HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Social Work 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
আধুনিক সমাজকর্মের জন্মকালের ব্যাপ্তি বেশি দিনের না হলেও মানুষের মধ্যে কল্যাণ বা সেবার মনোভাবের সূত্রপাত ঘটে সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই। মানব সভ্যতার প্রারম্ভেই পারস্পরিক সাহায্য, সহযোগিতা ও সেবার সহজাত মনোবৃত্তি মানুষকে সংঘবদ্ধ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করে। আর এ ধরনের কল্যাণমূলক প্রচেষ্টা থেকেই সমাজকল্যাণের যাত্রা শুরু। এই প্রচেষ্টাই পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও সুসংগঠিত পেশাদার সমাজকর্ম হিসেবে বিকশিত হয়েছে।

তবে এর বীজ অংকুরিত হয় মূলত ইংল্যান্ডে। প্রাথমিক পর্যায়ে দানশীলতা থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়, কিন্তু সময়ের আবর্তে মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে সেবামূলক কার্যক্রম ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় অতিক্রম করে সরকারের হস্তক্ষেপে আইন প্রণয়ন ও নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে একটি স্থায়ী ও বৈজ্ঞানিক রূপরেখা লাভ করে। আর এই সেবামূলক কর্মসূচি পরবর্তিতে আমেরিকায় আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক রূপ পরিগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণতা অর্জনেসক্ষম হয়। 

দরিদ্র আইন
প্রাক-শিল্পযুগে ইংল্যান্ডে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দরিদ্র সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সুসংগঠিত উপায়ে সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত দারিদ্র সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি কার্যক্রমের বেশিরভাগই ছিল শাস্তি ও দমনমূলক। যার ফলে ১৩৪৯ থেকে ১৬০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে ইংল্যান্ডে শাসক শ্রেণি উপলব্ধি করতে সক্ষম হন যে, দমনমূলক পদ্ধতি নয় বরং জনগণের সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব।

আর এ ধরনের মনোভাবের প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডে পরবর্তী সময়ে বেশ কতগুলো কার্যকরী আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনগুলো সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের সেবায় নিয়োজিত। সুতরাং বলা যায় যে, দরিদ্র আইন হলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দরিদ্রদের সাহায্যদানের জন্য একটি আইনগত পদক্ষেপ যা ইংল্যান্ডের অসহায় ও দরিদ্র জনগনের অভাব মোচনের জন্য একটি সরকারি অনুশাসনের দৃষ্টান্ত।

দান সংগঠন সমিতি
আধুনিক সমাজকল্যাণের বিবর্তনে এবং সমাজকর্মকে পেশার পর্যায়ে উপনীত হতে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার দান সংগঠন আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সনাতন সমাজকল্যাণের ধারাকে পেশাগত মর্যাদা ও বৈজ্ঞানিক রূপ প্রদানে দান সংগঠন সমিতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দানশীলতা মানবসেবার সবচেয়ে প্রাচীন ও সনাতন প্রথা। পূর্বে সমাজসেবা কার্যক্রম অসংগঠিত উপায়ে পরিচালনা করা হতো। পরবর্তীতে আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে সমাজসেবা কার্যক্রম সংগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যেই ইংল্যান্ডের ও আমেরিকায় উনবিংশ শতাব্দীতে দান সংগঠন আন্দোলন গড়ে উঠে।

এই আন্দোলনের ফলেই গড়ে উঠে নতুন সমাজকল্যাণ সংগঠন Charity Organization Society (COS)। দান সংগঠন সমিতি ১৮৬৯ সালে যেমন ইংল্যান্ডের দুঃস্থ, দরিদ্র ও অসহায়দের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সাহায্য দানে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ ও ভূমিকা পালন করে তেমনি ইংল্যান্ডের অনুকরণে আমেরিকাতেও ১৮৭৭ সালে দান সংগঠন সমিতি গড়ে উঠে।

ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশ্যাল ওয়ারকার্স ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশ্যাল ওয়ারকার্স বা জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি বিশ্বে পেশাগত সমাজকর্মীদের অন্যতম বৃহত্তম পেশাগত সংগঠন। সমাজকর্মের সদস্যনির্ভর এ সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ১৯৯১ সালে ১,৩০,০০০ এর উপর পৌঁছায়, ২০১২ সালে এই সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার। সমাজকর্মের প্রথম পেশাগত সংগঠন আমেরিকান এসোসিয়েশন অব সোশ্যাল ওয়ারকার্স ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

সমাজকর্মের পেশাগত শিক্ষাকে সুসমন্বিত ও সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমেরিকায় ১৯৫২ সালে জাতীয় সমাজকর্ম শিক্ষা পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদ সমাজকর্মকে একক ও স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সমাজকর্মের পেশাগত সংগঠনগুলোকে সমন্বিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পেশাদার সমাজকর্মীদের বৃহৎ সংগঠন জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি (NASW) ১৯৫৫ সালে আমেরিকার কর্মরত সমাজকর্মীদের বিভিন্ন পেশাগত সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয়।

কাউন্সিল অন সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন বা CSWE
Council on Social Work Education (CSWE) আমেরিকায় সমাজকর্ম শিক্ষার প্রথম পর্যায়ের সংগঠন। এর প্রধান কার্যক্রম হলো শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও নতুন নতুন সমাজকর্ম কর্মসূচি প্রবর্তন। প্রচলিত সমাজকর্ম কর্মসূচি মূল্যায়ন, সমাজকর্ম শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি প্রকাশনার ব্যবস্থাকরণ ও বিতরণ এবংসমাজকর্ম কর্মসূচি উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ প্রভৃতি। ১৯৫১ সালে CSWE সমাজকর্ম পেশাজীবীদের জন্য ন্যূনতম দুই বছরের মাস্টার্স কোর্সের শর্ত বেধে দেয়। 

শিল্পবিপ্লব
শিল্পবিপ্লবকে সহজ ভাষায় শিল্প সংশ্লিষ্ট বিপ্লব বলে অভিহিত করা যায়। বিপ্লব শব্দটি দ্বারা কোনো ক্ষেত্রের মৌল পরিবর্তনকে বুঝায়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শিল্প সংশ্লিষ্ট যে মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে, যা উৎপাদন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে তাকে বিপ্লব বলাই শ্রেয়। শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেদীন কাদের বলেন, ১৭৬০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে একটা সুদূর প্রসারী ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী সামাজিক বিপ্লব বিশেবর অর্থনীতি, রাজনীতি এবং চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন বয়ে আনে। আর এ ধরনের পরিবর্তন মানব সভ্যতার ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। এর ফলে বদলে গেছে পৃথিবীর বাহ্যিক চেহারা, মৌল কাঠামোতে এসেছে পরিবর্তন। মানুষের জীবনাচারণ ও জীবনযাপন রীতিতে এসেছে বিরাট এক ভিন্নতা।

শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে Professor Lady Williams বলেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত জ্ঞান বিজ্ঞানের দ্রুত উনণয়ন এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে তার ব্যবহারের ফলে মানব জীবন যাত্রার যে পরিবর্তন এসেছে তাই শিল্পবিপ্লব।

The New Encyclopedia of Britannica তে বলা হয়েছে, শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক হস্তশিল্পনির্ভর অর্থনীতি থেকে 
যন্ত্রচালিত উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া; যা অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শুরু হয়ে বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিস্তার লাভ করে। 

সমাজকল্যাণ অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, শিল্পবিপ্লব হলো অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনাদি, যা অষ্টদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কারখানা ব্যবস্থায় সূচনা ঘটেছে।

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

১. সৌম্য টেলিভিশনের একটি চ্যানেলে একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান দেখছিল। সেখানে উপস্থাপক বিভিন্ন ধরনের ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে তাদের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরছিলেন। দেখা গেল প্রকৃত ভিক্ষুকের চেয়ে ছদ্মবেশী ও ব্যবসায়ী ভিক্ষুকের সংখ্যাই বেশি। সৌম্য ইংল্যান্ডের একটি আইনের কথা শুনলো যা ভিক্ষুকদেরকে কর্মীতে রূপান্তর করেছিল। 
ক. ইংল্যান্ডে বসতি আইনটি কত সালে প্রণীত হয়?
খ. সামাজিক বিমা বলতে কী বোঝায়? 
গ. সৌম্যের দেখা ভিক্ষুকদের জন্য ইংল্যান্ডের তৎকালীন যে আইনটি প্রযোজ্য তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো। 
ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দরিদ্রদের জন্য এ ধরনের আইন প্রয়োগের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করো।

💘 ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ইংল্যান্ডে বসতি আইনটি ১৬৬২ সালে প্রণীত হয়।

খ. সামাজিক বিমা হলো বার্ধক্য, অক্ষমতা, উপার্জনকারীর মৃত্যু, পেশাগত দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার মতো বুঝুঁকির বিপরীতে নাগরিকদের রক্ষায় সরকার বা সংস্থা পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মসূচি। এর উদাহরণ হলো- চাকরিজীবীদের পেনশন, কল্যাণ তহবিল, যৌথ বিমা, শ্রমিক ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি। সামাজিক বিমার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ধারণার সূচনা হয়।

গ. সৌম্যের দেখা ভিক্ষুকদের জন্য ইংল্যান্ডের ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রযোজ্য। 
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ড বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যা দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত এসব সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত সরকারি কার্যক্রমের বেশির ভাগ ছিল শাস্তি দমনমূলক। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং পরিষদের সঠিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রণয়ন করা হয়। 
উদ্দীপকে সৌম্য টেলিভিশনে ভিক্ষুকদের ওপর প্রচারিত একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান দেখছিল। সেখানে সে দেখে প্রকৃত ভিক্ষুকের চেয়ে ছদ্মবেশী ও ব্যবসায়ী ভিক্ষুকের সংখ্যাই বেশি। এ অবস্থা মোকাবিলায় ইংল্যান্ডে প্রণীত ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি কার্যকরী হবে। কারণ উক্ত আইনে প্রকৃত ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করে তাদের সাহায্যদান ও কর্মের ব্যবস্থা করা হতো। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্রদের তিনভাগে বিভক্ত করা হয়। যথাত সক্ষম দরিদ্র, অক্ষম দরিদ্র ও নির্ভরশীল শিশু। শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী তাদের কাজ ও সাহায্য দেওয়া হয়। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিধান এ আইনে রাখা হয়। এ আইন অনুযায়ী দরিদ্রদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সাহায্য করবে। দরিদ্রদের সচ্ছল কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকলে তাদের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতো। সক্ষম দরিদ্রদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এ আইনে ভিক্ষাবৃত্তি মনোভাব কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এ আইনের অধীনে দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন করারোপের ব্যবস্থা করা হয়।

ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য মোকাবিলায় এ ধরনের আইন অর্থাৎ ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি অত্যন্ত কার্যকরী হবে। 
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ডে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। এ সময় সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের চেষ্টা করেও আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। অবশেষে পূর্বের বিভিন্ন আইনের অভিজ্ঞতার আলোকে ১৬০১ সালের দারিদ্র্য আইনটি প্রণীত হয় যা দারিদ্র্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
উদ্দীপকের সৌম্য টেলিভিশনে ভিক্ষুকদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানীমূলক অনুষ্ঠান দেখছিল। এ সময় সে ইংল্যান্ডের একটি আইনের কথা শুনলো যা ভিক্ষুকদের কর্মীতে রূপান্তরিত করেছিল। এ আইনটি হলো ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন। আমাদের দেশেও দারিদ্র্য দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। এ সমস্যা সমাধানে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রয়োগ করা যায়। এই আইন অনুযায়ী আমাদের দেশেও দরিদ্রদের শ্রেণিবিভাগ করে সাহায্যদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে অক্ষম দরিদ্ররা সাহায্য পাবে। আর ছদ্মবেশী সক্ষম দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। আমাদের দেশের সরকার দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য তাদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের বাধ্য করতে পারে। যেসব দরিদ্রদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজন থাকবে না তাদের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া আমাদের দেশের সরকারকে আইনের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ কর্মসূচি আমাদের দেশের ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে সহায়ক হবে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আমাদের দেশের দারিদ্র্যাবস্থা ও ভিক্ষাবৃত্তি দূর করার জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

২. কদম আলী ঢাকা শহরের একটি ছোটখাটো ভিক্ষুক দলের সর্দার। তার ভিক্ষুক দলে রয়েছে শারীরিক এবং বাকপ্রতিবন্ধী চারজন সদস্য। এছাড়া রয়েছে দিপু নামের এক অনাথ শিশু। এরা সকলেই নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে পথচারীদের সহানুভূতিপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভিক্ষা আদায় করে।
ক. COS কী?
খ. শিল্প দুর্ঘটনা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের দিপু ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী কোন শ্রেণির দরিদ্র বলে বিবেচিত? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. দিপু ছাড়াও উদ্দীপকে বর্ণিত অপর শ্রেণির মানুষের জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি যে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম তা বিশ্লেষণ করো।

💘 ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. COS হচ্ছে Charity Organization Society বা দান সংগঠন সমিতি।

খ. শিল্পকারখানায় কর্মরত অবস্থায় যে সব দুর্ঘটনা ঘটে সেগুলোই শিল্প দুর্ঘটনা।
শিল্পকারখানায় যান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতে হয়। এতে পেশাগত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। পেশাগত দুর্ঘটনার কারণে অনেক সময় শ্রমিক শ্রেণি অকাল মৃত্যু, বিকলাঙ্গতা ও কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শিল্প-কারখানায় ঘটে যাওয়া এ সব পেশাগত দুর্ঘটনাই শিল্প দুর্ঘটনার অন্তর্ভুক্ত।

গ. উদ্দীপকের দীপু ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী নির্ভরশীল শিশু হিসেবে বিবেচিত।
১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্রদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো- সক্ষম দরিদ্র, অক্ষম দরিদ্র ও নির্ভরশীল শিশু। এতিম, পরিত্যক্ত ও অক্ষম পিতা-মাতার সন্তানরা নির্ভরশীল শিশু শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদেরকে কোনো নাগরিকের কাছে বিনা খরচে দত্তক অথবা কম খরচে লালন-পালনের জন্য দেওয়া হতো।
এক্ষেত্রে ছেলেদের ২৪ বছর পর্যন্ত এবং মেয়েদেরকে ২১ বছর বা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মনিবের বাড়িতে থাকতে হতো। উদ্দীপকে উল্লেখিত দীপু অনাথ শিশু। কদম আলীর অধীনে সে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত। অনাথ শিশু হওয়ার কারণে দীপু ১৬০১ সালের আইন অনুযায়ী নির্ভরশীল শিশু শ্রেণির দরিদ্র হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঘ. দীপু ছাড়াও উদ্দীপকে বর্ণিত অপর শ্রেণির অর্থাৎ অক্ষম দরিদ্রের জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। 
ইংল্যান্ডের দরিদ্রদের কল্যাণে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রণীত হয়েছিল। এই আইনের অধীনে দরিদ্রদের সাহায্য ও পুনর্বাসনে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করতো। এক্ষেত্রে সাহায্যদানের সুবিধার্থে দরিদ্রদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছিল। যেমন- সক্ষম দরিষ, অক্ষম দরিদ্র ও নির্ভরশীল শিশু। এই আইনে শ্রেণি অনুযায়ী তাদের কাজের ব্যবস্থা করা, ত্রাণ সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
উদ্দীপকের কদম আলী ভিক্ষুক দলের সর্দার। তার ভিক্ষুক দলে চারজন সদস্য শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী এরা সবাই অক্ষম দরিদ্রের পর্যায়ভুক্ত। তাই এ আইন অনুযায়ী সরকার তাদের জন্য সক্ষমতা অনুসারে জীবিকা লাভের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরকে ত্রাণ সাহায্য প্রদান করতে পারে। এসবের পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে পারে। এভাবে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন উদ্দীপকে উল্লিখিত অক্ষম দরিদ্রের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, দিপু ছাড়াও উদ্দীপকে বর্ণিত অপর শ্রেণি অর্থাৎ অক্ষম পরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. ইসমাইল শেখ তারুণ্যদীপ্ত একজন টগবগে যুবক। দেশে নিজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেরে অবশেষে সে মালয়েশিয়াতে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমালো। প্রায় দশ বছর পর নিজ এলাকায় ফিরে ইসমাইল শেখ অবাক হয়ে গেলো। কেননা অনেক ছোট-বড় কারখানা গড়ে উঠেছে এলাকায়। আরও গড়ে উঠেছে অসংখ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। কাজের সন্ধানে তাদের এখন অন্য এলাকায় যেতে হয় না। 
ক. ‘Virgin Queen’ নামে কাকে ডাকা হতো?
খ. পেশা বলতে কী বোঝায়?
গ. মালয়েশিয়া ফেরত ইসমাইল শেখের এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পাঠ্যপুস্তকে যে ঐতিহাসিক ঘটনাটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ঘটনাটি মানবকল্যাণের দিগন্তকে প্রসারিত করেছেত উদ্দীপক ও পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. রানী প্রথম এলিজাবেথকে ‘Virgin Queen’ নামে ডাকা হতো।

খ. পেশা বলতে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য, তত্ত্বনির্ভর, সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পন্থাকে বোঝায়।
প্রকৃত অর্থে পেশা হলো এমন এক ধরনের বৃত্তি বা জীবিকা নির্বাহের উপায়, যেখানে নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন করে যথাযথ দক্ষতা, নৈপুণ্য ও কৌশলের মাধ্যমে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার অর্জিত জ্ঞানকে স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করে জীবিকা অর্জন করতে পারে। যেমন- ডাক্তারি শিক্ষকতা, ইত্যাদি। পেশা সাধারণত জনকল্যাণমুখী হয়ে থাকে এবং এর সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ও সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে।

গ. মালয়েশিয়া ফেরত ইসমাইল শেখের এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পাঠ্যবইয়ের ঐতিহাসিক ঘটনা ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক হস্তশিল্পনির্ভর ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ও অর্থনীতি থেকে শিল্প ও যন্ত্রচালিত বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া। এটি অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শুরু হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিস্তার লাভ করে।
শিল্পবিপ্লব উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনে। এতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক হারে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। কুটির শিল্পভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তে শক্তি ও প্রযুক্তিচালিত যান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। এর ফলে ব্যাপকহারে কলকারখানা গড়ে ওঠে। এ সব কলকারখানায় নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যার কারণে মানুষকে কাজের জন্য অন্য দেশে যেতে হয় না। ফলে উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। বৃহদায়তন শিল্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি গড়ে ওঠে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত ইসমাইল শেখ কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়ায় যায়। প্রায় দশ বছর পর সে নিজ এলাকায় এসে অবাক হয়ে যায়। কারণ তার এলাকায় এখন ছোট-বড় অনেক কারখানা ও অসংখ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে় উঠেছে। কাজের সন্ধানে তার এলাকার লোকদের এখন আর অন্যত্র যেতে হয় না। সুতরাং ইসমাইলের এলাকায় ঘটে যাওয়া বিষয়টি শিল্পবিপ্লকেই নির্দেশ করে যার বৈশিষ্ট্য উপরে বর্ণিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত শিল্পবিপ্লৰ মানবকল্যাণের দিগন্তকে প্রসারিত করেছে। 
শিল্পবিপ্লবের ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক হারে যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হওয়ায় উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায়। শিল্প বিপ্লবের ফলে বিশেব অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। এতে কর্মসংস্থানের বহু সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে সনাতন যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তে যান্ত্রিক যোগাযোগ পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব হ্রাস পায়, জনজীবন সহজ, গতিশীল ও আরামপ্রদ হয়। শিল্পবিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল হলো শিল্পায়ন ও শহরায়ন যা সমাজজীবনকে পর্যায়ক্রমে উন্নতি ও প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। শিল্পবিপ্লব শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে এর ফলে মানুষ বিভিনণ উৎস থেকে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাচ্ছে। এতে মানুষের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকশিত হচ্ছে, পাশাপাশি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছে। শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত হচেছ। এ কারণে সমাজের উনণয়নে নারীদের অংশগ্রহণের হার বাড়ছে। মানুষ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। শিল্পবিপ্লবের প্রভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অকল্পনীয় সাফল্য এসেছে।
উদ্দীপকের ইসমাইল নিজ দেশে কর্মসংস্থান করতে না পেরে মালয়েশিয়ায় যায়। সে দশ বছর পর দেশে ফিরে দেখে তার এলাকায় ছোট-বড় কলকারখানাসহ অসংখ্য সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যা শিল্পবিপ্লবকে ইঙ্গিত করছে। এর ফলে মানুষের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটার পাশাপাশি চিন্তাধারায়ও আমূল পরিবর্তন এসেছে। 
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত শিল্প বিপ্লব মানবকল্যাপকে প্রসারিত করেছে।

৪. মি. 'ক' একজন সমাজকর্মী। তাকে তার গ্রামের সমস্যা চিহ্নিতকরণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে কর্তৃপক্ষের নিকট একটি রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টিকারী পাঁচটি প্রতিবন্ধকতার নাম উল্লেখ করেন। 
ক. আধুনিক সমাজকর্মের সূত্রপাত কোন দেশে হয়?
খ. কোন আইনে অক্ষম দরিদ্রদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যাখ্যা করো।
গ. মি. 'ক' এর রিপোর্টের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন রিপোর্টের মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত রিপোর্টই যুক্তরাজ্যের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে বিশ্লেষণ করো। 

💘 ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক সমাজকর্মের সূত্রপাত হয়।

খ. ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইনে অক্ষম দরিদ্রদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। 
১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন অনুযায়ী বুম, বৃদ্ধ, পঙ্গু, বধির, অন্ধ ও সন্তানাদিসহ বিধবা প্রমুখ যারা কাজ করতে সক্ষম নন, তারাই অক্ষম পরিদ্রদের পর্যায়ভুক্ত। অক্ষম পরিষদেরকে দরিদ্রাগারে রেখে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো। যাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকতো তাদের জন্য ওভারসিয়ারের মাধ্যমে সাহায্যদানের ব্যবস্থা করা হতো।

গ. মি. 'ক' এর রিপোর্টের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের বিভারিজ রিপোর্টের মিল রয়েছে। 
আধুনিক ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রবর্তনে ১৯৪২ সালের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। স্যার উইলিয়াম বিভারিজের সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট অনুযায়ী এই কর্মসূচি গৃহীত হয়। উদ্দীপকটিতেও অনুরূপ একটি রিপোর্টের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। 
উদ্দীপকের মি. 'ক' তাঁর গ্রামের সমস্যা চিহ্নিত করে একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করেছেন। এই রিপোর্টে তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টিকারী পাঁচটি প্রতিবন্ধকের নাম উল্লেখ করেন। আলোচ্য বিভারিজ রিপোর্টেও অনুরূপ পাঁচটি প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ ছিল। বিভারিজের রিপোর্ট অনুসারে তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে পদ্মদৈত্য অক্টোপাসের ন্যায় জড়িয়ে রেখেছিল। এই পঞ্চদৈত্য হলো- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতা। বিভারিজের মতে, এই পঞ্চদৈত্য বা পাঁচটি সমস্যাই ছিল ইংল্যান্ডের সার্বিক অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় বা প্রতিবন্ধক। এজন্য তিনি এই সমস্যা সমাধানে সুপারিশ প্রদান করেছিলেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে আলোচিত রিপোর্ট এবং বিভারিজ রিপোর্টের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিভারিজ রিপোর্ট যুক্তরাজ্যের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে আছে। 
বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশগুলো যুক্তরাজ্যে সমাজসেবার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এবং বাস্তবমুখী নতুন ধারা প্রবর্তন করে। এ সুপারিশ অনুসারেই যুক্তরাজ্যের সামগ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং এ পরিকল্পনার মেরুদন্ড হিসেবে স্বীকৃত সামাজিক বিমা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এভাবে রিপোর্টটি যুক্তরাজ্যের সামাজিক নিরাপত্তাকে সুসংহত করেছে। উদ্দীপকেও এ রিপোর্টকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উদ্দীপকের মি. 'ক' কে তার গ্রামের সমস্যা চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি গ্রামের সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেন যা বিভারিজ রিপোর্ট এর অনুরূপ। আর বিভারিজ রিপোর্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি সর্বপ্রথম সকল স্তরের জনগণের জন্য সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রবর্তনের সুপারিশ করে। এই রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী পারিবারিক ভাতা আইন ১৯৪৫, বিমা আইন-১৯৪৬, জাতীয় সাহায্য আইন-১৯৪৮, জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা আইন-১৯৪৬ প্রভৃতি সামাজিক নিরাপত্তামূলক আইন প্রণীত হয়েছিল। এ আইনগুলো সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিশেষ কার্যকর ছিল। বিশেষত সামাজিক বিমা কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাজ্যের জনগণের জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা, বার্ধক্য ও পঙ্গু বিমা, বেকার বিমা, বিবাহ, জন্ম ও মৃত্যুর জন্য বিশেষ বিমা, শ্রমিক ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি সুবিধা প্রদান করা হয়। এককথায় বলা যায়, বিস্তারিজ রিপোর্ট যুক্তরাজ্যে আধুনিক সমাজকল্যাণমূলক আইনের ভিত্তি রচনা করে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, বিভারিজ রিপোর্ট সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি যথার্থ।

৫. করিম তার বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে কুমিল্লায় বসবাস করেন। সম্প্রতি তাঁকে কুড়িগ্রামে বদলি করা হয়। ফলে তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কুড়িগ্রাম চলে যান। তার বাবা-মা কুমিল্লার বাসায় নিরাপত্তাহীনভাবে বসবাস করেন। 
ক. নগরায়ণ কী?
খ. শিল্পবিপ্লবের ফলে মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের কোন নেতিবাচক দিকের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের জ্ঞান কীভাবে প্রয়োগ করা যায়? বিশ্লেষণ করো।

💘 ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. নগরায়ণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক পেশা বা জীবনব্যবস্থা হতে মানুষ অকৃষিভিত্তিক পেশা বা জীবন পদ্ধতিতে স্থানান্তরিত হয়।

খ. শিল্পবিপ্লবের ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উনণয়ন সাধিত হওয়ায় মানুষের মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে।
শিল্পবিপ্লবের পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ব্যাপক উনণয়ন সাধিত হয়। বিশেষ করে সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতির স্থান দখল করে নেয় আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের টীকা আবিষ্কৃত হয় এবং অস্ত্রোপচার ও ঔষধশিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এছাড়া স্বাস্থ্য সম্বন্ধে মানুষের সচেতনতাও বৃদ্ধি পায়। এসব কারণে শিল্প-বিপ্লবোত্তর সময়ে মানুষের মৃত্যুহার হ্রাস পায়।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক ক্ষেত্রে শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। 
শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজজীবনে যে প্রভূত উনণয়ন সাধিত হয়েছে, তার সাথে নানা অবাঞ্ছিত ও অস্বস্তিকর অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে গিয়ে সামাজিক দূরত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি সমাজজীবনে নানা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্দীপকে একটি যৌথ পরিবারের ভাঙনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। করিম সাহেব বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে কুমিল্লায় বসবাস করতেন। কিন্তু বর্তমানে চাকরির কারণে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কুড়িগ্রামে বাস করছেন। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে তার বাবা-মা কুমিল্লার বাসায় নিরাপত্তাহীনভাবে বসবাস করছেন। এ ধরনের ঘটনা বর্তমানে সারাবিশ্বেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত এ ধরনের পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে। কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবনের আকর্ষণে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহর ও শিল্পাঞ্চলে গমন করছে। এর ফলে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আত্মিক সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। ফলে যৌথ পরিবারের বৃদ্ধ, অক্ষম, বিধবা ও এতিমদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। উদ্দীপকের ঘটনাটি শিল্প বিপ্লবের এই নেতিবাচক প্রভাবকেই নির্দেশ করছে।

ঘ. উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োগ করা যায়।
শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট নানা ধরনের জটিল সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার প্রয়োজনেই পেশাদার সমাজকর্মের উদ্ভব হয়। পেশাদার সমাজকর্মীরা সমাজকর্মের জ্ঞান ও পদ্ধতিসমূহ কাজে লাগিয়ে নানা সমস্যা সমাধান করেন। উদ্দীপকে নির্দেশিত শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক সামাজিক প্রভাব থেকে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানেও তাই সমাজকর্মের বিকল্প নেই।
উদ্দীপকে করিমের বাবা-মা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে পেশাদার সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, ব্যক্তি নিজের সমস্যা নিজেই সমাধানের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে ভূমিকা রাখবে। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম পেশায় নিয়োজিত সমাজকর্মীগণ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির বিকাশ এবং নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে পরিবার কাঠামোর পরিবর্তন, পারিবারিক দূরত্ব বৃদ্ধি, পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের নিরাপত্তাহীনতা ও সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে ওঠে। আর এ প্রেক্ষিতেই পেশাদার সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে। তাই এ সকল সমস্যা সমাধানে সমাজকর্ম একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ পন্থা বলা যায়। 
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, পেশাদার সমাজকর্মের তত্ত্ব ও পদ্ধতির সমন্বয়ে উদ্দীপকে নির্দেশিত সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।

৬. বাংলাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধ, অসুস্থ প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের সাথে সাথে সুস্থ-সবল ও অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরাও ভিক্ষা করছে। এক এলাকার মানুষ আরেক এলাকায় গিয়ে ভিক্ষা করে। বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য এবং সুস্থ-সবল ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন, সংশোধন, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধকরণের জন্যে ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় ভবঘুরে আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল।
ক. NASW-এর পূর্ণরূপ লিখ। 
খ. পঞ্চদৈত্য বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে ইংল্যান্ড কোন আইন প্রবর্তন করেছিল? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের মতো ইংল্যান্ডে প্রবর্তিত আইন কি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যে কোনো সুপারিশ করেছিল? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামত দাও। 

💘 ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. NASW-এর পূর্ণরূপ National Association of Social Workers.

খ. পদ্মদৈত্য বলতে ১৯৪২ সালে পেশকৃত বিভারিজ রিপোর্টে উল্লিখিত পাঁচটি সমস্যা- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে বোঝায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ স্যার উইলিয়াম বিভারিজ একটি সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টে তিনি উপর্যুক্ত পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেন। তার মতে, তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে এই পাঁচটি সমস্যা অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে রেখেছিল। এই সমস্যাগুলোই পঞ্চদৈত্য নামে পরিচিতি পায়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইংল্যান্ডে ১৬০১, সালে এলিজাবেথীয় দরিদ্র আইন প্রবর্তিত হয়েছিল। 
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ড দারিদ্র্য ও নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যায় আরিত ছিল। সে সময় ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সমস্যা সমাধান, ভিক্ষা বৃত্তি, ভবঘুরে সমস্যা, বেকারত্ব রোধ এবং দুগ্ধদের সহায়তায় বিভিন্ন আইন প্রণীত হয়। এ সকল আইনের মধ্যে ১৬০১ সালের এলিজাবেথীয় পরিদ্র আইনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন হিসেবে স্বীকৃত।
উদ্দীপকে বাংলাদেশের একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা ভিক্ষাবৃত্তির নানা দিক উপস্থাপিত হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে ১৯৪৩ সালের বঙ্গীয় ভবঘুরে আইনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সুস্থ-সবল ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন সংশোধন, ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধকরণের ব্যবস্থা গৃহীত হয়। ইংল্যান্ডে সৃষ্ট অনুরূপ সমস্যার প্রেক্ষিতেই ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রবর্তিত হয়েছিল। উক্ত আইন ইংল্যান্ডের দরিদ্র জনগণের তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক ও আবাসন সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। বিশেষ করে ভিক্ষুকদের শ্রেণিকরণ করে তাদের পুনর্বাসন, সংশোধন এবং সার্বিক সহায়তায় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের মাধ্যমে সরকারিভাবে দায়িত্ব গৃহীত হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইংল্যান্ডে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রণীত হয়েছিল।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের ন্যায় ইংল্যান্ডে প্রবর্তিত ১৬০১ সালের পরিদ্র আইনে ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যার সমাধানে কিছু সুনির্দিষ্ট বিধান সুপারিশ করা হয়েছিল।
ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যার সাথে কয়েক ধরনের মানুষ জড়িত থাকে। যেমন এক শ্রেণির ভিক্ষুকেরা সবল ও কর্মক্ষম, অন্য শ্রেণির ভিক্ষুকেরা প্রকৃতপক্ষেই কাজ করতে অক্ষম। আরেক শ্রেণির ভিক্ষুকদের মধ্যে রয়েছে এতিম ও পরিত্যক্ত শিশুরা। আলোচ্য দুটি আইনেই এই তিন শ্রেণির জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছিল।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা মোকাবিলার জন্য ১৯৪৩ সালে বঙ্গীয় ভবঘুরে আইন প্রবর্তন করা হয় যা পাঠ্যবইয়ের ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনকে নির্দেশ করছে। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের বিধানমতে, সবল বা কর্মক্ষম ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষা দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। এই শ্রেণির ভিক্ষুকদেরকে সংশোধনাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। কেউ অনিচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ বা কঠোর শাস্তি প্রদান করা হতো। অন্যদিকে অক্ষম দরিদ্র পর্যায়ভুক্ত অর্থাৎ যারা কাজ করতে সক্ষম ছিল না তাদেরকে দরিদ্রাগারে রাখার বিধান ছিল। সেখানে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হতো। কারো যদি আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে তাদেরকে সেখানে রেখে Overseer (ওভারসিয়ার) এর মাধ্যমে সাহায্যদানের ব্যবস্থা করা হতো। আর তৃতীয় শ্রেণির ভিক্ষুকদেরকে অর্থাৎ এতিম শিশুদেরকে কোনো নাগরিকের নিকট বিনা খরচে দত্তক দেওয়া হতো। ছেলেদের ২৪ বছর এবং মেয়েদেরকে ২১ বছর বা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মনিবের বাড়িতে থাকতে হতো। 
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যা সমাধানে সুবিন্যস্ত ও কার্যকর সুপারিশ পেশ করা হয়েছিল।

HSC সমাজকর্ম ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. ১৭৬০ সাল হতে ১৮৫০ সালের মধ্যে প্রথমে ইংল্যান্ডে পরবর্তীতে ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। এ পরিবর্তনের ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও মানবজীবনে নতুন নতুন জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এ সমস্যা মোকাবেলায় বিজ্ঞানসম্মত উপায় হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির উদ্ভব হয়। 
ক. COS এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. বিভারিজ রিপোর্ট কী?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে কী নামে আখ্যায়িত করা হয়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত পরিবর্তনের প্রভাবে কীভাবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়? বিশ্লেষণ করো।

💘 ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. COS-এর পূর্ণরূপ হলো Charity Organization Society.

খ. বিভারিজ রিপোর্ট হলো ১৯৪২ সালে স্যার উইলিয়াম বিভারিজ কর্তৃক প্রণীত ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি রিপোর্ট। 
বিভারিজ রিপোর্টে অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে মানবসমাজের অগ্রগতিতে পাঁচটি প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সমস্যাগুলো সমাধানে রিপোর্টে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়। এই রিপোর্টের লক্ষ্য ছিল সমাজ হতে অভাব দূর করে ফলপ্রসূ সামাজিক নিরাপত্তা পদ্ধতি প্রচলন করা।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে শিল্পবিপ্লব নামে আখ্যায়িত করা হয়। 
শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক, হস্তশিল্পনির্ভর ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ও অর্থনীতি থেকে শিল্প ও যন্ত্রচালিত বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া; যা অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে শুরু হয়। এর প্রভাবে সমাজের সকল স্তরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ ঘটে এবং এর প্রভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্ববহ।
উদ্দীপকে ১৭৬০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপ ও তার সূত্র ধরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকে এর ফলাফলও তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, শিল্পবিপ্লব আর্থ-সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এর ফলে অর্থব্যবস্থা দ্রুত সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পায়ন শিল্পবিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর শিল্পায়নের ফলে শহরায়ন প্রক্রিয়া গড়ে ওঠে, যার ফসল আজকের শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা। তবে এর ফলে মানবজীবনে কিছু নতুন সমস্যারও উদ্ভব ঘটে, যা উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট আমূল পরিবর্তনের কথাই বলা হয়েছে।

ঘ. উক্ত পরিবর্তন অর্থাৎ শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যার প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি হিসেবে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব ও বিকাশ সাধিত হয়।
শিল্পবিপ্লব মানবসভ্যতায় এক আকস্মিক ও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, যা মানুষকে বস্তুগত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিলেও সমাজজীবনে বহুমুখী জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব সমস্যার সমাধানে একটি বিজ্ঞানসম্মত কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যার সূত্র ধরে সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটে।
শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তিগত উনণয়ন সাধন করলেও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মতো ভয়াবহ সমস্যারও সৃষ্টি করে। এ ধরনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই সাধারণত সমাজের অন্যান্য নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে স্বাভাবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আত্মনির্ভরশীলতার প্রতি গুরুত্বারোপ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে সমাজকর্মের মতো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির আবশ্যকতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্মের কার্যকারিতা অপরিহার্য হতে শুরু করে। আর এ কারণেই শিল্প বিপ্লবোত্তর সময়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রধান সহায়ক হয়ে ওঠে সমাজকর্ম। উদ্দীপকেও এই বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এতে বলা হয়েছে ১৭৬০ সাল থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত সমাজে সংঘটিত আমুল পরিবর্তনের ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও মানব জীবনে নতুন নতুন জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়েছে যা সমাধান বিজ্ঞানসম্মত উপায় হিসেবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়েছে। উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট সমস্যাই সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশে প্রধান প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

৮. সাইদুর রহমান উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে লক্ষ করে এ দেশটির স্থায়ী নাগরিকের একটি শিশু জন্মদানের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়। আবার বার্ধক্যে কিংবা মৃত্যুতেও সামাজিক বিমার আওতায় তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।
ক. ১৯০৫ সালে দরিদ্র আইন কমিশনের প্রধান কে ছিলেন? 
খ. পণ্যদৈত্য বলতে কী বোঝায়?
গ. সাইদুরের উল্লিখিত রাষ্ট্রে সামাজিক বিমা পদ্ধতির মাধ্যমে মূলত কোন আইনের কর্মসূচিকে নির্দেশ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'সমাজকর্ম পেশার বিকাশে উদ্দীপকের উক্ত কর্মসূচির ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ' -বিশ্লেষণ করো।

💘 ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৯০৫ সালে লর্ড জর্জ হ্যামিল্টন দরিদ্র আইন কমিশনের প্রধান ছিলেন।

খ. পঞ্চদৈত্য বলতে ১৯৪২ সালে পেশকৃত বিভারিজ রিপোর্টে উল্লিখিত পাঁচটি সমস্যা- অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে বোঝায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলার লক্ষ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ স্যার উইলিয়াম বিভারিজ একটি সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টে তিনি উপর্যুক্ত পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেন। তার মতে, তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে এই পাঁচটি সমস্যা অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে রেখেছিল। এই সমস্যাগুলোই পঞ্চদৈত্য নামে পরিচিতি পায়।

গ. সাইদুরের উল্লিখিত রাষ্ট্রের সামাজিক বিমা পদ্ধতি ইংল্যান্ডের ১৯৪২ সালের বিভারিজ রিপোর্টের কর্মসূচিকে নির্দেশ করছে। 
১৯৪২ সালে ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কাঠামো মূলত স্যার উইলিয়াম বিভারিজের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়। এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডে সৃষ্ট সামাজিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত একটি কার্যকর পদক্ষেপ। বিভারিজ রিপোর্ট মূলত গ্রেট ব্রিটেনে আধুনিক সমাজকল্যাণমূলক আইনের ভিত্তি রচনা করে।
উদ্দীপকে সাইদুর উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে লক্ষ করে দেশটিতে স্থায়ী নাগরিকদের একটি শিশু জন্মদানের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়। আবার বার্ধক্যে কিংবা মৃত্যুতে সামাজিক বিমার আওতায় তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। এ সামাজিক বিমা পদ্ধতি ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা আইন কর্মসূচিকে নির্দেশ করছে। এর মূল লক্ষ্য ছিল কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধক সকল বিষয় অপসারণের মাধ্যমে সমাজে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তৎকালীন সরকার বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক বিমা আইন প্রণয়ন করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত বিমা কর্মসূচি ১৯৪২ সালের বিভারিজ রিপোর্টকেই নির্দেশ করে।

ঘ. সমাজকর্ম পেশার বিকাশে উদ্দীপকের উক্ত কর্মসূচি অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৪২ সালের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি এবং পরবর্তীতে এর ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক আইনসমূহ সমাজকর্ম পেশার ভিত্তি গড়ে দেয়। সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য হলো প্রতিটি স্তরের জনগণের সুখী-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করা; আর সামাজিক বিমা কর্মসূচি নাগরিকের সেই জীবনকেই নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। উদ্দীপকে নির্দেশিত বিভারিজ রিপোর্ট ইংল্যান্ডের কল্যাণ রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করেছে। কারণ এ রিপোর্ট সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। এ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে তৎকালীন ইংল্যান্ডে পারিবারিক ভাতা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এবং জাতীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়।
ইংল্যান্ডে ১৯৪৫ সালের পারিবারিক ভাতা আইন অনুসারে ১৯৪৬ সালের ১ আগস্ট হতে পারিবারিক ভাতা কর্মসূচি গৃহীত হয়। এ আইন মোতাবেক আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করে প্রত্যেক পরিবারে দুই বা ততোধিক ১৬ বছরের নিচের শিশুদের পারিবারিক ভাতা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৯৪৮ সালের জাতীয় সাহায্য আইনের আওতায় ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি সাহায্য কর্মসূচি কার্যকর হয়। বিভারিজ রিপোর্ট পরবর্তী এ ধরনের সামাজিক আইনগুলো তাই সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক হয়। এ ধরনের সরকারি সাহায্য ব্যবস্থা সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করে।

৯. ১৭৬০ সাল থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে প্রথমে ইংল্যান্ডে পরবর্তীতে ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্ন দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। এ পরিবর্তনের ফলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও মানবজীবনে নতুন নতুন জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়। আর এ সমস্যা মোকাবেলায় বিজ্ঞান সম্মত উপায় হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির উদ্ভব হয়।
ক. ‘Social Diagnosis’ গ্রন্থটির লেখক কে?
খ. ১৬০১ সালে দরিদ্র আইনে সক্ষম দরিদ্র বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে কী নামে আখ্যায়িত করা হয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত পরিবর্তনের প্রভাবে কীভাবে সমাজকর্মের উদ্ভব হয়। বিশ্লেষণ করো।

💘 ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ‘Social Diagnosis’ গ্রন্থটির লেখক ম্যারি রিচমন্ড।

খ. ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম লোকদের সক্ষম দরিদ্র বলা হয়। ইংল্যান্ডের সক্ষম দরিদ্রদের ভিক্ষাবৃত্তি সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ করা হয় এবং জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। সক্ষম দরিদ্রদের সংশোধনের জন্য সংশোধনাগারে কিংবা কাজ করানোর জন্য শ্রমাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতো। যারা তা মানতে রাজি হতো না তাদের কারাগারে পাঠানো হতো।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনকে শিল্পবিপ্লব নামে আখ্যায়িত করা হয়।
শিল্পবিপ্লব হচেছ কৃষিভিত্তিক, হস্তশিল্পনির্ভর ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন ও অর্থনীতি থেকে শিল্প ও যন্ত্রচালিত বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া; যা অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে শুরু হয়। এর প্রভাবে সমাজের সকল স্তরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ ঘটে এবং এর প্রভাব মানবসভ্যতার ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্ববহ। উদ্দীপকে ১৭৬০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপ ও তার সূত্র ধরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে উৎপাদন, প্রযুক্তি, যাতায়াত ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। উদ্দীপকে এর ফলাফলও তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, শিল্পবিপ্লব আর্থ-সামাজিক জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এর ফলে অর্থব্যবস্থা দ্রুত সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পায়ন শিল্পবিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর শিল্পায়নের ফলে শহরায়ন প্রক্রিয়া গড়ে ওঠে, যার ফসল আজকের শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা।
তবে এর ফলে মানবজীবনে কিছু নতুন সমস্যারও উদ্ভব ঘটে, যা উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট আমূল পরিবর্তনের কথাই বলা হয়েছে।

ঘ. শিল্পবিপ্লবের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যার প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি হিসেবে সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব ও বিকাশ সাধিত হয়। 
শিল্পবিপ্লব মানবসভ্যতায় এক আকস্মিক ও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, যা মানুষকে বস্তুগত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিলেও সমাজজীবনে বহুমুখী জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব সমস্যার সমাধানে একটি বিজ্ঞানসম্মত কার্যকর পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যার সূত্র ধরে সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটে। শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তিগত উনণয়ন সাধন করলেও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মতো ভয়াবহ সমস্যারও সৃষ্টি করে। এ ধরনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাই সাধারণত সমাজের অন্যান্য নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে সামাজিক স্থিতিশীলতা বলায় রেখে স্বাভাবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আত্মনির্ভরশীলতার প্রতি গুরুত্বারোপ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে সমাজকর্মের মতো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির আবশ্যকতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্মের কার্যকারিতা অপরিহার্য হতে শুরু করে। আর এ কারণেই শিল্প-বিপ্লবোত্তর সময়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রধান সহায়ক হয়ে ওঠে সমাজকর্ম। পরিশেষে বলা যায়, শিল্পবিপ্লব সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশে প্রধান প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।

১০. 'ক' দেশে ১৮৬৫ থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কারণে ১৮৭৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। এ মন্দাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশৃঙ্খলভাবে হাজার হাজার সংস্থা গড়ে উঠলে সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য মনীথী সজীব 'খ' দেশের অনুকরণে ১৮৭৭ সালে 'একতা' নামক একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। উক্ত সংস্থাই পরবর্তী সময় সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব বিকাশে পেশাগত প্রশিক্ষণ, পত্রিকা প্রকাশ, পেশাগত সংগঠন ও পদ্ধতি উদ্ভাবনে অবদান রাখে।
ক. ইংল্যান্ডে কত সালে দান সংগঠন সমিতি গঠিত হয়?
খ. শিল্পবিপ্লবের ধারণা দাও।
গ. 'একতা' সংস্থাটির সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন সংস্থার সাথে মিল রয়েছে? আলোচনা কর। 
ঘ. সমাজকর্ম পেশার উদ্ভব-বিকাশে উদ্দীপকের আলোকে উক্ত সংস্থার কর্মসূচিগুলো বিশ্লেষণ করো।

💘 ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 💘
ক. ১৮৬৯ সালে ইংল্যান্ডে দান সংগঠন সমিতি গঠিত হয়।

খ. যেসব প্রচেষ্টা ও পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে শিল্প যুগের সূচনা হয় তাদের সমষ্টিই হলো শিল্পবিপ্লব। 
শিল্পবিপ্লব শব্দটি 'শিল্প' ও 'বিপ্লব' এ দুটি শব্দের সমন্বিত রূপ। যার সমন্বিত অর্থ শিল্প সংক্রান্ত বিপ্লব। এর সূচনা হয় ইংল্যান্ডে এবং পরে তা অতি দ্রুত পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এক কথায় বলা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ইংল্যান্ড ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় যে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে, তার প্রভাবে একটি নতুন যুগের সূচনা হয় ঐতিহাসিকগণ একে 'শিল্পবিপ্লব' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

গ. উদ্দীপকের 'একতা' সংস্থাটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দান সংগঠন সমিতির মিল রয়েছে। 
১৮৭৩ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে আমেরিকায় দান সংগঠন আন্দোলন শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্রতার কারণ নির্ণয়পূর্বক এর বৈজ্ঞানিক সমাধান দান। পেশাদার সমাজকর্মের বিকাশে এ সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ক' দেশে, ১৮৭৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার পর মন্দাবস্থা মোকাবিলায় অনেক সংস্থা গড়ে উঠে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য জনাব সজীব 'খ' দেশের অনুকরণে ১৮৭৭ সালে 'একতা' নামক একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দান সংগঠন সমিতিকে নির্দেশ করে। ১৮৭৩ সালে আমেরিকায় দান সংগঠন আন্দোলন প্রথম শুরু হয়েছিল। পরবর্তী ১৮৭৭ সালে আর এইচ গাটিনের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের অনুকরণে নিউইয়র্ক শহরে সর্বপ্রথম দান সংগঠন সমিতি (COS) গঠিত হয়। এ সমিতি দরিদ্রদের সহায়তা দানের পাশাপাশি দারিদ্রের কারণ উদ্ঘাটনে নানামুখী প্রচেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ফলে সমাজকল্যাণ ও সেবামূলক কাজ সুসংগঠিত আকারে প্রকাশিত হয়। এতে সমাজকর্ম পেশা বিকাশ লাভ করে। এসব কারণে উদ্দীপকের 'একতা' সংস্থাটির সাথে দান সংগঠন সমিতি'র হুবহু মিল রয়েছে।

ঘ. সমাজকল্যাণমূলক কাজের সমন্বয় এবং দরিদ্রদের সাহায্যদানের নতুন কৌশল চালুর মাধ্যমে দান সংগঠন সমিতি সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে। 
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রেক্ষাপটের ন্যায় এক জটিল পরিস্থিতিতে সৃষ্ট ইংল্যান্ডের দান সংগঠন সমিতি দরিদ্রদের কার্যকর সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নানা রকম কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর ফলে সমাজকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রম সুসংগঠিত রূপ লাভ করে। আর সমাজকল্যাণের সুসংগঠিত রূপই হলো সমাজকর্ম পেশা।
দান সংগঠন সমিতির কর্মতৎপরতায় ইংল্যান্ডে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে ওঠে। সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী কাজের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে দরিদ্র ব্রণ এবং বেসরকারি দানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ভুয়া সাহায্য সংস্থা ও পেশাদার ভিক্ষুকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়। দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রমের ফলে দরিদ্রদের নৈতিক মনোবল শক্তিশালী হতে থাকে। ফলে তারা আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭৭ সালে দান সংগঠন সমিতি গড়ে ওঠে। এ সমিতি দরিদ্রদের সহায়তা দানের সাথে সাথে দারিদ্রের কারণ উদ্ঘাটন করে এবং সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। এদের কর্মসূচি ধীরে ধীরে সমাজকর্ম পেশায় রূপ নেয়। শিশুশ্রম আইন ও কিশোর যুবকদের জন্য আদালত প্রতিষ্ঠা, সমাজসেবা শিক্ষা কোর্স চালু, নিউইয়র্ক স্কুল অব সোশ্যাল ওয়ার্ক, Charitis Review পত্রিকা প্রকাশ প্রভৃতি কার্যক্রম সমাজকর্ম পেশার বিকাশে নতুন পথের সন্ধান দেয়। 
পরিশেষে বলা যায়, ইংল্যান্ডের জটিল পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দান সংগঠন সমিতি প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে অনুশীলিত হয়ে অধিকতর সুসংগঠিত হয়। এ সমিতির বিভিন্ন কর্মসূচি এবং কৌশল সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post