এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.
সমাজকর্ম
দ্বিতীয় পত্র
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪
HSC Social Work 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download
১. গণমাধ্যম বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের এক পর্যায়ে শিক্ষক গণমাধ্যম বিষয়ক আলোচনা করেন। গণমাধ্যম জনগণের নিকট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তথ্য সরবরাহ করে। জনগণ সরাসরি তা দেখতে, শুনতে ও পড়তে পারেন। তিনি কিছু গণমাধ্যমের উদাহরণ দেন। যেমন- রেডিও, টিভি, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত ইত্যাদি। এসব মাধ্যমসমূহ জনমত গঠনে সহায়তা করে।
ক. ‘ধর্ম হলো অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস’- এটি কার উক্তি?
খ. উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত কী? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত গণমাধ্যমের প্রকারভেদ উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বিবৃত উদাহরণসমূহ কী প্রক্রিয়ায় জনমত গঠনে সহায়তা করে? বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. “ধর্ম হলো অতি প্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস"- উক্তিটি ইংরেজ নৃ- বিজ্ঞানী Sir Edward Burnett Tylor-এর।
খ. দেশের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরে যে আদালত বিদ্যমান তাকে উচ্চ আদালত বা সুপ্রীম কোর্ট বলে। এ আদালত মধ্যম স্তরের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ও বিচার করে। জনগণ মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রশ্নে এই আদালতে রিট জারি করতে পারে।
অন্যদিকে নিম্ন আদালত মূলত দৈনন্দিন জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের বিচার কাজ পরিচালনা করে। এটি আবার দুই রকম হয়, যেমন- ফৌজদারি আদালত ও দেওয়ানি আদালত। ফৌজদারি আদালতে হত্যা, খুন, ডাকাতি, ইত্যাদি বিবাদের বিচার হয়। অন্যদিকে দেওয়ানি আদালত নাগরিক অধিকার ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের বিচার করে।
গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত গণমাধ্যমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
বর্তমানে ঘরে বসে যেকোনো বিষয়ে তথ্য জানা যায়। বিভিন্নভাবে আমাদের কাছে এসব তথ্য উপস্থাপিত হয়। কোনো মাধ্যমে তথ্যচিত্র দেখা যায়, কোনোটিতে শোনা যায়, আবার কোনো কোনো মাধ্যমে শোনা ও দেখার কাজ একসাথে করা যায়। এজন্য গণমাধ্যমের অনেকগুলো প্রকারভেদ পাওয়া যায়। তবে সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যম দুই রকম।
সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমকে যে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় তার একটি হলো প্রিন্ট মিডিয়া। আর অন্যটি হলো ইলেকট্রনিক মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে রয়েছেত সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, বিভিন্ন প্রকার বই, প্রচারপত্র, বিলবোর্ড, সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রভৃতি। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মধ্যে রয়েছেত টেলিভিশন ও বেতার। এছাড়া আধুনিক গণমাধ্যম দৈনন্দিন জীবনে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। আধুনিক গণমাধ্যমের মধ্যে রয়েছে অনলাইন পোর্টাল, বিভিন্ন ওয়েব পেজ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ইত্যাদি। উদ্দীপকেও উক্ত বিষয়গুলো দৃশ্যমান।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত গণমাধ্যমের ক্ষেত্রগুলো নানারকম তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে জনমত গঠন করে।
সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ, গঠনমূলক কোনো কাজ পরিচালনা বা ইতিবাচক যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে জনমত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গণমাধ্যম বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জনমত গঠনে সহায়তা করে। উদ্দীপকের উদাহরণে গণমাধ্যমের চারটি ক্ষেত্রের কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকে রেডিও, টিভি, চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতের কথা বলা হয়েছে। এগুলো বর্তমানে শীর্ষস্থানীয়, গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় গণমাধ্যম। টেলিভিশন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় গণমাধ্যম। বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে টেলিভিশন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। নানারকম অপরাধমূলক কার্যকলাপের সচিত্র প্রতিবেদন অনুসন্ধানমূলক তথ্য উপস্থাপনে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। উদাহরণস্বরূপ, ইটিভি (ETV)-এর 'একুশের চোখ', ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের 'তালাশ', যমুনা টেলিভিশনের '৩৬০°' প্রভৃতি অনুষ্ঠানে সমাজের নানা রকম অসঙ্গতি বা সমস্যা তুলে ধরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বেতার গণমাধ্যম হিসেবে নানা ধরনের তথ্যমূলক সংবাদ, যাত্রা, নাটক, আলোচনা, বক্তৃতা প্রকাশ করে যা শ্রোতাদের মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমাজ সচেতনতামূলক ও নির্মল বিনোদনের জন্য যেসব চলচ্চিত্র তৈরি হয় সেগুলো সাধারণ জনগণকে মহৎ চিন্তা ও কাজে উৎসাহী করে এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সঙ্গীতের মাধ্যমেও সমাজের নানা অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়; যা সমাজের জনগণকে সচেতন করে তোলে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরে আলোচিত প্রক্রিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত গণমাধ্যমগুলো জনমত গঠনে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
২. শিল্পবিপ্লবের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্মব্যস্ততার কারণে পারিবারিক বন্ধন অনেক শিথিল হয়ে পড়ছে। শিশুদের বাবা-মা একদম সময় দিতে পারে না বলে শিশুদের মাঝে অসংযত আচরণ, কুপ্রবৃত্তি ও অমানবিক আচরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিশুরা টিভির ধর্মীয় বা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করে না, বরং তারা বিদেশি চ্যানেল, ফেসবুক, ইন্টারনেট, মোবাইল ও চ্যাট করতে পছন্দ করে। বাবা-মার অনুপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই কিশোর অপরাধ ও কিশোর মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে।
ক. ‘প্রতিষ্ঠান হল সেসব প্রতিষ্ঠিত কর্মপদ্ধতি, যেগুলোর মাধ্যমে গোষ্ঠীর কার্যকলাপের বৈশিষ্ট্য সূচিত হয়।’— কে বলেছেন?
খ. আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. অনুচ্ছেদে শিশুদের উল্লিখিত আচরণ নিয়ন্ত্রণে কোন প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সমস্যা সমাধানে আধুনিক প্রযুক্তি কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? সুপারিশ দাও।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘প্রতিষ্ঠান হলো সেসব প্রতিষ্ঠিত কর্মপদ্ধতি, যেগুলোর মাধ্যমে গোষ্ঠীর কার্যকলাপের বৈশিষ্ট্য সূচিত হয়’, এ সংজ্ঞাটি ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার এবং পেজের।
খ. আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলতে ঐ সকল সংস্থাকে বোঝায়, যারা দেশের নাগরিকদের কল্যাণে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ করে।
যেসব সংস্থার মাধ্যমে আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বিধানে প্রয়োগ করা হয়, তাদেরকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলা হয়। এক্ষেত্রে যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইনের প্রতি অনুগত থেকে সমাজের নিয়ম ও আদর্শ ভঙ্গকারীদের খুঁজে বের করে এবং শাস্তি প্রদান করে তাদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গ. অনুচ্ছেদে শিশুদের উল্লিখিত কুপ্রবৃত্তি, অসংযত ও অমানবিক আচরণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে পরিবার।
জন্মের পর একটি শিশু পরিবারেই বেড়ে ওঠে। তার স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু বিকাশে পরিবারের ভূমিকাই মুখ্য। পরিবারই হলো শিশুর জন্য প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর মা-বাবা শিশুকে সামাজিক নিয়ম ও নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিবার তার দায়িত্ব পালনে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছে।
উদ্দীপকে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে। তারা টিভিতে ধর্মীয় বা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করে না, বরং তাদের অনেকেই বিদেশি চ্যানেল, ফেসবুক, মোবাইল ফোন প্রভৃতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এর ফলে তাদের চারিত্রিক গঠন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না। আবার বাবা-মায়ের অনুপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে তারা নানা ধরনের কিশোর অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এমনকি জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকাসক্তির জালে। এদের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের জন্য পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে বাবা-মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা অপরিহার্য। প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। কিন্তু সামাজিক মর্যাদা ও অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে বা জীবিকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে অনেক বাবা-মাই সন্তানদের ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারছেন না। আর বাবা-মায়ের অনুপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে কোনো কোনো শিশু-কিশোর বিপথে চলে যাচ্ছে। সুতরাং, উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যার মূল কারণ পরিবারের ব্যর্থতা।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কিশোর অপরাধ ও মাদকাসক্তি সমস্যার সমাধানে গণমাধ্যম সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যেকোনো সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জনগণ সচেতন হলে সম্মিলিতভাবে যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করা যায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম, যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রভৃতির সঠিক ব্যবহার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, কিশোর-কিশোরীদের অপরাধী হয়ে ওঠার পেছনে তথ্যপ্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের নেতিবাচক ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এ সমস্যা সমাধানে পরিবারকেই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ছেলে-মেয়েরা টেলিভিশনে কোন ধরনের চ্যানেল বা অনুষ্ঠান দেখছে, ফেসবুকে কী করছে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ সব মাধ্যম থেকে তাদেরকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। এজন্য এ মাধ্যমগুলো থেকে তারা যেন শিক্ষা ও সুষ্ঠু বিনোদন নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো নানা আকর্ষণীয় উপায়ে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পারে। সর্বোপরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাম্প্রতিকতম প্রযুক্তিকে সচেতনতা সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, গণমাধ্যমের যথাযথ ব্যবহার উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. আব্দুল জলিল তিন সন্তানের জনক। বড় ছেলে চাকুরি করে এবং অন্য দুই ছেলে স্থানীয় কলেজে লেখাপড়া করে। কিছুদিন পূর্বে বড় ছেলের বিয়ে দেন। কিন্তু চাকুরি করার কারণে আব্দুল জলিল এর ছেলে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন এবং গ্রামে মা-বাবার জন্য টাকা পাঠান।
ক. ইংরেজি ‘Family’ শব্দটি কোন শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে?
খ. বিবাহ কাকে বলে?
গ. উদ্দীপকে আব্দুল জলিলের বড় ছেলের পরিবারটি কোন ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশে উক্ত পরিবারের গুরুত্ব আলোচনা করো।
৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ইংরেজি ‘Family’ শব্দটি ল্যাটিন ‘Famulus’ শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে।
খ. বিবাহ হলো প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারী ও পুরুষের একত্রে বসবাস করার সামাজিক স্বীকৃতি; যা সংশ্লিষ্ট সমাজ বা দেশের প্রচলিত রীতি- নীতি ও আইন দ্বারা স্বীকৃত।
পরিবার গঠনের বৈধ উপায় হলো বিবাহ। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটি মানব সমাজের একটি সর্বজনীন রীতি। সমাজ এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন রীতি প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আব্দুল জলিলের বড় ছেলের পরিবারকে আকারের ভিত্তিতে অণু পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
আকারের ভিত্তিতে পরিবার তিন প্রকার। যথা- অণু পরিবার, বর্ধিত পরিবার ও যৌথ পরিবার। শাব্দিক অর্থে অণু পরিবার অর্থ ছোট পরিবার। এ ধরনের পরিবার স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তান সন্ততি নিয়ে গঠিত হয়। অণু পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাধারণত ৩/৪ জনের বেশি হয় না।
উদ্দীপকের আব্দুল জলিলের বড় ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। গ্রাম থেকে শহরে এসে তারা নতুন সংসার জীবন শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের পরিবারটি বড় একটি পরিবারের অংশ থেকে ছোট পরিবারে রূপান্তরিত হয়েছে। তাদের পরিবার দুজন সদস্য নিয়ে গঠিত। সুতরাং এটি নিঃসন্দেহে একটি অণু পরিবার। কিছু দিন আগেও আব্দুল জলিলের বড় ছেলে তার বাবা-মা ও ভাইদের সাথে বর্ধিত পরিবারে বসবাস করতেন, কিন্তু চাকরির সুবাদে তিনি শহরবাসী হয়েছেন। তাই বলা যায়, আকারের ভিত্তিতে আব্দুল জলিলের বড় ছেলের পরিবারটি অণু পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. প্রশ্নে উল্লিখিত পরিবার তথা অণু পরিবারের গুরুত্ব বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে।
সমাজকাঠামো ও মানুষের জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তন একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়। প্রাচীনযুগের সমাজব্যবস্থা যেমন ছিল এখন আর সেরকম নেই। এই পরিবর্তন সমাজকাঠামোর প্রতিটি স্তরেই ঘটেছে। ফলে সময়ের সাথে সাথে পরিবারের কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। এক সময়ের স্বাভাবিক চিত্র যৌথ পরিবারের জায়গায় এখন অণু বা একক পরিবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে এক সময় মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি সবাইকে নিয়ে একসাথে বসবাসের রীতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। তবে শিল্পায়ন ও নগরায়ণসহ বিভিন্ন কারণে অণু বা একক পরিবার গঠনের হার দ্রুত বাড়তে থাকে। অণু পরিবারের সুবিধা হলো, এই পরিবার কাঠামোতে সন্তান-সন্ততির জন্য সহজেই সব ধরনের মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। পরিবারের আকার ছোট হওয়ায় সন্তানের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য, মানসম্মত শিক্ষা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করা যায়। এ কারণে দিন দিন অণু পরিবার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এ কথাও সত্যি যে, অতীতের মতো পারিবারিক সংযোগ বা মানসিক অনুভূতির আদান- প্রদান অণু পরিবারে অনেকাংশেই অনুপস্থিত।
সামগ্রিক আলোচনা থেকে বলা যায়; অণু বা একক পরিবারের উৎপত্তি তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক ঘটনা হলেও দিন দিন এর বিস্তার ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. ইউসুফ ও উমা ভালো বন্ধু। পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে সামাজিক বন্ধন স্থাপিত হয়। তাদের মধ্যকার এ সামাজিক বন্ধনই সাধারণত স্থায়ীভাবে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
ক. ধর্ম কী?
খ. গণমাধ্যম বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়টির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ধর্ম (Religion) হচ্ছে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস এবং কিছু বিধিবিধান যা মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।
খ. গণমাধ্যম বলতে যোগাযোগের উপায় বা মাধ্যমকে বোঝায়, যা দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছানো সম্ভব হয়।
গণমাধ্যম হলো একটি একমুখী যোগাযোগ প্রক্রিয়া। সাধারণত, মানুষের কর্মকান্ড, চিন্তা-চেতনা ও ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার তথ্য বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকেই গণমাধ্যম বলে। গণমাধ্যমের উদাহরণ হলোত বইপত্র, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি অন্যতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিবাহকে নির্দেশ করে।
বিবাহ হলো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের একসাথে বসবাস করার সামাজিক স্বীকৃতি; যা সংশ্লিষ্ট সমাজ, সম্প্রদায় বা দেশের প্রচলিত রীতিনীতি ও আইন দ্বারা অনুমোদিত হয়। এর মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয় এবং নারী-পুরুষের মধ্যে স্থায়ী ও বৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি হলো যৌন চাহিদা। বৈধ উপায়ে এ চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকে ইউসুফ ও উমার মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যকার এই সম্পর্ক পরিবার ও সমাজের স্বীকৃতির মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে। আগে তারা দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। তাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কই বিবাহের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থায়ীরূপ লাভ করেছে। ফলে তারা এখন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বৈধ সম্পর্কের ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে একত্রে বসবাস করতে পারবে। মূলত বিবাহের মাধ্যমেই একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং এর ফলে নতুন পরিবার গড়ে ওঠে।
ঘ. সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয় অর্থাৎ বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে দেখা যায়, যখন মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই বিবাহ ব্যবস্থার প্রচলন হয়। মূলত প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ এ ব্যবস্থাটির উদ্ভব ঘটায়। তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যায়।
সমাজব্যবস্থায় একে অন্যের সাথে যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, তার পিছনে বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমেই নর-নারীর সামাজিক সম্পর্ক স্থির হয় এবং প্রজনন ধারা বজায় থাকে। নবজাতকের লালন-পালন ও সামাজিকীকরণের দায়িত্ব পিতা-মাতার ওপরই ন্যস্ত হয়। ফলে সন্তানের লালন-পালনে সমস্যা হয় না এবং সে সামাজিক স্বীকৃতি পায়। কিন্তু অবৈধ যৌন সম্পর্কের ফলে যে সন্তানের জন্ম হয়, তার লালন-পালন ও সামাজিকীকরণে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারণ বিবাহ হলো পবিত্র বন্ধন, আর এর মাধ্যমেই পরিবার গঠিত হয়। এ ব্যবস্থাই পরিবারের ভিত্তি। আর পরিবার ব্যবস্থার মাধ্যমেই শিশুরা যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। এ থেকে বোঝা যায়, বিবাহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায়, সভ্য সমাজে শাস্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য বিবাহের কোনো বিকল্প নেই।
৫. শিল্প বিপ্লবের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্মব্যস্ততার কারণে পারিবারিক বন্ধন অনেক শিথিল হয়ে পড়েছে। শিশুদের বাবা-মা একদম সময় দিতে পারে না বলে, তাদের অসংযত আচরণ ও কুপ্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকাল শিশুরা টিভির ধর্মীয় বা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করে না বরং পছন্দ করে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটারে চ্যাট করতে। বাবা-মার অনুপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই কিশোর অপরাধ ও কিশোর মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে।
ক. পরিবার কী?
খ. গণমাধ্যম কীভাবে জনমত তৈরি করে?
গ. উদ্দীপকে শিশুদের উল্লিখিত আচরণ নিয়ন্ত্রণে কোন বাহনটি ব্যর্থ হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটার চ্যাট কি কোনো ভূমিকা রাখছে? মতামত দাও।
৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পরিবার হলো স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততির সমন্বয়ে গঠিত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
খ. গণমাধ্যম যেকোনো বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনমত তৈরি করে।
মূলত গণমাধ্যম বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। ফলে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সকলের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সকলেই জানতে পারে, ভাবতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এভাবে সবার মধ্যে একটি যৌক্তিক ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনমত গঠিত হয়।
গ. উদ্দীপকে শিশুদের উল্লিখিত আচরণ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বাহন হিসেবে পরিবারের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে।
পরিবার শিশুর সামাজিকীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাবা- মায়ের কাছ থেকেই শিশু ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে শেখে। কিন্তু বর্তমানে অনেক পরিবারই শিশুদেরকে এমন শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। উদ্দীপকেই তার বাস্তব দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, শিল্প-বিপ্লবের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্মব্যস্ততার কারণে পারিবারিক বন্ধন অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়েছে। বাবা-মা এখন আর শিশুদেরকে বেশি সময় দিতে পারেন না। এর ফলে শিশুদের মধ্যে অসংযত আচরণ ও কুপ্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, পরিবারের ভূমিকাটি এক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বাবা-মাই শিশুদের প্রথম শিক্ষক। কিন্তু তারা যদি শিশুদেরকে সময় না দেন এবং তাদের সঠিক পরিচর্যা না করেন তাহলে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিশুরা তখন ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে তাদের আচরণ অসংযত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে কুপ্রবৃত্তি ও অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ পরিবারের ব্যর্থতার কারণে শিশুর জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। উদ্দীপকে পরিবারের এরূপ ব্যর্থতার প্রতিই আলোকপাত করা হয়েছে।
ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটার চ্যাট অন্যতম প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
শিশুর সামাজিকীকরণে গণমাধ্যমের একটি সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যমের অপব্যবহার করা হলে এর নেতিবাচক প্রভাব শিশুর আচরণ ও স্বভাবে পড়ে। ফলে কিশোর অপরাধের মতো বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
গণমাধ্যমের অন্যতম শক্তিশালী উপাদান টেলিভিশন ও কম্পিউটার শিশুদের শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এগুলোর নানামুখী অপব্যবহারও লক্ষণীয়, যার উদাহরণ উদ্দীপকে দেখা যায়। কারণ বিদেশি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত সব অনুষ্ঠান শিশুর জন্য উপযোগী নয়। অনেক ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে তারা বিপথগামী হয়। আবার কম্পিউটার চ্যাট যদি নিয়ন্ত্রিত না হয় তবে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তারা কার সাথে, কী বিষয়ে চ্যাট করছে সে সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ এর মাধ্যমে শিশুরা খুব সহজেই খারাপ সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং নানা রকম অন্যায় কাজে প্ররোচিত হতে পারে। এর মাধ্যমেই সমাজে কিশোর অপরাধের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়, যা কখনোই কাম্য নয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, কিশোর অপরাধের মতো সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটার চ্যাট তথা গণমাধ্যমের অপব্যবহার প্রভাবকের ভূমিকা রাখে। তাই শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশে গণমাধ্যমের এ উপাদানগুলোর সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।
৬. সখীপুর গ্রামের প্রায় সব পরিবার থেকেই দু'একজন করে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করেন। তাই গ্রামের সবাই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। এ কারণে গ্রামে মাঝে মাঝেই ডাকাতেরা হানা দেয় ও প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে চলে যায়। বিষয়টি সমস্যায় রূপ নেওয়ায় উক্ত গ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং আনসার বাহিনীর একটি সশস্ত্র দলও দিনরাত টহল দিয়ে যাচ্ছে।
ক. Family শব্দের অর্থ কী?
খ. ধর্মের গুরুত্ব লেখ।
গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সংস্থাটির নাম উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. Family শব্দের অর্থ পরিবার।
খ. সামাজিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
ধর্ম বলতে অতিপ্রাকৃত মহাশক্তিতে বিশ্বাসকে বোঝায়। এ বিশ্বাস সমাজ ও মানুষের জীবনধারাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ধর্ম মানুষের মাঝে ন্যায়-অন্যায়বোধ জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে ন্যায়নিষ্ঠ করে তোলে। ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই সামজে মানুষকে সুশৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন-যাপন, নৈতিকতা ও ন্যায়বোধের চর্চাকে চলমান রাখার জন্য অবশ্যই ধর্মের প্রয়োজন।
গ. উদ্দীপকে আইন, প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ করা হয়েছে। যারা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োগের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সখীপুর গ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্প স্থাপন করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করে। এছাড়া নানা ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রমের তদন্ত করে সন্দেহভাজন অপরাধী খুঁজে বের করা, অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ করা, অপরাধীর বিচার কাজ সম্পন্ন ও শাস্তি প্রদানসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উদ্দীপকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে পুলিশ ও আনসার বাহিনী সখীপুরের জনগণের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। যেকোনো দেশের সমস্যা সমাধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রধান ভূমিকা পালন করে।
ঘ. সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপরই নির্ভর করে বিভিন্ন সমস্যার সঠিক সমাধান। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণেই নানারকম সামাজিক সমস্যা কমে যায়। যেমন- এসিড নিক্ষেপকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হলে সমাজের অন্যরা এ অপরাধ থেকে দূরে থাকবে। ফলে সমাজ থেকে এসিড নামক সন্ত্রাস ধীরে ধীরে কমে আসবে। আবার পুলিশ যদি বাল্যবিবাহের সাথে যুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দেয়; তাহলে সমাজের অন্যান্যরাও বাল্যবিবাহ দিতে বা করতে সাহস পাবে না। এর ফলে বাল্যবিবাহ হ্রাস পাবে। এছাড়া দুর্নীতি সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করে তাহলে সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হবে।
এছাড়া হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ, চোরাচালান, নানারকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধ, হ্রাস এবং শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলেই সমাজ থেকে বিভিন্ন সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।
৭. একই প্রতিষ্ঠানের কর্মরত রানা ও মিতু মধ্যে মধুর সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে তারা আজীবন একসংগে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে অভিভাবকদের সম্মতিতে সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনের মাধ্যমে তাদের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়। ফলে তারা স্থায়ীভাবে একসংগে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে দুই মেয়ে নিয়ে তারা সুখে বসবাস করছে।
ক. সমাজের ক্ষুদ্রতম সংগঠনের নাম কী?
খ. পরিবার বলতে কী বোঝায়?
গ. রানা ও মিতুর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির নাম কী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত চুক্তিবলে গঠিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যাবলি আলোচনা করো।
৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমাজের ক্ষুদ্রতম সংগঠনের নাম পরিবার।
খ. পরিবার হলো সমাজের ক্ষুদ্রতম মৌলিক সংগঠন। এ সংগঠনকে কেন্দ্র করে মানবসমাজ গড়ে উঠেছে।
পরিবার হলো এমন একটি সংগঠন যেখানে স্বামী-স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও অন্যান্য পরিজন একত্রে বসবাস করে। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করার মাধ্যমে পরিবার গঠন করে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রানা ও মিতুর সম্পাদিত চুক্তির নাম বিবাহ।
বিবাহ হলো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের যুগলে বসবাস করার সামাজিক স্বীকৃতি, যা সংশ্লিষ্ট সমাজ, সম্প্রদায় বা দেশের প্রচলিত রীতিনীতি ও আইন দ্বারা অনুমোদিত হয়। এর মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয় এবং নারী- পুরুষের মধ্যে স্থায়ী ও বৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
উদ্দীপকে রানা ও মিতুর মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যকার এই সম্পর্ক পরিবার ও সমাজের স্বীকৃতির মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে। পূর্বে তারা দুজন কলিগ ছিল। তাদের এই সম্পর্ক বিবাহের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থায়ীরূপ লাভ করেছে। ফলে তারা এখন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বৈধ সম্পর্কের ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে একত্রে বসবাস করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের বিবাহ পরিবার ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে। কারণ বিবাহের প্রথম শর্তই হলো ছেলে-মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। মূলত বিবাহের মাধ্যমেই একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং এর ফলে নতুন পরিবার গড়ে ওঠে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি হলো পরিবার। সমাজজীবনে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষের পরিচিতি, মর্যাদা, ভূমিকা ইত্যাদি নির্ধারণে পরিবার মৌলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা বহুমুখী। পরিবার শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের মাধ্যমে তাকে সমাজের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। পরিবারের মাধ্যমে মানুষ বৈধ উপায়ে যৌন চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া জন্ম পরিচিতির প্রেক্ষিতে শিশু আরোপিত মর্যাদার অধিকারী হয়। ফলে অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে শিশুকাল থেকেই সে সচেতন হয়। এরূপ সচেতনতা মানুষের মধ্যে সামাজিক মর্যাদাবোধ ও নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি করে। এছাড়া অপরাধ প্রবণতা নিরসনে এরূপ মর্যাদাবোধ ও নিরাপত্তাবোধ প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সদস্যরা শিশুদেরকে সমাজ অনুমোদিত বহুমুখী আচরণ শিক্ষা দেয়। পারিবারিক পরিবেশ শিশু, প্রবীণ, অক্ষম এবং বেকার সদস্যদের ন্যূনতম মৌল চাহিদা পুরণের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। সদস্যদের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে পরিবার সামাজিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিকীকরণ, ব্যক্তিত্ব গঠন, সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ গঠন, আচরণ নিয়ন্ত্রণ, মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ প্রভৃতি কার্যাবলি সম্পাদন করে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. কালিমা বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই মানসিক ও শারিরীকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। সামাজিক বাস্তবতা এবং লোকজনের ভয়ে পরিবার বা অন্য কোথাও অভিযোগ না করে সহ্য করেন। এক পর্যায়ে পরিবারকে জানালে তারাও সব কিছু মেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু নির্যাতনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে তিনি তার এক প্রতিবেশীর সহায়তায় থানায় অভিযোগ করেন এবং প্রতিকার পান।
ক. বিবাহ কী?
খ. সামাজিক সমস্যা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক ভূমিকা দেখানো হয়েছে?
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা পালনের ইতিবাচক দিক এবং সীমাবদ্ধতাসমূহ পর্যালোচনা কর।
৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিবাহ হলো প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারী ও পুরুষের একত্রে বসবাস করার সামাজিক স্বীকৃতি।
খ. সামাজিক সমস্যা হলো একটি অনাকাঙি্ক্ষত পরিস্থিতি।
সামাজিক সমস্যা হলো কোনো সমাজের অধিক সংখ্যক লোকের অবাঞ্ছিত ও আপত্তিজনক আচরণ, যে আচরণ পরিবর্তনের প্রয়োজন জনগণ অনুভব করে। সামাজিক সমস্যা মানুষের পারস্পরিক সামাজিক সম্পর্ক ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত। বিচ্ছিন্ন ও ব্যক্তিগত সমস্যাকে সামাজিক সমস্যা বলা হয় না। মূলত সামাজিক সমস্যা এমন এক অবস্থা যা সমাজের মানুষকে মূল্যবোধ ও প্রথার পরিপন্থি কাজের দিকে ধাবিত করে এবং আবেগীয় ও অর্থনৈতিক দুর্দশা সৃষ্টি করে।
গ. উদ্দীপকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ইতিবাচক ভূমিকা দেখানো হয়েছে।
সমাজের নিয়ম-নীতি ও আইন বিরোধী কাজ যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর তাই মূলত সামাজিক সমস্যা। যেমন— দুর্নীতি, যৌতুক, মাদকাসক্তি, নানা ধরনের অপরাধ, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি। এসকল সমস্যা সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে। সমস্যা সমাধান ও সমাজে শাস্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যে প্রতিষ্ঠান তাহলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এছাড়া এ সংস্থা সন্দেহভাজন অপরাধীকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়।
উদ্দীপকের কালিমা বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছিল। দিনে দিনে নির্যাতনের মাত্রা অনেক তীব্র আকার ধারণ করে। আর এসকল সামাজিক সমস্যা সমাধান আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই সম্ভব। অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এসকল বিষয় মাথায় রেখে কালিমা তার প্রতিবেশীর সহায়তায় থানায় অভিযোগ করেন এবং এর প্রতিকার পান। এভাবে নারী নির্যাতনমূলক সামাজিক সমস্যা সমাধানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। সুতরাং বলা যায়, সামাজিক সমস্যা সমাধানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানটি অর্থাৎ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন ইতিবাচক দিক ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ সংশ্লিষ্ট সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভুমিকা রাখে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও তার অপব্যবহার রোধে এ সংস্থা ইতিবাচক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এক্ষেত্রে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ও আইনের হাতে হস্তান্তর, মাদকের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে। সেইসাথে এ সংস্থার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সাধারণ মানুষ সংস্থার সেবা থেকে বঞ্চিত। তাদের কার্যক্রমে নানা ধরনের দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়। যার ফলে জনগণ সংস্থার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। আইনের চোখে সবাই সমান এ কথা প্রচলিত থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে গায়ের জোরে বা অর্থের প্রভাবে এ সংস্থার সেবা থেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা বঞ্চিত। সমাজে জটিলতা ও বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেও অনেক সময় এর সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। সমস্যা সমাধানে দীর্ঘসূত্রিতাও এর অন্যতম কারণ। এছাড়া সমস্যা নিরূপণে ব্যর্থতা, উদাসীনতা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।
সুতরাং বলা যায়, উপরোক্ত সীমাবদ্ধতা থাকলেও সামাজিক সমস্যা সমাধান ও সমাজে শৃঙ্খলা আনয়নে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ইতিবাচক ভূমিকাই বেশি।
৯. শামীম ও শাহিদা ২০০৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারা শহরে একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করতে থাকে। ২ বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। শিশুটিকে ৫ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি করা হয় এবং তারা সুখী জীবনযাপন করছে।
ক. সামাজিক প্রতিষ্ঠান কী?
খ. সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মূল পার্থক্য কী?
গ. শামীম ও শাহিদা যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে, তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের প্রতিষ্ঠানের কী কী ভূমিকা রয়েছে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সামাজিক প্রতিষ্ঠান হলো কতগুলো প্রতিষ্ঠিত আচার-আচরণ এবং কার্যপ্রণালী যেগুলো সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত হয়।
খ. স্থায়িত্ব ও গঠনগত দিক থেকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংস্থার মধ্যে মূল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান একটি সর্বজনীন ধারণা। এটি স্থায়ী ও গতিশীল। আর সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের কিছু উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে। উদ্দেশ্যপূরণ হলে বা প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে এটি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আবার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য পরিচালনা বোর্ড বা পেশাজীবী সদস্য প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সামাজিক সংস্থাগুলোয় পরিচালক বোর্ড বা পেশাজীবী সদস্য প্রয়োজন হয়।
গ. উদ্দীপকে শামীম ও শাহিদা পরিবার গঠন করেছে।
মানবসমাজের আদিমতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। পরিবার হচ্ছে এমন একটি বিশ্বজনীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান যা বিবাহের মাধ্যমে আবদ্ধ স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের নিয়ে গঠিত। তবে সন্তান ছাড়াও পরিবার হতে পারে। আবার স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা এবং আত্মীয়দের নিয়েও পরিবার হতে পারে। স্বামী-স্ত্রী বিবাহ বন্ধনের পর একত্রে বসবাস করার মাধ্যমে পরিবার গঠন করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, শামীম ও শাহিদা ২০০৮ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারা শহরে একটি বাসায় বসবাস করে। তাদের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। এতে বোঝা যায়, শামীম ও শাহিদা পরিবার গঠন করেছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি হলো পরিবার। সমাজজীবনে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষের পরিচিতি, মর্যাদা, ভূমিকা ইত্যাদি নির্ধারণে পরিবার মৌলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণেও এর ভূমিকা বহুমুখী। পরিবার শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের মাধ্যমে তাকে সমাজের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। পরিবারের মাধ্যমে মানুষ বৈধ উপায়ে যৌন চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া জন্ম পরিচিতির প্রেক্ষিতে শিশু আরোপিত মর্যাদার অধিকারী হয়। ফলে অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে শিশুকাল থেকেই সে সচেতন হয়। এরূপ সচেতনতা মানুষের মধ্যে সামাজিক মর্যাদাবোধ ও নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি করে। এছাড়া অপরাধ প্রবণতা নিরসনে এরূপ মর্যাদাবোধ ও নিরাপত্তাবোধ প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে। পরিবারের সদস্যরা শিশুদেরকে সমাজ অনুমোদিত বহুমুখী আচরণ শিক্ষা দেয়। পারিবারিক পরিবেশ শিশু, প্রবীণ, অক্ষম এবং বেকার সদস্যদের ন্যূনতম মৌল চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। সদস্যদের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে পরিবার সামাজিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিকীকরণ, ব্যক্তিত্ব গঠন, সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ গঠন, আচরণ নিয়ন্ত্রণ, মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ প্রভৃতি কার্যাবলি সম্পাদন করে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
১০. তামিম সাহেব পরিবার পরিজন নিয়ে শহরে বসবাস করেন। তিনি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। সংসারের খরচ, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, মাতা-পিতার চিকিৎসা ব্যয় সবকিছুই তিনি বহন করেন। তিনি তার পরিবারকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। তাই পরিবারকে সুখী করতে তার প্রচেষ্টার কোনো অন্ত নেই।
ক. CIA জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসের কয়টি উপাদানের উল্লেখ করেছে?
খ. ইন্টারনেটের মাধ্যমে কীভাবে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়?
গ. তামিম সাহেবের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন পরিবারের কোন কার্যাবলিকে তুলে ধরে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তামিম সাহেবের পারিবারিক কার্যাবলি কেবল এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়— বিশ্লেষণ করো।
১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. CIA জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসের ৪টি উপাদানের উল্লেখ করেছে।
খ. বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে ইন্টারনেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্বের সর্বত্র এর মাধ্যমে সংবাদ আদান-প্রদান করা হয়। পাশাপাশি সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সামাজিক সমস্যা সংশ্লিষ্ট প্রতিরোধমূলক স্লোগান, প্রবন্ধ, গবেষণা সহজে পৌঁছানো যায়। যা ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে সচেতন করতে পারে।
গ. উদ্দীপকে পরিবারের প্রতি তামিম সাহেবের দায়িত্ব পালন পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে তুলে ধরে।
পরিবারের বিভিন্ন কার্যাবলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্যাবলি হলো অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিবারের প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক কার্যাবলি হলো- সন্তানদের লালন-পালন ও শিক্ষাদানের জন্য অর্থের সংস্থান করা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, খাদ্য ও বস্ত্রের চাহিদা পূরণের জন্য অর্থ ব্যয় করা, চিকিৎসার জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা, বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান পালন কিংবা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য অর্থ সঞ্চয় করা ইত্যাদি। এককথায় আমরা বলতে পারি, পরিবারের সকল সদস্যের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই হলো পরিবারের অর্থনৈতিক কাজ।
আদিম যুগের কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিবারকে বলা হয় উৎপাদনের একক বা Unit of Production। কারণ, উৎপাদন, আয়, ভোগ ও বণ্টন প্রত্যেকটি পর্যায়ই পরিবারকে কেন্দ্র করে এবং পরিবারের সদস্যদের চাহিদার উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। আর পরিবার তার সদস্যদের চাহিদাগুলো কী অনুপাতে পূরণ করবে তা নির্ভর করে পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের উপর।
সুতরাং, আমরা বলতে পারি উদ্দীপকে তামিম সাহেব যেহেতু পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন পূরণে সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করেন তাই তার কার্যাবলি পরিবারের অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে নির্দেশ করে।
ঘ. তামিম সাহেবের পারিবারিক কার্যাবলি কেবল অর্থনৈতিক কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অর্থনৈতিক কার্যাবলি ছাড়াও পরিবারের আরো কতগুলো কাজ রয়েছে।
পরিবার নিরবচ্ছিন্নভাবে সদস্যদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং বংশের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে। সেই সাথে সদস্যরা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত পরিবার তাদের দায়িত্ব নিয়ে থাকে। পাশাপাশি সদস্যদের সমাজ উপযোগী করার দায়িত্বও পরিবারের। পরিবার তার সদস্যদের সামাজিক নিয়ম, রীতি নীতি, নৈতিক আদর্শ প্রভৃতির শিক্ষা দিয়ে থাকে। পরিবারের মাধ্যমেই মানুষের সামাজিক অবস্থান এবং মর্যাদা নির্ধারিত হয়। এছাড়াও পরিবার তার সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন এবং মূল্যবোধের মাধ্যমে পরিবার বিভিন্ন সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ পরিবার সামগ্রিকভাবে তার সদস্যদের জন্য জৈবিক নিয়ন্ত্রণমূলক, শিক্ষামূলক, ধর্মীয় এবং বিনোদনমূলক বিভিন্ন কার্যাবলি পালন করে থাকে। উদ্দীপকে তামিম সাহেবের কার্যাবলিতে কেবল অর্থনৈতিক দিকটি ফুটে উঠেছে।
উপরোল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিবার অর্থনৈতিক কার্যাবলির পাশাপাশি শিক্ষামূলক, নিয়ন্ত্রণমূলক, নিরাপত্তামূলক, ধর্মীয় প্রভৃতি কার্যাবলিও সম্পাদন করে থাকে।
0 Comments:
Post a Comment