিলাস্তরের মধ্যে কম্পনের সৃষ্টি হয়, যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত।
ঘ. উদ্দীপকে হারিস সাহেবের পরের দিন দেখা দুর্যোগটি হলো আগ্নেয়গিরির অগ্নৃু্যৎপাত।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভা উপরের দিকে ওঠে এবং বহুদূরে লাভার ঢল ছড়িয়ে পড়ে বহু নগর, গ্রাম ইত্যাদি ধ্বংস করে। এর দাহ্য ও বিষাক্ত গ্যাস উদগিরণে নিকটবর্তী এলাকার হাজার হাজার লোকের নিমেষে প্রাণহানি হয়। অনেক সময় আগ্নেয়গিরি থেকে উদগীরিত লাভা, ভস্ম ও ধূলিকণা আকাশের উপরের দিকে স্ট্রাটোমন্ডলে ওঠে যায় এবং তা দত পৃথিবীপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠে সূর্যরশ্মির তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং এর ফলে শীত বেড়ে যায়।
আবার যেসব আগ্নেয়গিরি উঁচু পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত সেসব পার্বত বরফে ঢাকা থাকলে অগ্ন্যুৎপাতের সময় তা গলে পাদদেশীয় এলাকায় বন্যার সৃষ্টি করে ও জীবনহানি ঘটে এবং বায়ুদূষণের সৃষ্টি করে।
উদ্দীপকের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপটিও অগ্ন্যুৎপাতের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ শুধু তাই নয়, এর ফলে মালভূমিও সৃষ্টি হয়। লাভার সাথে অত্যন্ত মূল্যবান খনিজ ভূপৃষ্ঠে ওঠে আসে। ফলে উক্ত এলাকা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয়।
২. ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার জাভার সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। এতে এলাকাটি প্লাবিত হয়ে অসংখ্য লোকের প্রাণহানিসহ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।
ক. আগ্নেয়গিরি কী?
খ. ভূপৃষ্ঠের ধীর পরিবর্তনকারী শক্তি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ইঙ্গিতকৃত প্রাকৃতিক দুর্যোগটি সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ইঙ্গিতকৃত দুর্যোগটির পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভূগর্ভস্থ গলিত লাভা, বাম্প, ভস্ম, গ্যাস, ধূম্র প্রভৃতি পদাথ ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা ছিদ্রপথের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে নির্গত হলে তা জমাট বেঁধে যে পদার্থ বা গিরির সৃষ্টি করে তাকে আগ্নেয়গিরি বলে।
খ. ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন সৃষ্টিকারী শক্তিসমূহের মধ্যে ধীর পরিবর্তন অন্যতম। ধারিগতির শক্তিসমূহের ভূমিরূপের পরিবর্তন দীর্ঘ সময় ব্যাপি সংঘটিত হয়। ধীর গতির শক্তিসমূহ প্রধানত প্রাকৃতিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্নভাবে করে। ধীরগতির শক্তিসমূহ চারটি প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় যেমন-
১. বিচূর্ণীভবন,
২. অপসারণ,
৩. নগ্নীভবন ও
৪. অবক্ষেপণ।
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত প্রাকৃতিক দুর্যোগটি হলো সুনামি। সাগর তলদেশে প্রচন্ড ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাতের ফলে কিংবা অন্যকোনো কারণে ভূআলোড়নের সৃষ্টি হলে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এ প্রবল ঢেউ উপকূলভাগে এসে তীব্র বেগে আছড়ে পড়ে। এ আছড়ে পড়া প্রবল ঢেউ-ই সুনামি। সুনামি সৃষ্টির প্রধান কারণগুলো হলো নিম্নরূপ-
সমুদ্রতলদেশের ত্রুটিপূর্ণ গতিশীলতার ফলে সৃষ্ট ভূমিকম্পের কারণে। ভূতাত্ত্বিক গতিশীলতার জন্য সমুদ্রতলে কিংবা উপকূলভাগে বিশাল ভূমিধসের কারণে। সমুদ্রতলে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণেও সুনামি হতে পারে।
মোটকথা সমুদ্রের তলদেশে বড় ধরনের ভূআলোড়ন জাতীয় ঘটনার ফলে সুনামি সংঘটিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দুর্যোগটি হলো সুনামি। সুনামির পরিবেশগত প্রভাব লক্ষণীয়।
সুনামি একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যেহেতু এটি সমুদ্রের তলদেশে উৎপত্তি হয়ে সমুদ্রের উপর বিশাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করে উপকূলে আঘাত হানে তাই এর প্রভাবে জনজীবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। নিচে এর ক্ষতির দিকগুলো উল্লেখ করা হলো।
১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত ক্রাকাটাও আগ্নেয়গিরির প্রলয়ঙ্করী বিস্ফোরণে ৪০ মিটার উঁচু সুনামি হয়। এ সুনামিতে জাভা ও সুমাত্রা দ্বীপের ৩৬ হাজার লোক প্রাণ হারায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে আলাস্কার লিটুয়া উপসাগরে ভূমিধসের ফলে সুনামি সৃষ্টি হয়। এ সুনামিতে ৩৫ মিটার উঁচু সৃষ্টি হয়। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ইন্দোনেশিয়ায় এক মহাপ্রলয়ঙ্করী সুনামির সৃষ্টি হয়। এ সুনামিতে শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই লক্ষাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ সুনামি পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া ও কেনিয়াতেও আঘাত হানে। তাছাড়া, থাইল্যান্ড, ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ এবং তামিলনাডু রাজ্যসহ ভারত ও শ্রীলঙ্কার ব্যাপক ক্ষতি হয়।
জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে এ সুনামি আঘাত হেনেছিল। এ সুনামির ফলে জাপানের পাঁচটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা বাতাস ও পানির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ সুনামিতে জাপানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এভাবে সুনামির ফলে যে ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় তার দ্বারা বায়ু, পানি, মাটি ও তেজস্ক্রিয় দূষণ সংঘটিত হয় যা ব্যাপকভাবে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
৩. প্রান্তি ঘরের মধ্যে একটি ঝাঁকুনি অনুভব করল। সে ঘরের ঝুলন্ত বস্তুগুলোকে দুলতে দেখল এবং বাইরে মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে দেখতে পেল।
ক. ভূআলোড়নের সংজ্ঞা দাও।
খ. ‘‘আবহাওয়ার তারতম্য বিচূর্ণীভবনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটির কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনাটির ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের ধরন বিশ্লেষণ কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ উত্তপ্ত ও গলিত অবস্থায় রয়েছে। এ সকল উত্তপ্ত বস্তুর মধ্যে তাপ ও চাপের পার্থক্য হলে ভূত্বকে যে আলোড়ন ঘটে তাকে ভূআলোড়ন বলে।
খ. নানা ধরনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলাসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়াকে বিচূর্ণীভবন বলে।
আবহাওয়ার তারতম্যের ফলে বিচূর্ণীভবন সংঘটিত হতে পারে। দিন-রাত্রির ও ঋতুভেদে উষ্ণতার পার্থক্যের কারণে শিলাসমূহ অসমানভাবে প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। এর ফলে বিচূর্ণীভবন ক্রিয়া সংঘটিত হয়।
আবার তুষারের দ্বারাও বিচূর্ণীভবন হয়ে থাকে। যেহেতু উষ্ণতার তারতম্য ও তুষারপাত আবহাওয়ার অংশ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি হলো ভূমিকম্প ভূঅভ্যন্তরে দ্রুত বিপুল শক্তি বিমুক্ত হওয়ায় পৃথিবীপৃষ্ঠে যে ঝাঁকুনি বা কম্পনের সৃষ্টি হয়, তাকে ভূমিকল্প বলে। নিচে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার কারণ বর্ণনা করা হলো-
ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ভূনিম্নস্থ শিলাস্তরে ভারের সামঞ্জস্য রক্ষার্থে ফাটল ও ভাজের সৃষ্টির ফলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূআলোড়নের ফলে ভূত্বকের কোনো স্থানে শিলা ধসে পড়লে বা শিলা চ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়। সমগ্র পৃথিবী ৭টি প্লেটের সমন্বয়ে। গঠিত এবং এসব প্লেট সঞ্চরণশীল। যার কারণে একটি প্লেটের সাথে অন্য প্লেটের সংঘর্ষ বা ধাক্কা লাগে এবং শিলাস্তরের মধ্যে কম্পন অনুভূত হয়। জাপানের পূর্ব পার্শ্বে একটি প্লেট থাকায় এখানে ভূমিকম্প বেশি অনুভূত হয়। মূলত প্লেটগুলোর সরণশীলতার কারণেই শিলাস্তরের মধ্যে কম্পনের সৃষ্টি হয়, যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনাটি ভূমিকম্প।
ভূমিকম্প একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার ফলে ভূমিরূপের কিছু আকস্মিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এর ফলে কিছু নতুন ভূমিরূপের সৃষ্টিও হয়। ভঙ্গিল পর্বত, স্ত্তপ পর্বত, ল্যাকোলিথ পর্বতের মতো ভূমিরূপ ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হয়। পর্বত সাধারণত খাড়া ও অতি উচ্চ হয়ে উত্থিত হয়। এদের মধ্যে আকৃতি ও গঠন অনুসারে বিভিন্ন প্রকার পর্বত দেখা যায়। হিমালয় ও রকি পর্বতের মতো ভূমিরূপ ভূমিকম্পের ফলে উত্থিত হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হওয়ায় তাদের মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নিম্নস্থান উচ্চ হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করেছে। ইরান মালভূমি, আনাতোলিয়া মালভূমি, বলিভিয়া মালভূমি এরূপে সৃষ্টি হয়েছে। মালভূমি পর্বতের তুলনায় ছোট হয়ে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে কয়েকশ মিটার পর্যন্ত মালভূমির আকৃতি অনেকটা টেবিলের মতো। অর্থাৎ এর উপরিভাগ প্রায় সমতল।
ভূমিকম্পের ফলে সমভূমির সৃষ্টি হয়। তবে এ সমভূমি ক্ষেত্রবিশেষে উঁচ বা নিচু হতে পারে। যেমন ভারতের পূর্ব উপকূলের সমভূমি একটি উন্নত সমভূমি এবং কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে তুরান নিম্নভূমি এক অবনত সমভূমি যা ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপদ্বয় বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় প্রতিটি ভূমিরূপের ধরন অনুযায়ী আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
৪. নিশুর বাড়ি সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী অববাহিকায়। সে তার সহপাঠীদের নিয়ে মধুপুর বেড়াতে এসে বুঝতে পারে যে, তার নিজ এলাকার সাথে এখানকার ভূপ্রকৃতির ভিন্নতা রয়েছে।
ক. মালভূমি কাকে বলে?
খ. ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের নিশুর নিজ এলাকার ভূপ্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতপূর্ব ভূমিরূপদ্বয়ের বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পর্বত থেকে নিচু কিন্তু সমভূমি থেকে উঁচু বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিকে মালভূমি বলে।
খ. ভূগর্ভের অভ্যন্তরের শিলার চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠে উঁচু ও নিচু অবস্থার সৃষ্টি হয়, যাকে ভঙ্গিল পর্বত বলে।
বিস্তৃত ও সুউচ্চ অনেক পর্বতের সমন্বয়ে ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়। এ পর্বতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভাঁজ। সাধারণত অভ্যন্তরের তলদেশে যেখানে একটি শিলামন্ডলের প্লেট, পার্শ্ববর্তী প্লেটের তলদেশে ঢুকে পড়ে সে বরাবর বিপুল পরিমাণ পলি এসে জমা হতে থাকে এসব পলি এক পর্যায়ে প্রবল পার্শ্বচাপের কারণে কোথাও ঊর্ধ্বভাবান সঙ্গেই নিম্নভাজের সৃষ্টি করে।
গ. উদ্দীপকে নিশুর নিজ এলাকাটি হলো সিরাজগঞ্জ যা বরেন্দ্রভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত। নিচে বরেন্দ্রভূমির ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বরেন্দ্রভূমির আয়তন ৩,৬০০ বর্গ মাইল বা ৯,২৮৮ বর্গ কিমি.। এ অঞ্চল প্লাবন সমভূমি থেকে প্রায় (৬-১৩) মিটার উঁচু হয়ে থাকে। এ অঞ্চলটি প্লাইস্টোসিন যুগের উচ্চভূমি।
সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলই পুনর্ভবা, আত্রাই ও যমুনা নদী দ্বারা চারটি অংশে বিভক্ত। এ অঞ্চলের মাটির রং লালচে অথবা হলুদ লালচে। এখানে আঁকাবাকা ছোট ছোট কয়েকটি স্রোতস্বিনী নদী রয়েছে যেগুলো গভীর খাতবিশিষ্ট যা খাড়ি নামে পরিচিত। এ অঞ্চল কৃষিকাজের জন্য বিশেষ উপযোগী। ধান, পাট, ভুট্টা, পান প্রভৃতি এ অঞ্চলের ফসল, তবে ধান হলো এ অঞ্চলের প্রধান ফসল।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ভূমিরূপদ্বয় হলো বরেন্দ্রভূমি এবং মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়। নিচে এ দুটি অলের ভূমিরূপদ্বয়ের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
উত্তরবঙ্গের পদ্মা-যমুনার দোয়াব অঞ্চলের মধ্যভাগে নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়ার জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ সুবিশাল বরেন্দ্রভূমি অবস্থিত। এর আয়তন ৯,২৮৮ বর্গকিলোমিটার এবং বঙ্গ অববাহিকায় এটি সর্ববৃহৎ প্লাইস্টোসিনকালের উচ্চভূমি। সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলই পুনর্ভবা, আত্রাই ও যমুনা নদী দ্বারা চারটি অংশে বিভক্ত। এ অঞ্চলের মাটির রং লালচে অথবা হলুদ লালচে। এখানে আঁকাবাকা ছোট ছোট কয়েকটি স্রোতস্বিনী নদী রয়েছে যেগুলো গভীর খাতবিশিষ্ট যা খাড়ি নামে পরিচিত। এ অঞ্চল কৃষিকাজের জন্য বিশেষ উপযোগী। ধান, পাট ভট্টা, পান প্রভৃতি এ অঞ্চলের ফসল, তবে ধান হলো এ অঞ্চলের প্রধান ফসল।
অন্যদিকে প্লাইস্টোসিনকালের দ্বিতীয় বৃহত্তম উঁচু ভূমি। উত্তরে পরাতন ব্রহ্মপুর নদ থেকে দক্ষিণে যমুনা নদীর পূর্ব ও বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত এ অঞ্চল বিস্তত। এ অঞ্চলটির মোট আয়তন ৪,১০৫ বর্গকিলোমিটার। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে অবস্থিত এ অঞ্চলের উত্তরাংশে মধুপুর গড় এবং গাজীপুর জেলার মধ্যে অবস্থিত এ অঞ্চলের দক্ষিণাংশ ভাওয়াল গড় নামে পরিচিত।
সুতরাং বলা যায় প্রাকৃতিক কারণেই বরেন্দ্রভূমি এবং মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়ের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
৫. নদী সৃষ্টি হয় পার্বত্য অঞ্চলে এবং তার সমাপ্তি সাগরে বা হ্রদে। পার্বত্য অঞ্চলে নদী খুবই সংকীর্ণ কিন্তু সাগরের কাছাকাছি এলাকায় বিস্তৃত, প্রশস্ত। আবার সৃষ্টির শুরুতে নদী যতটাই দুত বেগে বহমান, শেষভাগে ততটাই ম্রিয়মাণ।
ক. পাত সঞ্চালন কী?
খ. হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ কোন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে নদীর সংকীর্ণতার জন্য কী কী প্রভাবক দায়ী ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘সৃষ্টির শুরুতে নদী যতটা দ্রুত বহমান, শেষভাগে ততটাই ম্রিয়মাণ-বিশ্লেষণ কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অ্যাস্ফিনোস্ফিয়ারের উপরের ভাগ পিচ্ছিল বা তৈলাক্ত পদার্থ দ্বারা গঠিত যার উপরে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠ ধারণকারী প্লেটগুলো সদা চলমান রয়েছে। প্লেটগুলোর এ চলাচলই পাত সঞ্চালন।
খ. হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
সমুদ্রগর্ভে বহু আগ্নেয়গিরি আছে। এসব আগ্নেয়গিরির লাভা সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে তথায় পর্বতের মতো উঁচু হয়ে উঠে। এরূপ পর্বতের উঁচু অংশ পানির উপর জেগে উঠে দ্বীপের সৃষ্টি হয় যা অগ্ন্যুৎপাতজনিত দ্বীপ নামে পরিচিত। পৃথিবীর মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরেই অধিক অগ্ন্যুৎপাতজাত দ্বীপ দেখা যায়। এ মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ বৃহত্তম অগ্ন্যুৎপাতজাত দ্বীপ।
গ. উদ্দীপকে নদীর সংকীর্ণতার জন্য পার্বত্য ভূমিরূপ এবং উৎপত্তিস্থলে নদীর কার্যই প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
পার্বত্য অবস্থা নদীর গতির প্রাথমিক পর্যায়। উৎসস্থলে নদীতে পানির পরিমাণ ক্রমান্বয়েবৃদ্ধিপ্রাপ্ত এবং তার চলার পথ বন্ধুর ভূপ্রকৃতির মধ্য দিয়ে প্রবল গতিসম্পন্ন। এ সমস্ত প্রভাবক নদীকে পার্বত্য অবস্থায় সংকীর্ণ করে।
উৎস হতে মোহনায়পতিত হওয়া পর্যন্ত নদীর গতিপথকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। তন্মধ্যে পার্বত্য অবস্থা বা ঊর্ধ্বগতি একটি। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিভাগ খুব ঢালু ও উঁচু-নিচু হয়। সেজন্য নদী উচ্চ স্থান হতে খাড়া পর্বতগাত্র বেয়ে প্রচন্ড গতিতে নেমে আসে। প্রবল স্রোতের আঘাতে পর্বতগাত্রের পার্শ্বভাগের চেয়ে নিম্নভাগ বেশি দূরীভূত হতে থাকে। পার্বত্য প্রবাহে নদী স্থলভাগকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়িত অংশ পরিবহন করে। ফলশ্রুতিতে এ অঞ্চলের নদীগুলোর কিছুটা সংকীর্ণতা পরিলক্ষিত হয়। মূলত পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকাগুলো খুবই কঠিন প্রকৃতির। তন্মধ্যে নদীর পার্শ্ববর্তী শিলাগুলো শেল দ্বারা। গঠিত। ফলে এগুলো সহজে ক্ষয়ীভূত হতে পারে না। অপরদিকে পার্বত্য নদীর নিম্নভাগের শিলাগুলো কঠিন প্রকৃতির। যার ফলে প্রচন্ড স্রোতে উক্ত শিলাগুলো দূরীভূত করে দূরবর্তী অঞ্চলে নিয়ে যায়। এ কারণে দেখা যায় পার্বত্য অঞ্চলে পার্শ্ব ক্ষয় না হয়ে নিম্নভাগ দূরীভূত হয় এবং এর ফলে পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলোর মধ্যে কিছুটা সংকীর্ণতা পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. ‘‘সৃষ্টির শুরুতে নদী যতটা দ্রুত বহমান, শেষভাগ ততটাই ম্রিয়মাণ। আলোচ্য উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হলো-
উৎস হতে মোহনা পর্যন্ত নদীর গতিপথকে পার্বত্য-অবস্থা বা উর্ধ্বগতি, সমভূমি অবস্থা বা মধ্যগতি এবং বদ্বীপ অবস্থা বা নিম্নখাত এ তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
পার্বত্য অবস্থায় ভূমি অনেক বেশি ঢাল ও উঁচু-নিচু হয়। সেজন্য এই অঞ্চলে নদীর গতিবেগ থাকে সবচেয়ে বেশি। কারণ এ অবস্থায় নদী ই উপত্যকার পার্শ্বভাগের শিলা অনেক বেশি কঠিন যা ক্ষয়ীভূত হতে পারে না। যার ফলে নদী নিম্নভাগে ক্ষয় করে সামনের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে দেখা যায় নদীর গতিপথের এ অবস্থায় নদীর গতিবেগ থাকে সবচেয়ে বেশি। এরপর নদী প্রবাহিত হয় সমভূমির দিকে। এ অবস্থায় নদীর নিম্নভাগের ক্ষয়ের চেয়ে পার্শ্বভাগ ক্ষয় হয়ে নদী অনেক বেশি প্রশস্ত ও বিস্তৃতি লাভ করে। কারণ এ অবস্থায় ভূমি পাহাড়ি অঞ্চলের মতো ঢালু না হওয়ায় নদীর গতিবেগ পূর্বের তুলনায় কম থাকে। নদীর গতিপথের তৃতীয় পর্যায় হচ্ছে বদ্বীপ অবস্থা বা নিম্নখাত অবস্থা। সমভূমি অবস্থায় নদীর সাথে বিভিন্ন নুড়ি, পাথর, কর্দম, বালি প্রভৃতি থাকায় এগুলো বাহিত হয়ে আরও সামনের দিকে বদ্বীপ অবস্থায় নিয়ে আসে এবং কিছু কিছু নুড়ি, বালি ও কর্দম নিচের দিকে জমা হতে থাকে। ফলে নদীর গতিবেগ আরও কমে যায়। এ অবস্থায় নদীর পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় খুবই কম হয়; বরং এ সময় সতি হওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ মোহনার নিকট বিভিনণ ব-দ্বীপ আকারের ভূ-ভাগের সৃষ্টি হয়। নদীর প্রাথমিক অবস্থা অর্থাৎ পাহাড়ি অঞ্চলে নদীর গতিবেগ থাকে বেশি। অর্থাৎ নদী দ্রুত বহমান। ঠিক বিপরীতভাবে দেখা যায় নদীর গতিপথের শেষ পর্যায়ে নদীর গতিবেগ থাকে খুবই মন্থর। অর্থাৎ নদী ম্রিয়মাণ। তাই বলা যায়, আলোচ্য উক্তিটি যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
৬. রিপন রাতে শুয়ে থেকে অনুভব করল তার খাট হঠাৎ কেঁপে উঠছে। অল্প সময় পর কাপা বন্ধ হয়ে গেল। পরদিন সকালে শুনল পুরনো ঢাকার একটি বিল্ডিং ধসে পড়েছে। বাবার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বললেন এটি একটি আকস্মিক পরিবর্তন।
ক. সুনামি কী?
খ. যেসব আগ্নেয়গিরি হতে বিস্ফোরণ ঘটেই চলেছে তাকে কোন জাতীয় আগ্নেয়গিরি বলে? - ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের আলোকে রিপনের খাট কেঁপে ওঠার কারণ বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের বিল্ডিং ধসে পড়ার সাথে রিপনের বাবার ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি বিশ্লেষণ কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমুদ্রের তলদেশে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সমুদ্রপৃষ্ঠে প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। এরূপ বিশাল ঢেউকে সুনামি বলে।
খ. যেসব আগ্নেয়গিরি হতে বিস্ফোরণ ঘটেই চলেছে তাকে সক্রিয় অবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে।জন্ম হতে এখন পর্যন্ত সক্রিয় অবিরাম আগ্নেয়গিরি হতে বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে। এ জাতীয় আগ্নেয়গিরির তলদেশে ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ সাধারণত বৃহদাকার হয়। যেমন-ক্যালিফোর্নিয়ার লাসেনপিক।
গ. উদ্দীপকে রিপনের খাট কেঁপে ওঠার কারণ হলো ভূমিকম্প।
ভূঅভ্যন্তরে সৃষ্ট কোনো কম্পন যখন ভূত্বককে আকস্মিকভাবে আন্দোলিত করে সাধারণত তাকেই ভূমিকম্প বলে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগে তাপ, চাপের তারতম্যের কারণে, প্লেটে প্লেটে সংঘর্ষ, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে, হিমবাহ সম্প্রপাতের কারণে ভূপৃষ্ঠের কোনো একটি স্থানে ভূকম্পন সৃষ্টি হলে তা আশেপাশের বৃহৎ একটি এলাকাব্যাপী বিস্তার লাভ করে। যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাকে ভূকেন্দ্র বলে। এ ভূকেন্দ্র থেকে উপরের দিকে ভূপৃষ্ঠের স্থানকে উপকেন্দ্র বলে। এ উপকেন্দ্র থেকে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় এর তীব্রতা ছড়িয়ে পড়ে এবং যেসব এলাকায় ছড়ি পড়ে ঐসব এলাকায় এর কম্পন সৃষ্টি হয় অর্থাৎ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। তাই উদ্দীপকের রিপন রাতে শুয়ে থেকে অনুভব করল তার খাট কেঁপে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকে বিল্ডিং ধসে পড়ার সাথে রিপনের বাবার ইঙ্গিতপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আকস্মিক পরিবর্তন যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের সংকোচন, ভূগর্ভের চাপ, তাপ প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রভাবে কখনো কখনো ভূত্বকের আকস্মিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়ে থাকে।
ভূমিকম্পের ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায় প্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীর কঠিন ভূত্বক সময়ে সময়ে ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠা। এই ভূমিকম্প মৃদুও হয় আবার মাঝে মাঝে প্রবল আকারও ধারণ করে। যখন এই ভূমিকম্প তীব্রতর আকার ধারণ করে তখন ঘরবাড়ি ধ্বংসসহ পৃথিবীর নানা ধরনের আকস্মিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়। উদ্দীপকের বিল্ডিং ধসে পড়াটিও ভূমিকম্পের ফলে সংঘটিত এক ধরনের আকস্মিক পরিবর্তন। আবার রিপনের বাবার ইঙ্গিতকত বিষয়টিও ছিল এক ধরনের আকস্মিক পরিবর্তন।
সুতরাং বলা যায় যে, উল্লিখিত কারণে ভূপৃষ্ঠের কম্পন অনুভূত হয় এবং এর ফলে উদ্দীপকে হঠাৎ বিল্ডিং ধসে পড়ার কারণে রিপনের বাবা একে আকস্মিক পরিবর্তন বা ভূমিকম্প নামে অভিহিত করেছেন।
৭. ফরাসি ভূবিজ্ঞানী লি-পিনচন ১৯৬৮ সালে বিভিন্ন তথ্যের আলো একটি মতবাদ প্রদান করেন। যেটি পৃথিবীর ভূমিরূপ ও পর্ব গঠনসংক্রান্ত মতবাদ। এ মতবাদ পর্যালোচনায় দেখা যায় এর ফলে পৃথিবীতে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হতে পারে। ফলে নতুন ভূমির উত্থান-পতন,এমনকি নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে।
ক. রিখটার স্কেল কী?
খ. নদীর কোন ধরনের ক্ষয়কার্যের ফলে ইংরেজি ‘ভি' অক্ষরের ন্যায় রূপ ধারণ করে ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন মতবাদের কথা বলা হয়েছে? মতবাদের মূল বক্তব্য বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঝাঁকুনি সৃষ্টির কারণগুলো তত্ত্বের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভূমিকম্পের শক্তি পরিমাপের জন্য যে স্কেল ব্যবহার হয় তাকে রিখটার স্কেল বলে।
খ. নদীর পানি প্রবাহ ক্ষয়কার্যের ফলে নদীর উপত্যকা অনেকটা ইংরেজি V আকৃতির হয়। নদী পর্বত থেকে প্রবলবেগে নামার সময় স্রোত বড় বড় শিলাখ- বহন করে নিম্নদিকে অগ্রসর হয়। ফলে নদীর ও পার্শ্ব ক্ষয় অপেক্ষা উলস্নম্ব ক্ষয় বেশি হয়। এভাবে ক্রমশ ক্ষয়ের ফলে নদীর উপত্যকা ইংরেজি ‘ভি' আকৃতি ধারণ করে।
গ. উদ্দীপকে পাত সঞ্চালন মতবাদের কথা বলা হয়েছে। এই মতবাদের মূল বক্তব্য হলো ভূপৃষ্ঠ ছোট-বড় কয়েকটি প্লেট বা পাত দ্বারা গঠিত। এ পাতগুলো শিলামন্ডলের নিচে অবস্থিত উত্তপ্ত এবং তরল ক্ষুদ্রমন্ডলের ওপর ভাসমান। পাতগুলোর পার্শ্বচাপের তারতম্য ঘটলে মাঝে মাঝে গতিশীল হয়ে পড়ে। এ পাতগুলোর আয়তন কয়েক হাজার বর্গমাইল হতে কয়েক কোটি বর্গমাইল পর্যন্ত হতে পারে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান অনুযায়ী ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন আয়তনের মোট ২৭টি প্লেট বা পাতের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৭টি বৃহৎ এবং ২০টি ক্ষুদ্রাকার পাত রয়েছে। নিচে ৭টি বৃহৎ পাতের উল্লেখ করা হলোা: প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত, ইউরেশিয়া পাত, অস্ট্রেলিয়া পা উত্তর আমেরিকান পাত, দক্ষিণ আমেরিকান পাত, আফ্রিকা পাত ও এন্টার্কটিকা পাত। উল্লিখিত পাতগুলো সর্বদা গতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাত সঞ্চালন মতবাদ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের নিচে পাতগুলো উত্তপ্ত ও তরল ক্ষুদ্র মন্ডলের ওপর ভাসমান থাকে। পাতগুলোর পার্শ্বচাপের তারতম্য ঘটলে মাঝে মাঝে গতিশীল হয়ে পড়ে। তাতে পৃথিবীর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে কঁকুনির সৃষ্টি হয়। এই পাত সঞ্চালন বা ঝাঁকুনির কারণ সম্পর্কে ভূবিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। ধারণা করা হয় পাতগুলো সঞ্চালনের জন্য পরিচলন স্রোত প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। ভূগভের্র উত্তপ্ত অমত্মঃস্তরে সৃষ্ট পরিচলন স্রোত ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত উত্থিত হয়। যে কারণে উষ্ণ পদার্থসমূহ উপরে উঠে আসে।
আবার ঐ স্রোত বেঁকে নিচে যাওয়ার সময় শীতল ও কঠিন শিলাস্তরকে নিমজ্জিত করে। এভাবে পাতগুলো সালিত হতে থাকে। ধাক্কা পদ্ধতিতে পাতগুলো সীমানার নিচে এসথেনোমন্ডলের পদার্থসমূহ বর্ধিত হয়ে পাত সীমানায় প্রচন্ড চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে সীমানার উভয় পাশ্বের্র পাতগুলোকে বাইরের দিকে ধাক্কা দিতে থাকে, এভাবে পাতগুলো সঞ্চালিত হয়। আকর্ষণ পদ্ধতিতে পাত সীমানার কাছে মহাসাগরীয় তলদেশ ক্রমাগত ভূমিকম্পের প্রভাবে ভূগর্ভে নিমজ্জিত হলে সীমানার পার্শ্ববর্তী পাতগুলো সীমানার দিকে সজোরে আকর্ষিত হয়। ফলে পাতগুলোর সঞ্চালন বা ঝাকুনির সৃষ্টি হয়।
৮. রাবিব উচ্চ শিক্ষার্থে আমেরিকায় গমন করে। সে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাংশে সেন্টলরেন্স নদীর দ্বারা সৃষ্ট একটি বিখ্যাত ভূমিরূপ দেখে অভিভূত হয়, যেখানে বিশাল পানিরাশি অনেক উঁচু থেকে নিচে পতিত হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে নদীর কার্যক্রম ভিন্ন। এখানে বর্ষাকালে নদী পার্শ্ববর্তী - অঞ্চল প্লাবিত করে এবং পরবর্তীতে নদী বাহিত পদার্থ দ্বারা বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি গঠন করে।
ক. পলল কোণ ও পলল পাখা কী?
খ. বিচূর্ণীভবন ও নগ্নীভবনের পার্থক্য লেখ।
গ. উদ্দীপকের আলোকে উত্তর আমেরিকার নদী দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের নদীগুলো কী ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি করছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এ ধরনের ভূমিরূপের গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পার্বত্য কোনো অঞ্চল থেকে হঠাৎ করে কোনো নদী যখন সমভূমিতে পতিত হয়, তখন শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি পাহাড়ের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণ ও হাতপাখার ন্যায় ভূখন্ডের সৃষ্টি করে। এরূপ পললভূমিকে পলল কোণ ও পলল পাখা বলে।
খ. বিচূর্ণীকরণ ও নগ্নীভবনের সাথে বৈশিষ্ট্যগত কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। শিলারাশির চূর্ণবিচূর্ণ ও বিশিস্নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়াকে বিচূর্ণীভবন বলে। বিচূর্ণীভবনের ফলে ভূত্বকের উপরিস্তরের শিলা ভেঙেচুরে শিথিল হয়ে পড়ে কিন্তু অপসারিত হয় না। অন্যদিকে, বিচূর্ণীভবনের সময় শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও বিশিস্নষ্ট হয় এবং পরে ক্ষয়ীভবনের দ্বারা এ শিলা অপসারিত হলে নিচের শিলারাশি নগ্ন হয়ে পড়ে। এরূপ কার্যকে বলা হয় নগ্নীভবন।
গ. উদ্দীপকে উত্তর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লরেন্স নদী দ্বারা সৃষ্ট বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কথা বলা হয়েছে।
ঊর্ধ্বগতি অবস্থায় নদীর পানি যদি পর্যায়ক্রমে কঠিন ও নরম শিলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাহলে নরম শিলাস্তরটিকে বেশি পরিমাণে ক্ষয় করে ফেলে। এর ফলে নরম শিলাস্তরের তুলনায় কঠিন শিলাস্তর অনেক উপরে অবস্থান অর্থাৎ কঠিন শিলাস্তর নরম শিলাস্তরের উপর অবস্থান। করে এবং পানি খাড়াভাবে নিচের দিকে পড়তে থাকে। এরূপ পানির পতনকে জলপ্রপাত বলে। আবার চ্যুতির ফলে কোনো কোনো নদী উপত্যাকার কোনো স্থান নিচে বসে গেলে অথবা উপরে উঠে গেলে তার মাধ্যমেও জলপ্রপাতের সৃষ্টি হতে পারে। উত্তর আমেরিকার সেন্ট লরেন্স নদীর বিখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত এরূপে গঠিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের নদীগুলো প্লাবন সমভূমি গঠন করেছে।
বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধির কারণে নদীর উভয়কূল প্লাবিত হলে তখন তাকে প্লাবন বা বন্যা বলে। বন্যা শেষে নদীর দুপাশের ভূমিতে খুব পুরু স্তরের কাদা, পলি দেখতে পাওয়া যায়। এভাবে অনেকদিন পলি জমতে জমতে যে বিস্তৃত সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবন সমভূমি বলে।
বাংলাদেশের প্লাবন সমভূমি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা এর ওপর নির্ভরশীল বিস্তৃত। প্লাবন, সমভূমিতে নিবিড় কৃষিকার্য সংঘটিত হয়। আর কৃষিনিভর্র অর্থনীতি দেশটির মূল বৈশিষ্ট্য। এদেশের শিল্পগুলো অধিকাংশই কৃষিনির্ভর। যেমন- পাট, চা, চিনি, বস্ত্রশিল্প। এদেশের পরিবহন ব্যবস্থা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত যাতে কৃষি ও শিল্পপণ্য সহজেই সর্বত্র সরবরাহ করা যায়। এক্ষেত্রে সমভূমির আনুকূল্যে সহজেই সড়ক এবং সমভূমিতে বিস্তৃত নদনদীর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নৌপথ গড়ে উঠেছে। নদীকেন্দ্রিক মৎস্য আহরণ ও বন্দরভিত্তিক অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও প্লাবন সমভূমি অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য। এদেশে বাজার ব্যবস্থাও সমভূমির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নদীতীরে, সড়কের ধারে গড়ে উঠেছে। ফলে প্লাবন সমভূমি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণ।
তাই বলা যায় উদ্দীপকে বাংলাদেশের নদীগুলো প্লাবন সমভূমি গঠন করেছে এবং তা অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
৯. এঞ্জেলা চাকমা তার বন্ধুর বাড়ি পদ্মার তীরে দ্বিতীয় বারের মতো বেড়াতে আসে। কিন্তু সে কিছুতেই ঠিকানা খুঁজে পায় নি। সে জানতে পারে তার বন্ধুর পরিবার অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছে, আর পূর্বের ঠিকানা এখন অথৈ জলে বিলীন। তার বুঝতে কষ্ট হয় না, কারণ এঞ্জেলার বাড়ি বান্দরবান পাহাড়ের পাদদেশে। সেখানেও তারা বর্ষাকালে যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে।
ক. বদ্বীপ কী?
খ. নদী শাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. এঞ্জেলার বন্ধুর পরিবার কেন অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছে এবং কী কী কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়?
ঘ. এঞ্জেলার পরিবার কী ধরনের ঝুঁকিতে বসবাস করে এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে মতামত দাও।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নদী মোহনায় পলি সঞ্চয়ের মাধ্যমে যে মাত্রাহীন ‘ব’ অক্ষরের ন্যায় সমভূমি গঠিত হয় তাই বদ্বীপ।
খ. নদীর ওপর মানুষ তার প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থাপনা সৃষ্টি করে। এভাবে নদীর ওপর বাঁধ বা সেতু নির্মাণকালে নদী প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থাপনা নির্মাণে নদী প্রবাহের বাধা উপেক্ষা করে নদীর স্বাভাবিক গতিকে নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাই নদী শাসন। অর্থাৎ নদী শাসন মানুষের প্রযুক্তিগত নির্মাণ ও অবকাঠামোর ফল।
গ. এঞ্জেলার বন্ধুর পরিবার নদীভাঙনের কারণে অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছে।
বাংলাদেশের বহু পরিবার প্রতিবছর নদীভাঙনের কারণে বাস্তুহারা হয়। নদীভাঙনের জন্য বহুবিধ কারণ দায়ী। যেমন-
নদীখাত অতিরিক্ত নিম্ন কিংবা পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়া এক্ষেত্রে অতিশয় খাড়া পাড় মাধ্যাকর্ষণজনিত কারণে এবং পরিপূর্ণ খাতের ক্ষেত্রে স্রোতের তোড়ে ভাঙন সৃষ্টি হয়। প্লাবনের সময়ে নদী পাড়ের মত্তিকাতে দ্রুত পানি প্রবিদ্ধ হয়ে তা আলগা হয়ে যায় এবং স্রোতের সাথে বহুদূর প্রবাহিত হয়। পাহাড়ি ঢলে নদীতীরের মৃত্তিকা সম্পৃক্ত ও আলগা হয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। নদীখাতের মধ্যে স্রোতের দিক ও বেগ পরিবর্তনের ফলে স্রোতের সম্মুখভাগে ভগ্নতট এবং অপর পাড়ে। ঢালু পতন সৃষ্টি হয়। নদীর তরঙ্গের আঘাতও ভাঙনের অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত বর্ষণের ফলে অববাহিকার পানি দ্রুত নদীখাতের দিকে ধাবিত হওয়ার সময় তীর ভাঙনের সূচনা হয়ে থাকে এবং নদী উপত্যকা থেকে অপরিকল্পিত এবং অতিমাত্রায় বালু ও পাথর উত্তোলন ভাঙনের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীতে বর্তমানে এই প্রক্রিয়ায় ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে।
ঘ. এঞ্জেলার পরিবার ভূমিধসের ঝুঁকিতে বসবাস করে।
এঞ্জেলার পরিবার বান্দরবান পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে।
বর্ষাকালে যখন প্রবল বৃষ্টিপাত হয় তখন ভূমিধসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এ সময়টিতে তারা যথেষ্ট ঝুঁকিতে থাকে।
বাংলাদেশে ভূমিধস যতটা না প্রাকৃতিক কারণে সংঘটিত হয় তার চেয়ে অনেক বেশি হয় মানবসৃষ্ট কারণে। তাই ভূমিধস রোধে মানুষকে তার অপরিণামদর্শী কর্মকান্ড থেকে সচেতন হতে হবে। এ লক্ষ্যে করণীয়-
ভবনাদি ও ভৌত কাঠামো নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ; বৃষ্টির পানির কার্যকর নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা; পাহাড়ি ঢলের বৃক্ষনিধন বন্ধ করা এবং ভূমি ব্যবহারে মৃত্তিকা ক্ষয়রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সুতরাং বলা যায়, উপরে উল্লিখিত কার্যাবলি গ্রহণ করতে পারলে ভূমিধস কিছুটা হলেও হ্রাস করা সম্ভব হবে।
১০. রহিম মিয়া একজন জেলে। গত বছর তিনি নদীভাঙনের শিকার হন। বসতভিটা হারিয়ে তিনি কাজের সন্ধানে ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা চলে আসেন।
ক. সুনামি কী?
খ. বিচূর্ণীভবন কী কী প্রক্রিয়ায় কাজ করে?
গ. রহিম মিয়ার ঢাকা চলে আসার যে কারণটি উল্লেখ করেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যাটির প্রভাব সম্পর্কে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমুদ্রের তলদেশের ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিশাল জলরাশি সরে যায় এবং সমুদ্রের পানিতে প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি করে যা সুনামি নামে পরিচিত।
খ. শিলারাশির চূর্ণবিচূর্ণ ও বিশিস্নষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়াকে বিচূর্ণীভবন বলে।
বিচূর্ণীভবনের ফলে ভূত্বকের উপরিভাগের শিলা ভেঙেচুরে শিথিল হয়ে পড়ে। ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার যে পরিবর্তন দেখা যায় প্রধানত তার ফলেই শিলাস্তর ভেঙে চুর্ণবিচূর্ণ হয়। বিচূর্ণীভবন মূলত তিনটি প্রক্রিয়ায় কাজ করে থাকে। যেমন-
১. যান্ত্রিক বা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়;
২. রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় এবং
৩. জৈবিক প্রক্রিয়ায়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রহিম মিয়ার ঢাকা চলে আসার মূল কারণ হচ্ছে ভূমিক্ষয় বা নদীভাঙন। নিচে নদীভাঙনের কারণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হলো-
বাংলাদেশে বিভিনণ কারণে নদীভাঙন হয়ে থাকে। নদীভাঙনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- জলবায়ুর পরিবর্তন, নদীর প্রবাহ পথ ও তীব্র গতিবেগ, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীগর্ভের শিলার উপাদানগত কারণ, নদীর নাব্যতা কম থাকা, তীরবর্তী অঞ্চল খাড়া ঢালবিশিষ্ট হওয়া। নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপ, রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি, বাহিত শিলার কঠিনতা, নদীগর্ভে ফাটলের উপস্থিতি এবং বৃক্ষ নিধন। এছাড়া নদীর পাড় দখলসহ বিভিন্ন প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ডের ফলেও নদী ভাঙন হয়ে থাকে।
সুতরাং বলা যায়, করিম মিয়ার এলাকায় নদীভাঙন মূলত উপরে উল্লিখিত কারণে হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে নদীভাঙন।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই বলা যায়, নদীভাঙন এদেশের জন্য একটি নিয়মিত সমস্যা। এ নদীভাঙনের ফলে ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। নদীভাঙনের ফলে বাংলাদেশের আবাসন, ফসল, গবাদিপশু, গাছপালা, সেচপ্রকল্প, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ভূমি হাস পাওয়া, বৈদ্যুতিক টাওয়ার ধ্বংস, কর্মসংস্থানের অভাব, দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের মতো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে।
নদী বিধৌত অঞ্চলের আশেপাশে যেসব এলাকা থাকে ঐসব এলাকায় মানুষ আবাসস্থল গড়ে তোলে। ভাঙন-কবলিত এলাকার ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ- বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। চাষযোগ্য ভূমি নদীগর্ভে চলে যায়। ফলে ভূমি এবং ফসল উৎপাদন অনেকাংশে হ্রাস পায়। ফলশ্রুতিতে ভূমির মালিক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এছাড়া নদী তীরবর্তী অলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে সেচ প্রকল্প ব্যাহত হয়। আবার নদীভাঙনের ফলে ঐ এলাকার লোকজনের মারাতমকভাবে কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে তারা মৌলিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খায়।
সর্বোপরি বলা যায়, নদীভাঙন বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যা। তাই অনতিবিলম্বে এর সমাধান করার জন্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সবাইকে কাজ করতে হবে।
0 Comments:
Post a Comment