HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রবিন ছোটবেলা থেকেই শহরে বসবাস করছে। বাবার সাথে গ্রামে দাদার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সে দেখল, গ্রামের মানুষেরা সহজ সরল, মিতব্যয়ী, আন্তরিক, বিনোদনপ্রিয়, শান্তিপ্রিয় ও ধার্মিক। অথচ শহরের মানুষের মধ্যে এর ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। 
ক. সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Culture শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
খ. সাংস্কৃতিক ব্যবধান বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির ধরন ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. ‘‘নগর সংস্কৃতি গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন’’ উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Culture শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন।

খ. বিশিষ্ট আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম এফ অগবার্ন তার Social Change গ্রন্থে সংস্কৃতির পশ্চাৎপদতা সম্পর্কিত যে তত্ত্ব বা ব্যাখ্যা প্রদান করেন তাই মূলত 'সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্ব' হিসেবে পরিচিত। সাংস্কৃতিক ব্যবধান বলতে সাধারণত সংস্কৃতির দুটি অংশের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যকে বোঝায়। অর্থাৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতির ফলে বস্তুগত সংস্কৃতি Material Culture. দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে, যার সাথে অবস্তুগত সংস্কৃতি Non-material Culture খাপ খাইয়ে বা তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতা বা পিছিয়ে পড়া। সংক্ষেপে এটাই হলো সাংস্কৃতিক ব্যবধান।

গ. সংস্কৃতি হলো একটি জাতি বা সমাজের জীবনধারণ পদ্ধতি। আর বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৭৬ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। সুতরাং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলতে প্রধানত গ্রামীণ সংস্কৃতিকেই বোঝায়। এ সংস্কৃতির ধরন নিচে ব্যাখ্যা করা হলো বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ মূলত সনাতন জীবনধারায় পরিচালিত হয়। অর্থাৎ- গ্রামীণ সমাজে বসবাসকারী মানুষ সুদীর্ঘকাল যাবত কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই একই ধরনের জীবন যাপন করে। গ্রামীণ অর্থনীতির মূলভিত্তি হলো কৃষি। অধিকাংশ গ্রামবাসী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে অধিকাংশরাই এখনও গরু ও লাঙলের সাহায্যে কৃষিকাজ করে। তবে ইদানিং পাওয়ার টিলার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি যন্ত্রের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামের মানুষেরা সাধারণত সহজ-সরল হয়ে থাকে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদও সাধারণ। ভাত, মাছ, ডাল শাক-সবজি গ্রামের মানুষের প্রধান খাদ্য হলেও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে পিঠা, পোলাও, মাংস ও পায়েসের আয়োজন করা হয়ে থাকে। গ্রামীণ সমাজ জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, শহরাঞ্চল থেকে পৃথক প্রকৃতির ঘরবাড়ি়র ধরন। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বাঁশ ও বেতের তৈরি বেড়া, বাঁশের খুটি এবং ছন বা খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের আধিক্য লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজজীবনে বিভিন্ন ধর্মের প্রভাব বহুলাংশে বিদ্যমান। আবহমানকাল ধরেই গ্রামে বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা একত্রে শান্তিতে বসবাস করছে, যা ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তিপ্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে। উদ্দীপকে দেখা যায়, রবিন তার বাবার সাথে গ্রামে দাদার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গ্রামের মানুষের সহজ-সরলতা, মিতব্যয়ীতা, আন্তরিকতা, বিনোদনপ্রিয়তা, শান্তিপ্রিয়তা ও ধার্মিকতা পর্যবেক্ষণ করলো, পূর্বোক্ত আলোচনা অনুযায়ী যা গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রকৃতিকে তুলে ধরে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি একইসাথে সনাতন এবং আধুনিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করছে। যা পরিলক্ষিত হয় গ্রামবাসীদের জীবন-জীবিকার সকল ক্ষেত্রে।

ঘ. "নগর সংস্কৃতি গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন"- উক্তিটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যথার্থ। বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলতে প্রধানত গ্রামীণ ও নগর সংস্কৃতিকে বোঝায়, যা পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেমন- নগরে বাড়ি-ঘর নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ ব্যবহার করা হয়। পক্ষান্তরে, গ্রামের বাড়ি ঘরগুলো মূলত টিন, বাঁশ, ছন, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে নির্মিত হয়। বাংলাদেশের নগর সংস্কৃতির পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা বিচিত্র ও বৈচিত্র্যময়। শার্ট, প্যান্ট, কোট, টাই, পাঞ্জাবি, কটি, সালোয়ার কামিজ, শাড়ি ইত্যাদি বৈচিত্র্যময় পোশাক নগরবাসীদের গ্রামবাসীদের থেকে আলাদা করে। নগরের বাসিন্দারা শিল্প ও সাহিত্যে গ্রামের মানুষের চেয়ে অনেকটা পারদর্শী। নগর সংস্কৃতির একটি স্বতন্ত্র ধরন হলো, জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তার নিয়মিত চর্চা, যা কিনা গ্রামীণ সংস্কৃতিতে অনুপস্থিত। আবার গ্রামের মানুষের চেয়ে নগরের মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা খুব কম থাকে। নাগরিক জীবনের অর্থনীতি পুরোটাই শিল্প, বাণিজ্য ও চাকরির ওপর নির্ভর করে। পক্ষান্তরে, গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এছাড়া বাংলাদেশের গ্রাম্য রাজনীতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ কেন্দ্রিক। অন্যদিকে নগরের রাজনীতি মূলত রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এর পাশাপাশি নগরের মানুষের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গ্রামের মানুষের মধ্যে ধর্মভীরুতা লক্ষণীয়। তাছাড়া নগরে মর্যাদা অর্জিত, আর গ্রামে মর্যাদা আরোপিত। অর্থাৎ- নগরে বংশানুক্রমে মর্যাদার চেয়ে শিক্ষা, সম্পত্তি কিংবা রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্জিত মর্যাদার গুরুত্ব অনেক বেশি। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ধারণাগত দিক থেকে নগর ও গ্রামীণ সংস্কৃতি এক হলেও বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে উভয় সংস্কৃতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।

২. রতনপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত। চিকিৎসার জন্য এখানকার মানুষ ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজের উপরই বেশি নির্ভরশীল। সরকার তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু গ্রামের মানুষের বেশিরভাগই ‘‘আগের চিকিৎসা ব্যবস্থাতেই ভালো হয়"- এই বিশ্বাসে অটল। হাসপাতালের ডাক্তাররা বোঝাতে চাইলেও তারা পুরোনো বিশ্বাস বদলাতে চায় না। 
ক. সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দটি কোন শব্দ থেকে এসেছে? 
খ. সংস্কৃতি সর্বত্র বিরাজমানত ব্যাখ্যা করো। 
গ. গ্রামের মানুষের বদলাতে না চাওয়া বিষয়টি কোন ধরনের সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের রতনপুর গ্রামের চিত্র যেন অগবার্নের তত্ত্বেরই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সংস্কৃতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Culture যা ল্যাটিন শব্দ Colere থেকে এসেছে।

খ. সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় সংস্কৃতি অতীত থেকে বর্তমান সকল সমাজের সর্বত্র বিরাজমান। সংস্কৃতি হলো সমাজস্থ মানুষের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিচয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবহ একটি উপাদান। সংস্কৃতি সর্বদা-গতিশীল। প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মানুষ যা আবিষ্কার করেছে তা সবই সংস্কৃতি। অর্থাৎ, কোনো সমাজই সংস্কৃতির অবস্থানকে অস্বীকার করতে পারে না। সংস্কৃতির অপরিহার্যতার কারণে তা সর্বদাই গতিশীল ও বিরাজমান। বংশপরম্পরায় সব দেশে ও সব যুগে সংস্কৃতি সর্বদা বিরাজমান ছিল এবং থাকবে।

গ. গ্রামের মানুষের বদলাতে না চাওয়া অবস্তুগত সংস্কৃতি Non material Culture কে নির্দেশ করে। সংস্কৃতি হলো মানুষের সামগ্রিক জীবনপ্রণালি। বলা হয়ে থাকে মানুষ সংস্কৃতির কয়েদি। সংস্কৃতির যে অংশ অদৃশ্য তথা উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল তাই অবস্তুগত সংস্কৃতি। অর্থাৎ, মানুষের চিন্তাভাবনা, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রভৃতি অবস্তুগত সংস্কৃতির আওতাভুক্ত। এছাড়াও মানুষের সব বিমূর্ত সৃষ্টি যেমনত ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, আইন, নীতি, আদর্শ, ইত্যাদিকেও অবস্তুগত সংস্কৃতি বলা হয়ে থাকে। উদ্দীপকে দেখা যায়, রতনপুর গ্রামের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার আধুনিক সুবিধা সম্বলিত হাসপাতাল তৈরি করলেও গ্রামের মানুষ ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে বেশি আগ্রহী। তাদের বিশ্বাস এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিলে তারা ভালো হয়ে যাবে। গ্রামের মানুষের এ ধরনের বিশ্বাস উপরে আলোচিত অবস্তুগত সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং, গ্রামের মানুষের বদলাতে না চাওয়ার বিষয়টি অবস্তুগত সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকে রতনপুর গ্রামের চিত্র যেন অগবার্নের 'সাংস্কৃতিক ব্যবধান' তত্ত্বেরই বাস্তব প্রতিচ্ছবি বক্তব্যটির সাথে আমি একমত। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম এফ. অগবার্ন ১৯২২ সালে তার 'Social Change' নামক গ্রন্থে সংস্কৃতির আলোচনায় সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্ব প্রদান করে। তার প্রদত্ত এ তত্ত্বের মূল কথা হলো, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সংস্কৃতির সব অংশ একই সাথে বা একই গতিতে অগ্রসর বা পরিবর্তিত হয় না। একটি অংশ দ্রুতগতিতে অগ্রসর হওয়ার ফলে অপর অংশ অনিবার্যভাবে পিছিয়ে পড়ে। সাধারণত সংস্কৃতির বস্তুগত অংশ যেমন- রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, দালানকোঠা প্রভৃতির দ্রুতগতিতে পরিবর্তন বা উন্নয়ন সাধিত হলেও অবস্তুগত সংস্কৃতি যেমনত বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ প্রভৃতি সেই হারে পরিবর্তিত হয়নি।
উদ্দীপকে লক্ষনীয় যে, রতনপুর গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার হাসপাতাল বস্তুগত সংস্কৃতি. তৈরি করলেও মানুষ ঝাড়-ফুক, তাবিজ-কবজের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস অবস্তুগত সংস্কৃতি. যে আগের চিকিৎসা ব্যবস্থাতেই তারা ভালো হয়। অর্থাৎ, রতনপুর গ্রামে বস্তুগত সংস্কৃতির পরিবর্তন সাধিত হলেও অবস্তুগত সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন সাধিত হয়নি। উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ঠভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রতনপুর গ্রামের ক্ষেত্রে অগবার্নের সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

৩. হামিদুল স্যার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির উদাহরণ দিতে গিয়ে শুধুমাত্র 'বই' এর কথা উল্লেখ করলেন। তিনি আরও বললেন যে, ‘সভ্যতা মূলত সংস্কৃতিরই একটি বিশেষ রূপ।" 
ক. লেখা আবিষ্কার হয় কোন প্রত্নতাত্ত্বিক যুগে?
খ. ‘শহুরে মানুষেরা আত্মকেন্দ্রিক' - ব্যাখ্যা করো।
গ. তুমি কি মনে কর উদ্দীপকে উল্লিখিত উদাহরণ দিয়ে সংস্কৃতির দুটি প্রকরণকেই বোঝানো যাবে? যুক্তি দাও।
ঘ. উদ্দীপকে হামিদুল স্যার সংস্কৃতির সাথে সভ্যতার যে সম্পর্কের কথা বলেছেন তার সঠিকতা প্রমাণ করো। 

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. লেখা আবিষ্কার হয় লৌহ যুগে।

খ. শহুরে মানুষেরা পাশাপাশি বাস করলেও তাদের মধ্যে তেমন পরিচয় ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকে না বলে এরা আত্মকেন্দ্রিক হয়। শহর হচ্ছে গতিময় ও নিত্য পরিবর্তনশীল বিকাশমুখী জীবনযাত্রার মূর্ত প্রতীক। শহুরে মানুষ সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এ কারণে শহুরে মানুষদের সামাজিক সম্পর্ক এতোটা অন্তরঙ্গ নয়। শহরে মূলত মানুষ নিজের আবশ্যককে চায়, পরস্পরকে চায় না। তাই বলা হয়, শহুরে মানুষেরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। 

গ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকে উল্লিখিত উদাহরণ তথা 'বই' দিয়ে সংস্কৃতির দুটি প্রকরণকেই বোঝানো যাবে। সংস্কৃতির প্রকরণ দুই ধরনের। যথা- বস্তুগত ও অবস্তুগত। মানুষ তার জীবনযাপনের জন্য বস্তুগত যা কিছু তৈরি ও ব্যবহার করে তা বস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে। বস্তুগত সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের কিছু গুণগত সাফল্য যার মাধ্যমে প্রধানত বোঝা যায় মানুষ প্রকৃতিকে কতটুকু আয়ত্তে এনেছে। অন্যদিকে, মানুষের সংস্কৃতি যখন বস্তু আকারে প্রকাশিত হয় না বা বাস্তবরূপ ধারণ করে না, তাকে বলা হয় সংস্কৃতির অবস্তুগত প্রকরণ। উদ্দীপকে জনাব হামিদুল স্যার শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির উদাহরণ দিতে গিয়ে শুধু 'বই'-এর কথা উল্লেখ করেছেন, যা সংস্কৃতির দুটি প্রকরণ তথা বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতিকে বোঝায়। বইটি বস্তু হিসেবে এটি যেমন বস্তুগত সংস্কৃতির উদাহরণ তেমনি বইয়ের ভেতরে লেখার যে বিষয়বস্তু তা মানুষের জ্ঞান, ধারণা, কৌশল, চিন্তা-ভাবনা, সাহিত্য, দর্শন, আদর্শ, মূল্যবোধ প্রভৃতিকে ধারণ করায় তা অবস্তুগত সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলা যায়। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত উদাহরণ তথা 'বই' দিয়ে সংস্কৃতির দুটি প্রকরণকেই বোঝানো যাবে।

ঘ. উদ্দীপকে হামিদুল স্যার সভ্যতাকে সংস্কৃতিরই একটি বিশেষ রূপ উল্লেখ করে সংস্কৃতির সাথে সভ্যতার বিশেষ সম্পর্কের কথা বলেছেন। সংস্কৃতি ও সভ্যতা শুধু আতমনির্ভরশীল নয়, আত্মক্রিয়াশীলও বটে। যেমন, সংস্কৃতির দুটি অংশ- বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি। আবার বস্তুগত সংস্কৃতির চরম বিকাশই সভ্যতা। অন্যদিকে, সংস্কৃতির উপাদান যেমন সভ্যতার উপাদান দ্বারা প্রভাবিত তেমনি সভ্যতার উপাদানও সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণের দ্বারা অনেকখানি প্রভাবিত। এজন্য সংস্কৃতিকে সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি বলা হয়। এ প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, ‘‘সভ্যতা যদি দেহ হয়, তবে আত্মা হলো সংস্কৃতি।’’ অনেক সমাজবিজ্ঞানী বস্তুর ব্যবহারিক দিক ও কলাকৌশলকে সংস্কৃতি বলেছেন। এমনকি বস্তুকেও তারা সংস্কৃতি থেকে বাদ দেননি। আর তাদের মতে, ‘‘মানুষের বিমূর্ত চিন্তার ফসল হলো সভ্যতা"। আবার, মানুষের চিন্তা যেহেতু সংস্কৃতির উপাদান তাই বলা যায়, সংস্কৃতির একটি বিশেষ রূপ হলো সভ্যতা। উপরিউক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে, সভ্যতা মূলত সংস্কৃতিরই একটি বিশেষ রূপ। 

৪. ডা. ফয়সাল গত বছর পাস করে নিজ থানায় মানুষের সেবাযত্নের উদ্দেশ্যে থানার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। তিনি দেখেন, এখানকার হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগ নির্ধারণের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও তা ব্যবহারের দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের খুব অভাব। তাছাড়া হাসপাতাল, ক্লিনিক থাকা সত্ত্বেও এলাকাবাসীর চিন্তাধারায় এখনও তেমন পরিবর্তন আসে নাই। এখনও ঝাড়ফুঁক, ওঁঝা, কবিরাজ, তাবিজ-কবজে বিশ্বাস করে তার মাধ্যমেই আরোগ্য লাভের চেষ্টা করে। তিনি বুঝতে পারেন, কেবলমাত্র আধুনিক সুবিধা সংবলিত স্বাস্থ্যসেবাই নয় বরং এর সফলতার জন্য প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রয়োজন। 
ক. সংস্কৃতি কি?
ক. সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে সংস্কৃতির ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সংস্কৃতি সম্পর্কিত কোন তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ডাক্তারের ভাবনার সাথে তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের সমগ্র জীবনাচরণ।

খ. সংস্কৃতি সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে।
সংস্কৃতি মানুষের মনে মূল্যবোধ সঞ্চার করে তার সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজ জীবনকে সুন্দর ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে সামাজিক-ধ্যান ধারণা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আদর্শ, নীতি-প্রথা, আইন-কানুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো সবই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। তাই বলা যায়, সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সংস্কৃতি সম্পর্কিত সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত।
সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম এফ. অগবার্ন ১৯২২ সালে তার 'ঝড়পরধষ ঈযধহমব নামক গ্রন্থে 'সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্ব প্রদান করেন। এ তত্ত্বের মূল কথা হলো, আধুনিক সংস্কৃতির সব অংশ সমান তালে, একই গতিতে অগ্রসর বা পরিবর্তিত হয় না। এর একটি অংশ দ্রুতগতিতে অগ্রগামী হলেও অন্যটি অনিবার্যভাবে পিছিয়ে পড়ে। সাধারণত সংস্কৃতির বস্তুগত অংশ পরিবর্তনশীল এবং অধিক অগ্রসরমান। কিন্তু অবস্তুগত সংস্কৃতি বস্তুগত সংস্কৃতির ন্যায় দ্রুত অগ্রসর বা পরিবর্তিত হতে পারে না। উদ্দীপকের ডা. ফয়সালের কর্মরত ক্লিনিকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও তা ব্যবহার করার মতো দক্ষ লোকের খুব অভাব। এছাড়া হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও এলাকার মানুষ এখনো সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে। অর্থাৎ, এখানে বস্তুগত সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটলেও অবস্তুগত সংস্কৃতির এখনো উন্নয়ন ঘটেনি। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের পরিস্থিতি সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের প্রায়োগিক দিক ফুটিয়ে তুলেছে।

ঘ. ডা. ফয়সাল মনে করেন, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্বাস্থ্যসেবার সফলতার জন্য প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রয়োজন। তার এ ভাবনার সাথে আমি একমত।
বাংলাদেশে বস্তুগত সংস্কৃতি যে হারে পরিবর্তিত হচ্ছে, সে হারে অবস্তুগত সংস্কৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে না। ফলে সাংস্কৃতিক ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। যেমনত ডা. ফয়সালের কর্মরত ক্লিনিক এবং এলাকায়ও বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির ব্যবধান তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও তা ব্যবহার করার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ লোক নেই বললেই চলে। আবার এলাকায় পর্যাপ্ত হাসপাতাল বা ক্লিনিক থাকলেও এলাকার মানুষ আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহী নয়। তারা এখনো ঝাড়, ফুক, কবিরাজ, ওঝা এবং তাবিজ-কবজের মাধ্যমে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করে। অর্থাৎ, এখানে প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটলেও মানসিক ও বুদ্ধিভিত্তিক উন্নতি ঘটেনি। এই সাংস্কৃতিক ব্যবধান নিঃসন্দেহে সমাজকে অনেকখানি পিছিয়ে দেয়। এই পিছিয়ে পড়া থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে সংস্কৃতির উভয় ধরনের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে। আর এই ভারসাম্য সৃষ্টি তখনই হবে যখন অবস্তুগত সংস্কৃতি প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নত হবে এবং বস্তুগত সংস্কৃতির উন্নতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। আর তাই উদ্দীপকে আলোচিত এলাকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে; যা কেবল প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্ভব।
পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অবস্তুগত সংস্কৃতির উন্নতি ঘটিয়ে সমাজে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব। আর এ কারণেই আমি ডা. ফয়সালের ভাবনার সাথে একমত পোষণ করি।

৫. সিফাত কলেজের শীতকালীন ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেল। রৌদ্রস্নাত শীতের সকালে নাস্তা করার জন্য তার সামনে খেজুরের রস ও ভাপা পিঠা পরিবেশন করা হলো। গ্রামের পথে হাঁটতে গিয়ে সে দেখতে পেল, নতুন ফসল ফলানোর আনন্দে কৃষকরা আনন্দিত। এসব দেখে সে মনে মনে ভাবতে থাকে, ইট-কংক্রিটে আবদ্ধ জটিল নাগরিক জীবনে সংস্কৃতির ভিন্নরূপ লক্ষ করা যায়।
ক. মানুষের সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের মূল কারণ কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় বাংলাদেশের সংস্কৃতির যে ধরনটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপকের আলোচনায় বাংলাদেশে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক ব্যবধানের স্বরূপ প্রতিফলিত হয়েছে? যুক্তিসহ মতামত উপস্থাপন করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মানুষের সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের মূল কারণ হলো নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা।

খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজের রাজনৈতিক কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সমাজের মনোবৃত্তি, বিশ্বাস, অনুভূতি ও মূল্যবোধ নিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠিত। মোটকথা, একটি দেশের রাজনীতির যাবতীয় বিষয়সমূহকেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে। একেক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতি একেক রকম হয়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির ধরন ফুটে উঠেছে। গ্রামের মানুষ অনাড়ম্বর, নিরিবিলি, সহজ-সরল, জীবনযাপনে অভ্যস্ত। গ্রামের তাদের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি অনেক বেশি লক্ষ করা যায়। প্রধান পেশা কৃষি। কৃষকের ঘরে যখন নতুন ফসল ওঠে তখন গ্রামের প্রতিটি ঘরে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে। ঘরে ঘরে নতুন চালের পিঠা তৈরি করা হয়। নানারকম গ্রামীণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়; যা নবান্ন উৎসব নামে পরিচিত। নবান্ন উৎসবে গ্রামের সকল মানুষ মিলেমিশে এক হয়ে যায়।
উদ্দীপকের সিফাত শীতকালীন ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে খেজুরের রস এবং বাড়ি বাড়ি ভাপা পিঠার আমেজ দেখতে পায়। এখা সে নবয়ন্ন উৎসবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানও লক্ষ করে; যা গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং বলা যায়, সিফাতের বর্ণনায় বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের আলোচনায় বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ব্যবধানের স্বরূপ প্রতিফলিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। সমাজবিজ্ঞানী অপবার্ন প্রদত্ত সাংস্কৃতিক ব্যবধান' তত্ত্ব অনুযায়ী সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশ একই গতিতে পরিবর্তন হয় না। এক অংশ অন্য অংশ থেকে দ্রুত পরিবর্তন হয়। অগ্রগামী সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে পিছিয়ে পড়া সংস্কৃতির মাঝে পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে না। ফলে একটা ব্যবধান তৈরি হয় যা 'সাংস্কৃতিক ব্যবধান' নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও গ্রামীণ সাংস্কৃতিক ব্যবধান লক্ষ করা যায়। যেমন নগর সংস্কৃতিতে উন্নত তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিকায়ন ইত্যাদির ফলে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। নগরে উঁচু উঁচু দালান, শিল্পকারখানা, যানবাহনের পরিমাণ বেড়েছে। এতে করে নগরের মানুষের জীবন যেমন অনেকটা সহজ হয়েছে, তেমনি যানজট ও পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন সমস্যা নাগরিক জীবনকে জটিল করে তুলছে। যার ইঙ্গিত উদ্দীপকেও রয়েছে। অন্যদিকে, গ্রামে তথ্য ও প্রযুক্তির তেমন ব্যবহার না হওয়ায় সেখানকার পরিবর্তন অনেকটা ধীর। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের অভাবেও বাংলাদেশের গ্রাম শহরের তুলনায় পিছিয়ে আছে। গ্রামের জীবন যাপন অত্যন্ত সহজ সরল। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে তাদের আচার-ব্যবহার ও মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে না। শহরের উন্নত জীবন যাপন এবং গ্রামের অনুন্নত জীবন যাপনের মাঝে ব্যাপক ব্যবধান লক্ষ করা যায়; যা মূলত সাংস্কৃতিক ব্যবধানেরই স্বরূপ।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের আলোচনায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ব্যবধানের স্বরূপ প্রতিফলিত হয়েছে। 

৬. রায়হান আয়ারল্যান্ডের মেয়ে রেবেকাকে বিয়ে করে দেশে বেড়াতে এলো। এ দেশে এসে রেবেকা লক্ষ করলো, এখানকার মানুষ উৎসবপ্রিয় ও আন্তরিক। তারা বিভিন্ন ধর্মানুসারী হলেও যে যার মতো ধর্মানুষ্ঠান পালন করে। শুধু তাই নয়, সকল ধর্মাবলম্বীরা একত্রিত হয়ে পহেলা বৈশাখ একুশে ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি দিবসও পালন করে।
ক. বাংলাদেশের নাগরিক জীবনের অর্থনীতি কীসের ওপর নির্ভর করে?
খ. বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ব্যবধানের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাসমূহ সমাজবিজ্ঞানের কোন মৌল প্রত্যয়কে নির্দেশ করে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাসমূহের ভিনণতা গ্রাম ও নগর সমাজের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশের নাগরিক জীবনের অর্থনীতি অকৃষিজ পেশার ওপর নির্ভর করে।

খ. বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে প্রবল সাংস্কৃতিক ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে কৃষিতে অনেক উন্নতি প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটেছে। যেমন- পাওয়ার টিলার, সেচযন্ত্র, নিড়ানি যন্ত্র, মাড়াই মেশিন, শস্যকর্তন মেশিন ইত্যাদি। কিন্তু প্রযুক্তিগত জ্ঞান তথা অবস্তুগত সংস্কৃতির অভাবের কারণে অনেক কৃষকই এ সকল উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন না। এর ফলে তারা কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে পড়ছে। ফলে সাংস্কৃতিক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাসমূহ সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম মৌল প্রত্যয় সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে। পৃথিবীতে আবির্ভাবের পর মানুষকে বিভিন্ন সময়ে অনেক প্রতিকূল অবস্থা তথা নানাবিধ বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে মানুষ যেসব চিন্তা-ভাবনা করেছে। এবং যা কিছু সৃষ্টি করেছে তার সবটাকেই একত্রে সংস্কৃতি বলা হয়। অর্থাৎ প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মানুষ যা কিছু আবিষ্কার করেছে সেটাই তার সংস্কৃতি। দৈহিক ও মানসিক চাহিদা পূরণে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনায় মানুষের মধ্যে প্রচলিত নানাবিধ বিশ্বাস, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, কার্যাবলি, জ্ঞান, আইন, রীতিনীতি, নেতৃত্ব, শিল্প, সাহিত্যকর্ম ইত্যাদির সমন্বিত রূপ হচ্ছে সংস্কৃতি। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, রায়হান আয়ারল্যান্ডের মেয়ে রেবেকাকে বিয়ে করে দেশে আসে। রেবেকা লক্ষ করে, এখানকার মানুষ উৎসব প্রিয় ও আন্তরিক। এছাড়া এখানকার মানুষ বিভিন্ন ধর্মানুসারী হলেও যে যার মতো ধর্মানুষ্ঠান পালন করে এবং সবাই মিলে নবান্ন, বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে। রেবেকার পর্যালোচনাকৃত এ সকল বিষয় নিঃসন্দেহে সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। কারণ এ সকল বিষয়ের মাধ্যমেই বাঙালির বিশ্বাস, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, কার্যাবলি, রীতিনীতি, সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি ফুটে উঠেছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপক দ্বারা সমাজবিজ্ঞানের মৌল প্রত্যয় সংস্কৃতিকে নির্দেশ করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে নির্দেশ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশের গ্রাম ও নগর সমাজের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষি পেশার সাথে জড়িত। কৃষিকে কেন্দ্র করেই গ্রাম-বাংলার জীবন ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। অন্যদিকে বাংলাদেশের শহরের মানুষ অকৃষিজ পেশার সাথে জড়িত। শহরের উৎপাদন ব্যবস্থায় শিল্পের গুরুত্ব বেশি, তাই শহরে শিল্পভিত্তিক জীবন ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজে পরিবার হচ্ছে যৌথ পরিবার। কিন্তু আধুনিক নগর জীবনের প্রভাবে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের শহরগুলোতে একক পরিবারের সংখাই বেশি। আবার বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে আত্মীয়তার সম্পর্ক অনেক মজবুত। কিন্তু শহরে জ্ঞাতি সম্পর্কের বন্ধন ঘনিষ্ঠ নয়। বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও গ্রামগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহার তুলনামূলক কম।
এছাড়া গ্রামে ভূমিই হলো সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রধান উপাদান। তাই গ্রাম সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের মাত্রা কম পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে শহর সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের উপাদানের সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্তরবিন্যাসের মাত্রাও প্রকট। গ্রামের মানুষ অনাড়ম্বর, সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কিন্তু শহরের মানুষ আড়ম্বরপূর্ণ, জাঁকজমকপূর্ণ উন্নত এবং জটিল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহরের সংস্কৃতিতে ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রহিম ও করিম ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু। রহিম গ্রাম থেকে এসেছে। আর করিম ছোটবেলা থেকেই শহরে বসবাস করছে। রহিম করিমকে বলে, ‘‘গ্রামের জনগণ সকল চিন্তা ও কাজে শহরের মানুষকে অনুসরণ করলেও গ্রামের মানুষের মধ্যে যে আন্তরিকতা লক্ষ করা যায় তা শহরের মানুষের মধ্যে দেখা যায় না।" এর জবাব দিতে গিয়ে করিম ‘‘শহরে দেশ-বিদেশের নানা চিন্তা বলে, ভাবনার মানুষের সমাবেশ ঘটায়, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক স্থায়ী ও আন্তরিকতাপূর্ণ হয় না।’’ 
ক. লোকসাহিত্য কী?
খ. ‘সংস্কৃতি হচ্ছে শিক্ষালব্ধ বিষয়'-ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের সংস্কৃতির কোন কোন ধরনের ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ধরনগুলো ছাড়া বাংলাদেশে সংস্কৃতির অন্য কোনো ধরন লক্ষ করা যায় কি? মতামত দাও।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কোনো সমাজের মানুষের মৌখিক সাহিত্যই হচ্ছে লোকসাহিত্য।

খ. প্রকৃতিগত দিক থেকে সংস্কৃতি হচ্ছে শিক্ষালব্ধ বিষয়। আমরা জানি, সংস্কৃতি জৈবিকভাবে মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। না। এটি সামাজিকভাবে শিখতে হয়। মানুষ প্রতিনিয়ত ভাষা, রীতি নীতি, আচার-আচরণ, মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস, প্রথাসহ শিক্ষা গ্রহণ করে। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি নতুন নতুন সংস্কৃতি গ্রহণ করে। যুগের পর যুগ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখে। আর এজন্যই সংস্কৃতিকে শিক্ষালব্ধ বিষয় বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের গ্রামীণ ও নগর সংস্কৃতির ইঙ্গিত রয়েছে। বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। এদেশের ৭৬ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিনির্ভর। সামাজিকতা গ্রামীণ জীবনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। আমাদের শিল্প-সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি গ্রামকে ঘিরেই আবর্তিত হয়।। গ্রামীণ মানুষের মধ্যে সুখে-দুঃখে হাসি-কান্নায় একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে় ওঠে, যা নগরজীবনে দেখা যায় না। গ্রামের মানুষেরা সকল চিন্তা ও কাজের অনুসরণ ও অনুকরণ করে শহর তথা নগরবাসীকে। অন্যদিকে, নগর হলো শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা-সাহিত্য ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূল কেন্দ্র। শিক্ষাকেন্দ্র, চিকিৎসাকেন্দ্র, শিল্পসাহিত্য, সংঘ, সংবাদপত্রের অফিস, ক্লাব-রেস্তোরাঁ, মসজিদ, মন্দির ও গির্জার প্রাচুর্য থাকে শহরে। সেখানে দেশ-বিদেশের নানা রকমের মানুষের সমাবেশ ঘটে। তাদের ধর্ম, আচার, অনুষ্ঠান, চিন্তাভাবনা, পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, বিদ্যা-বুদ্ধি এক নয়। এদের মধ্যকার সম্পর্ক ও পরিচয় অনেকটাই স্থায়ী নয়। উদ্দীপকের রহিম ও করিমের কথোপকথনে গ্রামীণ ও নগর সংস্কৃতির যেসব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তা উপরের আলোচনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে সংস্কৃতির পৃথক বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্কৃতির ধরন তথা গ্রামীণ ও নগর সংস্কৃতি ছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন উপসংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয়। উপসংস্কৃতির পরিচয় নিচে উপস্থাপন করা হলো এসব বাংলাদেশে উপ-সংস্কৃতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সংগঠিত জীবনযাপন পদ্ধতি, স্বকীয়তা ও গভীর জ্ঞাতি সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। এদের জীবনযাপন প্রণালি, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, পেশা বা বৃত্তি, চাষাবাদ ইত্যাদি মূল ধারার সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন। এদের মধ্যে পরিবার প্রথা মূলত মাতৃতান্ত্রিক, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথাও দেখা যায়। উল্লেখযোগ্য আরেকটি সংস্কৃতি হচ্ছে বেদে সংস্কৃতি। এদের জীবনযাপন প্রণালি, পেশা বা বৃত্তি, পরিবার প্রথা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিয়ে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি মূল ধারার সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন। এরা সাপের খেলা, বাঁদর খেলা, ঝাড়-ফুঁক, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা ইত্যাদির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের স্থায়ী আবাসস্থল নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপ সংস্কৃতি হলো হিজড়া সংস্কৃতি। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, চালচলন, ভাষা, চলাফেরা ভিন্ন। হয়। এরা দলবদ্ধভাবে বা এককভাবে হাট-বাজার, দোকান-পাট থেকে চাঁদা তুলে জীবিকা নির্বাহ করে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে প্রধান সংস্কৃতি ছাড়াও আরও অনেক উপ-সংস্কৃতি রয়েছে যেগুলো বৃহত্তর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

৮. নিলয় তার আমেরিকান বন্ধু রবার্টকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিয়ে যায়। অনুষ্ঠানে গিয়ে রবার্ট নিলয়কে জিজ্ঞেস করে, এগুলো কেন করা হয়? উত্তরে নিলয় বলে, এ অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা বাঙালি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। অনুষ্ঠান উপভোগ করার পর রবার্ট নিলয়কে আমেরিকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানায়। নিলয় তখন উপলব্ধি করে যে, তার বন্ধু শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, ভাষাসহ অনেক ক্ষেত্রেই তার চেয়ে এগিয়ে। 
ক. 'মানবসৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি'- উক্তিটি কার?
খ. বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির ধরন ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরো। 
ঘ. নিলয় ও রবার্টের সংস্কৃতির মধ্যকার পার্থক্যকে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'মানবসৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি'- উক্তিটি করেছেন সমাজবিজ্ঞানী জোনস- Jones.।

খ. উপদানের ভিত্তিতে সংস্কৃতিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি। মানুষ দৈনন্দিন জীবন নির্বাহে বস্তুগত যা কিছু তৈরি ও ব্যবহার করে, তাই বস্তুগত সংস্কৃতি বা Material Culture, যেমন- চেয়ার, টেবিল, জামা-কাপড়, ঘরবাড়ি ইত্যাদি। অন্যদিকে অবস্তুগত সংস্কৃতি বলতে মানুষের ভাবনাজাত বিষয়কে বোঝায়, যা বস্তুগত নয়, বরং তথ্য বা ভাবনা আকারে প্রকাশ পায়। যেমন- জ্ঞান, কৌশল, চিন্তা, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির যে বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। তা নিম্নরূপ সনাতন ধারার কৃষি কাঠামোর আলোকে এবং কৃষি অর্থনীতির সমন্বয়ে বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোক কৃষিজীবী। ফলে খাবার, পোশাক, গ্রামীণ অনুষ্ঠান, বিচারপদ্ধতি, বিবাহ ও পারিবারিক অনুষ্ঠান সবকিছুই কৃষি সম্পর্কিত। এ কারণে হাল, লাঙল, নৌকা, কাস্তে, গরুর গাড়ি, ষাঁড়ের লড়াই, নৌকাবাইচ, জারি সারি এবং ফসল তোলার গান বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সমাজে প্রাধান্য লাভ করেছে।
বাংলাদেশের সমাজে বাসস্থানের অঞ্চলভেদে কাঠামোর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেও ঘর-বাড়ি তৈরির উপাদানগুলো সাদৃশ্যপূর্ণ। সাধারণত বাঁশ, বেত, কাঠ, টিন ও খড়ের সমন্বয়ে ঘর তৈরি হয়। বর্তমানে পাকা ও আধাপাকা ঘরের প্রচলন দেখা যায়।
ভাত, মাছ, বিভিন্ন শাকসবজি, দুধ, ডিম ও তৃণভোজী প্রাণির মাংসই বাঙালির খাবারের তালিকা দখল করে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে পিঠাপুলির সংস্কৃতি অত্যন্ত সুপ্রাচীন।
বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে বাংলাভাষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রেরণার উৎস। ১৯৫২ সালে বাঙালি ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা: প্রাচীন বাংলা হিন্দু অধ্যুষিত সংস্কৃতির ছিল। বর্তমানে এদেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ মুসলমান হলেও সাম্প্রদায়িকতাকে গুরুত্ব না দেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ মানবতাবাদী ও সহমর্মী জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ছাড়া ধর্মনির্বিশেষে আধ্যাত্মিক ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস এদেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, নদীমাতৃক বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির বিনির্মাণে ভৌগোলিক গঠন ও অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যা এদেশের সমাজ ও লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

ঘ. উদ্দীপকের নিলয় ও তার বিদেশি বন্ধু রবার্টের সংস্কৃতির মধ্যে যে পার্থক্য, তাকে সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতা বলা যায়। আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম ফিল্ডিং অগবার্ন তার Social Change গ্রন্থে 'Cultural Lag Theory' বা 'সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্ব' প্রদান করেছেন। এ তত্ত্বে সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতা বলতে দুই বা ততোধিক সংস্কৃতির আলোকে কোনো সংস্কৃতির পিছিয়ে পড়াকে নির্দেশ করে। আর সংস্কৃতির পিছিয়ে পড়া বলতে কোনো দুর্বল বা অনুন্নত অবস্থানকে বোঝায়। যেমন, উদ্দীপকের নিলয়ের সংস্কৃতি তথা বাংলাদেশের সংস্কৃতি তার বিদেশি বন্ধুর সংস্কৃতি থেকে বিভিন্ন অংশে পিছিয়ে আছে।
উদ্দীপকের নিলয়ের সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন অনুষ্ঠান, লোকাচার ইত্যাদি সমৃদ্ধ হলেও শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্যান্য দিক থেকে তার বিদেশি বন্ধুর সংস্কৃতি অনেক এগিয়ে। এই সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে উদ্দীপকের নিলয়ের চেয়ে তার বিদেশি বন্ধু অনেক সহজ ও আধুনিক জীবনযাপন করে। অর্থাৎ সংস্কৃতিগত পশ্চাৎপদতা জীবনকে কষ্টকর ও জটিল করে তোলে।
বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির তুলনায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি বেশ পিছিয়ে আছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা বর্তমান প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ না হয়ে উপায় নেই। শিক্ষার ক্ষেত্রেও আধুনিক বিশ্বের আলোকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। কৃষি ব্যবস্থায় প্রযুক্তির সংস্পর্শ না থাকায় এখানেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া নগরায়ণ, শিল্পায়ন- এসব দিক থেকেও বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনেক পশ্চাতে রয়েছে।

৯. সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বলেন, সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রত্যয়কে মনীষীগণ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেছেন। প্রত্যয়টি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের উক্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে প্রত্যয়টির বহুল উদ্ধৃত সংজ্ঞাটি দিয়েছেন ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ই বি টেইলর। অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিম প্রত্যয়টিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। 
ক. সংস্কৃতি কী?
খ. গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রাধান্য বিদ্যমান- ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের কোন প্রত্যয়ের পরিচয় ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের সমাজজীবনে উক্ত প্রত্যয়ের প্রভাব বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের সমগ্র জীবনাচরণ।

খ. বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রাধান্য রয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ গ্রামের মানুষকে খুব বেশি প্রভাবিত করে। এদেশের শতকরা প্রায় ৮৮ ভাগ মানুষ মুসলমান। বাকিরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদির সম্প্রদায়ের র্ভুক্ত। গ্রামের মানুষ তাদের স্ব স্ব ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলে। তাই গ্রামের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের সংস্কৃতি প্রত্যয়ের পরিচয় ফুটে উঠেছে। কেননা আমরা জানি, সংস্কৃতি প্রত্যয়টিকে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেছেন এবং প্রত্যয়টি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের সংজ্ঞাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উদ্দীপকেও দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে বলেন- সমাজবিজ্ঞানের একটি প্রত্যয়কে মনীষীগণ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করেছেন। প্রত্যয়টি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের উক্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি আরও বলেন, প্রত্যয়টির বহুল উদ্ধৃত সংজ্ঞাটি দিয়েছেন ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ই বি টেইলর; এ বিষয়টিও সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে। কেননা সংস্কৃতি প্রত্যয়টিরও বহুল উদ্ধৃত সংজ্ঞাটি প্রদান করেছেন ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী ই বি টেইলর। আবার সংস্কৃতি প্রত্যয়টিকে অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিম তিন ভাগে ভাগ করেছেন, যা উদ্দীপকে বর্ণিত প্রত্যয়টির সাথেও সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সংস্কৃতি প্রত্যয়ের পরিচয় ফুটে উঠেছে।

ঘ. বাংলাদেশের সমাজজীবনে উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত প্রত্যয় বা সংস্কৃতির প্রভাব ব্যাপক। সংস্কৃতি মানুষকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যেমনত সামাজিক সম্পর্ক নির্ধারণে সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রভাব অনস্বীকার্য। সমাজজীবনে যুগে যুগে সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে উৎপাদন কৌশল বা সাংস্কৃতিক উপাদান ক্রিয়াশীল ছিল। মানুষের অভ্যাস ও রুচিবোধ জাগ্রত এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক উপাদান কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। সমাজজীবনে অর্থব্যবস্থার ওপরও সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রভাব অপরিসীম। কৃষিকাজের সূচনার মাধ্যমে সমাজে যখন স্থিতিশীলতার সৃষ্টি হয় তখন মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসে। আবার যখন শিল্প সমাজের উত্তরণ ঘটে তখন ব্যক্তিগত মালিকানার প্রভাবে অর্থব্যবস্থার উন্নয়নে মানুষ তৎপর হয়ে ওঠে। এর মূল কারণ হিসেবে সাংস্কৃতিক উপাদানই সক্রিয়ভাবে সমাজকে প্রভাবিত করেছে। মানুষের পেশাগত বৈচিত্র্য আনয়নের ক্ষেত্রেও সাংস্কৃতিক উপাদান ক্রিয়াশীল। যুগে যুগে ভিন্ন পেশায় আসার ক্ষেত্রে মানুষকে। সাংস্কৃতিক উপাদান প্রভাবিত করেছে। সামাজিক উন্নয়ন ও গতিশীলতার ক্ষেত্রেও সাংস্কৃতিক উপাদানের গুরুত্ব কম নয়। সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রত্যক্ষ প্রভাবে মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান ধারণায় পরিবর্তন সূচিত হয়। তাছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে মানুষের মধ্যে যে আধুনিক চিন্তা-চেতনার প্রবণতা লক্ষ করা যায় তা মূলত সাংস্কৃতিক উপাদানেরই ফল। উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সমাজজীবনে সংস্কৃতির প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১০. রাতুল সাহেব গ্রামের ছেলে হলেও বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন এবং পেশায় প্রকৌশলী। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামে একটি স্কুল করবেন। স্কুল ভবনের জন্য তিনি নিজেই নকশা তৈরি করে স্কুল ঘরটি নিজ খরচে তৈরি করে দেন। কিন্তু স্কুলে ভালো শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়ার মান নিম্নমুখী।
ক. বস্তুগত সংস্কৃতি কী? 
খ. সমাজ বলতে কী বোঝায়?
গ. রাতুল সাহেবের স্কুলের নকশা কোন সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাতুল সাহেবের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নিম্নমান সংস্কৃতির কোন তত্ত্ব দ্বারা প্রমাণ করা যায়? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বস্তুগত সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের অর্জিত সেইসব গুণগত সাফল্য যার মাধ্যমে প্রধানত বোঝা যায় মানুষ প্রকৃতিকে কতটুকু আয়ত্তে এনেছে।

খ. সমাজ হলো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সামাজিক সংগঠন। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। যখন কিছু সংখ্যক লোক এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য লেনদেন ও ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে় তোলে, তখন তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ওই জটিল অবস্থাকেই বলা হয় সমাজ। ম্যাকাইভার ও পেজ তাঁদের 'Society' নামক গ্রন্থে বলেন, যেসব সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা জীবন ধারণ করি তাদের সংগঠিত রূপই হলো সমাজ।

গ. রাতুল সাহেবের স্কুলের নকশা অবস্তুগত সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে। মানুষের সংস্কৃতি যখন বাস্তব আকারে প্রকাশিত হয় তখন তাকে বস্তুগত সংস্কৃতি বলে। যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। আর বস্তুগত সংস্কৃতির পেছনে ক্রিয়াশীল চিন্তা-ভাবনা, জ্ঞান এবং কলাকৌশলকে অবস্তুগত সংস্কৃতি বলে। অবস্তুগত সংস্কৃতি বলতে মানুষের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা, চাল-চলন, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আবেগ-উচ্ছ্বাস ইত্যাদিকে বোঝায়। এছাড়া মানুষের সব বিমূর্ত সৃষ্টি যেমনত ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, আইন, নীতি, আদর্শ ইত্যাদিকেও অবস্তুগত সংস্কৃতি বলা হয়ে থাকে। কোনো দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ব্যবস্থাবলিও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে।
উদ্দীপকের রাতুল সাহেব একজন প্রকৌশলী। তিনি তার গ্রামে একটি স্কুল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য স্কুল ভবনের জন্য নকশা তিনি নিজেই তৈরি করেন। তার এ স্কুল ভবনের নকশা তৈরি অবস্তুগত সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে। কারণ স্কুল হচ্ছে বস্তুগত সংস্কৃতি। আর স্কুলের জন্য নকশা তৈরি হচ্ছে মানুষের ক্রিয়াশীল চিন্তা-ভাবনা; অবস্তুগত সংস্কৃতির অংশ। সুতরাং বলা যায় রাতুল সাহেবের স্কুলের নকশা অবস্তুগত সংস্কৃতিকে নির্দেশ করছে।

ঘ. রাতুল সাহেবের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নিম্নমান সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্ব দ্বারা প্রমাণ করা যায়।
সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন সংস্কৃতির পশ্চাৎপদতার ব্যবধান তত্ত্ব প্রদান করেছেন। অগবার্নের মতে, নানা ধরনের যান্ত্রিক আবিষ্কারের ফলে দ্রুতগতিতে সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তনটি ঘটছে বস্তুগত সংস্কৃতি যেমন- ঘর-বাড়ি, হাতিয়ার, যন্ত্রপাতি, তৈজসপত্র, কল কারখানার পণ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রে। অপরপক্ষে অবস্তুগত সংস্কৃতি যেমন- ধর্ম, সরকার, পরিবার, শিক্ষা ইত্যাদির ক্ষেত্রে পরিবর্তনটি বস্তুগত সংস্কৃতির তুলনায় খুবই মন্থর। ফলে উভয় সংস্কৃতির মধ্যে ব্যবধানের সৃষ্টি হয়। এই তত্ত্বের মূল কথা হলোত সংস্কৃতির সহযোগী দুটি অংশের মধ্যে একটি কোনো এক সময়ে অন্যটি থেকে দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে পড়ার ফলে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অংশটিকে অগ্রসর অংশটির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। সংস্কৃতির এক অংশের এই পিছিয়ে পড়া এবং সেই অংশের তা কাটিয়ে ওঠার প্রবণতাই হচ্ছে সাংস্কৃতিক ব্যবধান। উদ্দীপকের প্রকৌশলী রাতুল নিজের তৈরিকৃত নকশা দিয়ে গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু স্কুলে ভালো শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়ার মান নিম্নমুখী। এখানে সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের প্রয়োগ সুস্পষ্ট। কারণ স্কুল হচ্ছে বস্তুগত সংস্কৃতি যা অতি সহজেই তৈরি করা যায়। কিন্তু স্কুলে পড়ালেখার মান, ভালো শিক্ষক ইত্যাদি অবস্ত্তগত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত যা বস্তুগত সংস্কৃতির মতো দ্রুত তৈরি করা যায় না। ফলে দুই ধরনের সংস্কৃতির মধ্যে দেখা দেয় অসামঞ্জস্যতা।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রাতুল সাহেবের স্কুল তৈরি এবং স্কুলের লেখাপড়ার নিম্নমান সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post