HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৯

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
নবম অধ্যায় : বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন

১. পাঁচশত একর পাহাড়ি এলাকা জুড়ে লুৎফর সাহেবের চা বাগান। সেখানে বাঙালি অফিসার ও স্থানীয় আদিবাসী মানুষ কাজ করছে বিভিন্ন শিফট অনুযায়ী চবিবশ ঘণ্টা। লুৎফর সাহেব নিজে বাঙালি হওয়ায় কোম্পানির বাঙালি অফিসার ও শ্রমিক শ্রেণি স্থানীয় আদিবাসীদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করতে একটি কমিটি গঠন করেছেন।
ক. কত সালে ইংরেজরা দক্ষিণ আফ্রিকায় বসতির সূচনা করে?
খ. দক্ষিণ অফ্রিকায় বর্ণবাদের উদ্ভবের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. লুৎফর সাহেব কীরূপ আইন প্রণয়ন করলে উদ্দীপকের চা বাগানে বাঙালি ও আদিবাসীদের মাঝে প্রণীত নীতিমালার ভিত্তিকে মজবুত করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর লুৎফর সাহেবের নীতিমালা অধিক বিভেদ সৃষ্টিতে সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৮২০ সালে ইংরেজরা দক্ষিণ আফ্রিকায় বসতির সূচনা করে।

খ. ইংরেজরা ১৮২০ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের বসতির সূচনা করে। ইংরেজরা এবং অন্যান্য ইউরোপীয়রা দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে পৃথক করতে যে নীতি গ্রহণ করে তার ফলেই গড়ে ওঠে বর্ণবাদ। ১৯৪৮ সালে ন্যাশনাল পার্টি দেশের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বর্ণবাদ আফ্রিকার সরকারি নীতিতে পরিণত হয়। ১৯৫৯ সালে এ সরকার কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য পৃথক পৃথক বাস্থানের আইন পাস করে। সরকার শ্বেতাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গদের নিয়ে পৃথক ভোটার তালিকা প্রন্তুত করে। এভাবে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের উদ্ভব ঘটে।

গ. লুৎফর সাহেব বাঙালিদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য যদি বৈষম্যমূলক আইন প্রণয়ন করেন তবে বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বাস্তবায়ন করা যাবে। বাঙালি মালিকপক্ষ ও ক্ষমতার জোড়ে এরূপ আইন প্রণয়ন করা হলে তা এক ধরনের বড় অন্যায় করা হবে। যেমনটি করেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার। বর্ণবাদী সরকার কৃষ্ণাঙ্গদেরকে দমন করে রাখার জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে, যা ছিল চরম বৈষম্যপূর্ণ এবং মানবতাবিরোধী। এ লক্ষ্যে মোট ৭টি আইন প্রণীত হয় যার মধ্যে প্রধান ছিল জনসংখ্যা নিবন্ধন আইন, Group Area Act, Land Act, Pass Law, Citizenship Law ইত্যাদি। এসব আইনের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গদেরকে সব ধরনের অধিকারের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন করা হয়। উদ্দীপকের চা বাগানের মালিক লুৎফর সাহেব যদি তার বাগানের বাঙালি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবি মেনে নিতে চান, তবে তাকেও বর্ণবাদী সরকারের মতো এরূপ পক্ষপাতমূলক ও বৈষম্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে। এরূপ আইন করলেই কেবল তাদের গঠিত কমিটির দাবিকে শক্তিশালী করবে।

ঘ. উদ্দীপকের চা বাগানে লুৎফর রহমান সাহেবের নিকট যে দাবি উত্থাপিত হয়েছে, সেরূপ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে চা বাগানে কর্মরত বাঙালি এবং আদিবাসী শ্রমিকদের মাঝে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দিবে। বিভেদ-বৈষম্য সৃষ্টিতে এ ধরনের নীতিমালা সহায়ক হবে। প্রতিটি মানুষের রয়েছে মৌলিক কিছু অধিকার। কেবল জন্মস্থান, ধর্ম, বর্ণ কিংবা গোত্রভেদে কাউকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। একইরূপ পরিশ্রম করে সমান মজুরি পাওয়ার অধিকার এর মধ্যে অন্যতম একটি। উদ্দীপকের চা বাগানে কাজ করা বাঙালি ও আদিবাসী শ্রমিকেরা সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। এটিও তাদের একটি মৌলিক মানবাধিকার। এ অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব মালিকপক্ষের। কিন্তু বাগানের মালিক বাঙালি বলে সংখ্যাগুরু বাঙালি শ্রমিক তাদেরকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবিতে যে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি করেছে তা বাস্তবায়িত হলে সমানাধিকারের এ দাবি উপেক্ষিত হবে। এরূপ অন্যায় ও অযৌক্তিক দাবি মেনে পক্ষপাতপূর্ণ একটি নীতিমালা যদি প্রণয়ন করা হয় তবে তা বাঙালি আদিবাসী বিভেদ সৃষ্টি করবে এবং বৈষম্য বৃদ্ধি করবে।

২. শ্যামপুরে বিভিন্ন কারখানা স্থাপিত হয়ে তা আজ একটি শিল্পপ্রধান অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। উক্ত অঞ্চলে অন্যান্যদের মত শিল্পপতি আফসার উদ্দিনও স্থানীয় অধিবাসীদেরকে নিচু জাতি হিসেবে গণ্য করতেন। তাই তাদের জন্য পৃথক স্থানে বসবাসের স্থান নির্ধারণে একমত পোষণ করতেন। বৈষম্যমূলক এসব নীতির বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি পালন করার অধিকার স্থানীয়দের ছিল না। এমনকি স্থানীয় এসব শ্রমিকশ্রেণি শিল্প সমিতির নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকেও বঞ্চিত হতো। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়রা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেবল শ্রমিক হিসেবেই কাজের সুযোগ লাভ করত।
ক. কত সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনার খনি আবিষ্কৃত হয়?
খ. বর্ণবাদ বলতে কী বোঝ?
গ. শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি আমাদেরকে দক্ষিণ আফ্রিকার কোন অবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তোমার কি মনে হয় উদ্দীপকের শিল্পাঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসিগণ কোনোভাবেই যেন বহিরাগতদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারে সেই লক্ষ্যেই আফসার উদ্দিনের মতো শিল্পপতিগণ বিভিন্ন বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করেছেন? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৮৬৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনার খনি আবিষ্কৃত হয়।

খ. Apartheid শব্দটির বাংলা শাব্দিক অর্থ বর্ণবাদ। এটি একটি নীতি বা ব্যবস্থা। ১৯৪৩ সালের ২৬ মার্চ উরব Burger পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে সর্বপ্রথম Apartheid তথা বর্ণবাদ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ড. ম্যালান দক্ষিণ আফ্রিকায় ন্যাশনাল পার্টির সদস্য নতুন প্রজাতন্ত্র সম্পর্কে Apartheid শব্দটি ব্যবহার করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেক্ষাপটে বর্ণবাদের তিনটি অর্থ ছিল- ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পার্থক্য, আবাসিক এলাকা পৃথক ও স্বতন্ত্র হবে। শহর এলাকায় শ্বেতাঙ্গরা এবং শতরতলীতে অশ্বেতাঙ্গরা বসবাস করবে। দুশ্রেণির জন্য আলাদা নাগরিক সুবিধা থাকবে। যেমন- শ্বেতাঙ্গদের জন্য আলাদা পার্কের ব্যবস্থা থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের থেকে কৃষ্ণাঙ্গরা যে সম্পূর্ণ পৃথক; সে কথা বোঝানোর জন্যই Apartheid বা বর্ণবাদ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

গ. উদ্দীপকের শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি আমাদেরকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সমাজব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজে ১৯১০ সাল থেকে বর্ণবাদের চরমযাত্রা শুরু হয় যা বহাল ছিল ১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত। শ্যামপুরে অবস্থিত বিভিন্ন শিল্পকারখানার স্থানীয় শ্রমিকেরা তাদের নিজেদের অধিকার সম্পূর্ণরূপে পাচ্ছেন না। শিল্প মালিকেরা তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদা দিচ্ছে। তাদের সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে তা বর্ণবাদী আফ্রিকান সরকার স্থানীয় নিগ্রো জনগোষ্ঠীর সাথে করেছে। সে সরকার শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, ভারতীয় ইত্যাদি শ্রেণিতে জনগণকে ভাগ করে তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল। কেবলমাত্র শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া বাকি সবাই মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে চরম বঞ্চনার শিকার হতো। বিভিন্ন ধরনের আইন ও বিধি দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গদেরকে দমন করা যতো। এমনকি তাদের বাসস্থানও নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল। সরকারের অনুমতি ব্যতীত কৃষ্ণাঙ্গ স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করতে পারত না। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, ব্যবসায় বাণিজ্য সবক্ষেত্রেই তারা চরম বঞ্চনার শিকার হতো। তারা মানুষ হিসেবেই গণ্য হতো না শ্বেতাঙ্গদের নিকট।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় বহিরাগত শিল্প মালিকেরা বিভিন্ন দমনমূলক পন্থা অবলম্বন করে স্থানীয় শ্রমিকদের জিম্মি করে রেখেছেন। এজন্য কেবল কর্তৃত্বের প্রশ্ন জড়িত নয়, বরং আরও অনেকগুলো বিষয় জড়িত আছে বলে মনে হয়। স্থানীয় শ্রমিকদেরকে দমিয়ে রাখতে পারলে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে না। শিক্ষায় উন্নতি হবে না। তাদেরকে মালিকপক্ষের ইচ্ছামত পদ্ধতি ও উপায়ে শিক্ষা দেওয়া গেলে দীর্ঘদিন এরূপ বন্দীদশায় রাখা যাবে। তাদেরকে বশে রাখা সহজ হবে যদি তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। ফলে অল্প পারিশ্রমিকে শ্রমিক সরবরাহের নিশ্চিয়তা থাকবে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু যদি তারা সচেতন হয়ে ওঠে, শিক্ষিত হয়, তবে তাদেরকে মালিকপক্ষ ইচ্ছামত ব্যবহার করার সুযোগ পাবে না। এ সময় তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইলেও পূর্বের চাইতে অনেক বেশি ব্যয় করতে হবে মালিকপক্ষকে। স্থানীয় বাসিন্দারা একসময় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করতে পারে। সেজন্য অন্যান্য মালিকের ন্যায় আফসার সাহেবও একই পন্থা অবলম্বন করেছেন।
এভাবে দীর্ঘদিন বন্দী রাখার উদ্দেশ্যে এবং আধিপত্য ও কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ শাসকেরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে দীর্ঘদিন শৃঙ্খলিত করে রেখেছিল। তারাও বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও অধিকারকে স্তব্ধ করে রেখেছিল দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে সফল হতে পারেনি। একসময় ন্যায় ও যৌক্তিক দাবির প্রতি মাথা নত করতে হয়েছে। শ্যামপুর গ্রামেও শিল্প মালিকেরা যে অবিচার করছেন, তার একদিন অবসান ঘটবেই।

৩. শওকত আলী অনেক চেষ্টার পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রে অস্ত্রের ব্যবহার ও খারাপ মনোভাবসম্পন্ন ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ রোধ করতে সমর্থ হন। আর এতে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার পথ সুগম হয়। অতঃপর শওকত আলী গ্রামে ফিরে আঞ্চলিক রাজনীতির দৃশ্যপটেও আনেন ইতিবাচক পরিবর্তন যেন ধ্বংসাত্মক কার্যাবলি ছাড়াই মানুষ দাবি আদায়ের চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
ক. কত সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরার খনি আবিষ্কৃত হয়?
খ. দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বর্ণবাদ সংক্রান্ত যে সাতটি আইন প্রণয়ন করেন, তা উল্লেখ কর।
গ. শওকত আলীর রাজনৈতিক কার্যাবলি আমাদেরকে সর্ব ভারতীয় কোন নেতার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তোমার কি মনে হয় শওকত আলী প্রকৃত অর্থেই মহান আত্মার যুগপুরুষ ছিলেন? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৮৬৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরার খনি আবিষ্কৃত হয়।

খ. মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সাতটি আইন বর্ণবাদের Seven pillars ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ৭টি আইন হলো-
১. Population Registration Act (1950): এ আইনে আফ্রিকার সকল নবজাতকের বর্ণ ও গোত্র অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়।
২. Group Areas Act (1950): এ আইনের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের আবাসভূমি পৃথক করা হয়।
৩. Land Act: এ আইন দ্বারা দক্ষিণ আফ্রিকার ১৩% অনুর্বর ভূমি ২০.৬ মিলিয়ন কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য নির্ধারণ করা হয়।
৪. Pass law: এ আইনে ১৬ বছরের ওপরে প্রত্যেক কৃষ্ণা নরনারীকে পুলিশকে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক দেখাতে হবে।
৫. Citizenship Law: এ আইনের দ্বারা দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদেরকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
৬. Seperate Amenties Act: এ আইনের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের জন্য পৃথক পৃথক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।
৭. Immorality Act: এ আইনের দ্বারা শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক ও যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা হয়।

গ. শওকত আলীর রাজনৈতিক কার্যাবলিতে আমরা দেখতে পাই সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির প্রকাশ। তিনি রাজনীতিতে অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করে সুষ্ঠু একটি ধারা আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন। প্রতিশোধের পরিবর্তে তিনি চালু করার চেষ্টা করছেন অহিংসা পন্থা। সুষ্ঠু সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তার এ পদক্ষেপ অবশ্যই ইতিবাচক এবং দৃষ্টান্তমূলক। তার এরূপ কাজে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ ও পন্থা দেখা যায়।
মহাত্মা গান্ধীর প্রকৃত নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ইতিহাসে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁর বর্ণবাদ বিরোধী অহিংস আন্দোলন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য। তাঁর যেকোনো আন্দোলনের পথ ছিল অহিংস। প্রতিশোধ কিংবা সশস্ত্র আন্দোলনকে তিনি বিশ্বাস করতেন না। তিনি বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের জন্য অশ্বেতাঙ্গদের সংঘবদ্ধ কিন্তু এ কাজে তিনি কখনো কাউকে দাঙ্গার দিকে যেতে দিতেন না এবং সবসময় চেষ্টা করতেন আন্দোলনকে অহিংসা পথে পরিচালিত করতে। উদ্দীপকের শওকত আলী সাহেব এ পথেই এগিয়ে চলছেন।

ঘ. উদ্দীপকের শওকত আলী সাহেব মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর আদর্শের একজন সৈনিক। তিনি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন প্রতিরোধ করে সুষ্ঠু ধারা প্রবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তার আদর্শ হলো গান্ধীর অহিংসবাদ।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিংসতা ও অর্থপ্রতিপত্তি উপার্জনই যেখানে মুখ্য সেখানে আদর্শিক ধারা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ব্যাপার। দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করে তোলে। এরূপ পরিস্থিতিতে ক্ষমতালোভী মানুষ যেকোনো সহিংস পথ অবলম্বন করে। একটি দেশের রাজনীতির সাধারণ চরিত্র যখন এ রকম তখন এ থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করা সত্যিই এক মহৎ কাজ। ভোগবিলাস ক্ষমতা প্রতিপত্তির মায়া ত্যাগ করে উদ্দীপকের শওকত আলী লেগেছেন ক্ষমতার রাজনীতিতে অহিংস ধারা প্রবর্তনের চেষ্টায়। এ কাজে তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সফল হলেও তার কর্ম প্রচেষ্টা বন্ধ করেননি। গ্রামাঞ্চলের রাজনীতির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য তিনি কাজ শুরু করেছেন। যারা কেবল সত্যিকার অর্থে মানবতাবদী, সুপুরুষ এবং মানবহিতৈষী দেশপ্রেমিক, তারাই কেবল এরূপ কাজ করতে পারেন। শওকত আলী তাদের মধ্যে একজন। যে দলে আরও ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং, ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা, ডেসমন্ড টুটো প্রমুখ। সত্যিই এরা যুগপুরুষ।

৪. ফুলকলি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলধারা জনগোষ্ঠী ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মাঝে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যায়। আবাসিক হল, খাবারের মান, লাইব্রেরি সুবিধা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আদিবাসীরা চরম বৈষম্যের শিকার হলেও তারা শক্ত কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। আদিবাসীরা পাহাড়ি, সমতল ইত্যাদি শ্রেণিতে বিভক্ত থাকায় তাদেরকে নির্যাতন করা আরও সহজ হয়। অবশেষে জিং ওয়েবাও সকল আদিবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে দাবি আদায়ের সংগ্রামে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন।
ক. কোন ধরনের দ্রব্যের আবিষ্কার দক্ষিণ আফ্রিকাকে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবস্থা ব্যাখ্যা কর।
গ. জিং ওয়েবাওয়ের অনুসৃত কৌশলের মধ্যে বর্ণবাদ বিরোধী কোন ভারতীয় নেতার প্রভাব লক্ষ করা যায়? বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত ভারতীয় বর্ণবাদ বিরোধী নেতার আন্দোলন, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে কীভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তুমি মনে কর? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিভিন্ন মূল্যবান খনিজ দ্রব্যের আবিষ্কার দক্ষিণ আফ্রিকাকে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় একই বাড়িতে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের বসবাস নিষিদ্ধ করা হয়। এখানে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিবাহ এবং যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ ছিল। কৃষ্ণাঙ্গ স্বামী-স্ত্রী একই কারখানায় কাজ না করলে একত্রে বসবাস করতে পারত না। কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের জন্য আলাদা যাত্রীবাহী বাসের ব্যবস্থা ছিল। শ্বেতাঙ্গ এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গরা জমি ক্রয় করতে পারত না। নিম্নমানের কায়িক পরিশ্রম শ্বেতাঙ্গদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কোনো ভোটাধিকার ছিল না।

গ. আদিবাসীদের দাবি আদায়ের সংগ্রামে জিং ওয়েবাও-এর অনুসৃত কৌশলের মধ্যে বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ লক্ষ করা যায়।
মহাত্মা গান্ধী ১৮৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন একজন আইনজীবী হিসেবে। সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নীতি ও অত্যাচার তাঁকে ব্যথিত করে। কিন্তু বর্ণবাদের শিকার কৃষ্ণাঙ্গরা বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত থাকায় কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। স্থানীয় অধিবাসীরা ভারতীয়দেরকে বহিরাগত মনে করত এবং এ দুপক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হতো। তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য না থাকায় শ্বেতাঙ্গরা খুব সহজেই নির্যাতন অব্যাহত রাখতে পেরেছিল। গান্ধী এ অবস্থার অবসানে সকল কৃষ্ণাঙ্গকে একত্রিত করেন। ফলে পরবর্তীকালে ভারতীয়, উপজাতীয় এবং স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গরা একত্রিত হয়ে অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছিল। যার ফলাফল কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া। ফুলকলি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিং ওয়েবাও তাই গান্ধীকে অনুসরণ করছেন।

ঘ. মহাত্মা গান্ধী অহিংস আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছেন। এজন্য তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে ঐক্য স্থাপনের কাজ করেন। এ ঐক্য দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ, ভারতীয় জনগণ এবং আদিবাসী আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের মাঝে। ঐক্য স্থাপনের মাধ্যমে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদেরকে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রবর্তী করে গড়ে তোলেন। এছাড়াও তার আন্দোলন সংগ্রামের মূলপন্থা ছিল অহিংস সত্যাগ্রহ। আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকে তিনি কখনো প্রশ্রয় দিতেন না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তার সংগ্রাম চলত। প্রয়োজনে তিনি অনশন করতেন। এ পদ্ধতিতে আন্দোলন পরিচালনার মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তিনি দাবি আদায় করতেন। যে কারণে তিনি অহিংস আন্দোলনের জনক হিসেবেও পরিচিত। মার্কিন বর্ণবাদ বিরোধী নেতা মার্কিন লুথার কিং নেলসন ম্যান্ডেলা, ডেসমন্ড টুটো প্রমুখ নেতা মহাত্মা গান্ধীর অনুসারী ছিলেন। তাঁদের আন্দোলনের সফলতা আন্দোলনের মাধ্যমে। আর এ পদ্ধতি ও কৌশল যদি ফলকলি বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা অনুসরণ করে, তবে তারা সফল এসেছে গান্ধীবাদী হবেই। গান্ধীর মতাদর্শ অনুসরণ করলে আদিবাসীদেরকে প্রথমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দাবি আদায়ের জন্য তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলনের ধারা হবে অহিংস। শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ আন্দোলন চালাতে হবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। গান্ধীর অহিংসবাদ উপায়ে এ আন্দোলন হবে কোনোরূপ সহিংসতা ব্যতিরেকে। দেরিতে হলেও তারা এ উপায়ে আন্দোলন করলে সফল হবেই হবে।

৫. নাসরিন সুলতানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সংঘবন্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যেন ক্যাম্পাসে নারীর ওপর পুরুষের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিকার হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে ছাত্রীরা সহিংসতার পথ বেছে নিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাসরিন সুলতানাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। থানায় আটক অবস্থায়ও তিনি ছাত্রীদের তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার নির্দেশনা প্রদান করেন।
ক. দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রার নাম কী?
খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের জাতিগত কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. নাসরিন সুলতানা দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আমেরিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা মার্টিন লুথার কিং-এর সাথে কতটুকু সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নাসরিন সুলতানার রাজনৈতিক আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রীদের জন্য অনুসরণীয়? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রার নাম র‍্যান্ড।

খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ বলতে বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতির মানুষকে বোঝানো হয়েছে। আর কৃষ্ণাঙ্গ বলতে আফ্রিকা দেশীয়, কেপ-কালার্ড এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত অধিবাসিগণকে বোঝানো হয়েছে। ভারতীয় জনগণও আফ্রিকার বর্ণবাদের শিকার হয়। ১৮৬০ সাল থেকে ভারতীয় শ্রমিক ও কৃষকেরা নাটাল প্রদেশে আসতে শুরু করে। শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকরা এ শ্রমিক আমদানি করে। আবার অনেক ভারতীয় ব্যবসায় করার উদ্দেশ্যে ট্রান্সভালে আসে। এভাবে ভারতীয়রা দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার ফলে কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে তারাও বর্ণবাদের শিকার হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসী কৃষ্ণাঙ্গরা বহু গোত্রে বিভক্ত।

গ. উদ্দীপকের নাসরিন সুলতানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন। তিনি তার আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রীর মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ক্যাম্পাসে নারীরা! যাতে পুরুষদের দ্বারা কোনোরূপ বৈষম্যের শিকার না হয় সেজন্য তার আন্দোলন চলছে। কিন্তু এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সহিংসতার পথ বেছে নিলে তিনি গ্রেফতার হন। আন্দোলন করতে গেলে কারাবরণ এবং বহিষ্কার হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই তা করতে হয়। নাসরিনকেও তার সম্মুখীন হতে হলো। কিন্তু এরপরও তিনি দমে যাননি। বরং জেল থেকেই তিনি আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়ে যান।
অন্যদিকে, মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ। তার আন্দোলনও ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তিনিও আন্দোলন করতে গিয়ে অসংখ্যবার গ্রেফতার হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের স্বার্থ আদায় করতে গিয়ে তাকেও কষ্ট শিকার করতে হয়েছে। আন্দোলনকারী লুথার এবং উদ্দীপকের নাসরিন উভয়েই সুবিধা বঞ্চিত মানুষের দাবি আদায়ে সোচ্চার। উভয়েই ক্ষমতাসীন পক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। নাসরিন ও কিং দুজনই নির্যাতিত-বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র এবং তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন। এজন্য এরা অনুসরণীয়। নাসরিক সুলতানাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রীর জন্য অনুসরণীয়।

ঘ. প্রতিটি মানুষের জন্য মৌলিক কিছু অধিকার আছে, যা নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য। কোনো অবস্থাতেই মানুষকে যেকোনো অজুহাতে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। কিন্তু বিভিন্ন সমাজে, বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় এসব বিষয়ে বৈষম্য করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন কোনো পক্ষ দুর্বলকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে এসব বিষয়কে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। বর্ণবাদ, ধর্মীয় বৈষম্য, নারী-পুরুষ কিংবা জন্মস্থানগত কারণে কোনো কোনো দল বা পক্ষকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এক পক্ষ সর্বদা অন্য পক্ষকে বঞ্চিত করেছে। কিন্তু অপর পক্ষ সব সময় তা মুখ বুজে সহ্য করেনি। ক্রমে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে, সংগ্রাম হয়েছে। এরূপ আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধী, বেগম রোকেয়া, মার্টিন লুথার কিং, ওয়াগনি মাথাই প্রমুখ। এসব ব্যক্তিত্ব সকলের নিকট প্রশংসিত এবং অনুকরণীয়। তাদেরকে অনুসরণ করে বিশ্ব বদলে গিয়েছে। উদ্দীপকের নাসরিন সুলতানাও এর মধ্যে একজন হতে পারেন। তিনি নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলনের সূচনা করেছেন তাকে নারী মুক্তি আন্দোলন বলা যেতে পারে। প্রতিটি নারীর অধিকার আদায়ে তিনি সংগ্রাম করছেন। এখানে কোনো ব্যক্তির স্বার্থ নেই। তিনি যে রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করছেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্রীর উচিত তাকে সমর্থন করা এবং তিনি এ কারণে সকল ছাত্রীর জন্য অনুকরণীয় হতে পারেন।

৬. নোমান সাহেব তার এলাকার মানুষের প্রতি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেন। আঞ্চলিক বৈষম্যের প্রতিবাদে তার আহুত এ আন্দোলনে সকল মানুষ অংশগ্রহণ করে। নোমান সাহেব সরকারি বাসে তার অঞ্চলের মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার জন্য তা বর্জন করতে বললে সবাই তা বর্জন করে। দীর্ঘদিন এরূপ বর্জন চলতে থাকায় সরকারি বাস কোম্পানি ক্ষতির সম্মুখীন হলে সরকার আলোচনার আহবান জানায়। অপরদিকে, সরকারি বাসের বৈষম্যমূলক এ ব্যবস্থাকে সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি ঘোষণা করে।
ক. ইংরেজরা কোন ক্ষেত্রে শক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে?
খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের ধর্মীয় কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. নোমান সাহেবের আন্দোলনের ধারা আমাদেরকে বর্ণবাদবিরোধী কোন মার্কিন নেতার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'সরকার বাধ্য হয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা চালায়' -উদ্দীপকের আলোকে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ইংরেজরা খনি ও ব্যবসার ওপর শক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ জনগণ কৃষ্ণাঙ্গদের শোষণ করতে যেসব হাতিয়ার ব্যবহার করত তন্মধ্যে অন্যতম ছিল ধর্ম। আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে ইউরোপের শ্বেতাঙ্গদের সম্পর্ক কেমন হবে এ প্রশ্নে ধর্মীয় ব্যাখ্যা করা হয়। শ্বেতাঙ্গরা একটি ধর্মীয় আদর্শ খুঁজে বের করে এবং সাদা ও কালোর মধ্যে একটি বৈষম্যমূলক রেখা টানতে সাহায্য করে। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের মতে সকল অখ্রিষ্টীয়রা অসভ্য, তারা সবাই নীচ জাতির সন্তান এবং সকলেই স্বর্গীয় অনুগ্রহ লাভে বঞ্চিত। জন ক্যালভিন ১৫৩৩ সালে তাঁর নতুন ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেন এবং সাদা ও কালোদের মধ্যে ধর্মীয়ভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।

গ. উদ্দীপকের নোমান সাহেবের আন্দোলনের ধারা ও প্রকৃতি আমাদেরকে বর্ণবাদবিরোধী মার্কিন নোবেলজয়ী নেতা মার্টিন লুথার কিং-এর কথা মনে করিয়ে দেয়। মার্টিন লুথার কিং-এর সময় যুক্তরাষ্ট্রের মন্টগোমারিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বাসে আলাদা ব্যবস্থা ছিল। তারা শ্বেতাঙ্গদের সাথে বাসে এক সাথে বসতে পারত না, শ্বেতাঙ্গরা বাসে পরে উঠলেও কৃষ্ণাঙ্গদেরকে সিট ছেড়ে দিতে হতো। কৃষ্ণাঙ্গরা বাসের ড্রাইভার হতে পারত না। এরূপ বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার প্রতিবাদে মন্টগোমারিতে শুরু হয় বাস ধর্মঘট। ১৯৫৫ সালের ঐতিহাসিক এ ধর্মঘট চলে প্রায় এক বছর। এ বাসের অধিকাংশ যাত্রী কৃষ্ণাঙ্গ থাকায় বাস কোম্পনিকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে আলোচনায় বসে এবং দাবি মেনে নেয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন লুথার কিং। তাই উদ্দীপকের ঘটনাটি আমাদেরকে এ নেতার কথা মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় নোমান সাহেবের আঞ্চলিক দাবি পূরণের জন্য প্রথমে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দাবি আদায়ের পদ্মা হিসেবে সরকারি বাস বর্জন করে সাধারণ জনগণ। সরকারি বাস কোম্পানির যাত্রী সংকটের কারণে এটি ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকে। আবার একই সাথে সর্বোচ্চ আদালতের রায় সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। ফলে চতুর্মুখী চাপে সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়। এমতাবস্থায় আন্দোলন যদি সহিংসতার দিকে চলে যায় তবে তা সরকারের জন্য আরও বিব্রতকর হতে পারে। তাই নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসতে হয়। একই ধরনের ঘটনা দেখা গিয়েছিল মার্টিন লুথার কিং-এর মন্টগোমারি বাস ধর্মঘটের ক্ষেত্রেও। সেখানেও সরকার কৃষ্ণাঙ্গদের সমস্যার সমাধানে আলোচনা শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল। অহিংস পথে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের এটি একটি উদাহরণ। সংঘাতের দিকে না গিয়েও যে আন্দোলন সফল হতে পারে, এ শিক্ষা পাওয়া যায়, উপরিউক্ত ঘটনা থেকে।

৭. ডোমপাড়ার লোকেরা ছিল পৌরসভার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত জনসাধারণ। মিলনের বাবা ডোম হলেও মিলনকে গোপনে দূরবর্তী এক স্কুলে পড়ালেখা শেখান। মিলন কলেজে পড়াকালীন ডোমপাড়ার লোকদের নাগরিক অধিকার আদায়ে আন্দোলন শুরু করলে তাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে এবং নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের দোষে তাকে দশ মাস জেলখানায় আটক থাকতে হয়। কিন্তু জেল থেকে মুক্তি পায় দীর্ঘ দশ বছর পর এবং সে বছরই মিলন ডোমপাড়ার লোকদের ভোটে পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হয়।
ক. দক্ষিণ আফ্রিকা ইউনিয়ন কোন ধরনের নীতি অনুসরণ করে?
খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অর্থনৈতিক কারণ ব্যাখ্যা কর?
গ. প্রতিবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে মিলনের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার কোন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মিলনের মুক্তিতে উদ্দীপকের পৌরসভার ইতিহাস নতুনভাবে রচিত হওয়ার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দক্ষিণ আফ্রিকা ইউনিয়ন শুরু থেকে পৃথকীকরণ বা সমন্বয়করণ নীতি অনুসরণ করে।

খ. দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের জন্য অন্যতম কারণ হলো অর্থনীতি। ইংরেজ, পর্তুগিজ, জার্মান ও ডাচরা একটি সুন্দর জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আফ্রিকায় আসে। তারা কৃষি খামার দিয়ে জীবন শুরু করে এবং সেখানকার শ্রমিকের কাজ করানো হতো কৃষ্ণাঙ্গদের দিয়ে। অতঃপর দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরা ও সোনার খনির আবিষ্কারের ফলে ইউরোপীয়রা আরও বেশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করে। এসময় যারা ব্যবসায় বাণিজ্যে বিনিয়োগ করেছিল তারা ছিল ইউরোপীয়। আফ্রিকার আদিবাসী থেকে পরবর্তীকালের দক্ষিণ আফ্রিকার জনসাধারণ ছিলেন আর্থিক দিক দিয়ে অসচ্ছল। তাই তাদেরকে শ্রমিক হিসেবে ও দাস হিসেবে ইউরোপীয়রা ব্যবহার করতে পেরেছে। তাই বলা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অন্যতম কারণ ছিল অর্থনীতি।

গ. উদ্দীপকের প্রতিবাদী ডোম সন্তান মিলনের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। তিনি জন্মেছিলেন এক সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারে। স্থানীয় পরিমন্ডলে শিক্ষা লাভের পর তিনি ১৯৩৯ সালে ফোর্ট হ্যারে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তি হন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি দেখতে পান যে কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এরূপ অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাঁকে ১৯৪০ সালে এখান থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফলে তিনি এখান থেকে পালিয়ে জোহান্সবার্গ চলে যান। কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করায় জীবনের একটা বড় অংশ তাকে কাটাতে হয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। অবশেষে ১৯৯০ সালে বিশ্বনেতৃবৃন্দের সহায়তায় তিনি মুক্তিপান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর এ মহান নেতা মৃত্যুবরণ করেন।

ঘ. মিলন হলো ডোম সমাজের বিরুদ্ধে চলে আসার বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা প্রথম কন্ঠস্বর। যে সমাজের সাধারণ মানুষের নিকট বর্ণনা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় এবং একে নিয়তি বলে মেনে নেয় অধিকাংশ মানুষ, সে সমাজে এরূপ প্রতিবাদী আন্দোলন নতুন ব্যাপার। এ কারণেই মিলনকে কারাগারে কাটাতে হয় দীর্ঘ সময়। কিন্তু মিলনের কারাগারে যাওয়ার মাধ্যমে তার সমাজের বাসিন্দারা এ বঞ্চনার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। ঐক্যবদ্ধ এ মানসিকতার নেতৃত্বদানকারী মিলন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার ফলে আন্দোলন আরও গতিশীল হয়। সে মুক্তি পেয়ে ডোম সমাজের ভোট পেয়ে পৌরসভার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়। তার মুক্তির ঘটনাটি এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ ডোম সমাজের জন্য এক বিরাট ব্যাপার ছিল। কান্ডারি হারা নৌকা যেন মাঝি পায়। শক্তহাতে নেতৃত্ব, গ্রহণকারী ব্যক্তি তাদেরকে এগিয়ে নিতে থাকে। কেননা মিলনই প্রথম ব্যক্তি, যে ডোম সমাজে থেকে বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হয়ে কলেজে পড়তে যায়। এদিক থেকে সে একাধারে একজন সচেতন আন্দোলনকারী, আবার সেই সাথে ডোম সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী। তার মুক্তি এ সমাজকে একজন নেতা পেতে সাহায্য করে। আবার একজন প্রতিবাদী ব্যক্তি জেল খেটে খাঁটি নেতায় পরিণত হন। বলা হয়ে থাকে যে, জেলের ভাত না খেলে বড় নেতা হওয়া যায় না। তেমনি মিলনও জেল থেকে ফিরে এসে নতুন উদ্যমে মাঠে নামেন। তার এ পদক্ষেপ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে পৌরসভাটিতে।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

৮. হাবিবুর সাহেবের পরিবারের সবাই দেখতে বেশ ফর্সা। তাই তিনি কালো রঙের মানুষদের তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতেন এবং ছেলেমেয়েদের কখনো কালো রঙের মানুষের সাথে মিশতে দিতেন না। এমনকি সন্তানদের বিয়ে দিতেও তিনি ফর্সা রঙের পাত্রপাত্রী খোঁজ করতেন। অন্যদিকে জামান আহমদের ছেলেমেয়ে খুবই ফর্সা ও সুন্দর দেখতে হলেও কালো-শ্যামলা সব রঙের মানুষের সাথেই মেলামেশার সুযোগ পেত।
ক. কোন সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের চরম রূপ লক্ষ করা যায়?
খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের রাজনৈতিক কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. হাবিবুল সাহেব ও জামান সাহেব যদি পরিবার নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস করতেন তবে কোন পরিবারের বিরুদ্ধে ডেসমন্ড টুটোর আন্দোলন পরিচালিত হতো? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত আন্দোলন ইতিবাচক সমর্থন লাভ করত? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯১০ সাল থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের চরম রূপ লক্ষ করা যায়।

খ. শ্বেতাঙ্গদের বর্ণবাদ নীতির উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক হলেও রাজনৈতিকভাবে যদি দমিয়ে রাখা না যেত তবে শ্বেতাঙ্গদের শোষণ প্রক্রিয়া তত সহজ হতো না। কৃষ্ণাঙ্গরা যাতে সংগঠিত না হতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে কৃষ্ণাঙ্গদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। শ্বেতাঙ্গরা মনে করত কালোরা নেতৃত্বদানে অযোগ্য। এমন কি তাদের নাগরিক হওয়ারও যোগ্যতা নেই। কালোরা যাতে কোনোভাবেই শ্বেতাঙ্গদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা না করতে পারে শ্বেতাঙ্গরা তাই কালোদের অধিকার বঞ্চিত করতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে।

গ. উদ্দীপকের হাবিবুর রহমান ও জামান আহমদ এরূপ মানসিকতা নিয়ে যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করতেন তবে ডেসমন্ড টুটো হাবিবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেন। কেননা হাবিবুর রহমান যে মানসিকতার অধিকারী তা বর্ণবাদী আচরণ। অন্যদিকে টুটো ছিলেন এ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী একজন যোদ্ধা। ডেসমন্ড টুটো ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের একজন প্রথম সারির নেতা। সারাজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন বর্ণবাদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এজন্য তাকে অনেক জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। অবশেষে তিনি সফল হয়েছেন। নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তাঁর আন্দোলনের ফল রংধনুর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করেছেন। হাবিবুর সাহেব আফ্রিকাতে থাকলে বর্ণবাদী মনোভাবের জন্য টুটো তার বিরুদ্ধেও আন্দোলন করতেন।

ঘ. ডেসমন্ড টুটোর আন্দোলন ছিল সমাজের প্রচলিত বর্ণবাদী বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এ আন্দোলনটি ন্যায় ও সমতার দাবি। মানুষ হিসেবে সমঅধিকারের দাবি। মানবিক বিচারে হওয়া উচিত ছিল এটি বিশ্বমানবতার দাবি। অথচ এরূপ একটি আন্দোলন সবার দ্বারা যে সমর্থিত হয়েছে, এমনটি নয়। সংকীর্ণ স্বার্থপরতার মোহে অন্ধ সমাজের শ্বেতাঙ্গরা তো বটেই, পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ যারা মানবাধিকারের কথা শিক্ষা দেয় অন্যদেরকে, তারাও এ আন্দোলনকে সমর্থন করেনি প্রথমে। কেবলমাত্র গায়ের চামড়া সাদা হওয়ার দরুন এরা নিজেদেরকে অন্যান্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করত। গায়ের রঙের ওপর ভিত্তি করেই এরা সমাজের সুযোগ সুবিধার বণ্টন করতে চাইত। অদ্ভুত এক ন্যায়বোধ ছিল এসব বিকলাঙ্গ মানসিকতার অধিকারী মানুষের মধ্যে। মানুষের মেধা, শ্রম কিংবা যোগ্যতা সস্নান হয়ে যেত চামড়ার রঙের নিকট। আর যারা এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলত তারা হয়ে যেত সন্ত্রাসী। কিন্তু নৈতিকতার বিচারে, মানবিক দিক থেকে তা ইতিবাচক সমর্থন পাওয়ার যোগ্য। কেবল যোগ্য বললে কম বলা হবে, বরং তা কর্তব্য প্রতিটি মানুষের। মানবাধিকার রক্ষায় এবং সব মানুষের সমতার জন্য এরূপ একটি আন্দোলনকে সমর্থন করা সবারই দায়িত্ব ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় সে সময় তা হয়নি। সবাই বিশেষত ক্ষমতাসীনরা একে সমর্থন করেনি। কিন্তু তারপরও এটি ইতিবাচক সমর্থন পাওয়ার যোগ্য ছিল।

৯. গ্রামের উচ্চবংশীয় পরিবারগুলো কীভাবে নিম্নবংশীয় পরিবারগুলোর ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এবং ঘৃণাভরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তা দেখতে দেখতে বড় হয়েছে হালিম আলী ও অনুপ দাস। তারা দু বন্ধু এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং গ্রামের নীচু বংশীয় পরিবারগুলোর সদস্যদেরকে আন্দোলনে আহবান করে। ছেলেরা তীব্র আন্দোলন, কমিটি গঠন, বিপ্লবী শাখা পরিচালনা করলেও মেয়েরা থেকে যায় ঘরের চার দেয়ালের মাঝে।
ক. কোন দল ক্ষমতা গ্রহণের পর বর্ণবাদ আফ্রিকার সরকারি নীতিতে পরিণত হয়?
খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলন কেন কার্যকর হয়ে ওঠেনি?
গ. হালিম আলী ও অনুপ দাসের আহবানে সাড়া দিতে গ্রামের মেয়েদের কী করণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তোমার কি মনে হয় হালিম আলী ও অনুপ দাসের প্রচেষ্টা গ্রামটির উচ্চবংশীয় লোকদের মানসিক পরিবর্তনে সহায়ক হবে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ন্যাশনাল পার্টি ক্ষমতা গ্রহণের পর বর্ণবাদ আফ্রিকার সরকারি নীতিতে পরিণত হয়।

খ. দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নামে অভিহিত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার আদিম অধিবাসী কৃষ্ণকায় জাতি, উপজাতি এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগণ। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়রা কৃষ্ণাঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে ভারতীয়দের মতের মিল ছিল না। কিন্তু ভারতীয়দের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। কৃষ্ণাঙ্গরা ভারতীয়দের বহিরাগত হিসেবে গণ্য করত। দীর্ঘদিন ধরে এমন বিভক্তি চলতে থাকে যার ফলে বৈষম্যের শিকার অশ্বেতাঙ্গ জনগণের প্রতিবাদ তেমন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। মৃতি কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে মতবিরোধের কারণেই তাদের আন্দোলন দীর্ঘদিন কার্যকর হয়নি।

গ. উদ্দীপকের হালিম আলী ও অনুপ দাস যে আন্দোলনের সূচনা করেছেন তা গ্রামের নিম্নবংশীয় সকল মানুষের আন্দোলন। এরূপ একটি আন্দোলনে প্রতিটি মানুষের সমর্থন দরকার। হোক সে নারী! কিংবা পুরুষ। নিম্নবংশীয় লোকদের প্রতি উচ্চবংশীয় লোকদের যে ঘৃণা ও অবজ্ঞা এবং বৈষম্য তা শুধু পুরুষদেরকে যে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা নয় বরং নারীদেরকেও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গ্রামের পুরুষেরা যখন অত্যাচার ও নির্যাতন প্রতিরোধে কমিটি গঠন করে তীব্র আন্দোলন পড় তুলছে তখন নারীদেরও উচিত এদের সহায়তার এগিয়ে আসা। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ দেখলে তা সহজেই অনুমান করা যায় যে, এরূপ একটি আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণের গুরুত্ব কতটুকু। তাই আলী ও দাসের আন্দোলনের সাথে নারীদের যুক্ত হওয়া আবশ্যক।

ঘ. উদ্দীপকের হালিম আলী ও অনুপ দাসের আন্দোলনের ফলে গ্রামটি উচ্চবংশীয় লোকেরা এক সময় তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে। ফলে তাদের মানসিকতারও পরিবর্তন হবে। তবে এটি স্বেচ্ছায় না হয়ে বাধ্যতামূলকভাবেও হতে পারে।
সমাজের উঁচুবংশীয় লোকেরা যখন নীচুবংশের লোকদেরকে বংশ মর্যাদার কারণে নির্যাতন অত্যাচার করে তখন এর মাধ্যমে উচ্চবংশের লোকদের মানসিক বৈকালঙ্গতাই প্রকাশ পায়। কেননা একজন সুষ্ঠু স্বাভাবিক মানসিকতার মানুষ কখনো বংশ মর্যাদার কারণে নিজেকে শ্রেষ্ঠ দাবি করতে পারে না, অন্যদেরকে জুলুম-নির্যাতন করতে পারে না। যারা এরূপ করে, তাদের মানসিকতা বিকারগ্রস্ত। এ বিকারগ্রস্ত মানসিকতা সহজেই যে পরিবর্তন হবে এমন আশা করা কঠিন। কিন্তু। কঠিন আন্দোলন সংগ্রামের ফলে যখন তারা নীচু শ্রেণির মানুষের দাবি মেনে নিবে, তখন এক প্রকার বাধ্য হয়েই তা করবে। এর ফলে মানসিকতার তাৎক্ষণিক পরিবর্তন প্রত্যাশা করা যায় না। আবার উঁচুবংশের সবাই যে এরূপ বিকারগ্রস্ত, তাও নয়। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বেশকিছু শ্বেতাঙ্গের পরিচয় পাওয়া যায় যারা নববইয়ের দশকের আগেও কৃষ্ণাজ্ঞদের অধিকারকে সমর্থন করতেন। যারা কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারকে অস্বীকার করতেন তারাও এটি মেনে নেন সে সময় বাধ্য হয়ে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এ মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। এটি সম্ভব হয়েছে গান্ধী, কিং, ম্যান্ডেলা, টুটো প্রমুখের আন্দোলনের ফল হিসেবে। উদ্দীপকের আলী ও দাসের আন্দোলনেও একসময় গ্রামের উচ্চবংশীয়দের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে বলে আমাদের মনে হয়।

১০. ছোট্ট গ্রামটিতে দুধসাগর নামক একটিই পুকুর ছিল। সেখানে সবাই গোসল ও পানি ব্যবহারের সুযোগ পেলেও তমাল বাবু উচ্চ বংশীয় হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা পুকুরে থাকা অবস্থায় কেউ পুকুরের পানি স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারত না। বিষয়টি গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ অপছন্দ করলেও কখনো কোনো প্রতিবাদ করেননি।
ক. কত সালে শ্বেতাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গ পৃথক ভোটার তালিকা প্রন্তুত করা হয়?
খ. গান্ধীজির জীবনে তাঁর বর্ণবৈষম্য আন্দোলনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. তমাল বাবুর বর্ণবিদ্বেষভাব দূর করতে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের কী করণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত করণীয় বিষয়গুলো গ্রামে ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৫১ সালে শ্বেতাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গ পৃথক ভোটার তালিকা প্রন্তুত করা হয়।

খ. এ আন্দোলনের মাধ্যমে গান্ধীজির নেতৃত্ব ও অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রমাণিত হয় যা পরবর্তীতে তাঁকে ভারতীয় জাতীয় সংগ্রামের নেতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। গান্ধীজি দক্ষিণ আফ্রিকায় অহিংস পথে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, সে একই পদ্ধতি তিনি ভারতে জাতীয় আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রবাসী ভারতীয়দের বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে এক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হন। এর ফলে পরবর্তীকালে তিনি ভারতে সর্বভারতীয় নেতা হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার সুযোগ পান যা ইতিপূর্বে কোনো ভারতীয় নেতা অর্জন করতে পারেনি। গান্ধীজির জীবনে বর্ণবৈষম্য আন্দোলনের তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

গ. উদ্দীপকের তমাল বাবুর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বর্ণবাদী যে আচরণ লক্ষ করা যায় তা গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি করবে। এ আচরণ গ্রামের অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে পছন্দ করেন না, তাই ইতিবাচক। এ সমস্যা সমাধানে প্রথম করণীয় হলো তমাল বাবুর সাথে আলাপ-আলোচনা করা। কেননা এরূপ যেকোনো সমস্যার সমাধানের সবচেয়ে নিরাপদ এবং ফলপ্রসূ উপায় হলো কার্যকরী আলাপ-আলোচনা করা। আর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যদি এ বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেন তবে তা বেশি কার্যকর হবে। কিন্তু এতে কাজ না হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তমাল বাবুর সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। এতেও কাজ না হলে সবাই মিলে তমাল বাবুকে একঘরে করে তার ওপর অবরোধ আরোপ করতে পারেন। এতে কেউ তার সাথে লেনদেন করবে না, অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে তিনি একা হয়ে পড়বেন। এতেও কাজ না হলে তার বিরুদ্ধে আরও কঠোর সামাজিক ব্যবস্থা নিতে পারেন প্রভাবশালীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এরূপ আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল ১৯৯০ সালে।

ঘ. তমাল বাবুর বর্ণবাদী আচরণের প্রতিকার হিসেবে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সমর্থ হলে তা গ্রামে একটি ইতিবাচক নজির হয়ে থাকবে। এ আদর্শকে সমানে রেখে অন্য কেউ অনুরূপ আচরণ করার সাহস দেখাবে না গ্রামে বর্ণবাদবিরোধী একটি আইনের মতো হয়ে থাকবে। অন্যান্যরা এ থেকে উপযুক্ত শিক্ষা নিবে বলে মনে হয়। ফলে একটি সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করবে গ্রামে।
বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ বর্তমান বিশ্বে একটি নজির হয়ে আছে। ফলে পৃথিবীর অন্য কোথাও বর্ণবাদী কোনো আইন বা আচরণ দেখা যায় না। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ ক্ষমতাশালী দেশগুলো যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, এর ফলে বর্ণবাদের মতো অভিশাপ বর্তমান বিশ্বের মাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোথাও নেই। একটি দৃষ্টান্তই এক্ষেত্রে সকল সমস্যার সমাধানের জন্য যথেষ্ট ছিল। তাই যদি উদ্দীপকের গ্রামটিতে তমাল বাবুর বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে এরূপ কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তবে গ্রামটি থেকে বর্ণবাদ স্থায়ীভাবে বিদায় নিবে বলে মনে হয়। এতে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক একটি পরিবর্তন আসবে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post