HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
পঞ্চম অধ্যায় : হিটলার ও মুসোলিনীর উত্থান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় জাফর আহম্মেদসহ দেশের সবাই রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। আরও অনেকের মতো জাফর সাহেব নিজেও চাকরি না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত ছিলেন। তবে তিনি অলস সময় না কাটিয়ে বেকার যুবকদের নিয়ে নতুন আদর্শকে পুঁজি করে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। কিন্তু তার দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সামরিক সরকার ও অন্যান্য বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার নিচে চাপা পড়ে যায়।
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে কী ধরনের অবস্থা বিরাজ করছিল?
খ. হিটলারের মানবিক বৈশিষ্ট্য বুঝিয়ে লেখ।
গ. জাফর সাহেবের রাজনৈতিক দলটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করা আবশ্যক ছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর জাফর সাহেবের রাজনৈতিক দলটির অগ্রযাত্রার অনুকূল পরিবেশ দেশে বিরাজমান ছিল? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

খ. হিটলারের মধ্যে যেসব মানবিক বৈশিষ্ট্য প্রস্ফুটিত হয়েছিল তা হলো-
১. সাধারণ মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অক্ষমতা,
২. সুপ্রতিষ্ঠিত বুর্জোয়া অজার্মান ও ইহুদিদের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণা,
৩. আকস্মিক ক্রোধের বিস্ফোরণ,
৪. কল্পনার জগতে বাস করার প্রবণতা।

গ. রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জনমতের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ হলো জনসমর্থন আদায় করা এবং তাকে সংহত করা। রাজনৈতিক দলকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও প্রথমে দরকার একটি আদর্শ স্থির করা। এ আদর্শ প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে দলের জনসমর্থন পাওয়া যেতে পারে, যা দলকে শক্তিশালী করবে। জাফর সাহেব যে রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাতে ছিল অধিকাংশ বেকার যুবক। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, যেখানে অধিকাংশ মানুষ বেকার, কর্মহীন, সেখানে যদি এ সমস্যার সমাধানের পথ ও উপায়কে প্রাধান্য দিয়ে কোনো দল সংগঠিত হয় তবে খুব সহজেই তা জনপ্রিয়তা পেতে পারে। সাধারণ রাজনৈতিক দল ও সামরিক শাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মানুষ, সহজেই এরূপ দলকে সমর্থন করত, যদি তারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারত। সাধারণ মানুষের আবেগ ও চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে, সেই আলোকে মূলনীতি স্থির করে প্রচার প্রচারণা চালানো হলে অবশ্যই দলটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আসতে পারত, যেমনটি সম্ভব হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানি হিটলার ও তাঁর নাৎসি দলের পক্ষে।

ঘ. উদ্দীপকের জাফর সাহেব যে সময় দলটি গঠন করেছিলেন সেসময় এরূপ একটি দলের অগ্রযাত্রার জন্য সবদিক থেকেই অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছিল দেশটিতে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আবির্ভাব হয় নিজেদের আদর্শের আলোকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্য নিয়ে। জনসমর্থন এক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। উদ্দীপকের দেশটিতে এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। দেশের সাধারণ জনগণ সরকারের আচরণে অতিষ্ঠ। বেকার যুবকেরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছে না। চারদিকে মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার ভাব। সামরিক সরকার দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারছে না। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোও কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এরূপ প্রেক্ষাপট নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কেননা সবাই যখন সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে, তখন জনগণ সমাধান বের করার মতো উপযুক্ত নেতা ও নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে। যদি কোনো রাজনৈতিক দল এরূপ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিতে পারে, তবে হতাশাগ্রস্ত জনগণ খুব সহজেই তাদের ওপর ভরসা করে। যেমনটি করেছিল ১৯২০ সালের দিকে হিটলারের রাজনৈতিক দলটি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে জার্মানির ওপর যখন অপমানজনক সন্ধি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, সেই অবস্থাতে বিদ্যমান দল ও নেতার প্রতি আস্থাহীন হয়েই জনগণ অন্ধভাবে হিটলারকে সমর্থন করেছিল। ফলে তার দলের জনপ্রিয়তা পৌঁছেছিল সবার শীর্ষে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত পরিবেশ জাফর সাহেবের রাজনৈতিক দলটির অগ্রযাত্রার অনুকূলেই ছিল, যদিও তারা তা কাজে লাগাতে পারেনি।

২. সরিষাবাড়ি গ্রামের ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। মনির হোসেনের হৃদয়কাড়া ভাষণ শু সরিষাবাড়ির অধিবাসীদেরকে অন্যান্য গ্রামবাসীদের জন্য আদর্শ হিসেবে মন্তব্য করলে তার দলের জনপ্রিয়তা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং নির্বাচনে জয়লাভ সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে সৃষ্ট অরাজকতার হাত থেকে ইতালিকে কে উদ্ধার করেছিল?
খ. মপার বলতে কী বোঝ?
গ. মনির সাহেবের উত্থাপনের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব জার্মানির কোন দলের উত্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর জনপ্রিয়তা অর্জনে মনির হোসেনের সম্মোহনী ভাষণের মতো এডলফ হিটলারের ভাষণ যথেষ্ট ছিল? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে সৃষ্ট অরাজকতার হাত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্য থেকে আবির্ভূত এক রাজনৈতিক শ্রেণি ইতালিকে উদ্ধার করেছিল।

থ. 'স্ট্রর্মস্ট্রপার'-কে সংক্ষেপ বলা হয় এস. এস। র‍্যান্ডমের নেতৃতেব যে বাহিনী কমিউনিস্টদের হাত থেকে নাৎসি দলের সভাগুলোকে রক্ষা করত ইতিহাসে তা স্ট্রমট্রপার নামে খ্যাত। অনেক সময় এরা অন্যান্য দলের ওপর হামলা করত এ বাহিনী 'বাদামি' রঙের পোশাক পরত বলে এদের ব্রাউন শার্টও বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের মনির সাহেবের জনপ্রিয়তা ও উত্থানের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব জার্মানির হিটলারের রাজনৈতিক দলের উত্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ইউপি নির্বাচনের টানটান উত্তেজনাকর মুহূর্তে মনির সাহেব নির্বাচনি ময়দানে আগমন করেন তার হৃদয়কাড়া ভাষণ ও বক্তৃতা নিয়ে। এ ভাষণে তিনি তার ইউনিয়নের জনগণকে শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ বলে প্রচার করতে থাকেন। অধিকাংশ মানুষ আত্মপ্রশংসা পেতে চায়। এরূপ আত্মপ্রশংসায় সরিষাবাড়ি ইউনিয়নের জনগণও আত্মতুষ্টি লাভ করে। মনির সাহেবের সম্মোহনী ক্ষমতা জনগণকে তার পক্ষে ভোট দিতে প্ররোচিত করে। ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ব সময়ে জার্মানির জনগণের মাঝে হিটলারের বাগ্মিতা প্রভাব ফেলেছিল। হিটলার প্রচার করতে থাকে, জার্মানরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে অপমান করা হয়েছে। এরূপ সংকটময় পরিস্থিতিতে হিটলার ও তাঁর দল নাৎসি বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে।

ঘ. মনির সাহেবের সম্মোহনী ভাষণ স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে তার জনপ্রিয়তাকে যথেষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণের প্রশংসাসূচক বক্তব্য এবং তার বাগ্মিতা এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব সময়ে জার্মানির সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছিল হিটলারের নাৎসি পার্টি। অথচ এ দল যার জন্য এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল সেই হিটলার যে খুব বেশি গুণাবলিসম্পন্ন ছিল তা নয়। পড়াশুনায় মাধ্যমিকের গন্ডি টপকাতে না পাড়া একজন ব্যক্তি, যে কিনা জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়াত বিভিন্ন স্থানে এবং হতাশাও অবসাদগ্রস্ত ছিল দীর্ঘ সময়। সেই হিটলার বহুধাবিভক্ত জার্মানকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাঁর অন্যান্য যোগ্যতা ও গুণাবলি কম থাকলেও এক ধরনের সম্মোহনী ক্ষমতা ছিল যা প্রকাশ পেত তাঁর ভাষণ ও নেতৃত্বে। জার্মানদের অন্য সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ জাতি বলে প্রচার করে তিনি তাঁর অবস্থান এবং জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে জার্মানির যে সক্ষমতা তৈরি হয়, তা ছিল হিটলারের সম্মোহনী ভাষণের ফসল। তার ভাষণের সম্মোহনী শক্তিই তাঁকে এ আসনে আসীন করেছিল। এছাড়াও হিটলারের সুযোগ্য নেতৃত্ব, সময়োপযোগী আদর্শ প্রচার এবং সুশৃঙ্খল জীবন যাপন এবং কতক যোগ্য সহচর তাকে জনপ্রিয় হতে সাহায্য করেছিল। আর উদ্দীপকে মনির হোসেনের ক্ষেত্রে তার সম্মোহনী ভাষণের শক্তি ছাড়া অন্য কিছু আমাদের চোখে পড়ে না। তাই তার জনপ্রিয়তার জন্য আমরা এ ক্ষমতাকেই মুখ্য বলে মেনে নিতে পারি।

৩. পারিবারিকভাবে সোলায়মান হোসেন রাজনৈতিক আদর্শে বড় হয়েছেন। তার বাবা ছিলেন একজন সংসদ সদস্য। বাবার রাজনৈতিক আদর্শ এবং সুনাম সোলায়মান হোসেনকে উদ্বুদ্ধ করেছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু এলাকার মানুষদের সাথে সম্পর্কগত দূরত্ব ও রাজনৈতিক প্রতিভার অভাব থাকায় তিনি অনেক চেষ্টার পরও জনগণের প্রত্যাশিত নেতা হতে পারলেন না।
ক. উনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলের নেতার নাম কী?
খ. নাৎসিবাদ বলতে কী বোঝ?
গ. সোলায়মান হোসেনের সঙ্গে জার্মানির নাৎসি দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের পার্থক্য কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত বৈসাদৃশ্য সোলায়মান হোসেনের জন্য ক্ষমতা দখলের পথে অন্তরায়? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ঊনিশ শতকের শেষদিকে ইতালিতে গঠিত রাজনৈতিক দলের নেতার নাম 'বেনিতো মুসোলিনী'।

খ. 'নাৎসিবাদ' বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। বিংশ শতাব্দীতে জার্মানিতে যে 'নাৎসিবাদের' জন্ম হয় তা হিটলার কিংবা নাৎসিবাদের মৌলিক কোনো মতবাদ নয়, পুরনো কিছু মতবাদের বিরোধিতা ও অন্য কতকগুলো মতের সমর্থনকেই নাৎসিবাদের মূল সঞ্চালক শক্তিরূপে গণ্য করা হয়। নাৎসিবাদ যেসব মতবাদের বিরোধী ছিল, সেগুলো হলো উদারতাবাদ, যুক্তিবাদ ও মার্কসবাদ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জার্মান আর অস্ট্রিয়ায় এক ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল যার লক্ষ্য ছিল একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যার ভিত্তি হবে আর্যরক্ত, ভাষা হবে জার্মান এবং যা হবে সকল ধর্মীয় বিশ্বাসমুক্ত।

গ. উদ্দীপকের সোলায়মান সাহেবের সাথে জার্মানির নাৎসি দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এডলফ হিটলারের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বৈপরীত্য দেখা যায়। এর মধ্যে প্রধানগুলো হলো-
১. সোলায়মান সাহেব বড় হয়েছেন প্রাচুর্যের মধ্যে, যেখানে সাংসদ বাবার সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। আর হিটলারের জন্ম সাধারণ এক ঘরে, যেখানে অভাব ও কষ্টই ছিল নিত্যসঙ্গী।
২. সোলায়মান বড় হয়েছেন রাজনৈতিক আদর্শের এক পরিবেশে, যেখানে হিটলারের এরূপ পরিবেশ ছিল না।
৩. সোলায়মান সাহেবের পারিবারিক ঐতিহ্য তার ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে আড়াল করে রাজনীতিবিদ হতে সাহায্য করেনি। অপরদিকে হিটলারের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও যোগ্যতার সামনে পারিবারিক ঐতিহ্য না থাকা কোনো বাধা হতে পারেনি।
৪. হিটলার একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। সোলায়মান সাহেব। এরূপ জনপ্রিয় হতে পারেননি।
৫. সোলায়মান সাহেব রাজনৈতিক নেতা হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও সফল হননি। আর হিটলার নেতা হতে না চাইলেও সময়ের প্রেক্ষাপটে একজন বড় নেতায় পরিণত হন।

ঘ. উদ্দীপকের সোলায়মান সাহেব এবং ইতিহাসের হিটলারের মধ্যে। আমরা বিরাট বৈপরীত্য লক্ষ করি। এ বৈপরীত্যের দরুন একজন সাধারণ পরিবার থেকে ওঠে এসে অসাধারণ নেতায় পরিণত হন। অপরজন রাজনৈতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন পরিবারের সদস্য হয়েও নেতা হতে পারেননি। এক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্যসমূহের কয়েকটি সোলায়মান সাহেবের ক্ষমতা দখলের পথে প্রধান অন্তরায়। তবে সবগুলো বৈসাদৃশ্য অন্তরায় নয়।
সফল নেতৃত্বের জন্য জনসম্পৃক্ততা হলো প্রধান গুণ। একজন নেতা হন জনগণের নেতা। জনগণের জন্য নেতা। জনগণের দ্বারা নেতা। কিন্তু তিনি যদি জনগণ থেকে দূরে থাকেন, জনগণের সাথে না মিশতে পারেন তবে কখনই তার পক্ষে সফল নেতা হওয়া সম্ভব নয়। সোলায়মান সাহেব রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, যা হিটলার ছিল না। তার এ বৈসাদৃশ্য নেতা হওয়ার পথে কোনো বাধা নয়। বরং এটি তাকে আরও বড় নেতা হতে সহায়তা করত। তার নেতা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা হলো এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্কগত দূরত্ব এবং রাজনৈতিক প্রতিভার অভাব। এ দুটি বৈসাদৃশ্য হিটলারের সাথে নেতা হওয়ার পথে তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে। তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। জনসাধারণের সাথে সম্পর্কগত দূরত্বের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে জনগণের নেতা হতে পারেননি। এ অযোগ্যতা তার ক্ষমতা দখলের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে।

৪. শরিফ সাহেব সাংসদ হওয়ার পর বছরের বেশিরভাগ সময় রাজধানীতেই অতিবাহিত করেন। আর নিজ এলাকায় যাওয়ার পূর্বে সেখানকার দীর্ঘদিনের ভাঙা রাস্তা মেরামত ও রাস্তার পাশের গাছগুলোতে রং করান। এমনকি রাস্তার দু পাশ দিয়ে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে লোকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেন। এলাকার কেউ তার বিরোধিতা করলে তাকে চরম শাস্তি প্রদান করতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করেন না। তিনি মনে করেন তার এসব আচরণের নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও তা রাজনৈতিক চর্চার একটি অংশ।
ক. বেনিতো মুসোলিনী প্রবর্তিত মতবাদের নাম কী?
খ. নাৎসিদলের স্লোগানগুলো উল্লেখ কর।
গ. শরিফ সাহেবের রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রে জার্মানির হিটলারের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শরিফ সাহেবের রাজনৈতিক চর্চা একটি অশুভ ধারার রাজনীতি- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বেনিতো মুসোলিনী প্রবর্তিত মতবাদের নাম হলো 'ফ্যাসিজম'।

খ. নাৎসি দল নিজেদের প্রচার-প্রচারণায় বেশকিছু স্লোগান ব্যবহার করত। এসব স্লোগানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
ক. উদ্দীপ্ত জার্মানি ইহুদিগণ আমাদের দুর্ভাগ্য,
খ. ক্যাথলিক নিপাত যাক। ফুয়েরার দীর্ঘজীবী হন,
গ. আজ জার্মানি, আগামীকাল বিশ্ব ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের শরিফ সাহেবের মধ্যে হিটলারের 'অনৈতিকতা এবং সীমাহীন নির্মমতা'র রাজনৈতিক চর্চা দেখতে পাওয়া যায়। হিটলার বিশ্বাস করতেন যে হিংসা ও সন্ত্রাস এক ধরনের মোহ সৃষ্টি করে এবং পশুশক্তির নগ্ন ব্যবহার যতটা বিতৃষ্ণা জাগায় তার চেয়ে বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। নাৎসি পার্টির জন্মের পর থেকে তিনি মনে করতেন যে, এক ডজন ইশতেহারের চেয়ে রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে একটি রক্তাক্ত দাঙ্গার মূল্য অনেক বেশি। দিন দিন তার এ বিশ্বাস স্থায়ীরূপ নেয় যে, জগৎকে সচেতন করার অন্যতম কার্যকর পন্থা হলো রাজনৈতিক বিরোধীদের জেনেশুনে হত্যা করা। হিটলারের এ নির্মমতা ও অনৈতিক রাজনৈতিক কার্যাবলি আমরা লক্ষ করি শরিফ সাহেবের মাঝে। কেননা তিনি তার মূল দায়িত্ব জনসেবা করার পরিবর্তে সাধারণ মানুষকে যেভাবে জিম্মি করেছেন তা শুধু অনৈতিক-ই নয়, অন্যায়ও বটে। আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে তিনি হিটলারের মতোই রক্তাক্ত দমননীতিকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

ঘ. শরিফ সাহেব যে ধারার রাজনীতি করছেন, তা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের নিকট কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। গণতন্ত্রে একজন জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব হলো জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের নিকট তাদের দাবি আদায়ে কাজ করা। সরকার ও জনগণের সেতুবন্ধর হিসেবে দায়িত্ব পালন করাই হলো তার কাজ। কিন্তু তিনি তা না করে ভীতি ও নির্মমতার রাজত্ব কায়েম করেছেন। নিজ এলাকার কোনো খোঁজখবর রাখেন না। অথচ যখন এলাকায় যান তখন সাধারণ জনগণকে বাধ্য করেন তাকে সম্মান জানাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে। গণতন্ত্রে প্রতিপক্ষকে সম্মান করা হচ্ছে আদর্শ। অথচ তিনি তার প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে দমন করেন। তিনি যে ধারা চালু করেছেন তা হিটলারীয় আদর্শ। হিটলারের কায়দায় তিনি যে ব্যবস্থার সূচনা করেছেন তা নিঃসন্দেহে একটি অশুভ ধারা। এ ধারায় শরিফের মতো নরপিশাচ রাজনৈতিক নেতারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে থাকে, যার পরিণতি হয় ন্যক্কারজনক। এরূপ অশুভ শক্তির উত্থান জনগণের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে, জনগণের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করে। এর পরিণতিতে তাদেরকেও দিতে হয় চরম মূল্য, যেরূপ মূল্য দিতে হয়েছিল হিটলারকে তার নিজের পিস্তলের একটি গুলি নিজের মাথায় খরচ করে।

৫. নজরুল স্যার বেশ সুনামের সাথেই দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা জীবন অতিবাহিত করলেন। অথচ আজ তিনি সবার নিকট রীতিমত এক মহা আতঙ্কের মানুষ। কারণ বর্তমানে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। সমাজের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রুখতে তিনি নিজের আদর্শ অনুযায়ী সংস্কার এনেছেন সশস্ত্র এ দলটিতে। তার আশা একদিন তার আদর্শে দেশ শাসিত হবে।
ক. জার্মানির ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে কে বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব?
খ. ভার্সাই সন্ধি বলতে কী বোঝ?
গ. নজরুল স্যারের নেতা হিসেবে উত্থান আমাদেরকে কোন ফ্যাসিস্ট নেতার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নজরুল স্যারের ব্যক্তিগত আদর্শ দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে যথেষ্ট? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জার্মানির ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে বহুল আলোচিত। ব্যক্তিত্ব হলো নাৎসি দলের নেতা ও জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার।

খ. ভার্সাই সন্ধি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অন্যতম প্রধান সন্ধি। ১৯১৮ সালের ২৩ অক্টোবর ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য অভিযুক্ত করে জার্মানিকে জরিমানা করা হয়েছিল। তাই বিশ্ব ইতিহাসে এ সন্ধি ভার্সাই সন্ধি হিসেবে খ্যাত। এ সন্ধির কারণে জার্মানি হারিয়েছিল কৃষিযোগ্য জমির শতকরা সাড়ে পনের ভাগ, উৎপাদন শিল্পের শতকরা দশ ভাগ, মজুদ কয়লার দুই-পঞ্চমাংশ, খনিজ লোহার দু-তৃতীয়াংশ। এছাড়া এ সন্ধির কারণে জার্মানির নৌবাহিনী, স্থলবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উল্লেখযোগ্য অংশ হ্রাস হয়েছিল। মোটকথা, ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানি সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল।

গ. নজরুল স্যারের নেতা হিসেবে উত্থান আমাদেরকে ইতালির ফ্যাসিস্টবাদী শাসক বেনিতো মুসোলিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৮৮৩ সালে জন্মগ্রহণকারী মুসোলিনী প্রথম জীবনে শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন। এরপর সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সমাজতন্ত্রী দলের সাথে যুক্ত থাকায় সেখান থেকে বহিষ্কৃত হয়ে দেশে ফিরে পত্রিকার সম্পাদনা করতে থাকেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পত্রিকা থেকে বহিষ্কৃত হয়ে নিজেই একটি পত্রিকা চালু করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধফেরত সৈন্য ও বেকার যুবকদের নিয়ে তিনি ফ্যাসিবাদী আধা সামরিক একটি দল গঠন করেন যা পরবর্তীকালে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এ দলের আদর্শ ছিল "রাষ্ট্রই সকল শক্তির আধার।" দলের সদস্যরা বিশ্বাস করত যে, মুসোলিনী সর্বদা সঠিক কাজ করেন। এরূপ মনোভাবের কারণে তিনি চরম একনায়ক শাসকে পরিণত হন, যা তাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উৎসাহিত করে তোলে। বিশ্ব ইতিহাসে মুসোলিনী একটি কলঙ্কিত নাম। নজরুল স্যারও শিক্ষকতার মতো পেশা ছেড়ে মুসোলিনীর মতো চরিত্রে নাম লিখিয়েছেন।

ঘ. নজরুল স্যারের ব্যক্তিগত আদর্শ দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথেষ্ট হবে কিনা, তা নির্ভর করবে দেশের মানুষ কী চায় তার ওপর। দেশের মানুষ যদি তাকে সমর্থন করে, তবেই কেবল তিনি সফল হতে পারেন। কিন্তু সে সম্ভাবনা খুবই কম।
নজরুল স্যার শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশা ছেড়ে সমাজের অন্যায় সন্ত্রাস দূর করতে চরমপন্থা বেছে নিয়েছেন। তিনি চরমপন্থি দলকে নিজ আদর্শের আলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। এ একই কাজ করেছিলেন ইতালির ফ্যাসিবাদী নেতা বেনিতো মুসোলিনী। মুসোলিনীর লক্ষ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত সৈন্যদেরকে সংহত করে সমাজতন্ত্রীদেরকে প্রতিহত করা। সে সময়কার বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তার গৃহীত নীতি ও আদর্শ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সর্বজনীন ভোটাধিকার, নীতিবাক্য, ইতালির শ্রেষ্ঠত্ব ইত্যাদি কথা বলে সে খুব সহজেই জনগণকে প্রলুব্ধ করতে সমর্থ্য হয়। তার ক্ষমতা দখল এজন্য সমর্থন পায়। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে এটি ইতালির জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি।
একইভাবে নজরুল স্যার সমাজ সংস্কারে যে পদ্ধতি ও কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তা আধুনিক সমাজে সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে তিনি জনসমর্থন ছাড়াই যদি তার আদর্শকে দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে তাকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। চরমপন্থার চিরাচরিত সংহতির পথে তাকে আগাতে হবে। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এটি কতটা গ্রহণযোগ্য ও কার্যকরী উপায় হতে পারে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি মনে করি, দেশের বৃহত্তর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে এটি কখনই সমর্থ হবে না।

৬. রাভেন্না পেপার মিলে দেলোয়ারের নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে একদিকে মালিকের লোকসান হয় এবং অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন বকেয়া হয়। এতে আন্দোলন আরও চাঙ্গা হয়। এমন পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর নামক এক শ্রমিক বেশকিছু শ্রমিককে উৎপাদন শুরু করার গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হয় এবং সংঘবদ্ধভাবে দেলোয়ারের লোকদের ওপর শক্তিপ্রয়োগ করে তাদেরকে কাজে ফিরতে বাধ্য করে।
ক. জার্মানি জাতির চরম দুর্দশা অবসানের জন্য কে রাজনৈতিক দল গঠন করে?
খ. ১৯২০ সালে হিটলার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রাভেন্না পেপার মিলের অরাজকতা আমাদেরকে ইতালির কোন সময়কার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শ্রমিক অসন্তোষ ছিল জাহাঙ্গীরের 'নেতা হিসেবে উত্থানের উপযুক্ত সময়- তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জার্মানি জাতির চরম দুর্দশা অবসানে এডলফ রাজনৈতিক দল গঠন করেছিল।

খ. হিটলার ১৯২০ সালে নাৎসি দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি একটি শক্তিশালী জার্মান গঠনের অঙ্গীকার করেন। এতে ভাগাছ সন্ধির তীব্র বিরোধিতা ও জার্মান রক্তের বিশুদ্ধতার ওপর জোর দেওয়া হয়। সকল শ্রেণির মানুষের কর্তব্য ও অধিকার উল্লেখ করা হয়। এ কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল শিক্ষা ও আইন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, ভূমি সংস্কার, শিশু ও মাতৃমঙ্গল, বার্ধক্য ভাতা ও মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা।

গ. উদ্দীপকের রাভেন্না পেপার মিলের অরাজকতা আমাদেরকে ইতালির ১৯২০-২১ সালের দিককার অবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এসময় গিত্তলিত্তির মুক্তিপন্থি সরকার ইতালির শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে গুরুতর অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য দূর করতে পারেনি। সরকারের ব্যর্থতায় কৃষি ও শিল্পখাত প্রায় স্থবির হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালিতে ব্যাপক আকারে নৈরাজ্য দেখা দেয়। এ সময়কার ইতালির সমাজে বিশৃঙ্খলার প্রধান কারণ ছিল সরকারের ব্যর্থতা এবং যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা। কৃষি ও শিল্প কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পায়। খাদ্যদ্রব্যের দাম প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। কৃষকদের সংকট উত্তরণে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এসময় মুসোলিনীর আবির্ভাব ঘটে একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে। প্রতিকূল এ পরিস্থিতিই মুসোলিনীর নেতা হিসেবে আবির্ভাবের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

ঘ. উদ্দীপকের রাভেন্না পেপার মিলের শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরূপ অবস্থায় কারখানাটি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধেরও সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। কারখানার শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য মালিকদের সামর্থ্য একটি বড় বিষয়। কিন্তু যদি ক্রমাগত বন্ধ থাকে তবে এক সময় হয়তবা স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে কারখানাটি। এমতাবস্থায় এর শ্রমিকদের স্থায়িভাবে চাকরিচ্যুতির সম্ভাবনা থেকে যায়, যার চূড়ান্ত ফলাফল সুখকর হওয়ার নয়। এরূপ পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর কারখানাটি চালু করতে উদ্যোগ নেয় এবং শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বাধ্য করা হয়। দেলোয়ার তার অবস্থানে স্থির থাকতে পারে না। কেননা মিল বন্ধ হলে সবারই স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এরূপ একটি পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর যে পদক্ষেপ নেয় তা ছিল বাস্তবসম্মত। এর কোনো বিকল্প থাকার কথা নয়। এ যখন অবস্থা, তখন জাহাঙ্গীরের গুরুত্ব দেলোয়ারের চেয়ে বেশি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়। আর এরূপ পরিস্থিতিই জাহাঙ্গীরকে নেতার আসনে বসিয়েছে। যেমন আমরা দেখতে পাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ইতালি ও জার্মানির সমাজে। হিটলার ও মুসোলিনী যে বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে নেতা হয়েছিলেন, তা ছিল তার যোগ্যতার চেয়ে বেশি উপযুক্ত সময়। সময়ের প্রয়োজনেই তিনি নেতৃত্বের গুণাবলিকে বিকাশ করতে পেরেছিলেন।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. তুহিনের মামা শহিদ আহমেদ এক কানাডিয়ান লেখকের বই পড়ছিলেন বেশ আগ্রহ নিয়ে। লেখক বইটি রচনা করেছিলেন দীর্ঘ। ৯ বছর (১৯২০-১৯২৯ সাল) সময় ধরে। বইটির বিশেষত্ব হলো এর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের পক্ষে খুব চমৎকারভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
ক. কত সালের মহামন্দা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুরবস্থার সৃষ্টি করেছিল?
খ. হিটলার তাঁর ব্যক্তিগত গুণাবলির জন্যই নাৎসি দলকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেনু উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. তুহিনের মামা শহিদ আহমেদের আচরণে উদ্দীপকের লেখক কী ধরনের প্রভাব রাখতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর উক্ত প্রভাব তোমার দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯২৯-৩০ সালের মহামন্দা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুরবস্থা সৃষ্টি করেছিল।

খ. জার্মানির নাৎসি বিপ্লবে নাৎসি নেতা এডলফ হিটলারের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ভেঙে পড়া ও বিধবস্ত জার্মান জাতিকে তাঁর নেতৃত্ব ও ভাষণের সম্মোহনী শক্তি দিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার নেতৃত্ব গুণ ছিল অত্যন্ত পরিপক্ব ও বিচক্ষণ। জার্মানি জাতির পূর্ব গৌরবের কথা সব সময় বলে বলে তিনি জার্মান জাতির মনোবল দৃঢ় ও ইস্পাত কঠিন করতে সক্ষম হন। ফলে জার্মানিরা তাঁকে মুক্তিদাতা হিসেবেই ভাবতে শুরু করে। হিটলার তাঁর দলের সহকর্মীদের বাছাই করার সময় তাদের আনুগত্য ও অন্যান্য গুণ দেখতেন। তাই আমরা বলতে পারি, হিটলার তাঁর গুণাবলির কারণেই জার্মানে নাৎসি দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল।

গ. উদ্দীপকের লেখকের বইটি রচিত হয় ১৯২০-১৯২৯ সালের মধ্যে। এসময়টি ছিল ইতালির প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ভাঙা-গড়ার সময়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিপর্যন্ত ইতালিতে এসময় চলছিল অর্থনৈতিক মন্দা। ভার্সাই চুক্তির কারণে ইতালির আশা ভঙ্গ হয়েছিল। এছাড়াও সাধারণ ভোটাধিকার হরণ করে এসময় ইতালিতে ক্যাডুর চালু করেছিলেন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার।
সার্বিক দিক দিয়ে ইতালিতে তখন চলছিল চরম নৈরাজ্য। মুসোলিনীর ফ্যাসিস্ট দল এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করে আসছিল। তারা ইটালির সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করতে যা যা করার প্রয়োজন তার সবই করছিল। ফলে ফ্যাসিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা কেবল বাড়ছিল। কিন্তু এসময়টা ফ্যাসিস্ট দলকে মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। এর লেখক হয়তবা নিজেও একজন ফ্যাসিস্ট ছিলেন। শহিদ আহমেদ এরূপ আংশিক একটি ইতিহাস থেকে বিভ্রান্ত হতে পারেন। তার উচিত হবে। এর আগে পরের আরও ইতিহাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা। নয়তবা তিনি নেতিবাচক প্রভাবে প্রভাবিত হতে পারেন।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় শহিদ আহমদ ফ্যাসিবাদের সময়কার আংশিক ইতিহাসের একটি বই পড়ছেন, যা শুধু একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। আবার যে সময়ে বইটি রচিত হয়েছে, ফ্যাসিস্টদের প্রকৃত চরিত্র মূল্যায়নের জন্য এসময়টি যথেষ্ট নয়। এরূপ একটি পরিস্থিতিতে লেখা কোনো বই পড়ে ফ্যাসিস্টদের সম্পর্কে যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারেন। এরূপ একটি পদ্ধতি বর্তমান বিশ্বে সবার নিকট ঘৃণিত। আমাদের দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় এটি কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন তো আনতে পারবেই না, বরং কেবল ধ্বংস ও ধ্বংসই সাধন করবে। ফ্যাসিবাদের মূলকথা ছিল সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা, ধনিকশ্রেণির ওপর কর আরোপ, চার্চের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, অস্ত্রের কারখানা বাজেয়াপ্ত করা, শ্রমিক কল্যাণে আইন প্রণয়ন করা ইত্যাদি। এতে বিশ্বাস করা হতো যে রাষ্ট্র সকল ক্ষমতার আধার। ব্যক্তির অধিকার, ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে কিছু স্বীকার করা হয় না। এর চরম কথা হলো- রাষ্ট্রের জন্য সবকিছু, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুই নয় এবং রাষ্ট্রের বাইরেও কিছু নয়। এরূপ মূলনীতি ও আদর্শকে বর্তমান বিশ্বের শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। কেননা আধুনিক বিশ্বে ‘‘রাষ্ট্রের জন্য নাগরিক নয়, নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্র’’ হিসেবে দেখা যায়। ফ্যাসিস্টদের প্রথম কয়েকটি কথা শুনতে ভালো মনে হলেও এসব কথার বাস্তবায়ন কৌশল মেনে নেওয়া যায় না। তাই বলা যায়, আধুনিক 'বিশ্বে এরূপ কোনো পদ্ধতি ও কৌশল কোনো। দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে না।

৮. যুদ্ধোত্তর ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ যখন সরকারি শাসন বিরোধী মনোভাব পোষণ করছে তখন সোরাব আলী নিজের দলের অবস্থান ভালো করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সরকারের বিপক্ষে থেকে যদিও তার নিজের কাজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল তথাপি তিনি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করলেন না।
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কোন দেশ শোচনীয় পরাজয়বরণ করে?
খ. নাৎসি দলে জার্মানির জনগণ কেন যোগদান শুরু করেছিল?
গ. সোরাব আলীর দলের অগ্রযাত্রায় সহায়ক উদ্দীপকের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু পরিস্থিতি নির্ণয় কর।
ঘ. সোরাব আলীর জন্য উক্ত পরিস্থিতিগুলো হতে পারে সুবর্ণ সময় -উক্তির ক্ষেত্রে তোমার মতামত দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।

খ. বিশ্ববিবেক জার্মানি দেশটিকে একতরফাভাবে যেসব শাস্তির বিধান করেছিল তা সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেনি। যুদ্ধের অব্যবহিত পরে জার্মানি অর্থনৈতিক মন্দা ও আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়। সমগ্র দেশের জনগণ এ দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। জার্মানির জনগণ নাৎসি দলকে মুক্তির দিশারি ভাবতে শুরু করে। এ কারণে জার্মানির যুদ্ধ ফেরত রক্ষণশীল, রাজতন্ত্রী, দুর্দশাগ্রস্ত ব্যবসায়ী এবং হতাশা শ্রমিকরা নাৎসি দলে ভিড় করে। এমনকি ক্যাথলিক বিরোধী, ইহুদি বিরোধী এবং কমিউনিস্ট বিরোধীরাও নাৎসি দলকে বিশ্ব কর্তৃক চাপানো অপমান ও বঞ্চনা থেকে মুক্তিদাতা মনে করে।

গ. সোরাব আলী তার দল গোছানোর কাজে এমন এক সময়কে বেছে নিয়েছেন যখন যুদ্ধ পরবর্তীকালে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল। এরূপ পরিস্থিতিতে মূলধারার রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতায় দেশের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সবকিছুতে চরম অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য চলছিল। স্বাভাবিকভাবেই এরূপ পরিস্থিতিতে জনগণ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তনের আশায় নতুন দল ও ব্যক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আর এ সুযোগ নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সোরাব আলী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে এ ধরনের পরিস্থিতিতেই উত্থান ঘটেছিল হিটলার ও মুসোলিনীর মতো নাৎসি ও ফ্যাসিবাদী শাসকদের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যাহতি পরেই জার্মানি ও ইতালির রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। বিধ্বস্ত দেশের রাজনৈতিক শাসকদের ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা জনগণের মাঝে চরম হতাশার সৃষ্টি করে। সরকারের বিতর্কিত সব সিদ্ধান্টের জন্য জনগণ আরও বেকায়দায় পড়ে যায়। তারা এ অবস্থার পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। সংকট থেকে উত্তরণ চায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, আশার বাণী নিয়ে নিজ নিজ দলকে সংগঠিত করেন হিটলার ও মুসোলিনী। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পথে এগিয়ে যেতে জনগণ তাই তাদেরকে সমর্থন দেয় এবং তারা সফল হয়।

ঘ. দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করলে এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকলে জনগণ সরকারের ওপর আস্থাবান থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, তখন জনগণ পরিবর্তন চায় না। সেরূপ পরিস্থিতিতে নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের অবির্ভাব সহজ হয় না। কিন্তু যখন রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয় এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বৃহত্তর জনগণের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন জনগণ সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে। এরূপ পরিস্থিতিতে জনগণ নতুন আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়। যে তাদেরকে আশার সঞ্চার করতে পারে, তাকেই সমর্থন জোগায়। যেমনটি দেখা গিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে ইটালি ও জার্মানিতে। ভঙ্গুর আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেসময় হিটলার এবং মুসোলিনী ব্যাপক জনসমর্থন লাভে সমর্থ হয়। এ জনসমর্থন লাভ করে যখন তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এরপর তাদের পূর্বের চরিত্র আর দেখা যায়নি। তারা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে সারা বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। উদ্দীপকের সোরাব আলীর ক্ষেত্রেও উল্লিখিত পরিস্থিতি তার নতুন দলের প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালীকরণের জন্য উপযুক্ত সময় হতে পারে। এরূপ ভঙ্গুর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মূলধারার রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে নতুন আশার সঞ্চার করে সহজেই সোরাব আলীর দল ভালো করতে পারে। সে অর্থে এ সময়টি হলো তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

৯. উদ্ভ্রান্ত চিন্তাচেতনা পোষণ করায় হামিদ আহমদকে পদচ্যুত করে সামরিক বিভাগ। তার পরিবারের কাছ থেকে শুনতে পাওয়া যায়- ইদানীং তিনি বাঙালিরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি, যুদ্ধই বাঙালিদের জীবনের ব্রত হওয়া বাঞ্ছনীয়, আন্তর্জাতিকতার বিরোধিতা প্রভৃতি ধ্যানধারণায় নিজেকে আবদ্ধ রেখেছেন।
ক. ১৯৩০ সালে ইটালি ও জার্মানিতে কারা ক্ষমতা দখল করেছিল?
খ. ১৯২৯ সালের মহামন্দা কীভাবে হিটলারের উত্থানে সাহায্য করেছিল?
গ. হামিদ আহমদের মাঝে কোনো মতাদর্শ পরিলক্ষিত হচ্ছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হামিদ আহমদকে পদচ্যুতিকরণ ছিল যুক্তিসংগত তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৩০ সালে ইতালি ও জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট দলগুলো ক্ষমতা দখল করেছিল।

খ. ১৯২৯ সালে জার্মানিতে মহামন্দা দেখা দেয়। মুদ্রাস্ফীতিতে অভাবনীয় বিপর্যয় ঘটে। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হন। আর অন্যদিকে হিটলার তাঁর মোহনীয় বক্তব্য দ্বারা জার্মানির বেকার, মধ্যবিত্ত ও শ্রমিকদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, তিনি ক্ষমতায় আসলে সকল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবে। তারা জার্মান কৃষক, ছোট দোকানদার ও ব্যবসায়ী শ্রেণিকে ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। এভাবে ১৯২৯ সালের মহামন্দা নাৎসি তথা হিটলারের উত্থানে সাহায্য করেছিল।

গ. উদ্দীপকের হামিদ সাহেবের মধ্যে নাৎসিবাদের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটি সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদেরও পরিপন্থী একটি মতবাদ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানির জনগণের মধ্যে এ মতবাদটি চরম আকার ধারণ করে। ঐতিহাসিকভাবে জার্মানরা ছিল আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি এবং তারা নিজেদেরকে বিশুদ্ধ বা আর্য জাতি বলে দাবি করত। এজন্য তারা মনে করত তারা অন্যান্য জাতির ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তি তাদের এ অনুভূতিতে প্রবল আঘাত হানে। হিটলারের আবির্ভাব এ মতবাদকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। হিটলার অপমানজনক ভার্সাই চুক্তি এবং এর শর্তস্বরূপ জার্মানির ক্ষতিপূরণ দেওয়াকে অন্যায় বলে দাবি করতে থাকে এবং যুদ্ধের মাধ্যমেই এর প্রতিকার হতে পারে বলে প্রচার করতে থাকে। এরই চূড়ান্ত ফল ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা জার্মানির এ আত্মঅহমিকা চিরতরে মিটিয়ে দেয়। হিটলার আত্মহত্যা করে এ থেকে মুক্তি পায়। এরূপ ধ্যানধারণার ভয়াবহতা ও ক্ষতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায়। হামিদ আহমদের মাঝে এরই একটি নমুনা দেখা যাচ্ছিল।

ঘ. উদ্দীপকের হামিদ আহমদকে পদচ্যুত করা যৌক্তিক ছিল। কেননা যে সামরিক বাহিনীর মূলমন্ত্র হলো দেশকে রক্ষা করা এবং শান্তি রক্ষা করা, তার কোনো সদস্যের মধ্যে যদি যুদ্ধবাজ এবং সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ মনোভাব থাকে, তবে তা যেকোনো বিপদের কারণ হতে পারে। সামরিক বাহিনীর কাজ হলো দেশকে রক্ষা করা। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের মাটিকে নিরাপদ রাখা। আগ্রাসী নয়, প্রতিরক্ষা হলো এর মূলনীতি। বিশ্বশান্তি ও আঞ্চলিক সংহতি রক্ষা করে নিজ দেশের ভৌগোলিক অখ-তা রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব। আগ্রাসী যুদ্ধ নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধই হলো এর মূলনীতি। কিন্তু এ বাহিনীর মধ্যে যদি এমন কোনো মনোভাব দেখা দেয়, যা যুদ্ধকে উৎসাহিত করে এবং অপরাপর দেশ ও জাতিকে হেয় করতে শেখায়, তবে তা সমূহ বিপদের কারণ হতে পারে। বর্তমান বিশ্বের কোনো দেশ অপর দেশের সহযোগিতা ব্যতীত চলতে পারে না। আন্তর্জাতিকতাবাদের এ মূলনীতি যদি সে না মানতে পারে, তবে সে। সামরিক বাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য থাকার যোগ্যতা হারাবে এবং সবচেয়ে বিপদের কথা হলো, এ মতবাদ ছড়িয়ে পড়ারও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। কেননা এসব মতবাদ এরূপ যে, মানুষকে খুব সহজেই প্রভাবিত করতে পারে। যেমনটি দেখা যায় জার্মানিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে অনেক বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক, অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ মতবাদে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই এরূপ মানসিকতাকে সংক্রমিত হতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে হামিদ সাহেবের পদচ্যুতি ছিল যৌক্তিক ৷

১০. মিঠা খালের আধিপত্য নিয়ে শতরূপা গ্রাম ও শ্যামনগর গ্রামের মাঝে সংঘর্ষ হলে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে প্রশাসন। দীর্ঘকাল মিঠা খালের সাথে শতরূপা গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক জীবন জড়িত। কিন্তু প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা শ্যামনগর গ্রামের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে তাদেরকে মিঠা খালের ওপর আধিপত্য বিস্তারের বৈধতা স্বীকার করে নথিপত্র জমা দেয় অফিসে। এতে শতরূপা গ্রামবাসীর অর্থনৈতিক জীবনে নেমে আসে মারাত্মক বিপর্যয়।
ক. সমগ্র ইউরোপ কয়টি যুদ্ধ শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়?
খ. হিটলারকে জার্মান রাজনীতিবিদদের সাথে তুলনা করা হয় না কেন?
গ. মিঠা খাল হাতছাড়া হওয়াতে শতরূপা গ্রামবাসীর চিন্তাচেতনায় কী পরিবর্তন ঘটবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা এক ব্যাপক সংঘর্ষের ইঙ্গিত বহন করে - তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমগ্র ইউরোপ দুটি যুদ্ধ শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়।

খ. বিশ্বের ইতিহাসে হিটলার ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তি। তিনি এমন এক শক্তি যার কোনো ঐতিহাসিক অতীত নেই। তাঁর জার্মানত্বও নকল। যুদ্ধে পরাজয়ের মুহূর্তে তিনি এ জার্মানত্বকেও অস্বীকার করেছিলেন। আত্মসন্তুষ্টির জন্য তিনি ক্ষমতা অধিকারের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এ কারণে হিটলারকে কোনো জার্মান রাজনীতিবিদের সাথে তুলনা করা যায় না।

গ. মিঠা খাল নিয়ে শতরূপা ও শ্যামনগর গ্রামের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসায় প্রশাসন যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা ছিল বৈষম্যময় এবং একপেশে। ঘুষ গ্রহণ করে প্রশাসন যে সমাধান করে দেয়, এতে শতরূপা গ্রামবাসী তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত খালটি থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হবে। এতে গ্রামবাসীর অর্থনৈতিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়ে আয় হ্রাস পাবে। আয় হ্রাসজনিত কারণে তাদের জীবনযাত্রার ওপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর এ বিরূপ প্রভাব তাদেরকে বিদ্রোহী করতে তুলবে এবং সহিংসতার পথে ঠেলে দিতে পারে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির ওপর এমনই কিছু শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেসব শর্ত জার্মানিকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ফল হিসেবে নাৎসিবাদ প্রকাশ পায় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে। অনেকে বলে থাকেন যে ভার্সাই চুক্তির মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল। ঠিক একইভাবে মিঠা খালের অধিকার হাতছাড়া হওয়ার প্রেক্ষাপটে শতরূপা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেও বিদ্রোহ বৃদ্ধি পেতে পারে, যার পরিণাম হবে আবারও সংঘাত।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনায় শতরূপা গ্রামটিকে অন্যায়ভাবে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এরূপ বঞ্চনা সাধারণ মানুষের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করে। আর হতাশা থেকে জন্ম নেয় ক্রোধ। যখন অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে এবং এজন্য দায়ী থাকে অন্যকোনো পক্ষ, তখন এ ক্রোধ রূপান্তরিত হয় জিঘাংসায়। এটি সমাজের সংহতি নষ্ট করে, পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয় এবং একসময় তা রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘর্ষের।
উদ্দীপকের শতরূপা গ্রাম তাদের নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় প্রশাসনের পক্ষপাতপূর্ণ আচরণের জন্য। পূর্ব থেকেই শ্যামনগর গ্রামের সাথে চলে আসা বিরোধের এ সমাধান কোনো কার্যকরী সমাধান নয়। একপেশে এরূপ একটি সমাধান গ্রাম দুটির মধ্যকার দূরত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়। স্বভাবতই এরূপ দূরত্ব সংঘাতকে উস্কে দিবে। গ্রাম দুটির মধ্যকার এ বিরোধে মারাত্মক রকমের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর কারও পিঠ যে সময় দেয়ালের সাথে লেগে যায় তখন তার রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। শতরূপা গ্রামের মানুষের পিঠ বর্তমান পরিস্থিতিতে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে। তাদের জীবনমরণের প্রশ্ন হিসেবে এর দখলের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দাদের কথা হতে পারে যে, আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে এর বৈধ অধিকার পেয়েছি, তাই এটি ছেড়ে দেব কেন? এ অবস্থানের কারণে দু পক্ষই সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করবে, যা ভয়াবহ সংঘাত ডেকে আনতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল এমনই এক অসম সন্ধির ফলাফল।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post