HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. 'চ' জনগোষ্ঠী একই ভূখ-, ভাষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও অভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষার অধিকারী। কিন্তু তারা বিদেশি শক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাতন্ত্রবোধ ও ঐক্যবোধের জন্ম দেয় এবং তারা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়। নানা আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়। তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করে।
ক. মূল্যবোধ কী? 
খ. আইনের শাসন বলতে কী বোঝায়?
গ. 'চ' জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্রবোধের সাথে তোমার পাঠ্যভুক্ত কোন বিষয়ের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়ের সাথে সাম্যের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর। 

◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. মূল্যবোধ এমন একটি মানদ- যা ভালো-মন্দ নির্ধারণের মাধ্যমে মানুষের আচরণকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

খ. আইনের শাসন হলো রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিবিশেষ, যেখানে সরকারের সব কার্যক্রম আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং যেখানে আইনের স্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ব্যবহারিক ভাষায় আইনের শাসনের অর্থ হলো, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সর্বদা আইন অনুযায়ী কাজ করবে এবং রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের অধিকার লজ্জিত হলে আদালতের মাধ্যমে সে তার প্রতিকার পাবে। আইনের চোখে সবাই সমান এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে- এটাই আইনের শাসনের বিধান।

গ. 'চ' জনগোষ্ঠীর স্বাতমত্ম্র্যবোধের সাথে আমার পাঠাভুক্ত জাতীয়তাবোধের মিল রয়েছে। 
জাতীয়তা হলো ভাষা ও সাহিত্য, চিন্তা, প্রথা ও ঐতিহ্যের বনে আবদ্ধ এক জনসমষ্টি, যা অনুরূপ বন্ধনে আবদ্ধ অন্যান্য জনসমষ্টিকে নিজেদের থেকে পৃথক মনে করে। আর এ বোধ থেকে মানুষ নিজেদের স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জাতীয়তার মহান আদর্শ বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতীয়তার অনুঘটক হিসেবে দেশপ্রেম মানুষকে ব্যক্তিগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ গঠনের আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান করেছে। জাতীয়তা একটি মানসিক ধারণা, মনন ও চিন্তার এমন এক অবস্থা যা কোনো জনসমষ্টিকে অন্য জনসমষ্টি থেকে আলাদা করে এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে। জাতীয়তাবোধ থেকে মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উদ্দীপকের বর্ণনায়ও এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, 'চ' জনগোষ্ঠী একই ভূখ-, ভাষা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও অভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষার অধিকারী। কিন্তু তারা বিদেশি শক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাতন্ত্রবোধ ও ঐক্যবোধের জন্ম দেয় এবং তারা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়। নানা আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে তারা ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করে। অর্থাৎ ' জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা লাভের পেছনে জাতীয়তাবাদ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত 'চ' জাতির স্বাতমত্ম্র্যবোধের সাথে জাতীয়তাবোধের মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের বিষয়ের সাথে অর্থাৎ স্বাধীনতার সাথে সাম্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। 
অপরের অধিকার বা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে স্বীয় ইচ্ছেমতো কাজ করার অধিকারকেই বলা হয় স্বাধীনতা। স্বাধীনতা হলো সভ্য সমাজের অপরিহার্য উপাদান। আর সাম্য বলতে এমন এক সামাজিক পরিবেশকে বোঝায়, যেখানে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান সুযোগ সুবিধা লাভ করে। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন স্বাধীনতা। স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না হলে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় না। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাম্য ও স্বাধীনতা একই সাথে বিরাজ না করলে অধিকার ভোগ করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতা ও সাম্য একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক। 
স্বাধীনতা ও সাম্য একই সাথে বৃহত্তর পরিসরে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাধীনভাকে অর্থবহ করতে হলে সমাজে সাম্য থাকতে হবে। সাম্য না থাকলে সমাজজীবন পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারবে না। বস্তুত সাম্য ছাড়া যেমন স্বাধীনতা হয় না, তেমনি স্বাধীনতা ছাড়া সামাও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে স্বাধীনতা ও সাম্যের একই রূপ বলে প্রতীয়মান হয়। মূলত স্বাধীনতা ও সাম্য হলো একই মুদ্রার বিপরীত দিক। সাম্যের অনুপস্থিতি থেকেই স্বাধীনতার দাবির জন্ম হয়। উদ্দীপকেও দেখা যায়, বিদেশি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন এবং বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে 'চ' সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। শাসকগোষ্ঠী উক্ত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করলে তারা হয়তো স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতো না। তারা এটা করেছে সাম্যের অনুপস্থিতির কারণে। আলোচনা শেষে বলা যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বাধীনতা ও সাম্য পৃথক দুটি বিষয় নয় বরং একই আদর্শের দুটি দিক মাত্র।

২. 'ক' রাষ্ট্রের জনগণ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান, ন্যায্য মজুরি প্রদান ও বেকারত্ব দূরীকরণ ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকার সংরক্ষণ করেন। ফলে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও জীবনে পূর্ণতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ক. আইন কী?
খ. মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?
গ. 'ক' রাষ্ট্রের জনগণ কোন ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করছেন? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্বাধীনতা রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে বিশ্লেষণ কর।

◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইন হলো সমাজদ্বীকৃত ও রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত নিয়মকানুনের সমষ্টি, যা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. মূল্যবোধ এমন একটি মানদ- যা ভালো-মন্দ নির্ধারণের মাধ্যমে মানুষের আচরণকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। 
মানুষের সামাজিক সম্পর্ক ও আচার-আচরণ প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সব সমাজেই বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ প্রচলিত থাকে। এ সব বিধিনিষেধ অর্থাৎ ভালো-মন্দ, ঠিক-বেঠিক সম্পর্কে সমাজের সদস্যদের যে ধারণা তাই হলো মূল্যবোধ। মূল্যবোধ মানুষের জীবনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সামাজিক জীবনকে সুদৃঢ় করা এবং ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে যথার্থ সম্পর্ক নির্ণয়ে অবদান রাখে।

গ. 'ক' রাষ্ট্রের জনগণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করছে। 
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী জীবিকা নির্বাহের উপযুক্ত পরিবেশ প্রাপ্তি এবং দৈনন্দিন অভাব ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তিকে বোঝায়। ব্রিটিশ রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হ্যারম্ভ জোসেফ লাস্কির ঐধৎড়ষফ ঔড়ংবঢ়য খধংশর. মতে, 'অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে প্রতিনিয়ত বেকারত্বের আশঙ্কা ও আগামীকালের অভাব থেকে মুক্তি এবং দৈনিক জীবিকার্জনের সুযোগ সুবিধাকে বোঝায়। যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া, ন্যায্য মজুরি লাভ, বেকার ও বৃদ্ধ বয়সে ভাতা পাবার অধিকার, অক্ষম অবস্থায় রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রতিপালন প্রভৃতি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব নয়। এ স্বাধীনতা ছাড়া অন্যান্য স্বাধীনতা সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত, জাতীয় প্রাকৃতিক প্রভৃতি. অর্থহীন। কারণ প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় যে কারণে তার কাছে অন্যান্য স্বাধীনতা অর্থবহ হয়না। উদ্দীপকে দেখা যায়, 'ক' রাষ্ট্রের জনগণ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান, ন্যায্য মজুরি ও বেকারত্ব দূরীকরণ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকার সংরক্ষণ করে। ফলে সে রাষ্ট্রে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও জীবনে পূর্ণতা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য থেকেই বলা যায়, 'ক' রাষ্ট্রের জনগণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা উপভোগ করছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত স্বাধীনতা অর্থাৎ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে কথাটি যথার্থ।
জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকারকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কেননা ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য সবার আগে প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। রাষ্ট্রের শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করার স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। অধ্যাপক লাস্কির মতে, 'রাষ্ট্রের শাসনকার্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার অধিকারকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলে'। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যক্তির গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ভোটদান, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা, সরকারি চাকুরি লাভ প্রভৃতি রাজনৈতিক স্বাধীনতা। 
রাজনৈতিক স্বাধীনতা তখনই অর্জিত হয় যখন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা এবং সুযোগ-সুবিধা অর্জন করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকরা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয় এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে সচেষ্ট হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত না হলে। শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকলে জনগণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। ফলে তারা নিজেদের দেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সংশ্লিষ্ট করতে উৎসাহী হয়। সেই সাথে তারা রাষ্ট্রের প্রতি অর্থনৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো যথাযথভাবে পালন করে। সে জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ধরনের স্বাধীনতাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া প্রবাল তার শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছে প্রিয়। সে প্রতিদিন সময়মত ক্লাসে আসে। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার আগে সে প্রতিদিন তার ক্লাসরুমের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করে রেখে যায়। বিগত ভয়াবহ বন্যার সময় সে ও তার বন্ধুরা বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যায় এবং বিতরণ করে।
ক. সাম্য কী?
খ. দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলতে কী বোঝায়? 
গ. প্রবালের কর্মকান্ড কোন ধরনের মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমাজে মানবতাবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লিখিত মূল্যবোধের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সাম্যের অর্থ সুযোগ-সুবিধাদির' সমতা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থাকে সাম্য বলে।

খ. দুটি কক্ষ বা পরিষদ নিয়ে গঠিত আইনসভাকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলে। 
এ ধরনের আইনসভায় 'নিম্নকক্ষ' এবং 'উচ্চকক্ষ' নামে পৃথক দুটি পরিষদ থাকে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নিম্নকক্ষ গঠিত হয় এবং তা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষমতার অধিকারী। বিশ্বের বেশিরভাগ আইনসভার উচ্চকক্ষই পরোক্ষভাবে নির্বাচিত বা মনোনীত আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গ নিয়ে গঠিত হয়। উচ্চকক্ষ আইনসভার নিম্নকক্ষের ক্ষমতা ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডা, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে।

গ. প্রবালের কর্মকান্ড নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়েছে। 
নীতি ও উচিত-অনুচিত বোধ হলো নৈতিক মূল্যবোধের উৎস। নৈতিক মূল্যবোধ হচ্ছে সেসব মনোভাব এবং আচরণের সমষ্টি যা মানুষ সবসময় ভালো, কল্যাণকর ও অপরিহার্য বিবেচনা করে মানসিকভাবে তৃপ্তিৰোধ করে। সত্য কথা বলা, মিথ্যা কথা না বলা, অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে। বিরত রাখা ও অন্যকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া, দুঃস্থ ও বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং অসহায়কে সাহায্য করা প্রভৃতি নৈতিক মূল্যবোধের অন্তর্গত। নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষকে সবাই পছন্দ করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রবাল তার শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছে প্রিয়। সে নিয়মমতো ক্লাসে আসে এবং প্রতিদিন ক্লাস থেকে ফেরার সময় ক্লাসরুমের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করে রেখে যায়। বন্যার সময় সে ও তার বন্ধুরা বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে। প্রবালের এসব কাজ নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত। তাই বলা যায়, প্রবালের কর্মকান্ড নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. সমাজে মানবতাবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে উল্লেখিত মূল্যবোধ অর্থাৎ, নৈতিক মূল্যবোধের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
দায়িত্বশীলতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও ভালোমদের বোধ থেকে নৈতিক মূল্যবোধের জন্ম হয়। পরিবার ও সমাজ থেকে পাওয়া শিক্ষা মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের উৎস। নৈতিক মূল্যবোধের কারণে মানুষ অভিন্ন কল্যাগের বিষয়ে সচেতন থাকে। ফলে সমাজে মানবতাবোধ জাগ্রত হয়। নৈতিক মূল্যবোধের তাগিদেই ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির এবং সমাজের প্রতি ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত হয়। সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির সৃষ্টি হয়। এ ভালোবাসা ও সম্প্রীতি ব্যক্তি ও সমাজকে সুখ এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। দৃষ্টান্ত হিসেবে ইজাজ উদ্দিন আহমেদ কায়কোবাদের কথা বলা যায়। তিনি রানা পস্নাজা ধ্বংসের পর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছিলেন। ধ্বংসসত্মূপের ভেতরে আটকা পড়া এক গার্মেন্টস কর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়ে তিনি মারাত্মকভাবে অগ্নিসদ্ধ হন। বলিষ্ঠ নৈতিক মূল্যবোধের কারণেই তাঁর মধ্যে এমন মানবতাবোধ জাগ্রত হয়েছিল। 
নৈতিক মূল্যবোধ এভাবে মানুষকে একে অপরের দুঃখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে অনুপ্রাণিত করে। মূল্যবোধ সমাজব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল করে সমাজে স্থিতিশীলতা আনে। মানুষ তার মূল্যবোধের তাগিদেই দেশ ও সমাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন ত্যাগ স্বীকার করে।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, নৈতিক মূল্যবোধের মাধ্যমেই ব্যক্তির মধ্যে মানবতাবোধ জাগ্রত হয়, যা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। তাই বলা যায়, সমাজে মানবতাবোধ জাগ্রত করার জন্য নৈতিক মূল্যবোধের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. হোগল ডাঙ্গা গ্রামে 'সবুজ সংঘ' নামে যুবকদের একটি সংগঠন আছে। উক্ত সংগঠনের একটি লিখিত নীতিমালা আছে। সংগঠনটির অধিকাংশ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালাটি পরিবর্তনও করা যাবে। সবাই এই নীতিমালাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। সংগঠনের সদস্যদের মূল কাজ মানুষের মধ্যে নৈতিকতা জাগ্রত করা, অসহায় মানুষের সেবা করা ও সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা।
ক. স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও।
খ. ধর্ম কীভাবে আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠনটির কাজের সাথে সরকারের কোন বিভাগের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'সবুজ সংঘের সদস্যদের মতো দেশের সবাই আইন মেনে চললে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।

◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের অধিকার উপভোগ করাই স্বাধীনতা।

খ. ধর্ম আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
প্রাচীন সমাজব্যবস্থায় ধর্মের একচেটিয়া প্রভাব ছিল এবং মানুষের জীবন অনেকটা ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতো। যেমন- প্রাচীন কালে রোমের আইনকানুন কিংবা মধ্যযুগের নগররাষ্ট্রের আইনকানুন ধর্মের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের ব্যক্তিগত আইন ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ইহুদীদের আইনও ধর্মভিত্তিক। বর্তমানে ধর্ম ও ধর্মীয় গ্রন্থের আলোকে অনেক আইন প্রণীত হচ্ছে। যেমন- বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনটি কুরআন ও হাদীসের আলেকে প্রণীত হয়েছে। আবার হিন্দু বিবাহ, সামাজিক সম্পর্ক ও উত্তরাধিকার আইনগুলো হিন্দুধর্মের বিধি-বিধানের সাথে সংগতি রেখে প্রণীত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, ধর্ম আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংগঠনটির কাজের সাথে সরকারের আইন বিভাগের কাজের সাদৃশ্য রয়েছে। 
সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইন বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিভাগই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সার্বিক নিয়ম-নীতি এবং আইন প্রণয়ন করে থাকে। এটি সরকারের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে আইন বিভাগের সদস্যরা নির্বাচিত হয়। আইন বিভাগের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশ পরিচালনার জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করা এবং পুরোনো আইনের সংশোধন, পরিমার্জন বা বিয়োজন করা। উদ্দীপকের সংগঠনটির কালেও এর প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত 'সবুজ সংঘ' সংগঠনটি অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালা তৈরি করে। আবার সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের আলোকে তা পরিবর্তনও করার ব্যবস্থাও রয়েছে। বাংলাদেশের আইন বিভাগের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দেশ পরিচালনার জন্য আইন বা নীতিমালা তৈরি করেন। এক্ষেত্রে অধিকাংশের সম্মতির ভিত্তিতে নীতিমালা তৈরি করা হয়। আবার প্রণীত কোনো আইনের সংশোধন সদস্যের। বিয়োজন করার প্রয়োজন হলে আইনসভার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে তা গৃহীত হয়। এভাবে আইন বিভাগ আইন প্রণয়ন, অনুমোদন, পরিবর্তন, বাতিল করার সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠনটির কাজের মধ্যে আইন বিভাগের কাজেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'সবুজ সংঘের সদস্যরা যেভাবে তাদের প্রণীত নীতিমালা মেনে চলছে, সেভাবে যদি দেশের সবাই চলে তবে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
সাম্য বলতে সমতা এবং পারস্পরিক অভিন্নতাকে বোঝায়। অর্থাৎ জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ সুবিধা লাভের অধিকারকে সাম্য বলা হয়। আর আইন মানুষকে সাম্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। কারণ আইনের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে সব নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে সমান বলা হয়েছে।
আবার দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। সবাই যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে এবং আইন বিরুদ্ধ কোনো কাজ না করে তবে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। আবার আইনের বিধানগুলো মানুষের সর্বাধিক কল্যাণের কথা চিন্তা করেই প্রণীত হয়। কাউকে বঞ্চিত করা বা কাউকে বেশি সুযোগ প্রদান করা আইনবিরোধী কাজ। যেমন- বাংলাদেশ সংবিধানে আইন ও সাম্যের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৯১. অনুচ্ছেদে সব নাগরিকের সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে। আবার সংবিধানের ২৬-৪৩ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত অনেকগুলো মৌলিক অধিকার ভোগের কথা বলা হয়েছে। এখন সবাই যদি সংবিধানের এ ধারাগুলো মেনে চলে, তাহলে সমানভাবে অধিকার উপভোগ করতে পারবে। এর ফলে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সবুজ সংঘের সদস্যদের মতো দেশের প্রত্যেক মানুষ যদি আইন মেনে চলে তবে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

৫. রাহেলা প্রতিদিন সকাল ৮.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত দিনমজুরের কাজ করে। কাজ শেষে মজুরি নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে তাকে কম মজুরি দেয়। রাহেলা প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষ তাকে কর্মচ্যুত করার হুমকি দেয়। রাহেলা আশাহত না হয়ে যুক্তিসংগত দাবি আদায়ে ধৈর্য সহকারে শ্রমিকদের সংগঠিত করে। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবির মুখে ন্যায্য মজুরি দিতে বাধ্য হয়।
ক. আইন কোন ভাষার শব্দ? 
খ. মৌলিক অধিকার কাকে বলে?
গ. রাহেলা কোন ধরনের সাম্য ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. রাহেলার দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় কী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জীবনে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করো।

◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইন ফারসি ভাষার শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা নীতি।

খ. মৌলিক অধিকার হলো নাগরিক জীবনের বিকাশের জন্য অপরিহার্য সে সব শর্ত যেগুলো সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত থাকে এবং যা সরকারের জন্য অলজ্ঞানীয়।
নাগরিকের সুসভ্য জীবনযাপনের জন্য মৌলিক অধিকারগুলো অপরিহার্য। সংবিধানের মাধ্যমে নাগরিকরা এ অধিকার লাভ করে। মৌলিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলা ও কথা বলার অধিকার, কাজ করা এবং ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার প্রভৃতি। এ অধিকারগুলো সংবিধানে সুস্পষ্ট ও সুরক্ষিত। একমাত্র রাষ্ট্রঘোষিত জরুরি অবস্থার সময় ছাড়া সরকার মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৬ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের দিনমজুর রাহেলা অর্থনৈতিক সাম্য ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 
অর্থনৈতিক সাম্য বলতে উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাতে বোঝায়। অর্থনৈতিক সাম্যের ক্ষেত্রে মানুষ জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও লৈঙ্গিক পরিচয় নির্বিশেষে কাজ করার ও ন্যায্য মজুরি পাবার সুবিধা লাভ করে। অর্থনৈতিক সাম্যের মূল কথা হচ্ছে যোগ্যতা অনুযায়ী সমতার ভিত্তিতে সম্পদ ও সুযোগের বণ্টন। ব্রিটিশ রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হ্যারড জোসেফ লাস্কির মতে, 'ধন বৈষম্যের সাথে অর্থনৈতিক সাম্য অসঙ্গতিপূর্ণ হবে না যদি এই বৈষম্য দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। অর্থনৈতিক সাম্য বলতে কেবল সম্পদ সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়াকে বোঝায় না, বরং জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষের তাদের সম্পাদিত কাজের ন্যায্য মজুরি পাওয়ার সুবিধাকে বোঝায়। এর মূলকথা হচ্ছে, যোগ্যতা অনুযায়ী সম্পদ ও সুযোগের বণ্টন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রাহেলা প্রতিদিন ৯ ঘন্টা দিনমজুরের কাজ করে। সমান কাজ করার পরেও কর্তৃপক্ষ তাকে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম মজুরি দেয়। রাহেলার প্রতি কর্তৃপক্ষের এ আচরণে তার অর্থনৈতিক সাম্য লজ্জিত হয়েছে। তাই বলা যায়, পুরুষের সমান কাজ করেও কম মজুরি পাওয়ায় রাহেলার অর্থনৈতিক সাম্য ও সুযোগ-সুবিধা লাভের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

ঘ. রাহেলার দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় অর্থনৈতিক সাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, রাহেলা তার যুক্তিসংগত দাবি আদায়ে ধৈর্য সহকারে সকলকে সংগঠিত করেছে। এর ফলে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবির মুখে রাহেলাকে ন্যায্য মজুরি দিতে বাধ্য হয়। এভাবে রাহেলার দাবি বাস্তবায়িত হওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সাম্য এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জীবনে অর্থনৈতিক সাম্যের ও সুশাসনের প্রভাব অপরিসীম। অর্থনৈতিক সাম্য বলতে দক্ষতা ও যোগ্যতানুসারে আয় ও সম্পদে প্রত্যেক ব্যক্তির সুযোগ-সুবিধা লাভের সমতাকে বোঝায়। অর্থনৈতিক সাম্য রাষ্ট্রের অর্থনীতি সচল করে এবং এর ফলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাদের যোগ্যতানুসারে সমান সুযোগ লাভ করে। ফলে রাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেকটা হ্রাস পায়। অর্থনৈতিক সাম্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির হার কমাতে ভূমিকা রাখে, আবার কর্মক্ষেত্রে যোগ্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তোলে। আর দেশের অর্থনীতি উন্নত হলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়। তাছাড়া অর্থনৈতিক সাম্য সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে।
ওপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৬. মি. হিরণ 'A' রাষ্ট্রের নাগরিক। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত 'A' রাষ্ট্রের জনগণ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই জীবনযাপন করে। তারা রাষ্ট্রের আইন-কানুন মেনে চলে না, সরকারি আদেশ-নির্দেশ অমান্য করে যে যার ইচ্ছামতো জীবনযাপন করে। এতে করে রাষ্ট্রে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে।
ক. অধ্যাদেশ কে জারি করেন?
খ. সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়? 
গ. মি. হিরণের দেশে কোন সমস্যাটি প্রকট হয়ে উঠেছে। ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. মি. হিরণের দেশের সমস্যা সমাধানে কী বাস্তবায়ন করা জরুরি এবং কেন? মূল্যায়ন করো।

◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ ১. অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করেন।

খ. যে চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংকর মানুষের সামাজিক আচার ব্যবহার ও কর্মকা-কে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তার সমষ্টিকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে।
আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ স্টুয়ার্ট সি এর মতে, সামাজিক মূল্যবোধ হলো সে সব রীতিনীতির সমষ্টি যা ব্যক্তি সমাজের কাছ থেকে আশা করে এবং সমাজ ব্যক্তির কাছ থেকে লাভ করে। সামাজিক মূল্যবোধ সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি বা মানদ-। সামাজিক শিষ্টাচার, সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা, সহনশীলতা, শৃঙ্খলাবোধ, শ্রমের মর্যাদা, দানশীলতা, আতিথেয়তা, জনসেবা, আত্মত্যাগ প্রভৃতি মানবিক গুণাবলির সমষ্টি হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ। সামাজিক মূল্যবোধের মাপকাঠিতেই মানুষের আচরণ ও কাজের ভালোমন্দ বিচার করা হয়।

গ. মি. হিরণের দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। 
কোনো রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রে আইন-শৃঙ্খলা বজায় না থাকলে সমাজ ও ব্যক্তির নিরাপত্তার অভাব দেখা দেয় এবং সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে রাষ্ট্রে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকের ‘অ’ রাষ্ট্রেও আইন-শৃঙ্খলা পরিসি্হতির অবনতির বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকে দেখা যায়, মি. হিরণের দেশের জনগণ রাষ্ট্রের আইন মেনে চলে না, সরকারের আদেশ নির্দেশ অমান্য করে যে যার ইচ্ছামতো জীবনযাপন করে। ফলে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। মি. হিরণের দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোনো রাষ্ট্রে যখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে তখন রাষ্ট্রের জনগণ স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের আইন-কানুনের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধা থাকে না। তারা সব সময় নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অরাজকতা সৃষ্টি করে। সবাই অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। ক্ষমতাশীলরা প্রভাব ঘটিয়ে সাধারণ জনগণের জীবনকে বিপর্যন্ত করে তোলে। এরকম পরিস্থিতিতে আইন ও বিচার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। সমাজে, অন্যায়, অবিচার, খুন, রাহাজানি, দুর্নীতিসহ সব প্রকার অনৈতিক কাজ বৃদ্ধি পায়। উদ্দীপকেও এরূপ পরিস্থিতির চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. মি. হিরণের দেশের সমস্যা সমাধানে আইনের শাসন বাস্তবায়ন করা জরুরি। 
প্রতিটি রাষ্ট্রই কিছু নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের এসব নিয়মকানুনই আইন। তবে একটি রাষ্ট্রে আইন থাকাই মূল কথা নয়, বরং সেখানে আইনের শাসন থাকতে হবে। অর্থাৎ সব কিছুর ওপরে আইনের প্রাধান্য থাকতে হবে। আর সবকিছুর ঊর্ধ্বে আইনের প্রাধান্য থাকা এবং আইনের চোখে সবার সমান হওয়াই আইনের শাসন। রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। ধনী-গরিব, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। কেউ বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নয়। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এটাই আইনের শাসনের মূল কথা। আইনের শাসন ব্যক্তির অধিকার এবং সাম্য ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।
উদ্দীপকের মি. হিরণের রাষ্ট্রের জনগণ আইন মানে না এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ইচ্ছামতো জীবন-যাপন করে। এতে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। হিরণের দেশের এ সমস্যা সমাধানের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নাগরিক অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হলো আইনের শাসন। তবে আইনের শাসন কথাটি শুধু মুখে মুখে স্বীকার বা সংবিধানে সন্নিবেশিত করলেই হবে না, বরং এর প্রয়োগও ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রের শাসন ও বিচার বিভাগ যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুষ্টের দমন করতে পারে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এতে করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উদ্দীপকের অরাজকতা কবলিত রাষ্ট্রেও এ ব্যবস্থার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব।
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মি. হিরণের রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেননা আইনের শাসন না থাকলেই সমাজ ও রাষ্ট্রে অরাজকতা সৃষ্টি হয়।

৭. বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয়। এরপর দেশটিতে কিছু সময়ের জন্য সামরিক শাসন চললেও বেশিরভাগ সময় গণতান্ত্রিক শাসন চলেছে। এর ফলে আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার ও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মোটামুটি কার্যকর থাকার কারণে মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে এবং এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।
ক. Liberty শব্দটি ল্যাটিন কোন শব্দ থেকে এসেছে? 
খ. মূল্যবোধ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আলোকে আইন ও নৈতিকতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগের ফলে কীসের প্রতি সম্মানজ্ঞাপন করে এবং এর রক্ষাকবচসমূহ বিশ্লেষণ করো। 

◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. Liberty শব্দটি ল্যাটিন 'Liber' শব্দ থেকে এসেছে।

খ. মূল্যবোধ হলো সমাজের মানুষের মৌলিক বিশ্বাস, সামাজিক রীতিনীতি ও আচার-আচরণের সমষ্টি।
মানুষের সামাজিক সম্পর্ক ও আচার-আচরণ প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্যে সব সমাজেই বিভিন্ন ধরনের বিধি নিষেধ প্রচলিত থাকে। এ সকল বিধি নিষেধ অর্থাৎ ভালো-মন্দ, ঠিক-বেঠিক, কাঙি্ক্ষত-অনাকাঙি্ক্ষত বিষয় সম্পর্কে সমাজের সদস্যদের যে ধারণা তাই হলো মূল্যবোধ।

গ. আইন ও নৈতিকতার মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। 
আইন ও নৈতিকতার লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং নৈতিকতা মানুষের মনোজগতকে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন হচ্ছে সামাজিক ন্যায়বোধের প্রতিফলন। মানুষের নৈতিকতাবোধ রাষ্ট্রীয় আইনকে প্রভাবিত করে। 
ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা যেমন অনেক সময় আইনে পরিণত হয়, তেমনি আইনও অনেক সময় সুনীতি প্রতিষ্ঠিত করে। উদাহরণস্বরূপ সতীদাহ প্রথার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। পূর্বে হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথা রীতিসম্মত ছিল। কিন্তু বর্তমানে আইনের মাধ্যমে তা দ-ণীয় ও রীতিবিরুদ্ধ। আইনের মতো নৈতিকতাও সমাজ এবং রাষ্ট্র নির্ভর। সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে নৈতিক ধারণা ও আদর্শেরও পরিবর্তন ঘটে।
সুতরাং, আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আইন ও নৈতিকতা একে অপরের পরিপূরক। যখন কোন আইন নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে তখনই তা জনগণ কর্তৃক সমাদৃত হয়।

ঘ. বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগের ফলে স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করে।
স্বাধীনতা ভোগের জন্য চাই স্বাধীনতাকে সুরক্ষা করা। স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য যে সকল বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে। আইন স্বাধীনতার পূর্বশর্ত এবং প্রধান রক্ষাকবচ। আইন স্বাধীনতা ভোগের পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং স্বাধীনতাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার গঠন, পরিচালনা, আইন প্রণয়নে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে। এতে জনগণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। আইনের অনুশাসন হলো আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। আইনের শাসন থাকলেই স্বাধীনতা সকলের নিকট সমভাবে উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ফলে বিভাগীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি ব্যক্তি স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ফলে কোনো একটি বিভাগের স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটানো সম্ভব হয়। এর ফলে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে পারে। এতে বিভাগীয় স্বাধীনতার সাথে সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতাও নিশ্চিত হয়। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হলে সরকারের ক্ষমতা একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট পুঞ্জিভূত থাকে না। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা হ্রাস পায়।
এছাড়াও স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ ও অটুট রাখার জন্য সংবিধানে মৌলিক অধিকারের সমাবেশ, দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সদা জাগ্রত জনমত প্রভৃতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মানুষের জন্মগত অধিকার হলো স্বাধীনতা। এটি সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার পাশপাশি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সুপ্রশস্ত করে। এ স্বাধীনতাকে ভোগ করতে হলে একে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আর আলোচিত বিষয়গুলো যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা সম্ভব।

৮. 'ক' এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে পুলিশ সুনির্দিষ্ট চার্জ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করে না এবং বিচার বহির্ভূতভাবে কাউকে বন্দি করে না। পবিত্র কুরআন ঐ রাষ্ট্রের আইনের অন্যতম উৎস।
ক. 'Demos' শব্দের অর্থ কী?
খ. "নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি' বলতে কী বোঝ? "
গ. উদ্দীপকে আইনের যে উৎসটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি ছাড়া অন্য উৎসসমূহ ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. ‘ক’ রাষ্ট্রে আইনের শাসন বিদ্যমান বিশ্লেষণ করো। 

◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. গ্রিক 'Demos' শব্দের অর্থ জনগণ।

খ. সরকারের তিনটি বিভাগ তথা আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি' বলে।
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুযায়ী সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইন প্রণয়ন, শাসন বিষয়ক এবং বিচারের ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়া হয়। এক বিভাগ অন্য বিভাগের ক্ষমতায় কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এই নীতির পূর্ণ প্রয়োগ করা হলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ চরম ক্ষমতা পেয়ে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থার সৃষ্টি যেন না হয় সে জন্য সরকারের বিভাগগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। এটিই "নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি' নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে 'ক' রাষ্ট্রের আইনের অন্যতম উৎস হিসেবে পবিত্র কুরআনের কথা বলা হয়েছে, যা মুসলমানদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। ধর্মগ্রন্থের বিধি-বিধানকে আইন হিসেবে গ্রহণ করার বিষয়টি আইনের উৎস হিসেবে ধর্মকে নির্দেশ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রে ধর্মকে আইনের অন্যতম উৎস হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে।
ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় প্রথা আইনের অন্যতম উৎস। তবে ধর্ম ছাড়াও আইনের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস রয়েছে। সামাজিক প্রথা আইনের প্রাচীন একটি উৎস। সুদীর্ঘকাল ধরে যেসব আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি ও অভ্যাস সমাজের অধিকাংশ মানুষ পালন করে আসছে তাকে প্রথা বলে। যুক্তরাজ্যের সাধারণ আইনগুলো এরূপ প্রথার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বিচারকের রায় আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিচারকরা যখন দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে কোনো মামলা নিষ্পতি করতে অসমর্থ হন তখন নিজের বিবেক, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন আইন সৃষ্টি করেন এবং প্রয়োজনবোধে আইনের যথার্থতা বিশ্লেষণ করেন। পরবর্তী সময়ে ওই ধরনের মামলার একইরকম রায় দেওয়া হয় এবং তা কালক্রমে আইনে পরিণত হয়। আধুনিককালে আইনের প্রধান উৎস হচ্ছে আইন পরিষদ বা আইনসভা। আইনসভা জনমতের সাথে সঙ্গতি রেখে আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করে থাকে। রাষ্ট্রের। সংবিধানও আইনের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সংবিধানে স্পষ্টভাবে লিপিবন্ধ থাকে। সাংবিধানিক আইনের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যের আলোকে বলা যায়, রাষ্ট্রে আইনের শাসন বিদ্যমান।
আইনের শাসন বলতে আইনের চোখে সবার সমান হওয়া এবং আইনের প্রাধান্য বজায় থাকাকে বোঝায়। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি এবং ছোটবড় নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। কেউ বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নয়। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে- এটাই আইনের শাসনের বিধান।
আইনের শাসনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ সমান বলে গণ্য হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে সবার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ উন্মুক্ত থাকে। বিনা কারণে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়। অর্থাৎ কোনো দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান থাকলে সে দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত 'ক' এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করে না এবং বিচার বহির্ভূতভাবে কাউকে বন্দি রাখে না। বিষয়টি আইনের শাসনের উপস্থিতিকেই নির্দেশ করে। 'ক' রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আইনের শাসনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হওয়ায় বলা যায়, সেখানে আইনের শাসন বিদ্যমান।

৯. সমীর সাহেব একটি বইয়ের পা-ুলিপি প্রকাশনা সংস্থায় তামা দিয়ে বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি লক্ষ করলেন বাস ড্রাইভার অনুমোদিত গতি মানছে না। এ ব্যাপারে চালককে সতর্ক করলে চালক তাকে বলে সে স্বাধীন।
ক. আইনের প্রাচীন উৎস কোনটি? 
খ. স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সমীর সাহেবের ভূমিকা তোমার অধীত জ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'বাস চালক স্বাধীন' - মতামত দাও।

◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইনের প্রাচীন উৎস হলো প্রথা ও রীতিনীতি।

খ. সাধারণ অর্থে স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো কাজ করাকে বোঝায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা বলতে এ ধরনের অবাধ স্বাধীনতাকে বোঝায় না।
পৌরনীতি ও সুশাসনে স্বাধীনতা ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করাই হলো স্বাধীনতা। অর্থাৎ স্বাধীনতা হলো এমন সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ, যেখানে কেউ কারও ক্ষতি না করে সকলেই নিজের অধিকার ভোগ করে। স্বাধীনতা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে এবং অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে বাধা অপসারণ করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সমীর সাহেবের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। 
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সমীর সাহেব মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাস ড্রাইভারের অনুমোদিত গতি না মানা আইনের লঙ্ঘন। একজন সচেতন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিক হিসেবে ড্রাইভারকে এ বিষয়ে সতর্ক করা আবশ্যক। সমীর সাহেব এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করেছেন।
আইন মানবজীবনের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী বিধি-বিধান। সুস্থ, নিরাপদ ও কল্যাণকামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের উপস্থিতি অপরিহার্য। আইন মানুষকে সভ্য, শৃঙ্খলাপূর্ণ ও উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। সুতরাং প্রত্যেক নাগরিকের আইন মানা তথা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা বাঞ্ছনীয়। বাস ড্রাইভারের আইনের লঙ্ঘন যেকোনো অনাকাঙি্ক্ষত দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সমীর সাহেব ড্রাইভারকে সতর্ক করে সঠিক কাজটিই করেছেন। সুতরাং তার ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

ঘ. 'বাস চালক স্বাধীন'- উক্তিটির মাধ্যমে আইন লঙ্ঘনকারী বাস ড্রাইভারের উদ্ধৃত মনোভাবকে বোঝানো হয়েছে। 
স্বাধীনতা ব্যক্তিকে মুক্তভাবে যা খুশি তা করার অধিকার প্রদান করে না। অবাধ স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিষ্ঠা করে, যা স্বাধীনতা বিরোধী। পৌরনীতিতে স্বাধীনতা হলো অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করে তথা অন্যের সমস্যা সৃষ্টি না করে স্বাধীন ও মুক্তভাবে কাজ করার অধিকার। উদ্দীপকে উল্লিখিত বাস ড্রাইভারকে তার গতি সম্পর্কে সতর্ক করা হলে তিনি বলেন, তিনি স্বাধীন। প্রকৃতপক্ষে, এটা তার স্বাধীনতা নয় বরং স্বেচ্ছাচারিতা। একজন ব্যক্তি হিসেবে বাস চালকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অজুহাতে তিনি বাসের যাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারেন না। তার এই স্বেচ্ছাচারিতা ভয়ানক কানো দুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে, যার মূল্য হিসেবে অনেককে জীবন দিতে হতে পারে। সুতরাং বাস চালকের আইন মানা আবশ্যক। কেননা আইন স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়া আইন স্বাধীনতার অভিভাবক স্বরূপ। পরিশেষে বলা যায়, বাস চালক স্বাধীন, তবে সে আইনের উর্ধ্বে নয়। স্বেচ্ছাচারিতা কখনও স্বাধীনতা নয়। তাই আইন মেনেই বাস চালককে তার কাজ করতে হবে।

১০. ট্রাকচালক আলতু মিয়ার বয়স এখন ৪০ বছর। ২৯ বছরের টগবগে যুবক আলতু মিয়া ১১ বছর আগে ২০০৩ সালের ২৭ জুন রাতে বগুড়ার কাহালু উপজেলার যোগারপাড়ার একটি ইটভাটা থেকে ট্রাকভর্তি গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধার করার পর গ্রেফতার হন। অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৫ সালের ৩ মার্চ সরকারি আইন সহায়তা কেন্দ্র ডিলাক. ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ব্লাস্ট. এর সহায়তায় তিনি মুক্ত হন।
ক. সুশাসন কাকে বলে?
খ. অর্থনৈতিক সাম্য কেন প্রয়োজন? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আলতু মিয়া কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর বিনা বিচারে আলতু মিয়ার ১১ বছরের হাজতবাস আইনের শাসনের অনুপস্থিতিকেই নির্দেশ করে? তোমার মতামত দাও। 

◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. যে শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনের জবাবদিহিতা, বৈধতা, স্বচ্ছতা, জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুযোগ, বাকস্বাধীনতা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে তাকে সুশাসন বলে।

খ. শ্রেণি বৈষম্য দূর করে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনৈতিক সাম্য প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সাম্য বলতে উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে সব প্রকার বৈষম্য দূর করে নাগরিকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাকে বোঝায়। অর্থনৈতিক সাম্য বজায় থাকলে ক্ষেত্রে মানুষ জাতি ধর্ম-বর্ণ ও লৈঙ্গিক পরিচয় নির্বিশেষে কাজ করার ও ন্যায্য মজুরি পাবার সুবিধা লাভ করে। সাম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ ভোগের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য বিরাজ করে। সমাজের অতি দরিদ্রদের একাংশ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
তাই সব শ্রেণির মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুষ্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনৈতিক সাম্য প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকের ট্রাকচালক আলতু মিয়া আইনের দৃষ্টিতে সমতা লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে সমতা লাভের অধিকার অর্থ হচ্ছে শাসক-শাসিত, ধনী গরিব, সবল-দুর্বল সবাই একই অপরাধের জন্য সমানভাবে শাস্তিযোগ্য। সরকারের ক্ষমতা আইন থেকে প্রাপ্ত এবং শাসকও আইনের অধীন। বিনা অপরাধে কাউকে বিচারের আওতায় আনা যাবে না।
উদ্দীপকে উল্লিখিত ট্রাকচালক আলতু মিয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার হন এবং বিনাবিচারে ১১ বছর হাজতবাস করেন। এভাবে বিনাবিচারে দীর্ঘসময় আটক থাকা আলতু মিয়ার প্রতি চরম অমানবিক আচরণ। এটি আইনের দৃষ্টিতে সমতা লাভের সাংবিধানিক অধিকারের চরম অনুপস্থিতির দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকারী। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদেও আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না যাতে তার জীবন, স্বাধীনতা, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ও৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আলতু মিয়া সুবিচার পাননি।

ঘ. হ্যা, বিনা বিচারে আলতু মিয়ার ১১ বছরের হাজতবাস আইনের শাসনের অনুপস্থিতিকেই নির্দেশ করেছে বলে আমি মনে করি। 
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, ট্রাকচালক আলতু মিয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে বিনাবিচারে ১১ বছর হাজতে থাকেন। এখানে আইনের শাসনের মূল লক্ষ্য নাগরিক অধিকার রক্ষার পরিবর্তে খর্ব করা হয়েছে।
ব্রিটিশ আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালবার্ট ভেন ডাইসি Introduction to the study of the law of the constitution নামের গ্রন্থে আইনের শাসন বাস্তবায়নের ৪টি শর্ত দিয়েছেন। এগুলো হলো- আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান সুবিধা ভোগ করবে, সবার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ উন্মুক্ত থাকবে, বিনাবিচারে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না এবং দেশের প্রচলিত আইন দ্বারা নাগরিক অধিকার সংরক্ষিত থাকবে। আইনের শাসন বাস্তবায়নের উল্লিখিত শর্তগুলোর মধ্যে একটিও আলতু মিয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়নি। এই ঘটনাটি আইনের শাসনের অনুপস্থিতিকেই নির্দেশ করছে। ওপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, আইনের শাসন বিদ্যমান থাকলে আলতু মিয়াকে এ অবিচারের শিকার হতে হতো না। যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে অনেক আগেই তিনি জামিন বা নির্দোষ হিসেবে খালাস পেতেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Comments