HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৬

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download


উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
ষষ্ঠ অধ্যায় : জাতিসংঘ এবং বিশ্বশান্তি

১. রাজু, রনি ও মনি তিনবন্ধু। এলাকায় তাদের যথেষ্ট প্রভাব। যেকোনো বিরোধের উদ্ভব হলে সমাধানের জন্য তাদের ডাক পড়ে। এলাকায় বিরোধ ও রক্তপাত বন্ধ করার জন্য তারা একটি সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নেন। তাদের এ মহতী উদ্যোগ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সমাপ্ত হয়। সৃষ্টি হয় বিশাল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ তা বিশ্বসংগঠনে পরিণত হয়েছে।
ক. নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যসংখ্যা কত?
খ. উগ্রজাতীয়তাবাদ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে তিন বন্ধুর কর্মকান্ড- কোন সংস্থাটির উদ্ভব হয়েছে? উক্ত সংস্থাটি গঠনের পটভূমি উল্লেখ কর।
ঘ. বিশ্বব্যাপী শান্তি বজায় রাখতে উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থাটির সফলতা ব্যর্থতা উল্লেখ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা ১০।

খ. জাতীয়তাবাদের উপেক্ষা বা জাতীয়তাবাদ দমনের মধ্যে যেমন যুদ্ধ বিগ্রহের বীজ নিহিত থাকে তেমনি উগ্র জাতীয়তাবোধও যুদ্ধের মনোবৃত্তি সৃষ্টির সহায়তা করে। জার্মানদের মধ্যে একটা ধারণা সব সময় কাজ করত যে জার্মান পিতৃভূমি সকল দেশের শ্রেষ্ঠ এবং জার্মান জাতি অপরাপর জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। জার্মানদের মতো এ ধরনের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত উগ্র চেতনাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে। এ উগ্র জাতীয়তাবোধ কেবল জার্মানিতেই নয় ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান এবং অন্যান্য দেশেও সংকীর্ণ প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।

গ. উদ্দীপকের তিন বন্ধুর কর্মকান্ডের যে সংস্থাটির উদ্ভব হয়েছে তা হলো জাতিসংঘ। জাতিসংঘ গঠনের পটভূমি নিম্নে বর্ণিত হলো-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে যুদ্ধরত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি গভীরভাবে অনুভব করেন। যুদ্ধের সময় মিত্রশক্তিবর্গের নেতৃবৃন্দ যুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী পুনর্গঠনের বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উক্ত নেতৃবৃন্দ ৭টি সম্মেলন অংশগ্রহণ করে। ১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা বৈঠকে ডাম্বারটন অক্স প্রস্তাবগুলো তিন রাষ্ট্রপ্রধান গ্রহণ করেন। পরবর্তী সম্মেলন ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল সানফ্রান্সিসকোতে হয়। এই সম্মেলনে ৪৬টি দেশের প্রতিনিধি যোগদান করে। ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন ৪৬টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ আন্তর্জাতিক সংগঠনের জন্য একটি চার্টার গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জের সনদ চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০।
পরিশেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের তিন বন্ধুর ন্যায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় চার্চিল, রুজভেল্ট ও স্ট্যালিন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ঘ. উদ্দীপকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে সংস্থাটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সে সংস্থাটির নাম জাতিসংঘ। জাতিসংঘের যেমন সফলতা আছে তেমন ব্যর্থতাও আছে। বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ জন্ম নিয়েছে। এ মহান দায়িত্ব পালনে জাতিসংদের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই অনেকাংশে বেশি পরিলক্ষিত হয়। জাতিসংঘের আন্তরিক প্রচেষ্টায় লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচীন .ইত্যাদি জনপদ স্বাধীন হতে পেরেছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিশ্বের দুই পরাশক্তি পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস, অস্ত্র প্রতিযোগিতা হ্রাস এবং পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্য চুক্তি করেছে। উপনিবেশ বিলোপ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শরনার্থী সমস্যার সমাধান, পরিবেশ সংরক্ষণ, জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিসংঘ কাজ করে যাচ্ছে। তবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব মহল এই প্রতিষ্ঠানের উপর আশাবাদী ছিল। কিন্তু জাতি সংঘ অনেকাংশেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। কিউবা-বার্লিন, লেবানন সংকট, ইসরাইল-ফিলিস্তিনি, জন্ম কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে জাতি সংঘ ব্যর্থ হয়েছে।

২. বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। প্রথম থেকেই ওআইসির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও ওআইসি। ও তার সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন সহযেগিতা পাচ্ছে। বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন হলো ওআইসি। এর সদস্য সংখ্যা ৫৭। এর সদর দপ্তর সৌদি আরবের জেদ্দায়। এর প্রধান লক্ষ্য হলো সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সারা পৃথিবীর মুসলমানদের কল্যাণে কাজ করা।
ক. IMF এর পূর্ণরূপ কী?
খ. ভেটো ক্ষমতা কী?
গ. উদ্দীপকের উল্লিখিত সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ ১৯৪৭ সালে আর কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সংস্থাটি বিশ্বশান্তি রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে? বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. IMF এর পূর্ণরূপ হলো International Monetary Fund.

খ. জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্রের ভেটো (Veto) ক্ষমতা রয়েছে। ল্যাটিন শব্দ Veto অর্থ আমি এটা মানি না। কার্যসূচির ব্যাপারে সদস্যদের ভোটাধিক্যে যেকোনো প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে স্থায়ী পাঁচটি রাষ্ট্রের সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন হয়। কোনো এক স্থায়ী সদস্য কোন বিষয়ে আপত্তি প্রকাশ করলে সে বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ আর অগ্রসর হতে পারে না। এটিই Veto ক্ষমতা নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ নামক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর সকল প্রতিনিধি রাষ্ট্রের এক মহা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১৯৩। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ১৩৬ তম সদস্য হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জাতিসংঘের উল্লেখ করার মতো কোনো ভূমিকা ছিল না। তবে যুদ্ধবিধবস্ত বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উনণয়নে ও বিপুলসংখ্যাক উদ্বান্তুর সহযোগিতায় জাতিসংঘের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। জাতিসংঘ বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পগুলোতে রাষ্ট্রীয় সাবভৌমত্ব, সমমর্যাদা ও সাম্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে বৈদেশিক কার্যক্রম নির্ধারণ করেছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতিসংঘ নামক সংস্থাটি বিশ্ব শান্তি রক্ষায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা রক্ষা করা ও বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা। ২০১০ সাল পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ সময়কালে জাতিসংঘ ৫৫টি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং ১৫টি শান্তিরক্ষা বাহিনী বিভিন্ন দেশে, সক্রিয়ভাবে কার্যকর রয়েছে। এ সময়কালের মধ্যে প্রায় ১৭২টি যুদ্ধ সম্ভাবনার সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করেছে। যার মধ্যে ৮০টি সমস্যা বিদ্যমান দেশগুলোকে প্রায় যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছিল। এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কারগিল সংঘর্ষ অন্যতম।
এছাড়া জাতিসংঘ ১৯৫০ সালে কোরিয় সংকট, ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল সংকট, আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার, ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসান, ইরান-ইরাক যুদ্ধ, লেবানন সংকট, এলসালভেদরে গৃহযুদ্ধ অবসান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সংকট প্রভৃতি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।

৩. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করা, মানবাধিকার রক্ষা, প্রত্যেক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার আন্তরিক হওয়া ইত্যাদি উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বিশ্বসংস্থা গঠিত হয়।
ক. ফ্যাসিবাদের জনক কে?
খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ লিখ।
গ. উদ্দীপকে সংস্থা তোমার পাঠ্যবইয়ের সংস্থার সাথে মিল করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বিশ্বশান্তি রক্ষায় সংস্থাটির সফলতা ও ব্যর্থতা পর্যালোচনা কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফ্যাসিবাদের জনক মুসোলিনি।

খ. ইউরোপের উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দ স্বস্ত্রীক সার্বিয়ায় ঘুরতে যান। সার্বিয়ার সাথে অস্ট্রিয়ার সম্পর্ক খারাপ থাকার কারণে সার্বিয়ার আততায়ীগণ যুবরাজকে স্বস্ত্রীক হত্যা করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯১৪ সালের ২৮শে জুলাই এর মাধ্যমেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে।

গ. উদ্দীপকের সংস্থা আমার পাঠ্যবইয়ের জাতিসংঘ নামক সংস্থার মিল রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত (২৪ অক্টোবর, ১৯৪৫ খ্রিঃ) হলেও, এর উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বেশ কয়েকবছর পূর্বেই। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইংল্যান্ড, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিগণ লন্ডনে সমবেত হয়ে একটি ঘোষণাপত্র মারফৎ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তর জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেন। এই ঘোষণাপত্র 'লন্ডন ঘোষণাপত্র' নামে পরিচিত। এর দু-মাস বাদে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ‘প্রিন্স অব ওয়েলস' নামে এক যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। যুদ্ধোত্তর পর্বে বিশ্বশান্তি ও বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার সম্পর্কে তাঁরা এক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই ঘোষণাপত্র 'আটলান্টিক সনদ' নামে পরিচিত। এই সনদে ভবিষ্যৎ জাতিপুঞ্জের বীজ সুপ্ত ছিল। এরপর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নর রাষ্ট্রের মধ্যে আলাপ-আলোচনার পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে এপ্রিল থেকে ২৬শে জুন পার্যন্ত আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে একটি অধিবেশন বসে। সেখানে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিবর্গ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য নীতি, গণতন্ত্র প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বিশদ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে একটি 'সনদ' তৈরি করেন। ২৬শে জুন ৫১টি রাষ্ট্র সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে প্রথম স্বাক্ষর করে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে অক্টোবর থেকে এই সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকরী হয়, অর্থাৎ এই দিনটিকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধরা হয়।

ঘ. বিশ্বশান্তি রক্ষায় সংস্থাটি অর্থাৎ জাতিসংঘের সফলতা ও ব্যর্থতা দুটিই পরিলক্ষিত হয়। নিচে জাতিসংঘের সফলতাসমূহ তুলে ধরা হলো- আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় জাতিসংঘের ভূমিকা অনেকাংশে প্রশংসার দাবি রাখে। ইন্দোনেশিয়া, লিবিয়া, নামিবিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র জাতিসংঘের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার ফলেই স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করছে। লাওস, কঙ্গো ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করে সেখানে শান্তি স্থাপন জাতিসংঘের বিরাট একটি সাফল্য। জাতিসংঘের মধ্যব্যবস্থতায় সুয়েজ এলাকা থেকে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসরাইল, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করলে জাতিসংঘ তার জরুরি বাহিনী মোতায়েন করলে সুয়েজ সংকটের অবসান ঘটে। পাক-ভারত যুদ্ধ (১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ) জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অবসান হয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি (১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ) জাতিসংঘের অন্যতম সফল প্রয়াস। লেবানন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সংকট ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ফলে স্তিমিত হয়। গ্রিস-তুরস্ক বিরোধ জাতিসংঘের মধ্যবস্থায় নিষ্পত্তি হয়, যা জাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। জাতিসংঘের ব্যর্থতাসমূহ হলো- বিশবশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সম্মিলিত জাতিসংঘের অবদান যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভরসা ও আশ্রয়স্থল হিসেবে জাতিসংঘের ব্যর্থতা এর মর্যাদা ও গৌরবকে অনেক ক্ষেত্রে ম্লান করে দিয়েছে। সংঘাত ও সংঘর্ষে, আক্রমণ ও নির্যাতনে জাতিসংঘকে আজ আশ্রয় ও ন্যায়বিচারের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। জাতিসংঘের উপস্থিতিতেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলে আজ অন্যায় ও অবিচার চলছে। বৃহৎ রাষ্ট্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে, মানবাধিকারকে পদদলিত করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। জাতিসংঘ অসহায় নির্বাক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু বৃহৎ শক্তি জাতিসংঘকে কোনো তোয়াক্কা করছে না। জাতিসংঘের কার্যকারিতা ও সাফল্য সম্পর্কে আজ বিশ্ব জনমনে ব্যাপক সংশয় ও অনাস্থা দেখা দিয়েছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা আজ সুদূরপরাহত। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ আজ আণবিক মারণাস্ত্রের ভয়াবহতায় ভবিষ্যতের দুঃস্বপ্নে চরম অশান্তি ও উৎকণ্ঠায় সময় অতিক্রম করছে। ফিলিস্তিন সমস্যা, ইন্দোচীন সমস্যা, লেবাননের গৃহযুদ্ধ, ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম, আফগান সমস্যা, ইরাক সমস্যা, আফ্রিকার বর্ণবাদী সমস্যা, শরণার্থী সমস্যা, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকারের অবাধ ও নির্লজ্জ লঙ্ঘন, বুভুক্ষ ও নির্যাতিত-নিপীড়িত মানবতার করুণ আর্তনাদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার ইস্যুকে সুদূরপরাহত করে রেখেছে।

৪. জেলার প্রভাবশালী দু নেতা আখতারুজ্জামান ও জহিরউদ্দিন ভিন্ন দলের মতাদর্শে থাকলেও এলাকার মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এক বৈঠকে মিলিত হন। উক্ত বৈঠকে জেলার আরও কিছু ভিন্ন মতাদর্শী দলের নেতা উপস্থিত হয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন- রাজনৈতিক কর্মকান্ড কোনোভাবেই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও নিরাপত্তা বিষয় বিঘ্নিত করবে না। বৈঠক পরবর্তী সময়ে উক্ত জেলার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকলের অংশগ্রহণে 'ডিআইবি' নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সমিতি গঠন করা হয়।
ক. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে কোন সংগঠনটির অকাল মৃত্যু ঘটে?
খ. জাতিসংঘের প্রস্তাবনার বক্তব্য বুঝিয়ে লেখ।
গ. আখতারুজ্জামান ও জহিরউদ্দিনের শান্তিমুখী পদক্ষেপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন কোন দুই বিশ্বনেতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় উদ্দীপকের 'ডিআইবি' নামক সমিতির প্রতিষ্ঠা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে জাতিপুঞ্জ সংগঠনটির অকাল মৃত্যু ঘটে।

খ. জাতিসংঘের ১১১টি ধারা ও একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় বলা হয় যে, ভাবী প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে রক্ষা ও মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে জাতিসংঘ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বৃহত্তর স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে সামাজিক অগ্রগতি, উন্নততর জীবনযাত্রার মান, জাতিতে জাতিতে সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা জাতিসংঘের লক্ষ্য। সব জাতির সমান অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি স্বীকার করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও সহাবস্থান বৃদ্ধি করা জাতিসংঘের উদ্দেশ্য।

গ. আখতারুজ্জামান ও জহিরুদ্দিনের শান্তিমুখী পদক্ষেপ আমাদেরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
জাপানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ এবং হিটলারের সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাধারণ চরিত্রে পরিবর্তন সূচনা করে। এ সংকটময় পরিস্থিতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ভাবিয়ে তুলে। এছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা এবং জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা নতুন একটি কার্যকরী আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তাকে জোরালো করে। এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডি. রুজভেল্ট এক আলোচনা সভায় মিলিত হন। আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরীতে এ সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। যার মধ্যে প্রধান ছিল ভবিষ্যৎ বিশ্ব নিরাপত্তা। মূলত এ সম্মেলনের মাধ্যমে যে ঘোষণা দেওয়া হয় তা ইতিহাসে আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত। এটি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার পেছনে এ সনদ এক বিরাট মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। এর ওপর নির্ভর করেই পরবর্তীতে অন্যান্য সম্মেলনও ঘোষণা হয়, যা জাতিসংঘকে পূর্ণতা দেয়। উদ্দীপকের আখতারুজ্জামান ও জহিরুদ্দিনের পদক্ষেপও এর সাথে সংগতিপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের জেলাটির সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য। মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে এ কারণেই। এরূপ অবস্থা সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, ধর্মীয় ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। জনজীবনকে বিপর্যস্ত করার জন্য এ পরিস্থিতিই যথেষ্ট। অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব উপলব্ধি করতে পেরে প্রভাবশালী দু নেতা নিজেদের অস্তিত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা সত্যিই এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। যুদ্ধ বিপর্যস্ত পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এমনই এক উদ্যোগ ছিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা। সমালোচনা সত্ত্বেও জাতিসংঘ বিগত সাত দশকে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে যে অবদান রেখেছে তা প্রশংসার দাবিদার। বিশ্ব বড় বড় কয়েকটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসতে সমর্থ হয়েছে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, নারীর ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও শিল্প উন্নয়নে জাতিসংঘ যে অবদান রেখেছে তা বলাই বাহুল্য। উদ্দীপকের জেলাটির রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত 'ডিআইবি' নামক স্বেচ্ছাসেবী সমিতিটিও জেলার পরিসীমার মধ্যে জাতিসংঘের ন্যায় ভূমিকা পালন করতে পারে। ডিআইবি হয়তবা জাতিসংঘের মতো ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হওয়ার স্বপ্নও দেখতে পারে না, কিন্তু এর ক্ষেত্রের মধ্যে এটি সর্বাধিক অবদান রাখতে সক্ষম হতে পারে। আর এ সমিতিটি খুব সহজেই জেলার রাজনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষা করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পারে। এরূপ কাজে সমর্থ হলে সংস্থাটি একটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে এবং এর প্রতিষ্ঠার ঘটনাটিও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

৫. শুভনগর ইউনিয়নে সাতটি গ্রামের মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় মানবেতর জীবনযাপন করছে বহুদিন ধরে। এক গ্রামের মানুষ অন্য আর এক গ্রামের ওপর বলপূর্বক যে আধিপত্য বিস্তার করছে তা এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ি়য়েছে। এ অবস্থায় গ্রামের হালিম মেম্বার এরূপ অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে স্থায়ী শান্তি আনতে খুবই তৎপর কিন্তু সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না।
ক. উইনস্টন চার্চিল ও রুজভেল্ট কোন রণতরীতে গোপন বৈঠক করেছিল?
খ. আটলান্টিক সনদে ঘোষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর যুদ্ধের লক্ষ্য বুঝিয়ে লেখ।
গ. হালিম মেম্বারের তৎপরতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন আটলান্টা সনদের লক্ষ্য কীভাবে সমাধান এনে দিতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত সমাধান পন্থা শুভনগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের মাঝে ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উইনস্টন চার্চিল ও রুজভেন্ট 'অগাস্টা' ও 'প্রিন্স অব ওয়েলস' রণতরীতে গোপন বৈঠক করেছিল।

খ. আটলান্টিক সনদে ঘোষিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর যুদ্ধের লক্ষ্য হলো-
১. যুদ্ধমান গণতন্ত্র কোনো আগ্রাসন, কোনো দেশের ভূমি দখলের জন্য এ যুদ্ধ করছে না।
২. যুদ্ধরত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো প্রতিদেশের জনগণের ইচ্ছানুযায়ী সরকার গঠনের অধিকারকে স্বীকৃতি জানাচ্ছে।
৩. যে দেশগুলোকে বলপূর্বক অধিকার করা হয়েছে, সে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘোষণাকারীদের উদ্দেশ্য।
৪. এ যুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে শুধু মুক্তিলাভ নয়, যোগদানকারী দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন অন্যতম উদ্দেশ্য।

গ. শুভনগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের বাসিন্দাদের সমস্যা সমাধানে হালিম মেম্বার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকায় বিদ্যমান গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব-কলহ এবং এক গ্রামের ওপর অন্য গ্রামের আধিপত্য এখানকার প্রধান সমস্যা। প্রতিটি গ্রামের এবং এর বাসিন্দাদের স্বাধীন সত্তার যে অধিকার, তা রক্ষিত হচ্ছে না বলেই তাদের মধ্যে এরূপ সমস্যা প্রধান হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু হালিম মেম্বার সাহেব এর কোনো সমাধান খুজে পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে তার সহায়ক হতে পারে আটলান্টিক সনদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরীতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ১৯৪১ সালের এ বৈঠকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তিরক্ষায় কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয় যা আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত। এ সম্মেলনটিই ছিল জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ। আর জাতিসংঘের সফলতা আমাদের সবারই জানা আছে। তাই এ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে হালিম মেম্বার সাহেব এরূপ একটি সম্মেলন আহবান করতে পারেন। ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এতে ইউনিয়নের স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকরী একটি সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব হতে পারে।

ঘ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এ সময় জার্মানি, ইতালি ও জাপানের আগ্রাসী ভূমিকা এবং জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা সবাইকে এ বিষয়ে ভাবিয়ে তোলে। ১৯৪১ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ রণতরী প্রিস অব ওয়েলসে ব্রিটিশ ও মার্কিন নেতৃবৃন্দ এক বৈঠকে মিলিত হন, যা থেকেই উৎপত্তি হয় জাতিসংঘের। জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় এবং দেশসমূহের মধ্যকার সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। এ আদলে শুভনগর ইউনিয়নে যদি একটি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়, যা প্রতিটি গ্রামের অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়ক হবে, তবে তা একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পূর্বে যেসব দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করত সেসব দেশও এরপর পরস্পর সহযোগী দেশে পরিণত হয়েছে। যদি শুভনগর ইউনিয়নের গ্রামসমূহ এরূপ একটি শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সমর্থ হয় তবে তাদের মধ্যেও সৌহার্দ বিরাজ করবে বলে আশা করা যায়। পারস্পরিক সৌহার্দ এক ধরনের ঐক্যকে মজবুত করে। এরূপ ঐক্য তখনই আশা করা যায়, যখন গ্রামসমূহের মধ্যে সম্ভাব বিরাজ করবে। পারস্পরিক সংঘাত, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ও কলহ কেবল অনৈক্যকেই বাড়ায়। আর যদি তা দূর করা সম্ভব হয় তবে ঐক্য বৃদ্ধি পায়। শুভনগর ইউনিয়নের গ্রামবাসীর মধ্যে যখন হানাহানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তখনই কেবল ঐক্যের আশা করা যাবে।

৬. উসমান সাহেব একজন বিশিষ্ট নাগরিক। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সমাধান খুঁজতে তিনি বিখ্যাত তিনটি সম্মেলন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। এ সম্মেলন তিনটির প্রথমটি আটলান্টিক সম্মেলন, দ্বিতীয়টি ইয়ান্টা সম্মেলন এবং তৃতীয়টি পটাসডাম সম্মেলন।
ক. কত সালে চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে গোপন বৈঠক সংঘটিত হয়?
খ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের নেতারা কেন ইয়াল্টায় সমবেত হন?
গ. উসমান সাহেবের গবেষণা কীভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উসমান সাহেবের গবেষণার মাঝে নিহিত আছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৪১ সালের ৯ আগস্ট চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে গোপন বৈঠক সংঘটিত হয়।

খ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের পুনর্গঠনের জন্য নেতারা ইয়ান্টায় সমবেত হন। ১৯৪৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিন রাষ্ট্রের প্রধান স্ট্যালিন, চার্চিল ও রুজভেল্ট রাশিয়ার ক্রিমিয়া প্রদেশের ইয়াল্টা নগরীতে সমবেত হন। এ সম্মেলনটি যুদ্ধোত্তর পৃথিবী পুনর্গঠনের জন্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনে তিন রাষ্ট্রপ্রধানকে সহায়তার জন্য বিভিন্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা এসেছিলেন। ইয়াল্টার মতো এত জাঁকজমকপূর্ণ মিত্রপক্ষীয় সম্মেলন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আর দেখা যায়নি। মোটকথা, ইয়াল্টার সম্মেলন যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর পুনর্গঠনের ভাগ্য নিয়ন্তা বলে ইউরোপের নেতারা এ সম্মেলনে যোগ দেন।

গ. উসমান সাহেবের গবেষণা হলো জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা তিনটি বিখ্যাত সম্মেলন কীভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করতে পারে। আটলান্টিক সম্মেলন, ইয়াল্টা সম্মেলন এবং পটাসডাম সম্মেলন এ তিনটি সম্মেলন নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করতে তার গবেষণা যেভাবে সমাধান দিতে পারে তার মধ্যে প্রধান হলো-
১. আটলান্টিক সম্মেলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর উন্নয়ন ও পুনর্বাসন এবং ভবিষ্যৎ বিশ্বনিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এ নীতি অনুসরণ করে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। এর সাথে এ সম্মেলনের শিক্ষাকে অনুসরণ করে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়।
২. ইয়াল্টা সম্মেলনে বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষিত হতে পারে।
৩. পটাসডাম সম্মেলনে প্রধানত স্থির হয় যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানি ও অক্ষশক্তির সাথে কীরূপ ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে। একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় এটি প্রয়োজনীয় ছিল। ঠিক একইভাবে এ সম্মেলনের শিক্ষাকে অনুসরণ করে দেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়।
এভাবে তিনটি সম্মেলনের শিক্ষা অস্থিতিশীল পরিবেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।

ঘ. গবেষণা হলো কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য থেকে নতুন কিছু বের করে আনা। বিভিন্ন ধরনের গবেষণার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি বিভিন্ন হয়ে থাকে। উদ্দীপকের উসমান সাহেব যে গবেষণা করছেন তা এক ধরনের ঐতিহাসিক সামাজিক গবেষণা। এরূপ গবেষণা পরিচালনা করা হয় ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা থেকে বর্তমান সামাজিক সমস্যার। সমাধান করতে। উসমান সাহেবের গবেষণাটি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন বাস্তবতার নিরিখে কীভাবে শান্তিপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করে বর্তমানে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুটা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সংঘটিত কিন্তু ভুলের ফল। এছাড়াও জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাও ছিল এর অন্যতম কারণ। এ বাস্তবতায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে বেশকিছু গোপন ও প্রকাশ্য সম্মেলনে মিলিত হন। প্রথম দিককার এরূপ একটি সম্মেলন ছিল আটলান্টিক সম্মেলন বা সনদ। পর্যায়ক্রমিক এরূপ আরও দুটি সম্মেলন হলো ইয়াল্টা সম্মেলন ও পঢ়াসডাম সম্মেলন। এসব সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠনে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ছিল। বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বিরোধ নিরসন এবং ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং জাতিসংঘকে শক্তিশালী করা যায়, সেসব বিষয় এ সম্মেলনে গুরুত্ব পায়। এ বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলে বিশেবর যেকোনো অঞ্চলে কোনো না কোনো সমস্যার সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যাবে। গবেষণার মাধ্যমে তা সেসব সমস্যার সমাধানে কাজে লাগানো সম্ভব। এতে খুব সহজেই শান্তিপ্রতিষ্ঠা করা যাবে। উসমান সাহেবও এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশের চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে এ তিনটি সম্মেলনের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে তার গবেষণাকর্ম পরিচালনা করছেন। তার গবেষণার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৬ pdf download

৭. শালিখা উপজেলার নূর-উল চেয়ারম্যান নিজ এলাকার সকল ধর্মের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বেশকিছু কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। সৎ মানুষ হিসেবে সুখ্যাতি থাকায় পার্শ্ববর্তী বুনাগাতি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিবাদ মেটানোর জন্য বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও তার কাছে ছুটে আসে মীমাংসার আশায়।
ক. চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে সংঘটিত বৈঠক কী নামে পরিচিত?
খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. নূর-উল চেয়ারম্যান বুনাগাতি ইউনিয়নে যে কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তা জাতিসংঘের কোন ধরনের কার্যকলাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকলাপ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চার্চিল ও রুজভেল্টের মধ্যে সংঘটিত বৈঠক 'আটলান্টিক সনদ' নামে বিশ্বের ইতিহাসে পরিচিত।

খ. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল খুবই বিতর্কিত। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বশান্তি ও প্রতিরক্ষার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ কোনো সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণহত্যার সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জাতিসংঘ এ আবেদনে কোনো সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো ধরনের সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করেনি।

গ. উদ্দীপকের নূর-উল চেয়ারম্যান বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন সমস্যায় মীমাংসাকারী হিসেবেও তার ভূমিকা দেখা যায়। এসব কাজ সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলির সাথে যুক্ত। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজের সাথে এর মিল দেখা যায়। আবার জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতেও এরূপ পরিষদের কার্যাবলির সাথে বিরোধ মীমাংসার কার্যাবলি যুক্ত। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজের সাথে এর মিল দেখা যায়। আবার জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচিতেও এরূপ কার্যাবলি লক্ষ করা যায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলির সাথে বিরোধ মীমাংসার কার্যাবলি যুক্ত। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সারা পৃথিবীর মানুষের সামাজিক উন্নয়ন সাধন করা। এজন্য এটি শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বেকারত্ব লাঘবেও জাতিসংঘের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের আঞ্চলিক বিরোধ মীমাংসার জন্যও জাতিসংঘ কাজ করে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাসমূহ হলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, UNDP, UNFPA, UNHCR, UNIDO, FAO, UNESCO, UNEP নিরাপত্তা পরিষদ ইত্যাদি। নূর-উল চেয়ারম্যানের কার্যাবলিও জাতিসংঘের উপরিউক্ত কাজের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। জাতিসংঘ কাজ করে। সারা বিশ্বব্যাপী। কিন্তু নূর-উল সাহেব কাজ করেন তার এলাকার মধ্যে। পার্থক্য এতটুকুই।

ঘ. ক্ষুদা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, বেকারত্ব, হতাশা, সন্ত্রাস এবং যুদ্ধবিগ্রহ অশান্তি সমস্যাগুলো খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। যখন একজন ব্যক্তি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কাজ না পেয়ে বেকার থাকে, তখন সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এরূপ হতাশাগ্রস্ত যুবকশ্রোণ একসময় সন্ত্রাসী কার্যাবলির সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। এসব যুবকেরা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতেও কাজ করে। ফলে সমাজে অশান্তি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। সমাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট হয়। কিন্তু যদি এসব যুবকদের উৎপাদনমূলক কাজের সাথে যুক্ত করা সম্ভব হতো, তবে তা যেমন সমাজের মোট উৎপাদনকে বৃদ্ধি করত তেমনি উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করত। চেয়ারম্যান যে কাজ করছেন তা প্রত্যক্ষভাবে সমাজ উন্নয়নমূলক এবং পরোক্ষভাবে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কার্যাবলি হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নয়নে এরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। দেখা গেছে, যেখানে পর্যাপ্ত মজুরির বিনিময়ে উপযুক্ত সম্মানজনক কাজ পাওয়া সহজ, সেখানে সন্ত্রাস- অশান্তির বিস্তার সহজে হয় না। অন্যদিকে যেখানে বেকারত্ব বেশি সেখানে অশান্তিও বেশি। যেমন- সোমালিয়ার জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব-ই তাদেরকে অন্যায় পথে ঠেলে দিয়েছে। ফলে সেখানকার পরিবেশ অশান্তিতে পূর্ণ। তাই নূর-উল সাহেবের কার্যকলাপ সমাজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

৮. 'ক' ও 'খ' রাষ্ট্র দুটির সীমান্তবর্তী নদীর মোহনায় নতুন একটি দ্বীপ জেগে উঠলে উভয় দেশই এর মালিকানা দাবি করে। দ্বীপটির মালিকানার দ্বনে্দ্ব দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। তখন 'ক' দেশটি জাতিসংঘের মাধ্যমে এর সমাধান চাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
ক. জাতিসংঘ 'ঘোষণাপত্র' কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?
খ. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বিরাট ফাটলের কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. 'ক' দেশটি জাতিসংঘের কোন সংস্থার নিকট সমস্যাটি উপস্থাপন করবে? বর্ণনা কর।
ঘ. 'জাতিসংঘের উক্ত সংস্থাটির কাজ হলো আন্তর্জাতিক বিরোধের নিষ্পত্তি করা' -তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতিসংঘ 'ঘোষণাপত্র' ১৯৪২ সালে স্বাক্ষরিত হয়।

খ. স্ট্যালিন এমন কতকগুলো কাজ করেন যা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। ১৯৪৫ সালে ইয়ান্টা চুক্তির সময়কাল হতে জুলাই মাস পর্যন্ত ফাটল সৃষ্টি করে। রাশিয়ার হস্তক্ষেপে পোল্যান্ডে অ-কমিউনিস্ট নেতাদের বন্দী বা অন্তরীণ করা হয়। রুশ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে রুমানিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। বুলগেরিয়ায়ও কমিউনিস্ট শাসন স্থাপিত হয়। চেকোস্লাভাকিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো কমিউনিস্টরা দখল করে। তাছাড়া পূর্ব জার্মানি ও পূর্ব অস্ট্রিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন গড়ে ওঠে। এ কারণে পূর্ব অর্থাৎ রাশিয়া ও পশ্চিম অর্থাৎ আমেরিকার মধ্যে বিরাট ফাটল দেখা দেয়।

গ. 'ক' দেশটি তার সমস্যা জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন 'আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে' উপস্থাপন করবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে মানুষ বিশ্বশান্তি রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে, যা থেকেই জন্ম হয় জাতিসংঘের। জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রায় ৭ দশক থেকে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এবং কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য জাতিসংঘের ৬টি মূল অঙ্গসংস্থা এবং অনেকগুলো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত হলো জাতিসংঘের ৬টি মূল সংস্থার একটি যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে কাজ করে। নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে এর সদর দফতর অবস্থিত। উদ্দীপকের 'ক' ও 'খ' দেশ দুটি তাদের বিরোধের মীমাংসার জন্য এ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে 'ক' দেশটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তার অভিযোগটি উপস্থাপন করবে।

ঘ. এখানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিরোধের নিষ্পত্তি করার জন্য। যেকোনো দুটি দেশের মধ্যকার সমস্যা বা বিরোধ নিষ্পত্তি করা এর কাজ। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কারও স্বার্থহানি ঘটলে কিংবা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিচার করাও এর কাজ। নেদারল্যান্ডের হেগ ভিত্তিক এ সংস্থাটি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি হতে পারেত এরূপ বহু সমস্যার সমাধান করে ইতোমধ্যে বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ আদালতের দেওয়া রায় কার্যকর করার দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের। নিরাপত্তা পরিষদ প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে এ রায় কার্যকর করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যকার বিরোধ নিরসনে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা সবার নিকট প্রশংসিত হয়েছে। এর দেওয়া রায়ের ফলে বেশকিছু সমস্যার সমাধান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। যা বিশবকে আসনণ যুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছে।

৯. আতাহার হোসেন নিজ পরিবারে স্ত্রী ও কন্যাদ্বয়ের প্রাপ্ত অধিকার সংরক্ষণ করে চলেন সর্বদা। তিনি সন্তানদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখেন। আর তাই বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করেছেন বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের জন্য। তার পরিবারে যে পারিবারিক লাইব্রেরিটি রয়েছে তা অনেক অতিথিকেই অবাক করে দেয়। তাছাড়া সন্তানদের উপযুক্ত বয়সে প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান তার সচেতনতার পরিচয় বহন করে।
ক. কোন দেশগুলো সর্বপ্রথম 'জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে' স্বাক্ষর করে?
খ. 'পটাসডাম সম্মেলনে বাহ্যিক মতৈক্যের আড়ালে লুকিয়েছিল ব্রিটেন মার্কিন জোট বনাম রাশিয়ার গভীর মতানৈক্য' ফ্লেমিং-এর এ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. আতাহার হোসেনের কার্যকলাপ জাতিসংঘের কোন কাজগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি তার কার্যাবলির মাঝে পরিতৃপ্তির আভাস পাও? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চীন, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে।

খ. পটাসডাম সম্মেলনে তিন পরাশক্তি তথা ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার স্বার্থ ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয়েছিল। সম্মেলনে পরাশক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থরক্ষার্থে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। বার্লিনকে চার ভাগে ভাগ করে অধিকার করা হয়। জার্মানিতে ভবিষ্যতে কোনো সমরাস্ত্র নির্মাণ করা নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মানি থেকে নাৎসি মতবাদ, নাৎসি সংস্কৃতি, জাতিগত অহমিকাবোধ নাৎসিবাদী ইতিহাস নির্মূল করা হয়। মূলত পটাসডাম সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও রাশিয়ার স্বার্থ ও গভীর মতানৈক্য লুকিয়ে ছিল।

গ. আতাহার সাহেব তার পরিবার ও অতিথিদের জন্য যে কাজগুলো করেন তা জাতিসংঘের কল্যাণমূলক কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলোর। আবার এসব চাহিদার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন স্তরের উপাদান। যেমন- কেউ বিলাসবহুল জীবনযাপন করে, কেউবা সাধারণ। কিন্তু এর মধ্যে সাধারণ একটি বিষয় হলো নিরাপত্তার বিষয়টি। যেমন- খাবার পানির বিশুদ্ধতা, রোগপ্রতিরোধে মৌলিক টিকা ইত্যাদি। এসব বিষয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব সব সরকারের জন্যই আবশ্যক। কিন্তু পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের পক্ষেই তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পোলিওসহ সংক্রামকরোগের টিকা প্রদান, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করে। জাতিসংঘের UNESCO, FAO, WHO ইত্যাদি সংস্থাসমূহ এসব কাজের সাথে যুক্ত। জাতিসংঘ জনগণের মৌলিক এ চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ হিসেবে এসব করে থাকে। আতাহার সাহেবও তার দায়িত্ব হিসেবে আবশ্যক কল্যাণমূলক কাজ মনে করে এসব পালন করছেন।

ঘ. মানুষের জন্য কিছু কাজ আবশ্যক, কিছু নৈতিক দায়িত্ব, কিছু কাজ মানসিক পরিতৃপ্তিদায়ক আবার কতিপয় কাজ মানসিক পীড়াদায়ক। সাধারণত মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং আইনের দ্বারা অর্পিত দায়িত্বগুলো আবশ্যক কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়। যেসব কাজ করা নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু পালন না করলে শাস্তি পেতে হয় না, তা নৈতিক দায়িত্ব। আবার যেসব কাজ সমৃদ্ধি ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য সম্পাদন করা হয় তা মানসিক শান্তিদায়ক বলে গণ্য হয়। যেসব কাজ নৈতিক মানদ-- সমর্থিত নয়, তা অনৈতিক এবং আইনের দ্বারা নিষিদ্ধ কাজগুলো অন্যায় বলে বিবেচিত হয়।
আতাহার হোসেন যে কাজগুলো সম্পন্ন করেন এর মধ্যে স্ত্রী-কন্যাদের অধিকার সংরক্ষণ করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা তার আবশ্যক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও পারিবারিক লাইব্রেরি অতিথিদের ব্যবহার করতে দেওয়া তার উদারতা প্রকাশ করে। সন্তানদেরকে সময়মতো টিকা দেওয়া তার দায়িত্ব। এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন বলে মনে হয়। দায়িত্ব পালনের ফলে যখন ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তখন এক ধরনের মানসিক তৃপ্তি অনুভব করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আতাহার হোসেন যখন তার পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন তখন তারও এরূপ পরিতৃপ্তি অনুভূত হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এর প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায় তার পারিবারিক লাইব্রেরির সংগ্রহের মধ্যে।

১০. বহুদিন ধরে গোরিপুর ও দোহার ইউনিয়নের মধ্যে বিরোধ লেগেই আছে। বিরোধ নিরসনে দু চেয়ারম্যান শান্তিচুক্তি করলেও তাতে অবস্থার তেমন উন্নতি হয় নি। সবশেষে তারা এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের দ্বারস্থ হন। জেলা পরিষদ তাদের এ বিরোধের একটা সুন্দর মীমাংসা দান করেন।
ক. জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
খ. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের জেলা পরিষদের ভূমিকার সাথে জাতিসংঘের কোন শাখার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় উক্ত শাখার ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের সদর দপ্তর হল্যান্ডের হেগ নগরীতে অবস্থিত।

খ. বিংশ শতাব্দীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম মানবজাতিকে ভাবিয়ে তুলেছিল এবং তারা শান্তির সন্ধানে অধীর হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর 'লীগ অব নেশনস' তৈরি হলেও এর ব্যর্থতায় তৎকালীন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের তাগিদ অনুভব করেন। অবশেষে বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ বা United Nation.

গ. উদ্দীপকে গৌরিপুর ও দোহার ইউনিয়নের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ। পরিস্থিতির চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বিরোধ নিরসনে দু চেয়ারম্যান শান্তিচুক্তি করলে নানা কারণে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। অবশেষে তারা এ সমস্যা সমাধানে জেলা পরিষদের দ্বারস্থ হন। জেলা পরিষ বিচারের মাধ্যমে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করে একটি সমঝোতা করেন। এসব, বিষয় বিবেচনা করলে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের সাথে উক্ত জেলা পরিষদের ভূমিকার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। একাধিক রাষ্ট্রের মাঝে কোনো বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ আছে। আদালত আইনগত পরামর্শ প্রদান করে সমস্যার নিষ্পত্তিতে অবদান রাখতে পারে। তবে আদালতের রায় নিয়ে জোরজবরদস্তি করার সুযোগ নেই। কোনো বিষয় সম্পর্কে আইনগত মতামত চাওয়া হলে আন্তর্জাতিক আদালত তা দিতে পারে। এ আদালতের কার্যালয় নেদারল্যান্ডের হেগ নগরীতে অবস্থিত। এ আদালতের বিচারকের সংখ্যা ১৫ জন।

ঘ. বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর বহু আলোচনার মাধ্যমে জাতিসংঘের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জন্মলগ্ন থেকে এটি তার ৬টি শাখার মাধ্যমে বিশ্বের বিরোধসমূহের নিষ্পত্তি সাধন করে আসছে। এ ছয়টি শাখার মধ্যে একটি হলো আন্তর্জাতিক আদালত। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ আদালত গুরুত্বপূর্ণ প্রশি কার্যাবলি পালন করে থাকে যেমন-
১. বিরোধ মীমাংসা সংক্রান্ত : আন্তর্জাতিক আদালত জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত বিরোধের মীমাংসা করে।
২. চুক্তি বিশ্লেষণ : জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সম্পাদিত চুক্তির বিরোধ দেখা দিলে এবং তা আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপিত হলে আন্তর্জাতিক আদালত সে চুক্তি যথাযথভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্ত বিরোধ মীমাংসা করে।
৩. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : আন্তর্জাতিক আইনের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমর্ত্মর্জাতিক আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
৪. রায়সংক্রান্ত : আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাস্তবে কার্যকরী হয়ে থাকে।
৫. পরামর্শ সংক্রান্ত কোনো কোনো সময় আন্তর্জাতিক আদালত সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদকে প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে।
আন্তর্জাতিক আদালত জাতিসংঘের বিচার বিভাগের ন্যায় কার্য সম্পাদন করে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক আদালতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post