HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-২

HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. প্রফেসর গোলাম রববানী সম্প্রতি 'ক' রাষ্ট্র সফর করেন। তিনি দেখতে পান, সেখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের মতামত খুবই প্রাধান্য পায়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মকা- পরিচালিত হওয়ায় সরকারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
ক. জনমত কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়?
গ. 'ক' রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কীসের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে তুমি কি একমত? 

◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তিসিদ্ধ ও সুচিন্তিত মতামতই জনমত।

খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কোনো দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে বোঝায়।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি কথাটির প্রথম প্রবক্তা হলেন আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড (Gabriel Almond)। তাঁর মতে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি মূলত কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং এর বিভিন্ন অংশে ব্যক্তির নিজ ভূমিকা সম্পর্কে রাজনৈতিক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির সুনির্দিষ্ট প্রতিকৃতি বা দিকনির্দেশনা। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনো দেশে রাজনৈতিক ব্যবস্থার দর্পণস্বরূপ একটি রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধসহ বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে সেখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

গ. 'ক' রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। যে শাসন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রশাসনের জবাবদিহিতা, বৈধতা, স্বচ্ছতা থাকে এবং বাক-স্বাধীনতাসহ সব রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকে কে সুশাসন বলে। সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতা, সরকারের বৈধতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনমতের প্রতি গুরুত্ব। চলমান বিশ্বে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসনের গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বিরাজ করে, জনগণের বাক্-স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয় এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। এর ফলে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা বিরাজ করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রফেসর গোলাম রববানী ‘ক’ রাষ্ট্র সফর করেন। তিনি দেখতে পান সেখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের মতামত প্রাধান্য পায়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অর্থাৎ 'ক' রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুশাসনের অন্যতম উপাদান জনগণের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, ‘ক’ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত ব্যবস্থা অর্থাৎ, সুশাসন অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে কথাটির সাথে আমি একমত। 
সুশাসন হচ্ছে সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনা। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং আর্থ-সামাজি ক্ষেত্রে সাম্য সুনিশ্চিত করা সম্ভব।
সুশাসনের আর্থিক নীতি হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অর্থ জনকল্যাণে ব্যয় হবে। সুশাসন রাষ্ট্রের আর্থিক খাতসহ সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। বিশ্বব্যাংকের মতে 'সুশাসন অর্থ ও মানবসম্পদ ব্যবহারের জন্য দক্ষ এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের বাজেট ও হিসাবরÿণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস আচরণ এবং জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবলম্বনের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বিদেশি উদ্যোক্তারা শিল্প-কারখানা স্থাপনে বা পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে। বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করে, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, দুর্নীতি হ্রাস পায় এবং রাষ্ট্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়। পরিশেষে বলা যায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

২. মি. X এবং Y দুইজন সরকারি কর্মকর্তা। মি. X প্রশাসনিক কর্মকান্ড দক্ষতার সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন, তার অফিসের সেবা গ্রহণকারীদের স্বচ্ছভাবে দ্রুত সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু মি. Y দায়িত্ব পালনকালে অবহেলা, অনিয়ম, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনসহ অনেক অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন।
ক. 'সুশাসন' প্রত্যয়টি প্রথম কোন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে? 
খ. রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বলতে কী বোঝায়? 
গ. মি. Y এর কর্মকা- কোন ধরনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে মি. X এর কর্মতৎপরতায় কী প্রতিষ্ঠা পাবে? রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে এর ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সুশাসন প্রত্যয়টি প্রথম বিশ্বব্যাংক ব্যবহার করে।

খ. রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বলতে জনগণের কাছে রাজনীতিবিদদের কথা ও কাজের দায়বদ্ধতাকে বোঝানো হয়। সুশাসনের অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা। জবাবদিহিতার অভাবে রাজনৈতিক দলের নেতারা জনগণকে সেবা দানের পরিবর্তে শোষণ বা ভোটের জন্য ব্যবহার করে। রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে নেতারা ব্যক্তিগতভাবে পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। এর ফলে রাজনৈতিক কর্মকা- এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

গ. মি. Y এর কর্মকা- সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। জড়িয়ে
রাষ্ট্রের নাগরিকদের সার্বিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত শাসনব্যবস্থাই সুশাসন। রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণকে সেবাদানের ক্ষেত্রে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা এবং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই হলো সুশাসন। আর সরকারি কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অবহেলা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, মি. Y একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি দায়িত্ব পালনকালে অবহেলা, অনিয়ম, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনসহ বহু অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। মি. Y এর এ ধরনের কার্যকলাপ সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। কেননা তার কর্মকান্ড দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিফলন ঘটেছে। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারই দুর্নীতি। নিজের বা নিজের গোষ্ঠীর স্বার্থে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সুযোগ নেওয়া, জনগণের অধিকারভোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, উৎকোচ গ্রহণ দায়িত্বে অবহেলা করা প্রভৃতি দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। দুর্নীতি পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না বা নাগরিকদের বিভিন্ন অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করা যায় না। এ কারণেই সুশাসন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই বলা যায়, মি. Y এর কর্মকান্ড সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।

ঘ. উদ্দীপকের মি. X এর কর্মতৎপরতায় সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আর রাষ্ট্রের উন্নয়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 
সুশাসন কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সুশাসনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সুশাসনের ফলে সরকারের জবাবদিহিতা। স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়ভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলেই সাধারণ জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার হবে এবং দারিদ্র্য বিমোচন হবে। সুশাসন বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণেও ভূমিকা রাখে।
উদ্দীপকের মি. X একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি প্রশাসনিক কাজে দক্ষতার সাথে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তিনি একজন যুগোপযোগী প্রযুক্তিমনস্ক কর্মকর্তা মি. X দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন এবং তার অফিসের সেবা গ্রহণকারীদের স্বচ্ছভাবে দ্রুত সেবা দিয়ে থাকেন। তার এ সব কাজ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। যে কোনো রাষ্ট্রের উন্নয়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন প্রবর্তন এবং আইন ও মানবাধিকারের যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নই সুশাসনের মূল লক্ষ্য। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, সুশাসন রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সুমন এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র সোহান একই হলে থাকে এবং তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলছিল। সুমন বলল, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা ছাড়া আমরা পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এ প্রসঙ্গে সোহান বলল, যে উদ্দেশ্যে ১৯৪৪ সালে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি।
ক. সুশাসন কী?
খ. ডিজিটাল পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আলোকে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাস্তবতার তুলনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সোহানের বক্তব্য কীভাবে যথার্থ? মতামত দাও।

◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শাসনকাজ পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন।

খ. ডিজিটাল পদ্ধতি বলতে বিভিন্ন কাজকর্মে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যেমন- কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি. ব্যবহারকে বোঝায়।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন, রোগ নির্ণয়, বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও তার মান নিয়ন্ত্রণ, অনলাইন ব্যাংকিং ই-শপিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে জনগণ সরকারের বিভিন্ন সেবা ও তথ্য খুব সহজে পাবে, সময় বাঁচবে এবং কর্মক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।

গ. বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাস্তবতার তুলনা করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায় না।
বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা। উন্নয়নশীল দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণদানের ব্যবস্থা করা। কিন্তু বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল নেই। এর বর্তমান কর্মকা- লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অনেকটাই বিপরীত।
বর্তমানে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানারকম ষড়যন্ত্র ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্প। পদ্মা সেতু প্রকল্পে স্বল্পসুদে ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১১ সালের ২৯ জুন সংস্থাটি পদ্মা সেতু প্রকল্পে তাদের ঋণচুক্তি বাতিল করে। নানা টানাপোড়নের পর শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে তাদের প্রত্যাহার করে নিলেও ষড়যন্ত্রের কোন প্রমাণ দিতে পারে নি। এমনকি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন এবং কানাডার আদালতও দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পায় নি। অথচ কোনো এক অদৃশ্য কারণে, অদৃশ্য কোনো স্বার্থে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। কাজেই বলা যায়, বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের সাথে তাদের বর্তমান বাস্তবতার তেমন কোনো সাদৃশ্য নেই।

ঘ. 'যে উদ্দেশ্যে ১৯৪৪ সালে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি!' -উদ্দীপকে বর্ণিত সোহানের এ বক্তব্যটি যথার্থ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে ব্রেটন উডস সম্মেলনের মাধ্যমে 'বিশ্বব্যাংক' প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো
১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সহায়তা করা। 
২. পৃথিবীর অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা। 
৩. কোনো দেশকে বেসরকারি ঋণ পেতে সাহায্য করা এবং 
৪. উন্নয়নশীল দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহে নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণদানের ব্যবস্থা করা। 
উদ্দীপকে সোহান বলেছে, ১৯৪৪ সালে যে উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি। সোহানের এ মন্তব্যটি সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক। কেননা বিশ্বব্যাংকের বেশির ভাগ মূলধন সরবরাহ করে আমেরিকা এবং ব্যাংকের যাবতীয় কর্মকান্ড আমেরিকার প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। ফলে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক বিশ্বের অনুন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতার বিষয়টি আজ চরমভাবে অবহেলিত। বিশ্বব্যাংক প্রধানত যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর পুনর্গঠনের কাজেই বেশি মনোযোগী। সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক বিবেচনা না করে রাজনৈতিক স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার বন্ধু দেশগুলোকে অধিক ঋণ ও সহায়তা দেওয়া হয়। আবার বিশ্বব্যাংক স্বল্পসুদে দরিদ্র দেশগুলোকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এর সুদের হার অনেক বেশি। তাই ঋণের উচ্চ হারে সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনেক দেশ ঋণ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে এ ঋণ তাদের উন্নয়নে খুব বেশি কাজে লাগে না। উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের সোহানের বক্তব্য যথার্থ। অর্থাৎ, বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশ্যসমূহ আজও অর্জিত হয়নি।

৪. ২০০০ সালে বিশ্বব্যাংক মত প্রকাশ করে যে, সুশাসন চারটি প্রধান স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল। এ চারটি স্তম্ভ হলো- ১. দায়িত্বশীলতা, ২. স্বচ্ছতা, ৩. আইনি কাঠামো ও ৪. অংশগ্রহণ।
ক. সুশাসন কী?
খ. স্বজনপ্রীতি বলতে কী বোঝায়?
গ. সুশাসনের পথে বাধা দূরীকরণে উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম দুটি স্তম্ভের গুরুত্ব বর্ণনা করো।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকে উল্লিখিত তৃতীয় ও চতুর্থ স্তম্ভ সুশাসনের পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুনিশ্চিত করে তুমি কি এর সাথে একমত?

◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. মতের পক্ষে যুক্তি দাও। সরকারের কর্মকান্ড স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় শাসনকাজ পরিচালনা করাকে সুশাসন (Good Governance) বলে।

খ. স্বজনপ্রীতির সাধারণ অর্থ হলো আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠজনের প্রতি ভালোবাসা। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসনে এ বিষয়টি এক ধরনের দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়। 
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে প্রচলিত নিয়ম-কানুন ভা করে এবং যোগ্য লোককে বঞ্চিত করে নিজের আত্মীয়-স্বজন বা ঘনিষ্ঠদের সুযোগ-সুবিধা দিলে তাকে স্বজনপ্রীতি (Nepotism) বলা হয়। যেমন সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাধারণত উচ্চপদের কর্তারা অনেক সময় স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অদক্ষ ও অযোগ্য লোক নিযুক্তি পায়। অন্যদিকে যোগ্য, দক্ষ ও মেধারী ব্যক্তিদের সেবা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিশ্বব্যাংকের চিহ্নিত সুশাসনের চারটি প্রধান স্তম্ভের মধ্যে প্রথম দুটি স্তম্ভ অর্থাৎ দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা সুশাসনের পথে বাধা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সুশাসন হলো একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া, যেখানে সমাজের সবার অধিকার ভোগের সুযোগ থাকে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি সব কার্যক্রমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়। উদ্দীপকে উল্লিখিত 'দায়িত্বশীলতা' ও 'স্বচ্ছতা' এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করায় গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা রাখে।
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের সকল স্তরে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের লক্ষ্য অর্জনে কার কী দায়িত্ব এবং কোন সময়ের মধ্যে তা সম্পাদন করতে হবে আগে থেকে তা নির্ধারিত থাকলে শাসনকার্য পরিচালনায় কোনো প্রকার অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ থাকে না। আবার প্রশাসনের সব স্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হলে এবং সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যথাযথভাবে কাজ করলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সরকারি কর্মকান্ডর স্বচ্ছতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত। কেউ যেন ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে কিংবা দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবহার করতে না পারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের সব স্তর থেকে দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। এক কথায়, প্রশাসনের যাবতীয় কর্মকান্ডর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রথম দুটি স্তম্ভ সুশাসনের পথে বাধা দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে উল্লিখিত সুশাসনের চারটি প্রধান স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ স্তম্ভ সুশাসনের পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুনিশ্চিত করে বক্তব্যের সাথে আমি একমত।
বিশ্বব্যাংকের মতে সুশাসন বিষয়টি দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা, আইনি কাঠামো ও অংশগ্রহণ এই চারটি প্রধান স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল। এগুলোর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ অর্থাৎ 'আইনি কাঠামো' ও 'অংশগ্রহণ' সুশাসনের পাশাপাশি গণতন্ত্রকে নিশ্চিত করে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনি কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় সব কার্যক্রম আইন অনুযায়ী জনগণের কল্যাপে পরিচালিত হলে দেশে সুশাসন নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হলো আইনের শাসন।
দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারবে। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান বলে বিবেচিত হবে। সর্বোপরি গণতন্ত্র সুনিশ্চিত হবে। অপরদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শাসনকাজে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতির সম্ভাবনা থাকে এবং জনস্বার্থ উপেক্ষিত হয়। ফলে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শাসনকাজ পরিচালিত হলে যেকোনো নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনস্বার্থের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হয়। ফলে সরকার জনকল্যাণবিরোধী বা জনস্বার্থ পরিপন্থি কোনো সিদ্ধান্ত সহজে নিতে পারে না, যা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে মজবুত করে।
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আইনি কাঠামো ও দেশের শাসনকাজে জনগণের অংশগ্রহণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গণতন্ত্রকেও সুনিশ্চিত করে।

৫. মি. 'গ' একজন প্রবীণ সংবাদকর্মী। তিনি একদিন একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ পাঠ করছিলেন। প্রবন্ধটিতে দেখা যায় 'ক' নামক রাষ্ট্রের রাজধানীতে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দেশটিতে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, যথাযথ। শিক্ষার অভাব ও স্বজনপ্রীতি ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, 'খ' নামক রাষ্ট্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আইনের শাসন বিদ্যমান।
ক. সুশাসন কী?
খ. সুশাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত যুক্তি দাও। 
গ. উদ্দীপ বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রে কোন ধরনের শাসনের অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্র দুটির শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো। 

◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সরকারের কর্মকান্ডর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে পরিচালিত শাসনই সুশাসন (Good Govermance)।

খ. সুশাসন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে সমাজের প্রত্যাশা ও রাষ্ট্রের কর্মকান্ডর মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে। এই ব্যবস্থায় শাসক শুধু শাসনই করেন না, বরং শাসনব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক রাখার চেষ্টা করেন। রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন ও সমান সুবিধা নিশ্চিতকরণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা; ন্যায়ভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুশাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আর এই বিষয়গুলো সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই বৈশিষ্ট্য। তাই কোনো রাষ্ট্রে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে গণতন্ত্রের অনুকূল পরিবেশও সৃষ্টি হয়। এ কারণেই বলা হয় সুশাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রে সুশাসনের অভাব রয়েছে। 
কোনো রাষ্ট্রের প্রশাসনে যদি জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা থাকে এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার সুরক্ষা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন বিদ্যমান থাকে তাহলে সে শাসনকে সুশাসন বলা যায়। 
সুশাসনমূলক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। উদ্দীপকের প্রবীণ সংবাদকর্মী মি. 'গ' এর পঠিত প্রবন্ধে 'ক' নামের একটি রাষ্ট্রের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। ওই দেশের রাজধানীতে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও দেশটিতে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, স্বজনপ্রীতি, যথাযথ শিক্ষার অভাব ইত্যাদি সমস্যা লক্ষ করা যায়। এ চিত্র থেকে প্রতীয়মান হয়, দেশটিতে সুশাসন নেই। কেননা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হলো সরকারের স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা, রাষ্ট্রীয় কাজে জনগণের অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সক্রিয় সুশীল সমাজ, প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি। কিন্তু 'ক' রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সুশাসনের উল্লিখিত কোনো বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান নেই। সেখানে নিছক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে রাখতে অনেক সময় অযোগ্য অগণতান্ত্রিক শাসকরা এরকম করে থাকেন। ফলে একথা স্পষ্টভাবে বলা যায়, 'ক' নামের রাষ্ট্রে সুশাসনের অভাব রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রটির অবস্থা বিশ্লেষণ করে সহজেই বলা যায়, সেখানে সুশাসন অনুপস্থিত। অপরদিকে ‘খ’ রাষ্ট্রটিতে আইনের শাসন বিদ্যমান। আর যেখানে আইনের শাসন বিদ্যমান সেখানে সুশাসন থাকারই কথা। অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায়, দুটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় বেশ পার্থক্য রয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, 'খ' নামের রাষ্ট্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি আইনের শাসন রয়েছে। যেখানে আইনের শাসন বিদ্যমান সেখানে সুশাসনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও কমবেশি সমানভাবে কাজ করবে। সুশাসনের অন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিনিধিত্বশীল শাসন ব্যবস্থা, দায়বদ্ধ শাসন বিভাগ, আইন বিভাগের কার্যকর ভূমিকা, স্বাধীন বিচার বিভাগ, দক্ষ আমলাতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, কার্যকর গণতান্ত্রিক দলব্যবস্থা, সক্রিয় সুশীল সমাজ প্রভৃতি।
‘খ’ রাষ্ট্রটিতে সুশাসন বিদ্যমান এবং 'ক' রাষ্ট্রটির অবস্থা তার পুরোপুরি বিপরীত। ‘ক’ রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের শাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন বিকশিত না হওয়া কোনো দেশের জন্য রাতারাতি এগুলো করা সম্ভব নয়। কিন্তু দেশটির রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজকে এ লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে 'ক' রাষ্ট্রটিতেও একদিন 'খ' রাষ্ট্রের মতো সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। 
পরিশেষে বলা যায়, সুশাসনের উপকারভোগী মূলত রাষ্ট্রের জনগণ। এজন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও তা অব্যাহত রাখতে 'ক' রাষ্ট্রের জনগণকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ২ pdf download

৬. জনাব সাদিক একটি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে তার দেশে আইনের শাসন সুনিশ্চিত নয়। বর্তমানে দেশটির জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক উপায়ে সব সমস্যার সমাধান চায়।
ক. আইন কী? 
খ. দায়িত্বশীলতা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব সাদিকের দেশের সমস্যাগুলো তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. জনাব সাদিকের দেশে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে তোমার সুপারিশ ব্যক্ত করো।

◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইন হলো সমাজস্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত নিয়ম কানুন, যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে এবং যথাসময়ে পালন করাই দায়িত্বশীলতা। 
একটি রাষ্ট্রের সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দকে তাদের নির্ধারিত কর্মের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাই কেবল তাদের কাজ সময়মতো সুচারুরূপে সম্পাদন করতে পারেন। জাতীয় নেতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের কাছেই বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। বিশেষ করে একজন নেতাকে দেশ ও জাতির স্বার্থে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। কেননা তার সঠিক নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীলতার ওপর দেশ ও জনগণের মঙ্গল নির্ভর করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব সাদিকের দেশের সমস্যাগুলো হলো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসনের অভাব। 
কোনো রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে কোনোভাবেই সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যদি সরকারের শাসন বিভাগ তাদের কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট জবাবদিহি না করে তাহলে সুশাসন বিঘি্নত হয়। আর সুশাসন তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন। রাষ্ট্রে অথবা প্রশাসনে আইনের শাসন বিদ্যমান থাকে। কেননা আইনের শাসনের মূলকথাই হলো আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান, সকলেরই আইনের আশ্রয় লাভের সমান সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আইন হতে হবে। সুনির্দিষ্ট, স্পষ্ট ও সহজবোধ্য। এছাড়াও আইনের শাসনের জন্য প্রয়োজন সরকারের ন্যায়পরায়ণ আচরণ, রাষ্ট্রের নিপীড়নমুক্ত স্বাধীন পরিবেশ এবং নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ। আবার জবাবদিহিতার অভাব থাকলে শাসন কাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং দুর্নীতি বেড়ে যায়। সুতরাং, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সাথে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণও জরুরি।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব সাদিকের দেশে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে সুপারিশ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
১. জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতার নীতি প্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্র পরিচালক বা সরকার প্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকল স্তরে জবাবদিহিতা বা নায়বন্ধতার নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনো লক্ষ্য অর্জনে কার কী দায়িত্ব, কোন সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে, কার নিকট জবাবদিহি করতে হবে, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে।
২. দুর্নীতি ও রাজনীতি মুক্ত জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা: টেকসই জাতীয় উন্নয়নের জন্য সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের শাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতার নীতি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। কেননা সরকারি নীতিনির্ধারণ ও নীতি বাস্তবায়নে যদি প্রশাসনিক জবাবদিহিতা না থাকে তাহলে যেকোনো সিদ্ধান্ত পক্ষপাতদুষ্ট হয়; যা সুশাসনের অন্তরায়। তাই দুর্নীতি রোধ করে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা সৃষ্টির পাশাপাশি একে রাজনীতিমুক্ত করাও একান্ত প্রয়োজন।
৩. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: সুশাসন তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন দেশে আইনের শাসন বিদ্যমান থাকে। আইনের শাসনের মূলকথাই হলো। আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান, সকলেরই আইনের আশ্রয় লাভের সমান সুযোগ রয়েছে; এক্ষেত্রে হারানিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। আইন হতে হবে সুনির্দিষ্ট, স্পষ্ট ও সহজবোধ্য। এছাড়াও আইনের শাসনের জন্য প্রয়োজন সরকারের ন্যায়পরায়ণ আচরণ, রাষ্ট্রের নিপীড়নমুক্ত স্বাধীন পরিবেশ এবং নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ।
উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব সাদিকের দেশে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। উপরে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে তার দেশে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হবে।

৭. মি. আব্দুর রহিম বিদেশ যাওয়ার লক্ষ্যে পাসপোর্ট করার জন্য পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী ফারুকের শরণাপন্ন হন। তার কাছে অনেক ঘোরাঘুরি করেও পাসপোর্ট পান নি। প্রদেয় টাকাও ফেরত পান নি। পরে প্রতিবেশী একজন স্কুল শিক্ষকের পরামর্শে তিনি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে যান এবং অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই তিনি স্বল্পসময়ে পাসপোর্ট পেয়ে যান।
ক. মূল্যবোধ কী?
খ. পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে কোন বিষয়ের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফারুকের ভূমিকা কীসের পরিচয় বহন করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্দীপকে উল্লিখিত পদ্ধতির ভূমিকা অপরিহার্য কিনা মূল্যায়ন করো।

◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. যে চিন্তাভাবনা ও সংকল্প মানুষের সামগ্রিক আচার-ব্যবহার কর্মকা-কে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাই মূল্যবোধ।

খ. পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। 
পৌরনীতি ও সুশাসন হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিজ্ঞান। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান হলেও তা রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় রাজনৈতিক সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক. প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিজ্ঞান হলেও নাগরিকতার বিভিন্ন বিষয় নাগরিক অধিকার, কর্তব্য এবং নাগরিক জীবনের সাথে জড়িত বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গঠন ও কার্যাবলি. নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সুতরাং বলা যায়, উভয়ের সম্পর্ক নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফারুকের ভূমিকা দুর্নীতির পরিচয় বহন করে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি খাটিয়ে অবৈধ সুযোগ নেওয়া, কারো সম্পত্তি দখল করা, জনগণের অধিকার ভোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, এসব কাজ দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। দুর্নীতি জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি করে। এছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাধা হলো দুর্নীতি। কেননা দুর্নীতি ন্যায্যতা, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা ইত্যাদির পরিপন্থী।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, মি. আব্দুর রহিম পাসপোর্ট নিতে ঐ অফিসের কর্মচারী ফারুকের কাছে অনেক ঘুরাঘুরি করলেও তা পাননি। তাছাড়া ফারুককে প্রদেয় টাকাও ফেরত পাননি। ফারুক ব্যক্তিস্বার্থেই তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মি. আব্দুর রহিমের কাজ করতে গড়িমসি করেছে, যা দুর্নীতির পর্যায়ভুক্ত। কারণ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারই দুর্নীতি। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সুতরাং বলা যায়, ফারুকের ভূমিকায় সুশাসনের অন্যতম বড় সমস্যা দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পদ্ধতিটি তথা ই-গভর্নেক্সের ভূমিকা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য।
আইনের শাসন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান অধিকার, জনগণের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা, স্বাধীন বিচার বিভাগ, দক্ষ প্রশাসনব্যবস্থা, জনগণের অংশগ্রহণ, তথ্যের অবাধ প্রবাহ, জবাবদিহিতা প্রভৃতির সমন্বয়ে সুশাসন গড়ে ওঠে। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো ই-গভর্নেঙ্গ।
উদ্দীপকে বর্ণিত মি. আব্দুর রহিম পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী ফারুকের কাছে অনেক ঘুরাঘুরি করেও পাসপোর্ট পেতে ব্যর্থ হন। পরে প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষকের পরামর্শে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন এবং কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই স্বল্পসময়ে পাসপোর্ট পেয়ে যান। এটি ই-গভর্নেন্সের কারণেই সম্ভব হয়েছে। ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠিত হলে সরকারি কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। ফলে জনগণ ভোগান্তির শিকার হয় না, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।
ই-গভর্নেন্স চালু হলে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহও তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর হবে। ফলে প্রশাসনিক দুর্নীতি হ্রাস পাবে, কাজকর্মের গতি বাড়বে, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। এক কথায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। তাই বলা যায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ই-গভর্নেন্স পদ্ধতির ভূমিকা অপরিহার্য।

৮. আব্দুল হালিম আফ্রিকার সামরিক বাহিনী শাসিত একটি অনুন্নত দেশের নাগরিক। তার দেশে রয়েছে দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জাতিগত দালা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য ইত্যাদি নানা সমস্যা। তবে বর্তমানে শিক্ষা বিসত্মারের ফলে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজ উত্ত সমস্যাগুলো সমাধানে খুবই আগ্রহী।
ক. সুশাসন কী?
খ. সুশাসন কীভাবে আইনের শাসন নিশ্চিত করে? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাষ্ট্রটিতে সুশাসনের কোন কোন বৈশিষ্ট্যের অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. আব্দুল হালিম এর রাষ্ট্রটিতে কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? বিশ্লেষণ করো। 

◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. যে শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনের জবাবদিহিতা, বৈধতা, স্বচ্ছতা এবং সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে তাকে সুশাসন বলে।

খ. একটি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম ভিত্তি হলো আইনের শাসনের বাস্তবায়ন।
যে শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনের জবাবদিহিতা, বৈধতা, স্বচ্ছতা, জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে, বাকস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে তাকে সুশাসন বলে। আর আইনের শাসন বলতে ধনী-গরিব, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ শ্রেণি নির্বিশেষে আইনের চোখে সবাই সমান এবং সমাজের সর্বত্র আইনের প্রাধান্য বজায় থাকাকে বোঝায়। সুশাসনে আইনের শাসনের পাশাপাশি। অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, সংবেদনশীলতা, জবাবদিহিতা, সাম্য, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ইত্যাদিও থাকতে হয়। আর এসব কিছু নিশ্চিত করতে হলে আইনের শাসনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এভাবে সুশাসনে আইনের শাসন নিশ্চিত হয়।

গ. উদ্দীপকটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উল্লিখিত রাষ্ট্রে সুশাসনের প্রায় সকল বৈশিষ্ট্যই অনুপস্থিত। সুশাসন বলতে এমন এক কাঙি্ক্ষত শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বাক স্বাধীনতাসহ সব রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে, জনগণের চাহিদার প্রতি সরকার সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হবে এবং সংবিধান তথা আইনের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকবে।
সামরিক বাহিনী শাসিত আব্দুল হালিমের দেশটিতে সুশানের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন- কোনো দেশে সুশাসনের বড় অন্তরায় হলো দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে সম্পদের বন্টনে অসমতা সৃষ্টি হয় এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। উদ্দীপকের আব্দুল হালিমের দেশে দুর্নীতি আছে বলেই নানা বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম বড় বাধা। আব্দুল হালিমের দেশেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। আবার দারিদ্র্যা সুশাসনের আরেকটি বড় বাধা। আব্দুল হালিমের দেশে এটিও বিদ্যমান। এর কারণে তার দেশের জনগণ সহজে শিক্ষিত হতে পারে না। ফলে তারা নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে তেমন সজাগ নয়। আবার দেশের ভেতরে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি না থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। এর ফলে জাতীয় চেতনা ও দেশপ্রেম চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানবাধিকার ভূলুষ্ঠিত হয়। আব্দুল হালিমের দেশে জাতিগত দাঙ্গাও রয়েছে। যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করছে। তাই বলা যায়, আব্দুল হালিমের দেশে সুশাসনের প্রায় সব বৈশিষ্ট্যেরই অভাব রয়েছে।

ঘ. আব্দুল হালিম এর রাষ্ট্রটিতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
সুশাসনের বাধা হিসেবে উল্লেখযোগ্য হলো দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জাতিগত দাঙ্গা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য প্রভৃতি। তবে শিক্ষা বিসত্মারের ফলে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে এবং রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজ উক্ত সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হলে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
উদ্দীপকে আব্দুল হালিমের রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। দুর্নীতি জাতীয় সম্পদের সঠিক বণ্টনে বাধা প্রদান করে এবং ধনী ও গরীবের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে। এরপর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূরীভূত করতে হবে। কেননা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হয়। দেশে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে। সুশাসনের পথ বাধাগ্রস্ত হয়। একটি দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিগত দালা প্রতিহত করতে হবে। রাষ্ট্রের নাগকিদের মধ্যে ঐক্য বিরাজ না করলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়া রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে। সকলের মাঝে সমান অর্থ-সম্পদ বণ্টন করতে হবে। কেননা, রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে নাগরিকদের মধ্যে ঐক্যের সৃষ্টি হয় না সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রাষ্ট্রে দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে। কেননা, দারিদ্র্য নাগরিকের অধিকার অর্জনের প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অন্যতম কারণ।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আব্দুল হালিমের রাষ্ট্রে যদি দুর্নীতি প্রতিরোধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূরীভূত, জাতিগত দালা প্রতিহত, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি বাস্তবায়ন করা যায় তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

৯. জনাব হারুন আফ্রিকার সামরিক বাহিনী শাসিত একটি অনুন্নত দেশের নাগরিক। তার দেশে রয়েছে দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জাতিগত দাঙ্গা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য ইত্যাদি নানা সমস্যা। তবে বর্তমানে শিক্ষাবিসত্মারের ফলে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো ও সুশীল সমাজ উক্ত সমস্যাগুলো সমাধানে খুবই আগ্রহী।
ক. আইন কী?
খ. স্বচ্ছতা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাষ্ট্রটিতে সুশাসনের কোন কোন বৈশিষ্ট্যের অভাব রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. জনাব হারুন এর রাষ্ট্রটিতে কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? 

◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইন হলো সমাজস্বীকৃত ও রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত নিয়ম-কানুন যা সমাজের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. স্বচ্ছতা হলো এমন একটি বিমূর্ত ধারণা যা দ্বারা মানুষ উপলব্ধি করতে পারে যে, কোনো কর্মকা- কতটুকু নীতিসঙ্গত বা বৈধ। এক কথায় স্বচ্ছতা হলো সুস্পষ্টতা। এটি সুশাসনের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সরকারি কর্মকান্ডর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর সুশাসন নির্ভর করে। তাই স্বচ্ছতা তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন সরকার তাদের কর্মকা-, নীতিমালা ও সিদ্ধান্ত জনগণকে অবহিত করতে পারবে।

গ. উদ্দীপকটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, উল্লিখিত রাষ্ট্রে সুশাসনের প্রায় সকল বৈশিষ্ট্যই অনুপস্থিত। 
সুশাসন বলতে এমন এক কাঙি্ক্ষত শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বাক স্বাধীনতাসহ সব রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে, জনগণের চাহিদার প্রতি সরকার সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হবে এবং সংবিধান তথা আইনের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ থাকবে।
সামরিক বাহিনী শাসিত হারুনের দেশটিতে সুশাসনের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন- কোনো দেশে সুশাসনের বড় অন্তরায় হলো দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে সম্পদের বন্টনে অসমতা সৃষ্টি হয় এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। উদ্দীপকের হারুনের দেশে দুর্নীতি আছে বলেই নানা বিশৃখলা বিদ্যমান। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সুশাসন। প্রতিষ্ঠার অন্যতম বড় বাধা। হারুনের দেশেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান। আবার পারিদ্র্য সুশাসনের আরেকটি বড় বাধা। হারুনের দেশে এটিও বিদ্যমান। এর কারণে তার দেশের জনগণ সহজে শিক্ষিত হতে পারে না। ফলে তারা নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে তেমন সজাগ নয়। আবার দেশের ভেতরে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি না থাকলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। এর ফলে জাতীয় চেতনা ও দেশপ্রেম চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানবাধিকার ভূলুষ্ঠিত হয়। হারুনের দেশে জাতিগত দাঙ্গাও রয়েছে। যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করছে। তাই বলা যায়, হারুনের দেশে সুশাসনের প্রায় সব বৈশিষ্ট্যেরই অভাব রয়েছে।

ঘ. একটি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বহুমুখী সমস্যা থাকতে পারে তবে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যে শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনের জবাবদিহিতা, বৈধতা, স্বচ্ছতা, সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে তাকে সুশাসন বলে। সুশাসন দায়িত্বশীল, অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া, যা রাষ্ট্রে আইনের শাসন কায়েম করে। মূলত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রে সুশাসন ত্বরান্বিত হয়। এক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার। জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সংসদীয় গণতন্ত্রে আইনসভার সদস্যরা হলেন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আইনসভার সদস্যগণ নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সমস্যা ইত্যাদি আইনসভায় তুলে ধরেন এবং যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করেন। তাই কার্যকরি আইনসভার মাধ্যমে শাসন বিভাগের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং সুশাসনের পথ সুগম হবে। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। তাই বিচার বিভাগকে আইন ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সকল দায়িত্ব ও ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে না রেখে আঞ্চলিক ও স্থানীয় সংস্থাসমূহের নিকট কিছু দায়িত্ব ও ক্ষমতা হসত্মান্তর করলে প্রশাসনিক জটিলতা দূর হবে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। সেই সাথে সরকার ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকার ও প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে হবে। উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে উদ্দীপকের হারুনের রাষ্ট্রটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।

১০. জনাব মহসিন সদ্য সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করেছেন। কিন্তু অবসরকালীন পেনশন তুলতে গিয়ে তিনি পদে পদে দুর্নীতি আর হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পরেও তার সমস্যা সমাধান হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের আন্দোলন শুরু করেছেন।
ক. স্বজনপ্রীতি কী?
খ. আইনের শাসন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব মহসিন সুশাসনের কোন অন্তরায়ের সম্মুখীন হয়েছে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. জনাব মহসিনের আন্দোলন সফল হলে রাষ্ট্রে এর কী প্রভাব পড়তে পারে? বর্ণনা করো।

◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দানের ক্ষেত্রে যোগ্যব্যক্তির বদলে স্বজনদের অগ্রাধিকার প্রদানই স্বজনপ্রীতি।

খ. আইনের শাসন বলতে আইনের চোখে সবাই সমান এবং আইনের প্রাধান্য বজায় থাকাকে বোঝায়। ধনী-গরিব, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই আইনের কাছে সমান। কেউ বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নয়। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে- এটাই আইনের শাসনের সার্থকতা। আইনের শাসন মূলত ব্যক্তির সাম্য ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব মহসিন সুশাসনের যে অন্তরায়ের সম্মুখীন হয়েছে সেটি হলে দুর্নীতি।
দুর্নীতি বলতে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করাকে বোঝায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হলো দুর্নীতি। সাম্প্রতিকালে দুর্নীতি অন্যতম একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ দুর্নীতিকে দেখা হয় একটা অভিশাপ হিসেবে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যদি দুর্নীতি প্রবেশ করে তবে সেখানে ন্যায়পরায়ণতা, আইনের শাসন আশা করা যায় না। ন্যায়পরাণয়তা ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতি সুশাসনের পথে সরাসরি বাধা হিসেবে কাজ করে। সর্বোপরি শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি জনসাধারণকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। এমতাবস্থায় দুর্নীতি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করে।
উদ্দীপকে দেখা যায় জনাব মহসিন সদ্য চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে অবসরকালীন পেনশন তুলতে গিয়ে পদে পদে তিনি দুর্নীতি আর হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পরেও তার সমস্যার সমাধান হয়নি। যা সুশাসনের বড় অন্তরায় দুর্নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. জনাব মহসিন জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্নীতি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের আন্দোলন শুরু করেছেন। রাষ্ট্রের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের আন্দোলনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনমত ও সুশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জনমত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল জনমত কে ভয় করে চলে। জনমত গণতান্ত্রিক সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। সরকার জনকল্যাণ সাধনের জন্য যে কর্মসূচি প্রণয়ন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা সাধারণত জনমতের দিকে লক্ষ রেখেই করা হয়ে থাকে।
জনমত সরকারকে গতিশীল হতে সাহায্য করে। জনমতের চাপে সরকার যুগোপযোগী ও প্রগতিশীল কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার জনমতের চাপে জনকল্যাণকর আইন প্রণয়ন করে থাকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও জনমত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকার জনমতের চাপে দুর্নীতি দূর করতে সচেষ্ট হয়, প্রশাসনকে দক্ষ ও গতিশীল করে তোলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য হয়। এভাবে জনমতের চাপে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, জনাব মহসিন দুর্নীতি প্রতিরোধে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা যথার্থ। কেননা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার জনমতের চাপে বাধ্য হয়েই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Comments