এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.
সমাজকর্ম
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬
HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
সমাজকর্মের পদ্ধতি
সমাজকর্ম বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান, মানবহিতৈষী দর্শন এবং দক্ষতানির্ভর সক্ষমকারী পেশা হিসেবে স্বীকৃত। কতগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুশীলনের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার প্রকৃতি এবং সম্পদ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সমাজকর্মের এ পদ্ধতিগুলো কখনো এককভাবে আবার কখনো সমন্বিতভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
সমাজকর্ম পদ্ধতির ধারণা
পেশাদার সমাজকর্মে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার সমাধান, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে যে সকল কর্মপন্থা বা কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।
এইচ.বি ট্রেকার এর মতে, সমাজকর্ম পদ্ধতি হলো সমাজকর্ম অনুশীলনের এমন এক সুসংঘবদ্ধ জ্ঞান, ধারণা, উপলব্ধি ও নীতির সমষ্টি যা সচেতন বা বাঞ্ছিত উপায়ে তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। আবদুল হাকিম সরকার বলেন, যেসব কর্মপন্থা বা কর্মপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা এবং নীতিমালা ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী প্রয়োগ করে থাকেন যেসব সুশৃঙ্খল কর্ম প্রক্রিয়ার সমষ্টিই সমাজকর্ম পদ্ধতি।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজকর্ম পদ্ধতি হলো সমাজকর্মের সুশৃঙ্খল, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানভিত্তিক স্বীকৃত কর্মপন্থা যা সমাজকর্ম তার পেশাগত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, সমস্যার প্রকৃতি ও ব্যাপ্তি অনুসারে উক্ত সমস্যা সমাধানে পেশাদার সমাজকর্মে যেসব সুশৃঙখল উপায় বা পন্থা প্রয়োগ করা হয় তাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলে।
সমাজকর্ম পদ্ধতির ধরন বা প্রকারভেদ
সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা, যাতে সে নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হয়। ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার প্রকৃতি, সম্পদ ও সম্পর্ক এবং পরিবেশ বিবেচনায় সমাজকর্ম পদ্ধতিকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক) মৌলিক পদ্ধতি ও
খ) সহায়ক পদ্ধতি।
মৌলিক পদ্ধতিকে আবার তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১) ব্যক্তি সমাজকর্ম
২) দল সমাজকর্ম এবং
৩) সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন।
সমাজকর্ম পদ্ধতিসমূহ
ক. মৌলিক পদ্ধতি
সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা মোকাবিলার জন্য সমাজকর্মের যেসকল পদ্ধতি প্রত্যক্ষভাবে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যে সকল পদ্ধতিসমূহকে মৌলিক পদ্ধতি বলা হয়। সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি তিন ধরনের। যথা:
১. ব্যক্তি সমাজকর্ম: ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো সমাজকর্মের এমন একটি মৌলিক পদ্ধতি যার সাহায্যে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে সহায়তা করা হয় যাতে ব্যক্তি তার সুপ্ত প্রতিভা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়।
২. দল সমাজকর্ম: সাধারণত দল সমাজকর্ম গঠনমূলক দলীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দলের সদস্যদের যথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া এ পদ্ধতি ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত সমস্যা সমাধানে দলের সদস্যদের সাহায্য করে।
৩. সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন: সমষ্টির চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমষ্টির সদস্যদের মনো-সামাজিক সমস্যার সমাধান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন বলা হয়।
খ) সহায়ক পদ্ধতি
সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিসমূহকে বাস্তবক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগ এবং কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে যে পদ্ধতি বিশেষভাবে সাহায্য করে তাই সহায়ক পদ্ধতি। সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি তিন ধরনের। যথা:
১. সমাজকল্যাণ প্রশাসন: সমাজকল্যাণ প্রশাসন এমন একটি কৌশল ও প্রক্রিয়া যা সামাজিক নীতিকে সমাজসেবায় পরিণত করে এবং বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক পরিকল্পনা ও কর্মসূচিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে থাকে।
২. সমাজকর্ম গবেষণা: সমাজকর্ম গবেষণা হলো সমাজকর্মে ব্যবহৃত জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতিসমূহর ধারণা ও সাধারণীকরণের মাধ্যমে যথার্থতা ও কার্যকারিতা নির্ণয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া।
৩. সামাজিক কার্যক্রম: সামাজিক কার্যক্রম হলো একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন অবাঞ্ছিত ও অনাকাঙ্খিত অবস্থাগুলোর সুপরিকল্পিত পরিবর্তন সাধন করে জনগণের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সামাজিক উন্নয়ন সাধনে প্রচেষ্টা চালানো হয়।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১. মি. বার্কার একজন সমাজকর্মী। তিনি তাঁর কাছে আগত সাহায্য প্রার্থীদের কখনও রেস্টুরেন্টে, কখনও তাঁর বাড়িতে, কখনও বালারে সাক্ষাত করতে বলেন। এতে সাহায্যপ্রার্থীরা বিরক্ত হয়ে সাক্ষাত করতে আসে না।
ক. সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি কয়টি?
খ. পেশাদার প্রতিনিধি বলতে কী বোঝায়?
গ. মি. বার্কারের মধ্যে ব্যক্তি সমাজব কোন উপাদানের অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মি. বার্কারের ভূমিকা পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের সহায়ক নয় বিশ্লেষণ কর।
💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি তিনটি, যথা- সমাজকর্ম প্রশাসন, সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজকর্ম গবেষণা।
খ. পেশাদার প্রতিনিধি বলতে ব্যক্তি সমাজকর্মীকে বোঝানো হয়।
পেশাদার প্রতিনিধি ব্যক্তি সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তিনি সমাজকর্মের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন এমন একজন ব্যক্তি যাকে সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান সেবাদানের জন্য নিয়োগ দেয়। ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার সফলতা মূলত পেশাদার প্রতিনিধির দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপরই নির্ভর করে।
গ. উদ্দীপকের বার্কারের মধ্যে ব্যক্তি সমাজকর্মের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ উপাদান স্থান বা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে।
স্থান বলতে এক ধরনের সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়। সেখানে সমাজকর্মীরা সাহায্যার্থীকে তার সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় বস্তুগত ও অবস্তুগত সাহায্য করেন। প্রকৃতপক্ষে যেকোনো সংগঠিত ও পেশাভিত্তিক কাজের জন্যই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা আছে। উদ্দীপকের ঘটনায় ব্যক্তি সমাজকর্মের এ উপাদানটির কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে।
উদ্দীপকের মি. বার্কার একজন পেশাদার সমাজকর্মী হলেও তিনি পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেননি। দেখা যায়, মি. বার্কার তার কাছে আসা সাহায্যাধীদের একেক সময় একেক জায়গায় সাক্ষাৎ করতে বলেন। স্বাভাবিকভাবেই সাহায্যার্থীরা এতে তার ওপর বিরক্ত হয়। মি. বার্কারের উচিত ছিল, একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে অর্থাৎ কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট স্থানে সাহায্যাধীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। স্থান বা প্রতিষ্ঠান উপাদানের মাধ্যমে সমাজকর্মের গোপনীয়তার নীতি রক্ষিত হয় এবং সমাজকর্মী ও সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে পেশাদার সম্পর্ক গড়ে় ওঠে। মি. বাকার ব্যক্তি সমাজকর্মের স্থান বা প্রতিষ্ঠান উপাদানটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ঘ. একজন সমাজকর্মী হিসেবে উদ্দীপকের মি. বার্কার পেশাদারিত্ব রক্ষা না করায় তার ভূমিকা পেশাগত সম্পর্ক (Rapport) স্থাপনে সহায়ক নয়।
ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতির কেন্দ্রেই থাকে ব্যক্তির সমস্যার সমাধানের বিষয়টি। আর এই সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো র্যাপো বা পেশাগত সম্পর্ক। এখানে সমাজকর্মী একজন পেশাদার ব্যক্তি হিসেবে তার আচরণের মাধ্যমে সাহায্যার্থীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।
উদ্দীপকের ঘটনায় দেখা যায়, মি. বাকার একজন পেশাদার সমাজকর্মী হিসেবে সাহায্যার্থীদের আস্থা বা বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। সাহায্যার্থীর সাথে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ফলপ্রসূ সাক্ষাৎকার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অথচ মি. বার্কার তার কাছে আসা সাহায্যার্থীদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে দেখা করতে বলেন। এক্ষেত্রে মি. বার্কারের কর্মকান্ডে সাহায্যার্থীরা বিরক্ত এবং তারা তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। কিন্তু তিনি যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক হতেন এবং সাহায্যার্থীদের সাথে সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতেন তাহলে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতো না। সাহায্যার্থীদের সাথে সফল পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারতেন। এক্ষেত্রে তিনি পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সার্বিক আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, সাহায্যার্থীদের সাথে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে মি. বার্কার আরও আন্তরিক হলে তার ভূমিকা পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের সহায়ক হবে।
২. ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলায় আত্মহত্যার হার অনেক বেশি বলে প্রচলিত আছে। আত্মহত্যার হার সত্যিই বেশি কিনা জানার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ডঃ জিল্লুর রহমান স্যার কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা, বহুস, লিঙ্কা, শিক্ষা, কারণ, প্রেক্ষাপট, জীবিকা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি ও সুপারিশ করা।
ক. সামাজিক কার্যক্রম কী?
খ. সমাজকর্ম বাস্তবায়নের জন্যে কেন সমাজকর্ম প্রশাসনের প্রয়োজন হয়?
গ. উদ্দীপকে ডঃ জিল্লুর রহমান স্যারের কাজটি সমাজকর্মের কোন পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য উদ্দীপকে কি কোনো ধাপ অনুসরণ করেছে? বিশ্লেষণ করো।
💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সামাজিক কার্যক্রম হলো পরিকল্পিত ও সংগঠিত উপায়ে সমাজে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।
খ. সমাজকর্ম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সমাজকর্ম প্রশাসনের প্রয়োজন হয়।
সমাজকর্ম প্রশাসন সমাজস্থ ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধান; চাহিদা ও মূল্যবোধ এবং সমাজকর্ম পেশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে সমাজকর্ম প্রশাসন ছাড়া বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন তেমন একটা গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সমাজকর্ম প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ. উদ্দীপকে ড. জিল্লুর রহমানের কাজ সামাজিক গবেষণার অন্তর্ভুক্ত যা সমাজকর্মের অন্যতম সহায়ক পদ্ধতি।
যখন কোনো সামাজিক বিষয় বা ঘটনার ওপর গবেষণা চালানো হয় তখন তাকে সামাজিক গবেষণা বলে। সামাজিক গবেষণায় বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা, আচরণ বা সমস্যা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ সামাজিক গবেষণা একটি সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। উদ্দীপকে এ ধরনের গবেষণারই ইঙ্গিত রয়েছে।
উদ্দীপকের ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় আত্মহত্যার হার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী সত্যিই বেশি কিনা সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন ড. জিল্লুর রহমান। এখানে আতমহত্যার ঘটনা একটি সামাজিক সমস্যার অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ড. জিল্লুর রহমান তার কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করছেন। তাদের উদ্দেশ্য আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা, বয়স, লিঙ্গ, শিক্ষা, কারণ, প্রেক্ষাপট, জীবিকা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা। এ কাজের ধরন ও প্রকৃতি সামাজিক গবেষণা কার্যক্রমকেই নির্দেশ করে।
ঘ. হ্যাঁ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য উদ্দীপকের ঘটনায় সামাজিক গবেষণার ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়েছে।
গবেষণা যখন কোন সামাজিক সমস্যা বা ঘটনার উপর পরিচালিত হয় তখন সেটি সামাজিক গবেষণা। এ গবেষণাকর্মের বিভিন্ন ধাপের মধ্যে রয়েছে সমস্যা নির্বাচন, অনুকল্প গঠন, নকশা বা পরিকল্পনা প্রণয়ন, তথ্য সংগৃত বিশ্লেষণ, মূল্যায়ণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রভৃতি।
উদ্দীপকেও গবেষক দল প্রথমেই একটি সমস্যা নির্বাচন করেছেন। এ সমস্যার ভিত্তিতে তাদেরকে গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে পূর্ব সিদ্ধান্ত বা অনুকল্প দাঁড় করাতে হয়েছে। এর পরবর্তী ধাপে গবেষণাটি কীভাবে সম্পাদিত হবে সে বিষয়ে একটি নকশা বা পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়েছে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ীই প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। তারপর সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ বা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। গবেষণার ফলাফল পাওয়া গেলে গবেষক তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা পেশ করেন। উদ্দীপকের গবেষক দলকে পর্যায়ক্রমে এর সকল ধাপই অনুসরণ করতে হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক গবেষণা পরিচালনার জন্য উল্লিখিত ধাপগুলো মেনে চলা অপরিহার্য।
৩. লক্ষ্মীপুর গ্রামের বেশিরভাগ জনগণ অসচেতন, অসংগঠিত ও পরিদ্র। গ্রামের একজন উচ্চশিক্ষিত যুবক আসির গ্রামের কয়েকজন যুবককে একত্রিত করে একটি সমবায় সমিতি গঠন করেন এবং সদস্যদের চাঁদা, অনুদান, সরকারি আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য নিয়ে সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ, হাঁস-মুরগি পালন, সেলাই প্রশিক্ষণ, শিক্ষা কার্যক্রম প্রভৃতি কর্মসূচি চালু করেন এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত ও স্বাবলম্বী করতে প্রচেষ্টা চালান।
ক. দল সমাজকর্মের উপাদান কয়টি?
খ. সমষ্টি সংগঠন কী?
গ. উদ্দীপকে আসির কোন সমাজকর্ম পদ্ধতির জ্ঞান প্রয়োগ করে লক্ষ্মীপুর গ্রামের উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে আসিরের অনুসৃত পদ্ধতি কীভাবে প্রয়োগ করা যায়? আলোচনা করো।
💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. দল সমাজকর্মের উপাদান ৪টি, যথা- দল; দল সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠান; দল সমাজকর্মী ও দল সমাজকর্ম প্রক্রিয়া।
খ. সমষ্টি সংগঠন হলো সামষ্টিক পর্যায়ে সমাজকর্ম অনুশীলনের পদ্ধতি। সমষ্টি সংগঠন সমাজকর্মের এমন একটি অনুশীলন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমষ্টির জনগণের প্রয়োজন ও সম্পদের মাঝে সমন্বয় করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো এলাকার জনগণ বা দলীয় প্রতিনিধির যৌথ প্রচেষ্টায় সমষ্টির সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সেগুলো পূরণের উপায় সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন। সাধারণত উন্নত দেশের কিংবা উন্নয়নশীল দেশের উন্নত সমষ্টিতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে এ প্রক্রিয়া কাজে লাগানো হয়।
গ. উদ্দীপকে সমাজকর্মী আসির দল সমাজকর্ম পদ্ধতির জ্ঞান প্রয়োগ করে লক্ষীপুর গ্রামের উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
সমাজকর্মের যে পদ্ধতি অনুসারে কোনো দলের সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা হয়, তাকে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দলের সমস্যা চিহ্নিত এবং এর কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানো হয়।
উদ্দীপকে লক্ষীপুর গ্রামের জনগণ অশিক্ষা, অসচেতনতা ও দারিদ্রের মতো সমস্যায় জর্জরিত। এ প্রেক্ষিতে আসির গ্রামের কয়েকজন যুবককে একত্রিত করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি একটি সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে সহায়তা করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা পদ্ধতির সাথে দল সমাজকর্মের মিল পাওয়া যায়। কারণ এ পদ্ধতিতে দলের সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এজন্য দল সমাজকর্মী কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। তিনি দলের সদস্যদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা নির্ধারণ করে দেন। এর ফলে সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। উদ্দীপকের আসিরের ভূমিকাও দল সমাজকর্মীরই অনুরূপ। তার কর্মকান্ডে দল সমাজকর্মেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ. বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে আসিরের অনুসৃত দল সমাজকর্ম পদ্ধতি সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, একতার অভাব ইত্যাদি সমস্যা বিদ্যমান। ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত নয়। এ প্রেক্ষিতে তাদের সমস্যার সমাধানে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি উদ্দীপকের মতো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
দল সমাজকর্ম পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও ধাপ রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে সেই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ও ধাপই অনুসরণ করতে হবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথমেই সমস্যার কারণ নির্ণয় করতে হবে। যেমন- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলো মূলত শিক্ষার অভাব ও অসচেতনতার কারণেই সৃষ্টি হয়। এরপর সমস্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর প্রভাব কী ধরনের হতে পারে তা নির্ণয় করতে হবে। যেমন- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ওপর সামাজিক সমস্যাসমূহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এভাবে সমস্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। উদ্দীপকের আসির এর কর্মপদ্ধতি একজন দল সমাজকর্মীর জন্য আদর্শ হতে পারে। সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ এবং আর্থিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে উন্নত করে তুলতে একজন সমাজকর্মী আসিরের মতোই কাজ করতে পারেন। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে দল সমাজকর্ম পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ সফলতা বয়ে আনতে পারে।
৪. বছরের মেয়ে টুপুর নাচ-গান করতে গিয়ে সঙ্গদোষে মাদকাসন্ত হয়ে পড়েন। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার পরও সে মাদক ছাড‡়নি। মাদকদ্রব্য ক্রয়ের জন্য মা-বাবাকে ও তার স্বামীকে নির্যাতন করে। তার মা-বাবা ও স্বামী তাকে একটি পেশাদার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দেয়। সেখানে একজন সমাজকর্মীর তত্ত্বাবধান ও কাউন্সিলিং থেকে টুপুর চিকিৎসা নিচ্ছে। সমাজকর্মী টুপুরকে সমাজকর্মের পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সহায়তা করছেন।
ক. সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি কয়টি?
খ. সমাজকর্ম পদ্ধতি বলতে বোঝ?
গ. টুপুরের সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মী সমাজকর্মের কোন মৌলিক পদ্ধতির জ্ঞান প্রয়োগ করছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সমাজকর্মী কোন মৌলিক পদ্ধতিটি কী প্রক্রিয়া অবলম্বন করে টুপুরের সমস্যার সমাধান দিতে পারে? বিশ্লেষণ করো।
💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি ৩টি।
খ. সমাজকর্ম পদ্ধতি (Social Work Method) বলতে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা বাস্তবক্ষেত্রে অনুশীলনের বাহনকে বোঝায়।
সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা (Helping Profession)। পেশাদার সমাজকর্মে যেসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজকর্মের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, দক্ষতা ও নীতিমালা সমাজের ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ করা হয়, সেসব সুশৃঙ্খল কর্মপ্রক্রিয়ার সমষ্টিই হলো সমাজকর্ম পদ্ধতি।
গ. টুপুরের সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মী ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতির জ্ঞান প্রয়োগ করেছেন।
ব্যক্তি সমাজকর্ম মূলত সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করে। এক্ষেত্রে তাকে এমনভাবে সহায়তা করা হয়, যাতে সে নিজ সমস্যা মোকাবিলা এবং সামাজিক ভূমিকা পালন করার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন এবং তাকে স্বাবলম্বী করে তোলার প্রয়াস চালানো হয়।
উদ্দীপকে একটি ব্যক্তিগত সমস্যার দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে। দেখা যায়, মাদকাসন্ত নুপুরকে তার এ সমস্যা থেকে বের করে আনার জন্য তাকে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। সেখানে একজন সমাজকর্মী ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাকে সহায়তা করছেন। তার প্রধান দায়িত্ব হলো সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যবহার করে টুপুরকে সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা। প্রকৃতপক্ষে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রচুর মানসিক দৃঢ়তা অর্জন করতে হয়। এজন্য সাহায্যার্থীর (Client) সঠিক নির্দেশনা, সহায়তা ও মানসিক সমর্থনের প্রয়োজন পড়ে। আর ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতির সাহায্যে সাহায্যার্থীকে অনুরূপ সহায়তা প্রদান করা হয়। এর ফলে সে সমস্যা মোকাবিলার সামর্থ্য অর্জন করে। উদ্দীপকে সমাজকর্মী ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি অনুসারেই টুপুরের সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন।
ঘ. উদ্দীপকে সমাজকর্মী ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া অবলম্বন করে টুপুরের সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া বলতে সাধারণত সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত ধারাবাহিক ও বিজ্ঞানসম্মত কার্যপ্রণালিকে বোঝায়। এই নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালি অনুসরণের মাধ্যমেই সমস্যার সঠিক সমাধানে উপনীত হওয়া সম্ভব, যা উদ্দীপকের টুপুরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
টুপুরের সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীকে প্রথমেই তার সমস্যা সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, যে প্রক্রিয়াকে মনো-সামাজিক অনুধ্যান বলে। এরপর তিনি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে টুপুরকে মানসিকভাবে সাহস ও প্রেরণা দান করবেন। এর ফলে তার মধ্যে সাময়িক স্বস্তি ফিরে আসবে। সমাজকর্মীর পরবর্তী কাজ হবে টুপুরের সমস্যার প্রকৃতি ও কারণ নির্ণয় করা। এটি নির্ণয়ের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলার উপায় নিরূপণ করা সমাজকর্মীর জন্য সহজ হবে। সমস্যা নির্ণয়ের পর তিনি টুপুরের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সমর্থনমূলক পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। তবে সমস্যা সমাধানের পর গৃহীত ব্যবস্থার সফলতা ও বিষণ্নতা অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। এর সাথে সমাজকর্মীকে টুপুরের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ বা অনুসরণ করতে হবে। সর্বশেষ ধাপ হিসেবে সমাজকর্মী টুপুরের সমস্যার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটাবেন।
সুতরাং উদ্দীপকের সমাজকর্মী সাহায্যার্থী টুপুরের জন্য উপরে আলোচিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
৫. ‘ফুল নেবেন স্যার ফুল।’ এমন সংলাপ উচ্চারণকারী অনেক শিশু-কিশোরদের ঢাকার রাস্তায় প্রতিনিয়ত দেখা যায়। এসব শিশু কিশোরদের আবার অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা ব্যবহার করছে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটনে। শিশু কল্যাণের কাজে জড়িত একটি NGO এসব ভাসমান শিশুদের উদ্ধার করে তাদেরকে সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। বেশকিছু সমাজকর্মী তাদের সংশোধনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
ক. সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি কোন ধরনের সমষ্টিতে প্রয়োগ করা হয়?
খ. গোপনীয়তা নীতির তাৎপর্য লেখো।
গ. সমাজকর্মের কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করে এসব শিশু-কিশোরদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? অন্যান্য পদ্ধতি থেকে এটি কিভাবে আলাদা? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে উক্ত পদ্ধতির প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয় বিশ্লেষণ করো।
💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি উন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর শহরাঞ্চলে প্রয়োগ করা হয়।
খ. গোপনীয়তার নীতি দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, সেবাপ্রার্থীর সমস্যা সমাধানের স্বার্থে সমস্যার সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন, তথ্য গোপন করার নিশ্চয়তা ছাড়া সার্বিক তথ্য সেবাপ্রার্থী দিতে চায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে এ নীতির গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বিতীয়ত, পেশাগত সম্পর্ক (Rapport) স্থাপনের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা জরুরি। এজেন্সি এবং সমাজকর্ম পেশার স্বার্থে সেবাপ্রার্থীর তথ্যাদি গোপন ও সংরক্ষণ করার গুরুত্ব অপরিসীম।
গ. সমাজকর্মের দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করে এসব শিশু কিশোরদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সমাজকর্মের তিনটি মৌলিক পদ্ধতি হলো ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্ম। এ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ব্যক্তি সমাজকর্ম নির্দিষ্ট ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির নিজস্ব সম্পদের ভিত্তিতে এমনভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হয় যাতে সে নিজেই নিজের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে।
আর সমষ্টি সমাজকর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে সমষ্টির জনগণের অনুভূতি চাহিদা, সম্পদ, সামর্থ্য, সমস্যা ইত্যাদি পর্যালোচনা করে সমষ্টির চাহিদা পূরণ ও উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়। অর্থাৎ জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও সন্তোষজনক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সমষ্টি সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিগুলো থেকে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি আলাদা। কেননা দল সমাজকর্ম একটি নির্দিষ্ট দলের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে দলীয় সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা সুসম্পর্ক, সংহতি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দলীয় সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ঢাকার রাস্তায় শিশু-কিশোররা ফুল বিক্রি করে আবার অনেক সময় ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তাদের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করায়। দল সমাজকর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে এসব শিশুদের সু স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর দল সমাজকর্মের সাথে অন্যান্য পদ্ধতির উপরোল্লিখিত পার্থক্য রয়েছে।
ঘ. বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে উক্ত পদ্ধতির অর্থাৎ দল সমাজকর্মের প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।
পেশাদার সমাজকর্মের অন্যতম মৌলিক পদ্ধতি হলো দল সমাজকর্ম। সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, নৈপুণ্য, পেশাগত মূল্যবোধ অনুসরণ করে দলগত পর্যায়ে সমস্যার সমাধান এবং দলীয় উন্নয়নে সেবাদান প্রক্রিয়াকে দল সমাজকর্ম বলা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা ও উন্নয়নে দলীয় প্রচেষ্টা হিসেবে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠনের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের অন্যতম বাধা হলো অদক্ষ জনশক্তি। দল সমাজকর্ম পদ্ধতিতে এ জনশক্তিকে পরিকল্পিত উপায়ে দল গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা হচ্ছে। আবার এ দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা দূরীকরণে যেসব সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি চালু আছে সেসব ক্ষেত্রে দল সমাজকর্ম প্রয়োগ করে কৃষির উন্নয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য চাষ, দুগ্ধ উৎপাদন, পশুপালন, সমবায়ের ভিত্তিতে চাষাবাদ প্রভৃতির মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অপরাধ মোকাবিলা ও অপরাধীদের পুনর্বাসনেও দল সমাজকর্ম এ দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে যেমন নারী উন্নয়ন, শিশুকল্যাণ, যুবকল্যাণ, শ্রমকল্যাপ প্রভৃতি ক্ষেত্রেও দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, অনেক শিশু-কিশোর ঢাকার রাস্তায় ফুল বিক্রি করে। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে যুক্ত করে। এসব শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সমাজকর্মীরা দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশের উপরে বর্ণিত ক্ষেত্রগুলোতে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
৬. জনাব ফারহান পড়াশোনা শেষ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা 'কেয়ার'-এ মাঠসংগঠক হিসেবে নিয়োগ পান। তার কর্ম এলাকা ঢাকার মানিকনগর বস্তি। সেখানে তিনি উপার্জনহীন গৃহিণীদের নিয়ে ১৫-২০ জনের ভিন্ন ভিন্ন দল তৈরি করেন। তাদের চহিদা, সমস্যা ও সম্পদ চিহ্নিত করে পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক কর্মসূচি নির্ধারণ ও সমস্যদের নিয়ে গৃহীত কর্মসূচি নিয়মিত মূল্যায়ন করেন।
ক. Social Diagnosis- গ্রন্থটি কার লেখা?
খ. সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতির ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকটি সমাজকর্মের কোন পদ্ধতিকে নির্দেশ করছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উক্ত পদ্ধতির যেসব উপাদানের উল্লেখ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে বিশ্লেষণ কর।
💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. Social Diagnosis গ্রন্থটির লেখক ম্যারি রিচমন্ড।
খ. সমষ্টি উন্নয়ন হলো সামষ্টিক পর্যায়ে সমাজকর্ম অনুশীলনের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।
সমাজকর্মের নীতি ও কর্মকৌশল যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সমষ্টি জীবনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে যে পদ্ধতিটি বিশেষভাবে নিয়োজিত তা হলো সমষ্টি উন্নয়ন। উন্নয়নশীল দেশসমূহ এবং উন্নত দেশের অনুন্নত এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
গ. উদ্দীপকে জনাব ফারহান দল সমাজকর্ম পদ্ধতির জ্ঞান প্রয়োগ করে মানিকনগর বস্তির উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যে পদ্ধতি অনুসারে কোনো দলের সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা হয়, তাকে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দলের সমস্যা চিহ্নিত এবং এর কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানো হয়।
উদ্দীপকে মানিকনগর বস্তি সমস্যায় জর্জরিত। এ প্রেক্ষিতে ফারহান বস্তির উপার্জনহীন ১৫-২০ জন গৃহিণীকে একত্রিত করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি এক্ষেত্রে তার অনুসরণ করা পদ্ধতির সাথে দল সমাজকর্মের মিল পাওয়া যায়। কারণ এ পদ্ধতিতে দলের সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এজন্য দল সমাজকর্মী (Group Worker) কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। তিনি দলের সদস্যদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে তাদের দায়িত্ব ও ভূমিকা নির্ধারণ করে দেন। এর ফলে সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়। উদ্দীপকের ফারহানের ভূমিকাও দল সমাজকর্মীরই অনুরূপ। তাই বলা যায়, তার কর্মকান্ডে দল সমাজকর্মেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
ঘ. উদ্দীপকে দল সমাজকর্মের বেশ কয়েকটি উপাদানের উল্লেখ আছে। এগুলো হলো- সামাজিক দল, দলীয় প্রতিষ্ঠান, দল সমাজকর্মী, দলীয় সদস্যদের প্রয়োজন ও চাহিদা এবং দল সমাজকর্ম প্রক্রিয়া।
সেগুলোকে দল সমাজকর্মের উপকরণ বলা হয়। দল সমাজকর্মের প্রথম ও প্রধান উপাদান হলো সামাজিক দল। দলীয় সদস্যদের প্রয়োজন ও চাহিদানুযায়ী দলীয় প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে দল সমাজকর্মী কিছু। প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দল সমাজকর্ম প্রয়োগ করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব ফারহান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান 'কেয়ার’-এর মাঠসংগঠক। তিনি ঢাকার মানিকনগরের বস্তির মানুষকে সংগঠিত করে দল তৈরির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী কর্মসূচি পরিচালনা করেন। উদ্দীপকের উপার্জনহীন গৃহিণীদের ১৫-২০ জনের দল হলো সামাজিক দল। কারণ দলীয় সদস্যরা একে অন্যকে বুঝতে পারে জানতে পারে এবং দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে। উল্লিখিত সংস্থা 'কেয়ার' একটি দলীয় প্রতিষ্ঠান, যা ফারহানের মাধ্যমে বস্তির দলটিকে সাহায্য বা সেবা দিচ্ছে। এটি দল সমাজকর্মের তৃতীয় উপাদান। ফারহান একজন সমাজকর্মী হিসাবে ভূমিকা পালন করছে, যা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ কর্মী হিসেবে সমাজকর্মের উপাদানের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া দল সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রক্রিয়া। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত দলের চাহিদা, সমস্যা ও সম্পদ চিহ্নিত করে পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। উদ্দীপকে দল সমাজকর্মের এই উপাদানগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরে আলোচিত পাঁচটি উপাদানের সমন্বয়েই দল সমাজকর্ম আবর্তিত ও পরিচালিত হয়।
৭. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থীরা ৪টি দলে বিভক্ত হয়। নির্দেশনা মোতাবেক প্রথম দলটি সাভারের 'বারাকা' মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে, দ্বিতীয়টি আগার গাঁও এর বৃদ্ধনিবাসে, তৃতীয়টি টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে ও চতুর্থটি ঢাকার শিশু হাসপাতালে শিক্ষাসফরে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগ কৌশল পর্যবেক্ষণ করে তারা আলাদা আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করে।
ক. সমষ্টি সমাজকর্মের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. সমন্বিত পদ্ধতির ধারণা দাও।
গ. উদ্দীপকে ব্যক্তি সমাজকর্মের যেসব প্রয়োগক্ষেত্রের উল্লেখ রয়েছে সেগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. এসব ক্ষেত্রে দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্ম পদ্ধতির প্রয়োগ দেখাও।
💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমষ্টি সমাজকর্মের ইংরেজী প্রতিশব্দ Community Social Work.
খ. সমাজকর্মের পদ্ধতি সমূহের সমন্বয়ে যে প্রায়োগিক পদ্ধতির ধারণা উদ্ভাধিত হয়, তা সমন্বিত পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত।
ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যার বাস্তবমুখী সমাধানের জন্য সমাজকর্মের পদ্ধতিকে মৌলিক ও সহায়ক দুটি পদ্ধতিতে ভাগ করা হয়েছে। এ দুটি পদ্ধতির সমন্বয়ে বাস্তবের জটিল সমস্যাগুলো সমাধান করা সহজ হয়। যেমন- একজন সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে সহায়ক পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত সামাজিক গবেষণার জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতাকে মৌলিক পদ্ধতিগুলোর সাথে সমন্বয় করা হলে সেটি সমন্বিত পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হবে।
গ. উদ্দীপকে ব্যক্তি সমাজকর্মের মাদকাসন্ত রোগীর সমস্যা সমাধান, প্রবীণকল্যাণ, সংশোধন কর্মসূচি, শিশুকল্যাণ ক্ষেত্রগুলোর উল্লেখ রয়েছে।
সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যাকে কেন্দ্র করে ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রয়োগ করা হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মের কার্যক্রম কতগুলো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ব্যক্তির সমস্যাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রয়োগক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, শিশুকল্যাণ প্রতিষ্ঠান, সংশোধনাগার, সামাজিক সাহায্য প্রতিষ্ঠান, প্রবীণ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণে ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মাদকাসস্তি নিরাময় কেন্দ্র, বৃদ্ধনিবাস, কিশোর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও শিশু হাসপাতাল সফর করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজকর্মের প্রয়োগক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে মাদকসেবী ব্যক্তির সুস্থতার জন্য ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। প্রবীণ নিবাসে বৃদ্ধদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশে অপরাধী ও কিশোর অপরাধী সংশোধনের পদ্ধতি হিসেবে প্রবেশন, আফটার সার্ভিস ও জাতীয় কিশোর-কিশোরী অপরাধ সংশোধনী প্রতিষ্ঠানে এ পদ্ধতি প্রয়োগ হয়। উন্নত বা উন্নয়নশীল সব সমাজে শিশুদের লালন-পালন, সেবা-যত্ন, পুনবার্সন প্রভৃতি ক্ষেত্রেও ব্যক্তি সমাজকর্মের কার্যকর প্রয়োগ করা হয়।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে ব্যক্তি সমাজকর্ম ছাড়াও দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্ম প্রয়োগ করা সম্ভব।
দল সমাজকর্ম হলো দলকে সাহায্য করার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি। উন্নত ও অনুন্নত সমাজব্যবস্থায় এ পদ্ধতির প্রয়োগ বেশি লক্ষ করা, যায়। শিশুর স্বাস্থ্য ও সামাজিকীকরণ, প্রবীণদের কল্যাণ সাধন, মাদকাসস্তি দূরীকরণ, অপরাধ ও কিশোর অপরাধ প্রভৃতিতে দল সমাজকর্মের প্রয়োগ হয়ে থাকে। আবার সমষ্টি সমাজকর্ম সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন দুটো ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। সামাজিক সমস্যার সমাধান, সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টিতে সমষ্টি উন্নয়ন সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যায়। শিশুকল্যাণ সেবা, প্রবীণকল্যাণ সেবাসহ অপরাধ সংশোধনের ক্ষেত্রে সমষ্টি সংগঠনের প্রয়োগ সম্ভব।
উদ্দীপকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা সমাজকর্মের কয়েকটি প্রয়োগক্ষেত্র পরিদর্শন করেছে। এগুলোতে ব্যক্তি সমাজকর্মের পাশাপাশি দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্মেও প্রয়োগ করা যায়। যেমন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মাদকসেবীদের ছোট ছোট দল করে মাদকের কুফল, প্রতিকার, প্রভাব প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য দল সমাজকর্ম প্রয়োগ করা যায়। বৃদ্ধ নিবাস ও শিশু হাসপাতালে সাহায্যার্থীদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে সমস্যার কারণ, সমাধানে করণীয় প্রভৃতির মাধ্যমেদল সমাজকর্ম কাজ করতে পারে। আবার, বৃদ্ধদের মানসিক বিনোদন, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা সৃষ্টি, পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়নে সমষ্টি সংগঠনের প্রয়োগ সম্ভব। এছাড়া কিশোর অপরাধ কেন্দ্রে কিশোরদের সংশোধনের জন্য দলীয় ও সমষ্টিগত উভয়ভাবে দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সংগঠনের প্রয়োগ করা যেতে পারে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্মের প্রয়োগ সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
৮. সামাজিক উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য উন্নয়নশীল দেশ 'ক' নতুন উদ্যোগের কথা ভাবছে। প্রথমেই তারা বস্তির সমস্যার সমাধানে প্রয়াসী। এ সমস্যা সমাধানে তারা বস্তিগুলি ভেঙে নতুন বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত বস্তির মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সামাজিক বন্ধন গড়ে় তোলার জন্য সমাজকর্মী নিয়োগ দিয়েছে।
ক. মৌলিক পদ্ধতি কী?
খ. র্যাপো বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকটির বর্ণিত সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের কোন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত পদ্ধতি প্রয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র ও সফলতার ক্ষেত্র সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্মের যে সকল পদ্ধতি বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় সেগুলোই মৌলিক পদ্ধতি।
খ. 'র্যাপো' বলতে সাধারণত সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থীর মধ্যে তৈরি হওয়া পেশাগত সম্পর্ককে বোঝায়।
ব্যক্তির সমস্যা সমাধানকে কেন্দ্র করে ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি পরিচালিত হয়। এই সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো র্যাপো। সমাজকর্মী সাহায্যাবীর সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে তাকে পেশাগত দিক থেকে বিশ্লেষণ করে তার আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থীর মধ্যকার দূরত্ব দূর হয়ে এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্কই হলো র্যাপো বা পেশাগত সম্পর্ক।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যা মোকাবিলায় সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি দল সমাজকর্ম পদ্ধতির অনুশীলন করতে হবে।
দল সমাজকর্ম এমন একটি পদ্ধতি যেখানে দলীয় সদস্যদের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে দলের সদস্যদের সক্ষম করে তোলা হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পন্থা ও কৌশল অবলম্বন করে দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
গঠনমূলক দলীয় অভিজ্ঞতার সাহায্যে দলীয় সদস্যদের প্রত্যাশিত ও মঙ্গলজনক লক্ষ্যার্জনে চেষ্টা করতে হবে। দলের মধ্যে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দলীয় সদস্যদের ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী ভূমিকা পালনে সহায়তা করতে হবে। দলীয় জীবনে গঠনমূলক ও পরিকল্পিত পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সাথে সামজস্য বিধানে দলীয় সদস্যদের সাহায্য করতে হবে। এরপর দলীয় সম্পদ ও সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি প্রণয়ন এবং সেক্ষেত্রে সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যাতে তারা সঠিক সামাজিক ভূমিকা পালন করতে পারে। গণতান্ত্রিক উপায়ে দলীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে সদস্যদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি সুপরিকল্পিত ও গঠনমূলক দলীয় প্রক্রিয়ার সাহায্যে দলীয় সদস্যদের উন্নয়ন ও সঠিক ভূমিকা পালনে সাহায্য করাই দল সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য।
ঘ. সমস্যাবহুল বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফলতা অর্জন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাস্তবায়িত সমবায় কার্যক্রমে দল সমাজকর্মের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগ করে গণমুখী সমবায় আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করে বয়স্ক ও গণশিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে নিরক্ষরতার হার হ্রাস করা সম্ভব। বাংলাদেশে অপরাধীদের সংশোধন ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রবেশন এবং মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদি পুনর্বাসন কার্যক্রমে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। সেই সাথে পরিবার কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করে সুস্থ পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। শিল্পায়ন ও শহরায়নের প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ হতে আগত মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে দল সমাজকর্মের অভিজ্ঞতা প্রয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম।
উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও হাসপাতাল সমাজসেবা, চিত্তবিনোদন, প্রতিবেশী কেন্দ্র, শ্রমিক অসন্তোষ দূরীকরণ, শিশুকল্যাণ, জনসমষ্টি উন্নয়ন, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা, দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে দল সমাজকর্মের জ্ঞান, নীতি, আদর্শ ও কৌশল প্রয়োগ করা হয়। সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
৯. বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে কিশোর উন্নয়ণ কেন্দ্র স্থাপন করে। এ কেন্দ্রে প্রায় ৪০০ জন কিশোর রয়েছে। মূলত সংশোধনের উদ্দেশ্যে কিশোরদের এখানে রাখা হয়েছে। অপরাধ সংশোধনের মাধ্যমে কিশোরদের সমাজে পুনর্বাসন করাই এ কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য।
ক. ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান কয়টি?
খ. পেশাগত সম্পর্ক বলতে কী বোঝ?
গ. সমাজকর্মের কোন পদ্ধতিটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের জন্য প্রযোজ্য? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমাজকর্মের উত্ত পদ্ধতিটি আর কোন কোন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে? মতামত দাও।
💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান পাঁচটি।
খ. সাধারণত সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থীর মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ককেই পেশাগত সম্পর্ক বলে। ব্যক্তির সমস্যা সমাধানকে কেন্দ্র করে ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি পরিচালিত হয়। এই সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো পেশাগত সম্পর্ক। সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে তাকে পেশাগত দিক থেকে বিশ্লেষণ করে তার আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মীর মধ্যকার দূরত্ব দূর হয়ে এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ককেই পেশাগত সম্পর্ক বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের কিশোরদের অপরাধ সংশোধনে দল সমাজকর্ম পদ্ধতিটি বেশি কার্যকর।
দল সমাজকর্ম সমাজকর্মের এমন একটি পদ্ধতি যা গঠনমূলক দলীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকার উন্নয়ন এবং তাদের ব্যক্তিগত, দলীয় বা সমষ্টি সমস্যা অধিকতর কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য সহায়তা করে থাকে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত কিশোর উনণয়ন কেন্দ্রের জন্য দল সমাজকর্ম পদ্ধতিটি উপযুক্ত। কারণ দল সমাজকর্ম দলের সদস্যদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে গঠনমূলক দলীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তাদের সামাজিক ভূমিকার উন্নয়ন এবং দলীয় লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। মূলত সংশোধনের মাধমে কিশোরদের সমাজে পুনর্বাসিত করাই এ উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান উদ্দেশ্য। এ কেন্দ্রে ৪০০ জন কিশোর রয়েছে। কেন্দ্রের কর্মকর্তারা দলীয়ভাবে এসব কিশোরদের সংশোধনের মাধ্যমে তাদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করে থাকে। সুতরাং বলা যায়, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের জন্য দল সমাজকর্ম পদ্ধতিটি উপযুক্ত হবে।
ঘ. স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে দল সমাজকর্ম পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
দল সমাজকর্ম সমাজকর্মের এমন একটি পদ্ধতি যা গঠনমূলক দলীয় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকার উন্নয়ন এবং তাদের ব্যক্তিগত দলীয় বা সমষ্টি সমস্যা অধিকতর কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য সহায়তা করে।
কৃষিনির্ভর হওয়া সত্ত্বেও কৃষিক্ষেত্রে এদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এর কারণ কৃষকদের অজ্ঞতা, কুসংস্কার, আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞানের অভাব প্রভৃতি। দল সমাজকর্ম কৃষকদেরকে দলীয়ভাবে সংগঠিত করে তাদের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর উভয় এলাকাতেই অগণিত বাস্তুহারা ও ছিন্নমূল জনগণ মানবেতর জীবনযাপন করে। এ ধরনের জনগণের পুনর্বাসনে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি সহায়তা করতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৭৪ জন লোক নিরক্ষর। যার কারণে জনগণ অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। জনগণকে দলীয়ভাবে সংগঠিত করে দল সমাজকর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে বয়স্ক ও সামাজিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার প্রভৃতি দূর করা যেতে পারে। বাংলাদেশের শহর ও গ্রাম সমষ্টির উন্নয়নে বর্তমানে যে সকল কর্মসূচি চালু রয়েছে সেগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে দল সমাজকর্ম বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৮ ভাগ হচ্ছে মহিলা যারা সন্তান উৎপাদন, প্রতিপালন এবং গৃহকর্মেই আবদ্ধ থাকে। উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ নিতান্তই অপ্রতুল। মহিলাদের নিয়ে বিভিন্ন দল গঠন করে প্রয়োজনীয় সামাজিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে তাদেরকে উৎপাদনমুখী জনশক্তি হিসেবে গড়ে় তুলতে দল সমাজকর্ম ভূমিকা রাখতে পারে।
সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশে দল সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগের যথেষ্ট ক্ষেত্র রয়েছে।
১০. মেজর খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে সেনা একটি টিম জাতিসংঘের শাস্তিরক্ষা মিশনে সিয়েরালিওনে কাজ করছে। তারা সেখানকার অসহায় ও গরিব মানুষের নানারকম চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে। তাদের পেশাগত দক্ষতা ও সততার কারণে সেখানকার জনগণ তাদেরকে খুব সহজে আপন করে নিতে পেরেছে।
ক. সমষ্টি সংগঠন কী?
খ. সমাজকর্ম গবেষণা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের সমষ্টির সাহায্যার্থে কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ন্যায় অনুন্নত দেশসমূহের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমষ্টি সমাজকর্মের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমষ্টি সংগঠন হলো সামাজিক উন্নতি ও ভারসাম্য রক্ষার জন্য পরিচালিত জনসমষ্টি কেন্দ্রিক সুশৃঙ্খল সেবাকর্ম প্রক্রিয়া।
খ. সমাজকর্ম গবেষণা বলতে সাধারণত সমাজকর্মের জ্ঞান ও ধারণাসমূহ প্রতিষ্ঠা, প্রসার ও সাধারণীকরণের জন্য তথ্য সংগ্রহমূলক ধারাবাহিক অনুসন্ধানকে বোঝায়।
সমাজকর্ম গবেষণা পেশাদার সমাজকর্মের অন্যতম সহায়ক পদ্ধতি। মূলত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির তথা সমাজের বাস্তব সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকর্ম গবেষণার সূত্রপাত হয়। এটি মূলত সমাজকর্ম ক্ষেত্রে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রশ্ন এবং সমস্যাবলি বিষয়ে সুশৃঙ্খল ও সূক্ষ্ম অনুসন্ধান পদ্ধতি।
গ. উদ্দীপকের সমষ্টির সাহায্যার্থে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।
স্বল্পোন্নত বা অনুন্নত দেশের জনসাধারণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হলো সমষ্টি উন্নয়ন। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের নীতি ও কর্মকৌশল প্রয়োগ করা হয়। ফলে ঐ এলাকার সাধারণ মানুষের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সার্বিক জীবন মান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে জনসমষ্টির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনগণ ও সরকারের প্রচেষ্টাকে সংযুক্ত করা হয়। একই সাথে তাদেরকে জাতীয় অগ্রগতিতে অবদান রাখতে সক্ষম করে তোলা হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত মেজর খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টিম জাতিসংঘের শাস্তিরক্ষা মিশনে সিয়েরালিওনে কাজ করছে। সেখানে তারা অসহায় ও গরিব মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। এর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন পরিবেশ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডও পরিচালনা করছে। সিয়েরালিওন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অনুন্নত দেশ। দেশটিতে শাস্তিরক্ষার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে শাস্তিরক্ষা মিশন কাজ করছে। এক্ষেত্রে তারা সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। কারণ এ পদ্ধতি অনুন্নত এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রয়োগ করা হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতির প্রয়োগ প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের সিয়েরালিওনের মতো অনুন্নত দেশসমূহের উন্নয়নের জন্য সমষ্টি সমাজকর্মের সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়, যা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
সমষ্টি সমাজকর্মের বিশেষ ধরন হলো সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও স্থবির সমাজের পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে প্রয়োগ করা হয়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে অদক্ষ জনসমষ্টি, অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা, অজ্ঞ ও নিরক্ষর জনমসমষ্টি, অনুন্নত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা, নির্ভরশীল জনসমষ্টি প্রভৃতি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ সকল সমস্যা সমাধান অসংগঠিত ও স্থবির অঞ্চলে সমষ্টি সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ সুফল বয়ে আনে।
উদ্দীপকের সিয়েরালিওনে অসহায় ও গরিব জনসমষ্টি, অনুন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রভৃতি নানা সমস্যা বিদ্যমান। এ ধরনের সমস্যাগ্রস্ত অনুন্নত দেশের জন্য সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতির আশ্রয় নিলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে। এ পদ্ধতির প্রয়োগে দক্ষতাবিহীন, অসংগঠিত জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণ ও উৎপাদনশীল কর্মে নিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করা যায়। অনুন্নত দেশের কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ, যৌথ খামারের উপকারিতা, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ সম্ভব। নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন, সামাজিক শিক্ষা প্রদান, স্বাস্থ্যবিধি প্রচার, রোগ প্রতিরোধের কর্মসূচি গ্রহণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া এসব দেশে নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সমষ্টি সংগঠন পদ্ধতি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, অনুন্নত দেশসমূহের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমষ্টি সমাজকর্মের প্রয়োগ বিশেষভাবে কার্যকর।
0 Comments:
Post a Comment