এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.
সমাজকর্ম
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫
HSC Social Work 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. বিয়ের পর অনেক আশা করে রিমি শ্বশুরবাড়ি এসেছিল। তার স্বামী গাঁজা আর ফেনসিডিল ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রায়ই সে নেশাগ্রস্ত হয়ে রাতে এসে রিমির ওপর ভীষণ অত্যাচার নির্যাতন চালায়।
ক. আইনানুযায়ী এ দেশের মেয়েদের বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স কত?
খ. সামাজিক আইন বলতে কী বোঝ?
গ. স্বামীর অত্যাচার নির্যাতনের জন্য সুবিচার পেতে যে আইনের সাহায্য রিমি গ্রহণ করতে পারে তার প্রধান ধারা বর্ণনা কর।
ঘ. রিমির অত্যাচারী স্বামীর ব্যবসার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রযোজ্য আইনের কার্যকারিতা বাংলাদেশের সাপেক্ষে মূল্যায়ন কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আইনানুযায়ী এ দেশের মেয়েদের বিবাহের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর।
খ. সমাজ থেকে অবাঞ্ছিত অবস্থা দূর করে সুন্দর, সুষ্ঠু ও উন্নত সমাজ গড়ে তোলার জন্য যে সকল আইন প্রণয়ন করা হয় সেগুলোই সামাজিক আইন।
নাগরিকের সামগ্রিক কল্যাণে রাষ্ট্র কর্তৃক নানা ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়। এ সকল আইন নাগরিকের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্যে পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ আইনগুলোর মাঝে জনকল্যাণ সম্পর্কিত আইন হচ্ছে সামাজিক আইন। মূলত সমাজের স্বাভাবিক গতিধারাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যে আইন প্রণয়ন করা হয় তাই সামাজিক আইন।
গ. স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনের সুবিচার পেতে রিমি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০০৩ এর সাহায্য নিতে পারে।
নারী নির্যাতন রোধ এবং অপরাধীকে কঠোর শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত আলাদা আলাদা অনেক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে প্রণীত মূল আইনের সংশোধনী এনে ১৩ জুলাই ২০০৩ সালে পাস করা হয় 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী) আইন-২০০৩'। এই আইনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ১২টি অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা হয়েছে এবং অপরাধের বিচার ও তদন্ত সম্পর্কিত ছয়টি নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছে।
উদ্দীপকের রিমি স্বামীর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধনী) আইন-২০০৩' এর সাহায্য নিতে পারে। এ আইনে নারী নির্যাতন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রত্যয়ের (যেমন- অপরাধ, অপহরণ, আটক, ধর্ষণ, নবজাতক শিশু, যৌতুক প্রভৃতি) সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেইসাথে এর প্রধান ধারাগুলোর মধ্যে আছে- ১. শিশুর বয়স নির্ধারণ- সংশোধিত আইনে শিশুর বয়সসীমা ১৪ বছর থেকে বাড়িয়ে ১৬ বছর করা হয়েছে; ২. দহনকারী পদার্থ দ্বারা সংঘটিত অপরাধের শাস্তি- যদি কোনো ব্যক্তি দহনকারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে কোনো শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটান বা ঘটানোর চেষ্টা করেন তাহলে তার মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড হবে। এছাড়া নির্যাতনের কারণে নারী বা শিশুর অঙ্গহানি ঘটলে বা শারীরিক, মানসিক বা অন্য কোনো ক্ষতি হলে সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে; ৩. মুক্তিপণ আদায় করার শাস্তি মুক্তিপণ আদায় করার উদ্দেশ্যে যদি কোনো শিশু বা নারীকে আটক করা হয় তাহলে আটককারীর মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এমনকি অতিরিক্ত অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে; ৪. নারী ও শিশু অপহরণ- পতিতাবৃত্তি বা নীতিবহির্ভূত কাজে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে কোনো নারী ও শিশু পাচার করা হলে নিয়োজিত ব্যক্তির শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা অন্যূন ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদন্ড হবে; ৫. সম্ভ্রমহানিজনিত কারণে আত্মহত্যা- আইন অনুযায়ী সম্ভ্রমহানির পর কোনো নারী আত্মহত্যা করলে বা কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর অথবা নূন্যতম পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ড হবে। তবে এ আইনের আরো কিছু ধারা রয়েছে যেগুলো রিমির মতো নির্যাতনের শিকার নারীদের সুবিচার পেতে সাহায্য করবে।
ঘ. রিমির অত্যাচারী স্বামীর ব্যবসার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘১৯৮৯ সালের মাদক নিরোধ অধ্যাদেশ’ প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এ অধ্যাদেশের ভিত্তিতে প্রণীত আইনের কার্যকারিতা রয়েছে। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে তৎপর হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালের ২২ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য বিরোধী জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি প্রচলিত মাদকদ্রব্য আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং নতুন আইন প্রণয়নের ওপর গুরত্বারোপ করে সুপারিশ পেশ করে। ঐ কমিটির সুপারিশক্রমে ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা ও এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণীত হয়। অধ্যাদেশ নিয়ে বিভক্তি থাকলেও ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রবর্তনের ফলে তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধ করে সমাজকে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া আইনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের সাথে মাদকসত্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইনটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাঠামো (যেমন- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড) ও জনবল সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে মাদক পাচারের অন্যতম রুট গোল্ডেন ওয়েজের অন্তর্গত হওয়ায় বাংলাদেশে মাদকের সহজলভ্যতা আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। এক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ এর সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। এ লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৭ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, মাদক গ্রহণ, কেনা-বেচা এবং চোরাচালান রোধে প্রণীত '১৯৮৯ সালের মাদক নিরোধ অধ্যাদেশ' এর কার্যকারিতা রয়েছে। তবে সময়ের প্রেক্ষিতে আইনটির সংস্কার এবং এর কঠোর প্রয়োগ ঘটানো জরুরি।
২. শরিফার বাবা শরিফার বিবাহের পূর্বে তার হবু জামাতাকে একটি সাইকেল কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দারিদ্রের কারণে তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। শরিফার স্বামী এজন্য শরিফাকে মাঝে মাঝে নির্যাতন করছে।
ক. কিশোর আদালত কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়?
খ. 'আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রক'ত বুঝিয়ে লেখ।
গ. শরিফার স্বামীর অপরাধ যে সামাজিক আইনের লঙ্ঘন তার পরিচয় দাও।
ঘ. বাংলাদেশে নারী নির্যাতন রোধে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত আইনটির ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কিশোর অপরাধীদের বিচার এবং তাদের আচরণ সংশোধনের জন্য কিশোর আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
খ. আইন সমাজের মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
সাধারণত বেশিরভাগ সময় সমাজের সবল অংশ দুর্বলদের শোষণ ও নিপীড়ন করার চেষ্টা চালায়। এতে বিভিন্ন রকমের অপরাধ সংঘটিত হয়। তবে যথাযথ আইন ও এর সুষ্ঠু প্রয়োগ মানুষের নেতিবাচক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে অপরাধ হ্রাস করতে পারে। দেশের আইন অন্যায়কারীকে শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিকে সংশোধিত হতে উৎসাহিত করে। তাই বলা হয়, আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রক।
গ. শরীফার স্বামীর অপরাধ যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ এর লঙ্ঘন, যা একটি সামাজিক আইন।
যৌতুক একটি সামাজিক কুপ্রথা। এটি নারী তথা সার্বিকভাবে সমাজের উন্নয়নের অন্তরায়। যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০ এর মাধ্যমে সামাজিকভাবে এ প্রথা বিলোপের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবে উদ্দীপকের শরীফার স্বামীর মতো অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে এ আইন না মানার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
শরীফার বাবা বিয়ের আগে তার হবু জামাতাকে একটি সাইকেল কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অর্থাভাবে তিনি সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারায় শরিফাকে নির্যাতিত হতে হয়। অথচ বাংলাদেশের ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনে এ ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি এর জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ঐ আইন অনুযায়ী বিয়েতে কোনো এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষকে কোনো মূল্যবান জামানত দেওয়া বা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া যৌতুক হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো ব্যক্তি যৌতুক দিলে অথবা নিলে অথবা নিতে সাহায্য করলে তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড অথবা আর্থিক জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে। আইনটিতে আরও বলা হয়েছে এটি কার্যকর হওয়ার পর যৌতুক দেওয়া বা নেওয়া সংক্রান্ত প্রচলিত সব চুক্তি বাতিল হবে।
ঘ. বাংলাদেশে নারী নির্যাতন রোধে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত আইন অর্থাৎ যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০ এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই কমবেশি নারী নির্যাতনের খবর চোখে পড়ে। বিবাহিত নারীদের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন ছাড়াও যৌতুকের কারণে সমাজে আরও বিভিন্ন নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মূলত এ ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি রোধ করে নারীদের সুরক্ষা দেওয়া এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে এ আইন প্রণীত হয়।
যৌতুকের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও তার পরিবার। যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে অনেক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে তার সর্বস্ব হারাতে হয়। যৌতুকের দাবিকে কেন্দ্র করে পরিবারে নানা ধরনের অশাস্তি শুরু হয়। প্রায়ই মেয়েরা এ কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। যৌতুকের কারণে সংগঠিত নানা রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০-তে যৌতুক দেওয়া-নেওয়া ও এ কাজে সহায়তা করার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এমনকি যৌতুক দাবি করার জন্য পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও আর্থিক জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া যৌতুকের জন্য কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে ও এ কারণে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটলে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। যৌতুকের জন্য অঙ্গহানি ঘটালে সাজা হবে যাবজ্জীবন বা কমপক্ষে ১২ বছর সশ্রম কারাদন্ড। তবে কাগজে-কলমে আইনের ধারাগুলো বেশ শক্ত হলেও যৌতুক প্রথার চল বা যৌতুকজনিত সহিংস ঘটনা প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না। এর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ। মানুষের মধ্যে এ ধারণা দিতে হবে যে যৌতুক চাইলে বা এজন্য নারীকে নির্যাতন করলে শাস্তি ভোগ অবশ্যম্ভাবী।
সার্বিক আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ এর ভূমিকা অপরিসীম। তবে আইনটি আরও ফলপ্রসূ করতে চাইলে এর কঠোর বাস্তবায়ন দরকার।
৩. কাবিল মিয়া দুষ্ট প্রকৃতির লোক। অনাথ জরিনা বেগমকে বিয়ে করে। বিয়ের পর কারণে-অকারণে জরিনাকে মারপিট করে। একদিন সে জরিনাকে এক নারী পাচারকারী দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। জরিনার মামা বিষয়টি জানতে পেরে কাবিলের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ক. বাংলাদেশে যৌতুক নিরোধ আইন পাস হয় কত সালে?
খ. বাল্যবিবাহ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে জরিনার মামা কোন আইনের মাধ্যমে কাবিলের বিচার চাইতে পারেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সমাজে শাস্তি প্রতিষ্ঠায় উক্ত আইনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে যৌতুক নিরোধ আইন পাস হয় ১৯৮০ সালে।
খ. বাল্যবিবাহ বলতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের বিবাহকে বোঝায়।
বিবাহের প্রথম শর্ত হলো ছেলে-মেয়ের বয়স। প্রচলিত আইন অনুসারে বাংলাদেশে বিবাহের জন্য ছেলের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর আর মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতে হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ছেলে ও মেয়ের প্রকৃত বয়সকে পাশ কাটিয়ে সমাজে অনেক বিবাহ সম্পন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ে দুজনেরই অথবা কোনো একজনের বয়স কম হয়ে থাকে। আর এ ধরনের বিবাহই বাল্যবিবাহ।
গ. উদ্দীপকের জরিনার মামা ২০০৩ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ আইনের মাধ্যমে কাবিলের বিচার চাইতে পারেন।
আমাদের দেশে সামাজিকভাবে প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সংসদ কর্তৃক ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’ প্রণয়ন করে। আইনটি ২০০৩ সালে সংশোধিত হয়। এই আইনের নারী পাচার সম্পর্কিত ধারা অনুসারে উদ্দীপকের কাবিলের বিচার করা সম্ভব।
উদ্দীপকের কাবিল তার স্ত্রীকে কারণে-অকারণে নির্যাতন করে এবং এক পর্যায়ে এসে এক নারী পাচারকারী দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। এমতাবস্থায় জরিনার মামা কাবিলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩ এর ৫ নং ধারায় এ ধরনের অপরাধের প্রকৃতি ও শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'যদি কোনো নারীকে কোনো পতিতার নিকট বা পতিতালয়ের ব্যবস্থাপকের নিকট বিক্রয় করা হয়, তাহলে যে ব্যক্তি এই কর্ম সাধন করেছেন তিনি সুনির্দিষ্ট দন্ডে দন্ডিত হবেন। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা অনধিক বিশ বছর কিন্তু অন্যূন দশ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন'। কাবিলের ক্ষেত্রেও অনুরূপ শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
ঘ. সমাজে শাস্তি প্রতিষ্ঠায় 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সমাজ থেকে নানা ধরনের অপরাধ নিরসনকল্পে আইন প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন অন্যতম সামাজিক অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে সমাজে শাস্তি নষ্ট হয়। এ প্রেক্ষিতে সরকার ২০০৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনকে আরও কার্যকর করার জন্য ঢেলে সাজিয়েছে।
আমাদের সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে ঘরে-বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। যৌতুকের কারণে তারা স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের দ্বারা নিগৃহীত হয়, কখনো যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, আবার কখনো পড়ে পাচারকারীদের খপ্পরে। এভাবে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হাত থেকে বাঁচতে এক সময় তারা আতমহননের পথ বেছে নেয়। অন্যদিকে আমাদের সমাজে শিশুশ্রম, শিশু পাচার প্রভৃতি অপরাধমূলক ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এ সকল অপরাধ নিরসনে আলোচ্য আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পূর্বেকার বলবৎ আইনগুলোর তুলনায় এ আইন নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের ক্ষেত্রে অধিক ফলপ্রসূ। ফলে এ আইনটি সমাজে শাস্তি প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত কার্যকর। তবে এই আইনের প্রয়োগকে আরও সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পরিশেষে বলা যায়, আলোচ্য আইনটি যদি যথার্থভাবে প্রয়োগ করা যায় তবে সমাজ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন আরও হ্রাস পাবে।
৪. শিশুদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার সচেষ্ট। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে একটি আইন প্রণয়ন করে যা শিশুদের লালন-পালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের সাথে ব্যবহার এবং শিশু অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি সম্পর্কিত বিষয়ের সাথে জড়িত।
ক. হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন করা হয় কত সালে?
খ. সামাজিক আইনের একটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকে কোন আইন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে? এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘এ আইন শিশুদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ দলিল’- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন করা হয় ২০১২ সালে।
খ. সামাজিক আইনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সমাজের সকল প্রকার কু-প্রথা দূর করা।
আমাদের সমাজে এখনো অনেক কু-প্রথা ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। এগুলো সমাজের স্বাভাবিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন বিধবা বিবাহ ও সতীদাহ প্রথা সম্পর্কিত কুসংস্কার নারীদের জন্য অমানবিক ছিল। এরূপ সমস্যা দূর করার জন্যই বিভিন্ন সামাজিক আইন প্রণয়ন করা হয়। এর ফলে সমাজ থেকে এ সকল কুপ্রথা দূর হয়।
গ. উদ্দীপকে ১৯৭৪ সালের শিশু আইন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ কারণে শিশুদের সার্বিক কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আর এ জন্যই শিশু আইন প্রণয়ন করা দরকার। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করে।
১৯৭৪ সালের শিশু আইনের মাধ্যমে একটি শিশুর লালন-পালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের সাথে ব্যবহার এবং শিশু অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি সম্পর্কিত আইন নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এবং ১৯৮০ সালের ১ জুন বাংলাদেশে আইনটি বলবৎ করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এর পাশাপাশি শিশু অধিকারও রক্ষিত হচ্ছে। আমাদের দেশে একটি শিশুর সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে এ আইনটির বিকল্প নেই। উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনটি বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করে। আইনটি শিশুদের লালন-পালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের সাথে ব্যবহার এবং শিশু অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি সম্পর্কিত বিষয়ের সাথে জড়িত। এ সকল বৈশিষ্ট্য শিশু আইন-১৯৭৪ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. আমাদের দেশে শিশু আইন-১৯৭৪ শিশুদের কল্যাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
শিশুদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা প্রতিটি রাষ্ট্রেরই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শিশুরা যেন যোগ্য মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য রাষ্ট্রকেই সচেষ্ট থাকতে হয়। আর এ জন্য শিশুদের সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট আইন অত্যন্ত কার্যকর। বাংলাদেশের শিশু আইন-১৯৭৪ শিশুদের সার্বিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আমাদের দেশের শিশুরা যেন সকল সমস্যা থেকে মুক্ত থাকে সে উদ্দেশ্যেই শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনে কোনো শিশুকে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার কিশোর অপরাধীদের জন্য কিশোর আদালত ও হাজত স্থাপনের বিধান রাখা হয়েছে। যা মূলত কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের উদ্দেশ্যেই কাজ করে। এ আইনে শিশু শ্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশু শ্রমের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া শিশু আইনে শিশুর রোগ নিরাময়, শাস্তিদান, জামিন প্রদান, সংশোধন ব্যবস্থা, মুক্তি প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ফলে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ সুনিশ্চিত হচ্ছে। আর এভাবেই শিশু আইন শিশুদের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, শিশু আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।
৫. যূথি নামের ফুটফুটে একটি মেয়ে বাড়ির সামান্য দূরে অবস্থিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল গেইটের সামনের গ্যারেজে কর্মরত কয়েকটি ছেলে প্রায়শ তাকে উত্যক্ত করত। একদিন এক ছেলে তার ওড়না টেনে ধরে। ঘটনাটি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে স্কুল কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিয়ে ছেলেটিকে জরিমানা করে গ্যারেজ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এর কিছুদিন পর প্রতিশোধ নিতে ছেলেটি যূথির মুখে এসিড ছুঁড়ে মারে এবং এতে সে সামান্য আহত হয়।
ক. ‘যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০’ কত সাল থেকে কার্যকর হয়?
খ. সামাজিক আইনের তিনটি উদ্দেশ্য আলোচনা করো।
গ. যূথির উপর হামলাকারীর বিচার যে যে ধারায় হবে আইনটির নাম উল্লেখপূর্বক ধারাগুলো ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত আইনের সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ করো।
৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০’ ১৯৮১ সালের ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে কার্যকর হয়।
খ. সামাজিক আইন সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রণীত এবং সমাজে সৃষ্ট সমস্যা ও অবাঞ্ছিত অবস্থা মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সামাজিক আইন প্রয়োগ করা হয়।
সামাজিক আইনের নানা উদ্দেশ্য বিদ্যমান। প্রথমত সামাজিক আচার- আচরণ নিয়ন্ত্রণ সামাজিক আইনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এ আইনের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে সমষ্টি ও সামাজিক স্বার্থের প্রতি সচেতন থেকে সমাজ অনুমোদিত আচরণ করতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয়ত, সামাজিক সমস্যা সমাধান এবং ভবিষ্যৎ সমস্যা প্রতিরোধ সামাজিক আইনের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। তৃতীয়ত, সামাজিক সাম্য ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সামাজিক আইন প্রণীত হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অপরাধ হচ্ছে এসিড নিক্ষেপ করে মুখের বিকৃতি ঘটানো। এক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০০৩ অনুযায়ী উপযুক্ত শাস্তির বিধান রয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০০৩ অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি দহনকারী বা ক্ষয়কারী পদার্থ দ্বারা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটায় বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড বা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। এই কারণে যদি কোনো শিশু বা নারীর শ্রবণশক্তি নষ্ট, যৌনাঙ্গ বা স্তন বিকৃতি ঘটে সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত অনুর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। এছাড়া শরীরের অন্য কোনো অঙ্গহানি, বিকৃতি বা নষ্ট হলে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
পাড়ার গ্যারেজের কর্মচারী একটি ছেলে যূথিকে এসিড ছুঁড়ে মারে। এতে যূথি আহত হয়। এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে ছেলেটি চৌদ্দ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা জরিমানার দন্ড ভোগ করবে।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ (সংশোধন) আইন- ২০০৩-এর কয়েকটি ধারা সংশোধন করলেও কিছু সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন রোধ (সংশোধন) আইন-২০০৩ সময়ের পরিবর্তন ও বাস্তবতার আলোকে সংশোধন করা হলে নারী নির্যাতন সংশ্লিষ্ট সকল অপরাধ অন্তর্ভুক্ত হয়নি। নারীর প্রতি গৃহ সহিংসতা, জোরপূর্বক গর্ভপাত, পর্ণোগ্রাফি, নারীর নিরাপদ চলাচলে বাধা প্রদান ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও শব্দ উচ্চারণ, উত্যক্ত করা ইত্যাদির জন্য অপরাধী হওয়ার ধারা বর্জন করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের জন্য কোন যুগোপযোগী সংশোধনী আনা হয়নি।
সংশোধিত আইনে সংযোজিত নতুন ধারায় সম্ভ্রমহানি ঘটার পর, কেউ আত্মহত্যার প্ররোচনা হিসেবে গণ্য করা হলেও উত্যক্তকারীর মানসিক নির্যাতনের কারণে আত্মহননে বাধ্য করলেও তা অপরাধ বলে গণ্য হয় না। ধর্ষনের ফলে জন্ম নেয়া সন্তান, ধর্ষক বা ধর্ষিতার পরিচয়ে বড় হবে, সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনার দাবি রাখে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উক্ত আইনে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা দূর করতে আইন সংশোধনের সংজ্ঞা আইনের যথার্থ প্রয়োগ প্রয়োজন।
৬. কেরামত আলী প্রথম স্ত্রী'র অনুমতি ব্যতীত আরেকটি চৌদ্দ বছরের মেয়েকে বিয়ে করে। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী'র মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি, ঝগড়াবিবাদ ও মারামারি পর্যন্ত হয়। একসময় কেরামত মৌখিকভাবে তিন তালাক দিয়েই স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এমতাবস্থায় কেরামত আলীর স্ত্রী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের কতগুলো নির্দিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন জানায়।
ক. ১৯৭৪ সালের শিশু আইন কত সালে ঢাকায় প্রয়োগ হয়?
খ. যৌতুক নিরোধ আইনের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
গ. ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের যেসব ধারায় কেরামত আলীর বিচার হবে সেসব ধারা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের উপযোগিতা বিশ্লেষণ করো।
৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৭৪ সালের শিশু আইন ১৯৭৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রয়োগ করা হয়।
খ. নারী নির্যাতন ও হত্যা রোধ এবং নারীর উন্নয়নকল্পে যৌতুক নিরোধ আইন প্রত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যৌতুক একটি বড় ধরনের কু-পথা। নারী অধিকার সংরক্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ‘যৌতুকনিরোধ আইন-১৯৮০’ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এই আইনের সংশোধনী খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো নারীর স্বামী, স্বামীর পিতা-মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর লক্ষ্যে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য কোনো নারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করলে তাকে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে। এর ফলে সমাজে মানুষের মধ্যে এ বোধশক্তি জাগ্রত হবে যে যৌতুক আদান- প্রদান করলে শাস্তি নিশ্চিত এবং সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হতে হবে।
গ. ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের দ্বিতীয় বিয়ে এবং তালাক সম্পর্কিত ধারায় উদ্দীপকের কেরামত আলীর বিচার হবে।
১৯৬১ সালের ১৫ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া মুসলিম পারিবারিক আইনটি বাংলাদেশের নারীদের স্বার্থরক্ষার এক ধরনের রক্ষাকবচ। এই আইনের একটি ধারা দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে হয়েছে। প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকতে স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারবে না। তবে স্বামী তার স্ত্রীর সম্মতিক্রমে সালিশ পরিষদের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিবাহ করা যাবে। এই আইনের আরেকটি ধারা তালাক সম্পর্কে বর্ণিত আছে। কয়েকবার তালাক উচ্চারণ করলেও তালাক হয় না। কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে স্বামীকে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত নোটিশ দিতে হবে এবং অনুরূপ কপি স্ত্রীকেও দিতে হবে। নোটিশ দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান উভয়ের মধ্যে মিলন ঘটাতে ব্যর্থ হলে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। নারীদের অধিকার রক্ষায় এ ধরনের আরো কয়েকটি ধারা উল্লেখ রয়েছে মুসলিম পারিবারিক আইনে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কেরামত আলী প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন করে এবং একপর্যায়ে প্রথম স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তালাক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অনুযায়ী, কেরামত আলী আইন ভঙ্গ করায় উক্ত আইনের দ্বিতীয় বিয়ে এবং তালাক ধারা দুটি অনুযায়ী বিচার কার্য সম্পন্ন হবে। এতে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হবে। আর মৌখিক তালাকের কারণে সর্বাধিক এক বছর কারাভোগ অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের গুরুত্ব অপরিসীম।
সামাজিক কু-প্রথা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এদেশে বহুবিবাহ, তালাক, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে বেশ অসামঞ্জস্য ছিল। এ অবস্থা মোকাবিলায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার নারীর মর্যাদা রক্ষা, অধিকার আদায় ও পরিবারের সুখ-শাস্তি ও শিশুদের উত্তরাধিকার প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালের ৭ আগস্ট একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। যা পরবর্তীতে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন নামে পরিচিতি পায়।
বাংলাদেশের মুসলিম নারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ আইন ছিল এক ধরনের নিরাপত্তাকবচ। কেননা এই আইন মহিলা ও শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ এনে দিয়েছে। এই আইন প্রণয়নের আগে কোনো স্বামী মুখ দিয়ে তালাক উচ্চারণ করলেই তালাক হয়ে যেত। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী লিখিত প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে দেনমোহর ও ভরণপোষণের খরচ থেকে বঞ্চিত হতো। কিন্তু এ আইনে বিবাহ রেজিস্ট্রির বিধান রাখার ফলে নারীর আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা লাভের সুযোগ এসেছে। এমনকি স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করা এবং স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এটি নারীদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণসহ পিতৃহীন এতিম ছেলেমেয়ের স্বার্থরক্ষার জন্যও এই আইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে।
সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীদের কল্যাণে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন এক নিরাপত্তা সেফগার্ড হিসেবে পরিচিত।
৭. মি. 'ক' প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ফলে 'ক'-এর স্ত্রীর সাথে তার বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে মি. 'ক' তার স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তিন তালাক দেন। তার স্ত্রী আদালতে মামলা করেন। এখন মামলাটি বিচারাধীন।
ক. যৌতুক কী?
খ. নারী নির্যাতন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনায় 'ক' এর স্ত্রী কোন আইনের আশ্রয় নিতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের নারীদের দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন রক্ষা করার ক্ষেত্রে উক্ত আইনের ধারাগুলো কীভাবে ভূমিকা রাখে তা আলোচনা কর।
৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিয়ের সময় কন্যাপক্ষ বরপক্ষকে বা বরপক্ষ কন্যাপক্ষকে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে যে উপঢৌকন দেয় তাই যৌতুক।
খ. নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা যা নারীর জন্য মর্যাদা হানিকর তাই নারী নির্যাতন। নারীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি নানা অজুহাত দেখিয়ে নারীর ওপর দৈহিক ও মানসিকভাবে নিপীড়ন চালানো বা ক্ষেত্র বিশেষে নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করে কোনো অবৈধ কিছু করাই হলো নারী নির্যাতন।
গ. উদ্দীপকের ঘটনায় 'ক'-এর স্ত্রী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের আশ্রয় নিতে পারে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের মাধ্যমে মুসলিম নারীদের মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবে না। আর প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে স্ত্রীগণের দেনমোহর তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করতে হবে। আর স্ত্রী অভিযোগ করলেও তা প্রমাণিত হলে স্বামীকে আইন অনুযায়ী শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই আইনে আরও বলা হয়েছে মুখে কয়েকবার তালাক উচ্চারণ করলেই স্ত্রী তালাক হয় না। কোনো স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে স্বামীকে যথাশীঘ্র ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ দিতে হবে এবং অনুরূপ কপি স্ত্রীকেও দিতে হবে। এ ধারা ভঙ্গ করলে স্বামীকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
উদ্দীপকে মি. 'ক' প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। একপর্যায়ে মি. 'ক' তার প্রথম স্ত্রীকে মৌখিকভাবে তালাক দেন। এতে তার স্ত্রী আদালতে মামলা করেন। আর এক্ষেত্রে 'ক'-এর স্ত্রী উপরে বর্ণিত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের গুরুত্ব অপরিসীম।
সামাজিক কু-প্রথা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এদেশে বহুবিবাহ, তালাক, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে বেশ অসামঞ্জস্য ছিল। এ অবস্থা মোকাবিলায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার নারীর মর্যাদা রক্ষা, অধিকার আদায় ও পরিবারের সুখ-শাস্তি ও শিশুদের উত্তরাধিকার প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালের ৭ আগস্ট একটি অধ্যাদেশ জারি করেন। যা পরবর্তীতে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন নামে পরিচিতি পায়। বাংলাদেশের মুসলিম নারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ আইন ছিল এক ধরনের নিরাপত্তাকবচ। কেননা এই আইন মহিলা ও শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ এনে দিয়েছে। এই আইন প্রণয়নের আগে কোনো স্বামী মুখ দিয়ে তালাক উচ্চারণ করলেই তালাক হয়ে যেত। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী লিখিত প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে দেনমোহর ও ভরণপোষণের খরচ থেকে বঞ্চিত হতো। কিন্তু এ আইনে বিবাহ রেজিস্ট্রির বিধান রাখার ফলে নারীর আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা লাভের সুযোগ এসেছে। এমনকি স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করা এবং স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এটি নারীদের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তাছাড়া ছেলেমেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণসহ পিতৃহীন এতিম ছেলেমেয়ের স্বার্থরক্ষার জন্যও এই আইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে।
তাই সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীদের কল্যাণে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন এক নিরাপত্তা সেফগার্ড হিসেবে পরিচিত।
৮. মাদকদ্রব্যের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে সুখী নীলগঞ্জের সামাজিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হচ্ছে। বিশেষত কিশোর ও যুবকদের মাঝে এর বিস্তার বেশি। আসিফ ও রাকিব নামের দুই মাদক চোরাচালানকারী নাকের ডগায় থেকে এ ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে কিন্তু গত মাসে স্বয়ং চেয়ারম্যান সাহেব তাদের ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
ক. শিশু আইনে কতটি ধারা আছে?
খ. সামাজিক সমস্যা ও সামাজিক আইন একে অন্যের উপর নির্ভরশীল কেন?
গ. উদ্দীপকে আসিফ ও রাকিব কোন আইনে পেতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, বাংলাদেশের মাদকদ্রব্যের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে উক্ত আইন সহায়ক?
৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শিশু আইনের ধারা ৭৮টি।
খ. সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য সামাজিক আইন প্রণীত হয়, ফলে এ দুটি বিষয় একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সামাজিক উন্নয়ন ও প্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। যেমন- যৌতুক একটি সামাজিক সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা দূর করার লক্ষ্যেই সামাজিক আইন প্রণয়ন করা হয়। আবার আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে সমাজে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়। অর্থাৎ সামাজিক সমস্যা ও আইন একে অন্যের পরিপূরক।
গ. উদ্দীপকের আসিফ ও রাকিব মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ অনুযায়ী তাদের সাজা হতে পারে।
বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ ও যুবসমাজকে মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে এ সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ১৯৯০ সালে অধ্যাদেশটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন হিসেবে গৃহীত হয়। এই আইনে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
উদ্দীপকের আসিফ ও রাকিব দীর্ঘদিন ধরে নীলগঞ্জ থানায় মাদক চোরাচালানের ব্যবসা করছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন প্রচলিত আইন অনুসারেই তাদের বিচার এবং শাস্তি হবে। বাংলাদেশে ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনে মাদকদ্রব্যের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে শাস্তির উল্লেখ আছে। যেমন- হেরোইনের মতো ভয়াবহ মাদকের ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ২৫ গ্রাম হলে কমপক্ষে ২ বছর এবং অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। তাই বলা যায়, আসিফ ও রাকিব চোরাচালান করা মাদকদ্রব্যের প্রকৃতি ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে আলোচ্য আইনে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া যাবে।
ঘ. আমি মনে করি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে তা বাংলাদেশে মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধে সহায়ক হবে।
মাদকাসক্তি আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যা সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো মাদকদ্রব্যের অবাধ বিস্তার। তাই এ সমস্যার সমাধানে মাদকের বিস্তার রোধের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮৯ অনুসারে, ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের অধীনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে যায়। এই অধিদপ্তর মাদকদ্রব্যের বিস্তার প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। অধিদপ্তরের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে মাদকদ্রব্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা, মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা করা এবং মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়় তোলা। এভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সংশ্লিষ্ট আইনটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান। আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মাদক গ্রহণ, সরবরাহ, বহন, বিপণন, চাষাবাদ ও সংরক্ষণ করলে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, অর্থদন্ড ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে মাদকের শ্রেণি, প্রকৃতি, পরিমাণ ও প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় নেওয়া হবে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, আলোচ্য আইনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে উপযোগী ধারার সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। কাজেই আইনের কঠোর প্রয়োগ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারবে।
৯. অরুণ একাদশ শ্রেণির ছাত্র। পারিবারিক কারণে ইদানিং সে পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে রাত করেও বাসায় ফিরে। এক পর্যায়ে মাদক গ্রহণ করতে শুরু করে। এ অবস্থা তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এ অবস্থা যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এজন্য সরকার একটি আদেশ জারি করে।
ক. আইন কাকে বলে?
খ. আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রক বুঝিয়ে লেখো।
গ. অরুণের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কোন আইনটি প্রযোজ্য— ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত আইন বাস্তবায়নে সমাজকর্মীর ভূমিকা মূল্যায়ন করো।
৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমাজে বসবাস করার জন্য মানুষকে যেসকল বিধি-বিধান মেনে চলতে হয়, সেগুলোর সমষ্টিকে আইন বলে।
খ. আইনের মাধ্যমে মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। কেননা, আইন হলো সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জনসাধারণের উপর প্রণীত বিধি-বিধান।
আইন ভঙ্গ করলে মানুষকে শাস্তি পেতে হয়। এজন্য মানুষ আইনের পরিপন্থী কোনো আচরণ বা কাজ করা থেকে বিরত থাকে। এজন্য বলা যায়, আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণের নিয়ন্ত্রক।
গ. অরুণের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে 'মাদক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮৯' আইনটি প্রযোজ্য।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮৯ প্রণীত হয়। এ আইনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের সাথে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজীয় প্রশাসনিক কাঠামো সৃষ্টির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ আইনের বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এ আইনের আওতায় মাদকাসক্তিজনিত সমস্যা প্রতিরোধের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, একাদশ শ্রেণির ছাত্র অরুণ মাদক গ্রহণ শুরু করেছে। উপরে বর্ণিত মাদক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮৯ আইনটি প্রয়োগ করে অরুণের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করা যায়।
ঘ. উক্ত আইন অর্থাৎ 'মাদক নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮৯' বাস্তবায়নে সমাজকর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৯ সালে 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করে। এই আইনে মাদক দ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সমাজকর্মীরা মাদকাসক্তদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই আইন প্রয়োগে ভূমিকা রাখতে পারে। তাদেরকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও সমাজকর্মীরা সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের মাধ্যমে তারা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে পারে। আবার, মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচারমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে পারে। এতে মাদকাসক্তি অনেকাংশে কমে আসবে।
উদ্দীপকের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অরুণ মাদক গ্রহণ শুরু করায় তার জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। মাদকের এই অবস্থা যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে। এজন্য সরকার 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮৯' জারি করেছে। আর এ সমাজকর্মীরা উপরোল্লিখিতভাবে এই আইন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
১০. প্রফেসর ওয়াজেদ দৈনিক খবরের কাগজ পড়ছিলেন। একটি সংবাদ তার মনকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। ইমরান ৯ম শ্রেণির ছাত্র। তার মা বাবা তার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছেন। বাবা-মা তাদের কর্মব্যস্ততার জন্য ইমরানকে সময় দিতে পারেন না। ইমরান তার বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটায়। একদিন একটি দামি মোবাইল সেটের জন্য বন্ধুরা তাকে হত্যা করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা সবাই বখাটে ও মাদকাসক্ত ছিল। হত্যাকারী হওয়া সত্ত্বেও তাদের বয়স কম থাকায় প্রচলিত আইনে তাদের বিচার করা যাচ্ছে না।
ক. মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ কবে গৃহীত হয়?
খ. মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. হত্যাকারী হওয়া সত্ত্বেও ইমরানের বন্ধুদের প্রচলিত আইনে বিচার করা যাচ্ছে না কেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. যে আইনে ইমরানের বন্ধুদের বিচার করা যাবে, সে আইনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব আলোচনা কর।
১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৯০ সালের ২রা জানুয়ারি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ গৃহীত হয়।
খ. মুসলিম বিবাহ ও পারিবারিক আইন সম্পর্কে গঠিত কমিশনের কিছু সুপারিশের প্রতি কার্যকারিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ প্রণীত হয়।
নারীর মর্যাদা সংরক্ষণ, অধিকার আদায়, পারিবারিক সুখ-শাস্তি রক্ষা এবং এতিম শিশুদের উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা ছিল এই অধ্যাদেশের অন্যতম উদ্দেশ্য। কেননা অতীতে বহুবিবাহ, তালাক, ভরণপোষণ,
উত্তরাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে বেশ অসামঞ্জস্য ছিল। এ সকল অসামঞ্জস্য দূর করাই ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের অন্যতম উদ্দেশ্য।
গ. হত্যাকারী হওয়া সত্ত্বেও বয়স কম হওয়ায় প্রচলিত আইনে ইমরানের বন্ধুদের বিচার করা যাচ্ছে না।
১৯৭৪ সালের শিশু আইন অনুযায়ী, ১৬ বছরের কম বয়স্ক ছেলে-মেয়ে শিশু বলে অভিহিত হবে। এ বয়স সীমার ছেলে-মেয়ে যদি একক বা দলবদ্ধভাবে কোনো অপরাধ করে তবে তাদেরকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা যাবে না। তাদেরকে শিশু আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
কিশোর অপরাধীরা সাধারণত ঝোঁকের বশে অপরাধ করে থাকে। তাই বিচারের সময় তাদেরকে বয়স্ক অপরাধীদের থেকে দূর রেখে শাস্তি না দিয়ে তাদের চরিত্র সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তারা নিজেদেরকে পরিবর্তন করার সুযোগ পেয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তা না হলে তারা পরবর্তীতে আরো ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে ইমরানের বন্ধুদের প্রচলিত আইনে বিচার না করে শিশু আইনের অধীনে বিচার করতে হবে। যেন তারা তাদের চরিত্র সংশোধনের সুযোগ পায়।
ঘ. বাংলাদেশ শিশু আইন-১৯৭৪ এর আওতায় ইমরানের বন্ধুদের বিচার করা যাবে। কিশোর অপরাধীদের সংশোধন ও পুনর্বাসনে শিশু আইনের আইনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের শিশুদের হেফাজত, সংরক্ষণ, তাদের সঙ্গে আচরণ এবং কিশোর অপরাধীদের বিচার শাস্তি ও অপরাধপ্রবণতা সংশোধনে বিশেষ ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণীত হয়। বাংলাদেশের শিশু নির্যাতন এবং কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আলোচ্য আইনটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
আলোচ্য শিশু আইন কিশোর অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এ আইনের আওতায় গাজীপুরের টঙ্গী ও কোনাবাড়িতে আলাদাভাবে কিশোর-কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া যশোরেও কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো কিশোর আদালত, কিশোর হাজত এবং সংশোধন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যে হারে কিশোর অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে অনুপাতে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উপজেলা পর্যায়ে শিশু আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগের প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া কিশোর অপরাধ সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তবে বাস্তবায়নের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে আইনটি কিশোর অপরাধ সংশোধনে প্রত্যাশানুযায়ী ভূমিকা পালনে সক্ষম হচ্ছে না। উল্লেখ্য শিশু আইন-১৯৭৪ এর দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি রহিত করে শিশু আইন-২০১৩ শিরোনামে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে ১৯৭৪ সালের আইনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে একেবারে অস্বীকার করা যায় না।
0 Comments:
Post a Comment