HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সমাজকর্ম সম্পর্কিত প্রত্যয়
সাধারণ অর্থে প্রত্যয় বলতে কোনো কল্পনাকৃত ধারণা বা বিশ্বাসকে বোঝায়। সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে প্রত্যয় হলো তত্ত্বের অধীনস্ত বিষয়-ধারণা। সামাজিক তত্ত্বসমূহ বিভিনণ প্রত্যয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, ব্যবহৃত প্রত্যয়সমূহের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কগত পর্যালোচনার ভিত্তিতেই কোনো সামাজিক বিষয়ের তত্ত্ব গঠিত হয়। সুতরাং একটি একাডেমিক বিষয় হিসেবে সমাজকর্ম সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভের জন্য সমাজকর্ম সম্পর্কিত প্রত্যয়সমূহ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।

সমাজকল্যাণের ধারণ
সমাজবদ্ধ জীবনযাপন থেকেই মানবকল্যাণ তথা সমাজকল্যাণের প্রেরণা সৃষ্টি হয়। আর এর সাথে যুক্ত হয় ধর্মীয় অনুপ্রেরণা। বস্তুত অপরের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভূতি এবং ধর্মের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে দরিদ্র অসহায় অক্ষম মানুষকে সহযোগিতার মনোভাব থেকেই ধীরে ধীরে সমাজকল্যাণ বৃহত্তর পরিসরে বিস্তৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লবের ফলশ্রুতিতে সমাজকাঠামো পরিবর্তনের সাথে সাথে সেবা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রও পরিবর্তিত হয়।

আর এর ফলে ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুভূত হয় আধুনিক সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার। মূলত পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তিত নতুন নতুন ও জটিল সমস্যার সমাধানে বিকাশ ঘটে পেশাগত সমাজকর্মের। সমাজকল্যাণ সমাজকর্মের সনাতন রূপ আর সমাজকর্ম সমাজকল্যাণের পরিশীলিত বৈজ্ঞানিক রূপ।

সমাজসেবা
সমাজকর্মের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট প্রত্যয়গুলোর মধ্যে সমাজসেবা অন্যতম। অতীতে সমাজসেবা বলতে অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য গৃহীত সেবাকার্যক্রমকে বোঝানো হতো। সনাতন সমাজসেবা ছিল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গৃহীত ঐচ্ছিক কার্যক্রম। এগুলো তেমন সংগঠিতও ছিল না। বর্তমানে সমাজসেবা বলতে সকল স্তরের মানুষের কল্যাণে এবং নিরাপত্তার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত সকল কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে। সমাজকর্ম অভিধানের ভাষায়, সমাজে মানুষের স্বাস্থ্য ও সার্বিক কল্যাণ বিধানে সমাজকর্ম এবং অন্যান্য পেশাধারীদের তৎপরতাই হচ্ছে সমাজসেবা।

সামাজিক নিরাপত্তা
সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবমূল্য এ দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সমাজকর্মের সাথে সম্পর্কিত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ যে ধারণার উদ্ভব হয়েছে তা হলো সামাজিক নিরাপত্তা। বস্তুত বেশকিছু প্রতিকূল অবস্থা হতে নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত এক ব্যবস্থার নাম হলো সামাজিক নিরাপত্তা। আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করা একদিকে যেমন রাষ্ট্রের কর্তব্য, অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা লাভ নাগরিকদের মানবিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।

বেশ কিছু ঘটনা বা বিষয় যেমন- বেকারত্ব, রোগ, অসুস্থতা, পঙ্গুত্ব, বার্ধক্য, কর্মকালীন দুর্ঘটনা ইত্যাদি মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যেমন প্রতিকূল তেমন ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকিপূর্ণ ও সংকটময় জীবন বা পরিস্থিতিমানুষের অর্থনৈতিক, শারীরিক এবং নৈতিক ক্ষতিসাধন করে থাকে। এক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজ বা রাষ্ট্র তার নাগরিকদেরকে বিশেষ বিপদকালীন সময়ে বিপদ হতে রক্ষার চেষ্টা করে।

সামাজিক পরিবর্তন
পরিবর্তন হলো এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় রূপান্তর। সেদিক থেকে বলা যায় যে, সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজের এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় রূপান্তর। তবে সমাজের এই রূপান্তর বা পরিবর্তন সব সময়ই একরকম হয় না। সমাজ কখনো উন্নতির পথে অগ্রসর হয় আবার কখনো সমাজের গতি ব্যাহত হয়। সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক কাঠামো, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, ধর্মীয় বিশ্বাস, রীতিনীতি, অনুশাসন ইত্যাদির সম্মিলিত বা সামষ্টিক রূপই হলো সমাজব্যবস্থা।

সামাজিক পরিবর্তনে সমাজের এই সমস্ত উপাদানগুলো তার পুরাতন অবস্থা হতে নতুন অবস্থায় উন্নীত হয়। সমাজবিজ্ঞানী স্যামুয়েল কোয়েনিং সামাজিক পরিবর্তন বলতে মানুষের জীবনযাপন রীতিতে সংঘটিত পরিবর্তনকে বুঝিয়েছেন যা সাধারণত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন উপাদানের কারণে হয়ে থাকে।

অন্যদিকে রবার্ট এল. বার্কার তাঁর সমাজকর্ম অভিধানে সামাজিক পরিবর্তন বলতে সময়ের ব্যবধানে একটা সমাজের আইন, আদর্শ, মূল্যবোধ ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাতে যে পরিবর্তন আসে তাকেই বুঝিয়েছেন। পরিবর্তনের কারণ একটি নয় বরং বহুমাত্রিক। অর্থাৎ সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্র কখনো স্থায়ী, কখনোবা অস্থায়ী; কখনো প্রগতিশীল কখনো পশ্চাৎমুখী, কখনো পরিকল্পিত, কখনো অপরিকল্পিত; কখনো একমুখী, কখনো বহুমুখী হতে পারে।

সামাজিক উন্নয়ন
সামাজিক উন্নয়ন ধারণাটি উন্নত, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, সরকারি, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নয়ন মূলত একটি গতিশীল ধারণা এবং এটি সাধারণত অনুন্নত অবস্থা হতে উন্নত অবস্থায় উত্তরণকে নির্দেশ করে। উন্নয়ন হলো একটি ইতিবাচক পরিবর্তন প্রক্রিয়া। অতএব বলা যায় সামাজিক উন্নয়ন হলো সমাজের এক ইতিাচক পরিবর্তন যার মাধ্যমে সমাজ অপেক্ষাকৃত অনুন্নত অবস্থা হতে উন্নত বস্থায় উপনীত হয়।

একটি সমাজব্যবস্থায় তখনই সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে বলে ধরা হয় যখন ঐ সমাজের সাধারণ মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অভ্যাস, ধ্যান-ধারণা, আচার-আচারণ সকল ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসে এবং একই সাথে জনগণের গড় আয়ুস্কাল বৃদ্ধি পায়, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস পায়, বেকারত্ব হ্রাস পায়, ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং জনগণের অংশগ্রহণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়। সামাজিক উন্নয়ন হলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত সকল দিকেরই ইতিবাচক পরিবর্তন।

সামাজিক নিয়ন্ত্রণ
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ মূলত একটি পদ্ধতি বা কৌশল। এই পদ্ধতি বা কৌশল সমাজের সদস্যদের অসংযত ও সমাজ বিরোধী আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কু-প্রবৃত্তিকে দমন করে তাদের সাথে সামাজিক সংহতি ও শৃঙ্খলাবোধ জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে সমাজকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। প্রত্যেকটি সমাজেই মানুষ কতগুলো নিয়মকানুন, রীতিনীতি মেনে চলে এবং এর ফলে সমাজব্যবস্থা সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়ে উঠে। অন্যদিকে, মানুষ যখন এগুলোর পরিপন্থী কাজ করে তখন সমাজে দেখা দেয় নানা বিশৃঙ্খলা আর এই বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতেই সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সৃষ্টি।

সামাজিক আন্দোলন
সামাজিক আন্দোলন ও সমাজসংস্কার আপাতদৃষ্টিতে এক মনে হলেও দুটি ভিন্ন বিষয়। পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশে যেসব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাদের মধ্যে সামাজিক আন্দোলন ও সমাজসংস্কার অন্যতম। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজের কাঙ্খিত পরিবর্তন বা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার পদক্ষেপ গৃহীত হয়। সামাজিক আন্দোলন হলো কাঙ্খিত সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে পরিচালিত উদ্যোগ।

সামাজিক আন্দোলন সম্পর্কে Oxford English Dictionary তে বলা হয়েছে, কোনো নীতি বা লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য একদল লোক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। সমাজকর্ম অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, “সামাজিক আন্দোলন হলো এমন একটি যৌথ উদ্যোগ যাতে সমাজের অধিকাংশ মানুষ কোনো আইন বা সামাজিক আদর্শ পরিবর্তনে অংশগ্রহণ করে থাকে।’’ সুতরাং বলা যায় যে, বিদ্যমান সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন, সমস্যা সমাধান, অসন্তোষ দূরীকরণ ও শৃঙ্খলা আনয়নে মানুষের সচেতন ও সংঘবদ্ধ প্রয়াসই সামাজিক আন্দোলন।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সামাজিক আন্দোলন সংঘটিত হয়। বর্তমান সময়ে সামাজিক আন্দোলন হলো মানবাধিকার আন্দোলন, নারী অধিকার আন্দোলন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ইত্যাদি। 

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. সেলিনা বেগম একজন নতুন উদ্যোক্তা। তিনি সমাজের পিতৃ মাতৃহীন শিশুদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেলিনা বেগম আরও চিন্তা করেন যে, যদি এমন কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেত, যেখানে কৃষকদের উদ্বৃত্ত ফসল জমা করে তা দিয়ে দুঃসময়ে সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা যাবে।
ক. 'Inn'- এর বাংলা প্রতিশব্দ কী?
খ. দানশীলতাই ঐতিহ্যগত সমাজকল্যাণের মূলভিত্তি ব্যাখ্যা করো।
গ. সেলিনা বেগমের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য বর্ণনা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন সময়ের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. 'Inn'- এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো সরাইখানা।

খ. দানশীলতা ঐতিহ্যগত সমাজকল্যাণের মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। প্রাচীনকালে সামাজিক বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হতো ধর্ম ও দর্শনের অনুপ্রেরণা থেকে। তাছাড়া মানবতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধও বিশেষভাবে কার্যকর ছিল। এক্ষেত্রে দানশীলতা ছিল একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কেননা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দানশীলতাভিত্তিক বিভিন্ন কার্যকলাপকে মহান করে দেখা হতো। সেইসাথে এ ধরনের কাজকে পরকালের মুক্তির উপায় হিসেবেও বিবেচনা করা হতো। এর প্রেক্ষিতেই মানুষ ধর্মীয় অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দানশীলতাভিত্তিক সমাজকল্যাণের সূত্রপাত ঘটায়।

গ. সেলিনা বেগমের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে এতিমখানা।
সাধারণত এতিম বলতে সেসব শিশুকে বোঝায় যাদের মা-বাবা উভয়ই কিংবা তাদের দুজনের একজন বেঁচে নেই। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ ধরনের এতিম ও অসহায় শিশুদের লালন-পালনের ব্যবস্থা করা হয় তাকেই এতিমখানা বলা হয়। এখানে সাধারণত ৫ বছর বয়সী শিশুদের দায়িত্বভার গ্রহণ করা হয়। সেই সাথে পূর্ণবয়স্ক বা ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত এদের ভরণ-পোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। উদ্দীপকের সেলিনা বেগমের প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। উদ্দীপকের সেলিনা বেগম সমাজের পিতৃমাতৃহীন অসহায় শিশুদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যা এতিমখানাকে নির্দেশ করছে। এতিমখানা গঠনের কতগুলো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। এতিমখানায় এতিম ও অসহায় শিশুদের আশ্রয় ও ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করে। এর পাশাপাশি এখানে এতিম শিশুদের সাধারণ, ধর্মীয় ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এতিমখানা এতিমদের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের প্রচেষ্টা চালায়। এর ফলে তারা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা পায়। এছাড়া এতিমখানাগুলো শিশুদের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। সেখানে এতিম শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়তা করা হয়। এতিমখানাগুলো সাধারণ ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা শেষে এতিমদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। উদ্দীপকে সেলিনা বেগমও সমাজের পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের জন্য এতিমখানা গড়ে তোলেন। যা এসব উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ধর্মগোলা। তৎকালীন সময়ে যার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। 
ধর্মগোলা হলো একটি খাদ্যশস্য সংরক্ষণ পদ্ধতি। ফসল কাটার মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে ধর্মগোলায় জমা রাখা হতো। অভাব বা দুর্ভিক্ষের সময় বিনা সুদে তা বিতরণের ব্যবস্থা করা হতো। তবে দুর্ভিক্ষ ছাড়াও ধর্মগোলা থেকে অভাবের সময় কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়া হতো। সেক্ষেত্রে শর্ত থাকতো পরবর্তী মৌসুমে ফসল উঠলে তা পরিশোধ করতে হবে।
ব্রিটিশ শাসনামলে স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে দুর্ভিক্ষ ও আপদকালীন খাদ্য সংকট মেটাতে ধর্মগোলা সৃষ্টি হয়। সেই সময়ে ব্রিটিশদের শোষণ, চিরস্থায়ী বন্দোবসেত্মর ফলে সৃষ্ট জমিদারি প্রথার কৃষ্ণল এবং বিশ্বযুদ্ধজনিত দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার লক্ষ্যে ধর্মগোলা গড়ে ওঠে। ধর্মগোলার মাধ্যমে অনাহারী ও অসুবিধগ্রস্ত মানুষ আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা পেয়ে বিপদের সময় উপকৃত হতো। তবে শুধু দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগণের প্রাণ রক্ষার জন্যই নয়; গ্রাম্য মহাজনদের অত্যাচার প্রতিরোধেও এই ব্যবস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করত।
উদ্দীপকের সেলিনা বেগম দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের চিন্তা করেছেন যেখানে কৃষকদের উদ্বৃত্ত ফসল জমা করে তা দিয়ে দুঃসময়ে সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা যাবে। এটি ধর্মগোলাকে ইঙ্গিত করছে। আর তৎকালীন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানটি পরিদ্র কৃষকদের রক্ষায় উপরোল্লিখিতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান ধর্মগোলা অসহায় মানুষকে রক্ষা ও তৎকালীন দরিদ্র কৃষকদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

২. পিন্টু ও হেলাল সমাজকর্মে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মাঠকর্মে নিয়োজিত আছে। তারা একটি সরকারি শিশু পরিবারের দায়িত্ব পেয়েছে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের সাথে আলাপকালে তারা জানতে পারল যে, তিনি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন। শিশু পরিবারের মেট্রন কিছু সমস্যার কথা বললে তিনি তাকে অপারগতার জন্য বকাঝকা করেন। শিশুদের বিশৃঙ্খলাজনিত অপরাধের জন্য তিনি শাস্তির ব্যবস্থাও করলেন। পিন্টু ও হেলালের কাছে এগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে হলো।
ক. উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে সমাজকর্ম বিষয়টি কোন সাল থেকে চালু করা হয়?
খ. পেশার ক্ষেত্রে সামাজিক স্বীকৃতি কথাটি ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে তত্ত্বাবধায়কের জন্য যে বিষয়ের জ্ঞান থাকা আবশ্যক ছিল পাঠ্যপুস্তকের আলোকে তা বর্ণনা করো। 
ঘ. শিশুদের উন্নয়নে উদ্দীপকে পিন্টু ও হেলালের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৯৬৪ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে সমাজকর্ম বিষয়টি চালু করা হয়।

খ. যেকোনো পেশার একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক স্বীকৃতি। কোনো কাজ কল্যাণমূলক ও দক্ষতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক স্বীকৃতি না পেলে সেটি পেশা হিসেবে বিবেচিত হবে না। যেমন লাইসেন্স বা সনদবিহীন ডাক্তারি, ওকালতি ইত্যাদি। সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমেই পেশা পরিপূর্ণতা লাভ করে। সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়া কোনো বৃত্তিকে পেশা বলা যাবে না।

গ. উদ্দীপকে তত্ত্বাবধায়কের সমাজকর্ম বিষয়ের জ্ঞান থাকা আবশ্যক ছিল। সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধনই সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমাজকর্ম উদ্দেশ্যভিত্তিক বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে কাঙি্ক্ষত ও গঠনমূলক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য। 
উদ্দীপকে পিন্টু ও হেলাল একটি সরকারি শিশু পরিবারে মাঠকর্ম অনুশীলন করছে। এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন। এ থেকে বোঝা যায় তিনি তার পেশাগত দায়িত্ব সম্পর্কে আনেন না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সমস্যার কথা মেট্রন তাকে জানালে তিনি তা সমাধান না করে বরং তাকে বকাঝকা করেন। এছাড়া শিশুদের বিশৃঙ্খলাজনিত অপরাধের জন্য তিনি তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন। তত্ত্বাবধায়কের এ সব কাজ সঠিক নয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান তাকে বিশেষভাবে সহায়তা করবে। কেননা সমাজকর্মে বিশ্বাস করা হয় শাস্তি নয় সংশোধনের মাধ্যমে মানুষের আচরণ পরিবর্তন করা যায়। এছাড়া সমাজকর্ম যে কোনো সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সমাজকর্মের এই জ্ঞানের আলোকে শিশু পরিবারটির তত্ত্বাবধায়ক তার প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। সেই সাথে সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু তা করেন নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের তত্ত্বাবধায়কের জন্য সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োজন ছিল।

ঘ. উদ্দীপকের শিশুদের উন্নয়নে সরকারি শিশু পরিবার তথা এতিমখানার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
সনাতন সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এতিমখানা অন্যতম। পিতৃ মাতৃহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু, অসহায়, দুস্থ শিশুদের লালন-পালনের ব্যবস্থা যে প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাকে এতিমখানা বলে। এর মাধ্যমে একজন অনাথ ও অসহায় শিশুকে উপযুক্ত শিক্ষা ও সুন্দর পরিবেশে রেখে দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে় তোলা সম্ভব হয়। 
এতিমখানার মাধ্যমে শিশুদের পুনর্বাসন, বিবাহের ব্যবস্থা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। একজন এতিম শিশু যাতে উপযুক্ত শিক্ষা ও পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এতিমখানা কাজ করে। সেই সাথে এতিম শিশুদের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে। উদ্দীপকের পিন্টু ও হেলাল মাঠকর্মের সময় সরকারি শিশু পরিবারে কাজ করছে। কিন্তু তারা দেখতে পায়, এখানে সামান্য সমস্যাতেই শিশুদের শাস্তির আওতায় আনা হয়। যা শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ও মনো-দৈহিক উন্নয়নকে বাধা দেয়। সেই সাথে এতিমখানা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অথচ অসহায় এ সমস্ত শিশুর যথার্থ বিকাশের জন্য যত্ন ও ভালোবাসা প্রয়োজন। যা নিশ্চিত করতে এতিমখানার বিকল্প নেই। তাই বলা যায় যে, শিশুদের উন্নয়নে পিন্টু ও হেলালের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা অপরিসীম।

৩. রোকসানা আক্তার মেধাবী শিক্ষার্থী বলেই পরিচিত ছিলেন। তার গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না বলে শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পেত না। বিশেষ করে মেয়ে শিশুরা। কারণ মেয়েরা দূরে পড়তে গেলে পর্দা নষ্ট হবে। তাই রোকসানা নিজ বাড়ির সামনে একটি ছোট্ট ঘরে মেয়েদের শিক্ষাদানের কাজ শুরু করেন। আজ তার গ্রামের মেয়েরা শহরেও পড়তে যায়। তার সেই ছোট পাঠশালা আজ পূর্ণাঙ্গ বিদ্যালয়। তিনি নিজেও ৯ ডিসেম্বর একটি পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন।
ক. বিধবা বিবাহের সাথে কার নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত?
খ. সামাজিক আন্দোলনের ফল হল সমাজ সংস্কার ব্যাখ্যা করো।
গ. রোকসানার কাজের সাথে যে মহিয়সী নারীর কাজের মিল পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকের আলোকে তার অবদান বর্ণনা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে রোকসানার মতো আরো অনেকেরই এই কাজে এগিয়ে আসা জরুরি- এ বিষয়ে তোমার মতামত দাও। 

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বিধবা বিবাহের সাথে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

খ. সমাজে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে প্রাথমিকভাবে তা সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়।
সমাজে অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর প্রথা দূর করতে প্রতিষ্ঠান, রীতিনীতি, বিশ্বাস মূল্যবোধ প্রভৃতির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এ ধরনের সংস্কারের দায়িত্ব সমাজহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ ও সরকারের ওপর ন্যস্ত হয়। আর এ সকল অবাঞ্ছিত বা ক্ষতিকর অবস্থা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সামাজিক আন্দোলনের সূচনা হয়। এই সামাজিক আন্দোলনই সমাজ সংস্কারের পথকে প্রশস্ত করে।

গ. রোকসানার সাথে বেগম রোকেয়ার কাজের মিল পাওয়া যায়। 
অবিভক্ত বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে বেগম রোকেয়ার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তিনি আমৃত্যু নারী শিক্ষা, লিঙ্গের সমতায়ন ও অন্যান্য সামাজিক বিষয়াবলিতে নারীদের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। উদ্দীপকের রোকসানাও যেন বেগম রোকেয়ার দেখানো পথেই হেঁটেছেন।
রোকসানার গ্রামের তৎকালীন অবস্থা বেগম রোকেয়ার সময়কার পরিস্থিতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। রোকসানা তার গ্রামের পশ্চাৎপদ, নিরক্ষর ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন নারীদেরকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। তিনি তাদেরকে শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে গ্রামে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন। তাছাড়া নারীদের অবস্থার উন্নয়নে তিনি গ্রামে একটি মহিলা সমিতিও স্থাপন করেছেন। অন্যদিকে বেগম রোকেয়াও নারী শিক্ষার বিস্তারে ভূয়সী অবদান রেখে গেছেন। মাত্র জন ছাত্রী নিয়ে তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে স্কুলটি সরকারি সাহায্য লাভ করে এবং ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। তাছাড়া তিনি নারীদের কল্যাপে আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম' নামক সমিতি গড়ে তোলেন। সুতরাং বলা যায়, সুলতানার কার্যক্রম আমাদেরকে বেগম রোকেয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। যিনি নারীদের মুক্তি ও শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন।

ঘ. আমি মনে করি নারী শিক্ষার বিস্তারে রোকসানার মতো আরো অনেকেরই এগিয়ে আসা উচিত। 
আমাদের দেশের নারীরা এখনও শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। কারণ এ দেশের অনেক মানুষই মনে করেন মেয়েরা ঘরে থেকে সংসার সামলাবে, সন্তান লালন পালন করবে। তাদের পড়াশোনার কোনো প্রয়োজন নেই। আবার অনেকে মনে করেন মেয়েদের বিয়ে দিলে অন্যের বাড়ি চলে যাবে। তাই তাদেরকে বেশি পড়াশোনা শিখিয়ে লাভ নেই। এসব ভ্রান্ত ধারণার কারণে আমাদের দেশের মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে এ দেশের নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ যদি উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ না করে তাহলে দেশও পিছিয়ে পড়বে। এর জন্য নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। আর এ কাজের জন্য উদ্দীপকের রোকসানার মতো সমাজের সচেতন অংশকে এগিয়ে আসতে হবে।
উদ্দীপকে রোকসানা ক্ষুদ্র পরিসরে নিজস্ব উদ্যোগে মেয়েদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে তার প্রচেষ্টায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরে যায়। রোকসানার মতো সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের উচিত নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহারের নারী শিক্ষা বিস্তারে কাজ করা। এছাড়া নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। পরিবার সমাজের লোকদের নারী শিক্ষার বিস্তারে এগিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশনে নারী শিক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রকাশ বাড়াতে হবে। নারী শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। এভাবে নারী-শিক্ষার প্রসারে গৃহীত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা একসময় দেশের নারী উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। 
পরিশেষে বলা যায়, নারী শিক্ষার প্রসারে উদ্দীপকের রোকসানার মতো সমাজের সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

৪. সীতানাথ বসু এবং রিয়াজুল ইসলাম একই গ্রামের বাসিন্দা। ধার্মিক ও দানশীল হিসাবে উভয়েরই গ্রামে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। জীবন সায়াহ্নে এসে উভয়েই স্রষ্টার সন্তুষ্টি এবং জনকল্যাণের জন্য তাদের সম্পত্তির একটা বড় অংশ যে যার ধর্মমতে আইনের সাহায্য নিয়ে দান করে দিলেন। উক্ত দানকৃত সম্পত্তির দ্বারা গ্রামে মন্দির, মসজিদ, বিদ্যালয়সহ নানা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে লাগলো।
ক. প্রাক শিল্প যুগের সমাজকল্যাণ ধারার নাম কী? 
খ. দানশীলতা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে সীতানাথ বসুর দান প্রথাটি তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রিয়াজুল ইসলামের দান প্রথাটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. প্রাক শিল্পযুগের সমাজকল্যাণ ধারার নাম সনাতন সমাজকল্যাণ।

খ. দানশীলতা বলতে শর্তহীনভাবে স্বার্থ ত্যাগ করে অপরের কল্যাণে কোনো কিছু দান করার রীতিকে বোঝায়। 
দানশীলতা মানবপ্রেম থেকে সৃষ্ট একটি কল্যাণমূলক ব্যবস্থা। এটি সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। তবে প্রত্যেক ধর্মই দুস্থ ও অসহায়দের কল্যাণে ধনী বা সম্পদশালীদের দান করার জন্য উৎসাহিত করে। সুতরাং দানশীলতা হলো মানবপ্রেম থেকে সৃষ্ট একটি মহৎ গুণ, যা দুস্থদের কল্যাণকে ত্বরান্বিত করে।

গ. উদ্দীপকে সীতানাথ বসুর দান দেবোত্তরের অন্তর্ভুক্ত। 
দেবোত্তর হিন্দুধর্মের একটি সমাজকল্যাণ প্রথা। হিন্দুধর্ম মতে, দেবোত্তর হচ্ছে ঈশ্বরের বা দেবতার সম্পত্তি। অর্থাৎ ধর্মীয় উদ্দেশ্য কোনো সম্পত্তি উৎসর্গ করলে তাকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে। সনাতন সমাজকল্যাণ প্রথাগুলোর মধ্যে হিন্দু ধর্মের দেবোত্তর প্রথা অন্যতম। এটি মুসলমানদের ওয়াক্ফ প্রথার মতো একটি স্বেচ্ছামূলক দান ব্যবস্থা। সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ, অনাথ আশ্রম ও মানবসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেবোত্তর প্রথার সম্পত্তি উৎসর্গ করা হয়। এ প্রথা সাধারণত দু'ধরনের হয়। যথা- আংশিক দেবোত্তর এবং সার্বিক দেবোত্তর।
উদ্দীপকের সীতানাথ বসু হিন্দু ধর্মের অনুসারী। ধার্মিক ও দানশীল হিসেবে গ্রামে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। শেষ বয়সে এসে তিনি তার সম্পত্তির একটি বড় অংশ ধর্মীয় উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দান করেন। তার দানকৃত সম্পত্তি মন্দির প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়। সীতানাথ বসুর এ দান পাঠ্যবইয়ের দেবোত্তর প্রথাকে নির্দেশ করছে।

ঘ. সমাজকল্যাণ ও সমাজসেবায় রিয়াজুল ইসলামের দান প্রথা অর্থাৎ ওয়াকে্ফর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
ওয়াক্ফ ইসলাম ধর্মে প্রচলিত জনহিতকর কাজে সম্পত্তি দানের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। ওয়াকৃত সম্পত্তি বা সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাজ ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন- দাতব্য চিকিৎসালয়, এতিমখানা, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ প্রভৃতি স্থাপনে ওয়াক্ষের ভূমিকা অনবদ্য। ধর্মীয় চেতনাবোধ জাগ্রত করে পরোপকার ও সেবামূলক কাজে ব্রতী হওয়ায় ওয়াক্ফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওয়াক্ফকৃত সম্পদ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অসহায় ও দরিদ্রদের দান খয়রাত করার মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানেও ওয়াকফের গুরুত্ব অপরিসীম। ওয়াক্ফ-ই-খাইরি রীতিতে দরিদ্র, অসহায় মানুষের কল্যাণে সাধারণত সম্পত্তি ওয়াকফ করা হয়। এর ফলে সমাজের দুস্থ ও অসহায় জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধিত হয়। পাশাপাশি গরিব-আত্মীয় স্বলন ও আশ্রিত ব্যক্তিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ওয়াক্ফ-ই-আহলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উদ্দীপকের রিয়াজুল ইসলাম একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে নিজ সম্পত্তির একটি বড় অংশ ধর্মীয় এবং জনকল্যাণমূলক কাজে দান করেন। ইসলামি আইন অনুযায়ী তার দানকৃত সম্পত্তি মসজিদ, বিদ্যালয় ও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরিতে ব্যয় করা হয়। রিয়াজুল ইসলামের এ দানটি ওয়াক্ষের অন্তর্ভুক্ত। আর ওয়াকফ উপরোল্লিখিতভাবে সমাজের কল্যাণ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামগ্রিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, সমাজের পশ্চাৎপদ ও অসহায় জনগণের কল্যাণে ওয়াকফ সম্পত্তির গুরুত্ব অপরিসীম।

৫. ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে অতসী দেবনাথ। মহা ধুমধামের সাথে তার বিয়ে হল আর এক ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে অভিজিৎ সাহার সাথে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই অতসীর স্বামী মারা যাওয়ায় তাকে বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হল। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনের সহায়তায় কিছুদিনের মধ্যে অতসী শোক কাটিয়ে উঠলো। মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মা-বাবা পুনরায় সৎ ও যোগ্য পাত্র ইন্দ্রজিৎ এর সাথে মেয়েকে বিয়ে দিলেন।
ক. ভারতীয় উপমহাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত কাকে বলা হয়?
খ. সমাজ সংস্কার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের অতসী দেবনাথের সাথে ইন্দ্রজিৎ এর বিয়ে হবার ঘটনা ভারত উপমহাদেশের যে সমাজ সংস্কারকের কর্মকান্ডের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অষ্টাদশ শতাব্দীতে অতসীর স্বামী মারা গেলে তার যে ভয়াবহ পরিণতি হতো পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ভারতীয় উপমহাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয় বেগম রোকেয়াকে।

খ. যখন সমাজের কোনো অবস্থার সংস্কার করে কল্যাণকর অবস্থা ফিরিয়ে আনা হয় তখন তাকে সমাজ সংস্কার বলা হয়।
সমাজ সংস্কার হলো সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কাঙি্ক্ষত সামাজিক পরিবর্তন। সমাজে প্রচলিত ক্ষতিকর রীতিনীতি প্রথা, প্রতিষ্ঠান, মূল্যবোধ যেগুলো সমাজের জন্য অমঙ্গলজনক বলে বিবেচিত সেগুলো অপসারণ করে তার স্থলে মঙ্গলজনক রীতিনীতি, প্রথা, প্রতিষ্ঠান, মূল্যবোধ প্রভৃতি স্থাপন বা পরিবর্তন আনয়নকেই সমাজ সংস্কার বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের অতসী দেবনাথের সাথে ইন্দ্রজিৎ এর বিয়ের ঘটনাটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ কর্মকান্ডের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 
ভারতীয় উপমহাদেশের কল্যাণমূলক কর্মকান্ডের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্যতম সমাজ সংস্কারক। তার প্রত্যক্ষ আন্দোলনের ফসল হলো হিন্দু সমাজে বিধবা মেয়েদের বিবাহ প্রথার প্রচলন। তৎকালীন হিন্দু সমাজে অল্পবয়সী কিশোরীদের বিয়ে দেওয়ার প্রচলন ছিল। কিন্তু স্বামী মারা গেলে এ সব বিধবারা অমানবিকভাবে জীবন কাটাতে বাধ্য হতো। কারণ এ সময় সমাজে বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল। হিন্দুসমাজের এ প্রথা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। 
সমাজ থেকে এ সমস্যা দূর করার প্রচেষ্টায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অশোক কুমার দত্তের মতো ব্যক্তিদের নিয়ে বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেন। ধীর ধীরে তার এ আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। অবশেষে ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। আইনের বাস্তবায়নের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের ছেলেকে এক বিধবার সাথে বিবাহ দেন। তার এ কর্মকান্ড হিন্দু সমাজে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। উদ্দীপকে অতসী দেবনাথের বিয়ের এক বছর হওয়ার আগেই তার স্বামী মারা যায়। পরবর্তীতে অতসীর বাবা তার ভবিষ্যত চিন্তা করে তাকে আবার বিয়ে দেন। অতসীর এই বিবাহের ঘটনা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. অষ্টাদশ শতাব্দীতে অতসীর স্বামী মারা গেলে তাকে অমানবিক ও দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হতো। 
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতীয় হিন্দু সমাজে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর পুনরায় বিবাহ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। বরং মৃত স্বামীর সাথে একই চিতায় স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার প্রচলন ছিল। এটি সে সময় সতীদাহ প্রথা নামে পরিচিত ছিল। তবে রাজা রামমোহনের রায়ের প্রচেষ্টায় ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করা হলে এ সমস্যা নতুন মোড় নেয়। সে সময় হিন্দু সমালে বাল্যবিবাহও ব্যাপক প্রচলিত ছিল। বংশের মান রক্ষার অজুহাতে অল্প বয়সেই মেয়েদের দ্বিগুণ বয়সের পুরুষের সাথে বিয়ে দেওয়া হতো। দ্বিতীয় বিবাহের সুযোগ না থাকায় স্বামী মারা গেলে আজীবন তাদের বিধবা হয়ে থাকতে হতো। এছাড়া হিন্দু আইন অনুসারে পিতার সম্পত্তিতে কন্যার উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি ছিল না। এ কারণে হিন্দু বিধবারা পিতা বা ভাইদের সংসারে অথবা শ্বশুরবাড়ি বা অন্য কোথাও মানবেতর জীবন-যাপনে বাধ্য হতো। অনেক সময়ে তারা নানারকম অসামাজিক কাজে জড়িত হতো। এমনকি জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে তারা পতিতাবৃত্তিতে সংশ্লিষ্ট হতো।
উদ্দীপকে অতসীর স্বামী মারা গেলে তাকে দ্বিতীয় বিবাহ দেওয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী যদি অষ্টাদশ শতাব্দীতে মারা যেত তাহলে সে আবার বিবাহ করতে পারত না। বরং তাকে তার বাবার বাড়ি অথবা শ্বশুর বাড়ি বা অন্য কোথাও পরাধীন জীবনযাপন করতে হতো। আবার জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সেও হয়তো কোনো অসামাজিক কাজে জড়িত হতে বাধ্য হতো। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীতে অতসীর স্বামী মারা গেলে তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হতো।

৬. আলম সাহেব তার গ্রামে দীর্ঘদিন চলতে থাকা বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্য একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। তিন বছর চেষ্টার ফলে তার গ্রাম থেকে বাল্যবিবাহ দূর হয়।
ক. সতীদাহ উচ্ছেদ আইন কত সালে প্রণীত হয়?
খ. বেগম রোকেয়া এত বিখ্যাত কেন?
গ. আলম সাহেবের কাজ সমাজকর্মের কোন প্রত্যয়ের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে উত্ত প্রত্যয়ের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সতীদাহ উচ্ছেদ আইন ১৮২৯ সালে প্রণীত হয়।

খ. বাংলার নারী জাগরণে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বেগম রোকেয়া এত বিখ্যাত।
বেগম রোকেয়া আমৃত্যু নারী শিক্ষা, লিঙ্গের সমতায়ন ও অন্যান্য সামাজিক বিষয়াবলিতে নারী সমাজের উন্নয়ন ও কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে নারীশিক্ষা আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি তাঁর লেখা ও কর্মের মাধ্যমে নারীদেরকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছিলেন। বলা যায়, তাঁর হাত ধরেই বাংলার নারীরা মুক্তির আলোয় উদ্ভাবিত হয়েছে।

গ. আলম সাহেবের কাজ সমাজকর্মের 'সমাজ সংস্কার আন্দোলন' প্রত্যয়টির সাথে সম্পর্কিত।
যখন সমাজের কোনো অবস্থার সংস্কার বা পরিবর্তন সাধন হয়, তখন তাকে সমাজ সংস্কার বলা হয়। মূলত সমাজ সংস্কার হলো সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কাঙি্ক্ষত সামাজিক পরিবর্তন। আর এরূপ পরিবর্তন সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়। উদ্দীপকেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে।
বাল্যবিবাহ আমাদের সমাজের অন্যতম সমস্যা। উদ্দীপকে আলম সাহেবের গ্রামেও এই সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। তিনি তার গ্রাম থেকে এই সমস্যা দূরীকরণে একটি আন্দোলন পরিচালনা করেন। তিন বছর চেষ্টার ফলে তার গ্রাম থেকে বাল্যবিবাহ দূর হয়। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো আলম সাহেব প্রথমে সমাজ সংস্কারের অর্থাৎ বাল্যবিবাহ দূরীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এরপরই তিনি ধীরে ধীরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে় তোলেন। সুতরাং তাঁর পরিচালিত আন্দোলনটি সমাজকর্মের প্রত্যয়সমূহ বিবেচনায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনেরই বাস্তব উদাহরণ।

ঘ. কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়তে উক্ত প্রত্যয় অর্থাৎ সমাজ সংস্কার আন্দোলন প্রধান নিয়ামক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থেকে সামাজিক আন্দোলন পরিচালিত হয়। অর্থাৎ সমাজ সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমেই সমাজ থেকে নানা কুসংস্কার দূরীভূত হয়ে সমাজের কাঙি্ক্ষত পরিবর্তন সাধিত হয়। প্রকৃতপক্ষে সামাজিক আন্দোলন ব্যতীত সমাজ সংস্কার কখনোই সম্ভবপর নয়।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় নানা ধরনের কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি বিদ্যমান। মূলত অজ্ঞতাই এর জন্য দায়ী। মানুষ যদি শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত না হয় তাহলে মানুষের মন কুসংস্কার হতে মুক্ত হতে পারে না। শিক্ষিত লোক সহজেই কুসংস্কারকে চিহ্নিত করতে পারেন এবং সমাজে এর কুফল সম্পর্কে বুঝতে পারেন। তখন তারা সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে কুসংস্কার দূর করতে উদ্যোগী হন এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। ইতিহাসে এ ধরনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক বিধবা বিবাহ প্রচলন, বেগম রোকেয়ার নারীশিক্ষা আন্দোলন প্রভৃতি সমাজ সংস্কারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। তাদের সাহসী ভূমিকার কারণে সমাজ থেকে নানা কুসংস্কার দূর হয়ে গেছে। উদ্দীপকেও আলম সাহেবের বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্য পরিচালিত আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের উপযোগিতা উপস্থাপিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রত্যয় অর্থাৎ সমাজ সংস্কার। আন্দোলন সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

৭. আলী আহমদ সাহেব সম্প্রতি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি অনেক টাকা পেনশন পান। এ টাকাই তার বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সম্বল।
ক. বায়তুল মাল কী?
খ. সামাজিক বিমা বলতে কী বোঝায়?
গ. আলী আহমদ সাহেবের পেনশন লাভ সমাজকর্মের কোন প্রত্যয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানুষের জীবনে উক্ত প্রভায়ের ভূমিকা বর্ণনা কর।

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বায়তুল মাল বলতে ইসলামিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যেখানে বিভিন্ন উৎস হতে জমাকৃত অর্থ ও সম্পদ রাষ্ট্রের ব্যয়ভারসহ জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হয়।

খ. সামাজিক বিমা বলতে কোনো ব্যক্তির দ্বীয় সামর্থ্য ও দূরদৃষ্টির সাহায্যে নির্দিষ্ট শর্তপূরণ সাপেক্ষে নিজের ও তার পরিবারের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের প্রাক্কালে আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তাকে বোঝায়।
সামাজিক বিমা ব্যক্তিকে আর্থিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে। সামাজিক বিমার মধ্যে রয়েছে শিল্প দুর্ঘটনা বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, যৌথ বিমা ইত্যাদি। বর্তমানে সারাবিশ্বে এ ধরনের বিমা বেশ জনপ্রিয়।

গ. আলী আহমদ সাহেবের পেনশন লাভ সমাজকর্মের অন্যতম প্রত্যয় সামাজিক নিরাপত্তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
আধুনিক সময়কালে কল্যাণরাষ্ট্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সামাজিক নিরাপত্তা। বর্তমানে কল্যাণরাষ্ট্রে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান যেমন রাষ্ট্রীয় কর্তব্য তেমনি এরূপ নিরাপত্তা লাভ নাগরিকের অধিকারও বটে। উদ্দীপকের আলী আহমদ এ নিরাপত্তাই লাভ করেছেন।
প্রত্যেক মানুষকেই জীবনের শেষ পর্যায়ে বার্ধক্যের মুখোমুখি হতে হয়। তখন মানুষের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়ায় জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি। উদ্দীপকের আলী আহমদও বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তবে তাকে নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হয়নি। কারণ তিনি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাকরি শেষ হবার পরও পেনশন লাভ করছেন। এটি মূলত সামাজিক নিরাপত্তার একটি প্রকারভেদ সামাজিক বিমার অন্তর্ভুক্ত। চাকরিজীবীদের জন্য সরকারিভাবেই সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এরূপ পেনশন প্রদানের বিধান রয়েছে; যাতে বার্ধক্যে তারা স্বচ্ছল জীবন কাটাতে পারে। তাই বলা যায় আলী আহমদের পেনশন লাভের বিষয়টির সাথে সমাজকর্মের অন্যতম প্রত্যয় সামাজিক নিরাপত্তার মিল রয়েছে।

ঘ. মানুষের জীবনে উদ্ভ প্রত্যয়ের অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে আধুনিক সমাজজীবনের বিভিন্ন বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্র কর্তৃক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গৃহীত হয়। অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন, বিমা, শিশুকল্যাণ ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা প্রভৃতি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি মানুষের জীবনে এক ধরনের নিশ্চয়তা বিধান করছে।
উদ্দীপকেও এই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপকের আলী আহমদ চাকুরি থেকে অবসরের পর পেনশন হিসেবে অনেক টাকা পান যা তার বৃদ্ধ বয়সের সম্বল। এ বিষয়টি সমাজকর্মের প্রত্যয় সামাজিক নিরাপত্তাকে নির্দেশ করছে।
আধুনিক শিল্প-সমাজে জীবনের সাধারণ ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক জীবনযাপনের সাধারণ ঝুঁকির মধ্যে অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, প্রতিবন্ধিত্ব, বেকারত্ব, বার্ধক্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সমাজের প্রত্যেক সদস্যকেই কোনো না কোনো সময়ে আকস্মিকভাবে এসব ঝুঁকির সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ অক্ষম ও কর্মহীন হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করছে। এসব আকস্মিক ও শোচনীয় অবস্থা মোকাবিলা করে জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ভূমিকা রাখছে। প্রকৃতপক্ষে সামাজিক নিরাপত্তা কেবল ব্যক্তিবিশেষের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের উপায় নয়, এটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কার্যকর হাতিয়ার ও অন্যতম পূর্বশর্ত।
পরিশেষে বলা যায়, মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই উদ্দীপকে নির্দেশিত সামাজিক নিরাপত্তার ভূমিকা অপরিসীম।

৮. সৈয়দ মোঃ নাসিম আলী পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলিম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তার মৃত্যুর আগে উইল করে তার সম্পত্তি তিন ভাগ করেন। একভাগ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য, আরেক ভাগ তার বংশধরদের দান করেন এবং বাকি অংশ ধর্মীয় কাজে দান করেন। এই দানকৃত সম্পত্তির আয় দ্বারা দুঃস্থ, এতিম অসহায়দের ভরণ পোষণ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাসহ আরো অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে।
ক. যাকাত কোন শব্দ?
খ. ধর্মগোলা বলতে কী বোঝায়?
গ. সৈয়দ মোঃ নাসিম আলীর 'সম্পত্তি দান' কার্যক্রম কোন সনাতন সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দানকৃত সম্পত্তি কীভাবে উদ্দীপকে উল্লিখিত উনণয়নমূলক কার্যক্রম করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে? ব্যাখ্যা করো।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. যাকাত আরবি শব্দ।

খ. ধর্মগোলা বলতে ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্ভিক্ষজনিত পরিস্থিতিতে গৃহীত এক ধরনের কল্যাণমূলক প্রচেষ্টাকে বোঝায়।
ধর্মগোলা মূলত খাদ্যশস্য সংরক্ষণের পদ্ধতি। ফসল কাটার মৌসুমে কৃষকদের নিকট থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে ধর্মগোলায় সংরক্ষণ করা হতো। পরবর্তীতে দুর্ভিক্ষের সময় সেখান থেকে কৃষকদের বিনাসুদে খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হতো। দুর্ভিক্ষ ছাড়াও ধর্মগোলা থেকে অভাবের সময় কৃষকদের বিনাসুদে ঋণ দেওয়া হতো। মূলত পরিদ্র কৃষকদের সহযোগিতা করা ছিল ধর্মগোলা গঠনের মূল কারণ।

গ. সৈয়দ মোঃ নাসিম আলীর 'বসম্পত্তি দান' কার্যক্রম সনাতন সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান ওয়াফের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ওয়াক্ফ বলতে ধর্মীয় বা জনকল্যাণমূলক কাজে কোনো মুসলমানের সম্পূর্ণ বা আংশিক সম্পত্তি স্থায়ীভাবে উৎসর্গ বা দান করাকে বোঝায়। এটি ইসলাম ধর্মে প্রচলিত জনহিতকর কাজে সম্পত্তি দানের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। এর সুপ্রতিষ্ঠিত আইনগত ভিত্তি রয়েছে। উদ্দীপকে নাসিম আলী তার সম্পত্তি দানের ক্ষেত্রে উক্ত আইনগত ভিত্তিই অনুসরণ করেছেন।
মোঃ নাসিম আলী তার সম্পত্তি উইল করে তিন ভাগে ভাগ করেন। একভাগ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য, আরেকভাগ তার বংশধরদের দান করেন এবং বাকি অংশ ধর্মীয় কাজে দান করেন। তার এই তিন ভাগকে যথাক্রমে ওয়াক্ফ-ই খায়রি, ওয়াক্ফ-ই-আহলি এবং ওয়াক্ফ ই-পিল্লাহ বলা যায়। যখন কোনো মুসলমান তার সম্পত্তি বা সম্পত্তির আয় জনহিতকর কাজে দান করে, তখন তাকে ওয়াকফ-ই-খায়রি বলে। অন্যদিকে, যখন কোনো দাতা ও ওয়াক্ফকারী নিজ বংশধর বা তার আত্মীয়-স্বজনের কল্যাণে সম্পূর্ণ বা আংশিক সম্পত্তি দান করে তখন তাকে ওয়াক্ফ-ই-আহলি বলে। আর এই দান যদি কোনো ধর্মীয় কাজে করা হয় তবে তাকে বলা হয় ওয়াক্ফ-ই-লিল্লাহ। উদ্দীপকে এ তিন ধরনের ওয়াক্ফ সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। এ প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, সৈয়দ মোঃ নাসিম আলীর কাজের সাথে ওয়াক্ফের সাদৃশ্য আছে।

ঘ. ওয়াকফের মাধ্যমে দানকৃত সম্পত্তি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
সমাজকল্যাণ ও সমাজসেবায় ওয়াক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। ওয়াক্ফ মানবকল্যাণের লক্ষ্যে বৈষয়িক সহায়তা ও দানকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়। অর্থাৎ ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয় প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম শৃঙ্খলা মাফিক সমাজ ও মানুষের কল্যাণে ব্যয় হয়। এর ফলে সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
উদ্দীপকে মোঃ নাসিম আলীর ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তির আয় দ্বারা দুঃস্থ, এতিম ও অসহায়দের ভরণ-পোষণ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাসহ আরও অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর ফলে সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অবশ্যই প্রভাবিত হবে। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন- দাতব্য চিকিৎসালয়, এতিমখানা, স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ প্রভৃতি স্থাপনে ওয়াক্ষের ভূমিকা অনবদ্য। ওয়াক্ফকৃত সম্পদ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অসহায় ও দরিদ্রদের দান খয়রাত করার মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানেও ওয়াক্ষের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এর ফলে সমাজের দুস্থ ও অসহায় জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধিত হয়। আর এভাবেই সমাজের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থারও ইতিবাচক পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, জনকল্যাণের নানা পথ উন্মোচনের মাধ্যমেই ওয়াক্ফ সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।

৯. শিল্প বিপ্লব মানুষকে যেমন দিয়েছে প্রাচুর্য ও বিলাসিতা, ঠিক তেমনি দিয়েছে অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, বেকারত্ব ও অক্ষমতাজনিত নির্ভরশীলতা। আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্র সামাজিক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ঐ সমস্ত লোকদের প্রতিরক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আবার নাগরিকগণ তাদের অসহায় ও বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেরাও পরিকল্পিতভাবে কর্মসূচির আওতায় আসে।
ক. এতিমখানা কী?
খ. বায়তুল মাল কেন গঠিত হয়েছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মসূচির মাধ্যমে কোন কল্যাণমূলক কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিকগণ নিজেরা কীভাবে দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবেলা করে। পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামত দাও।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. এতিমখানা হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পিতৃহীন বা পিতৃ মাতৃহীন এবং নির্ভরশীল, দুস্থ ও অসহায় শিশুদেরকে লালন-পালন, ভরণ-পোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

খ. রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বায়তুল মাল গঠিত হয়েছিল।
বায়তুল মাল বলতে ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা সরকারি তহবিলকে বোঝায়। এটি মূলত জনকল্যাণের লক্ষ্যে গঠিত একটি মৌলিক প্রতিষ্ঠান। খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় থেকে বায়তুল মালের অর্থ ও সম্পদ দুস্থ, নিরাশ্রয় ও বিপন্ন জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হতো এবং পঞ্চা, দুর্বল ও অক্ষম ব্যক্তিদের বিশেষ ভাতা প্রদান করা হতো। মূলত, জনকল্যাণই ছিল বায়তুল মাল গঠনের মূল লক্ষ্য।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজসেবা কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।
আধুনিক সমাজে জীবনের সাধারণ ঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনযাপনের সাধারণ ঝুঁকির মধ্যে আকস্মিক দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, বেকারত্ব, বার্ধক্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সমাজের প্রত্যেক সদস্যেরই কোনো না কোনো সময়ে এসব ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিপর্যয় মোকাবিলা করে জীবন ধারণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রবর্তিত হয়েছে।
উদ্দীপকে আমাদের সমাজের অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, বেকারত্ব, অক্ষমতাজনিত নির্ভরশীলতা প্রভৃতি সমস্যার কথা বলা হয়েছে, এসব সমস্যা মোকাবিলায় সরকার বা রাষ্ট্র কর্তৃক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রতিরক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। আর এ ধরনের কর্মসূচি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্যই গৃহীত হয়। সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী, আধুনিক শিল্প সমাজের অসুস্থতা, বেকারত্ব বার্ধক্যজনিত নির্ভরশীলতা, পেশাগত দুর্ঘটনা প্রভৃতি মানুষের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার বহির্ভূত বিপর্যয় মোকাবিলায় সামাজিক প্রতিরক্ষামূলক কর্মসূচিই সামাজিক নিরাপত্তা। উদ্দীপকে আলোচ্য কর্মসূচি সামাজিক নিরাপত্তার সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিকেরা নিজেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করে দুর্যোগ ও বিপর্যয় মোকাবিলায় সচেষ্ট হয়।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে একটি দেশের নাগরিকদেরকে কর্মসূচি গৃহীত হলেও সকল নাগরিকের উচিত এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং নিজেদেরকে পরিকল্পিত কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা।
যেকোনো দুর্যোগ বা বিপর্যয় মোকাবিলায় সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে আধুনিক শিল্প সমাজে যে সকল আকস্মিক দুর্যোগ ও। বিপর্যয় পরিলক্ষিত হয় সেগুলো থেকে বাঁচতে নাগরিক সচেতনতা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রচলিত রয়েছে। এ সকল কর্মসূচি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করে সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করা প্রত্যেক নাগরিকেরই উচিত। নিজেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন না হলে এবং তার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি না রাখলে দুর্যোগ বা বিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। পরিকল্পিত কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সে অনুযায়ী পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দুর্যোগ বা বিপর্যয় মোকাবিলায় অনস্বীকার্য।
পরিশেষে বলা যায়, নাগরিকগণ সচেতন হলে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করলে খুব সহজেই আলোচ্য বিপর্যয় সামাল দেওয়া সম্ভব।

১০. ২২ বছর বয়সে নারায়ণপুর গ্রামের রহিমার স্বামী মারা যায়।। সামাজিক কুসংস্কার ও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে তার পুনরায় বিবাহ হচ্ছিল না। রহিমার বয়স যখন ৩০ বছর তখন গ্রামের আব্দুর রব মাস্টার নামে এক শিক্ষিত ও ধনাঢ্য ব্যক্তি তার ৩০ বছরের ছেলে গিয়াসের সাথে বিধবা রহিমার বিয়ে দেন। এতে বাবা, ছেলে ও রহিমা খুশি থাকলেও তাদেরকে সামাজিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
ক. বায়তুল মাল কী?
খ. সমাজকল্যাণ ও সমাজকর্মের পার্থক্য লেখো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আব্দুর রব মাস্টারের ছেলেকে বিবাহ করানোর ঘটনার সাথে কোন সমাজ সংস্কারকের কর্মকান্ডের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের নিরক্ষরতা ও বাল্যবিবাহ প্রথা দূরীকরণে উদ্দীপকের ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সমাজ সংস্কারকের ভূমিকা কীভাবে প্রয়োগ করা যায়? আলোচনা করো।

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. বায়তুল মাল হলো ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা সরকারি তহবিল।

খ. সমাজকল্যাণ ও সমাজকর্মের মধ্যে কর্মপরিধি ও কর্ম প্রক্রিয়ার দিক থেকে পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
সমাজকল্যাণের বৃহৎ পরিধিতে পেশাদার, অপেশাদার এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রাতিষ্ঠানিক সেবাকর্মও স্থান পায়। কিন্তু সমাজকর্ম বলতে কেবল পেশাদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সেবাকর্মকে বোঝায়। আবার সমস্যা সমাধানে সমাজকল্যাণের নিজস্ব কোনো পদ্ধতি নেই। কিন্তু সমাজকর্মের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে। তাছাড়া সমাজকল্যাণে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অপরিহার্য না হলেও সমাজকর্মে তা অবশ্যই প্রয়োজনীয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আব্দুর রব মাস্টারের ছেলেকে বিবাহ করানোর ঘটনার সাথে ঈশবরচনদ্র বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মিল রয়েছে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) একজন সফল শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদী সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তার প্রত্যক্ষ আন্দোলনের ফসল হলো তৎকালীন হিন্দু সমাজে বিধবা মেয়েদের পুনরায় বিবাহ প্রথার প্রচলন। তিনি হিন্দু সমাজের ধর্মীয় গোঁড়ামী, কঠোর বর্ণবৈষম্য, কুসংস্কার ও কু-প্রথার বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই সাথে হিন্দু বিধবা বিবাহ প্রচলনের মাধ্যমে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন সরব।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আব্দুর রব মাল্টার নিজের ছেলেকে একজন বিধবার সাথে বিয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সামাজিক কু-প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও বিধবা বিবাহ প্রথার প্রচলনের জন্য তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের সাথে লড়াই করেছিলেন। তার সময়ে হিন্দু বিধবারা পুনরায় বিবাহ করতে পারত না। ফলে তারা পিতা বা ভাইয়ের সংসারে অথবা শ্বশুরবাড়ি বা অন্য কোথাও মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হতো। তাদেরকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এগিয়ে আসেন। তার একক প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। এর মাধ্যমে বিধবাদের পুনরায় বিবাহের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই আইন বাস্তবায়নে তার ছেলে নারায়ণচন্দ্রকে জনৈক বিধবার সাথে বিবাহ দেন। উদ্দীপকের ঘটনাটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো সচেতনতা ও অন্যায় না মানার মনোভাব জনগণের মাঝে জাগ্রত হলে বাংলাদেশ থেকে নিরক্ষরতা ও বাল্যবিবাহ প্রথা দূর করা সম্ভব।
যেকোনো সামাজিক সমস্যা সমাধানে সচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার সময়ে সমাজে সংস্কারের জন্য সচেতনতা সৃষ্টির কাজটিই করেছিলেন। এ কাজ করতে গিয়ে তাকে প্রভাবশালীদের সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই পিছপা হননি। বর্তমানে বাংলাদেশের নিরক্ষরতা ও বাল্যবিবাহের মতো সমস্যার সমাধানে তার আদর্শই অনুসরণীয়।
বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক সমস্যাসমূহের মধ্যে নিরক্ষরতা ও বাল্যবিবাহ অন্যতম। এ সমস্যাগুলোর সমাধানে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিরক্ষরতা দূরীকরণে আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। তার এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে শিক্ষার প্রসারে বেশি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। সেই সাথে সবাইকে শিক্ষার সুফল সম্পর্কে অবগত করতে হবে। আবার বাল্যবিবাহ দূরীকরণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একাধিক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনার মাধ্যমে তৎকালীন সময়ে জনগণকে বাল্যবিবাহের নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছিলেন। তার মতো আমাদেরকেও এ ব্যাপারে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে নিরক্ষরতা ও বাল্যবিবাহ সমস্যা সমাধানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কর্মকান্ডের অনুসরণ কার্যকর ও ফলপ্রসূ হতে পারে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post