HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা এবং সমাজকর্ম
নীতি শব্দটি আধুনিক বিশ্বের সমাজব্যবস্থায় কাঙ্খিত উন্নয়ন ও সমাজকর্মের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সম্পর্কিত একটি প্রত্যয়। সামগ্রিক কল্যাণের ক্ষেত্রে সামাজিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন হিসেবে সমাজসেবা কার্যক্রমের স্বরূপ, প্রকৃতি, পরিচালনা ও প্রশাসন ব্যবস্থাপনার দিকনির্দেশনা দেয় সামাজিক নীতি। সাধারণ অর্থে নীতি হলো কোনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পথনির্দেশিকা। কোনো সমাজে সুশৃঙ্খল ও অর্থবহ সমাজসেবামূলক ব্যবস্থা সামাজিক নীতি কাঠামোর আওতাতেই গড়ে ওঠে।

সমাজসেবা ছাড়াও সামাজিক নীতির আরো উল্লেখযোগ্য পরিচয়বাহী বিষয় হলো শাসনতন্ত্র ও সামাজিক আইন এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতার চুক্তিপত্র। মূলত সমাজ উন্নয়ন ও সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে যে নীতি প্রণয়ন করা হয় তাই সামাজিক নীতি। একটি সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের নীতি প্রণীত হয়ে থাকে। যেমন- শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, শিশুনীতি, জনসংখ্যানীতি, নারী উন্নয়ন নীতি, শ্রমনীতি প্রভৃতি

সামাজিক নীতির বৈশিষ্ট্য
১. সামাজিক নীতি সামাজিক উন্নয়নের পথনির্দেশক ও অনুসরণীয় আদর্শ।

২. সামাজিক নীতি সমাজসেবামূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কর্মপ্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজসেবামূলক কাজের শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা পায়।

৩. সামাজিক নীতি জনগণের মানবীয় প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে।

৪. সামাজিক নীতি সরকার কর্তৃক গৃহীত হয় এবং সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় তা বাস্তবায়িত হয়।

৫. সামাজিক নীতি সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ অনেকগুলো বিকল্প কর্মপন্থা থেকে কোনটি গ্রহণ করা হবে তা নির্ধারণ করে দেয়।

৬. সামাজিক নীতি বাঞ্ছিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয়। সুপরিকল্পিত উপায়ে সমাজের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে বাঞ্ছিত পরিবর্তন আনয়নের জন্য সামাজিক নীতি প্রণীত হয়।

৭. সামাজিক নীতি সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

৮. সামাজিক নীতি সামাজিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে। কারণ সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক সময় বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা। যেমন- কুপ্রথা, কুসংস্কার, অজ্ঞতা প্রভৃতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব বাধা দূর করতে প্রয়োজন হয় সামাজিক কার্যক্রমের। সামাজিক নীতি এর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়।

৯. সামাজিক নীতি সমাজে বসবাসরত মানুষকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করে। সামাজিক নীতি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয় যাতে মানুষ পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম হয়।

১০. সামাজিক নীতি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সামাজিক সমতা, স্থিরতা, শৃঙ্খলা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

সামাজিক নীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্য
১. সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে পথনির্দেশনা দান: স্বীকৃত মানবীয় প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক সমস্যার কার্যকর মোকাবিলায় পথনির্দেশনা দান সামাজিক নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় সামাজিক নীতি শুধু সমস্যার সমাধান দেয় না, সাথে সাথে এসব সমস্যার উদ্ভব ও প্রতিরোধেরও পথনির্দেশ দান করে।

২. কাঙ্খিত সামাজিক পরিবর্তন: সামাজিক নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সমাজের কাঙ্খিত ও পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়ন। অর্থাৎ জনগণের চাহিদা পূরণ ও সামগ্রিক কল্যাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সামাজিক কাঠামোয় পরিবর্তন সাধন। এক্ষেত্রে সামাজিক নীতি পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে জনগণকে সহায়তা করে।

৩. সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান: বিভিন্ন সামাজিক বিপর্যয়কর অবস্থা যেমন- দুর্ঘটনা, অকালমৃত্যু, বেকারত্ব, অবসর, অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অক্ষমতা থেকে রক্ষা করা সামাজিক নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য।

৪. সামাজিক সাম্য ও সমতা বিধান: সমাজে সম্পদ ও সুযোগের সুসম বণ্টনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সাম্য ও সমতা বিধান সামাজিক নীতির উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যে সামাজিক নীতি মানুষের মৌলিক স্বাধীনতায় সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সামাজিক পরিবর্তন এবং সম্পদ ও সুযোগের সুসম বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়াসী হয়।

৫. সামাজিক সম্প্রীতি স্থাপন: সামাজিক নীতি সমাজে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সঙ্গতিপূর্ণ সমাজকাঠামো বিনির্মাণে প্রচেষ্টা চালায়। এক্ষেত্রে সামাজিক নীতি সামাজিক মানুষের ব্যক্তিগত ও দলীয় আচরণ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ ব্যবস্থার যথাযথ অনুশীলনে জনসাধারণকে উৎসাহিত করে।

৬. উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্র প্রস্তুতকরণ: সামাজিক নীতির একটি মূখ্য উদ্দেশ্য হলো সামাজিক উন্নয়নের পথনির্দেশনা ও সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। সামাজিক নীতি শুধুমাত্র সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নেই সহায়তা করেনা, একইভাবে এর উদ্দেশ্য হলো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্তরায় দূর করা এবং উন্নয়নের কার্যকর সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলা।

৭. নাগরিকের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা: সামাজিক নীতির মূখ্য উদ্দেশ্য হলো নাগরিকের সামগ্রিক ও সর্বোত্তম কল্যাণমূলক সেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সাধারণত এ ধরনের সেবার মধ্যে সামাজিক বীমা, সামাজিক সাহায্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, গৃহায়ণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এসব সেবা প্রদানে সামাজিক নীতি সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশনা দান করে।
 
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. নাসরিন সুলতানা একসময় বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরেছেন ১০ বছর হলো। এলাকার জনগণের ভালোবাসায় তিনি আজ ইউনিয়নের মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু পরিবার ও বিভিন্ন মহল থেকে তিনি পুরোপুরি সমর্থন পাচ্ছেন না। অপরদিকে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারীদের দুরবস্থাও তাকে বিচলিত করে। তাই তিনি তাদেরকে নিয়ে কিছু উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা করেন।
ক. প্রেক্ষিত পরিকল্পনা কত বছর মেয়াদী? 
খ. সামাজিক নীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত শ্রেণির জন্য যে সামাজিক নীতি প্রযোজ্য তার বর্ণনা দাও।
ঘ. নাসরিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেসব সমস্যা হতে পারে তা সমাধানের উপায় বের কর।

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ১০ থেকে ২০ বছর মেয়াদী।

খ. সামাজিক নীতি হচ্ছে সেইসব নিয়ম-কানুন ও কর্মপন্থা যা কোনো সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। 
সামাজিক নীতি একটি ধারাবাহিক ও গতিশীল প্রক্রিয়া। এটি মূলত সমাজের কাঙি্ক্ষত প্রয়োজন পূরণ তথা মানুষের কল্যাণের জন্য কিছু রীতি-নীতি, নিয়ম-কানুন পদ্ধতি বা কৌশল, যা সরাসরি সরকার কর্তৃক গৃহীত হয় এবং যেখানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার প্রয়াস চালায়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত শ্রেণি তথা নারীদের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রযোজ্য।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত নারী উন্নয়ন। তাই নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিতে নারীর উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। জাতীয় জীবনের সকল স্তরে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যম হিসেবে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিক সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এতে নারীর রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কথাও বলা হয়েছে। নারী উন্নয়ন নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মানুষ হিসেবে নারীর উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা; নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতা রোধ করা। পাশপাশি নারীর সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা এবং জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের প্রতি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উদ্দীপকে নাসরিন সুলতানা সম্প্রতি ইউনিয়নের মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। সমাজের অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত নারীদের দুরবস্থা তাকে বিচলিত করে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির লক্ষ্যগুলো যথাযথ প্রয়োগে সার্বিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন সম্ভব।

ঘ. উদ্দীপকের নাসরিন সুলতানার উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে তা সমাধানের উপায় হিসেবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পরিকল্পনা একটি বুদ্ধিজাত প্রক্রিয়া। প্রত্যেকটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানামুখী জটিলতা সৃষ্টি হয়। যেমন- পরিকল্পনার অপূর্ণতা, জনগণের অংশগ্রহণের অভাব, বিশেষজ্ঞের স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত সম্পদ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
পরিকল্পনা প্রণয়নে আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর অধিক নির্ভরতার কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে জনগণকে উন্নয়ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সেই সাথে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যথাযথ সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এজন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
উদ্দীপকের নাসরিনও তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নাসরিনকে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাকে অগ্রাধিকারভিত্তিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণপূর্বক পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা করতে হবে। অভিজ্ঞ ও দক্ষ পরিকল্পনা প্রণয়নকারীর অভাব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আরেকটি বড় সমস্যা। এ জন্য তাকে পরিকল্পনা প্রণয়নে দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের নাসরিন সুলতানা তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন। এক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানে তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. 'ক' নামক রাষ্ট্রটি একটি নব্য স্বাধীন রাষ্ট্র। দেশটি পুনর্গঠনের কাজে হাত নিয়ে সরকারকে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হলো। দেশটিতে জনবসতির ঘনত্ব অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি। সাধারণ চাহিদা তো দূরের কথা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করাই দেশটির সরকারের পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠলো।
ক. বাংলাদেশে বিদ্যমান যেকোনো একটি সামাজিক নীতির নাম উল্লেখ কর। 
খ. পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়?
গ. 'ক' নামক রাষ্ট্রটিতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকার সর্বাগ্রে যে সামাজিক নীতি গ্রহণ করতে পারে তা ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উক্ত নীতির বাস্তবায়ন না ঘটলে ‘ক’ নামক রাষ্ট্রটিতে যে ধরনের বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে তা নিরূপণ কর।

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বাংলাদেশে বিদ্যমান একটি সামাজিক নীতি হলো জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১।

খ. পরিকল্পনা বলতে কোনো লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত সুশৃঙ্খল পদক্ষেপকে বোঝায়।
ব্যাপক অর্থে পরিকল্পনা বলতে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য অর্জনে সুসংহতভাবে বিস্তারিত ধারাবাহিক কার্যাবলির রূপরেখা অঙ্কন এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বাস্তবায়নযোগ্য সর্বোত্তম বিকল্পসমূহ চিহ্নিত করাকে বোঝায়। এইচ. বি. টেকারের মতে, পরিকল্পনা হলো সচেতন ও সুচিস্তিত নির্দেশনা যাতে সম্মিলিত উদ্দেশ্য অর্জনের যৌক্তিক ভিত্তি সৃষ্টি করা হয়। পরিকল্পনার ধারণা মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিকশিত হতে থাকে।

গ. 'ক' নামক রাষ্ট্রটিতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকার প্রথমে জনসংখ্যা নীতি গ্রহণ করতে পারে।
জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিবর্তন, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সরকারি সামাজিক নীতিই জনসংখ্যা নীতি। দেশের আয়তন ও সম্পদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জনসংখ্যাকে কাঙি্ক্ষত স্তরে নিয়ন্ত্রিত রাখাই এ নীতির মূল উদ্দেশ্য। দেশের জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবিলায় জনসংখ্যা নীতি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে 'ক' রাষ্ট্রটি সদ্য স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দেশটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়ে সরকার বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। দেশটির জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি। দেশের জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণেও সরকার হিমশিম খাচ্ছে। এর ফলে অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে 'ক' রাষ্ট্রের সরকারকে প্রথমেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করতে হবে। কারণ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

ঘ. 'ক' রাষ্ট্রে উক্ত নীতি অর্থাৎ জনসংখ্যা নীতির সঠিক বাস্তবায়ন না ঘটলে তা ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে বলে আমি মনে করি। 
জনসংখ্যা নীতির মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর ফলে প্রজনন হার অনেকাংশে হ্রাস পায়। এ কর্মসূচি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এ নীতির আওতায় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন স্বাস্থ্য, এইডস বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়। এর ফলে তারা এ সব বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠে। কিন্তু 'ক' রাষ্ট্রে যদি এ কর্মসূচিটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হয় তাহলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে 'ক' দেশটিতে আরো অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে। দেশটি মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা যেমন খাদ্য, বস্তু, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি পূরণে ব্যর্থ হবে। দেশটিতে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্ব, পুষ্টিহীনতা, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে দেশটি ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হবে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় 'ক' দেশটিতে জনসংখ্যা নীতির বাস্তবায়ন না ঘটলে দেশটিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

৩. বাংলাদেশে ২০১১ সালে একটি সামাজিক নীতি প্রণয়ন করা হয়। এই নীতির মূল লক্ষ্য হলো মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
ক. বাংলাদেশের সর্বশেষ শিক্ষানীতি কবে প্রণীত হয়?
খ. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের কোন সামাজিক নীতির কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মহিলাদের অধিকার রক্ষায় উক্ত সামাজিক নীতির ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বাংলাদেশের সর্বশেষ শিক্ষানীতি প্রণীত হয় ২০১০ সালে।

খ. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বলতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পাঁচ বছর মেয়াদী উন্নয়নমূলক সামাজিক পরিকল্পনাকে বোঝায়। 
সরকারিভাবে নির্দিষ্ট ৫ বছরে কী কী নীতি-কৌশল অনুসরণ করে কার্যক্রম ও পরিকল্পনা গৃহীত হবে তার সামগ্রিক রূপরেখা থাকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্যভিত্তিক নির্দেশনার আলোকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৭টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রণীত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর কথা বলা হয়েছে। 
বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশই হলো নারী। এই নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে সর্বপ্রথম নারী উন্নয়ন নীতি প্রণীত হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ ও ২০০৮ সালে এই নীতি সংশোধিত হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। এ প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সর্বশেষ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণীত হয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত ২০১১ সালের নারী উনণয়ন নীতির মূল লক্ষ্য হলো মহিলাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে এ বিষয়গুলোই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই নীতি অনুসারে সরকার জাতীয় অর্থনীতির সকল কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় ভূমিকা ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণে কাজ করছে। পাশাপাশি রাজনীতিতে অধিক হারে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং তাদের রাজনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। প্রশাসনিক কাঠামোর উচ্চ পর্যায়ে নারীর জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশ সহজ করার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন ঘটিয়ে নারী ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাই জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির মূল লক্ষ্য।

ঘ. মহিলাদের অধিকার রক্ষায় জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশই নারী। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ তে নারীদের অধিকার রক্ষার যুগোপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নারীর প্রতি সকল বেষম্য রোধ, ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ, নির্যাতন রোধে আইন প্রণয়ন, চাকরিতে কোটার সুযোগ প্রভৃতি মহিলাদের অধিকার রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিটি অত্যন্ত যুগোপযোগী। এই নীতিতে বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রীয় ও গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। নারীদের জন্য সরকার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তারা সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারছে এবং নিজেদের অধিকার আদায়ে সমর্থ হচ্ছে। তারা এখন জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। তাছাড়া নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সকল বৈষম্যের বিলোপ সাধনেও সরকারের আলোচ্য নীতি সুস্পষ্ট নির্দেশনাও প্রদান করেছে। সর্বোপরি নারীর অধিকার রক্ষায় এই নীতিটির অবদান অসামান্য। 
পরিশেষে বলা যায়, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে নারীদের অধিকার ও পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হবে।

৪. বাংলাদেশ সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানবতার বিকাশ, জনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানকারী মননশীল, যুক্তিবাদী, দেশপ্রেমিক, কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে সরকার শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, শিক্ষণ, শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনসমূহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার ফলে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সাফল্য অর্জন করেছে। 
ক. জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি কত সালে প্রণীত হয়?
খ. নগরমুখিতা নিরুৎসাহিত করা ও পরিকল্পিত নগরায়ণ বলতে কী বোঝ? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ কোন সামাজিক নীতির অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পদক্ষেপ কীভাবে যুগোপযোগী দক্ষ মানব সম্পদ উনণয়নে ভূমিকা রাখতে পারে? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামত দাও।

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি সর্বপ্রথম প্রণীত হয় ১৯৯৭ সালে এবং সর্বশেষ প্রণীত হয় ২০১১ সালে।

খ. নগরমুখিতা নিরুৎসাহিত করা ও পরিকল্পিত নগরায়ণ বাংলাদেশ জনসংখ্যা নীতি ২০১২ বাস্তবায়নের একটি মুখ্য কৌশল। 
গ্রাম থেকে শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে স্থানান্তরের প্রবণতা পরিকল্পিত নগরায়ণের অন্তরায়। এ কারণে নগরমুখিতা নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে গ্রামে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি গ্রাম ও শহর এলাকার মধ্যে জীবনমান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবধানও কমিয়ে আনতে হবে। নগরমুখিতা নিরুৎসাহিত করা ও পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য এ বিষয়গুলোর ওপরই জোর দেওয়া হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর অন্তর্ভুক্ত। 
শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের প্রধান পূর্বশর্ত। সুশিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি কখনও উন্নতি করতে পারে না। এ কারণে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও এর মান বিকাশে সর্বশেষ ২০১০ সালে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে। এর আলোকে গৃহীত সরকারের পদক্ষেপগুলোই উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়েছে।
দেশপ্রেমিক, কর্মকুশল ও সুশিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার জন্য সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে সরকার নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, শিক্ষণ, শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত এ পদক্ষেপসমূহ জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে বর্তমান শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি এমনভাবে প্রণীত হয়েছে যে এতে দেশের আর্থ-সামাজিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস, মানবিক মূল্যবোধ প্রভৃতির প্রতিফলন ঘটেছে। তাছাড়া বর্তমান শিক্ষানীতিতে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতিরও পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত কাঠামোবদ্ধ বা সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোই উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে।

ঘ. বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপগুলো দক্ষ মানব সম্পদ উনণয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। 
একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও প্রায়োগিক করার চেষ্টা করছে। ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত পদক্ষেপসমূহ থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, সরকারের দেশগঠনে অবদান রাখতে পারে এরকম শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক ও দক্ষ নাগরিক-গোষ্ঠী গড়ে তুলতে আন্তরিক। এজন্যই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে তা কাঙি্ক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের দিকটি এখানে গুরুত্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানে জোর দেওয়া হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে় তুলতে শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে় উঠছে, যারা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষভাবে অবদান রাখছে। 
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষাখাতে সরকারের চলমান পদক্ষেপসমূহ পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে দেশে মানবসম্পদের উন্নয়নের সাথে সাথে অর্থনৈতিক অবস্থাতেও আমূল পরিবর্তন আসবে।

৫. টিভিতে 'মিনা কার্টুন' দেখছিল তুতুল। সে দেখলো মিনা এবং রাজু দুই ভাই-বোনই সারাদিন পরিশ্রম করেছে। কিন্তু রাতে যখন তারা খেতে বসল তখন মিনার মা রাজুকে যে খাবার দিল মিনাকে দিল তার অর্ধেক খাবার। এই দৃশ্য দেখে মিনার পোষা টিয়া মিঠু মিনাকে রাজুর মত বেশি খাবার দিতে বলল। তখন মিনার দাদি বলল, ছেলেদের একটু বেশি খাবার বেশি পুষ্টির দরকার, কারণ তারা বেশি কাজ করে। কিন্তু টিয়া পাখি মিনার দাদির ধারণাটিকে ভেঙে দিয়ে বলল, মিনাও রাজুর থেকে কম কাজ করে না। দুজনার কাজেরই গুরুত্ব রয়েছে। 
ক. স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মেয়াদ কত বছর হয়? 
খ. বর্তমান শিক্ষানীতিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কেন? 
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ এর কোন বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরেছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকটিতে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির-২০১১ এর উদ্দেশ্যের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি মন্তব্যটি-বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মেয়াদকাল সাধারণত ১ বছর বা তার চেয়ে কম সময়ের হয়।

খ. নৈতিক মানসিকতা সৃষ্টি ও চরিত্র গঠনের উদ্দেশ্যে বর্তমান শিক্ষা নীতিতে ধর্ম ও নৈতিকতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমান শিক্ষানীতিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ হলো শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে পরিচিতি, আচরণগত উৎকর্ষ সাধন এবং চরিত্র গঠন। ধর্ম শিক্ষা যাতে কতিপয় আনুষ্ঠানিক আচার পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়, সেদিকে নজর দিয়েই ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১-এর মেয়ে শিশুর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সাধন এবং সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নতুন আইন প্রণয়নের বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরেছে। 
উদ্দীপকে দেখা যায়, কন্যা শিশু হিসেবে মিনার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তা নারীর বা কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্যকে তুলে ধরে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ তে বলা হয়েছে, পরিবারের মধ্যে এবং বাইরে কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করতে হবে এবং কন্যা শিশুর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। কন্যাশিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া কন্যা শিশুর চাহিদা যেমন- খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
উদ্দীপকের ঘটনাটি আমাদেরকে কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করার শিক্ষা দেয়। তাছাড়া রাজুর খাদ্যের চাহিদার চেয়ে মিনার চাহিদাও যে কম নয় সে ধারণাটিও আমরা উদ্দীপক থেকে লাভ করি। স্বাস্থ্যসেবা কিংবা পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা মেয়ে-ছেলে উভয়ের জন্যই সমান গুরুত্ব বহন করে। তাই সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, জাতীয় নারী নীতি-২০১১ তে কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য পরিহারের বৈশিষ্ট্যটি উদ্দীপকের ঘটনায় তুলে ধরা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটিতে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ এর উদ্দেশ্যের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। 
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ জাতির সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় জীবনের সকল স্তরে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা, সকল স্তরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা, নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা, মেয়ে শিশুর প্রতি বৈষম্য দূর করা প্রভৃতি। এছাড়াও নারীর স্বার্থবিরোধী প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করা, নারীর সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত নারীর পুনর্বাসন করা, নারীর সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করা, নারীর চাহিদা পুরণ করা, নারীর অবদানের স্বীকৃতি দান করা, গণমাধ্যমে নারী ও মেয়ে শিশুর ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা প্রভৃতি।
উদ্দীপকের ঘটনাটিতে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির ২০১১-এর উদ্দেশ্যের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। উদ্দীপকে কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের আংশিক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু নারীর প্রতি সামগ্রিক বৈষম্য দূরীকরণসহ নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নসহ আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি। যেগুলো নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১-এর অন্যতম লক্ষ্য। এ কারণে বলা যায়, উদ্দীপকে নারী উন্নয়নে নীতি ২০১১-এর উদ্দেশ্যের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি। এই উদ্দেশ্যের ক্ষুদ্র একটি অংশ প্রতিফলিত হয়েছে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় এখানে নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১-এর উদ্দেশ্যের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি।

৬. সুশান্ত রূপনগরের একজন কৃষক। জমিতে চাষাবাদের ফলে সে বছর শেষে কয়েকশত কেজি ধান, আলু আর অন্যান্য সবজি পেত। কিন্তু বর্তমানে সেই জমিটি ভরাট করতে চলেছে পরিবারের বাড়তি সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করতে সুশান্তের এ ধরনের কাজকে নিরুৎসাহিত করে এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বললেন, কৃষি জমি এভাবে নষ্ট না করে পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করো।
ক. বাংলাদেশের সর্বশেষ শিক্ষানীতি কবে প্রণীত হয়?
খ. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি জাতীয় জনসংখ্যা নীতির কোন দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যটির যৌক্তিকতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করো।

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বাংলাদেশের সর্বশেষ শিক্ষানীতি ২০১০ সালে প্রণীত হয়।

খ. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বলতে সরকার কর্তৃক গৃহীত পাঁচ বছর মেয়াদি উন্নয়নমূলক সামাজিক পরিকল্পনাকে বোঝায়।
সরকারিভাবে নির্দিষ্ট ৫ বছরে কী কী নীতি-কৌশল অনুসরণ করে কার্যক্রম ও পরিকল্পনা গৃহীত হবে তার সামগ্রিক রূপরেখা থাকে পদ্মবার্ষিক পরিকল্পনায়। সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্যভিত্তিক নির্দেশনার আলোকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়। বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৭টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি জাতীয় জনসংখ্যা নীতির প্রধান উদ্দেশ্যের দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম জনসংখ্যাধিক্য এ দেশের জন্য একটি প্রধান সমস্যা। এ কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা নীতি-২০১২-এ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের এ বিষয়টিই উদ্দীপকের ঘটনায় প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকে জনসংখ্যার বাড়তি চাপের ফলে সৃষ্ট একটি সমস্যার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কৃষক সুশান্ত তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিজমি ভরাট করে বাসস্থান নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। এ প্রেক্ষিতে এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশান্তকে পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা নীতির মূল লক্ষ্যও এটি। জনসংখ্যা নীতিতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার ৭২% এ উন্নীত করে মোট প্রজনন হার ২.১ এ হ্রাস করা এবং ২০১৫ সালের মধ্যে নিট প্রজনন হার ১ (NRR=1) অর্জনের কথা বলা হয়েছে। এজন্য পরিবার পরিকল্পনাসহ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে। আর এ সকল লক্ষ্যমাত্রা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সাথেই সংশ্লিষ্ট। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে জাতীয় জনসংখ্যা নীতির লক্ষ্যমাত্রারই ইঙ্গিত রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় যথার্থ।
জনসংখ্যাধিক্য বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক সমস্যা। আদমশুমারি ২০১১ অনুযায়ী আয়তনে ছোট এই দেশটির জনসংখ্যার বর্তমান ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০৭৭ জন। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর কারণে নানাবিধ সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে এই সমস্যার সমাধানই বর্তমানে আমাদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।
উদ্দীপকে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তিনি এ সত্য অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, পরিবারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে সুশান্তের মতো কৃষকেরা আরও বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হবে। প্রকৃতপক্ষে ইতোমধ্যেই অনেক পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে কৃষকেরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের জীবনযাত্রার মান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। শুধু কৃষকেরা নয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিনিয়ত এর কুফল ভোগ করছে। এ কারণেই বাংলাদেশের জনসংখ্যা নীতিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সুনির্দিষ্ট বিধান ও সুপারিশ সন্নিবেশিত করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ বিষয়টিই বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত।

HSC-Social-Work-1st-Paper-Srijonshil-Question-Answer-

৭. জনাব শফিক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপসচিব পদে কর্মরত। তার দায়িত্ব সামাজিক নীতি প্রণয়নে মানুষের চাহিদাগুলো চিহ্নিত করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে উপকমিটি গঠনপূর্বক খসড়া নীতি প্রণয়ন যা পরবর্তী সময় চূড়ান্ত নীতিতে রূপ নেয়। আবার নীতি বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ যেমন- রাজনৈতিক প্রভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, দক্ষ কর্মীর অভাব, অর্থ বরাদ্দের অভাব ও ঘন ঘন প্রশাসনিক রদবদল ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন থাকাও তার অন্যতম দায়িত্ব।
ক. স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কত সালে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণীত হয়?
খ. প্রেক্ষিত পরিকল্পনার ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকে সামাজিক নীতি প্রণয়নের যেসব ধাপ উল্লেখ রয়েছে সেগুলো আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বিশ্লেষণ কর।

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণীত হয়।

খ. প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলতে ১০-২০ বছর ব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক পরিকল্পনাকে বোঝায়।
দীর্ঘ সময় ধরে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার উদাহরণ হিসেবে 'ভিশন-২০২১' এর উল্লেখ করা যায়। ২০১০-২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদি এই পরিকল্পনায় দারিদ্র্য দূরীকরণ, অসমতা হ্রাস এবং সামাজিক বঞ্চনা হতে জনগণকে রক্ষা করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কমিটি গঠন, খসড়া নীতি প্রস্তুতকরণ ও অনুমোদন এবং নীতির চূড়ান্ত অনুমোদন ধাপগুলো উল্লেখ রয়েছে।
সামাজিক নীতি প্রণয়ন একটি বহুমুখী ও জটিল প্রক্রিয়া। সামাজিক নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কতগুলো ধাপ বা পর্যায় অনুসরণ করতে হয়। এগুলো হলো নীতির অনুভূত প্রয়োজন নির্ধারণ, বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কার্যকরী কমিটি গঠন, সামাজিক জটিল অবস্থা বিশ্লেষণ, পরীক্ষামূলক খসড়া নীতি প্রণয়ন, পরীক্ষামূলক খসড়া নীতি চূড়ান্ত প্রণয়ন, জনগণের সমর্থনের আনুমাণিক ব্যবস্থাকরণ, নীতির অনুশীলন চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন ও মূল্যায়ন।
উদ্দীপকে উল্লিখিত পকিল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জনাব শফিক মানুষের চাহিদা চিহ্নিত করে নীতি প্রণয়নের ধাপগুলো অনুসরণপূর্বক চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন করেন। মূলত নীতি প্রণয়নের যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ সামাজিক নীতি প্রণয়নের প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচিত। প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবার পর নীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর আর্থিক দায়িত্ব পালনে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কমিটি নির্দিষ্ট নীতির বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে। কমিটি কর্তৃক গৃহীত মতামতের ভিত্তিতে একটি খসড়া নীতি উপস্থাপিত হয় এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তা অনুমোদন পায়। এরপর জনগণের সমর্থনের জন্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ খসড়া নীতি পরীক্ষামূলক অনুশীলনের পর ইতিবাচক হলে চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। উদ্দীপকেও উক্ত বিষয়গুলোর নির্দেশনা রয়েছে। যা সামাজিক নীতি প্রণয়নের সফলতার জন্য মেনে জরুরি।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক নীতি বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা লক্ষণীয় যা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্যতম সমস্যা।
'সামাজিক নীতি' সামাজিক সমস্যা সমাধান ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। তবে সামাজিক নীতির বাস্তবায়ন পর্যায় জটিল ও কঠিন। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, জনগণের অংশগ্রহণের অভাব, সমন্বয়হীনতা, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা, দক্ষ কর্মীর অভাবে সামাজিক নীতির বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সামাজিক নীতি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক প্রভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, অর্থ বরাদ্দের অভাব, প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে তথ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে নীতি ত্রুটিপূর্ণ হয় এবং বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি করে। নীতি বিশেষজ্ঞের অভাব দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংকট, সহাবস্থানের অভাব, দেশপ্রেমের অভাবে সামাজিক নীতির বাস্তবায়ন ব্যর্থ হয়। বৈদেশিক অর্থ নির্ভরতা সামাজিক নীতিকে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে। মাঠ পর্যায়ে দক্ষ কর্মীর অভাবে সামাজিক নীতি বাস্তবায়নে সমস্যা হয়। এছাড়া ঘন ঘন প্রশাসনিক রদবদল ও প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রিতা সমস্যা সৃষ্টি করে। উত্ত সমস্যাগুলো সামাজিক নীতির বাস্তবায়ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরে আলোচিত কারণগুলো ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে, যা সামাজিক নীতি জনগণের নিকট কার্যকরভাবে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে।

৮. জনাব শফি একজন সরকারি কর্মকর্তা। শিশুকল্যাণের স্বার্থে শিশুশ্রম বন্ধ করার উপায় নির্ণয় করার জন্য জনাব শফিকে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়। তিনি ও তার কমিটি পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োগ করে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বিবেচনাপূর্বক খসড়া ও দিক-নির্দেশনা তৈরি ও অনুমোদন করেন। পরবর্তীতে সামাজিক নীতিতে রূপান্তরিত হয়।
ক. জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি কতসালে প্রণীত হয়?
খ. সামাজিক নীতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে কোন সামাজিক নীতির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়ের ক্ষেত্রে উক্ত নীতির কার্যকারিতা মূল্যায়ন কর।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণীত হয় ২০১১ সালে।

খ. সামাজিক নীতি হলো সেসব প্রতিষ্ঠিত আইন, প্রশাসনিক বিধান ও সংস্থা পরিচালনার মূলনীতি, কার্যপ্রক্রিয়া ও কার্যসম্পাদনের উপায় যা জনগণের সামাজিক কল্যাণকে প্রভাবিত করে।
সরকার বা এর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান জনগণের সেবা ও উপার্জনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির জন্য যে কর্মপন্থা গ্রহণ করে সেগুলোকে সামাজিক নীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলোর মূল উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের সার্বিক আর্থ-সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিরসনে সামাজিক নীতিগুলো আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন- শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, জনসংখ্যানীতি ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতির প্রতিফলন ঘটেছে।
শিশুরাই আগামী প্রজন্মের কর্ণধার। শিশুর সুস্থ স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার ওপরই একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। তাই পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক সকল ক্ষেত্রে শিশুর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। এর প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদেও শিশুদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। শিশুদের সার্বিক সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন করেছে যার আলোকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধিত পরিবর্তন উন্নয়ন ক্ষেত্রে নিজ নতুন চাহিদা ও জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটির (CRC Committee) সুপারিশমালার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার শিশু নীতি সময়োপযোগী ও আধুনিক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ২০১১ সালে তা প্রণয়ন করে। শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষার্থে জাতীয় সকল উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ, কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব শফি একজন সরকারি কর্মকর্তা। শিশুকল্যাণের স্বার্থে শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য তার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটিটি প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে একটি খসড়া নীতি তৈরি করে। পরবর্তীতে খসড়া নীতিটি সামাজিক নীতিতে রূপান্তরিত হয়। উল্লিখিত নীতিটি শিশুকল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত হয়। জাতীয় শিশু নীতিও শিশুদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে জাতীয় শিশু নীতির প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় শিশু নীতির কার্যকারিতা অপরিসীম।
শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন শিশুশ্রম বন্ধ করা। জাতীয় শিশু নীতিতে শিশুশ্রম নিরসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারি কর্মকর্তা শিশু কল্যাণের জন্য শিশুশ্রম বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজন্য তার প্রতিষ্ঠানটি শিশু উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেন। এ নীতিটি শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। শিশুশ্রম বন্ধে জাতীয় শিশু নীতির পদক্ষেপসমূহ হলো- শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিশুকে যেন কোনো ধরনের অসামাজিক বা অমর্যাদাকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করা না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। কর্মস্থলে দৈনিক কর্মঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মকালীন শিশু কোনো ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে নিয়োগ কর্তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্মে বা অন্যান্য কর্মে নিয়োজিত শিশুদের প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের লেখাপড়া, থাকা খাওয়া, আনন্দ-বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমে নিয়োজিত শিশুরা যেন কোনোরূপ শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমজীবী শিশুদের দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে তাদের পিতা-মাতাকে আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। শ্রমজীবী শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য বৃত্তি ও ভাতা প্রদান করতে হবে। শিশুশ্রমের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পিতা-মাতা, সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিশুশ্রম নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় শিশু নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

৯. সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারিয়ে রবিন আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ঠাঁই খুজে না পেয়ে একটি গ্যারেজে দৈনিক ৩০ টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছে। দৈনিক ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করে সে। যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে নিজের দুবেলা আহারের সংস্থান করাও তার জন্য কষ্টের হয়ে যায়। অসুস্থতার সময়ও মালিক তাকে দিয়ে জোর করে কাজ করায় এবং কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করে না। মালিকের অসচেতনতা এবং আইনের প্রয়োগহীনতার জন্যই রবিন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 
ক. বাংলাদেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি কবে পাস হয়?
খ. সামাজিক নীতির ২টি উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ এর কোন দিকগুলোর ব্যত্যয় ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রবিনের মতো শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা কোন ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে পারি বলে তুমি মনে কর? তোমার মত উপস্থাপন করো।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বাংলাদেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ সালে পাস হয়।

খ. সামাজিক নীতির ২টি উদ্দেশ্য হলো সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করা এবং সামাজিক উন্নয়ন।
সামাজিক সমস্যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এসকল সমস্যা দূর করার জন্য সামাজিক নীতি প্রণয়ন করা হয়। উন্নয়নমুখী সামাজিক নীতির মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। কর্মসংস্থান নীতি, সম্পদের সদ্ব্যবহার নীতি, সমাজকল্যাণ নীতি এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে এ উদ্দেশ্য পূরণ হয়।

গ. উদ্দীপকে জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ এর অন্তর্গত মূলনীতি-১, বাংলাদেশ সংবিধান ও আন্তর্জাতিক সনদসমূহের আলোকে শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং মূলনীতি-২ শিশুর দারিদ্র্য বিমোচনের দিকগুলোর ব্যত্যয় ঘটেছে।
বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক সনদসমূহ অনুযায়ী শিশুর সর্বোত্তম উন্নয়নের লক্ষ্যে তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শিশুর দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে এবং শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যদি কোনো শিশুকে শ্রমে নিয়োগ দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে তার কর্মঘণ্টা ৫-৭ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, কাজের ফাঁকে বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে, তাকে দিয়ে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ও অসামাজিক কাজ করানো যাবে না, শিশু কর্মকালীন অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তার বিনিময়ে মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
উদ্দীপকে ১০ বছর বয়সী রবিনকে কর্মক্ষেত্রে দৈনিক মাত্র ৩০ টাকার বিনিময়ে ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এমনকি মালিক তাকে দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করায় এবং অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে না। তাই বলা যায়, রবিনের মালিকের মনোভাব জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ এর মূলনীতির পরিপন্থি।

ঘ. উদ্দীপকের রবিনের মতো শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারি।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুদের কল্যাণ ও অধিকার রক্ষার জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, শিশু রবিনের ক্ষেত্রে এ নীতির দুটি দিক ব্যত্যয় ঘটেছে। তাই রবিনের মতো শিশুর অধিকার রক্ষায় কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় জাতীয় পর্যায়ে আইনের মাধ্যমে শিশুদের জন্য ন্যায়পাল নিয়োগ করতে হবে, যিনি তাদের অধিকার ও কল্যাণে জাতিসংঘ সনদ বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণে ভূমিকা পালন করবে। শিশু অধিকার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটির মাধ্যমে মা ও শিশুর জন্য সর্বোত্তম উন্নয়ন ও সুরক্ষা, শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন এবং এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে। শিশুর উন্নয়ন ও অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দপ্তরসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণের মাধ্যমে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে শিশু বিষয়ক কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি উদ্যোগকে সুসংহত ও আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থাসমূহের সহযোগিতাকে উৎসাহিত করতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তরসমূহের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতীয় শিশুনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। শিশুর উন্নয়ন ও অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ এবং কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়মিত মূল্যায়ন করতে হবে। শিশু বিষয়ক তথ্যাদির প্রয়োজনীয় ম্যাপিংসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ প্রস্তুত, সংরক্ষণ এবং নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। উপরে উল্লিখিত কৌশলগুলো সঠিকভাবে অবলম্বন ও বাস্তবায়ন করা গেলেই সর্বক্ষেত্রে রবিনের মতো সকল শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

১০. বগুড়া জেলার ডিসি রফিকুল ইসলাম তার জেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি একটি সমুন্নত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু দুই বছর না হতেই তিনি বদলি হয়ে যান। তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে জনাব করিম অতীতের সব পরিকল্পনা বাতিল করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
ক. পরিকল্পনা কী?
খ. সামাজিক পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রফিকুল ইসলাম পাঁচ বছরের যে পরিকল্পনাটি গ্রহণ করেন তা সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যাতীত সম্ভব নয়। সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্মীর ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. কোনো কাজ করার পূর্বে সে সম্পর্কে যুক্তিযুক্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াই হলো পরিকল্পনা।

খ. বিভিন্ন প্রকার পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধানে সুশৃঙ্খল কর্ম পদ্ধতিকে সামাজিক পরিকল্পনা বলে।
উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সামাজিক পরিকল্পনা। সমাজকর্ম অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, সামাজিক পরিকল্পনা হলো পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক আর্থ-সামাজিক কাঠামো গঠন এবং যৌক্তিক সামাজিক পরিবর্তনের ব্যবস্থাকরণের সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সামাজিক পরিকল্পনা হলো মানুষের স্বাভাবিক ও সহজাত প্রবণতার বাইরে সামাজিক প্রবণতা ও সামাজিক দূরদর্শিতা উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত পরিকল্পনা। এরূপ দূরদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টি অর্জন ব্যতীত মানুষ সামাজিক বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমস্যা প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। অনেক সময় সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উপযুক্ত ও যোগ্য কমিটি গঠন করা সম্ভব হয় না। ফলে পরিকল্পনা প্রণয়ন কমিটির অদূরদর্শিতা এবং অক্ষমতা সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্যে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সমন্বয়হীনতা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায় জনগণের অনুভূত ও প্রয়োজনগুলো বিবেচনা না করে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জনগণ সহযোগিতা না করে বিপক্ষ শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের ঘন ঘন বদলি হওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বেশি সময় থাকতে পারেন না। যার কারণে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
উদ্দীপকে বগুড়া জেলার ডিসি রফিকুল ইসলাম জেলার উন্নয়নের লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু দুই বছর যেতেই তিনি বদলি হয়ে যান। তার স্থলাভিষিক্ত হন জনাব করিম। তিনি রফিকুল ইসলামের সব পরিকল্পনা বাতিল করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এটা মূলত বাংলাদেশে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমস্যার প্রকৃত চিত্রকে ধারণ করেছে। আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলির কারণে কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় না। আর গ্রহণ করলে সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

ঘ. সামাজিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্মের জ্ঞান থাকা আবশ্যক বিধায় উদ্দীপকে রফিকুল ইসলাম পাঁচ বছরের যে পরিকল্পনাটি গ্রহণ করেন তা সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যতীত সম্ভব নয়।
উন্নয়ন কৌশল নির্ণয়, লক্ষ্যদল চিহ্নিতকরণ এবং দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন কর্মসূচি পরিকল্পনায় সমাজকর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পেশাদার সমাজকর্মের জ্ঞান ও কৌশল প্রয়োগ করে সমাজকর্মীগণ উন্নয়ন পরিকল্পনার ফলাফল সম্পর্কে পরিকল্পনাবিদদের সচেতন করে উন্নয়নকে বাস্তবমুখী করে তুলতে সাহায্য করতে পারেন। পরিকল্পনা প্রণয়নবিদ, বাস্তবায়নবিদ এবং পরিকল্পনার লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমাজকর্মের বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে পেশাদার সমাজকর্মীগণ সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা এবং সামাজিক বৈষম্য রোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
অনেক সময় যথাযথ ধারণা, অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় শিক্ষার অভাবে জনগণ নিজের ও সমাজের অবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী তার পেশাগত জ্ঞান ও ব্যবহারিক দক্ষতা দিয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে পারেন। পেশাদার সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে সমাজকর্মীগণ জনগণকে তাদের সমস্যা, সম্পদ এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন কার্যক্রমে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, উদ্দীপকে রফিকুল ইসলাম পাঁচ বছরের যে পরিকল্পনাটি গ্রহণ করছেন তা বাস্তবায়নের জন্য সমাজকর্মের জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কেননা সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যতীত কোনো সামাজিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post