HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. সিফাত সাহেব অনেকদিন ধরে শহরে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। গ্রামে তার আরও তিন ভাই এবং মা-বাবা রয়েছে। তার প্রিয় বন্ধু মিরাজের সহযোগিতায় সে তার ভাইদেরকে শহরে এনে মোটা বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে। তাই সে নিজেকে খুব সুখী ভাবে। কিন্তু গ্রামে পড়ে থাকা তার বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য তার মন কাঁদে। 
ক. বিধবা বিবাহ কী?
খ. নয়াবাস পরিবার বলতে কী বুঝো? 
গ. উদ্দীপকের সিফাত ও মিরাজ কোন ধরনের জ্ঞাতি বন্ধনে আবদ্ধ? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সিফাত সাহেবের যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার একমাত্র কারণ কোনটি বলে তুমি মনে করো? মতামত দাও। 

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিবাহ হচ্ছে সমাজ স্বীকৃত পন্থায় নির্দিষ্ট কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নারী-পুরুষের একত্রে বসবাস, সন্তান উৎপাদন ও প্রতিপালনের সুষম ব্যবস্থা।

খ. বিবাহোত্তর বাসস্থানের ওপর ভিত্তি করে যেসকল পরিবারব্যবস্থা গড়ে ওঠে তার মধ্যে নয়াবাস পরিবার অন্যতম। বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী তাঁদের পিতা বা মাতার গৃহে বাস না করে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে অন্যত্র বসবাস শুরু করলে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে। আধুনিক যুগে শিল্পায়ন, নগরায়ন ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নয়াবাস পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ. উদ্দীপকে সিফাত ও মিরাজ কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ক বন্ধনে আবদ্ধ। সমাজ সংগঠনের অন্যতম উপাদান হলো জ্ঞাতিসম্পর্ক। মানুষ সারাজীবনই নানা জাতি সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে বসবাস করে। বিভিন্ন জ্ঞাতি সম্পর্কের বন্ধনই সমাজের বিভিন্ন মানুষকে সংগঠিত করে সৃষ্টি করে মানব সম্পর্কের জটিল জাল। এরূপই একটি জ্ঞাতিসম্পর্ক হলো কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ক যা রক্ত কিংবা বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ নয়, কিন্তু এরূপ জ্ঞাতিরা রক্ত ও বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ আত্মীয়ের মতোই আচরণ করে। মূলত জ্ঞাতিপদ দ্বারা সম্বোধিত অনাত্মীয় ব্যক্তিদের সাথে যে সম্পর্ক যেমনু দোস্ত, বন্ধু, মিতা, পালিত সন্তান প্রভৃতি হলো কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ক।
উদ্দীপকের সিফাত ও মিরাজ খুবই ভালো বন্ধু। তাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক রক্ত সম্পর্কের থেকে কোনো অংশে কম নয়, যা উপরে আলোচিত কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ককে নির্দেশ করে।

ঘ. সিফাত সাহেবের যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার একমাত্র কারণ হিসেবে আমি শিল্পায়ন ও নগরায়ণকে দায়ী করব। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের আশায় শহরমুখী হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামীন সমাজজীবনের তুলনায় শহর সমাজজীবনে সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় মানুষ গ্রামের পরিবার পরিজন ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। গ্রামীন যৌথ পরিবারে ব্যক্তির স্বাধীন ও স্বকীয় চিন্তাকর্ম বেশ খানিকটা সীমিত। তাই ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদী ধ্যান-ধারণার কারণেও অনেকে শহরমুখী হয়ে থাকে যা মূলত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফল। উদ্দীপকের সিফাত সাহেব শহরে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি তার বন্ধু মিরাজের সহযোগিতায় তার তিনভাইকে শহরে এনে মোটা বেতনের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হওয়ায় তিনি ভার শ্য ভাইদের শহরে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে সক্ষম হন। সুতরাং উপরে ক আলোচিত প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে বলা যায়, সিফাত সাহেবের যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ার পেছনে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ দায়ী।

২. গ্রামীণ স্বচ্ছল কৃষক রতন মিয়া তার তিন ছেলে, বড় দুই ছেলের বউ ও নাতি-নাতনী নিয়ে বেশ আনন্দেই ছিলেন। কয়েক বছর পর বড় ছেলে একটি পোশাকশিল্পে এবং মেজো ছেলে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি পেয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ শহরে পাড়ি জমায়। ছোট ছেলে মামুন ছোট খাটো ব্যবসা করে। ব্যবসার প্রয়োজনে প্রায়ই তাকে শহরে যেতে হয়। কিছুদিন আগে বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে সে শহরে গিয়ে বসবাস শুরু করে। 
ক. অনুলোম বিবাহ কী?
খ. নগর সমাজে জ্ঞাতি সম্পর্কের প্রকৃতি কেমন? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে মামুনের পরিবার কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. রতন মিয়ার বৃহৎ পরিবার ভাঙনের মূল কারণসমূহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. যখন উচ্চ বংশজাত পাত্রের সঙ্গে নিম্নশ্রেণির কন্যার বিবাহ তখন তাকে অনুলোম বিবাহ বলে।

খ. নগর সমাজে জ্ঞাতি সম্পর্কের প্রকৃতি অনেকটা কৃত্রিম। 
পাশপাশি ফ্ল্যাটে বছরের পর বছর বাস করেও শহরবাসীরা পরস্পরের সাথে অপরিচিতি থাকেন। নগর জীবনে মানুষ আত্মীয় স্বজনের উপর নির্ভর করার চেয়ে তার নিজ কর্মপ্রচেষ্ঠা, সভা-সমিতি, বিমা, হাসপাতাল, সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তবে আধুনিক নগর সমাজে একান্ত নিজস্ব পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে বন্ধন কম দৃঢ় নয়। বস্তুত নাগরিক জীবন নৈর্ব্যক্তিক ও বস্তুতান্ত্রিক হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এখানে জ্ঞাতিসম্পর্কের প্রভাবও গুরুত্ব অনেকাংশেই কম।

গ. উদ্দীপকের মামুনের পরিবারটি একক পরিবার এবং একই সাথে নয়াবাস পরিবার।
মামুনের বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে শহরে গিয়ে বসবাস করার বিষয়টি নয়াবাস পরিবার ও একই সাথে একক পরিবারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বর্তমানে সময়ে সমগ্র বিশ্বে সর্বাধিক জনপ্রিয় পরিবার ব্যবস্থা হচ্ছে একক বা অণু পরিবার। একজন স্বামী এবং একজন স্ত্রী নিয়ে এ পরিবার গঠিত হয়। একক পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সন্তানাদি থাকতে পারে, আবার নাও থাকতে পারে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও আধুনিকায়নের ফলে একক পরিবার ক্রমশ সর্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। গ্রামীণ সমাজের তুলনায় নগর সমাজে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা বেশি। যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে একক পরিবারের সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার বিয়ের পর যদি স্বামী স্ত্রী নতুন কোনো জায়গায় গিয়ে আলাদা বসবাস করে তবে তাকে নয়াবাস পরিবার বলে। এক্ষেত্রে নবদম্পতি স্বামীর কিংবা স্ত্রীর বাবার বাড়িতে থাকে না।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের মামুনের পরিবারটি একক পরিবার এবং একই সাথে নয়াবাস পরিবার।

ঘ. উদ্দীপকের রতন মিয়ার বৃহৎ পরিবার ভাঙনের মূল কারণসমূহের মধ্যে নগরায়ণের প্রভাব, নতুন কর্মক্ষেত্র ও শিল্পায়নের বিকাশ, স্বাতন্ত্রবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাসের জন্য আসে। নতুন কর্মক্ষেত্র ও শিল্পায়নের বিকাশ এর অন্যতম কারণ। মানুষ দিন দিন শিক্ষিত হওয়ার কারণে শহরেই তাদের কর্মক্ষেত্র হয় এবং কলকারখানা গড়ে উঠায় মানুষ শহরে কাজের জন্য ভীড় করে। ফলে গ্রামের যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে শহরে এসে একক পরিবারে রূপান্তরিত হচ্ছে। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারে রূপান্তরিত হওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে ব্যাক্তি স্বাতন্ত্রবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। যৌথ পরিবারে ব্যক্তির স্বকীয় চিন্তা বেশ খানিকটা সীমিত। তাই স্বাতন্ত্রবাদী চিন্তার কারণে যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হয়ে একক। পরিবার গঠিত হচ্ছে। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, রতন মিয়ার পরিবার একসময় ভেঙ্গে নতুন কয়েকটি একক পরিবার গড়ে ওঠে যারা শহরে বসবাস শুরু করে। রতন মিয়ার ছেলেদের চাকরি ও ব্যবসার কারণে শহরে বসবাস করতে হয় এবং তাদের স্বাতন্ত্রবাদী চিন্তা ও আলাদা কর্মক্ষেত্রের কারণে একক পরিবার গড়ে় তোলে। পরিশেষে বলা যায়, রতন মিয়ার যৌথ পরিবারটি ভেঙ্গে একক পরিবার। হওয়া বর্তমান সমাজের একটি সাধারণ চিত্র এবং এর কারণ নগরায়ণ ও স্বাতন্ত্রবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।

৩. রহিম সাহেব ও তার স্ত্রীর মধ্যে সন্ধি হলো যে, তাদের দুই সন্তান রাসেল ও লামিয়াকে যথাক্রমে রহিম সাহেবের বোনের মেয়ে রোমানা। এবং তার স্ত্রীর বোনের ছেলে তারেকের সাথে বিয়ে দেবেন। কিছুদিন পর তাদের মনে হলো এ বিয়েতে আত্মীয়ের সংখ্যা বাড়েনি বিধায় তেমন লাভ হয়নি। পাশের বাসার কামাল সাহেব তার বেকার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে চাকরি পাইয়েছেন। নতুন আত্মীয়দের সংস্পর্শে তার মনোবল এখন অনেক উঁচুতে। 
ক. চাকমা সমাজের সর্বোচ্চ সংগঠন কী? 
খ. ‘সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন দেশীয় সংস্কৃতির জন্য হুমকি' ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে রাসেল ও লামিয়ার বিয়ের সাথে কোন ধরনের বিয়ের মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে কামাল সাহেব আত্মীয়তার মাধ্যমে যে সুবিধাগুলো পেয়েছেন এছাড়াও আর কী কী সুবিধা আছে বলে তুমি মনে কর?

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. চাকমা সমাজের সর্বোচ্চ সংগঠন 'চাকমা সার্কেল'।

খ. সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন দেশীয় সংস্কৃতির জন্য হুমকি, কেননা সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের কারণে বিদেশি সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের প্রভাবে সেইসব ভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণ করায় দেশীয় সংস্কৃতি চর্চা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দেশীয় সংস্কৃতি হলো আমাদের দেশের মানুষের জীবন ধারণের পদ্ধতি। আর তা হলো ঐ জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ির ধরন, পোশাক পরিচ্ছদের বিবরণ, খাদ্যাভ্যাস, অর্থব্যবস্থা থেকে শুরু করে ভাষা, আচরণ, বিশ্বাস, উৎসব ইত্যাদি। বিশ্বায়নের ফলে বিদেশি সংস্কৃতি গ্রহণ করায় বদলে যাচ্ছে দেশের মানুষের সংস্কৃতির উল্লিখিত উপাদান।
আর এভাবে দেশীয় সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়ছে।

গ. উদ্দীপকের রাসেল ও লামিয়ার বিয়ের সাথে যথাক্রমে ক্রস কাজিন ও প্যারালাল কাজিন বিয়ের মিল রয়েছে। ক্রস কাজিন বিবাহ বলতে মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোনের মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে বোঝায়। আর প্যারালাল কাজিন বিবাহ বলতে চাচাতো বা খালাতো ভাইবোনের মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে নির্দেশ করে। উদ্দীপকে দেখতে পাই রহিম সাহেবের ছেলে রাসেলের সাথে রহিম সাহেবের বোনের মেয়ে রোমানার বিয়ে সংঘটিত হয়। রাসেল ও রোমানা পরস্পর মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন। তাই রাসেলের বিয়েটিকে আমরা ব্রুস কাজিন বিবাহ বলতে পারি। আবার রহিম সাহেবের মেয়ে লামিয়ার সাথে রহিম সাহেবের স্ত্রীর বোন অর্থাৎ লামিয়ার খালার ছেলে তারেকের সাথে বিবাহ সংঘটিত হয়। লামিয়া ও তারেক পরস্পর খালাতো ভাই-বোন। তাই লামিয়ার বিয়েটিকে আমরা প্যারালাল কাজিন বিবাহ বলতে পারি।

ঘ. উদ্দীপকের কামাল সাহেব আত্মীয়তার মাধ্যমে অর্থাৎ তার বেকার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে চাকরি পাইয়েছেন। এছাড়া আরও কিছু সুবিধা কামাল সাহেব পেয়েছেন বলে আমি মনে করি। 
প্রথমত, উক্ত বিবাহের মাধ্যমে নতুন আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হওয়াতে আত্মীয় সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত, উক্ত বিবাহের মাধ্যমে কামাল সাহেবের সাথে অন্য একটি গোষ্ঠীর আত্মীয়তার সম্পর্ক হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়, যা সমাজজীবনে চলার পথকে সহজ করে দেয়। 
তৃতীয়ত, আত্মীয়র সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে উক্ত বিবাহের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সামাজিক মনোবল অনেক উঁচু হয়ে যায়।
চতুর্থ, বিবাহের কার্যক্রম অনুসারে দায়িত্ব পালনের লোক বাড়ায় কাজ অধিকতর সহজ হয়। পঞ্চমত, নতুন আত্মীয়রা পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা ও প্রয়োজনে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসে।


৪. আরিফ সাহেব ও মমতাজ বেগমের তিন সন্তান। বড় ছেলের বিবাহ হয়েছে আরিফ সাহেবের বোনের মেয়ে মিতুলের সঙ্গে আর ছোট ছেলের বিয়ে হয়েছে তার ভাইয়ের মেয়ে তুলির সঙ্গে। বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে ছোট ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের একমাত্র কন্যা লাবনী পছন্দ করে সহপাঠীকে বিয়ে করেছে। সবাই বলে আরিফ সাহেব সুখী মানুষ। কিন্তু তার সুখের সংসার তছনছ হয়ে যায় স্ত্রীর মৃত্যুতে। তার বড় বোন তাকে আবার বিবাহ করান। অপরদিকে আরিফ সাহেবের বন্ধু অনুপম রায় বিয়ে করেছিলেন সবিতা দাসকে। কিন্তু অনুপম রায়ের স্ত্রী বিয়োগের পর তিনি আর বিয়ে করেননি। 
ক. "Marriage and the Family" গ্রন্থটি কার লেখা? 
খ. Polygamy বিবাহ কী? বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকের আরিফ সাহেবের সন্তানদের বিবাহের ধরন চিহ্নিত করো। 
ঘ. বাংলাদেশের সমাজজীবনে উদ্দীপকে আলোচিত বিষয়বস্তুর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. "Marriage and the Family" গ্রন্থটির লেখক এম. নিমকফ।

খ একজন পুরুষ দুই বা ততোধিক নারীকে বিবাহ করলে তাকে বহু স্ত্রী বিবাহ বা Polygamy পরিবার বলে। এ ধরনের বিবাহ রীতি তুলনামূলক হারে বাংলাদেশের শহর এলাকায় কম এবং গ্রামাঞ্চলে বেশি লক্ষ করা যায়। তবে ১৯৬১ সালে মুসলিম পরিবারিক আইনের প্রভাবে বর্তমানে গ্রাম এলাকায়ও এ বিবাহের সংখ্যা কমে আসছে।

গ. আরিফ সাহেব ও তার সন্তানদের মধ্যে ক্রস কাজিন, প্যারালাল কাজিন, বিপত্মীক ও রোমান্টিক বিবাহ পরিলক্ষিত হয়। ব্রুস কাজিন বিবাহ মামাতো-ফুফাতো ভাইবোনের মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে নির্দেশ করে। আবার প্যারালাল কাজিন বিবাহ বলতে চাচাতো বা খালাতো ভাই-বোনের মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে বোঝায়। অন্যদিকে রোমান্টিক বিবাহ বলতে পাত্র-পাত্রী প্রাক্-বিবাহ প্রণয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে জানিয়ে বা তাদের সম্মতির পর রেজিস্ট্রিকরণ প্রক্রিয়ায় বিবাহকর্ম সম্পন্ন করে থাকে। আবার যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন তাকে বিপত্নীক বিবাহ বলা হয়।
উদ্দীপকের আরিফ সাহেবের বড় ছেলের বিবাহ হয় তার বোনের মেয়ের সাথে যা ক্রস কাজিন বিবাহ। আবার তার ছোট ছেলের বিয়ে হয়েছে ভাইয়ের মেয়ের সাথে যা প্যারালাল কাজিন বিবাহ নামে পরিচিত। এছাড়া তার মেয়ে লাবনী রোমান্টিক বিবাহ করেছে কারণ সে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। আর আরিফ সাহেব তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন যা বিপত্নীক বিবাহ নামে পরিচিত।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আরিফ সাহেব ও তার সন্তানদের মধ্যে বাংলাদেশের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিবাহের ধরন ওঠে এসেছে।

ঘ. উদ্দীপকে আলোচিত বিষয়বস্তু তথা বিবাহের গুরুত্ব বাংলাদেশের সমাজজীবনে অপরিসীম।
বিবাহ বর্তমান সভ্য সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বিবাহের মাধ্যমে সমাজ স্বীকৃত রীতি অনুসারে পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া সমাজের স্থায়িত্ব, বংশবৃদ্ধি, সংহতি ও শৃঙ্খলা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিবাহের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহের ফলে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে স্বামী স্ত্রী সন্তান উৎপাদন করে। সমাজবদ্ধ মানুষের বহুবিধ পারস্পরিক সম্পর্কের মূল নিয়ামক হল বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে নতুন আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়। আবার পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের জৈবিক চাহিদা পূরণের পরও বিবাহের মাধ্যমে অপরাপর কার্যক্রম অনুসারে দায়িত্ব পালনের সুযোগ ঘটে। এটি জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা রাখে তেমনি ঘরবাধা, ভালোবাসা ও ব্যক্তিত্বের চাহিদাও পূরণ করে। আবার বিবাহের মাধ্যমে অনেক সময় অন্যায়, অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। শুধু তাই নয়, বিবাহের মাধ্যমে নৈতিক অধপতন, উচ্ছৃঙ্খলতা, নেশাগ্রস্ততা প্রভৃতির করাল গ্রাস থেকে মানুষ এবং সমাজকে রক্ষা করা যায়। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে ও সামাজিক সংহতি বজায় রাখতে বিবাহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. বক্স-১ এটি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে একজন পুরুষ একজন নারী একত্রে বসবাসের সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে।
বক্স-২ এটি পৃথিবীর আদিম, মৌলিক ও ক্ষুদ্রতম সামাজিক সংগঠন।
ক. আকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশে কয় ধরনের পরিবার দেখা যায়? 
খ. বিবাহোত্তর বসবাসের স্থানের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের পরিবারগুলোর ধরন ব্যাখ্যা করো। 
গ. বক্স-২:-এ যে সংগঠনের ইঙ্গিত রয়েছে বাংলাদেশের শহর সমাজে উক্ত সংগঠনের পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বক্স-১:-এ যে প্রতিষ্ঠানের ইঙ্গিত রয়েছে তোমার সমাজে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব মূল্যায়ন করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশে দুই ধরনের পরিবার দেখা যায়। যথা- একক ও বহু-স্ত্রী বিবাহ।

খ. বিবাহ পরবর্তী বাসস্থানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের পরিবারকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা- পিতৃবাস পরিবার, মাতৃবাস পরিবার ও নয়াবাস পরিবার।
বাংলাদেশে বিবাহের পর স্ত্রী সাধারণত স্বামী গৃহে অর্থাৎ শ্বশুরের গৃহে বাস করে। এ ধরনের পরিবার হলো পিতৃবাস পরিবার। আবার নগরাঞ্চলে অনেকেই পেশাগত প্রয়োজনে নতুন বাসস্থান বেছে নিয়েছে। এগুলো হলো নয়াবাস পরিবার। এছাড়া গারো বা খাসিয়াদের মতো নৃগোষ্ঠী এবং কোনো কোনো বাঙালি পরিবারে বিয়ের পর নবদম্পতি স্ত্রীর পিতার গৃহে বাস করে, একে মাতৃবাস পরিবার বলে।

গ. বক্স-২-এ যে সংগঠনের ইঙ্গিত রয়েছে তা হলো পরিবার। শহরে সমাজে পরিবার নানা কারণে পরিবর্তিত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো শিক্ষা, জেন্ডার, বয়স, আবাসন, তথ্যপ্রযুক্তি, নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, যান্ত্রিক সভ্যতা ইত্যাদি।
আধুনিক যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। গতিময়তাই এ যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। শিল্পায়ন, নগরায়ণ যেমনভাবে সামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধন করেছে এবং উন্নত জীবনের হাতছানি দিয়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতার জন্ম দিয়েছে, তেমনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন মানুষের জীবনকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে মানুষ তার জীবনকেও পরিবর্তন করে নিচ্ছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে বাংলাদেশের শহরের পরিবারগুলোতে। বিশেষ করে উন্নত জীবনের আশায় বর্তমানে যৌথ পরিবার কাঠামো ভেঙে পড়ছে। শিথিল হতে শুরু করেছে পারিবারিক বন্ধন এবং তা প্রভাব বিস্তার করছে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে।

ঘ. বক্স-১-এর প্রতিষ্ঠান হলো বিবাহ। সমাজে এ প্রতিষ্ঠানের তথা বিবাহের গুরুত্ব অপরিসীম।
সমাজের স্থায়িত্ব, বংশবৃদ্ধি, সংহতি ও শৃঙ্খলা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিবাহের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহের মাধ্যমে সৃষ্ট পরিবার সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদন করে। যেমন- সন্তান উৎপাদন, প্রতিপালন, তার সামাজিকীকরণ, মৌলিক চাহিদা মেটানো, শারীরিক ও মানসিক বাসনার পরিতৃপ্তি সাধন ইত্যাদি।
বিবাহের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি সামাজিক অন্যায়কে প্রতিরোধ করে। বিবাহের মাধ্যমে মানুষ সংসারী বা গৃহী জীবনযাপন করে। এর জন্য মানুষ নানা ধরনের নৈতিক অধঃপতনমূলক কর্মকান্ড, পতিতাবৃত্তি, ধর্ষণ, মাদকাসক্তি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকে এবং সমাজকে অবক্ষয় হতে রক্ষা করে। এছাড়াও বিবাহ নর-নারীর মধ্যে কর্তব্যবোধ, মর্যাদাবোধ, দায়িত্বশীলতা ও বৈষয়িক সচেতনতা সৃষ্টি করে। মানুষের সঠিক সামাজিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বিবাহের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজবদ্ধ মানুষের বহুবিধ পারস্পরিক সম্পর্কের মূল নিয়ামক হল বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে নতুন আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে একথা বলা যায় যে, বিবাহ হলো মানব জীবনের একটি অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক প্রতিষ্ঠান, যা সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৬. সুদেব সাহা পরিবারের কর্তা। পরিবারে তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিনিই সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তবে তিনি কখনোই তার সিদ্ধান্ত কারও ওপর চাপিয়ে দেন না। তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করেই তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ক. আকারের ভিত্তিতে পরিবার কত ধরনের হয়?
খ. অণু পরিবারের ধরন ব্যাখ্যা করো।
গ. সুদেব সাহার পরিবার কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সুদেব সাহার পরিবারে সমতার নীতি বিদ্যমান - বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আকারের ভিত্তিতে পরিবার তিন ধরনের হয়।

খ. যে পরিবার স্বামী-স্ত্রী এবং এক বা একাধিক সন্তানকে নিয়ে গঠিত হয় তাকে অণুপরিবার বা একক পরিবার বলে।
বর্তমান সমাজে এ ধরনের পরিবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধের কারণে অণু পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

গ. সুদেব সাহার পরিবার পিতৃপ্রধান পরিবার।
পরিবারের সামগ্রিক ক্ষমতা তথা নেতৃত্ব যখন পিতা, স্বামী, বয়স্ক পুরুষের ওপর ন্যস্ত থাকে তখন তাকে পিতৃপ্রধান পরিবার বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে পরিবারের প্রধান কর্তা ব্যক্তি হলো কোনো পুরুষ তাকে পিতৃ প্রধান পরিবার বলে। বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃপ্রধান। উদ্দীপকের সুদেব সাহা পরিবারের যেকোনো সিদ্ধান্তে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন। তিনি পরিবারের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। পাঠ্যবইয়ের তথ্যানুসারে পরিবারের। যেকোনো সিদ্ধান্তে পিতা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখলে সে পরিবারকে পিতৃপ্রধান পরিবার বলা হয় থাকে। সুতরাং বলা যায়, সুদেব সাহার পরিবারটি হলো পিতৃপ্রধান পরিবার।

ঘ. সুদেব সাহার পরিবারে সমতার নীতি বিদ্যমান। যে পরিবারের প্রধান কর্তা ব্যক্তি কোনো পুরুষ তাকে পিতৃপ্রধান পরিবার বলা হয়। বাংলাদেশের পরিবারগুলো মূলত পিতৃপ্রধান। তবে শহরের কিছু উচ্চশিক্ষিত এবং উদার দৃষ্টিসম্পন্ন পরিবারে সমতার নীতি লক্ষ করা যায়। বর্তমানে আধুনিক শিক্ষার প্রভাবে পিতৃপ্রধান পরিবারে স্ত্রীর মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বেশির ভাগই পুরুষের ওপর ন্যস্ত থাকলেও এখন স্ত্রীর সিদ্ধান্তকে অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে পরিবার পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর অংশগ্রহণে সমতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। উদ্দীপকে সুদেব সাহার পরিবারের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, তিনি কখনোই তার সিদ্ধান্ত কারও ওপর চাপিয়ে দেন না। তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করেই তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতএব আমরা বলতে পারি যে, সুদেব সাহার পরিবারে সমতার নীতি বিদ্যমান।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

৭. নাদিম মা-বাবা, ভাইবোন, দাদা-দাদির সাথে যশোরের মনিরামপুরে বসবাস করে। পরিবার থেকে সে প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভ করেছে। তাকে ভালো একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। নাদিমের অন্য ভাইবোনরাও পরস্পর পরস্পরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। পরিবারের প্রধান হলেন নাদিমের বাবা এবং তিনি সবার আর্থিক প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। মা সবাইকে লালন-পালন করে থাকেন। বড় সুখের এ সংসার।
ক. পিতৃবাস পরিবারে মূলত কোন নীতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে? 
খ. পিতৃসূত্রীয় পরিবার বলতে কী বোঝায়?
গ. নাদিমের পরিবারের মাধ্যমে কীসের গুরুত্ব প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. তুমি কি মনে কর নাদিমের পরিবারের এ কাজগুলো ছাড়া পরিবারের আর কোনো গুরুত্ব নেইত মতামতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পিতৃবাস পরিবারে মূলত পিতৃবাস নীতি অনুসরণ করা হয়।

খ. যে পরিবারের ক্ষেত্রে সন্তান-সন্ততি পিতার ধারায় সম্পত্তি এবং বংশনাম বা মর্যাদা উত্তরাধিকারসূত্রে অর্জন করে এবং সম্পত্তি পিতা থেকে ছেলের ওপর বর্তায় তাকে পিতৃসূত্রীয় পরিবার বলা হয়। এ প্রথায় কোনো ব্যক্তি পিতা, দাদা, পিতার ভাইদেরকে তার মাতা, নানা ও মামার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।

গ. নাদিমের পরিবারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজ জীবনের ওপর পরিবারের গুরুত্ব প্রকাশিত হয়েছে। পরিবারের জৈবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জন্মদান এবং সন্তান লালন-পালন করা। এখানে মায়া-মমতা, আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি।। প্রকাশিত হয়। সন্তানদের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পরিবারের দায়িত্ব। পরিবারের সকল সদস্যের ভরণপোষণ করা। পরিবারের কর্তব্য। শিশুদেরকে সামাজিক মূল্যবোধ, রীতিনীতি, আদর্শ, বাংলাদেশে বিবাহ, পরিবার ও জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদি শিক্ষা দিতে হয়। পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো। পরিবারের সদস্যদের মনের খোরাক জোগানো। এজন্য গ্রাম ও শহর সর্বত্রই পরিবারের বৈশিষ্ট্য হলো চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা। পরিবার তার সদস্যদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক অন্যান্য সাধারণ শিক্ষাও প্রদান করে থাকে। পরিবার তার সন্তানদের নেতৃত্ব এবং দায়িত্ব কর্তব্যের শিক্ষা দান করে থাকে। পরিবার হলো সন্তানদের শিক্ষার্জনের। প্রথম ও প্রাথমিক শিক্ষাজ্ঞান। এখানে সন্তানদের সামগ্রিক জীবনবোধ। সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি নাদিমের পরিবারে উল্লিখিত কাজগুলো ছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তা হলো- সন্তানেরা যাতে পারিবারিক ও সামাজিক নিয়মকানুন মেনে চলে তার ব্যবস্থা করা। সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া, পরিবারের সদস্যদের মাঝে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখা, পরিবারের সদস্যদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা, পরিবারের সদস্যদের ঐক্য, সংহতি উন্নত করা পরিবারের সদস্যদের কর্তব্য। এজন্য তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। সন্তানদের পড়াশোনার খোঁজখবর নিতে হবে। তাদের পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট। সময় দিতে হবে। শিক্ষকদের সাথে সমঝোতা করে সন্তানদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে হবে। সন্তানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করতে হবে। তাদের পারিবারিক, সামাজিক, নৈতিক ইত্যাদি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য পরিবারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তানদের আধুনিক ও কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত করা সময়ের দাবি। ডিজিটাল বাংলাদেশের চাহিদানুযায়ী সন্তানদের গড়ে তোলার দায়িত্ব পরিবারের। সন্তানদের সঠিকভাবে মানুষ করার জন্য ওপরের কাজগুলো সম্পাদন করা পরিবারের জন্য অপরিহার্য।

৮. জরিনা ও সখিনা গ্রামের মেয়ে। তারা দুজনেই সম-বয়সী এবং তারা ছোট বেলার খেলার সাথী। এখন তারা কলেজে পড়ছে। তারা দুজনে দুজনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ধর্মমতে তারা অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান করে সই পেতেছে। সই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছে। 
ক. জ্ঞাতি সম্পর্ক কী?
খ. জ্ঞাতি সম্পর্কের ধরন কয়টি?
গ. উদ্দীপক অনুসারে দুই পরিবারের জ্ঞাতি সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক অনুসারে জ্ঞাতি সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো আলোচনা করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ব্যক্তির পারস্পরিক সম্পর্কই হলো জ্ঞাতি সম্পর্ক।

খ. জ্ঞাতি সম্পর্কের ধরন ৪টি।
সমাজে চার ধরনের জ্ঞাতিসম্পর্কের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যথা- ১. জৈবিক বা রক্তসম্পর্কীয় জ্ঞাতি যেমন- পিতা-পুত্র, দাদা-নাতি, ২. বৈবাহিক বন্ধন সম্পর্কিত জ্ঞাতি, যেমন- স্বামী-স্ত্রী, শ্বশুর-দেবর ইত্যাদি; ৩. কাল্পনিক বন্ধন সম্পর্কিত জ্ঞাতি, যেমন- বয়স্ক ব্যক্তিকে চাচা, মামা, খালু বলা বা সমবয়সী কাউকে ভাই, আপা ইত্যাদি বলে সম্মোধন করা এবং ৪. প্রথাগত বন্ধন সম্পর্কিত জ্ঞাতি যেমনত বন্ধুত্বের সম্পর্ক, পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের দুই পরিবারের মধ্যে প্রথাগত বন্ধন সম্পর্কিত জ্ঞাতি সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটেছে।
স্থানীয় প্রথার ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় বিশেষ ব্যক্তির সাথে যে বিশেষ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে প্রথাগত বন্ধন সম্পর্কিত। জ্ঞাতি বলে। যেমন- দোস্ত, মিতা, সই ইত্যাদি। প্রথাগত বন্ধনকে। পাড়ানো আত্মীয়ও বলা যেতে পারে। জৈবিক বন্ধন, বৈবাহিক বন্ধন ও কাল্পনিক বন্ধন ছাড়াও পাড়া প্রতিবেশী, চেনা-অচেনা সবার সাথে ভাই বোন, চাচা-চাচি, ফুফু-খালা, দাদা-দাদি, নানা-নানি ইত্যাদির সম্পর্ক তৈরি হয়। অনেকটা স্থানীয় প্রথাগত সূত্রে কাউকে এরূপ আত্মীয় বানানোর রেওয়াজই হচ্ছে প্রথাগত বন্ধন। মিতা বা দোস্ত, পাতানো বন্ধুর মাকে খালা বলে সম্মোধন করা কিংবা বন্ধু বা মিতার ভাইকে ভাই বলে সম্বোধন করা ইত্যাদি প্রথাগত বন্ধনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জরিনা ও সখিনা দীর্ঘদিন ধরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ সূত্র ধরে তাদের উভয়ের পরিবারের মধ্যে এক ঘনিষ্ঠের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। পূর্বোক্ত আলোচনা অনুযায়ী আর এ সম্পর্ককে প্রথাগত বন্ধন বা সম্পর্কের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকে জ্ঞাতি সম্পর্কের ইতিবাচক দিক প্রতিফলিত হয়েছে। কেননা জ্ঞাতি সম্পর্কের মাধ্যমে জরিনা ও সখিনার পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ফলে তাদের পরিবারের একে অন্যের সুখে দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে এসে দাঁড়াবে।
জ্ঞাতি সম্পর্ক সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ সম্পর্ক সমাজজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমনত জ্ঞাতিরা অভাব অনটনে টাকা পয়সা, শস্য, বীজ, খাবার ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করে থাকে। অনেকে জ্ঞাতিদের ব্যবসায়-বানিজ্যের জন্য কাঁচামাল বা পুঁজি সরবরাহ করে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা পাশে এসে দাঁড়ায়। এছাড়া বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতেও জ্ঞাতিরা সেবা দিয়ে সহায়তা করে। বিভিন্ন বিপদ আপদ বা সংকট পূর্ণ সময়ে তারা সুপরামর্শ প্রদান করে। অনেকে জ্ঞাতি সম্পর্ককে গ্রামীণ নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম উপাদান বলে মনে করেন। মূলত এ সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই সমাজে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বা মিথস্ক্রিয়া সংঘটিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, জরিনা ও সখিনার পরিবারের মধ্যে যে জ্ঞাতি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তার মাধ্যমে উভয় পরিবারই উপর্যুক্ত সুফলগুলো ভোগ করবে।

৯. মুনতাসির ও মিশু পাশাপাশি বসে কাজ করে। মুনতাসিরের বাড়ি বগুড়া এবং মিশুর বাড়ি ফেনী। কর্মস্থলে এসেই প্রথম তাদের পরিচয়। প্রায় তিন বছর কেটে গেল। তাদের সম্পর্ক পারিবারিক পর্যায় পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে তারা একে অপরের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে, যেন একান্তই নিকট আত্মীয়। 
ক. রবিন ফকস প্রদত্ত Kinship-এর সংজ্ঞাটি লেখ। 
খ. ব্যক্তিগত পর্যায়ে উন্নয়ন ভাবনা যৌথ পরিবার ভাঙনের দায়ীত ব্যাখ্যা করো।
গ. মুনতাসির ও মিশুর সম্পর্কের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. এ ধরনের সমাজে উক্ত রূপ সম্পর্কের আর কী কী বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়? আলোচনা করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. রবিন ফকস প্রদত্ত Kinship-এর সংজ্ঞাটি হলো- 'জ্ঞাতি সম্পর্ক বলতে আত্মীয়স্বজন বা জ্ঞাতিজনের মধ্যকার সম্পর্ককেই বোঝায়।' 

খ. ব্যক্তিগত পর্যায়ে উন্নয়ন ভাবনা যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভাঙনের অন্যতম কারণ। যৌথ পরিবারের কোনো কোনো সদস্য অনেক সময়ই মনে করেন যে, একত্রে থাকলে ব্যক্তিগতভাবে তার আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এভাবে পরিবারের সম্ভাবনাময় দক্ষ সদস্যদের কেউ কেউ কিছুটা ব্যক্তিস্বার্থেই যৌথ পরিবার থেকে ভিন্ন হয়ে যায়, যার অনিবার্য ফলশ্রুতিতে যৌথ পরিবারে ভাঙন দেখা দেয়।

গ. মুনতাসির ও মিশুর সম্পর্কের প্রকৃতি হলো কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্কের। বাংলাদেশে জ্ঞাতি সম্পর্কের অন্যতম ধরন হলো কাল্পনিক বন্ধন। বৈবাহিক জ্ঞাতি নন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গেও আমরা জ্ঞাতির মতোই আচরণ করি। এভাবে বয়স্ক কোনো ব্যক্তিকে চাচা, মামা, খালু ইত্যাদি বলে করি। সমবয়সী হলে ভাই, আপা ইত্যাদি বলে সম্বোধন করি।
মুনতাসির ও মিশু পাশাপাশি বসে কাজ করেন। মুনতাসিরের বাড়ি় বগুড়া এবং মিশুর বাড়ি ফেনী। কর্মস্থলে এসেই প্রথম তাদের পরিচয়। পরবর্তীতে তাদের সম্পর্ক পারিবারিক পর্যায়ে পর্যন্ত গড়ায়। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে তারা একে অপরের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে, যেন একান্তই নিকট আত্মীয়।
সুতরাং মুনতাসির ও মিশুর মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা হলো কাল্পনিক বন্ধন।

ঘ. মুনতাসির ও মিশু শহরে বসবাস করে। তাদের সমাজে বর্তমানে জ্ঞাতিসম্পর্কের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। শহুরে জ্ঞাতিসম্পর্ক কখনো কখনো কোনো কোনো সংগঠনের উন্নতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। জ্ঞাতির প্রতি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে জাতীয় কোনো কর্তব্য থেকে পিছপা হয়ে যায়। উন্নয়নকামী তৃতীয় বিশ্বের আমলাতন্ত্র জ্ঞাতিসম্পর্কের দ্বারা কখনো বা প্রভাবিত হয়। শহুরে জ্ঞাতিসম্পর্ক মূলত স্বার্থের ভিত্তিতে গড়ে় ওঠে। ব্যক্তি তার নিজস্ব স্বার্থের কারণে কিংবা নিজের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অন্যের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
নেতৃত্ব সৃষ্টিতে নির্বাচনে সামাজিক বিচার-আচারে জ্ঞাতি প্রথা আমাদের শহুরে সমাজে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এসব এলাকার বিভিন্ন সংগঠন তার নীতি অনুসরণকারী ব্যক্তিদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। যা জ্ঞাতিসম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আধুনিক শহুরে সমাজে জাতীয়তাবোধ জাগরণে জ্ঞাতিসম্পর্ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ জাতীয়তাবোধ ভিত্তি করেই বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল।
জ্ঞাতিসম্পর্ক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক দায়-দায়িত্ব ও অধিকার সৃষ্টি করে। কিন্তু শহুরে জীবনের জ্ঞাতিসম্পর্কে এ বিষয়টি কিছুটা অনুপস্থিত। এখানে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফলে অন্যকে, নিয়ে ভাববার মতো সময় তাদের হয় না। সামাজিক সম্পর্ককে মজবুত করতে জ্ঞাতিসম্পর্ক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু শহুরে জ্ঞাতিসম্পর্ক এ ধরনের সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয় না বলে সেখানে জ্ঞাতিসম্পর্ক কিছুটা শিথিল প্রকৃতির হয়।

১০. রোহিতপুর গ্রামের বাসিন্দা মুমিন। সে তার খালাতো বোন ময়নার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। মুমিনের চাচা বলেন, এই বিবাহবন্ধনের ফলে নিজেদের সম্পত্তি নিজেদের মধ্যেই থাকবে। অন্যদিকে একই গ্রামের মেয়ে সালমা বেগমের স্বামী মারা যায়। তবে সে অল্প বয়সে বিধবা হয় এবং তার কোনো সন্তানসন্ততি না থাকায় তাকে দ্বিতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়।
ক. মাতৃবাস পরিবার কী?
খ. বহু স্ত্রী বিবাহভিত্তিক পরিবার বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে মুমিনের বিবাহব্যবস্থাটি কোন ধরনের বিবাহ ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের সালমা বেগমের ক্ষেত্রে যে বিবাহব্যবস্থা লক্ষ করা যায় তার সামাজিক গুরুত্ব মূল্যায়ন করো। 

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী যদি স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বসবাস করে তাকে মাতৃবাস পরিবার বলে।

খ. একজন পুরুষ দুই বা ততোধিক নারীকে বিবাহ করে পরিবার গঠন করলে তাকে বহু স্ত্রী বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে। বাংলাদেশের গ্রাম সমাজে এক সময় ধনী গৃহস্থ পরিবারে বহু স্ত্রী গ্রহণ করে পরিবার গঠনের প্রবণতা ছিল। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার প্রসার ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এর প্রবণতা কমে এসেছে।

গ. উদ্দীপকে মুমিনের বিবাহব্যবস্থাটি প্যারালাল কাজিন বিবাহ। চাচাতো বা খালাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ সংঘটিত হলে তাকে প্যারালাল কাজিন বিবাহ বলে। আমাদের সমাজে চাচাতো এবং খালাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠানের ঘটনা বিরল নয়। এ ধরনের বিবাহের ক্ষেত্রে দুটো উদ্দেশ্য কাজ করে। একটি হলো আত্মীয়তার। সম্পর্ককে জোরদার করা; আরেকটি হলো বৈষয়িকত অর্থাৎ, সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে রাখা। তদুপরি কেউ সন্তানদের অজানা অচেনা দূরে বিবাহ না দিয়ে নিজেদের মধ্যে রাখতে চান। সন্তানদের প্রতি স্নেহ-মায়ামমতার কারণেও কেউবা এ ধরনের বিবাহ রীতি বেছে নেন।
উদ্দীপকের রোহিতপুর গ্রামের বাসিন্দা মুমিন তার খালাতো বোন ময়নার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এ বিষয়ে মুমিনের চাচা বলেন, এ বিবাহ বন্ধনের ফলে নিজেদের সম্পত্তি নিজেদের মধ্যেই থাকবে। মুমিনের খালাতো বোনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং তার চাচার বক্তব্যের মাধ্যমে প্যারালাল কাজিন বিবাহের চিত্র ফুটে উঠেছে। সুতরাং বলা চলে, উদ্দীপকের মুমিনের বিবাহ ব্যবস্থাটি প্যারালাল কাজিন বিবাহ।

ঘ. উদ্দীপকে সালমা বেগমের ক্ষেত্রে যে বিবাহ ব্যবস্থা লক্ষ করা যায় তা হলে বিধবা বিবাহ। 
স্বামীর মৃত্যুর পর কোনো বিধবা মহিলার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে বিধবা বিবাহ বলে। বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে বিধবা বিবাহের স্বীকৃতি রয়েছে। পক্ষান্তরে হিন্দু সমাজে বিধবা বিবাহ অধ্যবধি সামাজিকভাবে নিরুৎসাহিত রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের একজন সফল সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের সম্মতিক্রমে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। এর ফলে বিধবা নারীরা সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার লাভ করে। হিন্দু সমাজে নারীদের অবস্থা এমন ছিল যে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও তার সাথে সহমরণে যেতে হতো। কিন্তু এ আইনের ফলে তা রহিত হয়। অর্থাৎ, সতিদাহ প্রথা বিলুপ্ত হয়। বিধবা বিবাহের কারণে অনেক নারীই নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে তারা নিজেদেরকে নতুনভাবে সাজিয়ে সমাজের উপযোগী করে তৈরি করছে। সতিদাহ প্রথা ছিল একটি কুসংস্কার। আজকের সমাজ সেখান থেকে বেরিয়ে বিধবা বিবাহের মাধ্যমে সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করেছে। বিধবা বিবাহের কারণে নারীরা এখন আর সমাজে নিজেকে ছোট মনে করছে না। তারা এখন অনেকেই যোগ্যতাবলে অবিবাহিত ছেলেদের বিয়ে করছে। ফলে সামাজিকভাবেও তাদের অবস্থান শক্ত হচ্ছে। তাছাড়া সহমরণ ছিল সমাজের একটা বেদনাবিধুর ঘটনা। কিন্তু বিধবা বিবাহ প্রচলনের মাধ্যমে সমাজ সেই অনাকাঙি্ক্ষত ঘটনা থেকে মুক্তি পায়।
উদ্দীপকের সালমা বেগমের স্বামী মারা গেলে তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন। তার এই বিবাহ বিধবা বিবাহকেই নির্দেশ করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post