HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

 এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 2nd Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Civics and Good Governance 2nd Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. ঔপনিবেশিক শাসন ও নির্যাতনের যাতাকলে নিষ্পেষিত 'গ' রাষ্ট্রের জনগণ দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে চলেছে। গণআন্দোলনে বাধ্য হয়ে শাসকগোষ্ঠী একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রকে দুভাগে ভাগ করে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে দেশ ত্যাগ করে।
ক. মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার সদস্য সংখ্যা কতজন?
খ. বঙ্গভঙ্গ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো আইনের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আইনের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করো।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার সদস্য সংখ্যা ৩ জন।

খ. বঙ্গভঙ্গ বলতে ১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সিকে ২ ভাগে বিভক্ত করাকে বোঝায়।
প্রায় ২ লক্ষ বর্গমাইল আয়তনের বাংলা প্রেসিডেন্সিকে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম এবং বাংলা প্রদেশ নামে ২টি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। ব্রিটিশ ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন। যা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।

গ. উদ্দীপকে প্রণীত আইনের সাথে আমার পঠিত ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ভারতবর্ষের জনগণ ব্রিটিশ শাসনের এক পর্যায়ে তাদের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে গণআন্দোলন শুরু করে। তাছাড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের পরস্পর বিরোধী দাবির প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার মহাসমস্যায় পড়ে। ভারতের এই রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দূর করার লক্ষ্যে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ৩ জুন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এটি কার্যকর করার লক্ষ্যে ৪ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনি একটি বিল উত্থাপন করেন। এ বিলে ব্রিটিশ ভারতে 'ভারত' ও 'পাকিস্তান' নামে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই বিলটি রাজকীয় সম্মতির মাধ্যমে আইনে পরিণত হয়। এটিই ১৯৪৭ সালের 'ভারত স্বাধীনতা আইন' নামে খ্যাত।
উদ্দীপকের 'গ' রাষ্ট্রের জনগণ ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে চলেছে। তাদের গণআন্দোলনে বাধ্য হয়ে শাসকগোষ্ঠী একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। শাসকগোষ্ঠীর প্রণীত নতুন আইন অনুযায়ী জন্ম হয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। এ আইনের সাথে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আইন অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। 
১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়। এর মাধ্যমে ভারতবর্ষে দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। এ আইনের মাধ্যমে গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার বিলুপ্তি ঘটে। ফলে পাকিস্তান ও ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা দূরীভূত হয়।
দীর্ঘ আন্দোলন, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পর ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন প্রণয়ন করা হয়। এজন্য এ আইন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দলিল। উক্ত আইন প্রণয়নের ফলে এ উপমহাদেশে রক্তপাতহীন ও স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়াই স্বাধীন দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের কৃষ্টি, সভ্যতা, সাহিত্য ইত্যাদিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে। ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। নতুন প্রেরণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দুটি স্বাধীন দেশের জনগণ নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের গুরুত্ব অপরিসীম।

২. 'গ' একজন রাজনৈতিক নেতা। মানবতার কল্যাণ তাঁর রাজনীতির মূল লক্ষ্য। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় কখন?
খ. 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো ঐতিহাসিক প্রস্তাবের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রস্তাবের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল- বিশ্লেষণ করো।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ সালে।

খ. 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' হলো ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের একটি রাজনৈতিক মতবাদ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪০ সালের ২২ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের কাউন্সিলে সভাপতির ভাষণে মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি গঠনের লক্ষ্যে 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' ঘোষণা করেন। তার মতে, হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই ধর্মীয় দর্শন, সামাজিক রীতি, জীবন পরিচালনা, সাহিত্য, ইতিহাস প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুটি স্বতন্ত্র অবস্থানে রয়েছে। সুতরাং জাতীয়তার মানদ-- তারা পৃথক দুটি জাতি। তার এই মতবাদটি 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে আলোচিত প্রস্তাবের সাথে আমার পঠিত লাহোর প্রস্তাবের সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে বাংলার তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমির দাবি সম্বলিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাবই ঐতিহাসিক 'লাহোর প্রস্তাব' নামে পরিচিত। এ প্রস্তাবে তৎকালীন ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোর সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং শাসন সংক্রান্ত অধিকার রক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়। এ প্রস্তাব গ্রহণের পর মুসলিম রাজনীতিতে ইতিবাচক সাড়া জাগে এবং মুসলমানদের মধ্যে নব জাগরণের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে এ প্রস্তাব 'পাকিস্তান প্রস্তাব' নামে পরিচিত অর্জন করে।
উদ্দীপকের 'গ' একজন রাজনৈতিক নেতা। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের কথা চিন্তা করে তাঁর অঞ্চলে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। তাঁর এই প্রস্তাব শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রস্তাবের মধ্যে অর্থাৎ লাহোর প্রস্তাবে স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল- আমি এ উক্তিটিকে যথার্থ মনে করি।
উদ্দীপকে বর্ণিত প্রস্তাবের সাথে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক কর্তৃক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবটি সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক মুসলিম রাষ্ট্রটির সৃষ্টি হয়। যে রাষ্ট্রটি পূর্ব ও পশ্চিম এই দুই অংশে বিভক্ত ছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল মুসলিম লীগ লাহোর প্রস্তাবে উল্লিখিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের জোর দাবি জানায়। 
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা, ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সবকিছুই ছিল লাহোর প্রস্তাবে গৃহীত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের বিজয় হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীতে পূর্ববাংলায় শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত রয়েছে

৩. ভারতীয়দের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১৮৮৫ সালে সর্বপ্রথম এ উপমহাদেশে একটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটে। মুসলমানগণও তাদের স্বার্থ এবং দাবি-দাওয়া পূরণের উদ্দেশ্যে আরো একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দল দুটি প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্য দেখায়। পরবর্তীতে দল দুটির নেতৃত্বে ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ক. দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রবক্তা কে?
খ. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে কোন কোন রাজনৈতিক দলের কথা বলা হয়েছে?
ঘ. যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আলোচনা করো। ভারত বিভক্তিতে উক্ত দল দুটির ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্বি-জাতি তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

খ. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে প্রদেশগুলোর নিজস্ব স্বাধীন শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়েছিল। এতে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন তিনটি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রথমত, সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস্ত বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। দ্বিতীয়ত, প্রদেশগুলোতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রদেশ আত্মনির্ভরশীল হবে। মোটকথা, প্রদেশগুলোর সুনির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রাপ্তি এবং প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বশীল হওয়াই হলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।

গ. উদ্দীপকে 'কংগ্রেস' ও 'মুসলিম লীগ' নামে ব্রিটিশ ভারতের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কথা বলা হয়েছে।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ১৮৮৫ সালের শেষের দিকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নামে একটি রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হয়। দলটির সদস্যপদ হিন্দু-মুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে ভারতে মুসলিম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে এবং ইংরেজ শাসকদের কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে মুসলমানরা নিজেদের একটি পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্বুদ্ধ হয়। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম লীগ নামে মুসলমানদের নিজস্ব দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ দলটি গঠিত হয়েছিল। যথা:
১. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতীয় মুসলমানদের আনুগত্য প্রদর্শন এবং সরকারের কোনো নীতি সম্পর্কে তাদের মনে ভুল ধারণা জন্মালে তা দূর করা।
২. ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ও স্বার্থরক্ষা এবং তাদের অভাব-অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া গঠনমূলকভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা।
৩. এ সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি যেন কোনো বিদ্বেষভাব না জাগে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. রাজনীতিতে কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য খর্ব করা।

ঘ. ভারত বিভক্তিতে উক্ত দল দুটি অর্থাৎ কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
ভারতীয়দের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির সদস্যপদ হিন্দু-মুসলিমসহ সব ভারতীয়র জন্য উন্মুক্ত ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের কিছু সিদ্ধামেত্ম মুসলমানরা ভিন্নমত পোষণ করে এবং তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। তুলনামূলকভাবে অনগ্রসর ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের অধিকার আদায় ও অগ্রগতির লক্ষ্যে মুসলিম নেতারা কংগ্রেসের প্রতি হতাশা থেকে ১৯০৬ সালে পৃথক রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
জাতীয় কংগ্রেস দল ভারতীয়দের অধিকার আদায়ে নানামুখী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ফলে ইংরেজ সরকার কংগ্রেসকে তাদের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করে। প্রথমদিকে কংগ্রেস সরকারের কাছ থেকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দাবি-দাওয়া আদায়ের চেষ্টা করে। তবে পরে এ সংগঠনটি ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বেই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
অন্যদিকে বিংশ শতকের শুরুর দিকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। সাংগঠনিক ভিত্তি থাকায় মুসলমানদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় সহজ হয়। পৃথক নির্বাচনের দাবিসহ মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সংগ্রাম করায় মুসলিম লীগের জনসমর্থন ক্রমশ বাড়তে থাকে। গঠনের পরবর্তী ৪০ বছরে (স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত) মুসলমানদের মধ্যে দলটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এদিকে ব্রিটিশদের 'ভাগ কর ও শাসন কর' (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) নীতিসহ বিভিন্ন কারণে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ 'দ্বি-জাতি তত্ত্ব' উপস্থাপন করেন। এতে মুসলিমদের পৃথক জাতি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়।
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ভারতবাসীর মনে স্বাধিকারের চেতনার জন্ম দিয়েছিল। কিছু চেষ্টা সত্ত্বেও দুই দলের নেতাদের মতপার্থক্য শেষ পর্যন্ত দূর করা সম্ভব না হওয়ায় ভারত অনিবার্যভাবে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তির পথে এগিয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।

৪. নাগরিকদের অধিকতর সেবা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দু'ভাগে ভাগ করে ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন' ও 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন' নামে পৃথক দুটি সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত করে।
ক. বঙ্গভঙ্গ কী?
খ. দ্বৈতশাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোনো ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনার মূলে ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করা - বিশ্লেষণ করো।

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯০৫ সালে বঙ্গদেশকে(প্রদেশ) বিভাজন করাই হলো বঙ্গভঙ্গ।

খ. ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে বাংলার শাসনভার সংক্রান্ত দায়িত্ব দুটি পৃথক কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত করাই হলো দ্বৈত শাসন।
৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ানি লাভের (রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা) পর লর্ড ক্লাইভ বাংলায় দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করেন। দ্বৈত শাসনের অর্থ হলো দু'জনের শাসনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, ফৌজদারি বিচার, শান্তিরক্ষা, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলার নামেমাত্র নবাবের হাতে। অন্যদিকে, বাংলার রাজস্ব আদায়, দেওয়ানি ও জমির বিবাদ সম্পর্কিত বিচার ইত্যাদি লাভজনক কাজ কোম্পানি নিজের হাতে রাখে। বলা হয়, দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা আর অন্যদিকে নবাব পান ক্ষমতাহীন দায়িত্ব।

গ. উদ্দীপকের সাথে আমার পঠিত ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সাদৃশ্য আছে।
বঙ্গভঙ্গ ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। এটি ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের পাশাপাশি প্রশাসনিক বোঝা লাঘব করে। তাছাড়া এটি নবগঠিত পূর্ববঙ্গের অর্থনীতি ও জীবনমান উন্নয়নে নতুন যুগের সূচনা করে। উদ্দীপকে বর্ণিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দু'ভাগে ভাগ হওয়ার সাথে বঙ্গভঙ্গের সাদৃশ্য আছে।
ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বাংলা প্রদেশ ছিল আয়তনে ও জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড়। একজন গভর্নর জেনারেলের পক্ষে এত বড় প্রদেশ শাসন করা খুবই কষ্টকর ছিল। তাই গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন (George Nathaniel Curzon; 1859-1925) ভারত সচিবকে লিখেছিলেন যে, একটিমাত্র কেন্দ্র থেকে এত বড় ও জনবহুল এলাকা শাসন করা সম্ভব নয়। তার এ লিখিত রিপোর্টের আলোকেই ১৯০৫ সালে বাংলাকে ভাগ করে দুটি প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। নতুন প্রদেশটি গঠিত হয় পার্বত্য ত্রিপুরা, ঢাকা, রাজশাহী (দার্জিলিং বাদে), চট্টগ্রাম ও আসাম নিয়ে। এর নাম হয় পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশ। ঢাকাকে এ নতুন প্রদেশের রাজধানী করা হয়। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ, কলকাতা হয় এর রাজধানী।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, নাগরিকদের অধিকতর সেবা দেওয়ার জন্য সরকার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দু'ভাগে ভাগ করে। এর একটি হলো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন; যা ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ঘটনার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনা অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের মূলে ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করাত এ বক্তব্যটি যথার্থ।
'১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পেছনে প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ থাকলেও এর অন্যতম কারণ ছিল রাজনৈতিক তথা ভারতবাসীর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করা। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ফলে ভারতীয়রা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে বিশেষ করে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়।
ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে 'যুগান্তর দল' এবং 'অনুশীলন সমিতি' নামে দুটি অতি বিপ্লবী সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও বিপ্লবী কর্মকান্ডর কেন্দ্রবিন্দু ছিল কলকাতা। এসব আন্দোলনে ভীত হয়ে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের চিরায়ত শাসন কৌশল 'ভাগ কর এবং শাসন কর নীতি' (Divide & Rule Policy) প্রয়োগ করে। বাংলা তথা বঙ্গপ্রদেশকে বিভক্ত করে ব্রিটিশরা এ দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করে তাদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল গ্রহণ করে। এছাড়া ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহও বঙ্গভঙ্গের পক্ষে আন্দোলন শুরু করে জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হলে পূর্ব বাংলার মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের সুযোগ পাবে। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। শিক্ষিত হিন্দু সমাজ মনে করে, তাদের দ্রুত বেড়ে ওঠা বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিকে ব্যাহত করা এবং এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পূর্ব বাংলার মুসলিম প্রভাব বাড়ানোকে উৎসাহিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। আবার বাংলার অধিকাংশ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতে, তাই বঙ্গভঙ্গের ফলে তারা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এভাবেই বঙ্গভঙ্গের দ্বারা ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে কলকাতাকেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার সুযোগ লাভ করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশাসনিক কাজ সহজতর করার পাশাপাশি বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ব্রিটিশরা 'ভাগ কর ও শাসন কর' কৌশল সার্থকভাবে প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের পশ্চিম বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের থেকে আলাদা করে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে। এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যকার অনৈক্য ভারতে তাদের শাসনকে আরো শক্তি যুগিয়েছিল।

৫. ‘ক’ রাষ্ট্রের প্রদেশগুলোতে প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে দুভাগ করে সংরক্ষিত বিষয় ও হস্তান্তরিত বিষয় নামে নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সংরক্ষিত বিষয়গুলো গভর্নর তার হাতে রাখেন। 
ক. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন কী?
খ. লাহোর প্রস্তাব বলতে কী বোঝ?
গ. ‘ক’ রাষ্ট্রের প্রদেশে প্রবর্তিত আইনের সাথে তোমার পঠিত ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের সাদৃশ্য আছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আইনের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্রিটিশ ভারতে সাংবিধানিক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে ভারত সচিব জন মর্লে ও গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টোর উদ্যোগে ১৯০৯ সালে যে সংস্কার আইন পাস করা হয়, তাই মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত।

খ. ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবনাই হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব।
১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের লাহোরে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ সম্মেলনে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। বস্তুতপক্ষে, ভারতের মুসলিম লীগ এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আদর্শগত পার্থক্যের ফল ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব। এ প্রস্তাবকে 'পাকিস্তান প্রস্তাব' হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

গ. 'ক' রাষ্ট্রের প্রদেশে প্রবর্তিত ব্যবস্থার সাথে আমার পঠিত ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রদেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সাদৃশ্য রয়েছে।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করা হয়। এটি ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। সাধারণত দ্বৈতশাসন বলতে কোনো প্রশাসনে দুটি কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিকে বোঝায়। এমন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক বিষয়কে দুভাগে ভাগ করা হয় এবং পরিচালনার জন্য দুই ধরনের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে প্রাদেশিক সরকারের প্রশাসনিক বিষয়গুলোকে ‘সংরক্ষিত' ও 'হস্তান্তরিত' এ দুভাগে ভাগ করা হয়। বিচার বিভাগ, ভূমিরাজস্ব, পুলিশ, জেল, ভূমি উন্নয়ন ও কৃষিঋণ, ত্রাণ, সেচ, সংবাদপত্র ও প্রকাশনা নিয়ন্ত্রণ, বনজশিল্প, বিমা, গৃহ নির্মাণ, ঋণদান, শ্রমিক সমস্যার সমাধান, খাল খনন, বাঁধ নির্মাণ প্রভৃতি সংরক্ষিত বিষয় হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব গভর্নর ও তার কার্যনির্বাহী পরিষদের ওপর ন্যস্ত হয়। অপরদিকে কৃষি, শিক্ষা, সমবায়, মৎস্য, স্থানীয় সরকার, জনস্বাস্থ্য, জনকল্যাণমূলক কাজ প্রভৃতি হস্তান্তরিত বিষয় হিসেবে পরিচালনার ভার গভর্নর ও প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার ওপর ন্যস্ত হয়। প্রাদেশিক গভর্নর হস্তান্তরিত বিষয় পরিচালনার ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার উপদেশ ও পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হতেন। উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রের প্রদেশগুলোতে আমরা দেখতে পাই, প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে দুভাগ করে সংরক্ষিত বিষয় ও হস্তান্তরিত বিষয় নামে নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে এবং সংরক্ষিত বিষয়সমূহ গভর্নর তার হাতে রাখেন। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের রাষ্ট্রের আইন আমার পঠিত ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন কার্যকারিতার দিক দিয়ে ব্যর্থ হলেও ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের দিক দিয়ে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ধাপে ধাপে ভারতে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। কেননা, এ আইনে গভর্নর জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নরদের ক্ষমতা ছিল অপ্রতিহত। প্রাদেশিক সরকারের প্রশাসনিক বিষয়গুলোকে দুটি সংস্থায় বা দুভাগে বিভক্ত করায় সরকারের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহ বিঘি্নত হয়ে প্রহসনে পরিণত হয়।
যেকোনো দেশে দলব্যবস্থা সংসদীয় ও দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার অন্যতম পূবশর্ত। কিন্তু প্রদেশে দ্বৈত শাসন কার্যকর করার সময় এমন দলব্যবস্থা ছিল না। মন্ত্রীগণ যৌথভাবে নিযুক্ত না হয়ে ব্যক্তিগতভাবে নিযুক্ত হন এবং সরকারি সদস্যদের ওপর নির্ভরশীল থাকতেন। তাছাড়া মন্ত্রিসভার দায়িত্বহীনতা, সংসদীয় ঐতিহ্যের অভাব, বিষয় বণ্টনের ত্রুটি, মন্ত্রিসভা ও কার্যনির্বাহী পরিষদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রভৃতি কারণে ১৯১৯ সালের আইনটি কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আইনটির মাধ্যমে কেন্দ্রে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হয়নি। তাই এ আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো এ আইনকে অসম্পূর্ণ অসমেত্মাষজনক ও নৈরাশ্যজনক বলে ঘোষণা করে এবং প্রত্যাখ্যান করে।
স্বায়ত্তশাসন ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ায় এবং কংগ্রেসের আন্দোলনের ফলে জনগণ শীঘ্রই ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বিরোধিতা শুরু করে। তবে সাংবিধানিক সংস্কারের দিক বিবেচনায় এ আইনকে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলা যায়।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৬. প্রশাসনিক সুবিধার্থে 'ক' অঞ্চলটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। অবশ্য এর পিছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণও বিদ্যমান ছিল।
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কত সালে গঠিত হয়?
খ. বেঙ্গল প্যাক্ট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ব্রিটিশ ভারতের কোন ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ঘটনাটি ভারতবর্ষের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে? আলোচনা করো।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হয় ১৮৮৫ সালে।

খ. ব্রিটিশ আমলে বাংলার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্পাদিত একটি চুক্তি হলো বেঙ্গল প্যাক্ট।
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বাংলার জনসংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগই ছিল মুসলমান। সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অশিক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার জন্য খ্যাত নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এ বৈষম্য দূর করতে বেঙ্গল প্যাক্ট এর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীসহ বাংলার মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্ট সম্পাদিত হয়। অনগ্রসর মুসলিমদের কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়ে সরকারি চাকরি ও আইন পরিষদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস করাই ছিল এর প্রধান লক্ষ্য।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ব্রিটিশ ভারতের ঐতিহাসিক বঙ্গভঙ্গের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। লর্ড কার্জনের শাসনামলে বঙ্গভঙ্গ সংঘটিত হয়। এ ঘটনার পেছনে যে কারণগুলো নিহিত ছিল, উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলটি ভাগের ক্ষেত্রেও সেগুলো লক্ষণীয়।
উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলটি প্রশাসনিক কারণে ভাগ করা হয়েছিল। তবে এর পেছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণও বিদ্যমান ছিল। বঙ্গভঙ্গের ক্ষেত্রেও তেমনটিই দেখা যায়। ১৯০৫ সালের আগে ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বঙ্গই ছিল সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এর আয়তন ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল। তাই প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বঙ্গভঙ্গ করা হয়। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত কলকাতা নগরই ছিল ভারতবর্ষের তৎকালীন রাজধানী এবং বাংলা প্রদেশের সব অর্থনৈতিক কর্মকান্ডর কেন্দ্রবিন্দু। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ দিনে দিনে পিছিয়ে পড়েছিল। শিক্ষার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে অনগ্রসর পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছিল চরম হতাশা। তাই উন্নয়ন ও অধিকার প্রশ্নে পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের দাবি পূরণ এবং একইসঙ্গে কলকাতাকেন্দ্রিক ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেন। অর্থাৎ শুধু প্রশাসনিক কারণই নয়, ১৯০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করার পেছনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণও ক্রিয়াশীল ছিল। বঙ্গভঙ্গের উল্লিখিত কারণগুলো উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলের বিভক্তিকরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে উদ্দীপকের উক্ত ঘটনাটি অর্থাৎ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল।
বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলার হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনগ্রসর মুসলমানরা মনে করেছিল বঙ্গভঙ্গ হয়ে নুতন প্রদেশ হলে শিক্ষাদীক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের উন্নয়ন হবে এবং দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার অবসান ঘটবে। অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গের ঘটনাকে বাঙালি জাতির বিকাশমান সংহতি ও চেতনার ওপর আঘাত হিসেবে দেখে। পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে নতুন প্রদেশ হওয়ায় পূর্ববঙ্গের ঢাকাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি গড়ে ওঠে। তবে পশ্চিম বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়, বিশেষ করে ধনাঢ্য ভূস্বামীরা বঙ্গভঙ্গের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই সম্প্রদায়ের ওপর বঙ্গভঙ্গের এই বিপরীতধর্মী প্রভাবের ফলে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিষবৃক্ষ রোপিত হয়। হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য তীব্র আন্দোলন শুরু করে।
আপাতদৃষ্টিতে, বঙ্গভঙ্গ মুসলিমদের অনুকূলে একটি প্রশাসনিক উদ্যোগ হলেও প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে ব্রিটিশদের বড় একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। বঙ্গভঙ্গ ছিল তাদের 'ভাগ কর ও শাসন কর' নামে পরিচিত কূটকৌশলের অংশ। বাংলা প্রদেশকে ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার কৌশলে কলকাতাকেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করার সুযোগ লাভ করে। এছাড়া এর ফলে বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। অন্যদিকে মুসলমানদের মধ্যেও বিচ্ছিন্নতার বোধ ও কট্টরপন্থার জন্ম হয়। এটি বাংলার দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গভঙ্গ বাংলার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভক্তি উসকে দেয়। এমনকি বঙ্গভঙ্গ রদের পরেও, রাজনীতি এবং অধিকার আদায়ের প্রশ্নে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্যিকারের কোনো ঐক্য আর গড়ে ওঠেনি।

৭. বিশাল আয়তনে গঠিত অঞ্চলের প্রশাসক ছিলেন জনাব ইসমাঈল। তাঁর একার পক্ষে বিশাল অঞ্চলের উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হচ্ছিল। এর ফলে কর্তৃপক্ষ বিশাল অঞ্চল 'ক' ও 'খ' অঞ্চলে বিভক্ত করে। এতে 'ক' অঞ্চলের জনগণ খুশি হলেও 'খ' অঞ্চলের জনগণ তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে দুই অঞ্চলকে পুনরায় একত্রীকরণ করা হয়।
ক. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কাকে বলে?
খ. মুসলিম লীগ কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তির সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার মিল আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তিকরণ 'ক' অঞ্চলের জনজীবনে যে প্রভাব ফেলেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে প্রাদেশিক বিষয়গুলোর ওপর প্রাদেশিক সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্বকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলে।

খ. ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন করে গড়ে তোলা এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকেই ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় সর্বদিক হতে অবহেলিত ও বঞ্চিত হতে থাকে। ১৮৮৫ সালে সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গঠিত হলেও এটি অবহেলিত ও বঞ্চিত মুসলমানদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে ব্যর্থ হয়। মুসলমানদের এ অবহেলিত ও হীন অবস্থা হতে উদ্ধারকল্পে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের বিশেষ প্রয়োজন অনুভূত হয়। এ অনুভূতির সার্থক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুসলিম স্বার্থ সংরক্ষণের ধারক ও বাহক হিসেবে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তির সাথে আমার পাঠ্যবইয়ের ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের মিল রয়েছে।
১৯০৫ সালের পূর্বে ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গ প্রদেশেই ছিল আয়তনে এবং জনসংখ্যায় সর্বাপেক্ষা বৃহৎ। এর আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল, এবং লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি ৮০ লক্ষ। একজন গভর্নরের পক্ষে এত বড় প্রদেশ শাসন করা ছিল খুবই কষ্টকর। তাই এ প্রদেশকে ভেঙে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়, যা উদ্দীপকেও লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব ইসমাইল তার অধীনে বিশাল অঞ্চলের উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে অঞ্চলটিকে 'ক' ও 'খ' অঞ্চলে বিভক্ত করে। এতে 'ক' অঞ্চলের জনগণ খুশি হলেও 'খ' অঞ্চলের জনগণ তীব্র বিরোধিতা করে। এ ঘটনা মূলত বঙ্গভঙ্গকেই নির্দেশ করে। বৃহৎ আয়তন ও বিশাল জনসংখ্যার বঙ্গ প্রদেশকে একজন ব্রিটিশ শাসকের পক্ষে শাসন করা দূরহ ছিল। তাই ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা অনুযায়ী 'পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে একটি প্রদেশ এবং পশ্চিম বাংলা' নামে অন্য একটি প্রদেশ গঠিত হয়। বঙ্গ প্রদেশকে দুই প্রদেশে বিভক্ত করার কারণে মুসলমানরা খুশি হলেও ভারতীয় কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ অনেক অসন্তুষ্ট হয়। বঙ্গভঙ্গকে রদ করার জন্য হিন্দুরা আন্দোলন শুরু করে। এর এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করে। আর উদ্দীপকেও এ ঘটনারই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তিকরণ অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গ 'ক' অঞ্চলের তথা পূর্ব বাংলার জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
উদ্দীপকের বিশাল অঞ্চলের বিভক্তিকরণ ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গভঙ্গকে নির্দেশ করে। আর 'ক' অঞ্চল দিয়ে পূর্ব বাংলাকে বোঝানো হয়েছে। বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার জনজীবনে যে প্রভাব পড়েছিল উদ্দীপকের 'ক' অঞ্চলের জনগণের জীবনেও একই ধরনের প্রভাব পড়বে।
পূর্ব বাংলার জনগণের নিকট বঙ্গভঙ্গ ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। এর ফলে পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের মুসলিম সমাজের রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নতুন প্রদেশের প্রশাসনের প্রতিটি শাখায় নতুন প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা দেখা যায়। বাংলা প্রদেশ বিভক্ত হওয়ার ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। বঙ্গভঙ্গের অব্যবহিত পরেই ঢাকায় নতুন নতুন সুরম্য অট্রালিকা, হাইকোর্ট, সেক্রেটেরিয়েট, আইন পরিষদ ভবন, কার্জন হল প্রভৃতি নির্মিত হতে থাকে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মুসলমানদের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। মুসলমানদের ব্যবসা- বাণিজ্যেও অগ্রগতি অর্জিত হয়। এছাড়া ঢাকা নগরের পুনর্জন্ম ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। পূর্ব বাংলায় রেল লাইনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়। লর্ড কার্জন স্বয়ং আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রদেশ উন্নত কৃষ্টি ও ঐতিহ্য বলে বলীয়ান হয়ে পূর্ববঙ্গ শাসনব্যবস্থায় যোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গের জনজীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। অনুরূপভাবে উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভক্তিকরণও 'ক' অঞ্চলের জনজীবনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

৮. উপমহাদেশের শাসনের এক পর্যায়ে ব্রিটিশরা ভারত শাসন আইন নামে একটি আইন তৈরি করে। উক্ত আইনে সর্বপ্রথম ভারতের প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়। এই আইনে সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ও দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। এই আইনের ধারাবাহিকতায় এক সময় ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয়।
ক. দ্বৈতশাসন কাকে বলে?
খ. কেন ব্রিটিশ সরকার 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতি গ্রহণ করেছিল?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন আইনের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. এই আইনের ধারাবাহিকতায় ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয় বিশ্লেষণ করো।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৭৬৫ সালে বাংলা শাসনের জন্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে রবার্ট ক্লাইভ যে অভিনব শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন তাকে দ্বৈতশাসন বলে।

খ. ভারত উপমহাদেশে বসবাসরত প্রধান দুটি সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্যই ব্রিটিশরা 'ভাগ কর ও শাসন কর' নীতি গ্রহণ করেছিল।
ব্রিটিশরা ১৯০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করে। এ দীর্ঘ সময় তারা এ উপমহাদেশে নানা শোষণ, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের শাসননীতির উল্লেখযোগ্য দিক ছিল হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে নিজেদের শাসনকাল দীর্ঘস্থায়ী করা। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের গৃহীত বঙ্গভঙ্গ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের সাথে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক অগ্রগতির ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া, সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন এবং নতুন প্রদেশ গঠন করার মাধ্যমে এ আইন ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে।
উদ্দীপকে ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত একটি আইনের কথা বলা হয়েছে। যেখানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন, দুটি আলাদা প্রদেশ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এগুলো ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে পূর্ণ- স্বায়ত্তশাসনের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ আইন গৃহীত হয়। এ আইনে একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটিশ ভারতের সকল প্রদেশ ও ফেডারেশনে যোগদানে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্যগুলোকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক তালিকাভুক্ত বিষয়গুলোর ওপর প্রাদেশিক সরকারেরই পূর্ণ কর্তৃত্ব থাকবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আবার এ আইনে ব্রহ্মদেশকে (বার্মা) পৃথক করে উড়িষ্যা ও সিন্ধু নামে দুটি আলাদা(নতুন) প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে বর্ণিত আইনটিতে ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইনের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ফলাফল সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটায়। ফলে তারা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নেয়। এ বৈশিষ্ট্যের সূত্র ধরেই ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে হিন্দু-মুসলিম উভয়ই আলাদা জাতি, আর এ নীতি পাকিস্তান-ভারত নামক আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পথ তৈরি করে দেয়।
১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে তারা হিন্দু অধ্যুষিত প্রদেশগুলোতে মন্ত্রিসভা গঠন করে। কংগ্রেসের আচরণ মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। এরূপ পরিস্থিতিতে ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের অধিবেশনে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের (হিন্দু-মুসলিম আলাদাজাতি) ভিত্তিতে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ প্রস্তাবে সুস্পষ্টভাবে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি তোলা হয়। এ প্রেক্ষিতে ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে হিন্দু ও মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশগুলোতে উভয়সম্প্রদায় আলাদাভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৪৬ সালে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। তাছাড়া মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করায় মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেসেত্ম যায়। তারপরও তারা পরিকল্পনার প্রতি নমনীয় থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদানের ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু কংগ্রেস মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় তাদের স্বার্থগত বিষয়গুলোকে সমর্থন দেয়। এরূপ পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে নানা বিরোধ, দ্বন্দ্ব- সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দেওয়ায় শাসনব্যবস্থায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চরম আকার ধারণ করলে তা দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। ভারতের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিরোধী ভূমিকার কারণে ১৯৪৭সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত স্বাধীনতা আইন প্রণয়নে বাধ্য হয়। ফলে জন্ম নেয় ভারত-পাকিস্তান নামক দুটি আলাদা রাষ্ট্র।
পরিশেষে বলা যায়, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে উল্লিখিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতার দাবিতে রূপ লাভ করে। ফলে নানা ধারাবাহিক ঘটনার প্রেক্ষিতে জন্ম নেয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

৯. দক্ষিণ আফ্রিকা এমন একটি দেশ যেখানে বিদেশি শাসক দীর্ঘদিন শাসন করেছে। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘকাল সংগ্রাম করে। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা স্বাধীনতা লাভ করেছে।
ক. কত সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠন করা হয়েছিল? 
খ. ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন কীরূপ ছিল?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটির সাথে তোমার পঠিত কোন ঘটনার সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ভারতবর্ষের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে উক্ত ঘটনার পরিণতি বিশ্লেষণ করো।

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯০৬ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠন করা হয়েছিল।

খ. ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারত শাসন আইনে ভারতের প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়। এতে বলা হয়, কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে প্রদেশগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। দায়িত্বশীলরা তাদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার নিকট দায়ী থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং এর অনুগত প্রাদেশিক গভর্নর প্রদেশে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। তাই বলা যায় যে, ১৯৩৫ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় প্রাদেশিক শাসন ছিল অনেকটা নামমাত্র ও অর্থহীন।

গ. উদ্দীপকের ঘটনাটির সাথে আমার পঠিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে।
ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন বিদেশি অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। কিন্তু ভারতবর্ষের মানুষ নিরবে এ পরাধীনতাকে মেনে নেয়নি। দীর্ঘদিন সংগ্রাম চালিয়ে একসময় তারা স্বাধীনতা অর্জন করে। 
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষের মানুষ তাদের স্বাধীনতা হারায়। ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নানা কৌশল ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে এ উপমহাদেশে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। তারা কালক্রমে পুরো ভারতবর্ষের শাসনব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ভারতবর্ষের জনসাধারণ বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রাম শুরু করে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম মাইলফলক। ধীরে ধীরে ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটে এবং তারা স্বাধীনতার দাবিতে সংগঠিত হতে থাকে। উপমহাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভূমিকা পালন করেন। তাদের আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৭ সালে ভারতীয়দের স্বাধীনতা প্রদান করে। উদ্দীপকেও আমরা দেখতে পাই, দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘদিন বিদেশি শাসন কার্যকর ছিল। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে সেখানকার কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ দীর্ঘ সংগ্রামের পর নায্য অধিকার লাভ করে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনাটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ভারতবর্ষের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উক্ত ঘটনা অর্থাৎ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরিণতি ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সাধারণত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঙ্গরাজ্যগুলো পাকিস্তানের এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঙ্গরাজ্যগুলো ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এতে করে দুটি রাষ্ট্র নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়। পাকিস্তান অংশে বিভক্ত হয়ে একটি পূর্ব পাকিস্তান, অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান নামে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা নানাভাবে বিশেষ করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিগৃহীত ও শোষিত হতে থাকে।
১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর মূল প্রস্তাবই ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই মুসলিম লীগ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং ব্যাপক সামরিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে। এভাবে লাহোর প্রস্তাবকে এড়িয়ে যাওয়া এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার জন্য স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা না করায় এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা মূলত সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, সমাধান দিতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এর উজ্জ্বল প্রমাণ। ১৯৪৭ সালের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বিনা রক্তপাতে সম্ভব হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টির সময়ই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন স্বীকৃতি ছিল, তথাপি অনেকেই মনে করেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা তথা পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ নিহিত।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরিণতিই হলো আজকের বাংলাদেশ। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে।

১০. বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া ছিল ডাচ উপনিবেশ। এই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং নিজেদের দাবি- দাওয়া আদায়ের জন্য ইন্দোনেশিয়ার জনগণ সকল জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। কিন্তু দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে একপেশে নীতি বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের বঞ্চিত করার নীতি গ্রহণ করে। ফলে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের খ্রিষ্টানরা পৃথক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। কেননা তারা মনে করে প্রথম রাজনৈতিক দলটি দ্বারা তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ সম্ভব হবে না। 
ক. বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে মুসলমানদের সংগঠিত করেন কে?
খ. জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে তুমি কী জান ?
গ. উদ্দীপকে খ্রিষ্টানদের রাজনৈতিক দল গঠনের সাথে ব্রিটিশ ভারতের কোন রাজনৈতিক দল গঠনের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে উক্ত রাজনৈতিক দলের ভূমিকা আলোচনা করো।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে মুসলমানদের সংগঠিত করেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ।

খ. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বি-জাতি তত্ত্ব হলো ব্রিটিশ ভারতকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করার নির্ণায়ক ও আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ।
১৯৪০ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বি-জাতি তত্ত্বটি প্রদান করেন। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় উপমহাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করার কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু ও মুসলিম দুইটি আলাদা জাতি। তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা। অতএব, তারা কখনো এক হতে পারে না। সুতরাং, দুটি জাতিকে আলাদা করে মুসলমানদের আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তার এ ঘোষণাটি ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে ‘দ্বি-জাতি তত্ত্ব' নামে খ্যাত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত খ্রিষ্টানদের রাজনৈতিক দল গঠনের সাথে ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম লীগ দল গঠনের সাদৃশ্য রয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, ডাচ শাসন থেকে মুক্তি পেতে ইন্দোনেশিয়ার সমগ্র জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। কিন্তু দলটি পূর্ব তিমুরের সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের স্বার্থের ব্যাপারে ছিল উদাসীন। ফলশ্রুতিতে পূর্ব তিমুরের খ্রিষ্টানরা তাদের স্বার্থ আদায়ে একটি পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন করতে বাধ্য হয়। ব্রিটিশ ভারতের মুসলিম লীগ গঠনের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি লক্ষ করা যায়।
১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলে তারা ভারতবাসীর আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের নিকট তুলে ধরে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই দলটি সমগ্র ভারতবাসীর সমর্থন লাভে সচেষ্ট হয়। কিন্তু ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলে কংগ্রেসের অধিকাংশ হিন্দু নেতা এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করে এবং বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা-হাঙ্গামা। হিন্দু সম্প্রদায়ের এমন আক্রমণাত্মক আচরণে মুসলমানরা বুঝতে পারে কংগ্রেস মুসলিম স্বার্থের অনকূল কোনো দল নয়। এমতাবস্থায় অনগ্রসর ও অবহেলিত মুসলমানদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রগতিশীল নেতৃস্থানীয় মুসলমানরা একটি রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের খ্রিষ্টানদের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্য ও মুসলিম লীগ গঠনের প্রেক্ষাপট অভিন্ন।

ঘ. পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে উক্ত রাজনৈতিক দল তথা মুসলিম লীগের অবদান অসামান্য।
মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে উপমহাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দলটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে দলটি বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সচেষ্ট হয়। পরবর্তীকালে ১৯০৯ সালে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন, ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ চুক্তি, ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশনে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৪০ সালে দলটি ভারতবর্ষের সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করে। এই লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তি ছিল জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব। এ দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলমানরা তাদের পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ১৯৪২ সালের ক্রিপস মিশন, ১৯৪৬ সালের মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্বের কিছুটা পরিবর্তন সাপেক্ষে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালে ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটি আলাদা রাষ্ট্র জন্মলাভ করে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, উপমহাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন তথা পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে মুসলিম লীগের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post