HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.

ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
দ্বিতীয় অধ্যায় : ফরাসী বিপ্লব

১. একজন ব্যক্তির ছবি টানানো রয়েছে। বেড়াতে আসা অতিথি সুফল চন্দ্র তাকে জিজ্ঞেস করলেন, "ছবিটি কার?" জগদীশ মন্ডল উত্তর দিলেন ‘‘এটি এমন এক বিখ্যাত লোকের ছবি, যিনি বলেছিলেন, যদি একই ব্যক্তির হাতে সরকারের আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকে তবে রাষ্ট্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা লোপ পাবে।" এই ব্যক্তি 'স্বর্গীয় অধিকার প্রাপ্ত রাজতন্ত্র' তত্ত্বকে অস্বীকার করে স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো তুলে ধরেন।
ক. কুঁরবো বংশীয় শেষ রাজা কে ছিলেন?
খ. বিপ্লবের ২য় পর্যায়ে ফ্রান্সের গির্জা সংস্কার সম্পর্কে লেখ।
গ. জগদীশ মন্ডলের বাসার ছবিটি কার? এই মহান মনীষীর জীবনী ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ছবির ব্যক্তির ধ্যান-ধারণার সাথে রুশোর চিন্তা চেতনার অনেক মিল রয়েছে মূল্যায়ন কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ধুঁরবো বংশীয় শেষ রাজা ছিলেন ষোড়শ লুই।

খ. বিপ্লবের দ্বিতীয় পর্যায়ে গির্জার ভূ-সম্পত্তি জাতীয়করণের পর গির্জা সংস্কারে হাত দেয় সংবিধান পরিষদ। যাজকদের সরকারের কোষাগার থেকে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্বস্ততা ও অন্যান্য স্তরের যাজকগণ পোপ কর্তৃক নিযুক্ত না হয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ সংস্কার অবশ্য ফ্রান্সের জন্য শুভ হয়নি। কেননা, মাত্র ৭ জন যাজক সংবিধানের অধীনে শপথ নেয় এবং গ্রাম্য যাজকদের অর্ধেকের বেশি শপথ নেয়নি। 'পোপ' এ যাজকীয় সংবিধানের নিন্দা করেন। এর ফলে পরবর্তীতে ফ্রান্সে ধর্মীয় বিভক্তি দেখা দেয়।

গ. উদ্দীপকের জগদীশ মন্ডলের বাসার ছবিটি হচ্ছে ফরাসি দার্শনিক মন্টেস্কুর। মন্টেস্কু ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক। তিনি মূলত দার্শনিক হলেও সংবিধান ও রাজনীতিবিষয়ক লেখনীর দ্বারা জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে অবস্থান করেছিলেন। এ জন্য তাঁর লেখনীতে ব্রিটিশ সংবিধানের প্রতি অনুরাগ দেখা যায়। তিনি নিজে একটি সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও (১৬৮৯) সামন্ততন্ত্রের অচলায়তনকে আঘাত করে লিখেন। তিনি তাঁর যুক্তিবাদী মনন দ্বারা ফ্রান্সের প্রচলিত সমাজ ও শাসনব্যবস্থা বিশ্লেষণ করেন। তিনি ক্যাথলিক গির্জার ভূমিকা ও রাজার সীমাহীন ক্ষমতার ঘোর সমালোচক ছিলেন। তাঁর মতে, ফ্রান্সের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ও অভিজাত নিয়ন্ত্রিত সমাজ ছিল যুক্তি বহির্ভূত ব্যবস্থা। তিনি রাজতন্ত্রের ত্রুটি উল্লেখ করলেও সম্পদের সুষম বণ্টন ও সর্বসাধারণের সার্বজনীন ভোটাধিকারের কথা বলেননি। এ জন্য অনেকে তাঁকে বুর্জোয়া দার্শনিক বলে চিহ্নিত করেন। তবে তিনি স্বৈরতন্ত্রকে যেভাবে আক্রমণ করেন এবং এর বিকল্প হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের যে পরামর্শ দেন তা সমকালীন মানব সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
মন্টেস্কু ফরাসি বিপ্লব দেখে যেতে পারেননি; কিন্তু তাঁর লেখনী ফরাসি জনতার মননে ব্যাপক প্রতিঘাত সৃষ্টি করেছিল। এজন্য ১৭৯১ সালের বিপ্লব পরবর্তী সংবিধানে তার ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ করা হয়। ১৭৫৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ঘ. উদ্দীপকের ছবির উল্লিখিত ব্যক্তি হচ্ছেন মন্টেস্কু। মন্টেস্কুর ধ্যান ধারণার সাথে রুশের ধ্যান-ধারণার মিল রয়েছে।
মন্টেষু ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক সমর্থক। তিনি মনে করতেন রাজতন্ত্রের ত্রুটি থাকলেও সম্পদের সুষম বণ্টন ও সর্বসাধারণের সার্বজনীন ভোটাধিকারের কথা বলেননি। এজন্য তাকে অনেকে বুর্জোয়া দার্শনিক বলে চিহ্নিত করেন। তবে তিনি স্বৈরতন্ত্রকে যেভাবে আক্রমণ করেন এবং এর বিকল্প হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের যে পরামর্শ দেন তা সমকালীন মানব সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তাঁর লেখনী ফরাসি জনতার মননে ব্যাপক প্রতিঘাত সৃষ্টি করেছিল। এজন্য ১৭৯১ সালের বিপ্লবের পরবর্তী সংবিধানে তার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ করা হয়। অন্যদিকে রুশো স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়াবার প্রেরণা যোগান। তিনি তাঁর গ্রন্থে সামাজিক অসাম্যের মূল কারণগুলো ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে যুক্তিবাদ হলো শ্রেষ্ঠ। কিন্তু মানুষের মননে যুক্তিবাদ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। স্বাধীন চিন্তার শক্তির মাধ্যমে এর বিকাশ ঘটে। এভাবে রুশোর তাঁর সামাজিক চুক্তি মতবাদের মাধ্যমে যে ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের কথা বলেন তা ফরাসি জনগণকে বিপ্লবি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে।
পরিশেষে বলা যায়, মন্টে, যেমন স্বৈরতন্ত্রকে ঘৃণা করতেন রুশোও তেমনি স্বৈরতন্ত্রকে ঘৃণা করতেন। তাঁদের দুজনের লেখনীর মাধ্যমে ১ ফরাসি জনগণের বিপ্লবী চেতনার উদ্ভব হয়েছিল।

২. বিশ্বের সব মানুষের কাছেই ১৪ জুলাই ১৭৮৯ দিনটি কমবেশি পরিচিত। প্রতিবছর ১৪ জুলাই এলেই বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের মনে এক অনির্বার আশা সঞ্চারিত হয়। দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রেরণার নেশা যেন মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আর প্রতিবছর এ দিনটিতে অঋচ নামক সংবাদ সংস্থাটি এক নতুন সাজে সজ্জিত হয়। কেননা, এ দিনে সংবাদ সংস্থাটি বিশ্লেষণ করে বিশেবর পরাধীনতার শৃঙখলে আবদ্ধ মানুষের মুক্তির নানা উপায় এবং সাথে সাথে তুলে ধরে অত্যাচারী শাসকদের পরাজয়ের কথা।
ক. দার্শনিক রুশো কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
খ. নেপোলিয়নের প্রশাসনিক সংস্কার ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে তোমার পঠিত কোন বিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়? উক্ত বিপ্লবের ঘটনাপ্রবাহের প্রথম পর্যায় ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উক্ত বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে আমূল বদলে দেয়'। -বক্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দার্শনিক রুশো ১৭৭৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

খ. নেপোলিয়নের প্রশাসনিক সংস্কারে দেখা যায়, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে ৮৩টি প্রদেশ এবং ৫৪৭টি জেলা বহাল রাখেন। তিনি প্রিফেক্ট ও কাউন্সিলের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্র গড়ে তোলেন।

গ. উদ্দীপকে আমার পঠিত ফরাসি বিপ্লবের প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
পাঠ্যবই হতে আমরা জানতে পারি, ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের বাস্তিল দুর্গ পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সের শহর-নগর-গ্রাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফরাসি বিপ্লবের ঘটনা প্রবাহের প্রথম পর্যায় পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই, ১৭৭৪ সালের ধুঁরবো বংশীয় শেষ রাজা ষোড়শ লুই যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন ফ্রান্সে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রন্তুত হয়ে গেছে। এ সময় প্যারিসে পার্লামেন্ট দেশ অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হওয়ার জন্য রাজা ষোড়শ লুই ও তাঁর মন্ত্রী টুর্গোকে দায়ী করে। ১৭৮৭ সালে রাজা অভিজাতদের সভা আহবান করলে অভিজাতগণ রাজার প্রদত্ত ঘাটতির হিসেবের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে এবং অর্থমন্ত্রী ক্যালোনের কর প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে প্রথম রাজার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে। ১৭৮৯ সালের বসন্টে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এস্টেট জেনারেল গঠন ও থার্ড এস্টেটের উত্থান ঘটে। ১৭৮৯ ১ সালের ১৭ জুন তৃতীয় শ্রেণি নিজেদেরকে আসল জাতীয় সভা বলে ] ঘোষণা দেয় এবং আরও ঘোষণা করে যে, তাদের অনুমতি ছাড়া রাজা কর আদায় করতে পারবেন না। এতে রাজা তাদের অধিবেশনে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে না পেরে তৃতীয় শ্রেণি ১৭৮৯ সালের ২০ জুন নিকটবর্তী টেনিস কোর্টে মিলিত হয়ে শপথ গ্রহণ করে। রাজা শেষ পর্যন্ত ২৩ জুন তিন শ্রেণির মিলিত এক অধিবেশন আহবান করেন। ২৭ জুন তৃতীয় শ্রেণি ঘোষিত জাতীয় সভা সংবিধান সভাতে পরিণত হয়। এ সময় রাজার নির্দেশে প্যারিসের রাস্তায় সেনা চলাচল বৃদ্ধি পেলে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ দখন করে নেয়। বাস্তিল দুর্গ পতনের পরও রাজা শেষ চেষ্টা হিসেবে বিপ্লবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখেন। এ সময় হাজার হাজার মহিলা ভার্সাই প্রাসাদ অবরোধ করে রাজা, রানী ও তার বালক পুত্রকে প্যারিসে আসতে বাধ্য করে। অতঃপর স্বায়ত্তশাসিত কমিউন গঠন করে সেগুলোর সমন্বয়ে ফ্রান্সকে একটি যুক্তরাষ্ট্রের রূপ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহকেই ফরাসি বিপ্লবের প্রথম পর্যায় হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

ঘ. 'উক্ত বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে আমূল বদলে দেয়' -উক্তিটি যুক্তিযুক্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ। ফরাসি বিপ্লবের পরপরই অর্থাৎ ১৭৮৯ সালের ১৩ আগস্ট সামন্ততন্ত্রের উচেছদ করা হয়। এর ফলে মধ্যযুগ থেকে চলে আসা সমাজ ব্যবস্থার যে অসাম্য তার অবসান ঘটে। ফরাসি বিপ্লব তাৎক্ষণিকভাবে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র চালু করে। পরবর্তীতে ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারিতে রাজার শিরশে্ছদ করা হয় এবং ফ্রান্সকে একটি প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করা হয়। সামন্ত প্রথার বিলোপে এক শ্রেণির স্বাধীন বুর্জোয়া কৃষকশ্রেণির উদ্ভব ঘটে যারা পরবর্তীতে নেপোলিয়নের সময়ে সাম্রাজ্যের প্রধান সহায়ক শ্রেণিতে পরিণত হয়। ফরাসি বিপ্লবের ফলে নাগরিক অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার এবং সার্বজনীন মানবাধিকারগুলো স্বীকৃতি লাভ করে। ভূমি দাসতব ওঠে যায়। সকল মানুষের সামাজিক মর্যাদা স্বীকৃতি লাভ করে। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছার প্রাধান্য স্বীকৃতি লাভ করে। ফরাসি বিপ্লব সামাজিক আচার-আচরণ, পোশাক-আশাকেও পরিবর্তন আনায়ন করে। পুরুষেরা ট্রাউজার ও কোট এবং মহিলারা আঁটসাঁট ছোট স্কার্ট পরিধান করা শুর করে। মানুষ বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে তিন রঙা পোশাক ও লাল টুপি ব্যবহার করা শুরু করে। পরস্পরকে সিটিজেন সম্বোধন করা শুরু করে। ফরাসি বিপ্লব গির্জাতন্ত্রের প্রতি অনাস্থা স্থাপন করে। মুক্তিচিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞানের গতিশীলতা আসে। সুতরাং একথা বলা শ্রেয়, উক্ত বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে আমূল বদলে দেয় -উক্তিটি যথার্থ ও সঠিক।

৩. বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. এনামুল হক, অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ বিশিষ্টজনের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তাঁরা আনেদালনে সরাসরি জড়িত ছিলেন না, তবুও ভাষা আন্দোলনের মনস্তাত্ত্বিক পটভূমি সৃষ্টিতে তাদের অবদান অস্বীকার করা যায় না।
ক. 'আমিই রাষ্ট্র' - এটা কার উক্তি?
খ. বাস্তিল দুর্গ পতনই ফরাসি বিপ্লবের প্রথম অধ্যায় ? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের বিশিষ্টজনদের ভূমিকার সাথে ফরাসি বিপ্লবের কাদের কী মিল আছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর বিশিষ্টজনদের ভূমিকাই উক্ত আন্দোলনকে বিপ্লবাত্মক করেনি, অর্থনৈতিক কারণও মুখ্য ছিল? পাঠ্যবইয়ের আলোকে মূল্যায়ন কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'আমিই রাষ্ট্র' - এটি রাজা চতুর্দশ লুইয়ের উক্তি।

খ. বাস্তিল দুর্গ পতনকে বলা হয় ফরাসি বিপ্লবের প্রথম অধ্যায়। কারণ এ দুর্গের পতনের ফলে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের পতনের সূচনা হয়। জনতার রুদ্ররোষ এবং হিংস্র মনোভাব দেখে রাজা এবং সভাসদরা আতঙ্কিত হয়। রাজা জাতীয় সভাকে বলপূর্বক ভেঙে দেওয়ার ইচ্ছা ত্যাগ করেন। প্যারিসের সংবাদে গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবের শিখা প্রজবলিত হয়। গুডউনের মতে, ‘‘বাস্তিলের পতনের ন্যায় বিপ্লবের আর কোনো একক ঘটনার এত বহুমুখী ও সুদূরপ্রসারী ফল ছিল না।’’

গ. উদ্দীপকে বায়ান্নার ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ, ড. এনামুল হক, অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ প্রমুখ বিশিষ্টজনের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তারা আনেদালনের পুরোধা ছিলেন না, নেতাও নন। তবু ভাষা আন্দোলনের মনস্তাত্ত্বিক পটভূমি সৃষ্টিতে তাঁদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। এসব বিশিষ্টজনদের ভূমিকার সাথে ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিকদের ভূমিকার মিল রয়েছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ভাষা আনেদালনের মনস্তাত্ত্বিক পটভূমি সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিলেন। তেমনি ফরাসি বিপ্লবকে তবরান্বিত করার ক্ষেত্রে দার্শনিকদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকদের মতে, ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে দার্শনিকদের মৃত্যু হলেও তাদের রচিত গ্রন্থগুলো তখনও ফরাসি সমাজে বর্তমান ছিল। অন্যদিকে, মনেটস্কুর চিন্তাধারার প্রভাব মিরাব্যু ও অন্য নেতাদের ওপর পড়েছিল। আবার রুশোর চিন্তাধারার প্রভাব রোবসপিয়ার ও জ্যাকোবিন নেতাদের ওপর পড়েছিল। ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের লেখনী একদিকে যেমন মানুষকে প্রচলিত রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন করে তোলে, অপরদিকে তেমনি এর বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার ধারণা দেয়। এভাবে দার্শনিকগণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিন্তাজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব তখনকার সমাজের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনেরই ফসল। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বিশিষ্টজনদের ভূমিকার সাথে ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিকদের ভূমিকার মিল রয়েছে।

ঘ. ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের লেখনী একদিকে যেমন মানুষকে প্রচলিত রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন করে তোলে, অপরদিকে তেমনি এর বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার ধারণা দেয়। এভাবে দার্শনিকগণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিন্তাজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব তখনকার সমাজের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনেরই ফসল। তবে শুধুমাত্র বিশিষ্টজনদের ভূমিকাই উক্ত আন্দোলনকে বিপ্লবাত্মক করেনি, অর্থনৈতিক কারণও মুখ্য ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অসংগতি পরিলক্ষিত হয়। তখন ফ্রান্স ছিল ভুল অর্থনীতির এক প্রকা- জাদুঘর। ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্স বিশেষ অধিকারের দেশে পরিণত হয়। অভিজাতশ্রেণির সুবিধা দিতে গিয়ে রাজকর্মচারীরা সর্বদাই বাধাপ্রাপ্ত হতো। সকল করভার বহন করতে হতো কৃষকদের। তখন তিন ধরনের প্রত্যক্ষ কর আদায় করা হতো। তখন দ্রব্যমূল্য ছিল আকাশচুম্বি। খাদ্যের জন্য রাষ্ট্রের অনেক জায়গায় দাঙ্গা শুরু হয়। ১৭৭৫ সাল থেকে ১৭৮৮ সাল পর্যন্ত প্যারিস ও লায়নসে রুটির জন্য দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এ সময় কৃষকরা খাদ্যের জন্য গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসতে থাকে। তখন সরকার রাজপরিবার ও যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে বহু অর্থ ঋণ নেয়। ১৭৮৮ সালে সরকার ঋণের সুদ মেটাতে হিমশিম খায়। সপ্তদশ শতাব্দী ব্যাপী যুদ্ধ ও পোল্যান্ডের উত্তরাধিকার যুদ্ধে একটি বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হওয়ার ফলে ফ্রান্সের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ষোড়শ লুই সিংহাসনে আরোহণ করে অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এভাবে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। এভাবে ফরাসি বিপ্লবকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪. ভারত উপমহাদেশের শাসক সম্রাট আকবর রাজ্য জয় করে যেমন খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তেমনি বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও কল্যাণমূলক সংস্কার করে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। আবুল ফজল রচিত আইন-ই-আকবরী গ্রন্থটি সম্রাট আকবরকে অমরত্ব দিয়েছে। এটি পাঠে সমকালীন আইন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
ক. প্রথম বিপ্লবী শাসনতন্ত্র কত খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত হয়?
খ. 'লিজিয়ন অনার' কী-ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের শাসকের অমরত্ব বিষয়টির সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের যে সংস্কারের মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত সংস্কার পাঠ্যবইয়ের শাসককে অমরত্ব দিলেও তাতে সীমাবদ্ধতা ছিল- বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রথম বিপ্লবী শাসনতন্ত্র ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।

খ. লিজিয়ন অব অনার হচ্ছে এক ধরনের উপাধি যা ১৮০২ সালের ১৯ মে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রবর্তন করেন। এটি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা। লিজিয়ন অব অনার পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা- ১. নাইট, ২. অফিসার, ৩. কমান্ডার, ৪. গ্র্যান্ড অফিসার এবং ৫. গ্র্যান্ড ক্রস।

গ. উদ্দীপকে ভারতীয় উপমহাদেশের শাসক সম্রাট আকবর রাজ্যজয় করে যেমন খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তেমনি বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও কল্যাণমূলক সংস্কার করে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। আবুল ফজল রচিত আইন-ই আকবরী গ্রন্থটি শাসককে অমরত্ব দিয়েছে। উদ্দীপকে শাসক যেসব কারণে অমরত্ব লাভ করেছেন, তার সাথে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কারসমূহের মিল রয়েছে। ফ্রান্সকে আধুনিক রূপদানের জন্য নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রশাসন, আইন, বিচার, ধর্ম, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সংস্কার সাধন করেন। তিনি দেশের আইনজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি রোমান আইনসহ ফরাসি সমাজের বাস্তবতা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে যে আইনের দলিল রচনা করেন পরবর্তী সময়ে তা 'কোড অব নেপোলিয়ন' নামে পরিচিতি পায়। এতে দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে মোট ২২৮৭টি আইনের ধারা স্থান পায়। এ আইনকে অনেকে ফরাসি সমাজের নতুন বাইবেল তথা দিকনির্দেশক বলে গণ্য করে। নেপোলিয়ন সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ গ্রহণ করে স্বাধীনতার আদর্শ পরিত্যাগ করেছিলেন। তিনি ফরাসি রাষ্ট্রের অনুকরণে ইউরোপের বিজিত অঞ্চলের সর্বত্র সামন্ত ও দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন এবং সমাজ জীবনে সাম্যনীতি প্রয়োগ করেছিলেন। এসব নীতি প্রণয়ন, অনুসরণ ও সংস্কারমূলক কাজকর্ম তাকেও সম্রাট আকবরের মতো অমরত্ব দান করে।

ঘ. উক্ত সংস্কার অর্থাৎ ফ্রান্সকে আধুনিক রূপদানের জন্য পাঠ্য বইয়ের শাসক। অর্থাৎ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রশাসন, আইন, বিচার, ধর্ম, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সংস্কার সাধন করেন। তিনি দেশের আইনজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি রোমান আইনসহ ফরাসি সমাজের বাস্তবতা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে যে আইনের দলিল রচনা করেন পরবর্তী সময়ে তা কোড অব নেপোলিয়ন নামে পরিচিতি পায়। এতে দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে মোট ২২৮৭টি আইনের ধারা স্থান পায়। কিন্তু উক্ত নীতি প্রণয়ন ও সংসারসমূহ তাঁকে অমরত্ব দিলেও তাতে সীমাবদ্ধতা ছিল। তাঁর শাসনামলে সাম্য ও মৈত্রী নীতি যেমন পরিলক্ষিত হয় তেমনি দমন নীতি ও স্বৈরতন্ত্রী প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। তাঁর শাসনভার গ্রহণের সময় ফ্রান্সের সাধারণ জনগণ আশা পোষণ করেছিলেন যে, তিনি সমাজে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত করবেন। কিন্তু ফরাসি বিপ্লবের কিছু কিছু দিক আলোর মুখ দেখলেও সবগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। পুরাতন সমাজব্যবস্থার সঙ্গে নতুন আধুনিক আইন, নিয়মকানুন প্রবর্তনের ফলে দেশের অভ্যন্তরে নানা দ্বন্দ্ব সংঘাত দেখা দেয়। বিপ্লবীদের মধ্যে নরমপন্থি, চরমপন্থি, মধ্যপন্থি প্রভৃতি গোষ্ঠীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তারাও তাদের চিন্তাধারার বাস্তবায়ন ঘটাতে গিয়ে বিরোধ ও সংঘাতের সৃষ্টি করে। এসব কারণে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাঁর নীতি ও আদর্শকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন। তাই বলা যায়, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের নীতি, আদর্শ ও সংস্কারসমূহ তাঁকে অমরত্ব দিলেও তাতে সীমাবদ্ধতা ছিল।

৫. প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার একজন রাজা ছিলেন হাম্বুরাবিব। তাঁর শাসনামলে বেশকিছু অঞ্চলের আইনের সমন্বয়ে আইন সংকলন করা হয় যা কোড অব হাম্বুরাবিব নামে পরিচিতি। তার এ আইনের মাধ্যমে তিনি তার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। এ আইনের প্রয়োগ সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। তার এ আইন সংকলন তাকে পৃথিবীর ইতিহাসে অমরত্ব দান করেছে।
ক. টাইথ কী?
খ. মহাদেশীয় ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজা হাম্বুরাবিবর সাথে ফ্রান্সের কোন সম্রাটের কর্মকান্ডের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উক্ত কর্মকান্ড বিশ্বের ইতিহাসে উক্ত সম্রাটকে বিশেষ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে।' - উক্তিটির সত্যতা যাচাই কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. টাইথ এক প্রকারের ধর্মকর।

খ. ব্রিটেনকে একঘরে করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়নের গৃহীত ব্যবস্থার নাম মহাদেশীয় ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার আলোকে নেপোলিয়ন অন্যান্য ইউরোপীয় দেশকে ইংল্যান্ডের সাথে সামুদ্রিকভাবে যোগাযোগ করতে নিষেধ করেন। মূলত ইংল্যান্ডকে ব্যতিব্যস্ত করতে এ ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হলেও তা সফল হয়নি। নৌশক্তিতে বলিয়ান ইংল্যান্ড ঠিকই তার বাণিজ্যিক স্বার্থ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল। উপরন্তু অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্র নেপোলিয়নের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে ছিল।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাজা হাম্বুরাবিবর সাথে ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়নের কর্মকান্ডের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
নেপোলিয়নের সংস্কারসমূহের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তাঁর আইনবিধি বা 'Code of Napoleon'। নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান বলা হয়। বিপ্লবের পর ফ্রান্সে বহু আইন প্রণীত হয়। আবার ধুঁরবো শাসনামলের অসংখ্য আইন তখনও চালু ছিল। এছাড়া প্রদেশের প্রথাগত আইনও ছিল। এজন্য বিচারক ও সরকারি কর্মচারীরা আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পতিত হয়। নেপোলিয়ন এসব আইনকে সমন্বিত করে 'সাম্যভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য এবং আইনগুলোকে সংকলন করার জন্য আইনজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে এ সংক্রান্ত ৩৬টি অধিবেশনে মিলিত হয়ে আইনবিধি সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নেন। ৮৪টি অধিবেশনে মিলিত হয়ে বিশেষজ্ঞগণ আইনবিধির মূল সূত্রগুলো বিধিবদ্ধ করেন। এ সংকলনে মোট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) ধারা ছিল। আইনগুলো সরল ও স্পষ্ট ভাষায় লিখিত ছিল। এ আইন সংকলনের কতিপয় বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। যেমন- সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ লাভের অধিকার;
◉ সামন্ততন্ত্রের লোপ ও সকল সামন্তকর বাতিলকরণ;
◉ অভিজাত ও যাজকদের বিশেষ অধিকার ও সুযোগ রহিতকরণ;
◉ স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা;
◉ বিবাহ আইন মজবুতকরণ;
◉ বিচারব্যবস্থায় জুরিপ্রথা চালুকরণ;
◉ রাজবন্দিদের সাধারণ বন্দির চেয়ে স্বতন্ত্র মর্যাদাদান;
◉ ফৌজদারি আইনবিধি যুক্তিবাদ ও প্রাকৃতিক আইনের আলোকে রচনা করা প্রভৃতি।
নেপোলিয়নের আইনবিধির মাধ্যমে বিপ্লবের বাঁধভাঙা স্রোতের গতি। রুদ্ধ হয়ে একটি স্থিতাবস্থা আসে। প্রাকৃতিক ও রোমান আইনের সমন্বয় থাকার কারণে ইউরোপের বহুদেশে এ আইন গৃহীত হয়। বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে এ আইন এখনও চালু রয়েছে।

ঘ. উক্ত কর্মকান্ড অর্থাৎ আইনবিধি বিশ্বের ইতিহাসে উক্ত সম্রাট অর্থাৎ সম্রাট নেপোলিয়নকে বিশেষ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। তউক্তিটি যথার্থ। ফ্রান্সের কনসুলেটর হিসেবে নেপোলিয়নের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। হলো তাঁর আইন সংস্কার। ইতিপূর্বে ফ্রান্সে কোনো সুসংবদ্ধ আইন। প্রচলিত ছিল না। যে চারশটি বিভিন্ন রকমের আইন প্রচলিত ছিল। তাতে যথেষ্ট বৈষম্য ছিল। নেপোলিয়ন অনেক কষ্ট স্বীকার করে প্রাচীনকাল থেকে ফ্রান্সে প্রচলিত সমস্ত আইন সংগ্রহ করে এগুলোর সংস্কার সাধন করেন। পাঁচজন বিচক্ষণ আইনবিদের সমন্বয়ে ও তার তত্ত্বাবধানে একটি আইন কমিশন গঠন করে 'আইন বিধি' প্রণয়ন করেন, যাকে Code Napoleon বলা হয়। এতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনের চোখে মানুষের সমতা, কৃষকদের ভূমি মালিকানা স্বত্ব প্রভৃতি বিপ্লবের আদর্শ স্বীকৃতি লাভ করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভ্রাম্যমাণ বিচারক ব্যবস্থা সৃষ্টি তার অন্যতম একটি কীর্তি। জুরি প্রথা পূর্বের মতো বহাল রাখা হয়। তার প্রবর্তিত দেওয়ানি আইন ও কার্যবিধি, ফৌজদারি আইন ও কার্যবিধি এবং বাণিজ্য আইন ছিল জটিলতামুক্ত ও সুবিন্যস্ত। রোমান আইনের মূল আদর্শের ওপর ভিত্তি করে এগুলো রচিত বলে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও তা গৃহীত হয়। তিনি নিজেই এ আইনবিধির গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘চল্লিশটি যুদ্ধে জয়লাভ করা আমার সত্যিকারের গৌরব নয়, যা কখনো মুছে ফেলা যাবে না এবং যা চিরস্থায়ী হবে তা হলো আইনবিধি।"

৬. আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধিজীবীরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে একদিকে যেমন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণের সমালোচনা করেন তেমনি অন্যদিকে দেশের আপামর জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন।
ক. 'The Persian Letters' গ্রন্থটি কার লেখা?
খ. টেনিস কোট শপথ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়ের সাথে ফরাসি বিপ্লবের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘উক্ত ব্যক্তিদের ভূমিকাই ফরাসি বিপ্লবকে অপরিহার্য করে তুলেছে।’’- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. The Persian Letters' গ্রন্থটির লেখক মন্টেস্কু।

খ. ফ্রান্সের রাজা যাজক ও অভিজাত শ্রেণির প্ররোচনায় তৃতীয় সম্প্রদায়কে দমন করার জন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন। তৃতীয় সম্প্রদায় অধিবেশনে এসে দেখে সভাগৃহ বন্ধ ও ফটকে সৈন্য মোতায়েন করা আছে। তখন তৃতীয় সম্প্রদায় বাধ্য হয়ে। সিরাজের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী টেনিস খেলার মাঠে সমবেত হয়। তারা শপথ নেয়, যতদিন তারা ফ্রান্সের জন্য শাসনতন্ত্র রচনা করতে না পারবে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এ ঐতিহাসিক ঘটনাকেই টেনিস কোর্টের শপথ বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়ের সাথে ফরাসি বিপ্লবের সংগঠনে দার্শনিকদের অবদানের বিষয়ে সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
অষ্টাদশ শতাব্দী ছিল জ্ঞানদীপ্তির শতাব্দী। এ শতাব্দীতে ফ্রান্স তথা ইউরোপে এমন কতিপয় দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে যাদের ক্ষুরধার লেখনী পাঠ করে মানুষ ক্রমেই যুক্তিবাদী হয়ে ওঠে। তারা সমাজে যা প্রচলিত তাকে মেনে না নিয়ে এ ব্যবস্থার দোষত্রুটি বিচার করতে শিখে। দার্শনিকগণ রাজার স্বর্গীয় অধিকার তত্ত্বকে যুক্তির দ্বারা আক্রমণ করে এ অভিমত প্রচার করেন যে, রাজার ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের উৎস শ্রষ্ঠা নন, জনগণের ইচ্ছা। তারা এ মত প্রচার করেন যে, প্রকৃতির - নিয়মে অধিকারের সাথে কর্তব্যও থাকে। সুতরাং রাজা শুধু অধিকার ভোগ করতে পারেন না, তাকে কর্তব্যও করতে হবে। ফরাসি বিপ্লবের ওপর বিখ্যাত গবেষক লেফেডার বলেন যে, ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিকগণ শুধু জাগতিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুনের ব্যাখ্যার মধ্যে তাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ না রেখে প্রাকৃতিক আইনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, তারা ছিলেন মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী ও সংস্কারে বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করতেন প্রকৃতি যেমন নিয়মে চলছে তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও নিয়ম মেনে চলা দরকার। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মনেটস্কু, রুশো, ভলটেয়ার, দিদেরো, ডি এলেমবার্ট প্রমুখ। উক্ত ব্যক্তিগণ ফ্রান্সের জনগণকে রাজতন্ত্রের নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন। রাজা ও অভিজাত শ্রেণির সীমাহীন দুর্নীতি তাদের লেখনীতে প্রকাশিত হলে তা জনগণ মন্ত্রবাক্যের মতো গ্রহণ করে। ফলে সফলভাবে ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়।

ঘ. উক্ত ব্যক্তিদের ভূমিকা অর্থাৎ দার্শনিকদের ভূমিকাই ফরাসি বিপ্লবকে অপরিহার্য করে তুলেছিল। উক্তিটি যথার্থ।
যেকোনো বিপ্লবের পূর্বে মানুষের চিন্তা বা ভাবজগতে বিপ্লব আসে। ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অষ্টাদশ শতকের ফ্রান্সে একদল সাহিত্যিক ও দার্শনিকের আবির্ভাব হয়, যাঁরা ফ্রান্সের সমকালীন সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও ধর্মীয় জীবনের সর্বস্তরে পরিব্যাপ্ত অনাচার ও দুর্নীতির তীব্র সমালোচনা করে জাতীয় জীবনে এক বৈপ্লবিক ভাবতরঙ্গের সৃষ্টি করেন। তাঁদের সমালোচনার ফলেই সাধারণ মানুষ এসব অনাচার, দুর্নীতি, বৈষম্য এবং এর পাশাপাশি তাদের নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। তাঁদের সমালোচনার ফলে পুরনো ব্যবস্থার ভিত শিথিল হয়ে পড়ে। রাজার দৈবস্বত্ব বা ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয়। ফরাসি দার্শনিক মন্টেস্কু বলেন যে, ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা বলে কিছু নেই। দার্শনিক রুশোও একই কথা বলেন। তিনি বলেন যে, জনগণই সব ক্ষমতা ও শক্তির উৎস। ঈশ্বর নয় 'জনগণের ইচ্ছা' অনুসারে এক চুক্তির মাধ্যমে রাজা সিংহাসনে বসেছেন। সুতরাং তিনি স্বৈরাচারী হয়ে এ চুক্তি লঙ্ঘন করলে প্রজারা তাঁকে পদচ্যুত করতে পারবে। রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর এ 'সামাজিক চুক্তি মতবাদ' রাজার দ্বৈবস্বত্বের মূলে কুঠারাঘাত হানে। ফ্রান্সে ব্যক্তিস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। রাজা এবং অভিজাতদের কথাই ছিল সব। এ অবস্থায় মন্টেস্কু ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। দার্শনিকদের উক্ত ক্ষুরধার লেখনী ফরাসি জনগণকে বিপ্লব সংগঠনে উদ্দীপ্ত করে তোলে। তাই বলা যায়, উক্ত ব্যক্তি অর্থাৎ দার্শনিকদের ভূমিকাই ফরাসি বিপ্লবকে অপরিহার্য করে তুলেছে।

HSC ইতিহাস ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. 'ক' রাজ্যের রাজা তার রাজ্যে আধুনিকায়ন করেন। নিজের দেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করার জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তার বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের ফলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হলেও তার কিছু ভুল পদক্ষেপের কারণে শেষাবধি তিনি ব্যর্থ হন। তা সত্ত্বেও তাকে ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ বীর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ক. 'আমিই রাষ্ট্র' - উক্তিটি কার?
খ. ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র কী ছিল?
গ. উদ্দীপকের রাষ্ট্রনায়কের সাথে ফ্রান্সের কোন রাষ্ট্রনায়কের সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত রাষ্ট্রনায়ক রাষ্ট্রের আধুনিকায়নে কী ধরনের সংস্কার সাধন করেন? আলোচনা কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'আমিই রাষ্ট্র'- উক্তিটি চতুর্দশ লুই-এর।

খ. ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। সনাতন ফরাসি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য, রাজনৈতিক অধিকার প্রাপ্তি প্রভৃতিকে উদ্দেশ্য করে ফরাসি সাধারণ জনগণ ফুঁসে ওঠে। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার মহান আদর্শ ছিল ফরাসি বিপ্লবের। মূলমন্ত্র। যা প্রচারে রুশো, মনেটস্কু, দিদেরা প্রমুখ লেখকগণও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ফলে রাজার স্বৈরতন্ত্রের বিলোপ ঘটে এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।

গ. উদ্দীপকের রাষ্ট্রনায়কের সাথে ফ্রান্সের রাষ্ট্রনায়ক নেপোলিয়নের কর্মকান্ডের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ ছিল তিনটি- স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী। নেপোলিয়ন ছিলেন বিপ্লবের অগিণময় তরবারি। যেখানেই তাঁর সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছে, সেখানেই 'পুরাতনতন্ত্রের' পতন ঘটেছে। ইউরোপের সর্বত্র সামন্তপ্রথাই ছিল সমাজ ও অর্থনৈতিক জীবনের মূলভিত্তি। তাঁর সাম্রাজ্য স্থাপনের ফলে সামন্ততন্ত্রের পতন হয়, গির্জার প্রাধান্য লোপ পায়, মধ্যবিত্ত ও কৃষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কর ব্যবস্থা আরও সুষম ও দক্ষ হয় এবং সর্বত্র প্রতিভা ও যোগ্যতার মূল্য দেওয়া হয়। সারা ইউরোপ জুড়ে মুক্তির হাওয়া বইতে থাকে। 'কোড নেপোলিয়ন'-এর মাধ্যমে তিনি সাম্যের বাণী ছড়িয়ে দেন। তাঁর মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লব ইউরোপীয় বিপ্লবে রূপান্তরিত হয়। যেখানেই তাঁর সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছিল, সেখানেই ইউরোপের মানুষ তাঁকে "মুক্তিদাতা' বলে অভিনন্দন জানিয়েছিল। ক্রমে নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের স্বরূপ সবার কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে। তিনি নিজেই বলেছিলেন যে, তিনি যা কিছু করছেন, তার উদ্দেশ্য হলো-ফ্রান্সের মানুষের ভালো করা। তিনি ফ্রান্সে 'ব্যাঙ্ক অব ফ্রান্স' প্রতিষ্ঠা করলেও ইউরোপের বিজিত দেশগুলোর ওপর অধিক কর চাপান এবং তীব্র আর্থিক শোষণ শুরু করেন। বলা বাহুল্য, ফ্রান্সের মানুষের ভালো করতে গিয়ে তাঁকে ইউরোপে শোষণের নীতি গ্রহণ করতে হয়। তিনি ফ্রান্সের মানুষকে সাম্য ও মৈত্রী দিয়েছিলেন কিন্তু স্বাধীনতা দেননি।

ঘ. উক্ত রাষ্ট্রনায়ক অর্থাৎ নেপোলিয়ন রাষ্ট্রের আধুনিকায়নে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার সাধন করেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
i. অর্থনৈতিক সংস্কার : নেপোলিয়ন অর্থ দপ্তরকে রাজস্ব দপ্তর ও অডিট দপ্তর এ দুই ভাগে ভাগ করেন। ফ্রান্সের অর্থনৈতিক কাঠামোকে সুদৃঢ় করার জন্য তিনি Bank of France গঠন। করেন। যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ ও পুরনো রাস্তার সংস্কার সাধন করেন।
ii. শাসনতান্ত্রিক সংস্কার: শাসন সংস্কারের অংশ হিসেবে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। সমগ্র ফ্রান্সকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আনেন।
iii. ধর্মীয় সংস্কার : নেপোলিয়ন তাঁর বিখ্যাত Concordat of 1801 - 1 এর মাধ্যমে ধর্মীয় ব্যাপারে পোপ ও ফরাসি চার্চের মধ্যকার বিরোধ দূর করেন। তাঁর ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় ব্যাপারে ঐক্য ও শান্তি স্থাপন করা।
iv. অন্যান্য সংস্কার : নেপোলিয়ন ফ্রান্সের গুণীদের প্রকৃত মর্যাদা দেওয়ার জন্য Legion of Honour নামে একটি সম্মানসূচক খেতাব সৃষ্টি করেন। শিক্ষা বিস্তারের জন্য University of 1 France প্রতিষ্ঠা করেন।
পরিশেষে বলা যায়, নেপোলিয়ন রাষ্ট্রের আধুনিকায়নে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার সাধন আনয়ন করেন। নিজের দেশকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার জন্য তিনি যে সংস্কার সাধন করেন, তা তার দেশকে বহির্বিশ্বে উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন।

৭. উনিশ শতকের শেষভাগে ইউরোপের একটি দেশে শত বছরের নির্যাতিত শোষিত শ্রেণি শাসক দলের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অকর্মণ্য ও বিলাসপ্রিয় শাসক দল বঞ্চিত শ্রেণির ক্ষোভের মুখে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়। ক্ষমতার পালাবদলে শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি শাসনক্ষমতা লাভ করে। ফলশ্রুতিতে শাসনব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়।
ক. গ্যাবেলা কী?
খ. বিপ্লবী বিচারালয় কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ইউরোপের দেশটির যে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে তার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য আছে? বিশ্লেষণ কর।
ঘ. "শোষণ ও বঞ্চনাই ছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের প্রধান কারণ"- মতামত দাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্যাবোলা হলো লবণ কর।

খ. ফরাসি বিপ্লবের অগ্রগতির ইতিহাসে সন্ত্রাসের বা ত্রাসের রাজতব একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। এর ব্যাপ্তিকাল ছিল ১০/১০/১৭৯৩ থেকে ২৮/০৭/১৭৯৪ পর্যন্ত। সে সময় বিপ্লববিরোধী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য এক বিশেষ বিপ্লবী বিচারালয় গঠিত হয়। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে। এটি ছিল বিশেষ। ক্ষমতাসম্পন্ন আদালত এবং এর রায় চূড়ান্ত বলে গৃহীত হতো। বিপ্লবী বিচারালয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে তা কার্যকর করা হতো।

গ. উদ্দীপকের ইউরোপের দেশটির যে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে তার সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের বিপ্লব-পরবর্তী ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি-সংস্কৃতি এবং ধর্মব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল তার সাদৃশ্য রয়েছে।
১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এ যুগান্তকারী বিপ্লব আকস্মিক। ঘটনার ফলে সংঘটিত হয়নি। বহুদিনের পুঞ্জীভূত শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়-অবিচার প্রভৃতি অভিযোগই পরবর্তীতে ফরাসি বিপ্লবে রূপ নেয়। এ বিপ্লবের প্রভাবে ফ্রান্সের পুরাতন সমাজ কাঠামোর ভিত ধবসে যায়। ফলে চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়। ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল চরম স্বৈরাচারী। সেখানে জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। রাজা ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার ওপর নিজের স্বৈরাচারী শাসন নির্ভরশীল মনে করতেন। রাজা পঞ্চদশ ও ষোড়শ লুইয়ের সরকার ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ। এছাড়া চতুর্দশ লুইয়ের যুদ্ধনীতি, পঞ্চদশ লুইয়ের অমিতব্যয়িতা এবং ষোড়শ লুইয়ের অক্ষমতার ফলেই ফরাসি জনসাধারণ তাদের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে বিদ্রোহ করে। অন্যদিকে, যাজক সম্প্রদায়ের পরই ছিল অভিজাতশ্রেণির অবস্থান। এরাও বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ব্যবহার করত এবং জনগণের নিকট থেকে কর আদায় করত। সমাজের এ যাজক ও অভিজাতশ্রেণির হাতে ছিল রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা। অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত ও সাধারণ লোকদের ওপর রাজস্ব দেওয়ার দায়িত্ব আরোপ করা হয়। তাই রাজনৈতিক অধিকার বঞ্চিত এমন লোক তাদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এবং শ্রেণি ভেদাভেদ দূর করে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতেই এ বিপ্লব ঘটায়। যা ফ্রান্সের যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়নে এক মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।

ঘ. হ্যাঁ, আমিও মনে করি, "শোষণ ও বঞ্চনাই ছিল শাসকদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের প্রধান কারণ। আর জনগণের ক্ষোভের এ বহিঃপ্রকাশই ছিল ফরাসি বিপ্লবের প্রাণ।" ফরাসি বিপ্লব ছিল মানবজাতির ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
যার সাথে সাধারণ জনগণের প্রতি রাজা বা শাসক শ্রেণির শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাসই জড়িত। এ বিপ্লব শুধু ইউরোপ নয়, বরং সমগ্র বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছিল। এ বিপ্লবের মূলভিত্তি ছিল স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী। রাজতন্ত্রের পরিবর্তে গণতন্ত্র, সামন্ততন্ত্রের পরিবর্তে সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্রের পরিবর্তে জনসাধারণের সমান অধিকার, সামাজিক বৈষম্য এবং বিভেদের স্থলে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠার জন্য ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা প্রাপ্তির নীতির ওপর নির্ভর করে চতুর্দশ লুই রাজতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতার আধারে পরিণত করেন। এ ক্ষমতা বোঝাবার জন্য তিনি মন্তব্য করেন, "The State it is mysclr" বা "I am the state" বা 'আমিই রাষ্ট্র'। ষোড়শ লুই তাঁর আত্মজীবনীতে বিষয়টি আরো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, "রাজারা হচ্ছেন সর্বময় প্রভু তাঁদের প্রজাদের সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব করার সকল প্রাকৃতিক অধিকার রয়েছে।" ফলে তাদের হিংসাত্মক কথাবার্তা এবং শোষণনীতির কারণেই সাধারণ জনগণ আর চুপ থাকেনি। তারা বিদ্রোহ করে তার ভুল প্রমাণের চেষ্টা থেকেই পরবর্তীতে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এ বিপ্লবের প্রভাব ইউরোপের প্রায় সকল দেশেই প্রতিফলিত হয়েছে। ফরাসি বিপ্লব জাতীয়তাবাদী ও চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিল। ফরাসি জনগণ প্রথমবারের মতো একাত্মবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল। এসময়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে। তাছাড়া ফরাসি বিপ্লব মানুষের মধ্যে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিপ্লবী ভাবধারার উনেমষ ঘটায়। যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশের জনগণকে বিপ্লবী হতে অনুপ্রেরণা যোগায়। সামন্তপ্রথার বিলুপ্তি সাধন করে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র ও ব্যক্তি সচেতনতার বিকাশ ঘটায়। এভাবে জাতিসমূহের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এ স্বাধীনতা অর্জনে ফরাসি বিপ্লব দেশে দেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সুতরাং, আমি মনে করি, রাজা বা বুর্জোয়া শ্রেণির শোষণের প্রতি সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ জন্মিয়েছিল তার বহিঃপ্রকাশই ছিল ফরাসি বিপ্লব।

৮. ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে লর্ড ডালহৌসি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদী শাসক। ভারতে ব্রিটিশ শক্তিকে সুসংহত করতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিতেও তিনি দ্বিধা করেননি। নানা কারণে তিনি এ ভারতবাসীর বিরাগভাজন হলেও সংস্কার কর্ম করে ডালহৌসি জননন্দিতও হয়েছিলেন।
ক. 'The Persian Letters' গ্রন্থের রচয়িতা কে?
খ. The Legion of Honour কী? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের ডালহৌসির সাথে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের কোন নৃপতির সাদৃশ্য রয়েছে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে তাঁর আইন সংস্কার আলোচনা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত নৃপতি সংস্কার কাজে সফল হয়েছিলেন? তোমার মতামত দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'The Persian Letters' গ্রন্থের রচয়িতা দার্শনিক মন্টেস্কু।

খ. The Legion of Honour হচ্ছে এক ধরনের উপাধি যা ১৮০২ সালের ১৯ মে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রবর্তন করেন। এটি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা। The Legion of Honour পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যথা-
১. নাইট,
২. অফিসার,
৩. কমান্ডার,
৪. গ্র্যান্ড অফিসার এবং
৫. গ্র্যান্ড ক্রস।

গ. উদ্দীপকের ডালহৌসির সাথে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের যে নৃপতির সাদৃশ্য রয়েছে তিনি হলেন ফ্রান্সের নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
নোপোলিয়নের সংস্কারসমূহের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তাঁর আইন বিধি বা Code Napoleon। নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান বলা হয়। প্রাক-বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সে কমপক্ষে ৪০০টি বিভিন্ন ধরনের আইন ছিল। বিপ্লবের পর ফ্রান্সে বহু আইন প্রণীত হয়। আবার ধুঁরবো শাসনামলের অসংখ্য আইন তখনও চালু ছিল। এছাড়াও প্রদেশের প্রথাগত আইনও ছিল। এ জন্য বিচারকও সরকারি কর্মচারীদের আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পতিত হয়। নেপোলিয়ন এসব আইন সমন্বিত করে 'সাম্যভিত্তিক' সমাজ বিনির্মাণের জন্য এবং আইনগুলোকে সংকলন করার জন্য আইনজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে এ সংক্রান্ত ৩৬টি ও ৮৪টি অধিবেশনে মিলিত হয়ে এবং বিশেষজ্ঞগণ মিলে আইনবিধির মূল সূত্রগুলো বিধিবদ্ধ করেন। এ সংকলনে মোট ২২৮৭টি (মতান্তরে ২২৮১টি) ধারা ছিল। আইনগুলো সরল ও স্পষ্ট ভাষায় লিখিত হয়। আইনগুলো হলো---
◉ সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ লাভের অধিকার।
◉ সামন্ততন্ত্রের লোপ ও সকল সামন্তকর বাতিলকরন।
◉ অভিজাত ও যাজকদের বিশেষ অধিকার ও সুযোগ রহিতকরণ।
◉ স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠা।
◉ বিবাহ আইন মজবুতকরণ। বিচারব্যবস্থায় জরিপ্রথা চালুকরণ।
◉ রাজবন্দিদের সাধারণ বন্দিদের চেয়ে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান।
◉ ফৌজদারি আইনবিধি যুক্তিবাদ ও প্রাকৃতিক আইনের আলোকে রচনা করা প্রভৃতি।
নেপোলিয়ন তাঁর আইনবিধিতে বৈপ্লবিক চিন্তাধারা ও রোমান আইনের এক অপূর্ব সমন্বয় সাধন করেন। নেপোলিয়নের আইনবিধি ফরাসি বিপ্লবের সর্বাপেক্ষা স্থায়ী ফলরূপে পরিচিত। এ আইন ইউরোপের বহুদেশে গৃহীত হয় এবং বেলজিয়াম ও লুক্রেমবার্গে এ আইন এখনও চালু আছে।

ঘ. আমি মনে করি, উক্ত নৃপতি অর্থাৎ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তাঁর সংস্কার কাজ দ্বারা পুরোপুরি সফল হতে পারেননি। কারণ তাঁর সংস্কারসমূহের সীমাবদ্ধতা ছিল। নিচে আমার মতামত উপস্থাপন করা হলো-
   ক. প্রশাসনিক সংস্কারের ফলে সারা দেশে প্রশাসনিক ঐক্য ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় হলেও প্রিফেক্টগণ জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের খুব কমই নিয়োজিত করতে পারতেন। ফলে প্রশাসন কেন্দ্রীকরণ নীতি নেপোলিয়নের জন্য শেষ পর্যন্ত কোনো শুভ ফল বয়ে আনতে পারেনি। প্রিফেক্টদের স্থানীয় ভিত মজবুত না থাকায় তারা নেপোলিয়নের দুর্দিনে কোনো সাহায্য করতে পারেনি।
    খ. নেপোলিয়নের আইন সংস্কারও ত্রুটিমুক্ত ছিল না। যেমন-
◉ ফ্রান্সের নারী সমাজের বন্ধন মুক্তি ও সমান অধিকার লাভের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল কোড নেপোলিয়ন দ্বারা তা দূরীভূত হয়। সম্পত্তির অধিকার সংকুচিত করা হয়।
◉ পুরুষ ও নারীর অধিকারের সমতাকে কোড নেপেলিয়নে অস্বীকার করা হয়।
◉ পিতাকে 'পরিবারের ওপর সামান্ততান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করা হয়।
◉ কোর্ড নেপোলিয়নের আইন বিধিতে শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ও ধর্মঘটের অধিকার স্বীকার করা হয়নি। বরং বুর্জোয়াদের স্বার্থের অনুকূলে ছিল।
    গ. নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারও ত্রুটিমুক্ত ছিল না। যেমন-
◉ তাঁর শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষের মুক্তচিন্তা ও চেতনার কোনো স্থান ছিল না।
◉ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ্যসূচিকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছিল, যাতে তাঁর শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ছাত্রদের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি না হয়।
◉ সৃজনশীল চিন্তাধারা, মৌলিক সৃষ্টি না দেওয়ায় ফ্রান্সে শুধু অধিকসংখ্যক ডাক্তার, প্রকৌশলী, ও গবেষণাকে উৎসাহ আমলা ও সেনাপতি তৈরি হয়, কিন্তু কবি, সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবী শ্রেণি তদ্রূপ সৃষ্টি হয়নি। সুস্থ সংস্কৃতি ফরাসি। জীবনধারা থেকে নির্বাসিত হয়।
এর পরও এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাঁর সংস্কারগুলো ফ্রান্সের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সূচনা করে যা সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধি এনে দেয় এবং বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

৯. অষ্টাদশ শতকে 'ক' একজন স্বৈরাচারী রাজা ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতেন। পাশাপাশি একই সামাজিক শ্রেণি ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। অন্যদিকে, সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণিটির পক্ষে কিছু সংখ্যক মহান লেখক অন্যায় নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। তাদের লেখনি রাজার ক্ষমতাকে জোরালোভাবে আঘাত করে।
ক. চতুর্দশ লুই কে ছিলেন?
খ. Third State বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিপ্লবের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উল্লিখিত মহান লেখকগণ কীভাবে উক্ত বিপ্লবকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলেন? যুক্তি দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. চতুর্দশ লুই ছিলেন ফ্রান্সের স্বৈরাচারী রাজা।

খ. যাজক ও অভিজাত ব্যতীত ফ্রান্সের অন্যান্য মানুষ Third state বা তৃতীয় শ্রেণি নামে পরিচিত ছিল। আঠার শতকে ফ্রান্সের জনসংখ্যা ছিল আড়াই কোটি। এদের মধ্যে ৯৬ ভাগই ছিল তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বুর্জোয়া ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি, কৃষক ও শহরের শ্রমিক। বুর্জোয়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল ব্যাংকের মালিক, শিল্পোৎপাদক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিল্পী এবং বার্তাজীবী। তৃতীয় শ্রেণি ছিল রাষ্ট্রীয় সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই ফরাসি বিপ্লবের সময় এ বুর্জোয়া শ্রেণিই নেতৃত্ব দিয়েছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনার সাথে আমার পাঠ্যবইয়ে আলোচিত 'ফরাসি বিপ্লবের' সাথে মিল রয়েছে।
যেকোনো বিপ্লব একটি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা ও ধর্মীয়ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। তেমনি ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লব ও ফ্রান্সের সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছিল। ফরাসি বিপ্লব পূর্ববর্তী ফ্রান্সে সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে দিনাতিপাত করত। তখন ফরাসি সমাজে তিনটি স্তর ছিল। যাজক শ্রেণি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ভোগ করত। অভিজাত শ্রেণি দ্বিতীয় শ্রেণি এবং বাকি সব মানুষ ছিল তৃতীয় শ্রেণির। ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগ ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি। বাকি ৯৬ ভাগ ছিল তৃতীয় শ্রেণির। অথচ রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ৪ ভাগ মানুষই ভোগ করত বাকি ৯৬ ভাগ লোক ছিল অধিকারবঞ্চিত। ১৭৮৯ সালের দিকে ফ্রান্সে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে জনগণ রুটির জন্য রাস্তায় নেমে পড়ে এবং রাজবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনরত জনগণ রাজাকে বন্দী করে ভার্সাই প্রাসাদ থেকে প্যারিসে নিয়ে আসে। কিন্তু পরবর্তীতে রাজা পলায়নকালে জনগণের হাতে ধরা পড়েন এবং তাকে হত্যা করা হয় এবং ফরাসি বিপ্লব চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে। উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, ফরাসি বিপ্লব ছিল শোষক ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সফল বিপ্লব। যা পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য দেশের বিপ্লবকে উৎসাহ যুগিয়েছিল।

ঘ. ফরাসি বিপ্লব সাধনে অনেক মহান মনীষীর লেখনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের লেখনি দ্বারা জনগণ সচেতন হয়ে ওঠে এবং তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে বিপ্লব ঘটায়।
ফরাসি বিপ্লবে যেসব দার্শনিকের লেখা প্ররোচনা যুগিয়েছিল তাদের মধ্যে হলব্যাখ ভ্যালক, ভলতেয়ার, মন্টেস্কু ও রুশো ছিলেন প্রধান। হলব্যাখ ঈশ্বরচিন্তা অপেক্ষা বস্তুজগতে মানুষের কল্যাণচিন্তাকেই প্রাধান্য দেন। তিনি বলেন, ‘‘আদিতে মানুষ সুখী ছিল। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনাচারের জন্যই মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বেড়েছে।" ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম মহান নায়ক ছিলেন ভলতেয়ার। তাঁর লেখাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে Ocdipe, Letters philosophiques, Elements of Essays on universal History ও Zodig এসব লেখায় তিনি রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার দোষত্রুটি সহজ ও ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্নভাবে রোমান ক্যাথলিক গির্জা এবং যাজকদের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন। এতে গির্জা এবং যাজকদের প্রতি মানুষের ঘৃণা জনমাতে তিনি সাহায্য করেন।
ফরাসি বিপ্লবের পথ সুগম করার ক্ষেত্রে রুশোর অবদান সবচাইতে বেশি। তার মতে, রাষ্ট্র ঈশবরের সৃষ্টি নয়। প্রকৃতির রাজ্যে বসবাসকারী মানুষ একটি চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করেছে। এভাবে রুশো একদিকে রাজার Divine Right Theory কে চ্যালেঞ্জ করেন এবং অপরদিকে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়াবার প্রেরণা যোগান। এভাবে রুশো ফরাসি জনগণকে এক বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন।
পরিশেষে বলা যায়, ফরাসি বিপ্লব সংঘটনে উপরিউক্ত লেখকের বিপ্লবী লেখা প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল।

১০. 'নর্ড' নামে একটি অঞ্চলের রাজা জনগণের মতামত ও অধিকারকে গুরুত্ব দিত না। এমনকি ন্যায্য অধিকারকেও অস্বীকার করত। উপরন্তু তাদেরকেই করের বোঝা বহন করতে হতো। এমতাবস্থায় ঐ সুবিধাবঞ্চিতরা একদিন রাজাকে পদচ্যুত করেন। ওই অঞ্চলের একজন সেনাপতিই শেষপর্যন্ত ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি বহু সংস্কার সাধন করেন। দেশকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন।
ক. বাস্তিল কী?
খ. ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র লেখ।
গ. ফরাসি বিপ্লবের নতুন শাসকের সংস্কার কাজের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন শাসকের মিল রয়েছে? তুলনা কর।
ঘ. উক্ত অঞ্চলে ওই শাসক কি শাসনব্যবস্থা শক্ত অবস্থানে উন্নীত করেছিলেন? বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাস্তিল ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের দুর্গ।

খ. ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র ছিল 'সাম্য, স্বাধীনতা ও মৈত্রী' (Liberty, Equality and Fraternity)। ফরাসি বিপ্লবের এ মূলমন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন দার্শনিক জ্যা জ্যাক রুশো। রুশো তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'Social Contract' - এ উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্র ঈশবরের সৃষ্টি নয়। বরং প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ পরস্পর চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে যেখানে, সাম্য, স্বাধীনতা ও ঐক্য বিরাজ করত। তাই ফরাসি জনগণ ও রাজার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাম্য, স্বাধীনতা ও মৈত্রী স্থাপনের জন্য বিপ্লব ঘটায়।

গ. ফরাসি বিপ্লবের নতুন শাসকের সংস্কার কাজের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ে আলোচিত শাসক নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কারের সাথে মিল রয়েছে।
ফরাসি বিপ্লবের পর ডাইরেক্টরি শাসনের ব্যর্থতার প্রতি ফ্রান্সের জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৭৯৯ সালে ফ্রান্সের ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং ১৮০৪ সালে নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর তিনি ফ্রান্সের সংস্কার কাজে হাত দেন। তাঁর সংস্কারসমূহ হলো-
প্রশাসনিক সংস্কার : নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রদেশ ও জেলার শাসনকর্তা প্রিফেক্ট ও সাব-প্রিফেক্ট এবং পৌরসভার মেয়র নিয়োগের অধিকার নিজ হাতে রাখেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার : নেপোলিয়ন সরকারি দপ্তরগুলোকে ব্যয় সংকোচনের নির্দেশ দেন। তিনি সকল প্রকার বাড়তি কর রহিত করে কয়েকটি নির্দিষ্ট কর আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তিনি ১৮০০ সালে Bank of France স্থাপন করে এর সাহায্যে মুদ্রা ব্যবস্থা সংগঠক ও বাণিজ্যের উন্নতি সাধন করেন।
আইন সংস্কার : নেপোলিয়নের অন্যতম সংস্কার হলো আইন সংস্কার যা, Code of Nepolion নামে বিখ্যাত। কোড নেপোলিয়নে ২২৮০টি ধারা ছিল। Code of Nepolion-এ আইনের চোখে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়, সামাজিক সাম্য স্থাপন করা হয় এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে যেকোনো নাগরিকের চাকরি নিশ্চিত করা হয়। শিক্ষা সংস্কার : নেপোলিয়ন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটান। তিনি প্রতিটি কমিউনে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। শহরে কয়েকটি আদর্শ সরকারি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এখানে তিনি ল্যাটিন ভাষা শিক্ষাকে আবশ্যিক করেন।
তাই বলা যায়, নেপোলিয়ন বিভিন্ন সংস্কার কাজের দ্বারা প্রাচীন ঘুণে ধরা ফ্রান্সের সমাজকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। এর ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ফ্রান্সের দৈনন্দিন জীবনে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরে আসে।

ঘ. হ্যাঁ, ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফ্রান্সের শাসনব্যবস্থাকে শক্ত অবস্থানে উন্নীত করেছিলেন।
ফরাসি বিপ্লবের পর ডাইরেক্টরি শাসনের ব্যর্থতার প্রতি ফ্রান্সের জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৭৯৯ সালে কনসাল হিসেবে ফ্রান্সের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। অচিরেই তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নেপোলিয়ন ১৮০৪ সালে নিজেকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর নেপোলিয়ন ফ্রান্সের সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নেন। তাঁর এ সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে প্রশাসনিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, আইন সংস্কার, ধর্ম সংস্কার ও জনহিতকর কার্যাবলি ছিল অন্যতম। এসকল সংস্কার সাধন করে নেপোলিয়ন ফ্রান্সকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর সংস্কার কাজের ফলে ফ্রান্সে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি অত্যন্ত কঠোরভাবে ফ্রান্সকে শাসন করেন। এর ফলে তিনি শুধু ফ্রান্সে নয় তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেকে শক্ত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি সমগ্র বিশ্বকে নিজের করায়ত্তে আনার জন্য Contivertal System চালু করেছিলেন।
পরিশেষে বলা যায়, বিপ্লবের সন্তান নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি ও প্রশাসক। তিনি ফ্রান্সের শাসনব্যবস্থাকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post