HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Social Work 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. রফিক সিডরে মারা যাওয়ায় তার পরিবার অতিকষ্টে জীবন-যাপন করছে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় রফিকের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চলে না। এমন কি স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতারও শিকার হচ্ছে। উপরন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসারের ব্যয়ভার মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
ক. 'Common Human Needs' গ্রন্থের লেখক কে?
খ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব লিখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত রফিকের পরিবারে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা থেকে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যাসমূহ মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধর।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'Common Human Needs' গ্রন্থের লেখক হলেন শার্লট টোলে।

খ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
শিক্ষা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারণা সুস্পষ্ট হয়। এ আলোয় আলোকিত মানুষ যে কোনো ধরনের অন্যায় থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং ভালো কাজে নিয়োজিত হয়। শিক্ষা মানুষকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত রফিকের পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা থেকে নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধ প্রবণতার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন এ চাহিদার অন্তর্গত। এ চাহিদার অপূরণ থেকে বিভিন্ন রকমের আর্থ-সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকের রফিকের পরিবার সে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।
উদ্দীপকের রফিক সিডরে মারা গেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তার মৃত্যুতে পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রফিক মারা যাবার পর তার সন্তানরা কোনোরকমে জীবনধারণ করলেও লেখাপড়া করতে পারছে না। অথচ শিক্ষার চাহিদা পূরণ না হলে নিরক্ষরতার মতো সমস্যা সৃষ্টি হবে। আবার স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, কুসংস্কার ইত্যাদি সমস্যারও অন্যতম কারণ নিরক্ষরতা। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসারের ব্যয়ভার মেটাতে রফিকের পরিবারের সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেকেই মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য অবৈধ পথ বেছে নেয়। ফলে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বাড়ে। তাই বলা যায়, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে রফিকের পরিবারে ওপরে আলোচিত সমস্যা দেখা দেবে।

ঘ. উদ্দীপকে রফিকের পরিবারের মাধ্যমে নিরক্ষরতা, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধপ্রবণতার মতো সমস্যার কথা উঠে এসেছে যেগুলো মোকাবিলায় সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম রয়েছে।
শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক মানবিক অধিকার। বাংলাদেশ সরকার নাগরিকের এ অধিকার নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া সরকারিভাবে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ; মেয়েদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তি চালু; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক খাতে বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন কর্মসূচিও গৃহীত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আওতায় সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে (প্রথম থেকে উচ্চতর ডিগ্রি) ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে নিরক্ষরতা ছাড়াও রফিকের পরিবারে স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধপ্রবণতার মতো সমস্যাও লক্ষ করা যায়। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১১-১৬ মেয়াদে ৫১,০৮২.৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিখাত উন্নয়ন কর্মসূচি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। সাধারণ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেলা ও উপজেলায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে (মোট ৪৮২টি হাসপাতাল) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি, ভিটামিন এ ক্যাপসুল সপ্তাহ প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এসএমএস এর মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া এ ধরনের দরিদ্র পরিবারের জন্য সরকারিভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও চালু আছে। এ খাতে সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকার বিভিন্ন ভাতা বাবদ ২৩,৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।
সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায় উদ্দীপকে উল্লিখিত শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সরকার গৃহীত কর্মসূচিগুলো ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে।

২. বিগত বছরে হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় কৃষকের প্রধান ফসল ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস বন্ধ থাকে। জরুরি চিকিৎসা সেবায়ও সংকট দেখা দেয়। আয়-রোজগার না থাকায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি মেরামত করতে পারেনি।
ক. মানবজীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা কী?
খ. শিক্ষাকে কেন মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে কোন মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে অনুপস্থিত মানবজীবনের মৌল মানবিক চাহিদার তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানবজীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য।

খ. সামাজিকভাবে উন্নত জীবনযাপনের জন্য মানুষকে যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয় শিক্ষা তার অন্যতম। তাই একে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।
শিক্ষার মাধ্যমেই একজন মানুষ তার জীবন ও জগৎ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে। এটি মনুষ্যত্ব অর্জনের একমাত্র উপায়। শিক্ষাই পারে মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠন, মানবিক মূল্যবোধ অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়। এ কারণে শিক্ষাকে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বস্ত্র, চিত্তবিনোদন ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়।
সমাজে বাস করার জন্য মানুষকে কিছু চাহিদা পূরণ করতে হয়। এগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়। এসব চাহিদা পূরণ ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা বা উন্নত জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন ও সামাজিক নিরাপত্তা। এর মধ্যে উদ্দীপকে তিনটি চাহিদার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, হাওর অঞ্চলের বন্যায় মানুষের ফসলহানি ঘটেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস বন্ধ থাকছে, চিকিৎসাসেবায় সংকট দেখা দিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তরা ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না। কিন্তু খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান ছাড়াও মানুষের আরো কিছু মৌল মানবিক চাহিদা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো বস্তু। এটি দৈনন্দিন প্রয়োজনের বিষয় ছাড়াও সভ্যতার অন্যতম প্রতীক। বস্ত্র ছাড়া কোনো মানুষ সভ্য সমাজে থাকতে পারে না। আবার চিত্তবিনোদন হলো মানুষের মনের খোরাক। সুস্থ বিনোদন মানুষকে কাজ করার শক্তি ও প্রেরণা জোগায়। এর অভাবে মানুষ স্বাভাবিক কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ইদানীং সামাজিক নিরাপত্তাকেও মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা (বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বেকার ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রভৃতি) পাওয়ার অধিকার আছে। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকে বস্তু, সামাজিক নিরাপত্তা এবং চিত্তবিনোদনে মৌল মানবিক চাহিদাগুলোর ইঙ্গিত অনুপস্থিত।

ঘ. উদ্দীপকে অনুপস্থিত মৌল মানবিক চাহিদা অর্থাৎ বস্ত্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও চিত্তবিনোদনের তাৎপর্য অপরিসীম।
মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য মৌল মানবিক চাহিদা প্রয়োজন। প্রত্যেক মানুষের জন্য এসব চাহিদা পূরণ হওয়া জরুরি।
বস্ত্র মানবজীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। সভ্যতার সূচনা থেকে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। বস্ত্র ছাড়া কোনো মানুষ সমাজে বাস করতে পারে না এবং এর অভাবে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বস্ত্র লজ্জা নিবারণ ছাড়াও মানুষকে অতি শৈত্য বা উষ্ণতা এবং নানা ধরনের সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে। আবার খাদ্য যেমন দেহের বৃদ্ধি ঘটায়, তেমনি চিত্তবিনোদন মানুষের মনের খোরাক জোগায়। এর ফলে কাজে উদ্দীপনা আসে। কাজের ব্যস্ততার কারণে মানুষের জীবন মাঝে মাঝে একঘেয়ে হয়ে ওঠে। তখন চিত্তবিনোদনমূলক কাজ মানুষের মনকে চাঙ্গা করে। ক্লাস্তি করে কাজের প্রেরণা জোগায়। শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই নয় শিশু, কিশোরদের ক্ষেত্রেও চিত্তবিনোদনের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
যান্ত্রিক ও ভোগবাদী এই যুগে মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতির পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। তাই অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বর্তমানে এটি মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মাধ্যমে বেকার, প্রতিবন্ধী, বিধবা, এতিম, প্রবীণসহ অসহায় ও দুস্থ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে পরিবর্তন আসছে। তাই সার্বিক আলোচনা থেকে বলা যায় বস্ত্র, সামাজিক নিরাপত্তা ও চিত্তবিনোদন মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পঞ্চগড়ের সফিকুলের নাম দেশবাসীর মুখে মুখে। কারণ সে এবার ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অথচ কখনও দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে খাবার পায়নি। এক কাপড়ে কেটেছে, অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়েছে বার বার। পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে গাদাগাদি করে জরাজীর্ণ ঘরে সে রাত কাটাতো। অবশ্য পরিবারটি 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির আওতায় ছিল। আর এর মধ্যেই সফিকুল স্বপ্ন দেখতো সে ডাক্তার হবে, অসুস্থ মাকে সুস্থ করে তুলবে, সাথে সাথে গ্রামবাসীর সেবা করবে।
ক. মৌলিক মানবিক চাহিদা কয়টি?
খ. বস্তুকে কেন মানবিক চাহিদা বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে সফিকুল কোন চাহিদা পূরণের স্বপ্ন দেখেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মসূচি কি মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট? মতামত দাও।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মৌলিক মানবিক চাহিদা ছয়টি; যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন।

খ. মানুষের পক্ষে বস্তু ছাড়া সভ্য সমাজে বসবাস সম্ভব নয়। এ কারণে বস্তুকে মানবিক চাহিদা বলা হয়।
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোই মানবিক চাহিদা। সামাজিক পরিচিতি ও মর্যাদা রক্ষার জন্য মানবিক বা সামাজিক চাহিদার গুরুত্ব অপরিসীম। বস্ত্র এ ধরনেরই একটি চাহিদা। বস্ত্র ছাড়া মানুষের পক্ষে সভ্য সমাজে থাকা সম্ভব নয়। পোশাক একদিকে লজ্জা নিবারণ করে মানুষকে সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে শীত ও গরম এবং নানা ধরনের রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে।

গ. উদ্দীপকের সফিকুল মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের স্বপ্ন দেখেছে। একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাই হলো মৌলিক মানবিক চাহিদা। এ চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সভ্য সমাজে ভালোভাবে টিকে থাকা যায় না।
প্রখ্যাত মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী শার্লট টোলে তার 'Common Human Needs' গ্রন্থে ছয়টি মৌলিক মানবিক চাহিদার উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো— খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন। সমাজে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই ছয়টি চাহিদা পূরণ হওয়া অত্যাবশ্যক। উদ্দীপকের সফিকুল কিছুদিন আগেও এই মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত ছিল। পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়া, মায়ের চিকিৎসা করায় ব্যর্থতা, জরাজীর্ণ ঘরে গাদাগাদি করে বাস করা এসব থেকে সফিকুলের আগের অবস্থা অনুমান করা যায়। কিন্তু বর্তমানে সে মেধাতালিকায় স্থান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পয়েছে। এর ফলে তার সাম নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে সফিকুল এখন ডাক্তার হয়ে সংসারের দারিদ্র্য দূর করতে পারবে। মা ও গ্রামবাসীর চিকিৎসা করতে পারবে। সে পরিবারের সবার জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, ভালো পোশাক এবং চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাও করতে পারবে। অর্থাৎ সফিকুল মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারবে।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্যতম মৌলিক মানবিক চাহিদা খাদ্যের অভাব পূরণে সরকারের 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির উল্লেখ করা হয়েছে। মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে কেবল এই কর্মসূচিটি যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আরও পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে দেশের মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালনে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন প্রতিটি খাতেই সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি রয়েছে। দশ টাকা কেজি চাল’ এ ধরনেরই একটি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির ফলে উদ্দীপকের সফিকুলের পরিবারের মতো অনেক দরিদ্র পরিবার উপকৃত হচ্ছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলোত এই কর্মসূচিটি কেবল খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। অর্থাৎ অন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্যও আরও কর্মসূচি প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে স্বল্প ব্যয়ে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সাধারণ মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধি, বাসস্থান সমস্যার সমাধানে প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি ব্যবস্থাও করা উচিত। উপরের আলোচনা থেক তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত “দশ টাকা চাল’’ কর্মসূচি মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়।

৪. জাহিদ হাসান স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বসবাস করতেন কিন্তু গ্রামে আয়ের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় কাজের সন্ধানে তিনি শহরে যান এবং রিকশা চালিয়ে সংসার লান। তিনি যা আয় রেন তা দিয়ে সংসারের সবার খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। বাসার পাশেই সরকারি প্রাইমারি স্কুল থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও করান। কিন্তু স্বল্প আয়ের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের প্রয়োজনমত কাপগ-চোপড় কিনে দিতে পারেন না, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে পারেন না এবং অবসর সময় কাটানোর জন্য একটি টিভিও কিনে দিতে পারেন না। তবে বস্তি এলাকায় বাস করলেও ঘরে থাকতে তাদের খুব একটি অসুবিধা হয় না।
ক. মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কততম?
খ. মৌল মানবিক চাহিদা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে জাহিদ হাসানের পরিবার কী কী মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে জাহিদ হাসান এবং তার পরিবার যে সকল চাহিদা পূরণ করতে পারছে তা যথার্থ কিনা? তোমার মতামত দাও।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম।

খ. একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বসবাসের জন্য যে সব চাহিদা পূরণ করতে হয় সেগুলোকেই মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।
মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের জন্যই এ চাহিদাগুলো পূরণ করা প্রয়োজন। এসব চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করা না গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সমাজে মানুষ মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে না।

গ. উদ্দীপকের জাহিদ হাসানের পরিবার বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদন এই তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
একজন মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকা এবং সভ্য সমাজে বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোই মৌল মানবিক চাহিদা। এসব চাহিদার সবগুলো পূরণ না হলে মানুষের পক্ষে সমাজে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদন এ ধরনের তিনটি চাহিদা, যা থেকে জাহিদ হাসানের পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে। জাহিদ হাসান দারিদ্রের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের প্রয়োজনমত কাপড়- চোপড় কিনে দিতে পারেন না। অথচ বস্ত্র মানবজীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। এটি একদিকে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্যদিকে মানবিক চাহিদা পূরণ করে। এ চাহিদা ঠিকমতো পূরণ না হলে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করা যায় না। বস্ত্রের পাশাপাশি জাহিদ হাসানের পরিবার চিকিৎসা ও বিনোদনের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না। অথচ অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ছাড়া বেঁচে থাকা অর্থহীন। সুস্থ জীবনের জন্য বিনোদনও অতি প্রয়োজনীয়। কারণ চিত্তবিনোদন হলো মনের খোরাক। এটি মানুষকে মানসিক শক্তি ও প্রেরণা জোগায়। জাহিদ হাসানের পরিবার ওপরে উল্লেখ করা তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

ঘ. উদ্দীপকের জাহিদ হাসান এবং তার পরিবার খাদ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার চাহিদা পূরণ করতে পারছে। তবে আমি মনে করি, এই চাহিদা পূরণ যথাযথভাবে হচ্ছে না।
সমাজে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ছয়টি মৌল মানবিক চাহিদাই পূরণ হওয়া প্রয়োজন। কোনো একটি চাহিদা পূরণ না হলে জীবনযাত্রায় অসঙ্গতি দেখা যায়। ফলে সভ্য সমাজে ভালোভাবে বসবাস করা সম্ভব হয় না। জাহিদ হাসানের পরিবারে তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণ হলেও তা যথেষ্ট নয়।
জাহিদ হাসান তার উপার্জন দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেছেন। তাছাড়া বস্তি এলাকায় থাকলেও তার বাসস্থানের চাহিদাও আপাতদৃষ্টিতে পূরণ হচ্ছে। তবে এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, তিনি অপর তিনটি চাহিদা অর্থাৎ বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদনের ব্যবস্থা কার্যত করতে পারছেন না। এর প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। জাহিদ হাসান পরিবারের যে তিনটি চাহিদা পূরণ করতে পারছেন সেগুলোও তেমন মানসম্পন্ন নয়। অর্থাৎ এই চাহিদাগুলোও তার পরিবারে কোনো রকমে পূরণ হচ্ছে। ভালো খাবার বা থাকার স্থান তাদের নেই। জাহিদ হাসান ভবিষ্যতে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কতটুকু বহন করতে পারবেন তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ।
পরিশেষে বলা যায়, জাহিদ হাসানের পরিবারে তিনটি চাহিদা পূরণ হচ্ছে যা যথার্থ নয়।

৫. সুমন আট সন্তানের জনক। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি ছোট ঘরে বাস করে। অর্থাভাবে সে তার সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছে না। সেই সাথে পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয় না। এমনকি তার পরিবারে আনন্দ-উৎসব করার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই।
ক. বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদাগুলোর নাম লেখো।
খ. মৌল মানবিক চাহিদার একটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
গ. সুমনের পরিবারের অবস্থা মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের কোন অবস্থাকে নির্দেশ করে? নিরূপণ করো।
ঘ. সুমনের মতো পরিবারগুলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে? বিশ্লেষণ করো। 

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের সমাজে মৌল মানবিক চাহিদাগুলো হলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন।

খ. মৌল মানবিক চাহিদার একটি তাৎপর্য হলো এগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে বিকশিত হতে পারে।
সমাজে মানুষের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের বিকল্প নেই। কেননা, এ চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমেই কেবল মানুষ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। মানুষের বেঁচে থাকা ও জীবনমানের উন্নয়নে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা ভূমিকা রাখে। এছাড়া, শিক্ষা ও চিত্তবিনোদন তার মানসিক ও সামাজিক বিকাশ সম্পন্ন করে।

গ. উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের অবস্থা বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের প্রতিবন্ধকতাকে নির্দেশ করে।
বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরকম দুটি কারণ হলো- অধিক জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য। কোনো রাষ্ট্রের আয়তন ও সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আবার দারিদ্র্যও এ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে অধিক জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সুমন আট সন্তানের জনক অর্থাৎ তার পরিবার অনেক বড়। পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সুমন সবার জন্য বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন প্রভৃতি মৌল মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করতে পারছে না। এক্ষেত্রে দারিদ্র্যও অন্যতম অন্তরায়। কারণ সুমনের আর্থিক অবস্থা যদি শক্তিশালী হতো তাহলে হয়তো আট সন্তান সত্ত্বেও পরিবারের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারত। আর্থিক সামর্থ্য না থাকা এবং পরিবার বেশি বড় হওয়া এ দুই সমস্যার কারণে সুমন তার পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সুমনের পরিবারের অবস্থা বাংলাদেশের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা জনসংখ্যাধিক্য দারিদ্র্যকে নির্দেশ করছে।

ঘ. সুমনের মতো পরিবারগুলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে।
সমাজে মানুষের স্বাভাবিকভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য তার মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অপরিহার্য। কিন্তু দারিদ্র্য, জনসংখ্যাধিক্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রভৃতি কারণে অনেকেই মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না। ফলে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, অপরাধপ্রবণতা, নিরক্ষরতার মতো বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। 
উদ্দীপকের সুমনের দশ সদস্যের বিশাল পরিবারে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় তার পরিবারে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যহীনতার মতো সমস্যা সৃষ্টি হবে। শিক্ষার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তার সন্তানেরা নিরক্ষর বা অজ্ঞ থেকে যাবে। তাছাড়া অভাবের জেরে তার পরিবারের সদস্যরা অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হলে যেকোনো পরিবারেই উল্লিখিত সমস্যাগুলো সৃষ্টি হতে পারে। কেননা, খাদ্যের চাহিদা পূরণ না হলে পরিবারগুলোতে মারাত্মক পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। পাশাপাশি শিক্ষার সুযোগের অভাবে নিরক্ষরতা দেখা দেয় যা আবার পরবর্তী সময়ে জনসংখ্যাধিক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্বসহ নানামুখী সংকট তৈরি করে। এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য অনেক সময় অবৈধ পথ বেছে নেয়। ফলে সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হলে সুমনের মতো পরিবার নানামুখী সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজকে বিশৃঙ্খল ও অস্থিতিশীল করে তোলে।

৬. ভূমিহীন কৃষক রফিক মিয়ার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। অর্থাভাবে তিনি তার পরিবারের ৬ সদস্যের মুখে তিন বেলা খাবার যোগাতে পারে না। পাশাপাশি তিনি তার ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারেনি। আবার তিনি তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে চিকিৎসা করাতে পারেননি।
ক. মৌলিক চাহিদা কী?
খ. সামাজিক চাহিদা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের রফিক মিয়ার পরিবারে কোন কোন চাহিদা পূরণ হচ্ছে না? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লেখিত চাহিদাগুলো পূরণের পথে অন্তরায়/বাধাগুলো আলোচনা করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের বেঁচে থাকা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ হওয়া প্রয়োজন তাই মৌলিক চাহিদা।

খ. সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সামাজিক জীবন যাপনের জন্য যে চাহিদাগুলো পূরণ হওয়া অপরিহার্য সেগুলোকেই সামাজিক চাহিদা, বলা হয়। 
সামাজিক জীবনে স্বাভাবিকভাবে চলা এবং উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য মানুষের কিছু চাহিদা যেমন- বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন, নিরাপত্তা প্রভৃতি পূরণ হওয়া জরুরি। মানুষের এই চাহিদাগুলোই সামাজিক চাহিদা। এগুলোকে মানবিক চাহিদাও বলা হয়।

গ. উদ্দীপকের রফিক মিয়ার পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
সাধারণত মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন এ চাহিদার অন্তর্গত বিষয়।
উদ্দীপকে রফিক মিয়ার পরিবারে খাবারের অপ্রতুলতা, অভাবের কারণে সন্তানদের স্কুলে না পাঠানো জটিল রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে না পারার বিষয়গুলো চিত্রায়িত হয়েছে। এ বিষয়গুলো মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অনুপস্থিতিকে নির্দেশ করছে। সুতরাং প্রশ্নানুযায়ী বলা যায়, রফিক মিয়ার পরিবারে খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌল মানবিক চাহিদার অনুপস্থিতি রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রফিক মিয়ার মতো পরিবারগুলোর মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে না পারার একাধিক অন্তরায় লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশে সব সমস্যার মূলে রয়েছে অধিক জনসংখ্যা বাড়তি জনসংখ্যার কারণে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশে এখনও অনেক লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। স্বাভাবিকভাবেই দারিদ্রের কারণে তারা ন্যূনতম মৌল চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশে প্রায়ই আঘাত হানে। সেই সাথে বেকার সমস্যা ও নির্ভরশীল জনসংখ্যার হার দেশে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে অধিকাংশ মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের ৭০-৮০ ভাগ লোক এখনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল, অথচ তাদের চাষাবাদ পদ্ধতি অনুন্নত। এর ফলে প্রত্যাশিত ফলন না পাওয়ায় মৌল চাহিদা পূরণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের হার অনেক বেশি। ফলে দরিদ্র লোকজন ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এছাড়াও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের লোকজনের জীবনযাপন অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। কেননা, দ্রব্যমূল্য বাড়লেও মানুষের আয় আশানুরূপ হারে বাড়ে না। সর্বোপরি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং শহরে লোকসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ার ফলে ভূমিহীন কৃষক রফিকের পরিবারের মতো পরিবারগুলোতে মৌল চাহিদা পূরণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. রীমা বাবা-মায়ের সাথে মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। তার চার ভাই-বোন স্কুলে পড়ে। তার বাবা তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও সুন্দর পোশাকের ব্যবস্থা করেন। অবসরে সবাই মিলে বেড়াতে যান, গল্প-গুজব করেন।
ক. মানবিক চাহিদা কী?
খ. 'চিত্তবিনোদন একটি মৌলমানধিক চাহিদা' বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে রীমার কোন মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের বর্ণনা অনুপস্থিত?
ঘ. উক্ত অনুপস্থিত চাহিদাটি অন্য চাহিদাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের চাহিদা পূরণ প্রয়োজন সেগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলে।

খ. মৌলিক মানবিক চাহিদা হিসেবে চিত্তবিনোদনের গুরুত্ব অপরিসীম।
চিত্তবিনোদন হলো মানুষের মনের খোরাক। চিত্তবিনোদনের ফলে মানুষের মনে আসে আনন্দ, কাজে পায় শক্তি ও প্রেরণা, দূর হয় একঘেয়েমি। মানুষ বাস্তব জীবনে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, মাঝে মধ্যে কাজে একঘেয়েমি চলে আসে, কাজে মন বসে না। তখনই দরকার নির্মল চিত্তবিনোদনের, যা ক্লাস্তি দূর করে নতুন কাজ করার জোগায়।

গ. উদ্দীপকে রীমার মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য পূরণের বর্ণনা অনুপস্থিত।
সমাজে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকতে এবং সামাজিক ভূমিকা পালনের জন্য মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অপরিহার্য। এ চাহিদাগুলো পূরণ না করলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন ইত্যাদি।। প্রত্যেক মানুষের এসব চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রীমা বাবা-মায়ের সাথে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। এছাড়া তারা চার ভাই-বোন স্কুলে পড়ে। তারা পুষ্টিকর খাবার খায়; সুন্দর পোশাক পড়ে এবং অবসরে বেড়াতে যায়, গল্প গুজব করে। উদ্দীপকের এসব তথ্য মৌল মানবিক চাহিদা যথাক্রমে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিত্তবিনোদনকে নির্দেশ করে। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য উদ্দীপকে অনুপস্থিত। যা মানুষ কর্মক্ষম ও আর্থ-সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যহীনতা মানুষকে হীনমন্যতায় ভোগায়। তাই ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নে সুস্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অন্যতম উপাদান। সুতরাং বলা যায় উদ্দীপকে মৌল মানবিক চাহিদার স্বাস্থ্যের বর্ণনা অনুপস্থিত।

ঘ. উক্ত অনুপস্থিত চাহিদাটি হলো স্বাস্থ্য, যা অন্যান্য চাহিদাকে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
মৌল মানবিক চাহিদা মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ভূমিকা পালনে ও মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করে। এর কোন একটির অভাব অন্য চাহিদাগুলোকে উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেইসা বিভিন্ন সমস্যারও সৃষ্টি করে।
স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণ করা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুস্বাস্থ্যের অভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মানুষের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। সুস্বাস্থ্যের সাথে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন বস্তু সব কিছুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে খাদ্যগ্রহণে অনীহা দেখা দেয়, বাসস্থানে ভালো লাগে না, সুস্বাস্থ্যের অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয়, যা মেধাশক্তি বিকাশের অন্তরায়। এভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া চিত্তবিনোদন যা মনের খোরাক মেটায় কিন্তু স্বাস্থ্যই যদি ভালো না থাকে, এ চাহিদাও গৌণ হয়ে পড়ে। মানুষের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। হীনমন্যতায় ভোগে। সামাজিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। এভাবে স্বাস্থ্য অন্যান্য মৌল মানবিক চাহিদার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত অনুপস্থিত মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য যদি যথাযথভাবে পূরণ না হলে অন্যান্য চাহিদাগুলোকে নানাভাবে প্রভাবিত করে।

৮. 'ক' গ্রামে গত বছর খরায় সমস্ত আবাদি ফসল নষ্ট হয়। ঐ গ্রামের সকলেই ফসলের অভাবে ঠিকমত তাদের চাহিদা মেটাতে পারেনি। এ পর্যায়ে রোগ-বালাই প্রকট আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে সরকার তাদের চাহিদা পূরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
ক. কাদেরকে চরম দরিদ্র বলে গণ্য করা হয়?
খ. মানবসম্পদ কীভাবে উন্নয়ন করা যায়?
গ. 'ক' গ্রামে কোন কোন চাহিদার অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত পরিস্থিতিতে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে তুমি মনে কর? মন্তব্য করো।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দৈনিক যারা ১৮০৫ কিলো ক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণ করে তাদের চরম দরিদ্র বলে।

খ. যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটানো যায়।
কাঙি্ক্ষত জনসংখ্যা একটি দেশের মূল্যবান সম্পদ। তারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগাতিকে তরান্বিত করে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যা প্রবণ দেশের জন্য তা অভিশাপ। কারণ এদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এ বাড়তি জনসংখ্যা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই জনসংখ্যাকে উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দেশের সম্পদে পরিণত করা যায়।

গ. উদ্দীপকের 'ক' গ্রামে খাদ্য ও স্বাস্থ্যের অভাব রয়েছে।
মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয় তাকে মৌলিক মানবিক চাহিদা বলে। খাদ্য ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদায় মধ্যে অন্যতম। মানুষ জন্মগ্রহণের পর তার বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য খাদ্যের দরকার হয়। আবার মানুষের আরেকটি মৌলিক মানবিক চাহিদা হলো স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বলতে মানুষের শারীরিক মানসিক উভয় ধরনের সুস্থতাকে বোঝায়। এর অভাবে মানুষ দুর্বল, কর্মশক্তিহীন ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। উদ্দীপকে এ দুটি চাহিদার অভাবকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ক' গ্রামে খরায় আবাদি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঐ গ্রামের কেউই ফসলের অভাবে খাদ্যের চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করতে পারেনি। এক পর্যায়ে সেই গ্রামে রোগ-বালাই প্রকট আকার ধারণ করে। তাই বলা যায়, 'ক' গ্রামে খাদ্য ও স্বাস্থ্য নামক মৌলিক মানবিক চাহিদার অভাব পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উক্ত পরিস্থিতিতে অর্থাৎ খাদ্য ও স্বাস্থ্যের অভাবে 'ক' গ্রামে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, অপরাধ প্রবণতা প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো খাদ্য। 'মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সুষম ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করা আবশ্যক। আর পরিমিত ও সুষম খাদ্যের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। আবার স্বাস্থ্য মানুষের আরেকটি মৌল মানবিক চাহিদা, ও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাই হলো স্বাস্থ্য। আর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অভাবে স্বাস্থ্যহীনতা দেখা দেয়। স্বাস্থ্যহীনতা বলতে রোগে আক্রান্ত হওয়া বা দেহ ও মনের সুস্থতার অভাবকে বোঝায়। এছাড়া মানুষ যখন মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয় তখন তা পূরণের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড যেমন- চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটতরাজ প্রভৃতি কাজে জড়িয়ে পড়ে। উদ্দীপকে 'ক' গ্রামে খরার কারণে ফসল নষ্ট হওয়া ঐ এলাকার মানুষ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। এজন্য 'ক' এলাকার জনগণের মধ্যে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যহীনতা দেখা দিবে। আবার খাদ্য ও স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ঐ এলাকার অনেকেই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে 'ক' গ্রামে উদ্ভূত পরিস্থিতে সেখানে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা ও অপরাধপ্রবণতা দেখা দিতে পারে।

৯. সমাজকর্মী পল্লব সামাজিক সমস্যার উপর পিএইচডি করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। রাতের ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র দেখে তিনি অবাক হন। রাস্তার পাশে, রেল ও বাস টার্মিনালে শুয়ে রাত কাটাচ্ছে নানা ধরনের মানুষ। এসব দৃশ্য একদিকে তাকে মর্মাহত করে, অন্যদিকে তিনি তার প্রশ্নের জবাবটি খুঁজে পান। তার ধারণা, মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকেই সৃষ্টি হয় সামাজিক সমস্যা। 
ক. মানুষের আশ্রয়স্থল কী?
খ. মৌলিক মানবিক চাহিদা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকটিতে কোন মৌলিক মানবিক চাহিদাটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সর্বশেষ উক্তিটি কতটুকু যুক্তিসঙ্গত বলে তোমার মনে হয়? মতামত দাও।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাসস্থানই হলো মানুষের আশ্রয়স্থল।

খ. একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বসবাসের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ করতে হয় সেগুলোকেই মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়।
মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের জন্যই এ চাহিদাগুলো পূরণ করা প্রয়োজন। এসব চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করা না গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সমাজে মানুষ মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে না।

গ. উদ্দীপকটিতে মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা বাসস্থানের ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বাসস্থান বলতে মানুষের বসবাস করার জন্য স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থাকে বোঝায়। সমাজ ও সভ্যতাকে স্থিতিশীল রূপ দেওয়ার পেছনে বাসস্থানে অবদান সবচেয়ে বেশি। এটি সমাজের ভিত্তি। সেই সাথে এটি বিভিন্ন প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করা ও নিরাপত্তা প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বাসস্থানের কারণেই মানুষের প্রতি মানুষের পারস্পরিক সংহতি একাত্মতা, গোষ্ঠী জীবনযাপন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এছাড়া সুষ্ঠু সহায়তা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং নির্দিষ্ট ঠিকানায় থাকতে হলেও পরিবার গঠন করতে তাকে কোনো না কোনো আবাসস্থলে বসবাস করতে হয়। তাই বাসস্থান একটি অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সমাজকর্মী পল্লব সামাজিক সমস্যার উপর পিএইচডি করে দেশে ফিরেছেন। রাতে ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র তাকে অবাক করে দেয়। মানুষ রাস্তার পাশে, রেল ও বাস টার্মিনালে শুয়ে রাত কাটাচ্ছে। উদ্দীপকের এ দৃশ্য মানুষের গুরুত্বপূর্ণ মৌল মানবিক চাহিদা বাসস্থানে সমস্যাকে নির্দেশ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ইঙ্গিতকৃত মৌল মানবিক চাহিদাটি হচ্ছে বাসস্থান।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের সর্বশেষ লাইন অর্থাৎ 'মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকেই সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়’। উক্তিটি যুক্তিসঙ্গত।
মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কারণে পুষ্টিহীনতা, নিরক্ষরতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অসামাজিক কর্মকান্ড ও ভিক্ষাবৃত্তির মতো বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেকোনো দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ হলো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা। বাংলাদেশে এ চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো পুষ্টিহীনতা।
বিশ্বব্যাংকের জরিপে উল্লেখ আছে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ২৬ শতাংশ অপুষ্ঠিতে ভুগছে। সেই সাথে প্রতিবছর ৩০ হাজার শিশু ভিটামিন 'এ' এর অভাবে অন্ধ হচ্ছে।
এছাড়া শিক্ষার মতো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে বেকারত্ব সমস্যা দেখা দেয়। একইসাথে স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, অপরাধপ্রবণতা, কুসংস্কার ইত্যাদি সমস্যার মূল কারণও নিরক্ষরতা। অন্যদিকে বাংলাদেশে বাসস্থানের মতো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বস্তি এবং গৃহসমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। সাধারণত শহরাঞ্চলের বস্তিগুলো মাদক চোরাচালানসহ নানা ধরনের অসামাজিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যা সমাজে ব্যাপকমাত্রায় অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি করে। উদ্দীপকেও মানুষের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা বাসস্থান সমস্যা। আর এ চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানান ধরনের সামাজিক সমস্যা। মূলত মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের তাগিদেই এরূপ সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পেছনে অন্যতম কারণই হলো মৌল মানবিক চাহিদার পূরণের অপূর্ণতা।

১০. সুমন ঢাকা শহরে একটি বস্তিতে বসবাস করে। সে সারাদিন কাগজ কুড়ায়। দিন শেষে যা টাকা পায়, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালায়। ছোট দুই বোন এবং মায়ের ভরণপোষণ এবং বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে সে হিমশিম খায়। সংসারে সবাই খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দিনযাপন করছে। প্রায়শই অভুক্ত থাকা সুমনের পরিবারে স্বাভাবিক ব্যাপার।
ক. দারিদ্র কী?
খ. মৌল মানবিক চাহিদা কয়টি ও কী কী?
গ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের গুরুত্ব উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অপুরিত মৌল মানবিক চাহিদা কীভাবে পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী? উদ্দীপকের আলোকে বিস্তারিত বর্ণনা করো।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দারিদ্র হলো সামাজিক মর্যাদার অর্থনৈতিক মাপকাঠি।

খ. মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা ছয়টি। এগুলো হলো, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ এবং সামাজিক জীবনের উৎকর্ষতা অর্জনে এই চাহিদাগুলো পূরণ করা জরুরি। এ চাহিদাগুলো পূরণ না হলে পৃথিবীকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।

গ. মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
সমাজে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ছয়টি মৌল মানবিক চাহিদাই পূরণ হওয়া প্রয়োজন। কোন একটি চাহিদা পূরণ না হলে জীবনযাত্রার অসঙ্গতি দেখা দেয়। তারমধ্যে মানুষের প্রথম ও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা হলো খাদ্য খাদ্য বলতে সেসব বস্তু বা দ্রব্যকে বোঝানো হয় যা শরীরের বৃদ্ধি ঘটায় ও কর্মশক্তি দানে সাহায্য করে। প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ না করলে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
উদ্দীপকে সুমন ঢাকা শহরে একটি বস্তিতে বাস করে এবং দিন শেষে কাগজ বিক্রির টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালায়। ছোট দুই বোন এবং মায়ের ভরণপোষণ ও বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে সে হিমশিম খায়। সেই সাথে সংসারে সবাই খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে দিনযাপন করে। উদ্দীপকের এসব তথ্য দ্বারা সুমনের পরিবারে মৌল মানবিক চাহিদার ঘাটতিকে বোঝানো হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতিকে। খাদ্য মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি মৌল মানবিক চাহিদা। তাই বলা যায়, সুমনের পরিবারে মৌল মানসিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

ঘ. খাদ্যের মতো মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।
সাধারণত পরিমিত খাদ্যের অভাবে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। খাবারের ছয়টি উপাদানের কোনো একটির ঘাটতিই পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ফলে তারা পর্যাপ্ত খাবার পায় না। আর পুষ্টিকর খাবারের সংস্থান করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ফলে এদেশের মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ফলে তারা রক্তশূন্যতা, চক্ষুরোগ, রিকেটস, রাতকানাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া মৌল মানবিক চাহিদা শিক্ষা যার অভাবে এদেশের মানুষ নিরক্ষর। এ নিরক্ষতার কারণে জনগণ খাদ্যে গ্রহণের ক্ষেত্রে অসচেতন। যার ফলে খাবার তালিকায় সুষম খাদ্যের অভাব থেকে যায়; যা তাদের পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী। এছাড়া সুষম খাদ্য গ্রহণের অভাবে দেশের ১৮ শতাংশ গর্ভবতী মা অপুষ্টির শিকার ও ৩৬ শতাংশ শিশু কম ওজনসহ জন্ম নিচ্ছে।
উদ্দীপকের সুমন ঢাকা শহরে সারা দিন কাগজ কুড়ায়। সে যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে পরিবারে সদস্যদের ভরণপোষণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়। এর ফলে তার পরিবারে খাদ্যের চাহিদা যেমন পূরণ হয় না তেমনি তারা পুষ্টিহীনতাতেও ভোগে। এ থেকে বোঝা যায় সুমনের পরিবার অপুষ্টি শিকার। বিশেষ করে যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
পরিশেষে বলা যায়, অপূরিত মৌল মানবিক চাহিদা খাদ্যই পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post