HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. বার্ষিক বনভোজনে কুয়াকাটা যায় রাইসা। সেখানে সে একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে দেখতে পায়, যারা পটুয়াখালী জেলায় অধিক সংখ্যায় বাস করছে। তাদের সমাজব্যবস্থা পূর্ণ গণতান্ত্রিক। তাদের নেতা নির্বাচিত হয় পুরুষদের ভোটের মাধ্যমে। নির্বাচনে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারে না।
ক. নৃগোষ্ঠী কী?
খ. জুম চাষ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে রাইসা কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে দেখতে পায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত নৃগোষ্ঠীর বিবাহ ব্যবস্থার সাথে কী আধুনিক সমাজের বিবাহ ব্যবস্থার সাদৃশ্য বিদ্যমান রয়েছে? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নৃগোষ্ঠী হচ্ছে এমন একটি মানব সম্প্রদায় যারা বংশ পরম্পরায় কিছু সাধারণ ও অভিন্ন দৈহিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকে।

খ. জুম চাষ হচ্ছে পাহাড়ি এলাকায় প্রচলিত এক ধরনের বিশেষ চাষ পদ্ধতি। সাধারণত পাহাড়ের ঢালে গাছপালা কেটে, শুকিয়ে ও পুড়িয়ে ফেলার পর মাটিতে গর্ত করে একসাথে কয়েক ধরনের বীজ বপন করা হয়। সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে কয়েক ধরনের ফসল সংগ্রহ করা হয়। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করাকেই জুম চাষ বলে। ভারতে জুম চাষ পোড়ু, বীরা, পোনম প্রভৃতি নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তথ্যানুসারে রাইসা রাখাইন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে দেখতে পায়। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হচ্ছে রাখাইন। রাখাইনদের আদিনিবাস ছিল বর্তমান মিয়ানমারের অন্তর্ভুক্ত আরাকান রাজ্যে। অষ্টাদশ শতকে আনুমানিক ১৭৪০-১৭৯৯ সাল. আরাকান রাজ্যের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাখাইনদের অনেকেই স্বদেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে যেমন- বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী ও কক্সবাজারে বসতি স্থাপন করে। ঐতিহ্যবাহী ও স্বকীয় জীবনধারার অধিকারী রাখাইনদের জীবনপ্রণালি বৈচিত্র্যপূর্ণ। রাখাইনরা প্রধানত মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীভুক্ত। তাদের পরিবার ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক এবং অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। রাখাইনদের সমাজব্যবস্থা পূর্ণ গণতান্ত্রিক। তারা তাদের নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সদস্যদের ভোটে রাখাইনদের নেতা নির্বাচিত হন। তবে এক্ষেত্রে মহিলারা ভোট দিতে পারেন না। উদ্দীপকের রাইসা বনভোজনে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা গিয়ে যে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে তা উপরে আলোচিত রাখাইন নৃগোষ্ঠীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, রাইসা রাখাইন নামক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণকে দেখতে পেয়েছে।

ঘ. হ্যা, আমি মনে করি, উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত নৃগোষ্ঠী তথা রাখাইন এবং আধুনিক সমাজ বা বাঙালিদের বিবাহ ব্যবস্থার মধ্যে সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদৃশ্য বিদ্যমান। রাখাইনদের মতে, বিয়ে হচ্ছে ধর্ম পালনের অনিবার্য শর্ত। রাখাইনদের মধ্যে চাচাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই-বোনের বিয়ে নিষিদ্ধ হলেও মামাতো ভাই-বোনের বিয়ে বৈধ। তবে সাধারণত এ ধরনের বিয়ে করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। অতীতে রাখাইন ছেলে-মেয়েরা পরিবারের পছন্দের পাত্রী বা পাত্রকেই বিবাহ করত। কিন্তু ইদানিং শিক্ষার প্রসার এবং যুগের দাবির প্রেক্ষিতে বয়ঃপ্রাপ্ত রাখাইন ছেলে মেয়েরা অভিভাবকদের সম্মতি নিয়ে নিজেদের পছন্দমতো পাত্র বা পাত্রীকে বিয়ে করছে। রাখাইন সমাজে সাধারণত মেয়ের বাড়িতে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে বর ও কনের বাড়িতে বিয়েকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় পিঠা ও মজাদার খাবার। বর আসার পথে সুন্দর করে গেট সাজানো হয়। বসার জন্য প্যান্ডেল নির্মিত হয়ে থাকে। দূর থেকে আত্মীয়-পরিজনের আগমনে আনন্দঘন হয়ে ওঠে বাড়ির পরিবেশ। বর আসার পর বরের কাছ থেকে দক্ষিণা আদায়সহ বিভিন্ন রীতি-রেওয়াজ পালন করা হয়। আহার পর্ব শেষে কনেকে সাজিয়ে আনা হয়। এরপর একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু বা ঠাকুর বর-কমনর সুখী জীবন কামনা করে ‘মঙ্গলসূত্র' পাঠ করেন। সবশেষে একজন বয়স্ক মহিলা বর ও কনের হাতে হাত মিলিয়ে দেন। অন্যদিকে বাঙালি মুসলিম বা হিন্দু সমাজে পিতৃসূত্রীয় কিংবা মাতৃসূত্রীয় কাজিনদের সাথে বিবাহে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, যেমনটা রাখাইন সমাজে দেখা যায়। বর্তমানে আধুনিক বা বাঙালি সমাজেও ছেলে-মেয়েরা অভিভাবকদের সম্মতিক্রমে নিজেদের পছন্দমতো পাত্রী বা পাত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বাঙালিদের বিবাহ অনুষ্ঠানও কনের বাড়িতেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে বাঙালিদের মতো রাখাইন সমাজে বিবাহ পরবর্তী ভোজের আয়োজন করা হয় না। এ ধরনের দু'একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বিবাহের প্রস্তাব, বিয়ের বাড়ি সজ্জিতকরণ, বরের আগমন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আধুনিক সমাজে যে ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, তার সাথে রাখাইনদের বিবাহব্যবস্থার অনেকাংশেই মিল পাওয়া যায়।

২. মৌরিন একজন পেশাদার খ্যাতিমান নত্যশিল্পী। তার প্রিয় নাচের মধ্যে অন্যতম হলো ‘‘লাই-হারা-উরা।’’ কিছুদিন পূর্বে সে ‘নোংগক্রেম' নামে নতুন একটি নাচ শিখেছে, যা সে সিলেটে গিয়ে ‘‘বেহদিয়েং খৃলাম’’ নামক একটি উৎসবে নেচেছিল।
ক. নৃগোষ্ঠী কী?
খ. গারোদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কেমন? বুঝিয়ে বলো।
গ. উদ্দীপকের মৌরিনের নতুন করে শেখা নাচটি বাংলাদেশের কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মৌরিনের প্রিয় নাচটি বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে। যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. নৃগোষ্ঠী হলো এমন একটি মানব সম্প্রদায় যারা বংশ পরম্পরায় কিছু সাধারণ ও অভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকে।

খ. গারোদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মূলত জুম চাষ ও বনজ সম্পদ আহরণের উপর নির্ভরশীল ছিল।
বর্তমানে বাংলাদেশের গারোদের মধ্যে জুমচাষের প্রচলন নেই। ১৯৫০ সালে তৎকালীন সরকার জুমচাষের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন সাধিত হয়। তারা জুমচাষের পরিবর্তে হালচাষে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়াও তারা বন থেকে কাঠ কেটে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। নারী-পুরুষ উভয়ই হাটবাজারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে। তবে বর্তমানে শিক্ষিত অনেক গারো জনগোষ্ঠী শহরাঞ্চলে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে।

গ. মৌরিনের নতুন করে শেখা নাচ 'নোংগেক্রেম' বাংলাদেশের খাসিয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে খাসিয়ারা বৃহত্তর সিলেট জেলার পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। খাসিয়ারা আদি মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। খাসিয়াদের সমাজব্যবস্থা অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় ভিন্ন। তারা সর্বপ্রানবাদে বিশ্বাসী। তাদের সমাজ প্রধানত ৬টি গোত্রে বিভক্ত। মাতৃপ্রধান সমাজ ব্যবস্থা হওয়ায় ছেলেমেয়েরা মায়ের পরিচয়ে বড় হয়। খাসিয়াদের অর্থনেতিক ব্যবস্থা মূলত কৃষি নির্ভর। তাদের সমাজ-জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তারা বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে থাকে। তাদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যসমূহ হলোত নোংগক্রেম নৃত্য, যুদ্ধ নৃত্য, কুমারী নৃত্য প্রভৃতি। 'বেহদিয়েং-ঘৃলাম' নামক উৎসবকে কেন্দ্র করে তাদের ঐতিহ্যবাহী নোংগক্রেম নৃত্য আয়োজন করা হয়।
উদ্দীপকে মৌরিনের নতুন করে শেখা 'নোংগক্রেম' নাচ, যা সে সিলেট গিয়ে 'বেহদিয়েং ঘৃলাম' নামক একটি উৎসবে নেচেছিল মূলত উপরে আলোচিত খাসিয়া নৃগোষ্ঠীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং, বলা যায়, উক্ত নাচটি বাংলাদেশের খাসিয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত।

ঘ. উদ্দীপকের মৌরিনের প্রিয় নাচটি বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মনিপুরির সাথে সম্পর্কিত। বাংলাদেশে বসবাসরত নানা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে মনিপুরিরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক অনন্য জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তারা আদি মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। তাদের সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নৃত্যগীত পরিবেশনা। নৃত্য তাদের কাছে খুবই পবিত্র বিষয়। তারা বিশ্বাস করে, নৃত্যের গুণেই সংসারে সকল কাজে সফলতা আসে। মনিপুরী নৃত্যের মধ্যে অন্যতম নৃত্য হলো লাই-হারা উরা, যা দেবতার সন্তুষ্টি সাধনের জন্য পরিবেশিত হয়। এ নৃত্য চৈত্র মাসের শেষে ও বৈশাখের শুরুতে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তাদের সমাজে রাসনৃত্য, চোংবী নৃত্যসহ আরো অনেক নৃত্য পরিবেশিত হয়ে থাকে। নৃত্যে ব্যবহৃত পোশাক অত্যন্ত রুচিশীল ও দৃষ্টিনন্দন। উদ্দীপকে মৌরিনের প্রিয় নাচ ‘লাই-হারা-উরা' বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মনিপুরিদের নৃত্য সংস্কৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য নৃত্য যা মনিপুরিদের বাংলাদেশসহ বিশবব্যাপী বিশেষভাবে পরিচিত করেছে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পার্থিবের নতুন বন্ধুটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। এদের সমাজ আদাম, মৌজা, সার্কেল এরূপ স্তরে বিভক্ত। প্রত্যেক স্তরে একজন প্রধান ব্যক্তি কর্তৃত্ব করেন। রাজা এই সমাজের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। কলেজে পার্থিবের আরেকজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বন্ধু ছিল, যাদের বসবাস বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে। এদের সমাজ মায়ের কর্তৃত্বে পরিচালিত। বিয়ের পর ছেলে স্ত্রীর বাড়িতে বসবাস করে।
ক. 'আদাম' কাকে বলে?
খ. জুম চাষকে সরকার নিরুৎসাহিত করার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকে পার্থিবের কলেজের বন্ধুটি কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর? বুঝিয়ে লিখো।
ঘ. উদ্দীপকের পার্থিবের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুটির সামাজিক সংগঠনের সাথে বাঙালি সমাজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কতকগুলো চাকমা পরিবারগুচ্ছ নিয়ে গঠিত সংঘকে 'আদাম' বলা হয়।

খ. কৃষি জমির উর্বরতা রক্ষা এবং পরিবেশগত কারণে সরকার জুম চাষকে নিরুৎসাহিত করে।
বাংলাদেশে বসবাসরত অধিকাংশ উপজাতির অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল জুম চাষ। জুম চাষ জমির উর্বরতাকে নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া জুম চাষের ফলে পরিবেশ মারাত্মক দুষিত হয়। জুম চাষের জন্য বন জঙ্গল কেটে নষ্ট করা হত। এসব কারণে সরকার জুম চাষকে নিরুৎসাহিত করে।

গ. পার্থিবের কলেজের বন্ধুটি গারো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর। বাংলাদেশে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে তাদের মধ্যে গারোদের অবস্থান অন্যতম। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে এদের বসবাস। গারোরা বাঙালিদের থেকে ভিন্নভাবে পরিবার গঠন করে। গারো পরিবার মাতৃসূত্রীয় অর্থাৎ, গারোদের মধ্যে সম্পত্তি ও বংশ নাম মাতৃধারায় মাতা থেকে মেয়েতে বর্তায়। গারো দম্পত্তি স্ত্রীর বাবার গৃহে বসবাস করে অর্থাৎ সেখানে মাতৃবাস নীতি অনুসরণ করা হয়। সমাজের প্রায় সকল ক্ষেত্রে মায়ের কর্তৃত্ব বজায় থাকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত পার্থিবের কলেজের বন্ধুটির বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বসবাস ও তাদের সমাজ মায়ের কর্তৃত্ব পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি গারোদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের তথ্যানুসারে পার্থিবের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাকমার অন্তর্ভুক্ত। পার্থিবের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুটির সামাজিক সংগঠনের সাথে বাঙালি সমাজের ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
চাকমাদের সামাজিক সংগঠন আদাম বা পাড়া, গ্রাম বা মৌজা ও চাকমা সার্কেল প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত কিন্তু বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরনের বিভাজন নেই বললেই চলে। কতকগুলো চাকমা পরিবার নিয়ে আদাম গঠিত হয় অন্যদিকে বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় কতকগুলো পরিবার নিয়ে গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। আদাম গুলো নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম অন্যদিকে বাঙালি সমাজে গোষ্ঠী সম্প্রসারিত হয়ে গ্রামের সৃষ্টি হয়। চাকমা সমাজের কয়েকশ মৌজা বা গ্রাম মিলে চাকমা সার্কেল গঠিত হয়। এর প্রধান হচ্ছে চাকমা রাজা, যারা বংশ পরম্পরায় নিযুক্ত হন। কিন্তু বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় এরুপ সার্কেল দেখা যায় না।
তাই আলোচনার সমাপ্তিতে বলা যায়, একই দেশভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও চাকমা এবং বাঙালিদের সামাজিক সংগঠনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

৪. বাংলাদেশের অন্যতম একটি নৃগোষ্ঠীর বসবাস সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। 'খালাছাই’ ও ‘মৈতৈ’ নামক দুইটি গোত্রে বিভক্ত এ নৃগোষ্ঠীর লোকেরা বিশ্বাস করে যে, নৃত্য সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করে এবং ফলশ্রুতিতে তাদের জন্য সাফল্য বয়ে আনে। এ নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের তৈরি তাঁতজাত বস্ত্র খুবই বিখ্যাত।
ক. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে জাতিসংঘের কোন প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে?
খ. প্রত্নতত্ত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য চিত্রিত হয়েছে এবং তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে তোমার ধারণা কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে যে নৃগোষ্ঠীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাদের বিবাহ রীতির সাথে বাঙালিদের বিবাহ রীতির কী মিল বা অমিল খুঁজে পাও? মতামত দাও।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর অবদান রয়েছে।

খ. প্রত্নতত্ত্ব বলতে বোঝায়, প্রাগৈতিহাসিক সমাজ ও মানুষ সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন।
প্রত্নতত্ত্বের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে 'Archaeology’। শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'Arkhaios', এবং 'খড়মরধ' থেকে। এদের অর্থ যথাক্রমে 'প্রাচীন' এবং 'বিদ্যা'। সুতরাং শব্দগতভাবে 'Archaeology' মানে হচ্ছে, 'প্রাচীন বিদ্যা'। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার ই.বি. টেইলর প্রত্নতত্ত্বের সংজ্ঞা প্রদান করে বলেন, ‘‘প্রত্নতত্ত্ব হচ্ছে অতীতের ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কিত পাঠ।" পূর্বে বর্ণিত শব্দগত অর্থ এবং টেইলর প্রদত্ত প্রামাণ্য সংজ্ঞা পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, অতীতকালের মানুষের দ্রব্যসামগ্রী, হাতিয়ার, বাসগৃহ ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সে কালের সামাজিক জীবনের অধ্যয়নই হলো প্রত্নতত্ত্ব।

গ. উদ্দীপকে মণিপুরি নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য চিত্রিত হয়েছে। উক্ত নৃগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আমার ধারণা নিম্নরূপ মণিপুরি নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব মতাবলম্বী। অবশ্য সুদূর অতীতে মণিপুরীদের মধ্যে এক ধরনের বার্ত্যধর্ম তথা প্রকৃতি পূজার প্রচলন ছিল, যা মূলত ছিল প্রাকৃতিক শক্তির আরাধনা নির্ভর ধর্ম। কিন্তু পরবর্তীতে আর্যদের সংস্পর্শে এসে সনাতন হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণবীয় মতবাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। এরা সাধারণত হিন্দুধর্মের অনুষ্ঠানাদি পালন করে। প্রতিটি মণিপুরি গ্রামে প্রাত্যহিক পূজা-অর্চনা পরিচালনা করার জন্য একটি মন্দির থাকে। এসব মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ, বিষ্ণু, শিব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, জগন্নাথ ও গৌরাঙ্গের মূর্তি শোভা পায়। মণিপুরিরা যেসব পূজা পালন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শিব পূজা, দুর্গা পূজা, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পূজা, জগতবন্ধু পূজা, চৈতন্য পূজা ইত্যাদি। তাদের গ্রামে দৈনিক সান্ধ্যকালীন আরতির আয়োজন করা হয়ে থাকে। মণিপুরিদের অনুসরণীয় ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ হচ্ছে- গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত ইত্যাদি। তাদের মধ্যে অনেকেই পূণ্য অর্জনের জন্য নবদ্বীপ, বৃন্দাবন, গয়া, কাশি, সীতাকু-, লাঙ্গলবন্ধ, নিমাই শিব মন্দির প্রভৃতি তীর্থস্থানে ভ্রমণ করেন। পরিশেষে উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মণিপুরিরা সাধারণত হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস পোষণ করে।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত নৃগোষ্ঠী হলো মণিপুরি। মণিপুরিদের বিবাহ রীতির সাথে বাঙালিদের বিবাহের নিয়ম-কানুনের মিল ও অমিল উভয়ই লক্ষ করা যায়।
মণিপুরিদের সমাজে একই গোত্রভুক্ত লোকদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। যেমন- বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি শাখার গোত্র 'ক্ষুমল’-এর কোনো ছেলে সদস্য এই গোত্রের কোনো মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে না। তবে সে ইচ্ছা করলে ‘মোইরাং' গোত্রের কোনো মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে। অর্থাৎ মণিপুরিদের মধ্যে বহির্বিবাহরীতি প্রচলিত। অন্যদিকে, বাঙালিদের বিবাহরীতিতে হিন্দুদের মধ্যে গোত্র বা বর্ণ সম্পর্কিত জটিলতা থাকলেও মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আবার মণিপুরিদের বিবাহে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের সময় অভিভাবকদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। এ বিষয়টি বাঙালি হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বিবাহের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। যদিও বর্তমানে উভয় জনগোষ্ঠীতেই আধুনিক ধ্যান-ধারণার প্রসার এবং নানারকম সামাজিক পরিবর্তনের ফলে পাত্র পাত্রীর নিজস্ব মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। মণিপুরিদের বিবাহ ব্যবস্থায় লিখিত কোনো চুক্তিপত্র দলিল. সম্পাদন করা হয় না এবং তাদের বিবাহকার্যে যৌতুক গ্রহণ বা প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকায় এ বিষয়টিকে তারা অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখেন। অবশ্য স্বেচ্ছায় প্রদান করা উপঢৌকন গ্রহণে তাদের কোনো আপত্তি থাকে না। অন্যদিকে বাঙালিদের বিবাহে লিখিত চুক্তিপত্র সম্পাদন হয় এবং যৌতুক প্রথার প্রচলন থাকলেও এটি ঘৃণিত প্রথা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এছাড়া মণিপুরি এবং বাঙালি; উভয় জনগোষ্ঠীর মাঝেই ঘরজামাই থাকার প্রথা রয়েছে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, মণিপুরি ও বাঙালিদের বিবাহরীতিতে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, ঘরজামাই প্রথা ইত্যাদি. মিল থাকলেও মৌলিক কিছু বিষয়ে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, চুক্তিপত্র সম্পাদন, যৌতুক গ্রহণ ইত্যাদি. অমিলও বিদ্যমান।

৫. মাথিন চাকমা তার বান্ধবী শুভ্রার নানাবাড়ি ময়মনসিংহে বেড়াতে গেল। সেখানে সে লক্ষ করল, পরিবারের সকল বিষয়ে শুভ্রার মায়ের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এতে সে একটু অবাক হয়ে শুভ্রাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার-আচরণ, জীবিকা নির্বাহ প্রভৃতি বিষয় খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল।
ক. 'মারমা' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে কোন শব্দ
খ. 'সাংগ্রাই' কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. মাথিনের অবাক হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদ্বয়ের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'মারমা' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বার্মিজ শব্দ 'ম্রাইমা' থেকে।

খ. সাংগ্রাই মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব।
চৈত্র শেষ দুদিন ও বৈশাখ মাসের প্রথম দিন মারমারা সাংগ্রাই উৎসব পালন করে। এ উৎসবে ছোট-বড় সবাই আনন্দে মেতে উঠেন। সাংগ্রাই উৎসবে তরুণ-তরুণীরা মৈত্রী পানি ছিটিয়ে একে অপরের মঙ্গল কামনা করে। পাড়ায় পাড়ায় উৎসবের আমেজে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। এ সময় বয়স্ক পূজা করা হয়। বয়স্ক পূজার মধ্য দিয়ে মারমা সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের সম্মান জানানো হয়।

গ. পরিবারের সকল বিষয়ে শুভ্রার মায়ের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ায় উদ্দীপকের মাথিন চাকমা অবাক হয়েছে।
শুভ্রার নানাবাড়ি ময়মনসিংহে এবং তাদের পরিবারের সকল ব্যাপারে তার মায়ের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ তথ্যে বোঝা যায় যে, উদ্দীপকের শুভ্রা গারো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। অন্যদিকে মাথিন হলো চাকমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। আমরা জানি, চাকমা পরিবারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদেরকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অপরদিকে গারো নৃগোষ্ঠীর পরিবারের প্রধান হলেন মাতা। এ পরিবারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মাতার মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং সন্তানরা মায়ের উপাধি ধারণ করে। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠা কন্যা পরিবারের সমুদয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে। পিতা কেবল সংসার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি গারো দম্পত্তি বিবাহের পর স্ত্রীর বাবার গৃহেই বসবাস করে।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, যেহেতু চাকমা পরিবারে মেয়েদের গুরুত্ব নেই, তাই মাথিন চাকমা তার গারো বান্ধবী শুভ্রার নানাবাড়িতে সব ব্যাপারে মায়ের মতামতের প্রাধান্য দেখে অবাক হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের মাথিন ও শুভ্রা যথাক্রমে চাকমা ও গারো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। এ দুই নৃগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থায় সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য উভয়ই পরিলক্ষিত হয়।
চাকমা নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জীবিকার প্রধান উপায় হলো কৃষিকাজ। যে পদ্ধতিতে তারা চাষ করে তাকে বলা হয়, 'জুম' বা পর্যায়ক্রমে চাষ। চাকমারা পাহাড়ি এলাকায় বাস করে বলে তাদেরকে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয়। তবে সরকার জুম চাষকে নিরুৎসাহিত করায় বর্তমানে তারা হালচাষেও অভ্যস্ত হচ্ছে। চাকমাদের জুমে ধান ছাড়াও তিল, কুমড়া, কলা, মিষ্টি কুমড়া, চিনার, ভুট্টা, বেগুন ইত্যাদি খাদ্য শস্য এবং আদা, হলুদ ইত্যাদি অর্থকরী ফসল চাষ করা হয়।
অন্যদিকে গারোরাও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। পূর্বে গারোরা জুম চাষে অভ্যস্ত ছিল। তবে বর্তমানে পাহাড়ি অঞ্চলের গারোরা জুম চাষ করলেও সমতলের গারোদের মধ্যে এ ধরনের চাষের প্রচলন নেই বললেই চলে। বর্তমানে তারা মূলত হাল চাষের সাহায্যে ধান, নানা জাতের সবজি ও আনারস উৎপাদন করে।
উপরে বর্ণিত চাকমা ও গারো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনামুলক পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, উভয় নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা কৃষির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করলেও তাদের চাষের পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

৬. আব্দুল মতিন সিলেটের তামাবিল সীমান্তের বিজিবি-তে সিপাহি হিসেবে চাকরি করেন। এক ছুটির দিনে তিনি ও তার দুই সহকর্মী স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তারা 'লাইহারাউরা' নামক নৃত্য উপভোগ করেন এবং লক্ষ করেন, সেখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পুরুষরা ‘ধুতি’ ও মেয়েরা 'নাগ' নামক পোশাক পরে আছেন। হিন্দু বৈষ্ণবীয় মতবাদে বিশ্বাসী এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বাস করে যে, নৃত্যের কারণে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে।
ক. বাংলাদেশের কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে পরিবার প্রধান হিসেবে মাতা দায়িত্ব পালন করেন?
খ. সাঁওতালদের নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় বর্ণনা করো। 
গ. উদ্দীপকে যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে তার জাতিগত পরিচয় প্রদান করো।
ঘ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজ ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশের গারো ও খাসিয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে পরিবার প্রধান হিসেবে মাতা দায়িত্ব পালন করেন।

খ. সাঁওতালরা অস্ট্রিক ভাষাভাষী আদি-অস্ট্রেলীয় জনগোষ্ঠীর বংশধর। সাঁওতালদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সাথে মু-া, ওরাওঁ ও মালপাহাফঢ় নৃগোষ্ঠীর মিল রয়েছে। সাঁওতালদের অন্যতম দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলো গায়ের রং গাঢ় কালো বর্ণের। তাদের মাথার খুলি গোলাকার, মুখগহবর বড়, ঠোঁট মোটা ধরনের। সাঁওতালদের চুলের রং বেশ কালো এবং চুল কোঁকড়ানো প্রকৃতির হয়। তাদের নাক চ্যাপ্টা এবং দৈহিক উচ্চতা মাঝারি ধরনের হয়।

গ. উদ্দীপকে মণিপুরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে। কেননা উদ্দীপকে দেখা যায়, সিলেটের তামাবিল সীমান্তের বিজিবি-তে সিপাহি হিসেবে চাকরিরত আব্দুল মতিন ও তার দুই সহকর্মী স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে 'লাইহারাউরা' নামক নৃত্য উপভোগ করেন। তারা লক্ষ করেন, সেখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পুরুষরা ‘ধুতি' ও মেয়েরা 'নাগ' নামক পোশাক পরে আছেন। এছাড়া উক্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিন্দু বৈষ্ণবীয় মতবাদে বিশ্বাসী এবং তাদের ধারণা হলো, নৃত্যের কারণে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যগুলো মণিপুরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকেই নির্দেশ করে। মণিপুরি নৃগোষ্ঠীর জাতিগত পরিচয় সম্পর্কে ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ জন শেক্সপিয়র বলেন, ‘‘মণিপুরিরা ভারতের আসাম রাজ্যের কুকীদের অন্তর্ভুক্ত।’’ কুকীদের মতো মণিপুরিরাও আদি-মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এদের গায়ের রং শ্যাম-ফর্সা, নাক কিঞ্চিত খাঁদা, চোখ ছোট, পায়ের গোড়ালি মোটা এবং দেহাকৃতি মাঝারি ধরনের। মণিপুরিরা বিশ্বাস করে যে, তাদের পূর্বপুরুষরা 'যম' রাজ্য থেকে পৃথিবীতে এসেছিল। পৃথিবীতে এসে তারা আদিম জাতিদের পরাজিত করে মৈয়াং রাজ্য' স্থাপন করেছিল। শুরুর দিকে মণিপুরিরা ভারতের আসাম প্রদেশের মণিপুর রাজ্যে বাস করত। পরবর্তীতে ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে নাগরাজ পামহৈবার কাছে পরাজিত হয়ে মণিপুরের রাজা চিং থাং খোম্বা তার অনুসারীদের নিয়ে আসামের কাছাড় জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। সে সময় অনেক মণিপুরি সিলেট ও ত্রিপুরা জেলায় এসে বসতি স্থাপন করেন। ধারণা করা হয় যে, রাজা চিং থাং খোম্বা এবং তার সঙ্গী সাথীরাই বাংলাদেশে বসবাসরত মণিপুরিদের পূর্বপুরুষ।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা মণিপুরি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে নির্দেশ করা হয়েছে। এদের সমাজ ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করে উল্লেখযোগ্য যেসব দিক পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নরূপ মণিপুরি জনগোষ্ঠী প্রথমত দুটি শাখায় বিভক্ত। যথা- ১. বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি খালাছাই. ও ২. মৈতৈ মণিপুরি নিংথৌজা.। বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের আবার পাঁচটি প্রধান গোত্রে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ১. ক্ষুমল, ২. মোইরাং, ৩. আঙোম, ৪. লোয়াঙ এবং ৫. মাঙাঙ্। অন্যদিকে মৈতৈ মণিপুরিদের সাতটি গোত্রে ভাগ করা হয়। যথা- ১. আমংগোম, ২. লুয়াং, ৩. মৈরাং, ৪. ফুসল, ৫. নিংথৌজা, ৬. খবা এবং ৭. নংবা মণিপুরিদের পারিবারিক জীবনযাত্রায় পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে মেয়ে, ভাই-বোন ও অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে এক একটি যৌথ পরিবার গঠিত হয়ে থাকে। তবে ইদানিং শিক্ষার প্রসারের ফলে একক পরিবার গঠনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মণিপুরি পরিবার পিতৃতান্ত্রিক হওয়ায় পিতার সূত্র ধরেই সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ পিতার মৃত্যুর পর ছেলেরা সম্পত্তির ভাগ সমান হারে লাভ করে। কিন্তু মেয়েরা পিতার সম্পত্তির কোনো অংশ পায় না। অবশ্য পিতা ইচ্ছা করলে সম্পত্তির কিছু অংশ মেয়েকে দিতে পারেন।
মণিপুরি ভাষায় গ্রামকে 'গাং' বলা হয়। এদের মধ্যে গ্রাম বা গাং নির্ভর সামাজিক সংগঠন লক্ষ করা যায়। মণিপুরিদের প্রতিটি গ্রামে একটি করে দেব মন্দির ও মন্ডপ রয়েছে। এসব মন্দির ও মন্ডপকে ঘিরেই তাদের গ্রামের যাবতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। এছাড়া প্রতিটি মণিপুরি গ্রামে পঞ্চায়েত প্রথা প্রচলিত আছে। পঞ্চায়েত পরিচালনার জন্য মণিপুরিরা ব্রাহ্মণদের মধ্য থেকে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে নির্বাচন করেন। মণিপুরিদের যাবতীয় সামাজিক কর্মকান্ড- সাধারণত পঞ্চায়েত প্রধান নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে মণিপুরিদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ. নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে চেয়ারম্যান বা মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হচ্ছেন। এসব নির্বাচিত ব্যক্তিরাও মণিপুরি সমাজে নেতৃত্বস্থানীয় হিসেবে বিবেচিত হন। পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষার প্রসার, পেশার পরিবর্তন এবং বাঙালিসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাথে মেলামেশার ফলে মণিপুরি সমাজ ব্যবস্থায় একইসাথে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়। 

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

৭. লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে রায়হান লক্ষ করে যে, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের গায়ের রং ফর্সা, মুখাকৃতি লম্বা, নাক উন্নত ও চিকন এবং ঠোঁট পাতলা। অন্যদিকে নাইজেরিয়ান খেলোয়াড়দের গায়ের রং কালো, নাক অনুন্নত বা বোঁচা এবং দেহের গঠন শক্ত ও বলিষ্ঠ। 
ক. কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা কোন ধর্মাবলম্বী? 
খ. মণিপুরিদের ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকের ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের সাথে কোন নরগোষ্ঠীর মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, নরগোষ্ঠীগত দিক থেকে উদ্দীপকের ইংল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়দের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে? যুক্তি সহকারে মতামত উপস্থাপন করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

খ. মণিপুরি নৃগোষ্ঠীকে দুইটি শাখায় ভাগ করা হয়। যথা- ১. বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি এবং ২. মৈতৈ মণিপুরি। এ দুটি শাখার ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
মৈতৈ মণিপুরিরা তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ধর্ম 'আপোকপা'-এর অনুসারী। তাদের প্রধান দেব-দেবীরা হলেন- সানামাহি, পাখংবা, শিদাবা ইত্যাদি। অন্যদিকে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিরা হিন্দুধর্মের বৈষ্ণবীয় মতবাদের অনুসারী। তাদের গ্রামে প্রাত্যহিক পূজা-অর্চনা পরিচালনা করার জন্য একটি মন্দির থাকে। এসব মন্দিরে রাধাকৃষ্ণ, বিষ্ণু, শিব, লক্ষ্মী, সরস্বতী, জগন্নাথ ও গৌরাঙ্গের মূর্তি শোভা পায়। তারা যেসব পূজা পালন করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শিব পূজা, দুর্গা পূজা, লক্ষ্মী পূজা, সরস্বতী পূজা, জগতবন্ধু পূজা, চৈতন্য পূজা ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের সাথে ককেশয়েড বা শ্বেতকায় নরগোষ্ঠীর মিল রয়েছে।
ককেশয়েড নরগোষ্ঠীর প্রধান শারীরিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তাদের গায়ের রং সাদা বা সাদা-লালচে, মাথার আকৃতি লম্বা, মুখ সরু বা লম্বাকৃতির, নাক উন্নত ও চিকন, চোখের রং হালকা থেকে কালো বাদামি, ঠোঁট পাতলা এবং কান মাঝারি ধরনের। ককেশয়েড নরগোষ্ঠীর বাসস্থান প্রধানত ইউরোপ, আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় কিছু অঞ্চলে। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, ইংল্যান্ড ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের গায়ের রং সাদা বা ফর্সা, মুখাকৃতি সরু ও লম্বা, নাক উন্নত ও চিকন এবং ঠোঁট পাতলা।
উপরে বর্ণিত ককেশয়েড নরগোষ্ঠী ও ইংল্যান্ড ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের শারীরিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের সাথে ককেশয়েড নরগোষ্ঠীর মিল রয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, নরগোষ্ঠীগত দিক থেকে উদ্দীপকের ইংল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমার যুক্তি নিচে উপস্থাপন করা হলো-
উদ্দীপকের ইংল্যান্ড ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা ককেশয়েড বা শ্বেতকায় নরগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। ককেশয়েড নরগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে ক্রো-ম্যাগনন মানব থেকে। এ নরগোষ্ঠীর প্রধান শারীরিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তাদের গায়ের রং সাদা বা সাদা-লালচে, মাথার আকৃতি লম্বা, মুখ সরু বা লম্বাকৃতির, নাক উন্নত ও চিকন, চোখের রং হালকা থেকে কালো বাদামি, ঠোঁট পাতলা এবং কান মাঝারি ধরনের। এসব শারীরিক বৈশিষ্ট্য ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে নাইজেরিয়া ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা নিগ্রোয়েড নরগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ পাঠ্যপুস্তকের আলোকে আমরা জানি, রোডেশিয়ান মানব থেকে নিথ্রোয়েড নরগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে। তাই এ নরগোষ্ঠীর সদস্যদের গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণবর্ণের। বাদামি বর্ণের নিগ্রোদের দেখা গেলেও সংখ্যায় তা খুবই কম। লম্বা ও খাটো উভয় আকৃতিরই নিগ্রো দেখা যায়। এদের দেহের গঠন কাঠামো শক্ত ও বলিষ্ঠ, মাথা সাধারণত লম্বাকৃতির ও উঁচু, কপাল উলম্বী, নাক অনুন্নত, বোঁচা ও প্রশস্ত, চোখের রং কালো-বাদামি থেকে কালো ঠোঁট মোটা বা পুরু, কান ছোট ও প্রশস্ত, চুলের রং কালো বা কালোবাদামি এবং চুলগুলো মোটা, ঘন ও কোঁকড়vনো। নিগ্রোয়েড নরগোষ্ঠীর এ বৈশিষ্ট্যগুলো উদ্দীপকের নাইজেরিয়ান খেলোয়াড়দের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। উপর্যুক্ত তুলনামূলক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ইংল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়দের মাঝে নরগোষ্ঠীগত ভিন্নতা রয়েছে।

৮. বরেন্দ্র অঞ্চলে সিহাবদের অনেক কৃষিজমি আছে। সেসব জমিতে মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা বেশিরভাগ শ্রমিকই একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য। তাদের গায়ের রং কালো এবং নাকের গড়ন নিগ্রোদের মতো বোঁচা। এরা একটি পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী হলেও বিশ শতকের প্রথম ভাগে তাদের দ্বারা সংঘটিত বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে একটি আলোচিত রাজনৈতিক ঘটনা। 
ক. ঝুমুর গান কোন সমাজে প্রচলিত? 
খ. মণিপুরি নৃত্যের বর্ণনা দাও।
গ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসস্থান উল্লেখপূর্বক বিবাহ ও পরিবার ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ঝুমুর গান সাঁওতাল সমাজে প্রচলিত।

খ. মণিপুরিদের নৃত্য ও সংগীত বেশ প্রসিদ্ধ।
নৃত্যের সাথে সাথে তারা লোকগীতি পরিবেশন করে থাকে। বিবাহ-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণে তারা নৃত্যগীতের আয়োজন করে থাকে। পৃথিবী সৃষ্টির মূলেও এই নৃত্যের বিশেষ অবদান আছে বলে মণিপুরিদের বিশ্বাস। মণিপুরি নৃত্যের মধ্যে 'লাইহারাউরা' সর্বাধিক আলোচিত ও প্রসিদ্ধ। 

গ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হলো সাঁওতাল। সাঁওতাল নৃগোষ্ঠীর বাসস্থান, বিবাহ ও পরিবারব্যবস্থা অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় ভিন্ন।
বিশ শতকের প্রথম ভাগে সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে সাঁওতালরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার রাজ্য ও অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চল থেকে এসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। বর্তমানে সাঁওতালরা রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও দিনাজপুর জেলায় বাস করে। সাঁওতালরা বসবাসের ঘরবাড়িগুলো আকৃতিতে খুবই ছোট এবং অধিকাংশই ছন বা খড়ের তৈরি। এসব ঘরে প্রায় কোনো জানালা থাকে না। সাঁওতাল পরিবারব্যবস্থা মূলত পিতৃতান্ত্রিক। সম্পত্তিতে পুত্রদের সমান অধিকার থাকলেও কন্যাদের কোনো অধিকার নেই। তবে সম্পত্তি বন্টনের সময় পিতা প্রত্যেক কন্যাকে একটি করে গাভী প্রদান করে থাকেন। সাঁওতাল সমাজে বহিঃগোত্র বিবাহ প্রচলিত। তাদের মধ্যে ছয় ধরনের বিবাহ রীতি প্রচলন থাকলেও আসলি, রাজারাজি ও ইতুত এ তিন ধরনের বিবাহ অধিক প্রচলিত। সাঁওতালদের মধ্যে পুনর্বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের প্রচলন রয়েছে। পরিশেষে উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সাঁওতালদের বাসস্থান, পরিবার ও বিবাহ ব্যবস্থা তাদের জীবনধারাকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তথা সাঁওতালদের আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন একটি নির্দিষ্ট পরিমন্ডলে আবদ্ধ। সাঁওতালদের জীবিকার প্রধান উপায় কৃষি। বলতে গেলে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ সাঁওতাল পরিবার ভূমিহীন। এদের জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি হলেও এরা মূলত কৃষিশ্রমিক এবং কেউ কেউ গোচাষি। এছাড়া কিছু ছোট কৃষক রয়েছে। সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। সাঁওতাল মেয়ে কাঁধের ওপর জড়িয়ে শাড়ি পরে। পুরুষরা লুঙ্গি পরে। এরা খড‡়র তৈরি ঘরে বাস করে। প্রতিটি সাঁওতাল গ্রামে হাট বা মেলার ব্যবস্থা আছে। সাঁওতাল পরিবারে পিতাই পরিবারের প্রধান। এদের নিজস্ব ভাষা আছে। এরা হিন্দু ও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী।
সাঁওতালরা ভূতপ্রেতের উপাসনা করে থাকে। সাঁওতালদের দেবতা হলো চাদো। সাঁওতাল সমাজে ঝুমুর গান বেশ প্রচলিত। বছরে মোট পাঁচটি পর্ব সাঁওতাল সমাজে দেখা যায়। সাঁওতালদের বিয়েতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এরা চাল থেকে 'হারিয়া' নামক এক ধরনের মদ তৈরি করে। পুরুষ ও মহিলারা সবাই এই মদ খায়। বিশেষ করে উৎসবের সময় এরা মদ খেয়ে নৃত্য পরিবেশন করে। মেয়েরা উৎসবের সময় হাত-পা ও গলায় পিতলের বা নিরেট কাসার গয়না পরে। পুরুষদের কেউ কেউ গলায় মালা ও হাতে বালা পরে থাকে।

৯. অপুর বাবা একটি সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক। অপু তার বাবার কাছ থেকে জানতে পারে যে, বাংলাদেশে বসবাসরত একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার কোনো লিখিত বর্ণমালা নেই। ফলে তাদের শিশুরা বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া করে। এছাড়া তাদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে- "মনসা পূজা', 'পিশাচ পূজা', 'লঙ্কাচারিয়া পূজা' ইত্যাদি। 
ক. কোন শতাব্দীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের আগমন ঘটে?
খ. সাঁওতালদের পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও।
গ. উদ্দীপক দ্বারা কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সামাজিক কাঠামো বিশ্লেষণ করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের আগমন ঘটে।

খ. বাঙালিসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নূনিয়া, মাহাতো, মুন্ডা, রবিদাস ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী. সাথে মেলামেশার ফলে সাঁওতালদের পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যে তেমন কোনো ভিন্নতা দেখা যায় না। সাঁওতাল পুরুষরা ধুতি, লুঙ্গি ও গামছা পরিধান করেন। বর্তমানে অনেকেই, বিশেষত শিক্ষিত সাঁওতাল ছেলেরা প্যান্ট-শার্ট পরেন। অতীতে এ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা 'ফতা' নামক দু'খ- মোটা কাপড় পরিধান করতেন। এর একটি খ- নিম্নাঙ্গে এবং অপরটি ঊর্ধ্বাঙ্গে ব্যবহার করা হতো। তবে বর্তমানে দু'একজন বয়স্ক নারী ছাড়া এ পোশাক ব্যবহার করতে তেমন একটা দেখা যায় না। বরং বাঙালি সমাজের সংস্পর্শে এসে সাঁওতাল নারীরা এখন সালোয়ার কামিজ ও শাড়িই বেশি পরিধান করেন।

গ. উদ্দীপক দ্বারা কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতিদের মধ্যে কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অন্যতম। এরা 'রাজবংশী' নামেও পরিচিত। কোচ ভাষা তিবেতো-বর্মন ভাষা পরিবারের বোড়ো শাখার অন্তর্ভুক্ত এবং এর মধ্যে অসমীয়া, বাংলা, গারো প্রভৃতি ভাষার অনেক শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এ ভাষার কোনো লিখিত বর্ণমালা নেই। ফলে বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কোচরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করেন। কেবল বয়স্ক কোচরা নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের সময় 'কোচ ভাষা' ব্যবহার করেন। কোচরা সনাতন হিন্দুধর্মের পূজার পাশাপাশি তাদের আদি ধর্মের কিছু কিছু দেব-দেবীর পূজাও উদযাপন করেন। যেমন- মনসা দেবীকে পারিবারিক দেবীরূপে মানার সাথে সাথে কোচরা সাপের ভয়ে এ দেবীর পূজা করেন। আবার পরিবারের কেউ যদি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে তারা রোগীর আরোগ্য কামনায় গৃহষ্প্রাঙ্গণে 'পিশাচ পূজা'র আয়োজন করেন। এছাড়া অনাবৃষ্টিকালে বৃষ্টি কামনায় কোচরা 'লঙ্কাচারিয়া পূজা করেন।
উদ্দীপকের অপু তার অধ্যাপক বাবার কাছ থেকে জানতে পারে যে, বাংলাদেশে বসবাসরত একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষার নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। ফলে তাদের শিশুরা বাংলা ভাষাতেই লেখাপড়া করে। এছাড়াও তাদের ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম হলো- 'মনসা পূজা', ‘পিশাচ পূজা', 'লঙ্কাচারিয়া পূজা' ইত্যাদি। অপু তার বাবার কাছ থেকে যে বিষয়গুলো জানতে পেরেছে, তা পূর্বে বর্ণিত কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষাগত ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, উদ্দীপক দ্বারা কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ নৃগোষ্ঠীর সামাজিক কাঠামো একইসাথে ঐতিহ্যবাহী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাংলাদেশে বসবাসকারী কোচ সমাজ মোট সাতটি দলে বিভক্ত। দলগুলো হচ্ছে- ওয়ানাং, হরিগাইয়া, সাতপাড়ি, দশগাইয়া, চাপরা, তিনথেকিয়া ও শংকর। দলগুলোকে কোচরা 'ভাগ' নামে অভিহিত করে। এ দল বা ভাগের প্রতিটিরই একাধিক গোত্র রয়েছে। গোত্রগুলোকে কোচরা 'নিকিনি' নামে আখ্যায়িত করে। এসব গোত্র বা নিকিনি'র মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কামা, রাজে, পিড়া, মাজি, হানসুর, দাহেং, রাংসা, কাশ্যপ, দাম্বুক ইত্যাদি। কোচদের পরিবার একইসাথে মাতৃসূত্রীয় ও পিতৃতান্ত্রিক। এর মানে হচ্ছে, পরিবারের সন্তান-সন্ততিরা মায়ের পদবি গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু পরিবারে পিতাই প্রধান ব্যক্তি এবং সকল সিদ্ধান্ত তিনিই গ্রহণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সন্তান সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে এবং এক্ষেত্রে তারা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুসরণ করে। কন্যা সন্তানরা পিতার সম্পত্তির কোনো ভাগ না পেলেও বিবাহের পর স্বামীর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং তার সম্পত্তির একটি অংশ লাভ করে।
কোচদের মধ্যে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হলে 'সামাজিক পরিষদ' নামক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে তারা তা মীমাংসা করে নেয়। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বলা হয় 'গাঁওবুড়া'। বিচার-সালিশ কাজে গাঁওবুড়াকে সাহায্য করার জন্য সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা ম-লিও থাকে। সামাজিক পরিষদের সিদ্ধান্তই কোচ সমাজের নিকট চূড়াান্ত হিসেবে গণ্য হয়। এ নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সাধারণত একক বিবাহরীতির প্রচলন থাকলেও সন্তান লাভের আশায় অনেকে একাধিক বিবাহ করেন। কোচ সমাজে বিধবা বিবাহের ব্যাপকতা না থাকলেও অল্পবয়সী বিধবারা পুনর্বিবাহ করতে পারে এবং এক্ষেত্রে সামাজিক স্বীকৃতি বিদ্যমান। এ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একাত্মবোধ অত্যন্ত গভীর, যে জন্য কোচ সমাজে কোনো অনাথ কিংবা এতিম ছেলেমেয়ে নেই। কারণ কোনো শিশু এতিম বা অনাথ হলে তাকে লালন-পালন করার দায়িত্ব গোত্রের যে কোনো পরিবারের এবং এক্ষেত্রে তারা স্বত:স্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, গোত্রপ্রীতি ও নারী-পুরুষকে সমভাবে মূল্যায়ন করার মধ্য দিয়ে কোচ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা একটি অনন্য সাধারণ সামাজিক কাঠামো গড়ে তুলেছেন। 

১০. পাহাড়, অরণ্য ও হ্রদের জেলা রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে যান তামিম ও তার বন্ধুরা। সেখানে লেকের ওপর ঝুলন্ত সেতুটি পার হওয়ার সময় তামিম বলেন, এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে চীনা মঙ্গোলীয়দের যথেষ্ট মিল রয়েছে। উচ্চতা মাঝারি থেকে বেঁটে। গড়নেও এরা বেশ শক্তিশালী। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতেই এরা বেশি বাস করে। বিকালে বনভান্তের বিহারে গিয়ে দেখেন বুদ্ধ মূর্তিকে প্রদীপ জ্বেলে, ফুল দিয়ে এবং খাদ্য দিয়ে পূজা করছে সেই স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা। 
ক. সাঁওতালদের মধ্যে কয় প্রকারের বিবাহরীতি প্রচলিত রয়েছে?
খ. মণিপুরিদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে লিখ। 
গ. উদ্দীপকে তামিমের দেখা স্থানীয় নৃগোষ্ঠী কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. বর্তমানে উক্ত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে যেসব পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে তা আলোচনা করো। 

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সাঁওতালদের মধ্যে তিন প্রকারের বিবাহরীতি প্রচলিত রয়েছে।

খ. মণিপুরিদের প্রধান উপজীবিকা হলো কৃষি। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী মণিপুরিরা সাধারণত স্থানান্তর কৃষি উৎপাদন করে এবং সমতলবাসীরা ভূমিতেই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সমতল ভূমিতে বসবাসকারী মণিপুরিদের অবস্থা পাহাড়ি মণিপুরিদের চেয়ে ভালো। পুরুষ ও মহিলা উভয়ই কৃষিকাজ করে। তবে তুলনামূলকভাবে মহিলারা পুরুষদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে থাকেন।

গ. উদ্দীপকে তামিমের দেখা স্থানীয় নৃগোষ্ঠী মূলত চাকমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে নির্দেশ করছে।
বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হলো চাকমা। তারা মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বসবাস করে। তন্মধ্যে রাঙামাটি জেলায় এরা সবচেয়ে বেশি বাস করে। স্যার রিজলীর মতে, চাকমাদের দেহে ৮৪.৫ ভাগ মঙ্গোলীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তাদের গায়ের রং ফর্সা, মুখমন্ডল গোলাকার, উচ্চতায় মাঝারি। শারিরীক গড়নে চাকমারা বেশ শক্তিশালী। তারা মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ মন্দিরে তারা প্রদীপ জ্বেলে, ফুল দিয়ে বুদ্ধ মূর্তির পূজা করে থাকে। এছাড়াও তাদের মধ্যে সনাতন ধর্মের বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা যায়। উদ্দীপকে উল্লিখিত তামিম ও তার বন্ধুরা রাঙামাটি বেড়াতে যান। সেখানে তামিম স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে চীনা মঙ্গোলীয়দের যথেষ্ট মিল পান। এছাড়াও সে দেখলো উক্ত নৃগোষ্ঠীরা বুদ্ধ মূর্তির পূজা করছে।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, তামিমের দেখা নৃগোষ্ঠী উপরে আলোচিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাকমার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. বর্তমানে চাকমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমাজে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্রিটিশ যুগে চাকমা সমাজ কিছুটা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আওতায় ছিল। ১৯৬০ সালে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। তখন থেকে তাদের নেতৃত্বের স্থলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রবর্তিত স্থানীয় সরকারি নেতৃত্বের প্রতিজনগণ আকৃষ্ট হতে থাকে। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে চাকমাদের মধ্যে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। ডাক্তার, প্রকৌশলী, অধ্যাপক, আইনজীবী, সরকারি ও বেসরকারি অফিসে চাকরিজীবীর সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষার প্রসারের ফলে চাকমা সমাজে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কাপ্তাই বাঁধের ফলে বিসত্মীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার কারণে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সেখানে ভূমির ওপর জনসংখ্যার চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকমা সমাজে উৎপাদন কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। জুম চাষের পাশাপাশি রাবার ও কাঠ গাছের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকমা সমাজের পরিবর্তনের জন্য চাকমা-বাঙালি সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাদের সাংস্কৃতিক জীবন, পোশাক, আসবাবপত্র ইত্যাদিতে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। চাকমারা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ধর্মীয় উৎসবে কঠিন চীবর দান আগের তুলনায় বর্তমানে জাঁকজমকভাবে পালন করা হচ্ছে।
পরিশেষে উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, চাকমা সমাজে আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post