এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC History 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC History 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Itihas 2nd paper Srijonshil Proshno Uttor.
ইতিহাস
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১
HSC History 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
উচ্চ মাধ্যমিক ■ ইতিহাস (দ্বিতীয় পত্র) ■ অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও পরীক্ষা প্রস্তুতি
প্রথম অধ্যায় : শিল্প বিপ্লব
১. পৃথিবীর সূচনালগ্নে আদিম মানুষের হাতিয়ার ছিল অমসৃণ পাথর আর তারা বাস করত গুহায়। প্রকৃতি নির্ভর জীবন থেকে মানুষ তার মেধা ও মনন কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ধারালো অস্ত, চাষাবাদ পদ্ধতি, পশুপালন প্রভূত কর্মকান্ডের মাধ্যমে জীবন ধারায় পরিবর্তন আনে। পরবর্তীতে চাকার আবিষ্কার মানুষের জীবনধারাকে গতিশীল করে।
ক. ফ্লাইং শাটল আবিষ্কার করেন কে?
খ. রাশিয়ায় কেন শিল্প বিপ্লব দেরিতে ঘটেছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে পাঠ্যপুস্তকের কোন বিপ্লবকে নির্দেশ করা হয়েছে? ব্যাখ্য কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর যে উক্ত বিপ্লবের কারণে মানুষের জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফ্লাইং শাটাল আবিষ্কার করেন জন কে।
খ. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের অনেক পরে রাশিয়াতে শিল্প বিপ্লব ঘটে। রাশিয়াতে দেরিতে শিল্প বিপ্লব ঘটার অন্যতম কারণগুলো হলো জার সরকারের অযোগ্যতা, সীমাহীন দূর্নীতি, শোষণ পুঁজির স্বল্পতা ও শিল্পায়নে অনীহা। জার সরকারের শাসনামলে রাশিয়ার এরূপ সমস্যার কারণে অনেক দেরিতে শিল্পায়ন ঘটে।
গ. উদ্দীপকে পাঠ্যপুস্তকের শিল্প বিপ্লবকে নির্দেশ করা হয়েছে।
সভ্যতার শুরুতে মানুষ ছিল যাযাবর। মেয়েরা উদ্যানভিত্তিক কৃষির সূচনা করলে মানুষ সংঘবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে পূর্বেকার শিকার কেন্দ্রিক মনুষ্য সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে উৎপাদন নির্ভর সমাজ যাত্রা করে। মানুষ বিভিন্ন কৌশল ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে কায়িক ও মেধাশ্রমের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। অষ্টাদশ শতকে এসে মানুষের এই পণ্য উৎপাদন ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। শিল্প বিপ্লবের আগে শিল্প উৎপাদন মানুষের দৈহিক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে তীব্র বায়ুপ্রবাহ এবং খরস্রোতা নদীর স্রোতের দ্বারা চাকা ঘুরিয়ে যন্ত্র চালু করে শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করা হতো। মানুষ এ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী শিল্প উৎপাদন করতে পারত না। কারণ নদীর স্রোত সারা বছর পাওয়া যেত না। তাছাড়া বায়ুপ্রবাহ প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, দুর্ভিক্ষ, মহামারি দেখা দিলে শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পেত। এসময় জেমস ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করায় অন্ধকারে আলোর রেখা দেখা দেয়। ১৭৬৪ সালে স্পিনিং জেনি আবিষ্কার হয়। আর্করাইট ওয়াটারফ্রেম যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এসব আবিষ্কার শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং সমাজে অভূতপূর্ণ বিপ্লব ঘটায়। অতএব প্রকৃতির সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে শিল্প উৎপাদনের এ বিষয়টির পরিবর্তনকেই শিল্প বিপ্লব বলা হয়। শিল্প বিপ্লব মানুষের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছে। কৃষির স্থলে শিল্প অর্থনীতি স্থান পেয়েছে। নতুন নতুন শহর সৃষ্টির মূলে শিল্প বিপ্লব অনেক ভূমিকা রেখেছে। মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাস শুরু করেছে।
ঘ. হ্যাঁ, শিল্প বিপ্লবের কারণে মানুষের জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডের সমাজ জীবনে এক নতুন ধারার উন্মেষ ঘটে। সমাজ জীবনে পূর্বে যেমন শ্রমিক শ্রেণি কুটির শিল্পে কাজ করে জীবন চালাত, এখন কাজের জন্য তাদেরকে শহরে ধন্না দিতে হচ্ছে। অনেকে কাজ পাচ্ছে আবার অনেকে পাচ্ছে না। কারণ কুটির শিল্পে অনেক শ্রমিককে কাজ করতে হতো। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হওয়ায় অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। অনেক লোক অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ায় দুঃখকষ্টের পরিমাণও বাড়তে থাকে। সমাজ জীবনে পুঁজিপতির সংখা বাড়তে থাকে; কিন্তু শ্রমিক শ্রেণি বেশি সংখ্যায় গরিব হয়ে যায়। ব্যবসায় বাণিজ্যে লাভ পেয়ে কলকারখানার মালিক ও আড়তদারগণ অনেক অর্থসম্পদের মালিক হন। পক্ষান্তরে, মজুররা অতি সামান্য পরিমাণ রোজগার করায় তাদের সামাজিক জীবনে অশান্তি নেমে আসে। তৎকালীন সময় শিশু এবং মহিলাদের শ্রমিক হিসেবে বেশি নিয়োগ দেওয়া হতো। কারণ এদের পারিশ্রমিক কম দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারত। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি আদৌ খেয়াল করা হতো না। কাজের সন্ধানে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিতে থাকে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় শহরে চাকচিক্য বৃদ্ধির পরিবর্তে একটা হতশ্রী অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পুষ্টিহীনতায় গরিব শ্রমিকদের অনেকেই অকাল মৃত্যুর সম্মুখীন হয়।
২. 'ক' একটি কৃষিনির্ভর দেশ। কিন্তু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আধুনিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কার, কলকারখানার উদ্ভব, ঔপনিবেশিক বাণিজ্যসহ নানা কারণে সে দেশটি বিশ্ববাজারে পরিণত হয়। ফলে সে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
ক. 'Globalization' শব্দের অর্থ কী?
খ. 'ইংল্যান্ডের কৃষি বিপ্লবই শিল্প বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছে' ব্যাখ্যা কর।
গ. 'ক' নামক দেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সাথে অষ্টাদশ শতাব্দীর কোন বিপ্লবের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উক্ত বিপ্লব অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধন করে' -বক্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'Globalization' শব্দের অর্থ বিশ্বায়ন।
খ. শিল্প বিপ্লব সৃষ্টিতে কৃষি বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। শিল্প সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে ক্রমবর্ধমান শহর ও শিল্পে অধিক শ্রমিকের খাদ্য যোগান দেওয়া কৃষি বিপ্লবের অবদান। শিল্প উৎপাদনে প্রাথমিক উপাদান, অর্থাৎ কাঁচামাল কৃষি থেকে আসে। আর এভাবেই কৃষি বিপ্লব শিল্পবিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল।
গ. উদ্দীপকে 'ক' নামক দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সাদৃশ্য রয়েছে। অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে ইংল্যান্ডে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির আবিষ্কার ও ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থায় যে ব্যাপক ও যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয় তাকেই সাধারণ অর্থে শিল্প বিপ্লব বলা হয়। কৃষির হাত ধরেই ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়।
অষ্টাদশ দশকের শেষার্ধে ইংল্যান্ডে কৃষির অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে শিল্পের জন্য কাঁচামাল সহজলভ্য হয়। সচ্ছল কৃষকরা হাতে টাকা পয়সা থাকায় শিল্প পণ্য কিনতে সক্ষম হয়। উদ্বৃত্ত কৃষি উপাদান ছাড়াও বর্ধিত জনসংখ্যা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পুঁজির সংস্থান, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ, খনিজ সম্পদের যোগান, যন্ত্রপাতির আবিষ্কার ইত্যাদি কারণে ইংল্যান্ড শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়। ইংল্যান্ডে সমুদ্র তীরবর্তী কয়লা খনিগুলো একাধিক শিল্পের জ্বালানির যোগান দেয়, অন্যদিকে তা সম্ভায় জাহাজে করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজারে সরবরাহে সহায়তা করে। স্যার আইজাক নিউটনের বৈজ্ঞানিক সূত্রসমূহ এবং রবার্ট বোয়েলের বাষ্পীয় নীতি ও সূত্রসমূহের পথ ধরে জেমস ওয়াট, নিউকোমেন, এডমান্ড কাটরাইট, রিচার্ড আর্করাইট শেফিল্ডস হ্যান্টস, জোসিনা ওয়াজ উড প্রমুখ নব নব প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন, যা ইংল্যান্ডকে শিল্পকারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করে। ফলে ইংল্যান্ড ক্রমান্বয়ে কৃষিপ্রধান দেশ থেকে শিল্পপ্রধান দেশে রূপান্তরিত হতে থাকে। ইংল্যান্ডের ফ্যাক্টরিগুলোর উৎপাদিত পণ্য পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই রপ্তানি হতে থাকে, যা দেশটিকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ইউরোপের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করে।
ঘ. উক্ত বিপ্লব তথা শিল্প বিপ্লব অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধন করে। শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে বাণিজ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা, নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি এবং পুঁজির লেনদেন বেড়ে যায়। বাণিজ্যিক মূলধন শিল্প মূলধনে রূপান্তরিত হয়। ব্যবসায়ীরা বড় বড় শিল্পকারখানায় বিপুল মূলধন খাটিয়ে প্রচুর পণ্যসামগ্রী উৎপাদন শুরু করে। বড় বড় শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য তখন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠতে থাকে। একক মালিকানায় যেসব বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না সেগুলো যৌথ মালিকানায় ও যৌথ মূলধনী কারবারে রূপান্তরিত হয়। ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেকগুণ বেড়ে যায়। ইংল্যান্ডের শিল্পজাতদ্রব্য অনেক দেশে রপ্তানি হতে থাকে। সর্বোপরি শিল্প বিপ্লবের ফলে শিল্পপতি ও কারখানার মালিকগণ প্রচুর সম্পদ ও অর্থের মালিক হন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও ইংল্যান্ডের কোষাগারে প্রচুর অর্থ সঞ্চিত হতে থাকে। শুধু ইংল্যান্ড নয়, শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিতে ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, যোগাযোগ, যানবাহন ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। পুরাতন সামন্ত কৃষি অর্থনীতি মন্থর উন্নয়নের স্থলে বাজার ও পুঁজিবাদী অর্থনীতি দ্রুত উৎপাদন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ধারা সূচিত করে। মাত্র দুশ বছরে ইউরোপের অর্থনীতি পূর্ববর্তী হাজার বছরের সামন্ত অর্থনীতির চেয়ে অনেক বেশি উন্নতি নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলা যায়, 'শিল্প বিপ্লব অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সাধন করে।'
৩. নওশের হাসানের 'ব্রাইট স্টার' কোম্পানি একের পর এক শিল্পদ্রব্যের বাজার হারিয়ে সেই পুরাতন শিল্প কৌশলকেই অবলম্বন, করে আছে। তবে বিপত্তি সত্ত্বেও নওশের হাসান প্রচুর জমি ক্রয় করেছেন বিত্তশালী ভূমি মালিক হওয়ার আশায়। ক্রমান্বয়ে কারখানার কাঁচামালের যোগানের অভাব হওয়ায় শিল্পের প্রতি তার বেশ অনীহা কাজ করতে শুরু করে। তার এ বেহাল অবস্থা দূরীকরণে সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলে না।
ক. আর্নল্ড টয়েনবির মতে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সূচনাকাল কত খ্রিষ্টাব্দ থেকে কত খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত?
খ. শিল্প-পূর্ব ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক অবস্থা ব্যাখ্যা কর।
গ. নওশের হাসানের অবস্থার সাথে ইউরোপের শিল্পবিপ্লব পূর্ব কোন দেশের অবস্থা সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. নওশের হাসানের সমস্যার মাঝেই সমাধান লুকিয়ে আছেুউক্তিটি সম্পর্কে মতামত দাও।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আর্নল্ড টয়েনবির মতে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সূচনাকাল ১৭৪০-১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
খ. ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতো ভূস্বামীদের দ্বারা। গার্হস্থ্য পর্যায়ে শিল্পের জন্য ইংল্যান্ডে জাতীয় কোনো সংগঠন ছিল না। শ্রমিকদের কাজের জন্য কখনো সংঘবদ্ধ হতে হয়নি। এসময় ইংল্যান্ডে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধ ছিল। তাই গির্জার আধিপত্যের জন্য রাষ্ট্রশক্তি সম্প্রসারিত হয়নি। শিল্প বিপ্লবের পূর্বে প্রশাসন এবং আইন বিভাগ তেমন শক্তিশালী ছিল না।
গ. উদ্দীপকের নওশের হাসানের সাথে ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের পূর্বকালীন সময়ে ফ্রান্সের আর্থসামাজিক অবস্থার মিল পাওয়া যায়।
শিল্প বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে শিল্প বিকাশের অনুকূল পরিবেশ ছিল না। যে কারণে ফ্রান্সের শিল্প বিপ্লব হয় তুলনামূলক পরে। এ সময়কার মানুষের মধ্যে শ্রমবিমুখতা, রক্ষণশীলতা এবং শিল্প-বাণিজ্যের প্রতি ঘৃণার ভাব দেখা যায়। শিল্পের প্রসারের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা যেমন- পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, মূলধন, শুল্ক সুবিধা, কাঁচামালের সরবরাহ, বাজার সুবিধা ইত্যাদি ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা, ইংল্যান্ডের সাথে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় ফ্রান্স পিছিয়ে থাকে। রক্ষণশীল ফরাসি সমাজে শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না। এ থেকে ভূমির মালিকানাকেই বেশি সম্মানের বলে মনে করা হতো। কাঁচামালের যোগান না থাকা এবং আমদানির ক্ষেত্রে অনীহাও ফ্রান্সের শিল্প বিপ্লব দেরিতে হওয়ার অন্য দায়ী। ১৮০০ সাল পর্যন্ত মোটামুটি এভাবেই চলতে থাকে। ১৮৫০ সালের পর থেকে দ্রুত এর পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
ঘ. নওশের হাসান সাহেবের 'ব্রাইট স্টার' কৌম্পানিটি শিল্পদ্রব্যের বাজার ধরে রাখতে পারছে না। কাঁচামালের অভাব তার শিল্প উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। শিল্পকারখানাটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে এবং তিনি শিল্প সম্প্রসারণের পরিবর্তে ভূমির মালিকানাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। আলোচ্য উদ্দীপক থেকে নওশের সাহেব এবং তার শিল্পকারখানা ব্রাইট স্টার সম্পর্কে এসব তথ্যই পাওয়া যায়। এখানে তার মূল সমস্যা হলো কাঁচামালের অভাব এবং বাজার সুবিধার অভাব। বাজারে টিকে থাকতে সরকারি কোনো সুবিধাও তিনি পাচ্ছেন না। নওশের সাহেবের অবস্থা যদি আমরা শিল্প বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজের সাথে তুলনা করি, তবে সমাধান পেয়ে যাই। সে সময়কার ফ্রান্সের শিল্প সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর প্রকৃতিও এমনই ছিল। ফ্রান্সের শিল্প মালিকদের চেয়ে ভূস্বামীদের সম্মান বেশি ছিল বিধায় তাদের শিল্পের প্রতি আগ্রহ ছিল না। কাঁচামালের যোগান এবং বাজার সক্ষমতায় ইংল্যান্ডের নিকট পেরে উঠছিল না ফ্রান্স। কিন্তু এ অবস্থা থেকেই তারা শিল্প বিপ্লব ঘটায়। তারা কাঁচামালের চাহিদা পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে, কাঁচামাল আমদানি বাড়ায়, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এবং বাজার বিস্তৃত করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সরকারি শুল্ক সমস্যা দূর করে। শিল্পকারখানায় আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে থাকে। এভাবেই তারা শিল্প বিপ্লব ঘটায়। নওশের হাসানের সমস্যার প্রকৃতিও যেহেতু অনুরূপ, কাজেই তিনিও তার সমস্যা থেকেই ফরাসিদের অনুকরণে সমাধান বের করতে পারেন।
৪. সুবর্ণ গ্রামের ফরহাদ চৌধুরী গতকাল তার কাপড় কারখানায় ব্যাংকের একটি শাখা উদ্বোধন করেছেন এবং আজ স্প্রিং তৈরির কারখানায় অন্য একটি ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন করছেন। অথচ এক দশক আগেও এখানকার কৃষকেরা অর্থ জমা রাখতে বা ঋণ নিতে একটি মাত্র ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল ছিল। গ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যেমন বাজার, রাস্তা, কৃষির উন্নতি ঘটল তেমনি শিল্পকারখানা ও ব্যাংকের সংখ্যাও বেড়েছে। ফরহাদ সাহেব অবশ্য এখানকার শিল্প কাঁচামালের সহজলভ্যতার কথা ভেবেই শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়েছেন।
ক. সূচনাকাল বা Takeoff কী?
খ. 'জ্ঞশিল্প বিপ্লবের পূর্বে ইংল্যান্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব শোচনীয় ছিল' -ব্যাখ্যা কর।
গ. ফরহাদ চৌধুরীর নিজ গ্রামে কীভাবে শিল্পের বিকাশ ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ফরহাদ সাহেবের শিল্পমুখী হওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক কোন বিশেষ বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে? বিশ্লেষণ কর।
৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কুটির শিল্প হ্রাস পেয়ে যে সময় কারখানাভিত্তিক যন্ত্রশিল্প গড়ে ওঠে তাই সূচনাকাল বা Takeoff.
খ. ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের পূর্বে মাত্র কয়েকটি শহর ছিল। আর সারা দেশে মানুষ ছড়ানো-ছিটানো ছিল। গ্রামে বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করত। শহর তেমন জনবহুল ছিল না। শিল্প বিপ্লবের পূর্বে কৃষিজ দ্রব্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে নেওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দ্রব্যমূল্য এক এক জায়গায় এক এক রকম ছিল। কৃষকেরা উপযুক্ত দামে দ্রব্যমূল্য বিক্রি করতে পারত না। সর্বদা দুর্ভিক্ষ, অনাহার ও অর্ধাহার লেগেই থাকত। শিল্প-পূর্ব ইংল্যান্ডের অর্থনীতিতে হতাশাজনক অবস্থা বিরাজ করছিল।
গ. কোনো একটি অঞ্চলে শিল্পের বিকাশ তখনই ঘটে যখন শিল্প সহায়ক উপাদানগুলোর সহজপ্রাপ্যতা থাকে। ভৌগোলিক অবস্থান, কাঁচামালের প্রাপ্তি, উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা, শ্রমিকের সহজলভ্যতা, অনুকূল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় শিল্পায়নকে গতিশীল ও দ্রুত করে তোলে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ফরহাদ চৌধুরীর নিজ গ্রাম সুবর্ণগ্রামে গত দশ বছরে শিল্পের বিকাশ উল্লেখযোগ্য আকারে হয়েছে। গ্রামটির পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, জনসংখ্যা বেশি এবং কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা বিদ্যমান। যে কারণে খুব সহজেই এখানে শিল্পকারখানা স্থাপন করে বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়েছে। কাঁচামালের প্রাপ্তি শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করেছে। অধিক জনসংখ্যা থাকায় খুব সহজেই প্রচুর শ্রমিক পাওয়া সম্ভব হয়। ব্যাংক ও বিমা সুবিধা থাকায় অর্থায়নও সহজ। আবার স্থানীয় বাজার থাকায় খুব সহজেই পণ্যদ্রব্যের বাজারজাত করা যাচ্ছে। ফলে খুব সহজেই সুবর্ণগ্রামে শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। একই রকম প্রেক্ষাপট লক্ষ করা গেছে। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে শিল্প বিপ্লবের সময়ে। সেখানেও শ্রমিকের সহজপ্রাপ্যতা, বাজার সুবিধা, কাঁচামালের প্রাপ্যতা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল। অনুকূল পরিবেশ এবং উদ্যোক্তা এ মিলেই শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। একইভাবে অনুকূল সুযোগ-সুবিধাও ফরহাদ সাহেবের মতো উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে সুবর্ণগ্রামে শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
ঘ. শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নের পেছনে অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান ছিল। সামাজিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে শিল্প গড়ে ওঠে। কাঁচামালের সহজলভ্যতা, পুঁজির যোগান, বাজার সুবিধা শিল্পায়নের অর্থনৈতিক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
শিল্পায়নের মাধ্যমে খুব সহজেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব কিন্তু কৃষিতে অনেক কঠিন। ফরহাদ সাহেব নিজ অবস্থান উন্নয়নে এবং সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধনে শিল্পায়নকে ব্যবহার করেছেন। শিল্পায়নের মাধ্যমে তিনি নিজ অর্থনৈতিক অবস্থার খুব সহজেই পরিবর্তন সাধন করতে পেরেছেন। এছাড়াও ব্যাংক সুবিধা থাকায় মূলধনের যোগানও অনেক সহজ হয়েছে, যা তাকে উৎসাহিত করেছে। মূলধনের সরবরাহ, শ্রমিকের সহজ প্রাপ্যতা, বাজার সুবিধা এবং কাঁচামালের যোগানের মতো উপাদান ফরহাদ সাহেবের শিল্পমুখী হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। একই রকম পরিস্থিতি লক্ষ করা যায়, শিল্প বিপ্লবকালীন সময়ে ইউরোপে। সেখানকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কাঁচামালের প্রাপ্যতা, মূলধনের যোগান, শ্রমিক প্রাপ্তি প্রভৃতি অর্থনৈতিক বিষয় শিল্পায়নের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। যার ফলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দ্রুত শিল্প বিপ্লব ঘটে। ফরহাদ চৌধুরীর শিল্পমুখী হওয়ার ক্ষেত্রেও সুবর্ণগ্রামে অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা কাজ করেছে। অনুকূল অর্থনৈতিক প্রভাব, ফরহাদ সাহেবের মেধা, প্রজ্ঞা, পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা সব মিলে তার শিল্পমুখী হওয়া এবং সফলতা লাভের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে।
৫. শ্রীকান্তপুর গ্রামটির অধিকাংশ মানুষ বহু বছর ধরে স্থানীয় প্রাকৃতিক ভেষজ গাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছিল। সম্প্রতি সরকার গ্রামটিকে তিন ভাগে বিভক্তকারী প্রবল খরস্রোতা অঞ্জলী নদীর উপর তিনটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম ব্রীজ নির্মাণ করলে এবং গ্রামটিতে ওষুধ প্রন্তুত কারখানা স্থাপনে সহজ শর্তে ঋণ বরাদ্দ প্রকল্প হাতে নেওয়ায় গ্রামটি ওষুধ শিল্পে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।, তাই অনেকের মতো উক্ত গ্রামের হেলাল হোসেনের জীবনেও এসেছে পরিবর্তন।
ক. বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সূচনাকাল সম্পর্কে কী মত পোষণ করেন?
খ. ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কারণ বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকের হেলাল হোসেনের জীবনে পরিবর্তন আসার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. শ্রীকান্তপুর গ্রামের চমকপ্রদ অগ্রগতিতে সরকার ও জনগণের আপ্রাণ চেষ্টা যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল-বিশ্লেষণ কর।
৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বেশিরভাগ ঐতিহাসিক ১৭৬০-১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সূচনা বলে মনে করেন।
খ. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পেছনে যেসব কারণ ফুটে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম হলো-
১. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
২. লোকসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কাজের অভাব দেখা দেওয়া।
৩. গ্রামে ভূমি বেষ্টনী প্রথার প্রসার লাভ।
৪. ইংল্যান্ডে লোহা ও কয়লার সহজলভ্যতা।
৫. স্কটল্যান্ডে কয়লার সাহায্যে লৌহ গলানোর পদ্ধতি আবিষ্কার।
৬. অষ্টাদশ শতাব্দীতে কৃষি বিপ্লব।
৭. উৎপাদনে কৃত্রিম সার প্রয়োগ।
৮. ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন।
৯. বিশ্বের অনেক জায়গায় ব্রিটিশ পণ্য বাজার সৃষ্টি।
১০. শক্তিশালী নৌবাহিনী।
গ. হেলাল হোসেনের জীবনে শিল্পায়নের প্রভাবে পরিবর্তন এসেছে। এরূপ শিল্পায়ন তার জীবনকে আমূল পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
প্রাকৃতিক ভেষজ গাছ উৎপাদন ও বিক্রি সনাতন কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার একটি বিশিষ্ট রূপ। কৃষক পর্যায়ে এর উৎপাদন হলেও কৃষক যথেষ্ট দাম না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এ ভেষজ গাছগুলোকে যদি ওষুধে রূপান্তরিত করা যায় অর্থাৎ শিল্পপণ্যে পরিবর্তন করা যায়, তবে এ থেকে কয়েকগুণ লাভ করা সম্ভব। কৃষিভিত্তিক একটি উৎকৃষ্ট মানের শিল্প হতে পারে এটি। কিন্তু অবকাঠামোর শক্তি এবং মূলধনের অপ্রতুলতা থাকলে তা কখনই সম্ভব হবে না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে অতি সহজেই এরূপ শিল্পকারখানা গড়ে উঠতে পারে। যেমনটি ঘটেছিল শিল্প বিপ্লবের সময় ইউরোপীয় দেশগুলোতে। শ্রীকান্তপুর গ্রামের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলেও আমাদের তাই মনে হয়। এখানে শিল্প বিপ্লব ঘটায় হেলাল সাহেবের মতো অনেকেই সরকারি ঋণ নিয়ে ভেষজ কারখানা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে তাদের আয় বেড়েছে, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে এবং সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা বদলে গিয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শ্রীকান্তপুর একটি সম্ভাবনাময় গ্রাম। এ গ্রামের ভেষজ গাছ, নদী, জনগণ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ জনপদের উদাহরণ। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বহু দিন এ গ্রামের মানুষ কেবল ভেষজ গাছ বিক্রির ওপরই নির্ভরশীল ছিল। অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও মূলধন এবং উদ্যোক্তার অভাবে তা শিল্পের আকার নিতে পারেনি। কাঁচামাল শুধু বিক্রি করেই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। অন্যদিকে, সরকার যখন নদী থেকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করল এবং সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থা করল তখনই এখানে শিল্প বিপ্লব শুরু হলো। অবস্থাটি অনেকটা সপ্তদশ শতকের ইংল্যান্ডের মতো, যেখানে প্রাকৃতিক যথেষ্ট উপাদান থাকার পরও শিল্প বিপ্লব হয়নি। তুলাসহ কৃষিজ দ্রব্য থেকে কেবল কুটির শিল্পজাত দ্রব্যই উৎপন্ন হতো সেখানে।
৬. মাগুরা শহরটি যেমন খুব ছোট তেমনি এর জনসংখ্যাও অনেক কম। শহরের সাথে লাগোয়া গ্রামে তাঁতি, কামার ও কুমার পাড়ার লোকজন কুঠির শিল্পের দ্বারাই সংসার চালায়। এ অঞ্চলের প্রায় সকল শিশুই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। ছুটির দিনে শহরের লোকেরা গ্রামে বেড়াতে যায় যেন মনে প্রশান্তি আসে। তবে এমন ঘুণে ধরা অবস্থার পরিবর্তন করতে জেবুন্নেসা বেগম মাগুরা শহরে গড়ে তোলেন ভারী শিল্পের কারখানা।
ক. শিল্প বিপ্লবের আগে শিল্প উৎপাদন কোন ধরনের শ্রমের ওপর নির্ভরশীল ছিল?
খ. 'মূলধনের করণে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটেছিল' -ব্যাখ্যা কর।
গ. জেবুন্নেসা বেগমের পদক্ষেপে লাগোয়া গ্রামীণ সমাজে কী ধরনের নেতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তোমার কি মনে হয় জেবুন্নেসা বেগমের ভারী শিল্প কেবল মাগুরা শহরের জটিলতা ও সংকট দূরীকরণে সহায়ক? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শিল্প বিপ্লবের আগে শিল্প উৎপাদন মানুষের দৈহিক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল ছিল।
খ. অর্থনীতির ভাষায় শিল্পের প্রধান শর্ত হলো মূলধন। শিল্প স্থাপন করতে গেলে মূলধন খুবই প্রয়োজনীয়। ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইউরোপের বাজারে ইংল্যান্ডের বণিকেরা পশম বিক্রি করে এবং ইউরোপ থেকে মাল এনে ওই জিনিস ইউরোপের বাজারে বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্জন করে। এসময় ইংল্যান্ডের কোম্পানিগুলো তাদের উপার্জিত অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে থাকে। একশ্রেণির জমির মালিক অতি উন্নত প্ৰথায় কৃষি খামার পরিচালনা দ্বারা অর্থ লাভ করে। কৃষি বিপ্লবের ফলে খামার মালিকদের অর্জিত অতিরিক্ত অর্থও ব্যাংকে জমা থাকে। তাছাড়া এসব কোম্পানিগুলো অর্থাৎ বিনিয়োগ করে আরও অর্থ উপার্জন করতে উৎসাহবোধ করে।
গ. মাগুরা শহরের নিকটবর্তী লাগোয়া গ্রামীণ সমাজে কুটির শিল্প কারখানাগুলো স্থানীয় চাহিদা মেটানোর কাজ করে। কামার, কুমার ও তাঁতিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য স্থানীয় চাহিদা মেটানোর কাজে সরবরাহ করে। এ থেকে আর্জিত আয়ে তাদের সংসার চলে। কিন্তু জেবুন্নেসা বেগম যখন ভারী কারখানায় বিপুল পরিমাণ মূলধন ও কাঁচামাল নিয়ে শিল্প উৎপাদনে মনোযোগী হবেন, তখন এ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মালিকের পক্ষে তার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। কামার, কুমার ও তাঁতিরা হাতে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে যখন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে হেরে যাবে, তখন তাদের এ শিল্পসমূহ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ফলে তারা বেকার হয়ে যাবে এবং অনেকে হয়তবা জেবুন্নেসার কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ নেবে। এভাবে যারা একসময় কুটির শিল্পের মালিক ছিল, তাদেরকে ভারী শিল্পের শ্রমিকের পথ বেছে নিতে হবে।
কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করবে আবার আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক পরিবারের শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এতে সমাজে অস্থিতিশীলতা, অন্যায় ও অপরাধ বাড়তে পারে। সার্বিক বিবেচনায় এটি এ গ্রামগুলোর জন্য অভিশাপ বয়ে আনবে।
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণিত জেবুন্নেসা বেগমের ভারী শিল্পকারখানা মাগুরা শহরের আর্থসামাজিক পরিবর্তনে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করবে। এরূপ শিল্পকারখানার প্রভাবে মাগুরার ন্যায় একটি ছোট শহরে শিল্পায়নের গতিকে যেমন ত্বরান্বিত করবে, তেমনিভাবে সামাজিক জটিলতা ও সংকটকেও ভারী করবে। এরূপ একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ফলে এলাকায় বিপুল সংখ্যক জনগণের কর্মসংস্থান হবে। তাদের আয় বাড়বে। বর্ধিত আয়ের প্রভাবে তাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে। অনেক কর্মহীন বেকার যুবক চাকরি পাবে, যারা পূর্বে বেকার থাকায় নানাবিধ অন্যায় কাজের সাথে যুক্ত থাকত। এরা সমাজের মূল ধারায় ফিরে আসবে। স্থানীয় পর্যায়ে লোক সমাগম বেড়ে যাওয়ার ফলে অন্যান্য ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সার্বিকভাবে একটি কর্মচঞল পরিবেশের সৃষ্টি হবে। আবার এর নেতিবাচক দিকও লক্ষণীয়। স্থানীয় কুটির শিল্প ধ্বংস হয়ে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে যাবে এবং তাদের নির্ভরশীল পরিবারেও বিপর্যয় নেমে আসবে। গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা মাগুরা শহরে নেই। এতে শহরের ঘিঞ্জি পরিবেশে অনেক শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হবে। শিশুশ্রমও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়াও ভারী শিল্পকারখানা অনেক সময়ই পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী থাকে। এক্ষেত্রেও তা ঘটতে পারে। এতে মাগুরার মতো নির্মল পরিবেশের একটি শহরে দূষণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
শিল্পায়ন এককভাবে সংকট দূরীকরণ কিংবা ঘনীভূত করার জন্য দায়ী থাকে না। ইউরোপীয় সমাজে শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। মাগুরা শহরেও এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না।
৭. আফজাল সাহেব প্রচুর তুলা উৎপাদিত হয় এরূপ একটি অঞ্চলে তার প্রথম পোশাক কারখানাটি গড়ে তোলেন পাঁচ বছর আগে। এরপর উক্ত অঞ্চলের উৎপাদিত দ্রব্য অন্যান্য দূরবর্তী অঞ্চলে বিক্রয় সম্ভব হলে তিনি আরও কয়েকটি পোশাক কারখানা স্থাপন করেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী পেতেও তাকে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। সেই সাথে আধুনিক পদ্ধতিতে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁচামাল নিয়েও তাকে ভাবতে হয়নি।
ক. ঐতিহাসিক নেফের মতে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সূচনাকাল কত খ্রিষ্টাব্দ থেকে কত খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত?
খ. শিল্প-পূর্ব ইংল্যান্ডের সামাজিক অবস্থা ব্যাখ্যা কর।
গ. আফজাল সাহেব শিল্পের সম্প্রসারণ সম্ভব করেছেন কিসের উপযুক্ত ব্যবহারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নতুন অঞ্চলে বাজার সৃষ্টি আফজাল সাহেবের কর্মকান্ডকে ত্বরান্বিত করেছে? মতামত দাও।
৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ঐতিহাসিক নেফের মতে, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সূচনাকাল ১৫৪০-১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
খ. শিল্প বিপ্লবের পূর্বে ইংল্যান্ডের সাধারণ মানুষেরা দেশের জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করত। তারা কৃষিজ দ্রব্য বিক্রি করে এবং কৃষিকাজের পারিশ্রমিক হতে যা পেত তা সংসারের জন্য ব্যয় করে জীবন অতিবাহিত করত। স্ত্রীলোক ও বালকদের তেমন পরিশ্রম করতে হতো না। সে সময় গ্রামে এবং শহরে মানুষ আলো-বাতাসপূর্ণ বাড়িতে বসবাস করত।
গ. কোনো একটি অঞ্চলে শিল্পের বিকাশ নির্ভর করে সে অঞ্চলের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর। যদি কোনো অঞ্চলে কোনো বিশেষ কাঁচামাল বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় তবে সেখানে সেই দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল শিল্পের বিকাশ ঘটবে। আবার অবকাঠামোগত সুবিধা, শ্রমিকের প্রাপ্তি, মূলধনের যোগান, বাজার চাহিদা ইত্যাদি অর্থনৈতিক বিষয়ও শিল্পায়নকে প্রভাবিত করে। আফজাল সাহেব যেখানে পোশাক কারখানা স্থাপন করেছেন সেটি তুলা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত একটি স্থান। তুলা থেকে সুতা এবং কাপড় তৈরি হয় যা পোশাক শিল্পের কাঁচামাল। আবার শ্রমিকের সহজলভ্যতা এবং উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা শ্রমনির্ভর পোশাক কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে সহায়ক। আফজাল সাহেব পোশাক কারখানা স্থাপনে এ সুবিধাসমূহকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি আঞ্চলিক ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উপাদান, যা শিল্পায়নে সহায়ক হয়, তার উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে নিজের পোশাক কারখানার উন্নয়নে কাজে লাগিয়েছেন। একই অবস্থা শিল্প বিপ্লবের সময় ইউরোপীয় দেশগুলোতে দেখা যেত।
ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি নতুন অঞ্চলে বাজার সৃষ্টি আফজাল সাহেবের কর্মকান্ডকে নিঃসন্দেহে ত্বরান্বিত করেছে।
কোনো অঞ্চলে শিল্পায়ন নির্ভর করে অনেকগুলো উপাদানের ওপর। প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয় দ্বারা এটি প্রভাবিত হয়। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দ্রব্যটির চাহিদা থাকতে হবে। যদি বাজার চাহিদা না থাকে, তবে অন্যান্য যত অনুকূল পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, সেই শিল্প গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। যেমন শিল্প বিপ্লবের সময় ইংল্যান্ডে সেসব দ্রব্যের কারখানা-ই গড়ে উঠেছিল, যার চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। আর এক্ষেত্রে বস্ত্র কারখানা ছিল প্রথমে। কেননা বস্ত্রের নিকটতম কোনো বিকল্প নেই। একইভাবে অস্ত্র কারখানাও গড়ে ওঠে, যখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অঞ্চল বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান শিল্প হলো তৈরী পোশাক শিল্প। তৈরী পোশাকের বাজার চাহিদা এবং স্থানীয় সুলভ শ্রম এ শিল্পের বিকাশে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত আফজাল সাহেব যে অঞ্চলে প্রথম কারখানাটি গড়ে তোলেন তা প্রথমত কাঁচামালের প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। অন্যান্য অঞ্চলে তার উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে তিনি তার কর্মকান্ডকে সম্প্রসারিত করেন। এক্ষেত্রে বাজার সৃষ্টি হওয়ার ফলেই তার কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। বাজার চাহিদা না থাকলে তার পক্ষে নতুন নতুন ইউনিট তৈরি করা সম্ভব হতো না। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে তাকে যোগান বাড়াতে হয়েছে। সেই সাথে অন্যান্য উপাদান যেমনত পর্যাপ্ত কাঁচামাল, শ্রমিক ইত্যাদির প্রাপ্যতা তাকে আরও সহজ করে দিয়েছে।
৮. একই জেলার তিনটি পৃথক গ্রামের অধিবাসী হারুন নতুন কলাকৌশল, জববার খনিজ দ্রব্য কয়লা ও লোহার উপস্থিতি এবং আফসার কৃষির ব্যাপক উন্নয়নের কারণে নিজ গ্রামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে গ্রাম তিনটির অবস্থা ভালো হলেও জেলার সার্বিক অবস্থা বেশ অনগ্রসর।
ক. বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন কে?
খ. ইংল্যান্ডে কৃষি বিপ্লবের ফলে শিল্প বিপ্লব ঘটে? ব্যাখ্যা কর।
গ. জববার, হারুন ও আফসার যে কারণে গর্বিত তা একত্রে উদ্দীপকের জেলায় কী ধরনের গতি আনবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তোমার কি মনে হয় উক্ত গতির সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব রয়েছে? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জেমস ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন।
খ. অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে কৃষি বিপ্লব ঘটলে ইংল্যান্ডে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশে শিল্পের জন্য কাঁচামালের অভাব হয়নি। কারণ এসময় কৃষিখাত উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করে। দ্রব্যমূল্য কম থাকায় শিল্পকারখানায় শ্রমিকরা কম মূল্যে চাকরি করত। কৃষকশ্রেণি সচ্ছল ছিল। তাই তারা সহজভাবে শিল্পদ্রব্য কিনতে পারে। এর ফলে দেশের মধ্যেই শিল্পের বাজার সৃষ্টি হয়। তাই বলা যায় যে, যদি ইংল্যান্ডে কৃষি বিপ্লব ঘটানো সম্ভব না হতো তবে শিল্প বিপ্লবও এত সহজে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হতো না।
গ. জববার, হারুন ও আফসার নিজ গুণাবলি ও দক্ষতার জন্য নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিত্ব। হারুন নতুন নতুন কলাকৌশলের জন্য বিখ্যাত। সে তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন দ্রব্য উৎপাদন করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। তার এ উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিভিন্ন বন্তুপণ্য উৎপাদনকে সহজ করে দেয়। ফলে ভোক্তারা নতুন নতুন দ্রব্য স্বল্পমূল্যে পেতে পারেন। একইভাবে তার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে শ্রমিকের দরকার হবে, যা অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। আবার জববারের জ্ঞান ও দক্ষতা নতুন আবিষ্কার ও সম্পদ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। এ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সে যে উদ্ভাবন করবে, তা শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে সহায়তা করবে ফলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। অন্যদিকে, আফসার কৃষিক্ষেত্রে একজন সফল উদ্যোক্তা। তার খামার খাদ্যশস্য উৎপাদন ও বেকারত্ব নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে এ তিন জনের উদ্ভাবনী সৃজনশীল ও কর্মমুখী কাজ উক্ত জেলায় বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। ফলে সামগ্রিক আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা আসবে।
ঘ. উদ্দীপকের হারুন, জববার ও আফসার তাদের যে গুণাবলির জন্য তাদের জেলায় বিখ্যাত, তার ফলে উক্ত জেলায় এক তাৎপর্যপূর্ণ গতিশীলতা আসতে বাধ্য। আর্থসামাজিক এবং সমাজকাঠামোর ওপর উক্ত গতি এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করবে বলে আমার মনে হয়। সতের শতকে শুরু হওয়া ইউরোপের শিল্প বিপ্লব ইউরোপকে সারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হতে সহায়তা করেছে। সেই বিপ্লবের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ, নতুন নতুন আবিষ্কার এবং জীবনমানের উন্নয়নে যে গতি সঞ্চারিত হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। সতের শতকের সেই বিপ্লব না হলে এ অবস্থায় পৌঁছানো কখনো সম্ভব হতো বলে মনে হয় না। হারুন, জববার ও আফসার যে কর্ম উদ্যোগের সূচনা করেছেন, তা উল্লিখিত জেলাটিতেও এক বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিল্প, বাণিজ্য এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে খুব সহজেই। এ উন্নয়নের প্রভাবে এলাকায় মানুষের আয় বাড়বে। ফলে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা আপনা আপনিই বেড়ে যাবে। ফলশ্রুতিতে উন্নয়নের একটি বৃত্ত তৈরি হতে পারে। যা তাদেরকে পৌঁছে দিবে অনেক ঊর্ধ্বে। এক সময় জেলাটি সারা দেশে এক আদর্শ জেলায় পরিণত হতে পারে। এসবই সম্ভব হতে পারে হারুন, জববার ও আফসারের কর্মতৎপরতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দক্ষতা থেকে যা জেলার সার্বিক ক্ষেত্রে এক সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করতে পারে।
৯. নদীর তীরে যে বিসত্মীর্ণ চর জেগেছিল তা হাতছাড়া হওয়ায় ইয়াকুব আলী মনঃক্ষুণ্ণ ছিলেন অনেক দিন। সম্প্রতি তার স্থাপিত শিল্পকারখানার ব্যবসায় প্রচুর লাভ হলে তিনি নতুন উদ্যমে কৃষি জমির জন্য সঞ্চিত অর্থ কারখানায় বিনিয়োগ করেন। এতে তার অবস্থার পরিবর্তন হলেও কৃষিকাজ ছেড়ে কারখানায় যোগ দেওয়া শ্রমিকদের অবস্থা ক্রমাগত দারিদ্রে্যর নিম্নসীমা অতিক্রম করছে। দাবিদাওয়া পূরণের পন্থা হিসেবে তাদের মাঝে এক সময় গড়ে ওঠে শ্রমিক ইউনিয়ন।
ক. স্পিনিং জেনি কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
খ. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে বর্ধিত জনসংখ্যার ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. ইয়াকুব আলীর অর্থনৈতিক জীবন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন এনেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তোমার কি মনে হয় ইয়াকুব আলীর কৃষি জমিতে কাজ করা কৃষকদের জীবনে এক নতুন ধারার উন্মেষ ঘটেছে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. স্পিনিং জেনি ১৭৬৪ সালে আবিষ্কৃত হয়।
খ. দেশে লোকসংখ্যা কম থাকলে শিল্পে শ্রমিকের অভাব হয়। সহজেই শ্রমিকের প্রাপ্যতা শিল্প গঠনে ভূমিকা রাখে। ইংল্যান্ডের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকলে গ্রামে অতিরিক্ত লোকের কাজের অভাব দেখা দেয়। এসব বাড়তি লোক গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। শহরে এসে কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকে। শহরের কারখানাগুলোতে গ্রাম থেকে আগত দিনমজুরেরা সস্তাদামে কাজ করতে থাকে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ওষুধ, কাপড় ও অন্যান্য দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এজন্য শিল্পদ্রব্যের চাহিদাও ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়। তাই বলা যায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে ভূমিকা অপরিসীম।
গ. উদ্দীপকের ইয়াকুব আলীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কৃষি ছেড়ে শিল্পের দিকে গিয়েছে। নদীর তীরবর্তী জেগে ওঠা চর দখল হাতছাড়া হওয়ার ফলে তিনি শিল্পের দিকে মনোনিবেশ করেন। শিল্প কারখানায় তার লাভের পরিমাণ দেখে কৃষির সম্ভাব্য মূলধনও তিনি শিল্পে বিনিয়োগ করেন। উদ্দীপক থেকে এটিই আমাদের বোধগম্য হয়। কৃষিজ ক্ষেত্র ছেড়ে শিল্পের দিকে আসার ফলে আলী সাহেবের মধ্যে শিল্পপতি মূলভ একটি মনোভাব গড়ে উঠেছে। তিনি ইতোপূর্বে চর দখল নিয়ে তাতে কৃষিকাজ করতেন। তখন তার অর্থনৈতিক আয় যা ছিল শিল্পে বিনিয়োগের ফলে তা অনেক বেড়ে যায়। কৃষিতে তিনি শ্রমিকদের শোষণ করতেন বলে মনে হয় না, অথচ শিল্পের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন বলে মনে হয়। শিল্প বিপ্লবের সময় ইউরোপের সমাজেও এরূপ প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। শিল্প মালিকেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও তাদের মধ্যে শ্রমিক শোষণের একটা মানসিকতা গড়ে উঠেছিল। রাজনৈতিক ক্ষমতা শিল্পপতি ও পুঁজিপতিদের হাতে চলে যায়। এছাড়াও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে পুঁজিবাদী মনোভাব দেখা যেত। ইয়াকুব আলীর ক্ষেত্রেও তাই দেখা যায়।
ঘ. ইয়াকুব আলীর কৃষিজ খামারে যারা কাজ করত তাদের অনেকেই হয়তবা তার নতুন শিল্প কারখানার কাজে যোগ দিয়েছে। শ্রমিকদের একটি বড় অংশ স্বভাবতই তখন কৃষিজ শ্রমিক থেকে শিল্প শ্রমিকে পরিণত হয়েছে। ফলে তাদের জীবনধারাতেও নতুন একটি প্রবণতার উন্মেষ ঘটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
ইংল্যান্ডের শিল্পে বিপ্লবের ফলে অসংখ্য কৃষি শ্রমিক শিল্পকারখানার কাজে যোগ দেওয়ার জন্য শহরে আসে। গ্রাম থেকে শহরে আসা এসব শ্রমিকের সবাই কাজ পায় না। এছাড়াও নতুন নতুন যন্ত্রপাতির উদ্ভাবনের ফলে শ্রমিকের চাহিদা কমে যায়। ফলে বেকারত্বের হারও বৃদ্ধি পায়। আবার কোন কোন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের অভাবে কাজ ব্যহত হয়। সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, এসব শ্রমিকদের জীবনযাত্রা কৃষি শ্রমিকের থেকে আমূল পাল্টে যায়। গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা শ্রমিকদের বাসস্থানসহ সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ধরনও পাল্টে যায়। সম্পূর্ণ নতুন ধারার এক জীবনের উন্মেষ ঘটে এসব শ্রমিকদের জীবনে। একইভাবে জীবনযাত্রার গতিপ্রকৃতিও বদলে যাওয়ার কথা ইয়াকুব আলীর খামারের শ্রমিকদের। যখন তারা কৃষি ছেড়ে শিল্প পেশায় যোগ দেয়। কৃষি ছেড়ে শিল্পকারখানায় যোগ দেওয়ার ফলে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, কাজের ঘণ্টা, মজুরি, জীবনযাত্রার মান সবই পাল্টে যেতে বাধ্য। এ পরিবর্তন তাদের জীবনে নতুন এক ধারার সূচনা করবে। ফলে তাদেরকে খুব সহজেই আগের অবস্থা থেকে আলাদা করা সম্ভব হবে। তাই নিঃসন্দেহে আমরা বলতে পারি, এরূপ শ্রমিকদের জীবনে এক নতুন ধারার উন্মেষ ঘটেছে।
১০. শওকত আলী তার চার ভাইয়ের সাথে সারাটা দিন কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকে। বাবার মতো তারা চার ভাইও নিরক্ষর। ভূমিদাসের মতো জীবনযাপন করতে শওকত আলীর ভালো লাগে না। শহরের শিল্পে গড়া সমাজের প্রতি তার আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ক. কোন ব্যক্তি শিল্প বিপ্লব কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন?
খ. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে পিউরিটান সম্প্রদায়ের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. শওকত আলীর আগ্রহ বাস্তবে রূপ দিতে কীরূপ পরিবর্তন আবশ্যক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর শওকত আলীর জীবনযাপন অনেক সহজতর হবে? তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফরাসি সমাজতান্ত্রিক লেখক আগস্ট বস্নাদ্ধি শিল্প বিপ্লব কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।
খ. ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবে পিউরিটান সম্প্রদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে করে। পিউরিটান সম্প্রদায় ছিল কঠোর পরিশ্রমী। তাদের মধ্যে, সৃজনশীলতার অভাব ছিল না। ক্রমওয়েলের পতনের পর এ সম্প্রদায় রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা শিল্প সংগঠনে আত্মনিয়োগ করে। ইংল্যান্ডের পেনসন পার্লামেন্ট আইন করে পিউরিটানদের চাকরি, শিক্ষকতা প্রভৃতি বৃত্তিমূলক জীবিকা থেকে বঞ্চিত করে। এসব সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত কর্মঠ ও দক্ষ পিউরিটানরা অত্যন্ত দৃঢ়তা নিয়ে শিল্প বাণিজ্যে তাদের শ্রম ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়। এভাবে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবে তারা ব্যাপক অবদান রাখে।
ঘ. শওকত আলী একজন নিরক্ষর কৃষি শ্রমিক। সে যদি শহরে গিয়ে শিল্প শ্রমিক হিসেবে কাজ করে, তবে সেখানে যোগ দেবে একজন অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে। আর অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে সে যে স্বপ্ন নিয়ে শহরে যাবে, তা বাস্তবায়ন খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না।
শিল্পায়িত সমাজজীবন কৃষিভিত্তিক সমাজ জীবনের চেয়ে কঠিন, শ্রমসাধ্য এবং বাস্তবভিত্তিক। এরূপ সমাজে যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে, বিশেষত অদক্ষ শ্রমিক, তাদের আয় অনেক কম। পারিশ্রমিকে তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। শহুরে সমাজে আবাসন সমস্যা একটি বড় সমস্যা, তাই তাকে থাকতে হবে বস্তির নিম্ন পরিবেশে। গ্রামের মতো মুক্ত পরিবেশে না থাকায় তার রোগ ব্যাধির সম্ভাবনাও বাড়বে। সার্বিক বিবেচনায় তার জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটতে বাধ্য। একই কারণে তার জীবন কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হবে। তবে এ অবস্থায় সে টিকে থাকতে পারলে ধীরে ধীরে তার দক্ষতা বাড়বে। সেই সাথে আয়ও বাড়বে। তখন তার জীবনমান আস্তে আস্তে উন্নত হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করবে তার মেধা, পরিশ্রম এবং দক্ষতার ওপর। কিন্তু সে যেহেতু নিরক্ষর, তাই তার দক্ষতা কাঙি্ক্ষত স্তরে উন্নীত হওয়া কঠিন। যে কারণে শহরের শিল্পায়িত সমাজের শিল্প শ্রমিক হিসেবে কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তাকে জীবন পার করা লাগতে পারে। তার জীবনযাপন যে অনেক সহজ হবে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও একথা বলা যায় যে, একটা পর্যায়ে তার আয় বৃদ্ধি পাবে।
0 Comments:
Post a Comment