HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা
‘পেশা’ বা ‘Profession’ একটি সুপরিচিত শব্দ। সাধারণভাবে জীবনধারণ বা জীবিকা নির্বাহের উপায় বা পন্থাকে পেশা হিসেবে অভিহিত করা হলেও সকল জীবিকা নির্বাহের উপায় পেশা নয়। কেননা জীবিকা নির্বাহের উপায় বা পন্থাকে বলা হয় বৃত্তি বা occupation। কোনো বৃত্তি তখনই পেশার মর্যাদা লাভ করবে যদি তার সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও তাত্ত্বিক ভিত্তি, বিশেষ দক্ষতা ও নৈপূণ্য, পেশাগত দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা, পেশাগত সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ, পেশাগত নীতিমালা ও মূল্যবোধ, জনকল্যাণমুখীতা ও উপার্জনশীলতা, ঐতিহাসিক পটভূমি এবং সামাজিক স্বীকৃতি থাকে।

এদিক থেকে সকল পেশাকেই বৃত্তি বলা গেলেও সকল বৃত্তিকে পেশা হিসেবে অভিহিত করা যায় না। যেমন- রিক্সাচালক হচ্ছেন বৃত্তিজীবী এবং ডাক্তার হচ্ছেন পেশাজীবী। সকল পেশারই পেশাগত মূল্যবোধ ও নীতিমালা রয়েছে, যা তাকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। সমাজকর্ম পেশার নিজস্ব কিছু পেশাগত মূল্যবোধ ও নীতিমালা রয়েছে, যা পেশাগত অনুশীলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদায় স্বীকৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, সকলের জন্য সমান সুযোগ, সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ইত্যাদি সমাজকর্ম মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত।

পেশার বৈশিষ্ট্য বা মানদন্ড
১. সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও তাত্ত্বিক ভিত্তি: প্রত্যেকটি পেশারই সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকতে হয়। সে জ্ঞান হবে প্রচারযোগ্য ও প্রয়োগযোগ্য এবং যা অর্জিত, গঠিত ও বিকশিত হয়। পেশাগত সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও তাত্ত্বিক ভিত্তি পেশাদার ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালনে সক্ষম করে তোলে।

২. বিশেষ দক্ষতা ও নৈপূণ্য: পেশাদার ব্যক্তির জ্ঞান ও যোগ্যতাকে বাস্তবে প্রয়োগের জন্য বিশেষ দক্ষতা ও নৈপূণ্য অর্জন আবশ্যক। পেশাদার ব্যক্তির শুধু জ্ঞান থাকলেই হবে না, জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার দক্ষতা ও নৈপূণ্যতা অর্জন করতে হবে। পেশাদার ব্যক্তির এরূপ দক্ষতা অর্জন ও অর্জিত জ্ঞানকে প্রয়োগ করার নৈপূণ্য একটি মানসম্মত শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসে।

৩. পেশাগত দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা: পেশাগত জ্ঞানকে পেশার উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণের জন্য প্রয়োগ করা প্রত্যেক পেশাদার ব্যক্তির পেশাগত দায়িত্ব। পেশাগত দায়িত্বের সাথে পেশাগত জবাবদিহিতা বিষয়টিও ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। যে কোনো পেশার উন্নয়ন ও বিকাশ যথাযথ পেশাগত দায়িত্ব পালন ও জবাবদিহিতার সাথে সম্পৃক্ত।

৪. পেশাগত নীতিমালা ও মূল্যবোধ: পেশা নিজস্ব মূল্যবোধ ও নীতিমালা নির্ভর হয়ে থাকে। পেশাগত মূল্যবোধ ও নীতিমালা একটি পেশাকে অপর পেশা থেকে আলাদা ও স্বতন্ত্র সত্ত্বা প্রদান করে। এছাড়া পেশাদার ব্যক্তির পেশাগত আচরণ নিয়ন্ত্রণে এই বৈশিষ্ট্য একান্ত আবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একজন চিকিৎসক ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের আশায় রোগীকে অপ্রয়োজনীয় প্যাথলোজিক্যাল পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন না। অনুরূপভাবে একজন আইনজীবী বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের বিনিময়ে একই সঙ্গে উভয়পক্ষকে আইনী সহায়তা দিতে পারেন না।

৫. পেশাগত নিয়ন্ত্রণ ও পেশাগত সংগঠন: পেশাগত নিয়ন্ত্রণ যে কোনো পেশার পেশাগত মর্যাদা লাভের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এক্ষেত্রে বিধি-বিধান ও আইনের মাধ্যমে পেশার অন্তর্ভুক্তি, পেশাগত পরিচিতি, অনুশীলন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা উল্লেখযোগ্য। পেশাগত নিয়ন্ত্রণের উদাহরণ হচেছ সার্টিফিকেট, লাইসেন্স এবং রেজিস্ট্রেশন। পেশাগত সংগঠনের মাধ্যমে পেশার সামাজিক উনণয়ন, স্বার্থ সংরক্ষণ তথা সার্বিক বিকাশ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। পেশাগত সংগঠন পেশার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত।

৬. সামাজিক স্বীকৃতি: রাষ্ট্র বা সমাজকর্তৃক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ব্যতীত কোনো বৃত্তি পেশার মর্যাদা লাভ করতে পারে না। এই স্বীকৃতি সাধারণত সার্টিফিকেট, লাইসেন্স অথবা রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

৭. জনকল্যাণমুখীতা ও উপার্জনশীলতা: জনকল্যাণকে উদ্দেশ্য করে প্রত্যেক পেশাদার ব্যক্তি আয়ের উৎস হিসেবে তার অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা বাস্তবে প্রয়োগ করে থাকে। তাই জনকল্যাণমুখীতা ও উপার্জনশীলতা পেশার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। যেমন- চিকিৎসা, আইন, শিক্ষকতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উভয় জনকল্যাণমুখীতা ও উপাজনশীলতার দিকটি লক্ষণীয়।

পেশা ও বৃত্তির সম্পর্ক
‘পেশা’ ও ‘বৃত্তি’ শব্দ দু’টি একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। মানব সভ্যতার শুরুর দিকে এই দুয়ের মধ্যে ততটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। তখন মূলত জীবিকা নির্বাহের নিমিত্তে যে কোনো কাজকেই পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এছাড়া প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ‘পেশা’ ও ‘বৃত্তি’ একই অর্থে ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে বিশেষ করে উন্নত দেশে শব্দ দুটোর মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট করা সম্ভব হলেও আমাদের মতো দেশে সর্বক্ষেত্রে পৃথক করা দুরূহ বিষয়। তবে এ কথা অনস্বীকার্য ও সত্য যে কোনো পেশা বৃত্তি না হয়ে পেশার মর্যাদা লাভ করে না।

আবার সকল বৃত্তি পেশার মর্যাদায় উন্নীত হতে পারে না। তাই বলা হয়, “সকল পেশাই বৃত্তি কিন্তু সকল বৃত্তি পেশা নয়।’’ যেমন- ডাক্তারী একাধারে বৃত্তি ও পেশা কিন্তু রিক্সাচালানো শুধু একটি বৃত্তি; কখনো পেশা নয়। পেশা ও বৃত্তির সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলা যায়, শাব্দিক অর্থে ও বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার আলোকে এদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও জীবিকা নির্বাহের অর্থনৈতিক পন্থা হিসেবে দুটির মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।

পেশা ও বৃত্তির পার্থক্য
পেশা (profession) বলতে কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপূণ্য ও সুশৃঙ্খল জ্ঞান সম্পন্ন বৃত্তিকে বোঝানো হয়। প্রতিটি পেশার পেশাগত নৈতিক মানদন্ড ও মূল্যবোধ থাকে যেগুলো এক পেশাকে অন্য পেশা হতে স্বতন্ত্র পরিচয়ে পরিচিত করে। অন্যদিকে, বৃত্তি (occupation) বলতে জীবন নির্বাহের সাধারণ উপায়কে নির্দেশ করে যার জন্য তাত্ত্বিক জ্ঞানের আবশ্যকতা নেই। সুতরাং পেশা ও বৃত্তির মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও এদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

পেশার জন্য নিজস্ব সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন। পেশার সামাজিক উন্নয়ন ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রত্যেক পেশারই পেশাগত সংগঠন রয়েছে। অন্যদিকে বৃত্তির ক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞানার্জনের বাধ্যবাধকতা নেই। বৃত্তির জন্য পেশাগত সংগঠনের আবশ্যকতা নেই। পেশাগত নীতিমালা ও মূল্যবোধ দ্বারা প্রতিটি পেশা পরিচালিত হয়। এসব নীতিমালা ও মূল্যবোধ পেশাদার ব্যক্তিকে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে দায়িত্বশীল ও দায়বদ্ধ করে তোলে।

কিন্তু বৃত্তির ক্ষেত্রে নৈতিক মানদন্ড বা মূল্যবোধর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হলেও তা পরিবর্তনশীল এবং ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। পেশার ক্ষেত্রে জনকল্যাণমুখীতা ও জবাবদিহিতা আবশ্যক। তবে বৃত্তির ক্ষেত্রে জনকল্যাণ ও জবাবদিহিতা অনুপস্থিত থাকতে পারে। কেননা তা ব্যক্তি নির্ভর হয়ে থাকে। পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সামাজিক স্বীকৃতি; সামাজিক স্বীকৃতি ব্যতীত কল্যাণকামী হওয়া সত্ত্বেও কোনো কোনো বৃত্তি পেশার মর্যাদা নাও পেতে পারে।

কোনো পেশাদার ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই পেশা পরিবর্তন করতে পারে না। অন্যদিকে, বৃত্তি সহজে পরিবর্তন করা যায়। যেমন- একজন প্রকৌশলী ইচ্ছা করলেই চিকিৎসক হতে পারবেন না। কিন্তু একজন দিনমজুর ইচ্ছা করলে রিক্সচালক হতে পারবেন। পেশার সঙ্গে দক্ষতা ও যোগ্যতার বিষয়টি জড়িত হলেও বৃত্তির ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতায় বিষয়টি ততটা মুখ্য বিষয় নয়। সুতরাং এটা প্রতীয়মান হয় যে, পেশা ও বৃত্তির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলা যায় যে, “প্রত্যেক পেশাই বৃত্তি, কিন্তু প্রত্যেক বৃত্তিই পেশা নয়।

মূল্যবোধের ধারণা
মূল্যবোধ একটি আপেক্ষিক ও বির্মূত ধারণা, যার মাধ্যমে মানুষের সামাজিক আচার-আচারণের ভালো-মন্দ বিচার করা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, মূল্যবোধ হলো সমাজকাঠামোর অপরিহার্য উপাদান, যা মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত আচার-আচারণকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য
মূল্যবোধ সমাজস্থ প্রত্যেক মানুষের জীবন ধারণের নির্দেশনা দিয়ে থাকে। মূল্যবোধ এক ধরনের বিশ্বাস, যা ব্যক্তি তথা মানুষের সার্বিক বিশ্বাস ব্যবস্থার (total belief system) কেন্দ্রে অবস্থান করে ব্যক্তির করণীয় অথবা মর্যাদা অর্জন সম্পর্কে বিশ্বাসবোধের জন্ম দেয়। বিভিন্ন সংজ্ঞা হতে মূল্যবোধের যে বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায় তা হলো:
১. মূল্যবোধ হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস ও আদর্শের সমষ্টি; 
২. মূল্যবোধ মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে; 
৩. মূল্যবোধ একটি অলিখিত সামাজিক বিধান; 
৪. মূল্যবোধ মানুষের আচরণের ভাল-মন্দ বিচার করে; 
৫. মূল্যবোধ একটি বিমূর্ত, অলিখিত ও আপেক্ষিক প্রত্যয়;
৬. মূল্যবোধের কোনো সর্বজনীন রূপ নেই- সমাজ ও সময়ভেদে পরিবর্তনশীল
 
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. শাহেদ এবং কবির বাল্যবন্ধু। শাহেদ জ্ঞানের নির্দিষ্ট একটি শাখায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর সেই জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে দুর্ভাগা কবিরকে হঠাৎ করে বাবা মারা যাবার কারণে লেখাপড়া ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। বসত বাড়িটি ছাড়া বাবা আর কোনো সম্পত্তিই রেখে যেতে পারেননি। উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে কবির জীবিকার জন্য অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজে লেগে গেল।
ক. The Value Base of Social Work গ্রন্থের লেখক কে? 
খ. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কবিরের জীবিকার্জনের উপায়টির বৈশিষ্ট্য পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বর্ণনা করো।
ঘ. শাহেদের জীবিকার্জনের পন্থাটি কবিরের জীবিকার্জনের পন্থা থেকে আলাদা এ বিষয়ে তোমার মতামত ব্যক্ত করো। 

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. The Value Base of Social Work গ্রন্থটির লেখক হলেন চার্লস এস লেডি (Charles S. Levy)

খ. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার বলতে ব্যক্তির স্বকীয়তা বজায় রেখে যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে আত্মোন্নয়নের সুযোগকে বোঝায়। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি মূল্যবোধ। ব্যক্তির পছন্দ, চাহিদা, সামর্থ্য এবং ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে় তোলার ক্ষেত্রে এ অধিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ অধিকার ব্যক্তির আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।

গ. উদ্দীপক কবিরের জীবিকার্জনের উপায়টি হচ্ছে বৃত্তি। 
মানুষ তার জীবনধারণের জন্য যে সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকে তাকে বৃত্তি বলা হয়। বৃত্তির কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- বৃত্তির ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ শিক্ষা বা যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদন্ড থাকে না। বৃত্তির জন্য পেশাগত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক নয়। বৃত্তির ক্ষেত্রে তেমন সুনির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব থাকে না। এখানে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারে। বৃত্তি যেহেতু ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে তাই এখানে জবাবদিহিতা বিশেষভাবে অনুপস্থিত। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াও বৃত্তির অনুশীলন হয় এবং সেক্ষেত্রে এটি জনকল্যাণমূলক নাও হতে পারে।
উদ্দীপকের কবির বাবা মারা যাওয়ার কারণে সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ কারণে লেখাপড়া ছেড়ে সে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে। বসতবাড়ি ছাড়া অন্য কোনো সম্পত্তি না থাকায় সে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে। কবিরের জীবিকার্জনের এ কাজটি বৃত্তিরই অন্তর্ভুক্ত। আর বৃত্তির বৈশিষ্ট্যগুলোর উপরে বর্ণিত হয়েছে।

ঘ. শাহেদের জীবিকার্জনের পন্থাটি কবিরের জীবিকার্জনের পন্থাটি থেকে আলাদা এ বিষয়টির সাথে আমি একমত। 
বৃত্তি বলতে জীবনধারণের জন্য যেকোনো রকমের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বোঝায়। অন্যদিকে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জনই পেশা। প্রতিটি পেশারই কতগুলো বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধ থাকে যা পেশাকে বৃত্তি থেকে পৃথক সত্তা দান করে।
উদ্দীপকের শাহেদ জ্ঞানের নির্দিষ্ট একটি শাখায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছে। পরবর্তী সময়ে সেই জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে সে জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নিয়েছে। শাহেদের জীবিকার্জনের পন্থাটি পেশার বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অন্যদিকে কবির বৃত্তির মাধ্যমে জীবিকার্জন করছে। শাহেদকে জীবিকার্জনের জন্য সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে হয়েছে। কিন্তু কবিরকে এরকম কোনো সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে হয়নি। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে শাহেদকে তার পেশাগত কাজ সম্পর্কে বিশেষ নৈপুণ্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে। কিন্তু কবিরকে তার কাজের জন্য কোনো ধরনের নৈপুণ্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়নি। একজন পেশাদার হিসেবে শাহেদকে অবশ্যই তার পেশার মূল্যবোধগুলো মেনে চলতে হয়। কিন্তু কবিরকে তার কাজের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো মূল্যবোধ মেনে চলতে হয় না। শাহেদের পেশার সামগ্রিক উন্নয়ন ও কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য পেশাগত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু কবিরের বৃত্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। শাহেদের পেশাকে অবশ্যই জনগণ ও সমাজের স্বীকৃতি অর্জন করতে হয়েছে। কিন্তু কবিরের বৃত্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। 
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, শাহেদ ও কবিরের জীবিকার্জনের পন্থা সম্পূর্ণ আলাদা।

২. রীমা ও সীমা ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করে। সীমা একটি হাসপাতালে রোগী দেখেন এবং রীমা কসমেটিক্স এর ব্যবসা করেন। 
ক. NASW কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. “সামাজিক স্বীকৃতি পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য"- ব্যাখ্যা করো।
গ. রীমা জীবিকা অর্জনের কোন উপায়টি বেছে নিয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রীমা ও সীমার জীবিকা অর্জনের উপায় দু'টির বৈসাদৃশ্য নির্ণয় করো।

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৯৫৫ সালে NASW (National Association of Social Workers) প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. সামাজিক স্বীকৃতি পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জীবিকা নির্বাহের জন্য আমরা যে সব কাজ করি তার সবগুলোকে পেশা বলা যায় না। পেশার সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সামাজিক স্বীকৃতি এর অন্যতম। যেমন- আমাদের সমাজে ডাক্তারি, শিক্ষকতা, নার্সিং, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি কাজের সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে। এজন্য এগুলো পেশা হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং সামাজিক স্বীকৃতি পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

গ. রীমা জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে কসমেটিকসের ব্যবসা শুরু করেছেন, যা বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত।
জীবিকা নির্বাহের জন্য সাধারণত মানুষকে কোনো না কোনো কাজ করতে হয়। এ সব কাজকে বৃত্তি ও পেশা এ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সাধারণত যেকোনো জীবিকা অর্জনের উপায়ই বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ বৃত্তি হলো জীবনধারণের জন্য করতে হয় এমন যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক কার্যাবলি।
উদ্দীপকের রীমার বেছে নেওয়া কাজটির প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। প্রথমত, কসমেটিকসের ব্যবসার জন্য তাকে তত্ত্বনির্ভর বা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়নি। দ্বিতীয়ত, তার কালটি এমন যেক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদন্ড প্রয়োজন হয় না। তৃতীয়ত, রীমা তার ব্যবসা স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। চতুর্থত, রীমার কাজটি জনকল্যাণমূলক নয়, বরং এটি কেবল তার জীবিকা নির্বাহের উপায়। এ সব বৈশিষ্ট্যের আলোকে বলা যায়, রীমা জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে বৃত্তিকে বেছে নিয়েছে।

ঘ. রীমা ও সীমার জীবিকা নির্বাহের উপায় দুটি যথাক্রমে বৃত্তি ও পেশা নামে পরিচিত। এ দুয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। 
অনেকেই বৃত্তি ও পেশাকে প্রায় একই অর্থে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সমাজকর্মে বৃত্তি বলতে জীবনধারণের জন্য যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক কাজকে বোঝায়। অন্যদিকে, পেশার মূল দিক হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জন। প্রতিটি পেশারই কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা পেশাকে বৃত্তি থেকে আলাদা করে।
রীমার কাজের জন্য তাকে কোনো তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়নি। কিন্তু একজন ডাক্তার হওয়ার জন্য সীমাকে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, এজন্য তাকে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণও নিতে হয়েছে। অথচ ব্যবসা পরিচালনার জন্য রীমাকে আলাদাভাবে কোনো প্রশিক্ষণ নিতে হয়নি। আবার সীমার পেশার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কিছু মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদন্ড রয়েছে, যা রোগী ও কাজের জায়গার প্রতি তার আচার-আচরণ ও সেখানে তার কার্যাবলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। সীমার কালের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, তাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে তার জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে রীমার ব্যবসায় সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ, জবাবদিহিতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। এক্ষেত্রে সে তুলনামূলকভাবে অনেক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। শেষে আরও বলা যায়, সীমার পেশা সমাজে উচ্চ মর্যাদার এবং এটি জনকল্যাণমূলক। কিন্তু রীমার কাজটি এরকম নয়। তাই আলোচনার শেষে বলা যায়, রীমা ও সীমার কাজের মধ্যে অর্থাৎ বৃত্তি ও পেশার মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।

৩. নিবেদিতা চৌধুরী তিন বছর নার্সিং কলেজে শিক্ষানবিশ হিসেবে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমানে সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন। রোগীরা তাকে অনেক পছন্দ করে। তাকে বিশ্বাস করে। রোগীদের সেবা করার ক্ষেত্রে তিনি কখনই আবেগতাড়িত হন না। তবে বিশেষ কিছু নীতি ও মূল্যবোধ মেনে চলেন। তিনি এই সেবার মাধ্যমেই পরিবারের ভরণ-পোষণ ও জীবিকা নির্বাহ করেন।
ক. বিভারিজ রিপোর্ট কত সালে পেশ করা হয়? 
খ. শিল্পবিপ্লব বলতে কী বোঝায়?
গ. উল্লিখিত নিবেদিতা চৌধুরীর কাজটি কোন ধরনের অর্থনৈতিক কাজের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে কি এমন কোনো বৈশিষ্ট্য আছে যার আলোকে নিবেদিতার সেবার কাজটিকে শুধু জীবিকা নির্বাহের উপায় বলা যায়? মতামত দাও।

💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৯৪২ সালে বিভারিজ রিপোর্ট পেশ করা হয়।

খ. শিল্পবিপ্লব বলতে সে সকল প্রচেষ্টা ও পরিবর্তনের সমষ্টিকে বোঝায় যার প্রেক্ষিতে শিল্প যুগের সূচনা হয়েছিল। শিল্পবিপ্লব মূলত শিল্প এবং বিপ্লব- এ দুটি পৃথক শব্দের সমষ্টি। এর দ্বারা শিল্প সংক্রান্ত বিপ্লবকে নির্দেশ করা হয়। অর্থাৎ এর ফলে কায়িক শ্রমনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে যন্ত্রনির্ভর উৎপাদন পদ্ধতির আবির্ভাব ঘটে। শিল্পবিপ্লবের সূচনা হয় ইংল্যান্ডে, যা পরবর্তীতে অতি দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়েই সারা বিশ্বের কৃষিনির্ভর সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা শিল্প নির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নিবেদিতা চৌধুরীর কাজ প্রকৃতি, ধরন ও বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় পেশার অন্তর্ভূক্ত।
জীবিকা নির্বাহের জন্য নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য, তত্ত্বনির্ভর সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে পেশা বলা হয়। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার অর্জিত জ্ঞানকে স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করে জীবিকা অর্জন করতে পারে। নিবেদিতা চৌধুরীর কাজটিও এ ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
নিবেদিতা চৌধুরী একজন সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য তাকে পড়াশোনার মাধ্যমে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে। তিনি তিন বছর নার্সিং কলেজে শিক্ষানবিস হিসেবে হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এভাবে তিনি তার কাজের জন্য দক্ষতা ও নৈপুণ্য অর্জন করেছেন। তাছাড়া তিনি রোগীদের সেবা করার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নীতি ও মূল্যবোধ মেনে চলেন। এই নীতি ও মূল্যবোধসমূহ তার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। তিনি কখনোই আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করেন না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, পরিবারের ভরণপোষণ এবং জীবিকা নির্বাহে নিবেদিতা চৌধুরী যে অর্থনৈতিক কাজটি বেছে নিয়েছেন সেটিতে পেশার সকল মৌলিক বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তার কাজটি জীবিকা নির্বাহের বিশেষ পদ্মা পেশাকেই ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহের আলোকে নিবেদিতার সেবার কাজটিকে শুধু জীবিকা নির্বাহের উপায় বলা যাবে না। 
জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যে সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে সেগুলোকে বৃত্তি ও পেশা এ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। বৃত্তি বলতে জীবনধারণের জন্য যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বোঝায়। কিন্তু যখন কোনো বৃত্তির সাথে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, জবাবদিহিতা প্রভৃতি যুক্ত হয় তখন তা পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়। নিবেদিতার কাজটিও পেশার অন্তর্ভুক্ত।
নিবেদিতা রোগীদের সেবা প্রদানের কাজে একজন সিনিয়র নার্স হিসেবে কর্মরত আছেন। এই কাজের মাধ্যমেই তিনি তার পরিবারের ভরণ পোষণ করেন। এ দিকটি বিবেচনায় তার কাজটিকে বৃত্তি বলা যায়। কিন্তু তার কাজটি কেবল জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়। কারণ তার কাজটির জন্য তাকে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে। তাছাড়া সেবাধর্মী কাজটিতে তিনি সংশ্লিষ্ট মূল্যবোধ ও নৈতিকতা দ্বারা পরিচালিত হন এবং তার কাজের জন্য এক ধরনের দায়বন্ধতা ও জবাবদিহিতার বিষয় রয়েছে। এ সকল বৈশিষ্ট্যের কারণে নিবেদিতার কাজটি কেবল বৃত্তি বা জীবিকা অর্জনের উপায় নয়, বরং পেশা হিসেবে চিহ্নিত হবে। 
পরিশেষে বলা যায়, নিবেদিতার কাজটি বৃত্তি অপেক্ষা বিস্তৃত এবং তা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের পেশার ধারণার সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

৪. আকমল সাহেব ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বড় করে তুলেছেন। পড়াশুনা, জীবনসংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনি তাদের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন। তার সন্তানরাও বাবা-মাকে অত্যন্ত ভক্তি করে। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও আকমল সাহেবের সন্তানরা যথোচিত আচরণ প্রদর্শন করে থাকে।
ক. মূল্যবোধ কোন ধরণের প্রত্যয়? 
খ. সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?
গ. আকমল সাহেবের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের কোন মূল্যবোধের ইঙ্গিত প্রকাশ পায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটির পারস্পরিক মূল্যবোধের ফলে সমাজে সংগতি বৃদ্ধি পায় তোমার মতামত দাও।

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. মূল্যবোধ একটি আপেক্ষিক প্রত্যয়।

খ. সামাজিক মূল্যবোধ বলতে সেসব নীতিমালা, বিশ্বাস, দর্শন, ধ্যান ধারণা, সংকল্প প্রভৃতিকে বোঝায়, যা মানুষের সামাজিক সম্পর্ক এবং আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সামাজিক মূল্যবোধ হলো একটি বিচারবোধ, যা ব্যক্তিগত বা দলগত কল্যাপে প্রয়োজন হয়। সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি, মনোভাব, কার্যক্রম প্রভৃতির সমন্বয়ে সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে় ওঠে। সামাজিক মূল্যবোধ সমাজের মানুষের আচরণের মানদন্ড হিসেবে কাজ করে।

গ. আকমল সাহেবের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের ব্যক্তির সহজাত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি মূল্যবোধের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 
ব্যক্তির সহজাত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি সমাজকর্মের সাধারণ মূল্যবোধগুলোর একটি অন্যতম দিক। সমাজকর্ম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পৃথক সত্তা ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। সমাজকর্মে বিশ্বাস করা হয়, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিই বিশেষ মর্যাদা ও মূল্যের অধিকারী। ব্যক্তির মর্যাদা ও পৃথক সত্তার স্বীকৃতি দান ছাড়া যেমন মানুষের কল্যাণ আনয়ন সম্ভব নয়, তেমনি সমাজের কল্যাণসাধনও সম্ভব নয়। এজন্য সমাজকর্মে সাহায্যার্থীকে তার অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। উদ্দীপকেও এ দিকটির চর্চা লক্ষ করা যায়।
আকমল সাহেব তার সন্তানদের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দিয়েছেন বলেই তারা সফল হয়েছে। ব্যক্তির মর্যাদার স্বীকৃতি সাহায্যার্থীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। এতে ব্যক্তি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সক্রিয় সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা লাভ করে এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়া এর ফলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং স্বাবলম্বন অর্জনের স্পৃহা জাগ্রত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধের ফলে সমাজে সংহতি বৃদ্ধি পায়' -ধারণাটির সাথে আমি একমত। 
সমাজকর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত মূল্যবোধ হলো পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ। এ ধরনের মূল্যবোধ সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণ সমাজ গঠন এবং পরিচালনার অপরিহার্য শর্ত। যে সমাজের মানুষের মধ্যে সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধের গুণ থাকে না, সেই সমাজ সুশৃঙ্খল হতে পারে না। তাছাড়া এটা মানুষের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, কলহ ও বিদ্বেষ দূর করে সৌহার্দ্যপূণ্য সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে।
উদ্দীপকে আকমল সাহেব তার সন্তানদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছেন। তার সন্তানরাও বাবা-মাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে। সমাজের নানা ক্ষেত্রেও তারা যথোচিত আচরণ প্রদর্শণ করে। তাদের এ মূল্যবোধটি সমাজকর্মের পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্বাবোধকে নির্দেশ করে। আধুনিক সমাজকর্ম পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন, সামাজিক সুসম্পর্কের কখন এবং সৌহার্দ্যমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, সমাজের প্রতিটি সদস্যই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। সমাজকর্ম অনুশীলনে সমাজকর্মীরা এ মূল্যবোধের যথাযথ অনুসরণ করে সুন্দর ও কাঙি্ক্ষত সমাজ গঠনে নিবেদিত হয়। এ মূল্যবোধ অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণ এমনকি সমাজকর্মী এবং সাহায্যার্থীর মধ্যকার সম্পর্ক আন্তরিক হয়। আকমল সাহেবের সন্তানরা এ মূল্যবোধটি যথাযথভাবে অনুসরণ করে। যা সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। 
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি সমাজে শাস্তি ও সংহতি বৃদ্ধি করে।

৫. নিশি ও ঐশি সমাজকর্মে মাস্টার্স করছে। তারা কিন্তু ওয়ার্কের জন্য ঢাকা শহরের একটি বস্তিতে পর্যবেক্ষণে যায়। কিন্তু সেখানে বস্তির এক মহিলার সাথে নিশির তর্কাতর্কি শুরু হয়। তখন ঐশি নিশিকে শান্ত করে এবং পর্যায়ক্রমে একটি সুষ্ঠু ও আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। 
ক. পেশা কী?
খ. পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য লেখ।
গ. নিশি সমাজকর্মের কোন নীতিমালার পরিপন্থি আচরণ প্রদর্শন করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ঐশির ভূমিকায় সমাজকর্মের যে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ কর।

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সাধারণত জীবিকা নির্বাহের জন্য তত্ত্বনির্ভর সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হলো পেশা।

খ. প্রতিটি পেশারই কতকগুলো বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধ থাকে, যা পেশাকে বৃত্তি থেকে আলাদা করে। 
প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রে নিজস্ব সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বৃত্তির জন্য কোনো বিশেষ জ্ঞানার্জনের আবশ্যকতা নেই। প্রত্যেক পেশাদার ব্যক্তিকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে পেশাগত কাজ সম্পর্কে বিশেষ নৈপুণ্য ও দক্ষতার অধিকারী হতে হয়। বৃত্তির ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা ও নৈপুণ্য অর্জনের তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি পেশারই স্বতন্ত্র কিছু মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদন্ড থাকে। বৃত্তির ক্ষেত্রে তেমন কোনো মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদন্ডের প্রয়োজন হয় না।

গ. নিশি সমাজকর্মের ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি নীতিমালার পরিপন্থি আচরণ প্রদর্শন করেছে। 
সমাজকর্মের অন্যতম মূল্যবোধ হচ্ছে ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তি বিশেষ যোগ্যতা ও মর্যাদার অধিকারী। হয়তো সুযোগ বা স্বীকৃতির অভাবে মানুষ তার যোগ্যতা কাজে লাগাতে পারে না। তাছাড়া ব্যক্তিত চায় সে যে পরিবেশে বাস করে, সেখানে তার যথার্থ মূল্যায়ন হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি না দেয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব নয়। 
নিশি ও ঐশি সমাজকর্মে মাস্টার্স করেছে। তারা ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য ঢাকা শহরের একটি বস্তি পর্যবেক্ষণে যায়। সেখানে গিয়ে নিশি বস্তির এক মহিলার সাথে তর্ক করে। এতে সমাজকর্মের ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার নীতিটি লঙ্ঘিত হয়। কারণ সমাজকর্মের শিক্ষার্থী হিসেবে নিশির উচিত ছিল বস্তির মহিলাটিকে তার নিজস্ব মর্যাদা দানের মাধ্যমে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা। কিন্তু তা না করে সে মহিলাটির সাথে তর্ক শুরু করে। ফলে বস্তির মহিলাটির ব্যক্তিগত মর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধ লঙ্ঘিত হয়, যা সমাজকর্ম মূল্যবোধের পরিপন্থি।

ঘ. ঐশির আচরণে সমাজকর্মের পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি প্রকাশ পেয়েছে। 
সমাজকর্মে এ মূল্যবোধটির তাৎপর্য বিশেষভাবে স্বীকৃত। পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ সমাজকর্মের অন্যতম মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। এ ধরনের মূল্যবোধ সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক সমাজকর্ম পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন, সামাজিক সুসম্পর্কের বন্ধন এবং সৌহার্দ্যমূলক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়াসী। তাছাড়া সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, সমাজের প্রতিটি সদস্যই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। সমাজকর্ম অনুশীলনে সমাজকর্মীরা এ মূল্যবোধের যথাযথ অনুসরণ করে সুন্দর ও কাঙি্ক্ষত সমাজ গঠনে কাজ করে। এ মূল্যবোধ অনুশীলনের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এমনকি সমাজকর্মী এবং সাহায্যার্থীর মধ্যেও আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
ঐশি ও নিশি তাদের ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য একটি বস্তিতে যায়। সেখানে নিশি বস্তির একজন মহিলার সাথে তর্ক করে। তখন ঐশি নিশিকে শান্ত করে আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে ঐশি পারস্পরিক সহনশীলতা এবং শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি প্রয়োগ করে। এ মূল্যবোধ মানুষের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, কলহ ও বিদ্বেষ দূর করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ মূল্যবোধ প্রয়োগ করে ঐশি নিশিকে শান্ত করতে সক্ষম হয়। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকর্মী পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ মূল্যবোধটি অনুশীলন না করলে যথাযথভাবে তার পেশাগত ভূমিকা পালন করতে পারবেন না। এ ধরণের মূল্যবোধ সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত।

৬. রাজিব ও সজিব গ্রামের পাঠশালায় পড়ত। দরিদ্রতার কারণে রাজিব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করার পর বাবার কৃষিকাজে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে গ্রামের বাজারে তাদের মুদির দোকানে বসে। অপরপক্ষে, সজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে জেলা শহরে ওকালতি করে এবং তার সন্তানরা ভালো স্কুলে পড়াশোনা করে। 
ক. সামাজিক মূল্যবোধের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী? 
খ. সম্পদের সদ্ব্যবহার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে রাজিবের জীবনধারণের অবলম্বনকে সমাজকর্মের ভাষায় কী বলা হয়? তার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
ঘ. সজিবের জীবিকা পেশার বৈশিষ্ট্যের আলোকে মূল্যায়ন কর। 

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. সামাজিক মূল্যবোধের ইংরেজি প্রতিশব্দ Social Values.

খ. মানুষের কল্যাণের জন্য সম্পদের সর্বোচ্চ এবং যথাযথ ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে সম্পদের সদ্ব্যবহার বলা হয়।
সম্পদ সীমিত। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। ফলে সম্পদকে বহুবিধ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে সম্পদের সদ্ব্যবহার হয়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকে রাজিবের জীবনধারণের অবলম্বনকে সমাজকর্মের ভাষায় বৃত্তি বলা হয়। 
বৈশিষ্ট্যগতভাবে জীবনধারণের জন্য যেকোনো রকম অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বৃত্তি বলা হয়। যেমন- দিনমজুর, রিকশাচালক, কুলি প্রভৃতি। বৃত্তির জন্য কোনো বিশেষ জ্ঞানার্জনের আবশ্যকতা নেই। এমনকি বৃত্তির জন্য পেশাগত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তাও আবশ্যক নয়। আবার বৃত্তির ক্ষেত্রে নৈতিক মানদন্ড ও মূল্যবোধের উপস্থিতির প্রয়োজন হয় না। বৃত্তির ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা বিশেষভাবে অনুপস্থিত। রাজিব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করে তার বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করে এবং মাঝে মাঝে তাদের মুদি দোকানে বসে। এরূপ কালের জন্য রাজিবের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নেই। তাই তার কাজ বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রাজিবের জীবনধারণের যে অবলম্বন তাকে বৃত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

ঘ. পেশার বৈশিষ্ট্যের আলোকে সজিবের জীবিকাকে পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। 
নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য, তত্ত্বনির্ভর সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পন্থাকে পেশা বলে। এদিক বিচারে ওকালতি একটি পেশা।
সজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে ওকালতি করছে পেশার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সজিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে সুশৃঙ্খল জ্ঞান অর্জন করেছে। এছাড়া এ পেশায় রয়েছে বিশেষ দক্ষতা ও কৌশল যা বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। সেই সাথে তার পেশাগত দায়িত্ব রয়েছে, বিভিন্ন কাজের জন্য রয়েছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা। সামাজিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা তার পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এছাড়া সজিবের পেশায় রয়েছে পেশাগত নৈতিক বিধিমালা ও পেশাগত সংগঠন। পাশাপাশি পেশায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তাকে ব্যক্তিগত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়েছে। পেশাগত সেবার ফলাফলের পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপযোগ্যতাও তার পেশার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। 
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, জীবিকা হিসেবে ওকালতি কাজের মধ্যে পেশার বৈশিষ্ট্যাবলি রয়েছে। তাই সজিবের জীবিকা ওকালতি পেশার অন্তর্ভূক্ত।

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের একটি দেশ। তথাপি জনগণ অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞতা ও অসচেতনতার মধ্যে বসবাস করছে। রয়েছে তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে পেশাদার সমাজকর্ম প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একটা সংগঠনের অভাবে সমাজকর্ম পেশার মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হয়নি। অনেক সময় সাধারণ ধারণা অনুযায়ী সমাজের জন্য কল্যাণমূলক কোনো কার্যক্রমে কেউ অংশগ্রহণ করলেই গণমাধ্যমগুলো তাকে সমাজকর্মী হিসেবে প্রচার করে।
ক. গ্রহণনীতি অর্থ কী?
খ. পেশাগত মূল্যবোধ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে কোন সংগঠনের অভাবের কথা বলা হয়েছে এবং কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত সংগঠনের অভাবে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার মর্যাদা অর্জনে সফল হয়নি- তুমি কি একমত? যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দাও। 

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. গ্রহণনীতি হলো সমাজকর্মী সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি বা সাহায্যার্থীকে কীভাবে গ্রহণ করবে সেই নীতি।

খ. যেসব নীতিমালা, বিশ্বাস, দর্শন, ধ্যান-ধারণা, সংকল্প প্রভৃতি বিভিন্ন পেশাগত আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলোর সমষ্টিকে পেশাগত মূল্যবোধ বলে। 
প্রতিটি পেশারই নিজস্ব মূল্যবোধ রয়েছে। এ সকল মূল্যবোধের প্রেক্ষিতেই পেশাদার কর্মীদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকে পেশাগত সংগঠনের অভাবের কথা বলা হয়েছে। 
যেকোনো পেশার মানোন্নয়ন, পেশাদার কর্মীদের স্বার্থ-সংরক্ষণ, কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন প্রভৃতির জন্য প্রত্যেক পেশারই নিজস্ব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান থাকে। এর মাধ্যমে পেশার উন্নতি, পেশাদার ব্যক্তির স্বার্থ সংরক্ষণ, বিপদসংকুল অবস্থার মোকাবিলা, অনুশীলনের ক্ষেত্র সৃষ্টি, পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণ, পেশা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ ধরনের সংগঠন না থাকলে কোনো পেশা পেশাগত মর্যাদা অর্জন করতে পারে না। উদ্দীপকের ক্ষেত্রে ধরনের সংগঠনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। 
উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যার দেশ হওয়ায় পেশাদার সমাজকর্ম প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একটি সংগঠনের অভাবে সমাজকর্ম পেশাগত মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। উদ্দীপকের এই তথ্যটি সমাজকর্মের পেশাগত সংগঠনের অভাবকেই ইঙ্গিত করে।

ঘ. হ্যাঁ, উক্ত সংগঠন অর্থাৎ পেশাগত সংগঠনের অভাবেই বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশার মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হয়নি বক্তব্যটির সাথে আমি একমত।
পেশাগত সংগঠন পেশার সময় উপযোগী মান উন্নয়ন, ব্যাপক প্রচার, অনুশীলনের ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ বাংলাদেশে সুদীর্ঘ ৫০ বছরেও সমাজকর্ম পেশার ক্ষেত্রে তেমন কোনো শক্তিশালী সংগঠন গড়ে ওঠেনি। পেশাগত মর্যাদার লড়াইয়ে শক্তিশালী ও পেশার উন্নয়নে আত্মনিয়োগকারী সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। সংগঠনের মাধ্যমে পেশাজীবীদের নিয়ন্ত্রণ, নৈতিক মানদন্ড ভঙ্গকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা এবং পেশার সময়োপযোগী ব্যবস্থা ১ থাকলে স্বীকৃত পেশাও পতনের সম্মুখীন হতে পারে। উদ্দীপকে এ ধরনের সংগঠনের অভাবকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞতা ও অসচেতনতার মধ্যে বাস করছে। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার এই দেশে পেশাদার সমাজকর্ম প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সংগঠনের অভাবে সমাজকর্ম এখনো পেশার মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে উপরে বর্ণিত পেশাগত সংগঠনের অভাবকেই দায়ী করা যায়। কেননা, বাংলাদেশে অন্যান্য পেশা যেমন চিকিৎসা, আইন, সাংবাদিকতাসহ সকল পেশার পেশাগত সংগঠন থাকায় সেগুলো পেশার মর্যাদা অর্জন করতে পেরেছে। উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত পেশাগত সংগঠনের অভাবেই সমাজকর্ম বাংলাদেশে পেশার মর্যাদা লাভে ব্যর্থ হয়েছে।

৮. সুমনা হক একটি সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক। সালমা নামে অতি দরিদ্র পরিবারের পিতৃহীন একটি মেয়েকে তার প্রতিষ্ঠানে আনা হলে তিনি মেয়েটিকে সাদরে গ্রহণ করলেন। মেয়েটির মতামত নিয়ে তার ঝোঁক বুঝে অঙ্কন ও সংগীত শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করলেন। 
ক. CSWE-এর পূর্ণরূপ লেখো।
খ. সমাজকর্ম মূল্যবোধ বলতে কী বোঝ?
গ. সুমনা হকের কর্মতৎপরতার মধ্যে সমাজকর্মের যেসব মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে তার বিবরণ দাও।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সালমার জীবনের স্থায়ী উন্নয়নে সুমনা সমাজকর্মের আর কোন কোন মূল্যবোধ অনুসরণ করতে পারে? বুঝিয়ে লোখা।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. CSWE-এর পূর্ণরূপ হলো Council on Social Work Education.

খ. সমাজকর্ম মূল্যবোধ বলতে সমাজকর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে অনুসৃত মূল্যবোধগুলোকে বোঝানো হয়, যা মানুষের কল্যাণে প্রয়োগ করা হয়। 
বর্তমান যুগে সমাজকর্ম একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর সাহায্যকারী পেশা হিসেবে স্বীকৃত। অন্যান্য পেশার ন্যায় এই পেশাতেও কিছু স্বীকৃত মূল্যবোধ আছে। সাধারণত যেসব আদর্শ বিশ্বাস, ধারণা, মৌলিক নীতিমালা ও স্বীকার্য সত্যের ওপর পেশাদার সমাজকর্মের সামগ্রিক সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলোর সমষ্টিকেই সমাজকর্মের মূল্যবোধ বলে।

গ. উদ্দীপকে সুমনা হকের কর্মতৎপরতার মধ্যে সমাজকর্মের যেসব মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায় তা হলো ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা নীতি। 
উদ্দীপকে দেখা যায়, সুমনা হত শিশু পরিবারে সদ্য আগত সালমা নামের মেয়েটিকে সাদরে গ্রহণ করেন যা ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতিকে চিহ্নিত করে। সমাজকর্মী মাত্রই বিশ্বাস করেন, ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে তাকে যদি যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা সহকারে গ্রহণ করা হয়, তাহলে সে আত্মবিশ্বাসী হবে এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষমতা লাভ করবে। এই মূল্যবোধের মাধ্যমে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন। এই ব্যাপারটি উদ্দীপকের সুমনা হকের কাজে দেখা যায়।
আবার সালমার মতামত গ্রহণ করে তার পছন্দানুযায়ী বিষয় শেখার দিকে গুরুত্বারোপ করেন সুমনা হক, যা সমাজকর্মের ব্যক্তি স্বাধীনতা নীতিকে প্রতিফলিত করে। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে, প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজস্ব ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে চায় এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারলেই তার ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয়। সমাজকর্মের এই মূল্যবোধটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়। ফলে সে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় এবং সাবলম্বী হয়। উদ্দীপকে সুমনা হবতে দেখা যায়, সালমার মতামত ও আগ্রহের ভিত্তিতে তাকে অঙ্কন ও সংগীত শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন। তাই বলা যায়, সুমনা হকের কর্মতৎপরতার মধ্যে সমাজকর্মের ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার নীতি এ দুটি মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সালমার জীবনের স্থায়ী উন্নয়নে সুমনা সমাজকর্মের আরো কিছু মূল্যবোধ অনুসরণ করতে পারেন। 
একজন সমাজকর্মী সব সময়ই চেষ্টা করেন সাহায্যার্থীকে এমনভাবে সাহায্য করতে যাতে সে নিজ সমস্যা মোকাবিলা ও পুনরাবৃত্তি রোধে সক্ষম হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে উদ্দীপকে সুমনা হককে দেখা যায়, শিশু পরিবারে নতুন আগত সালমাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে তার সমস্যা মোকাবিলার মাধ্যমে সক্ষম করে তুলতে। এক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার নীতি অনুসরণ করলেও তা একটি সাময়িক সমাধান আনতে পারে। তাই সালমার জীবনের স্থায়ী উন্নয়নে সমাজকর্মের অন্যান্য মূল্যবোধগুলো অনুসরণ করা উচিত।
প্রতিটি পেশার পেশাগত অনুশীলনে কতিপয় মূল্যবোধ অনুসৃত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার জাতীয় সমাজকর্ম সমিতি সমাজকর্মের ১৪টি মূল্যবোধের উল্লেখ করেন যার ভিতর থেকে দুটির প্রয়োগ উদ্দীপকে দেখা যায়। তবে সালমা নামের অতি দরিদ্র পরিবারের পিতৃহীন মেয়েটির স্থায়ী সমস্যা সমাধানে আরো যে মূল্যবোধ অনুসরণ করা যায় সেগুলো হলো মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, পরিবর্তনের জন্য ব্যক্তির সামর্থ্যের মূল্যায়ন, গোপনীয়তা, ব্যক্তি মানুষকে তার প্রতিভা উপলব্ধির সুযোগ প্রদান, সাহায্যার্থীদের ক্ষমতায়ন, সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান, বৈষম্য না করা প্রভৃতি। আপাতত শিশু পরিবারে বাস করলেও এক সময় সালমা নামের মেয়েটি আরো বৃহৎ পরিসরে যাবে। তাই শিশু পরিবারে থাকা অবস্থাতে যদি তার পারিবারিক পরিচয় কিংবা আর্থিক অবস্থান বিবেচনায় না এনে তাকে মানুষ হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজ প্রতিভা উপলখির সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তার পক্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা সম্ভব। এছাড়াও স্বনির্ভরতা নীতি ও সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান নীতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিচালনায় তাকে দক্ষ করে তোলা সম্ভব।
সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, একজন সমাজকর্মীর মূল লক্ষ্য হলো সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির জীবনের স্থায়ী উন্নয়ন ঘটানো। এক্ষেত্রে শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক এবং সমাজকর্মী হিসেবে সুমনা হক উদ্দীপকে উল্লিখিত মূল্যবোধের পাশাপাশি সমাজকর্মের আরো কিছু মূল্যবোধ অনুসরণের মাধ্যমে সালমার জীবনে স্থায়ী উন্নয়ন ঘটাতে পারেন।


৯. আবেদিন কাদের একজন পেশাদার সমাজকর্মী। তিনি তার সমস্যাগ্রস্ত ক্লায়েন্টদের সাথে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন করে, সুশৃঙ্খল জ্ঞান ও নীতিমালার ভিত্তিতে, পেশাগত সংগঠনের আওতায় থেকে সেবা প্রদান করে থাকেন।
ক. মূল্যবোধ কী?
খ. পেশা ও বৃত্তির সম্পর্ক কোথায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আবেদিন কাদের এর পেশাগত মূল্যবোধগুলো প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা দাও। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আবেদিন কাদের এর "পেশা হিসেবে সমাজকর্ম কতটা যৌক্তিক"? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. মূল্যবোধ হলো একটি মানদন্ড, যা মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. পেশা ও বৃত্তি একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। পেশা ও বৃত্তি উভয়ই জীবিকা অর্জনের পন্থা। অর্থ উপার্জন তাদের মূল লক্ষ্য। পেশা ও বৃত্তি উভয়ই সেবাকাল। 
একজন পেশাজীবী মানুষকে যেমন সেবা দিয়ে থাকেন, তেমনি একজন বৃত্তিজীবীও মানুষকে সেবা দিয়ে থাকেন। পেশা ও বৃত্তি উভয়েরই কাজের প্রকৃতি অনুসারে পরিচিতি হয়। যেমন- আইনজীবী, ডাক্তার, কৃষক, মাঝি ইত্যাদি। সমাজে পেশাজীবীর পাশাপাশি বৃত্তিজীবী ব্যক্তিও বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। যেমন- শিক্ষাবিস্তার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান প্রভৃতি। পেশা ও বৃত্তির জন্য শ্রম অত্যাবশ্যক। পেশার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রম, আর বৃত্তির জন্য শারীরিক শ্রম দিতে হয়। অনেক সময় পেশার জন্য শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উভয় শ্রমই দিতে হয়।

গ. সমাজকর্ম পেশার কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য এর পেশাগত মূল্যবোধের প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিটি পেশার পেশাগত অনুশীলনে বেশ কিছু মূল্যবোধ অনুসরণ করা হয়। অন্যান্য পেশার মতো সমাজকর্মেরও কতগুলো পেশাগত মূল্যবোধ রয়েছে। এগুলো সমাজকর্ম পেশা এবং সমাজকর্মীর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও আচার-আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি সমাজকর্ম পেশার অন্যতম মূল্যবোধ। ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করা হলে ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। যা ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে। এর ফলে ব্যক্তি নিজের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম হয়ে ওঠে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার মূল্যবোধটি ব্যক্তিকে তার সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিজের সমস্যাগুলো নিজেই সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারে। সবার জন্য সমান সুযোগ এ মূল্যবোধের আলোকে সমাজকর্ম প্রতিটি মানুষের স্বার্থ এবং সুযোগকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সমাজকর্মে সম্পদের সদ্ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। কেননা সমাজকর্ম সর্বদাই নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্বাসী। সমাজকর্ম ব্যক্তির স্বনির্ভরতা অর্জনে বিশ্বাসী। স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের কল্যাণে গতিশীল ভূমিকা রাখতে পারে।
সমাজকর্ম ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী কারণ ব্যক্তি স্বাধীনতার বিকাশ ঘটলে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মর্যাদার স্বীকৃতি ঘটে। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। এর ফলে সে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে। সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকর্মের পেশাগত মূল্যবোধগুলার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

ঘ. পেশার সকল বৈশিষ্ট্য সমাজকর্মে বিদ্যমান। এ কারণে আবেদিন কাদেরের সমাজকর্ম পেশাকে পেশা হিসেবে অভিহিত করা যায়। 
সমাজকর্ম একটি সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ নির্দেশিত পেশা। প্রতিটি পেশার মতো সমাজকর্মেরও কতগুলো মূল্যবোধ রয়েছে। পেশাগত অনুশীলনের সময় সমাজকর্মীগণ এ সকল মূল্যবোধ যথাযথভাবে মেনে চলেন।
সমাজকর্ম পেশায় রয়েছে বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এই বিশেষ শিক্ষা অর্জিত হয় বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে। এছাড়া বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। সমাজকর্ম পেশায় রয়েছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা সমাজকর্মীর ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতাও বৃদ্ধি পায়। সমাজকর্ম পেশায় পেশাগত সংগঠনের উপস্থিতিও বিদ্যমান। এ ধরনের সংগঠন কর্মীদের মাঝে ইতিবাচক চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটায়। সমাজকর্ম সমাজের উন্নতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সমাজকর্মীরা সমাজের উন্নয়ন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে। সমাজকর্ম ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করে সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত। সমাজকর্ম একটি উপার্জনক্ষম পেশা। সমাজকর্মীরা ডাদের জ্ঞান, দক্ষতা, নৈপুণ্য ও অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ঘটিয়ে এ পেশাকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। পাশাপাশি তারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অর্থনৈতিক কার্যাবলি হিসেবে সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করেছে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পেশার বৈশিষ্ট্যসমূহ সমাজকর্মে বিদ্যমান। এ সকল বৈশিষ্ট্যই সমাজকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।

১০. রুনা ইসলাম একজন পেশাদার সমাজকর্মী। স্বামী পরিত্যক্ত রোশনি সাহায্যের জন্য তার প্রতিষ্ঠানে আসলে তিনি তাকে মর্যাদার সাথে সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি রোশনির সমস্যার সমাধানে তাকে একটি হাঁস মুরগির খামার করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রোশনি তাকে জানায় যে, সে সেলাই-এর কাজ ভালো জানে। তাই তাকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দিলে বেশি ভালো হবে। রুনা ইসলাম তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তাকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেন।
ক. মূল্যবোধের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. পেশা বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে রুনা ইসলামের কাজে সমাজকর্মের কোন কোন মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের উল্লেখিত মূল্যবোধগুলো সমাজকর্ম পেশার সামগ্রিক মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে কি? বিশ্লেষণ কর। 

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. মূল্যবোধের ইংরেজি প্রতিশব্দ Values.

খ. পেশার আভিধানিক অর্থ জীবিকা বা জীবনধারণের বিশেষ উপায়। 
মানবজ্ঞানের কোনো একটি নির্দিষ্ট শাখায় উচ্চমানের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন করে, সে জ্ঞানকে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে অর্থাৎ জীবনধারণের উপায় হিসেবে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাকে এককথায় পেশা বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে উপস্থাপিত সমাজকর্ম মূল্যবোধসমূহ হলো- ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা। 
প্রতিটি পেশার অনুশীলনে কতিপয় মূল্যবোধ অনুসৃত হয়ে থাকে। সমাজকর্ম পেশার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু মূল্যবোধ অনুসৃত হয়, যা সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সাফল্য আনে। সমাজকর্মী রুনা ইসলামও এসব মূল্যবোধ অনুসরণের ফলে রোশনির সমস্যা সমাধানে সফল হয়েছেন। সমাজকর্মী বুনা ইসলাম রোশনির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রথমেই সাহায্যার্থী হিসেবে তাকে মর্যাদাবান চিন্তা করেছেন এবং আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছেন। এটি ব্যক্তির মর্যাদা ও মূল্যের স্বীকৃতি মূল্যবোধ নামে পরিচিতি। ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় এবং তার মধ্যে আতমবিশ্বাস জেগে ওঠে। তাই সাহায্যকারী ও সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্ম এ মূল্যবোধটি অনুসরণ করে। এছাড়া রোশনির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপরও গুরুত্ব প্রদান করেছে। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ব্যক্তিকে তার স্বকীয়তা ও যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ব্যক্তিকে আতমনির্ভরশীল করে তুলতে হবে এ মূল্যবোধের অনুসরণ আবশ্যক। 
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উল্লিখিত মূল্যবোধ অনুসরণের মাধ্যমেই সমাজকর্মী রুনা ইসলাম রোশনির সমস্যা সমাধানে সক্ষম ও সফল হয়েছেন।

ঘ. সমাজকর্ম মূল্যবোধসমূহের মাত্র তিনটি দিক উদ্দীপকে স্থান পাওয়ায় এটি সমাজকর্ম মূল্যবোধসমূহের সামগ্রিকতা ধারণে ব্যর্থ হয়েছে। 
সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নে সাহায্য করাই এর কাজ। সমাজকর্ম অনুশীলনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেশ-কাল নিরপেক্ষতা ভেদে এর কিছু স্বতন্ত্র মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে। উদ্দীপকে সমাজকর্মী রুনা ইসলামের কাজে উত্ত মূল্যবোধসমূহের তিনটি দিকের প্রতিফলন দেখা যায়।
সমাজকর্মী রুনা ইসলাম রোশনির সমস্যা সমাধানে ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা এই তিনটি মূল্যবোধ পরিপূর্ণভাবে অনুশীলন করেছেন। শুধু এ তিনটিই সমাজকর্মের মূল্যবোধ নয়। সমাজকর্মের আরও অনেক মূল্যবোধ রয়েছে। যেগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া সাফল্য লাভ করে। এসব মূল্যবোধের মধ্যে রয়েছে- সকলকে সমান সুযোগ দান। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্বশ্রেণির মানুষকে সাহায্য গ্রহণের সমান সুযোগ প্রদান করা। তাছাড়া সাহায্যার্থীকে স্বনির্ভর করে তোলার মানসিকতা নিয়ে সমাজকর্মী সাহায্য করবেন। ব্যক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তাকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে় তোলাই হবে সমাজকর্মীর প্রধান কাজ। সমাজকর্মের অন্য একটি মূল্যবোধ হচ্ছে সম্পদের সদ্ব্যবহার করা, অর্থাৎ সাহায্যার্থীর বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমাজকর্মী সর্বদাই সাহায্যার্থীকে গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। তাহলে সাহায্যার্থী তার সব ধরনের তথ্য প্রকাশ করতে ভরসা পাবেন।
সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর মধ্যে সামাজিক দায়িত্ব সৃষ্টি করে কাজ করবেন। পারস্পরিক দায়িত্ববোধ সমাজের উদ্দেশ্য অর্জনকে সফল করে তোলে।
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা সমাজকর্মের অপর একটি মূল্যবোধ। এটি না থাকলে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ে। সর্বোপরি একজন সমাজকর্মী তার জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে সেবা প্রদান করবেন।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজকর্মের উল্লেখিত মূল্যবোধসমূহের কোনো ইঙ্গিত নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি সমাজকর্মের সামগ্রিক মূল্যবোধ ধারণ করতে সক্ষম হয়নি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post