HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সমাজকর্ম: প্রকৃতি ও পরিধি
বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল ও জটিল সমাজের বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের উদ্ভব। সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর সাহায্যকারী পেশা, যা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি তথা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনায়নের মাধ্যমে তাদের সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলে। সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা একাধারে একটি বিজ্ঞান ও কলা। শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজ ব্যবস্থা জটিল থেকে জটিলতর রূপ লাভ করার প্রেক্ষাপটে প্রথাগত সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক সমাজকর্মের আবির্ভাব হয়েছে।

সমাজকর্মের সংজ্ঞা
সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কৌশলনির্ভর একটি পেশাগত কর্মকান্ড ও প্রক্রিয়া, যা সামাজিক কল্যাণ (Social Betterment) আনয়নে প্রয়াস চালায়। আমেরিকার National Association of Social Workers (NASW) এমন এক প্রকাশিত সমাজকর্ম অভিধানের (১৯৯৫) সংজ্ঞানুযায়ী, “সমাজকর্ম হলো ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে সাহায্য করার এক পেশাগত কর্মকান্ড, যা তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করে এবং সামাজিক পরিবেশকে এই লক্ষ্যের উপযোগী করে গড়ে তোলে।’’

সমাজকর্ম মূলত একটি পেশাগত প্রক্রিয়া, যা মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়ন, মানবীয় শক্তি-সামর্থ্য বাড়ানো ও পুনরুদ্ধার করা এবং এক্ষেত্রে অনুকূল সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলে সাহায্যার্থীর ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতা লাভে সহায়তা করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়া ও পেশা, যা কতগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের সমস্যার টেকসই সমাধান করে এবং ব্যক্তিগত, দলীয় এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে সক্ষম করে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। 

সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হলো সমাজস্থ প্রতিটি স্তরের মানুষকে তার সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্রিয় ও সক্ষম করে গড়ে তোলা এবং অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করে সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। 
এ প্রসঙ্গে সমাজকর্ম বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি, পরিবার, দল, সংগঠন এবং সমষ্টিকে কর্মসম্পাদান, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রতিরোধ ও সম্পদ ব্যবহারে সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার উন্নয়ন, পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ এবং শক্তিশালীকরণ। সমাজকর্মের উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-
১. জনগণের সমস্যা সমাধান, উপযোজন এবং ক্ষমতার উন্নয়ন সাধন
২. সম্পদ, সেবা ও সুযোগের সাথে মানুষের সংযোগ ঘটানো
৩. কার্যকর মানবসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা
৪. সামাজিক নীতির বিকাশ ও উন্নয়ন

সমাজকর্মের পরিধি
সমাজকর্মের পরিধি বলতে সাধারণত সমাজকর্মের অনুশীলন বা প্রয়োগক্ষেত্রকে বোঝায়। সমাজকর্মের ব্যবহারিক বা প্রায়োগিকদিক নিয়েই এর পরিধি নির্ধারিত হয়। পেশা হিসেবে সমাজকর্ম মানুষকে তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকরভাবে আন্তঃক্রিয়ায় সাহায্য করে, তাই এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত।

আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি (NASW) প্রকাশিত Encyclopedia of Social Work-এ সমাজকর্মের নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে:
১. মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণ
২. বয়ষ্ক সেবা 
৩. শিশু ও পরিবার কল্যাণ সেবা
৪. সমষ্টির কল্যাণ ও মানবসেবা পরিকল্পনা
৫. অপরাধ ও কিশোর অপরাধী সংশোধন সেবা 
৬. প্রতিবন্ধী ও দৈহিক প্রতিবন্ধী সেবা 
৭. সমাজকর্ম পেশার উন্নয়নে শিক্ষা সেবা
৮. পরিবেশ এবং সামাজিক পরিকল্পনা
৯. পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা পরিকল্পনা
১০. পরিবারিক সেবা, পারিবারিক শিক্ষা, পরামর্শ
১১. স্বাস্থ্য সেবা, কমিউনিটি মানসিক স্বাস্থ্য, প্রজনন পরামর্শ, স্বাস্থ্য ও হাসপাতাল পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য)

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. নূহা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ একটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে; যার সম্মান ও মাস্টার্স উভয় শ্রেণিতে ৬০ কর্মদিবসের মাঠকর্ম রয়েছে। বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. ‘Introduction to Social Welfare’ গ্রন্থটি কার লেখা? 
খ. সমাজকর্ম একটি পদ্ধতিনির্ভর সমাধান প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা - করো। 
গ. নূহা যে বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি পাঠের আবশ্যকতা বিশ্লেষণ করো।

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘Introduction to Social Welfare’ গ্রন্থটি ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডারের লেখা।

খ. সমাজকর্ম হলো সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া। যেকোনো ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যার স্থায়ী কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের জন্য সমাজকর্ম কতগুলো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির আওতায় সমস্যা সমাধানের প্রয়াস চালায়। এতে তিনটি মৌলিক এবং তিনটি সহায়ক পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্তদের সাহায্য করা হয়। এ সব পদ্ধতির সাহায্যে সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে স্বাবলম্বী করে তোলে। এ জন্য বলা হয়, সমাজকর্ম একটি পদ্ধতিনির্ভর সমাধান প্রক্রিয়া।

গ. নূহা সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। 
সমাজের সব স্তরের মানুষের আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার বাস্তবমুখী সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব হয়েছে। তাই সাধারণভাবে একে কল্যাণধর্মী বিষয় ও পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এর বেশ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
সমাজকর্মের নির্দিষ্ট কর্ম পদ্ধতির আওতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি, বয়স লিঙ্গভেদে সবাই সেবা লাভের অধিকারী। এটি একটি বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর সেবাকর্ম। অর্থাৎ সেবাকাজ সম্পাদনে সমাজকর্মীকে অবশ্যই সমাজকর্মের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এখানে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়ের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। আবার বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমাধান এবং উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ লক্ষ্যে সমাজকর্মের কার্যক্রম প্রতিকার প্রতিরোধ ও উন্নয়ন এ তিনটি ভূমিকাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এছাড়াও প্রতিটি পেশার মতো সমাজকর্মের কিছু মূল্যবোধ ও ব্যবহারিক নীতিমালা রয়েছে। উদ্দীপকে নুহার ক্ষেত্রেও আমরা একই রকম চিত্র দেখি। সে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছে। উপরে তার পঠিত বিষয়ের বৈশিষ্ট্যগুলোই আলোচিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি অর্থাৎ সমাজকর্ম পাঠের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য।
আধুনিক শিল্প সমাজ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত জটিল ও বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। শিল্পায়ন ও শহরায়ন বিশেষ করে আধুনিকায়নের কারণে আমাদের সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যক্তি ও নলকে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাছাড়া যেকোনো দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা প্রভৃতি। সমাজকর্ম এসব কুসংস্কার ও কু-প্রথার প্রকৃতি, কারণ ও সমাধানের কৌশল নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে। আবার সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির কল্যাণে আমাদের দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের কর্মসূচিগুলো সফলভাবে পরিচালনা করতে গেলে সমাজকর্ম জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্তমানে আমাদের দেশে আর্থ-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবমুখী নীতি, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্যে যথেষ্ট সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ সব সমস্যা সমাজকর্ম জ্ঞানের আলোকে নিরসন করা সম্ভব।
উদ্দীপকের মূহা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন এক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছে; যার সম্মান ও মাস্টার্স উভয় শ্রেণিতে ৬০ কর্মদিবস মাঠকর্ম রয়েছে। এতে বোঝা যায়, নূহার বিষয়টি হলো সমাজকর্ম। আর সমাজকর্ম উপরোল্লিখিতভাবে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্য উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম পাঠের আবশ্যকতা রয়েছে।

২. কৃষক পরিবারের সন্তান আমজাদ হোসেন লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি পেয়েছিলেন। তাই জীবনের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন শহরে পরিবার নিয়ে থেকেছেন। আজ তার সন্তানরা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে অবস্থান করছে। নিজেদের প্রয়োজনেও এখন সন্তানদের কাছে পান না। সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব বেড়েছে। একই সাথে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পেশাদার পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে। 
ক. 'বিপ্লব' শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী? 
খ. সামাজিক নিরাপত্তা বলতে কী বোঝায়?
গ. আমজাদ হোসেনের পারিবারিক জীবনে যে বিশেষ বিষয়টি লক্ষণীয় তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পেশাদার পদ্ধতি সমাজের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে- বিশ্লেষণ করো।

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘বিপ্লব’ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Revolution.

খ. সামাজিক নিরাপত্তা বলতে বিপর্যয়কালীন সমস্যাগ্রস্ত মানুষ বা সম্প্রদায়ের জন্য গৃহীত আর্থিক সাহায্য কর্মসূচিকে বোঝায়। সাধারণত ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে বিভিন্ন বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। যেমন- বৃদ্ধকালীন নির্ভরশীলতা, অসুস্থতা, বেকারত্ব, দৈহিক অক্ষমতা, পেশাগত দুর্ঘটনা, মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি কারণে অসুবিধাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত আর্থিক সহায়তাভিত্তিক কার্যক্রমই হলো সামাজিক নিরাপত্তা। অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রভৃতি সামাজিক নিরাপত্তার উদাহরণ।

গ. আমজাদ হোসেনের জীবনে পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা লক্ষ করা যায়। 
সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি হলো পরিবার। এর সদস্যরা স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনে একে অপরের সাথে আবদ্ধ থাকে। মূলত পারিবারিক এই বন্ধনই যুগ যুগ ধরে পরিবার ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু যখনই এই বন্ধনে শিথিলতা আসে তখন সমাজকাঠামোতে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
উদ্দীপকে কৃষক পরিবারের সন্তান আমজাদ হোসেন লেখাপড়া করে ভালো চাকরি পেয়েছিলেন। চাকরির প্রয়োজনে তিনি গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন শহরে পরিবার নিয়ে থেকেছেন। অর্থাৎ তিনি যৌথ পরিবারের গন্ডি থেকে বেড়িয়ে একক পরিবার গঠন করেছেন। এর ফলে বাবা-মা, ভাই-বোন এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে তার আত্মিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। একক পরিবারে তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাস করেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু এক সময় জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে তার সন্তানরাও বিদেশে বসবাস করতে শুরু করে। এখন আমজাদ সাহেবের যেকোনো প্রয়োজনে তার সন্তানরা কেউ কাছে থাকতে পারে না। এ থেকে বলা যায়, আমজাদ হোসেনের জীবনে পারিবারিক বন্ধনে শিথিলতা এসেছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম পেশা সমাজের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। 
শিল্প বিপ্লব পরবর্তী যান্ত্রিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার মোকাবিলায় সমাজকর্মের কৌশল ও পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। বিশেষ করে সমাজ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা প্রভৃতিও পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে সহায়তা করে সমাজকর্ম। উদ্দীপকে তেমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়।
উদ্দীপকের আমজাদ হোসেন একসময় জীবিকার প্রয়োজনে পরিবার নিয়ে শহরে থেকেছেন। এখন তার সন্তানরাও বিদেশে থাকে। নূন্যতম প্রয়োজনের সময়ও তিনি তাদের কাছে পান না। ফলে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব বেড়েছে। আর এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব হয়েছে। মূলত শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে আমাদের সমাজব্যবস্থা প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজকর্ম পেশার পদ্ধতি ও কৌশল ব্যক্তি ও দলকে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে। যেকোনো দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হলো কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা প্রভৃতি। সমাজকর্ম পেশা এসব কুসংস্কার ও কু-প্রথার প্রকৃতি, কারণ ও সমাধানের কৌশল নিয়ে ব্যক্তি ও সমষ্টির সাথে কাজ করে। এছাড়া পেশাদার সমাজকর্মীগণ সমাজকর্মের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান করে থাকেন। এভাবে সমাজকর্ম পেশা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে।
উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম পেশা সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. রিনার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যে স্নাতক শ্রেণির ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে তাকে। তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতিও চলছে। অবশেষে এমন একটি বিষয়ে তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হয় যেটির জন্ম হয়েছে আধুনিক জটিল শিল্প সমাজের বহুমুখী সমস্যাগুলো সার্থকভাবে মোকাবিলা করার জন্য। বাস্তবতা এবং যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্য বিষয়টির কতগুলো সুনির্দিষ্ট নিজস্ব পদ্ধতি, নীতিমালা এবং মূল্যবোধও গড়ে উঠেছে।
ক. সমাজকর্ম কোন ধরনের বিজ্ঞান?
খ. সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে রিনা যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করো। 
ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। 

💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমাজকর্ম হলো সামাজিক বিজ্ঞান।

খ. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সহায়তার মাধ্যমে তাদের সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে বলে সমাজকর্মকে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বলা হয়।
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এজন্যই এটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে রিনা সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।
শিল্প বিপ্লবোত্তর আধুনিক সমাজের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানের সুসংগঠিত প্রচেষ্টার ফল হিসেবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। সমাজে বসবাসরত অসহায় দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে সমাজকর্ম সহায়তা করে। যে কারণে একে একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।। শিল্পবিপ্লব পরবর্তী জটিল সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। এসব সমস্যা মোকাবিলা, পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান ও মানুষের সুপ্ত ক্ষমতা বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্মের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একইসাথে সম্পদের অপচয় রোধ ও সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাও সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এছাড়া ব্যক্তিকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলার উদ্দেশ্যে সমাজকর্ম কাজ করে। উদ্দীপকে রিনা যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি, নীতিমালা ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে; যা সমাজকর্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মূলত আধুনিক শিল্প সমাজের বহুমুখী সমস্যা সার্থকভাবে মোকাবিলা করার জন্য এ শাখার উদ্ভব হয়েছে। তাই বলা যায়, রিনা সমাজকর্মে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে। আর উপরে আলোচিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে সমাজকর্ম কাজ করে।

ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয় অর্থাৎ সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। 
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সেবাকর্ম হিসেবে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতিমালা, মূল্যবোধের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো স্বপ্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উদ্দীপকের রিনা এমন একটি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছে যা আধুনিক জটিল শিল্প সমাজের বহুমুখী সমস্যাগুলো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতিমালা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে সমাধান করে থাকে। অর্থাৎ রিনার বিষয়টি হলো সমাজকর্ম যা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অত্যন্ত উপযোগী।
বাংলাদেশের অস্থিতিশীল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। যে কারণে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির মতো সামাজিক সমস্যা প্রতিনিয়ত দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরণ, প্রয়োজন ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্মের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ করা যায়। একইসাথে সমাজকর্মে নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক স্বনির্ভরতা অর্জনকে উৎসাহিত করা হয়। তাই বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে সমাজকর্মের নীতি, পদ্ধতি ও কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
সামগ্রিক আলোচনায় তাই বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সীমিত সম্পদের যথার্থ ব্যবহার এবং মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলতে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

৪. জনাব আলীম মানুষের সাহায্যে সর্বদা এগিয়ে আসেন। সাহায্যের সময় তিনি দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দিকের প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। 
ক. COS এর পূর্ণরূপ কী?
খ. সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা- ব্যাখ্যা করো। 
গ. জনাব আলীম সমাজকর্মের কোন বৈশিষ্ট্যটি অনুশীলন করেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জনাব আলীমের কার্যক্রম সমাজকর্মের উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. COS এর পূর্ণরূপ Charity Organization Society.

খ. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সাহায্য প্রদান করে বলে সমাজকর্মকে সাহায্যকারী পেশা বলা হয়। 
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। পেশাগত কাঠামোর মধ্যে থেকে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে এরূপ সহায়তা দিয়ে থাকে। এজন্যই এটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে পরিচিত।

গ. জনাব আলীম সর্বদা মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমে সমাজকর্মের 'সাহায্যকারী কার্যক্রম' বৈশিষ্ট্যটি অনুশীলন করেন।
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। অন্যান্য পেশার মতো সমাজকর্মও কতগুলো স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে 'সাহায্যকারী কার্যক্রম' এর অন্যতম প্রধান ও সাধারণ বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতপক্ষে সাহায্যকারী কার্যক্রম পরিচালনাই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য।
জনাব আলীমের একটি অনন্য চারিত্রি্যক বৈশিষ্ট্য হলো তিনি মানুষের সাহায্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন। মূলত সমাজকর্ম সমাজের অসুবিধাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে সাহায্য করে; যাতে তারা নিজেদের সম্পদ ও সামর্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়। এর ফলে তারা সামাজিক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থার উন্নয়ন করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে সমাজকর্মে সাহায্য বলতে আর্থিক বা নগদ কোনো কিছু প্রদান নয়, ব্যক্তি বা দলকে কর্মপ্রচেষ্টার উন্নয়নে সক্ষম করা বোঝায়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজকর্মের সাহায্যকারী কার্যক্রমের এ দিকটিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ঘ. জনাব আলীমের কার্যক্রম সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্মের সামগ্রিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। 
মানবসেবা প্রদানকারী বিভিন্ন হিসেবে সমাজকর্মে বহুমুখী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি অনুশীলন করা হয়। মূলত সমাজকর্মের লক্ষ্য হলো সমাজজীবন থেকে সকল জটিল সমস্যা দূর করে পরিকল্পিত উপায়ে কাঙি্ক্ষত ও গঠনমূলক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব আলীম সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্যের সময় দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক দিকের প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে কাজ করেন। প্রকৃতপক্ষে সমাজকর্মে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে জনাব আলীমের ভূমিকা একজন সমাজকর্মীর অনুরূপ। একজন সমাজকর্মী তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে নিজের সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির পারিপার্শ্বিক সকল বিষয় বিবেচনায় নেন। আর এভাবে পরিপূর্ণ সহায়তা প্রদানই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সাহায্যার্থীকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানে সমাজকর্ম সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজ করে। 
সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, জনাব আলীম তার কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেরই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

৫. অনেকগুলো পাঠ্য বিষয় নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ গঠিত। সব পাঠ্য বিষয়ই তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক ও সাহায্যকারী পেশা নয়। তবে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এমন একটি পঠিত বিষয় আছে যেটি তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক এবং উন্নত দেশগুলোতে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশেও বিষয়টি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সাথে সচেতনতা সৃষ্টি ও মানব সম্পদ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।
ক. ‘Industry’ শব্দটি কোন শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে? 
খ. বহুমুখী সমস্যার সমাধান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে সামাজিক অনুষদের কোন বিষয়ের ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ভূমিকা পালনের মধ্যেই কি বিষয়টি সীমাবদ্ধ? তোমার মতামত দাও। 

💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘Industry’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘Industria’ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।

খ. বহুমুখী সমস্যার সমাধান বলতে সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য সমাজের নানা ধরনের সমস্যা দূরীকরণের বিষয়কে বোঝায়। সমাজকর্ম একটি মানব উন্নয়নমূলক পেশা। সমাজের মানুষের নানা ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য এটি বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। শহর সমাজসেবা, গ্রামীণ সমাজসেবা, বিদ্যালয় সমাজকর্ম, হাসপাতাল সমাজকর্ম, মনোচিকিৎসা সমাজকর্ম, শিশুকল্যাণ প্রভৃতি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ সকল কর্মসূচি সমাজের সৃষ্ট নানা সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্যতম প্রায়োগিক শাখা সমাজকর্মের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। 
বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানে সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। মূলত সেবামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজকর্ম সমাজ এবং মানুষের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
উদ্দীপকে সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি শাখার কথা বলা হয়েছে যেটি তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক এবং উন্নত দেশগুলোতে পেশা হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশেও বিষয়টি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত তথ্য অনুসারে বিষয়টি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কাজের সাথে সাথে সচেতনতা সৃষ্টি ও মানব সম্পদ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। বিষয়টির এসকল বৈশিষ্ট্য সমাজকর্মকেই নির্দেশ করে। সমাজকর্মের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সংজ্ঞা অনুযায়ী সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর এমন একটি সাহায্যকারী পেশা যা সমাজস্থ ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে সহায়তা করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সমাজকর্মের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমাজকর্মের ভূমিকা পালনের বিষয়টির মধ্য দিয়ে সমাজকর্মের গুরুত্বের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেছে।
সমাজকর্ম একটি প্রায়োগিক সামাজিক বিজ্ঞান। এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ করে। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ করাই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে সমাজকর্ম ভূমিকা রাখে। আর এ বিষয়গুলোই উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে।
উদ্দীপকে সমাজকর্মকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে যে, এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাজের সমস্যা চিহ্নিতকরণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ, চেতনতা সৃষ্টি ও মানব সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটিল আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানে সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই সমাজকর্মের কর্মপদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা হয় এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, যেমন- দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্ব, কিশোর অপরাধ, মাদকাসক্তি প্রভৃতি মোকাবিলায় সমাজকর্ম প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে। পাশাপাশি এটি সকল স্তরের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য চাহিদাভিত্তিক সেবা কার্যক্রমও পরিচালনা করে। এর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সভা-সমিতি, আলোচনা সভা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজকর্মের উপর্যুক্ত ভূমিকাই সরলীকরণের মাধ্যমে এক বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সমাজকর্ম এ ভূমিকা পালনে ব্যাপক কর্মক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে।

৬. ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করছে যে বিষয়টি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধভিত্তিক এমন একটি পেশা যা কতগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দিতে সক্ষম। 
ক. পদ্ধতি কী?
খ. পেশা বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে ফাতেমা সামাজিক বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে ফাতেমার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির জ্ঞান সামাজিক সমস্যা সমাধানে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. পদ্ধতি হলো কোনো বিশেষ কাজ সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে সম্পাদনের সুশৃঙ্খল উপায়।

খ. পেশা বলতে জীবিকা নির্বাহের বিশেষ পন্থাকে বোঝায়, যেখানে নির্দিষ্ট বিষয় বা ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান যথাযথ দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে প্রয়োগ করতে হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ পেশায় জ্ঞান, জ্ঞান প্রয়োগের মনোবৃত্তি, দক্ষতা ও অনুশীলন এই চারটি উপাদান থাকে। পেশা সাধারণত জনকল্যাণমুখী হয়। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক স্বীকৃতি বিদ্যমান।

গ. উদ্দীপকে ফাতেমা সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত সমাজকর্ম বিষয়ে অধ্যয়ন করছে। 
সমাজকর্ম হলো সমস্যা সমাধানের আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে সমাজের মানুষের সমস্যা সমাধান করে তাদেরকে সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এটি বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে স্বীকৃত।
উদ্দীপকে ফাতেমার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির বৈশিষ্ট্য হিসেবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধভিত্তিক পেশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পেশার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, বিষয়টি সমাজকর্ম। কারণ সমাজকর্মের প্রকৃতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উক্ত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে সমাজকর্মে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে বাস্তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রও রয়েছে। আর এই ক্ষেত্রই হলো উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক সমস্যা। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে। সমাজকর্ম মূল্যবোধ ও ব্যবহারিক নীতিমালার সমন্বয় ঘটিয়ে সমাজের নানা সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর সমাধান করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সমাজকর্মকেই নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে ফাতেমা যে বিষয়ে পড়াশোনা করছে তা হলো সমাজকর্ম।
এটি সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সমস্যার কারণ উদ্ঘাটন, বিশ্লেষণ ও সমাধানের উপায় চিহ্নিত করে ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সমাজকর্মের দায়িত্ব। আর এজন্য সমাজকর্মে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। যেকোনো সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ লক্ষ্যে সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্ম তার মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান প্রদান করে থাকে। কেননা, সমাজকর্মের মূলনীতিই হলো ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সম্পদ ও অন্তর্নিহিত শক্তিকে ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা। এজন্য সমাজকর্মে গবেষণাভিত্তিক প্রায়োগিক জ্ঞান বিশেষ গুরুত্ব পায়, যা সামাজিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম বিষয়ের বৈশিষ্ট্য হিসেবেও কতকগুলো পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমাধান প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ ও নীতিমালার প্রয়োগ ঘটায়।

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. লিজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করছে যে বিষয়টি বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ভিত্তিক এমন একটি পেশা যা কতকগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দিতে সক্ষম।
ক. সমাজকর্ম কী?
খ. সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটেছে কেন?
গ. উদ্দীপকে লিজা সামাজিক বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে অধ্যয়ন করছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে লিজার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির জ্ঞান সামাজিক সমস্যা সমাধানে কীভাবে ভূমিকা রাখছে পারে? বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশা, সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ও উন্নয়নে সহায়তা করে।

খ. শিল্পবিপ্লব পরবর্তী আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। 
সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সমাজে বসবাসরত মানুষের সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক সম্পর্কের এ গতিশীল পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে মানুষ ব্যর্থ হয়। ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় নানা ধরনের অসংগতি ও সমস্যা। এসব অসংগতি দূরীকরণ এবং পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে মানুষকে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম করে তোলার জন্যই সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে লিজা সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্গত সমাজকর্ম বিষয়ে অধ্যয়ন করছে। 
সমাজকর্ম হলো সমস্যা সমাধানের আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে সমাজের মানুষের সমস্যা সমাধান করে তাদেরকে সমাজের আদর্শ ও মূল্যবোধ অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এটি বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে স্বীকৃত। 
উদ্দীপকে লিজার অধ্যয়নকৃত বিষয়টির বৈশিষ্ট্য হিসেবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা ও সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধভিত্তিক পেশার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই পেশার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, বিষয়টি সমাজকর্ম। কারণ সমাজকর্মের প্রকৃতি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উদ্ভ বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে সমাজকর্মে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে অর্জিত জ্ঞান দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে বাস্তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রও রয়েছে। আর এই ক্ষেত্রই হলো উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক সমস্যা। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে সমাজকর্ম মূল্যবোধ ও ব্যবহারিক নীতিমালার সমন্বয় ঘটিয়ে সমাজের নানা সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর সমাধান করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সমাজকর্মকেই নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে লিজা যে বিষয়ে পড়াশোনা করছে তা হলো সমাজকর্ম। 
এটি সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সমস্যার কারণ উদ্ঘাটন, বিশ্লেষণ ও সমাধানের উপায় চিহ্নিত করে ভূমিকা রাখতে পারে।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় নানা ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সামাজিক জীবনের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সমাজকর্মের দায়িত্ব। আর এজন্য সমাজকর্মে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। যেকোনো সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে। এ লক্ষ্যে সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্ম তার মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান প্রদান করে থাকে। কেননা, সমাজকর্মের মূলনীতিই হলো ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সম্পদ ও অন্তর্নিহিত শক্তিকে ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা। এজন্য সমাজকর্মে গবেষণাভিত্তিক প্রায়োগিক জ্ঞান বিশেষ গুরুত্ব পায়, যা সামাজিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সমাজকর্ম বিষয়ের বৈশিষ্ট্য হিসেবেও কতকগুলো পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমাধান প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ ও নীতিমালার প্রয়োগ ঘটায়।

৮. মি. সাইমন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তাঁর সংস্থাটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশু, মানসিক প্রতিবন্ধী, জনসংখ্যা হ্রাস ও অপরাধপ্রবণ শিশুদের উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করে। সংস্থাটি দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন, সম্পদের সদ্ব্যবহারসহ আর্থ-সামাজিক ও মনো-দৈহিক সমস্যা দূরীকরণে অবদান রেখে যাচ্ছে। 
ক. CSWE-এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. সমাজকর্মের ধারণা দাও।
গ. অনুচ্ছেদে সমাজকর্মের যেসব পরিধির উল্লেখ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে সমাজকর্মের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. CSWE-এর পূর্ণরূপ Council on Social Work Education.

খ. সমাজকর্ম বলতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশাকে বোঝায়। 
সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্ম বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। এটি সুসংগঠিত সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এর মূল লক্ষ্য সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা। সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে মানুষকে সাহায্য করে।

গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকার কর্মসূচি, স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচি, শহর সমাজসেবা কার্যক্রম, সমাজ সংস্কার ও সামাজিক আইন প্রণয়ন, সমাজ কল্যাণ কর্মসূচি গ্রহণ পরিধি নির্দেশ করা হয়েছে।
সমাজকর্মের পরিধি বলতে মূলত এর ব্যবহারিক দিকের প্রয়োগ উপযোগিতাকে বোঝায়। সমাজে সৃষ্ট সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার করতে সমাজকর্ম কাজ করে। সমাজজীবনে সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে ক্লিনিক্যাল সমাজকর্ম ও সাইকিয়াট্রিক সমাজকর্মের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা হ্রাস ও সক্ষমানব-সম্পদ সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমাজকর্ম কাজ করে। বিভিন্ন ধরণের কুপ্রথা, অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি, অপরাধ প্রবণতা, কিশোর অপরাধ দমনে সামাজিক আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সমাজকর্ম পদ্ধতির প্রয়োগ সমাজকর্মের পরিধিভূক্ত।
উদ্দীপকে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশু অধিক জনসংখ্যা, কিশোর অপরাধ প্রবণতা সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে। সামাজিক সমস্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য সমাজকর্ম বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও পরিচালনা করে। মানসিক প্রতিবন্ধী ও মনোদৈহিক সমস্যা দূরীকরণে স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাতন্ত্র কর্মসূচি সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। এছাড়া জনসংখ্যা হ্রাস, কিশোর উন্নয়ন, শিশুদের উন্নয়ন, পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করা সমাজকর্মের আওতাভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মনো-দৈহিক প্রেক্ষিতে সমস্যার সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সেবাকর্ম হিসেবে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতিমালা, মূল্যবোধের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
উদ্দীপকের মি. সাইমন একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, যেটি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান, পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক ও মনো-দৈহিক সমস্যা দূরীকরণে কাজ করে। যেটি সমাজকর্ম পেশাকে নির্দেশ করে। অস্থিতিশীল আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। যে কারণে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জনসংখ্যাস্ফীতি, বেকারত্ব, অপরাধ প্রবণতা, সন্ত্রাস ইত্যাদির মতো সামাজিক সমস্যা প্রতিনিয়ত দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের বিকল্প নেই। এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, প্রয়োজন ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজকর্মের সক্রিয় ভূমিকা লক্ষ করা যায়।
সামগ্রিক আলোচনায় তাই বলা যায়, সীমিত সম্পদের যথার্থ ব্যবহার, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং মনো-দৈহিক সমস্যার সমাধান করে মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে তাদের সক্ষম করে তুলতে সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

৯. সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মাদকাসস্তি, কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনাকাঙি্ক্ষত খুন আত্মহত্যার মতো ঘটনাও সমাজে বৃদ্ধি পেয়েছ। সকল সমস্যার সমাধানে সমাজকর্মের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
ক. উদীয়মান পেশা কোনটি?
খ. সমাজকর্মকে অনুশীলন ধর্মী পেশা বলা হয় কেন? 
গ. উদ্দীপকটি সমাজকর্মের কোনটিকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটির শেষোক্ত মন্তব্যটি তুমি কি সমর্থন কর? যৌক্তিক মতামত দাও।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. উদীয়মান পেশা হলো সমাজকর্ম।

খ. সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ সরাসরি করা হয় বলে সমাজকর্মকে অনুশীলনধর্মী পেশা বলা হয়। সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশা। বিশেষ তাত্ত্বিক জ্ঞান ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর পেশা নীতি, কৌশল ও পদ্ধতিসমূহ বাস্তবে প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উপায় অনুসন্ধান। একারণেই সমাজকর্ম অনুশীলনধর্মী পেশা হিসেবে স্বীকৃত।

গ. উদ্দীপকটি সমাজকর্মের পরিধিকে ইঙ্গিত করে। 
সমাজকর্মের পরিধি বলতে মূলত এর ব্যবহারিক দিকের প্রয়োগক্ষেত্রকে বোঝানো হয়। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের সমস্যার প্রায় সর্বদিক সমাজকর্মের পরিধির অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজ কাঠামোতে গৃহীত পরিকল্পিত ও গঠনমূলক উন্নয়ন কর্মকান্ডও সমাজকর্মের আলোচ্য বিষয়। আধুনিক সমাজকর্ম সংশোধনমূলক কর্মকান্ডের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়। এ কারণে বিভিন্ন অপরাধ সংশোধনমূলক কর্মকান্ড সমাজকর্মের পরিধির আওতাভুক্ত। এছাড়া রাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনার আওতায় পরিচালিত জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম সমাজকর্মের বৃহত্তর পরিধির অন্তর্ভুক্ত।
উদ্দীপকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা যেমন- মাদকাসস্তি, কিশোর অপরাধ ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছ। এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান সমাজকর্মের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি সমাজকর্মের পরিধিকে নির্দেশ করছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে সমাজকর্মের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
সমাজের বহুমুখী ও জটিল সমস্যার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সংশোধনে পেশাদার সমাজকর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। আর এ পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টিতে সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য।
আধুনিক সমাজের সমস্যাগুলো বহুমুখী ও জটিল প্রকৃতির। এসব সমস্যার উৎস, কারণ, প্রস্তাব ইত্যাদি সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধানে সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য। এছাড়া সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজন। সমাজকর্ম সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেয়। এক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবীয় সকল প্রকার সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য। সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যক্তি ও দলকে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে বিশেষভাবে সহায়তা করে। যে কোনো দেশের সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অসচেতনতা। সমাজকর্ম এসব কুসংস্কার ও কুপ্রথার প্রকৃতি, কারণ ও সমাধানের কৌশল নিয়ে আলোচনা করে। সুবিধাবস্থিত শ্রেণির কল্যাণে সমাজে বিভিন্ন কর্মসূচি। এ ধরনের কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনার জন্য সমাজকর্মের শিক্ষা প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, আধুনিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজকর্মের অবদান অনস্বীকার্য। তাই সমাজ ও মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সমাজকর্ম শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

১০. উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র শফিক। পঠিত বিষয়গুলো মধ্যে সমাজকর্ম বিষয় তার ভাল লাগে। কারণ সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর একটি সক্ষমকারী পেশা। বিজ্ঞান, কলা ও পেশার সমন্বয়ে সম্পদসমূহ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান করে থাকে। ব্যক্তিকে পরিবর্তন ও সামঞ্জস্যবিধান করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম করে তোলে। সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধে দিন দিন সমাজকর্মের শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা নিতে চায়। 
ক. Introduction to Social Welfare-গ্রন্থটির লেখক কে?
খ. সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী পেশা বুঝিয়ে লিখ। 
গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের কোন কোন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় বক্তব্যটিতে তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ করো। 

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. Introduction to Social Welfare-গ্রন্থটির লেখক হলেন ওয়াল্টার এ ফ্রিল্যান্ডার।

খ. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সহায়তার মাধ্যমে তাদের সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে বলে সমাজকর্মকে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বলা হয়।
সমাজকর্ম 'বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এজন্যই এটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মের যেসব বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে তা হলো- বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা, সমন্বিত রূপ, মৌলিক পদ্ধতি এবং সক্ষমকারী পেশা।
অন্যান্য পেশার মতো সমাজকর্ম পেশার বিশেষ জ্ঞানভান্ডার, নীতি মূল্যবোধ রয়েছে। এ পেশায় ব্যবহৃত সমাজকর্ম গবেষণা পদ্ধতি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এছাড়া এ পেশায় সেবাকর্ম সম্পাদনের জন্য অর্জিত জ্ঞানকে মানবকল্যাণে ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে হয়। সমাজকর্ম পেশা কলা, বিজ্ঞান ও পেশার সমন্বিত রূপ। এটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সম্পদসমূহ কাজে লাগিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করে। সমাজকর্ম তিনটি মৌলিক পদ্ধতি যথা- ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম এবং সমষ্টি সমাজকর্মের মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নয়নে কাজ করে। এছাড়া সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী পেশা। এটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সহায়তা করে যাতে তারা নিজেদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও দলকে নিজেদের কর্মপ্রচেষ্টা দিয়ে আত্মোন্নয়নে সক্ষম করে তোলা হয়।
উদ্দীপকে সমাজকর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে, সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর একটি সক্ষমকারী পেশা। বিজ্ঞান, কলা ও পেশার সমন্বয়ে নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান করে। ব্যক্তির অবস্থার পরিবর্তন ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে সক্ষম করে তোলে। উদ্দীপকের এ ধরনের বর্ণনার মধ্যে সমাজকর্মের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা, সমন্বিত রূপ, মৌলিক পদ্ধতি এবং সক্ষমকারী পেশা এ বৈশিষ্ট্যগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় উদ্দীপকে বর্ণিত শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা নিতে চায়। বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সাহায্যকারী এবং সমন্বয়ধর্মী অনুশীলনের বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত। আধুনিক সমাজের বিভিন্ন জটি মনো-সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধানের লক্ষ্যে সমাজকর্মের উদ্ভ হয়েছে। সমাজকর্ম মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত বিভিন্ন সমস্যা, তাদের উৎস, প্রকৃতি, কারণ, বিস্তৃতি, প্রভাব প্রভৃতি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিশ্লেষণ করে। পাশাপাশি মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এটি সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান দেয়। তাই সমস্যা সমাধানের বিজ্ঞানসম্মত উপায় হিসেবে সমাজকর্মের গুরুত্ব সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে জনগণকে তাদের সমস্যা, সম্পদ এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। সমাজকর্মীরা আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন, বুকলেট, ম্যাগাজিন প্রকাশ এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের দ্বারা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া সমাজের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজন সুষম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সমাজকর্ম মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যার প্রতিকার ও প্রতিরোধেও এর অবদান অনন্য। উদ্দীপকেও সমাজকর্মের এরূপ গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে।
সমাজকর্মের উল্লিখিত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণেই শফিক সমাজকর্মের উপর উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে চায়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post