HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৯

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রহিমার গায়ের রং কালো। তাই বিয়ে দেয়ার সময় তার বাবা পাত্র পক্ষকে স্বর্ণালংকার, গৃহস্থালি সামগ্রী, মোটর সাইকেল ও নগদ অর্থসহ অনেক উপহার প্রদান করেন। কিছুদিন পরে পাত্র পক্ষ আরো অনেক কিছু দাবি করে এবং রহিমাকে নানান কটূক্তি করে। পাত্র পক্ষের চাহিদা মেটাতে পারেনি বলে রহিমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অবশেষে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ক. জ্ঞাতি সম্পর্ক কয় প্রকার?
খ. কর্মজীবী নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে কেন?
গ. উদ্দীপকে রহিমার বিয়েতে উপঢৌকন ছাড়া অন্যান্য কিছু দাবী করা কোন ধরনের সমস্যাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উক্ত সমস্যাটির কারণে বেশির ভাগ নারী সমাজে আত্মহত্যা করে? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জ্ঞাতি সম্পর্ক ৪ প্রকার। যথা- রক্তসম্পর্কিত, বৈবাহিক, কাল্পনিক এবং প্রথাগত।

খ. কর্মজীবী নারীরা সামাজিক ও পরিবেশগত কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। বর্তমানে সমাজে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে নারীরা নানাভাবে সমস্যার শিকার হচ্ছে। যেমনত যৌন নির্যাতন, অধিক কাজে বাধ্য করা, মানসিকভাবে চাপে রাখা, পারিশ্রমিক কম দেওয়া, আসা-যাওয়ার রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি। আর এসব সমস্যার ফলেই কর্মজীবী নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।

গ. উদ্দীপকে রহিমার বিয়েতে উপঢৌকন ছাড়া অন্যান্য কিছু দাবি করা ‘যৌতুক' নামক ভয়াবহ সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে। যৌতুক হলো এক ধরনের অর্থনৈতিক দাবি। সামাজিকভাবে এ প্রথাকে উপহার, উপঢৌকন, নজরানা প্রদান প্রভৃতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। সাধারণত পাত্র বা পাত্রীপক্ষ কর্তৃক পাত্রী বা পাত্রকে প্রদেয় অর্থ সম্পত্তি বা অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী যৌতুক হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌতুক মূলত পাত্রীপক্ষ কর্তৃক পাত্রপক্ষকে দেওয়া হয়ে থাকে। যৌতুকের দ্রব্যাদির মধ্যে নগদ অর্থ থেকে শুরু করে গহনা, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল, আসবাবপত্র প্রভৃতি দাবি করা হয়ে থাকে। যৌতুকের সাধারণ ব্যাখ্যায় ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স র‍্যাডিন বলেন, ‘‘যৌতুক হলো সে সম্পদ যা বিবাহের সময় ব্যক্তি তার স্ত্রী বা স্ত্রীর পরিবার থেকে পেয়ে থাকে।’’
উদ্দীপকে দেখা যায়, রহিমার বিয়ের সময় তার বাবা পাত্রপক্ষকে স্বর্ণালংকার, গৃহস্থালী সামগ্রী, মোটর সাইকেল ও নগদ অর্থসহ অনেক উপহার প্রদান করেন। পাত্রপক্ষ বিয়ের কিছুদিন পর আরো অনেক কিছু দাবি করে। পূর্বে আলোচিত যৌতুকের সংজ্ঞা এবং উদাহরণের প্রেক্ষিতে সহজেই বোঝা যায় যে, উপঢৌকন ব্যতিত পাত্রপক্ষ অন্যান্য যা কিছু দাবি করেছে তা যৌতুক সমস্যাকেই নির্দেশ করে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত সমস্যা তথা যৌতুক প্রথার কারণে বেশিরভাগ নারী সমাজে আত্মহত্যা করে। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, যৌতুক একটি অমানবিক সামাজিক অনাচার। এ অনাচার বিবাহকে ঘিরে ঘটে থাকে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিবাহের সময় কনেপক্ষকেই যৌতুক প্রদান করতে বাধ্য করা হয়। অর্থাৎ যৌতুকের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কন্যার পরিবার। যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে সর্বস্ব হারাতে হয়।
ফলে পারিবারিকভাবে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এছাড়াও পরিবারে নানা ধরনের অশান্তি ও ভাঙনও দেখা দেয়। অনেক সময় যৌতুকের অর্থ না পাওয়ার কারণে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা স্ত্রীর ওপর অমানবিক অত্যাচার করে। ফলে মৃত্যুর মতো অনাকাঙি্ক্ষত ঘটনাও ঘটে থাকে। আবার অনেকক্ষেত্রে যৌতুকের দাবি পূরণে ব্যর্থ হলে স্বামী তার স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়, সেখানে সে মানসিক ভোগান্তির শিকার হয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় রহিমাকে তার স্বামী বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, যেখানে সে বিভিনণ ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। উক্ত ঘটনাটি রহিমার মতো সমাজে আরো অনেক নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বস্তুত বাংলাদেশে পারিবারিক কারণে যতো নারী আত্মহত্যা করে, তাদের মধ্যে সিংহভাগই যৌতুকের শিকার হয়ে মৃত্যুর মতো চরম পথ বেছে নেয়।

২. শীতকালীন ছুটিতে শফিক স্যারের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে গেল। শীতকাল হলেও অনেকেই গরম পোশাক নেয়নি। স্যার বিষয়টি লক্ষ করে গরম পোশাক না পরার জন্য বকাবকি করল। এক ছাত্র বলল, স্যার এ বছর শীত একেবারে নেই বললেই চলে তো তাই গরম পোশাক পরিনি। স্যারও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বললেন, আসলেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে, তাই শীত কম অনুভূত হচ্ছে।
ক. মাদকাসক্তি কী?
খ. সামাজিক উন্নয়ন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীদের শীত অনুভূত না হওয়ার কারণটি কিসের পরিবর্তনকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বৈশ্বিক উষ্ণতাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণত বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মাদকাসক্তি বলতে এমন এক দ্রব্যসমগ্রী ব্যবহারকে বোঝায়, যা সেবনকারী ব্যক্তির মানসিক ও ব্যবহারিক আচরণকে প্রভাবিত করে এবং দ্রব্যসামগ্রির ওপর ব্যক্তি আসক্ত হয়ে পড়ে।

খ. সামাজিক উন্নয়ন একটি অবিচ্ছিন্ন সামাজিক অগ্রগতির প্রক্রিয়া। পরিভাষায় সামাজিক উন্নয়ন বলতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার মানের অবস্থান, মানব সম্পদের বিকাশ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি, পরিবেশ প্রভৃতির পূর্ববস্থা থেকে অপেক্ষাকৃত উন্নততর অবস্থায় উন্নীত হওয়াকে বোঝায়। এ প্রসঙ্গে 'Encyclopedia of Social Work in India'-তে বলা হয়েছেত ‘‘সামাজিক উন্নয়ন একটি ব্যাপক ধারণা যা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত পরিবর্তন নির্দেশ করে এবং সমাজ পরিবর্তনের ভূমিকা পালনের অংশ হিসেবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’’ বস্তুত সামাজিক উন্নয়ন বলতে সমাজজীবনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে বোঝায়।

গ. উদ্দীপকের শিক্ষার্থীদের শীত অনুভূত না হওয়ার কারণটি জলবায়ু পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। মানব সভ্যতার সূচনালগ্নে আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলো স্বাভাবিক স্থিতি অবস্থায় ছিল। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতি ইত্যাদি কারণে এই ভারসাম্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাপক শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ন্যায় প্রযুক্তিনির্ভর কর্মকান্ড জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবান্বিত করেছে। জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণের এই যে পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে এটাই 'জলবায়ু পরিবর্তন' হিসেবে বিবেচিত হয়। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার যে পরিবর্তন হচ্ছে তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড যেমন- গাছ কেটে ফেলা, কলকারখানা ও যানবাহনের কালো ধোয়া প্রভৃতি কারণে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বিশ্ব পূর্বের তুলনায় বেশি উষ্ণ হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়ত সময়ে-অসময়ে অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টি, ঋতুগুলোর দীর্ঘকালীন বা স্বল্পকালীন স্থায়িত্ব, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতি. সংঘটন ইত্যাদি। উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, শিক্ষার্থীরা শীতকালে শিক্ষা সফরে গেলেও সাথে গরম পোশাক নেয়নি। কারণ হিসেবে এক ছাত্র বলে যে, এ বছর শীত একেবারেই পড়ে নি বলে তারা গরম পোশাক আনেনি। উক্ত বক্তব্য সমর্থনপূর্বক শ্রদ্ধেয় শফিক স্যার এরূপ অবস্থার জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতাকে দায়ী করেন, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই ঋতুগুলো তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে।

ঘ. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণত উক্তিটি যথার্থ। জলবায়ু পরিবর্তন হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তিত রূপ। অর্থাৎ- জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হচ্ছে তার মূলে রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ গলে যাবার হার দ্রুত হারে বেড়ে গেছে। পরিসংখ্যানুযায়ী, বরফগলার এই হার ১৯৮০-১৯৯০ সালের তুলনায় ২০০০-২০১০ সালে ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে, যা সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। যার ফলে অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি কিংবা এসিড বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। দাবানলের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের কারণও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। যদিও অমনকে মনে করেন, দাবানল পুরোপুরি অনিশ্চিত ঘটনা, তবুও এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরাভাব, কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদি হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল। আর এসবের ফলে জলবায়ু পরিবর্তিত হয়ে দাবানল সৃষ্টি করে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে যে বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে, তার ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নই মূলত দায়ী।

৩. ঘটনা-১: রাকিব বি.এ পাস করেও পাঁচ বছর ধরে কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
ঘটনা-২: মতিন নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করে নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকে। যখন নেশার টাকা সংগ্রহ করতে পারে না, তখন চুরি, ছিনতাই, খুন করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হয় না।
ক. শব্দ দূষন কী?
খ. জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কী বুঝো?
গ. ঘটনা-১ কোন ধরনের সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ঘটনা-২ এর অন্যতম কারণ ঘটনা-১। তুমি কি একমত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ন্ত্রিত শব্দ যা মানুষের শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মকে প্রভাবিত করে এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তাকে শব্দ দূষন বলে।

খ. জলবায়ু পরিবর্তন বলতে ৩০ বছর বা তার বেশি সময়ে জলবায়ুর উপাদানসমূহের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে বোঝায়। জলবায়ু পরিবর্তন মূলত একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু শিল্পায়ন ও আধুনিক সভ্যতা এই পরিবর্তনের গতি বাড়িয়ে এক অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। অর্থৎ, ব্যাপক শিল্পায়ন, নগরায়ণ প্রভৃতির প্রভাবে জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণের যে পরিবর্তন সংঘটিত হয় তাকে জলবায়ু পরিবর্তন বলে।

গ. উদ্দীপকের ঘটনা-১ বেকারত্ব নামক অন্যতম সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে। বেকারত্ব হলো কোনো সমাজে কর্মক্ষম লোক থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের অভাব। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি যখন পূর্ণ বা খ-কালীন কাজ করতে ইচ্ছুক হয় অথচ কাজ পায় না তখন সে ব্যক্তিকে বেকার বলা হয়ে থাকে। দেশের স্বাভাবিক শ্রমশক্তির অঙ্গ হয়েও যারা কর্মহীন থাকে তারাই বেকার। বেকার সমস্যার সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্য সম্পর্কে লর্ড বেভারিজ বলেছেন, বেকারত্বের ফলে সমাজ ও ব্যক্তি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেকারত্বের প্রত্যক্ষ ফল দারিদ্র্য এবং দারিদ্র্য থেকে আসে নৈরাশ্য ও হতাশা।
উদ্দীপকে ঘটনা-১ এ রাকিবের বি.এ পাস করেও পাঁচ বছর ধরে কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে না পারা উপরে আলোচিত বেকারত্ব সমস্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং, এ কথা স্পষ্টতর যে, উদ্দীপকে ঘটনা-১ বেকারত্ব সমস্যাকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা-২ এ সামাজিক সমস্যা হিসেবে মাদকাসক্তির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। ঘটনা-২ অর্থাৎ, মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হলো ঘটনা-১ ত থা বেকারত্ব-এ বক্তব্যের সাথে আমি একমত। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। জনসংখ্যাধিক্যের কারণে এ দেশে নিরক্ষরতা দরিদ্রতা, বেকারত্বসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা বিরাজমান। জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে বেকারত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষাজীবন শেষে একজন ব্যক্তি যখন তার প্রত্যাশিত চাকরি লাভে ব্যর্থ হয়, তখন তার বেকার জীবন হতাশা ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চলমান এ হতাশা ও দুর্দশার কষাঘাতে এক পর্যায়ে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে সে ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, যা সামাজিক ক্ষেত্রে মাদকাসক্তির মতো ভয়াবহ একটি সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করে। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হলো বেকারত্ব।

৪. সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার পিতা জাহিদ মিয়া তাকে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় পাত্রের বাবা মজিদ মিয়ার দাবী অনুযায়ী নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও টেলিভিশন দিতে জাহিদ মিয়া বাধ্য হন। বছর খানেক পরে জাহিদ মিয়া খবর পান তার মেয়ে প্রথম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
ক. NGO-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. জঙ্গীবাদ কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মজিদ মিয়ার দাবী করা বিষয়টি কোন ধরনের সামাজিক সমস্যা? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সুমাইয়া মৃত্যুর 'কারণ' মূলত একটি সামাজিক ব্যাধি। তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. NGO-এর পূর্ণরূপ হলো Non-Government Organisation.

খ. জঙ্গিবাদ হলো এক ধরনের নেতিবাচক আদর্শ যা একটি রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের জন্য হুমকীস্বরূপ। সাধারণত জঙ্গি বলতে তাদেরকে বুঝায় যারা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে ধর্মীয় আদর্শ বা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আক্রমনাত্মক বা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। আর এ জঙ্গিদের রচিত ও প্রচারকৃত ধ্যান-ধারণাই জঙ্গিবাদ হিসেবে অভিহিত।

গ. উদ্দীপকের মজিদ মিয়ার দাবী করা বিষয়টি যৌতুক সমস্যাকে নির্দেশ করে।
যৌতুক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা। আমাদের দেশে বিবাহের সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উপহার সামগ্রী লেনদেন হয়ে থাকে। এ প্রথা ঐতিহ্যগতভাবে দীর্ঘদিন চলে আসছে, যা সময়ের পরিক্রমায় এবং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, আদর্শ, রীতিনীতির পরিবর্তন তথা সামাজিক পরিবর্তনের ফল হিসেবে যৌতুক প্রথায় পরিণত হয়েছে।
সাধারণত বৈবাহিক লেনদেন সম্পর্কিত আলোচনায় পাত্রপক্ষ কর্তৃক পাত্রীপক্ষের নিকট দাবি করা নগদ অর্থ, টিভি, ফ্রিজ, মোটর সাইকেল, সোনা-রূপার অলংকার প্রভৃতি যৌতুক নামে পরিচিত। আর এ যৌতুককে কেন্দ্র করে বিবাহ বিচ্ছেদ, নারী নির্যাতন এমনকি হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম সংঘটিত হয়ে থাকে।
উদ্দীপকের উল্লিখিত পাত্রের বাবা মজিদ মিয়া কর্তৃক কন্যার বাবা জাহিদ মিয়ার নিকট দাবিকৃত পঞ্চাশহাজার নগদ টাকা ও টেলিভিশন উপরে আলোচিত যৌতুক প্রথার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সুমাইয়ার মৃত্যুর জন্য দায়ী সামাজিক ব্যাধি হলো বাল্যবিবাহ-বক্তব্যটির সাথে আমি একমত। বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি যা ঐতিহ্যগতভাবে সমাজে চলে আসছে। বাংলাদেশে বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছর সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর চেয়ে কম বয়সে ছেলে মেয়েরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে বাল্যবিবাহ বলে। বাল্যবিবাহের সাথে মানুষের সহজাত প্রবণতা, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি দিক জড়িত। সমাজজীবনে বাল্যবিবাহের নেতিবাচক প্রভাব আরো ভয়াবহ। অল্প বয়সে বিবাহের ফলে আমাদের দেশের নারীরা অতিদ্রুত গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ফলে অল্প বয়সে মা হতে গিয়ে তাদের স্বাস্থ্যহানী ঘটে এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।
উদ্দীপকে উল্লেখিত সুমাইয়া ক্ষেত্রে দেখা যায়, তার পিতা তাকে অল্প বয়সে বিবাহ দিয়ে দেন, যার ফলশ্রুতিতে প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে সে মৃত্যুবরণ করে। সুমাইয়ার মৃত্যুর একমাত্র কারণ হিসেবে উপরে আলোচিত বাল্যবিবাহ নামক সামাজিক ব্যাধিকে দায়ী করা যায়। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সুমাইয়ার মৃত্যুর 'কারণ' মূলত একটি সামাজিক ব্যাধি- উক্ত বক্তব্যটির পক্ষে আমার সহমত পোষন করা যথার্থ।

৫. রুনা স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বান্ধবীদের সাথে পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়। যাওয়া-আসার পথে এলাকার কিছু বখাটে তরুণ প্রায়শ: তাদের পিছু নেয় এবং নানা রকমের মন্তব্য করে। রুনার এক বান্ধবী এ ধরনের পরিস্থিতিতে লেখাড়া বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রুনা তার অন্য বান্ধবী ও স্কুলের সহপাঠীদের নিয়ে এলাকার মুরুববীদের সাথে যোগাযোগ করে এবং বখাটেদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বখাটেরা বাধ্য হয় এলাকা ছেড়ে পালাতে।
ক. বেসরকারি সংস্থা কী?
খ. বাল্যবিবাহ কীভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যাটির সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন সমস্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়’’ - উদ্দীপকের রুনার অভিজ্ঞতার আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বেসরকারি সংস্থা হলো অলাভজনক সেবা প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষামূলক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড- নিয়োজিত থাকে।

খ. জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে বাল্যবিবাহ অন্যতম।
বাল্যবিবাহের ফলে দম্পতি অল্প সময়েই অনেকগুলো সন্তানের জন্ম দেয়ার সুযোগ লাভ করে। যার ফলে জনসংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। যারা বাল্যবিবাহ করে তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কেও সচেতন না হয়ে অপরিকল্পিতভাবে সন্তান জন্ম দিতে থাকে, যার কারণেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যাটি আমার পাঠ্য বইয়ের যৌন নিপীড়ন সমস্যার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি সমস্যা হলো যৌন নিপীড়ন। সাধারণত কোনো পুরুষের আচার-আচরনে যখন কোনো নারী শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয় তখন তাকে যৌন নিপীড়ন বলে। যৌন নিপীড়নের ধরনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অশ্লীল গান বাজানো বা গাওয়া, অশ্লীল বা উদ্দেশ্যমূলক কথা বলা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, পিছু নেওয়া, পথরোধ করে দাঁড়ানো, শিষ দেওয়া, প্রেম নিবেদন বা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া প্রস্তাবে সাড়া না দিলে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি। উদ্দীপকে দেখা যায়, রুনা স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে এলাকার কিছু বখাটে তরুণ প্রায়সময় রুনা ও তার বান্ধবীদের পিছু নেয়। রুনা ও তার বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে বখাটে তরুণেরা নানা রকম অশ্লীল মন্তব্য করে। পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যাটি যৌন নিপীড়নের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ 'সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়' উদ্ভিটি আমি যথার্থ বলে মনে করি।
নারীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে সামাজিক প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে প্রথমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এবং মানুষকে এর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এ ছাড়াও মহল্লায় যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে অভিভাবক সমাবেশ করে যৌন নিপীড়নের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে জনমত গঠন করা যায়। নারী নির্যাতনকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট এবং রুখে দেওয়ার জন্য পাড়ায় পাড়ায় নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী সংগঠন গঠন করা, যাতে সামাজিক মান-মর্যাদার ভয়ে মানুষ যৌন নিপীড়ন তথা নারী নির্যাতন থেকে বিরত থাকে। উদ্দীপকেও দেখা যায় যে, রুনা তার অন্য বান্ধবী ও স্কুলের সহপাঠীদের নিয়ে এলাকার মুরুববীদের সাথে যোগাযোগ করে বখাটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, 'সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সম্ভব নয়' উক্তিটি যথার্থ।

৬. বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত সেনবাগ গ্রাম। এ এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় মাছধরা ও কৃষিকাজ। কিছুকাল আগে এ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে চামড়া শিল্প। এ কারখানার উৎপাদিত বর্জ্যসমূহ পার্শ্ববর্তী নদীতে গিয়ে পড়ছে। বর্তমানে এ নদীতে পূর্বের মতো প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সেচযোগ্য পানির অভাবে ফলন ভালো হচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ তাদের সনাতনী পেশা ছেড়ে শ্রমিক হিসেবে কারখানায় ভিড় করছে।
ক. বার্ধক্য সমস্যা কী? 
খ. নিরক্ষরতা কি সামাজিক সমস্যা? বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকে সেনবাগ গ্রামে কোন পরিবেশগত সমস্যার চিত্র ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সেনবাগ গ্রামের পরিবেশগত সমস্যাসমূহ নিরসনে তুমি কী কী সুপারিশ করবে?

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বার্ধক্য জীবনে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক দিকের সমস্যাই হচ্ছে বার্ধক্য সমস্যা।

খ. প্রকৃতিগত দিক থেকে নিরক্ষরতা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা।
সামাজিক সমস্যার প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে এর তিনটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যথাত- ১. সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়, ২. সমাজের অধিকাংশ মানুষের কাছে অনাকাংঙ্খিত, ৩. যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। নিরক্ষরতা সমস্যার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে আমরা সামাজিক সমস্যার এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই খুঁজে পাবো। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই, বলা যায় যে, নিরক্ষরতা একটি সামাজিক সমস্যা। সমাজবিজ্ঞানী আর্নল্ড রোজ সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা প্রদানে বলেন, ‘‘সামাজিক সমস্যা এমন একটি অবস্থা যা সমাজের বেশিরভাগ মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তারা তাদের কঠিন অথবা অসমেত্মাষজনক অবস্থার জন্য একে দায়ী করে এবং এ থেকে তারা মুক্তি পায়।’’

গ. উদ্দীপকের সেনবাগ গ্রামে অন্যতম পরিবেশগত সমস্যা পানিদূষণের চিত্র ফুটে ওেঠছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত কারখানার বর্জ্যসমূহ নদীতে ফেলায় বিষয়টি পানি দূষণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা একটি পরিবেশগত সমস্যা। পানি নানা কারণে দূষিত হয়। শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য পানি দূষণের অন্যতম কারণ। ট্যানারি শিল্প, ডাইং শিল্প, কাগজ, চিনি প্রভৃতি শিল্পের বর্জ্য পানিকে দূষিত করে। পানি দূষণের প্রভাব মারাত্মক। পানি দূষিত হলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হতে থাকে। কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের মূল বাধা পানি দূষণ। মাটি দূষণেরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই পানি দূষণ। উদ্দীপকের সেনবাগ গ্রামে নদীর পানি দূষিত হওয়ার চিত্র লক্ষ করা যায়। দূষণের কারণে বর্তমানে উক্ত নদীতে পূর্বের মতো প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সেচযোগ্য পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে পানি দূষণের পরিবেশগত সমস্যার চিত্রই ফুটে ওেঠছে।

ঘ. সেনবাগ গ্রামের পরিবেশগত সমস্যা তথা পানিদূষণ নিরসনে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। 
প্রথমত, পানিতে কোনো শিল্পকারখানার বর্জ্য যাতে না মিশতে পারে সেজন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নদীর পানিতে কারখানার বর্জ্য ফেলতে দেওয়া। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।
দ্বিতীয়ত, শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য পানিতে পড়ার আগে তা পরিশোধন তথা দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
তৃতীয়ত, নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। নদীর তলদেশে যাতে পলি জমা না হতে পারে সেজন্যে নিয়মিত ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। চতুর্থত, কীটনাশক, ছত্রাক নাশক ও রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাংকের তেল যাতে নদীতে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পঞ্চমত, পানি দূষণ রোধে পোস্টারিং, সভা সমাবেশ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমেই সেনবাগ গ্রামের উল্লিখিত পরিবেশগত সমস্যা নিরসন সম্ভব।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

৭. রাজীব দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেছে পাঁচ বছর আগে। তার ইচ্ছা ছিল বিসিএস-এর মাধ্যমে সরকারি উচ্চপদে চাকরি করবে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করেনি। আজ এতদিনের চেষ্টায় সে সরকারি চাকরি না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। 
ক. নয়াবাস পরিবার কী?
খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস ধারণাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে রাজীবের বর্তমান অবস্থাকে কি বেকারত্ব হিসেবে দেখা যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রাজীবের মাদকাসক্তির পেছনে শুধুই কি বেকারত্ব নাকি অন্য কোনো প্রভাবক কাজ করতে পারে বলে তোমার মনে হয়? মতামতসহ বিশ্লেষণ কর।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিবাহের পর নবদম্পতি যদি নতুন কোনো আবাস স্থলে বসবাস করে অর্থাৎ স্বামীর বাবার বাড়ি কিংবা স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বসবাস না করে, তবে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে।

খ. সামাজিক স্তরবিন্যাস একটি সমাজতাত্ত্বিক ধারণা বা প্রত্যয়। সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে মর্যাদা, শ্রেণি ও অন্যান্য আরও কিছু বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত করা হয়। এক কথায়, সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো সমাজের গোষ্ঠী বা শ্রেণির উঁচু-নিচু অবস্থান বা বিন্যাস ব্যবস্থা।

গ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের রাজীবের বর্তমান অবস্থানকে বেকারত্ব হিসেবে দেখা যায়।
বেকারত্ব হলো কোনো সমাজে কর্মক্ষম লোক থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের অভাব। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি যখন পূর্ণ বা খ-কালীন কাজ করতে ইচ্ছুক হয় অথচ কাজ পায় না তখন সে ব্যক্তিকে বেকার বলা হয়ে থাকে। দেশের স্বাভাবিক শ্রমশক্তির অঙ্গ হয়েও যারা কর্মহীন থাকে তারাই বেকার। বেকার সমস্যার সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্য সম্পর্কে লর্ড বেভারিজ বলেছেন, বেকারত্বের ফলে সমাজ ও ব্যক্তি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেকারত্বের প্রত্যক্ষ ফল দারিদ্র্য এবং দারিদ্র্য থেকে আসে নৈরাশ্য ও হাতাশা।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজীব দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করে পাঁচ বছর পরও চাকরি পায়নি। তার ইচ্ছা ছিল সরকারি উচ্চপদে চাকরি করার সুযোগ থাকার পরও সে বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করেনি। অনেকদিন চেষ্টার পরও সে যখন চাকরি পায়নি, তার জীবনে নেমে আসে হতাশা। এক সময় দেখা যায়, হতাশা ও নৈরাশ্যে নিমজ্জিত রাজীব মাদকাসক্ত হয়ে পড়া়। উল্লিখিত চিত্রটি বর্তমান বাংলাদেশে বেকারত্বের ধারণা ও অবস্থাকে স্পষ্ট করেছে। 

ঘ. আমি মনে করি, রাজীবের মাদকাসক্তির পেছনে বেকারত্ব, হতাশা ইত্যাদি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
বেকার লোকজন অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আর বেকারদের নির্ভরশীলতা বেশি ভয়াবহ। কেননা এদের চাওয়া-পাওয়া বেশি থাকে। এ জন্য ঘটে থাকে নানা ধরনের বিপত্তি। আবার সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবার গঠন করতে হলে প্রয়োজন আর্থিক নিরাপত্তা। কোনো কারণে এটা ব্যাহত হলে পরিবার টিকে থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই কর্মহীন বা বেকার কোনো লোকের পরিবার ব্যবস্থা টিকে না। তাছাড়া মানুষের মানসম্মান সবই টিকে থাকে আদর্শ ও মূল্যবোধ দ্বারা। কিন্তু বেকারত্বের অভিশাপে এ আদর্শ ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে। সমাজের কোনো একটি শ্রেণি যদি কোনো কারণে বঞ্চিত হয় তাহলে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়। বেকার লোকজন দ্বারা অনেক সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। একজন শিক্ষিত লোক যখন দেখে তার কোনো কাজ নেই, তখন হতাশা ও নৈরাশ্যে নিমজ্জিত হয়ে সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড- জড়িয়ে পড়ে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রাজীব শিক্ষিত মেধাবী ছেলে। এমএ পাস করার পর পাঁচ বছরের মধ্যেও তার চাকরি হয়নি। চাকরি না হওয়ায় তার জীবনে নেমে আসে নৈরাশ্য। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে এক সময় সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষিত রাজীবের মাদকাসক্তির পেছনে বেকারত্বের পাশাপাশি হতাশা, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

৮. কালুর বয়স ১৮, সখিনার বয়স ১৫, যখন ওদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তারা তিন কন্যা সন্তানের জনক ও জননী। শাশুড়ির 'নাতি চাই' এই ইচ্ছা পূরণের জন্য সখিনা আরেক কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। সংসারে সদস্য সংখ্যার সাথে তার আয় বৃদ্ধি পায়নি। বরং অভাব অনটন, ঝগড়া-ঝাটি, মারপিট লেগেই আছে। 
ক. আবহাওয়া কী?
খ. বৃক্ষ নিধনের ফলে কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে? 
গ. উদ্দীপকে কোন সামাজিক সমস্যার ইংগিত প্রদান করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. কালু ও সখিনার বয়স পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কি একমাত্র কারণ? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কোনো একটি বিশেষ সময়ে কোনো স্থানের বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা সম্পর্কিত অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।

খ. বৃক্ষ নিধনের ফলে সমাজে নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বনভূমি উজাড় হওয়া ছাড়াও বিশ্ব ক্রমশ বৃক্ষহীন হওয়ার উপক্রম হচ্ছে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মাটির ওপর। মাটির উপরিভাগ বৃক্ষ আচ্ছাদিত না হলে মাটি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং মরুপ্রবণতার দিকে ধাবিত হয়।

গ. উদ্দীপকে জনসংখ্যা সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি বর্তমানে মানবসমাজের সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা। কোনো স্থানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলতে ঐ স্থানে বিভিন্ন সময়ের জনসংখ্যায় পরিমাণগত পার্থক্যকে বোঝায়। বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্থান দশম। দেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। নানা সমস্যার কারণে এটি দ্রুত হারে বেড়েই চলেছে। এই হার বিশ্বের উন্নত যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, কালুর বয়স যখন ১৯ এবং সখিনার ১৫ তখন ওদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তারা তিন কন্যা সন্তানের জনক ও জননী। শাশুড়ির নাতি চাই এই ইচ্ছা পূরণের জন্য সখিনা আরেক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। এর ফলে তাদের পরিবারের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের চিত্রটি বাংলাদেশের এক নম্বর সমস্যা তথা জনসংখ্যা সমস্যাকে নির্দেশ করছে।

ঘ. কালু ও সখিনার বয়স পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একমাত্র কারণ নয়।
আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ হলো পুত্রসন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ পরিবারই তাদের প্রথম সন্তান পুত্র আশা করে। অনেক পরিবারে পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় অনেকগুলো মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে। এভাবে দেশের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকের কালু ও সখিনার জীবনে। সখিনা তার শাশুড়ির নাতির ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। যা তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে। তবে এটা ঠিক যে, বাল্যবিবাহের ফলে অধিক সময় বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করতে গিয়ে তারা অধিক সন্তানের জন্ম দেয়। তার চিত্র আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকের কালু ও সখিনার জীবনে কেবল অল্পবয়সে বিয়ের কারণে তারা তিন সন্তানের জন্ম দেয়। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, বাল্যবিবাহ এবং পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষা কালু ও সখিনার পরিবারে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

৯. স্লোগান-১: 'দুটি সন্তানই যথেষ্ট, একটি হলে ভালো হয়।' স্লোগান-২: 'গাছ লাগান, ধরিত্রী বাঁচান। 
ক. যৌথ পরিবার কী?
খ. ক্ষমতার ভিত্তিতে পরিবার কয় প্রকার? বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-১, বাংলাদেশের কোন সমস্যাকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-২ যে সামাজিক সমস্যাকে নির্দেশ করে, স্লোগান-১-এ বর্ণিত সমস্যা তার অন্যতম একটি কারণ- এ বিষয়ে তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বর্ধিত পরিবারের কর্তার সাথে যদি এক বা একাধিক ভাই এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ও নিকটাত্মীয় থাকে তবে তাকে যৌথ পরিবার বলে। 

খ. ক্ষমতার ভিত্তিতে পরিবার দু' ধরনের। যথা : পিতৃপ্রধান পরিবার ও মাতৃপ্রধান পরিবার। যে পরিবারের প্রধান কর্তা ব্যক্তি হলো কোনো পুরুষ তাকে পিতৃপ্রধান পরিবার বলে। বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃপ্রধান। আর যে পরিবারের ক্ষমতা ও নেতৃত্ব নারী তথা মাতা, স্ত্রী বা বয়স্ক মেয়েদের ওপর ন্যাস্ত থাকে সে পরিবারকে মাতৃপ্রধান পরিবার বলে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-১, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে নির্দেশ করে।
যদি কোনো দেশের জনসংখ্যা প্রয়োজনাতিরিক্ত বা জনসংখ্যা দ্বারা জনগণের কল্যাণ ব্যাহত হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ও জনবহুল দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৫১ সাল হতে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরে এদেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২-এর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৫১.৫০ মিলিয়ন। অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.১৮% বাংলাদেশে বাস করে। বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কি.মি.। আয়তন একই থাকছে অথচ জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০২৭ জন। ক্ষুদ্র আয়তনবিশিষ্ট এদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়াতে সামাজিক সমস্যা দিন দিন বেড়ে়ই চলছে। এ কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অন্যতম। এ সচেতনতামূলক কাজের অন্যতম স্লোগান হলো ‘দুটি সন্তানই যথেষ্ট, একটি হলে ভালো হয়।' যা উদ্দীপকের ১নং স্লোগানেও উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ১ নং স্লোগান বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্লোগান-২ পরিবেশগত সমস্যাকে নির্দেশ করছে। আর এ পরিবেশগত সমস্যার অন্যতম একটি কারণ হলো স্লোগান-১ এর সমস্যা অর্থাৎ অধিক জনসংখ্যা। এ বিষয়ে আমি সহমত পোষণ করি। কারণত
অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য যানবাহন এবং কল-কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যানবাহন ও কারখানার দূষিত ধোঁয়া বায়ু দূষণ ঘটাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে কল-কারখানার সংখ্যা বেড়ে়ছে। এসব বেশির ভাগ কল-কারখানারই বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। এসব বর্জ্য নদীতে বা জলাধারে ফেলার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে গৃহস্থালির বর্জ্য, মলমূত্র, রান্নাঘরের বর্জ্য, অসুস্থ মানুষের মল-মূত্র থেকে রোগ উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বর্জ্য অনেক সময় নদী কিংবা জলাশয়ে ফেলা হয়। এর ফলে দূষিত হচ্ছে পানি। অধিক জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য জমিতে বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে মাটি তার উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে; যা মাটি দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া জমি অতিকর্ষণের ফলে ভূমিক্ষয়, উর্বরতা হ্রাস ও মাটির গুণাগুণে ব্যাপকভাবে অবনতি ঘটছে। এর ফলে মাটি দূষণের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড দ্বারা পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সমগ্র দেশের জনগণের ওপর।

১০. করিম সাহেবের বর্তমান বয়স ৭০ বছর। তিনি তার সমস্ত আয় দিয়ে ৪ সন্তানকে বড় করেছেন। তার সন্তানরা বর্তমানে স্বাবলম্বী কিন্তু তারা বৃদ্ধ বাবার ভরণ-পোষণ করে না এবং খোঁজ-খবরও রাখে না।
ক. কর্মজীবী নারী কাকে বলে? 
খ. সামাজিক সমস্যা কাকে বলে?
গ. উদ্দীপকের করিম সাহেব যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দাও।
ঘ. উক্ত বয়সে মানুষ যে সকল স্থিতির সম্মুখীন হয় তা আলোচনা করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যেসব নারী সাধারণত বাড়ির বাইরে নিয়মিত চাকরির মাধ্যমে বেতন, মজুরি বা অন্যান্য আয় অর্জন করে তাদেরকে কর্মজীবী নারী বলে।

খ. সামাজিক সমস্যা বলতে সমাজের এমন অবস্থাকে বোঝায় যে অবস্থাকে সমাজের অনেক লোকই অনাকাঙি্ক্ষত মনে করে, যে অবস্থা অনেকের ওপর অবাঞ্ছিত প্রভাব রাখে এবং যার সমাধানের লক্ষ্যে অনেকেই যৌথ প্রয়াস চালানোর প্রয়োজন অনুভব করে।

গ. উদ্দীপকের করিম সাহের বার্ধক্য সমস্যার শিকার হয়েছেন। সাধারণভাবে বার্ধক্য দ্বারা বয়োবৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। বার্ধক্য হলো জীবনচক্রের একটি স্বাভাবিক পরিণতি। মানুষের জীবনচক্রের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সর্বশেষ পরিণতি হলো বার্ধক্য। এটা মানুষের জৈবিক পরিণতি। অনেক সময় বয়সকেই বার্ধক্য নির্ধারণের মানদন্ড হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশে বয়সকে বার্ধক্য নির্ধারণের একক হিসেবে ব্যবহার করলেও তার কোনো নির্দিষ্ট মানদন্ড নেই। তবে জাতিসংঘের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশে ৬০ বছর বয়স হলে তাকে প্রবীণ বা বৃদ্ধ ধরা হয়। আর বৃদ্ধদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবারে ও সমাজে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় বার্ধক্য সমস্যা। উদ্দীপকে উল্লিখিত করিম সাহেবের বর্তমান বয়স ৭০ বছর। পাঠ্যবইয়ের তথ্য অনুযায়ী বয়সের দিক থেকে করিম সাহেব বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তার সন্তানরা স্বাবলম্বী হলেও কেউ বৃদ্ধ বাবার ভরন-পোষণ করেন না এবং খোঁজখবরও রাখে না। অর্থাৎ তিনি বার্ধক্যের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা তাই বলতে পারি, করিম সাহেব বার্ধক্য সমস্যার শিকার হয়েছেন। 

ঘ. উক্ত বয়সে অর্থাৎ বার্ধক্যের সময় মানুষ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও জাতিসংঘের সংজ্ঞানুযায়ী করিম সাহেব একজন বৃদ্ধ। এ বয়সী মানুষদের নানা সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যেমনত
বাংলাদেশের বৃদ্ধদের কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। ফলে তারা চরম দারিদ্র্য ও আর্থিক অসচ্ছলতার শিকার হয়। গ্রাম বাংলার দরিদ্র বৃদ্ধরা পরিচিত এলাকার কারণে ভিক্ষা করতে পারে না। ফলে এই শ্রেণির বৃদ্ধরা শহরে এসে ভিক্ষাবৃত্তি করে মানবেতর জীবনযাপন করে। স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতা বার্ধক্যের অন্যতম প্রধান সমস্যা। উপার্জন না থাকায় ক্রয় ক্ষমতার অভাবে খাদ্য গ্রহণ ও চিকিৎসা নিতে বৃদ্ধরা অক্ষম। আর্থিক উপার্জন না থাকায় বৃদ্ধরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে উপেক্ষা, অনাদর, অবহেলা-বঞ্চনার শিকার হন। ফলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ও নিজেদেরকে অপ্রয়োজনীয় বোঝা মনে করেন। বৃদ্ধদের চিত্তবিনোদন ও সময় কাটানোর সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। বর্তমান পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের সবাই ব্যস্ত থাকে। বৃদ্ধদের সাথে সময় কাটানোর মতো সময় কারো নেই। ফলে তারা একাকিত্ব অনুভব করেন। বৃদ্ধরা প্রায় সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, সরকারিভাবে তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় তারা সব সময় নিজেদেরকে অসহায় মনে করেন।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, করিম সাহেবের অনুরূপ বৃদ্ধ মানুষ নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হন।

Post a Comment

Previous Post Next Post