এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.
সমাজকর্ম
প্রথম পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫
HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
সমাজকর্মের সাথে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ও পেশার সম্পর্ক
সমাজকর্ম একটি সমন্বিত সামাজিক বিজ্ঞান। মানুষের বিভিন্নমুখী সমস্যার সমাধানকল্পে সমাজকর্ম অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান থেকে তার অধিকাংশ জ্ঞান আহরণ করেছে। আর সামাজিক বিজ্ঞান হলো সেই বিজ্ঞান যা সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের সামাজিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে অর্থাৎ তাদের আচার-আচরণ, প্রথা-প্রতিষ্ঠান, পারস্পরিক সম্পর্ক, কৃষি, সংস্কৃতি তথা গোটা সমাজকে নিয়ে আলোচনা করে এবং তথ্য উদঘাটন ও তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম পেশাগত সেবার মর্যাদায় পরিগণিত আর সমাজকর্মের চলার পথকে সুগম করেছে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জ্ঞান। সুতরাং জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ও পেশার সাথে সমাজকর্মের গভীর সম্পর্ক ও যোগাযোগ রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান কী?
সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজ সম্পর্কিত বিজ্ঞান, যা সমাজের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করে। এর মধ্যে সমাজকাঠামো, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সমাজের উদ্ভব ও বিকাশ, আচার-অনুষ্ঠান, সমাজিক পরিবর্তনের ধারা এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও প্রতিক্রিয়া অন্যতম। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। ডুর্খেইমের মতে, সমাজবিজ্ঞান হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।
সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক
প্রথমত: উদ্দেশ্যগত দিক থেকে সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্মের মধ্যকার সম্পর্ক রয়েছে। কেননা উভয়েরই উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রগতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। এক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানে সমাজ ও মানুষের সম্পর্ক বিষয়ক জ্ঞান আহরণ করা হয়। অন্যদিকে সমাজকর্ম সমাজ ও মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ অর্জনে প্রয়াসী হয়।
দ্বিতীয়ত: বিষয়বস্তুগত দিক থেকেও সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান সমাজের কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে সমাজকর্ম সামাজিক কাঠামোর সকল স্তরে অবস্থিত মানুষকে তাদের উপযুক্ত ভূমিকা পালনে সহায়তা করে।
তৃতীয়ত: সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হলো সামাজিক সমস্যার সমাধান। আর সামাজিক সমস্যা সমাজস্থ মানুষের উপর অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে, যা মানুষের স্বাভাবিক ভূমিকা পালনের পথে বাধা দেয়। আর এই সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
চতুর্থত: সমাজকর্ম বেশ কিছু মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতির মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছায় এবং তার সেবাদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম মৌলিক পদ্ধতি হলো দল সমাজকর্ম। দল সমাজকর্ম ছোট ছোট দল গঠন করে কিছু কৌশল অবলম্বন করে দলীয় সদস্যদের সমস্যার সমাধান দেয়। সেক্ষেত্রে দল সমাজকর্মীকে সামাজিক দল, দলের বৈশিষ্ট্য, দলীয় দ্বন্দ্ব, দলীয় গতিশীলতা, দলীয় আন্তঃক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা বা সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর দলের সকল বিষয় কেবলমাত্র সমাজবিজ্ঞানেই বিস্তারিত আলোচনা করা যায়।
পঞ্চমত: সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কের আর একটি দিক হলো সমাজ সম্পর্কে উভয়েরই সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান কোনো একটি বিশেষ দিকে আলোচনা করে। যেমন- মনোবিজ্ঞানে কেবল মানুষের আচরণ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
নৃ-বিজ্ঞান কী?
শাব্দিক অর্থে নৃ-বিজ্ঞান বলতে মানুষের বিজ্ঞানকে বোঝায়। Anthropo অর্থ মানুষ এবং খড়মু অর্থ বিজ্ঞান। এ বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষের অতীত কাল হতে অদ্যাবধি বিবর্তনের ধারা পর্যালোচনা করা হয়। এজন্য নৃ-বিজ্ঞানকে মানুষের বিজ্ঞান বলা হয়। অতীতকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষের জন্ম পরিচয়, জন্ম ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিবার, রাষ্ট্র, ধর্ম প্রভৃতি প্রথা প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়েই সাধারণত নৃ-বিজ্ঞানের পথচলা। নৃ-বিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কি এর মতে, নৃ-বিজ্ঞান হলো মানুষ ও তার সংস্কৃতির বৈজ্ঞানিক পাঠ বা আলোচনা।
সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞানের সম্পর্ক
১। সমাজকর্ম একটি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া। বহুমুখী জটিল সমস্যার সমাধানে সমাজকর্ম সর্বদা প্রয়াসী, আর এজন্য সমাজকর্মীদের ব্যক্তির দৈহিক গতি, আকৃতি, প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তাই দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান ব্যক্তি, দল, সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
২। সমাজকর্ম অনুশীলনের অন্যতম নীতি হলো ব্যক্তির মূল্যবোধ ও সামাজিক মূল্যবোধের স্বীকৃতি। অর্থাৎ সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ পরিপন্থী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান গ্রহণ করতে হবে।
৩। দ্রুত নগরায়ন আধুনিক সময়ের উন্নয়নের এক সূচক বলে বিবেচিত হলেও নগরায়ন সৃষ্টি করছে নানা মনো-সামাজিক সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীকে নগর নৃ-বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে। এক্ষেত্রেও সমাজকর্ম ও নৃ-বিজ্ঞান সম্পর্কিত।
৪। সমাজকর্ম আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। আর বিভিন্ন আচার-আচরণ, বিশ্বাস এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা এই উন্নয়নকে ব্যাহত করে। ফলিত নৃ-বিজ্ঞান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বাধা সৃষ্টিকারী এ সকল বিষয় চিহ্নিত করে থাকে এবং সমাজকর্মীকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
৫। সমাজকর্ম অনুশীলনে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মের জন্য সহায়ক। কেননা সামাজিক নৃ-বিজ্ঞানের ভিত্তিই হলো মানুষের পারস্পরিক ও সামাজিক সম্পর্ক।
মনোবিজ্ঞান কী
সমাজকর্ম একটি সমন্বিত বিজ্ঞান বিধায় সমাজবিজ্ঞান ও অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের ন্যায় মনোবিজ্ঞানের সাথেও সমাজকর্মের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এছাড়া অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের তুলনায় সমাজকর্ম মনোবিজ্ঞানের উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। মনোবিজ্ঞান ও এর বিভিন্ন শাখার জ্ঞান সমাজকর্মের লক্ষ্য অর্জনে বিশেষভাবে সহায়তা করে। মনোবিজ্ঞান হলো আত্মার বিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Psychology, যা Psyche এবং Logos শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। Psyche এবং Logos এর পর্যায়ক্রমিক অর্থ হলো মন বা আত্মা এবং বিজ্ঞান বা জ্ঞান। অর্থাৎ মনোবিজ্ঞান হলো মন বা আত্মা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। এছাড়াও মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। বিভিন্ন পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন রূপ, আচরণ ও বিভিন্ন আচরণের কারণ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি হলো মনোবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয়।
সমাজকর্মের সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক
১। সমাজকর্মের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করে তাকে সঠিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করা। কিন্তু ব্যক্তিভেদে সমস্যার প্রকৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। কারণ প্রত্যেকটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, তার আবেগ, বুদ্ধি, হতাশা, বিষয়বস্তু প্রত্যক্ষণ ক্ষমতা প্রভৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। কাজেই এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে একজন সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞান সহায়তা করতে পারে।
২। সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানে ব্যক্তির নিজস্ব সামর্থ্য, সুপ্ত ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তার উপর গুরুত্ব প্রদান করে। আর ব্যক্তির এই সুপ্ত ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের জন্য মনোবিজ্ঞানে বিশেষ কৌশল ও প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। সেক্ষেত্রে সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞান পরস্পর সহায়ক।
৩। মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা আবার সমাজকর্মের বিভিন্ন অনুশীলন ক্ষেত্রের সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ সমাজকর্মের অনুশীলনের ক্ষেত্র যেমন বহুমুখী তেমনি বহুমুখী অনুশীলন ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়োগও বহুমুখী।
৪। সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হলো ব্যক্তিকে সমাজ উপযোগী আচরণ করতে সক্ষম করে তোলা। এক্ষেত্রে শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিকে উপযোগী আচরণ শিক্ষা দিতেও মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫। সমাজকর্মের চিকিৎসা পদ্ধতি বহুলাংশে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞাননির্ভর। বিশেষ করে ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তির সমস্যার সমাধান ও আচরণ সংশোধনের জন্য প্রয়োগকৃত সবই মনোবিজ্ঞানেরই আলোচ্য বিষয়। সুতরাং বলা যায় যে, সমাজকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। বিষয়বস্তুগত দিক থেকে উভয়ের অনেক মিল রয়েছে।
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১. রিফাত উচ্চ শিক্ষা শেষে এখন গবেষণায় মন দিতে চায়। সে তার গবেষণায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপনের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে চায়। তাই তাকে ঐ জাতিগোষ্ঠীর উৎপত্তি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্রমবিকাশ সম্পর্কে যেমন জ্ঞানার্জন করতে হচ্ছে তেমনি তাদের জন্মহার, মৃত্যুহার, স্থানান্তর, জনসংখ্যা কাঠামো ও বন্ধন সম্পর্কিত তথ্যও সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
ক. জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারা কয়টি?
খ. মনোবিজ্ঞানকে কেন সামাজিক বিজ্ঞান বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে রিফাতের গবেষণার সাথে জড়িত বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে জন্ম-মৃত্যুহার সম্পর্কিত যে বিষয়টির ইঙ্গিত রয়েছে একজন সমাজকর্মীর জন্য তার আবশ্যকতা মূল্যায়ন করো।
💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারা দুইটি।
খ. মনোবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হিসেবে বিবেচিত।
মনোবিজ্ঞান সমাজের মানুষ বা প্রাণীর সামগ্রিক আচার-আচরণ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন করে। যার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াবলি, আচরণ, শিক্ষণ, সামাজিকীকরণ, অভিজ্ঞতা, প্রেষণা, উপযোজন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সমাজে বসবাসরত ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, সামালিক পরিবেশ, রীতিনীতি, আদর্শ মূল্যবোধ প্রভৃতি নিয়েও মনোবিজ্ঞান আলোচনা করে। আর এ সকল বিষয় সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। কারণেই মনোবিজ্ঞানকে সামাজিক বিজ্ঞান বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে রিফাতের গবেষণার সাথে জড়িত বিষয়টি হচ্ছে নৃ-বিজ্ঞান।
নৃ-বিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। এর প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষ। মানুষের উৎপত্তি, দৈহিক গঠন, সংস্কৃতি, পরিবার, রাষ্ট্র ধর্ম প্রভৃতির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশ নিয়ে নৃ-বিজ্ঞান আলোচনা করে।
বিষয়বস্তুর ব্যাপকতার কারণে নৃ-বিজ্ঞানকে দৈহিক এবং সাংস্কৃতিক নৃ বিজ্ঞান এই দু'ভাগে ভাগ করা হয়। দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান মানুষের উৎপত্তি, বিকাশ ও দৈহিক গঠনপ্রণালী নিয়ে আলোচনা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর বর্ণ পরিচয় এবং তাদের ওপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে দৈহিক নৃ-বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। আর সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানে মানুষের অর্পিত ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করা হয়। আদিম মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয় সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়।
উদ্দীপকে রিফাত তার গবেষণায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপনের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে চায়। এজন্য তাকে ঐ জাতিগোষ্ঠীর উৎপত্তি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হচ্ছে। উদ্দীপকের রিফাতের গবেষণার সাথে জড়িত বিষয়টি নৃ-বিজ্ঞানকেই নির্দেশ করে।
ঘ. একজন সমাজকর্মীর জন্য উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত জন্ম ও মৃত্যুহার সম্পর্কিত বিষয় তথা জনবিজ্ঞানের জ্ঞানের আবশ্যকতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
জনবিজ্ঞান জনসংখ্যা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিনণ বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে। এ বিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো জন্ম ও মৃত্যুহার, জনসংখ্যার স্থানান্তর, বিবাহ, জনসংখ্যার আকৃতি, গঠনকাঠামো, বণ্টন, জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান প্রভৃতি।
উদ্দীপকে রিফাতকে তার গবেষণার জন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্ম ও মৃত্যুহার, স্থানান্তর, জনসংখ্যার কাঠামো ও বণ্টন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যা সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা জনবিজ্ঞানকে নির্দেশ করছে। জনবিজ্ঞানের জ্ঞান একজন সমাজকর্মীকে নানাভাবে সহায়তা করে। পেশাদার সমাজকর্মীদেরকে সমাজ এবং সমাজের মানুষের সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হয়। সামাজিক সমস্যাগুলো পরস্পর সংশ্লিষ্ট। এক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা কীভাবে অন্য সমস্যা সৃষ্টিতে সহায়তা করে তা জনবিজ্ঞান পাঠ করে জানা যায়। বিশেষ করে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব সৃষ্টিতে জনসংখ্যার ভূমিকা সম্পর্কে জনবিজ্ঞান আলোচনা করে। দেশের মোট জনসংখ্যা, নারী প্রতি প্রজনন ক্ষমতা, মৃত্যুহার, জন্মহার, প্রসূতি মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার প্রভৃতি জনসংখ্যা চলকের অস্বাভাবিকতার কারণ ও সমাধান ব্যবস্থা সম্পর্কে সমাজকর্মীরা জনবিজ্ঞান থেকেই জ্ঞান অর্জন করে। এছাড়া সমাজকর্মীদের শিশুকল্যাণ, যুবকল্যাণ, নারীকল্যাণ, প্রবীণকল্যাণ, সমষ্টি উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজ করতে বয়সকাঠামো, জনসংখ্যা বণ্টন, লিঙ্গভেদ প্রভৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রয়োজন। জনবিজ্ঞান থেকে সমাজকর্মীরা এ সব বিষয়ে ধারণা পায়।
পরিশেষে বলা যায়, জনসংখ্যা সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবিলায় একজন। সমাজকর্মীর জন্য উদ্দীপকে ইঙ্গিকৃত বিষয় তথা জনবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
২. মিসেস শায়লা একজন কলেজ শিক্ষক। শিক্ষকতা তার পেশা হলেও নিজের অন্য ধরনের একটি শখ আছে। সময় সুযোগ পেলেই তিনি তার শখ পূরণে লেগে যান। তার শখ হচ্ছে আশেপাশের মানুষদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে সেসব আচরণের পেছনে যেসব চালনা শক্তি রয়েছে সেগুলো উদ্ঘাটন করা।
ক. 'Positive Philosophy' গ্রন্থের লেখক কে?
খ. সামাজিক বিজ্ঞান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের মিসেস শায়লার শখ সামাজিক বিজ্ঞানের যে শাখাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সমাজের বৃহত্তর কল্যাপে একজন সমাজকর্মীর জন্য উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সামাজিক বিজ্ঞানের শাখাটির জ্ঞান অর্জন করা জরুরি- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. 'Positive Philosophy' গ্রন্থের লেখক হলেন অগাস্ট কোঁৎ।
খ. সমাজে বসবাসরত মানুষকে নিয়ে যে বিজ্ঞান অনুশীলন ও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় তাকে সামাজিক বিজ্ঞান বলে। সামাজিক বিজ্ঞানকে মূলত সমাজের বৈজ্ঞানিক পাঠ বলা হয়। কেননা সমাজ এবং সমাজের মানুষের বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ প্রচেষ্টা থেকে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিনণ শাখার উদ্ভব। প্রতিটি সামাজিক বিজ্ঞান সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্কের বিশেষ দিক নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে। সামাজিক বিজ্ঞান সমাজ সম্পর্কিত আলোচনার প্রধান শান্ত।
গ. উদ্দীপকের মিসেস শায়লার শখ সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা মনোবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।
সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হলো মনোবিজ্ঞান। এ শাস্ত্র মানুষ ও প্রাণীর আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। বাহ্যিক আচরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে মনোজগত সম্পর্কে মনোবিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ করে। মানুষ বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন বিশেষ আচরণ করে মনোবিজ্ঞান এ প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করে। বাহ্যিক আচরণের পেছনে যে চালনা শক্তি বা অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া রয়েছে তা আবিষ্কার করা এর মূল লক্ষ্য। বাহ্যিক আচার-আচরণের পেছনে প্রভাব বিস্তারকারী অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলো হলো প্রত্যক্ষণ, প্রেষণা, শিক্ষণ, আবেগ, চিন্তন, অনুভূতি, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি। এগুলো মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর পরিধিভুক্ত। এছাড়া সমাজস্থ ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, সামাজিক পরিবেশ, রীতিনীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ নিয়েও মনোবিজ্ঞান আলোচনা করে।
উদ্দীপকের শিক্ষক শায়লার শখ হচ্ছে মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং মানুষের আচরণের পেছনে যেসব চালনা শক্তি রয়েছে তিনি সেগুলো উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন। তার এ শখের বিষয়টি মনোবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে। কেননা মনোবিজ্ঞান মানুষ ও প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং এর পেছনে দায়ী কারণ অনুসন্ধান করে। উদ্দীপকের শায়লার শখ মনোবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে।
ঘ. সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে একজন সমাজকর্মীর জন্য উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সামাজিক বিজ্ঞানের শাখা তথা মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা জরুরি উদ্ভিটি যথার্থ।
সমাজকর্মীরা ব্যক্তিগত, দলীয়, সমষ্টিগত ও বিভিন্ন আর্থ-মনোসামাজিক সমস্যা সমাধানে সহায়তার মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ সাধন করে। এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান সমাজকর্মীদের কল্যাণমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমাজকর্মীকে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান থেকে সমাজকর্মীরা তাদের আবেগ, অনুভূতি ও আচরণ সম্বন্ধে জানতে পারে। আবার অনুশীলনের মাধ্যমে তারা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির আচরণের শর্তাবলি সমন্ধেও জানতে পারে। ফলে সমাজকর্মী নিজের আবেগ, অনুভূতি ও আচরণকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারে। মানব আচরণের বিভিন্ন দিককে কেন্দ্র করে মনোবিজ্ঞানের পৃথক শাখা গড়ে় উঠেছে। যেমন- চিকিৎসা, শিশু, অস্বাভাবিক, শিল্প ও শিক্ষা মনোবিজ্ঞান প্রভৃতি। সমাজকর্মের বিভিন্ন প্রয়োগক্ষেত্রে এসব শাখার জ্ঞান বিশেষভাবে প্রয়োগ করা হয়। সমাজকর্মের প্রধান লক্ষ্য ব্যক্তি, দল, পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করা। এজন্য সমাজকর্মীদের সমস্যার কারণ, উৎস, প্রভাব, উপাদান ইত্যাদি উদ্ঘাটন করতে হয়। আর এগুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায় অধিকাংশ সমস্যার মূলে রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক উপাদানের শক্তিশালী প্রভাব। এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
উদ্দীপকে শিক্ষক শায়লার শখ হলো মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা যা মনোবিজ্ঞানকে নির্দেশ করছে। সমাজের বিভিন্ন আর্থ-মনো-সামাজিক সমস্যা সমাধান করার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ সাধনের জন্য সমাজকর্ম পদ্ধতিগুলোর সুষ্ঠু প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান আবশ্যক। পরিশেষে বলা যায়, একজন সমাজকর্মীর জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. নীলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ে। নীলা যে বিষয়ে অনার্স পড়ে তার জ্ঞান সম্পদ অর্জন, বিনিয়োগ, বণ্টন ও সম্পদের সঠিক ব্যবহারে সহায়তা করবে।
ক. Anthropos শব্দের অর্থ কী?
খ. কোন বিজ্ঞানকে আচরণের বিজ্ঞান বলা হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. নীলার পঠিত বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের কোন শাখার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সমাজকর্মীদের উক্ত বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার বিশ্লেষণ করো।
💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. 'Anthropos' শব্দের অর্থ 'মানুষ'।
খ. মনোবিজ্ঞানকে মানুষের আচরণের বিজ্ঞান বলা হয়।
মনোবিজ্ঞান বলতে মন সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে বোঝায়। মূলত যে বিজ্ঞান মানুষের বা প্রাণীর মন তথ্য আচার-আচরণ নিয়ে আলোচনা করে, তাকেই মনোবিজ্ঞান বলা হয়। মনস্তাত্ত্বিক বিষয়াবলি, আচরণ, শিক্ষা, সামাজিকীকরণ প্রভৃতি মনোবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়বস্তু। সমাজে মানুষ বা প্রাণীর সামগ্রিক আচার-আচরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়নই মনোবিজ্ঞান।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তথ্যানুসারে নীলার পঠিত বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা অর্থনীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
সামাজিক সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছে। অর্থনীতি সামাজিক বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যাতে সম্পদ উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ, বিনিয়োগ প্রভৃতি সংক্রান্ত মানুষের কার্যাবলি আলোচনা করা হয়। উদ্দীপকে এ বিষয়গুলোই উল্লিখিত হয়েছে।
উদ্দীপকে নীলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিষয়ে অনার্স করছে। উক্ত বিষয়ের জ্ঞান তাকে সম্পদ অর্জন, বিনিয়োগ, বণ্টন ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চতকরণে সহায়তা করবে। এ থেকেই বোঝা যায়, সে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স পড়ছে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সংজ্ঞাসমূহ সাধারণীকরণ করে বলা যায়, ব্যক্তি ও সমাজ কীভাবে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে অভাব পূরণ ও পছন্দমতো বণ্টন করে তা নিয়ে আলোচনা করে, তাই হলো অর্থনীতি। এ সংজ্ঞার ভেতরেই উদ্দীপকে উল্লিখিত সম্পদ অর্জন, সম্পদের সঠিক ব্যবহার, বিনিয়োগ, বণ্টন প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা অর্থনীতিকেই নির্দেশ করে।
ঘ. সমাজকর্ম ও অর্থনীতির মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের আলোকে বলা যায়, সমাজকর্মীদের অর্থনীতি বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার।
অর্থনীতি ও সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। উভয় শাখাতেই সমাজবদ্ধ মানুষের আচরণ ও কল্যাণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সমাজ বহির্ভূত মানুষের আচার-আচরণ সমাজকর্ম ও অর্থনীতির বিবেচ্য বিষয় নয়। মানুষের আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য বিধায় উভয় শাস্ত্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র গড়ে উঠেছে।
সমাজকর্ম ও অর্থনীতি উভয় শাস্ত্রের লক্ষ্য হলো সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে সমাজকর্ম সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে, যাতে সমস্যার যথোপযুক্ত ও স্থায়ী সমাধান সম্ভব হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে অর্থনীতির জ্ঞান সমাজকর্মীকে সহায়তা করে। একজন সমাজকর্মী সম্পদ ও অর্থনীতির জ্ঞান ব্যবহার করে ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে সম্পদের বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাবলম্বন অর্জনে গুরুত্বারোপ করা হয়। তাছাড়া একজন সমাজকর্মী অর্থনীতির জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তির মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণে কার্যকরভাবে সমাজকর্মের জ্ঞান ও পদ্ধতির প্রয়োগ করতে সক্ষম হন। উপরের আলোচনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, সমাজকর্ম ও অর্থনীতি পরস্পর পরিপুরক দুটি শাস্ত্র। তাই সমাজকর্মীদের জন্য অর্থনীতির জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক।
৪. প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদমশুমারি করে। আদমশুমারির লক্ষ্য হলো দেশের জন্ম-মৃত্যু, নারী-পুরুষ, বয়স কাঠামো, পরিবারের সন্তান সংখ্যা, আয়, ব্যয়, সঞ্চয়, কর্মক্ষম মানুষ ও লোকসংখ্যার হ্রাস বৃদ্ধিতে সামঞ্জস্য রক্ষা করে দেশের ও পরিবারের উন্নয়নে সহায়তা করা।
ক. 'Psyche' শব্দের অর্থ কী?
খ. সমাজবিজ্ঞানকে কেন সমাজের বিজ্ঞান বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কার্যক্রম কোন সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়সমূহ জনসংখ্যা নীতি গ্রহণে কীভাবে প্রভাব ফেলে? মতামত দাও।
💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. 'Psyche' শব্দের অর্থ 'আববা'।
খ. সমাজবিজ্ঞানের মাধ্যমে সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন করা হয় বলে এটিকে সমাজের বিজ্ঞান বলা হয়।
সমাজবিজ্ঞান মানুষের সামাজিক কর্মকান্ডের বিজ্ঞান। এই শাস্ত্রের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সমাজ। সমাজের বিকাশ, সমাজ কাঠামো, সামাজিক কার্যাবলি, স্তরবিন্যাস, প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠান, সামাজিক সম্পর্ক ও আচরণ, সামাজিক আন্তঃক্রিয়া, মিথস্ক্রিয়া, সামাজিক পরিবর্তন প্রভৃতি সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। এককথায় বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আদমশুমারী কার্যক্রম সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যতম প্রায়োগিক শাখা জনবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।
শব্দগতভাবে জনবিজ্ঞানের অর্থ হলো জনসংখ্যার বিবরণ বা লিখন। অর্থাৎ জনবিজ্ঞান হলো জনসংখ্যা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সামাজিক বিজ্ঞানের এ শাখায় জনসংখ্যা এবং এ সংশ্লিষ্ট বিভিনণ বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হয়। এ বিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো জন্মহার মৃত্যুহার, জনসংখ্যার বন্টন ও স্থানান্তর, জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান প্রভৃতি।
উদ্দীপকে উল্লিখিত আলোচনায় আদমশুমারী সম্পর্কে বলা হয়েছে। একটি দেশের জনসংখ্যার সামগ্রিক অবস্থা, জন্ম-মৃত্যুহার, নারী পুরুষের সংখ্যা, আয়-ব্যয় ও সঞ্চয়ের অবস্থা, পরিবারের সন্তান সংখ্যা, লোকসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি প্রভৃতি তথ্য আদমশুমারী থেকে জানা যায়। পরবর্তীতে এই তথ্য সামগ্রিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি উন্নয়নে নানা কাজে ব্যবহার করা যায়। আর জনসংখ্যা সম্পর্কিত উপযুক্ত সকল বিষয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের এ শাখায় আলোচিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে জনবিজ্ঞান একটি বিশেষায়িত শাখা। আদমশুমারীর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে জনবিজ্ঞান জনসংখ্যা সংশ্লিষ্ট নানা তত্ত্ব, সমস্যা নিয়ে কাজ করে এবং সমাধানের পথ নির্দেশ করে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়সমূহের আলোকে দেশের জনসংখ্যা পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে জনসংখ্যা নীতির নানা দিক নির্ধারণ করা হয়।
একটি দেশের জনসংখ্যা নীতিতে ঐ দেশের জনসংখ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। এজন্য জনসংখ্যা নীতি প্রণয়নের পূর্বে দেশের জনসংখ্যা সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আর জনবিজ্ঞান আদমশুমারী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এ কাজটিই করে থাকে।
আদমশুমারীর মাধ্যমে একটি দেশের মোট জনসংখ্যা, নারী-পুরুষের সংখ্যা, কর্মক্ষম ও নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়। এর ফলে দেশটির জনসংখ্যা সমস্যা না সম্পদ তা বিচার-বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কত, শিশু জন্মহার ও মৃত্যুহার কত, শিক্ষার অবস্থা কেমন, আয়-ব্যয় ও সঞ্চয়ের প্রকৃতি কেমন প্রভৃতি বিষয়ও আদমশুমারী হতে জানা যায়। এর ফলে ভবিষ্যতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণ করা সহজ হয়। এ সকল তথ্যের ভিত্তিতেই ভবিষ্যৎ লক্ষ্য, কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। আর এ বিষয়গুলোই জনসংখ্যা নীতির নানা ধারায় সন্নিবেশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে উত্ত তথ্যসমূহ ব্যতীত জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন এক প্রকার অসম্ভব।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, জনসংখ্যা নীতি গ্রহণে জনসংখ্যা সংশ্লিষ্ট নানা তথ্য-উপাত্তের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৫. ঐশী ২০১৪ সালে নতুন ভোটার হয়েছে। এখন সে আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগে নিজেকে উপযুক্ত বলে মনে করছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে গর্ববোধ করে এবং দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে অনেক বেশি সচেতনও হয়েছে। ইয়ূথ হাংগার প্রজেক্ট নামে একটি এনজিও যুব ছায়া সংসদ গঠন করেছিল। সেই সংসদের খাদ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী হিসেবে ঐশীর দেওয়া বক্তব্যে ফুটে উঠেছে, প্রতিটি মানুষের খাদ্য ও কর্মের অধিকার, সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতামূলক শাসন ব্যবস্থার।
ক. কে প্রথম Sociology শব্দটি ব্যবহার করেন?
খ. একজন সমাজকর্মীর সমস্যা সমাধানের জন্যে কেন বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজন হয়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয় কোন সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ঐশীর সংসদে দেওয়া বক্তব্যের মধ্যেই কি বিষয়টির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ? যুক্তি পাও।
💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁৎ প্রথম 'Sociology' শব্দটি ব্যবহার করেন।
খ. মানুষকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয় বলে একজন সমাজকর্মীর সমস্যা সমাধানে নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজন হয়।
সমাজকর্ম মানুষের সামাজিক, মানসিক ও অস্বাভাবিক আচার-আচরণ সম্পর্কিত বহুমুখী সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। এজন্য সমাজকর্মে ব্যক্তির দৈহিক গঠন, আকৃতি, প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন অত্যাবশ্যকীয়। জৈবিকভাবে এই বিষয়গুলো সমস্যা সৃষ্টির পেছনে ক্রিয়াশীল থাকে। সমাজকর্ম বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দৈহিক নৃ-বিজ্ঞানের এই জ্ঞান প্রয়োগ করে। তাছাড়া সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে ব্যক্তির মূল্যবোধের অভাব সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয় সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্তর্ভুক্ত।
পৌরনীতি এমন একটি বিষয় যা কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক বা সমাজের সদস্য হিসেবে কারও অধিকার ও দায়িত্বের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, সুশাসন বলতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতামূলক শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়। আর এ দুটি বিষয়ই উদ্দীপকের আলোচনায় উল্লিখিত হয়েছে।
প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকের জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে ভোট প্রয়োগের অধিকার রয়েছে। আবার সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ নাগরিকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ঐশীর ক্ষেত্রে এ দুটি বিষয়ের উল্লেখ বা ইঙ্গিত উদ্দীপকে পাওয়া যায়। আর এ বিষয়টি পৌরনীতিতে আলোচিত হয়। অন্যদিকে ইয়ুথ হাংগার প্রজেক্ট এনজিও কর্তৃক গঠিত ছায়া সংসদ ব্যবস্থাও পৌরনীতির আলোচ্য বিষয়। আর উদ্দীপকে যে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতামূলক শাসনব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে তা কেবল সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে পৌরনীতি ও সুশাসন এমন একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা রাষ্ট্রের নাগরিকদের আচার আচরণ, কার্যাবলি, অধিকার কর্তব্য এবং স্বচ্ছ প্রশাসন ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে। উদ্দীপকে এ বিষয়গুলো অর্থাৎ পৌরনীতি ও সুশাসনের কথাই বলা হয়েছে।
ঘ. সংসদে দেওয়া উদ্দীপকের ঐশীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়টির সামগ্রিক কার্যক্রম ফুটে ওঠেনি।
পৌরনীতি ও সুশাসন সামাজিক বিজ্ঞানের একটি সমৃদ্ধ শাখা। এর বিষয়বস্তু বা পরিধি অনেক বিস্তৃত। ঐশীর বক্তব্যে উল্লিখিত প্রতিটি মানুষের খাদ্য ও কর্মের অধিকার, সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতামূলক শাসনব্যবস্থা প্রভৃতি উঠে এসেছে, যা পৌরনীতি ও সুশাসনের সামগ্রিক কার্যক্রমের সামান্যই প্রতিফলিত করে। প্রকৃতপক্ষে এই শাখা আরও অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করে।
পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনার ক্ষেত্র হিসেবে পরিবার, সমাজ, পরিবেশ, ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, সম্পত্তি, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয় উল্লেখযোগ্য। পৌরনীতি ও সুশাসনে রাষ্ট্র এবং নাগরিকের বিভিনণ বিষয়াবলি এবং এর সাথে জড়িত নানাবিধ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়, যার মূল লক্ষ্য হলো জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। পৌরনীতি ও সুশাসনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- এটি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করে, নাগরিকদেরকে কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে এবং জনগণের সেবায়, রাষ্ট্রের ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। সর্বোপরি এই শাস্ত্রে নাগরিকের আচার-আচরণ ও কার্যাবলি, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে ধারাবাহিক আলোচনা উপস্থাপিত হয়, যা ঐশীর বক্তব্যে পুরোপুরি উপস্থিত নয়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ঐশীর বক্তব্য পৌরনীতি ও সুশাসনের উল্লিখিত কার্যক্রমের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে না।
৬. মুন্নার বয়স ১৪ বছর। সে সমবয়সীদের সাথে ক্লাসে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অক্ষম হওয়ায় এবং বাড়িতে অস্বাভাবিক আচরণ করায় তাকে তার বাবা একজন মানসিক ডাক্তার দেখান। ডাক্তার বলেছেন মুন্নার বয়সের তুলনায় বুদ্ধি কম। তাই তাকে বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং চিকিৎসা করাতে হবে। মুন্নার বাবা তাকে একটি বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান। সেখানে একজন সমাজকর্মী মুন্নাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে ও পড়াশোনা করতে সাহায্য করেন।
ক. Anthropos শব্দের অর্থ কী?
খ. সামাজিক বিজ্ঞান ধারণাটি বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে মুন্নাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে কোন সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞান সহায়তা দিতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে মুন্নার মতো দেশের অন্যান্য মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সমাধানে কোন সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞান কীভাবে প্রয়োগ করা যায়? বুঝিয়ে লেখ।
💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. গ্রিক শব্দ Anthropos অর্থ মানুষ।
খ. সমাজে বসবাসরত মানুষকে নিয়ে যে বিজ্ঞান অনুশীলন ও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় তাকে সামাজিক বিজ্ঞান বলা হয়।
সামাজিক বিজ্ঞানকে মূলত সমাজের বৈজ্ঞানিক পাঠ বলা হয়। কেননা সমাজ এবং সমাজের মানুষের বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা থেকে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিনণ শাখার উদ্ভব। প্রতিটি সামাজিক বিজ্ঞান সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্কের বিশেষ দিক, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে। তাই বলা যায়, সামাজিক বিজ্ঞান সমাজ সম্পর্কিত আলোচনার শাস্ত্র।
গ. উদ্দীপকে মুন্নার স্বাভাবিক আচরণে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী মনোবিজ্ঞানের সহায়তা নিতে পারেন।
মনোবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানব আচরণ। তাই সমাজকর্মে মানব আচরণ সম্পর্কিত কোনো সমস্যার সমাধানে মনোবিজ্ঞানের কৌশল ও প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন যেমন- ব্যক্তিত্বের তত্ত্ব, শিক্ষণ তত্ত্ব, মনো-সমীক্ষণ তত্ত্ব বুদ্ধি অভীক্ষণ প্রভৃতি সমাজকর্মের জ্ঞানের মৌলিক উৎস।
উদ্দীপকে ১৪ বছর বয়সী মুন্না একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বয়সের তুলনায় বুদ্ধি কম হওয়ায় তার আচরণ অন্যান্য শিশুর মতো স্বাভাবিক নয়। এজন্যই একজন সমাজকর্মী মুন্নাকে স্বাভাবিক আচরণ ও পড়াশোনা করতে সক্ষম করে তোলার প্রয়াস চালাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের আলোকে মুন্নার আচরণ বিশ্লেষণ করতে হবে। কারণ মনোবিজ্ঞান শিশুদের এ ধরনের মানসিক প্রতিবন্ধিতার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। কেবল এ বিষয়েই মুন্নার মতো বিশেষ শিশুদের সঠিক পরিচর্যার ক্রিয়া-কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। মনোবিজ্ঞানের সহায়তায় তাই সহজেই মুন্নার সমস্যার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। এভাবে উদ্দীপকে উল্লিখিত মুনণার সমস্যা সমাধানে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে সহায়তা করবে।
ঘ. উদ্দীপকে মুন্নার মতো মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের সমন্বিত প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের সমন্বিত প্রয়োগ মানব প্রকৃতি ও আচরণ সম্পর্কিত সমস্যার সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে ধাপে ধাপে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সাহায্যার্থীকে সহায়তা করা হয়। মুন্নার মতো মানসিক প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও এ পদ্ধতি ফলপ্রসূ হবে।
মানসিক প্রতিবন্ধিতা শিশুদের স্বাভাবিক আচরণকে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে শিশুরা সামাজিকভাবে অবহেলিত হয়। এ অবস্থা থেকে শিশুকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমেই তার সমস্যার ধরন নির্ণয় করতে হবে। এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সহায়ক হতে পারে। এরপর শিশুর জন্য কী ধরনের পরিচর্যা ও চিকিৎসা প্রয়োজন, সেটিও মনোবিজ্ঞানের সহায়তায় নির্ধারণ করতে হবে। একজন সমাজকর্মী এই ব্যবস্থাপত্র অনুসরণেই সমস্যাগ্রস্ত শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়তা করবেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদান করে সমস্যা মোকাবিলায় ধীরে ধীরে তাকে সক্ষম করে তুলবেন। এভাবে সমাজকর্মী শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। মুন্নার মতো মানসিক প্রতিবন্ধিতার শিকার সকল শিশুর জন্য এ ধরনের সমন্বিত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে তারা সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।
পরিশেষে বলা যায়, মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের সমস্যা সমাধানে একজন সমাজকর্মীকে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান ও সমাজকর্মের পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
৭. সালমান ও রিয়াদ উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র। সালমান ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে যে বিষয়টি পড়ছে তাতে সামাজিক সমস্যার কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে খাপ খাওয়াতে হয় তার বিবরণ আছে। অন্যদিকে রিয়াদের পাঠক্রমে মানুষের অভাব, প্রাপ্ত সম্পদ, সম্পদের বহুমুখী ব্যবহার, আর জাতীয় উন্নয়নের বিবরণ রয়েছে।
ক. জনবিজ্ঞান কী?
খ. এক জন সমাজকর্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য কেন নৃবিজ্ঞানির জ্ঞান প্রয়োজন হয়?
গ. সালমান ও রিয়াদের পাঠ্য বিষয় দুটি তুমি কীভাবে চিহ্নিত করবে? আলোচনা করো।
ঘ. সামাজিক উন্নয়নের জন্য সালমান ও রিয়াদের পঠিত বিষয় দুটি কীভাবে পরস্পরকে সাহায্য করে। তা তোমার পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. জনবিজ্ঞান হলো জনসংখ্যা বিষয়ক বিজ্ঞান, যা জনসংখ্যা ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে।
খ. মানুষকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয় বলে একজন সমাজকর্মীর সমস্যা সমাধানে নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োজন হয়।
সমাজকর্ম মানুষের সামাজিক, মানসিক ও অস্বাভাবিক আচার-আচরণ সম্পর্কিত বহুমুখী সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। এজন্য সমাজকর্মে ব্যক্তির দৈহিক গঠন, আকৃতি, প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন অত্যাবশ্যকীয়। জৈবিকভাবে এই বিষয়গুলো সমস্যা সৃষ্টির পেছনে ক্রিয়াশীল থাকে। সমাজকর্ম বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দৈহিক নৃ-বিজ্ঞানের এই জ্ঞান প্রয়োগ করে। তাছাড়া সাংস্কৃতিক নৃ-বিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে ব্যক্তির মূল্যবোধের অভাব সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের আলোকে সালমান ও রিয়াদের পাঠ্যবিষয় দুটিকে চিহ্নিত করা যায়।
সালমান তার ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে যে বিষয় নিয়েছে সেটি সামাজিক সমস্যার কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি এর বিজ্ঞানসম্মত সমাধান ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলার কৌশল বর্ণনা করে। এ দিকগুলো বৈশিষ্ট্যগতভাবে সমাজকর্মকে নির্দেশ করে। আধুনিক যুগে সমাজকর্ম একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পেশা হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার আলোকে সেগুলোর বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দেয়। এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলার কৌশলও বর্ণনা করে।
অন্যদিকে, রিয়াদের অধ্যয়নরত বিষয় মানুষের অভাব, প্রাপ্ত সম্পদ, সম্পদের বহুমুখী ব্যবহার, আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও জাতীয় উন্নয়নের বিবরণ নিয়ে আলোচনা করে। রিয়াদের পঠিত বিষয়টি তাই অর্থনীতিকে নির্দেশ করে। অর্থনীতি হলো সম্পদের উৎপাদন ও বণ্টন সংক্রান্ত ব্যবহারিক বিজ্ঞান। এ শাস্ত্র সীমিত সম্পদের বিকল্প ব্যবহার নির্দেশ করার পাশাপাশি উৎপাদনের উপকরণগুলোর বিকল্প ব্যবহার যোগ্যতাও চিহ্নিত করে। মোট কথা, সম্পদের উৎপাদন, পরিবর্তন, ভোগ, বিনিময়, বণ্টন, সদায় সংক্রান্ত মানুষের কার্যাবলি আলোচনাই অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য। সুতরাং বলা যায়, সালমান সমাজকর্ম ও রিয়াদ অর্থনীতিকে ঐচ্ছিক পাঠ হিসেবে নিয়ে পড়াশোনা করছে।
ঘ. সমাজকর্ম ও অর্থনীতি বিষয় দু'টি পরস্পরকে পরিপূরকভাবে সাহায্য করে।
পাঠ্যপুস্তকের আনের আলোকে ব্যাখ্যা করতে গেলে দেখা যায় সমাজকর্ম ও অর্থনীতি উভয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। দুটি বিষয়ই চেষ্টা করে সম্পদের সর্বোত্তম ও সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করে সীমিত সম্পদ ও অসীম চাহিদার মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করতে। এছাড়া সমাজকর্ম ও অর্থনীতি উভয়েই সমাজের উনণয়ন করতে চায় এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা রয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যেমন সামাজিক উন্নয়নের সহায়তা দরকার হয়, তেমনিভাবে সামাজিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহযোগিতা অপরিহার্য। আবার, সমাজকর্মের বহুমুখী জ্ঞানের অন্যতম উৎস হলো অর্থনীতি। অর্থনীতির মৌলিক জ্ঞান ব্যতীত সামাজিক সমস্যা সমাধানে মানুষকে সাহায্য করা যায় না। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, ভিক্ষাবৃত্তি, অধিক জনসংখ্যা ইত্যাদি সমস্যাসমূহ অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এ সমস্যাসমূহ প্রতিরোধে সমাজকর্ম কাজ করে। সমাজকর্ম পেশায় যেমন পেশাগত সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন, তেমনিভাবে যেকোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট নীতি বিবেচনায় আনতে হয়। আর এসব নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমাজকর্ম অর্থনীতিকে সাহায্য করতে পারে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, সামাজিক উন্নয়নের জন্য সালমান ও রিয়াদের পঠিত বিষয় দুটি অর্থাৎ সমাজকর্ম ও অর্থনীতি একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। দুটি বিষয়ই নীতি, কার্যক্রম পরিচালনা এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিক থেকে পরস্পরকে সাহায্য করার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের গতিকে তরান্বিত করে।
৮. তানজিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে যা মৌলিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত এবং মানুষ ও প্রাণীর আচরণ, আবেগ, প্রেষণা, ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধাঙ্ক নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু তার বন্ধু যাকোব একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত একটি ব্যবহারিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে যা একই সাথে বিজ্ঞান, কলা ও পেশা হিসেবে পরিচিত।
ক. অর্থনীতির সংজ্ঞা দাও।
খ. নৃবিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
গ. তানজিনের পঠিত বিষয়টির নাম উল্লেখপূর্বক আলোচনা কর।
ঘ. তানজিন ও যাকোবের পঠিত বিষয় দুটির মধ্যে বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সীমাহীন অভাব অনুভবকারী ব্যক্তি ও সমাজ কীভাবে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে অভাব পূরণের জন্য পছন্দমতো বণ্টন করে তা নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই অর্থনীতি।
খ. নৃবিজ্ঞান বলতে মানুষের বিজ্ঞানকে বোঝায়। নৃবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে 'Anthropology'। যা গ্রিক শব্দ 'Anthropos' অর্থ 'মানুষ' এবং 'Logos' অর্থ 'বিজ্ঞান' থেকে উদ্ভূত। এ বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষের অতীতকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিবর্তনের ধারাকে পর্যালোচনা করা হয়। সাধারণত মানুষের জন্ম পরিচয়, জন্ম ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিবার, রাষ্ট্র ধর্ম প্রভৃতি প্রথা ও প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়েই নৃবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
গ. উদ্দীপকের তানজিনের পঠিত বিষয়টি সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা মনোবিজ্ঞান।
সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হলো মনোবিজ্ঞান। এ শাস্ত্র মানুষ ও প্রাণীর সম্পর্কে মনোবিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ করে। মানুষ বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন বিশেষ আচরণ করে মনোবিজ্ঞান এ প্রশেণর উত্তর অনুসন্ধান করে। বাহ্যিক আচরণের পেছনে যে চালনা শক্তি বা অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া রয়েছে তা আবিষ্কার করা এর মূল লক্ষ্য। বাহ্যিক আচার-আচরণের পেছনে প্রভাব বিস্তারকারী অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলো হলো- প্রত্যক্ষণ, প্রেষণা, শিক্ষণ, আবেগ, চিত্তন, অনুভূতি, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি। এগুলো মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তুর পরিধিভুক্ত। এছাড়া সমাজস্থ ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, সামাজিক পরিবেশ, রীতিনীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ নিয়েও মনোবিজ্ঞান আলোচনা করে।
উদ্দীপকের তানজিন যে বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে তার বিষয়বস্তু হলো মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা। এছাড়া মানুষের আচরণের পেছনে যেসব চালনা শক্তি রয়েছে তিনি সেগুলো উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন। তার এ শখের বিষয়টি মনোবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে। কেননা মনোবিজ্ঞানও মানুষ ও প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং এর পেছনে দায়ী কারণ অনুসন্ধান করে। তাই বলা যায়, তানজিনের পঠিত বিষয় হলো সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা মনোবিজ্ঞান।
ঘ. উদ্দীপকের তানজিন ও যাকোবের পঠিত বিষয় দুটি যথাক্রমে মনোবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম। এদের মধ্যে যেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান, তেমনি মৌলিক বৈসাদৃশ্যও বিদ্যমান।
সমাজকর্ম হলো মানুষের সন্তোষজনক জীবন-যাপন ও সামাজিক সম্পর্ক লাভের জন্য সুসংগঠিত সাহায্যকারী পেশা। আর, মনোবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় মানব আচরণ। এটি সমাজে মানুষ বা প্রাণীর সামগ্রিক আচার-আচরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন।
উদ্দীপকে নির্দেশিত তানজিনের পঠিত বিষয় মনোবিজ্ঞান মানুষ ও প্রাণীর আচরণ, আবেগ, প্রেষণা, ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধাঙ্ক নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, যাকোবের পঠিত বিষয় সমাজকর্ম বিজ্ঞানভিত্তিক প্রায়োগিক বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সমাজ থেকে বিভিন্ন জটিল ও বহুমুখী সমস্যা দূরীকরণে সচেষ্ট। মনোবিজ্ঞান মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীর আচরণ নিয়ে ব্যাখ্যা করে কিন্তু সমাজকর্ম কেবল মানব আচরণ ও এ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। মনোবিজ্ঞানের পরিধি অপেক্ষা সমাজকর্মের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক এবং বিস্তৃত। সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে স্বীকৃত। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণের সাথে সম্পর্কিত জৈবিক ও সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞান মানুষের সবরকম মানবিক গুণাবলি ও ক্ষমতা পরিমাপের প্রণালী উদ্ভাবন করে। অন্যদিকে সমাজকর্ম সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ করে।
৯. সমাজকর্মী জামি অপরাধ সংশোধন ও শ্রমকল্যাণের ওপর পিএইচডি অর্জন করার জন্য আবেদন করেছেন। তার তত্ত্বাবধায়ক তাকে পরামর্শ দিয়েছেন এ সম্পর্কিত বিষয়ে সাফল্য অর্জন করতে হলে মানব আচরণ-সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। জামি জানাল সে মানব বিকাশ ও আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করছে তার কাজের সহায়তার জন্য।
ক. Anthropo শব্দের অর্থ কী?
খ. অর্থনীতির জন্য সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য কেন?
গ. উদ্দীপকটির কোন বিষয়ের জ্ঞান জামিকে তার কাজে সহায়তা করছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাফল্য লাভের জন্য তত্ত্বাবধায়ক জামিকে উক্ত বিষয়ের জ্ঞানের পরামর্শ দেন-বিশ্লেষণ কর।
💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. Anthropo শব্দের অর্থ মানুষ।
খ. সমাজের অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সমাজকর্মের জ্ঞান অপরিহার্য।
সমাজকর্ম সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। এজন্য সমাজকর্ম সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব প্রদান করে। অর্থনীতি সমাজকর্মের এ নীতি অনুসরণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গতিশীল করতে পারবে। সমাজক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে। সমাজকর্মের এই জ্ঞান অনুশীলন করে অর্থনীতিও মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারবে। সীমিত সম্পদের বিকল্প ব্যবহার সম্পর্কে সমাজকর্ম আলোচনা করে। অর্থনীতি সমাজকর্মের এ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মানুষের অসীম অভাব পূরণ করতে সক্ষম হবে।
গ. উদ্দীপকের বর্ণনা অনুযায়ী মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মী জামিকে তার কাজে সহায়তা করেছে।
মনোবিজ্ঞান এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মতভাবে অনুধ্যান করে। অন্যকথায় বিভিন্ন অবস্থা বা পরিবেশে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী কী ধরনের আচরণ করে বা ভবিষ্যতে করতে পারে। এবং কেন এমন আচরণ করে, তার আলোচনাই মনোবিজ্ঞান। আধুনিক মনোবিজ্ঞানে উপলব্ধি, অনুভূতি, জ্ঞান প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আবেগ-উচ্ছ্বাস, উৎসাহ-প্রচেষ্টা প্রভৃতি মানসিক ক্রিয়াকান্ডের ওপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
সমাজকর্মী জামি অপরাধ সংশোধন এবং শ্রমকল্যাণের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার জন্য আবেদন করেছে। এ কাজে সহায়তার জন্য সে মানব বিকাশ ও আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করেছে। অর্থাৎ জমি মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করেছে। কেননা মনোবিজ্ঞানই মানব বিকাশ ও মানুষের আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করে। সুতরাং বলা যায়, মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানই সমাজকর্মী জামিকে তার কাজে সহায়তা করছে।
ঘ. পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাফল্য লাভের জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সমাজকর্মী জামি মানব আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্থাৎ মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জনের পরামর্শ দিলেন।
সমাজকর্ম পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে মানুষকে সক্ষম করে তুলতে চায়। এজন্যে সমাজকর্মীকে মানবীয় আচরণ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হয় যা মনোবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে সম্ভব। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, প্রতিটি মানুষ তার সুপ্ত প্রতিভার মাধ্যমে তার সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম। তাই সমাজকর্মীগণ মানুষকে সহায়তা। করতে গিয়ে তাদের সুপ্ত প্রতিভা জানার জন্যে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতির ওপর নির্ভর করেন।
যেকোনো পরিকল্পনা ও কর্মসূচির সফলতা সংশ্লিষ্ট জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে। সমাজকর্মীগণ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়নকালে মানবীয় আচরণ ও আগ্রহ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে তাদেরকে মনোবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হয়। মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান থেকে সমাজকর্মীগণ নিজস্ব আবেগ, অনুভূতি ও আচরণ সম্বন্ধে জেনে এগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত মানুষের সাথে উপযুক্ত আচরণ ও সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। মানুষ যখন বিভিন্ন মানসিক চাপে অস্বাভাবিক আচরণ করে তখন তার চিকিৎসার জন্যে সমাজকর্মীগণ মনোচিকিৎসা সমাজকর্মের কৌশল প্রয়োগ করেন। আর এজন্যে তাদেরকে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান পড়তে হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের জামি একজন সমাজকর্মী। সমাজকর্মী হিসেবে সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন জ্ঞান সহায়তা করে থাকে। এ কারণেই তত্ত্বাবধায়ক তাকে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করতে বলেছেন।
১০. মকবুল স্যার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের তাদের বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কে ধারণা দেন। তাছাড়া গণতান্ত্রিক আদর্শ বিকাশ ও নাগরিকের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন। তিনি রাষ্ট্রের ভূমিকা বিশদ আলোচনা সাপেক্ষে সামাজিক নিরাপত্তার কথা বলেন। যা রাষ্ট্র নাগরিককে দিতে সচেষ্ট।
ক. জনবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী
খ. সমাজবিজ্ঞানকে কেন সমাজের বিজ্ঞান হয়?
গ. মকবুল সাহেবের বিষয়বস্তু কোন সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটির উল্লিখিত শেষোন্ত ভূমিকার ক্ষেত্রে সমাজকর্মের কর্মসূচির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. জনবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ Demography.
খ. সমাজবিজ্ঞান সমাজের সামগ্রিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন করে বলে একে সমাজের বিজ্ঞান বলা হয়। সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজের পূর্ণাঙ্গ বস্তুনিষ্ঠ পাঠ। সমাজের সামগ্রিক দিক যেমন সমাজের বিকাশ, সমাজ কাঠামো, সামাজিক কার্যাবলি, সামাজিক স্তরবিন্যাস, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠান, সামাজিক সম্পর্ক ও আচরণ, সামাজিক আন্তঃক্রিয়া ও মিথস্ক্রিয়া, সামাজিক গতিশীলতা, সামাজিক পরিবর্তন ও এর ধারা, ধর্ম, আইন প্রভৃতি সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। সমাজের সার্বিক দিক আলোচনা করার জন্য সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের বিজ্ঞান বলা হয়।
গ. মকবুল সাহেবের বিষয়বস্তু পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্তর্ভুক্ত।
পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics. ল্যাটিন শব্দ Civics ও Civitas হতে উদ্ভূত। যার অর্থ যথাক্রমে নাগরিক এবং নগররাষ্ট্র। অন্যদিকে সুশাসন হলো রাষ্ট্রের সামগ্রিক কার্যাবলিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনকল্যাপের যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করা। সুতরাং পৌরনীতি ও সুশাসন হলো সেই শাস্ত্র যাতে নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য পালন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের কার্যাবলি ও সুশাসনের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্রে নাগরিকদের আচার-আচরণ, কার্যাবলি, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে ধারাবাহিক পর্যালোচনা করে।
উদ্দীপকে বর্ণিত মকবুল স্যার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের তাদের বিভিন্ন অধিকার সম্পর্কে ধারণা দেন। তাছাড়া গণতান্ত্রিক আদর্শ বিকাশ ও নাগরিকের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন। তিনি রাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তার কথা বলেন। তার আলোচ্য এসকল বিষয় পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, মকবুল সাহেব পৌরনীতি ও সুশাসন সম্পর্কে আলোচনা করেন।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শেষোক্ত ভূমিকাটি হলো সামাজিক নিরাপত্তা। সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমাজকর্ম কর্মসূচির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক নিরাপত্তা মূলত অক্ষম ও অসহায় ব্যক্তির জন্য সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি। এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সমাজকর্ম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ব্যতীত সমাজকর্মের বৃহত্তর লক্ষ্যার্জন সম্ভব নয়। সমাজকর্মের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অত্যন্ত সহায়ক। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মৌল মানবিক চাহিদা। এ কারণে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্ম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। শিল্প বিপ্লবোত্তর সমাজের জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিনণ সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির উদ্ভব হয়েছে। সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা এ সকল কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে প্রয়োগ করা হয়। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি সমাজের দুস্থ, অসহায় জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিসমূহকে অধিক বাস্তবমুখী করে তোলে।
উদ্দীপকে মকবুল স্যার রাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা করতে গিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার কথা বলেন। একটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম উক্ত কর্মসূচিগুলোকে বাস্তবমুখী ও কার্যকরী করে তোলে।
0 Comments:
Post a Comment