HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
চতুর্থ অধ্যায় : বলশেভিক বিপ্লব

১. সানিয়া তার দাদার কাছে জানতে পারে, কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলসের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম ইউরোপের একটি দেশে বিপ্লব সংঘটিত হয়। এ বিপ্লব মানব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষকে প্রথম সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
ক. 'নিউ ভিউ অব সোসাইটি' গ্রন্থটি কার লেখা?
খ. রুশ বিপ্লবের অর্থনৈতিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
গ. সানিয়ার জানা তথ্যের সাথে কোন বিপ্লবের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত বিপ্লবের আন্তর্জাতিক তাৎপর্য মূল্যায়ন কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'নিউ ভিউ অব সোসাইটি' গ্রন্থটি রবার্ট ওয়েনের লেখা।

খ. রুশ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। শিল্পকারখানা, ভূসম্পত্তি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সব কিছুই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। এমনকি বৃহৎ জমিদারি, কুলাকদের সম্পত্তি এবং কৃষকদের জমি রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করে এবং এজন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলুপ্ত করে সকলকে শ্রম দ্বারা জীবিকা অর্জনে বাধ্য করা হয়। ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। ১৯২০-২১ সালে রাশিয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দিলে লেনিন নয়া অর্থব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমে মিশ্র অর্থনীতি চালু করে। বৃহৎ শিল্পকে সরকারি মালিকানায় রেখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পকে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সুতরাং বলা যায়, রুশ বিপ্লবের অর্থনৈতিক তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গ. উদ্দীপকে সানিয়ার জানা তথ্যের সাথে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সংঘটিত রুশ বিপ্লবের সাদৃশ্য আছে। বলশেভিক পার্টির নেতৃতেবও এ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে এটি বলশেভিক বিপ্লব নামেও পরিচিত। এ বিপ্লবের মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শ্রমিক ও কৃষকশ্রেণি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। শিল্পকারখানা, ভূসম্পত্তি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সকল কিছুই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। এমন কি বৃহৎ জমিদারি, কুলাকদের সম্পত্তি এবং কৃষকদের জমি রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করে এবং এজন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলুপ্ত করে সকলকে শ্রম দ্বারা জীবিকা অর্জনে বাধ্য করা হয়। ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করলে সমাজে শ্রেণিভেদ বিলুপ্ত হয়। আইন প্রণয়ন করে রেশনিং দ্বারা খাদ্য বণ্টন করা হয়। একমাত্র শ্রমিককেই বেশি মর্যাদা প্রদান করা হয়। কুলাক বা জমিদারশ্রেণি জমি ছেড়ে দিতে অস্বীকার করলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হয়। এভাবে বলশেভিক বা রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিপ্লবের সাথে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সংঘটিত রুশ বিপ্লবের সাদৃশ্য আছে। রুশ বিপ্লব শুধু রাশিয়ার সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এ বিপ্লব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। রুশ বিপ্লব এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার পরাধীন দেশগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। রুশ বিপ্লবের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এসব দেশের জনগণ স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই শুরু করে। অন্যদিকে উন্নত ধনী দেশগুলোতে সমাজতন্ত্রের উত্থান রোধ করার জন্য পুজিবাদী রাষ্ট্রগুলো সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এর ফলে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে, যার হাত ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। রুশ বিপ্লব সমাজতান্ত্রিক চেতনায় সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম সফল বিপ্লব। ইউরোপীয় আদর্শের লেখনী থেকে মার্কসের ইতিহাসের জড়বাদী তত্ত্ব পর্যন্ত বহু মনীষী এরূপ একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছেন যুগের পর যুগ ধরে। কিন্তু মহামতি লেনিন সময়ের পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে শত প্রতিকূলতার মধ্যে রুশ বিপ্লবে নেতৃতব দিয়ে শত বছরের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন। রুশ বিপ্লব শুধু রাশিয়ায় নয় পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের কৃষক-শ্রমিকশ্রেণিকে শ্রেণিহীন সাম্যবাদী সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং বলা যায়, রুশ বিপ্লব শুধু রাশিয়ায় নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২. দিনটি ছিল ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর (পুরাতন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর)। এই দিনই রাশিয়ার শ্রমিক, কৃষক ও সেনাবাহিনীর একটি অংশ এবং সমাজের সচেতন মহলের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এই বিপ্লবের কারণ ছিল বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ার শোচনীয় অর্থনৈতিক অবস্থা, রুশ সমাজব্যবস্থা ও বুর্জোয়াশ্রেণির সাথে জারতন্ত্রের দ্বন্দ্ব। এই বিপ্লবই মানবসভ্যতার ইতিহাসে মানুষকে প্রথম সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কখন শুরু হয়?
খ. রাশিয়ায় জারতন্ত্রের ফলাফল কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে? বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কারণ ছাড়া উক্ত বিপ্লবের আর কী মুখ্য কারণ রয়েছে? বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই।

খ. রাশিয়ায় জারতন্ত্রের ফলাফল ছিল অত্যন্ত নেতিবাচক। জারতন্ত্রের কুশাসনের কারণে রাশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। জারতন্ত্রের দুঃশাসনের ফলে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাগুলো দখল করেছিল অভিজাত সম্প্রদায়। জার সরকার স্টোপিলিন ভূমি সংস্কার চালু করলে 'কুলাক' বা 'জোতদার' জমিদার শ্রেণির উদ্ভব হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের জমি ভূস্বামীদের হাতে চলে যায়। দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়ে আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে। জারতন্ত্রের নিষ্পেষণমূলক শাসনের কারণেই রাশিয়ায় রুশ বিপ্লব বা. বলশেভিক বিপ্লবের মত এক ঐতিহাসিক বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং জারতন্ত্রের স্থলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সংঘটিত রুশ বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর (পুরাতন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর) রাশিয়ার পেত্রগাৎ শহরে শ্রমিক-সৈনিক-নাবিকের সশস্ত্র অভ্যুত্থান ও রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ইতিহাসে রুশ বিপ্লব বা অক্টোবর বিপ্লব নামে পরিচিত। বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে এ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে তাকে বলশেভিক বিপ্লবও বলা হয়। বিপ্লবের পূর্বে জারতন্ত্রের কুশাসনের কারণে রাশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। জারতন্ত্রের দুঃশাসনের ফলে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধাগুলো দখল করেছিল অভিজাত সম্প্রদায়। জার সরকার স্টোপিলিন ভূমি সংস্কার চালু করলে 'কুলাক' বা 'জোতদার' জমিদার শ্রেণির উদ্ভব হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের জমি ভূস্বামীদের হাতে চলে যায়। দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়ে আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে। তাছাড়া বুর্জোয়াশ্রেণির সাথেও জার সরকারেরও সম্পর্ক ভালো ছিল না। জারতন্ত্রের নিষ্পেষণমূলক শাসনের কারণেই রাশিয়ায় রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের মত এক ঐতিহাসিক বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং জারতন্ত্রের স্থলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সংঘটিত রুশ বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও রুশ বিপ্লবের আরও অনেক কারণ রয়েছে। বিপ্লবের পূর্বে জারতন্ত্রের কুশাসনের কারণে রাশিয়ার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ভূমিদাস প্রথা বিলোপ করলেও ভূমিদাসগণ স্বাধীন কৃষকে রূপান্তরিত হতে পারেননি। তারা সামন্তপ্রভুদের হাত থেকে গ্রামীন সংস্থা 'মির' এর অধীনে ন্যস্ত হয়েছিল। তাই তাদের ভাগ্যেরও কোন উন্নয়ন ঘটেনি। তাছাড়া শিল্প বিপ্লবের কারণে ভূমিহীন শ্রেণি শহুরে শিল্পশ্রমিকে পরিণত হয়। কিন্তু সরকার শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ প্রদান না করায় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। সামন্ততন্ত্রের বিলোপ হলেও রাশিয়ার অফিস আদালতসহ সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকেরা। জার সরকার স্টোপিলিন ভূমি সংস্কার চালু করলে 'কুলাক' বা 'জোতদার' জমিদার শ্রেণির উদ্ভব হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের জমি ভূস্বামীদের হাতে চলে যায়। দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়ে আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে। এছাড়াও 'নিহিলিজম' এবং 'নরোদিক' আন্দোলন রাশিয়ার জনগণের মনে জার বিরোধী মনোভাব জাগ্রত করে। ফলে জনগণ ক্রমেই সমাজতান্ত্রিক চেতনায় আকৃষ্ট হয়। নেপোলিয়নিক যুদ্ধের সময় যে সকল সৈন্য পশ্চিম ইউরোপে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তারা ইউরোপের মুক্ত সমাজ ও উদারতন্ত্রী ধ্যান ধারণার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। মূলত এ সকল কারণেই রাশিয়ায় রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লবের মত এক ঐতিহাসিক বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং জারতন্ত্রের স্থলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩. ডিস্টান মিয়ানকভ হচ্ছেন ইটার-টার্স সংবাদ সংস্থার। একজন কর্মকর্তা। তিনি সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, তার দেশের বর্তমান সামাজিক অবস্থা আগের মতো ছিল না। তিনি উল্লেখ করেন, এক সময় তার দেশে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র সতেরো জন অভিজাত আর বাকিরা ভূমিহীন। তিনি আরও লিখেছেন, ঐ সময় সকল জমিই ছিল রাজপরিবার ও সামন্ত অভিজাতশ্রেণির তবে তিনি খুবই করুণ ভাষায় উল্লেখ করেছেন, এক সময় ভূমিদাস ও ভূমিহীনশ্রেণি বিদ্যমান ছিল আমাদের সমাজে। আর সমাজ ছিল শ্রমিকের নির্যাতনের শিকলে আবদ্ধ এক শ্রীঘর।
ক. বলশেভিক বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয়?
খ. রুশ বিপ্লবের দার্শনিকদের অবদান উল্লেখ কর।
গ. উদ্দীপকে ডিস্টান মিয়ানকভের প্রতিবেদনে তোমার পঠিত কোন বিষয়ের মিল লক্ষ করা যায়- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত সময়ে ঐ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন ছিল? মতামত দাও।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯১৭ সালে।

খ. রুশ বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। টমাস ম্যুর, ব্লড সেইনট সাইমন, বরার্ট ওয়েন, চার্লস ফুরিয়ার প্রমুখ দার্শনিকের লেখনী বলশেভিক বিপ্লবকে চূড়ান্ত রূপ দান করে।

গ. উদ্দীপকে ডিস্টান মিয়ানকভের প্রতিবেদনে আমার পঠিত বিষয় বলশেভিক বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ার সামাজিক অবস্থার মিল লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়, ডিস্টান মিয়ানকভের দেশে এক সময় প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র ১৭ জন্য অভিজাত ছিল। বাকিরা ভূমিহীন অবস্থায় ছিল। তখন সকল জমিই ছিল রাজপরিবার ও সামন্ত অভিজাত শ্রেণির। উক্ত দেশে এক সময় ভূমিদাস ও ভূমিহীন শ্রেণি বিদ্যমান ছিল। আর সমাজ ছিল শ্রমিকের নির্যাতনের শিকলে আবদ্ধ এক শ্রীঘর। পাঠ্যবই হতে আমরা জানতে পারি, উনিশ শতকের শেষের দিকে রাশিয়ার এক সামাজিক পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয় যে, রাশিয়াতে প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র ১৭ জন অভিজাত আর বাকিরা ভূমিহীন। তখন রাশিয়ার সকল জমিই ছিল রাজপরিবার ও সামন্ত অভিজাত শ্রেণির দখলে। তখন জমির ওপর কৃষকের মালিকানা ছিল না। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার সমাজে বিদ্যমান' ভূমিদাস প্রথার বিলোপ সাধন করলেও ভূমিদাসগণ স্বাধীন কৃষকে রূপান্তরিত হতে পারেনি। এরা ভূমিদাস থেকে ভূমিহীন শ্রেণিতে পরিণত হয়েছিল মাত্র। তারা সামন্ত প্রভুদের হাত থেকে গ্রামীণ সংস্থা মির-এর অধীনে ন্যস্ত হয়েছিল মাত্র। এজন্য তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ভূমিহীন শ্রেণিটি শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন সকল দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। রাজপরিবার ও অভিজাত শ্রেণি রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা করায়ত্ত করে ভূমিহীন শ্রেণিকে নিদারুণভাবে শোষণ করেছে। সুতরাং এ কথা বলা অমূলক হবে না যে, উক্ত প্রতিবেদন আমার পঠিত বলশেভিক ১ বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ার সামাজিক অবস্থার সাথে মিল লক্ষ করা যায়।

ঘ. হ্যাঁ আমি মনে করি, উক্ত সময়ে অর্থাৎ বলশেভিক বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা চরম সংকটাপন্ন ছিল। ১৮৬১ সালে ভূমিদাস প্রথা রহিত করা হলেও সামন্ত ব্যবস্থা বিংশ শতকের শুরু পর্যন্ত ছিল। এ সময় এক হিসাবে দেখা যায়, রাশিয়ার ১.৫% লোকের ২৫% ভূমির মালিকানা চলে গিয়েছিল। তখন দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়ে আরও দরিদ্র হয়ে পড়ে। উনিশ শতকের শেষ দশক থেকে রাশিয়ার শিল্প বিপ্লব হলেও বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন কৃষক শহরে অভিগমন শুরু করে শিল্প শ্রমিকে পরিণত হয়। কম বেতন, বেশি খাটুনি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাঁধে। রাশিয়ার হাতে কোনো বাজার না থাকা এবং শিল্পদ্রব্য বাজারজাত করতে না পারায় রাশিয়ার অর্থনীতিতে মন্দা দেখা যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জার প্রথম মহাযুদ্ধে যোগদান করে দেশের অর্থনীতিতে আরও সর্বনাশ বয়ে নিয়ে আসেন। রাশিয়ার ১০ মিলিয়ন সৈন্যের খাদ্য ও রসদ সংগ্রহ করতেই জার সরকারের রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়। বাধ্যতামূলক যুদ্ধে যাওয়ায় খামারগুলোতে লোকের অভাবে কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প কারখানার উৎপাদন হ্রাস পায়। কৃষির উৎপাদন কমে গেলে শহরগুলোতে খাদ্যের সরবরাহ কমে যায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সাধারণ লোক দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য কয়লা না পেয়ে জ্বালানি কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়ে। সেই সাথে যুদ্ধের খরচের জন্য জনসাধারণের ওপর করের হার বাড়তে থাকে। অর্থাৎ শিল্প বিপ্লব ঘটলেও তা রাশিয়ার কোনো শ্রেণির মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, ঐ দেশ অর্থাৎ রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা বলশেভিক বিপ্লবপূর্ব চরম সংকটাপন্ন ছিল।

৪. শাওন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার প্রতিদিন পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। গত ১০ এপ্রিল ২০১৪ ইং তারিখের প্রথম আলো পত্রিকায় তিনি বিশেষ ব্যক্তিত্বের পরিচয় কলামে একজন বিখ্যাত সমাজতান্ত্রিক নেতার জীবনী পড়েছিলেন। এই নেতার জীবনী পড়ে শাওন জানতে পারেন, একজন স্থানীয় স্কুল ইন্সপেক্টরের সন্তান হলেও তাঁর হাত ধরেই সংঘটিত হয়েছিল একটি সাড়া জাগানো বিপ্লব। এছাড়াও শাওন এই নেতার কয়েকটি উক্তি যেমন : I'll make them pay for it. I swear it. 'দেয়ালটি কম্পমান, কেউ ঠেলা দিলেই পড়ে যাবে' পড়েন।
ক. 'An Appeal to the Youth' গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
খ. বুকাননের পরিচয় দাও।
গ. উদ্দীপকে তোমার পঠিত কোন নেতার নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত নেতার নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী' মতামত দাও।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'An Appeal to the Youth' গ্রন্থটি রচনা করেন পিটার রূপোৎকিন।

খ. বুকানন ১৮১৪ সালের মে মাসে রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৮৪২ সালে বুকানন 'The Reaction in Germany' নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন যা যুবসমাজ ও আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৮৪৪ সালে বুকানন প্রথম প্যারিসে মার্কস ও প্রুধোর সাথে মিলিত হন। ১৮৫০ সালে তাকে রাশিয়ান কারাগারে প্রেরণ করা হয়।। যেখানে তিনি বিভিন্ন কারাগারে ১১ বছর নির্যাতন ভোগ করেন। ১৮৬১ সালে তিনি সাইবেরিয়ায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি জাপান ও উত্তর আমেরিকা হয়ে লন্ডনে ফিরে আসেন। তিনি একজন নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক ছিলেন। ১৮৭৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

গ. উদ্দীপকে আমার পঠিত ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের নেতৃত্বে সংঘটিত বলশেভিক বিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত নেতা একজন স্থানীয় স্কুল ইন্সপেক্টরের সন্তান হলেও তার হাত ধরেই সংঘটিত হয়েছিল একটি সাড়া জাগানো বিপ্লব। তিনি বলেছিলেন I'll will make them pay for it. I swear it. "দেওয়ালটি কম্পমান, কেউ ঠেলা দিলেই পড়ে যাবে।"
উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়ের সাথে লেনিনের মিল রয়েছে। লেনিন ছিলেন একজন স্থানীয় স্কুল ইন্সপেক্টরের সন্তান। তিনি ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল রাশিয়ার সিমব্রিসকে জন্মগ্রহণ করেন। লেনিনের বড় ভাই আলেকজান্ডার উলিয়ানভ ছিলেন একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের নেতা, যে গ্রুপটি জার তৃতীয় আলেক্সান্ডারকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে গ্রেফতার হয়। লেনিনের ভাইকে যখন ফাঁসি দেওয়া হয় তখন তিনি মাত্র ১৭। বছরের কিশোর। যখন তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন লেনিন বলেছিলেন, ''I'll make them pay for it. I swear it.'' কাজান বিশ্ববিদ্যালেয় ভর্তি হয়ে তিনি মার্কসবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি গ্রেফতার হন। পুলিশ অফিসার তাঁকে প্রশ্ন করেন, "তুমি কেন বিদ্রোহ করছ, হে যুবক তুমি তো জানো যে তোমার সামনে একটি দেয়াল আছে।" লেনিন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে উত্তর দিয়েছিলেন, "দেয়ালটি কম্পমান, ঠেলা দিলেই পড়ে যাবে।"
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের বিষয়ের সাথে লেনিনের বিষয়ের মিল রয়েছে।

ঘ. প্রশ্নে উল্লিখিত উক্ত নেতা অর্থাৎ লেনিনের নেতৃতবাধীন বিপ্লবের ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী।
ইতিহাসে লেনিনের অবদান অনস্বীকার্য। নির্দ্বিধায় বলা যায় রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্য লেনিনের মতো একজন শক্তিশালী নেতা ছাড়া সম্ভব ছিল না। এ বলশেভিক বিপ্লবের ফলে শুধু রাশিয়াতেই নয়, সারা পৃথিবীর রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়। সারা পৃথিবীর নির্যাতিত, অবহেলিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তাঁর এ সাফল্য একটি আদর্শ হিসেবে পরিগণিত। এ বিপ্লব যেন কঠিন পাথরে খোদাই করে দিয়েছে লেনিন, যার প্রতিধ্বনি আগামীর বংশধরেরাও অনেককাল ধরে শুনতে পাবে। তারাও লেনিনের আদর্শে প্রভাবিত হবে, উজ্জ্বল হবে এবং প্রাণবন্ত হবে। তার এই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ভূস্বামী ও সামন্তদের অত্যাচার, শোষণ এবং পুঁজিপতি শ্রেণির অবসান ঘটে। উনিশ শতক থেকে চলে আসা ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক চিন্তা, দর্শন ও রাষ্ট্রচিন্তার বাস্তব রূপায়ন ঘটে। ফলে সারা পৃথিবীর আর্থসামাজিক প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন ধারার অভিযাত্রা শুরু হয়। কৃষক-শ্রমিকশ্রেণি অনেক ক্লান্তির পরে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে লেনিনের এ বিপ্লবের মাধ্যমে। লেনিনের প্রচেষ্টায় রাশিয়ায় পুঁজিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এক নতুন বিকল্প সামগ্রিক মানব কল্যাণমুখী সমাজ গড়ে ওঠে যা এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার পরাধীন দেশগুলোতে ব্যাপক আশার সঞ্চার করে। ক্রমান্বয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম। গোটা পৃথিবীর কৃষক ও শ্রমিক সমাজকে শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উৎসাহিত করে বলশেভিক বিপ্লব। আর এ বিপ্লবের নায়ক ছিলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। এভাবেই লেনিন সারা পৃথিবীতে এক আশার সঞ্চার করে ইতিহাসে বিশেষ অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছেন।

৫. শামীমের দেশে সামন্তবাদের অবসান ঘটিয়ে শিল্পকারখানার মাধ্যমে নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। কিন্তু এ সমাজব্যবস্থা শোষণ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে তার দেশের জনগণের সচেতন অংশ শোষণহীন একটি সমাজের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপায়সমূহের মালিকানায় ব্যক্তির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের স্থলে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ক. গ্রিক শব্দ 'OV' মানে কী?
খ. সমাজতন্ত্র বিষয়ে দার্শনিকের মতামত ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের শেষোক্ত ব্যবস্থা বলতে কোন সমাজব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত ব্যবস্থা সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের মূলে আঘাত করে বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মূলত গ্রিক শব্দ 'OV' এর কোনো অর্থ পাওয়া যায় না। তবে গ্রিস শব্দ 'MP' 'OV' অর্থ 'Mother of God'.

খ. টমাস ম্যুর একটি কাল্পনিক সমাজের বর্ণনা দেন যেখানে সবাই শ্রম দেয় এবং কারও কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই। এ দ্বীপে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী, শ্রমশোষক ব্যক্তি নেই। ব্রিটিশ লেখক ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলোপের মাধ্যমে নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা দেন। ক্লড সেইন্ট সাইমন মনে করতেন যে ইউরোপ একটি জটিল অর্থনৈতিক অসাম্যের মধ্যে অবস্থান করছে এবং এ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে অর্থনীতির পুঁজিবাদী ধারা পুনর্গঠন করতে হবে। এজন্য তিনি তিন স্তর বিশিষ্ট একটি সামাজিক ফ্রেমওয়ার্ক-এর প্রস্তাব দেন। তাঁর মতে, প্রথম শ্রেণিটি গঠিত হবে প্রকৌশলী এবং মানববিদ্যার লোকজন নিয়ে যারা পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, দ্বিতীয় শ্রেণিটি গঠিত হবে বিজ্ঞনীদের নিয়ে যারা পরিকল্পনা মূল্যায়ন করবে এবং তৃতীয় শ্রেণিটি গঠিত হবে শিল্পপতিদের নিয়ে যারা পরিকল্পনা মাফিক কার্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। কার্ল মার্কস এবং এঙ্গেলস বিপ্লবী কর্মতৎপরতার উত্থানে সর্বহারা শ্রেণির বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শ্রেণি সংগ্রামের নিষ্পত্তি হতে পারে বলে মনে করেন।

গ. উদ্দীপকের শেষোক্ত ব্যবস্থা বলতে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে। বোঝানো হয়েছে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিপরীত আদর্শ ও নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা। এটি এমন এক সমাজব্যবস্থা যেখানে মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ, ব্যক্তিগত। মালিকানা ও সংখ্যালঘু ধনিকশ্রেণির দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের শোষণের অবসান ঘটাবার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়।
সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা সমাজের ওপর ন্যস্ত থাকে। এখানে কোনো ব্যক্তিমালিকানার সুযোগ থাকে না। এরূপ সমাজে শোষণমুক্ত মানুষের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা, সমগ্র সমাজের স্বার্থে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। শ্রম অনুযায়ী সামাজিক উৎপন্ন দ্রব্যের বণ্টন, শ্রমিকশ্রেণি পরিচালিত সমাজে ক্রমবর্ধমান সামাজিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক ঐক্য সাধন, সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র ও ব্যক্তিসত্তার বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হয়।

ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত ব্যবস্থা বলতে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে। উক্ত ব্যবস্থা সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের মূলে আঘাত করে। সামন্তযুগে কৃষি ভূমির ব্যাপক চাষই ছিল মৌল উৎপাদন পদ্ধতি। ভূস্বামীরা ভূমিদাসদের বেগার খাটিয়ে ও খাজনা আদায় করে শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছিল। সামন্ত যুগে এসব ভূস্বামীরা অন্তশোষণের আশ্রয় নিয়ে উৎপাদন পদ্ধতির উন্নতি সাধনে তৎপর হয়। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সম্পদের ওপর ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত। অর্থব্যবস্থাপনা সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ক্রেতা ও বিক্রেতার দরকষাকষির ভিত্তিতে। পুঁজিবাদী সরকারে ব্যক্তি উদ্যোক্তা নিজ ইচ্ছামতো শিল্পকারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারে। উৎপাদন বা ব্যবসা পরিচালনা করা হয় সর্বোচ্চ মুনাফা বা লাভের উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ পুঁজিবাদী সরকারব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানাধীনে অবাধ প্রতিযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত থাকে। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিপরীত আদর্শ ও নীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এটি এমন এক সমাজব্যবস্থা যেখানে মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ, ব্যক্তিগত মালিকানা ও সংখ্যালঘু ধনিকশ্রেণির দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের শোষণের অবসান ঘটাবার প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় উৎপাদনের উপকরণের মালিকানা সমাজের ওপর ন্যস্ত থাকে। কোন ব্যক্তিমালিকানার সুযোগ থাকে না। এরূপ সমাজে শোষণমুক্ত মানুষের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা, সমগ্র সমাজের স্বার্থে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। শ্রম অনুযায়ী সামাজিক উৎপন্ন দ্রব্যের বণ্টন, শ্রমিক শ্রেণি পরিচালিত সমাজে ক্রমবর্ধমান সামাজিক, নৈতিক ও রাজনৈতিক ঐক্য সাধন, সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র ও ব্যক্তিসত্তার বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হয়। এজন্যই বলা হয় 'সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের মূলে আঘাত করে।'

৬. রূপনারায়ণপুরে এক বড় ধরনের শ্রমিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর ফলে অবহেলিত মানুষগুলো যাদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ ছিল না, তারা শিক্ষালাভের সুযোগ পায়। শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য গণশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। মানুষ শিক্ষিত হওয়ার ফলে ছোট ছোট জাতিগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক ব্যবস্থা চালু হওয়ায় দেশটির সমাজব্যবস্থায় ধনী-গরিব কথাটি দ্রুত উচ্ছেদ হয়।
ক. ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস-এর সময়কাল কত ছিল?
খ. কমিউনিস্ট ইশতেহার বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটি কোন বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কেন রূপনারায়ণপুরে পরিবর্তনে রাশিয়ার সামাজিক পরিবর্তনের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে- বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফ্রেডারিক এঙ্গেলস-এর সময়কাল হচ্ছে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

খ. কমিউনিস্ট ইশতেহার হচ্ছে মার্কস ও এঙ্গেলস কর্তৃক সম্মিলতভাবে লেখা একটি বই যেখানে ইতিহাসের বন্তুবাদী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়। এ গ্রন্থে বলা হয় যে, শৃঙ্খল ছাড়া প্রলেতারিয়েতদের হারানোর কিছু নেই। এ গ্রন্থে কার্ল মার্কস ও এঙ্গেলস ইতিহাসের বন্তুবাদী ব্যাখ্যা, শ্রেণি সমাজের বিবর্তন ও বিকাশের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে শ্রেণি সংগ্রামে শোষক ও শোষিত শ্রেণির দ্বনে্দ্বর মূল কারণ হিসেবে উৎপাদনের মালিকানাকে চিহ্নিত করেছেন। তারা উভয়ে তৎকালীন ইউরোপের বিপ্লবী কর্মতৎপরতার উত্থানে সর্বহারাশ্রেণির বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শ্রেণি সংগ্রামের নিষ্পত্তি হতে পারে বলে মনে করেন।

গ. উদ্দীপকটি রুশ বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাশিয়ায় ১৪০টির মতো ভিন্ন ভাষাভাষী জাতির অস্তিত্ব ছিল। বিপ্লবের পর প্রতিটি জাতিকে তার আলাদা সত্তা বজায় রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। সকল নাগরিকের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ফলে রুশ জাতি ছাড়াও অপরাপর পশ্চাপদ জাতির লোকেরা স্বল্প সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে শিক্ষিত হয়ে ওঠে, ছোট বড় জাতিসমূহের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। রুশ বিপ্লব জাতিসমূহের আতমনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তা পৃথিবীর অপরাপর জাতিসমূহকে অনুপ্রাণিত করে। উদ্দীপকে জামিয়ার দেশে সংঘটিত রুশ বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি রুশ বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে রূপনারায়ণপুরের পরিবর্তনে রাশিয়ার সামাজিক পরিবর্তনের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে। রুশ বিপ্লবের পর রাষ্ট্র রাশিয়ার নাগরিকের শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করায় পশ্চাৎপদ জাতিগুলো ক্রমেই শিক্ষিত হতে থাকে। ফলে জাতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। রাশিয়ায় ১৪০টির মতো ভিন্ন ভাষাভাষী জাতির অস্তিত্ব ছিল। বিপ্লবের পর প্রতিটি জাতিকে তার আলাদা সত্তা বজায় রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। রুশ বিপ্লব জাতিসমূহের আতমনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়, তা পৃথিবীর অপরাপর জাতিসমূহকে অনুপ্রাণিত করে। রাশিয়ার এ পরিবর্তনসমূহ যে শুধুমাত্র শিক্ষা ও সংস্কৃতিগত পরিবর্তনকে নির্দেশ করে তা নয়। এ পরিবর্তনসমূহ রাশিয়ার সামাজিক পরিবর্তনসমূহকেও নির্দেশ করে। তাছাড়া রাশিয়ায় পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা বাতিল করে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। শ্রমিক ও কৃষকশ্রেণি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। শিল্পকারখানা, ভূসম্পত্তি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সকল কিছুই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করা হয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিলুপ্ত করে সকলকে শ্রম দ্বারা জীবিকা অর্জনে বাধ্য করা হয়। ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করলে সমাজে ১ শ্রেণিভেদ বিলুপ্ত হয়। আর এ পরিবর্তনসমূহ উদ্দীপকে আলোচিত বিষয়সমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে রূপনারায়ণপুরের পরিবর্তনের সাথে রাশিয়ার সামাজিক পরিবর্তনের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

৭. মহান নেতা মি. 'ক' বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করেন। তিনি প্রবাস জীবনে থেকেও জনগণকে সংগঠিত করতে থাকেন অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। দেশে ফিরে তিনি মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বিপ্লবের নেতৃতব দেন। তাঁর নেতৃতেব দেশের অত্যাচারী শাসনের অবসান হয় এবং সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার লাভ করে।
ক. 'Das Capital' গ্রন্থটির লেখক কে?
খ. বলশেভিক বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মি. 'ক' এর সাথে পাঠ্যপুস্তকের কোন নেতার সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ইতিহাসে উক্ত নেতার অবদান পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মূল্যায়ন কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Das Capital গ্রন্থটির লেখক কার্ল মার্কস।

খ. রাশিয়ার জারতন্ত্রের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে যোগদান দেশটিতে গভীর সংকটের সৃষ্টি করে। এ সংকটে ভি. ই লেনিনের নেতৃত্বে এগিয়ে আসে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। আর সংখ্যাগরিষ্ঠদের অংশগ্রহণ বোঝানোর জন্যই রুশ বলশেভিক বিপ্লব হিসেবে উক্ত বিপ্লবকে অখ্যায়িত করা হয়। ১৯১৭ সালে ধনতন্ত্রের বিপরীত ধর্মী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সাধারণ মানুষের আর্থসামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে এ আন্দোলন পরিচালিত হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মি. 'ক' এর সাথে পাঠ্যপুস্তকের মহান নেতা রুশ সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ভি.ই লেনিনের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সমাজতন্ত্রের ইতিহাসে যেসব মনীষী মার্কস ও এঙ্গেলসের চিন্তাধারাকে ধর্মীয় বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন এবং যারা তাদের প্রতিটি চিন্তায় ও কর্মে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে মার্কসবাদের আদর্শকে বাস্তবে রূপায়িত করার প্রয়াস পেয়েছেন, লেনিন তাদের অন্যতম। রুশ বিপ্লবের এ মহানায়ক ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে কাজন প্রদেশের ভলগা নদী তীরবর্তী সিনবিরস্ক নামক স্থানে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। লেনিনের পরিবার বিপ্লবী হিসেবেই খ্যাত। তার ভাই আলেকজান্ডার রুশ জারকে হত্যা করার অপরাধে ফাঁসিমঞে প্রাণ দিয়েছিলেন। তার অপর ভাই ও দুই বোন রাজনৈতিক কারণে পুলিশের নজরবন্দি ছিলেন। লেনিন ছাত্রাবস্থায় ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। পরবর্তীকালে বিপ্লবী দলে যোগ দেওয়ার অপরাধে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দ- ভোগ করেন। কাজেই সমসাময়িক রাজনীতি ও সমাজের নানা ঘটনা তার কিশোর মনকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। মার্কস ঐতিহাসিক বন্তুবাদের নিরিখে শ্রেণিহীন ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে তত্ত্ব দিয়েছিলেন, তাকে ধারণ করে লেনিন বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে যার সফল বহিঃপ্রকাশ ঘটে লেনিনের হাত ধরে।

ঘ. উক্ত নেতা অর্থাৎ ভি.ই লেনিন পৃথিবীর বুকে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
পারিবারিকভাবে লেনিন বিপ্লবী আদর্শ গ্রহণ করলে সরকার তাকে নির্বাসনে পাঠায়। রাশিয়ার জারতন্ত্রের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কৃষকগণ বিদ্রোহী হয়ে উঠলে শ্রমিকরাও তাদের সাথে যোগ দেয়। এ অবস্থায় বলশেভিক নেতা লেনিন সুইজারল্যান্ডের নির্বাসন থেকে রাশিয়ায় ফিরে এসে (১৬ এপ্রিল, ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দ) বলশেভিক কর্মীদের সামনে ১ বিখ্যাত 'এপ্রিল থিসিস' বা 'এপ্রিল মতবাদ' নামে এক কর্মধারা তুলে ধরেন। বলশেভিক কর্মীদের তিনি বলেন যে, বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্রী সরকারের হাত থেকে এক্ষুণি ক্ষমতা কেড়ে নিতে হবে। তিনি দাবি করেন যে, ‘‘সব ক্ষমতা সোভিয়েতগুলোর হাতে দিতে হবে।’’ তিনি শ্রমিক, কৃষক, সৈনিক ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে 'সর্বহারার একনায়কত্ব' প্রতিষ্ঠার আহবান জানান। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই বহুসংখ্যক সৈনিক ও অসংখ্য শ্রমিক প্রেট্রোগ্রাডের রাস্তায় সমবেত হয়ে 'সব ক্ষমতা সোভিয়েতগুলোকে দেবার দাবি তোলে প্রজাতন্ত্রী সরকার এ শান্তিপূর্ণ জমায়েতের ওপর গুলি চালায়। এ অবস্থায় 'মেনশেভিক' দলের সেনাপতি আলেকজান্ডার কেরেনস্কি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এ সরকারও অচিরেই জনসমর্থন হারায়। জনসাধারণের আপত্তি উপেক্ষা করে এ সরকার জার্মানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যুদ্ধের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সংকট তীব্রতর হয়। অবস্থা মেনশেভিকদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এ পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর লেনিনের নির্দেশে ট্রটস্কির নেতৃত্বে 'রেড গার্ড' বা 'লাল ফৌজ' নামক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী রাজধানী প্রেট্রোগ্রাড-এর সরকারি অফিস, ব্যাংক, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও রেলস্টেশন দখল করে। কেরেনস্কি পলায়ন করেন। বলশেভিকরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।

৮. ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারে সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয়। জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয়। শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার জন্য অনেক সাঁওতাল জীবন বিসর্জন দেয়। অবশেষে ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের পক্ষে বৈষম্যহীন আইন পাস করতে বাধ্য হয়। সাঁওতালরা সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নতুন শোষণহীন সমাজব্যবস্থার সাথে পরিচিত হয়।
ক. 'নিহিলিজম' কী?
খ. 'এপ্রিল থিসিস' সম্পর্কে বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে সাঁওতালদের সংগ্রামের সাথে বিশ শতকের প্রথমদিকের কোন সংগ্রামের সাদৃশ্য রয়েছে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে তার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত সংগ্রামের প্রভাব বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল? তোমার মতামত দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'নিহিলিজম' হলো ঊনিশ শতকে রাশিয়ায় জার বিরোধী একটি গুপ্ত সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম।

খ. ১৯১৭ সালে ১৬ এপ্রিল লেনিন রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তন করে তার পরের। দিন যে তত্ত্ব প্রদান করেন তাই বিশ্বের ইতিহাসে 'এপ্রিল থিসিস' নামে খ্যাত। রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তনের পরের দিনই লেনিন আকস্মিকভাবে তাঁর 'এপ্রিল তত্ত্ব বা 'এপ্রিল থিসিস' ঘোষণা করেন। এ এপ্রিল তত্ত্বের মূল বিষয় ছিল-
১. সামরিক সরকারের সাথে অসহযোগিতা করা।
২. ক্রমাগত যুদ্ধ বিরোধী প্রচার চালানো।
৩. সকল জমি রাষ্ট্রীয়করণ করা।
৪. সোভিয়েত সমূহকে ক্ষমতাসম্পন্ন করে তোলা। লেনিনের এ 'এপ্রিল তত্ত্ব' সময়ের দাবি ছিল।

গ. উদ্দীপকে সাঁওতালদের সংগ্রামের সাথে বিশ শতকের প্রথমদিকে রাশিয়ায় সংঘটিত বলশেভিক বিপ্লবের সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯১৭ সালে সংঘটিত বলশেভিক বা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বিশ শতকের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। প্রথম বিশবযুদ্ধ চলাকালীন (১৯১৫ ১৮) পশ্চিম ইউরোপ যখন এক বিরাট পরিবর্তনের সম্মুখীন হয় ঠিক তখনই রাশিয়ার এ বিপ্লবের সূচনা হয়। এ বিপ্লবের পেছনে নানাবিধ কারণ বিদ্যমান। ক্রিমিয়ার যুদ্ধ, জাপান যুদ্ধ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভে রাশিয়ার একাধিক বিপর্যয় জনসাধারণের নিকট জারতন্ত্রের অসারতা প্রতিপন্ন করেছিল। ফলে সেদেশে অভ্যন্তরীণ বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে। এছাড়া ১৯০৫ সাল থেকে ঘটিত শ্রমিক অসন্তোষ, রাশিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট, জার্মানির সাথে অপমানকর সন্ধি, মান্ধাতা আমলের শিল্পকারখানা ও কৃষি ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট খাদ্যাভাব এবং সর্বোপরি সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের প্রভাবে একসময় রুশবিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে। মূলত স্বৈরাচারী জার সরকারের নির্যাতন, শোষণ ও বঞ্চনায় দীর্ঘকাল ধরে রুশ জনগণের হৃদয়ে যে জারবিরোধী মনোভাব পুঞ্জীভূত হয়েছিল তা উপযুক্ত পরিস্থিতির কারণ বিপ্লবে বিস্ফোরিত হয়।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি উক্ত সংগ্রাম অর্থাৎ বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব বিশবব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
রাশিয়ায় সংঘটিত ১৯১৭ সালের এ ঘটনা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাশিয়ার শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের নেতা লেনিন রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে যে আলোড়ন তুলেছিলেন তাতে আলোড়িত হয়েছিল গোটা বিশ্বের রাজনীতি। সমাজ বিকাশের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর জাতিসমূহ বিংশ শতাব্দীতে সমাজতন্ত্রের ভাবধারায় আলোড়িত হয়েছিল। রুশ বিপ্লবের পর ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশসহ এশিয়ার চীন, মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং লাতিন আমেরিকার কিউবায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল পৃথিবীর সবদেশ ও জাতি রুশ বিপ্লব দ্বারা প্রভাবিত হবে। কিন্তু রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে পারে নি। এ বিপ্লব মানুষের সামগ্রিক চাহিদা পূরণ করতে পারে নি। তদুপরি পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সংগতি রেখে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে নি। তবে রুশ বিপ্লবের প্রভাবে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে উপনিবেশবাদ ভেঙে পড়ে এবং জাতীয় সংগ্রাম তীব্রতর হয়েছিল। বিভিন্ন দেশে সমাজতন্ত্রের বেশকিছু মর্মবাণী ধারণ করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কল্যাণকামী রাষ্ট্রের বিস্তার ঘটেছে। এভাবে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব সারা বিশেবর রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল।

৯. পাকিস্তান আমলে বাংলার শ্রমিক কৃষকসহ সকল স্তরের জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণে একটি সর্বাত্মক জনযুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধ ছিল শোষকের বিরদ্ধে এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
ক. ভার্সাই নগরী কোথায়?
খ. নাৎসিবাদ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ইউরোপের কোন ঘটনার সাথে মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের নেতৃত্বের ন্যায় উক্ত ঘটনার নায়কের ভূমিকা লেখ।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভার্সাই নগরী ফ্রান্সে অবস্থিত।

খ. নাৎসিবাদ হচ্ছে হিটলারের রাজনৈতিক মতাদর্শ। ১৯১৯ সালে হিটলার জার্মান ওয়ার্কাস পার্টিতে যোগ দেন। ১৯২০ সালের এ দলের নাম পরিবর্তন করে রাখেন 'জাতীয় জার্মান সমাজতন্ত্রবাদী শ্রমিক দল (National Socialist German Workers Party) সংক্ষেপে নাম ছিল নাৎসি। নাৎসিবাদের লক্ষ্য ছিল বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই শাসন পরিচালনা করা। নাৎসিবাদ ছিল কমিউনিজম বিরোধী। এ মতবাদের পেছনে ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদ। জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠাই ছিল নাৎসিবাদের মূলমন্ত্র।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ইউরোপের দেশ রাশিয়ায় সংঘটিত বলশেভিক বিপ্লবের সাথে মিল রয়েছে।
প্রাচীনপন্থী জরাগ্রস্ত সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য ইউরোপে যেসকল বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে এর মধ্যে বলশেভিক বিপ্লব অন্যতম।। বলশেভিক বিপ্লব আকস্মিকভাবে অথবা স্বল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়নি। এ বিপ্লবের সামাজিক পটভূমি তৈরি হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে। বলা যায় যে, ইউরোপ মহাদেশে সমাজতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ এবং রাশিয়াতে এ আন্দোলনের বিস্তৃতি বলশেভিক বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করেছিল। রাশিয়ায় প্রকৃতপক্ষে তিনটি বিপ্লব ঘটেছিল। ১৯০৫ সালে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম বিপ্লব ঘোষিত হয়। এরপর ১৯১৭ সালে মার্চ মাসের বিপ্লবে ডুমা বা রুশ পার্লামেনেটর মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়া শ্রেণি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এ সময় লেনিন সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর বিখ্যাত এপ্রিল থিসিস ঘোষণা করেন। তিনি বলেন রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতন্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। বরং রাশিয়ার সরকার পরিচালিত হবে কৃষক শ্রমিক দ্বারা। ১৯১৭ সালের এপ্রিল-মে মাসে রাশিয়ায় ব্যাপক অরাজকতা দেখা দেয়। বুর্জোয়া সরকার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়। দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টির লোকজন সমগ্র রাশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর বলশেভিকরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক দখল করে নেয়। এভাবে বলশেভিক বিপ্লব সম্পনণ হয়। তাই বলা যায়, বলশেভিক বিপ্লব ছিল রাশিয়ার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইতিহাসে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নেতার নেতৃতেবর ন্যায় রাশিয়ায় সংঘটিত বলশেভিক বিপ্লবের নেতা লেনিনের ভূমিকা অপরিসীম।
লেনিন ছিলেন একজন সম্মোহনী নেতৃত্বগুণের অধিকারী নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। জনগণ রুটির জন্য রাস্তায় নেমে আসে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে সারা রাশিয়ায় ব্যাপক অভ্যুত্থান ঘটে। জনগণের দাবির মুখে জার দ্বিতীয় নিকোলাস সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণি সরকার গঠন করে। এসময় লেনিন সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসেন। তিনি ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর বিখ্যাত এপ্রিল থিসিস ঘোষণা করেন। ওই থিসিসে লেনিন উল্লেখ করেছিলেন যে ১. মার্চ বিপ্লবে বুর্জোয়া শ্রেণির জয় হয়েছে, এতে শ্রমিকদের সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। ২. বুর্জোয়া শাসনের তথাকথিত সংকটের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। বুর্জোয়া বিপ্লব এবং শ্রমিক বিপ্লব একসাথে চলবে এবং শেষ পর্যন্ত শ্রমিকরা ক্ষমতা দখল করবে। ৩. শ্রমিকের স্বার্থে এখন ক্ষমতা দখল করতে হবে।
লেনিনের লক্ষ্য ছিল বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপান্তরিত করা এবং জমিদার ও পুঁজিপতিদের উচেছদ সম্পূর্ণ করা। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর বলশেভিকরা বিদ্রোহী হয়ে রেলস্টেশন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও অন্যান্য সরকারি ভবন দখল করে নেয়। লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা ক্ষমতা গ্রহণ করে। এভাবে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, বলশেভিক বিপ্লব সংঘটনে এবং রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লেনিনের ভূমিকা অপরিসীম।

১০. 'নাহার' নামক একটি কারখানায় শ্রমিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। ফলে শ্রমিকরা শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর হয়।
ক. লেনিন কোন দেশে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দুটি কারণ সংক্ষেপে লেখ।
গ. উদ্দীপকের পরিবর্তন কি রুশ বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উল্লিখিত পরিবর্তন রাশিয়ায় কী ধরনের প্রভাব ফেলেছিল বলে তুমি মনে কর? যুক্তি দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. লেনিন রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান দু'টি কারণ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ নীতি ও সারায়েভো হত্যাকান্ড।
সাম্যাজ্যবাদ নীতি : অষ্টাদশ শতাব্দীতে উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে জার্মানির আবির্ভাব ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স ভালো চোখে দেখেনি। উপনিবেশ দখলের উদ্দেশ্যে জার্মানিও এ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছিল এক বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে যুদ্ধের পরিবেশ খুঁজছিল।
সারায়েভো হত্যাকান্ড : সারায়েভো হত্যাকান্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক ফার্ডিনান্ড ও তার স্ত্রী কাউন্টেস সোফিয়া সারায়েভোতে আততায়ীর হাতে নিহত হয়। এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে অস্ট্রিয়া ও জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নেমে পড়ে।

গ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে আলোচিত পরিবর্তন রুশ বিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাস এবং তাঁর মন্ত্রী প্রিভির কঠোর শাসনে জনগণের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার বিপর্যয় হলে সাধারণ মানুষ জারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সারা রাশিয়াতে অর্থনৈতিক সংকট, খাদ্যের অভাব ও শ্রমিক ধর্মঘট দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে সারা রাশিয়ায় এক ব্যাপক অভ্যুত্থান ঘটে। ৮ মার্চ কৃষক-শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে। জনগণ পেত্রোগ্রাদ দখল করে নেয়। জনগণের দাবির মুখে জার দ্বিতীয় নিকোলাস সিংহাসন ত্যাগ করেন। ফলে রাশিয়ায় বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির সরকার গঠিত হয়। কিন্তু রুশ বিপ্লবের নায়ক লেনিন ঘোষণা করলেন রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই বরং রাশিয়ার সরকার পরিচালিত হবে কৃষক-শ্রমিক দ্বারা। ফলে বলশেভিক পার্টির হাজার হাজার সদস্য লেনিনের নেতৃত্বে জনগণকে সাথে নিয়ে সমগ্র রাশিয়ায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং পেত্রোগ্রাদের দিকে অগ্রসর হয়। ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর বলশেভিকরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকসহ সকল সরকারি স্থাপনা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। অতঃপর লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি সরকার গঠন করে। এভাবে বলশেভিক বিপ্লব সম্পনণ হয়।
পরিশেষে বলা যায়, রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক বিপ্লব রাশিয়ার ইতিহাসে একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। এ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় জারতন্ত্রের পতন ঘটে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিবর্তন রাশিয়ায় তাৎপর্যময় প্রভাব ফেলেছিল। রুশ বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এ বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় শ্রমিকশ্রেণির বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিনের ভূস্বামী ও সামন্তদের অত্যাচার শোষণের অবসান ঘটে। এ বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা, দর্শন ও রাষ্ট্রচিন্তার বাস্তব রূপায়ন ঘটে। রাশিয়ায় ১৪০টির মতো ভিন্ন ভাষাভাষী জাতির অস্তিত্ব ছিল। রুশ বিপ্লবের পর প্রতিটি জাতিকে তার পৃথক সত্তা বজায় রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রত্যেক নাগরিকের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। ফলে সকল জাতির লোকেরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষিত হয়ে ওঠে। সকল জাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়ায় গির্জাকে রাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গির্জার সম্পত্তি জাতীয়করণ করা হয়। এভাবে জনগণের উপর গির্জার কর্তৃত্ব হ্রাস পায়।
পরিশেষে বলা যায়, রুশ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। ফলে জনগণ জারের কঠোর শাসন থেকে মুক্তি পায়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post