HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৭

HSC Social Work 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের একটি গ্রাম থেকে ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে তা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানটি নোবেল পুরস্কার লাভ করে।
ক. ব্র্যাক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
খ. ক্ষুদ্র ঋণ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানটি কি দারিদ্র্য বিমোচনে কোনো অবদান রাখছে? মতামত বিশ্লেষণ কর।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্র্যাক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

খ. ক্ষুদ্রঋণ বলতে গ্রামের দরিদ্র নারী ও পুরুষদের জামানতবিহীন স্বল্প পরিমাণে প্রদত্ত ঋণকে বোঝায়।
প্রধানত পল্লি এলাকায় বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনার উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। এ ঋণের পরিমাণ সাধারণত ১,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষত দুস্থ মহিলাদের মধ্যে দলগতভাবে ঋণ প্রদানের কর্মসূচি হিসেবে এটি চালু করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে ১৯৭৬ সালে সর্বপ্রথম এ কর্মসূচি চালু করে।

গ. উদ্দীপকের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক হলো ক্ষুদ্রঋণ লগ্নিকারী একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত ব্যাংক। গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও ভূমিহীনদের ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমানের উন্নয়নে এই ব্যাংক কাজ করে। গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম মূলত একটি শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ১ জন ম্যানেজার, ৩ জন পুরুষ এবং ৩ জন মহিলা কর্মী নিয়ে একটি শাখা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ১. অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং ২. সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম। এর মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক ও গৃহনির্মাণ ঋণ, উচ্চশিক্ষা ঋণ এবং ভিক্ষুক ঋণ প্রদান করা হয়। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আত্মকর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণদান কর্মসূচির মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকরা উন্নত বীজ, চাষাবাদের যন্ত্রপাতি কিনতে পারছে। এছাড়া এই সংস্থার কোনো সদস্য মারা গেলে ১৫,০০০ টাকা হারে জীবন বিমাও দেওয়া হয়। অন্যদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচির আওতায় গৃহায়ণ সমস্যা নিরসন; দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা ঋণ বিতরণ; বনায়ন কর্মসূচি; হাঁস-মুরগি পালন; পেনশন তহবিল পরিচালনা প্রভৃতি কার্যক্রম চালানো হয়। এ সমস্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে সংস্থাটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যন্নোয়নে ভূমিকা রাখছে।

ঘ. হ্যাঁ, গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দারিদ্র্য বিমোচনমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কৃষিনির্ভর এদেশে অবহেলিত, দরিদ্র ও ভূমিহীন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সংস্থাটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। উদ্দীপকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্য বিমোচনও নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের ভূমিহীন জনগণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া ঋণ পরিশোধের উচ্চহার, ঋণের যথাযথ প্রয়োগ, দরিদ্র মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বৃদ্ধিকারী কর্মকান্ডের প্রসার ঘটানো এ সংস্থার বৈশিষ্ট্য। এর ফলে ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা দরিদ্র শ্রেণি নিজেদের সংগঠিত শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। সেইসাথে সম্পদশালী ও সুদখোর মহাজনদের ওপর নির্ভরশীলতার হারও কমে আসছে। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক শিক্ষিত যুব শ্রেণিকে দারিদ্র্য বিমোচন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মচারিরূপে বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকারের কাজের ব্যবস্থা যেমন হচ্ছে, তেমনিভাবে ঋণদান প্রক্রিয়ায় দরিদ্র পুরুষ ও মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব হচ্ছে। মূলত গ্রামীণ ব্যাংক তার কর্মসূচির মাধ্যমে 'দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যাংক' এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যে কারণে তাদের উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ মডেল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক হারে প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে।
সুতরাং সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র পুরুষ ও মহিলাদের ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

২. জনাব হামিদ 'এসএস চট্টগ্রাম' নামক একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। সংস্থাটি অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি শহরের কর্মজীবী শিশুদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে। সম্প্রতি এটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে। 
ক. আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস কবে পালিত হয়?
খ. 'গ্রামীণ ব্যাংকের সম্প্রসারণশীল চক্র' বলতে কী বোঝ? 
গ. উদ্দীপকে 'এসএস চট্টগ্রাম' এর কার্যক্রমের সাথে তোমার পঠিত কোন সংস্থার কার্যক্রমের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানবসম্পদ উন্নয়নে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সংস্থাটির কার্যকারিতা মূল্যায়ন কর।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়।

খ. 'গ্রামীণ ব্যাংকের সম্প্রসারণশীল চক্র' বলতে সংস্থাটির অন্যতম একটি নীতিকে বোঝায়।
গ্রামীণ ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দারিদ্রের দুষ্টচক্রকে উৎপাদনশীল ও সম্প্রসারণশীল ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করা। এ লক্ষ্যে “নিম্ন আয়, নিম্ন সঞ্চয়, নিম্ন বিনিয়োগ, নিম্ন আয়’’ এ দুষ্টচক্রকে “নিম্ন আয়, ঋণ বিনিয়োগ, অধিক আয়, অধিক ঋণ, অধিক বিনিয়োগ, অধিক আয়" সম্বলিত সম্প্রসারণশীল ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হয়।

গ. উদ্দীপকের 'এস এস চট্টগ্রামের কার্যক্রমের সাথে আমার পঠিত বেসরকারি সংস্থা ইউসেপ এর কার্যক্রমের মিল রয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু অথবা কিশোর-কিশোরীর ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউসেপ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচির প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের ‘এস এস চট্টগ্রামের' কার্যক্রমে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত 'এস এস চট্টগ্রাম' নামের সংস্থাটি অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি শহরের কর্মজীবী শিশুদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে। সম্প্রতি এটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে। স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউসেপ ও শহর এলাকায় বসবাসরত শ্রমজীবী শিশু, কিশোর-কিশোরী যাদের বয়স ১০-১৪ বছর এবং যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন বস্তিতে বাস করে তাদের নিয়ে কাজ করে। যেসব শ্রমজীবী ছেলেমেয়েদের বয়স ১০-১১ বছরের বেশি তাদের চার বছর মেয়াদী সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তি করা হয়। সাধারণ শিক্ষা পাঠ্যক্রমকে শ্রমজীবী ছেলেমেয়েদের জীবন উপযোগী করার জন্য বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত পাঠ্যসূচিকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়। নিজস্ব স্কুল ভবনে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া ইউসেপ শ্রমজীবী বালক- বালিকাদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে। সাধারণ স্কুলের সাড়ে চার বছর সাধারণ শিক্ষা শেষ করার পর তার ভিত্তিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের কারিগরি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। এ লক্ষ্য অর্জনে ইউসেপ ৩টি কারিগরি বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। সুতরাং, উদ্দীপকের সংস্থাটির কার্যক্রমের সাথে ইউসেপের কার্যক্রমের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. মানবসম্পদ উন্নয়নে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সংস্থাটির অর্থাৎ ইউসেপের যথেষ্ট কার্যকারিতা রয়েছে।
ইউসেপ একটি সেবামূলক সংগঠন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ভাগ্য উন্নয়নে এ সংগঠনটি নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শহরাঞ্চলে জীবিকার তাগিদে অনেক শিশু-কিশোর ছোটোখাটো কাজ করে। এতে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি দেশও পিছিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাদেরকে নিয়ে ইউসেপের উদ্যোগ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। ইউসেপ শ্রমজীবী ছেলেমেয়েদের জন্য সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এতে মাত্র ৪ বছরে একজন শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে। স্কুলগুলোতে ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। শ্রমজীবী বালক-বালিকাদের জন্য ইউসেপ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ইউসেপের টেকনিক্যাল স্কুলগুলোতে যেসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তা শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য দক্ষ হিসেবে তৈরি হতে সাহায্য করে। যেমন- আশা ওয়েন্ডিং এবং ফেব্রিকেশন, অটোমেকানিক্স, টেইলারিং অ্যান্ড ড্রেসমেকিং ইত্যাদি।
উদ্দীপকে উল্লিখিত এস এর চট্টগ্রাম এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ইউসেপ বাংলাদেশ কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রেনিং সেল স্থাপন করেছে। এছাড়া সংস্থাটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। এতে শ্রমজীবী বালক-বালিকাদের আর কারও বোঝা হয়ে থাকতে হয় না। তারা নিজের এবং পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন আনতে পারে। এভাবে তারা দক্ষ মানবশক্তিতে পরিণত হয় এবং দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, মানবসম্পদ উন্নয়নে ইউসেপ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

৩. জনাব মিজান একজন সমাজ সচেতন ব্যক্তি। তিনি কক্সবাজার জেলার 'ঝধাব জড়যরহমধ' নামে একটি মানব হিতৈষী সংস্থা গড়ে তোলেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রাখাইন থেকে আগত শরণার্থীদের মানবিক সাহায্য প্রদান। এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ব্যাপক অর্থ সংগ্রহ করেন। 
ক. NGO এর পূর্ণরূপ কী?
খ. UCEP এর লক্ষ্য দল কারা?
গ. জনাব মিজানের 'ঝধাব জড়যরহমধ সংস্থার সাথে তোমার পঠিত বাংলাদেশের কোন সংস্থা প্রতিষ্ঠার পটভূমির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সংস্থাটির কার্যক্রম বর্তমানে আরো বিস্তৃত— পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. NGO এর পূর্ণরূপ হলো- Non Government Organisation.

খ. UCEP এর লক্ষ্য দল হলো শহর এলাকার শ্রমজীবী শিশু-কিশোর।
মূলত শহর এলাকায় বসবাসরত ১০-১৪ বছর বয়সী শ্রমজীবী শিশু, কিশোর-কিশোরীদের কেন্দ্র করে ইউসেপের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাদের অধিকাংশই বস্তিতে বসবাস করে। ইউসেপের লক্ষ্যভুক্ত কিশোর- কিশোরীদের অধিকাংশই গৃহকর্ম, জিনিসপত্র ফেরি করা, খবরের কাগজ বিক্রি, হোটেল বয়ের কাজ, রিক্সা চালানো, কাঁচামাল বিক্রি, ওয়ার্কশপে সহকারীর কাজ, জুতা পালিশ ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত। ইউসেপ এ সব ছেলেমেয়েদের জন্য ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা করে। এরপর মেধা অনুযায়ী নিজস্ব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেয়।

গ. মিজান সাহেবের 'Save Rohinga' সংস্থার সাথে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সাদৃশ্য বিদ্যমান। 
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা হচ্ছে ব্র্যাক। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সংস্থাটি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তার কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে। দরিদ্র, ভূমিহীন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে সংস্থাটি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উদ্দীপকের জনাব মিজান 'Save Rohinga' নামে যে গড়ে তোলেন তার সাথে ব্র্যাকের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
উদ্দীপকের মিজান সাহেব কক্সবাজার জেলায় 'Save Rohinga' নামে একটি মানব হিতৈষী সংস্থা গড়ে তোলেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের মানবিক সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে তিনি অর্থ সংগ্রহ করেন। একই চিত্র ব্র্যাকের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ পেশায় একজন চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট ছিলেন। পেশাগত কাজের পাশাপাশি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তিনি দরিদ্র, অসহায় ও দুস্থদের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব- পাকিস্তান) সংঘটিত প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দুঃখ-দুর্দশা তাকে বিচলিত জনকল্যাণে কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ শরণার্থী হিসেবে প্রতিবেশি দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়। তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি 'Save Bangladesh' নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভেতরেও তাদের পুনর্বাসন কর্মসূচি ছিল। ফজলে হাসান আবেদের এই উদ্যোগের সম্প্রসারিত ও পরিবর্তিত রূপ হলো ব্র্যাক।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত সংস্থা অর্থাৎ ব্র্যাকের কার্যক্রম বর্তমানে অনেক বিস্তৃত রূপ লাভ করেছে।
বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র, অসহায় ও দুস্থ মানুষের আর্থ- সামাজিক চাহিদা পূরণ এবং পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে ব্র্যাক কাজ করছে। প্রথমদিকে সংস্থাটির কাজ শুধুমাত্র ঋণদান কর্মসূচি পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা বিস্তৃতি পেয়েছে। ব্র্যাক বর্তমানে সরকার ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যৌথভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছে। যেমন- এটি বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফের সাথে সমন্বিত পুষ্টি কার্যক্রম পরিচালনা করে। এছাড়া ব্র্যাকের কর্মসূচির মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড তথা সচেতনতামূলক নানা ধরনের কার্যক্রম রয়েছে।
ব্র্যাক পরিচালিত কার্যক্রমের অন্যতম হলো পল্লি উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এর মূল লক্ষ্য হলো গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মহিলা ও পুরুষদের সংগঠিত করার মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালানো। এছাড়া ১৯৮৫ সালে মানিকগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে ২২টি স্কুল চালুর মাধ্যমে ব্র্যাকের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে-ডায়রিয়াজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে খাবার স্যালাইন সম্প্রসারণ কর্মসূচি, মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচি। ব্র্যাক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও পালন করছে। ব্র্যাকের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হলো ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি। এর লক্ষ্য গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষদের স্বাবলম্বী করা। ব্র্যাকের কর্মসূচির নতুন সংযোজন হলো মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক হস্তশিল্প বাজারজাতকরণ, হাওর উন্নয়ন প্রকল্প, পল্লি উদ্যোগ প্রকল্প, গবেষণা ও মূল্যায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায়, স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও ব্র্যাকের কার্যক্রম বর্তমানে বিস্তৃত রূপ লাভ করেছে এবং বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

৪. উচ্চ শিক্ষিত বিধান একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তার এ প্রতিষ্ঠান থেকে মূলত দুঃস্থ, অসহায়, নারী, ভূমিহীন এবং প্রায় ভূমিহীনদের বিনা জামানতে ঋণ দেয়া হয়। দলীয় ভিত্তিতে এ ঋণ দেয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠান থেকে শুধু ঋণ দেয়াই হয় না, বরঞ্চ ঋণের ব্যবহার তদারকি করে তা সঠিকভাবে আদায়ও করা হয়। ঋণ গ্রহীতারা কেবল এর সদস্য নয় বরং মালিকও। 
ক. ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. প্রবীণ হিতৈষী সংঘের একটি উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বিধানের প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যের সাথে বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য সামঞ্জস্যপূর্ণ? নিরূপণ কর।।
ঘ. বিধানের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের একটি মূল্যায়ন উপস্থাপন কর।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

খ. প্রবীণ হিতৈষী সংঘের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য প্রবীণদের জন্য সুস্থতা এবং শাস্তিপূর্ণ আনন্দময় জীবন নিশ্চিতকরণে কাজ করা।
আমাদের দেশে প্রবীণেরা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার শিকার হন। বার্ধক্যের কারণে এবং পরিবার ও সমাজ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পাওয়ায় তাদের জীবন অনেক ক্ষেত্রেই বিবাদময় হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতেই প্রবীণ হিতৈষী সংঘ নামে বাংলাদেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি উপর্যুক্ত লক্ষ্য পূরণে কাজ করে চলেছে।

গ. উদ্দীপকে বিধানের প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যের সাথে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের মিল পরিলক্ষিত হয়।
যেকোনো দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দরিদ্র, ভূমিহীন জনগোষ্ঠী ও নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন অন্যতম পূর্বশর্ত। আর এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা শুরু করে। অনুরূপ লক্ষ্যমাত্রা ও কার্যক্রম উদ্দীপকের বিধানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়।
গ্রামীণ ব্যাংক হলো ক্ষুদ্রঋণ লগ্নিকারী একটি স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক। এটি গ্রামীণ দরিদ্র ও ভূমিহীনদের ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে থাকে। এর অন্যতম লক্ষ্য হলো বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করা, যাতে মহাজনের হাত থেকে তারা রক্ষা পায় এবং স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। গ্রামীণ দরিদ্র, ভূমিহীন, প্রাস্তিক কৃষক পুরুষ ও মহিলাকে জামানতমুক্ত ঋণ প্রদান করার পাশাপাশি ঋণের তদারকি এবং তাদেরকে সঞ্চয়মুখী করে তুলতেও গ্রামীণ ব্যাংক কাজ করে। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহীতারা কেবল ব্যাংকের মক্কেলই নয়, তারা ব্যাংকের মালিক এবং ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে থাকে। সুতরাং, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটির ন্যায় গ্রামীণ ব্যাংকের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম একই ধারায় প্রবাহমান এবং এ দিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান দুটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. বিধানের প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দ্রুত উচ্চ অবস্থানে নিয়ে যেতে হলে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। কর্মক্ষম সকল নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ব্যতীত এটি সম্ভব নয়। আর এক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত বিধানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
গ্রামীণ ব্যাংকের আদলে গড়ে ওঠা বিধানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি মূলত একটি ক্ষুদ্রঋণ লগ্নিকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাঁর প্রতিষ্ঠানটি মূলত দুঃস্থ, অসহায়, নারী, ভূমিহীন এবং প্রায় ভূমিহীনদের জামানতমুক্ত ঋণ দিয়ে থাকে। ফলে দরিদ্র শ্রেণির জনগণ নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে সক্ষম হচ্ছে এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতির ফলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরই ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। বিধানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহারের তদারকি। অর্থাৎ বণ্টিত ঋণ যেন অপচয় না হয় এবং সুষ্ঠুভাবে ব্যবহৃত হয় সেজন্য প্রতিষ্ঠানটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এর ফলে সর্বোচ্চ উপযোগিতা অর্জিত হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, বিধানের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আমাদের দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে অত্যন্ত সহায়ক।

৫. 'ক' একটি বেসরকারি সংস্থা। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের নিমিত্তে ইহা ১৯৭২ সালে সিলেটের শাল্লা গ্রামে কার্যক্রম শুরু করে। দরিদ্র লোকদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণার্থে সংস্থাটি কতিপয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে ইহা দেশের বাইরেও কিছু সংখ্যক কার্যক্রম চালু করেছে।
ক. বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা চালু হয় কত সালে?
খ. বেসরকারি সংস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানটিকে কেন জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বলা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালিত ভূমিকার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা চালু হয় ১৯৫৩ সালে।

খ. যেসব সংস্থা দেশের উন্নয়নে সরকার সংস্থার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে তাদেরকে বেসরকারি সংস্থা বলা হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ সামাজিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। বেসরকারি সংস্থাগুলো আর্থিক লাভ বা অর্থলগ্নীকারী সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় লাভজনক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় না। এ ধরনের সংস্থা মূলত জনস্বার্থে সেবা প্রদান করে। এ লক্ষ্যে এ ধরনের সংস্থাসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, দারিদ্র্য প্রভৃতি খাতে নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত তথ্যসমূহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাককে নির্দেশ করে। এই প্রতিষ্ঠানটির গঠন-প্রকৃতি ও কার্যক্রম বিবেচনায় এটিকে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বলা যায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানসমূহের কতিপয় বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান জাতীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সকল কার্যক্রম পরিচালনায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে। এ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচ্য সংস্থা ব্র্যাকের ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়।
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হলো ব্র্যাক। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এই সংস্থাটি কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭২ সালে সিলেটের শাল্লা গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিষ্ঠানটি স্বেচ্ছাসেবী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের সূচনা করে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্র্যাকের কার্যক্রম বিস্তার লাভ করেছে। তবে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য। এসব দিক বিবেচনায় এ প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

ঘ. গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ব্র্যাকের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গ্রামীণ ভূমিহীন ও অনগ্রসরদেরকে স্বাবলম্বী করতে এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নে ব্র্যাক নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ সকল কার্যক্রমের মধ্যে পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি, ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কার্যক্রম প্রভৃতি গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
ব্র্যাকের চারটি সমন্বিত পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি রয়েছে। ভূমিহীন মহিলা এবং পুরুষদের সংগঠিত করে সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানোই এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। ব্র্যাকের ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচিও দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ব্র্যাক পরিচালিত কর্মসূচির মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচিটিই সর্ববৃহৎ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পেরেছে। তাছাড়া যারা অর্থনৈতিক পিরামিডের ভিত্তিপ্রস্তরে বাস করে, তাদের জীবনমান উন্নয়নে ব্র্যাক অতিদরিদ্র কর্মসূচির মাধ্যমে কাজ করছে। তাদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে এবং তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণেও ব্র্যাক বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। এভাবে ব্র্যাক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সফলতার সাথে ভূমিকা রাখছে।
পরিশেষে বলা যায়, গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠানটি একটি নির্ভরতার উৎসে পরিণত হয়েছে।

৬. জামিল একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তার প্রতিষ্ঠানে দশ থেকে বেশি বয়সের শ্রমজীবি ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তারপর তাদেরকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
ক. ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতার নাম কী? 
খ. গ্রামীণ ব্যাংকের মূল কাজ কী?
গ. উদ্দীপকের জামিল কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব আলোচনা কর।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতার নাম স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

খ. গ্রামীণ ব্যাংকের মূল কাজ হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা।
গ্রামীণ ব্যাংক হলো ক্ষুদ্রঋণ লগ্নিকারী একটি স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক। এটি গ্রামাঞ্চলের অতি দরিদ্র ও ভূমিহীনদের জামানতবিজীন ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। ঋণের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না সে বিষয়ে তদারকি করে থাকে। এভাবে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নই ব্যাংকটির ঘোষিত মূল লক্ষ্য।

গ. উদ্দীপকের নির্দেশনা অনুযায়ী জামিল বাংলাদেশের একটি এনজিও ইউসেপ এ চাকরি করেন।
ইউসেপ প্রতিষ্ঠানটি প্রাস্তিক জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোরদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশের শহর এলাকার শ্রমজীবী কিশোর- কিশোরীদের অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। উদ্দীপকেও এধরনের কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
উদ্দীপকের জামিলের প্রতিষ্ঠানে ১০ বছরের বেশি বয়সের শ্রমজীবি ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে এ ছেলেমেয়েদেরকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির এ কার্যক্রম ইউসেপের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ইউসেপের লক্ষ্যভুক্ত শিশু-কিশোর-কিশোরীদের বেশিরভাগ গৃহভৃত্য, ফেরিওয়ালা, খবরের কাগজ বিক্রেতা, হোটেল বয়, রিক্সাচালক, কাঁচামাল বিক্রেতা, কারখানার কর্মী, জুতা পালিশকারী ইত্যাদি। ইউসেপ এ ছেলেমেয়েদের প্রথমত ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা দেয়, তারপর তাদেরকে মেধা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি শিক্ষায়তনে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে পড়াশোনা শেষ করার পর তারা ইউসেপের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পায়। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমজীবি কিশোর-কিশোরীদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে।

ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উদ্দীপকে নির্দেশিত এনজিও ইউসেপ এর গুরুত্ব অপরিসীম।
কোনো দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সেদেশের সামাজিক জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটায়। তবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা জরুরি। এক্ষেত্রে ইউসেপ কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।
ইউসেপের কার্যক্রম মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, তারা শহরাঞ্চলের শ্রমজীবী কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ করছে। এরা শিক্ষার সুযোগসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হলে তা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখবে। এ লক্ষ্যে ইউসেপ ওই বঞ্চিত শিশুকিশোরদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করছে। সেইসাথে তাদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করছে। ফলে বেশ কিছুসংখ্যক অনগ্রসর শিশুকিশোর নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সমর্থ হচ্ছে। তাদের শিঙ্গার আলো পাওয়া ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করছে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইউসেপের ভূমিকা ও কার্যক্রম নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৭ pdf download

৭. জনাব ইসতিয়াক একটি NGO তে চাকরি করেন। এ NGO টি একটি ঘূর্ণিঝড় ও যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে যে নাম নিয়ে সংস্থাটির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৬ সালে এসে সেই নাম ও কর্ম পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়। গ্রামের ভূমিহীন জনগোষ্ঠী সংস্থাটির টার্গেট গ্রুপ। বর্তমানে বিদেশে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ক. গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা কে?
খ. প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?
গ. জনাব ইসতিয়াক কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন? বুঝিয়ে লেখো।
ঘ. গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উক্ত NGO এর কার্যক্রম আলোচনা করো।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

খ. চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মানুষের গড় আয়ুস্কালে অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে। ফলে প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিল্প বিপ্লবোত্তর সমাজের বিভিন্ন প্রতিকূলতা সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে। সেইসাথে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। চিকিৎসাব্যবস্থার অগ্রগতির ফলে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবীণদের সংখ্যাও বাড়ছে।

গ. জনাব ইসতিয়াক যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তা হলো ব্র্যাক।
সেবাগ্রহীতার সংখ্যার মানদন্ডে বিশ্বের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হলো ব্র্যাক। দারিদ্র্য নিরসন এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে তাদের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন আনয়নে সংস্থাটি কাজ করে। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে স্বল্পপরিসরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ব্র্যাকের কার্যক্রমের সূচনা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ও বিশ্বের অপর দশটি দেশে দরিদ্র মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। যার ফলে এই সংগঠনটি বিশ্বের সর্ববহূৎ উন্নয়ন সংস্থার সুখ্যাতি অর্জন করেছে।
উদ্দীপকের ইসতিয়াক যে NGO তে কাজ করে যেটি ঘূর্ণিঝড় ও যুদ্ধের প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে যে নাম দিয়ে NGO টি যাত্রা শুরু করে ১৯৭৬ সালে গিয়ে সেই নাম ও কর্ম পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসে। সেই সাথে গ্রামের ভূমিহীন জনগোষ্ঠীকে নিয়েও সংস্থাটি কাজ করে। বৈশিষ্ঠানুযায়ী এটি ব্রাককে নির্দেশ করেছে। জনাব ইসতিয়াক ব্রাকের কর্মচারী ইসতিয়াক বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ব্র্যাকে চাকরি করেন।

ঘ. গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উক্ত NGO অর্থাৎ ব্র্যাকের বিস্তৃত ও পরিকল্পিত কার্যক্রম রয়েছে।
গ্রামীণ ভূমিহীন ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে গ্রুপভিত্তিক সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠিত করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্র্যাকের পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্র্যাক সর্বনিম্ন স্তরের কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত কর্মকৌশল নির্ধারণ করে। ব্র্যাকের পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি সাতটি মূল অঞ্চলে বিভক্ত। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্ব একজন এরিয়া ম্যানেজার এবং কর্মসূচি সংগঠকের উপর ন্যস্ত। এছাড়াও ব্র্যাকের চারটি সমন্বিত পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি আছে। মূলত ভূমিহীন মহিলা ও পুরুষদের সংগঠিত করে সমবায়ের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালানো এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
উদ্দীপকের জনাব ইসতিয়াকের কর্মরত NGO ব্রাক গ্রামীণ আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে গ্রাম সংগঠন গড়ে তোলার কৌশল অনুসরণ করে। এটি পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রদের দলীয় ভিত্তিতে ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহ করে থাকে। পাশাপাশি বাহ্যিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের লক্ষ্যে ব্র্যাক দরিদ্রদের অর্থ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্র্যাকের বিস্তৃত কার্যপরিধি বিদ্যমান।

৮. খুলনা বিভাগের ফুলবাড়ি গেটে ১০-১৪ বছর বয়সের শ্রমজীবী শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দুটি স্তরে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমের আওতায় দুস্থ, বস্তিবাসী, দরিদ্র, ভাসমান, পেটের দায়ে কর্মরত শিশুদের এনে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এতে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। ফুলবাড়ি গেটে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের মতো আরোও ৬২টি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজ করছে।
ক. বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনটি?
খ. প্রবীণ হিতৈষী সংঘের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত খুলনা ফুলবাড়ি গেটে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমটি কোন বেসরকারি সংস্থার কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শ্রেণির উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রমে কীভাবে সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়? পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামত দাও।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হলো গ্রামীণ ব্যাংক।

খ. প্রবীণ হিতৈষী সংঘের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা বলতে প্রবীণদের জন্য পরিচালিত চিকিৎসা কার্যক্রমকে বোঝায়।
প্রবীণ হিতৈষী সংঘ পরিচালিত ঢাকার আগারগাঁয়ে অবস্থিত জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহে প্রতিদিন ৫৫ বছর এবং তদূর্ধ্ব যেকোনো প্রবীণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এখানে রোগীদের আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবীণদের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত খুলনার ফুলবাড়ি গেটে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমটি বেসরকারি সংস্থা ইউসেপের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।
শহর এলাকায় বসবাসরত ১০-১৪ বছরের শ্রমজীবী-শিশু, কিশোর- কিশোরীদের নিয়ে ইউসেপের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইউসেপ লক্ষ্যভুক্ত কিশোর-কিশোরীদের ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা প্রদান করে। পরবর্তীতে মেধা অনুযায়ী সংস্থার কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। ইউসেপের শিক্ষা কার্যক্রমে পঞ্চম ওঅষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দুটি শিক্ষা সমাপনী স্তর রয়েছে। সেই সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিনটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটি বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেয়। মূলত এ সংস্থাটি ব্যয় সাশ্রয়ী কারিগরি শিক্ষার দ্বারা কর্মজীবী শিশুকে দ্রুততম সময়ে সাধারণ দক্ষতামূলক কারিগরি বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউসেপে বর্তমানে মোট ৬৩টি ইনস্টিটিউটের আওতাধীন ৪৭ হাজার শিশু শিক্ষা কার্যক্রমে তালিকাভুক্ত।
উদ্দীপকে ফুলবাড়ি গেটে একটি বেসরকারি সংস্থার শিক্ষা কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির কাজের লক্ষ্য হলো ১০-১৪ বছরের শ্রমজীবী-শিশু কিশোরদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেয়া, যা ইউসেপেরও অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে তারা ইউসেপের মতো ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করে। খুলনার ফুলবাড়ি গেটে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম ইউসেপের কাজের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সামগ্রিক অবস্থার উন্নয়নে ইউসেপের গৃহীত কার্যক্রমে সমাজকর্ম পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব।
মূলত শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে ইউসেপ কাজ করে। এক্ষেত্রে সংস্থাটি তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তির পূর্বে শিশুদের পরিবারের খোঁজ খবর নেয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে শিক্ষা চাহিদা নিরূপণ করে। সেই সাথে জরিপ ও গবেষণার মাধ্যমে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা চাহিদার রূপরেখা তৈরিতে সমাজকর্ম গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ আছে। সাধারণ শিক্ষার পর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে কারিগরি ক্ষেত্রে স্থানান্তরের জন্য ব্যক্তি সমাজকর্মের মনো-সামাজিক অনুধ্যান প্রয়োগ করা যায়।
এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দল সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারেন। ইউসেপ-এর প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সমাজকর্ম প্রশাসনের জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, শহরাঞ্চলে বসবাসরত দুস্থ, বস্তিবাসী, দরিদ্র, ভাসমান ও পেটের দায়ে কর্মরত শিশু-কিশোরদের সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে ইউসেপ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমাজকর্ম পদ্ধতির বহুমুখী প্রয়োগ সম্ভব।

৯. জনাব আবু রায়হানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ গ্রামে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার এলাকার বিধ্বস্ত ও যুদ্ধাহত পরিবারগুলোকে সাহায্য করার জন্য তিনি একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। যুদ্ধের পর তার সংগঠনটি নতুন রূপ লাভ করে। তার সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার দুস্থ অসহায় মানুষকে মানবিক সাহায্য দান সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য। বর্তমানে দেশ-বিদেশে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
ক. Socile Diagnosis কার লেখা?
খ. বেসরকারি সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রম বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে জনাব আবু রায়হানের সংগঠনের সাথে বাংলাদেশের কোন বেসরকারি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের মিল রয়েছে? নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে জনাব আবু রায়হানের সংগঠনের উদ্দেশ্যের চেয়ে উক্ত সংগঠনের উদ্দেশ্য অনেক বিস্তৃতত কথাটির পক্ষে লিখ।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Socile Diagnosis গ্রন্থটি- ম্যারি রিচমন্ড এর লেখা।

খ. বেসরকারি সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রম বলতে যেকোনো ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহীত কার্যক্রমকে বোঝায়।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন আর্থ- সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। এই সমস্যাগুলো কেবল সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই এ সকল সমস্যা সমাধানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহীত এই কার্যক্রমকেই বেসরকারি সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের জনাব আবু রায়হানের সংগঠনের সাথে বাংলাদেশের বেসরকারি সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক-এর মিল রয়েছে।
বাংলাদেশে যেসব স্বেচ্ছাসেবী বা বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে সেগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ হলো ব্র্যাক। ব্র্যাক-এর প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তিনি ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের দুর্দশা দেখে বিচলিত হন এবং জনকল্যাণে কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশ থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার শরণার্থীদের দুর্দশা দেখে ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর উদ্দেশ্যে 'Save Bangladesh' নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। যুদ্ধের পর শরণার্থীদের সাহায্যার্থে সংগৃহীত অর্থের উদ্বৃত্ত অংশের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে সিলেট জেলার শাল্লা গ্রামে Bangladesh Rehabilitation Assistance Committee নামে সংস্থা গড়ে তোলেন। ১৯৭৬ ও ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে শুধু ব্র্যাক রাখা হয়। সংস্থাটি বর্তমানে বিদেশেও কার্যক্রম চালাচ্ছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের আবু রায়হান ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় এলাকার বিধ্বস্ত ও যুদ্ধাহত পরিবারগুলোকে সাহায্য করার জন্য একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। যুদ্ধের পর এটি নতুন রূপ লাভ করে। তার সংগঠনের উদ্দেশ্য এলাকার দুস্থ ও অসহায় মানুষকে সহায়তা করা। বর্তমানে এর কার্যক্রম বিদেশেও পরিচালিত হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, রায়হানের সংগঠনটি উপরে বর্ণিত ব্র্যাক এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. জনাব আবু রায়হানের উদ্দেশ্যের চেয়ে উক্ত সংগঠন অর্থাৎ ব্র্যাকের উদ্দেশ্য অনেক বিস্তৃত।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যেসব বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে সেগুলোর মধ্যে ব্র্যাক অন্যতম। ব্র্যাক-এর কাজের ক্ষেত্র ব্যাপক বিস্তৃত। এটি পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের ভূমিহীন মহিলা ও পুরুষদের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করছে। শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় এটি গ্রামের দরিদ্র ছেলে-মেয়ে ও বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছে। স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় এ সংস্থা খাবার স্যালাইন সম্প্রসারণ এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ যেমন- যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, এইডস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণেও সংস্থাটি কাজ করছে। সংস্থাটি গ্রামীণ দরিদ্র, ভূমিহীন পুরুষ-মহিলাকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি পরিচালনা করছে। পাশাপাশি সংস্থাটি সম্প্রতি দরিদ্র ও অসহায়দের আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছে। এছাড়া ব্র্যাক হস্তশিল্প বাজারজাতকরণ কর্মসূচি, কর্মসংস্থান ও আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রভৃতি কার্যক্রমও পরিচালনা করছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব রায়হান ১৯৭১ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যা ব্র্যাক এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যুদ্ধের পরে তার সংগঠনটির উদ্দেশ্য দাঁড়ায় শুধু দুস্থ ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করা। কিন্তু ব্র্যাক দুঃস্থ- অসহায়দের সহায়তা ছাড়াও উপরে বর্ণিত কার্যক্রমগুলোও পরিচালনা করে যা জনাব রায়হানের সংগঠনের উদ্দেশ্যে প্রতিফলিত হয়নি।
উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, জনাব আবু রায়হানের সংগঠনের চেয়ে ব্র্যাক আরও বিস্তৃত উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে।

১০. মি সমীর চৌধুরী একজন সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি 'জননী'' নামক একটি সংস্থায় ২০০০ টাকা দিয়ে আজীবন সদস্যপদ গ্রহণ করেন। সংস্থাটি ১৯৬০ সালের ১০ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। উক্ত সংস্থায় বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবা, বই পড়া, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রকাশনা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
ক. BRAC এর পূর্ণরূপ লেখ?
খ. ইউসেপ বাংলাদেশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সংস্থাটির নাম উল্লেখপূর্বক এর পটভূমি আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে উক্ত সংস্থার কার্যক্রম বিশ্লেষণ করো।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. BRAC এর পূর্ণরূপ 'Bangladesh Rural Advancement Committee'।

খ. ইউসেপ (UCEP) দরিদ্র, বঞ্চিত ও কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষাদানের পাশাপাশি বৃত্তিমূলক ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ এবং সে অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীল মানব সম্পদ (লক্ষ্যভুক্ত) সৃষ্টির লক্ষ্যে ইউসেপ কাজ করে চলেছে। বিশেষ করে শহর অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া, ক্ষমতা ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি এবং মৌল মানবিক অধিকার পূরণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইউসেপ কাজ করে।

গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সংস্থাটির নাম 'বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান'।
বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে প্রবীণদের সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান হলো 'বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ সকল স্তরের প্রবীণ-প্রবীণাদের কল্যাণার্থে ১০ এপ্রিল, ১৯৬০ সালে স্থাপিত হয়। সংস্থাটি ১৯৬১ সালের স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা নিবন্ধীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে নিবন্ধনকৃত একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবী ডা. এ কে এম আব্দুল ওয়াহেদের ব্যক্তিগত অনুদানে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশি ৫৫ ও তদুর্ধ্ব বছর বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা অন্যান্য সংঘের নিয়ম মেনে চলায় সম্মত ব্যক্তি এ সংঘের সদস্য হতে পারেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এজিং-এর পূর্ণাঙ্গ সদস্য। প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সাথে এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ রয়েছে। উল্লিখিত সংস্থাগুলো হতে নিয়মিত পত্র-পত্রিকা গ্রহণ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, যা উদ্দীপকের নির্দেশনা থেকে জানা যায়। বয়স্ক ব্যক্তিদের সমস্যা ও প্রয়োজন সম্পর্কে ব্যক্তি, সম্প্রদায়, নীতিনির্ধারক, পরিকল্পক এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সচেতনতা এবং আগ্রহ তৈরি করার উদ্দেশ্যে সংস্থাটি কাজ করে। এর প্রথম নাম ছিল 'পূর্ব পাকিস্তান প্রবীণ সোসাইটি', যার প্রথম সভাপতি আবদুল জববার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা- ১২০৭।

ঘ. বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ প্রবীণ কল্যাণে বহুবিধ কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।
প্রবীণদের স্বাস্থ্য, কল্যাণ, সংগঠন ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষকে অবহিত, সচেতন, উদ্যোগী ও সক্ষম করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন যাবত নানা ধরনের প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদির আয়োজন করে আসছে। প্রবীণ হিতৈষী সংঘ একটি হাসপাতালও বটে। এখানে বহির্বিভাগে প্রবীণ রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ রোগীদেরও বিভিন্ন বিষয়ে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে অসচ্ছল বয়স্ক ব্যক্তিদের বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
প্রবীণ হিতৈষী সংঘে ৫০ শয্যার চারতলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। এখানে অভিজ্ঞ ডাক্তার ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ছয়তলা বিশিষ্ট একটি বৃদ্ধ নিবাস ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রবীণের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রবীণদের জন্য নিয়মিতভাবে ওপেন হাউস, ঈদ পুনর্মিলনী, বনভোজন, মিলাদ মাহফিল, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। ঢাকা ব্যতীত রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট এ পাঁচটি বিভাগীয় শহরে এবং ৫৪টি শাখার মাধ্যমে সারাদেশে চিকিৎসা সেবা দানসহ নানা কল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করছে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রবীণ হিতৈষী সংঘ বাংলাদেশের প্রবীণদের জন্য কল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post