HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. এইচএসসি পাস করে মৌনিতা ও আশু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে বিজ্ঞান বিভাগ এবং মানবিক বিভাগের দুটি বিষয়ে ভর্তি হয়েছে। একদিন ক্লাসের ফাঁকে তারা তাদের পাঠ্যবিষয় নিয়ে আলাপ করছিল। মৌনিতা বলল, আমাদের পড়ার চাপ খুব বেশি, তোমাদের তো কোনো চাপ নেই শুধু মুখস্ত করলেই হয়। জবাবে আশু বলল, সৃজনশীল পদ্ধতিতে মুখস্ত করার কোনো দাম নেই, আর আমরাও এমন বিষয় পড়ি় যা পদ্ধতিগত দিক থেকে বিজ্ঞানের মর্যাদা পেয়েছে। যে সমাজে আমরা বেড়ে উঠছি তার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে হলে পদার্থবিজ্ঞান না পড়লেও চলবে কিন্তু এ বিষয়টা অবশ্যই পড়তে হবে।
ক. হার্বাট স্পেন্সার তার 'The Principles of Sociology' গ্রন্থে কয় ধরনের সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন?
খ. শিশুর সামাজিকীকরণে গণমাধ্যম অন্যতম শক্তিশালী একটি বাহন- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের আশুর পঠিত বিষয়ের সাথে বিজ্ঞানের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আশুর বক্তব্যের আলোকে বিষয়টি পাঠের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হার্বার্ট স্পেন্সার তার ‘The Principles of Sociology’ গ্রন্থে চার ধরনের সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন।

খ. গণমাধ্যম আধুনিককালে ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রণের এক শক্তিশালী মাধ্যম।
গণমাধ্যম বলতে বোঝানো হয় সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইত্যাদিকে। এসব মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ, বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান শিশুদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলে শিশু-কিশোররা নিজেদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে শেখে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, বিজ্ঞানমনস্কতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকশিত হয়।

গ. উদ্দীপকের আশুর পঠিত বিষয়ের সাথে অর্থাৎ- সমাজবিজ্ঞানের সাথে বিজ্ঞানের ব্যাপক সাদৃশ্য রয়েছে।
আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান ঠিক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো নয়, তবে এটি গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও কলাকৌশল প্রয়োগ করে। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য প্রজ্ঞা, ধীশক্তি, নির্দেশনা বা ধারণার জন্ম দেওয়া নয়, বরং জ্ঞানের উদ্ভাবন। সেদিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে প্রথমে গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করা হয়। তারপর নির্ধারিত বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস, অনুসিদ্ধান্ত প্রণয়ন এবং তা যাচাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় এবং এর ভিত্তিতে একটি সাধারণ সূত্রে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যসমূহের বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা চালায়। এদিক থেকে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
উদ্দীপকের আশু বলে, সমাজের গতি-প্রকৃতি জানতে হলে একটি বিষয় অধ্যয়ন করতে হয় এবং এ বিষয়টি পদ্ধতিগত দিক থেকে বিজ্ঞানের মর্যাদা পেয়েছে। আশুর এ বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ফুটে উঠেছে। আর সমাজবিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক মিল বা সাদৃশ্য যা উপরের আলোচনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, আশুর পঠিত বিষয় সমাজবিজ্ঞানের সাথে বিজ্ঞানের মিল বা সম্পর্ক রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের আশুর বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠেছে।
সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দান করে। সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের সমাজ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা প্রয়োজন। আর সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে এ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা যায়। সমাজের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার কারা কতটা এবং কীভাবে ভোগ করছে, আর কারাইবা সমাজের সম্পদ ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা সমাজবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল ও কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের কৃষির বৈশিষ্ট্য, সম্পর্ক, কাঠামো ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের সমস্যা দূরীকরণে সমাজবিজ্ঞান পথ নির্দেশ করে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জন অসমেত্মাষ, সম্পদহীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য সমাধান সূত্র নির্ণয়ে সমাজবিজ্ঞান বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সমাজ যেহেতু প্রধানত স্তরায়িত, তাই সমাজ উন্নয়নে কোন শ্রেণির বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক গোষ্ঠীর কী ভূমিকা থাকে তা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোচনা করে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজকে জানতে ও বুঝতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠের বিকল্প নেই। কারণ একমাত্র সমাজবিজ্ঞানই সমাজকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে।

২. রেহান ও সুফল খুবই ভালো বন্ধু। তারা দুজন এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছে। রেহানের পঠিত বিষয়ের মূল আলোচনা হলো সমাজ ও সমাজ সম্পর্কিত সব বিষয়। পক্ষান্তরে, সুফলের পঠিত বিষয় মূলত রাষ্ট্র ও ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করে। 
ক. বিজ্ঞান শব্দের আভিধানিক অর্থ কী?
খ. একেশ্বরবাদ বলতে কী বোঝায়? 
গ. রেহান ও সুফলের পঠিত বিষয় দুটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উল্লিখিত রেহানের পঠিত বিষয়টিকে ‘প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা হয়’ তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বিজ্ঞান শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশেষ জ্ঞান।

খ. যুক্তি বিকাশের ধারাবাহিকতায় মানুষের অগ্রসর চিন্তার ফসল হচ্ছে একেশ্বরবাদ।
যুক্তির ধারাবাহিকতায় বহু ঈশ্বরের ক্ষমতা একজন ঈশ্বরের ওপর আরোপ করা হয়। এখানে মনে করা হয়, সকল প্রাকৃতিক ও সামাজিক ঘটনার সর্বোচ্চ এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে সর্বশক্তিমান একক সত্তা।

গ. রেহান ও সুফলের পঠিত বিষয় দুটি হলো যথাক্রমে সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
রেহানের বিষয়টিতে সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান সন্নিবেশিত হয়েছে যা সমাজবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে। আর সুফলের পঠিত বিষয়টি মূলত রাষ্ট্র ও ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করে যা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞানের একটি বিশেষীকৃত শাখা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হলো সমগ্র মানবজীবনের কেবল রাজনৈতিক দিকটির আলোচনা, অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান হলো একটি মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান যার উপজীব্য বিষয় হলো মানুষের সমাজজীবনের সামগ্রিকরূপ। সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ অনুধাবন প্রায় অসম্ভব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু অনেক ও বিভিন্ন হলেও এর কেন্দ্রীয় বিষয় হলো রাষ্ট্র আর এই রাষ্ট্র প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল সামাজিক সংগঠন।
সেই সূত্র ধরেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের করে। জ্ঞান অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়। বর্তমানে সমাজতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বা মডেল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানও সমাজবিজ্ঞানের উপাদান সরবরাহ উদাহরণস্বরূপ, সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সম্পর্কিত জ্ঞান সংগ্রহ করে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রেহানের পঠিত সমাজবিজ্ঞান বিষয়টিকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা হয়। আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারছি না।
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়বস্তু বস্তুগত বা বাহ্যিক। এই বিষয়বস্তুর সাথে চিন্তন বা অনুভবের কোনো সম্পর্ক নেই। পক্ষান্তরে সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় অবস্তুগত এবং বিমূর্ত। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষণাধীন বিষয়বস্তুকে পরীক্ষাগারে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রেখে গবেষণা করা সম্ভব। অপরপক্ষে সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় সামাজিক মানুষ তথা সামাজিক সম্পর্ক যা সদা পরিবর্তনশীল ফলে সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা কোনো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চালানো সম্ভব নয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে গবেষণাধীন বস্তুসমূহের ইচ্ছামাফিক একটির সাথে অপরটির মিলন ঘটিয়ে এদের রাসায়নিক ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানে গবেষণাধীন সামাজিক উপাদানসমূহের পরস্পর মিলন ঘটিয়ে তার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয় বললেই চলে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান একই বিষয় বার বার পরীক্ষা করলে ফলাফল প্রধানত একই পাওয়া যায়। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানে একই বিষয়ে বার বার গবেষণা করলে গবেষণার ফলাফলে তারতম্য ঘটা সম্ভব। কেননা সামাজিক প্রপঞ্চসমূহ সর্বদা পরিবর্তনশীল। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষণার পদ্ধতি অনেক উন্নত হলেও সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার পদ্ধতি ততটা উন্নত নয়।
উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমি বলতে পারি যে, কোনোভাবেই প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা যায় না। 

৩. সমাজবিজ্ঞানকে জনাব আলমগীর হোসেন 'DURC' নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি সমাজের অতীত ঘটনাবলী সম্পর্কে ধারাবাহিক গবেষণা করেন। এ ধরনের গবেষণা কাজের জন্য তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ, সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা, গবেষণা রিপোর্ট, দলিল দস্তাবেজ ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে তাঁর বন্ধু সোহেল খান 'আগামীর স্বপ্ন' নামক একটি প্রতিষ্ঠানে সমাজ গবেষণায় ভিন্ন ধরনের পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। তাঁর পদ্ধতির ধরন হলো মাঠ পর্যায়ে প্রশ্নমালা, সাক্ষাৎকার ইত্যাদির মাধ্যমে উপাত্ত (Data) সংগ্রহ। 
ক. পদ্ধতির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. জৈবিক সাদৃশ্যের তত্ত্বটি কার? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব আলমগীর হোসেন ও তার বন্ধু সমাজ গবেষণায় কোন কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত গবেষণার পদ্ধতিগুলোর গুরুতব তোমার পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. পদ্ধতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Method.

খ. জৈবিক সাদৃশ্যের তত্ত্বটি বিবর্তনবাদী মতবাদের প্রবক্তা ও বিশিষ্ট ব্রিটিশ দার্শনিক হার্বার্ট স্পেন্সার-এর। জৈবিক সাদৃশ্য তত্ত্বের মূলকথা হলো সমাজের বিবর্তন হয় জীব জগতের বিবর্তনের মতোই। হার্বার্ট স্পেন্সার জীবদেহের সাথে সমাজসত্ত্বার অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পান এবং তিনি মনে করেন প্রত্যেকটি সমাজ হলো এক একটি জীব দেহের মতো। স্পেন্সারের মতে, এক কোষবিশিষ্ট অত্যন্ত সাধারণ একরকম প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের জীবজগতের বিকাশ ঘটেছে, তেমনি মানবসমাজেও বিবর্তন ঘটছে। সমাজ আদিম অবস্থা থেকে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান স্তরে পৌঁছেছে। আর এটিই হলো স্পেন্সারের জৈবিক সাদৃশ্য তত্ত্ব।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব আলমগীর হোসেন তার গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতি এবং তাঁর বন্ধু সোহেল খান সামাজিক জরিপ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।
সাধারণত ইতিহাস বা ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে সমাজ গবেষণার বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে ঐতিহাসিক পদ্ধতি। অতীতকালের সামাজিক ঘটনাবলির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানলাভ করার পন্থাই ঐতিহাসিক পদ্ধতি। ঐতিহাসিক পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রন্থ, বার্ষিকী, জীবনী গ্রন্থ, স্মৃতিকথা, দিনলিপি, বংশ তালিকা ইত্যাদি উৎস হিসেবে হয়।
সাধারণত জরিপ বলতে কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করাকে বোঝায়। জরিপ পদ্ধতি হলো বিভিন্ন কৌশলে তথ্য অনুসন্ধান, তথ্যাবলি সংগ্রহ, পরিমাপ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার একটি প্রক্রিয়া। কোনো জনবসতির ধ্যানধারণা, মনোভাব, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, আয়, জীবনযাত্রার মান, সম্পদ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করতে হলে জরিপ পদ্ধতি সর্বোত্তম বলে বিবেচিত। জরিপের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে প্রশ্নমান প্রণয়নের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব আলমগীর হোসেন তার গবেষণায় বিভিন্ন গ্রন্থ, সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা, গবেষণা রিপোর্ট, দলিল দস্তাবেজ ইত্যাদি ব্যবহার করেন যা তার গবেষণায় ব্যবহৃত ঐতিহাসিক পদ্ধতিকেই নির্দেশ করে। অন্যদিকে, তাঁর বন্ধু সোহেল খানের গবেষণার ধরন হলো মাঠ পর্যায়ে প্রশ্নমালা, সাক্ষাৎকার ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা যা সামাজিক গবেষণার জরিপ পদ্ধতিকেই নির্দেশ করে।
উপরের আলোচনা শেষে প্রতীয়মান হয় যে, জনাব আলমগীর হোসেন তার গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতি এবং তার বন্ধু সোহেল খান সামাজিক জরিপ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত গবেষণা পদ্ধতিদ্বয় অর্থাৎ ঐতিহাসিক পদ্ধতি এবং সামাজিক জরিপ পদ্ধতির গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক। 
সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতির গুরুত্ব অনেক ব্যাপক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, আধুনিক বাংলাদেশের সমাজকাঠামো বিশ্লেষণে অন্যান্য পদ্ধতির পাশাপাশি ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে অবশ্যই গুরুতব দিতে হবে। কারণ বর্তমান বাংলাদেশের সমাজকাঠামো বিগত সমাজের গর্ভেই অঙ্কুরিত হয়েছিল। তাই বাংলাদেশের সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ও রচনাবলি এবং অন্যান্য সমাজতাত্ত্বিক গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকার সাহায্য একান্তভাবে প্রয়োজন। তাছাড়া, সমাজ পরিবর্তন সম্পর্কিত পাঠ ও গবেষণায় ঐতিহাসিক পদ্ধতি বেশ সহায়ক।
সমাজ গবেষণায় জরিপ পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সমাজের ন বিভিন্ন বিষয়ে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য যাচাই বাছাই ইত্যাদি ক্ষেত্রে জরিপ একটি কার্যকরী প্রক্রিয়া। বস্তুত জরিপের সাহায্যে কোনো একটি বিষয়ের সামগ্রিক চিত্র লাভ করা সম্ভব। সামাজিক জরিপ পদ্ধতি সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচির পূর্বশর্ত হিসেবেও কাজ করে। তাছাড়া সামাজিক জরিপ প্রকল্প প্রণয়ন ও তত্ত্ব উন্নয়নকল্পে ব্যবহৃত পরীক্ষামূলক নকশার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক গবেষণায় উপরের পদ্ধতি দুটি ব্যাপক গুরুত্বের দাবিদার। এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা আবশ্যক।

৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘‘ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহের প্রতি কমলগঞ্জ গ্রামের মানুষের মনোভাব’’ এই বিষয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একটি প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে, সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করে তারা গবেষণা শেষ করল। 
ক. অগাস্ট কোঁতের ক্রয়স্তর সূত্রের প্রথম স্তরটির নাম কী?
খ. ‘আসাবিয়া’ কী? বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা গবেষণার ক্ষেত্রে কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীরা গবেষণা কার্যে যে পর্যায়গুলো প্রয়োগ করেছে তা বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ-এর ত্রয়স্তর সূত্রের প্রথম স্তরটির নাম হলো ধর্মতাত্ত্বিক স্তর (Theological Stage).

খ. ‘আসাবিয়া' হলো ত্রয়োদশ শতকের বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুনের সমাজ সম্পর্কিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
আসাবিয়া হলো একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ সামাজিক সংহতি (Social Solidarity)। ইবনে খালদুন (Ibn Khaldun) তার 'আল মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যাযাবর ও বেদুঈন সমাজ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন। সাধারণত আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি বলতে মানসিক ঐক্যকে বোঝানো হয় যার দ্বারা মানুষ পরস্পরের সাথে একাত্মতা পোষণ করে, এমনকি সাধারণ বিপদ-আপদ এবং ভাগ্যের হেরফেরও তারা একই সাথে মোকাবিলা করে। ইবনে খালদুনের মতে, রক্ত, ধর্ম, জাতীয়তা প্রভৃতির মাধ্যমে এ সামাজিক সংহতি গড়ে় ওঠে যার বিভিন্নতার কারণে সমাজ ও রাজনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন সংঘটিত হতে পারে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা গবেষণার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি (Scientific Method) অবলম্বন করেছে।
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের যুক্তিকে বলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। অর্থাৎ, কোনো বিষয়ের বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের যুক্তিসংগত উপায়ই হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। গবেষক বা বিজ্ঞানী কোনো সত্য অনুসন্ধানে এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে থাকেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী আর. টি. শেফার বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো ধারাবাহিক ও সংগঠিত কতগুলো ধাপ যা কোনো সমস্যা অনুসন্ধানে সর্বোচ্চ বস্তুনিষ্ঠতা (ঙনলবপঃরারঃু) ও সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মূলত প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিষয়কে যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্লেষণ করেন। এক্ষেত্রে তাদের কিছু পদ্ধতি বা ধাপ অনুসরণ করতে হয় যথা: সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমস্যার স্বরূপ নির্ধারণ, সমস্যা সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ ও পঠন, সংগৃহীত তথ্যাদি সংগঠিতকরণ প্রভৃতি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ‘‘ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহের প্রতি কমলগঞ্জ গ্রামের মানুষের মনোভাব’’ এই বিষয়কে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিল। এ পর্যায়ে তারা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করে গবেষণা শেষ করল। শিক্ষার্থীদের এ গবেষণা পদ্ধিতিটি পাঠ্যবইয়ে আলোচিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা গবেষণার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।

ঘ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণা কার্যে যে পর্যায়গুলো প্রয়োগ করেছে তা হলো সমস্যা নির্বাচন, সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের শ্রেণিবিন্যাসকরণ এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান যা সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরসমূহকে নির্দেশ করে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম স্তর বা পর্যায় হলো গবেষণার জন্য বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন। সমস্যা হলো এমন একটি পরিস্থিতি যা মানবজীবনের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। যেমনত মাদকাসক্তি, যৌতুক প্রভৃতি এক একটি সমস্যা যা গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তর বা পর্যায় হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন। অর্থাৎ, নির্বাচিত সমস্যাটিকে গবেষণার উপযোগী সংজ্ঞা প্রদান করা যাতে গবেষণাধীন বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা লাভ করা যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির তৃতীয় স্তর বা পর্যায়ে এসে গবেষক Hypothesis বা অনুমিতসিদ্ধান্তকে (সম্ভাব্য উত্তর অনুমান করা) কেন্দ্র করে গবেষণা কার্য পরিচালনা করে থাকেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজনীয় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে তথ্যের শ্রেণিবিন্যাসপূর্বক প্রাপ্ত তথ্যাবলি দ্বারা গৃহীত অনুমিতসিদ্ধান্ত সমর্থিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করেন।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সর্বশেষ পর্যায়ে এসে গবেষক যে অনুমিতসিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা সমর্থিত হলে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেন। মূলত তথ্য বিশ্লেষণ ও অনুমিতসিদ্ধান্ত সমর্থনের মাধ্যমে এ স্তরের পূর্ণতা আসে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সকল গবেষককে একটি নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে গবেষণা কার্য সম্পাদন করতে হয়।

৫. ড: রফিক সাহেবের তত্ত্বাবধানে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে একটি গবেষণায় কয়েকজন শিক্ষার্থী একমত হলেন যে, তাদের গবেষণার জন্য এমন একটি পদ্ধতি বেছে নিবেন যেটা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমাধান করা যেতে পারে। রফিক সাহেব শিক্ষার্থীদের এ পদ্ধতিকে বস্তুনিষ্ঠ, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণধর্মী ও তাত্ত্বিক বলে উল্লেখ করেন। 
ক. The Republic গ্রন্থের রচয়িতা কে?
খ. সমাজ গবেষণার চতুর্থ স্তরটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীগণ সমাজ গবেষণার কোন পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সমাজ গবেষণার উক্ত পদ্ধতির প্রধান স্তরসমূহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. The Republic গ্রন্থের রচয়িতা গ্রিক দার্শনিক প্লেটো।

খ. সমাজ গবেষণার চতুর্থ স্তরটি হলো কল্পনা প্রণয়ন। গবেষণা সমস্যার মধ্যকার ধারণাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের একটি আনুমানিক বিবৃতিই অনুসিদ্ধান্ত বা কল্পনা। মূলত, গবেষণার সমস্যা বা বিষয়বস্তু নির্বাচনের পরই পর্যবেক্ষণ বা তথ্যসংগ্রহ করার পূর্বেই কল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব। তথ্য দ্বারা সমর্থিত না হলে সে কল্পনা বাতিল বলে গণ্য হতে পারে। সাধারণত গবেষকের ব্যক্তিগত ধারণা, প্রজ্ঞা ও অনুমানলব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে কল্পনা প্রণয়ন হয়।

গ. উদ্দীপকে শিক্ষার্থীরা সমাজ গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।
বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের দক্ষ উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো বিজ্ঞানের ভিত্তি। বিজ্ঞানী যে যৌক্তিক পদ্ধতিতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলি বর্ণনা, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা করেন তাকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার বিষয় নির্ধারণের পর নির্ধারিত বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, সংগৃহীত তথ্যসমূহের শ্রেণিবিন্যাস, কল্পনা প্রণয়ন এবং তা যাচাইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়। যার ভিত্তিতে একটি সাধারণ সূত্রে পৌছানোর প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।
উদ্দীপকের শিক্ষার্থীরা সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত গবেষণায় এমন একটি পদ্ধতি বেছে নিতে চান যার মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমস্যার সমাধান করা যায়। এর মাধ্যমে মূলত শিক্ষার্থীরা বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যা উপরের আলোচনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।

ঘ. সমাজ গবেষণায় উদ্দীপকে নির্দেশিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কতগুলো স্তর রয়েছে-
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম কাজ হলো গবেষণার জন্য বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন। যেমন- মাদকাসক্তি, যৌতুক, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি এক একটি গবেষণার বিষয় হতে পারে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তর হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন। নির্বাচিত সমস্যাটিকে সূক্ষ্মভাবে চরিত্রায়ন এবং গবেষণার উপযোগী সংজ্ঞা প্রদান করা হয়। গবেষণার সমস্যার মধ্যকার ধারণাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের মাধ্যমে গবেষণার সমস্যা সমাধানের একটি আনুমানিক বিবৃতিই হলো অনুসিদ্ধান্ত বা কল্পনা। অনুসিদ্ধান্ত গঠন করার পর তা প্রাপ্ত তথ্যাবলি দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। তথ্য সংগ্রহ করার পর গবেষককে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করতে হয়। অবশেষে কল্পনাটি যদি তথ্য দ্বারা সমর্থিত হয় অথবা যথার্থ সাধারণীকরণ সম্ভব হয় তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে। বস্তুত ভবিষ্যদ্বাণী গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত হয়। অবশ্য গৃহীত অনুসিদ্ধান্তের বিপরীত সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গবেষককে একটি নির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে গবেষণাকার্য সম্পাদন করতে হয়।

৬. ইভার স্বপ্ন সে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। কিন্তু অভাবের দায়ে পরিবারের ভরণপোষণ করতেই তার বাবা হিমশিম খাচ্ছে। তাই ইভার বাবা ঠিক করলেন তার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিবেন। উল্লেখ্য যে, ইভার মতো এমন আরও অনেক মেয়ে আছে যারা এরূপ ভাগ্য মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা। 
ক. কখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি' শব্দটি ব্যবহার করা হয়? 
খ. কীভাবে অনুসিদ্ধান্ত যাচাই করা হয়?
গ. ইভার সমস্যাটি নিয়ে গবেষণা করলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কোন স্তরটিকে তুমি প্রথমেই অধিক গুরুত্ব দিবে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের উক্ত সমস্যা সম্পর্কে গবেষণায় তুমি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরগুলো কীভাবে কার্যকর করবে তা বিশ্লেষণ করো। 

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. জ্ঞান আহরণের উপায় হিসেবে যখন বিজ্ঞানকে বিবেচনায় আনা হয় তখন ‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি' শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

খ. গবেষণার জন্য প্রাপ্য তথ্যাবলিকে সারণিবদ্ধ করার পর যে কল্পনা বা কল্পনাসমূহ প্রণয়ন করা হয় তা প্রাপ্ত তথ্যাবলি দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে কি না সেটা যাচাই করে দেখার মাধ্যমে অনুসিদ্ধান্ত যাচাই করা হয়।
এ পর্যায়ের প্রধান কাজ হলো কল্পনা বা বিবৃতি বাস্তব ঘটনার সঙ্গে কতটা সম্পর্কযুক্ত বা সংগতিপূর্ণ তা যাচাই করে দেখা। এ যাচাই-বাছাইয়ের কাজে গৃহীত বিবৃতি বা কল্পনা পুরোপুরি সমর্থিত হতে পারে অথবা নতুন একটি সাধারণ বক্তব্য বা সূত্র প্রণয়ন করা যেতে পারে।

গ. ইভার বাল্যবিবাহের সমস্যাটি নিয়ে গবেষণাকালে বৈজ্ঞানিক উ পদ্ধতির যে স্তরটিকে আমি প্রথমেই অধিক গুরুত্ব দিব তা হলো সমস্যা প্রণয়ন।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম কাজ হলো গবেষণার জন্য বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন করা। দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা ঘটনা প্রত্যক্ষ করি, নানা সমস্যার সম্মুখীন হই। যে সমস্ত ঘটনা আমাদের কৌতূহলের উদ্রেক করে, আমরা সে সমস্ত ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই। আর এ সমস্ত ঘটনাবলিই গবেষণার উপযোগী। এক্ষেত্রে গবেষক সাধারণত সমাজবিজ্ঞানের আওতায় পড়া় শুধু এমন কোনো বিষয়কে গবেষণার জন্য নির্বাচন করে থাকে। এছাড়া সমসাময়িক সমাজে সমস্যাটির পরিধি, গুরুত্ব, যৌক্তিকতা বিবেচনায় আনতে হয়। যেমন- মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথার প্রতি গ্রামবাসীর মনোভাব ইত্যাদি এক একটি গবেষণার বিষয় হতে পারে।
ইভার সমস্যাটি একটি সামাজিক সমস্যা। আর এ সমস্যার সমাধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সমস্যা প্রণয়ন স্তরটিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর অন্যান্য স্তর অনুসরণ করতে হবে। সুতরাং উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সমস্যা নির্বাচন স্তরটিকে আমি প্রথমে গুরুত্ব দিব।

ঘ. উদ্দীপকের উক্ত সমস্যা তথা বাল্যবিবাহ সম্পর্কে গবেষণায় আমি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির যেসব স্তরগুলো কার্যকর করতে পারি সেগুলো হলো সমস্যা নির্বাচন, সমস্যার সংজ্ঞায়ন, অনুসিদ্ধান্ত প্রণয়ন, তথ্য সংগ্রহ, তথ্যের যথার্থতা ও নির্ভরযাগ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী করা।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম কাজ হলো গবেষণার জন্য সমস্যা নির্বাচন। দৈনন্দিন জীবনে নানা ঘটনার মধ্যে গ্রামীণ বাল্যবিবাহ অন্যতম। এটিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রথমে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তরটি হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন। অর্থাৎ, নির্বাচিত সমস্যাটিকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাতে তা গবেষণা উপযোগী বা বোধগম্য হয়। তৃতীয়ত উক্ত সমস্যাটি সম্পর্কে অনুসিদ্ধান্ত প্রণয়ন করবে, যা একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ। অনুসিদ্ধান্ত গঠন করার পর বৈজ্ঞানিক বাল্যবিবাহ সম্পর্কে তথ্য যাচাই বাছাই করবে। তথ্য সংগ্রহ করার পর গবেষককে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করতে হবে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরগুলো অনুসরণের মাধ্যমে উক্ত সমস্যা গবেষণায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এক্ষেত্রে প্রথমে আমাকে সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে যা কিনা ‘বাল্যবিবাহ'। সমস্যা সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে বলা যায় দরিদ্রতার সাথে বাল্যবিবাহ যুক্ত এবং এক্ষেত্রে অনুসিদ্ধান্ত হতে পারে- ‘দরিদ্রতা বাল্যবিবাহের অন্যতম একটি কারণ।' জরিপ পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করতে হবে। তথ্য যদি অনুসিদ্ধান্তের পক্ষে হয় তাহলে তা গবেষণায় বিষয়কে প্রমাণ করবে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করা হবে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উক্ত সমস্যা সম্পর্কে। গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির স্তরগুলো অনুসরণ ও সে অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই স্তরগুলো কার্যকর করা সম্ভব।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. সানজিদা মেধাবী ছাত্রী। সে ছোটবেলা থেকেই সৃজনীশক্তি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে জটিল এবং তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর সুশৃঙ্খল বিশ্লেষণের চেষ্টা করে। সে যে কোনো জ্ঞানগত আলোচনায় বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করে থাকে।
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তর কী?
খ. বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সানজিদার স্বভাবের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণার কোন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'সমস্যা নির্ধারণ করাই উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত পদ্ধতির একমাত্র কাজ’ - এ বক্তব্যের সাথে তুমি কি একমত? যুক্তি প্রদান করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তর হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন।

খ. বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য স্থান-কাল পাত্রভেদে পরিবর্তিত হয়।
বিজ্ঞান হচ্ছে বিশেষ জ্ঞান যা কার্যত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো- বিজ্ঞান সূক্ষ্ম ও বিশ্লেষণধর্মী, বস্তুনিষ্ঠ, প্রত্যয়গত ও তাত্ত্বিক, নিয়মতান্ত্রিক, মুক্তি নির্ভর ও প্রমাণ সাপেক্ষ। এবং এটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ভবিষ্যদ্বানী করে থাকে।

গ. সানজিদার ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।
যে যৌক্তিক পদ্ধতিতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলি বর্ণনা, ব্যাখা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেটাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আহরিত ফলাফল যাচাইকৃত, নিরপেক্ষ, সুশৃঙ্খল ও কষ্টসাধ্য এবং এই পদ্ধতির মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ, সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক জ্ঞান আহরণ করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে যেগুলো একটি সুশৃঙ্খল, বস্তুনিষ্ঠ ও ধারাবাহিক জ্ঞান অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো বিজ্ঞানের ভিত্তি, নিয়মতান্ত্রিক ও মূল্যবোধের ঊর্ধ্বে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে ঘটনা ও সমস্যা সম্পর্কে সাধারণীকরণ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, তানবীন নাহার ছোটবেলা থেকেই সৃজনীশক্তি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে জটিল এবং তাত্ত্বিক বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে বিশ্লেষণের চেষ্টা করে। যেকোনো জ্ঞানগত আলোচনায় সে বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করে থাকে যা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অতএব আমরা বলতে পারি যে, সানজিদার ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

ঘ. সমস্যা প্রণয়ন করাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একমাত্র কাজ’ু এ বক্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণভাবে একমত নই। কারণ সমস্যা প্রণয়ন ছাড়াও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম একটি কাজ হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন। নির্বাচিত সমস্যাটিকে সূক্ষ্মভাবে গবেষণার উপযোগী সংজ্ঞা প্রদান করা হয়। কোনো গবেষক বিষয়টিকে নিজের মতো করে সংজ্ঞা প্রদান করেন যাকে বলা হয় কার্যকরী সংজ্ঞা।
গবেষণা সমস্যার মধ্যেকার ধারণাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের মাধ্যমে গবেষণা সমস্যা সমাধানের একটি আনুমানিক বিবৃতিই হলো অনুসিদ্ধান্ত বা কল্পনা। গবেষণার অনুসন্ধানযোগ্য বিষয় চিহ্নিতকরণ এবং তার কার্যোপযোগীকরণের পাশাপাশি গবেষণার কল্পনা গঠন একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ।
অনুসিদ্ধান্ত গঠন করার পর তা প্রাপ্ত তথ্যাবলির দ্বারা সমর্থিত হচ্ছে কি না সেটা যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। তথ্য সংগ্রহ করার পর গবেষককে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করতে হয়। ভবিষ্যদ্বাণী গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত হয়। বস্তুত, সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং এভাবে বিশেষ বিশেষ ঘটনা জরিপ ও বিশ্লেষণ করে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলতে পারি, সমস্যা প্রণয়ন করাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একমাত্র কাজ নয় বরং এর আরও বহুবিধ কাজ রয়েছে।

৮. ‘ক’ কোম্পানি ভালো চা উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে তাদের চায়ের চাহিদা কমে গেছে। এজন্য কোম্পানির মালিক কাশেম সাহেব তার কিছু কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য মার্কেটে পাঠান। তারা নির্বাচিত ক্রেতা বিক্রেতার নিকট থেকে প্রশ্নমালার সাহায্যে সংগৃহীত উপাত্ত কাশেম সাহেবকে দেন। তিনি তা পর্যালোচনা করে দেখেন যে, সুদৃশ্য মোড়কজাতকরণের অভাবে তার কোম্পানির চায়ের চাহিদা কমে গেছে।
ক. সামাজিক গবেষণার শেষ ধাপ কোনটি? 
খ. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যার কারণ অনুসন্ধানে সামাজিক গবেষণার কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে তার বিকল্প কৌশল ব্যবহার করা যেত? যুক্তিসহ মতামত দাও।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক গবেষণার শেষ ধাপ হচ্ছে, গবেষণাকৃত বিষয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা।

খ. বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের দক্ষ উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়।
বিজ্ঞানী যে যৌক্তিক পদ্ধতিতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিষয়াবলির বর্ণনা, বাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন তাকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলা হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলো বিজ্ঞানের ভিত্তি। বাস্তব অবস্থা যেমন আছে তাকে তেমনিভাবেই অনুসন্ধান করে। সত্য উদ্ঘাটনই এ পদ্ধতির মুখ্য উদ্দেশ্য।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যা সমাধানে সামাজিক জরিপ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। 
সামাজিক গবেষণার জন্য যে সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সামাজিক জরিপ অন্যতম। জরিপ কথাটির অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সরেজমিনে পরিমাপ বা নিরূপণ করা। কোনো সমাজের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন কৌশলে তথ্যাবলি সংগ্রহ, তথ্যাবলির ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, অনুসিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে জরিপ পদ্ধতি। বস্তুত জরিপ পদ্ধতির সাহায্যে কোনো একটি বিষয়ের সামগ্রিক চিত্র লাভ করা সম্ভব।
উদ্দীপকে ‘ক’ কোম্পানি ভালো চা উৎপাদন করলেও সম্প্রতি বাজারে তাদের চায়ের চাহিদা কমে গেছে। এজন্য কোম্পানির মালিক তার কিছু কর্মকর্তাকে এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য মার্কেটে পাঠান। তারা নির্বাচিত ক্রেতা-বিক্রেতার নিকট থেকে প্রশ্নমালার সাহায্যে সংগৃহীত উপাত্ত মালিককে দেন। 'ক' কোম্পানির তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি পাঠ্য বইয়ের সামাজিক জরিপ পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ সামাজিক জরিপ পদ্ধতিতে কোনো বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশ্নমালার সাহায্যে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে সামাজিক জরিপ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'ক' কোম্পানি তথ্য সংগ্রহের জন্য সামাজিক জরিপ পদ্ধতি প্রয়োগ করে। এ পদ্ধতি ছাড়াও ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি, পরিসংখ্যান পদ্ধতি এবং পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সমাজ গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ঘটনা অনুধ্যান। সাধারণত একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সাধারণ সূত্রে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টাকে বলা হয় ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোনো ঘটনার সকল দিক বিশ্লেষণ করা হয় এবং কোনো একজন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ বা একটি অংশের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা হয়।
পরিসংখ্যান পদ্ধতির দ্বারা বিভিন্ন সামাজিক ঘটনাবলির মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য গাণিতিক পরিমাপ করা হয়। এ পদ্ধতির সাহায্যে সমাজবিজ্ঞানীরা অপরাধ, দারিদ্র্য, বয়স, সামাজিক স্তরবিন্যাসের মতো বিভিন্ন সামাজিক ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক যাচাই করতে পারেন।
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে মানুষের সামাজিক জীবন পর্যবেক্ষণ করে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মতৎপরতা পর্যালোচনা করা হয়। যখন কোনো রেকর্ড, উৎস, উপাত্ত লিখন বা মৌখিক তথ্যপ্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে না, তখন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক জরিপ ছাড়াও উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে 'ক' কোম্পানি তার গবেষণা কার্য সম্পন্ন করতে পারে। এ সকল পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে গৃহীত তথ্যের 'ক' কোম্পানি তাদের চায়ের চাহিদা পুনরায় বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

৯. সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র রোহান মনোগ্রাফ তৈরির জন্য 'সমাজে ধর্মের ভূমিকা' শীর্ষক বিষয় নির্ধারণ করে। তথ্য সংগ্রহের জন্য সে মসজিদ, মন্দির ও চার্চ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার জনগোষ্ঠীর নিকট থেকে প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। তার প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, সন্তান লাভ, রোগ মুক্তি, বিয়ে না হওয়া ইত্যাদির জন্য মানুষ ধর্মের দ্বারস্থ হয়। 
ক. সমাজ গবেষণার দ্বিতীয় ধাপ কোনটি? 
খ. সমাজ গবেষণায় দার্শনিক পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
গ. রোহান গবেষণার ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. রোহানের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল তার গবেষণার বিষয়বস্তুকে প্রতিষ্ঠিত করেছে- মূল্যায়ন করো। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজ গবেষণার দ্বিতীয় ধাপ হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন।

খ. দার্শনিক পদ্ধতিতে সামাজিক প্রপঞ্চসমূহের অন্তর্নিহিত রূপ বা তাৎপর্য সম্পর্কে বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। 
এ পদ্ধতিতে সমাজ গবেষক দার্শনিকের ভূমিকায় কাজ করেন। কোনো বস্তু, বিষয়, সমাজ বা ব্যক্তিকে তিনি বিশেষভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি একদিকে যেমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ের ওপর নিবদ্ধ অন্যদিকে গবেষণাধীন বিষয়ের ব্যাপকতা এবং সর্বজনীনতার প্রতিও তিনি সতর্ক থাকেন। সেই সঙ্গে গবেষক তার দর্শনে পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন।

গ. রোহান গবেষণার ক্ষেত্রে ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। সমাজ গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি। সাধারণত একাধিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে একটি সাধারণ সূত্রে উপনীত হওয়ার প্রচেষ্টাকে ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি বলা হয়। কোনো একটি বিশেষ পরিস্থিতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধ্যয়নে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে কোনো একটি ঘটনার সকল দিক বিশ্লেষণ করা হয় এবং কোনো একজন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ বা একটি অংশের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা হয়। ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিতে প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্দেশ্য হলো একটি অনন্য সাধারণ বিষয়ের গবেষণার মাধ্যমে এ ধরনের অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে একটি সামান্যীকরণে পৌঁছানো।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র রোহান গবেষণা মনোগ্রাফ তৈরির জন্য ‘সমাজে ধর্মের ভূমিকা' শীর্ষক বিষয় নির্ধারণ করে। তথ্য সংগ্রহের জন্য সে মসজিদ, মন্দির ও চার্চ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার জনগোষ্ঠীর নিকট থেকে প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। তার প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় সন্তান লাভ, রোগ মুক্তি, বিয়ে না হওয়া ইত্যাদির জন্য মানুষ ধর্মের দ্বারস্থ হয় যা ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, রোহান ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে তার গবেষণা সম্পন্ন করেছে।

ঘ. রোহানের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল হলো- সন্তান লাভ, রোগ মুক্তি, বিয়ে না হওয়া ইত্যাদির জন্য মানুষ ধর্মের দারস্থ হয়। রোহানের গবেষণার ফলে প্রাপ্ত এই ফলাফল তার গবেষণার বিষয়বস্তুকে প্রতিষ্ঠিত করে।
পদ্ধতি হচ্ছে গবেষণার একটি পন্থা। সাধারণত পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপকতার সাথে কোনো কিছু সম্পন্ন করতে হলে যে পন্থার সাহায্য নিতে হয় তাকেই পদ্ধতি বলে। সমাজবিজ্ঞানের যে নির্দিষ্ট অধ্যয়ন প্রক্রিয়া রয়েছে তাকেই সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতি বলা হয়।
উদ্দীপকে বর্ণিত সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র রোহান গবেষণা মনোগ্রাফ তৈরির জন্য ‘সমাজে ধর্মের ভূমিকা' শীর্ষক বিষয় নির্ধারণ করে। এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য সে মসজিদ, মন্দির ও চার্চ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগোষ্ঠীর নিকট থেকে প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে যা সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহৃত ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতিকে নির্দেশ করে। আর ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল গবেষণার বিষয়বস্তুকে প্রতিষ্ঠিত করে। শুধু ঘটনা অনুধ্যান পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলই যে কেবল গবেষণার পদ্ধতিকে প্রতিষ্ঠিত করে তা নয়; সমাজবিজ্ঞানে ব্যবহৃত অন্যান্য পদ্ধতিও গবেষণার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে।
সুতরাং আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রোহানের গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল তার গবেষণার বিষয়বস্তুকে প্রতিষ্ঠিত করে।

১০. তামিম তার চাচাকে বললেন, গ্রামীণ এলাকায় কিশোর অপরাধী বেশি। তখন চাচা বললেন, এটা তোমার ধারণাগত বিষয়। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় তোমার এ ধারণা পাল্টে যেতেও পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তোমার এ কৌতূহল যথার্থ করতে হলে ধারাবাহিকভাবে কতকগুলো পর্যায় অতিক্রম করে ভবিষ্যদ্বাণী করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম কাজ হবে গবেষণার বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন। 
ক. গবেষণা কী?
খ. কোন অর্থে সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানরূপে অভিহিত করা যায়? 
গ. উদ্দীপকে চাচা গবেষণার ক্ষেত্রে সমস্যা নির্বাচনের কথা বলেছেন কেন? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে করা হয় তা বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. গবেষণা হলো এক প্রকারের জ্ঞান অন্বেষণ, যা বিশেষ যুক্তিপূর্ণ নীতিমালার দ্বারা পরিচালিত হয়।

খ. বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো প্রজ্ঞা, ধীশক্তি, নির্দেশনা বা ধারণার জন্ম দেওয়া নয় বরং জ্ঞানের উদ্ভাবন। সমাজবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্যসমূহের বিচার-বিশ্লেষণপূর্বক জ্ঞান অন্বেষণের প্রচেষ্টা চালায়। এ অর্থে সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানরূপে অভিহিত করা যায়।

গ. উদ্দীপকে তামিম তার চাচাকে বললেন, গ্রামীণ এলাকায় কিশোর অপরাধী বেশি। তখন চাচা বললেন, এটা তোমার ধারণাগত বিষয়। 
বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় তোমার এ ধারণা পাল্টে যেতে পারে। উক্ত আলোচনার সাথে পাঠ্যবইয়ে বৈজ্ঞানিক স্তরসমূহের মধ্যে সমস্যা নির্বাচনের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। আর এজন্যই তামিমের চাচা গবেষণার ক্ষেত্রে সমস্যা নির্বাচনের কথা বলেছেন।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম কাজ হলো গবেষণার জন্য বিষয় বা সমস্যা নির্বাচন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা ঘটনা প্রত্যক্ষ করি, নানা সমস্যার সম্মুখীন হই। এগুলোর কোনোটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কোনোটি করে না। যে সমস্ত ঘটনা বা বিষয় আমাদের কৌতূহলের উদ্রেক করে, আমরা সে সমস্ত ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই। আর এ সমস্ত ঘটনাবলিই গবেষণার উপযোগী। সমসাময়িক সমাজে সমস্যাটির পরিধি, গুরুত্ব, যৌক্তিকতা বিবেচনায় আনতে হবে। যেমনত কিশোর অপরাধী, মাদকাসক্তি ইত্যাদি গবেষণার বিষয় হতে পারে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, যে কোন গবেষণা পরিচালনার প্রথম পর্যায় হলো সমস্যা নির্বাচন। তাই তামিমের চাচা সমস্যা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছেন।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তামিম তার চাচাকে বললেন, গ্রামীণ এলাকায় কিশোর অপরাধী বেশি। তখন চাচা বললেন, এটা তোমার ধারণাগত বিষয়। এখানে এটি অনুসন্ধান বা ধারণা বা কল্পনা। কেননা উদ্দীপকের সাথে পাঠ্য বইয়ের বৈজ্ঞানিক স্তরসমূহের অনুসিদ্ধান্তটির সাথে বিষয়গতভাবে মিল লক্ষ করা যায়।
গবেষণা সমস্যার মধ্যকার ধারণাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের মাধ্যমে গবেষণা সমস্যা সমাধানের একটি আনুমানিক বিবৃতিই হলো অনুসিদ্ধান্ত বা ধারণা বা কল্পনা। মূলত কল্পনা হলো দুটি প্রত্যয় বা ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ে একটি বিবৃতি, যা প্রমাণসাপেক্ষে গৃহীত হতে পারে। আবার তথ্য দ্বারা সমর্থিত না হলে সে কল্পনা বাতিল বলে গণ্য হতে পারে। উদ্দীপকে তামিমের চাচা এ কারণেই কিশোর অপরাধকে তামিমের ধারণাগত বিষয় বলে আখ্যায়িত করেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কৌতূহল যথার্থ করতে হলে ধারাবাহিকভাবে স্তরসমূহের পর্যায় অতিক্রম করে ভবিষ্যদ্বাণী করতে হয়।
পাঠ্যবইয়ে ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে বলা হয়েছে, কল্পনাটি যদি তথ্য দ্বারা সমর্থিত হয় অথবা যথার্থ সাধারণীকরণ সম্ভব হয় তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। বস্তুত ভবিষ্যদ্বাণী গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত হয়। অবশ্য গৃহীত তথ্যের বিপরীত সিদ্ধান্তও আসতে পারে। সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং এভাবে বিশেষ বিশেষ ঘটনা জরিপ ও বিশ্লেষণ করে সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post