HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন জামান সাহেব। সম্প্রতি এই জেলা শহরে অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শহরের বাইরের মানুষ এখন আর চাষাবাদে পূর্বের মতো আগ্রহী নয়। ইটের তৈরি বাড়িঘরে প্রায় মানুষ বসবাস করছে। বিগত দশ বছরের তুলনায় মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক. Ageism শব্দের অর্থ কী?
খ. টেকসই উন্নয়ন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে শহরের সামাজিক পরিবর্তনে যে উপাদানটি লক্ষ করা যায় তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উদ্দীপকে কলকারখানার ব্যাপক বিস্তার কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও আর কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. Ageism একটি সমাজতাত্ত্বিক প্রত্যয় বা ধারণা যার অর্থ হলো বয়স বৈষম্যবাদ।

খ. টেকসই উন্নয়ন বলতে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নকে বোঝায়। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেইরোতে রিও-তে. যে ধরিত্রী সম্মেলন Earth Summit. অনুষ্ঠিত হয় সেখানে গৃহীত Agenda-21-এ টেকসই উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলা হয়ত 'টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সামাজিক বিকাশ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সমন্বিত ব্যবস্থা এবং এটি বাস্তবায়িত হবে মানুষকে কেন্দ্র করে। ২০১২ সালে রিও-তেই অনুষ্ঠিত রিও+২০ সম্মেলনে গৃহীত 'The Future We Want'-এ এই সংজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করা হয় এবং এর মানবকেন্দ্রিকতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।

গ. উদ্দীপকে রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরের সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ‘শিল্পায়ন ও নগরায়ণ' উপাদানটির ভূমিকা লক্ষ করা যায়। সাধারণ অর্থে, শিল্পায়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যে প্রক্রিয়ায় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে অকৃষিজ পণ্য উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বৃহৎ ও ব্যাপকহারে উৎপাদন করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে শিল্পায়ন। শিল্পায়নের ফলে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির পরিবর্তে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির প্রচলন শুরু হয়। এর পাশাপাশি জীবনের সকলক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, নগরায়ণ হলো শিল্পায়নের ফল। সাধারণভাবে নগরায়ণ বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যাতে কোনো একটি এলাকার মানুষ কৃষিজ পেশার পরিবর্তে অকৃষিজ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে এবং আধুনিক সুযোগ সুবিধার কারণে সেখানে অনেক লোকের ঘনবসতি গড়ে ওঠে।
উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরে কলকারখানা গড়ে ওঠায় মানুষ এখন আর আগের মতো চাষাবাদে আগ্রহী নয়। এছাড়া বাসস্থানের প্রকৃতিতে পরিবর্তন সাধিত হওয়ার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নিঃসন্দেহে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের প্রত্যক্ষ ফলাফলের সাথে সম্পৃক্ত। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকের শহরের সামাজিক পরিবর্তনে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে কলকারখানার ব্যাপক বিস্তার কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও জীবনযাত্রার মানের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে বলে আমি মনে করি। শিল্পায়ন ও নগরায়ণ উভয়ই অকৃষিজ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। যে অঞ্চলে শিল্পায়ন তথা কলকারখানা গড়ে ওঠে, সেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং অকৃষিজ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে। আবার শিল্পায়নের অত্যাবশকীয় ফল হলো নগরায়ণ। এর ফলে বাসস্থানের প্রকৃতিতেও পরিবর্তন সাধিত হয়। মানুষ মাটি, ছন বা কাঠের তৈরি ঘরবাড়ির পরিবর্তে ইট দ্বারা নির্মিত বাড়িঘরে বসবাস করতে আরম্ভ করে। এছাড়া শিল্পায়ন তথা কলকারখানা গড়ে ওঠায় মানুষের আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঞ্চয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়, যা তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরে কলকারখানা গড়ে ওঠার ফলে মানুষ অকৃষিজ পেশার সাথে জড়িত হচ্ছে, তাদের বাসস্থানের প্রকৃতিতেও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে যা মূলত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণেই সম্ভবপর হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্পায়ন তথা কলকারখানার ব্যাপক বিস্তার রাজশাহী বিভাগের জেলা শহরের কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে।

২. নাসির এবং তার আরও দশজন বন্ধু কৃষি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। বিদেশে থাকাকালীন তারা তাদের বাবা মায়ের সাথে মোবাইল, ফেসবুক, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিদিন যোগাযোগ করত। বর্তমানে তারা এদেশে উন্নতজাতের ধান উৎপাদনের জন্য গবেষণা করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। 
ক. ‘সামাজিক পরিবর্তন কী?
খ. জেন্ডার প্রত্যয়টির ধারণা ব্যাখ্যা করো। 
গ. নাসির ও তার বন্ধুদের তাদের বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারা কোন ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. নাসির ও তার বন্ধুর উচ্চ শিক্ষা শেষে বর্তমান কার্যক্রম বিশ্বায়নেরই প্রভাব। তুমি কি একমত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক পরিবর্তন বলতে মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, জীবন ও আদর্শের পরিবর্তনকে বোঝায়।

খ. সমাজবিজ্ঞানে জেন্ডার প্রত্যয়টি দ্বারা নারী-পুরুষের জৈবিক দিককে না বুঝিয়ে বরং সামাজিক দিককে বোঝানো হয়। ল্যাটিন শব্দ Genas থেকে ইংরেজি Gender শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ ধরন বা প্রকার। চৌদ্দ শতকে জেন্ডার শব্দটি দ্বারা জৈবিক পার্থক্যকে বোঝানো হত। কিন্তু, বিগত শতকে মাঝামাঝি জেন্ডার শব্দটির একটি নতুন মাত্রা যোগ হয় যা জৈবিক পার্থক্যকে না বুঝিয়ে নারী পুরুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে বোঝায়। অর্থাৎ, সমাজ কর্তৃক সৃষ্ট নারী ও পুরুষের মধ্যকার-সামাজিক সম্পর্ককে জেন্ডার বলা হয়।

গ. নাসির ও তার বন্ধুদের তাদের বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারা সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবকে নির্দেশ করে। সমাজ পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি অন্যতম। মূলত তথ্য আদান-প্রদানের কলাকৌশলই হলো তথ্যপ্রযুক্তি। এটি হলো প্রযুক্তিভিত্তিক এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল উন্নতির ফলে তথ্য প্রাপ্তি যেমন সহজলভ্য হয়েছে তেমনি বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ করা যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যেই। ইন্টারনেট এবং ই-মেইলের মাধ্যমে সারা বিশ্বের নাগরিক সমাজ খুব নিকটে চলে আসছে, যেন হাত বাড়ালেই ছোয়া যায়। মানুষের জীবনে প্রতিটি বিষয় এখন তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কম্পিউটার, মোবাইল, ফেসবুক হয়ে উঠেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম, যার ফলে সমাজজীবনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এসেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। উদ্দীপকের নাসির ও তার বন্ধুরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গমন করলেও। পিতামাতার সাথে মোবাইল, ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতিদিন। যোগাযোগ করতে পারছে যা উপরে আলোচিত সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. নাসির ও তার বন্ধুদের উচ্চ শিক্ষা শেষে বর্তমান কার্যক্রম তথা উন্নতজাতের ধান উৎপাদনের জন্য গবেষণা করা বিশ্বায়নেরই প্রভাব- বক্তব্যটির সাথে আমি একমত। 
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবীর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু বৃদ্ধিরত জনসংখ্যার সাথে খাদ্য উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নতজাতের ফসল নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে যা স্বল্প সময়ে অধিক ফলন দানে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য উৎপাদন সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের উন্নতজাতের ধান নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, যা মূলত কৃষি ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রত্যক্ষ প্রভাবকে নির্দেশ করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, নাসির ও তার বন্ধুরা কৃষি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা শেষে উন্নতজাতের ধান উৎপাদনের জন্য গবেষণা করছে, যাতে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা যায়। তাদের উপর্যুক্ত কার্যক্রম উপর আলোচিত কৃষিক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায় যে, নাসির ও তার বন্ধুদের কার্যক্রম মূলত বিশ্বায়নের প্রভাবকেই নির্দেশ করে।

৩. শিমুলিয়া গ্রামের মানুষ এখন আর যাত্রাগান, পালাগানের আসরে তেমন যায় না। তারা ঘরে বসে টেলিভিশনেই পাচ্ছে বিনোদনের সব উপকরণ। আকাশ সংস্কৃতির উত্তাল স্রোতে আমাদের মাটি ও মানুষের গান ভাটিয়ালী, জারিগান, সারিগান আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্যবাহী শাড়ি, লুঙ্গি, ফতুয়ার জায়গা দখল করছে সালোয়ার-কামিজ, জিন্স, টিশার্ট। বিদেশি ঘরানার খাদ্যের তোড়ে 'মাছে ভাতে বাঙালি' প্রবাদটি তলিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটের জোয়ারে হাডুডু, কাবাডি, গোল্লাছুট খেলার কথা সবাই ভুলতে বসেছে। 
ক. ই-কমার্স কী?
খ. জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি কীভাবে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির উপাদানসমূহ চিহ্নিত করো। 
ঘ. উদ্দীপকে শিমুলিয়া গ্রামের সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ই-কমার্স হচ্ছে পণ্য কেনাবেচা ও আর্থিক লেনদেনের ইলেক্ট্রনিক সংস্করণ।

খ. জনসংখ্যার হ্রাসবৃদ্ধি সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোনো সমাজের জনসংখ্যা হ্রাসবৃদ্ধি এবং গঠন-প্রকৃতির পরিবর্তনের ফলে সমাজের পারিবারিক জীবন, দলীয় জীবন ও সামাজিক জীবনে।
বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হয়ে থাকে। আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে যেটুকু ভূমি রয়েছে তার তুলনায় জনসংখ্যা কম বা বেশি হলে সমাজে বিভিন্ন পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই বলা যায় যে, জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। 

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির উপাদানের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রথমে লক্ষ করা যায়, উৎসব ও অনুষ্ঠানগত উপাদানের মধ্যে যাত্রা ও পালাগান গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তারপর দেখা যায়, ভাষা। ও সাহিত্য বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। গ্রামীণ ভাওয়াইয়া, পল্লিগীতি, জারিসারি আমাদের সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছ। পোশাক পরিচ্ছদের বৈচিত্র্যগত উপাদান আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিকে স্বকীয়তা দান করেছে। শাড়ি, লুঙ্গি, ফতুয়া, পায়জামা, পাঞ্জাবি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। খাদ্যাভ্যাসগত উপাদান বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অভিন্নতা সত্যিকারের বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে খেলাধুলা সংক্রান্ত উপাদানগুলোর মধ্যে লক্ষ করা যায় বৌছি, দাঁডw়য়াবান্ধা, হাডুডু, গোল্লাছুট, ডাঙুলি, মোরগ লড়াই, লাঠিখেলা প্রভৃতি। উপর্যুক্ত বর্ণিত উপাদানগুলোই আলোচ্য উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে যা বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির উপাদানসমূহকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে শিমুলিয়া গ্রামের পরিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাব লক্ষ করা যায়। বিশ্বায়ন উন্নত বিশ্বের সৃষ্টি। উন্নত বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে প্রত্যক্ষভাবে শোষণ করার পরিবর্তে পরোক্ষভাবে শোষণ করার জন্য বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। উদ্দীপকে শিমুলিয়া গ্রামে সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব ফুটে ওঠেছে। বিশ্বায়নের কারণে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে দেশীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধের পরিপন্থী বিজাতীয় সংস্কৃতি দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে। বিশ্বায়নের ফলে মানুষের আচার-আচারণ রীতিনীতি ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন গঠিত হচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পাশ্চাত্য ধাঁচে জীবনযাপন করছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য রীতিনীতি অনুসরণ করছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, বিশ্বায়নের প্রভাবে উৎসব-অনুষ্ঠানে ভাষা-সাহিত্য, পোশাক-পরিচ্ছেদ, খাদ্যাভ্যাস ও খেলাধুলায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায় যা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও রীতিনীতি ধ্বংসের মুখে টেনে দেয়। এছাড়াও শিমুলিয়া গ্রামের মানুষ যাত্রাপালা আসরে না গিয়ে টেলিভিশন দেখছে। সংস্কৃতির বিশ্বায়নের ফলে বিনোদনের উপকরণ বদলে যাচ্ছে। জারি, সারি, ভাটিয়ালি গান আজ বিলুপ্তির পথে। শাড়ি, লুঙ্গির জায়গায় জিন্স, টিশার্ট ব্যবহৃত হচ্ছে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শিমুলিয়া গ্রামের সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাব অপরিসীম।


৪. আগে গ্রামীণ গৃহিণীদের লাকড়ির চুলায় রান্না করতে গিয়ে যেখানে ধোঁয়ায় কষ্ট পেতে হতো সেখানে এখন তারা রাইস কুকার, কারি কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করতে পেরে জীবনকে সহজ করে ফেলেছে। তাদের অনেকের অবসর বিনোদনের সঙ্গী এখন টিভি সিরিয়াল। শিশু-কিশোররাও এখন খেলার মাঠের চেয়ে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা টিভিকে বিনোদন উপকরণ হিসেবে বেশি পছন্দ করছে।
ক. ১৯৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ কয়টি আসন লাভ করে? 
খ. যৌতুক প্রথা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ গৃহিণীদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পেছনে কোন কারণটি মুখ্য বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও। 
ঘ. উদ্দীপকে শিশু-কিশোরদের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে যে বিকল্প ফুটে উঠেছে তার ভালো-মন্দ দিক ব্যাখ্যা করো। 

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ১৯৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন লাভ করে।

খ. যে প্রথা অনুসারে বিবাহে বরপক্ষ কিংবা কনেপক্ষ বাধ্য হয়ে নগদ অর্থ বা মূল্যবান সম্পদ প্রদান করে, তাই যৌতুক প্রথা। যৌতুক প্রথা একটি অন্যতম সামাজিক সমস্যা। যৌতুক হলো এক ধরনের দাবি। সামাজিকভাবে এ প্রথাকে উপহার, উপঢৌকন, নজরানা প্রদান, শুভেচ্ছার নিদর্শন বলা হলেও এটি বর্তমানে অনেক বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌতুক উভয়পক্ষকে প্রদানের রীতি চালু থাকলেও সাধারণত আমাদের সমাজে যৌতুক পাত্রীপক্ষ পাত্রপক্ষকে প্রদান করে।

গ. উদ্দীপকে গ্রামীণ গৃহিণীদের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পেছনে নগরায়ণ তথ্য গ্রামীণ সমাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মুখ্য বলে আমি মনে করি।
পল্লি বিদ্যুতায়নের ফলে গ্রামে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি সহজে প্রবেশ করায় গ্রামে অনেক সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা থেকে মানুষ উপকৃত হচ্ছে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়ে চলেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আগে গ্রামীণ গৃহিণীরা লাকড়ির চুলায় রান্না করতো। লাকড়ির চুলায় রান্না করতে গিয়ে ধোঁয়ায় কষ্ট হতো। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি এখন গ্রামীণ মানুষের জীবনকে অনেক সহজতর করে দিয়েছে। এখন তারা রাইস কুকার, কারি কুকার, ওয়াটার হিটার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করছে। এতে করে গ্রামীণ জীবনে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
শিশু-কিশোররা এক সময় খেলার মাঠে সময় কাটাতো। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে তাদের সবকিছু। তারা এখন খেলার মাঠের চেয়ে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা টিভিকে বিনোদন উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। উপর্যুক্ত আলোচনা হতে বলা যায়, গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় জীবনযাত্রার পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রাখছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।

ঘ. উদ্দীপকে শিশু-কিশোরদের বিনোদন মাধ্যমে যে বিকল্প ফুটে উঠেছে অর্থাৎ, খেলার মাঠের পরিবর্তে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিনোদন উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে, তার ভালো-মন্দ দুটো দিকই বর্তমান।
সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি অন্যতম। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ সাধনের ফলে সামাজিক পরিবর্তন দ্রুত হচ্ছে। মানুষের জীবনে প্রতিটি বিষয় এখন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। যেমন- অনেক পরিবারেই এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন রয়েছে। ঐ সমস্ত পরিবারের শিশুরা এসব উপকরণের ব্যবহার করে থাকে। শিশুরা এ সকল উপকরণ ব্যবহার করার মাধ্যমে মূলত নিজের বিকাশ ঘটায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে বিজ্ঞাপন চিত্র, জনপ্রিয় সিনেমা, বিখ্যাত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং তাদের জীবন ধারণ প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যা শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রকারের হয়ে থাকে। অনেক পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবন, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহের সাথে শিক্ষার উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইটগুলো ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন। আবার সন্তানরা অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে বিভিন্ন পর্নো ভিডিও কিংবা অশ্লীল ছবি উপভোগ করে যা তাদের জীবনে প্রভাব ফেলে।
পরিশেষে বলা যায় যে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কল্যাণে শিশু কিশোরদের যে ধরনের আধুনিক বিনোদন উপকরণের বিকল্প ব্যবস্থা হয়েছে তার ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে।

৫. মোহন সরদার বাগেরহাট জেলা শহরের পাশেই বসবাস করেন। সম্প্রতি তার বাড়ির চারপাশে অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানকার মানুষ এখন আর ক্ষেতে খামারে কাজ করে না। এলাকার ঘরবাড়িগুলোর ধরনও গত পাঁচ বছরে অনেক পাল্টে গেছে। বর্তমানে প্রায় সব বাড়িই ইটের তৈরি। তবে মোহন সরদার মনে করেন, তার এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেলেও নিরাপত্তা অনেক কমে গেছে।
ক. প্রযুক্তির ক্রমোন্নতিতে আমাদের সমাজব্যবস্থায় কয় ধরনের। ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়?
খ. শিল্পায়নের ফলে কীভাবে সামাজিক পরিবর্তন ঘটে? করো ব্যাখ্যা
গ. মোহন সরদারের এলাকায় সামাজিক পরিবর্তনের যে উপাদানটি লক্ষ করা যায় তার ব্যাখ্যা দাও। 
ঘ. মোহন সরদারের এলাকার কলকারখানা ও ইটের তৈরি ঘরবাড়ি জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষমু বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. প্রযুক্তির ক্রমোন্নতিতে আমাদের সমাজব্যবস্থায় দুই ধরনের ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়। 

খ. সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম উপাদান হলো শিল্পায়ন।
যে অঞ্চলে শিল্পায়ন তাত শিল্প-কলকারখানা গড়ে ওঠে, সে অঞ্চলে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ কৃষিজ পেশা ছেড়ে অকৃষিজ পেশায় গ্রহণ করে। ফলে উক্ত এলাকায় পেশাগত পরিবর্তন দেখা দেয়। এছাড়াও শিল্পাঞ্চল এলাকায় আয়ের সুযোগ বেশি থাকায় মানুষের সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় যা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখে। শিল্পায়নের অবশ্যম্ভাবী ফল হলো নগরায়ণ। নগরায়ণের ফলে মানুষের মূল্যবোধ, আদর্শ, রীতিনীতি তথা সামগ্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তন সাধিত হয় যা সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ. মোহন সরদারের এলাকায় সামাজিক পরিবর্তনের শিল্পায়ন ও নগরায়ণ উপাদানটির প্রভাব লক্ষ করা যায়। শিল্পায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সমাজের উৎপাদন প্রক্রিয়া কৃষি থেকে কারখানাভিত্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং শ্রম বিভাজন সাধারণ থেকে জটিলতর স্তরের দিকে ধাবিত হয়। আর নগরায়ণ হচ্ছে গ্রামীণ অবস্থা থেকে নগর বা শহরে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া। নগরায়ণ প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো অবস্থার উন্নতি সাধন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, স্থানের অপ্রতুলতা, যানবাহনের অসুবিধা, উন্নয়ন ইত্যাদির ফলে নগরায়ণ ঘটে। বলা হয়ে থাকে, নগরায়ণ শিল্পকেন্দ্রিক সমাজের এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান নগরায়ণের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মোহন সরদারের এলাকায় অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে এবং এলাকার লোকজন আর ক্ষেতে খামারে কাজ করে না। এলাকার প্রায় ঘরবাড়িগুলো ইটের দ্বারা তৈরি। এগুলো সবই শিল্পায়ন ও নগরায়ণের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায় যে, মোহন সরদারের এলাকায় শিল্পায়ন ও নগরায়ণের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

ঘ. মোহন সরদারের এলাকার কলকারখানা ও ইটের তৈরি ঘরবাড়ি জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্ষম।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থা পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। মোহন সরদারের এলাকায়ও এ ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। শিল্পায়নের ফলে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। শিল্প এলাকায় বিভিন্ন অঞ্চলের লোক একসঙ্গে বাস করে। আচার-আচরণের ভিন্নতা এবং ব্যস্ততার কারণে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। বিভিন্ন এলাকার লোকজনদের মধ্যেও ব্যস্ততার কারণে সামাজিক বন্ধনে শিথিলতা আসতে পারে।
কলকারখানার বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ না করলে যেকোনো এলাকার পরিবেশ দূষিত হতে পারে। এর ফলে এলাকার লোকজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া কলকারখানা স্থাপনের জন্য খোলা জায়গার পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে খেলাধুলা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য উন্মুক্ত স্থান পাওয়া যায় না। এর ফলে চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
কলকারখানা তৈরির কারণে মোহন সরদারের এলাকার লোকজন কাজের সুযোগ পাবে। এর ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। মোহন সরদারের এলাকার শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, আধুনিকায়নকে সহায়তা দেবে। এর ফলে শিক্ষার প্রসার বাড়বে এবং আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটবে।
শিল্পায়ন ও নগরায়ণ তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারকে সমৃদ্ধ করে। তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মোহন সরদারের এলাকার লোকজন। নিজেদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সুতরাং উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, কলকারখানা ও নগরায়ণের ফলে নানারকম অসুবিধা দেখা দিলেও এর উপকারিতাও অনেক। মোহন সরদারের এলাকার লোকজনের জীবনে তাই শিল্পায়ন ও নগরায়ণের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. দেলপাড়া ও ভূইগড় পাশাপাশি দুটি গ্রাম। এই আধুনিক সময়েও ভূইগড় গ্রামটির কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। অপরদিকে দেলপাড়া গ্রামটি দেখতে এখন আর গ্রাম মনে হয় না। পুরো গ্রামজুড়েই দোকানপাট, মাঝে মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কলকারখানা। এ এলাকার মানুষ এখন আর কৃষি পেশার ওপর নির্ভর করে না। শুধু তাই নয়, দেশের অন্য স্থান থেকেও মানুষ এসে দেলপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেছে।
ক. নগরায়ণ কী?
খ. শিল্পায়ন কীভাবে আমাদের দেশের বেকারত্ব দূর করতে পারে? 
গ. যে কারণে দেশের অন্য স্থান থেকে মানুষ দেলপাড়া গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেছে তা পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. 'কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে কোনো গ্রামকে দেলপাড়া গ্রামের মতো উন্নত করা সম্ভব।'- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো। 

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো এলাকা নগরে রূপান্তরিত হয় তাকে নগরায়ণ বলে।

খ. বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণে শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আমাদের কৃষি সেক্টরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মানুষ কাজ করছে। বস্তুত, গ্রামের অনেক কৃষি পরিবারেই দেখা যায় যে, দুই জনের কাজ ৩/৪ জনে করছে। ফলে, এক ধরনের প্রচ্ছন্ন তথা ছদ্ম বেকারত্ব লক্ষ করা যায়। তদুপরি, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ বেকার জীবনের অভিশাপ নিয়ে দিনাতিপাত করছে। শিল্পকারখানায় কাজ করে। আমাদের দেশের বেকাররা জীবিকার্জন করতে পারবে। এর ফলে বেকারত্ব দূর হবে। 

গ. নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে মানুষ দেশের অন্য স্থান থেকে এসে দেলপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেছে।
নগরায়ণের মাধ্যমে মানুষের কর্মের ক্ষেত্র তৈরি, আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন, বেকারত্ব দূর করা যায়। দেলপাড়া গ্রামেও নগরায়ণ হয়েছে। ফলে দেশের অন্যান্য স্থান হতে মানুষ দেলপাড়া গ্রামে এসে বসবাস করছে। তাছাড়াও নগরের লোকজন গ্রামের তুলনায় অধিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। নগরে থাকে পর্যাপ্ত স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বিনোদনের ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা যা গ্রামের এই সব সুবিধাবঙ্খিত মানুষদের শহরে বসবাসের জন্যে আকৃষ্ট করে থাকে। শিল্পায়ন বলতে মূলত কৃষি সমাজে আধুনিক যান্ত্রিক শিল্পের বিকাশকে। বোঝায়। শিল্পায়ন অর্থনৈতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটায়। শিল্প এলাকায় মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। ফলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। শিল্পায়নের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। দেলপাড়া গ্রামের হাট-বাজারে মাঝে মাঝে কলকারখানা গড়ে ওঠায় এখানে মানুষের কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পায়নের কারণে দোকানপাটও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, দেলপাড়া গ্রামে নাগরিক সুযোগও রয়েছে যা দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষকে এখানে এসে বসবাস করার জন্যে উৎসাহিত করছে।

ঘ. কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো গ্রামকে দেলপাড়া গ্রামের মতো উন্নত করা সম্ভব। শিল্পায়নের ফলে গ্রামগুলোতে মানুষের বেকারত্ব দূর হবে এবং মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। শিল্পায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমানে মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। শিল্পায়ন ঘটিয়ে যেকোনো গ্রামকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করা যায়। এছাড়া শিল্পাঞ্চলের লোকেরা রাজনীতি সচেতন হয়। নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ে তারা গ্রামের লোকদের চেয়ে বেশি সচেতন। শিল্পায়ন ঘটিয়ে গ্রামগুলোতে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। গ্রামগুলোতে দেলপাড়ার মতো শিল্পায়ন ঘটিয়ে সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করা যায়। শিল্পাঞ্চলে শিক্ষিত লোকের হার গ্রামের তুলনায় বেশি। কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামগুলোতে শিক্ষার হার বাড়ানো যায়। শিক্ষার জন্যে যে আর্থিক সচ্ছলতা প্রয়োজন তা শিল্পাঞ্চলের মানুষের কাছে থাকে। তারা সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে যোগ্য মানুষ করে তুলতে পারে। দেলপাড়া গ্রামের উন্নয়নে আমরা শিল্পায়নের প্রভাব লক্ষ করেছি।
শিল্পায়নের ফলে ভূইগড় গ্রামকে পেছনে ফেলে দেলপাড়া উন্নতি সাধন করেছে। দেশের প্রত্যেকটি গ্রামে যদি দেলপাড়ার মতো শিল্পায়িত হয় তবে গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সর্বশেষে আমরা বলতে পারি, শিল্পায়নের মাধ্যমে গ্রামগুলোর সব ধরনের দীনতা মোচন করা সম্ভব। দেলপাড়া গ্রামের উদাহরণ এই ব্যাপারে লক্ষণীয়।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

৭. ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীন-সার্বভৌম এ দেশটি ভৌগোলিক কারণে নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। যেমন ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর' দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানায় জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
ক. নগরায়ণের উদ্দেশ্য কী?
খ. আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি কীভাবে শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের কোন কোন ধরনের পরিচয় ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তুমি কি শুধু উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত ধরনগুলোই দেখতে পাও? মতামত দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নগরায়ণের উদ্দেশ্য হলো অবস্থার উন্নতি সাধন।

খ. তথ্য ও প্রযুক্তির বিসত্মৃত প্রয়োগ নানা প্রকার সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি বিকাশের কারণে বিজ্ঞাপন চিত্র, জনপ্রিয়। সিনেমা, বিখ্যাত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের জীবন। ধারণ প্রচার মাধ্যমের কল্যাণে দ্রুত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে যা শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সর্বোপরি শিশুর সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের দুটি ধরনের পরিচয় ফুটে উঠেছে। এগুলো হলো- পরিকল্পিত পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত পরিবর্তন।
সহজ অর্থে সামাজিকভাবে বা মানবসৃষ্ট পরিবর্তনই হলো পরিকল্পিত পরিবর্তন। যেমন- যুদ্ধ, বিপ্লব, অভ্যুত্থান ইত্যাদি। অনুরূপভাবে উদ্দীপকে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। যা পরিকল্পিত পরিবর্তনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আবার সাধারণত প্রাকৃতিক কারণে যেমন- বন্যা, খরা, ইত্যাদি. যে পরিবর্তন ঘটে তাই অপরিকল্পিত বা প্রাকৃতিক পরিবর্তন। উদ্দীপকেও দেখা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ 'সিডর' বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। শুধু সিডরই নয়, ভৌগোলিক কারণে দেশটি বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের সম্মুখীন হয়, যা সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম ধরন অপরিকল্পিত পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত পরিবর্তনের ধরন ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের দুটি ধরনের ইঙ্গিত রয়েছে। এগুলো হলো- পরিকল্পিত পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত পরিবর্তন। তবে উক্ত ধরনগুলো ব্যতীত সামাজিক পরিবর্তনের আরও কতকগুলো ধরন দেখা যায়।
ম্যাকাইভার ও পেজ তাদের Society: An Introductory Analysis গ্রন্থে সামাজিক পরিবর্তনের তিনটি ধরনের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো প্রথম ধরনের সামাজিক পরিবর্তনের উদাহরণ হিসেবে উদ্ভাবনের কথা বলা হয়। এ ধরনের পরিবর্তন হঠাৎ করে ঘটে থাকে, এ ধরনের উদ্ভাবন বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশের পূর্বে সাধারণত একটি দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রস্তুতির ধাপ থাকে এবং এক সময় এটি বাস্তবে রূপ নেয়। টেলিফোন, কার, অ্যারোপ্লেন, বেতার এবং আরও অনেক ধরনের উদ্ভাবনের ইতিহাস এ পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে।
দ্বিতীয় ধরনের পরিবর্তন ভৌগোলিকভাবে উপস্থাপিত হতে পারে। এছাড়া এ প্রকারের পরিবর্তন অর্থনৈতিক প্রপঞ্চ এবং জনসংখ্যা প্রপঞ্চের দীর্ঘ সময়ের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। নগরের উদ্ভব এবং পতন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ও পতনে এ ধরনের সামাজিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। তৃতীয় ধরনের পরিবর্তন দ্বিতীয় প্রকারের পরিবর্তনের অনেকটা অনুরূপ। মানবসমাজের প্রকৃতির মতো অনেক প্রপঞ্চক চক্রাকার ধারার চিন্তাধারা এ ধরনের পরিবর্তনের উদাহরণ।

৮. বলেশ্বর নদীর উপর সেতু নির্মিত হওয়ার পর পাথরঘাটা এলাকায় বেশকিছু ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ওই এলাকার নারী-পুরুষরা এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজে নিয়োজিত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার বেশ উন্নতি সাধন করেছে। 
ক. সামাজিক পরিবর্তন প্রধানত কত প্রকার?
খ. সামাজিক পরিবর্তন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের পাথরঘাটা এলাকার সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন কারণটি কার্যকর হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের পাথরঘাটা এলাকার সামাজিক পরিবর্তনের পেছনে যে কারণটিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা ব্যতীত অন্য কারণগুলো বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক পরিবর্তন প্রধানত দুই প্রকার।

খ. সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনধারার প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা, বৈষয়িক আচরণ অর্থাৎ সমাজ কাঠামো, সামাজিক সংগঠন, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, সামাজিক কার্যপ্রক্রিয়া ইত্যাদির পরিবর্তন। মানবসমাজ সর্বদাই পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের গতি কখনো দ্রুত কখনো বা মন্থর হয়ে থাকে।

গ. পাথরঘাটার সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিল্পায়ন কারণটি কার্যকর। শিল্পায়ন বলতে কলকারখানা স্থাপন ও সেগুলোর প্রসার লাভকে বোঝায়। বস্তুত শিল্পায়ন হচ্ছে কৃষিজ দ্রব্যের রূপান্তর ঘটিয়ে অন্য জাতের পণ্য উৎপাদনে এবং অকৃষিজ পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যন্ত্রচালিত উৎপাদন ব্যবস্থার প্রবর্তন। যেমন- কৃষিজ দ্রব্য পাটকে রূপান্তর করে কার্পেট, চট, থলে এবং তুলাকে রূপান্তর করে কাপড় তৈরি করতে যথাক্রমে পাট শিল্প ও বস্ত্র শিল্পের প্রবর্তন হয়েছে। শিল্পায়নের ফলে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, যা সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, পাথরঘাটা এলাকায় বেশকিছু ছোট ছোট শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে যেগুলোর মধ্যে কিছু উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ঐ এলাকার নারী-পুরুষ বিভিন্ন রকম কাজে নিয়োজিত হয়ে নিজের অবস্থার বেশ উন্নতি করছে। সুতরাং উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পাথরঘাটা এলাকায় সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ঘ. শিল্পায়ন ব্যতীত সামাজিক পরিবর্তনের আরও কতগুলো কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-
জনসংখ্যা বৃদ্ধি: কোনো সমাজের জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি এবং গঠন প্রকৃতির পরিবর্তন সমাজের পারিবারিক জীবন, গোষ্ঠীজীবন ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করে। 
অর্থনৈতিক কারণ: অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামাজিক অবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই অর্থনৈতিক অবস্থায় কোনো পরিবর্তন ঘটলে তা সামাজিক পরিবর্তনকেও ত্বরান্বিত করে থাকে। 
সামাজিক কারণ: বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার পেক্ষাপটে সামাজিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
রাজনৈতিক কারণ: কোনো দেশ বা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সামাজিক পরিবর্তনের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি: শিক্ষা মানুষকে অধিক সচেতন করে তোলে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান ও আচার-আচরণে পরিবর্তন সূচিত হয়। পাশাপাশি ভিন্ন সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের ফলে বিভিন্নমুখী সামাজিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
এ ছাড়া ভৌগোলিক কারণ, ধর্মীয় প্রভাব, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং বলা যায়, শিল্পায়ন ব্যতীত উপযুক্ত কারণসমূহ সামাজিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী।

৯. সম্প্রতি প্রকাশিত পরিবেশ দূষণ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট পড়ে সুবর্ণ জানতে পারে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায়, বিশেষত কৃষি উৎপাদনের ওপর অধিক মাত্রায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া মানুষের ভোগ প্রবণতারও পরিবর্তন হচ্ছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ভোগ প্রবণতার এই পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক বেশি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। 
ক. সামাজিক পরিবর্তন কী? 
খ. সামাজিক পরিবর্তনের ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ের নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সমাজের ওপর উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত বিষয়ের কি কোনো ইতিবাচক প্রভাব আছে? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক পরিবর্তন বলতে সমাজ কাঠামো যেমন- পরিবার, বিবাহ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির পরিবর্তনকে বোঝায়।

খ. প্রাকৃতিক পরিবেশ বা ভৌগোলিক কারণে মানুষের জীবনযাত্রা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সমাজজীবনের সর্বক্ষেত্রেই ভৌগোলিক প্রভাব রয়েছে। এ প্রভাব কোথাও প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এবং কম বেশি স্থায়ী হতে পারে। এ জন্য শীতপ্রধান অঞ্চল ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চল, সমতলভূমি অঞ্চল, মরুভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের জনগণের জীবনযাত্রায় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে সামাজিক পরিবর্তনের মাত্রাতেও পার্থক্য সূচিত হয়।

গ. উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত রয়েছে। বিশ্বায়ন হলো আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থার অন্তর্গত বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ এবং সম্পর্ক স্থাপন। আর এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে কৃষি উৎপাদনের ওপর অধিকমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এই বিশ্বায়নের কারণে মানুষের ভোগ প্রবণতারও পরিবর্তন হচ্ছে। এই উৎপাদন ও ভোগ প্রবণতার জন্য অধিকমাত্রায় বর্জ্য তথা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পরিবেশ অধিকতর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়া়ছে যা পরিবেশের ওপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব। অনুরূপভাবে উদ্দীপকেও দেখা যায়, পরিবেশ দূষণ নিয়ে লেখা সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট পড়ে সুবর্ণ জানতে পারে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে কৃষি উৎপাদনের ওপর অধিকমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষের ভোগ। প্রবণতারও পরিবর্তন হচ্ছে। এই উৎপাদন ও ভোগ প্রবণতার জন্য অধিকমাত্রায় বর্জ্য তথা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পরিবেশ অধিকতর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে যা পরিবেশের ওপর বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবকে নির্দেশ করে। সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সুবর্ণ একটি রিপোর্ট পড়ে জানতে পারে, আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বহুবিধ সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে যা বিশ্বায়নকে নির্দেশ করে। সমাজের ওপর বিশ্বায়নের কতকগুলো ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ফলে পুঁজির আন্তর্জাতিক চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও তার বৃহৎ অংশ উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে তথাপি কিছু অংশ তৃতীয় বিশ্বে নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে তা কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার পরিণতিতে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের ফলে কৃষিখাতে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কৃষকের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বায়নের ফলে তথ্য প্রযুক্তির সাথে সাথে জ্ঞানগত সম্পদের আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে উন্নত বিশ্বের জ্ঞান ও দক্ষতা দ্বারা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো লাভবান হচ্ছে।
গোষ্ঠী বা জাতিসমূহের আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নতুন ধরনের বিশ্ব রচনার উদ্ভব ঘটেছে। যেমন- মানবাধিকার, নারী সচেতনতা, পরিবেশ সচেতনতা, ক্ষুদ্র নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নীতি নির্ধারকগণ ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজের ওপর বিশ্বায়নের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

১০. দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষে আমিন সাহেব দেশে ফিরে আসেন এবং গ্রামের বাড়িতে যান। এক সময় এ গ্রামে ফসল আবাদের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা, গরমে হাতপাখার প্রচলন এবং বিনোদনের জন্য রেডিওই ছিল অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে এসব ক্ষেত্রে উন্নত পানির পাম্প, শ্যালো মেশিন, সিলিং ফ্যান এবং ঘরে ঘরে টেলিভিশনের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। 
ক. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদের মূল কথা কী? 
খ. পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন কীরূপ ভূমিকা রাখছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. আমিন সাহেবের ঘটনায় সমাজবিজ্ঞানের যে প্রত্যয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনায় উক্ত প্রত্যয়টির তুমি কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করছো? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদের মূল কথা হলো সমাজের মৌল বা অর্থনৈতিক শক্তিই সমাজের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পরিচয় সমাজে সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের কর্ম, দক্ষতা অর্জন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত ধারণাগুলো ক্রমাগতভাবে বদলে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের অভিজ্ঞতা মানুষের কর্মের পরিধিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। পেশার বিভিন্নতা, বিভিন্ন কর্মকান্ড ও অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় বিশ্বায়নের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাবই লক্ষ করা যাচ্ছে। একদিকে যেমন শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে অন্যদিকে সেবাখাতগুলোতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ. আমিন সাহেবের ঘটনায় সমাজবিজ্ঞানের যে প্রত্যয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা হলো সামাজিক পরিবর্তন।
সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হলো সামাজিক পরিবর্তন। মানবসমাজ পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ, কোনো সমাজই স্থির নয় বরং গতিশীল। সামাজিক পরিবর্তন বলতে সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনকে বোঝায়। যেহেতু সমাজকাঠামোর ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্পর্ক বা মিথস্ক্রিয়া তাই সামাজিক পরিবর্তনের অর্থ হলো সংঘবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের পরিবর্তন। অর্থাৎ, সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান যেমন- অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ইত্যাদির পরিবর্তন।
উদ্দীপকে আমিন সাহেব দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে ফিরে গ্রামে গিয়ে দেখেন, সেখানে সর্বক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বর্তমানে উন্নত পানির পাম্প, ফসলের মেশিন, সিলিং ফ্যান এবং ঘরে ঘরে রঙিন টেলিভিশন অতি সাধারণ ব্যাপার। গ্রামের লোকজন এখন অতি সহজেই দেশ-বিদেশের খবর পাচ্ছে। এসকল বিষয় সামাজিক পরিবর্তনেরই ফল। সামাজিক পরিবর্তন দেশের সমাজ কাঠামোতে রূপান্তর নিয়ে আসে। তাই বলা যায়, আমিন সাহেবের ঘটনায় সামাজিক পরিবর্তন প্রত্যয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

ঘ. উদ্দীপকের বর্ণনায় সামাজিক পরিবর্তনের ধরনগুলোর মধ্যে আমি পরিকল্পিত পরিবর্তন লক্ষ করছি।
সাধারণত সামাজিকভাবে অর্থাৎ, মনুষ্যসৃষ্ট পরিবর্তনই হলো পরিকল্পিত পরিবর্তন। যেমনত যুদ্ধ, বিপ্লব, অভ্যুত্থান, উদ্ভাবন বা আবিষ্কার ইত্যাদি। এখানে উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করছি যে, সামাজিক পরিবর্তনের ধরন হিসেবে উদ্ভাবনের কথা বলা হয়েছে যা মূলত পরিকল্পিত পরিবর্তনকেই নির্দেশ করেছে। আমরা জানি, এ ধরনের পরিবর্তন হঠাৎ করে ঘটে থাকে, এ ধরনের উদ্ভাবন বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশের পূর্বে সাধারণত একটি দীর্ঘ ধারবাহিক প্রস্তুতির ধাপ থাকে এবং এক সময় এটি বাস্তবে রূপ নেয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, টেলিফোন, কার, অ্যারোপ্লেন, বেতার, কম্পিউটার এবং আরও অনেক ধরনের উদ্ভাবনের ইতিহাস এ পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে। সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন ও দ্রুত পরিবর্তন সাধনে যান্ত্রিক এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার পরিকল্পিত পরিবর্তনকে বিশ্লেষণ করে থাকে।
মোটকথা, সামাজিক পরিবর্তন প্রধানত পরিকল্পিত পরিবর্তন হিসেবেই সর্বাধিক লক্ষণীয় হয়ে থাকে। সুতরাং উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকে সামাজিক পরিবর্তনের ধরন হিসেবে পরিকল্পিত পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post