HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ায় জমির আলী স্থানীয় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। কিন্তু সেখানে পরিশ্রমের তুলনায় বেতন খুব কম। এজন্য শ্রমিকরা সুযোগ পেলেই উৎপাদিত পণ্য চুরি করে বাইরে বিক্রি করে দেয়। তারা জমির আলীকেও নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করে। জমির আলী শ্রমিকদের এমন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলেন, ‘‘আল্লাহ সব দেখছেন। আসুন আমরা চুরি না করে ন্যায্য মজুরির জন্য আনেদালন করি।' শ্রমিকরা তার কথায় সম্মত হয়ে আন্দোলন শুরু করলে মালিক তাদের দাবি মেনে নেন।
ক. মার্কসীয় তত্ত্বানুযায়ী শ্রেণির প্রকৃতি কীসের ওপর নির্ভরশীল?
খ. ভৌগোলিক প্রভাব কীভাবে মানুষের জীবিকা নির্ধারিত করে? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকের শ্রমিকদের আন্দোলন মার্কসের কোন তত্ত্বের ইঙ্গিত বহন করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের জমির আলীর বক্তব্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণের যে বাহনের ইঙ্গিত করে সামাজিক নিয়ন্ত্রণে তার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। 

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মার্কসীয় তত্ত্বানুযায়ী শ্রেণির প্রকৃতি উৎপাদন পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।

খ. জনসাধারণের পেশা ভৌগোলিক প্রভাবে নির্ধারিত হয় এবং তা সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ পাট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। শীতলক্ষ্যার উপকূলে ডেমরা অঞ্চলে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো যে, শীতলক্ষ্যার পানির প্রভাবে এ অঞ্চলের আবহাওয়া তাঁত-সুতার নমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়। ফলে তাঁতিদের সুতিবস্ত্র বয়নে সুবিধা হয়। বাংলাদেশের সিলেটে ও আসামে গড়ে ওঠেছে চা শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমেও মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে, আর এসব শিল্পের উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে ‘ভৌগোলিক পরিবেশ'। 

গ. উদ্দীপকের শ্রমিকদের আন্দোলন মার্কসের শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বের ইঙ্গিত বহন করে।
শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কার্ল মার্কস বলেন, প্রতিটি মানবসমাজ দুটি বিবদমান শ্রেণিতে বিভক্ত। একটি শ্রেণি হলো উৎপাদন উপায়ের মালিক এবং অন্যটি হলো উৎপাদন উপায়ের মালিকানা থেকে বঞ্চিত অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণি। ঠিক এমনিভাবে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজকেও কার্ল মার্কস পুঁজিপতি ও সর্বহারা শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। তিনি মনে করেন, আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজিপতি শ্রেণি কর্তৃক শ্রমিক শ্রেণিকে অত্যধিক শোষণের ফলে এ সমাজে শ্রেণিসংগ্রাম তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ফলে শ্রমিকরা। তাদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে় তোলে।
উদ্দীপকে দেখতে পাই, জমির আলী যে গার্মেন্টসে কাজ করেন। সেখানে শ্রমিকদের মজুরি খুবই কম। তাই জমির আলী শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনের ডাক দেন। জমির আলী ও শ্রমিকদের এই আন্দোলন কার্ল মার্কসের শ্রেণি সংগ্রাম তত্ত্বকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই বলা যায়, জমির আলী ও শ্রমিকদের আন্দোলন মার্কসের শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বকেই নির্দেশ করে।

ঘ. উদ্দীপকের জমির আলীর বক্তব্যটি সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বাহন ধর্মকে ইঙ্গিত করে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি ধর্মেরই সর্বজনীন আবেদন থাকে যা মানুষকে ন্যায়ের পথে এগিয়ে যেতে এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকতে উৎসাহ যোগায়। ধর্মীয় বিধান মানুষকে সৎ, সত্যবাদী, কর্তব্যপরায়ণ, উদার ও পরোপকারী হওয়ার শিক্ষা দেয়। ফলে মানুষ ধর্মীয় প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে অপরাধ ও অন্যায়মুক্ত জীবন গঠনে প্রয়াসী হয়।
ধর্ম মানুষকে নীতি আদর্শ মেনে চলতে একটি নির্দিষ্ট ধারায় পরিচালিত করে। কারণ পৃথিবীতে প্রচলিত প্রায় সব ধর্মেই ইহজগতে সৎকর্মের মাধ্যমে পরজগতে অনন্ত সুখের ধারণা দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে অসৎকর্মের শাস্তির কথাও বলা হয়েছে। ফলে পরজগতে সুখের প্রত্যাশা ও শাস্তির ভয় মানুষকে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করে।
উদ্দীপকের জমির আলী শ্রমিকদের চুরি করা থেকে বিরত করে বলেন, ‘আল্লাহ সব দেখছেন। আসেন আমরা চুরি না করে ন্যায্য মজুরির জন্য আনেদালন করি।' তার এ বক্তব্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহন ধর্মের ইঙ্গিতবহ। তাই এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. কেতুপুরের জেলে পাড়ার সবাই ভাগ্যে বিশ্বাস এবং নতুন ঘর বানানো, জাল বা নৌকা কেনা উপলক্ষ্যে নানা আচার অনুষ্ঠান পালন করে। তারা ছোট ছোট নৌকায় করে সাগরে মাছ ধরতে যায়। কঠোর পরিশ্রমী যুবক কুবির পাড়ার সবাইকে এসব র-অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে একসাথে মিলে বড় নৌকা কিনতে আচার বলে কয়েকদিন পর মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে জেলেপাড়ার পাঁচটি নৌকা ডুবে যায়। জেলে পাড়ার সবাই এজন্য নিজেদের কপালকে দোষ দিতে শুরু করে। কুবির বলে, "কপালের দোষ দিয়া লাভ নাই, সবাই মিল্যা বড় নাও কিনলে আইজ এ দিন দেহন লাগতো না"।
ক. অপরাধ বিজ্ঞানের জনক কে?
খ. ডুর্খেইমের ক্রিয়াবাদ তত্ত্বটি দ্বারা কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
গ. কেতুপুরের জেলেপাড়াটি অগাস্ট কোঁৎ বর্ণিত সমাজ বিকাশের কোন স্তরে অবস্থান করছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, কুবিরের কথায় সংঘ সৃষ্টির মনোভাব ফুটে উঠেছে? মতের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. অপরাধ বিজ্ঞানের জনক এডউইন এইচ. সাদারল্যান্ড।

খ. ক্রিয়াবাদের জনক ডুর্খেইম তার ক্রিয়াবাদের ব্যাখ্যায় সমাজকে জীবদেহের সাথে তুলনা করেন।
একটি জীব বা একজন ব্যক্তিমানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে এবং জীবদেহ বা ব্যক্তিমানুষকে সচল রাখার জন্য তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাদের কর্ম সঠিকভাবে সম্পাদন করলেই ব্যক্তিমানুষ সচল থাকে। তেমনি সমাজেরও থাকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা অংশ। সমাজ সচল থাকে তখনই যখন সমাজের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠানসমূহ ও ব্যক্তিবর্গ নিজ নিজ কর্ম ও দায়িত্ব পালন করে।

গ. উদ্দীপকের কেতুপুরের জেলেপাড়াটি অগাস্ট কোঁৎ বর্ণিত সমাজ বিকাশের ধর্মতাত্ত্বিক স্তরে অবস্থান করছে। 
অগাস্ট কোঁৎ এর সমাজ বিকাশের স্তরগুলোর মধ্যে ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তরটি হলো মানবসমাজের আদিস্তর। এই স্তরে সমাজের ওপর ধর্মীয় প্রভাব বেশি ছিল। ধর্মই হচ্ছে এ স্তরে সমাজ গঠন ও পরিচালনার মূল চালিকা শক্তি। এ ধর্মতাত্ত্বিক স্তরটি মূলত জ্ঞানের প্রাথমিক পর্যায়। যখন মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা ও ধারণা অর্জন করতে পারেনি, সে সময়েই এ জ্ঞানের শুরু। এ স্তরে মানুষের মনে যুক্তিবাদী ধারণার সৃষ্টি হয়নি। অর্থাৎ এ যুগে মানুষ ছিল অদৃষ্টবাদী এবং ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। যেমনটি উদ্দীপকেও লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কেতুপুরের জেলেপাড়ার সবাই ভাগ্যে বিশ্বাস করে এবং নতুন ঘর বানানো, জাল বা নৌকা কেনা উপলক্ষ্যে এসবের স্থায়িত্বের জন্য নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করে। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে জেলেপাড়ার পাঁচটি নৌকা ডুবে গেলে জেলেপাড়ার সবাই এজন্য নিজেদের ভাগ্যকে দোষারোপ করে। অর্থাৎ কেতুপুরের জেলেপাড়াটি পুরোপুরি ধর্ম নিয়ন্ত্রিত। ধর্মতাত্ত্বিক স্তরের মতো তারাও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ধারণা অর্জন করতে পারেনি। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, কেতুপুরের জেলেপাড়াটির অবস্থান অগাস্ট কোঁৎ বর্ণিত সমাজ বিকাশের ধর্মতাত্ত্বিক স্তরে।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপকের কুবিরের কথায় সংঘ সৃষ্টির মনোভাব ফুটে উঠেছে।
সংঘ হলো সমাজে অবস্থিত এক বিশেষ ধরনের গোষ্ঠী। সমাজের সদস্য হিসেবে মানুষ স্বেচ্ছায় একত্রিত হয়ে সমষ্টিগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সম্মিলিত প্রয়াস চালায়। মানুষ যখন এক বা একাধিক নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগঠিত হয় এবং সমবেত প্রচেষ্টাকে সফল করার জন্য কিছু বিধান মেনে চলে তখন সংঘ গড়ে় ওঠে। যেমনত শ্রমিক সংঘ, ক্রিকেট ক্লাব ইত্যাদি। অর্থাৎ সংঘ এমন একটি মানবীয় সংগঠন যা সুনির্দিষ্ট ও অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে গড়ে ওঠে এবং এর সদস্যদের মাঝে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে।
উদ্দীপকে কেতুপুর গ্রামের জেলেপাড়ায় প্রত্যেকে ছোট ছোট নৌকায় সাগরে মাছ ধরতে যায়। যার ফলে নানাভাবে তারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। গ্রামের কঠোর পরিশ্রমী যুবক কুবির এ সমস্যার সমাধানে পাড়ার সবাইকে এক সাথে মিলে বড় নৌকা কিনতে বলে। জেলেপাড়ার সদস্যদের মধ্যে যে অভিন্ন স্বার্থ বিদ্যমান তার ওপর ভিত্তি করেই কুবির তাদের সংগঠিত হবার পরামর্শ দেয়।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, কুবিরের কথায় সংঘ সৃষ্টির মনোভাব ফুটে উঠেছে।

৩. আহসান হাবিব স্যার সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বোর্ডে একটি বিষয়ের কতগুলো বৈশিষ্ট্য লিখলেন। বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছেত ১. সমরূপতা, ২. সর্বব্যাপক, ৩. সর্বজনীন। 
ক. সাম্প্রতিককালে সমাজে সামাজিক গতিশীলতার সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কী? 
খ. ‘‘সামাজিক পরিবর্তনের হার সামাজিক গতিশীলতার সহায়ক বা প্রতিবন্ধক উপাদান হিসেবে কাজ করে’’ বুঝিয়ে লেখো।
গ. বোর্ডে স্যার কোন বিষয়ের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখেছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলি ছাড়া উক্ত বিষয়ের আরও বৈশিষ্ট্য থাকলে তা বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সাম্প্রতিককালে নগরায়ণ, শিল্পায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সমাজে সামাজিক গতিশীলতার সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

খ. সামাজিক পরিবর্তনের হার সামাজিক গতিশীলতার সহায়ক বা প্রতিবন্ধক উপাদান হিসেবে কাজ করে। কেননা বিপ্লবের মতো দ্রুত সামাজিক পরিবর্তনের উপাদান উলম্ব সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। আবার প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সুযোগ যেখানে কম থাকে সেখানে সামাজিক গতিশীলতার সম্ভাবনাও কম থাকে।

গ. উদ্দীপকের আহসান হাবিব স্যার বোর্ডে সমরূপতা, সর্বব্যাপক, সর্বজনীন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। এগুলো সমাজের বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে।
বুৎপত্তিগত অর্থে সমাজ বলতে একত্রে বসবাসকে বুঝিয়ে থাকে। শব্দটি ব্যাপক ও সংকীর্ণ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। ব্যাপক অর্থে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের সমগ্রতাকে সমাজ বলা হয়। আর সংকীর্ণ অর্থে একত্রে পারস্পরিক সম্পর্কসূত্রে এবং বিভিন্ন প্রথা প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়া পদ্ধতিতে আবদ্ধ হয়ে বসবাসকারী একদল মানুষের সমষ্টি বোঝায়। পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমেই সৃষ্ট সামাজিক সম্পর্কই সমাজ সৃষ্টির মূল উপাদান। সে অর্থে পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ এবং সে সম্পর্ক বিষয়ে সচেতন মানবগোষ্ঠীই সমাজ। অন্যদিকে, সমাজ গড়ে় ওঠার ক্ষেত্রে সাদৃশ্য বা সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্নতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ অতএব আমরা বলতে পারি যে, বোর্ডে স্যার সমাজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখেছেন।

ঘ. সমরূপতা, সর্বব্যাপক ও সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য ছাড়াও সমাজের আরও কতগুলো বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। নিচে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হলো।
সমাজ একটি সামাজিক সম্পর্কের ব্যবস্থা, সেহেতু এর বাহ্যিক আকার নেই। এটি হলো অনুভূতির বিষয়। তাই সমাজের আয়তন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। সমাজ সদা পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীলতার ফলেই আদিম সমাজের সাথে বর্তমান সমাজের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সমাজের অভ্যন্তরীণ জনসংখ্যাকে একটি সম্পৃক্ত একক হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।
কার্যক্রমের দিক থেকে সমাজ কতকগুলো বৃহৎ গোষ্ঠীর সমষ্টি, যার মাধ্যমে সমাজের মানুষের মৌলিক সামাজিক চাহিদার পরিপূরণ ঘটে। সমাজ সামগ্রিক কার্যপরিচালনাকারী একক হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। কেননা সমাজে যেমন সহযোগিতা বিদ্যমান, তেমনি দ্বন্দ্বও বিরাজমান। এদের উভয়েরই সহযোগে সমাজ তার কাজ চালিয়ে যায়। সমাজের সদস্যরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল এবং তারা তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে সচেতন। প্রতিটি সমাজেই একটি সাধারণ জীবনপ্রণালি তথা সংস্কৃতি বিদ্যমান। সংস্কৃতির প্রতি সমাজের সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনুগত্য স্বীকার করে। সর্বোপরি প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে সমাজের সদস্যরা সমাজের মধ্যে একাধিক সংঘ ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।

৪. সমাজের অন্তর্ভুক্ত এমন একটি প্রত্যয় সম্পর্কে শ্রেণিশিক্ষক আলোচনা করলেন যা দ্বারা স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত কতকগুলো পদ্ধতিকে বোঝায়। স্যার বিশেষভাবে বললেন যে, মানুষের প্রয়োজনেই প্রত্যয়টির জন্ম হয়েছে। 
ক. কাঠামোগত গতিশীলতা কী? 
খ. জীবনযাপনের রীতি সামাজিক গতিশীলতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ- ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের কোন প্রত্যয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত প্রত্যয়টির বৈশিষ্ট্যসমূহ তালিকা আকারে উপস্থাপন করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. একটি বিশেষ সমাজের পেশাগত কাঠামোগত মৌলিক পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট গতিশীলতাই হলো কাঠামোগত গতিশীলতা।

খ. সমাজের অপেক্ষাকৃত নীচু স্তরের মানুষ অপেক্ষাকৃত উঁচু স্তরে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে উঁচু স্তরভুক্ত ব্যক্তিবর্গের আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি প্রভৃতি জীবনযাপনের রীতি অনুকরণে আগ্রহী হতে পারে। এভাবে ঊর্ধ্বমুখী উলম্ব গতিশীলতা সৃষ্টি হয়। আবার সমাজের উঁচু স্তরের জনগণ যদি সেই স্তরের আচার-আচরণ থেকে বিচ্যুত হয় তাহলে সামাজিক মর্যাদার হানি ঘটে সেক্ষেত্রে অধঃমুখী উলম্ব সামাজিক গতিশীলতার সৃষ্টি হয়।

গ. উদ্দীপকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ প্রতিষ্ঠান হলো স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত কতকগুলো পদ্ধতি। প্রতিষ্ঠান শব্দটি ইংরেজি 'Institution' শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে প্রতিষ্ঠান বলতে সামাজিক সংগঠনকে বোঝায়। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠান শব্দটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করতে গিয়ে মানুষ যে সমস্ত স্থায়ী সংঘ সংগঠন তৈরি করে তা কতকগুলো কার্যপদ্ধতি বা নিয়মবিধি মেনে চলার মাধ্যমে আপন ক্রিয়াকর্ম চালায়। কালক্রমে সামাজিক সংঘসমূহ অনুসৃত এসব কার্যপদ্ধতি বা নিয়মনীতি স্থায়ী রূপ লাভ করলে সেগুলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হয়।
উদ্দীপকে শ্রেণিশিক্ষক সমাজবিজ্ঞানের এমন একটি প্রত্যয়ের কথা বলেছেন যা স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত কতগুলো পদ্ধতিকে বোঝায়। আর এ বিষয়টি পাঠ্যবইয়ে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান প্রত্যয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রত্যয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত প্রত্যয় তথা প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে তালিকা আকারে উপস্থাপন করা হলো:
১. প্রতিষ্ঠান হলো জস্থ ব্যক্তিদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় বিশেষ। 
২. প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনভিত্তিক যৌথ কার্যকলাপের ওপর নির্ভরশীল। 
৩. কতকগুলো প্রতীকী বিষয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা বাস্তব এবং অবাস্তব দুই-ই হওয়া সম্ভব। 
৪. সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপায়সমূহের সাথে তুলনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়িত্ব বেশি।
৫. সমাজস্থ ব্যক্তিদের প্রাথমিক প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন করা হয়।
৬. প্রতিষ্ঠানের সাথে যেসব নিয়মনীতি সংযুক্ত থাকে তা ব্যক্তি মেনে চলতে বাধ্য।
৭. সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে যেমন প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান, তেমনি প্রচলিত প্রথা ও মতবাদের ওপর ভিত্তি করে। কতকগুলো প্রতিবিধানের ব্যবস্থাও বর্তমানে থাকে। 
৮. প্রতিষ্ঠানের রয়েছে কতকগুলো কার্যপ্রণালি যা প্রথা ও ভাবাদর্শের ভিত্তিতে গঠিত হয়।

৫. সীমু তার বাবা-মার সাথে বিদেশে বসবাস করে। সে দেশে এসে ঢাকা মহিলা সমিতির নাট্যমঞে বাবা-মার সাথে নাটক উপভোগ করার সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কর্তৃপক্ষ জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কী? 
খ. আত্মহত্যা কী? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের সীমু ও তার বাবা-মার নাটক উপভোগ করা কোন সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা সভ্যতার উৎকর্ষতাই প্রমাণ করেত বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের যুক্তিসংগত উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি (Scientific Method) বলা হয়।
খ. কোনো ব্যক্তি যদি নিজেই নিজেকে হত্যা করে তখন তাকে আত্মহত্যা বলে।
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানের জনক এমিল ডুর্খেইম-এর মতে, আত্মহত্যা হলো ব্যক্তিগত ঘটনা কিন্তু আত্মহত্যার হার সামাজিক ঘটনা। তিনি বলেন, প্রতিটি মৃত্যু যিনি মারা গেলেন তার দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পাদিত কাজ, যা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক হতে পারে। এরকম কাজের ফলশ্রুতিতে কেউ মারা গেলে সে মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে।

গ. সীমু ও তার বাবা-মার নাটক উপভোগ করা অবস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।
সংস্কৃতির যে অংশ অদৃশ্য তথা উপলব্ধির ওপর নির্ভরশীল তাই অবস্তুগত সংস্কৃতি। আবার যখন সংস্কৃতিকে সাধারণভাবে ব্যাখ্যা ষ করা হয় তখন তাকে মূলত অবস্তুগত সংস্কৃতি বলে। অবস্তুগত সংস্কৃতি বিশেষত মানুষের সহজাত প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটায়। যেমন-মানুষের বিশ্বাস, ভাষা, মূল্যবোধ, গুণাবলি, অভ্যাস, আচার-আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি। আমরা কি করছি, কি অনুভব করছি, কি চিন্তা করছিত সবই অবস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও ধর্ম, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য, রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠনও অবস্তুগত সংস্কৃতির অংশ। অবস্তুগত সংস্কৃতি অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে চলে এবং সহজে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। অবস্তুগত সংস্কৃতির অবদান সাধারণ মানুষ সহজে উপলব্ধি করতে পারে না এবং সংস্কৃতির এই উপাদানটিকে অর্জন করে নিতে হয়। এ ছাড়াও সংস্কৃতি বলতে মানুষের সব বিমূর্ত সৃষ্টিকে বোঝায়। অবস্তুগত উদ্দীপকের সীমু তার বাবা-মার সাথে ঢাকা মহিলা সমিতির নাট্যমঞে নাটক উপভোগ করে। নাটক উপভোগ করা বিমূর্ত বিষয়। তাই সীমু ও তার বাবা-মায়ের নাটক উপভোগ করাকে অবস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা সভ্যতার উৎকর্ষতাই প্রমাণ করেত উক্তিটি যথার্থ।
সভ্যতা বলতে মানব সমাজের উন্নততর অবস্থাকে বোঝায়। এটি হলো সমাজ-সংস্কৃতির অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থার প্রতীক বা অগ্রগতির ফল। সভ্যতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Civilization যা ল্যাটিন শব্দ ঈরারষরবং (অর্থ-নাগরিক) থেকে এসেছে। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশ্লেষণ করলে সভ্যতা বলতে মানব সংস্কৃতির উনণত পর্যায়কে বোঝায়, যে পর্যায়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, সভ্যতা একটি নগরকেন্দ্রিক প্রপঞ্জ (Urbanised Phenomenon)। নগরজীবনের উদ্ভবের সাথে সাথে সভ্যতার উন্মেষ ঘটে। সুপ্রাচীনকালে মানুষ কৃষিকাজ জানত না। ধীরে ধীরে কৃষিকাজ শুরু করল। উদ্ভব হলো নবোপলীয় অর্থনীতির (Neolithic Economy)। তারপর মানুষ নতুন নতুন হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হলো। তারা মৃৎশিল্প, ধাতুবিদ্যা, কৃষি যন্ত্রপাতি, লাঙ্গল, ভার বহনে পশুশক্তির ব্যবহার, ইট, গাড়ি়র চাকা ইত্যাদি তৈরি করতে শিখল। ফলে সমাজ কাঠামোতে পরিবর্তন সাধিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দির পর থেকে উড়োজাহাজ, স্যাটেলাইট, কম্পিউটার, জেনারেটর, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির আবিষ্কার মানব সমাজকে সভ্যতার চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সীমু তার বাব-মার সাথে নাটক উপভোগ করতে ঢাকা মহিলা সমিতির নাট্যমঞ্চে যায়। নাটক উপভোগ করার সময়ে বিদ্যুৎ চলে গেলেও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নাটক চালিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আগে এরূপ কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুৎ চলে গেলে না আসা পর্যন্ত নাটক বন্ধ থাকত। শুধু প্রযুক্তির কল্যাণে ও সভ্যতার উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমেই এরূপ বিকল্প ব্যবস্থা রাখা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা অর্থাৎ, বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবং জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সভ্যতার উৎকর্ষতাই প্রমাণ করে।

৬. ২০১১ সালের আরব বসন্তের প্রভাব পড়া়ছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সিরিয়ায়। ফলে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে ক্ষমতাসীন শাসক বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংস হামলা চালায়। একের পর এক হামলায় ঐ শহরের বহু মানুষ হতাহত হয়। এতে ঐ শহরের অনেক মানুষ নিরূপায় হয়ে পাশের দেশ তুরস্কের উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেয়। তারা যেমন বাস্তুচ্যুত হয় তেমনি তাদের সমাজকাঠামোও পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
ক. 'আমরা বোধ' কী? 
খ. অন্তর্দল ও বহির্দল বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে সিরিয়ার ঘটনায় সমাজবিজ্ঞানের যে বিষয়টি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে সেটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত বিষয়ের উপাদানসমূহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘আমরা বোধ’ হলো এক গভীর পারস্পরিক ঐক্যবোধ।

খ. অন্তর্দল বলতে এমন গোষ্ঠীকে বোঝায় যেখানে ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেমনত পরিবার।
অন্তদলের সদস্যরা একান্ত মধুর সম্পর্কে পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে। আর যে গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো ব্যক্তি সম্পর্কযুক্ত নয় বা তার সদস্য নয় সেটাই ঐ ব্যক্তির কাছে বহির্দল বলে বিবেচিত। যেমনত মোহামেডান ক্লাবের সদস্যরা আবাহনী ক্লাবের সদস্যদের কাছে বহির্দল হিসেবে বিবেচিত হবে।

গ. সিরিয়ার ঘটনায় সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় সমাজকাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। সমাজকাঠামো মূলত একটি বিমূর্ত প্রত্যয়। সমাজকাঠামো বলতে সমাজের গঠনপ্রণালিকে বোঝায়। অর্থাৎ সমাজ কী কী উপাদান দ্বারা কীভাবে গঠিত সেটাই সমাজকাঠামোর মূল বিষয়। সমাজকাঠামোকে সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়। কেননা সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় সমাজ। আবার সমাজ বলতে বস্তুত সমাজের কাঠামোকেই বোঝায়। কারণ কাঠামোর মধ্য দিয়েই সমাজের রূপ প্রকাশ পায়। কার্ল মার্কস সমাজকাঠামোর দুটি ভিত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। যথাত সমাজের মৌল কাঠামো এবং সমাজের উপরিকাঠামো। সমাজের মৌল কাঠামো বলতে কোনো সমাজের অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থা এবং ঐ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন পেশা বা শ্রেণির মানুষের সম্পর্ককে বোঝায়। মৌল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই সমাজের উপরি কাঠামো গড়ে ওঠে। আইনকানুন, দর্শন, রাজনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি হলো উপরি কাঠামোর উদাহরণ বা মৌল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সমাজ কাঠামোর অভ্যন্তরে বসবাসকারী মানুষ একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সমাজ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানলাভ করে থাকে।

ঘ. উদ্দীপকের ভয়াবহ ঘটনা দ্বারা সমাজকাঠামো ভেঙ্গে পড়ার আশংকা করা হয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপক দ্বারা মূলত সমাজকাঠামো সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সমাজকাঠামোর বেশ কিছু উপাদান রয়েছে। যেমনত
সমাজকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পরিবার। মানব শিশু পরিবার থেকে যে আদর্শ ও মূল্যবোধ শিক্ষা লাভ করে তা সমাজকাঠামো সুদৃঢ়করণে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। বিবাহ হলো একটি বিশেষ সামাজিক স্বীকৃতি। যেখানে নারী-পুরুষ বৈধভাবে একে অপরের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন ও সন্তান-সন্ততি জন্মদানের সুযোগ লাভ করে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এবং রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। সেগুলোই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যেমনত আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ ইত্যাদি। যেহেতু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা সেহেতু সমাজকাঠামোর উপাদান হিসেবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনন্য।
সমাজ গঠনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত। সমাজবিজ্ঞানী জিন্সবার্গ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সমাজকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমনত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মক্তব প্রভৃতি সমাজকাঠামোর অন্যতম উপাদান। ব্যাংক, বিমা, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি প্রভৃতি হলো সমাজের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদানে ভাষা মৌলিক ভূমিকা পালন করে। ভাষার মাধ্যমে মানবসমাজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রকাশ পায়। তাই ভাষা সমাজকাঠামোর অন্যতম উপাদান।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সমাজ জীবনকে সচল রাখার জন্যে সমাজে বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যার প্রতিটিই সমাজ কাঠামোর উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

৭. শংকর কুমার সাহা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নারায়ণগঞ্জ শহরে তার বিরাট ব্যবসা। যুগযুগ ধরে তিনি একই ব্যবসায় নিয়োজিত। শংকর সাধারণ মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে শর্মিলাকে বিয়ে করতে চাইলেও শর্মিলার বাবা মেয়েকে শংকরের সাথে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। অথচ শংকরের বন্ধু শহীদ দরিদ্র কৃষকের ছেলে। তিনি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ডাক্তার মাহমুদাকে বিয়ে করেন। শহরে প্রতিষ্ঠিত মাহমুদার বাবা তাদের বিয়েতে আপত্তি করেননি। 
ক. সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল-বিশেষ যা সতত পরিবর্তনশীল'ত উক্তিটি কার? 
খ. সমাজকাঠামো বলতে কী বোঝায়?
গ. শংকর কুমার সাহার পৈতৃক ব্যবসা অবলম্বন জাতিবর্ণ প্রথার কোন বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. 'জাতিবর্ণ প্রথা একটি বদ্ধ ব্যবস্থা আর শ্রেণি উন্মুক্ত' - শংকর ও শহীদের বিয়ের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিশ্লেষণ করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল-বিশেষ যা সতত পরিবর্তনশীল' উক্তিটি আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার-এর।

খ. সমাজকাঠামো বলতে সমাজের ক্রিয়াশীল পূর্বশর্তসমূহকে ঘিরে সৃষ্ট প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর যৌগিক সম্পর্ক ও ভূমিকাকে বোঝায়। প্রত্যেক সমাজেরই একটি সাংগঠনিক আকৃতি বা ধরন থাকে। এই সাংগঠনিক ধরনটি সৃষ্টি হয় সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক সংযোজন ও সহযোগিতা সূত্রে সৃষ্ট বিভিন্ন কাঠামোকে নিয়ে। অর্থাৎ, সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গ পরস্পরের সান্নিধ্যে এসে যে সাংগঠনিক রূপ গড়ে় তোলে তাকেই সমাজকাঠামো বলে।

গ. শংকর কুমারের পৈতৃক ব্যবসা অবলম্বন জাতিবর্ণ প্রথার বংশগত বা পৈতৃক পেশা বৈশিষ্ট্যটিকে নির্দেশ করছে। অতীতে হিন্দুধর্মে ব্যক্তির পেশা নির্ধারিত হতো বর্ণপ্রথা অনুযায়ী। পিতার পেশাই বংশানুক্রমে পুত্র গ্রহণ করত। সেক্ষেত্রে পেশা পরিবর্তন সহজসাধ্য ছিল না। তাছাড়া বর্ণপ্রথাকে শ্রম বিভাজন ব্যবস্থা বলে অনেকে যুক্তি দিয়েছেন এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের সুযোগের কথা বলে বর্ণপ্রথাকে সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছেন।
উদ্দীপকে উল্লিখিত শংকর কুমার সাহা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নারায়ণগঞ্জ শহরে তার বিরাট ব্যবসা। যুগযুগ ধরে তিনি একই ব্যবসায় নিয়োজিত। শংকর কুমার সাহা একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাই হিন্দুধর্মের জাতিবর্ণ প্রথার নিয়ম অনুযায়ী তিনি পৈতৃক পেশাকেই নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বর্ণপ্রথার নিয়ম অনুসারে তিনি সহজে এ পেশা পরিবর্তন করতে পারবেন না। সুতরাং বলা যায়, শংকর কুমার জাতিবর্ণ প্রথার অন্যতম বৈশিষ্ট্য পৈত্রিক ব্যবসার ভিত্তিতে নিজ পেশা গ্রহণ করেছেন।

ঘ. জাতিবর্ণ হলো একটি বদ্ধ ব্যবস্থা আর শ্রেণি হলো উন্মুক্তত শংকর ও শহীদের বিয়ের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হলো কোনো বিশেষ জাতিবর্ণের সদস্য নীতিগতভাবে অন্য কোনো জাতিবর্ণের সদস্য হতে পারেন না। তার জনম এবং মৃত্যু একই জাতিবর্ণের মধ্যেই সীমিত। কিন্তু কোনো বিশেষ শ্রেণির সদস্য স্বীয় প্রচেষ্টায় বা অন্য কোনো উপায়ে কোনো উঁচু বা নিচু শ্রেণিতে পরিণত হতে পারে। যার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকে। শংকর জাতিবর্ণ প্রথার কারণে তার পৈতৃক পেশাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে তার নিজের অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু তার বন্ধু শহীদ দরিদ্র কৃষকের ছেলে হলেও নিজের চেষ্টায় ইঞ্জিনিয়ার হয়। আবার বিয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, শংকর সাধারণ মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে তার বাবা তাতে আপত্তি জানান। কিন্তু শহীদ তার পছন্দের পাত্রী ডাক্তার মাহমুদাক বিয়ে করে। এক্ষেত্রে সে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। অর্থাৎ জাতিবর্ণ প্রথার কারণে শংকর তাদের নিয়ম-নীতির বাইরে যেতে পারে না। কিন্তু শহীদের এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা না। থাকায় সে নিজের ইচ্ছামতো পেশা গ্রহণ ও বিয়ে করতে পারে। সুতরাং বলা যায়, জাতিবর্ণ প্রথা একটি বন্ধ ব্যবস্থা আর শ্রেণি হলো উন্মুক্ত ব্যবস্থা।

৮. মাদারীপুর জেলার টেকেরহাট ইউনিয়নের রাবেয়ার বিয়ের পর তার হাতে দেখা যায় চুড়ি পরা, গায়ে রঙিন শাড়ি আর নাকে ফুল। এছাড়া গুরুজনদের সামনে দেখলে মাথায় ঘোমটা দেন। কিন্তু একই এলাকার বিধবা নারী তুলি দাস একজন গৃহিণী। তার হাতে কোনো চুড়ি নেই এমনকি গায়ে বেশিরভাগই সাদা শাড়ি পরেন। রাবেয়ার বিষয়টি সামাজিক যা নতুন অবস্থার প্রেক্ষাপটে খাপ খাওয়ানো গেলেও তুলি দাসের বিষয়টি সমাজে অবশ্য পালনীয় রীতি বলে মনে করা হয়।
ক. সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় কোনটি? 
খ. লোকরীতির যেকোনো একটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনা দুটি সমাজবিজ্ঞানের কোন কোন বিষয়সমূহকে ইঙ্গিত করেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের উক্ত বিষয় দুটির মধ্যে যেসব পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তা বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হচ্ছে সমাজকাঠামো।

খ. লোকরীতির কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য হলো- অবশ্য পালনীয় লোকরীতি অপেক্ষাকৃত অনড়। লোকরীতি অনেক সময় সমাজের রক্ষণশীল উপাদানে পরিণত হয়। এ কারণে দেখা যায়, সমাজ যতোই আধুনিক হোক না কেন, কিছু লোকরীতি পালনের সময় মানুষ সবসময়ই কঠোর অবস্থান নেয়। যেমনত পরকীয়ায় জড়ানোর বিষয়টি প্রায় সব সমাজেই পরিত্যাজ্য হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে সমাজের অবস্থান অনড়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনা দুটি সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম দুটি প্রত্যয় লোকাচার ও লোকরীতিকে ইঙ্গিত করেছে।
লোকাচার বলতে আচরণের গোষ্ঠীগত অভ্যাস প্রথাকে বোঝানো হয়। কোনো সমাজের দৈনন্দিন জীবনের আচার-আচরণের স্বীকৃত ধারণাগুলোকেই সমাজের লোকাচার বলা হয়। উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, রাবেয়া বিয়ের পর হাতে চুড়ি, নাকে ফুল আর শাড়ি পড়ে। এছাড়া গুরুজনদের দেখলে মাথায় ঘোমটা দেয়। এ আচরণগুলো আমাদের সমাজে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এ ধরনের আচরণ আমরা সমাজের নিয়ম অনুযায়ী পালন করে থাকি। কিন্তু এ সকল আচরণ অবশ্য পালনীয় নয়। অর্থাৎ এ বিষয়টি আমরা লোকাচার হিসেবে অভিহিত করতে পারি।
লোকরীতি আচরণের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিবেচিত হয়। লোকরীতি পালন সম্বন্ধে সমাজ অত্যন্ত কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে। কোনো ব্যক্তি এরূপ নীতি লঙ্ঘন করলে কেবল নিন্দিত হয় না, শাস্তিও পায়। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকের বিধবা নারী তুলি দাসের ক্ষেত্রে। বিধবা হওয়ার কারণে তাকে সর্বদা শাড়ি পরতে হয়। এছাড়া যে কোন সাজসজ্জা অথবা অলঙ্কার পরতে পারে না। আর এ বিষয়টি সমাজ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে সমাজে তাকে নিন্দিত হতে হবে অথবা শাস্তিও পেতে পারেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি, তুলি দাসের ক্ষেত্রে লোকরীতির প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত বিষয় তথা লোকাচার ও লোকরীতির মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
লোকাচার মূলত গোষ্ঠীর অভিভাবক হিসেবে কাজ করে না। পক্ষান্তরে লোকরীতি মূলত গোষ্ঠীর অভিভাবকের কাজ করে। থাকে। লোকাচার পালন সম্বন্ধে সমাজের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায় না। অপরপক্ষে লোকরীতি পালন সম্বন্ধে সমাজ অত্যন্ত কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে থাকে। লোকাচার বলতে আচরণের গোষ্ঠীগত অভ্যাস ও প্রথাকে বোঝানো হয়। পক্ষান্তরে লোকরীতি বলতে আচরণের অবশ্য পালনীয় রীতি ও বিধিবদ্ধ প্রথাসমূহকে বোঝায়। লোকাচার মানব চরিত্র নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। অন্যদিকে লোকরীতি মানব চরিত্র নিয়ন্ত্রণে এক সামাজিক শক্তি হিসেবে কাজ করে। লোকাচার সাধারণত সমাজের মানুষের সমষ্টিগত কল্যাণের ওপর বিশেষ কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। পক্ষান্তরে লোকরীতির মাধ্যমে সমাজের মানুষ তাদের আচরণকে সমষ্টিগত কল্যাণের দিক থেকে বিবেচনা করার প্রয়াস পায়। কোনো গোষ্ঠীর জীবনের প্রয়োজনে লোকাচারগুলো অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয় না। কিন্তু লোকরীতিকে গোষ্ঠীর জীবনে অপরিহার্য বলে মনে করা হয়।
উপরের পার্থক্যসমূহের আলোকে বলা যায় যে, লোকাচার ও লোকরীতির মধ্যে বিভিন্ন মাত্রাগত পার্থক্য বিদ্যমান থাকলেও উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতার দিকও পরিলক্ষিত হয়।

৯. দিনাজপুর জেলার বাতিসা গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি বন্যার পানির প্রবল চাপে ভেঙ্গে গেলে গ্রামবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বাঁধটি রক্ষা হয়। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্রামের কয়েকজন তরুণ গ্রামের নারীদের মুষ্টিবদ্ধ চাল এবং কিছু সরকারি অনুদান নিয়ে ‘রংধনু' নামে একটি সংগঠন গড়ে় তোলে। যার উদ্দেশ্য বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাঁধের দু'পাশে সামাজিক বনায়ন করা। এটি গ্রামের সর্বমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ক. প্রাথমিক গোষ্ঠীর একটি উদাহরণ দাও। 
খ. ধর্ম একটি প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে গ্রামের তরুণদের উদ্যোগ সমাজবিজ্ঞানের কোন মৌল প্রত্যয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তরুণদের এ ধরনের উদ্যোগ তাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে বলে তুমি মনে কর? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. প্রাথমিক গোষ্ঠীর একটি উদাহরণ হচ্ছে পরিবার।

খ. সমাজে যে সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ধর্ম।
প্রতিষ্ঠান যেমন মানুষের বহুমুখী সামাজিক স্বীকৃত বিধিব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন ও কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে তেমনি ধর্মও মানুষের আচার-আচরণ, ন্যায়নীতি, পাপ-পুণ্য, অনুষ্ঠান পালন, পার্থিব ও পরলৌকিক জ্ঞান ইত্যাদি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত। তাই বলা যায় যে, ধর্মও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ন্যায় একটি প্রতিষ্ঠান।

গ. বাতিসা গ্রামের তরুণদের উদ্যোগ সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম মৌল প্রত্যয় সংঘকে নির্দেশ করছে।
মানুষ যখন এক বা একাধিক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগঠিত হয়ে কিছু স্বীকৃত নিয়ম-কানুন অনুসারে পরিচালিত হয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করে তখন তাকে সংঘ বলে। বস্তুত সংঘের মাধ্যমে সমাজের সদস্যবৃন্দ স্বেচ্ছায় একত্রিত হয়ে সমষ্টিগত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সম্মিলিত প্রয়াস চালায়। আবার লক্ষ্য অর্জনের পর তারা সংগঠিত থাকতেও পারে কিংবা নাও থাকতে পারে।
উদ্দীপকের বাতিসা গ্রামের তরুণরা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি রক্ষা করে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্রামের তরুণরা 'রংধনু' নামে সংগঠন গড়ে তোলে। যার উদ্দেশ্য বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সামাজিক বনায়ন করা। 'রংধনু' সংগঠনটির প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যায় যে, সংগঠনটি সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম মৌল প্রত্যয় সংঘের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত তরুণদের উন্নয়নমূলক সংঘ 'রংধনু' বাতিসা গ্রামবাসী তথা জনগণের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে বলে আমি মনে করি। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার সংঘের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘এক বা একাধিক সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগঠিত দলই হচ্ছে সংঘ।’’ এ দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দীপকের 'রংধনু' সংগঠনটির মতো কোনো যুব সমিতি, রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠিত অপরাধী চক্রকে সংঘ বলা যায়। যেহেতু সংঘের সদস্যরা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনে একত্রিত হয় সেহেতু উদ্দেশ্যের ধরন অনুযায়ী তা সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উদ্দীপকের ‘রংধনু’ সংঘের সদস্যরা সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য একত্রিত হয়েছে। তরুণদের এ ধরনের কর্মকান্ড তাদের এবং গ্রামবাসীর ওপর নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে সংঘটির সদস্য ও গ্রামবাসীদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, যেহেতু তরুণরা 'রংধনু' সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গ্রামের নারীদের সহায়তা নিয়েছে সেহেতু নারীদের প্রতি সমাজে বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং সামাজিক ও জেন্ডার বৈষম্য অনেকাংশে কমে যাবে। সর্বোপরি সংগঠনটির উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উদ্দীপকের ‘রংধনু' নামক সংঘটি গঠিত হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা গেলে সংঘটির তরুণ সদস্যবৃন্দ এবং গ্রামবাসীর ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।

১০. সিলেট সদর উপজেলার কুমোরগাঁও এলাকায় অধিবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে একটি খালের উপর ২০ ফুট দীর্ঘ একটি কালভার্ট নির্মাণ করেছে। এলাকাবাসীর সংহতিবোধ এটি নির্মাণে মনোবল জুগিয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নারী-পুরুষ উক্ত কাজে অংশগ্রহণ করে। তাদের এই উদ্যোগ সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। 
ক. লোকরীতি কী?
খ. আনুভূমিক এবং উলস্নম্বী গতিশীলতা বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কুমোরগাঁও এলাকার লোকজনকে কোন নামে আখ্যায়িত করা যাবে? সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কুমোরগাঁও এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে গড়ে উঠা বিষয়টির সাথে সমাজ প্রত্যয়টির পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. লোকরীতি হচ্ছে সমাজের আদর্শ বা মানসম্পন্ন আচরণ যা সমাজের সদস্যদের জন্য অবশ্যপালনীয়।

খ. সামাজিক গতিশীলতাকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-
আনুভূমিক ও উলম্ব সাধারণত এক সামাজিক পরিমন্ডল থেকে অন্য সামাজিক পরিমন্ডলে একই সামাজিক স্তরের ব্যক্তির স্থায়ী গমনকে আনুভূমিক গতিশীলতা বলে। আর উলম্বী গতিশীলতা হচ্ছে শ্রেণিবিন্যাসের উঁচু অথবা নিচু অবস্থানে গমন করা।

গ. কুমোরগাঁও এলাকার লোকজনকে সম্প্রদায় নামে আখ্যায়িত করা যাবে।
সম্প্রদায় হচ্ছে কোনো ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে বসবাসকারী জনসাধারণ, যাদের পারস্পরিক স্বার্থের দিক দিয়ে যথেষ্ট মিল রয়েছে। এদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক দিয়ে পারস্পরিক নির্ভরশীল। সম্পর্ক বিদ্যমান এবং যারা এমন কতকগুলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অধিকারী যেগুলো তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। সম্প্রদায়ের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো-এর আওতায় ব্যক্তি সম্পূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। সম্প্রদায়ের উদাহরণ হিসেবে গ্রাম, শহর, জাতি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই কুমোরগাঁও এলাকার অধিবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে একটি খালের ওপর কালভার্ট নির্মাণ করেছে। এলাকাবাসীর সংহতিবোধ এটি নির্মাণে মনোবল জুগিয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নারী-পুরুষ কাজে অংশগ্রহণ করেছে। কুমোরগাঁও এলাকার লোকেরা একই অঞ্চলে বসবাস করে এবং তাদের মধ্যে সংহতি বোধ প্রবল, যা সম্প্রদায়ের ধারণাকেই নির্দেশ করে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, কুমোরগাঁও এলাকার লোকজন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. কুমোরগাঁও এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে গড়ে ওঠা বিষয়টি হচ্ছে সম্প্রদায়। প্রকৃতিগত, মাত্রাগত ও বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।
সমাজ বলতে এমন এক জনগোষ্ঠীকে বোঝায় যেখানে মানুষ দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। অন্যদিকে, সম্প্রদায়ের সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাস করে। তারা তাদের জীবনের মৌল ও সাধারণ স্বার্থগুলো একই সাথে ভোগ করে এবং একই আচার-আচরণ তথা জীবনপ্রণালিতে অভ্যস্ত হয়। একটি সমাজে অনেকগুলো সম্প্রদায় থাকতে পারে। তাই সমাজের পরিধি ব্যাপক। পক্ষান্তরে, সম্প্রদায়ের পরিধি সমাজের চেয়ে ক্ষুদ্র। কেননা সম্প্রদায় সমাজের একটি অংশ। সমাজে বিভিন্ন ধর্মের লোক থাকতে পারে। যেমনত মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, সম্প্রদায় শুধু একটি জনগোষ্ঠীকে নির্দেশ করে। যেমন- মুসলিম সম্প্রদায়, হিন্দু সম্প্রদায় ইত্যাদি। মানুষের একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংঘবদ্ধভাবে সমাজ গড়ে উঠে। অন্যদিকে, জীবনের মৌল ও সাধারণ স্বার্থগুলো একই সাথে ভোগ করার জন্য সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। সমাজের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক সহযোগিতা ও দলবদ্ধভাবে বসবাস করার প্রবণতা। পক্ষান্তরে, সম্প্রদায়ের ভিত্তি হচ্ছে এলাকা ও সম্প্রদায়গত মানসিকতা। সমাজের ক্ষেত্রে জনসমষ্টিকে নির্দিষ্ট এলাকার অধিবাসী হতে হয় না। অন্যদিকে, সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে জনসমষ্টিকে অবশ্যই নির্দিষ্ট ভূখন্ডের অধিবাসী হতে হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post