HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

 এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. শামসুল হুদা একজন সৎ ও সাহসী ব্যক্তি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার। অত্যাচারী জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষায় তিনি একটি বাহিনী গড়ে তোলেন এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি দুর্গ প্রতিষ্ঠা করেন।
ক. কত সালে 'বেঙ্গল প্যাক্ট' চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
খ. 'বেঙ্গল প্যাক্ট' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো মহান নেতার সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের আন্দোলনের কারণে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গতি লাভ করে বিশ্লেষণ করো।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. 'বেঙ্গল প্যাক্ট' স্বাক্ষরিত হয় ১৯২৩ সালে।

খ. বেঙ্গল প্যাক্ট হলো বাংলার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বিভেদ সমাধানের লক্ষ্যে সম্পাদিত চুক্তি।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ অনুভব করেছিলেন যে, বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দাবি অগ্রাহ্য করে স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ দিক বিবেচনা করে চিত্তরঞ্জন দাশ মুসলমানদের সমর্থন ও হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। বাংলার মুসলিম নেতারাও তাঁর সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন এ.কে. ফজলুল হক, মৌলবি আবদুল করিম এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। তাদের উদ্যোগে ১৯২৩ সালে 'বেঙ্গল প্যাক্ট' স্বাক্ষরিত হয়।

গ. উদ্দীপকের শামসুল হুদার সাথে আমার পঠিত মহান তিতুমীরের সাদৃশ্য রয়েছে।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক শহিদ তিতুমীরের আসল নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী। তিনি দেশের মানুষকে ইংরেজ, জমিদার এবং নীলকরদের অত্যাচার ও শোষণের হাত থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা চালান।
তিনি কৃষকদেরকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন এবং তাদেরকে সংঘবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিনি কৃষকদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এ লক্ষ্যে তিনি কলকাতার নিকটবর্তী নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে একটি বাঁশের কেল্লা বা দুর্গ নির্মাণ করেন।
উদ্দীপকের শামসুল হুদার ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, তিনি একজন সৎ ও সাহসী ব্যক্তি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার। অত্যাচারী জমিদার ও সুদখোর মহাজনদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষায় তিনি একটি বাহিনী গড়ে তোলেন এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি দুর্গ প্রতিষ্ঠা করেন। তার এ লক্ষ্য ও কার্যক্রমের সাথে আমার পঠিত শহিদ তিতুমীরের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অর্থাৎ তিতুমীরের আন্দোলনের কারণে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গতি লাভ করেছিল।
তিতুমীরের কৃষক আন্দোলন ও বারাসাত বিদ্রোহ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিদ্রোহ। এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন যে, রক্তদান ব্যতীত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। তাঁর পরিচালিত এ বিদ্রোহ ছিল জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তিনি নারিকেলবাড়িয়ার আশপাশের জমিদারদের পরাজিত করে চবিবশ পরগনা, নদীয়া এবং ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে একটি স্বাধীন রাজ্য গঠন করেন এবং কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তিনি ইংরেজ সরকারের আক্রমণ মোকাবিলার জন্য নারিকেলবাড়িয়ায় একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। ১৮৩১ সালে ইংরেজ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে তিতুমীরও শহিদ হন।
ইংরেজদের গোলাবারুদ এবং নীলকর ও জমিদারদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ছিল সাহস আর দেশপ্রেমের প্রতীক। যা যুগে যুগে বাঙালিকে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হতে সাহস যুগিয়েছে। প্রেরণা যুগিয়েছে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে।
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে তিতুমীরের আন্দোলনের কারণেই পরবর্তী সময়ের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনগুলো গতি লাভ করেছে।

২. জনাব 'ক' দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান। তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। তবে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, দরিদ্র কৃষক শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণে তিনি আজীবন আন্দোলন করে গেছেন। তার জীবনযাপন ছিল অতিসাধারণ। তাকে মজলুম জননেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ক. কোন কর্মসূচিকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়?
খ. ফরায়েজি আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
গ. জনাব 'ক' এর সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন নেতার কর্মকান্ডর মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কৃষকদের স্বার্থ আদায় ও জনঅধিকার প্রতিষ্ঠায় উক্ত নেতার ভূমিকা আলোচনা করো।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচিকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়।

খ. ফরায়েজি আন্দোলন বলতে হাজী শরীয়তউল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত ফরজভিত্তিক আনেদালনকে বোঝায়।
১৮১৮ সালে হাজী শরীয়তউল্লাহ মক্কা থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি দেখলেন মুসলমানরা নানা প্রকার কুসংস্কারে লিপ্ত। তারা কবরপূজা, পীরপূজা, ওরস ও মানত করে পরিত্রাণ পাবে বলে মনে করত। এ অবস্থা দেখে হাজী শরীয়তউল্লাহ ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের ডাক দেন। এতে ইসলাম ধর্মের পাঁচটি ফরজ পালনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়। এই আন্দোলনই ইতিহাসে ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত।

গ. জনাব 'ক' এর সাথে আমার পাঠ্যপুস্তকের মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মিল আছে।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অবহেলিত মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন। অত্যাচার, শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে ছিল তার পথ চলা। এই অসাধারণ নেতার প্রতিই নির্দেশ করা হয়েছে জনাব 'ক' এর মধ্য দিয়ে। জনাব 'ক' দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারান। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এই মানুষটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং দরিদ্রের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্দোলন করেছেন। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষণীয়। তিনিও দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে বাল্যকালে পিতা এবং কৈশোরে মাতাকে হারান। এরপর চাচার আশ্রয়ে কিছুদিন থেকে পরবর্তীতে ভবঘুরের মতো জীবনযাপন করেন। এ সময় ভাসানী অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। দুবেলা খাবার জোগাড‡়র জন্য তিনি দিনমজুর ও কুলির কাজ করেছেন। তিনি কৃষক, শ্রমিক ও জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছিলেন বদ্ধপরিকর। এ সংগ্রামে তিনি বার বার অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও উৎপীড়িত হয়েছেন। জনদরদি এই নেতা শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাধারণ গরিব মানুষের স্বার্থে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে তাকে মজলুম জননেতা বলে অভিহিত করা হয়। মওলানা ভাসানী ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তিনি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, কৃষক প্রজা আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন ইত্যাদি সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সুতরাং দেখা যায়, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীরই প্রতিফলন ঘটেছে জনাব 'ক' এর মধ্যে।

ঘ. কৃষকদের স্বার্থ আদায় ও জনঅধিকার প্রতিষ্ঠায় উক্ত নেতা অর্থাৎ মওলানা ভাসানী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন।
মওলানা ভাসানী বাস্তব জীবনে দেখেছেন তৎকালীন জমিদার প্রথা ও বাঙালির ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়াল চিত্র। তিনি নিজেও এসব নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ কারণেই তার কণ্ঠ জনগণের অধিকার আদায় এবং দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
মওলানা ভাসানী রাজশাহীর ধুপঘাটের জমিদার, টাঙ্গাইলের সমেত্মাষের জমিদার, গৌরীপুরের মহারাজা এবং পাবনার সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে কৃষক আন্দোলন ও বিদ্রোহ সংঘটিত করেছিলেন। তিনি নিরন্ন, অবহেলিত, অশিক্ষিত, অসহায় কৃষকদের অধিকার সচেতন করে তোলার জন্য বিভিন্ন স্থানে কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৩৭ সালে আসামে 'লাইন প্রথা' নামে একটি নিপীড়নমূলক প্রথা চালু হয়। ভাসানী এই প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে় তোলেন। অবশেষে ১৯৪৫ সালে এই প্রথা বাতিল হয়। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসাম জুড‡় বাঙালির বিরুদ্ধে 'বাঙ্গাল খেদাও' আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এ সময় ভাসানী বাঙালিকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সেই আন্দোলনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। এছাড়া তিনি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়ে জনঅধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন। স্বাধীন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এদেশের কৃষক, শ্রমিক তথা আপামর জনসাধারণের ওপর শোষণ ও নির্যাতন চালায়। এ অবস্থায় পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক শাসন, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, স্ব-শাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ভাসানী ছিলেন আপসহীন ও নিবেদিতপ্রাণ।
পরিশেষে বলা যায়, মওলানা ভাসানী ছিলেন কৃষক, শ্রমিক তথা সমগ্র জনগণের ওপর শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। কৃষকদের স্বার্থে ও জনঅধিকার রক্ষায় তার আপসহীন ভূমিকা চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

৩. ফয়সাল সাহেব দীর্ঘদিন মক্কায় অবস্থান করেন। দেশে ফিরে তিনি এলাকার মানুষের অনৈসলামিক কর্মকা- দেখে ধর্মীয় সংস্কারে আত্মনিয়োগ করেন। মুসলমান সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত অবস্থা দেখে তিনি দুঃখ পান। তিনি এলাকাবাসীকে সংগঠিত করে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
ক. মজলুম জননেতা কে ছিলেন?
খ. তিতুমীর কেন বাঁশের কেল্লা স্থাপন করেন?
গ. উদ্দীপকে ফয়সাল সাহেবের সাথে ইতিহাসের কোন মহৎ ব্যক্তির মিল খুঁজে পাওয়া যায়? তাঁর পরিচালিত আন্দোলনের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত আন্দোলন তৎকালীন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নবজাগরণের সূচনা করেছিল। তুমি কি বিষয়টির সাথে একমত? যুক্তি দাও।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীই (১৮৮০-১৯৭৬) মজলুম জননেতা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

খ. স্থানীয় অত্যাচারী জমিদার ও ঔপনিবেশিক ইংরেজ সরকারের বাহিনীকে প্রতিহত করতে এবং নিজের অনুসারীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিতুমীর (সৈয়দ মীর নিসার আলী; ১৭৮২-১৮৩১) বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন।
পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা তিতুমীর দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে অত্যাচারী জমিদার এবং ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তার আন্দোলন চবিবশ পরগনা ও নদীয়া জেলার কৃষক, তাঁতীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। একসময় সরকারসহ ক্ষমতাবানদের সাথে তাদের সংঘাত শুরু হয়। জমিদারদের বাহিনী এবং ব্রিটিশ সরকারের সেনাদল তিতুমীরের হাতে কয়েকবার পরাজিত হয়। তিতুমীর তার বাহিনীর নিরাপত্তা রক্ষা এবং প্রশিক্ষণের জন্য নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশ দিয়ে একটি কেল্লা নির্মাণ করেন।

গ. ফয়সাল সাহেবের সাথে বাংলার ইতিহাসের অন্যতম মহৎ ব্যক্তি হাজী শরীয়তউল্লাহর (১৭৮১-১৮৪০) মিল পাওয়া যায়।
হাজী শরীয়তউল্লাহ শৈশব থেকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে মক্কায় গিয়েছিলেন। দীর্ঘ বিশ বছর সেখানে অবস্থান করে ইসলামি শিক্ষা আয়ত্ত করেন। উদ্দীপকের ফয়সাল সাহেবের ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষণীয়।
ফয়সাল সাহেব দীর্ঘদিন মক্কায় অবস্থান করেন। এরপর দেশে ফিরে ধর্মীয় সংস্কার এবং রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। হাজী শরীয়তউল্লাহও মক্কা থেকে দেশে ফিরে মুসলমান সমাজে নানা কুসংস্কার দেখতে পান। পীরপূজা, কবর পূজা, মনসা-শীতলা পূজাসহ নানা ধরনের অনৈসলামিক কাজ মুসলমান সমাজকে আচ্ছন্ন করেছিল। এ অবস্থায় তিনি মুসলমানদের ইসলাম ধর্মের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য অর্থাৎ ফরজ পালনের আহবান জানান। কুসংস্কার ও অনৈসলামিক কাজকর্ম ত্যাগ করে ফরজ পালনের তাগিদ দেওয়া হতো বলে হাজী শরীয়তউল্লাহর এ প্রচারণা ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত। এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ছিলত ১. মুসলিম সমাজকে ইসলামি মূলনীতি তথা ফরজ এর ওপর প্রতিষ্ঠিত করা; ২.মুসলমানদের কুসংস্কারমুক্ত প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা দান; ৩. তাদেরকে অধিকার ও কর্তব্য পালনে সচেতন করে তোলা; ৪. মুসলমানদের ধর্মভীরু ও নৈতিক বলে বলীয়ান করা ও ৫. ইংরেজ বাহিনী ও জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত আন্দোলন অর্থাৎ ফরায়েজি আন্দোলন তৎকালীন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নবজাগরণের সূচনা করেছিল- এ বিষয়টির সাথে আমি একমত।
ব্রিটিশ শাসনামলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয়রা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তবে শিক্ষায় অনগ্রসরতাসহ বিভিন্ন কারণে মুসলমানদের অবস্থা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি পশ্চাদপদ। ফরায়েজি আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা অঞ্চলের মুসলমানরা ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি তাদের আর্থ-সামাজিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হয়।
ফরায়েজি আন্দোলন মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে অনুপ্রবেশ করা কবরপূজা, পীরপূজা, মনসা-শীতলা পূজা ইত্যাদি অনৈসলামিক কার্যকলাপ ও বিভিন্ন কুসংস্কার ত্যাগ করার তাগিদ দেয়। এছাড়া ইসলামের ফরজ কাজগুলো পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করে। হাজী শরীয়তুল্লাহ ঔপনিবেশিক সরকার ও অত্যাচারী জমিদারের নির্যাতন মোকাবেলা, সামাজিক, অর্থনৈতিক বৈষম্য বিলোপ এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের বিষয়ে মুসলমানদের সচেতন করে তোলেন। তার আন্দোলন জমিদার, জোতদার, মহাজন, নীলকর ও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে় তোলে। তখন বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের কারিগর, কৃষক, তাঁতি ও জেলে সম্প্রদায় জমিদার ও ব্রিটিশদের অত্যাচার-নির্যাতন ভোগ করত বেশি। ফরায়েজী আন্দোলনের ফলে এরা নিজেদের অধিকার আদায় ও ভাগ্য উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। এভাবে ধীরেধীরে সমগ্র বাংলার মুসলমান জনগোষ্ঠী নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।
পরিশেষে বলা যায়, ফরায়েজি আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম এবং দেশ ও সমাজ বিষয়ে বিদ্যমান অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করে এবং তাদেরকে সংগ্রামী হতে সাহায্য করে। তাই এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, ফরায়েজি আন্দোলন তৎকালীন মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নবজাগরণের সূচনা করেছিল।

৪. কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো যাকে দেখে বলেছিলেন ‘‘আমি আপনাকে দেখেছি আমার আর হিমালয় পর্বত দেখার দরকার নেই।" যার ডাকে লক্ষ লক্ষ লোক জীবন দিয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। যিনি আমৃত্যু দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন।
ক. ফরায়েজি আন্দোলন কাকে বলে?
খ. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে কোন নেতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে? ভাষা আন্দোলনে তার ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় উল্লিখিত নেতার ভূমিকাকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করবে?

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হাজী শরীয়তউল্লাহ সমাজে প্রচলিত পীরপূজা ও অন্যান্য কুসংস্কার ত্যাগ করে ফরজ পালনভিত্তিক যে আন্দোলন গড়ে তোলেন তা-ই ফরায়েজি আন্দোলন হিসেবে পরিচিত।

খ. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন গণতন্ত্রমনা রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা চালু করার মানসে তিনি পাকিস্তানে প্রথম শক্তিশালী বিরোধী দলের জন্মদান করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সাধারণ নির্বাচনই গণতন্ত্রের সূতিকাগার। তিনি জনগণের স্বাধিকারকে গণতন্ত্রের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সব সময় ভাবতেন শাসনতন্ত্রের প্রশ্নে জনগণের রায়ই চূড়ান্ত। গণতন্ত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করতে তিনি পিছপা হতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, নির্ভুল নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র কখনই ব্যর্থ হতে পারে না। গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন নেতা ছিলেন বলেই তাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তিনি ভাষা আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় যে, কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রো একজনকে দেখে বলেছিলেন, ‘আমি আপনাকে দেখেছি আমার আর হিমালয় পর্বত দেখার দরকার নেই।’ এখানে মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কথা বলা হয়েছে। কারণ ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেই এ মন্তব্যটি করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমেই বৃহত্তর পরিসরে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল তার নেতৃত্বে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করার অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন আবার ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ সময় জেলে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিবাদ জানান এবং কারাগারে বন্দি অবস্থায় 'রাজবন্দীদের মুক্তি চাই' এবং 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' দাবিতে তিনি এবং মহিউদ্দিন আহমদ অনশন ধর্মঘট পালন করেন। এর ফলে ভাষা আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। সুতরাং বলা যায় যে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ঘ. স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় উল্লিখিত নেতা অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যন্য ভূমিকা পালন করেন। মূলত তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর প্রধান শত্রুতে পরিণত হন এবং জেলে আটক থাকেন। তিনি বাঙালিকে ভালোবাসতেন বলে সকল বাধা, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে ও লক্ষ্যে অবিচল থেকে বাংলার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পেরেছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণের পেছনে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর উত্থাপিত হয় দফা দাবিতে বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে এবং বাঙালি নিজেদের অধিকার সচেতন হয়ে ওঠে। যার -ফলাফল দেখা যায় ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্যে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করলেও বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় যেতে পারেননি। এর পর পাক সরকারের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়ে ওঠেন এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন এবং সেখানে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি ভাষণে বলেছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' তাঁর এ ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তোলে পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে পাক- হানাদারদের নিকট বন্দি হওয়ার পূর্বেই তিনি স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা প্রদান করেন। তাঁর এ ঘোষণায় সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করে।
উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।

৫. ফজর আলী এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সমত্মান। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করার পর তিনি হজব্রত পালন করার জন্য মক্কায় গমন করেন। দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে দেখেন তার এলাকার মুসলমানরা নানা প্রকার কুসংস্কারে লিপ্ত। তাই তিনি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের ডাক দেন। শুধু তাই নয় মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির জন্য ইসলামের পাঁচটি ফরজ পালনের ওপরও সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন।
ক. 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' কাকে বলে?
খ. মুসলীম লীগ কেন গঠন করা হয়?
গ. উদ্দীপকের ফজর আলীর আন্দোলনের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন আন্দোলনের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্য করো। 
ঘ. তৎকালীন সমাজে উক্ত আন্দোলনের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় দুটিকে পৃথক জাতি হিসেবে চিহ্নিত করে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির যে দাবি তুলেছিলেন তাকে দ্বিজাতি তত্ত্ব বলে।

খ. মুসলমানদের দুরবস্থার অবসান করে তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মুসলিম লীগ গঠন করা হয়।
ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই ভারতের মুসলমান সম্প্রদায় অবহেলিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। ভারতের সব সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু কংগ্রেসের কিছু নীতি ও সিদ্ধান্তের কারণে মুসলমানরা হতাশ এবং আশাহত হয়ে পড়ে এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলমানরা সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ শতকের প্রথমার্ধে মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি হয়। তারা নিজেদের জন্য আলাদা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকের ফজর আলীর আন্দোলনের সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের হাজী শরীয়তউল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের সাদৃশ্য আছে।
বাংলায় পরিচালিত বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম হলো ফরায়েজি আন্দোলন। ইসলাম ধর্ম অনুসারে মুসলমানদের জন্য পাঁচটি ফরজ কাজ অবশ্য পালনীয়। এগুলো পালনের উদ্বুদ্ধকরণ সংক্রান্ত যে আন্দোলন পরিচালিত হয় তাই হলো ফরায়েজি আন্দোলন। উদ্দীপকের আন্দোলনটি এ আন্দোলনেরই নামান্তর।
উদ্দীপকের ফজর আলী ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ ও হজব্রত পালনের পর দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি কুসংস্কারে লিপ্ত মুসলমানদের ফরজ পালনের ওপর জোর দেন। এছাড়া তিনি একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনও পরিচালনা করেন। হাজী শরীয়তউল্লাহর ফরায়েজি আন্দোলনের ক্ষেত্রেও এমনটি দেখা যায়। হাজী শরীয়তউল্লাহ ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জনমগ্রহণ করেন। ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শিক্ষক বাশারত আলীর সাথে মক্কায় হজ করতে যান। সেখানে তিনি বিশ বছর অবস্থান করে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তৎকালীন বাংলার মুসলিম সমাজে নানাবিধ কুসংস্কার ও অনৈসলামিক রীতিনীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা পীরপূজা, কবর পূজা, মানত, ওরশ ইত্যাদি কুসংস্কারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। হাজী শরীয়তউল্লাহ মুসলমানদের এসব রীতি পরিহারের উপদেশ দেন এবং তাদেরকে ইসলামের পাঁচটি ফরজ কাজ পালনে উদ্বুদ্ধ করেন। তার এ প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ করার জন্য তিনি ফরায়েজি আন্দোলন নামে একটি সংস্কার আন্দোলনের ডাক দেন। সুতরাং বোঝা যায়, উদ্দীপকের আন্দোলনটি ফরায়েজি আন্দোলনকেই ধারণ করছে।

ঘ. তৎকালীন সমাজে উক্ত আন্দোলন অর্থাৎ ফরায়েজি আন্দোলন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
ফরায়েজি আন্দোলন তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলিম সমাজে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তারা নিজেদেরকে নতুনভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করে। আত্মপ্রত্যয় ও আত্মশুদ্ধির আহবানে তাদের জীবনে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়।
হাজী শরীয়তউল্লাহর মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র দুদু মিয়া পিতার অসমাপ্ত কাজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। দুদু মিয়ার অপরিসীম সাংগঠনিক ক্ষমতা ও কর্মতৎপরতায় ফরায়েজি আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। তিনি নিজের সমর্থকদের নিয়ে ১৮৪৬ সালে পঞ্চচরের সুরক্ষিত নীলকুঠির ওপর দুঃসাহসিক আক্রমণ পরিচালনা করেন। ফলে অত্যাচারী নীলকর ও জমিদারদের বিরোধিতা চরম আকার ধারণ করে। তবে দুদু মিয়া এসব তোয়াক্কা করেননি। বরং আমৃত্যু তিনি এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন।
মূলত, হাজী শরীয়তউল্লাহর আনেদালন ছিল সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। এ আন্দোলন বাংলার মুসলমানগণের মধ্যে প্রবল আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। পরবর্তীকালে অনেক নেতা তার আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এ আন্দোলন বাংলার মুসলমানদেরকে সুসংগঠিত করতে সক্ষম হয়। তারা নিজেদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এই সচেতনতা বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল।

৬. তাপস সোম একজন রাজনীতিবিদ। তিনি সংকীর্ণতা ও গোড়ামির ঊর্ধ্বে মানবপ্রেমে বিশ্বাস করেন। মানুষের সেবাই তাঁর রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য। আর তাই তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের স্বার্থের উন্নয়নে কাজ করেন।
ক. তিতুমীরের পূর্ণ নাম কী?
খ. বেঙ্গল প্যাক্ট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের তাপস সোমের সাথে তোমার পঠিত কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অবদানের কারণে বাংলায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত শক্তিশালী হয়ত বিশ্লেষণ করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. তিতুমীরের পূর্ণ নাম হলো সৈয়দ মীর নিসার আলী।

খ. বাংলার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সম্পাদিত একটি চুক্তি হলো বেঙ্গল প্যাক্ট।
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বাংলার ৬০ ভাগ জনগণ মুসলমান হলেও তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে অসাম্প্রদায়িক ও উদার মানসিকতার অধিকারী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ বেঙ্গল প্যাক্ট এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ কে ফলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, স্যার আব্দুল করিমসহ অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয়। অচিরেই এ চুক্তি সি আর দাশ ফর্মুলা নামে খ্যাতি লাভ করে। রাজনীতি, ধর্ম, কর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান উভয়ের স্বার্থ রক্ষা ও অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠাই হলো বেঙ্গল প্যাক্টের মূলকথা। দেশবন্ধুর এ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে বাংলার হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পথ প্রশস্ত করেছিল।

গ. হ্যাঁ, তাপস সোমের সাথে আমার পঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাদৃশ্য রয়েছে।
দেশবন্ধু চিত্তবঞ্জন দাশ বাংলার একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তিনি তাঁর অপূর্ব ত্যাগ, অসীম দেশপ্রেম ও অসাধারণ গুণাবলির মাধ্যমে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এই মহৎ ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের তাপস সোমের মধ্যে।
রাজনীতিবিদ তাপস সোম সংকীর্ণতা ও গোঁড়vমির ঊর্ধ্বে মানবপ্রেমে বিশ্বাস করেন। মানুষের সেবা করাই তার রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য। আর তাই তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের স্বার্থ উন্নয়নে কাজ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষ করা যায়। মানুষের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ছিল। ধর্ম-বর্ণের সংকীর্ণতা বা সাম্প্রদায়িক বিবাদকে তিনি পছন্দ করতেন না। তার রাজনীতির মূল ভাবনাই ছিল মানুষের সেবা। এ জন্য তিনি স্বদেশি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বিনা পয়সায় লড়তেন। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ১৯২৩ সালে সম্পাদিত বেঙ্গল প্যাক্ট এ প্রচেষ্টার উদাহরণ। এছাড়া সাধারণ মানুষকে তিনি
বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। তিনি মানুষের জন্য নিজের ধন-সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের বাড়িটিও সমাজসেবার জন্য দান করে যান। এসব কারণে বাংলার জনগণ তাকে 'দেশবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করে। হিন্দু-মুসলমান ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাই বলা যায়, তাপস সোম রাজনীতিবিদ চিত্তরঞ্জন দাশের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ একটি চরিত্র।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অবদানের কারণে বাংলায় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত শক্তিশালী হয়- আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত।
বাংলার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদ চিত্তরঞ্জন দাশ বুঝতে পেরেছিলেন যে বাংলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যকার বিভেদ বা অনৈক্য। আর এ সমস্যার মূলে রয়েছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। তিনি বিশ্বাস করতেন এদেশের মুক্তির জন্য দরকার হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। তাই তিনি সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রচেষ্টা চালান।
চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৩ সালে বাংলার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে সাম্প্রদায়িকতা রোধে ব্রতী হন। তার এ ঐক্যের আহবান বাঙালিকে সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলে। তিনি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের লক্ষ্যে মুসলমানদেরকে স্বরাজ পার্টির সাথে সংযুক্ত করেন। তিনি বাংলা প্রদেশের মুসলমানদের সাথে 'বেঙ্গল প্যাক্ট' নামে এক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তিতে হিন্দু-মুসলিম সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার শর্ত ছিল। এই চুক্তিটি দুই সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। এ বেঙ্গল প্যাক্টের মাধ্যমেই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়া তিনি কলিকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমানদের অধিক হারে সুযোগদানের নীতি গ্রহণ করেন।
পরিশেষে বলা যায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তার বিভিন্ন কর্মকান্ডর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির মুখ্য প্রতিনিধিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। তার বিভিন্ন প্রচেষ্টা হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করে। ফলে এ দেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত শক্তিশালী হয়।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. জনাব রহমত আলী হজব্রত পালন শেষে দেশে ফিরে এসে সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি কৃষকদেরকে জমিদার ও মহাজনদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলেন। সরকার তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং তাকে প্রতিহত করার উদ্যোগ নেয়। তিনি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
ক. ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
খ. মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে. মজলুম জননেতা বলা হয় কেন?
গ. জনাব রহমত আলীর কার্যক্রমের সাথে উপমহাদেশের কোন সংস্কারকের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘‘উক্ত সংস্কারকের আত্মত্যাগ বাঙালিদেরকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে'ত যুক্তিসহ লেখ।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা শরীয়তউল্লাহ।

খ. ষাটের দশকে আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন এক জ্বালাময়ী কণ্ঠ। তিনি সর্বদাই সাম্যের কথা বলেছেন। কৃষক-শ্রমিকের মুক্তি ও জনঅধিকার প্রতিষ্ঠায় মাওলানা ভাসানী এক বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কথা সর্বজনবিদিত। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত রাজনীতিতে একটি স্বতন্ত্র ধারা তথা জনগণভিত্তিক রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শোষিত ও নিপীড়িত মানুষদের স্বার্থ নিয়ে তিনি আজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন। এ কারণে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে মজলুম জননেতা বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব রহমত আলীর কার্যক্রমের সাথে উপমহাদেশের অন্যতম সংস্কারক শহিদ তিতুমীরের সাদৃশ্য রয়েছে।
বীর যোদ্ধা, বিপ্লবী নেতা ও সফল সংগঠক সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর ১৭৮২ সালে চবিবশ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮২৪ সালে তিতুমীর মক্কা থেকে ফিরে এসে নীলকর ইংরেজ বণিক এবং এদেশের সামন্ত জমিদারদের অত্যাচারের মাত্রা দেখে খুবই ব্যথিত হন এবং কৃষক ও গরিব-দুঃখী মানুষকে মুক্ত করতে সচেষ্ট হন। মূলত তার আন্দোলন গড়ে ওঠে কৃষকদেরকে সাথে নিয়ে। দলে দলে হাজার হাজার কৃষক তার আন্দোলনে যোগ দেয়। কৃষকদের নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহ শুরু করেন। এটি ইতিহাসে বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ১৮৩১ সালে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে লিপ্ত হন। এ উদ্দেশ্যে নারিকেল বাড়িয়ায় তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেন। কিন্তু তিনি যুদ্ধে কর্নেল স্টুয়ার্টের আধুনিক সমরাস্ত্রের মুখে টিকে থাকতে ব্যর্থ হন এবং এক পর্যায়ে যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন।
উদ্দীপকের জনাব রহমত আলী হজব্রত পালন শেষে দেশে ফিরে সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি কৃষকদেরকে জমিদার ও মহাজনদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলেন। সরকার তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং তাকে প্রতিহত করার উদ্যোগ নেয়। তার এসব কর্মকান্ডের সাথে শহিদ তিতুমীরের সংস্কার ও সংগ্রামের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ঘ. শহিদ তিতুমীর এমন একজন সংস্কারক যিনি অত্যাচারী জমিদার ও ইংরেজ নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, যার আত্মত্যাগ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
বাংলার মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে শহিদ তিতুমীরের আত্মত্যাগ এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তার আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল সমাজের শোষিত নিপীড়িত মানুষের পক্ষে। ধর্মীয় সংস্কারের পাশাপাশি কৃষকদের জমিদার, নীলকরদের অত্যাচার ও শোষণ থেকে মুক্ত করাই ছিল তিতুমীরের উদ্দেশ্য।
শহিদ তিতুমীর অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। মূলত তার আন্দোলন গড়ে ওঠে কৃষকদেরকে সাথে নিয়ে। দলে দলে হাজার হাজার কৃষক তার আন্দোলনে যোগ দেয়। কৃষকদের নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বারাসাত বিদ্রোহ শুরু করেন। ১৮৩১ সালে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং একপর্যায়ে শাহাদাত বরণ করেন।
যেকোনো নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে তিতুমীর বাঙালিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন বাঙালির সাহসের উৎস। তার আত্মত্যাগের আদর্শ মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা জোগায়, যার ফলে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল।

৮. পল্লি এলাকার মানুষের জনপ্রিয় নেতা কলিমুল্লাহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কৃষকদের মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকেন। জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তিনি সুদখোর মহাজনদের কবল থেকে কৃষকদেরকে মুক্ত করার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করেন। তাছাড়া ভূস্বামীদের কবল থেকে জমি ফিরে পাওয়ার জন্য অপর একটি আইন তিনি প্রণয়ন করেন।
ক. বঙ্গভঙ্গপূর্ব অবিভক্ত প্রদেশটির নাম কী ছিল?
খ. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের যে নেতার অবদান প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত নেতার সকল অবদান উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি তুমি কি এ বক্তব্যের সাথে একমত? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বঙ্গভঙ্গপূর্ব অবিভক্ত প্রদেশটির নাম ছিল বাংলা।

খ. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে প্রদেশের পূর্ণ কর্তৃত্বকে বুঝায়।
প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থায় দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র সংক্রান্ত এবং অর্থ এ ত্রিবিধ বিষয়ের কর্তৃত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিচার, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়ের কর্তৃত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে এভাবেই ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়। মূলত এটিই হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।

গ. উদ্দীপকে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের অবদান প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, পল্লি এলাকার মানুষের জনপ্রিয় নেতা কলিমুল্লাহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কৃষকদের মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকেন। জনগণের ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে তিনি সুদখোর মহাজনদের কবল থেকে কৃষকদেরকে মুক্ত করার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করেন। তাছাড়া ভূস্বামীদের কবল থেকে জমি ফিরে পাওয়ার জন্য অপর একটি আইন তিনি প্রণয়ন করেন। পাঠ্যবইয়ের বর্ণনায় দেখা যায় যে, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ছিলেন কৃষক দরদী নেতা। তিনি ১৯৩৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করে জমিদার ও গ্রাম্য মহাজনদের দ্বারা কৃষকের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ১৯৩৮ সালে তিনি কৃষকদের সুবিধার্থে প্রজাস্বত্ব আইন পাস করেন। ১৯৪০ সালে তিনি মহাজনি আইন পাস করেন। মোটকথা বাংলার অবহেলিত কৃষককুলের ভাগ্যাকাশে তিনি ছিলেন এক উজ্জল নক্ষত্র যা বাংলার কৃষকদের মুক্তির পথের সন্ধান দেয়।
শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক দরিদ্র ও কৃষক প্রজাদের সুদখোর মহাজন ও জমিদারদের কবল থেকে রক্ষা করেন। আর তাই বাঙালি জনগণের হৃদয়ে তিনি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।

ঘ. উক্ত নেতা তথা এ কে ফজলুল হকের সকল অবদান উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি, আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত।
উদ্দীপকের বর্ণনায় শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের শুধুমাত্র কৃষিক্ষেত্রে অবদানের কথা বলা হয়েছে। তিনি কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও আরো নানা দিকে অবদান রেখেছেন। যেমন- ১৯০৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোগী ব্যক্তি ছিলেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। এ সম্মেলনে তিনি আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ১৯১২ সালে কলকাতায় মুসলিম শিক্ষা সমিতি গঠন করেন এবং ১৯১৩ সালে শিক্ষাকে গণমুখী করার লক্ষ্যে বঙ্গীয় আইন পরিষদে শিক্ষা পরিকল্পনা পেশ করেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নারীশিক্ষা ও বিভিন্ন কলেজ প্রতিষ্ঠার পিছনে জড়িত ছিলেন শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক।
এ কে ফজলুল হক সবসময় বাঙালির দাবি-দাওয়া আদায়ে এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে সোচ্চার ছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ফজলুল হকের অবদান খুবই তাৎপর্যম--ত। তিনি ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক নেতা। তাইতো ১৯১৬ সালের হিন্দু-মুসলিমদের স্বার্থে 'লক্ষ্ণৌ চুক্তি' সম্পাদনে ভূমিকা রাখেন। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এলাকা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত কর্মকা- ছাড়াও উক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক আরো অনেক জনহিতকর কাজ করেছেন।

৯. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩রা মার্চ ১৯৭১ ঢাকার পল্টন ময়দানে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, "আজ থেকে কলকারখানা অফিস- আদালত বন্ধ থাকবে। রেলগাডw়র চাকা বন্ধ থাকবে, খাজনা-ট্যাক্স দেওয়া চলবে না।" এই ধারাবাহিকতায় তিনি ৭ই মার্চ ১৯৭১ এর ভাষণে ঘোষণা করেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
ক. কত সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে প্রথম অংশে বর্ণিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার রাজনৈতিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে প্রথম ও শেষ অংশে বর্ণিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা কীভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত? ঐতিহাসিক ঘটনাবলির আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়।

খ. ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনি ফলাফলে দেখা যায়, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন লাভ করে। তবে আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো আসন পায়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ১৩৮টি আসনের মধ্যে ৮৩টি আসন লাভ করে পিপল্স পার্টি। তবে এ দল পূর্ব পাকিস্তানে কোন আসন লাভ করেনি। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। বাকি ১২টি আসনের ৯টিতে স্বতন্ত্র, ২টিতে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং একটিতে জামায়াতে- ই-ইসলামী জয় লাভ করে।

গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করা নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার টালবাহানা শুরু করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করে ৩ মার্চ, ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। কিন্তু ভূট্টো জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করতে অস্বীকার করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান হঠাৎ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদের ঝড় প্রবাহিত হয়। ঢাকার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল, পথসভা ও জনসভা করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র-জনতার সমাবেশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে পূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের আহবান জানান।
পরিশেষে বলা যায়, ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের মাধ্যমে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রদেশের সকল প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কলকারখানা সবই বন্ধ হয়ে যায়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ভাষণের প্রথম অংশ ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে অসহযোগ আন্দোলন এবং শেষ অংশে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে প্রচ্ছন্নভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ঘোষণা করেন।
উদ্দীপকে দুটি ঐতিহাসিক ভাষণের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে ৩ মার্চ এবং ৭ মার্চ পৃথক দুটি ভাষণ প্রদান করেন। প্রথম ও শেষ অংশে বর্ণিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা দুটি পরস্পরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহের নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ক্ষমতাসীন সরকার টালবাহানা শুরু করে। ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন ৩ মার্চ, ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। কিন্তু ভূট্টো অধিবেশনে যোগদান করতে অস্বীকার করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। ফলে ঢাকার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিছিল, পথসভা ও জনসভা করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় সরকারের বিক্ষুদ্ধপূর্ণ অসহযোগের আহবান জানান। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কল-কারখানা সবই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রমনার রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন, এবারের সংগাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এ ভাষণের মাধ্যমে তিনি প্রচ্ছন্নভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পরিশেষে বলা যায়, বর্ণিত ভাষণ দুটি দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঙালি জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তাই ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ এবং ৭ মার্চের ভাষণ দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১০. মনির ছোটবেলা থেকেই সমাজজীবনের সকল শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। এজন্য তিনি শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে ১৮৩১ সালে বাঁশ ও মাটি দিয়ে একটি দূর্গ তৈরি করেন। ফলশ্রুতিতে শাসক দল তাকে দমনের জন্য সুসজ্জিত বাহিনী প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মনির শহিদ হন এবং তার বাহিনী পরাজিত হয়।
ক. হাজী শরীয়তউল্লাহর পুত্রের নাম কী?
খ. ফরায়েজি আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
গ. উদ্দীপকে মনির চরিত্রটির মাধ্যমে পাঠ্যবইয়ের কোন সংগ্রামী ব্যক্তির সাদৃশ্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘উক্ত ব্যক্তির নির্মিত দুর্গ ছিল অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক সশস্ত্র প্রতিবাদ"- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. হাজী শরীয়তউল্লাহর পুত্রের নাম দুদু মিয়া।

খ. বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে ফরায়েজি আন্দোলন ছিল অন্যান্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে পৃথক চরিত্রের। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা যায়।
১. ফরায়েজি আন্দোলন এক ধরনের শুদ্ধি ও সংস্কার আন্দোলন।
২. এ আন্দোলন এক বিশেষ সম্প্রদায়ের আন্দোলন।
৩. এ আন্দোলন মূলত একটি এলাকাভিত্তিক আন্দোলন।
৪. এটি ছিল কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির আন্দোলন।
৫. এ আন্দোলন এক প্রকার সামাজিক দিক-নির্দেশনামূলক আন্দোলন।
৬. ফরায়েজি আন্দোলনের রাজনৈতিক চরিত্রটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী।

গ. উদ্দীপকে মনির চরিত্রটির সাথে পাঠ্যবইয়ের সংগ্রামী ব্যক্তি তিতুমীরের সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত মনির ছোটবেলা থেকে সমাজজীবনের সকল শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। এজন্য তিনি শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে ১৮৩১ সালে বাঁশ ও মাটি দিয়ে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ফলশ্রুতিতে শাসকদল তাকে দমনের জন্য সুসাজ্জিত বাহিনী প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মনির শহিদ হন এবং তার বাহিনী পরাজিত হয়।
এ রকম ঘটনা তিতুমীরের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ও বিপ্লবী নেতা সৈয়দ মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর। তিনি ছোটবেলা থেকেই জুলুম, অত্যাচার, উৎপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে উদ্দীপকের মনিরের মতো সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাই তিনি দেশের সাধারণ জনগণকে জমিদার ও নীলকরদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হন। জমিদারদের স্বার্থে ব্রিটিশ সরকারের কর্মকা- পরিচালিত হলে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সাথে সংঘর্ষে অবতীর্ণ হন। এ সংঘর্ষে ইংরেজ বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ইংরেজদের সাথে অচিরেই ভয়াবহ যুদ্ধ অনিবার্য ভেবে তিতুমীর ব্রিটিশ আগ্নেয়াস্ত্রের আক্রমণ হতে আত্মরক্ষার জন্য নারিকেলবাড়িয়ায় ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এটি বাঁশের কেল্লা নামে পরিচিত। এটি বাঁশ এবং কাদা দিয়ে নির্মিত। এ প্রেক্ষিতে ইংরেজ বাহিনী এই বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করলে আধুনিক অস্ত্রের মুখে বাঁশের কেল্লার টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অবশেষে তিতুমীর শহিদ হন এবং তার বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মনির এবং শহিদ তিতুমীর একে অপরের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. উক্ত ব্যক্তির তথা তিতুমীরের নির্মিত দুর্গ বাঁশের কেল্লা ছিল অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে এক সশস্ত্র প্রতিবাদ— উক্তিটি যথার্থ। সশস্ত্র প্রতিবাদ পরিচালিত হয় অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে। নিয়মতান্ত্রিক বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে যখন অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে সরানো আর সম্ভব হয় না তখনই জনগণ বা জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল এই পথ বেছে নেয়। এই ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তিতুমীর নির্মিত বাঁশের কেল্লা।
উদ্দীপকে বর্ণিত ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যক্তি তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা নির্মিত হয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের সমর্থিত অত্যাচারী ও শোষণকারী জমিদার শ্রেণির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য তিনি একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি তার এ বাঁশের কেল্লা থেকে জমিদারদের অন্যায় ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিবাদ পরিচালনা করতেন। প্রথমদিকে গ্রামের নিরীহ ও অত্যাচারিত কৃষক শ্রেণিকে রক্ষা করাই তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি ব্রিটিশ সরকারের হঠকারিতামূলক কর্মকান্ডর জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি নেন। তার এই সিদ্ধান্তের ফল হলো ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চির প্রসিদ্ধ বাঁশের কেল্লা নিমাণ। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে নির্মিত এ দ্বিস্তর বিশিষ্ট কেল্লা একসময় হয়ে উঠেছিল ন্যায়বিচারের প্রতীক। যে কারণে হিন্দু- মুসলমানসহ সকল শ্রেণির অত্যাচারিত ও নির্যাতিত জনগণ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল। এই কেল্লা পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আনেদালনের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। বাঙালি জনগণ পাকিস্তানিদের অত্যাধুনিক অস্ত্রের মুখেও তাদের অন্যায়, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়vই করার প্রেরণা যুগিয়েছে এই কেল্লা।
সুতরাং বলা যায় যে, তিতুমীর কর্তৃক নির্মিত বাঁশের কেল্লা অন্যায়, অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিবাদ যা পরবর্তীতে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Comments