HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. চৌদ্দ শতকের একজন মুসলিম মনীষী ও ইতিহাসবেত্তা সর্বপ্রথম মানুষ সম্পর্কে একটি বিজ্ঞানের অভাব বোধ করেন। তিনি সামাজিক সংহতি বা গোষ্ঠী সংহতিকে গুরুত্বের সঙ্গে ব্যাখ্যা করেন। ঊনিশ শতকে আরো একজন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী সমাজতাত্ত্বিক চিন্তার মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে সহায়তা করেন। তার চিন্তার মূল বিষয় ছিল সামগ্রিক ঘটনা, যার মাধ্যমে তিনি মানুষের শ্রমবিভাজন, আত্মহত্যার ব্যাখ্যা করেন। এভাবে সমাজবিজ্ঞানীদের বিভিন্ন অবদানের ভিত্তিতে আজ সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। 
ক. দৃষ্টবাদের জনক কে?
খ. আদর্শ নমুনা কী? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মানুষের শ্রম বিভাজন ও আত্মহত্যাতত্ত্ব কোন সমাজবিজ্ঞানীর? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মুসলিম মনীষীর সমাজবিজ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে অবদানকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করবে? যুক্তি উপস্থাপন করো। 

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. দৃষ্টবাদের জনক ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ।

খ. জার্মান দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের সমাজ বিশ্লেষণের পদ্ধতি হলো আদর্শ নমুনা।
ওয়েবারের মতে, কোনো সামাজিক প্রপঞ্চ কিংবা ঐতিহাসিক সত্তাকে জানতে বা বিশ্লেষণ করতে হলে তার আদর্শ নমুনা তৈরি করতে হবে। আর এ নমুনা তৈরির জন্য বিজ্ঞানীকে অন্তর্দৃষ্টির আশ্রয় নিতে হবে। বিশেষ করে একটি প্রপঞ্চের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও যৌক্তিকতাকে আদর্শ ধরে নিয়ে অন্য প্রপঞ্চকে তার সাথে মিল বা অমিলের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। ম্যাক্স ওয়েবারের ‘আদর্শ নমুনা' সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির প্রবর্তন। তিনি আমলাতন্ত্রকে ‘আদর্শ নমুনা' তত্ত্বের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করেছেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মানুষের শ্রমবিভাজন ও আত্মহত্যাতত্ত্ব ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমের।
উনিশ শতকের অন্যতম সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম তার ‘‘The Division of Labour in Society' গ্রন্থে আধুনিক শিল্পসমাজে শ্রমবিভাজনের অস্বাভাবিক রূপ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি এর দু'টি প্রধান অস্বাভাবিক রূপকে চিহ্নিত করেন। এগুলো হলো, নৈরাজ্যমূলক এবং বাধ্যতামূলক শ্রমবিভাজন। নৈরাজ্যমূলক শ্রমবিভাজনটি শ্রমের চরম বিশেষীকরণের ফল। এক্ষেত্রে ব্যক্তি তার বিশেষীকৃত কর্মক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে বাধ্যতামূলক শ্রমবিভাজন হলো এমন একটি অবস্থা, যাতে ব্যক্তি তার পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের সুযোগ পায় না। ফলে বাধ্যতামূলকভাবে তাকে যেকোনো একটি বৃত্তি গ্রহণ করতে হয়। ডুর্খেইম বলেন, ব্যক্তির যোগ্যতাকে অস্বীকার করে এভাবে তার ওপর শ্রম চাপিয়ে দেওয়া সামাজিক সংঘাতের মূল কারণ।
এমিল ডুর্খেইম তার 'The Suicide' গ্রন্থে আত্মহত্যা সম্পর্কে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, আত্মহত্যা হলো ব্যক্তিগত ঘটনা কিন্তু আত্মহত্যার হার সামাজিক ঘটনা। কারণ আত্মহত্যা ঘটনাবলির পরিসংখ্যান গ্রহণ এবং এর পরিমাণও নিরূপণ করা যায়। ফলে এটি কেবল আত্মহত্যা হিসেবেই বিবেচ্য থাকে না, বরং তা সামাজিক ঘটনায় পরিণত হয়। ডুর্খেইম আত্মহত্যাকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথা- আত্মকেন্দ্রিক, পরার্থমূলক এবং নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, উদ্দীপকে উনিশ শতকের অন্যতম পথিকৃৎ সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম প্রদত্ত শ্রমবিভাজন ত্মহত্যাতত্ত্বের উল্লেখ রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মুসলিম মনীষী হচ্ছেন ইবনে খালদুন। খালদুন ১৩৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিউনিসের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ জন্মসাল অনুযায়ী তিনি চৌদ্দ শতকের মনীষী। এছাড়া ইবনে খালদুনই সর্বপ্রথম মানুষ সম্পর্কে একটি বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব এবং সামাজিক বা গোষ্ঠী সংহতিকে ব্যাখ্যা করেন, যেমনটা উদ্দীপকে বলা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে আমি ইবনে খালদুনকে পথিকৃৎ দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে মূল্যায়ন করব।
ইবনে খালদুন বিশ্বের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে ‘কিতাবুল ইবার' নামে যে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন তার ভূমিকা ‘আল-মুকাদ্দিমা' নামে পরিচিত। এ গ্রন্থটিতে তিনি তার সমসাময়িককালের ইতিহাসবেত্তাদের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইবনে খালদুন বুঝতে পেরেছিলেন, শুধু রাজনৈতিক ঘটনার নিছক বর্ণনা ইতিহাসের বিষয়বস্তু হতে পারে না। তাই তিনি রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। এজন্য ইবনে খালদুন একটি নতুন বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। এ নতুন বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ও পদ্ধতি হবে সুনির্দিষ্ট, যা সত্যিকারের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস রচনায় সাহায্য করবে। ইবনে খালদুন তার এ নতুন বিজ্ঞানের নাম দেন ‘আল-উমরান' বা সংস্কৃতির বিজ্ঞান। এ বিজ্ঞান সব ধরনের মানব প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি, প্রকৃতি ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করবে। ইবনে খালদুন প্রদত্ত 'আল-উমরানকে সমাজবিজ্ঞান বলা যেতে পারে। কারণ মানবসমাজই এ বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। এছাড়া 'আল আসাবিয়া' ইবনে খালদুনের সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার কেন্দ্রীয় প্রত্যয়। 'আসাবিয়া' প্রত্যয়টির অর্থ হলো সামাজিক বা গোত্র সংহতি। ইবনে খালদুনের মতে, সমাজের ভিত্তি হচ্ছে গোত্র সংহতি। সমাজ সম্পর্কে তার এ চিন্তাধারা পরবর্তীকালে পৃথক শাস্ত্র হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছিল। এ কারণেই মহান এই মুসলিম মনীষীকে সমাজবিজ্ঞানের 'আদি জনক' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পরিশেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের মূলভিত্তি রচনায় ইবনে খালদুনের অবদান অপরিসীম।

২. নটরডেম কলেজের ছাত্র রণদীপ সমাজবিজ্ঞান পড়তে গিয়ে মধ্যযুগের তিউনিসে জন্মগ্রহণ করা একজন মুসলিম দার্শনিকের তত্ত্ব পড়ে আকৃষ্ট হয়। সমাজের উত্থান-পতন সম্পর্কে সে এই দার্শনিকের তত্ত্বকেই সঠিক এবং অভ্রান্ত মনে করত। একদিন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সিফাত তাকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক হিসেবে বিখ্যাত জনৈক জার্মান দার্শনিকের সমাজের বিকাশ সম্পর্কিত তত্ত্ব বুঝিয়ে দেয়। তত্ত্বটি জানার পর রণদীপ সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে।
ক. 'সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল'- উক্তিটি কোন সমাজবিজ্ঞানীর?
খ. সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সমাজের বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
গ. সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে উদ্দীপকে নির্দেশিত মুসলিম দার্শনিকের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'উদ্দীপকে নির্দেশিত জার্মান দার্শনিকের তত্ত্ব অনুসারে রণদীপ সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে।' - উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। 

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল’ - উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের।

খ. সামাজিক পরিবর্তনে সমাজের বিশিষ্ট চিন্তাবিদেরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।
যুগে যুগে বিভিন্ন সমাজে এমন মহৎ ব্যক্তি জন্ম নেন যারা যুগসন্ধিক্ষণে বা দেশের সংকটময় মুহূর্তে তাদের চিন্তাচেতনা, বিবেক, মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এসব ক্ষণজন্মা ব্যক্তিরা শুধু নিজের দেশকেই আলোকিত করেন না বরং পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার চেষ্টা করেন। যেমন মহাত্মা গান্ধী, স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, এ. কে. ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ ব্যক্তিগণ সমাজের ক্ষণজন্মা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম।

গ. উদ্দীপকে মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুনের কথা বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিক, সমাজ দার্শনিক ইবনে খালদুনের জন্ম তিউনিসে। সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে তাকে পথিকৃৎ দার্শনিক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কারণ সমাজবিজ্ঞানের ধারণা তার সময় অস্পষ্ট ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মানুষের সমাজ ও তার সভ্যতা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অর্জিত উন্নতিকে এক অবিচ্ছিন্ন সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে 'Umran' ধারণাটি ব্যবহার করেন। 'Umaranayat' শব্দের অর্থ "সংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনা', যা পরবর্তীকালে সমাজবিজ্ঞানীরা ‘সমাজবিজ্ঞান' হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইবনে খালদুন রচিত বিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ ‘কিতাব-আল-ইবার’ এর ভূমিকা 'আল-মুকাদ্দিমা’তে সমাজ, সভ্যতা ও ইতিহাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। তিনি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও যুক্তির আলোকে ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিলেন যা পরে এক ধরনের সামাজিক দর্শনে পরিণত হয়। সমাজ সম্পর্কে ইবনে খালদুনের এসব চিন্তাধারা পরবর্তীকালে পৃথক শাস্ত্র হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছিল। উদ্দীপকের ছাত্র রণদীপ সমাজবিজ্ঞান পড়তে গিয়ে মধ্যযুগের তিউনিসে জন্মগ্রহণ করা একজন মুসলিম দার্শনিকের তত্ত্ব পড়ে আকৃষ্ট হয়। সমাজের উত্থান-পতন সম্পর্কে সে এই দার্শনিকের তত্ত্বকেই সঠিক ও অভ্রান্ত বলে মনে করত। উপরের আলোচনায় স্পষ্ট যে রণদীপ যে মুসলিম দার্শনিকের তত্ত্ব পাঠ করেছিল তিনি হচ্ছেন দার্শনিক ইবনে খালদুন। সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশে তার ভূমিকা অপরিসীম।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত জার্মান দার্শনিক অর্থাৎ কার্ল মার্কসের তত্ত্ব অনুসারে রণদীপ সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ সম্পর্কে নতুনকরে ভাবতে শুরু করে বলে আমি মনে করি। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিক কার্ল মার্কসের সামাজিক বিবর্তনের ধারণার ভিত্তি দ্বানি্দ্বক বস্তুবাদ। এ দ্বানি্দ্বক বস্তুবাদের মূল কথা হলো সব বস্তু বা প্রপঞ্চের বিকাশ ঘটে দ্বনে্দ্বর মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ সমাজ পরিবর্তনও দ্বনে্দ্বরই ফল। মার্কস এর মতে একটি প্রচলিত সমাজব্যবস্থার (Thesis) সাথে দ্বন্দ্ব চলে এ ব্যবস্থার বিরোধীদের (Anti-Thesis) এবং ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ নতুন একটি সমাজব্যবস্থার সৃষ্টি হয় (Synthesis)। এ Synthesis ও সময়ের পরিক্রমায় ঞযবংরং এ পরিণত হয় এবং অহঃর-ঞযবংরং এর মাধ্যমে পুনরায় আরেকটি Synthesis-এর জন্ম হয়। এভাবে দ্বানি্দ্বক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি, বস্তু বা সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ ও পরিবর্তন ঘটে।
অন্যদিকে সমাজের উত্থান-পতন সম্পর্কে মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুন ভিন্ন মত পোষণ করতেন। তিনি মনে করতেন সমাজ সদা পরিবর্তনশীল এবং এই পরিবর্তন ঘড়ির কাঁটার নিয়ম মেনে চলে। তিনি রাষ্ট্রের আয়ুষ্কাল সম্পর্কে বলেন যে, রাষ্ট্র টিকে থাকার তিনটি পর্যায় বিদ্যমান। প্রতিটি পর্যায় ৪০ বছর ধরে সর্বমোট ১২০ বছর পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে। উদ্দীপকের রণদীপ সমাজের উত্থান-পতন সম্পর্কে ইবনে খালদুনের এ মতকেই সঠিক বলে মনে করত। পরবর্তীতে সে কার্ল মার্কসের সমাজের বিকাশ সম্পর্কিত তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে পারে। যার ফলে সে নতুন করে ভাবতে শুরু করে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জার্মান দার্শনিক মার্কসের তত্ত্ব সম্পর্কে অবগত হয়ে রণদীপ সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করে।

৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মাসুদ, মনোবিজ্ঞানের রায়হান, সমাজকর্মের সুকন্যা এবং অর্থনীতি বিভাগের সুমিত্রা টিএসসির মাঠে বসে নিজেদের পাঠ্যবিষয়ের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করছিল। এমন সময় তাদের সিনিয়র ভাই অর্ণব এসে আলোচনায় যোগ দিয়ে বললেন, তোদের সবার পাঠ্যবিষয়ের সাথে আমার পাঠ্যবিষয়ের সম্পর্ক আছে। তোদের সবার বিষয় সমাজের এক একটি অংশ নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু আমার বিষয় সমাজের সব বিষয় নিয়ে গবেষণা করে। সুকন্যা অর্ণবের কথা শুনে বলল, তা আছে বটে। আবার দেখেন ভাই, আপনি যে জার্মান দার্শনিকের মতাদর্শ অনুসরণ করে সাম্যবাদের স্বপ্ন দেখেন আমরাও তার মতাদর্শেই চলি।
ক. সামাজিক শ্রেণি কী?
খ. অপরাধ প্রতিরোধে সুষ্ঠু চিত্তবিনোদন ব্যবস্থার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
গ. অর্ণবের পাঠ্যবিষয়ের সাথে সুকন্যার পাঠ্যবিষয়ের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা কোন মতাদর্শ অনুসরণ করে বলে তুমি মনে কর? যুক্তি সহকারে বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক শ্রেণি হচ্ছে এক একটি বাস্তবগোষ্ঠী, যাদের আইনানুগ ও ধর্মীয়ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।

খ. সুষ্ঠু চিত্তবিনোদন মনকে উৎফুল্ল রাখার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
দেশে সুষ্ঠু চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা না থাকলে মানুষ বিভিন্ন অনাকাঙি্ক্ষত কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। চিত্তবিনোদনমূলক কার্যকলাপের অভাবে বিশেষ করে যুবসম্প্রদায় ও কিশোররা নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। যেমন- চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ ইত্যাদি। এসব অপরাধকে প্রতিরোধ করতে হলে অন্যান্য নিয়ন্ত্রণমূলক কাজের পাশাপাশি সুষ্ঠু চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকের অর্ণবের পাঠ্যবিষয় সমাজবিজ্ঞানের সাথে সুকন্যার পাঠ্যবিষয় সমাজকর্মের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সমাজবিজ্ঞান এবং সমাজকর্ম উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক উভয় বিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয়। সমাজকর্ম বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম পরিবার, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, পরিবার, বিবাহ সম্পর্ক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান এগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও গবেষণা করে। আবার সমাজকর্মের লক্ষ্য সমাজের মানুষের ভূমিকা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান Applied Sociology এর মাধ্যমে সমাজের মানুষের সমস্যার সমাধান করে সার্বিক কল্যাণে কাজ। করে। সমাজকর্মের একটি অন্যতম জ্ঞানের উৎস সমাজবিজ্ঞান।
সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব সমাজকর্মে ব্যবহৃত হয়। আবার সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় অনেক সময় সমাজকর্মের জ্ঞানের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। যেমন- সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও তার কার্যকারণ আলোচিত হয়। এগুলো আবার সমাজকর্মের উপাদান হিসেবে কাজ করে।
পরিশেষে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠ ও তত্ত্বনির্ভর জ্ঞান ছাড়া সমাজকর্মীদের পক্ষে সামাজিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই বলতে পারি সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম পারস্পর সম্পর্কিত ও নির্ভরশীল।

ঘ. উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কসের সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ অনুসরণ করে বলে আমি মনে করি।
সমাজতন্ত্র সম্পর্কিত রাজনৈতিক ধারণাটি তুলনামূলকভাবে আধুনিক। সাধারণ ও ব্যাপক অর্থে সমাজতন্ত্র বলতে বোঝায় এমন এক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যার মূল কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো সাম্য ও ন্যায়, ব্যক্তি অধিকার সংরক্ষণ, সুপরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র এবং শ্রমজীবী শ্রেণির প্রাধান্য ইত্যাদি। মার্কসীয় ধারণানুযায়ী সমাজতন্ত্র হলো ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও পূর্ণ সাম্যবাদের মধ্যবর্তী এক অবস্থা। এই অবস্থায় সাধারণত শাসন যন্ত্ররূপে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকে এবং উৎপাদন ব্যবস্থা একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত হয়।
সমাজতন্ত্রকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মার্কস পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় রূপান্তরের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেন, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের পর ব্যক্তিগত মালিকানা অর্থাৎ পুঁজিবাদের বিলোপ হবে। কিন্তু সেখানে শ্রেণি শোষণের সম্পূর্ণ অবসান হবে না। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ক্রমশ সাম্যবাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে এবং শুধুমাত্র সাম্যবাদী সমাজেই শ্রেণি এবং শ্রেণি শোষণের অবসান হবে।
উদ্দীপকের সুকন্যা অর্ণবকে বলে, আপনি যে জার্মান দার্শনিকের মতাদর্শ অনুসরণ করে সাম্যবাদের স্বপ্ন দেখেন, আমরাও তার মতাদর্শে চলি। এখানে সুকন্যার বক্তব্যে কার্ল মার্কস ও তার সমাজতান্ত্রিক মতবাদের দৃশ্য ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ অনুসরণ করে।

৪. রাকিব রতনপুর গ্রামের লোকদের জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে যে, অতীতে তাদের সমাজ ধর্মগুরুদের দ্বারা পরিচালিত হতো। ধর্মীয় নেতা যেভাবে তাদের জীবনযাপন করতে বলতো তেমনিভাবে তারা চলতো। কিন্তু বর্তমানে তাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিত হয়েছে এবং আধুনিক জীবনযাপন করছে। তারা ধর্মীয় গোঁড়ামি ত্যাগ করে বিজ্ঞানমনস্ক হয়েছে।
ক. পরার্থপর আত্মহত্যা কী?
খ. আসাবিয়া বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের রতনপুর গ্রামের অতীত জীবনের সমাজব্যবস্থার সাথে অগাস্ট কোঁতের ত্রয়স্তরের কোন স্তরের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত গ্রামের বর্তমান জীবনব্যবস্থার সাথে দৃষ্টবাদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজের স্বার্থে ও সমষ্টির ইচ্ছায় যে আত্মহত্যা সংঘটিত হয় তাকে পরার্থপর আত্মহত্যা বলে।

খ. ইবনে খালদুন প্রদত্ত 'আল-আসাবিয়া' প্রত্যয়টির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Social Solidarity', যাকে বাংলায় বলা হয় ‘সামাজিক সংহতি’ বা ‘গোত্র সংহতি'।
ইবনে খালদুনের মতে, সমাজের ভিত্তিই হচ্ছে গোত্র বা সামাজিক সংহতি। রক্ত, জাতি ও ধর্মীয় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সামাজিক সংহতি গড়ে ওঠে। ইবনে খালদুন মনে করেন, আসাবিয়ার বিভিন্নতার কারণে সমাজ ও রাজনৈতিক কাঠামোয় নানা ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়। এসব পরিবর্তন সংঘটিত হয় চক্রাকার।

গ. উদ্দীপকের রতনপুর গ্রামের অতীত জীবনের সমাজব্যবস্থার সাথে ফরাসি দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁতের ত্রয়স্তর সূত্রের ধর্মতাত্ত্বিক স্তরের মিল রয়েছে।
অগাস্ট কোঁৎ-এর মতে, ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তর হলো মানব সমাজের আদি স্তর। এ স্তরে সমাজের ওপর ধর্মীয় প্রভাব ছিল খুব বেশি। এ স্তরে সমাজ ও রাষ্ট্রে যাজক এবং পুরোহিত শ্রেণির প্রাধান্য থাকে।
তাদের নির্দেশ অনুসারেই রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবন পরিচালিত হয়। এ সময় মানুষের মনে যুক্তিবাদী ধারণার সৃষ্টি হয়নি। ধর্মতত্ত্বনির্ভর যুগে মানুষরা একে অপরের সঙ্গে বিরামহীন সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। তখন মানুষের নৈতিক জ্ঞান ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের। মনোভাব ছিল আক্রমণাত্মক ও পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। এরূপ মনোভাবাপন্ন লোকেরাই এ যুগে সম্মানিত শ্রেণিতে অধিষ্ঠিত ছিল। এ কারণে অগাস্ট কোঁৎ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত সমাজকে সামরিক সমাজ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সর্বোপরি এ যুগের মানুষ ছিল অদৃষ্টবাদী।
উদ্দীপকের রাকিব জানতে পারে, অতীতে রতনপুর গ্রামের সমাজ ধর্মগুরুদের দ্বারা পরিচালিত হত। ধর্মীয় নেতা যেভাবে বলতেন, গ্রামবাসী সেভাবে চলতো। সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁতের ত্রয়স্তরের ধর্মতাত্ত্বিক স্তরেও এমনটি পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, রতনপুর গ্রামের সমাজ ও জীবনব্যবস্থা অগাস্ট কোঁৎ এর ধর্মতাত্ত্বিক স্তরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. উক্ত গ্রামের অর্থাৎ রতনপুর গ্রামের বর্তমান জীবনব্যবস্থার সাথে দৃষ্টবাদের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ দৃষ্টবাদে অতিপ্রাকৃত, ঐশ্বরিক ও অলৌকিক শক্তিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়।
উদ্দীপকের রতনপুর গ্রামের মানুষ এখন শিক্ষিত ও আধুনিক হয়েছে। তারা ধর্মীয় গোঁড়ামি ত্যাগ করে বিজ্ঞানমনস্ক হয়েছে, যা অগাস্ট কোঁৎ বর্ণিত দৃষ্টবাদী স্তরকে নির্দেশ করে। কারণ দৃষ্টবাদের মূলকথা হলো, ঐশ্বরিক, অতিপ্রাকৃত ও অলৌকিক শক্তির অস্তিত্বকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে হবে। সমাজ বিকাশের এ স্তরে কল্পনার পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠ যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
অগাস্ট কোঁৎ মনে করেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বনে জড় জগতকে যেভাবে জানা যায়, সেভাবে সামাজিক ঘটনা ও পরিস্থিতিকেও বস্তুনিষ্ঠভাবে পাঠ করা যায়। তার মতে, এ পর্যায়ে মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবন নিশ্চিত, জ্ঞান উন্নত এবং বিজ্ঞানের প্রকৃত জয়যাত্রা সূচিত হয়। যেমনটি উদ্দীপকের রতনপুর গ্রামের মানুষের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, রতনপুর গ্রামের বর্তমান জীবনব্যবস্থার সাথে দৃষ্টবাদের সম্পর্ক রয়েছে।

৫. ‘ক’ অঞ্চলের কৃষকরা জমিদারের জমিতে কাজ করতে বাধ্য থাকে। কৃষকরা ইচ্ছে করলে গ্রামের বাইরে অন্য জায়গায় কাজ করতে যেতে পারে না। জমিদারদের অত্যাচারে মাঝে মাঝে কৃষকরা বিদ্রোহ করে ওঠে। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। এভাবে একসময় তারা জমিদারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে এক সময় জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে।
ক. ইবনে খালদুন রাষ্ট্রের আয়ুষ্কাল কত বছর বলেছেন? 
খ. বিশেষ গুণসম্পন্ন কর্তৃত্ব বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় মার্কস বর্ণিত কোন সমাজের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের পরিস্থিতি শ্রেণি দ্বনে্দ্বর ফল- মার্কসের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুনের মতে রাষ্ট্রের আয়ুষ্কাল ১২০ বছর।

খ. বিশেষ গুণসম্পন্ন কর্তৃত্ব বা ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব হলো সেই কর্তৃত্ব যা ব্যক্তির অসাধারণ গুণাবলি, আবেগ-আপ্লুত মনোভঙ্গি, বীরতব ও স্মরণীয় চারিত্রিক দৃঢ়তার ওপর প্রতিষ্ঠিত, ইতিহাস এমন কর্তৃত্বের অনেক সাক্ষ্য দেয়। এক্ষেত্রে জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, মহাত্মা গান্ধী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যারা বিশেষ গুণসম্পনণ কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন।

গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় মার্কস বর্ণিত দাস সমাজের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কস বলেন, দাস সমাজ হলো প্রথম শ্রেণিভিত্তিক সমাজ। এই সমাজে দুটি শ্রেণি বিদ্যমান- দাস ও দাস মালিক। দাস সমাজে মালিকরা নিজেদের স্বার্থেই দাসদের ভরণপোষণ করত। অর্থাৎ দাসদের ভরণপোষণের নিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু প্রযুক্তিগত কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি করা আর সম্ভব ছিল না। সর্বোপরি এই সমাজের সবকিছু দাস মালিকদের নিয়ন্ত্রণে বা অনুকূলে ছিল। ফলে অধিকসংখ্যক দাস বিদ্যমান ব্যবস্থা মেনে নিতে রাজি হয়নি। তারা কয়েকশ বছর ধরে সংগ্রাম করে শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান সমাজব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। উদ্দীপকেও দেখা যায়, ‘ক’ অঞ্চলের কৃষকরা জমিদারের জমিতে কাজ করতে বাধ্য থাকে। তারা অন্য কোথাও কাজে যেতে পারে না। জমিদারদের অত্যাচারে তারা মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করে। এক সময় তারা সংগঠিত হয়ে জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং এই সংগ্রামের ফলে জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদ হয়। যেমনটি দাস সমাজব্যবস্থায় দেখা যায়। উপরে উল্লিখিত সমাজব্যবস্থার সাথে দাস সমাজব্যবস্থার মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের পরিস্থিতি অর্থাৎ কৃষক ও জমিদারদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব শ্রেণি দ্বনে্দ্বর ফল।
মার্কসের সামাজিক বিবর্তন ধারণার ভিত্তি দ্বানি্দ্বক বস্তুবাদ। দ্বানি্দ্বক বস্তুবাদই মার্কসীয় দর্শনের শেষ কথা। দ্বানি্দ্বক বস্তুবাদের মূলকথা হলো সমস্ত বস্তু বা প্রপঞ্জের বিকাশ ঘটে দ্বনে্দ্বর মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ সমাজ পরিবর্তনও দ্বনে্দ্বর ফল। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সমাজেই দুটি বিবদমান শ্রেণি থাকে। এই দুই শ্রেণির দ্বনে্দ্বর মধ্য দিয়ে আরেকটি নতুন সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এক্ষেত্রে একটি প্রচলিত সমাজব্যবস্থার (Thesis) সাথে দ্বন্দ্ব চলে এ ব্যবস্থার বিরোধীদের (Anti-thesis) এবং ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ নতুন একটি সমাজব্যবস্থার সৃষ্টি হয় (Synthesis)। এ Synthesis ও সময়ের পরিক্রমায় Thesis এ পরিণত হয় এবং Anti-thesis এর মাধ্যমে পুনরায় আরেকটি Synthesis এর জন্ম হয়। এভাবে দ্বানি্দ্বক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, বস্তু বা সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ এবং পরিবর্তন ঘটে।
উদ্দীপকেও দেখতে পাই, 'ক' অঞ্চলে কৃষক ও জমিদার এই দুই শ্রেণির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ দ্বনে্দ্বর ফলস্বরূপ জমিদারি ব্যবস্থা উচ্ছেদ হয়। মার্কস বলেন, এই দ্বনে্দ্বর অবসানের ফলে আরেকটি সমাজব্যবস্থার উদ্ভব হবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের পরিস্থিতি শ্রেণি দ্বনে্দ্বর ফল।

৬. জাকির সাহেব ব্যবসার প্রয়োজনে প্রায়শ ইউরোপ ভ্রমণ করেন। তিনি লক্ষ করেন যে, ইউরোপের মানুষ অনেক বেশি যুক্তি ও চিন্তার মাধ্যমে বাস্তব অবস্থাকে গ্রহণ করে। অথচ তার অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এখনো দৈবশক্তিতে বিশ্বাসী। নিজেদের ভাল-মন্দের জন্য তারা ভাগ্যকেই দায়ী করে।
ক. নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা কী?
খ. আমলাতন্ত্র হচ্ছে আইনগত কর্তৃত্বু বুঝিয়ে লিখ।
গ. জাকির সাহেবের বর্ণিত ইউরোপের সমাজ অগাস্ট কোঁতের মানবসমাজ বিকাশের কোন পর্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জাকির সাহেবের নিজ অঞ্চলের অবস্থারও পরিবর্তন সম্ভব তুমি কি একমত? অগাস্ট কোঁতের আলোকে ব্যাখ্যা করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজের বিপর্যয় থেকে মানুষের মনে বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়। আর এই বিতৃষ্ণা থেকে যে আত্মহত্যা সংঘটিত হয় তাই নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা।

খ. কর্তৃত্ব যখন রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয় তখন সেটাকে বলা হয় আইনগত আমলাতন্ত্র। সকল সুনির্দিষ্ট ও দাপ্তরিক কর্মকান্ডের বা পরিসীমারই একটি নীতিমালা রয়েছে, যেগুলো সাধারণভাবে আইন বা প্রশাসনিক বিধি-বিধানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ আমলাতন্ত্র যখন আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে তখন সেটিই হয় আমলাতন্ত্রের আইনগত কর্তৃত্ব।

গ. উদ্দীপকে জাকির সাহেব বর্ণিত ইউরোপের সমাজ অগাস্ট কোঁতের মানব সমাজ বিকাশের দৃষ্টবাদী পর্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মানুষ যখন ঐশ্বরিক, অতিপ্রাকৃত ও অলৌকিক শক্তির অস্তিত্বকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পায় তখনই দৃষ্টবাদী স্তরের আবির্ভাব ঘটে। এ স্তরে কল্পনার পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠ যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ সম্মিলিতভাবে জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ স্তরের জগৎকে যেভাবে জানা যায়, সেভাবে সামাজিক ঘটনা ও পরিস্থিতিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করা যায়।
উদ্দীপকের জাকির সাহেব বলেন, ইউরোপের মানুষ অনেক বেশি যুক্তি ও চিন্তার মাধ্যমে বাস্তব অবস্থাকে গ্রহণ করে। ইউরোপের মানুষের এ চিন্তা ও যুক্তিকে সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁতের ত্রয়স্তর সূত্রের দৃষ্টবাদী স্তরের সাথে তুলনা করা যায়। কারণ এ স্তরের মানুষ ধর্মতাত্ত্বিক ও অধিবিদ্যাগত স্তরের তুলনায় অনেক বেশি যুক্তিবাদী ও চিন্তাশীল। তাই বলা যায়, ইউরোপের সমাজ অগাস্ট কোঁতের মানব সমাজবিকাশের দৃষ্টবাদী পর্যায়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. জাকির সাহেবের অঞ্চলের মানুষ ধর্মতাত্ত্বিক স্তরে অবস্থান করছে। তাদেরকে দৃষ্টবাদী স্তরে উত্তরণের মধ্য দিয়ে অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব বলে আমি মনে করি।
অগাস্ট কোঁৎ মানব সমাজের বিকাশকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীর সব সমাজ অত্যাবশ্যকীয় তিনটি স্তর অতিক্রম করে এসেছে। স্তর তিনটি হলো ধর্মতাত্ত্বিক, অধিবিদ্যাগত এবং দৃষ্টবাদী। ধর্মতাত্ত্বিক স্তর হলো সে স্তর যে স্তরে মানুষের মনে যুক্তিবাদী ধারণার সৃষ্টি হয়নি। বিমূর্ত নীতি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা সমাজ ও সমাজের ঘটনাবলি নিয়ন্ত্রিত হয়। এ ধরনের ধারণাগুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হতে শুরু করে অধিবিদ্যাগত স্তরে। কিন্তু এ পরিবর্তন পূর্ণতা পায় দৃষ্টবাদী স্তরে।
মানুষ যখন ঐশ্বরিক, অতিপ্রাকৃত ও অলৌকিক শক্তির অস্তিত্বকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পায় তখনই দৃষ্টবাদী স্তরের আবির্ভাব ঘটে। এ স্তরে কল্পনার পরিবর্তে বস্তুনিষ্ঠ যুক্তি ও পর্যবেক্ষণ সম্মিলিতভাবে জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। এ স্তরের ধারণা হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে যেমন জড় জগৎ সম্পর্কে জানা যায়, তেমনি সামাজিক ঘটনা ও পরিস্থিতিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করা যায়। অর্থাৎ এ স্তরে মানুষ আবেগ দিয়ে নয় বরং যুক্তি দিয়ে সামাজিক প্রপঞ্চকে বিচার করে।
উদ্দীপকের জাকির সাহেবের অঞ্চলের মানুষ দৈবশক্তিতে বিশ্বাস করে এবং তারা নিজেদের ভালো-মন্দের জন্য নিজেদের ভাগ্যকেই দায়ী করে, যা ধর্মতাত্ত্বিক স্তরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু এ সমাজব্যবস্থারও পরিবর্তন সম্ভব যা উপরের দৃষ্টবাদী স্তরে আলোচনা করা হয়েছে। তাই বলতে পারি, উদ্দীপকের জাকির সাহেবের অঞ্চলেও ধর্মতাত্ত্বিক স্তর থেকে দৃষ্টবাদী স্তরে পরিবর্তন সম্ভব।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. গার্মেন্টস শ্রমিক সোহেল দিনরাত কাজ করেও যে বেতন পায় তাতে তার সংসার চালাতে কষ্ট হয়। সময়েও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেনি। অন্যদিকে মালিক মুনাফার টাকা দিয়ে নতুন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলছে। বর্তমানে তার সহকর্মীরা লক্ষ করে যে, পূর্বের তুলনায় সোহেলের কাজের গতি অনেক কমে গেছে। কাজে মন নেই। সবসময় মনমরা হয়ে থাকে।
ক. 'Das Kapital' গ্রন্থের লেখক কে? 
খ. ছেলের সাথে বাবার সম্পর্ক কোন ধরনের জ্ঞাতিসম্পর্ককে নির্দেশ করে? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে মালিকের নতুন ফ্যাক্টরি খোলা কার্ল মার্কস এর কোন তত্ত্বের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে সোহেলের কাজের গতি কমে যাওয়া ও আচরণ পরিবর্তনের তাত্ত্বিক কারণ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'Das Kapital' গ্রন্থের লেখক বিশিষ্ট জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস।

খ. ছেলের সাথে বাবার সম্পর্ক জৈবিক বা রক্তসম্পর্কীয় জাতিসম্পর্ককে নির্দেশ করে।
জৈবিক বা রক্তের সম্পর্ক যাদের মধ্যে বিদ্যমান তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে জৈবিক বা রক্তসম্পর্কীয় জ্ঞাতিসম্পর্ক বলা হয়। এ সম্পর্ক জন্মগতভাবে হয়ে থাকে। যেমন: বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-মামা, খালা-ফুফু প্রমুখ ব্যক্তি সবাই জৈবিক বা রক্তসম্পর্কিত বন্ধনে আবদ্ধ। জৈবিক বা রক্তসম্পর্কিত জ্ঞাতিসম্পর্ক আবার দুই ধরনের, যেমনত রৈখিক জ্ঞাতিসম্পর্ক (Linear Kinship) বলতে একই রেখাসূত্রে বাধা সম্পর্ককে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দাদা-বাবা-ছেলে। অন্যদিকে, পার্শ্বিক জ্ঞাতিসম্পর্ক (Lateral Kinship) বলতে একজন যোগসূত্রকারী জ্ঞাতির মাধ্যমে স্থাপিত সম্পর্ককে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘ক’ ব্যক্তি তার দাদার ভাইয়ের সাথে যুক্ত তার দাদার মাধ্যমে।

গ. উদ্দীপকে মালিকের নতুন ফ্যাক্টরি খোলা কার্ল মার্কস-এর উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কসের একটি মৌলিক অবদান হলো উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব। মার্কস-এর মতে, অন্যান্য পণ্যের মতো মানুষের শ্রমশক্তিও একটি পণ্য। শ্রমশক্তির দ্বিবিধ মূল্য যথাত বিনিময় মূল্য এবং ব্যবহারিক মূল্য বিদ্যমান। শ্রম সংগ্রহ করার জন্য শ্রমিককে যে মূল্য দেওয়া হয় সেটি হলো বিনিময় মূল্য। আর এ শ্রমের ফলে সৃষ্ট দ্রব্যাদি বাজারজাত করে পুঁজিপতিরা যে মূল্য অর্জন করে সেটি হলো শ্রমের ব্যবহারিক মূল্য। মার্কস বলেন, শ্রমের বিনিময় ও ব্যবহারিক মূল্যের মধ্যে যে পার্থক্য বিদ্যমান তাই হলো উদ্বৃত্ত মূল্য। মালিক শ্রেণি এ উদ্বৃত্ত মূল্য আত্মসাৎ করে পুনরায় পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে বিধায় শ্রমিক শ্রেণি তার শ্রমে অর্জিত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, গার্মেন্টস শ্রমিক সোহেল দিনরাত কাজ করেও যে বেতন পায় তাতে তার সংসার চালাতে কষ্ট হয়। অন্যদিকে তারই শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত মুনাফার টাকা দিয়ে মালিক নতুন ফ্যাক্টরি খুলছে। ফলাফলস্বরূপ, সোহেলের মত সাধারণ শ্রমিক শ্রেণি তার শ্রমে অর্জিত মুনাফা অর্থাৎ ব্যবহারিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি কার্ল মার্কস এর উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সোহেলের কাজের গতি কমে যাওয়া ও আচরণ পরিবর্তনের তাত্ত্বিক কারণ হলো 'বিচ্ছিন্নতাবোধ (Alienation)।
উনিশ শতকের বিশিষ্ট জার্মান দার্শনিক কাল মার্কসের দর্শনের অন্যতম উপজীব্য হলো, বিচ্ছিন্নতাবোধ। এটি এমন সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা যা পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়। এই উৎপাদন ব্যবস্থায় পুঁজিপতি অধিক মুনাফা লাভের আশায় অধিক বিনিয়োগ করতে থাকে এবং অধিক হারে শ্রমিকের শ্রম ক্রয় করতে থাকে। এভাবে চলমান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত শ্রমিক একপর্যায়ে উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে উৎপাদিত বস্তু ও উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে ধীরে ধীরে শ্রমিক তাঁর নিজ থেকে এবং একপর্যায়ে সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটাই মার্কসের বিচ্ছিন্নতাবোধ তত্ত্ব মূলকথা। উদ্দীপকে উল্লিখিত গার্মেনটস শ্রমিক সোহেলের সার্বিক অবস্থার সাথে কার্ল মার্কসের বিচ্ছিন্নতাবোধ তত্ত্বের সামঞ্জস্যতা বিদ্যমান।
মূলত বিচ্ছিন্নতাবোধের কারণেই সোহেলের সহকর্মীরা লক্ষ করে যে, সোহেলের কাজের গতি অনেক কমে গেছে। কাজের ক্ষেত্রে তার আগের মতো মন নেই। সব সময়ই সে মনমরা হয়ে থাকে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত সোহেলের আচরণের পরিবর্তন কার্ল মার্কসের বিচিছনণতাবোধ তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।

৮. মি. 'গ' অভাবের তাড়নায় গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে তৈরি পোশাক শিল্পের হেলপার হিসেবে কর্মে যোগদান করেও অভাব মোচন সম্ভব হলো না। তাই সে তার স্ত্রীকেও গ্রাম থেকে এনে সোয়েটার কারখানায় নিয়োজিত করে। দুইজনের উপার্জনেও সংসার চালাতে হিমশিম খায়। মি. ‘গ’ যে কাজটি করে তার শেষ পরিণতি সম্পর্কে সে জানে না এবং যে পরিমাণ কাজ করে তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পারিশ্রমিকও সে পায় না। এ নিয়ে তার সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করার অপরাধে মি. ‘গ’-এর চাকরি চলে যায়। এ পরিস্থিতিতে মি. 'গ' আত্মহত্যা করে। 
ক. দৃষ্টবাদকে Auguste Comte কয় ভাগে ভাগ করেছেন? 
খ. হার্বার্ট স্পেন্সারের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে মি. ‘গ’ এর আত্মহত্যাটি কোন ধরনের আত্মহত্যা? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ঘটনাটি কার্ল মার্কসের কোন তত্ত্বটিকে প্রত্যক্ষণ করে বলে তুমি মনে কর? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. দৃষ্টবাদকে অগাস্ট কোঁৎ তিন ভাগে ভাগ করেছেন।

খ. হার্বার্ট স্পেন্সার আদর্শ সমাজ বিনির্মানে যে উপাদানগুলোর ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ।
স্পেন্সার জীবনের শেষদিন অবধি চূড়ান্ত ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী ছিলেন। স্বাভাবিক অধিকারের প্রতি আসক্তি, স্বাভাবিক নিয়ম, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বা শাসকের বিরুদ্ধে জেহাদ, যোগ্যতমের উর্ধ্বতনের নীতিত সবকিছুই তার ব্যক্তিস্বাতমেত্ম্র্যর ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে। স্পেন্সার যে আদর্শ সমাজের কথা বলেছেন তা হলো বর্তমানের শিল্পসমাজ। এ সমাজেই মানুষের স্বাধীনতা, সুখ-শান্তি ও জীবনের পূর্ণতাপ্রাপ্তি হয়।

গ. মি. ‘গ’ এর আত্মহত্যাটি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম বর্ণিত নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা।
এমিল ডুর্খেইম আত্মহত্যাকে সামাজিক ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কয়েক ভাগে বিভক্ত করেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে 'নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা'। সমাজে যখন কোনো ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয় অথবা সামাজিক কাঠামোর মধ্যে যখন মূল্যবোধহীনতা দেখা দেয় তখন ব্যক্তি বেঁচে থাকার কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। ফলে সে আত্মহত্যা করে, যাকে নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা বলা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ‘গ’ সোয়েটার কারখানায় যে পরিমাণ কাজ করে, তার তুলনায় অনেক কম বেতন পায়। এমনকি সহকর্মীদের সাথে এই অবস্থার নিরসনে আলোচনা করার অপরাধে তার চাকরিও চলে যায়। ফলে সে আত্মহত্যা করে। এখানে সুস্পষ্ট যে, মি. 'গ' যে সমাজে বাস করে, সে সমাজে সঠিক মূল্যবোধের অভাব রয়েছে। যদি সঠিক মূল্যবোধ থাকতো তাহলে শ্রমিককে তার পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। মালিকপক্ষের এ আচরণ করা সম্ভব হয়েছে সামাজিক মূল্যবোধহীনতার কারণেই। সুতরাং এ অবস্থায় বরখাস্তকৃত কোনো শ্রমিক আত্মহত্যা করলে তা নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা' হিসেবে বিবেচিত হবে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে সুস্পষ্ট যে, উদ্দীপকের মি. ‘গ’-এর আত্মহত্যাটি নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা।

ঘ. আমি মনে করি, উদ্দীপকের ঘটনাটি কার্ল মার্কসের ‘বিচ্ছিন্নতাবোধ' তত্ত্বকে প্রত্যক্ষণ করে।
উদ্দীপকের শ্রমিক মি. 'গ' সোয়েটার কারখানায় সর্বোচ্চ শ্রম দিয়েও সংগতিপূর্ণ পারিশ্রমিক পায় না। এর ফলে তার মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয় এবং সে হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সহকর্মী শ্রমিকদের সে সংঘটিত করার চেষ্টা করে। সোয়েটার কারখানার মালিকপক্ষ তাদের মুনাফা অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে শ্রমিকদের অধিকারকে অস্বীকার করে। তারা শ্রমিকদের নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে মি. ‘গ’ কে ছাটাই করে। ফলে মি. ‘গ’ চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়, যার পরিণতিতে সে আত্মহত্যা করে।
জার্মান অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক কার্ল মার্কস তার ‘বিচ্ছিন্নতাবোধ’ তত্ত্বে উৎপাদন সম্পর্কে শ্রমিকদের চূড়ান্ত অবস্থা উদ্দীপকের মি. ‘গ’-এর মতো হয় তা ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন। বিচ্ছিন্নতাবোধ তত্ত্বানুযায়ী উৎপাদন সম্পর্কে একজন শ্রমিক উৎপাদন উপকরণ হিসেবে কাজ করে। আর উৎপাদন উপকরণের মালিক বা পুঁজিপতি অধিক মুনাফা লাভের জন্য শ্রমিকদেরকে ক্রমাগত শোষণ করতে থাকে। শ্রমিক যখন তার শ্রম অনুযায়ী প্রাপ্য মজুরি না পায় তখন সে তার উৎপাদিত বস্তু থেকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শোষণ অব্যাহত থাকলে এক পর্যায়ে শ্রমিক পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্নতার চূড়ান্ত পর্যায়ে শ্রমিক গোষ্ঠী থেকে এং পরবর্তীতে তার নিজের থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ব্যক্তি যখন নিজের স্বত্তা থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন অধিকাংশ সময় সে আত্মহত্যার মতো চরম পথ বেছে নেয়। যেমনটা উদ্দীপকের মি. ‘গ’-এর ক্ষেত্রে ঘটেছে।
উপরিউক্ত তুলনামূলক ব্যাখ্যায় সুস্পষ্ট যে, কার্ল মার্কস তাঁর ‘বিচ্ছিন্নতাবোধ’ তত্ত্বে যে পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন, উদ্দীপকে ঠিক অনুরূপ পরিস্থিতিই বিবৃত হয়েছে।

৯. শিহাব একটি তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আজ প্রথম শ্রেণির একজন সরকারি কর্মকর্তা। চাকরিতে যোগ দেবার পর শিহাব দেখলো তার অফিসের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত প্রতিটি পদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্তরে স্তরে সজ্জিত। প্রতিটি কর্মকর্তা লিখিত বিধি-বিধান অনুযায়ী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবে সরকারের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে তারা বদ্ধপরিকর। কিন্তু মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব এবং কতিপয় কর্মকর্তার দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে তাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে যায়।
ক. 'The Division of Labour in Society'- গ্রন্থটি কার লেখা?
খ. সম্মোহনী কর্তৃত্ব কী? বুঝিয়ে লিখ।
গ. উদ্দীপকে শিহাবের কর্মক্ষেত্রে ম্যাক্স ওয়েবার বর্ণিত কোন প্রত্যয়ের প্রভাব লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উক্ত প্রত্যয়টি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো আদর্শ রূপ গ্রহণ করতে পারেনি’ তুমি কি একমত? যুক্তি দিয়ে বোঝাও। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'The Division of Labour in Society' গ্রন্থটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমের লেখা।

খ. সম্মোহনী কর্তৃত্ব বা ঐন্দ্রজালিক কর্তৃত্ব হলো সেই কর্তৃত্ব যা ব্যক্তির অসাধারণ গুণাবলি, আবেগ-আপ্লুত মনোভঙ্গি, বীরতব ও স্মরণীয় চারিত্রিক দৃঢ়তার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের কর্তৃত্বকে বিশেষ গুণসম্পন্ন কর্তৃত্বও বলা হয়। ইতিহাস এমন কর্তৃত্বের অনেক সাক্ষ্য দেয়। এক্ষেত্রে জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, মহাত্মা গান্ধী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরা সম্মোহনী কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন।

গ. উদ্দীপকে শিহাবের কর্মক্ষেত্রে ম্যাক্স ওয়েবার বর্ণিত আমলাতন্ত্র প্রত্যয়ের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
ম্যাক্স ওয়েবার আমলাতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেন, কর্তৃত্ব যখন রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয় তখন সেটাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র। তার মতে, যৌক্তিক আমলাতন্ত্রের স্বীকৃতি বা প্রতিষ্ঠা যেমন ছিল আধুনিক পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান কারণ, তেমনি আমলাতন্ত্রের দায়িত্ববোধের নৈতিকতার মাধ্যমেই আধুনিক সমাজব্যবস্থা কার্যকর থাকে। তিনি আমলাতন্ত্রের কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- এটি কর্মের যৌক্তিক সংগঠন, এর কার্যক্রম লিখিতভাবে সম্পাদন, নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ ইত্যাদি।
উদ্দীপকে আমরা দেখি, শিহাব একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরি লাভ করে। তার অফিসের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যন্ত প্রতিটি পদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্তরে স্তরে সজ্জিত শিহাবের অফিসের এ ধরনের কর্মকান্ড আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, শিহাবের কর্মক্ষেত্রে ম্যাক্স ওয়েবার বর্ণিত আমলাতন্ত্রের প্রভাব লক্ষ করা যায়।

ঘ. উক্ত প্রত্যয়টি অর্থাৎ আমলাতন্ত্র উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো আদর্শ রূপ গ্রহণ করতে পারেনি। আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত।
আমলাতন্ত্র হলো এমন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যার বৈশিষ্ট্যাবলির মধ্যে রয়েছে দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, উচ্চক্রম বিন্যাস ও পদোন্নতি। আমলাতন্ত্রের এ বৈশিষ্ট্যই বলে দেয় আমলাতন্ত্রকে কতটা স্বচ্ছ হওয়া দরকার। আমলারা রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কার্য সম্পাদন করেন। তাই তাদের হওয়া উচিত সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত ও স্বজনপ্রীতিমুক্ত। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে আমলাতন্ত্র আজ বাক্সবন্দি রাজনীতিবিদদের পকেটে। আমলাদের দুর্বলতার কারণে রাজনীতিবিদরা আজ ফাঁক-ফোকর দিয়ে অবৈধ কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। ঘুষের বিনিময়ে বড় বড় অপরাধের শাস্তি থেকেও মুক্তি পাচ্ছেন অপরাধীরা। শুধু তাই নয়, তৃতীয় বিশ্বের আমলারা অর্থের লোভে ইচ্ছা করেই প্রশাসনিক কাজে বিলম্ব করছেন এবং ফাইলে সইয়ের বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। তৃতীয় বিশ্বের আমলাতন্ত্রের আরেকটি বিষয় খুব চোখে পড়ার মতো। তাহলো নস্বজনপ্রীতি, এ স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক আমলাই নিজের অযোগ্য আত্মীয়স্বজনকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসান। ফলে অযোগ্য ব্যক্তির কারণে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
পরিশেষে তাই আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত, তৃতীয় বিশ্বে আমলাতন্ত্র এখনও আদর্শ রূপ গ্রহণ করতে পারেনি

১০. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ছাত্র ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সমবেত হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ ‘১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে' ইত্যাদি শেস্নাগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্ররা রাস্তায় বের হলে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে ইট-পাটকেল বিনিময় হতে থাকে। বেলা ৩টার দিকে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং সে গুলিতে বরকত, রফিক, সালাম, জববার, শফিউর রহমানসহ আরো অনেকে শহীদ হন। 
ক. ‘‘কিতাব আল ইবার' গ্রন্থটি কে রচনা করেন? 
খ. ত্রয়স্তর সূত্র বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে ভাষা শহীদদের জীবন বিসর্জনকে তুমি ডুর্খেইম বর্ণিত কোন ধরনের আত্মহত্যার সাথে তুলনা করবে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত আত্মহত্যা ছাড়া ডুর্খেইম আর কোন কোন আত্মহত্যার উল্লেখ করেছেন? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘কিতাব আল ইবার' গ্রন্থটি রচনা করেন চৌদ্দ শতকের দার্শনিক ইবনে খালদুন।

খ. মানব জ্ঞানের ক্রমোন্নতি এবং সমাজের উন্নতি ও ক্রমবিকাশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অগাস্ট কোঁৎ যে তত্ত্ব প্রদান করেন, তা ত্রয়স্তর সূত্র নামে পরিচিত।
অগাস্ট কোঁৎ-এর মতে, মানুষের সকল চিন্তা-চেতনা, ধ্যান ধারণাসমূহ, জ্ঞানের সকল শাখায় এবং পৃথিবীর সকল সমাজসমূহ অত্যাবশ্যকীয়ভাবে তিনটি স্তর অতিক্রম করে এসেছে। এই তিনটি স্তর হচ্ছেত ধর্মতাত্ত্বিক অধিবিদ্যাগত ও দৃষ্টবাদী স্তর। এই তিনটি স্তরের মাধ্যমে মানুষের বুদ্ধিভিত্তিক যে বিকাশ ঘটে, তা ‘ত্রয়স্তর সূত্র' নামে পরিচিত।

গ. ভাষা শহীদদের জীবন বিসর্জনকে আমি ডুর্খেইম বর্ণিত পরার্থমূলক আত্মহত্যার সাথে তুলনা করব।
ব্যক্তি যখন পরের জন্য আত্মহত্যা করে তখন তাকে পরার্থমূলক আত্মহত্যা বলে। এ ধরনের আত্মহত্যা সাধারণত গোষ্ঠীর কারণে বা গোষ্ঠীর স্বার্থে হয়ে থাকে। সমাজের প্রচলিত নিয়ম তথা সামাজিক স্বার্থও অনেক ক্ষেত্রে পরার্থমূলক আত্মহত্যার কারণ হয়ে থাকে। দেশের স্বার্থে যুদ্ধে আত্মবিসর্জন, আত্মহত্যা, স্বেচছায় সহমরণ ইত্যাদিকে ডুর্খেইম পরার্থমূলক আত্মহত্যা বলেছেন। যেসব সমাজে ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে সামাজিক স্বার্থ প্রবল আকার ধারণ করে সে সব সমাজে এ ধরনের আত্মহত্যা অধিক হারে সংঘটিত হয়।
উদ্দীপকে দেখতে পাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্ররা রাস্তায় মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্র মৃত্যুবরণ করে। ছাত্রদের এই জীবন বিসর্জনকে ডুর্খেইম বর্ণিত পরার্থমূলক আত্মহত্যার সাথে তুলনা করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত পরার্থমূলক আত্মহত্যা ছাড়াও ডুর্খেইম আত্মকেন্দ্রিক ও নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যার কথা বলেছেন। ব্যক্তি যখন সমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে তখন ব্যক্তির ওপর সামাজিক বন্ধনের শিথিলতা, একাকীত্ববোধ, জীবনযাত্রার বিষন্নতা, সমাজের সীমাহীন অভাব, সামাজিক সাহায্য ও সহযোগিতার অভাব ইত্যাদি কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ডুর্খেইম এ ধরনের আত্মহত্যাকে ‘আত্মকেন্দ্রিক আত্মহত্যা' বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে ডুর্খেইম বলেন, যেসব সমাজে অর্থনৈতিক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে সেসব সমাজ নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা অধিক ঘটে। আর্থিক সংকটের কারণে সমাজে যখন মানুষ খাপ খাইয়ে চলতে পারেনা তখন অনেক সময় নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা সংঘটিত হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post