HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
অষ্টম অধ্যায় : স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব

১. লালহাটি গ্রামের নববই ঘর কৃষকের সবাই হাসান সাহেবকে মান্য করে চলে। কারণ হাসান সাহেব সালিস-বিচারে সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ করতেন। তাকে কেন্দ্র করেই একসময় গ্রামে গড়ে ওঠে সম্পদের সুষম বণ্টনব্যবস্থা। কিন্তু অধিক ক্ষমতা তার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটায় এবং তিনি দরিদ্র কৃষকদের সম্পদ সুকৌশলে লুণ্ঠন করতে শুরু করেন। তার ছেলে রতন ও রফিক বিলাসী জীবনযাপন করতে একই ধরনের অপরাধ করতে থাকে। ফলে সমাজব্যবস্থায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন।
ক. কমিউনিজমের উত্থান হয় কখন?
খ. সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট দলের সাধারণ সম্পাদক গর্বাচেভ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন তা উল্লেখ কর।
গ. হাসান সাহেবের গ্রামে কীভাবে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর লালহাটি গ্রামে সবার মাঝে আদর্শগত বিচ্যুতি লক্ষণীয়? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে কমিউনিজমের উত্থান হয়।

খ. সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট দলের সাধারণ সম্পাদক মিখাইল গর্বাচেভ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন তা হলো-
১. স্থবির অর্থনীতি,
২. শাসক দলের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও
৩. সোভিয়েত সমাজের মনোবল ভেঙে পড়া এবং সর্বোপরি সমাজতন্ত্রের বিকৃতি।

গ. উদ্দীপকের হাসান সাহেবের লালহাটি গ্রামটি চলছিল সাম্যবাদী আদর্শের ভিত্তিতে। হাসান সাহেব ছিলেন এ সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি, যিনি সাম্যবাদী ধারায় গ্রামটিকে পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু তার মানসিকতার পরিবর্তন এবং লোভ তাকে আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে তিনি দরিদ্র কৃষকের সম্পদ লুণ্ঠন শুরু করেন অত্যন্ত সুকৌশলে। তার পূর্বের কার্যাবলি ও আদর্শের সাথে যা ছিল সম্পূর্ণরূপে বিপরীত। এ কাজে তার দু পক্ষও সমানতালে এগিয়েছিল। সমাজের নেতার চরিত্রের এ অধঃপতন সম্পূর্ণ সমাজকেই প্রভাবিত করতে থাকে। এরূপ প্রভাবিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে আদর্শের ভিত্তিতে, তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার ফলেই এর পতন ঘটেছিল। কমিউনিস্ট সোভিয়েত নেতারা যখন বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং নৈতিক চরিত্রে অধঃপতন হয়, তখনই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে। হাসান সাহেবের লালহাটি গ্রামটিও অনুরূপভাবে ব্যাপক এক পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় লালহাটি গ্রামের সবার মাঝে যে আদর্শগত বিচ্যুতি লক্ষণীয় তা বলা যায় না। কেননা এ সমাজের নেতা হাসান সাহেব ও তার পুত্রদের জীবনে যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা সব গ্রামবাসীর জন্য প্রযোজ্য নয়। গ্রামের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে হাসান সাহেবকে যে মর্যাদা দিয়েছিলেন, তা তিনি রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার দুই পুত্র রফিক ও রতনও একই অপরাধে অপরাধী। কিন্তু গ্রামের অন্যান্য সাধারণ মানুষের চরিত্রে এরূপ পরিবর্তন দেখা যায় না। তারা আগে যেভাবে ছিল সেভাবেই চলতে চায়। কিন্তু যখন তারা দেখতে পায় যে, তাদের সামনে যে আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না, তাদের স্বপ্ন ও বিশ্বাসকে হাসান সাহেব নিজ বিলাসী জীবনে ব্যয় করছেন, তাদের কষ্টার্জিত সম্পদকে লুণ্ঠন করছেন, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করবে। গ্রামবাসী হাসান সাহেবকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইবেন না। ফলে আবশ্যিকভাবেই সমাজে এক পরিবর্তন আসবে। এরূপ পরিবর্তন সাম্যবাদী আদর্শের পরিপন্থীও হতে পারে। বহুদিন ধরে চলে আসা। সামাজিক কাঠামো এবং আদর্শ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। ফলে পরিবর্তন ঘটবে সবকিছুতেই। এর একটি উপাদান হবে সাম্যবাদী আদর্শের বিচ্যুতি।

২. মিতালী আক্তার তার পাঁচ ছেলে-বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে এক বিরাট যৌথ পরিবারে বাস করেন। একসাথে থাকায় গ্রামের সবাই পাঁচ ছেলের প্রত্যেককে বেশ সমীহ করে চলে। যদিও মনে মনে সবাই প্রত্যাশা করে যেন যৌথ পরিবারটির শক্তি কমে যায়। সময়ের আবর্তনে সুযোগ-সুবিধাকে কেন্দ্র করে নাতি-নাতনিদের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হলে পরিবারটিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে মিতালী আত্তার যৌথ পরিবার ভেঙে দিতে বাধ্য হন।
ক. কমিউনিজমের পতন হয় কখন?
খ. সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির ক্ষেত্রে কমিউনিজমের আদর্শের অন্তঃসারশূন্যতা কতটুকু দায়ী ব্যাখ্যা কর।
গ. কিসের অনুপস্থিতি মিতালী আক্তারের যৌথ পরিবারের ভীতকে দুর্বল করে তুলেছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর মিতালী আক্তারের যৌথ পরিবারের ভাঙন গ্রামবাসীর মানসিক পরিবর্তনে সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে কমিউনিজমের পতন হয়।

খ. সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পেছনে অন্যতম কারণ হলো কমিউনিজমের আদর্শের অন্তঃসারশূন্যতা। কমিউনিস্ট ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও উৎপাদনের প্রতি জোর দেওয়া হয়। এতে বলা হয় যে, 'এখানে তোমরা আদর্শের খাতিরে কাজ কর, অর্থের জন্য নয়।' কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া শুধু আদর্শের জন্য কাজ করার নজির মানব চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পরও যখন সমাজের সাধারণ মানুষ দেখল যে, দেশের নেতৃবৃন্দ দুর্নীতিতে লিপ্ত ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে তখন এ ব্যবস্থার কল্পনা বিলাস থেকে তাদের মোহমুক্তি ঘটল। জনগণ নেতৃবৃন্দকে হিংসার চোখে দেখা শুরু করে। কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ নিজের হাতে ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং তা যতদূর সম্ভব বাড়ানোকে একটি অভীষ্ট হিসেবে নির্ধারণ করে। তাই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটে।

গ. উদ্দীপকের মিতালী আত্তারের যৌথ পরিবারের মধ্যে প্রথম দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে সুযোগ-সুবিধাকে কেন্দ্র করে। পরিবারের সদস্যদের মাঝে এরূপ দ্বন্দ্ব দেখা যাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে সদস্যদের মাঝে সুযোগের অসমতা। কেননা একটি পরিবারের মধ্যে তখনই এরূপ বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে, যখন সব সদস্য সমান সুযোগ-সুবিধা না পাবেন। পরিবারের সদস্য হিসেবে সবারই সমান সুযোগ পাওয়ার কথা, এর ব্যতিক্রম ঘটলেই দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। সুযোগের সমতার অনুপস্থিতিই এ পরিবারে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো যৌথ পরিবারের ভাঙন। এরূপ কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। কেননা সোভিয়েত ইউনিয়নের নাগরিকেরা যে আকাঙ্ক্ষা ও সমতার প্রত্যাশা নিয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, রাষ্ট্র পরিচালকের অদক্ষতা, সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা এবং বিলাসী জীবনযাপন এক্ষেত্রে চরম বৈষম্য তৈরি করে। ফলে সাধারণ জনগণ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করে। এরূপ পরিস্থিতি রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে। এরূপ অসমতার জন্যই উদ্দীপকের মিতালী আত্তারের যৌথ পরিবারের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং একসময় ভেঙে যায়।

ঘ. মিতালী আক্তারের যৌথ পরিবারে পাঁচ ছেলে ও তাদের সন্তান সন্তুতি থাকায় পারিবারিক প্রভাব বেশি থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। এরূপ একটি পরিবার গ্রামে সবার ওপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে। তাই গ্রামবাসী এ পরিবারকে ভয়ে অথবা প্রন্ধায় যাই হোক সমীহ করে চলে। গ্রামীণ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করায় কেউ কেউ হয়তবা তাদেরকে পছন্দ নাও করতে পারে। আর এ কারণে এরূপ একটি পরিবার ভেঙে আলাদা হয়ে গেলে এর ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াজনিত কারণে গ্রামবাসীর খুশি হওয়াটা স্বাভাবিক। গ্রামে এক আধিপত্য হ্রাস পাওয়ার ফলে গ্রামের সার্বিক অবস্থা পরিবর্তিত হবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে। কেননা যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন বহাল ছিল সে সময় অন্যান্য দেশে তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাত। কোনো কোনো দেশ এ কারণে অনীহা সত্ত্বেও রাশিয়াকে শ্রদ্ধা করে চলত। রাশিয়ার পতনের পর এসব দেশ স্বভাবতই খুশি হবে এবং তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হবে। উদ্দীপকের মিতালী আক্তারের পরিবারের পড়নের (ভাঙনের) ফলেও সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর মানসিকতার এরূপ পরিবর্তন সাধিত হবে। যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার ফলে মিতালী আক্তারের পরিবার পূর্বে ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দ্বারা গ্রামবাসীর ওপর যেরূপ নিয়ন্ত্রণ করত তা না থাকায় গ্রামবাসীর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটতে পারে। যে কারণে বলা যায়, এটি গ্রামবাসীর মানসিক পরিবর্তনে সহায়ক হবে।

৩. গোপীপুর হাই স্কুলের এক হাজার ছাত্রছাত্রীর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব ছিল উক্ত স্কুলের ছাত্র ইউনিয়নের ওপর। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বিভিন্ন গ্রুপের দায়িত্ব তাদের স্ব স্ব ক্লাস ক্যাপ্টেনের ওপর অর্পিত হবে কিনা এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আসাদুজ্জামান এক গণভোটের আহবান করেন। কিন্তু তার এরূপ সিদ্ধান্ত ভেঙে দিতে সহ-সভাপতি কামরুল হক বলপূর্বক সভাপতি পদ দখল করে নেন। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই নবম শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন রফিক আরও কয়েকজন ক্যাপ্টেনের সহযোগিতায় কামরুল হককেও অপসারণ করে।
ক. কমিউনিজমের অস্তিত্ব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন যুদ্ধের জন্ম দেয়?
খ. সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির অর্থনৈতিক কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের গোপীপুর হাইস্কুলের ছাত্র ইউনিয়নের ঘটনা আমাদেরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংঘটিত ১৯৯১ সালের কোন ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর কামরুল হকের বলপ্রয়োগের ব্যর্থতা অন্যান্য ক্লাস ক্যাপ্টেনদের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কমিউনিজমের অস্তিত্ব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ঠান্ডা লড়াই বা স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দেয়।

খ. কয়েক দশক যাবৎ বিশ্বের অর্থনৈতিক সম্পদে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ কমে আসছিল। ষাটের দশক থেকেই দেশের প্রবৃদ্ধির হার ধীর হয়ে আসে। সত্তরের দশক থেকে তা প্রায় স্থবির হয়ে যায়। অপরপক্ষে ধনতান্ত্রিক দেশের মধ্যে জাপান ও পশ্চিম জার্মানি এসময় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে। সত্যিকারে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি এবং কালক্রমে দেশটির ভাঙনে নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক কারণকেই দায়ী করা যেতে পারে। প্রতিপক্ষের তুলনায় অর্থনৈতিক ক্ষমতায় অনেকটা পশ্চাৎপদ হওয়ার কারণেই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি অনিবার্য ছিল। বিস্তৃত সাম্রাজ্য ধরে রাখতে যে আর্থিক সম্পদের প্রয়োজন ছিল তার অনুপস্থিতিই তার মূল ভীতকে দুর্বল করে তোলে।

গ. উদ্দীপকের গোরিপুর হাইস্কুলের ছাত্র ইউনিয়নের ঘটনা আমাদেরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতার পালাবদলের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং স্বাধীন ১৫টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের এটি ছিল সবচেয়ে বড় পতনের ঘটনা। মিখাইল গর্বাচেভ ১৫টি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে সকলের সাধারণ স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে যেমন প্রতিরক্ষা ও তার ব্যয়ভার বহন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষার পদ্ধতি ও নীতি নির্ধারণ প্রভৃতি বিষয়ে ঐক্যের জন্য গণভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করেন। এ গণভোটে অধিকাংশই এ ধরনের বিষয়ে ঐক্য বজায় রাখতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু যেদিন এ গণভোট অনুসারে সবকটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল তার আগের দিন ১৯৯১ সালের ১৯ আগস্ট কট্টর কমিউনিস্ট নেতারা গর্বাচেভকে ক্ষমতাচ্যুত করে নজরবন্দী করেন। এসময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন ও উদারপন্থিরা এবং জনসাধারণের সক্রিয় প্রচেষ্টায় গর্বাচেভ মুক্তি পান। ১৯৯১ সালের ১৯ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট চরমপন্থিরা রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ গর্বাচেভকে চ্যালেঞ্জ করতে এ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় এবং জনগণের কমিটির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানায়। বলা হয়, রাষ্ট্র ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তা থামানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। এসময় প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিনের ভূমিকা গর্বাচেভকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

ঘ. উদ্দীপকের গোপীপুর হাইস্কুলের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আসাদুজ্জামান যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা প্রতিটি ক্লাসের ক্যাপ্টেনদের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল। কিন্তু সহ-সভাপতি কামরুল হক তা চাইছিল না। যে কারণে সে এ পদক্ষেপ ভন্ডুল করতে বিদ্রোহ করে সভাপতির পদ দখল করে নেয়। সভাপতি আসাদুজ্জামান যে গণভোটের আয়োজন করতে চেয়েছিলেন তা ভেস্তে যায় এ ঘটনায়। কিন্তু পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে নবম শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন রফিকসহ অন্যান্যরা মিলে কামরুলকে অপসারণ করে। কামরুলের পদচ্যুত হওয়ার মাধ্যমে পূর্বের। সভাপতি আসাদুজ্জামানেরই বিজয় হলো। আসাদুজ্জামান যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা বাস্তবায়িত হওয়ার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। এর মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে তিনি যে উপায় অবলম্বন করতে চেয়েছিলেন তাতে আর কোনো বাধা থাকে না। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিটি ক্লাসের নিজস্ব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ক্লাস ক্যাপ্টেনদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেই কামরুলকে হটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ক্যাপ্টেনদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কেননা কামরুল চাচ্ছিল না ক্লাস ক্যাপ্টেনদের হাতে এ ক্ষমতা দেওয়া হোক। সে চাচ্ছিল না বলেই আসাদুজ্জামানের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল। আর সে সফল হলে ক্যাপ্টেনদেরকে এরূপ ক্ষমতা দেওয়া সম্ভব হতো না। তাই কামরুলের ব্যর্থতা অন্যদের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

৪. নিলয় চেয়ারম্যান জেলার অন্যান্য চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছিলেন আঞ্চলিক উন্নয়ন জোট। এতে রাজনৈতিক জোট নেতারা যেমন তাকে মেনে চলতে শুরু করে তেমনি তিনজন সাংসদও উক্ত এলাকার স্বার্থবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারতেন না। কিন্তু সাংসদদের কূটনৈতিক তৎপরতায় উক্ত জোটে ভাঙন ধরলে নিলয় চেয়ারম্যান মহাসমস্যার সম্মুখীন হন।
ক. কোন রাষ্ট্র পশ্চিমা বিশ্বের কমিউনিজমের বিলুপ্তির জন্য প্রচেষ্টা করে?
খ. মিখাইল গর্বাচেভ কীভাবে ঠান্ডা লড়াই অবসানে সহায়তা করেছেন?
গ. নিলয় চেয়ারম্যান কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত জোটের পতন সাংসদদের গৃহীত নীতির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিজমের বিলুপ্তিকরণের জন্য প্রচেষ্টা চালায়।

খ. ১৯৯১ সালে জুন মাস পর্যন্ত গর্বাচেভের অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও পররাষ্ট্রনীতির কৌশলগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি পশ্চিমাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিমের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে আগ্রহী তাঁকে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৃহৎ সাতটি শিল্পোন্নত জাতির শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের আহবান জানানো হয়। এভাবে গর্বাচেভ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে চিরাচরিত কমিউনিস্টদের সংঘাতের নীতি পরিবর্তন করে আর্থিক সাহায্য লাভের আশায় ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানে সহায়তা করে।

গ. উদ্দীপকের নিলয় চেয়ারম্যান আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে যে শক্তিশালী ফোরাম গড়ে তোলেন তা রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায়! গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এরূপ একটি জোটের ফলে স্থানীয় সাংসদেরা অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপে করতে পারছেন না। ফলে স্বভাবতই তাদের ক্ষমতা সংকুচিত হওয়া শুরু করে। এতে ভীত হয়ে তারা কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে উক্ত জোটে ভাঙন ধরালে জোটের নেতারা সংকটে পতিত হন। কিন্তু লাভবান হচ্ছেন সাংসদেরা। এরূপ অবস্থায় নিলয় চেয়ারম্যান এক উভয় সংকটে পতিত হয়েছেন। তিনি জোটের ভাঙনের ফলে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন আবার নতুন চাপে দিশেহারা অবস্থায় আছেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের মুখে তৎকালীন সোভিয়েত নেতারা ছিলেন নিলয় চেয়ারম্যানের মতো সংকটে।

ঘ. উদ্দীপকের নিলয় চেয়ারম্যানদের গঠিত জোটটি একটি সংঘবদ্ধ জোট, যা এলাকার সাংসদদের ক্ষমতাকে খর্ব করেছিল। সাংসদেরা এ জোটকে নিজেদের প্রতিপক্ষ বলে মনে করেছিল বলে মনে হয়। যে কারণে একে ভাঙতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। সাংসদদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে জোটটি ভেঙে যায়। সাংসদদের ক্ষমতা ও প্রভাব এর ফলে আরও সংহত হয়। তাদের গৃহীত নীতি ও আদর্শকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা ইতিবাচক হিসেবে কাজ করবে। স্থানীয় সাংসদেরা যখন এরূপ একটি সংগঠিত জোটকে ভেঙে দিতে সমর্থ হন, তখন এটি তাদেরকে এরূপ কাজে উৎসাহিত করে। তাদের গৃহীত নীতির ক্ষেত্রে এ ঘটনা একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। সাংসদদেরকে স্বৈরাচারী আচরণে উদ্বুদ্ধ করবে এবং দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকার পক্ষে কাজ করবে। স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে সাংসদদের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করবে, যা তাদেরকে যেকোনো নীতিমালা। প্রণয়নে অধিক ক্ষমতা দান করবে। স্থানীয় ক্ষমতা সাংসদদের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে এবং নিলয় চেয়ারম্যানদের ন্যায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদেরকে তাদের অনুগত থাকতে বাধ্য করবে। সার্বিক বিচারে এটি একটি সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবে।

৫. বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত নবনীতা মার্কেটে মানুষের প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি থাকায় সেখানে সবসময় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। আর বেশিরভাগ দোকানেই বেলা গ্রুপ অব কোম্পানির পণ্যের একচ্ছত্র আধিপত্য। পণ্যের ব্যাপক চাহিদা দেখে 'লাইট আপ গ্রুপ অব কোম্পানি' সেখানে পণ্য সরবরাহ করে প্রতিযোগিতায় নামতে চায়।
ক. স্নায়ুযুদ্ধের চূড়ান্ত অবসান কখন ঘটে?
খ. 'সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনে মিখাইল গর্বাচেভের ভূমিকা অনস্বীকার্য' - উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. নিজেদের পণ্য সরবরাহ করতে 'লাইট আপ' গ্রুপ অব কোম্পানিকে কী করতে হবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর 'লাইট আপ' কোম্পানির সফলতা অন্যান্য কোম্পানির জন্য বাণিজ্যের পথ সুপ্রশস্ত করবে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর মাসে পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়।

খ. মিখাইল গর্বাচেভের সংস্কারসমূহ ১৯৮৮ সালের শুরু থেকে বাল্টিক প্রজাতন্ত্রসমূহে 'জনপ্রিয় ফ্রন্ট'কে সহ্য করে নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ বছরের নভেম্বর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনকারী প্রজাতন্ত্রসমূহের মধ্যে এসটোনিয়া সর্বপ্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯০ সালে শেষের দিকে ইউনিয়নভুক্ত পাঁচটি প্রজাতন্ত্র নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে। মিখাইল গর্বাচেভ এ ধরনের স্বাধীনতা ঘোষণাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে 'অগণতান্ত্রিক উপায়ে বের হয়ে আসা' বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি এগুলো রোধ করার জন্য কোনো হিংসাত্মক পথ অবলম্বন করবেন না বলেও অঙ্গীকার করেন। মোটকথা, মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ. উদ্দীপকের নবনীতা মার্কেটে লাইট আপ গ্রুপ কোম্পানি পণ্য সরবরাহ করতে চাইলে তাদেরকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ক্রেতাকে আকর্ষণ করে তাদেরকে বাজার ধরতে হবে। এজন্য স্বল্পমূল্যে আকর্ষণীয় পণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
পুঁজিবাদী কিংবা মিশ্র অর্থব্যবস্থায় বাজারে পণ্যের চাহিদা ও যোগান নির্ধারিত হয় ক্রেতা বিক্রেতার পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য থাকে, যার প্রত্যেকটিই স্বাধীন। পণ্যের গুণগত মান, দাম, সরবরাহ, টেকসই ইত্যাদি বিবেচনা করে ক্রেতা পণ্য পছন্দ করে। ক্রেতার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদনকারী বাজার ধরে রাখার উপায় বের করে। উদ্দীপকের বেলা গ্রুপের পণ্য ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলেই এর চাহিদা বেশি। এখানে লাইট আপ গ্রুপ বাজার ধরতে চাইলে তাদেরকে বেলা গ্রুপের সাথে প্রতিযোগিতা করে আসতে হবে। বেলা গ্রুপের চাইতে ভালো পণ্য কম দামে সরবরাহ করে ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে হবে। সেই সাথে পর্যাপ্ত প্রচার প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে।

ঘ. উদ্দীপকের লাইট আপ কোম্পানির সফলতা বাজারের অন্যান্য কোম্পানির বাণিজ্যের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হতে পারে। যেখানে বেলা গ্রুপের একচ্ছত্র আধিপত্য সেখানে অপর একটি কোম্পানির সফলতা, অন্যান্যদেরকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রাখবে। নবনীতা মার্কেটে বেলা গ্রুপের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে লাইট আপ কোম্পানির বাণিজ্যে সফলতা অর্জন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির বাজার দখল করে সে স্থানে নতুন কারও জায়গা করে নেওয়া কষ্টকর। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এরূপ চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস কিংবা সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। কেউ কেউ সাহস করে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ঝুঁকি নিলেও সব ক্ষেত্রে যে সফলতা আসবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বরং এক্ষেত্রে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু যদি কেউ এরূপ চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল হন তবে তা অন্যান্যদেরকে অনুপ্রাণিত করে। উদ্দীপকের লাইট আপ কোম্পানি এভাবে প্রতিষ্ঠিত বেলা গ্রুপকে চ্যালেঞ্জ করে যদি বাজার দখল করতে পারে তবে তাদের এ সাফল্য অন্যান্য কোম্পানিকে অনুপ্রাণিত করবে নিঃসন্দেহে। অন্যান্য কোম্পানিগুলো এটি দেখে নতুন কৌশল স্থির করে বাণিজ্যে সফলতা আনতে সচেষ্ট হতে পারে যা তাদের বাণিজ্যের পথকে সুপ্রশস্ত করবে।

৬. রানা ও তুহিন জীবিকার সন্ধানে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পরই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুটি দেশে পাড়ি জমায়। কিন্তু আশির দশক জুড়ে সর্বপ্রথম দেশে সোভিয়েত বিরোধী আন্দোলন এবং সামরিক শাসন শুরু হলে উক্ত দেশে রানাকে কাজ খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট করতে হয়। অন্যদিকে, তুহিন যে দেশে ছিল সেখানে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সোভিয়েত শাসনের অবসান ঘটায় তুহিনকে রানার মতো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
ক. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্বব্যবস্থা কেমন ছিল?
খ. বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
গ. রানা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত কোন দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর তুহিন যে দেশে ছিল সেখানে শাসন পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুহূর্ত ছিল না? মতামত দাও।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্বব্যবস্থা ছিল বহুমেরুকেন্দ্রিক।

খ. ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের ফলে প্রকৃতপক্ষে সর্বোচ্চ লাভবান হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের বুকে একচ্ছত্র পরাশক্তি হিসেবে একাধিপত্য করার সুযোগ পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির ফলে যেসব সংকট দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো পরিকল্পনা প্রসূত অর্থনীতির স্থলে নিয়ন্ত্রণবিহীন চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল বাজার ও উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রবর্তন এবং তার ফলে রাশিয়াও সি.আই.এস-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে সাময়িকভাবে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যস্ত হয়। খাদ্য উৎপাদন ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি, পণ্য মূল্য বৃদ্ধি এবং রুবেলের অবমূল্যায়ন সর্বত্র দারুণ সংকটের সৃষ্টি করেছিল।

গ. উদ্দীপকের বর্ণনামতে, রানা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত পোল্যান্ডের রাজনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রথম দেশ হিসেবে পোল্যান্ড ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০ সালের আগস্টে কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ করে পোল্যান্ডের রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেন লেস ওয়ালেসা নামের এক শ্রমিক নেতা। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পশ্চিমা সমর্থন নিয়ে লেস ওয়ালেসা 'সংহতি আন্দোলন' নামে এক আন্দোলন শুরু করেন, যার মূল্য লক্ষ্য ছিল পোল্যান্ডকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট থেকে মুক্ত করা। এ সময় পোল্যান্ড সরকার সোভিয়েত ইউনিয়নের মদদে সামরিক শাসন জারি করে ওয়ালেসাকে কারাগারে প্রেরণ করে। ফলে দেশে অচলাবস্থা দেখা দেয়। অবশেষে ১৯৮৮ সালের দিকে সরকার তাকে মুক্তি দিয়ে আলোচনায় বসে এবং স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু এ সম্পূর্ণ সময়টাতে পোল্যান্ডে অর্থনৈতিক অবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয়, যার ফলে রানার মতো ব্যক্তিদের কাজ খুঁজে পেতে সমস্যা হয়।

ঘ. তুহিন যে দেশে ছিল তা মূলত রুমানিয়া। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এদেশটিতে হঠাৎ করেই ক্ষমতার পালাবদল হয়। ঘটনাপ্রবাহ এতদ্রুত ও আকস্মিক ছিল যে, কেউ তা আঁচও করতে পারেননি। তাই বলা হয়, রুমানিয়ার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো মুহূর্ত ছিল না।
১৯৮৯ সালের ২২ ডিসেম্বর রুমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসন অপ্রত্যাশিতভাবে শেষ হয়ে যায়। টিমিসোয়ারার গণঅসন্তোষ ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ শুরু হয় এবং ঐ দিনে তা চরম আকার ধারণ করে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চসে সরকারের পতন ঘটে এবং জনতা সরকারি কার্যালয়সমূহ দখল করে নেয়। হেলিকপ্টারে করে কমিউনিস্ট ভবন থেকে পালিয়ে রক্ষা পান। এর কিছু পরই জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট নামক এক ফ্রন্ট গঠন করা হয়। এ ফ্রন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করে। অন্যদিকে চসে পালাতে গিয়ে ধরা পড়লে তাকে গোপন বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয়। রুমানিয়ার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের অধিকারী এরূপ একজন নেতাকে বিপ্লবের জন্য প্রাণ দিতে হয়। এ সম্পূর্ণ ঘটনাটি এতদ্রুত ও কল্পনাতীত ছিল যে, একে 'ডিসেম্বরের অলৌকিক ব্যাপার' বলে মনে করা হয়। সম্পূর্ণ ঘটনাটি যেন চোখের পলকেই ঘটে যায়। এজন্য বলা যায়, এর কোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল না।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

৭. রায়হান চৌধুরী আবছায়া গ্রামের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিজের আত্মীয়স্বজনদেরকে বিভিন্ন পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে খুব সহজেই অনেক ক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম হন। কিন্তু তার এ অবাধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে একপর্যায়ে গ্রামবাসী আন্দোলন শুরু করে। অবস্থা খারাপ দিকে যাওয়ায় রায়হান চৌধুরী বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তার গাড়িতে হামলা করলে গাড়ি রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা সবাই ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ক. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কখন এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে?
খ. সংহতি আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?
গ. রায়হান চৌধুরীর পরিণতির সাথে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত কোন দেশের সর্বশেষ কমিউনিস্ট শাসকের পরিণতির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ক্ষমতার অপব্যবহারই রায়হান চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে বিক্ষুব্ধ করেছিল- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে।

খ. ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে কোনো রকম পূর্ব পরিচিতি ছাড়াই হঠাৎ করে লেস ওয়ালেসা নামে একজন শ্রমিক আন্দোলনের নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি পোল্যান্ডকে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য মদদ জোগাতে থাকে। লেস ওয়ালেসা যে আন্দোলন শুরু করেন তা সংহতি আন্দোলন নামে সুপরিচিত। তাঁর আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পোল্যান্ডকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা। ওয়ালেসার সংহতি আন্দোলনের জনপ্রিয়তায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভীত হয়েছিল। সংহতি আন্দোলন লেস ওয়ালেসার শক্তি ও অসীম রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

গ. রায়হান চৌধুরীর পরিণতির সাথে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত রুমানিয়ার নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী শাসক নিকোলাই চসেস্কুর মিল রয়েছে। নিকোলাই চসেস্কু আকস্মিক এক বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত এবং নিহত হন।
রুমানিয়ার স্বৈরাচারী কমিউনিস্ট শাসক ছিলেন নিকোলাই চসেন্স। স্ট্যালিনের ঐতিহ্য অনুসারে কমিউনিস্ট দেশগুলোতে দলীয় পোলিটব্যুরোর হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকার কথা ছিল, এক ব্যক্তির হাতে নয়। কিন্তু চসেস্কু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিজ পরিবার-পরিজন এবং অনুগত ব্যক্তিদের বসিয়ে সবক্ষমতা নিজ হাতে নেন। এর ফলে ১৯৮৯ সালের ২২ ডিসেম্বর আকস্মিক এক বিপ্লবে তার পতন ঘটে এবং তিনি কোনো রকম রক্ষা পান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। স্ত্রীসহ পালিয়ে যাওয়ার সময় বিপ্লবীদের হাতে ধরা পড়েন এবং তাঁর ফাঁসি দেওয়া হয় এক গোপন বিচারের রায়ে এবং তৎক্ষণাৎ তা কার্যকর করা হয়।

ঘ. উদ্দীপকের রায়হান চৌধুরী নিজ ক্ষমতা ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার আত্মীয়স্বজনদেরকে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তার এ ক্ষমতার প্রয়োগ অন্যান্যদেরকে বঞ্চিত করেছে।
গ্রামবাসীর নিজ নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে যেখানে সরকারি পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে রায়হান সাহেব ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজ লোকদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন। আবার এসব পদের নিজ লোকদেরকে ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি নিজ ক্ষমতাকে আরও সংহত করেছেন যেভাবে করেছিলেন নিকোলাই চসেছ। কিন্তু এ সংহত ক্ষমতা চসেস্কুকেও রক্ষা করতে পারেনি, রায়হান সাহেবকেও নয়। কেননা ক্ষমতা যতই থাকুক, সাধারণ জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তির সামনে তা কিছুই নয়। সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করে ক্ষমতা দখল করে থাকা সম্ভব নয়। বঞ্চিত করে তো আরও নয়। হয়তবা সাময়িকভাবে এটি সফল হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ীভাবে তা কখনো সম্ভব নয় এবং এজন্য চরম মূল্য দিতে হয়। যেমন চরম মূল্য নিলেন রায়হান সাহেব চসেস্কুর মতো। ক্ষমতার অপব্যবহার না করলে হয়তবা তাকে এ পরিণতি বরণ করতে হতো না। কেননা ক্ষমতার অপব্যবহার না করলে গ্রামবাসী বঞ্চিত হতো না। আর বঞ্চিত না হলে রায়হান সাহেবের প্রতি তাদের বিক্ষুদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। চরম বঞ্চনা ও ক্ষমতার অপব্যবহার গ্রামবাসীকে বিক্ষুদ্ধ করেছিল। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল তার গাড়িতে হামলা করার মাধ্যমে।

৮. নাহিদ সাহেব ছিলেন একজন সমাজতন্ত্রমনা ব্যক্তি। তবে গণতন্ত্রের নিয়মের শৃঙ্খলে আজ তিনিও প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতিতে মেম্বার প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে নাহিদ সাহেব বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারও শুরু করেন। নাহিদ সাহেব দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমিতে বাস করা জমিরউদ্দিনের একান্নবর্তী পরিবারকে ভিটে ছাড়া করেন এবং নিজের স্ত্রীর নামে উক্ত জমি লিজ নেন। তার অবাধ হস্তক্ষেপে এভাবে অনেকেই আর্থিক ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হন।
ক. Unipolar System কী?
খ. পোল্যান্ডে কীভাবে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটে?
গ. নাহিদ সাহেবের সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার পতনে তার কার্যাবলি কীভাবে পরিচালিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নাহিদ সাহেবের সমাজতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যই অধিক গ্রহণীয় ছিল? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশ্বব্যবস্থা বহুমেরু থেকে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় রূপ নেওয়াকে Unipolar System বলে।

খ. মূলত পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট শাসনের পতনের অন্যতম কারণ ছিল লেস ওয়ালেসার 'সংহতি আন্দোলন'। এ আন্দোলনের কারণে ওয়ালেসাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ১৯৮৮ সালে গ্রীষ্মকালের শেষদিকে কর্তৃপক্ষ সংহতির সাথে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় বসার জন্য একটি চুক্তি সম্পাদন করে। এ সময় ওয়ালসা মুক্তি পান। ঐ গোলটেবিলের শর্ত অনুযায়ী সিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। এ নির্বাচনে ওয়ালেসা অংশগ্রহণ না করলেও তাঁর নেতৃত্বধীন সংহতি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। লেস ওয়ালেসা কমিউনিস্ট দল, সংযুক্ত কৃষক দল, গণতান্ত্রিক দল ও নিজের সংহতি দল নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। এভাবেই পোল্যান্ডে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ঘটে।

গ. উদ্দীপকের নাহিদ সাহেব একজন বিকৃত মানসিকতার সমাজতন্ত্রী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী হলেও আবার গণতান্ত্রিকভাবে মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন ভোটের মাধ্যমে, এটা দোষণীয় নয়। কিন্তু দোষণীয় হল যখন তিনি অন্যের অধিকার হরণে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রের আদর্শ তাকে বিরত রাখতে পারেনি, গণতান্ত্রিক আদর্শও এ ক্ষমতা দেয়নি। সমাজতন্ত্র সাম্যবাদের কথা বলে। সব মানুষের সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলে। একজন মানুষ যখন এ বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয় তখন সে তার জীবনের সর্বত্র এটির প্রয়োগ ঘটাবে। কিন্তু যদি এটি কেবল দুর্বলের শোষণের হাতিয়ার হয়, তবে তা বিপজ্জনক।
অন্যদিকে, গণতন্ত্রে সবার সমান অধিকার দিলেও এখানে সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক যোগ্যতার প্রাধান্য থাকে। কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কেউ তার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অন্যের সম্পদ দখল করবে তা সমর্থন করে না। উদ্দীপকের নাহিদ যে কাজ করছে, তা সমাজতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্র কোনোতন্ত্রেই সমর্থিত নয়। গণতন্ত্র তাকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিয়েছে বলেই সে এর অপব্যবহার করছে, সমাজতন্ত্রে ক্ষমতা পেলে যে সে এরুপ করত না, এরই বা নিশ্চয়তা কী? বরং এক্ষেত্রে সব ঘটনার জন্য দায়ী সে নিজে ব্যক্তি হিসেবে।

ঘ. উদ্দীপকের নাহিদ সাহেবের চরিত্রে যে বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে, তা সমাজতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্র কোনো তন্ত্রের বৈশিষ্ট্যই বহন করে না। তিনি যদি সমাজতন্ত্র কিংবা গণতন্ত্রের যে কোনোটির আদর্শে বিশ্বাসী হতেন, তবে এরূপ আচরণ করতে পারতেন না। তার এ আচরণকে সমাজতন্ত্রের মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না। যদি তিনি প্রকৃত অর্থে সমাজতন্ত্রের অনুসারী হতেন, তবে তার এটি থেকে বিচ্যুত হওয়ার কথা ছিল না। সমাজতন্ত্র তাকে সুযোগ দেয়নি বলেই সে সুবিধার জন্য অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে। সে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত হয়ে গণতান্ত্রিক আচরণ করেনি। সে অন্যের জমি দখল, সরকারি সম্পত্তি থেকে অন্যকে উৎখাত করে নিজের নামে নিয়ে নেওয়ার মতো যেসব অপকর্ম করছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, তা কোনোভাবেই গণতন্ত্রে সমর্থিত নয়। যদি প্রকৃত অর্থে সে গণতন্ত্রকে অনুসরণ করত তবে এরূপ আচরণ করতে পারত না। তার যে সমস্যা, তা ব্যক্তিগত সমস্যা। এরূপ সমস্যার সমাধান সমাজতন্ত্রও দিতে সক্ষম নয়। সে যদি সমাজতন্ত্রের অনুসারী হয়ে ক্ষমতা পেত, তবে সেখানেও নিশ্চিতভাবে এরূপ আচরণ করত। কিন্তু যদি সমাজতন্ত্রের প্রকৃত শিক্ষা তার মধ্যে থাকত, তবে সে কোনোভাবেই এরূপ আচরণ করতে পারত না। গণতন্ত্রের প্রকৃত শিক্ষাও তাকে এসব কাজ করতে বাধা দিত। সার্বিক বিচারে এসব কাজের জন্য দায়ী সে নিজে, অন্য কিছু নয়। কোনো আদর্শই তাকে এসব থেকে বিরত রাখতে পারবে না, যদি এর প্রকৃত শিক্ষা সে না মানে।

৯. 'মিথীলা স্কুল এন্ড কলেজ' প্রতিষ্ঠানটির কমিটির লোকেরা আদর্শগত দিক দিয়ে ভিন্নমত পোষণ শুরু করলে কলেজ ও স্কুল শাখা আলাদা হয়ে যায়। কলেজ শাখাটি পুরাতন নিয়মনীতি অব্যাহত রাখলেও স্কুল শাখাটি এক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। স্কুল শাখার পরিচালনা পর্ষদের সঠিক পরিচালনায় স্কুল শাখাটি বাইরের কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রথমে কলেজ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।
ক. সোভিয়েত ইউনিয়ন সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কোন নীতি গ্রহণ করেন?
খ. 'ডিসেম্বর অলৌকিক ব্যাপার' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার কমিটির সাথে দ্বিখন্ডিত কোন জার্মানির আদর্শগত মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর বাইরের বিনিয়োগই স্কুল শাখাটির ব্যাপক উন্নয়নে মূলে ভূমিকা রেখেছে? মতামত দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সোভিয়েত ইউনিয়ন সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য উদারনীতি গ্রহণ করেন।

খ. ১৯৮৯ সালের ২২ ডিসেম্বর চার দশকেরও অধিককাল যাবৎ চলতে থাকা রুমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসন আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে শেষ হয়ে যায়। টিমিসোয়ারার গণঅসন্তোষ ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় এবং তা ঐদিন বুখারেস্টে চরম আকার ধারণ করে। তারপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা নিকোলাই চসেস্কুর সরকার ও রুমানিয়ার কমিউনিস্ট দলকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অর্থাৎ পতন ঘটায়। এ ধরনের একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ কয়েক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত ছিল কল্পনাতীত। এ কারণে সেদেশের জনগণ এ ঘটনাকে 'ডিসেম্বর অলৌকিক ব্যাপার' বলে মনে করে।

গ. উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখার কমিটির সাথে পশ্চিম জার্মানির আদর্শগত মিল পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জার্মানি দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। এর পূর্ব অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিম অংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউরোপীয় পুঁজিবাদী দেশগুলো। এতে পূর্ব জার্মানিতে সমাজতান্ত্রিক এবং পশ্চিম জার্মানিতে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা গড়ে আদর্শিক মিল থাকায় উভয় পরাশক্তি নিজ নিজ অনুসারীকে সহায়তা করতে থাকে। ফলে পশ্চিম জার্মানিতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে থাকে এবং শিল্পে উন্নত একটি দেশে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন ঘটনায় ভেঙে পড়া অর্থনীতি দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করে। উদ্দীপকের মিথীলা স্কুল এবং কলেজের স্কুল শাখাটি পশ্চিম জার্মানির ভাবধারাপুষ্ট পরিচালনা পর্ষদের জন্য সহজেই উন্নতি করতে পারে।

ঘ. আদর্শিক দ্বনে্দ্বর ভিন্নতা থাকায় উদ্দীপকের মিথীলা স্কুল ও কলেজটি আলাদা হয়ে যায়। এর কলেজ শাখাটি গতানুগতিকভাবে চলতে থাকে। এর কোনো উন্নতি বা পরিবর্তন দেখা যায় না। অন্যদিকে ভুল শাখাটি পরিচালনা পরিষদের সহযোগিতার ভিত্তিতে বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়। বাইরের এ বিনিয়োগের ফলেই এটি ক্রমাগত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। এখানে সরকারি অনুদান নয় বরং বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অবদানই স্কুলটির উন্নয়নে সহায়তা করেছে। যদি তা না হতো তবে কলেজ শাখাটির ক্ষেত্রেও অনুরূপ উন্নয়ন দেখা যেত। কিন্তু তা হয়নি। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ স্কুলটিকে নতুনভাবে সাজাতে সহায়তা করে। ফলে এক সময় এটি স্কুল থেকে কলেজে রূপান্তরিত হয়। এরপর আরও বিনিয়োগ করা হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, যেহেতু বেসরকারি বিনিয়োগের ফলে এর উন্নতি ঘটছে, কাজেই এটি পুঁজিবাদী আদর্শের আলোকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই তা হচ্ছে। এরূপ উন্নয়ন শিক্ষার প্রকৃত বিস্তার ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে না।

১০. যুদ্ধ শেষে দুটি ভিন্নধর্মী আদর্শবাদী শক্তির হস্তক্ষেপে দেশটির পশ্চিম ও পূর্ব অংশে বিভাজিত হলে আনোয়ার হোসেন পূর্ব অংশেই থেকে যান এবং পূর্বের ন্যায় কৃষিকাজ করতে থাকেন। এক সময় পশ্চিম অংশের ন্যায় পূর্ব অংশেও গণতন্ত্রের সুবাতাস বইলে তিনি আশার আলো দেখতে পান। অল্প সময়ের মধ্যে শিল্পের ব্যাপক অগ্রগতি হওয়ায় আনোয়ার হোসেন শিল্পের প্রতি বেশি আগ্রহী হন।
ক. পশ্চিমা বিশ্ব কেন গর্বাচেভকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে?
খ. জার্মানি কেন দ্বিখন্ডিত হয়েছিল?
গ. আনোয়ার হোসেন যে দেশে বাস করেন তার সঙ্গে ইউরোপের কোন দেশটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আনোয়ার হোসেনের পদক্ষেপটি ছিল দেশটির উন্নয়নের একটি সহায়ক মাধ্যম।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হিংসাত্মক ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ না হওয়ার কারণে পশ্চিমা বিশ্ব গর্বাচেভকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে।

খ. পশ্চিমা রাষ্ট্রজোট আশঙ্কা করেছিল যে, সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাবে জার্মানি সাম্যবাদের আওতায় পড়তে পারে। অপরদিকে, রাশিয়া মনে করেছিল যে, পশ্চিমা রাষ্ট্রজোট জার্মানিকে সোভিয়েত বিরোধী ঘাঁটিতে পরিণত করতে পারে। দু শক্তিই পরস্পরকে বাধাদান করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। ফলে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। সোভিয়েত প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১৯৪৮ সালের জুন মাসে পশ্চিমা রাষ্ট্রজোট তাদের অধিকৃত এলাকায় এক নতুন মুদ্রা বা মার্কের প্রবর্তন করেন। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতিতে এ বিভেদ যাতে ব্যর্থ হয়। এজন্য পূর্ব জার্মানি পশ্চিম বার্লিনের যাতায়াতের পথ রুদ্ধ করেছিল। এসকল মতবিরোধের ফলে জার্মানিতে পূর্ব ও পশ্চিম দুটি পৃথক রাষ্ট্র স্থাপিত হয় এবং জার্মানি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে।

গ. উদ্দীপকের আনোয়ার হোসেন যে দেশে বাস করেন তার সাথে ইউরোপের সাবেক স্বাধীনরাষ্ট্র পূর্ব জার্মানির সাদৃশ্য দেখা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব জার্মানির নেতৃত্ব চলে যায় সোভিয়েতপন্থি' কমিউনিস্টদের হাতে এবং পশ্চিম জার্মানির নেতৃত্ব থাকে মার্কিনপন্থি পুঁজিবাদী তথা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে। কিন্তু পশ্চিম জার্মানি দূত অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জনে সক্ষম হলেও পূর্ব জার্মানি তা পারেনি। কৃষিপ্রধান এবং জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার ফলে পূর্ব জার্মানিতে শিল্পের প্রসার ঘটেনি প্রথমে। কিন্তু ১৯৫০ সালের পরবর্তীকালে সরকারের গৃহীত নীতি এবং প্রচেষ্টার ফলে পূর্ব জার্মানিও শিল্পে উন্নতি করতে সমর্থ হয়। উদ্দীপকের আনোয়ার হোসেনের বসবাসরত দেশটিও একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

ঘ. উদ্দীপকের আনোয়ার হোসেন সাহেব যে দেশটিতে বসবাস করছিলেন তা ছিল একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ার ফলে দেশটিতে শিল্পে অনগ্রসরতা লক্ষ করা যায়। আবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ব্যক্তি মালিকানায় শিল্পকারখানা স্থাপনের সুযোগ না থাকায় আনোয়ার সাহেবের কিছু করার থাকে না। কিন্তু দেশটি যখন গণতান্ত্রিক ধারার দিকে যেতে থাকে তখন ব্যক্তি মালিকানায় শিল্প-বাণিজ্য স্থাপনের দ্বার উন্মোচিত হয়। এরূপ একটি কৃষিপ্রধান অনুন্নত শিল্পের দেশে শিল্প উন্নয়নের জন্য দরকার বেশি বেশি বিনিয়োগ। কেবল সরকারের পক্ষে এরূপ বিনিয়োগ সম্ভব নয় বলে বেসরকারি, উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাই আনোয়ার হোসেন এক্ষেত্রে শিল্পে বিনিয়োগকারী বা শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে এসে দেশটির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। শিল্পে বিনিয়োগ তার জন্য যদি সম্ভব না হয় তবে তিনি শিল্প শ্রমিক হিসেবেও এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। কেননা শুধু শিল্পকারখানা স্থাপন করলেই হয় না, এতে প্রচুর জনবলের দরকার হয় পরিচালনার জন্য। তাই তিনি শিল্পের জন্য যে পদক্ষেপই নিতে সমর্থ হন না কেন তা দেশটির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post