HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Sociology 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. সমাজবিজ্ঞান ক্লাসে স্যার বোর্ডে একটি বিষয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য লিখলেন। যথা: ১. অতি প্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস, ২. জ্ঞান, অনুভূতি ও ক্রিয়ার এক সার্থক সমন্বয় দেখা দেয়, ৩. মানুষ পার্থিব বা অপার্থিব কোনো কিছু পাওয়ার আশায় এ অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস করে।
ক. আচার-আচরণের পশ্চাতে মানসিক কারণ ছাড়া আর কোন শক্তির প্রভাব রয়েছে?
খ. সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে ম্যাকিয়াভেলি কীরূপ অবদান রেখেছিলেন? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্তত ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত বিষয়টি ছাড়াও সমাজবিজ্ঞানের পরিধি আরো ব্যাপক- এ সম্পর্কে তোমার মতামত উপস্থাপন করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. আচার-আচরণের পশ্চাতে মানসিক কারণ ছাড়া অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি শক্তির প্রভাব রয়েছে।

খ. সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে যে কয়েকজন ব্যক্তির অবদান স্বীকার্য তার মধ্যে ম্যাকিয়াভেলি অন্যতম। সমাজদর্শন প্রচার করতে গিয়ে তিনি বাস্তবতার আশ্রয় নিয়েছেন। এর মাধ্যমে ম্যাকিয়াভেলি সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার ঞযব চৎরহপব গ্রন্থে আলোচনা করেন। তার সমাজ আলোচনার মূল ভিত্তি ছিল মানব প্রকৃতি ও মানব মনোভাব। তৎকালীন সময়ে সমাজের মানুষ যে নৈরাজ্যকর অবস্থায় ছিল ম্যাকিয়াভেলি তার সুষ্ঠু ব্যাখ্যা দেন যা সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি হলো ধর্ম। কারণ ধর্ম হচ্ছে অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস। ধর্মে জ্ঞান, অনুভূতি ও ক্রিয়ার এক সার্থক সমন্বয় দেখা দেয়। এছাড়া মানুষ পার্থিব ও অপার্থিব কোনো কিছু পাওয়ার আশায় এ শক্তিতে বিশ্বাস করে। ধর্ম সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।
সমাজজীবনে ধর্মের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে জাতি ও গোষ্ঠীগত পার্থক্য এবং শ্রেণিবিভাজন পরিলক্ষিত হয়। ধর্ম মানুষের আচরণ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এবং সমাজ বা গোষ্ঠীগত স্বকীয়তা দান করে। ধর্মীয় মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ধর্মের উৎপত্তি ও এর বিকাশ, ধর্মের গুরুত্ব, ধর্মের প্রভাব, ধর্মের প্রকারভেদ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে এর কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
সুতরাং আমরা যথার্থই বলতে পারি যে, স্যারের আলোচিত ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।

ঘ. ধর্ম ছাড়াও সকল সামাজিক ঘটনাই সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তুর অন্তর্গত। 
প্রতিনিয়ত সমাজবিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখার উদ্ভব ঘটছে। নিচে সমাজবিজ্ঞানের শাখাসমূহ উল্লেখ করা হলো মানবসমাজের সবচেয়ে আদিম সংগঠন হলো পরিবার। প্রাচীনকালে পরিবারকে কেন্দ্র করেই মানবসমাজের সব কর্মকান্ড সম্পাদিত হতো। সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হলো পরিবারের সমাজবিজ্ঞান।
ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞানে প্রাচীন সমাজ, সমাজের উদ্ভব, বিকাশ এবং বর্তমান সমাজের জীবনযাত্রা সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। যার সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম উপাদান হচ্ছে জনসংখ্যা। জনগণই সমাজের গোড়াপত্তন করে। সমাজ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করতে হলে জনসংখ্যার কাঠামো, বণ্টন, বয়ঃকাঠামো, আদমশুমারি, জনসংখ্যা তত্ত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে জানা অপরিহার্য।
অপরাধ, অপরাধপ্রবণতা, দারিদ্র্য, কিশোর অপরাধ, অপরাধের কারণ, অপরাধের স্বরূপ প্রভৃতি নিয়ে অপরাধ সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিষয়াদির সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, গোষ্ঠী তথা নাগরিকের সম্পর্ক নিরূপণ করে। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক ও বিসত্মৃত।

২. স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস ফিকে হতে হতে আবারও নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে যায় স্বপ্নময় অধ্যায়। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলেও যে সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন বিপ্লবীরা, সে স্বপ্ন পূরণ হয় নি আজও। গত শতাব্দীর চার দশকে দেশজুড়ে যে বিপ্লবের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সে বিপ্লব কেন অসমাপ্ত থাকল, কেন ব্যর্থ হলো সে প্রচেষ্টা, সেই ইতিহাসেরই বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থ 'উত্তাল চল্লিশ' অসমাপ্ত বিপ্লব। 
ক. ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও মালিকানা সব দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং শোষণের মূল’ - উক্তিটি কার? 
খ. সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবে মর্গানের অবদান ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক থেকে সমাজবিজ্ঞানের সাথে উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, সমাজবিজ্ঞানের সাথে উক্ত বিষয়টির মধ্যকার সম্পর্ক হলো সাহায্য ও সহযোগিতার? মতামত দাও।

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উক্তিটি জার্মান দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ কার্ল মার্কস-এর।

খ. সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে আমেরিকান আইনবিদ ও সামাজিক নৃবিজ্ঞানী লুইস হেনরি মর্গান অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন।
ইরোকুয়া ইন্ডিয়ান নৃগোষ্ঠীর উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে গবেষণা করে হেনরি মর্গান ১৮৭৭ সালে রচনা করেন ‘Ancient Society’, যেখানে তিনি সমাজ বিবর্তনের তিনটি ধাপ চিহ্নিত করেন; যথাত বন্যদশা, বর্বরদশা ও সভ্যতা। এছাড়া মর্গান আদিম পরিবারব্যবস্থা, বিবাহ এবং সম্পত্তির বিকাশ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন, যা সামাজিক নৃবিজ্ঞানের ভিত্তিমূল হিসেবে বিবেচিত হয়। বস্তুত নতুন একটি বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পথচলায় লুইস হেনরি মর্গানের বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গ. উদ্দীপকে যে বিষয়টি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে তাহলো ইতিহাস। উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক থেকে সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ইতিহাসে কালের সাথে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মানবীয় বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। পক্ষান্তরে, সমাজবিজ্ঞানে সামাজিক সম্পর্কের দিক থেকে সেসব বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়।
সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। স্থান-কালের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঘটনার পর্যায়ক্রমিক আলোচনা করাই হলো ইতিহাসের উদ্দেশ্য। পক্ষান্তরে, সমাজবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো ঘটনাবলির অন্তর্ভুক্ত আন্তঃমানবিক সম্পর্ক বিষয়ক যাবতীয় কর্মকান্ডের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করা। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে যথেষ্ট পার্থক্য বিরাজমান।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি যে, সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের মধ্যকার সম্পর্ক হলো সাহায্য ও সহযোগিতার। এ সম্পর্কে আমার মতামত নিম্নে আলোচনা করা হলো-
ইতিহাস হলো মানবসমাজের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ধারাবাহিক বিবরণ। অন্যদিকে মানবসমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের এক সামগ্রিক অনুশীলনই সমাজবিজ্ঞান। সেদিক থেকে দেখতে গেলে সমাজবদ্ধ মানুষ নিয়েই উভয় বিষয় আলোচনা করে। এই অভিন্নতার ভিত্তিতে উভয়ের মধ্যে যেমন পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বিদ্যমান, তেমনি এরা একে অন্যের পরিপূরকও। এছাড়া সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনধারার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সুসঙ্গত জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে সমাজবিজ্ঞানীদেরকে তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাসের সাহায্য নিতে হয় একইভাবে ইতিহাসের বিষয়বস্তুসমূহ সঠিকভাবে অনুধাবন করার জন্য ইতিহাসবিদদেরকেও সমাজবিজ্ঞানের সহায়তা গ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্ক হলো সাহায্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক।
অতএব বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের মধ্যকার সম্পর্ক মূলত সাহায্য ও সহযোগিতার।

৩. এলাকাটির অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, দারিদ্র্য আর নিরক্ষরতা তাদের নিত্যসঙ্গী। অঞ্চলটিতে জনবসতি তেমন না থাকলেও সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে তারা একে অপরকে দাওয়াত দেয়। এখনও নারী শিক্ষার প্রতি তারা যেমন উদাসীন তেমনি বাল্যবিবাহ বিষয়ে অসচেতন। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অঞ্চলটিতে এসব সমস্যা নিয়ে কাজ করছে।
ক. এমিল ডুর্খেইম প্রদত্ত সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞাটি লিখ। 
খ. দলিল-দস্তাবেজনির্ভর গবেষণা পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় সমাজবিজ্ঞানের কোন পরিধির প্রতি ইংগিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের পরিস্থিতিতে সমাজবৈজ্ঞানিক জ্ঞান কতটুকু ফলপ্রসূ হবে বলে তুমি মনে কর? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলেন, ‘‘সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।’’

খ. দলিল-দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতি বলতে ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে বোঝায়।
ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে অতীত ঘটনা সম্পর্কে যুক্তিনির্ভর গবেষণা প্রচেষ্টাকে ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা, প্রক্রিয়া এবং প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে অতীতের কোনো বিশেষ সময়ের সামাজিক জীবনের গতি-প্রকৃতি, উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ঐতিহাসিক পদ্ধতির তথ্যের উৎস হলো দলিল বা নথিপত্র, আত্মজীবনী, ব্যক্তিগত রোজনামচা, চিঠিপত্র ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকের বর্ণনায় সমাজবিজ্ঞানের পরিধির আওতাভুক্ত গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সাধারণভাবে বলা যায়, গ্রামকেন্দ্রিক সমাজজীবন নিয়ে যে বিজ্ঞান আলোচনা করে তাকে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বলে। বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। ফলে গ্রামীণ কৃষি, কৃষি কাঠামো, অর্থনীতি, বিবাহ, বাল্যবিবাহ, পরিবার, জ্ঞাতিসম্পর্ক, নেতৃত্ব, ক্ষমতা কাঠামো, মর্যাদা, সামাজিক কাঠামো ইত্যাদি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের তাগিদে গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা করে।
উদ্দীপকে উল্লেখ করা এলাকাটির অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। তাছাড়া এলাকাটি দারিদ্র্য আর নিরক্ষরতার মতো সমস্যায় আকীর্ণ। গ্রামটিতে রয়েছে বাল্যবিবাহের চল আর নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীনতা। এ বিষয়গুলো সাধারণত গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় বেশি দেখা যায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বর্ণনায় গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের পরিধির ইঙ্গিত রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের গ্রামটিতে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, নারী শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা, বাল্যবিবাহ, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ফলপ্রসূ হতে পারে বলে আমি মনে করি।
যেকোনো আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অথবা কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় না, যদি সে পরিকল্পনা সামাজিক বাস্তবতার আলোকে প্রণীত না হয়। সমাজে কী সমস্যা রয়েছে, তার সমাধানে বাধা কোথায়, এর মাধ্যমে কোন শ্রেণির মানুষ কতটা উপকৃত হবে, গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে কী কী সামাজিক বাধা রয়েছে, আর কীভাবেই বা তা দূর করা যায় এসব বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য সমাজবিজ্ঞান সহায়তা করে।
উদ্দীপকের গ্রামটিতে নানাবিধ সমস্যা বিরাজমান। যেমনত নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, নারী শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান কার্যকর হতে পারে, যা উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, উদ্দীপকের পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ সামাজিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে।

৪. কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। সে তার খালার বাসায় থেকে পড়ালেখা করছে। তার খালু একজন সরকারি চাকরিজীবী। একদিন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কবির তুমি কোন বিষয়ে পড়ালেখা করছো? কবির উত্তর দিল আমি এমন একটি বিষয়ে পড়ালেখা করছি যা মানুষের চালচলন, আচার-আচরণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। 
ক. ‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান’ - উক্তিটি কার?
খ. ত্রয়স্তর সূত্রটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে কোন বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সমাজবিজ্ঞান সমাজের পূর্ণাঙ্গ পাঠত উদ্দীপকের আলোকে তোমার মতামত যুক্তিসহ আলোচনা করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান’ উক্তিটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানের জনক এমিল ডুর্খেইমের।

খ. মানব জ্ঞানের ক্রমোন্নতি এবং সমাজের উন্নতি ও ক্রমবিকাশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ যে তত্ত্ব প্রদান করেন, তা ত্রয়স্তর সূত্র নামে পরিচিত।
অগাস্ট কোঁৎ-এর মতে, মানুষের চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণাসমূহ, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এবং পৃথিবীর সব সমাজ অত্যাবশ্যকীয়ভাবে তিনটি স্তর অতিক্রম করে এসেছে। কোঁৎ-এর সমাজ বিকাশের এই তিনটি স্তরই 'ত্রয়স্তর' নামে পরিচিত। ত্রয়স্তরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হে মানুষের মৌলিক ধারণা ধর্মীয় যুগের স্তর, অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর ও দৃষ্টবাদ এ তিনটি বিবর্তনিক পর্যায় অতিক্রান্ত করেছে। অর্থাৎ মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রথমে ধর্মীয় বা Theological ধারণা থেকে উৎপন্ন হয়ে Metaphysical বা অধিবিদ্যাগত হয়ে Positivism বা দৃষ্টবাদে আসে।

গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Sociology’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ ‘Socius’ এবং গ্রিক শব্দ ‘Logos’-এর = সমন্বয়ে। ‘Socius’ শব্দের অর্থ সমাজ এবং ‘Logos’ শব্দের অর্থ জ্ঞান। অর্থাৎ উৎপত্তিগত অর্থে সমাজবিজ্ঞান বলতে বোঝায়, সমাজের জ্ঞান।
যে শাস্ত্র সমাজ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ বা বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে তাই সমাজবিজ্ঞান। তবে সমাজবিজ্ঞানের সর্বজনস্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা নেই। তথাপি কোনো কোনো সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজবিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন, সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম বলেন, ‘‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।’’ সমাজবিজ্ঞানী আর.টি. শেফার তার ‘Sociology’ গ্রন্থে বলেন, ‘‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক আচরণ ও সামাজিক গোষ্ঠীসমূহের সুশৃঙ্খল পাঠ।’’ মোটকথা সমাজ ও সমাজের মানুষের সাথে জড়িত সব ধরনের বিষয় নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই সমাজবিজ্ঞান।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কবিরের খালু কবিরকে কোন বিষয়ে লেখাপড়া করছে জিজ্ঞাসা করলে কবির বলে, আমি এমন একটি বিষয়ে লেখাপড়া করছি যা মানুষের চালচলন, আচার-আচরণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। উপরে প্রদত্ত সমাজবিজ্ঞানের প্রামাণ্য সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায় যে, কবিরের এ বক্তব্য সমাজবিজ্ঞানকেই নির্দেশ করে।

ঘ. সমাজকে সামগ্রিক এবং ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করে বলে সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের পূর্ণাঙ্গ পাঠ বলা হয়। এ প্রসঙ্গে উদ্দীপকের আলোকে আমার মতামত যুক্তিসহ আলোচনা করা হলোত সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা সমাজের সঙ্গে জড়িত সব বিষয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ করে। অর্থাৎ, সমাজের মধ্যে যেসব বিষয় রয়েছে তার প্রত্যেকটি বিষয় সমাজবিজ্ঞান পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন করে। সমাজ, সংঘ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সমাজকাঠামো, সামাজিক স্তরবিন্যাস, সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সমস্যা, সামাজিক পরিবর্তন, সামাজিক ইতিহাস, সামাজিক উন্নয়ন ইত্যকার বিষয়গুলো সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার আওতাভুক্ত এবং এর সঙ্গে জড়িত সব বিষয় নিয়েই সমাজবিজ্ঞান গভীরভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে। সামাজিক বিজ্ঞানের শাখাসমূহ যেমনত রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমাজকল্যাণ, নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি মূলত সমাজের এক একটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ সামাজিক বিজ্ঞানের উক্ত শাখাসমূহের কোনোটাই সমাজ সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়নের দাবি করতে পারে না। পক্ষান্তরে, গোটা সমাজই সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয় বা ক্ষেত্র। মূলত এ কারণেই সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের পূর্ণাঙ্গ পাঠ বলা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কবির এমন একটি বিষয়ে লেখাপড়া করছে, যে বিষয়টি মানুষের চালচলন, আচার-আচরণ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে। আর এ বিষয়গুলো কেবল সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্যসূচির অংশ। এ কারণেই বলা হয় যে, সমাজবিজ্ঞান সমাজের পূর্ণাঙ্গ পাঠ।

৫. রনি তার জন্মদিনে একটি বই উপহার পেলো। বইটি পড়ে রনি সমাজের ক্ষুদ্র সংগঠনের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রকরণ, কার্যাবলি এবং সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারল। সে মানুষের আচার আচরণ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রথা, বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন জাতি সম্বন্ধেও জানতে পারে। অবশেষে রনি মানুষের পারিপার্শ্বিক ঘটনাসমূহের কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করে।
ক. ‘‘সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে’’- উক্তিটি কোন সমাজবিজ্ঞানীর? 
খ. শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকের রনি বই পড়ে যে ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারে তা সমাজবিজ্ঞানের কোন শাখায় আলোচনা করা হয়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি মানব সমাজের সামগ্রিক পাঠত- বিশ্লেষণ করো।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘‘সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে’’- উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানী রবার্ট এম ম্যাকাইভার ও চার্লস এইচ পেজ এর।

খ. শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞান অনুসন্ধানের একটি বিশেষ চিত্র।
শিক্ষাকে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা বা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হিসেবে 'শিক্ষা সমাজবিজ্ঞানের' উৎপত্তি। সমাজবিজ্ঞানের এ শাখাটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবিষয় বহির্ভূত নানাবিধ কার্যকলাপ, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশাসনিক দিক, শিক্ষার মাধ্যম, শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন, শিক্ষার সাথে সামাজিক শ্রেণির সম্পর্ক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া এটি সমাজের অন্যান্য বিষয় যেমন- অর্থনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদির সাথে শিক্ষার সম্পর্ক নিয়েও পঠন-পাঠন এবং গবেষণা করে।

গ. উদ্দীপকের রনি বই পড়ে যে ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারে তা হলো পরিবার। পরিবার ও পরিবার সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়।
‘বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞান' হলো সমাজবিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা পরিবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। সমাজবিজ্ঞানের এ শাখা পরিবারের উৎপত্তি, প্রকারভেদ, কার্যাবলি, বিকাশ, পরিবর্তনশীলতা, সমাজজীবনে পরিবারের প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে অধ্যয়ন করে। এছাড়া পরিবারের বিভিন্ন সমস্যা এবং পরিবারের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ও সমাজবিজ্ঞানের এই শাখা আলোচনা করে। পাশাপাশি পরিবার গঠিত হওয়ার মূল ভিত্তি বিবাহ ও তার ধরন, প্রকৃতি, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতি বিষয়ও সমাজবিজ্ঞানের এ শাখার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। মোটকথা পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় নিয়েই সমাজবিজ্ঞানের এ শাখা আলোচনা করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রনি জন্মদিনে একটি বই উপহার পায়। বইটি পড়ে সে সমাজের একটি ক্ষুদ্র সংগঠনের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রকরণ, কার্যাবলি এবং সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারে। সে আরো জানতে পারে মানুষের আচার-আচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রথা বিশ্বাস, সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্বন্ধে। তার এ জানার মাধ্যমটি সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞানকেই নির্দেশ করে। উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, রনি যে ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন সম্পর্কে জানতে পারে, তা সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টি সামাজিক বিজ্ঞানের নবীনতম শাখা সমাজবিজ্ঞানকে নির্দেশ করে। এই কথা অনস্বীকার্য যে, বিষয়টি মানব সমাজের সামগ্রিক পাঠ। সমাজবিজ্ঞান শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Sociology, যা ল্যাটিন শব্দ Socius (অর্থ-সমাজ) ও গ্রিক শব্দ Logos (অর্থ-বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান) এই দুটি শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। তাই / উৎপত্তি অর্থে বলা যায়, সমাজ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞানই সমাজবিজ্ঞান। পারিভাষিক অর্থে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান হলো ঐ বিজ্ঞান যা সমাজের সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করে।
সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বস্তুত মানব সমাজের এমন কোনো দিক নেই যা 'সমাজবিজ্ঞানে আলোচিত হয়নি। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি দিক নিয়ে সমাজবিজ্ঞান পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন করে। সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার ব্যাপকতার কারণে সমাজবিজ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত করে আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যেমনত ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান সমাজের অতীত ইতিহাস নিয়ে, বিবাহ ও পরিবার সমাজবিজ্ঞান পরিবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে, নগর সমাজবিজ্ঞান নগরের স্বরূপ, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান গ্রামের স্বরূপ, ধর্মের সমাজবিজ্ঞান ধর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। এমনিভাবে সমাজবিজ্ঞানের আরো বহুবিধ শাখা রয়েছে যে শাখাগুলো বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনা করে। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় মানব সমাজের সাথে জড়িত সকল বিষয়ই আলোচিত হয়। এ কারণেই সমাজবিজ্ঞানকে মানব সমাজের সামগ্রিক পাঠ বলা হয়।
উপরের আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞানই মানবসমাজের সামগ্রিক পাঠ, এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। 

৬. সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক জনাব বি সি বিশ্বাস উক্ত শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের আলোচনায় বলেন, এ বিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের শাখাসমূহের মধ্যে নবীনতম। যা ল্যাটিন ও গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। এ বিষয়ে কোনো সর্বজনবিদিত সংজ্ঞা নেই। তবে বিভিন্ন মনীষী একটি বিষয়ে একমত, এ বিজ্ঞান সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে।
ক. সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ম্যাকাইভার কী বলেছেন?
খ. সামাজিক দায়িত্ব পালনে সমাজবিজ্ঞানের ভূমিকা লেখ। 
গ. উদ্দীপকে কোন শাস্ত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে? উক্ত বিষয়টির ব্যুৎপত্তিগত উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিষয়টির উদ্ভব ও বিকাশ বিশ্লেষণ করো।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ম্যাকাইভার বলেন, ‘‘সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান, যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে।’’

খ. সুষ্ঠুভাবে সমাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের প্রতি মানুষের রয়েছে অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য। যেমন- সমাজ ও রাষ্ট্রের আইন মান্য করা, কর প্রদান করা, সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। আর সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষা এক্ষেত্রে মানুষকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে।

গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রটির বুৎপত্তিগত উৎপত্তির কথা বলা হয়েছে।
সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে বিবিধ সম্পর্ক স্থাপিত হয় সেই সম্পর্কর্জালের বিশ্লেষণ করার তাগিদ থেকেই সমাজবিজ্ঞানের সূত্রপাত। ১৮৩৯ সালে ফরাসি সমাজচিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞান প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন। তিনি শুরুতে সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক পদার্থবিদ্যা (Social Physics) বলতে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু সে সময় বেলজিয়ামের পরিসংখ্যানবিদ এডলফ কুয়েটলেট তার সমাজের সংখ্যাবাচক বিশ্লেষণের বর্ণনায় প্রত্যয়টি ব্যবহার করার ফলে কোৎ ভিন্ন একটি প্রত্যয় খুঁজে অবশেষে সমাজবিজ্ঞানকে (Sociology) নির্বাচন করেন। Sociology শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Socius এবং গ্রিক শব্দ Logos থেকে এসেছে। Socius শব্দের অর্থ সঙ্গী যা সমাজকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে Logos শব্দটি দ্বারা জ্ঞানকে নির্দেশ করা হয়। সুতরাং শব্দগত বা ব্যুৎপত্তিগত অর্থে সমাজবিজ্ঞান হলো জ্ঞানের সেই শাখা যা সাধারণীকরণ বা বিমূর্তায়ন পর্যায়ে সমাজের সাথে সম্পৃক্ত।
উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক বলেন, এ শাস্ত্রটি ল্যাটিন ও গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। যা সমাজবিজ্ঞানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থকেই নির্দেশ করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রটির কথা বলা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিজ্ঞান অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ বিশ্লেষণ করা হলো।
সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। তবে সমাজ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার ইতিহাস সমাজের মতই অতি প্রাচীন এবং দীর্ঘ দিনের। বস্তুত সমাজবিজ্ঞানের জন্ম হয় পাশ্চাত্যের শিল্প-বিপ্লবকালে। ফরাসি চিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁৎকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের জনক। কেননা, তিনিই সর্বপ্রথম ১৮৩৯ সালে 'ঝড়পরড়ষড়মু' শব্দটি চয়ন করেন। তিনি মানব সমাজের প্রকৃতি নির্ধারণ, সমাজের উদ্ভব এবং বিকাশের নিয়মনীতি ব্যাখ্যায় এবং সামাজিক ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যায় তার জীবনের অনেক সময় ব্যয় করেন। তিনি সমাজ বিশ্লেষণের জন্য একটি পৃথক বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই অনুভব থেকেই তিনি একটি বিজ্ঞানের জন্ম দেন এবং ঐ বিজ্ঞানের নাম দেন ঝড়পরধষ চযুংরপং. পরবর্তীতে তিনি এটিকে ঝড়পরড়ষড়মু নামে অভিহিত করেন। এভাবেই সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব হয়। উল্লেখ্য সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভবে ম্যাকিয়াভেলি, টমাস ম্যুর, কার্ল মার্কসের মত সমাজবিজ্ঞানীদের অবদানও অস্বীকার করা যায় না। উপরের আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান একটি নবীন শাস্ত্র হলেও-এর উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস সুপ্রাচীন।

HSC সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. সুরমা ডিগ্রী কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক শাকিল সাহেব একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার প্রথম ক্লাশে পড়াতে এসেছেন। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বললেন, আজ তোমাদের এমন একটি বিষয় পড়াব, যা সমাজের শিক্ষা, পরিবার, ধর্ম এমনকি চিকিৎসা ব্যবস্থার পদ্ধতিগত দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে। শুধু তাই নয়, শাস্ত্রটি একটি গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে সমাজজীবনের প্রায় সকল বিষয় অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করে থাকে। 
ক. ল্যাটিন শব্দ 'ঝড়পরঁং'-এর অর্থ কী? 
খ. ‘‘সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজকাঠামোর অধ্যয়ন’’- ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকের শাকিল সাহেব ছাত্র-ছাত্রীদের কোন বিষয়টি পড়াবেন? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয়টি অধ্যয়ন করা বর্তমান সমাজের জন্য আবশ্যক? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ল্যাটিন শব্দ ‘Socius’-এর অর্থ ‘Companion’ বা 'সঙ্গী'।

খ. সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নের মাধ্যমে সমাজকাঠামোর পূর্ণাঙ্গ পাঠ সম্ভব হওয়ায় এ শাস্ত্রকে সমাজকাঠামোর অধ্যয়ন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সমাজকাঠামোর ভিত্তি হচ্ছে মানব সম্পর্ক। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কাঠামোর দ্বারাই সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যক্তি, সামাজিক গোষ্ঠী, প্ৰথা, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে। তাই বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজকাঠামো সম্পর্কিত পাঠ।

গ. উদ্দীপকের শাকিল সাহেব ছাত্র-ছাত্রীদের সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি পড়াবেন।
আমরা জানি, প্রকৃতিগতভাবে সমাজবিজ্ঞান একটি গতিশীল বিজ্ঞান। কারণ এটি সামাজিক গতিশীলতা বা পরিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ করে। সেইসাথে একটি গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার পঠন-পাঠন এবং গবেষণা অব্যাহত রাখে। শুধু তাই নয়, সমাজের বিভিন্ন দিক পঠন-পাঠন এবং গবেষণার জন্য সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার উদ্ভব ঘটেছে। যেমন- শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান' শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য এবং এর সাথে সমাজের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক সম্বন্ধে অধ্যয়ন ও গবেষণা করে। আবার ‘পরিবার সমাজবিজ্ঞান পরিবারের উৎপত্তি, বিবর্তন, বিকাশ, ধরন, কার্যাবলি ও পরিবারের সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করে। এছাড়া ‘ধর্মের সমাজবিজ্ঞান ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, প্রথা, বিশ্বাস, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সামাজিক গুরুত্ব এবং সামাজিক সম্পর্ক নির্ধারণে ধর্মের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা করে থাকে। অন্যদিকে 'চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান' অসুস্থ ব্যক্তির সামাজিক পটভূমি, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার সফলতা ও ব্যর্থতা, অসুস্থ রোগীর সুস্থ হওয়ার পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করে।
উদ্দীপকের শাকিল সাহেব ছাত্র-ছাত্রীদের যে বিষয়টি পড়াতে চেয়েছেন, সে শাস্ত্রটিও একটি গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে সমাজের শিক্ষা, পরিবার, ধর্ম ও চিকিৎসা ব্যবস্থার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি সমাজজীবনের প্রায় সকল দিক নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করে। পূর্বোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, শাকিল সাহেব ছাত্র-ছাত্রীদের সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি পড়াবেন।

ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি, উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশিত বিষয় তথা সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা বর্তমান সমাজের জন্য খুবই প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমার যুক্তি নিচে উপস্থাপন করা হলো-
সমাজবিজ্ঞান সমাজের সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনে মূল ভূমিকা পালন করে। সুতরাং কেউ যদি সমাজ সম্পর্কে কোনো পরিকল্পনা করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই সমাজবিজ্ঞান পাঠ করতে হবে। আবার সমাজবিজ্ঞান পাঠ ব্যতীত দেশের সামাজিক সমস্যার কারণ এবং তার সমাধানের উপায়ও খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। কেননা সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, বিদ্যমান সামাজিক সমস্যার কারণ, ফলাফল এবং সমাধানের উপায় অনুসন্ধান করা। এছাড়া পরিবর্তনশীল সমাজের অধ্যয়ন এবং এ পরিবর্তনের সাথে মানুষের সম্পর্ক নির্ণয় করতে গিয়ে সমাজস্থ মানুষ সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়ত অনুভব করছে। কারণ পরিবর্তনশীল সমাজ সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে একমাত্র সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রই সমাজের বাস্তবতা অনুধাবনে সাহায্য করে। পাশাপাশি কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে কী কী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা রয়েছে, আর কীভাবে তা দূর করা যায়, সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্যও সমাজবিজ্ঞানের পাঠ একান্ত জরুরি।
আমরা জানি, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বার্থগোষ্ঠীসমূহ সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। বেকার সমস্যা, কম বয়সীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা, নানারকম অসামাজিক কাজকর্ম, চুরি-রাহাজানি ইত্যাদি সামাজিক ব্যাধি ছোঁয়াচে রোগের মতো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি নানা কারণে বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তুষ্টি, বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ দেখা দিচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানই পারে কার্যকরভাবে সহায়তা করতে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই দৃঢ়তার সাথেই বলা যায় যে, বর্তমান পরিবর্তনশীল সমাজের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠ করা একান্ত আবশ্যক।

৮. রিয়া একটি বাংলা বস্নগের মাধ্যমে জানতে পারল, মধ্যযুগের সমাজ ছিল ঐতিহ্যনির্ভর, সুস্থির, গতিহীন ও অপরিবর্তনীয়। সে সময়কার গ্রামীণ জীবনে বর্তমানের মতো সামাজিক গতিশীলতা ছিল না। ঋতুচক্রের মতোই তাদের জীবন, ছিল জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ। অথচ বর্তমান সমাজ হচ্ছে প্রচ-রকম গতিশীল একটি সমাজ। এটি পড়ার পর রিয়ার মনে হলো যে, এ বক্তব্যটি সমাজ জীবন সম্পর্কিত একটি শাস্ত্রের প্রকৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 
ক. মার্কসবাদী সমাজ বিকাশের ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক সমাজ কোনটি?
খ. সচেতনতা জাগ্রত করতে সমাজবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের রিয়া কোন শাস্ত্র সম্পর্কে জেনেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয়টি কি একইসাথে স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতা নিয়ে আলোকপাত করে? মতামত প্রদান করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. মার্কসবাদী সমাজ বিকাশের ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক সমাজ হচ্ছে আদিম সাম্যবাদী সমাজ।

খ. সমাজবিজ্ঞান আমাদেরকে আত্মসচেতন, শ্রেণিসচেতন, সমাজসচেতন এবং সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে সহায়তা করে।
ব্যক্তি হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের পরিচয় কী, সামাজিক কোন শ্রেণিতে আমাদের অবস্থান এবং কোন সামাজিক পরিবেশে আমরা সমাজজীবন অতিবাহিত করি তা জানতে ও বুঝতে সমাজবিজ্ঞান সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এজন্যেই বলা হয় যে, সচেতনতা জাগ্রত করার জন্য সমাজবিজ্ঞানের বিকল্প খুব কম শাস্ত্রেই রয়েছে।

গ. রিয়া মানবসমাজ সম্পর্কিত অন্যতম শাস্ত্র সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে জেনেছে। তার পঠিত বস্নগের বিষয়বস্তু পর্যালোচনায় বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আমরা জানি, সমাজবিজ্ঞান একাধারে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক গতিশীলতার বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। এটা যেমন একদিকে সমাজের স্থিতি অবস্থার বর্ণনা ও বিশ্লেষণ, অন্যদিকে এটা আবার সামাজিক গতিশীলতা বা পরিবর্তনের বর্ণনা ও বিশ্লেষণ। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান সমাজের গতিশীলতা ও স্থিতিশীলতা উভয় বিষয় নিয়েই আলোচনা করে থাকে।
উদ্দীপকের রিয়া বস্নগের লেখার মাধ্যমে জানতে পারলো যে, মধ্যযুগের সমাজ ছিল স্থবির, গতিহীন। যাকে সমাজ বিজ্ঞানীরা অভিহিত করেছেন সামাজিক স্থিতিশীলতা হিসেবে। আবার বর্তমান আধুনিক সমাজ প্রচ- গতিসম্পন্ন। সমাজবিজ্ঞানীরা যাকে সামাজিক গতিশীলতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। পূর্বোক্ত আলোচনায় আমরা জেনেছি যে, এ দুটি বিষয়ই সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। সুতরাং এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, উদ্দীপকের রিয়া সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত শাস্ত্র সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে জেনেছে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত বিষয় তথা সমাজবিজ্ঞান একইসাথে স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতা নিয়ে আলোকপাত করে। শাস্ত্রটির প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে তা সুস্পষ্ট হয়।
সমাজবিজ্ঞানের মনোযোগী ছাত্র মাত্রই জানেন সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ ফরাসি বিপ্লবোত্তর সমাজের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ‘সমাজবিজ্ঞান' নামক একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞানের কথা বর্ণনা করেন। আর এ বিজ্ঞানকে তিনি একইসাথে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক গতিশীলতার বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত ত করেন। কোঁৎ-এর মতে, সামাজিক স্থিতিশীলতা সমাজের গঠন এবং কাঠামোর সাথে যুক্ত। আর সামাজিক গতিশীলতা মানব সমাজের প্রগতি এবং উন্নতি বিশ্লেষণ করে। তার মতে, সব সমাজেই এ দুটি বিষয় লক্ষণীয়। কারণ, স্থিতিশীলতা বলতে অচল; অনড় অবস্থা বোঝায় না, সুশৃঙ্খল সমাজকে বোঝায়। আর এই সুশৃঙ্খল সমাজে যে পরিবর্তন ঘটে তাই সামাজিক গতিশীলতা। বর্তমান আধুনিক সমাজের দিকে লক্ষ করলে আমরা দেখবো, এ সমাজও সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক গতিশীলতার সমন্বয়ে গঠিত। আর যেহেতু সমাজবিজ্ঞান সমাজের সামগ্রিক পাঠ সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার বিষয়বস্তুতে সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক গতিশীলতা সবিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।
উপরের আলোচনার পরিপেক্ষিতে একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান যুগপৎ সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক গতিশীলতা নিয়ে আলোকপাত করে।

৯. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাজন 'ঢাকা শহরের বস্তি: একটি আর্থ-সামাজিক সমীক্ষা' শীর্ষক মনোগ্রাফ তৈরির জন্য মহাখালী রেলগেট বস্তিতে গেল। সেখানে গিয়ে সে লক্ষ করল যে, বস্তিটিতে বিশুদ্ধ পানির চরম অভাব। স্যানিটেশনেরও ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, আমাশয়, সর্দিজ্বর প্রভৃতি ছোঁয়াচে রোগ বস্তিবাসীদের নিত্যসঙ্গী। সে আরও লক্ষ করল, বস্তিটির অধিকাংশ শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। 
ক. 'Sociology' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে কত খ্রিষ্টাব্দে? 
খ. ‘সমাজবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নয়' বুঝিয়ে লেখ। 
গ. উদ্দীপকের মহাখালী রেলগেট বস্তিতে বিরাজমান সমস্যা সমাজবিজ্ঞানের কোন শাখায় আলোচনা করা হয়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য।'- তুমি কি এ ব্যাপারে একমত? যুক্তিসহ মতামত দাও।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ‘Sociology’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে।

খ. সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান হলেও এটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের (রসায়নশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি) মতো ব্যবহারিক শাস্ত্র নয়। কেননা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয়কে যেভাবে গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়, সমাজবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয় সমাজে বসবাসকারী মানুষ হওয়ায় তা প্রায় অসম্ভব। কারণ মানুষের আচরণ কোনো স্থির বিষয় নয়, বরং তা সবসময়ই পরিবর্তনশীল ও বৈচিত্র্যময়। আর এ জন্যই সমাজবিজ্ঞানকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বলা যায় না।

গ. উদ্দীপকের মহাখালী রেলগেট বস্তিতে বিরাজমান সমস্যা সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা ‘চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান’-এ আলোচনা করা হয়।
পাঠ্যপুস্তকের আলোকে আমরা জানি, চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান' সময়, কাল, যুগ ও সমাজভেদে বিভিন্ন রোগের কারণ, উৎস, প্রভাব ও প্রতিকার সম্পর্কে গবেষণা করে এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে অনুসন্ধান চালায়। এছাড়াও ‘চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান' বিভিন্ন সমাজে খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবহার এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত গবেষণায় নিয়োজিত থাকে। এছাড়া চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান' চিকিৎসা নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা ও গবেষণা করে।
উদ্দীপকের রাজন লক্ষ করল যে, মহাখালী রেলগেট বস্তিতে বিশুদ্ধ পানির অভাব ও স্যানিটেশন সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, আমাশয়, সর্দিজ্বর প্রভৃতি ছোঁয়াচে রোগ বস্তিবাসীদের নিত্যসঙ্গী। পূর্বে বর্ণিত ‘চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান’-এর আলোচনার পরিধি এবং মহাখালী রেলগেট বস্তির অবস্থা পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, উদ্দীপকের বস্তিতে বিরাজমান সমস্যা 'চিকিৎসা সমাজবিজ্ঞান'-এ আলোচনা করা হয়।

ঘ. হ্যাঁ, এ বিষয়ে আমি একমত যে, উদ্দীপকে বর্ণিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। নিচে এ বিষয়ে আমার যুক্তিসহ মতামত উপস্থাপন করা হলো-
সমাজবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা। এ জন্যই সামাজিক সমস্যা সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্য বিষয়। অর্থাৎ- সামাজিক সমস্যা। কী, কীভাবে এই সমস্যার সৃষ্টি, এর ফলাফল কী, কীভাবে এই - সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সমাজবিজ্ঞান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করে। এ কারণেই বলা হয় যে, সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন ব্যতীত সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
উদ্দীপকের মহাখালী রেলগেট বস্তিতে দু'ধরনের সমস্যা লক্ষ করা যায়। যথা- ১. স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং ২. শিক্ষা সংক্রান্ত। এগুলোর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে মূলত সচেতনতার অভাব এবং নাগরিকের সামাজিক অধিকার বাস্তবায়ন না করায়। এর মানে হচ্ছে, প্রত্যক্ষভাবে সমস্যাগুলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সম্পর্কিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো 'সামাজিক সমস্যা' হিসেবে গণ্য হবে। আর এগুলো সমাধান করতে হলে সমস্যার কারণ, প্রকৃতি, প্রভাব এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে হবে। পূর্বোক্ত আলোচনার সূত্র ধরে বলা যায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নানান শাস্ত্রের মধ্যে কেবল সমাজবিজ্ঞানই বস্তুনিষ্ঠভাবে সামাজিক সমস্যার কারণ, প্রকৃতি, প্রভাব ও প্রতিকারের উপায় খুঁজে বেড়ায়। সুতরাং এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, উদ্দীপকের মহাখালী রেলগেট বস্তিতে যে ধরনের সমস্যা বিরাজ করছে, তা সমাধান করতে হলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য।

১০. শায়ক স্যার ক্লাসে সমাজের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনবাদী মতবাদ সম্পর্কে পড়াচ্ছিলেন। স্যার বলেন, আদিতে মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতো। তখন থেকেই গোষ্ঠী সংহতির ভিত্তিতে সমাজ সৃষ্টি হয়। তারপর পরিবার, বিবাহ, ব্যক্তিগত সম্পত্তি প্রভৃতি বিষয়ের উদ্ভব ঘটে। এভাবে ধীরে ধীরে সমাজ সহজ থেকে জটিল অবস্থায় রূপান্তরিত হয় এবং এক সময় সমাজের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ঘটে। তাই বলা যায়, বর্তমান সমাজের অতীত অবস্থা সম্পর্কে জানতে অতীত তথ্যসমূহের প্রয়োজন হয়। 
ক. সমাজকল্যাণ কী?
খ. প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণকল্পে দৃষ্টবাদী মতবাদ গোষ্ঠীর ভূমিকা কীরূপ?
গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের সাথে কোন বিষয়টির সম্পর্ক সম্পর্কে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত বিষয়টির সাথে সমাজবিজ্ঞানের যে সকল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় সেগুলো বিশ্লেষণ করো।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমাজকল্যাণ হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা।

খ. প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণে দৃষ্টিবাদী মতবাদের অনুসারী সমাজবিজ্ঞানীরা ইতিবাচক ও অগ্রগামি ভূমিকা রেখেছেন। দৃষ্টবাদী মতবাদ গোষ্ঠীর অন্যতম চিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁৎ, ডুর্খেইম এবং প্যারেটো সমাজ বিশ্লেষণে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি অনুসরণ করার ওপর গুরুত্ব দেন। তারা সমাজ সমীক্ষায় সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণেও সুপারিশ করেন। তাদের মতে, প্রাকৃতিক নিয়ম এবং সামাজিক সম্পর্ক ও নীতিমালার মধ্যে তেমন কোনো গুণগত পার্থক্য নেই।

গ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
ইতিহাস হচ্ছে অতীত ঘটনার বর্ণনা ও বিশ্লেষণ। আবার মানব সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের সামগ্রিক পাঠ হলো সমাজবিজ্ঞান। ইতিহাস অতীত ঘটনা আলোচনায় রাজ্যের উত্থান-পতন, দিন, তারিখ, সন, শতাব্দী, সন্ধি, চুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে অত্যধিক গুরুত্ব দেয়। আর সমাজবিজ্ঞান এসবের গুরুত্ব অস্বীকার না করে সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে সমাজজীবনের গভীরে প্রবেশ করে। সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনধারার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সুসঙ্গত জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে সমাজবিজ্ঞানীদেরকে বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের সাহায্য নিতে হয় আবার একইভাবে ইতিহাসের বিষয়বস্তু সঠিকভাবে অনুধাবন করার জন্য ইতিহাসবেত্তাদের সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয়।
উদ্দীপকের শায়ক স্যার ক্লাসে সমাজের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিবর্তনবাদী মতবাদ পড়াতে গিয়ে অতীত ঘটনাবলির ওপর জোর দিয়েছেন। অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে ইতিহাসের ওপর জোর দিয়েছেন।

ঘ. উদ্দীপকে সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের সম্পর্কের ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রকৃতি, আলোচনার বিষয়বস্তু, পরিধি ও বিশ্লেষণের পদ্ধতির দিক থেকে উভয় শাস্ত্রের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। যেমনত
সমাজবিজ্ঞান বর্তমান সমাজের ওপরই অধিক গুরুত্ব দেয়। অতীতকে অবশ্য উপেক্ষা করে না। অপরদিকে ইতিহাস অতীত ঘটনাবলিকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে।
সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক ও বিসত্মৃত। কেননা অতীত ও বর্তমান এর আওতাভুক্ত। অন্যদিকে, ইতিহাসের পরিধি যদিও ব্যাপক তথাপি তা অতীতকে নিয়ে আবর্তিত।
সমাজবিজ্ঞানের দিন, তারিখ, ক্ষণ, সন্ধি, চুক্তি, জয়-পরাজয় ইত্যাদি বিষয়ে কৌতূহল থাকলেও তা ইতিহাসের মতো প্রাধান্য পায় না। কিন্তু, ইতিহাস দিন, তারিখ সন, সন্ধি, জয়-পরাজয়, উত্থান-পতন ইত্যাদির সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে।
সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত একটি সাধারণীকৃত সূত্র নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং পরে অনুরূপ কতকগুলো ঘটনার ফলাফলের প্রেক্ষিতে সূত্রটি যাচাই করেন। কিন্তু, ঐতিহাসিকরা কেবল সাধারণত ঘটনাবলির কোনো একটি বিশেষ পরিণতি বা ফলাফল পর্যালোচনার কাজে অগ্রসর হন।
সমাজবিজ্ঞান সামাজিক সম্পর্কগত দিক থেকে মানবীয় ঘটনাবলির বিচার বিশ্লেষণ করে। অন্যদিকে, ইতিহাস কালের সাথে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মানবীয় বিভিন্ন ঘটনাবলি সম্পর্কে আলোচনা করে।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও উভয়ের মধ্যে বহুবিদ পার্থক্যও বিদ্যমান।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post