HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

 এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. ‘ঘ’ রাষ্ট্রের স্বাধীনতার দুই যুগ পর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে বিজয়ী হয়। কিন্তু সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বিজয়ী দলের নেতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
ক. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কার দ্বারা নির্বাচিত হন?
খ. শাসন বিভাগ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো নির্বাচনের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নির্বাচন বস্তুতপক্ষে রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটায়- বিশ্লেষণ করো।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের দ্বারা অর্থাৎ পরোক্ষ পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন।

খ. শাসন বিভাগ বলতে বোঝায় সরকারের সে বিভাগকে যে বিভাগ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে।
সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে শাসন বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাসন বিভাগই সরকারের আসল চালিকা শক্তি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের নিয়ে শাসন বিভাগ গঠিত হয়। শাসন বিভাগের কাজ হলো আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের বাস্তবায়ন করা।

গ. উদ্দীপকের নির্বাচনের সাথে আমার পঠিত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সাদৃশ্য রয়েছে। 
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলেও দেশটির জাতীয় পরিষদের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। উত্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। অন্যদিকে, পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশের মধ্যে পিপিপি মোট ৮৩টি আসন পায়। আওয়ামী লীগের এ বিজয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা হারানোর ভীতি ছড়িয়ে দেন। ফলে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকে তারা নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ঘ' রাষ্ট্রের স্বাধীনতার দুই যুগ পর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বিজয়ী দলের নেতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আমার পঠিত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচন বস্তুতপক্ষে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটায়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর সুদীর্ঘ ২৫ বছরের অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের হাত থেকে বাঙালির স্বাধিকার এবং মুক্তি লাভের দাবিরই বহিঃপ্রকাশ।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে টালবাহানা শুরু করে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেও তা আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সমগ্র পূর্ব বাংলায় হরতালের ডাক দেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তার ভাষণে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন।
১৯৭১ সালের ২ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন চলে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ অন্যান্য শহরগুলোতে হাজার হাজার নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার সাথে সাথে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচন প্রকৃতই পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটায়।

২. 'ক' রাষ্ট্রের সরকার মাত্র ৩ ভাগ লোকের ভাষাকে রাষ্ট্রের একমাত্র মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জনগণ আন্দোলনে নামে এবং জীবন দিয়ে তা প্রতিরোধ করে।
ক. ছয়দফা কী?
খ. যুক্তফ্রন্ট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো ঐতিহাসিক আন্দোলনের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত আন্দোলন স্বাধীনতার সূত্রপাত করে- বিশ্লেষণ করো।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ছয়দফা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত বাঙালির অধিকার আদায়ের ৬টি দাবি সংবলিত একটি কর্মসূচি।

খ. যুক্তফ্রন্ট বলতে ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একটি রাজনৈতিক জোটকে বোঝায়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করে। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে ‘যুক্তফ্রন্ট' জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ জোট চারটি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত হয়। দলগুলো হলো- আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজাম-ই-ইসলামি পার্টি এবং গণতন্ত্রী দল। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা।

গ. উদ্দীপকের সাথে আমার পঠিত ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই দেশটির রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা নিয়ে মতবিরোধ শুরু হয়। সে সময় পাকিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫৬ ভাগ লোকের মুখের ভাষা ছিল বাংলা। অথচ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন। পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও তরুণ সমাজ তাদের এ ঘোষণার প্রতিবাদ জানায় এবং তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারা পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। এ কর্মসূচিকে বানচাল করার জন্য শাসকগোষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ গুলি করলে শহিদ হন জববার, বরকত, সালাম, রফিকসহ আরো অনেকে। ফলে এ আন্দোলন আরো বেগবান হয়। এ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
উদ্দীপকেও দেখা যায়, 'ক' রাষ্ট্রের সরকার মাত্র ৩ ভাগ লোকের ভাষাকে রাষ্ট্রের একমাত্র মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জনগণ আন্দোলনে নামে এবং জীবন দিয়ে তা প্রতিরোধ করে। তাদের এ আন্দোলন ও প্রতিরোধ কর্মসূচির সাথে বাঙালির ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে আলোচিত আন্দোলন অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূত্রপাত করে।
পাকিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫৬ ভাগ লোকের মুখের ভাষা ছিল বাংলা। তবুও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে জববার, বরকত, সালাম, রফিকসহ আরো অনেকে শহিদ হন। এ আন্দোলনই বাঙালি জাতির ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন নামে খ্যাত।
উদ্দীপকে ‘ক’ রাষ্ট্রের সরকার মাত্র ৩ ভাগ লোকের ভাষাকে রাষ্ট্রের একমাত্র মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জনগণ আন্দোলনে নামে এবং জীবন দিয়ে তা প্রতিরোধ করে। তাদের এ আন্দোলন ১৯৫২ সালের বাঙালির ভাষা আন্দোলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 
ভাষা আন্দোলনের চেতনাই পরবর্তীকালে বাঙালির প্রতিটি গণ- আন্দোলনে প্রেরণা যোগায় এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথকে সুগম করে। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে স্বাধিকারের প্রশ্নে পূর্ব বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করে। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। তাই বলা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূত্রপাত করে।

৩. 'খ' রাষ্ট্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতাকে গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে রাখার পর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করায় জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এক পর্যায়ে সরকার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে জনপ্রিয় নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
ক. মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
খ. ভাষা আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বেগবান করে- বিশ্লেষণ করো।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।

খ. ভাষা আন্দোলন বলতে বোঝায় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে সংঘটিত গণআন্দোলন।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরপরই দেশটির রাষ্ট্রভাষা কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র- জনতা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, সফিকসহ আরো অনেকে শহিদ হন। এ আন্দোলনই ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে পাকিস্তানের অন্যতম আন্দোলন ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সাদৃশ্য রয়েছে।
আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা দখল করার পর পাকিস্তানে সামরিক একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পূর্ব বাংলার জনগণের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে উপেক্ষা করেন। ৬ দফা আন্দোলনকে ব্যর্থ করার জন্য ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামী করে ৩৫ জন বাঙালি সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আইয়ুব খানের পদত্যাগ, ১৯৬২ সালের সংবিধান বাতিল, এক ব্যক্তি এক ভোটের' ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণ সর্বাত্মক গণআন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলনই '৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান নামে খ্যাত। গণআন্দোলনে ভীত হয়ে আইয়ুব সরকার বঙ্গবন্ধুসহ অন্য বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
উদ্দীপকের বর্ণনায়ও দেখা যায়, ‘খ’ রাষ্ট্রের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতাকে গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে রাখার পর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করায় জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এক পর্যায়ে সরকার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে জনপ্রিয় নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যা আমার পঠিত ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার সাথে বাঙালির ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান। সাদৃশ্যপূর্ণ যা বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বেগবান করে।
১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। অল্পসময়ের মধ্যে এ প্রতিবাদ গণআন্দোলনে রূপ নেয়। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অটল থাকে। এ সময় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়ে এক জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। গণআন্দোলন আরও তীব্র রূপ ধারণ করে এবং প্রশাসন অচল হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতিতে আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং সব আসামিকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। গণঅভ্যুত্থানের ফলে ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলার অবসান ঘটে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
গণঅভ্যুত্থানের কারণে পূর্ব পাকিস্তানে বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যেতে থাকে। তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় করে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় ১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলায় অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা হয় যা মুক্তিযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাঙালির রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ রচনা করে। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই পূর্ব বাংলার জনগণ নিজেদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সংগ্রাম করে এবং এর ফলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
 
৪. অনেক স্বপ্ন নিয়ে 'প্রত্যাশা' সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্বশীলদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেওয়ায় সংস্থাটির কোনো গঠনতন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন পর একটি গঠনতন্ত্র তৈরি হলেও তা অল্প সময়ের ব্যবধানে বাতিল হয়ে যায়।
ক. যুক্তফ্রন্ট কী?
খ. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধান প্রণয়নের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনার মূলে ছিল 'সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অমিল'- পাকিস্তানের প্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করো।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তফ্রন্ট হলো আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরে নাম হয় আওয়ামী লীগ), কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজাম-ই-ইসলামি এবং বামপন্থী গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে ১৯৫৪ সালে গঠিত একটি রাজনৈতিক জোট।

খ. পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালে সংঘটিত বাংলার মানুষের তীব্র আন্দোলনই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। ১৯৬৮ সালের নভেম্বরের ছাত্র অসমেত্মাষকে কেন্দ্র করে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
সব শ্রেণির বাঙালির মধ্যে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অভিন্ন দাবি ছিল স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পদত্যাগ। তবে শিল্প শ্রমিক এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের পেশাজীবীদের কাছে এটি ধীরে ধীরে পাকিস্তানীদের শোষণ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এ অভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সর্ববৃহৎ গণজাগরণ। এর মধ্য দিয়ে আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটেছিল।

গ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের সাথে আমার পঠিত ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানি সংবিধান প্রণয়নের সাদৃশ্য আছে।
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকায় দেশটির সংবিধান তৈরি করতে দীর্ঘ ৯ বছর লেগে যায়। দীর্ঘদিন পর সংবিধান তৈরি হলেও মাত্র দুই বছরের মাথায় তা বাতিল হয়ে যায়। পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের ঘটনার সাথে উদ্দীপকের প্রত্যাশা সমাজকল্যাণ সংস্থার গঠনতন্ত্র তৈরিরও মিল পাওয়া যায়।
পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৪৯ সালে ‘আদর্শ প্রস্তাব’ গ্রহণ করে। এছাড়া সংবিধানের মূলনীতি নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি তিনজন প্রধানমন্ত্রীর সময়কালে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করে। তবে কোনো রিপোর্টই আলোর মুখ দেখেনি। তাছাড়া ঐ সময়ে গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ অযাচিতভাবে গণপরিষদের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে থাকেন। ক্ষমতার দ্বনে্দ্বর এক পর্যায়ে গোলাম মোহাম্মদ ১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে গণপরিষদ বাতিল করেন। ১৯৫৫ সালের মে মাসে দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি গণপরিষদে 'সংবিধান বিল উত্থাপিত হয় এবং ফেব্রুয়ারি মাসে তা পাস হয়। ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ থেকে এ সংবিধান কার্যকর হয়।
উদ্দীপকের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে 'প্রত্যাশা' সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকে বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্বশীলদের মধ্যে মতভেদ থাকায় সংস্থাটির কোনো গঠনতন্ত্র তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন পর একটি গঠনতন্ত্র তৈরি হলেও তা অল্প সময়ের মধ্যে বাতিল হয়ে যায়। উদ্দীপকের এ সংস্থাটির গঠনতন্ত্র তৈরির সাথে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণয়নের স্পষ্ট সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনা অর্থাৎ ১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধান প্রণয়নের দীর্ঘসূত্রিতা এবং তা অল্পসময়ের ব্যবধানে বাতিল হয়ে যাওয়ার মূলে ছিল 'সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অমিল'।
জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। একটি অংশ ছিল পশ্চিম পাকিস্তান এবং অন্যটি ছিল পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ)। এ দুই অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ১২০০ মাইলের ভৌগোলিক দূরত্ব (ভারতের ভূখ-) ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই অঞ্চলদ্বয়ের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনেক অমিল লক্ষ করা যায়। ইসলাম ধর্মের বন্ধন ছাড়া দুই অংশের অধিবাসীদের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাকপরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস এসব দিকে প্রায় কোনোই মিল ছিল না।
পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর পরই দেশটির পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে রাষ্ট্র ভাষার প্রশ্নে মতবিরোধ দেখা দেয়। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ বাঙালি হলেও উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত শুরু হয়। এ ছাড়া লাহোর প্রস্তাবের আলোকে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রদেশগুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়নি। বরং তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনকামী ও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনের পক্ষাবলম্বনকারীদের মধ্যে বিরোধের ফলে গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়নে দীর্ঘ সময় নিতে বাধ্য হয়।
কেন্দ্রীয় আইনসভায় বিভিন্ন প্রদেশের প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি ছিল পাকিস্তান সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত বিষয়। মূলনীতি কমিটির প্রথম রিপোর্টে পূর্ব বাংলাকে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে কমসংখ্যক আসন দেওয়া হয়। এ কারণে বাঙালি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে।
সবশেষে বলা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, রাষ্ট্রের দুই অংশের মধ্যকার ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক দূরত্ব এবং অমিল পাকিস্তানের গঠনতন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। যার ফলে সংবিধান তৈরির প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়।

৫. 'ক' রাষ্ট্রের স্বাধীনতার পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রের একটি অঞ্চলের জনগণের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে। শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয় এবং এক পর্যায়ে জনগণের প্রিয় নেতা শাসকগোষ্ঠীর কাছে কিছু দাবি উত্থাপন করেন।
ক. ছয়-দফা কর্মসূচি কী?
খ. আগরতলা মামলা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত ছয়-দফা কর্মসূচির কোনো সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কর্মসূচি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ - বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পূর্ব পাকিস্তানের (পরে স্বাধীন বাংলাদেশ) প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কর্মসূচি পেশ করেন তাই ছয়-দফা কর্মসূচি।

খ. পাকিস্তান সরকার ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে তিনিসহ মোট ৩৫ জন বাঙালি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে তাই আগরতলা মামলা নামে পরিচিত। 
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ঐ কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় সেদেশের সরকারের সাথে এক বৈঠকে পাকিস্তানকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করেছেন। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং মাওলানা ভাসানী পাকিস্তান সরকারের এ চক্রামেত্মর বিরুদ্ধে এবং মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ সব বন্দির মুক্তির দাবিতে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। গণ-আন্দোলনের মুখে আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।

গ. উদ্দীপকের সাথে আমার পঠিত ১৯৬৬ সালের ছয় দফা কর্মসূচির সাদৃশ্য আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ৬ দফা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এর মাধ্যমে বাঙালির স্বাধিকারের দাবি একটি পরিণতি পায় এবং তাদেরকে স্বাধীনতার পথে চালিত করে। উদ্দীপকটি এই অসাধারণ কর্মসূচিরই ইঙ্গিত বহন করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ক' রাষ্ট্রের স্বাধীনতার পর থেকেই এর একটি অঞ্চলের জনগণ শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হয়। ফলে তাদের মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে তাদের জনপ্রিয় নেতা শাসকগোষ্ঠীর কাছে কিছু দাবি পেশ করেন। বঙ্গবন্ধুর উত্থাপিত ৬ দফা কর্মসূচির ক্ষেত্রে উদ্দীপকের এ ঘটনারই প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তানের) জনসাধারণের ওপর নানা অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা ও নির্যাতন শুরু করে। তারা বেসামরিক ও সামরিক চাকরি, কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পাহাড়সম বৈষম্য সৃষ্টি করে। বাঙালিরা একসময় এ বৈষম্য অবসানের দাবিতে সোচ্চার ওঠে। তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধিকারের দাবিকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে এক রাজনৈতিক সম্মেলনে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। এককথায় এটি ছিল বাঙালির নায্য অধিকার আদায়ের সনদ। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রের শাসকদের কাছে উত্থাপিত কর্মসূচিটি মূলত ৬ দফা দাবিরই প্রতিচ্ছবি।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কর্মসূচি অর্থাৎ হয় দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ।
পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের শোষণ, নির্যাতন ও অবিচারের বিরুদ্ধে ছয় দফা ছিল একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। শোষিত বাঙালিদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ই ছিল এ আন্দোলনের লক্ষ্য। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা প্রথম লিখিতভাবে স্বায়ত্তশাসনের দাবি পেশ করে। পাকিস্তান সরকার এ দাবিকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তবে এ অঞ্চলের জনগণ ক্রমেই হয় দফার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে থাকে। এর ফলে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যা ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবি, ১৯৭১ সালে এসে তা স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয়। ছয় দফা দাবিতে উজ্জীবিত হয়েই বাঙালি শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায়ই আমরা চূড়ান্ত মুক্তি বা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছিলাম।
পরিশেষে বলা যায়, ছয় দফাকেন্দ্রিক আন্দোলনের পথ ধরেই জন্ম নিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ কারণেই এ আন্দোলন বা কর্মসূচিকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়।

৬. আফ্রিকা মহাদেশের একটি বৃহৎ রাষ্ট্র 'ক'। রাষ্ট্রটি দু'টি অংশে বিভক্ত। উত্তর অংশে গড়ে ওঠা একটি রাজনৈতিক দল ঐ অঞ্চলের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং দক্ষিণ অংশে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলটি দক্ষিণ অংশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে দল দু'টি অঞ্চলভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
ক. আগরতলা মামলার আসামি কতজন ছিল?
খ. যুক্তফ্রন্ট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের নির্বাচনের সাথে পাকিস্তানের কোন নির্বাচনের সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়? উক্ত নির্বাচনের ফলাফল ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্বাচন পাকিস্তানে জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে কী সমস্যা তৈরি করেছিল? বিশ্লেষণ করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আগরতলা মামলার আসামি ছিল ৩৫ জন।

খ. যুক্তফ্রন্ট বলতে পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী একটি রাজনৈতিক জোটকে বোঝায়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় (পূর্ব পাকিস্তান) ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে মোকাবিলা করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, এ. কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রচেষ্টায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একটি জোট গঠন করে। ১৯৫৩ সালে গঠিত চারটি দলের এ জোটটিই ‘যুক্তফ্রন্ট' নামে পরিচিত। জোটের দলগুলো হলো-১ আওয়ামী মুসলিম লীগ, ২. নেজাম-ই-ইসলামি পার্টি, ৩. কৃষক-শ্রমিক পার্টি ও ৪. বামপন্থী গণতন্ত্রী দল।

গ. উদ্দীপকের নির্বাচনের সাথে পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ক' দেশের উত্তর অংশের রাজনৈতিক দল ঐ অঞ্চলের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে দক্ষিণ অংশের রাজনৈতিক দলটিও কেবল সে অঞ্চলের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে দল দুটি অঞ্চলভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এমনটি দেখা যায়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) অংশের জনগণের মূল প্রতিনিধি ছিল আওয়ামী লীগ। আর তখন ঐ রাষ্ট্রের পশ্চিম অংশে বেশি জনপ্রিয় দল ছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টি।
পাকিস্তানের দুই অংশে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনি ফলাফলে দেখা যায়, জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় এবং ১৬০টি আসনেই জয়লাভ করে। অবশিষ্ট ২টি আসনে নির্বাচিত হন পিডিপির নুরুল আমিন এবং নির্দলীয় প্রার্থী ত্রিদিব রায়। পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশে পিপিপি মোট ৮৩টি আসন পায়। আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আর দলটির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিপিপি মোট ৮৮টি আসন পায়। অপরদিকে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে মোট ৩১০ (১০টি সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ) আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসন পেয়ে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। লক্ষ্যুীয় যে, এ নির্বাচনে 'আওয়ামী লীগ যেমন পশ্চিম পাকিস্তানে ১টি আসনও পায়নি, পিপিপিও তেমনি পূর্ব পাকিস্তানে কোনো আসন পায়নি। এ তথ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রের নির্বাচনটি পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্বাচন অর্থাৎ পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের নির্বাচন দেশটির জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করেছিল।
১৯৭০ সালের নির্বাচন অখ- পাকিস্তান রাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাচন। এ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাঙালিরা তাদের নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য পৃথক পথ বেছে নিয়েছে। তারা আর পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের নিষ্পেষণমূলক শাসনে থাকতে রাজি নয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের প্রত্যাখ্যান করাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এর সমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক শাসকচক্রের অনড় অবস্থান ও ক্ষমতালিপ্সা এভাবেই দেশটির বিভক্তি ডেকে আনে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক উভয় পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় পায়। সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হওয়া ন্যায়সঙ্গত ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বরং নতুন জাতীয় পরিষদের ৩ মার্চের নির্ধারিত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিদের স্বাধীনতার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতির আহবান জানান। তার নির্দেশ অনুযায়ী দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে ১৬-২৪ মার্চ প্রহসনের আলোচনায় বসেন। আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতের দিকে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে পাকিস্তানি সেনারা বর্বর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটেই ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেসের মাধ্যমে প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচার করেন।
তাই বলা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থবাদী শাসকরা এদেশে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এর পরিণতিতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্ট্র। সুতরাং, উপরের আলোচনায় স্পষ্ট যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফল এবং সে ব্যাপারে পাকিস্তানের শাসকদের চরম অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী প্রতিক্রিয়া দেশটির জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৭. আবির যে রাষ্ট্রের বাসিন্দা সেটি ১৯৪৭ সালে আলাদা দু'টি ভূখ- নিয়ে গঠিত হয়। রাষ্ট্রটি সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিমাঞ্চলের কায়েমী স্বার্থবাদী মহল পূর্বাঞ্চলের প্রতি ক্রমাগত শোষণ, অবহেলা ও বৈষম্যমূলক নীতির আশ্রয় নেয়। যার ফলে পূর্বাঞ্চলের মানুষের মনে ক্রমাগত অসমেত্মাষের জন্ম নেয়। এ প্রেক্ষাপটে পূর্বাঞ্চলের এক জনপ্রিয় নেতা একটি দাবি পেশ করেন এবং ঘোষণা করেন উক্ত দাবিই হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ও মুক্তির সনদ। 
ক. লাহোর প্রস্তাব কে উপস্থাপন করেন?
খ. ভাষা আন্দোলন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে পূর্ব পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক ঘটনার মিল আছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দ্বার উন্মুক্ত করে- বিশ্লেষণ কর।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

খ. ভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলার ছাত্র জনতা যে আন্দোলন করে তাই হলো ভাষা আন্দোলন।
পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষার ওপর আঘাত হানে। ১৯৫২ সালে তারা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় পূর্ব-বাংলার ছাত্র জনতা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন পরিচালনা করে। এ আন্দোলনে কয়েকজন ছাত্র শহিদ হন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সংঘটিত এই আন্দোলনই হলো ভাষা আন্দোলন।

গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে পূর্ব পাকিস্তানের ছয় দফা দাবির মিল আছে।
১৯৪৭ সালে বাঙালিরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্ত হয়। এই মুক্তি তাদেরকে আর এক শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের কবলে পতিত করে। এই নির্যাতন অর্থাৎ পাকিস্তানিদের শোষণের বিরুদ্ধে ছয় দফা ছিল একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। উদ্দীপকে এই পদক্ষেপটিরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত রাষ্ট্রটি আলাদা দুটি ভূখ- নিয়ে গঠিত হয়। এ রাষ্ট্রটি সৃষ্টির পর থেকেই এর একটি অঞ্চল শাসকদের বৈষম্যের শিকার হয়। এরই প্রেক্ষিতে শোষিতরা একটি দাবি পেশ করে। ছয় দফা দাবির ক্ষেত্রেও এমন প্রেক্ষাপট লক্ষণীয়। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্বাঞ্চলের জনগণের প্রতি নানা অত্যাচার, অবিচার, শোষণ-বঞ্চনা ও নির্যাতন শুরু করে। চাকরি, কৃষি, শিল্পসহ অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই তারা পাহাড়সম বৈষম্য তৈরি করে। পূর্ব বাংলার কাঁচামাল নিয়ে পাকিস্তানি শিল্পপতিরা উত্তরোত্তর ব্যবসার উন্নয়ন করে আর পূর্ব বাংলা অনুন্নতই থেকে যায়। এছাড়া ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ দেখা দিলে পূর্ব বাংলা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিভিন্ন বৈষম্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করেন। তিনি এ কর্মসূচিকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচার দাবি বলে অভিহিত করেন। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের ঘটনা ছয় দফা আন্দোলনের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ঘটনা অর্থাৎ ছয় দফা কর্মসূচি বাংলাদেশের স্বাধীনতার দ্বার উন্মুক্ত করে।
উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কর্মসূচি অর্থাৎ ছয় দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক গোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন ও অবিচারের বিরুদ্ধে ছয় দফা ছিল একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। এ আন্দোলন ছিল শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের হাতিয়ার।
১৯৬৬ সালের ছয় দফার মাধ্যমে বাঙালিরা প্রথম লিখিতভাবে স্বায়ত্তশাসনের দাবি পেশ করে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বাঙালিদের সাফল্য লাভ করার কৌশল বা সামর্থ্য আছে। বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে নস্যাৎ করার জন্য সরকার নানা টালবাহানা করেছিল। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে জনমত ক্রমেই ছয় দফার প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ হতে থাকে। ছয় দফা দাবির ফলেই ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যা ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবি ১৯৭১ সালে তা স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয়। এই দাবিতে উজ্জীবিত হয়েই বাঙালিরা মুক্তি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে আমরা মুক্তি বা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি।
পরিশেষে বলা যায়, ছয় দফাকেন্দ্রিক আন্দোলনের পথ ধরেই জন্ম নিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ কারণেই ছয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বলা হয়।

৮. রহমান সাহেব ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের একজন নেতা ছিলেন। তিনি তার নাতীকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গল্প শুনাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি সরকার আমাদের ক্ষমতা না দিয়ে আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি।
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় 'বাংলাদেশ কয়টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল?
খ. ৭ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে কি জান?
গ. ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচন-উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. স্বাধীনতার ভিত্তি হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল।

খ. বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ এক স্মরণীয় দলিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে যে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছিলেন তা এককথায় অনন্য। এ ভাষণের মাধ্যমে তিনি প্রচ্ছন্নভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রতিরোধ সংগ্রাম, যুদ্ধের কৌশল ও শত্রু মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন।

গ. ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচন- উক্তিটি যথার্থ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের পথ প্রশস্ত করেছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নানা অজুহাতে বাংলার মানুষকে শোষণ করেছে। তাদের শোষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তাই তারা সুযোগ পেয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে জয়ী করে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি প্রথমবারের মতো আত্মপ্রতিষ্ঠা ও স্বশাসনের সুযোগ লাভ করে। সত্তরের নির্বাচন আরও প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক।
পূর্ব বাংলার জনগণ প্রত্যাশা করেছিল নির্বাচনের মাধ্যমে শোষকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে অধিকার আদায় করবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে। জনগণ দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করেছিল, একমাত্র আওয়ামী লীগই তাদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে। নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেতে শুরু করে। তাই বলা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচন।

ঘ. বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের তাৎপর্য অনেক।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রভাব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় সুদীর্ঘ পঁচিশ বছরের পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের হাত থেকে বাঙালি জাতির স্বাধিকার ও মুক্তি লাভেরই বহিঃপ্রকাশ প্রকৃতপক্ষে সত্তরের নির্বাচনই বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বপ্রথম স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এর মাধ্যমেই বাঙালিরা প্রথমবারের মতো আত্মপ্রতিষ্ঠা ও স্বশাসনের সুযোগ লাভ করে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে আতঙ্কিত হয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ফলে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তারা সর্বশক্তি দিয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় পরবর্তীকালে বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছে। এ প্রেরণা থেকে বাঙালি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।
আলোচনা শেষে বলা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচন একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়।

৯. ভোলার একটি পৌরসভার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলাউদ্দিন আলী বিজয়ী ঘোষিত হন। কিন্তু বিশেষ মহলের প্রভাবে আলাউদ্দিন আলীর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে টাল বাহানা শুরু করে। ফলশ্রুতিতে তার দল এবং স্থানীয় জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 
ক. বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে কত সালে?
খ. পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে আলাউদ্দিন আলীর দল ও জনগণের মাঝে যে প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় তার সাথে ১৯৭০ সালের নির্বাচনোত্তর সময়ের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে আলাউদ্দিন আলীর নিকট প্রশাসন কর্তৃক ক্ষমতা হস্তান্তরের টাল বাহানা স্বাধীনতা পূর্ব পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের অনরূপ' ব্যাখ্যা কর?

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে ১৯৭১ সালে।

খ. বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী পাকিস্তান রাষ্ট্র ছিল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রকৃত উদাহরণ।
১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রটি নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এসব সমস্যার কারণে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচনা করতেই দীর্ঘ নয় বছর সময় লেগেছিল। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণ এবং সামরিক-বেসামরিক আমলাদের দৌরাত্ম্য ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। অসংখ্য সমস্যাজড়িত পাকিস্তান রাষ্ট্র তাই স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে বেশ হিমশিম খেয়ে যায়।

গ. উদ্দীপকের আলাউদ্দিন আলীর দল ও জনগণের মাঝে যে প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় তার সাথে ১৯৭০ সালের নির্বাচনোত্তর সময়ের সাদৃশ্য হলো ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করা।
বিজয়ীদলকে ক্ষমতা না দিয়ে যদি টালবাহানা করা হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে অসমেত্মাষের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টিই প্রতিফলিত হয় উদ্দীপকের প্রেক্ষাপটে এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে। ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাংলার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করায় বাঙালি জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২ মার্চ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এমনিভাবে উদ্দীপকের প্রেক্ষিতেও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা করায় অসমেত্মাষ সৃষ্টি হয়।
উদ্দীপকে আলোচিত ভোলার একটি পৌরসভার উপনির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আলাউদ্দিন আলীকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা নিয়ে টালবাহানা করে। তাদের এরূপ টালবাহানার কারণে তার দল এবং স্থানীয় জনগণের মাঝে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তা পূর্ব আলোচিত অসহযোগ আন্দোলনেরই অনুরূপ ঘটনা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনোত্তর সময়ের সাথে উদ্দীপকের ঘটনার এদিক দিয়েই সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে আলাউদ্দিন আলীর দলের সাথে ক্ষমতাসীন দল যে ধরনের আচরণ প্রদর্শন করেছে তার প্রেক্ষিতে প্রশ্নের মন্তব্যটিকে আমি যথার্থ মনে করি।
১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রথম ও শেষ সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে না নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। এর ফলশ্রুতিতেই তারা তাদের ক্লান্তিকালে উপনীত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানিদের এরূপ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদেই ২ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এরই পথ ধরে সূচনা হয় স্বাধীনতা আন্দোলনের।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিল তা ভিন্ন প্রেক্ষিতে উপস্থাপিত হয়েছে উদ্দীপকের ঘটনায়। এখানে দেখা যায়, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলাউদ্দিন আলী বিজয়ী ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষ মহলের প্রভাবে প্রশাসন তার নিকট ক্ষমতা হস্তন্তরে টালবাহানা শুরু করে। এটি মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব পশ্চিম পাকিস্তানিদের পরিচালিত ষড়যন্ত্রেরই নামান্তর। তারা যেভাবে বাঙালির উত্থানকে অস্বীকার করেছিল। তেমনিভাবে আলাউদ্দিন আলীর সাথেও অন্যায় আচরণ প্রদর্শন করা হয়েছে।
আলোচনা শেষে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

১০. মি. 'ক' বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। স্বদেশের প্রতি তার খুব টান ছিল। সত্তরের নির্বাচনের পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণ তাকে ক্ষুব্ধ করে। নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি, গণহত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি সংবাদে তিনি অস্থির হয়ে উঠেন। স্বজাতির মুক্তির জন্য সুকৌশলে তিনি একটি যুদ্ধবিমান নিয়ে পলায়ন করেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনি শত্রু বিমানের গুলিতে নিহত হন। এভাবে অনেক শহীদের আত্মত্যাগে দেখা স্বাধীন হয়।
ক. ভাষা আন্দোলন কী?
খ. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ঘটনার সাথে তোমার পঠিত বইয়ের কোন ঘটনার ইঙ্গিত রয়েছে?
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শহীদদের আতমত্যাগকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করবে?

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভাষার জন্য, মায়ের মুখের ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য যে আন্দোলন পরিচালনা করা হয় তাই ভাষা আন্দোলন।

খ. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণগুলো হলো-
১. ১৯৫৮ সালের অক্টোবরের ঘোষিত সামরিক শাসনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে যেভাবে গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা পর্যুদস্ত হয় তার প্রতিবাদস্বরূপ পরবর্তীতে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সূচিত হয়।
২. সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অত্যধিক ক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের গণবিরোধী ভূমিকার প্রতিবাদ হিসেবে গণঅভ্যুত্থান সূচিত হয়।
৪. পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবি-দাওয়ার প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের অবজ্ঞা প্রদর্শনের প্রতিবাদস্বরূপ এ গণঅভ্যুত্থান ঘটে।

গ. উদ্দীপকে মি. 'ক' বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। স্বদেশের প্রতি অকৃত্রিম টান ছিল তার। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণে তিনি অস্থির হয়ে উঠেন। স্বজাতির মুক্তির জন্য সুকৌশলে তিনি একটি যুদ্ধবিমান নিয়ে পালিয়ে আসেন। কিন্তু পথিমধ্যে শত্রুর গুলিতে নিহত হন। তিনি হলেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। যিনি পাকিস্তান থেকে যুদ্ধ বিমান নিয়ে পালিয়ে আসেন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বিমানটাকে ধ্বংস করে দেয়।
উদ্দীপকের ঘটনাটি আমার পঠিত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাকে নির্দেশ করছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলার আপামর জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তেমনি জাতির শ্রেষ্ঠ সমত্মান হলেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার মানসে কর্মরত অবস্থায় থেকে বিমান নিয়ে পলায়ন করে। স্বাধীনতা অর্জনে যে ত্যাগ স্বীকার করেছিল তা ইতিহাসে বিরল।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শহিদ অর্থাৎ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের আতমত্যাগকে আমি যেভাবে মূল্যায়ন করব তা হলো- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর অতর্কিত হামলা সেদিন বাঙালি জাতিকে স্তম্বিত করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। গঠন করা হয় মুক্তিবাহিনী, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ, এই যুদ্ধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল প্রশংসনীয়। শিল্পীগণ গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করে দেশের জনসাধারণকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছেন। শুধু তাই নয় সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী, লেখকগণ, স্বাধীন বাংলা
বেতারের শিল্পীগণ বাংলাদেশের জনগণের মুক্তিযুদ্ধের গতি, প্রকৃতি, মানুষের করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে উজ্জীবিত করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য প্রবাসী বাঙালিরা অর্থ সংগ্রহ করেন। এছাড়াও তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশে ভারত যৌথ কমান্ড গঠন করা হয়। তারপর বাংলাদেশ বাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ এয়ার কমোডোর এ কে খন্দকার ১৬ ডিসেম্বর পাকস্তিানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূখন্ডের জন্ম হয়। আলোচনার শেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বীর শহিদদের আতমত্যাগের বিনিময়েই আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জিত হয়।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Comments