HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
তৃতীয় অধ্যায় : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ভার্সাই সন্ধি ও লীগ অব নেশনস

১. কংশুর ও উলপুর গ্রামের মধ্যে যুদ্ধের সূত্রপাত হলেও কয়েকটি গ্রাম কংশুরের পক্ষ নেয় এবং কয়েকটি গ্রাম উলপুরের পক্ষ নেয়। অতঃপর দু পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ মারামারিতে অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। এর প্রভাব পড়ে পার্শ্ববর্তী শক্তিশালী বনগ্রামের ওপর। গ্রামটিকে অর্থনৈতিক ক্ষতির কবলে পড়তে হয়। সকল গ্রামই কিছু না কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বনগ্রামে দেখা দেয় পুষ্টিহীনতা এবং নিজড়া গ্রামে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং বলাকইড় গ্রামে মহামারী দেখা দেয়।
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর কত লোক মারা যায়?
খ. রাশিয়া ফরাসি জোটের সৃষ্টি কীভাবে হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন সময়ে জার্মানির পক্ষে কোন কোন রাষ্ট্র ছিল? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের গ্রামের ন্যায় পুষ্টিহীনতা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছিল ইউরোপের কোন কোন রাষ্ট্র? বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর ৯০ লাখ লোক মারা যায়।

খ. ফরাসি মন্ত্রী ডেলক্যাসি ফ্রান্সের মিত্রহীনতা দূর করার জন্য রাশিয়ার সাথে মিত্রতা স্থাপনে আগ্রহ পোষণ করেন। রাশিয়াও ফ্রান্সের সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ফরাসি সরকার রাশিয়াকে অল্প সুদে বিরাট অঙ্কের ঋণ প্রদান করে। এতে রাশিয়া সরকার ফরাসির ব্যবহারে বেশ প্রভাবিত হন। ফলে ১৮৯১ সালে দুদেশের সেনাপতিরা এক সামরিক চুক্তি সম্পাদন করেন এবং ১৮৯৩ সালে ফ্রান্স-রাশিয়া চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী জার্মানি অথবা ইতালি ফ্রান্সকে আক্রমণ করলে রাশিয়া তাদের বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েন করবে। অন্যদিকে জার্মানি অথবা অস্ট্রিয়া রাশিয়াকে আক্রমণ করলে ফ্রান্স তাদের বিরুদ্ধে সেনা মোতায়েন করবে। এভাবে রাশিয়া ফরাসি জোটের সৃষ্টি হয়।

গ. উদ্দীপকের প্রেক্ষাপটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পক্ষে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, তুরস্ক ও বুলগেরিয়া অবস্থান করে। যুদ্ধের শুরুতেই জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্ক দেশটির নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির সাথে ১৮৭৯ সালে 'দ্বিশক্তি চুক্তি' সম্পাদন করেন। এ চুক্তির বিষয় ছিল দুপক্ষের কেউ রাশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হলে অপরপক্ষ সহযোগিতা করবে। তবে অন্যকোনো দেশ আক্রমণ করলে অপরপক্ষ নিরপেক্ষ থাকবে। 'দ্বিশক্তি চুক্তির' পর রাশিয়া তার দেশের নিরাপত্তার জন্য জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সাথে ১৮৮১ সালে 'তিন সম্রাটের চুক্তি' স্বাক্ষর করেন। ফলে জার্মানি রাশিয়ার ভয় থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী রাশিয়া ফ্রান্সের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলে জার্মানি ইতালিকে পক্ষে নেয়। এদিকে অস্ট্রিয়া হাঙ্গেরি রুশ বিরোধী হওয়ায় মিত্রশক্তির জোট আরও দৃঢ় হয়।

ঘ. উদ্দীপকের গ্রামের ন্যায় ইউরোপের জার্মানি, সমগ্র ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে পুষ্টিহীনতা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হয়েছিল। উদ্দীপকে কংশুর ও উলপুর গ্রামের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হলে- পার্শ্ববর্তী অনেক গ্রামে যুদ্ধের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে। সকল গ্রামই কিছু না কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বনগ্রামে দেখা দেয় পুষ্টিহীনতা ও বলাকইড় গ্রামে মহামারী দেখা দেয়। তেমনি ১৯১৪ সালে অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে যুদ্ধ হলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিত্রশক্তি জার্মানির ভিতরে নৌ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে জার্মানিতে খাদ্যসংকট দেখা দেয় এবং জনগণ পুষ্টিহীনতায় ভুগে নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে আমেরিকায় ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ ধরা পড়ে। পরবর্তীতে সৈন্য দ্বারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এবং ২ কোটির বেশি লোক মারা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের মানুষ কেবল খাদ্যাভাবে ভুগেনি অর্থনৈতিক সংকটেও পড়েছে। যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করার জন্য যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।

২. কংশুর ও উলপুর গ্রামের মারামারিকে কেন্দ্র করে অবশেষে ১০টি গ্রামের চেয়ারম্যান ও মাতববর মিলে একটি সালিসি বৈঠকের আয়োজন করেন। এ বৈঠক অবশেষে হাটবাড়িয়া গ্রামেই অনুষ্ঠিত হলো। মাতববর ও চেয়ারম্যানদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ১. করপাড়ার মোঃ আবুতালেব ফকির, ২. বনগ্রামের জুয়েল মোল্লা, ৩. হাটবাড়িয়ার হারুন ফকির এবং ৪. কংশুর গ্রামের রাজ্জাক গাজী।
ক. ভার্সাই সন্ধি কত সালে সংঘটিত হয়?
খ. লীগ অব নেশনস গঠনের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মতো তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন দেশে শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহের নাম এবং এদের কার্যক্রম বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯১৯ সালের ২৮ জুন ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।

খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৪ দফা নীতি ঘোষণা করেন। প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে এ প্রস্তাব গৃহীত হলে ১৯ সদস্যের একটি কমিটিকে লীগের গঠনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ কমিটি লীগ অব নেশনস গঠনের জন্য 'লীগ কভেন্যান্ট' নামে একটি খসড়া সংবিধান রচনা করেন। পরবর্তীতে এটি ১৯২০ সালের ১০ জানুয়ারি লীগ অব নেশনস নামে আত্মপ্রকাশ করে।

গ. উদ্দীপকের মতো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য ৩২টি দেশের প্রতিনিধিবর্গ সুইজারল্যান্ডে একত্রিত হওয়ার চিন্তা করেন। কিন্তু সেডানের যুদ্ধে জার্মানি ফ্রান্সের মর্যাদা নাশ করেছিল এবং ফ্রান্সের সম্পত্তি দখল করেছিল। এবার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফ্রান্সের প্যারিসে শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শান্তি সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিবর্গের মধ্যে যাদের হাতে ক্ষমতা ছিল তারা হলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিডলয়েড জর্জ, ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ ক্লিমেনশো এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টোরিও ওর্লান্ডো। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি স্থাপনে উদ্যোগী হলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ বলেন, জার্মানিকে বিচ্ছিন্ন করা হলো অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিকে বিভক্ত করা। এজন্য তিনি অস্ত্রশস্ত্র হ্রাস করে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে দূর করে একটি 'লীগ অব নেশনস' নামে আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তোলেন।

ঘ. উক্ত সম্মেলন তথা প্যারিস শান্তি সম্মেলনে মোট ৩২টি দেশ অংশগ্রহণ করেন। এ দেশগুলোর মধ্যে প্রধান হলো ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইতালি। যুদ্ধকালীন সময়ে নিজের দেশকে রক্ষাকরার জন্য বিভিন্ন দেশ পরস্পরের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। তবে বেশিরভাগ দেশ জার্মানিকে দোষী বলে আখ্যায়িত করে এবং জার্মানির নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা চালায়। দেশগুলো সন্ধির শর্ত সম্পর্কে জার্মানিকে আলোচনার কোনো সুযোগ দেয়নি, বরং উপস্থিত প্রতিনিধিদেরকে যুদ্ধবন্দী করে রাখে। উপস্থিত দেশগুলো ভৌগোলিক শর্তাবলি হিসেবে জার্মানি যেন ফ্রান্সকে আক্রমণ করতে না পারে তার জন্য সীমান্টে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়। মিত্রশক্তির ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ জার্মানিকে দিতে বলা হয়। জার্মানির সৈন্যসংখ্যা কমানো। এবং ঐ সৈন্য কেবল অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োগের আদেশ দেওয়া হয়। জার্মানিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভার্সাই সন্ধিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এমনকি সামরিক প্রহরায় ভার্সাই প্রাসাদে নিয়ে আসা হয় এবং স্বাক্ষর শেষে বের করে দেওয়া হয়। তাই ভার্সাই সন্ধিকে জবরদস্তিমূলক শাস্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়। যদি উপস্থিত দেশগুলো জার্মানির প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ না করত এবং সুষ্ঠু বিচারকাজ করত তাহলে হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হতো না।

৩. 'ক' একটি দেশের নাম। দেশটি নতুন। কিন্তু তার মধ্যে জাতীয় অহমিকা চরমভাবে দেখা দিয়েছে। সে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের মানুষকে তাদের সমকক্ষ মনে করে না। কিন্তু তার উপনিবেশ নেই। সে তার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য শক্তিশালী দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। উপনিবেশের খোঁজে সে মরিয়া হয়ে ওঠে। এর পরিণামে 'ক'-এর সাথে অনেক দেশের যুদ্ধ বাঁধে। এ যুদ্ধের পরিণাম হয় খুবই মারাত্মক।
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কখন হয়েছিল?
খ. কোন ঘটনা থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু হয়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত দেশের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ে বর্ণিত কোন দেশের মিল আছে?
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত যুদ্ধ তোমার পাঠ্যবিষয়ে বর্ণিত যুদ্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৯১৪-১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে।

খ. ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চিডিউক ফ্রাঞ ফার্ডিনান্ড ও তাঁর স্ত্রী কাউন্টেস সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো ভ্রমণে এলে সার্বীয় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। ইতিহাসে এটি 'সারায়েভো হত্যাকান্ড' নামে পরিচিত। এ ঘটনা থেকেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু হয়। এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আশুকারণ হলেও এর পেছনে আরও বহুবিধ কারণ রয়েছে।

গ. উদ্দীপকে 'ক' একটি দেশের নাম। দেশটি নতুন। কিন্তু তার মধ্যে জাতীয় অহমিকা চরমভাবে দেখা দিয়েছে। সে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের মানুষকে তাদের সমকক্ষ মনে করে না। কিন্তু তার উপনিবেশ নেই। সে তার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য শক্তিশালী দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। উপনিবেশের খোঁজে সে মরিয়া হয়ে ওঠে। এর পরিণামে 'ক' রাষ্ট্রের সাথে অনেক দেশের যুদ্ধ বাঁধে। এ যুদ্ধের পরিণাম হয় খুবই মারাত্মক। উদ্দীপকে বর্ণিত দেশের সাথে জার্মানির মিল রয়েছে। ১৮৭১ সালের পর ঐক্যবদ্ধ জার্মান রাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু এসব পণ্য ব্রিটিশ ও ফরাসিদের নিয়ন্ত্রিত বাজারে প্রবেশ করানো বেশ কঠিন ছিল। জার্মান রাষ্ট্রের বাজার দখলের প্রচেষ্টা, উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার বাসনা ইউরোপকে একাধিক সামরিক শক্তিশিবিরে বিভক্ত করে এবং এরই ফলশ্রুতিতে সংঘটিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত যুদ্ধের সাথে পাঠ্যবইয়ে আলোচিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে। সারায়েভো হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। তবে এটিই এ যুদ্ধের একমাত্র কারণ নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের মধ্যেই এর প্রকৃত কারণ লুকিয়ে আছে। উপনিবেশবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোকে নীতিবিবর্জিত বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে ফেলে। ক্রমেই তা একাধিক সামরিক শিবিরে বিভক্ত হয়ে সারায়েভো হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত যুদ্ধে রূপ নেয়। সারায়েভোর হত্যাকান্ড অস্ট্রিয়াকে ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং অস্ট্রিয়ার সরকার জার্মানির গোপন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ১৯১৪ সালের ২৩ জুলাই সার্বিয়ার সরকারের নিকট কতকগুলো কাজের শর্ত সংবলিত এক চরমপত্র প্রেরণ করেন। ২৫ জুলাই সার্বিয়ার সরকার এ চরমপত্রের উত্তর পেয়ে করেন। কিন্তু অস্ট্রিয়ার সরকারের কাছে সার্বিয়ার দেওয়া উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৬ জুলাই অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রন্তুত হতে আদেশ দেওয়া হয়। জার্মানির সমর্থন অস্ট্রো-হাঙ্গেরি ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ক্রমেই এ যুদ্ধ আরও বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১ আগস্ট জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং ৩ আগস্ট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ৪ আগস্ট ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে দীর্ঘ চার বছর যুদ্ধ চলার পর ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ যুদ্ধের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটে।

৪. ক ও খ দুটি প্রভাবশালী রাজ্য। কিন্তু তাদের পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘোরতর শত্রুতা চরম আকার ধারণ করে। ক প্রতিবেশী রাজ্যসমূহের সহায়তা নিয়ে খ-কে পরাজিত করে এবং এক শান্তিচুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করে। পরাজিত খ-এর উপর ক যে শান্তিচুক্তি চাপিয়ে দেয় তাতে ভবিষ্যৎ গ-গোলের বীজ নিহিত ছিল।
ক. ভার্সাই সন্ধি কখন স্বাক্ষরিত হয়?
খ. ভার্সাই সন্ধিকে চাপিয়ে দেওয়া সন্ধি কারা মনে করত?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবিষয়ে কোন ঘটনার মিল রয়েছে?
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'খ'-এর প্রতি দুর্ব্যবহার তুমি কীভাবে পাঠ্যবিষয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করবে?

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় ১৯১৯ সালে।

খ. ভার্সাই সন্ধিকে চাপিয়ে দেওয়া সন্ধি মনে করত জার্মানরা। কারণ এ সন্ধি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী জার্মানিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি এবং সন্ধির খসড়াও প্রদান করা হয়নি।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে পাঠ্যবইয়ে আলোচিত ভার্সাই সন্ধির মিল রয়েছে। ঢাকার পাশেই গাজীপুর পৌরসভা। পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত টঙ্গী এবং জয়দেবপুরের মধ্যে চরম শত্রুতা। টঙ্গীর জনগণ অন্যান্য স্থানের মানুষদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জয়দেবপুরের মানুষদের পরাজিত করে। পৌরসভার সকল মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য বিজয়ী ও পরাজিতরা পৌরসভায় মিলিত হয়ে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। বিজয়ী পক্ষ পরাজিত জয়দেবপুরের ভালো আচরণ করেনি। এতে ভবিষ্যতে গন্ডগোলের সম্ভাবনা প্রতি লুক্কায়িত ছিল। ১৯১৯ সালে মিত্রপক্ষের সাথে জার্মানির ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এ সন্ধির মাধ্যমেই জার্মানির সাথে মিত্রপক্ষের যুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয়। সন্ধি স্বাক্ষরের পূর্বে ভার্সাই সন্ধির খসড়া। জার্মানিকে দেওয়া হয়নি এবং সন্ধি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী জার্মানিকে মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই পরবর্তীতে জার্মানরা এ সন্ধিকে চাপিয়ে দেওয়া সন্ধি বলে অভিহিত করে এবং প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে।

ঘ. ঢাকার পাশেই গাজীপুর পৌরসভা। পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত টঙ্গী এবং জয়দেবপুরের মধ্যে চরম শত্রুতা। টঙ্গীর জনগণ অন্যান্য স্থানের মানুষদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জয়দেবপুরের মানুষদের পরাজিত করে। পৌরসভার সকল মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য বিজয়ী ও পরাজিতরা পৌরসভায় মিলিত হয়ে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে। বিজয়ী পক্ষ পরাজিত জয়দেবপুরের প্রতি ভালো আচরণ করেনি। এতে ভবিষ্যতে গন্ডগোলের সম্ভাবনা লুক্কায়িত ছিল। উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে পাঠ্যবইয়ে আলোচিত ভার্সাই সন্ধির মিল রয়েছে। ১৯১৯ সালে স্বাক্ষরিত এ সন্ধিতে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী জার্মানিকে মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং সন্ধি স্বাক্ষরের পূর্বে ভার্সাই সন্ধির খসড়াও জার্মানিকে দেওয়া হয়নি। এ সন্ধির শর্ত অনুযায়ী জার্মানি ফ্রান্সকে তাদের আলসেস-লরেন অঞ্চল এবং ডেনমার্ককে সেস্নজভিগ নামক স্থান ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। জার্মান নিয়ন্ত্রিত হেলিগোল্যান্ড এবং ডিউন পোতাশ্রয় এবং দুর্গ ধ্বংস করা হয়। জার্মানি সেনাবাহিনী গঠনের অধিকার হারায়। সকল জার্মান উপনিবেশ ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম ভাগ করে নেয়। ফলে জার্মানির জনগণ এ সন্ধি চুক্তিকে অন্যায় জবরদস্তিমূলক চুক্তি বলে মনে করত। পরবর্তীতে জার্মানরা এ সন্ধিকে চাপিয়ে দেওয়া সন্ধি বলে অভিহিত করে এবং প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। অনুরূপভাবে উদ্দীপকে বর্ণিত বিজয়ী পক্ষও জয়দেবপুরের প্রতি অবিচার করে যা তাদেরকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলে।

৫. হুদাইবিয়ার সন্ধি পাঠ করে একজন ছাত্রী শিক্ষককে প্রশ্ন করল- স্যার এটাতো মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। স্যার বললেন, দৃশ্যত এটা অপমানজনক হলেও ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, এর মধ্যে নিহিত ছিল ইসলামের মহাবিজয়।
ক. কত খ্রিষ্টাব্দে ইতালি ১ম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে?
খ. 'ইউরোপীয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির চরম বিকাশ ১ম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনের একটি কারণ' -ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সন্ধির মতো তোমার পাঠ্যবইয়ের স্বাক্ষরিত চুক্তি/সন্ধির প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সন্ধিটি 'মুসলমানদের জন্য মহাবিজয় হলেও পাঠ্যবইয়ের সন্ধিটি ছিল স্বাক্ষরিত একটি দেশের মহাবিপর্যয়ের কারণ' -উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ইতালি ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে ১ম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

খ. 'ইউরোপীয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির চরম বিকাশ ১ম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনের একটি কারণ'। অর্থাৎ ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি করে পশ্চাৎপদ দেশগুলোর ওপর সাম্রাজ্যবাদী অধিকার বিস্তার করতে অগ্রসর হলে দেশগুলোর মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে ইউরোপীয় বিস্তারনীতি ইউরোপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি করে। প্রত্যেক দেশেই শিল্পপতিগণ যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র প্রন্তুত করতে থাকে। যুদ্ধ ছাড়া এ সরঞ্জামগুলো বিক্রয়ের কোনো পথ ছিল না। তাই ইউরোপীয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিকাশকে ১ম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হয়।

গ. উদ্দীপকে হুদাইবিয়ার সন্ধি পাঠ করে একজন ছাত্রী শিক্ষকের নিকট মন্তব্য করল, স্যার এটাতো অত্যন্ত অপমানজনক। স্যার বললেন, দৃশ্যত এটি অপমানজনক হলেও ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এর মধ্যে নিহিত ছিল ইসলামের মহাবিজয়। উদ্দীপকের হুদাইবিয়ার সন্ধির মতো প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও একটি সন্ধি হয়েছিল। এর নাম ব্রেস্টলিটভস্কের সন্ধি। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের ফলে সোভিয়েত সরকার জার্মানির সাথে ব্রেস্টলিটভস্কের সন্ধির দ্বারা যুদ্ধ ত্যাগ করলে পশ্চিম রণাঙ্গনে ইংরেজ-ফরাসি বাহিনী অনেক সংকটের মধ্যে পড়ে। পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধ বন্ধ হলে পূর্ব রণাঙ্গনের জার্মান বাহিনী পশ্চিম রণাঙ্গনের সৈন্যদের সাথে যোগ দিয়ে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম আক্রমণ করে। অতঃপর মিত্রশক্তির পক্ষ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে চলে গেলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে পেয়ে মিত্রশক্তি নতুন উৎসাহে যুদ্ধ শুরু করে। জার্মানির একার পক্ষে অস্ট্রিয়া, রোমানিয়া, তুরস্কের সাথে যুদ্ধ চালানো কঠিন কাজ। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর, মিত্রশক্তির সাথে জার্মানির যুদ্ধ বিরতি ঘটে। এভাবে দীর্ঘ চার বছর বিভৎস অভিজ্ঞতার পর ইউরোপে শান্তি ফিরে আসে। ১৯১৯ সালে ফ্রান্সের মিত্রশক্তির দেশগুলোর প্রতিনিধিবর্গের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে হুদাইবিয়ার সন্ধি পাঠ করে একজন ছাত্রী শিক্ষকের নিকট মন্তব্য করল, স্যার এটাতো অত্যন্ত অপমানজনক। স্যার বললেন, দৃশ্যত এটি অপমানজনক হলেও ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এর মধ্যেই নিহিত ছিল ইসলামের মহাবিজয়। উদ্দীপকের হুদাইবিয়ার সন্ধির মতো প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও একটি সন্ধি হয়েছিল। এর নাম ব্রেস্টলিটভস্কের সন্ধি। উদ্দীপকের এ সন্ধিটি মুসলমানদের জন্য মহাবিজয় হলেও ব্রেস্টলিটভস্কের সন্ধি ছিল একটি দেশের মহাবিপর্যয়ের কারণ। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের ফলে সোভিয়েত সরকার জার্মানির সাথে ব্রেস্টলিটভস্কের সন্ধির দ্বারা যুদ্ধ ত্যাগ করলে পশ্চিম রণাঙ্গনে ইংরেজ-ফরাসি বাহিনী অনেক সংকটের মধ্যে পড়ে। পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধ বন্ধ হলে পূর্ব রণাঙ্গনের জার্মান বাহিনী পশ্চিম রণাঙ্গনের সৈন্যদের সাথে যোগ দিয়ে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম আক্রমণ করে। অতঃপর মিত্রশক্তির পক্ষ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে চলে গেলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পেয়ে মিত্রশক্তি নতুন উৎসাহে জার্মানির একার পক্ষে অস্ট্রিয়া, রোমানিয়া, তুরস্কের সাথে যুদ্ধ চালানো কঠিন কাজ। তাছাড়া জার্মানির গণতান্ত্রিক দলও কাইজারের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাষ্ট্রে আরেক অরাজকতার সৃষ্টি করে। জার্মানির নৌবাহিনীও তখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এতে জার্মানির কাইজার দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর মিত্রপক্ষের সাথে জার্মানির যুদ্ধ বিরতি ঘটে। সুতরাং বলা যায়, হুদাইবিয়ার সন্ধি মুসলমানদের জন্য মহাবিজয় হলেও ব্রেস্টলিটভস্কের সন্ধি ছিল একটি দেশের মহাবিপর্যয়ের কারণ।

৬. ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলোর আগ্রাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ। ইতালিতে ফ্যাসিস্ট, জার্মানিতে নাৎসি ও জাপানে জঙ্গিবাদের অভ্যুত্থান বিশ্বশান্তিকে বিপন্ন করেছিল। ইতালি কর্তৃক আবিসিনিয়া দখল ও স্পেনের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ ও আলবেনিয়া অধিকার, আন্তর্জাতিক শান্তিকে বিঘ্নিত করে। জাপান ১৯৩১ সালে চীনের মাঞ্চুরিয়া দখল ও ১৯৩৬ সালে দ্বিতীয়বার চীন আক্রমণ করে এশিয়ার শান্তিকে বিঘ্নিত করে। এ শক্তিগুলোকে অনুসরণ করে নাৎসি জার্মানি ইউরোপে ব্যাপক আকারে আগ্রাসন শুরু করে। হিটলার কর্তৃক চেকোস্লোভাকিয়া দখল ছিল আগ্রাসনের চরম নজির।
ক. কোন কোন দেশের মধ্যে ত্রিশক্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল?
খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মানির ওয়েল্ট পলিটিক নীতি ব্রিটেনের আশঙ্কার কারণ হয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে জার্মানির আগ্রাসননীতির সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে হিটলারের ভূমিকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন কাইজারের ভূমিকার অনুরূপ। বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইতালির মধ্যে ত্রিশক্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল।

খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ওয়েল্ট পলিটিক নীতি বা উপনিবেশিক নীতি গ্রহণ করেন। এতে ব্রিটেন মনে করে জার্মানি ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো গ্রাস করতে চায়। তাই জার্মানির ওয়েল্ট পলিটিক বা উপনিবেশ নীতি ব্রিটেনের আশঙ্কার কারণ হয়েছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে জার্মানির আগ্রাসননীতির সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বগামী ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানসিক প্রস্তুতির সাথে সাথে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস ও প্রতিদ্বনি্দ্বতা থেকেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। জার্মানির মনে এ ধারণা সৃষ্টি হয় যে তারাই অন্যান্য দেশ ও জাতির তুলনায় শ্রেষ্ঠ। ফলে তাদের মধ্যে এক তীব্র জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়। রাশিয়া সস্নাভ জাতির রক্ষক হিসেবে সার্বিয়াকে সমর্থন করলে নীতিগত দিক থেকে জার্মানি অস্ট্রিয়াকে সমর্থন করে। তাই রাশিয়াকে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করতে দেখে ত্রিশক্তি জোটের শর্তানুযায়ী জার্মানি অস্ট্রিয়ার পক্ষ অবলম্বন করে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। রাশিয়া জার্মানির সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ১৮৯৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স যুদ্ধে যোগদান করে। এদিকে জার্মানি ফ্রান্স আক্রমণ করার জন্য বেলজিয়ামের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে, বেলজিয়ামের আন্তর্জাতিকভাবে নিরপেক্ষতার চুক্তি ভঙ্গ করলে ইংল্যান্ডও জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে অস্ট্রিয়া, রুমানিয়া, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের পক্ষ নিয়ে জার্মানি, একের পর এক আগ্রাসন নীতি অনুসরণ করে যুদ্ধ চালাতে থাকলে পৃথিবীর অন্যান্য প্রধান প্রধান দেশও এ যুদ্ধে শেষপর্যন্ত যোগ দিয়েছিল। আমেরিকা যুদ্ধের শেষের দিকে এসে যুদ্ধে যোগদান করে। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে জার্মানি আগ্রাসন নীতি অনুসরণ করে। এ আগ্রাসন নীতির চরম প্রকাশ ঘটে চেকোস্লাভাকিয়া দখলের মাধ্যমে। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে জার্মানির আগ্রাসন নীতিও দায়ী ছিল।

ঘ. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে হিটলারের ভূমিকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন কাইজারের ভূমিকার অনুরূপ। আমরা জানি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মানি চারটি দর্শনতত্ত্বের পূজারি ছিল। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম বলেন, 'আমরা নির্বাচিত জাতি। পৃথিবীকে সভ্য করার জন্য ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন'। বার্ন হাউটের মতে, 'যুদ্ধ কেবল জীববিজ্ঞান সম্বন্ধীয় আইন নয়, বরং একটি নৈতিক দায়িত্ব এবং সভ্যতার একটি অপরিহার্য উপাদান'। এ প্রকার মানবতাবোধহীন দর্শন জার্মান জাতিকে উগ্র করে তুলেছিল। মূলত জার্মানে বিসমার্কের পতনের সাথে সাথে তাঁর নীতিও বর্জিত হয়। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ঘোষণা করেন যে, জার্মানি পরিতৃপ্ত দেশ না, অনন্ত বিস্তৃতির সম্ভাবনা জার্মানির রয়েছে। আসলে কাইজারের পররাষ্ট্রনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বরাজনীতিতে দাপটের সাথে অংশগ্রহণ ও উপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তার। সুতরাং কাইজার দাবি করলেন যে, জার্মানিকে বিশ্বসাম্রাজ্য গঠনের অধিকার প্রদান করে বিশ্বশক্তি হিসেবে তাকে স্বীকার করে নিতে হবে। কিন্তু জার্মানি যখন অগ্রগতির দ্বার রুদ্ধ দেখতে পায়, তখন বিশ্বশান্তি ভঙ্গ করতে দ্বিধা করল না। তাই বলা যায়, কাইজারের সাম্রাজ্য লিপ্সা, কারণে-অকারণে অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে খবরদারি, সমরাস্ত্র বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয় এ যুদ্ধকে ত্বরান্বিত বা অনিবার্য করে তুলেছিল। জার্মানির বিভিন্ন যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণমূলক কার্যকলাপে ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্রই জার্মানির বিরুদ্ধে সন্দিহান হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও আমরা হিটলারের মাঝে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের অনুরূপ ভূমিকা লক্ষ করি। একনায়কতন্ত্রের রাজা ও নাৎসি দলের প্রতিষ্ঠাতা হিটলার জার্মানজাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, জার্মানির উদ্বৃত্ত জনগণের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় রাজ্য জয় এবং জার্মানিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত কর্রার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় যুদ্ধের সূত্রপাত করেন। মূলত হিটলারের আসল লক্ষ্য ছিল পূর্ব ইউরোপে জার্মানি সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটানো। এ লক্ষ্য পূরণের জন্য তিনি ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলোকে ভেঙে জার্মানির শক্তি বৃদ্ধি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল পূর্ব ইউরোপে জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তার দ্বারা জার্মানির বাসস্থান বিস্তৃত করা। এ উদ্দেশ্যে তিনি ইউরোপে আগ্রাসন নীতি অবলম্বন করেন। ফলে ইউরোপের তথা পৃথিবীর প্রধান প্রধান দেশসমূহ জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। সুতরাং বলা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে হিটলারের ভূমিকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন কাইজারের ভূমিকার অনুরূপ।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. উনিশ শতকের প্রথম দিকের কথা। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলোকে নীতি বিবর্জিত বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে ফেলে। জনৈক যুবরাজ ও তার স্ত্রী আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার ফলে একটি যুদ্ধ শুরু হয়। এ কথা বলা হলেও যুদ্ধের কারণ ছিল বহুবিধ। ইউরোপের দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধটি শুরু হলেও অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ইউরোপের প্রায় সব দেশে এ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
ক. কখন ফ্রাঙ্কো-প্রাশীয় যুদ্ধ হয়?
খ. জার্মানির বেপরোয়া মনোভাব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ-ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে কোন যুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ছিল এ যুদ্ধের অন্যতম কারণ' - বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফ্রাঙ্কো-প্রাশীয় যুদ্ধ হয় ১৮৭০ সালে।

খ. ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী ফ্রান্সিস ফার্ডিন্যান্ড বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে স্ত্রী সোফিয়াসহ আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে সম্পূর্ণ দায়ী করে ২৩ জুলাই কয়েকটি দাবি সংবলিত একটি চরমপত্র প্রদান করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে বলে। সার্বিয়া কয়েকটি দাবি পূরণ করে এবং বাকি কয়েকটি দাবি তার সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত থাকায় তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব দেয়। জার্মানি অস্ট্রিয়া ও সার্বিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতায় মেকি ভূমিকা পালন করে গোপনে গোপনে অস্ট্রিয়াকে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করে।
ফলে জার্মানির সমর্থন নিয়েই ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে ফ্রান্স ও রাশিয়া সার্বিয়াকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসে। এভাবেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। এজন্য বলা হয়, জার্মানির বেপরোয়া মনোভাব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

গ. উদ্দীপকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইল্লিত দেওয়া হয়েছে। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের ভাবী উত্তরাধিকারী ফ্রান্সিস ফার্ডিন্যান্ড বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে স্ত্রী সোফিয়াসহ আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে অস্ট্রিয়া সার্বিয়াকে সম্পূর্ণ দায়ী করে জার্মানির সমর্থন নিয়ে ২৮ জুলাই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে ফ্রান্স ও রাশিয়া সার্বিয়াকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসে। ক্রমে এ যুদ্ধে ইউরোপের অপরাপর রাষ্ট্রগুলো জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এ যুদ্ধ আমেরিকা ও এশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে তা বিশ্বযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে। সারায়েভোর হত্যাকান্ড এ যুদ্ধের আশু কারণ হলেও এর পেছনে আরও বহুবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল। এ যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রন্তুত হয়েছে একশত বছর ধরে। ফরাসি বিপ্লব ও এ বিপ্লবের প্রতি অপরাপর ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের প্রতিক্রিয়া প্রথমে বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করেছিল। এছাড়াও ভিয়েনা কংগ্রেসের ত্রুটি, উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান, বাণিজ্যিক ও উপনিবেশ বিস্তারের। প্রতিযোগিতা, কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের পররাষ্ট্রনীতি, বিসমার্কের। কূটনীতি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেকার কতিপয় আন্তর্জাতিক সংকট। ইত্যাদি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ।

ঘ. উদ্দীপকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সারায়েভোর হত্যাকান্ড এ যুদ্ধের আশু কারণ হলেও এর পেছনে আরও বহুবিধ কারণ বিদ্যমান ছিল। এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান। পুঁজিবাদের চরম বিকাশের ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ও উপনিবেশ বিস্তার নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বনি্দ্বতার সৃষ্টি হয়। শিল্পপণ্য রপ্তানি ও অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য পুরনো উপনিবেশের সম্প্রসারণ ও নতুন উপনিবেশ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশ মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশগুলো নিজেদের রাজনীতিকে সাম্রাজ্যবাদী করে তোলে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেও ব্রিটেন ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উপনিবেশিক শক্তি। এরপরও সে তৃপ্ত ছিল না। দ্বিতীয় প্রধান উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের এশিয়া ও আফ্রিকায় প্রচুর উপনিবেশ থাকা সত্ত্বেও ফ্রান্স উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে অনুপ্রবেশ করে উপনিবেশ স্থাপন করে। জার্মানি নব্য পুঁজিবাদী দেশ হওয়ায় তার কোন উপনিবেশ ছিল না। কিন্তু তারও লক্ষ্য ছিল উপনিবেশ দখল করা। ইতোপূর্বে অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তা দখল করে নেওয়ায় একটি যুদ্ধ ব্যতীত উপনিবেশ দখলের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। জার্মানি সে উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছিল এবং বিভিন্ন কার্যকলাপের ১ মাধ্যমে যুদ্ধের পরিবেশ খুঁজছিল। সুতরাং বলা যায়, উপনিবেশবাদ ও। সাম্রাজ্যবাদের উত্থান ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি কারণ।

৮. ডিউকের দেশের ক্ষমতাসীন দল এক নির্বাচনে সন্ত্রাসী পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং প্রায় সব ভোট জোর করে কেটে নিয়ে যায়। এতে বিরোধীদের জন্য নির্বাচনি কোনো সুযোগ রাখা হয় না। সংসদ অধিবেশন বসলে বিরোধীরা সরকারের স্বৈরাচারী চরিত্র উন্মোচন করার চেষ্টা করে। এর ফলে জনৈক বিরোধী নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
ক. হামবুর্গ-আমেরিকা কিসের নাম?
খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে উগ্রজাতীয়তাবাদ ব্যাখ্যা কর।
গ. ডিউকের দেশের ক্ষমতাসীন দলের কর্মকান্ডের সাথে ইতালির কোন দলের মিল লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'ক্ষমতাসীন দলের উক্ত কর্মকান্ড ছিল অগণতান্ত্রিক' বক্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হামবুর্গ-আমেরিকা হচ্ছে জার্মানির হামবুর্গে ১৮৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রান্স-আটলান্টিক শিপিং এন্টারপ্রাইজ।

খ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদ। ইউরোপে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের যুগে জাতীয়তাবাদ উগ্র জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়। ইউরোপের সকল জাতি নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি ও প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উ ও ক্ষতিকর ছিল জার্মান জাতীয়তাবাদ। জার্মান পন্ডিত, দার্শনিক ও ঐতিহাসিকরা প্রচার করতে শুরু করেন যে, জার্মানরা হচ্ছে বিশুদ্ধ আর্য এবং পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে উন্নত। ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি ও জাপানেও জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ রূপ ধারণ করে। জাতিগুলো তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করে। ইউরোপের সর্বত্র মারণাস্ত্রের উৎপাদন ও সংরক্ষণের হিড়িক পড়ে। ফলে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জাতিগত বিরোধ বৃদ্ধি পায়, যা তাদেরকে যুদ্ধের দিকে ধাবিত করে।

গ. উদ্দীপকে ডিউকের দেশের ক্ষমতাসীন দলের কর্মকান্ডের সাথে ইতালির জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট দলের কর্মকান্ডের মিল লক্ষ করা যায়। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত দল রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিস্টকরণ করা শুরু করে। বিরোধী দলকে কঠোরভাবে দমন করা হয়, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত করা হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইনগুলোকে ফ্যাসিস্ট দলের অনুকূলে প্রণয়ন করা হয়। ১৯২৪ সালের নির্বাচনে উক্ত দল ভীতি প্রদর্শন করে প্রায় ৬৫% ভোট সংগ্রহ করে। ফ্যাসিস্টদের ভয়ে অনেকে রাজনীতি ছেড়ে দেয়, অনেকে ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় আবার অনেকে প্রতিবাদ করতে গিয়ে হত্যা নির্যাতনের শিকার হয়।

ঘ. উদ্দীপকে ডিউকের দেশের ক্ষমতাসীন দলের কর্মকান্ডের সাথে ইতালির জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট দলের কর্মকান্ডের মিল লক্ষ করা যায়। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর উক্ত দল রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিস্টকরণ করা শুরু করে। বিরোধী দলকে কঠোরভাবে দমন করা হয়, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত করা হয়। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইনগুলোকে ফ্যাসিস্ট দলের অনুকূলে প্রণয়ন করা হয়। ১৯২৪ সালের নির্বাচনে উক্ত দল ভীতি প্রদর্শন করে প্রায় ৬৫% ভোট সংগ্রহ করে। উক্ত দলের প্রধান ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেনিটো মুসোলিনী তাঁর একনায়কত্ব কায়েম করেন এবং ঘোষণা করেন, 'দেশের সবকিছুই হবে রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত; রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুই থাকবে না; রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুই সহ্য করা হবে না। উক্ত দলের কর্মকান্ড ছিল অগণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রে জনগণই হচ্ছে সকল ক্ষমতার উৎস। গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণের শাসন। জনগণ নিজেরাই নিজেদের মধ্য থেকে সরকার নির্বাচন করে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়। সরকারকে জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় যেতে হয়। আবার জনগণের আস্থা বা সমর্থন হারালে সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। গণতন্ত্রে প্রত্যেক নাগরিকেরই রাজনৈতিক দল গঠনের ও নির্বাচনে অংশগ্রহণে অধিকার আছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠা করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ করা, জনগণের ভোটাধিকার প্রদান ও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ, স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার, প্রচারমাধ্যম ও গণমাধ্যমসমূহের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসন কাজে অংশ গ্রহণের সুযোগ পায়। এতে জনগণের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। গণতন্ত্রে সরকার তাদের কাজের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য। কিন্তু ইতালির জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট দলটির কার্যক্রম উপরিউক্ত কার্যক্রমের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইতালির জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট দলের কর্মকান্ড ছিল অগণতান্ত্রিক।

৯. 'একটাই বিশ্ব, সকলের জন্য' - এ স্লোগানকে সামনে রেখে শান্তিকামী মানুষ শান্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত নিরলস কাজ করছে। তবুও এ শান্তি বার বার ব্যাহত হয়েছে। সংঘটিত হয়েছে ভয়ানক যুদ্ধ। যুদ্ধের আগুন আটলান্টিকের ওপারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি এশিয়ার বেশকিছু দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। দুটি শিবিরে বিভক্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা থেকেই এ মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।
ক. Fascio-কোন ভাষার শব্দ?
খ. মুসোলিনীর রাজনৈতিক দল গঠন সম্পর্কে লেখ।
গ. উদ্দীপকে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. পুঁজিবাদের বলপ্রয়োগী রূপ হিসেবে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান উক্ত মহাযুদ্ধের অন্যতম কারণ বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Fascio একটি ইতালীয় শব্দ যার অর্থ হচ্ছে গুচ্ছ, ঐক্য বা একতা।

খ. ইতালিতে ফ্যাসিবাদের জনক হলেন বেনিটো মুসোলিনী। তিনি ১৯১৯ সালে কর্মচ্যুত সৈনিক ও সমাজতন্ত্রবিরোধী একদল উৎসাহী জাতীয়তাবাদী যুবকদের নিয়ে ফ্যাসিস্ট দল গঠন করেন। ১৯২১ সালের নির্বাচনে ফ্যাসিস্টরা ৩৫টি আসন লাভ করে। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই ফ্যাসিস্টরা কর্মহীন শ্রমিক, বেকার, ভবঘুরে, মাস্তান, অপরাধী আর কমিউনিস্টবিরোধী ধনী বুর্জোয়াদের সমর্থন নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়। ফ্যাসিস্টরা ১৯২১ সালের নভেম্বরে Nationalist Fasist Party গঠন করে মুসোলিনীকে এর নেতা নির্বাচিত করে। এভাবেই মুসোলিনীর রাজনৈতিক দল Nationalist Fasist Party গঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকে পাঠ্যবইয়ে আলোচিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ১৮৭০ সালে ফ্রাঙ্কো-জার্মান যুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর ইউরোপে যে সশস্ত্র শান্তির যুগের সূত্রপাত হয় ১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর মধ্য দিয়ে তারও পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আবারও ব্যর্থ হয়। সারায়েভোর হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ছিল দুই শিবিরে বিভক্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের শক্তি পরীক্ষা। এ যুদ্ধ মূলত ইউরোপে শুরু হলেও তার ব্যাপকতা আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে।

ঘ. উদ্দীপকে পাঠ্যবইয়ে আলোচিত প্রথম মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাদী বলপ্রয়োগী রূপ হিসেবে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান উক্ত মহাযুদ্ধের অন্যতম কারণ। পুঁজিবাদের চরম বিকাশের ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ও উপনিবেশ বিস্তার নিয়ে তীব্র প্রতিদ্বনি্দ্বতার সৃষ্টি হয়। শিল্পপণ্য রপ্তানি ও অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য পুরনো উপনিবেশের সম্প্রসারণ ও নতুন উপনিবেশ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশ মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশগুলো নিজেদের রাজনীতিকে সাম্রাজ্যবাদী করে তোলে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেও ব্রিটেন ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ঔপনিবেশিক শক্তি। এরপরও সে তপ্ত ছিল না। দ্বিতীয় প্রধান ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের এশিয়া ও আফ্রিকায় প্রচুর উপনিবেশ থাকা সত্ত্বেও ফ্রান্স উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে অনুপ্রবেশ করে উপনিবেশ স্থাপন করে। জার্মানি নব্য পুঁজিবাদী দেশ হওয়ায় তার কোনো উপনিবেশ ছিল না। কিন্তু তারও লক্ষ্য ছিল উপনিবেশ দখল করা। ইতোপূর্বে অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তা দখল করে নেওয়ায় একটি যুদ্ধ ব্যতীত জার্মানির পক্ষে উপনিবেশ দখলের আর কোনো পথ খোলা ছিল না। তাছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ উপনিবেশ ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড দখল করায় এ শক্তিদ্বয়ের সাথে জার্মানির সংঘাত অনিবার্য। হয়ে ওঠে। উপনিবেশ দখল ও সাম্রাজ্য রক্ষাকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো পারস্পরিক প্রতিদ্বনি্দ্বতায় লিপ্ত হলে এর চূড়ান্ত পরিণতিতে সংঘটিত হয় প্রথম মহাযুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ। সুতরাং বলা যায়, 'পুঁজিবাদী বলপ্রয়োগী রূপ হিসেবে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উত্থান উক্ত মহাযুদ্ধের অন্যতম কারণ'।

১০. মি. বানছাল একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি ২০১২ সালে একটি ছবি নির্মাণ করেন, যার বিষয়বন্তু ছিল একটি মহাদেশের পরিবর্তনশীলতায় বিশ্বাসী শক্তি এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির নানা কার্যক্রম। দুই শক্তি পর্যায়ক্রমে যুদ্ধের দিকেই নিজেদের ধাবিত করেছিল। ছবির এক পর্যায়ে লক্ষ করা যায়, ঐ মহাদেশের দুই শক্তির সাথে অন্য দুটি মহাদেশের বিভিন্ন শক্তিও জড়িয়ে পড়ে। ফলে এক ভয়াবহ যুদ্ধের সৃষ্টি হয়। ছবির এক পর্যায়ে দেখা যায়, একটি হত্যাকান্ডের ফলেই এ যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।
ক. শিল্প বিপ্লব কত সালে শুরু হয়েছিল?
খ. উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা কর।
গ. মি. বানছালের নির্মিত চলচ্চিত্রে যে যুদ্ধের চিত্র ফুটে উঠেছে তার ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বিশ্বব্যাপী এ ধরনের একটি যুদ্ধের জন্য মূলত উগ্র জাতীয়তাবাদই দায়ী ছিল- মূল্যায়ন কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শিল্প বিপ্লব ১৭৬০ সালে শুরু হয়েছিল।

খ. জাতীয়তাবাদের উপেক্ষা বা জাতীয়তাবাদ দমনের মধ্যে যেমন যুদ্ধবিগ্রহের বীজ নিহিত থাকে, তেমনি উগ্র জাতীয়তাবোধও যুদ্ধের মনোবৃত্তি সৃষ্টির সহায়তা করে। জার্মানদের মধ্যে একটা ধারণা সবসময় কাজ করত যে জার্মান পিতৃভূমি সকল দেশের শ্রেষ্ঠ এবং জার্মান জাতি অপরাপর জাতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। জার্মানদের মতো এ ধরনের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত উগ্র চেতনাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে। এ উগ্র জাতীয়তাবোধ কেবল জামানিতেই নয় ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান এবং অন্যান্য দেশেও সংকীর্ণ প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।

গ. মি. বানছালের নির্মিত চলচ্চিত্রে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চিত্র ফুটে উঠেছে। ১৯১৪ সালে সামান্য একটি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। ১৯১৯ সালে ভার্সাই নগরে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ও বিপুল লোকক্ষয় বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে শঙ্কিত করে তোলে। ফলে তারা এ ধরনের কোনো সংঘাত ভবিষ্যতে যেন আর সৃষ্টি না হয় সেজন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়ে তোলেন যা লীগ অব নেশনস (League of Nations) নামে পরিচিত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশ্বে নতুন মেরুকরণ ঘটে। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে মানুষের ধ্যানধারণা বদলে যায়। এ যুদ্ধের পরিণতিতে ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর জার্মানি কর্তৃক নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ফ্রান্স, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে। মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে। প্রথম বিশবযুদ্ধের ফলে জার্মানি ও রাশিয়ায় সরকারের পতন ঘটে। অপরদিকে, রুশ জনগণ বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এ যুদ্ধে জার্মানির দুধর্ষ আক্রমণে ব্রিটিশ শক্তি বিধ্বস্ত হলে ব্রিটেন নিয়ন্ত্রিত উপনিবেশগুলোতে স্বাধীনতা অনেক তীব্রতর হয়। এ যুদ্ধের ফলে মার্কিন, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও তুরস্কে রাজতন্ত্রের অবসান হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়ে ব্রিটেন বিপুল ক্ষতির শিকার হলেও জয়লাভের ফলে অনন্যসাধারণ মর্যাদায় অধিকারী হয়। এ যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্র সাময়িক রসদপত্র বিক্রি করে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয় এবং পরাশক্তি হিসেবে উদিত হয়। এ যুদ্ধের পরিণতিতে নারী জাগরণ, শ্রমিকের মুক্তি, অর্থনৈতিক মন্দা, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিকাশ ও পরিবহন খাতে অগ্রগতি ঘটে।

ঘ. উদ্দীপকের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফুটে ওঠা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য মূলত উগ্রজাতীয়তাবাদই দায়ী।
উনিশ শতাব্দীর শেষে এবং বিশ শতকের শুরুতে জার্মান দার্শনিক, পন্ডিত ও ঐতিহাসিকগণ একথা প্রচার করতে থাকেন যে, জার্মানগণ হচ্ছে বিশুদ্ধ আর্য এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি, হেনরিক ডন চট্টস্কি, হাউস্টন স্টুয়ার্ট চেম্বারলেন, জেনারেল ফ্রেডারিক ভন বানহার্ডি প্রমুখের উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারণা জার্মানিকে অন্ধ আবেগে ঐক্যবদ্ধ করে ফলে। ক্রমে এ জাতীয়তাবাদী ধারণা ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া প্রভৃতি। দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইতালি অস্ট্রিয়ার নিকট থেকে ইতালিভাষী। অঞ্চলগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিলে বলকান সংকট তীব্র হয়। এমনকি জার্মান জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করে। ইউরোপের সর্বত্র মারণাস্ত্রের উৎপাদন ও সংরক্ষণের হিড়িক পড়ে। ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার জাতিগত বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় যা তাদের যুদ্ধের দিকে ধাবিত করে। পত্রপত্রিকাগুলো এ উন্মাদনা সৃষ্টিতে ইন্ধন যোগায়। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরিতে উগ্র জাতীয়তাবাদকে দায়ী করা যেতে পারে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post